HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

প্রাচ্যবিদ্যা পরিভাষা বিশ্লেষণ

লেখকঃ ফয়সাল বিন খালেদ

الاستشراق (প্রাচ্যবিদ্যা)
الاستشراق বা প্রাচ্যবিদ্যার সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই এলাকার গবেষকদের মতপার্থক্য রয়েছে। মূলত প্রাচ্যবিদ্যা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দার্শনিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই তারা তার সংজ্ঞায়নে বিভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। কোনো কোনো গবেষক মনে করেন যে, প্রাচ্যবিদ্যা একটি জ্ঞান-তাত্ত্বিক এবং একাডেমিক বিষয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এক ধরনের গবেষণা ও তত্ত্ব চর্চার নাম প্রাচ্যবিদ্যা। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বিভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠা একটি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান। অনেক গবেষকের অভিমত হচ্ছে, এটি একটি প্রাকৃতিক ফেনোমেনা, যার জন্ম প্রাচ্য প্রতীচ্য বা আরো সংক্ষিপ্ত ও নির্দিষ্টভাবে বললে ইসলাম ও খৃষ্টবাদের, পরস্পর দ্বন্দ্বের গর্ভে। এখানে আমি প্রাচ্যবিদ্যার কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করছি। এগুলো বিশ্লেষণ করলেই আমরা জানতে পারব এসব সংজ্ঞার নির্ধারকরা প্রাচ্যবিদ্যা সম্পর্কে কী অবস্থান নিয়েছেন।

প্রাচ্যবিদ্যা মানে প্রাচ্য জগৎ সম্পর্কিত বিদ্যা। শব্দটি ব্যাপক এবং বিশেষ দুই ধরনের অর্থ দিতে পারে। ব্যাপক অর্থে শব্দটি নিকট-প্রাচ্য-মধ্যপ্রাচ্য-দূরপ্রাচ্য অর্থাৎ প্রাচ্যের যেকোনো স্থান এবং ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ধর্ম প্রাচ্যের ইত্যাদি যেকোনো বিষয়ে পাশ্চাত্যের গবেষণা ও তত্ত্বকে বুঝায়। শব্দটির বিশেষ অর্থ হচ্ছে, ইসলামী প্রাচ্য এবং তার ভাষা-ইতিহাস-বিশ্বাস সম্পর্কে পাশ্চাত্যের গবেষকদের গবেষণা ও তত্ত্ব।

প্রাচ্যবিদ্যা একটি প্রতীচ্যীয় প্রতিষ্ঠান, যা নতুন এক প্রাচ্য গঠন এবং তার ওপর পশ্চিমা আধিপত্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাচ্য নিয়ে কাজ করে।

বিচ্ছিন্নভাবে প্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে পড়াশোনা এবং প্রাচ্যের সাহিত্যিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির-মানবীয় সভ্যতা-সংস্কৃতি নির্মাণে যার ভূমিকা অপরিসীম (সাধনা-চর্চা) এই দু’য়ের মাঝে সমন্বয় সাধন। প্রাচ্যবিদ্যা প্রাচীন সভ্যতাগুলোর পরস্পর আদান-প্রদানও বটে কিংবা প্রাচ্যবিদ্যা মানে মধ্যযুগীয় সভ্যতার নির্মাণকারী পরিগঠকদের বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন।

প্রাচ্যকে পাঠ, ব্যাখ্যা, পুনর্গঠন এবং তার ওপর আধিপত্য বিস্তারের পশ্চিমা পদ্ধতির নামই হচ্ছে প্রাচ্যবিদ্যা।

প্রাচ্যবিদ্যা মানে আরব জগৎ, সভ্যতা, ভাষা, সমাজ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান। এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ একাডেমিক গবেষক ও অধ্যাপকরা হলেন প্রাচ্যবিদ।

প্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চল ও জাতি যেমন ভারতীয়, পারসিক, চাইনিজ, জাপানী, আরবী এবং তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি-ভাষা-ধর্ম ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে যে সব গবেষক কাজ করেন তাদেরকেই বলা হয় প্রাচ্যবিদ।

প্রাচ্যবিদ মানে পশ্চিমা গবেষক, যিনি ইসলামী চিন্তা এবং ইসলামী সভ্যতা নিয়ে লেখালেখি করেন।

উল্লিখিত সংজ্ঞায়নে বিভিন্ন ধারার গবেষকদের উক্তিগুলোর প্রতিটিতে যে জিনিসটি হাযির তা হচ্ছে, প্রাচ্যবিদ্যায় দু’টি বিষয় থাকবে: প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য। এর মধ্যে অধিকাংশের মত হচ্ছে প্রাচ্যবিদ্যা একই সাথে জ্ঞান-তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ব্যাপার। প্রাচ্যবিদ্যা মানে ব্যাপকভাবে প্রাচ্যের যেকোনো দেশ ও জাতির সভ্যতা সংস্কৃতি এবং বিশেষভাবে ইসলাম ও আরব সম্পর্কে পশ্চিমের পড়াশোনা, জানা এবং তার মধ্য দিয়ে তার উপর পশ্চিমের রাজনৈতিক আধিপত্যের পথ সুগম ও নিশ্চিত করা। প্রাচ্যবিদ্যা সম্পর্কে এই ধারণা উনিশ শতক পরবর্তী বিশ্ব-রাজনৈতিক ঘটনাবলী দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত।

আরবী শব্দ কাঠামো সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা জানেন أ س ت যুক্ত ক্রিয়াপদ মূলত উক্ত ক্রিয়ার কামনা নির্দেশ করে। সুতরাং সেই হিসেবে الاستشراق শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রাচ্যকে কামনা করা। সুতরাং শাব্দিকভাবে শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। প্রাচ্য ভ্রমণ, প্রাচ্য নিয়ে পড়াশোনা (গবেষণা-লেখালেখি করা এবং প্রাচ্য উপনিবেশ গড়া) সবই ইসতেশরাক। আমাদের মনে রাখতে হবে ‘ইসতেশরাক’ নিছক কোনো শব্দ নয়। তা একটি পরিভাষা হয়ে উঠেছে। সুতরাং শব্দটির আভিধানিক অর্থের সাথে সাথে আমাদেরকে নির্দিষ্টভাবে তার পরিভাষিক অর্থও জানতে হবে।

প্রাচ্যবিদ্যা শব্দটি প্রথমত এবং মূলত একটি নির্দিষ্ট ভূগোলকে নির্দেশ করে। তবে শব্দের পারিভাষিক ব্যবহারে সেটা বিবেচ্য নয়। তাছাড়া দিকনির্ভর কোনো ভূগোলের নিজস্ব কোনো অস্তিত্ব নেই, নির্ধারকের অবস্থান অনুসারে তা নির্ধারিত হয়। জার্মানে অবস্থিত এক ব্যক্তির নিকট যেটা প্রাচ্য, জাপানে অবস্থানকারীর নিকট সেটা নিশ্চয় প্রাচ্য নয়।

সুতরাং শব্দটি বিচার করতে হবে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, প্রাচীনকাল থেকে বিশ্ব শক্তি সবসময়, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, প্রধানত এই শিবিরে বিভক্ত ছিল। প্রাচীন রোম-পারস্যের দ্বন্দ্ব, অতঃপর রোম-মুসলিমদের দ্বন্দ্ব, অতঃপর মুসলিম-ক্রুসেডারদের দ্বন্দ্ব, এরপর উসমানী-ইউরোপিয়ানদের দ্বন্দ্ব- ইতিহাসের নানা পর্বে এই দুই শক্তি বিকশিত হয়েছে এই রূপে। বর্তমান কালে এসে পরস্পর প্রতিপক্ষ এই শিবির ভাগ হয়েছে যেই রূপে তাতে প্রথম শিবির অর্থাৎ পাশ্চাত্যের শিবিরে রয়েছে ইউরোপ আমেরিকা এবং দ্বিতীয় শিবির অর্থাৎ প্রাচ্যে রয়েছে এশিয়া ও আফ্রিকা।

সুতরাং শব্দটির অর্থ করতে পারি এভাবে: ইসতেশরাক মানে পাশ্চাত্য কর্তৃক প্রাচ্যকে কামনা করা। অর্থাৎ প্রাচ্য পাশ্চাত্যের সম্পর্ক। এই সম্পর্কের কর্তা হচ্ছে পাশ্চাত্য।

কিন্তু এই সম্পর্কের ধরণ কী এবং সম্পর্ক পাতানোর ক্ষেত্রে কর্তার মনে কী আকাঙ্ক্ষা কাজ করে? প্রাচ্যবিদ্যাকে যারা একাডেমিক, জ্ঞান-তাত্ত্বিক জায়গা থেকে বিচার করেন তারা বলেন, পশ্চিমা পণ্ডিতদের প্রাচ্য পাঠ, প্রাচ্যকে জানা, প্রাচ্যের ইতিহাস-সভ্যতা-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার নামই প্রাচ্যবিদ্যা। আর যারা বিষয়টি বিচার করেন রাজনৈতিক জায়গা থেকে তারা বলেন, প্রাচ্যবিদ্যা মানে জ্ঞানগতভাবে পশ্চিমের প্রাচ্যকে আত্মস্থ করণ এবং তার মধ্য দিয়ে তার ওপর আধিপত্ব বিস্তার।

আমি মনে করি প্রাচ্যবিদদের প্রাচ্য নিয়ে কাজগুলো আমাদেরকে প্রাচ্যবিদ্যা বুঝতে সহযোগিতা করতে পারে। প্রাচ্যবিদদের কর্ম বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তারা সমগ্র প্রাচ্য নয়, সর্বাধিক মনোযোগ দিয়েছেন প্রাচ্যের একটি বিষয়ের দিকে, সেটা হচ্ছে আরব এবং ইসলাম।

প্রাচ্যবিদ্যার এই দিকটির প্রতি লক্ষ্য রেখেই কোনো কোনো গবেষক প্রাচ্যবিদ্যাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন: ব্যাপক এবং বিশেষ। ব্যাপক প্রাচ্যবিদ্যা কাজ করে ব্যাপকভাবে প্রাচ্যের সভ্যতা-সমাজ-সংস্কৃতি-ভাষা-সাহিত্য-ধর্ম-সমাজ-অর্থনীতি নিয়ে। আর বিশেষ প্রাচ্যবিদ্যা কাজ করে প্রাচ্যের একটি বিশেষ অংশ অর্থাৎ আরব সভ্যতা ও ইসলাম নিয়ে। পরবর্তীতে আমরা দেখব এই বিশেষ প্রাচ্যবিদ্যা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

আরব সভ্যতা ও ইসলাম নিয়ে প্রাচ্যবিদদের লেখা-গবেষণাগুলো পড়লে দেখা যায়, নিছক জ্ঞান অর্জনের আগ্রহে বা অন্য কোনো সদিচ্ছা নিয়ে তারা ইসলাম নিয়ে কাজ করেন নি। মূলত এই প্রাচ্যবিদরা শুরুতেই আরব সভ্যতা ও ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নিয়েই কাজ শুরু করেন এবং সচেতন ও পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন দিক থেকে তার বিরুদ্ধে কাজ করেন। বর্তমানে ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত ভুল বিকৃত ধারণাগুলোর অধিকাংশের জন্ম এই প্রাচ্যবিদ্যার গর্ভে। ধর্ম সচেতন মুসলিমরা যে প্রাচ্যবিদ্যা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে শুরু করেছেন তার উৎস এই দুঃখজনক বাস্তবতা। বিভিন্ন মুসলিম দেশে জাগ্রত নানা ইসলামী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যখন ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এক নতুন প্রজন্মের বিকাশ ঘটল তখন মুসলিম সমাজে প্রাচ্যবিদ্যা সম্পর্কে এই নেতিবাচক ধারণা আরো সচেতন ও সংঘটিত বিকাশ লাভ করে। এই প্রজন্ম প্রাচ্যবিদ্যার চরিত্র, প্রাচ্যবিদদের লক্ষ্য এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রাচ্যবিদদের লেখা গ্রন্থ পাঠের বিপদ সম্পর্কে মুসলিম সমাজকে সচেতন করে তুললেন। ফলে ইসলামী বিশ্বে প্রাচ্যবিদ্যা গ্রহণযোগ্যতা হারাল। ‘প্রাচ্যবিদ্যা’ ও ‘প্রাচ্যবিদ’ শব্দগুলো পরিণত হলো ঘৃণ্যতম শব্দে। এই সময়েই আমরা দেখতে পাই যে, পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম নতুন দু’টি শব্দ তৈরি করল, ‘মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা’ ‘মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ’। আরব, ইসলাম নিয়ে গবেষণা হয়ে উঠল ‘মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা’ এই বিষয়ের পশ্চিমা গবেষক, ‘প্রাচ্যবিদ’ বাদ দিয়ে নতুন নাম গ্রহণ করলেন ‘মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ’। বলাবাহুল্য প্রাচ্যবিদ্যার বিষয় ও লক্ষ্য কিন্তু অভিন্নই থাকল; বদলে গেল শুধু তার নাম। ‘প্রাচ্যবিদ্যা’ ও ‘মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা’ মূল স্বভাবে এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যে একই বস্তু।

‘মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা’ নতুন এই পরিভাষাটির উদ্ভব ঘটে পঞ্চাশের দশকের পর থেকে। শব্দটি জন্মদাতা যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগঠনই পরিকল্পিতভাবে তৈরি করে বিভিন্ন বিষয়ের ‘মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের’।

‘প্রাচ্যবিদ’ শব্দটির সর্বপ্রথম ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়, প্রাচ্যের এক চার্চ সদস্যের ক্ষেত্রে ১৬৩০ সালে। এরপর ১৬৯০ এ স্যামুয়েল ক্লার্ক প্রাচ্যের কয়েকটি ভাষা শিখে ‘প্রাচ্যবিদ’ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠেন।

শব্দটি ইংরেজি ডিকশনারিতে প্রবেশ করে ১৭৭৯ সালে। ফরাসী একাডেমির শব্দকোষে ঢুকে ১৮৩৮ সালে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন