HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
যিশু কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন
লেখকঃ ডা. জাকির নায়েক
যেহেতু এ বইটি OCR করে ইউনিকোড ওয়ার্ড ফাইল করা। OCR লেখাগুলোতে মাঝে মাঝে আরবি মিস যায়। কখন কখন OCR করা লেখাতে আরবি ভুলও থাকতে পারে। ই-বুকটিতে আরবি লেখা রিমোভ করে দেয়া হয়েছে, কিন্তু আরবি লেখার বাংলা অর্থ ঠিকই রয়েছে।
যারা আরবি সহ বইটি পড়তে চান তারা হার্ড কপি বই কিনে নিতে পারেন।
পাঠকগণ এটির জন্য আমাকে ভুল বুজবেন না।
যারা আরবি সহ বইটি পড়তে চান তারা হার্ড কপি বই কিনে নিতে পারেন।
পাঠকগণ এটির জন্য আমাকে ভুল বুজবেন না।
অনেকদিন থেকে মনের গভীরে দুটো ইচ্ছে পোষণ করে আসছিলাম; কিন্তু তা পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। একটি ইচ্ছে ছিল কলকাতার ২০০৮ বইমেলায় যাওয়া, আর দ্বিতীয় ইচ্ছে ছিল মুম্বাই গিয়ে ডা. জাকির নায়েকের সাথে সাক্ষাৎ করা। আল্লাহর মেহেরবাণীতে অবশেষে কলকাতা যাওয়ার একটা সুযোগ হলো; কিন্তু সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে দ্বিতীয় ইচ্ছেটি এ যাত্রায় পূরণ করা গেল না।
অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে, ০৩-১২-২০০৮ তারিখে হজ্ব পালন অবস্থায় কাবা ঘরের চত্বরে জমজম টাওয়ারে ডা. জাকির নায়েকের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে দ্বিতীয় ইচ্ছেটি পূরণ হয়। আলহামদুলিল্লাহ।
কলকাতা বইমেলা- ২০০৮-এ আসতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে হলো। মনে হলো আরো আগেই মেলায় আসা উচিত ছিল। অনেক তারকাসমৃদ্ধ বইয়ের মাঝে ডা. জাকির নায়েকের বেশ ক’টি বইও দেখলাম জ্বলজ্বল করছে। তবে সব বই-ই ইংরেজি ভাষায়। ভাবলাম জাকির নায়েকের সাথে তো আর এ যাত্রায় দেখা করা সম্ভব হলো না। তার কিছু বই বাংলাদেশে নিয়ে যাই এবং সেগুলো বাংলায় ভাষান্তর করে আমাদের দেশের পাঠকদের হাতে পৌছিয়ে দেই। তার সম্পর্কে, তার মেধা ও যোগ্যতা এবং দ্বীনী দাওয়াতের কৌশল সম্পর্কে আমার দেশের জনগণকে অবহিত করতে পারলে এবং এতে করে যদি কিছুলোকও দ্বীনের পথে এগিয়ে আসে, তাহলে এটাই আমার নাজাতের উসিলা হয়ে যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ।
বাংলা ভাষায় ডা. জাকির নায়েকের দু’চারটা বই বিক্ষিপ্তভাবে বের হয়েছে। আমাদের পিস পাবলিকেশন হতেও বিষয়ভিত্তিক ২৮ খানা বই বাজারে রয়েছে। তবে ব্যাপক পাঠক চাহিদার জন্য ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র নামক ১, ২, ৩ এবং উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর ৪র্থ শিরোনামে পুস্তক ইতোমধ্যেই প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি। এতে ডা. জাকির নায়েক কর্তৃক রচিত অধিকাংশ বইয়ের সমাহার ঘটেছে। আশা করি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর পাঠক মহলের অন্তরের নানা প্রশ্ন ও তার সমাধান পাবে। পরিশেষে ডা. জাকির নায়েকের বইগুলোর ব্যাপক প্রচার আবশ্যক কামনা করি।
তারপর যে কথাটি না বললেই নয়, পিস পাবলিকেশন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখনো নবীন। মানুষ ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নয়। তদুপরি বিভিন্ন সংকট-সমস্যার কারণে কিছু ভুল-ভ্রান্তি থেকে যাওয়া অসম্ভব নয়। সম্মানিত পাঠকদের দৃষ্টিগোচর হলে আমাদেরকে অবহিত করলে ইনশাআল্লাহ আমরা এটাকে স্বাগত জানাব এবং পরবর্তী সংস্করণে তা শুধরে নেবো। পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে দ্বীনী দাওয়াতের কাজের উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি কামনা করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনে নাজাতের আশা রেখে শেষ করছি। আমিন।
নভেম্বর, ২০০৯
–প্রকাশক
অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে, ০৩-১২-২০০৮ তারিখে হজ্ব পালন অবস্থায় কাবা ঘরের চত্বরে জমজম টাওয়ারে ডা. জাকির নায়েকের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে দ্বিতীয় ইচ্ছেটি পূরণ হয়। আলহামদুলিল্লাহ।
কলকাতা বইমেলা- ২০০৮-এ আসতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে হলো। মনে হলো আরো আগেই মেলায় আসা উচিত ছিল। অনেক তারকাসমৃদ্ধ বইয়ের মাঝে ডা. জাকির নায়েকের বেশ ক’টি বইও দেখলাম জ্বলজ্বল করছে। তবে সব বই-ই ইংরেজি ভাষায়। ভাবলাম জাকির নায়েকের সাথে তো আর এ যাত্রায় দেখা করা সম্ভব হলো না। তার কিছু বই বাংলাদেশে নিয়ে যাই এবং সেগুলো বাংলায় ভাষান্তর করে আমাদের দেশের পাঠকদের হাতে পৌছিয়ে দেই। তার সম্পর্কে, তার মেধা ও যোগ্যতা এবং দ্বীনী দাওয়াতের কৌশল সম্পর্কে আমার দেশের জনগণকে অবহিত করতে পারলে এবং এতে করে যদি কিছুলোকও দ্বীনের পথে এগিয়ে আসে, তাহলে এটাই আমার নাজাতের উসিলা হয়ে যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ।
বাংলা ভাষায় ডা. জাকির নায়েকের দু’চারটা বই বিক্ষিপ্তভাবে বের হয়েছে। আমাদের পিস পাবলিকেশন হতেও বিষয়ভিত্তিক ২৮ খানা বই বাজারে রয়েছে। তবে ব্যাপক পাঠক চাহিদার জন্য ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র নামক ১, ২, ৩ এবং উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর ৪র্থ শিরোনামে পুস্তক ইতোমধ্যেই প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি। এতে ডা. জাকির নায়েক কর্তৃক রচিত অধিকাংশ বইয়ের সমাহার ঘটেছে। আশা করি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর পাঠক মহলের অন্তরের নানা প্রশ্ন ও তার সমাধান পাবে। পরিশেষে ডা. জাকির নায়েকের বইগুলোর ব্যাপক প্রচার আবশ্যক কামনা করি।
তারপর যে কথাটি না বললেই নয়, পিস পাবলিকেশন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখনো নবীন। মানুষ ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নয়। তদুপরি বিভিন্ন সংকট-সমস্যার কারণে কিছু ভুল-ভ্রান্তি থেকে যাওয়া অসম্ভব নয়। সম্মানিত পাঠকদের দৃষ্টিগোচর হলে আমাদেরকে অবহিত করলে ইনশাআল্লাহ আমরা এটাকে স্বাগত জানাব এবং পরবর্তী সংস্করণে তা শুধরে নেবো। পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে দ্বীনী দাওয়াতের কাজের উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি কামনা করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনে নাজাতের আশা রেখে শেষ করছি। আমিন।
নভেম্বর, ২০০৯
–প্রকাশক
ডা. জাকির আব্দুল করিম নায়েক ১৯৬৫ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.বি.বি.এস ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে পেশায় একজন ডাক্তার হলেও ১৯৯১ সাল থেকে তিনি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচারে একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশ করার ফলে চিকিৎসা পেশা থেকে অব্যাহতি নেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের আলোকে বৈজ্ঞানিক, গঠনমূলক যুক্তি ও অন্যান্য প্রমাণাদির মাধ্যমে তিনি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াসী হন। এ সময়ে ইসলামের দাওয়াতের পাশাপাশি অমুসলিম ও অসচেতন মুসলিম বিশেষ করে শিক্ষিত মুসলিমদের মধ্য থেকে ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্তিপূর্ণ ধারণা ও বিশ্বাস দূরীকরণার্থে ভারতের মুম্বাইয়ে তিনি ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আই.আর.এফ) নামক একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান চালু করেন।
উল্লেখ্য যে, ইসলাম ও তুলনামূলক অন্যান্য ধর্মের ওপরে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্যাবলি ইসলামিক রিচার্স ফাউন্ডেশনের সংগ্রহে রয়েছে। পরবর্তীতে তাঁরই উদ্যোগে আই.আর.এফ এডুকেশনাল ট্রাস্ট’ ও ‘ইসলামিক ডিমেনসন’ নামক দুটি সংস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। এজন্য আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক (বিশেষত তাদের নিজস্ব টিভি নেটওয়ার্ক) ‘Peace TV’, ইন্টারনেট এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের কাছে এটি ইসলামের প্রকৃত রূপকে উপস্থাপনে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গৌরবান্বিত আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের পাশাপাশি মানবীয় কারণ, যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সাপেক্ষে এটি প্রকৃত সত্য সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষের বোধগম্যতা ও ইসলামের শিক্ষার শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করে।
ডা. জাকির মূলত ইসলামের দাঈ’র অনন্য দৃষ্টান্ত। ‘ইসলামিক রিচার্স ফাউন্ডেশন’ গঠন ও তার পরিচালনার কঠিন সংগ্রামের পেছনে তিনিই প্রধান তদারককারী। আধুনিক ভাবধারার এই পণ্ডিতের ইসলাম ও তুলনামূলক অন্যান্য ধর্মের বিশ্লেষণে বিশ্ববিখ্যাত সুবক্তা ও বিশিষ্ট লেখক হিসেবেও জুড়ি নেই। তার বক্তব্যের পক্ষে ব্যাপকভাবে অক্ষরে অক্ষরে গৌরবান্বিত আল-কুরআন, সহীহ্ হাদীস ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে তথ্য ও প্রমাণপঞ্জি পৃষ্ঠা নম্বর, খণ্ড ইত্যাদিসহ উল্লেখ করার কারণে যে কেউ তাঁর বক্তব্য বা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করুক বা তার এ পর্ব শ্রবণ করুক না কেন, সে বিস্মিত ও অভিভূত না হয়ে পারে না। জনসমক্ষে আলোচনার সুতীক্ষ্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য উত্তর প্রদানের জন্য তিনি সুপ্রসিদ্ধ।
অন্যান্য ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা (বিতর্ক) ও সংলাপের সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় আল্লাহর রহমতে তিনি সফলতার সাথে বিজয়ী হয়েছেন। ২০০০ সালের ১ এপ্রিল আমেরিকার শিকাগো শহরের আই.সি.এন.এ.ই কনফারেন্সে ‘বিজ্ঞানের আলোকে বাইবেল ও কুরআন’ বিষয়ে এক আমেরিকান চিকিৎসক ও খ্রিস্টানধর্ম প্রচারক ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল-এর সঙ্গে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল হচ্ছেন সেই লেখক যিনি তিন বছর ধরে গবেষণা করার পর ‘ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন ও বাইবেল’ (১৯৯২ সালে ১ম সংস্করণ এবং ২০০০ সালে ২য় সংস্করণ প্রকাশিত হয়) নামক দুটি গ্রন্থ লিখতে সমর্থ হন, যে বইটিকে তিনি ১৯৭৬ সালে ডা. মরিস বুকাইলির লেখা ‘বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান’ নামক বইটির উত্থাপিত অভিযোগগুলোর খণ্ডনকারী হিসেবে ধারণা করেন। শেখ আহমাদ দীদাত ১৯৯৪ সালে ডা. জাকির নায়েককে ইসলাম ও তুলনামূলক অন্যান্য ধর্ম বিষয়ে বিশ্ববিখ্যাত বক্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং ২০০০ সালের মে মাসে দাওয়াহ্ ও তুলনামূলক অন্যান্য ধর্মের ওপর গবেষণার জন্য ‘হে তরুণ! তুমি যা চার বছরে করেছ, তা করতে আমার চল্লিশ বছর ব্যয় হয়েছে- ‘আলহামদুলিল্লাহ’ খোদাই করা একটি স্মারক প্রদান করেন।
জনসমক্ষে আলোচনার জন্য ডা. জাকির পোপ বেনেডিক্টকে চ্যালেঞ্জ করেন, যা সারা বিশ্ব অবলোকন করেছে। বেনেডিক্ট নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক ও বিতর্কিত মন্তব্য করায় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ স্ফুলিঙ্গের মতো দাউদাউ করে জ্বলছিল। তাই মুসলিমদের এ উদ্বেগ নিবারণ করতে পোপ বিশটি ইসলামিক দেশ থেকে কূটনীতিকদেরকে রোমের দক্ষিণে তার গ্রীষ্মকালীন বাসভবনে আলোচনার জন্য আহ্বান জানায়। কিন্তু ডা. জাকির তাকে একটি প্রকাশ্য সংলাপের জন্য আহ্বান করে বলেন যে, ইসলাম সম্পর্কে তার এই বিতর্কিত মন্তব্যের ফলে মুসলিম বিশ্বব্যাপী যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা শান্ত করতে এটি যৎসামান্য প্রচেষ্টা মাত্র। মূলত ইসলাম সম্পর্কে পোপের এ মন্তব্য পূর্বপরিকল্পিত। পোপ জার্মানির রিজেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যা বলেছিলেন সে ব্যাপারে তিনি নিজেই ভালোভাবে অবগত।
তাই মুসলিমদের প্রতি পোপের এ দুঃখ প্রকাশ করাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ারই নামান্তর। পোপের উচিত ছিল গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি তার মন্তব্য তুলে নেয়া। দেখে মনে হয়, প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের পদাঙ্কই পোপ বেনেডিক্ট অনুসরণ করে চলছেন। ডা. জাকির আরো বলেন, “পোপ যদি সত্যিই সঠিক সংলাপের মধ্যদিয়ে এ উত্তেজনা শান্ত করতে প্রয়াসী হন, তাহলে তার উচিত হবে জনসমক্ষে একটি প্রকাশ্য বিতর্ক অনুষ্ঠান করা। বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারের সুবিধা সম্বলিত আন্তর্জাতিক টিভি নেটওয়ার্কের ক্যামেরার সামনে পোপ বেনেডিক্ট-এর সঙ্গে আমি জনসমক্ষে প্রকাশ্য সংলাপ বা বিতর্কে অংশ নিতে দৃঢ়ভাবে ইচ্ছুক। এর ফলে সারা বিশ্বের ১ শত কোটি ৩০ লাখ মুসলমান ও ২ শত কোটি খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সেই বিতর্ক অনুষ্ঠান দেখতে ও শুনতে পারবে।
পোপের ইচ্ছেমতোই কুরআন ও বাইবেল-এর যেকোনো বিষয়ের ওপর সংলাপে বা বিতর্কে আমি রাজি। তাছাড়া এটা কেবল বিতর্ক অনুষ্ঠানই হবে না; বরং এখানে উপস্থিত ও অনুপস্থিত দর্শক-শ্রোতার জন্য প্রশ্নোত্তর পর্বও থাকতে হবে। আর এটা পোপের ইচ্ছেমতো কোনো রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে না, যেমনটা তার পূর্বসূরি দ্বিতীয় পোপ জন পল দক্ষিণ আফ্রিকান ইসলামি পণ্ডিত আহমেদ দীদাতের খোলামেলা সংলাপের আহ্বানে চেয়েছিলেন। শেখ দীদাতকে পোপ জন পল তার নিজের কক্ষে এসে বিতর্ক করতে বলেছিলেন।
একটি আন্তঃবিশ্বাসগত সংলাপ কেন রুদ্ধদ্বারের মধ্যে সংঘটিত হবে? উপরন্তু আমার জন্য যদি একটি ইটালিয়ান ভিসা সংগ্রহ করা হয় তাহলে মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসেবে পোপের সাথে বিতর্ক করতে আমি রোম বা ভ্যাটিক্যানে নিজের খরচায়ও যেতে পারি। তবে একথা সবার মনে রাখতে হবে যে, মুসলমানদের নিজস্ব মিডিয়াই হচ্ছে ইসলামের ওপরে আক্রমণের জবাবে প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানার উৎকৃষ্ট উপায়। দুর্ভাগ্যক্রমে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মিডিয়া পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট। সুতরাং আমাদের যদি নিজস্ব মিডিয়া না থাকে তাহলে পশ্চিমারা সাদাকে কালো করে ফেলবে, দিনকে রাত করে ফেলবে, নায়ককে সন্ত্রাসী বানাবে আর সন্ত্রাসীকে বানাবে নায়ক।
রিয়াদে অবস্থিত শ্রীলংকার দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত বহুসংখ্যক রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও শ্রীলংকার জনগণের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা সম্পর্কিত ২০টি সাধারণ প্রশ্ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ডা. জাকির তাঁর বক্তব্যের শেষে এক ইন্টারনেট সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো বলেন।
ষোড়শ পোপ বেনেডিক্ট যদি খ্রিস্টানধর্ম ও বাইবেলের ওপর কোনো বিশ্বাস না রাখেন, তাহলে তার কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়; বরং জনসমক্ষে একটা বড় আকারের খোলামেলা বিতর্কের মাধ্যমে ডা. জাকিরের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা উচিত। কিন্তু পোপের যদি খ্রিস্টানধর্ম ও বাইবেলের ওপর আত্মবিশ্বাস না থাকে অথবা তিনি যদি খ্রিস্টানধর্ম ও বাইবেলকে ততটুকু পরিমাণে বিশ্বাস না করেন যাতে বড় রকমের কোনো বিতর্কে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়; তাহলে মুসলমানদের অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না এই পোপ বেনেডিক্ট তার জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাসের পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে ডা. জাকিরের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে অথবা পদত্যাগ করার মাধ্যমে পরবর্তী পোপকে এ সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করার নিশ্চয়তা দেন। অবশেষে যদি এ বিতর্ক পরিচালিত হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা ইসলাম সম্পর্কে সমগ্র বিশ্বের মানুষের ভুল ধারণা দূর করতে সক্ষম হব এবং সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে ইসলামের সত্যতা ও খ্রিস্টান ধর্মের মিথ্যাচারিতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মুসলমানদের সাথে সংলাপ করার জন্য পোপ বেনেডিক্ট অবশ্য প্রথমাবস্থায় তার আন্তরিক ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন; কিন্তু ডা. জাকিরের আহ্বানের পর থেকে এমন ভঙ্গিমা দেখাচ্ছেন যে, মনে হয় মুসলমানদের সাথে সংলাপের জন্য তিনি কখনো আহ্বানই জানান নি অথবা এ ধরনের কোনো কিছু সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। বিশ্বের অনেক মুসলমান পোপ বেনেডিক্ট-এর সাথে ডা. জাকির নায়েকের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়া যেমন বিভিন্ন জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকার অফিসে ই-মেইল করেছে; কিন্তু তারাও পোপের ভান করছে। তাই সমগ্র মুসলিম বিশ্বের আজ একটাই প্রশ্ন, ডা. জাকির নায়েকের চ্যালেঞ্জে সমগ্র পশ্চিমা মিডিয়া বিশেষ করে পোপ নিজেই কেন এখন নিশ্চুপ?
ডা. জাকির সাধারণত লিখিত কোনো বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন না; বরং সর্বদা জনসমক্ষে বিতর্ক করেন। কারণ, এটা সবার জানা কথা যে, লিখিতভাবে কোনো বিতর্ক করলে তা কখনো শেষ হবার নয়; কিন্তু প্রকাশ্যে বিতর্ক করলে তা কার্যকরীভাবে একটা ফলাফল বয়ে আনে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস বিমানবন্দরের একটি ঘটনায় তাঁর দক্ষতা সম্পর্কে একটি উদাহরণ দেয়া যাক :
১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে অনেক বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে অধিকাংশ মুসলিম বিভিন্ন প্রশ্নের যথোপযুক্ত উত্তর দিতে না পারার জন্য অযথা হয়রানির শিকার হন। কিন্তু ইসলাম ও মানবতার প্রতি অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইন্টারনেট ইউনিভার্সিটি’ কর্তৃক দেয়া পুরস্কার গ্রহণ করতে ১২ অক্টোবর ডা. জাকির নায়েক যখন লসএঞ্জেলস বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তখন তাঁর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে কি-না তা জানতে ইমিগ্রেশন অফিসারের আচরণ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “আমার জন্য সেখানে কোনো সমস্যা ছিল না এবং তাদের সবার ব্যবহার ছিল মনোমুগ্ধকর। কয়েকটি সৌদী সংবাদপত্র ডা. জাকির নায়েকের এ সাক্ষাৎকার নেয়ার পরবর্তী অনুসন্ধানে জানতে পারে যে, লসএঞ্জেলস বিমানবন্দরে অবতরণের পর ডা. জাকিরও তার দাড়ি এবং মাথার টুপির জন্য কাস্টম অফিসারদের দৃষ্টির আড়াল হতে পারেন নি। তাই সাথে সাথে তাকেও প্রশ্ন করার জন্য অনুসন্ধান করা শুরু করে।
যেমন : ১১ সেপ্টেম্বরের আক্রমণ সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চেয়ে ‘জিহাদ’ শব্দটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তখন ডা. জাকির নায়েক বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণ, কুরআন, তালমুদ, তাওরাত (ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ), মহাভারত, ভগবত গীতাসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, জিহাদ শুধু ইসলামিক নয়; বরং বৈশ্বিক একটি বিষয়। এ কথা শুনে কাস্টম অফিসাররা উৎসাহী হয়ে আরো প্রশ্ন করেন। কিন্তু ওদিকে ডা. জাকির তাঁর মেধা, জ্ঞান ও যুক্তি দ্বারা উত্তর দেয়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে এক ঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। অন্যদিকে যেহেতু প্রশ্ন করার কারণে দীর্ঘ লাইনে লোকজন অপেক্ষা করছিল তাই ডা. জাকিরকে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়। যখন তিনি উঠে দাঁড়ান ও কক্ষটি ত্যাগ করেন তখন প্রায় ৭০ জন কাস্টম অফিসার তাদের নিজেদের ধর্ম ও ইসলাম সম্পর্কে জানতে তাঁর পিছে পিছে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে কাস্টম অফিসারগণ বলেন যে, তারা বিস্মিত হয়েছেন এবং তারা জীবনে কখনো এতো জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি দেখেন নি।
আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সাউথ আফ্রিকা, মৌরিতানিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, ঘানা (দক্ষিণ আফ্রিকা) সহ আরো অনেক দেশে এ পর্যন্ত নয়শোরও বেশি বার জনসম্মুখে প্রকাশ্য আলোচনায় বিভিন্ন ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম, খ্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মের ওপর তুলনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। উপরন্তু ভারতেও তিনি অসংখ্য বার বক্তব্য প্রদান করেছেন। যার অধিকাংশ অডিও এবং ভিডিও আকারে এবং ইদানিং বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থাকারে পাওয়া যায়। বিশ্বের একশোরও বেশি দেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টিভি ও স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে ডা. জাকিরকে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। তিনি প্রায় প্রতিনিয়তই সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রিত হন।
ভারতের মিডিয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রয়েছে তার প্রভাব। ভারতীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা যেমন : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইনকিলাব, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, দ্য ডেইলি মিডডে, দ্য এশিয়ান এইজ ছাড়াও অন্যান্য পত্রিকা তাঁর অনেক বক্তব্য প্রকাশ করেছে। বাহরাইন ট্রিবিউন, রিয়াদ ডেইলি, গালফ টাইমস, কুয়েত টাইমসসহ আরো অন্যান্য সংবাদপত্রে ইংরেজি ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় ডা. জাকির নায়েক সম্পর্কে অনেক প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও তাঁর বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি সাধারণত ইংরেজিতে বক্তব্য দেন। তাঁর দর্শক-শ্রোতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের সম্মানিত রাষ্ট্রদূত, আর্মি জেনারেল, রাজনৈতিক নেতা, নামকরা খেলোয়াড়, ধর্মীয় পণ্ডিত, শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ মানুষ। তার অধিকাংশ বক্তব্য ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ‘Peace TV’-এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়। তাঁর বক্তব্যগুলোতে খুবই সাধারণ ভূমিকা রয়েছে এবং একজন আন্তর্জাতিক বক্তা হিসেবে তিনি তার প্রায় সব বক্তব্যে কুরআন ও সহীহ হাদীসের বাণীগুলো বিজ্ঞান ও যুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন। ফলে দর্শক ও শ্রোতারা সহজেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। ধর্মগ্রন্থগুলো সম্পূর্ণভাবে মুখস্থ করার মতো অসাধারণ গুণটি তাঁর সম্পর্কে বিশেষভাবে লক্ষণীয় একটি বিষয়। মনে হয় কুরআন, বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণ, তালমুদ, তাওরাত (ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ), মহাভারত, ম্যানুসম্যারিটি, ভগবতগীতা ও বেদসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের হাজার হাজার পৃষ্ঠা সম্পূর্ণভাবে তার মুখস্থ রয়েছে। তাছাড়াও বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক বিষয় এবং তত্ত্বেও রয়েছে তাঁর পূর্ণ দখলদারিত্ব। কেননা তিনি কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করলে তার পৃষ্ঠা, অধ্যায় ও খণ্ডসহ উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য যে, ইসলাম ও তুলনামূলক অন্যান্য ধর্মের ওপরে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্যাবলি ইসলামিক রিচার্স ফাউন্ডেশনের সংগ্রহে রয়েছে। পরবর্তীতে তাঁরই উদ্যোগে আই.আর.এফ এডুকেশনাল ট্রাস্ট’ ও ‘ইসলামিক ডিমেনসন’ নামক দুটি সংস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। এজন্য আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক (বিশেষত তাদের নিজস্ব টিভি নেটওয়ার্ক) ‘Peace TV’, ইন্টারনেট এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের কাছে এটি ইসলামের প্রকৃত রূপকে উপস্থাপনে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গৌরবান্বিত আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের পাশাপাশি মানবীয় কারণ, যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সাপেক্ষে এটি প্রকৃত সত্য সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষের বোধগম্যতা ও ইসলামের শিক্ষার শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করে।
ডা. জাকির মূলত ইসলামের দাঈ’র অনন্য দৃষ্টান্ত। ‘ইসলামিক রিচার্স ফাউন্ডেশন’ গঠন ও তার পরিচালনার কঠিন সংগ্রামের পেছনে তিনিই প্রধান তদারককারী। আধুনিক ভাবধারার এই পণ্ডিতের ইসলাম ও তুলনামূলক অন্যান্য ধর্মের বিশ্লেষণে বিশ্ববিখ্যাত সুবক্তা ও বিশিষ্ট লেখক হিসেবেও জুড়ি নেই। তার বক্তব্যের পক্ষে ব্যাপকভাবে অক্ষরে অক্ষরে গৌরবান্বিত আল-কুরআন, সহীহ্ হাদীস ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে তথ্য ও প্রমাণপঞ্জি পৃষ্ঠা নম্বর, খণ্ড ইত্যাদিসহ উল্লেখ করার কারণে যে কেউ তাঁর বক্তব্য বা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করুক বা তার এ পর্ব শ্রবণ করুক না কেন, সে বিস্মিত ও অভিভূত না হয়ে পারে না। জনসমক্ষে আলোচনার সুতীক্ষ্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য উত্তর প্রদানের জন্য তিনি সুপ্রসিদ্ধ।
অন্যান্য ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা (বিতর্ক) ও সংলাপের সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় আল্লাহর রহমতে তিনি সফলতার সাথে বিজয়ী হয়েছেন। ২০০০ সালের ১ এপ্রিল আমেরিকার শিকাগো শহরের আই.সি.এন.এ.ই কনফারেন্সে ‘বিজ্ঞানের আলোকে বাইবেল ও কুরআন’ বিষয়ে এক আমেরিকান চিকিৎসক ও খ্রিস্টানধর্ম প্রচারক ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল-এর সঙ্গে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল হচ্ছেন সেই লেখক যিনি তিন বছর ধরে গবেষণা করার পর ‘ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন ও বাইবেল’ (১৯৯২ সালে ১ম সংস্করণ এবং ২০০০ সালে ২য় সংস্করণ প্রকাশিত হয়) নামক দুটি গ্রন্থ লিখতে সমর্থ হন, যে বইটিকে তিনি ১৯৭৬ সালে ডা. মরিস বুকাইলির লেখা ‘বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান’ নামক বইটির উত্থাপিত অভিযোগগুলোর খণ্ডনকারী হিসেবে ধারণা করেন। শেখ আহমাদ দীদাত ১৯৯৪ সালে ডা. জাকির নায়েককে ইসলাম ও তুলনামূলক অন্যান্য ধর্ম বিষয়ে বিশ্ববিখ্যাত বক্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং ২০০০ সালের মে মাসে দাওয়াহ্ ও তুলনামূলক অন্যান্য ধর্মের ওপর গবেষণার জন্য ‘হে তরুণ! তুমি যা চার বছরে করেছ, তা করতে আমার চল্লিশ বছর ব্যয় হয়েছে- ‘আলহামদুলিল্লাহ’ খোদাই করা একটি স্মারক প্রদান করেন।
জনসমক্ষে আলোচনার জন্য ডা. জাকির পোপ বেনেডিক্টকে চ্যালেঞ্জ করেন, যা সারা বিশ্ব অবলোকন করেছে। বেনেডিক্ট নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক ও বিতর্কিত মন্তব্য করায় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ স্ফুলিঙ্গের মতো দাউদাউ করে জ্বলছিল। তাই মুসলিমদের এ উদ্বেগ নিবারণ করতে পোপ বিশটি ইসলামিক দেশ থেকে কূটনীতিকদেরকে রোমের দক্ষিণে তার গ্রীষ্মকালীন বাসভবনে আলোচনার জন্য আহ্বান জানায়। কিন্তু ডা. জাকির তাকে একটি প্রকাশ্য সংলাপের জন্য আহ্বান করে বলেন যে, ইসলাম সম্পর্কে তার এই বিতর্কিত মন্তব্যের ফলে মুসলিম বিশ্বব্যাপী যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা শান্ত করতে এটি যৎসামান্য প্রচেষ্টা মাত্র। মূলত ইসলাম সম্পর্কে পোপের এ মন্তব্য পূর্বপরিকল্পিত। পোপ জার্মানির রিজেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যা বলেছিলেন সে ব্যাপারে তিনি নিজেই ভালোভাবে অবগত।
তাই মুসলিমদের প্রতি পোপের এ দুঃখ প্রকাশ করাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ারই নামান্তর। পোপের উচিত ছিল গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি তার মন্তব্য তুলে নেয়া। দেখে মনে হয়, প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের পদাঙ্কই পোপ বেনেডিক্ট অনুসরণ করে চলছেন। ডা. জাকির আরো বলেন, “পোপ যদি সত্যিই সঠিক সংলাপের মধ্যদিয়ে এ উত্তেজনা শান্ত করতে প্রয়াসী হন, তাহলে তার উচিত হবে জনসমক্ষে একটি প্রকাশ্য বিতর্ক অনুষ্ঠান করা। বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারের সুবিধা সম্বলিত আন্তর্জাতিক টিভি নেটওয়ার্কের ক্যামেরার সামনে পোপ বেনেডিক্ট-এর সঙ্গে আমি জনসমক্ষে প্রকাশ্য সংলাপ বা বিতর্কে অংশ নিতে দৃঢ়ভাবে ইচ্ছুক। এর ফলে সারা বিশ্বের ১ শত কোটি ৩০ লাখ মুসলমান ও ২ শত কোটি খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সেই বিতর্ক অনুষ্ঠান দেখতে ও শুনতে পারবে।
পোপের ইচ্ছেমতোই কুরআন ও বাইবেল-এর যেকোনো বিষয়ের ওপর সংলাপে বা বিতর্কে আমি রাজি। তাছাড়া এটা কেবল বিতর্ক অনুষ্ঠানই হবে না; বরং এখানে উপস্থিত ও অনুপস্থিত দর্শক-শ্রোতার জন্য প্রশ্নোত্তর পর্বও থাকতে হবে। আর এটা পোপের ইচ্ছেমতো কোনো রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে না, যেমনটা তার পূর্বসূরি দ্বিতীয় পোপ জন পল দক্ষিণ আফ্রিকান ইসলামি পণ্ডিত আহমেদ দীদাতের খোলামেলা সংলাপের আহ্বানে চেয়েছিলেন। শেখ দীদাতকে পোপ জন পল তার নিজের কক্ষে এসে বিতর্ক করতে বলেছিলেন।
একটি আন্তঃবিশ্বাসগত সংলাপ কেন রুদ্ধদ্বারের মধ্যে সংঘটিত হবে? উপরন্তু আমার জন্য যদি একটি ইটালিয়ান ভিসা সংগ্রহ করা হয় তাহলে মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসেবে পোপের সাথে বিতর্ক করতে আমি রোম বা ভ্যাটিক্যানে নিজের খরচায়ও যেতে পারি। তবে একথা সবার মনে রাখতে হবে যে, মুসলমানদের নিজস্ব মিডিয়াই হচ্ছে ইসলামের ওপরে আক্রমণের জবাবে প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানার উৎকৃষ্ট উপায়। দুর্ভাগ্যক্রমে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মিডিয়া পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট। সুতরাং আমাদের যদি নিজস্ব মিডিয়া না থাকে তাহলে পশ্চিমারা সাদাকে কালো করে ফেলবে, দিনকে রাত করে ফেলবে, নায়ককে সন্ত্রাসী বানাবে আর সন্ত্রাসীকে বানাবে নায়ক।
রিয়াদে অবস্থিত শ্রীলংকার দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত বহুসংখ্যক রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও শ্রীলংকার জনগণের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা সম্পর্কিত ২০টি সাধারণ প্রশ্ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ডা. জাকির তাঁর বক্তব্যের শেষে এক ইন্টারনেট সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো বলেন।
ষোড়শ পোপ বেনেডিক্ট যদি খ্রিস্টানধর্ম ও বাইবেলের ওপর কোনো বিশ্বাস না রাখেন, তাহলে তার কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়; বরং জনসমক্ষে একটা বড় আকারের খোলামেলা বিতর্কের মাধ্যমে ডা. জাকিরের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা উচিত। কিন্তু পোপের যদি খ্রিস্টানধর্ম ও বাইবেলের ওপর আত্মবিশ্বাস না থাকে অথবা তিনি যদি খ্রিস্টানধর্ম ও বাইবেলকে ততটুকু পরিমাণে বিশ্বাস না করেন যাতে বড় রকমের কোনো বিতর্কে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়; তাহলে মুসলমানদের অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না এই পোপ বেনেডিক্ট তার জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাসের পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে ডা. জাকিরের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে অথবা পদত্যাগ করার মাধ্যমে পরবর্তী পোপকে এ সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করার নিশ্চয়তা দেন। অবশেষে যদি এ বিতর্ক পরিচালিত হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা ইসলাম সম্পর্কে সমগ্র বিশ্বের মানুষের ভুল ধারণা দূর করতে সক্ষম হব এবং সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে ইসলামের সত্যতা ও খ্রিস্টান ধর্মের মিথ্যাচারিতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মুসলমানদের সাথে সংলাপ করার জন্য পোপ বেনেডিক্ট অবশ্য প্রথমাবস্থায় তার আন্তরিক ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন; কিন্তু ডা. জাকিরের আহ্বানের পর থেকে এমন ভঙ্গিমা দেখাচ্ছেন যে, মনে হয় মুসলমানদের সাথে সংলাপের জন্য তিনি কখনো আহ্বানই জানান নি অথবা এ ধরনের কোনো কিছু সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। বিশ্বের অনেক মুসলমান পোপ বেনেডিক্ট-এর সাথে ডা. জাকির নায়েকের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়া যেমন বিভিন্ন জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকার অফিসে ই-মেইল করেছে; কিন্তু তারাও পোপের ভান করছে। তাই সমগ্র মুসলিম বিশ্বের আজ একটাই প্রশ্ন, ডা. জাকির নায়েকের চ্যালেঞ্জে সমগ্র পশ্চিমা মিডিয়া বিশেষ করে পোপ নিজেই কেন এখন নিশ্চুপ?
ডা. জাকির সাধারণত লিখিত কোনো বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন না; বরং সর্বদা জনসমক্ষে বিতর্ক করেন। কারণ, এটা সবার জানা কথা যে, লিখিতভাবে কোনো বিতর্ক করলে তা কখনো শেষ হবার নয়; কিন্তু প্রকাশ্যে বিতর্ক করলে তা কার্যকরীভাবে একটা ফলাফল বয়ে আনে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস বিমানবন্দরের একটি ঘটনায় তাঁর দক্ষতা সম্পর্কে একটি উদাহরণ দেয়া যাক :
১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে অনেক বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে অধিকাংশ মুসলিম বিভিন্ন প্রশ্নের যথোপযুক্ত উত্তর দিতে না পারার জন্য অযথা হয়রানির শিকার হন। কিন্তু ইসলাম ও মানবতার প্রতি অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইন্টারনেট ইউনিভার্সিটি’ কর্তৃক দেয়া পুরস্কার গ্রহণ করতে ১২ অক্টোবর ডা. জাকির নায়েক যখন লসএঞ্জেলস বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তখন তাঁর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে কি-না তা জানতে ইমিগ্রেশন অফিসারের আচরণ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “আমার জন্য সেখানে কোনো সমস্যা ছিল না এবং তাদের সবার ব্যবহার ছিল মনোমুগ্ধকর। কয়েকটি সৌদী সংবাদপত্র ডা. জাকির নায়েকের এ সাক্ষাৎকার নেয়ার পরবর্তী অনুসন্ধানে জানতে পারে যে, লসএঞ্জেলস বিমানবন্দরে অবতরণের পর ডা. জাকিরও তার দাড়ি এবং মাথার টুপির জন্য কাস্টম অফিসারদের দৃষ্টির আড়াল হতে পারেন নি। তাই সাথে সাথে তাকেও প্রশ্ন করার জন্য অনুসন্ধান করা শুরু করে।
যেমন : ১১ সেপ্টেম্বরের আক্রমণ সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চেয়ে ‘জিহাদ’ শব্দটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তখন ডা. জাকির নায়েক বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণ, কুরআন, তালমুদ, তাওরাত (ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ), মহাভারত, ভগবত গীতাসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, জিহাদ শুধু ইসলামিক নয়; বরং বৈশ্বিক একটি বিষয়। এ কথা শুনে কাস্টম অফিসাররা উৎসাহী হয়ে আরো প্রশ্ন করেন। কিন্তু ওদিকে ডা. জাকির তাঁর মেধা, জ্ঞান ও যুক্তি দ্বারা উত্তর দেয়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে এক ঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। অন্যদিকে যেহেতু প্রশ্ন করার কারণে দীর্ঘ লাইনে লোকজন অপেক্ষা করছিল তাই ডা. জাকিরকে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়। যখন তিনি উঠে দাঁড়ান ও কক্ষটি ত্যাগ করেন তখন প্রায় ৭০ জন কাস্টম অফিসার তাদের নিজেদের ধর্ম ও ইসলাম সম্পর্কে জানতে তাঁর পিছে পিছে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে কাস্টম অফিসারগণ বলেন যে, তারা বিস্মিত হয়েছেন এবং তারা জীবনে কখনো এতো জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি দেখেন নি।
আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সাউথ আফ্রিকা, মৌরিতানিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, ঘানা (দক্ষিণ আফ্রিকা) সহ আরো অনেক দেশে এ পর্যন্ত নয়শোরও বেশি বার জনসম্মুখে প্রকাশ্য আলোচনায় বিভিন্ন ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম, খ্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মের ওপর তুলনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। উপরন্তু ভারতেও তিনি অসংখ্য বার বক্তব্য প্রদান করেছেন। যার অধিকাংশ অডিও এবং ভিডিও আকারে এবং ইদানিং বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থাকারে পাওয়া যায়। বিশ্বের একশোরও বেশি দেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টিভি ও স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে ডা. জাকিরকে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। তিনি প্রায় প্রতিনিয়তই সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রিত হন।
ভারতের মিডিয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রয়েছে তার প্রভাব। ভারতীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা যেমন : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইনকিলাব, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, দ্য ডেইলি মিডডে, দ্য এশিয়ান এইজ ছাড়াও অন্যান্য পত্রিকা তাঁর অনেক বক্তব্য প্রকাশ করেছে। বাহরাইন ট্রিবিউন, রিয়াদ ডেইলি, গালফ টাইমস, কুয়েত টাইমসসহ আরো অন্যান্য সংবাদপত্রে ইংরেজি ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় ডা. জাকির নায়েক সম্পর্কে অনেক প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও তাঁর বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি সাধারণত ইংরেজিতে বক্তব্য দেন। তাঁর দর্শক-শ্রোতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের সম্মানিত রাষ্ট্রদূত, আর্মি জেনারেল, রাজনৈতিক নেতা, নামকরা খেলোয়াড়, ধর্মীয় পণ্ডিত, শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ মানুষ। তার অধিকাংশ বক্তব্য ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ‘Peace TV’-এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়। তাঁর বক্তব্যগুলোতে খুবই সাধারণ ভূমিকা রয়েছে এবং একজন আন্তর্জাতিক বক্তা হিসেবে তিনি তার প্রায় সব বক্তব্যে কুরআন ও সহীহ হাদীসের বাণীগুলো বিজ্ঞান ও যুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন। ফলে দর্শক ও শ্রোতারা সহজেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। ধর্মগ্রন্থগুলো সম্পূর্ণভাবে মুখস্থ করার মতো অসাধারণ গুণটি তাঁর সম্পর্কে বিশেষভাবে লক্ষণীয় একটি বিষয়। মনে হয় কুরআন, বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণ, তালমুদ, তাওরাত (ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ), মহাভারত, ম্যানুসম্যারিটি, ভগবতগীতা ও বেদসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের হাজার হাজার পৃষ্ঠা সম্পূর্ণভাবে তার মুখস্থ রয়েছে। তাছাড়াও বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক বিষয় এবং তত্ত্বেও রয়েছে তাঁর পূর্ণ দখলদারিত্ব। কেননা তিনি কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করলে তার পৃষ্ঠা, অধ্যায় ও খণ্ডসহ উল্লেখ করেন।
প্যাস্টর রুক্নদ্দিনঃ প্রথমেই বলতে চাই যে, আমার নাম হলো রুক্নি। আর এটা হলো ‘রুক্নদ্দিন’ শব্দের অপভ্রংশ। আমি সাধারণত রুক্নদ্দিন শব্দটা ব্যবহার করি না। অফিশিয়াল কাগজপত্রেও আমার নাম রুক্নি। আমাকে এ নামেই ডাকবেন। যাহোক, আজকের আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা যেত, কিন্তু একদিনে সেটা সম্ভবপর হবে না। তাই আজকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করেছি। কারণ, এভাবে আমরা নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা চালিয়ে গেলে একে অন্যকে সহজে বুঝতে পারব। এ বিষয়টা নির্বাচনের কারণ সম্পর্কে আপনারা জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমি তিনটি বিষয় সম্পর্কে বলেছিলাম। উনারা তন্মধ্যে এ বিষয়টিকে নির্বাচন করেছেন। আপনারা হয়ত জানেন যে, এ বিষয়টা খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসের খুবই মৌলিক একটি বিষয়। এ বিষয়টি নিয়ে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য আছে। মতপার্থক্য থাকলেও ডা. জাকির নায়েকের আহবান অনুযায়ী আমি খোলাখুলি কথা বলতে চাই। তবে অবশ্যই একে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কথা বলব। তাই এখন আমি ক্রস সম্পর্কে খ্রিস্ট ধর্মের বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করব।
আপনারা আপনাদের পছন্দমত যেটা খুশি সেটা গ্রহণ করবেন এবং যেটা খুশী বর্জন করবেন। তবে আমরা একে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান দেখাবো। যদি আমার সাথে একমত না-ও হন, সে ক্ষেত্রেও আপনাকে সম্মান করবো। আর আপনার এ মতামতের প্রতিও আমি সম্মান দেখাবো। এ আলোচনার মধ্যে পবিত্র বাইবেলের কিছু উদ্ধৃতি দিব। তবে এভাবে উদ্ধৃতি দিতে থাকলে সেটা আর শেষ হবে না। কারণ, বাইবেলে প্রায় কয়েকশ অনুচ্ছেদ আছে যেখানে ক্রসের কথা বলা হয়েছে। তাই বাইবেল থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিব, কিন্তু সেই উদ্ধৃতিগুলোর কোন রেফারেঞ্জ দিব না। পবিত্র বাইবেল থেকে প্রসঙ্গক্রমে আমি যে সব উদ্ধৃতি দিব -তা শুধু আলোচনার স্বার্থে। মনে রাখবেন, এখানে আমার উদ্দেশ্য আপনাদের বাইবেল মুখস্ত করানো নয়; বরং আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনারা যাতে আমাদের কথাগুলোর অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন। খ্রিস্ট ধর্মে ক্রসের গুরুত্ব বুঝতে পারেন এবং খ্রিস্ট ধর্মে কেন ক্রসকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়? এর কারণটা কি? কেন এ বিষয়টা এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্রথমে আমি ‘ক্রস’ সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই। ক্রসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেকেই মনে করে যে, ক্রস একটি ফ্যাশন। যেমন আমি গেলাম জাবলি বাজারে। তারপর বিভিন্ন দোকানে ‘ক্রস’ খুঁজতে লাগলাম। অতঃপর একটি দোকান থেকে সোনালী রংয়ের ‘ক্রস’ কিনলাম এবং গলায় ঝুলিয়ে দিলাম। এভাবে ক্রস একটি ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। কেউ হয়ত একুশ ক্যারেট, কেউ বা আঠারো ক্যারেট আবার কেউ সতেরো ক্যারেট সোনার ‘ক্রস’ কিনেন এবং গলায় ঝোলান। এসব ‘ক্রস’ দেখতে খুব সুন্দর ; ফ্যাশনেবল এবং ড্রেসের সাথে ম্যাচ করেছে ইত্যাদি। অনেকেই ‘ক্রস’ সম্পর্কে এমনটাই ভাবে। অনেক খ্রিস্টানও ‘ক্রস’ সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করেন। অনেকদিন পূর্বে আমিও এভাবেই ভাবতাম।
আমি একটি সাধারণ খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নিয়েছি, বড় হয়েছি। তবে বিশ্বাস করা শুরু করেছি ১৬ বছর পূর্ব থেকে। খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে আমি ভারতে আসি নি; বরং এসেছিলাম একজন সাধারণ খ্রিস্টান হিসাবে। তবে এ কথা সত্য যে, ভারতে এসেই আমি একজন প্রকৃত খ্রিস্টান হতে পেরেছি। তাহলে আমি এখানে এসেই যিশুকে বিশ্বাস করেছি। এখন আমি ক্রসের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই।
প্রথমত, ‘ক্রস’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? পবিত্র বাইবেল কখনো বলছে না যে, ক্রস হলো খুব আকর্ষণীয় বিষয়। যেটা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো যায়। প্রকৃত অর্থে পবিত্র বাইবেলে ‘ক্রস’ সম্পর্কে উল্টো কথাই বেশি বলা হয়েছে। বাইবেলের যে অংশটিকে আমরা বলি পুরানো অংশ বা ইহুদীদের বই। বাইবেলের প্রথম অর্ধেকে এটা আছে। ইংরেজী ভাষায় একে বলে ওল্ড টেস্টামেন্ট। সেখানে বলা হয়েছে যে, ‘ক্রস’ জিনিসটা আসলে ভালো নয়। আপনারা হয়ত অবাক হবেন। এখানে বলা হয়েছে যে, ক্রস খুব কুৎসিৎ জিনিস। ক্রস এমন একটা জায়গা, যেখানে দেয়া হয় অভিশাপ। ‘ক্রস’ এমন একটি বিষয়, যেখানে হয়ত কাউকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। কাউকে অভিশাপ দেয়া হয় আবার কাউকে সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। আর ইহুদীদের গ্রন্থেও এমন কথা বলা হয়েছে। বাইবেলের প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, “অভিশপ্ত সেই লোক যাকে গাছে ঝুলানো হয়। এখানে গাছের কথা বলে আসলে বোঝানো হয়েছে একটি ক্রসকে, যা যিশু খ্রিষ্টের সময়কালে সংঘটিত হয়েছিল। তবে এ ক্রসের ব্যাপারটা আমি আপনাদের নিকট পরে ব্যাখ্যা করব।
আপনারা হয়ত জানেন বা নাও জানতে পারেন যে, পবিত্র বাইবেলের দু’টা সেকশন বা শাখা আছে। গোটা বাইবেলে মোট ছেষট্টিটা বই আছে। এ বইগুলো লেখা হয়েছে সব মিলে প্রায় চার হাজার বছর ধরে। তাই বাইবেল একটা বই নয় বরং অনেকগুলো বইয়ের সমষ্টি। আর বাইবেলের প্রথম অংশ অর্থাৎ ইহুদীদের বইগুলো, যেখানে নবীদের কথা আছে। বিভিন্ন নবীগণ তাদের সময়ের কথা আর ইহুদীদের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছেন। আর একেবারে প্রথম বই থেকে আরম্ভ করে বাইবেলে কখনো সরাসরি বলা হয়েছে আবার কখনো পরোক্ষভাবে ক্রসের কথা বলা হয়েছে।
এবার আমরা ক্রসের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করব। কারণ, এ সম্পর্কে, আমি এখন পর্যন্ত আলোকপাত করিনি। তাহলে এবার এ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক। ‘ক্রস’ বিষয়টা এসেছে গসপেল থেকে। সেখানেই পাপ থেকে মুক্তি ব্যাপারটা আলোচিত হয়েছে। আর সেখান থেকেই ‘ক্রস’ বিষয়টা এসেছে। পবিত্র বাইবেল আমাদের বলে যে, মানুষ আসলে পাপী। প্রত্যেক মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই পাপী। আর এ পাপের সৃষ্টি হয়েছে সেই আদমের সময় থেকে। যেমন ধরুন, আমি জন্মেছি তারপর বড় হয়েছি। আর প্রকৃতিক নিয়মেই আমি একজন পাপী। এ কারণেই আমি পাপ করি। কথাবার্তা, ব্যবহার ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে আমি অহরহ পাপ করে বেড়াই। এতদ্ব্যতীত বাইবেল আরও বলেছে যে, যদি মানুষ পাপ করে তাহলে সে মারা যাবে। তার মৃত্যুদণ্ড হয়। আত্মার মৃত্যু আছে আবার শরীরের মৃত্যু আছে ইত্যাদি। অতএব পৃথিবীর সব মানুষকেই এ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। কারণ আমরা পাপী।
আর ঈশ্বর যেহেতু পাপের শাস্তি দেন সেহেতু কোন মানুষই ঈশ্বরের পাশে দাঁড়াতে পারবে না। এক সাথে থাকতে পারবে না। এখন তাহলে আপনারা বুঝতে পারলেন যে, এ পাপ এতই গুরুতর মারাত্মক এবং বিশাল যে, আমি যাই ভাল কাজ করি না কেন সেটা তার তুলনায় খুবই নগণ্য। সেটা দিয়ে আমার জীবনের সব পাপ দূর করা যাবে না। লক্ষ্য করুন, আমি যদি গরীবদের সাহায্য করি সেটা নিঃসন্দেহে ভাল কাজ। কিন্তু এ ভাল কাজটা দিয়ে আমার জীবনের সব পাপ মুছে ফেলা যাবে না। সুতরাং এ কাজটা অনেক ভাল হলেও এর দ্বারা আমার জীবনের সব পাপ মুছে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।
এবার যিশুর বিষয়টিতে আসুন। ঈশ্বর যিশুকে পাঠিয়েছেন একজন নিস্পাপ মানুষ হিসাবে, যে কোন পাপ করেনি। যে মানুষটা কষ্ট করবে কিন্তু পাপ করবে না। পুরোপুরি ব্যতিক্রম। তিনি জীবনে কখনো পাপ করেননি এবং তাকে বিভিন্ন সময় প্রলুব্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি পাপ করেননি। সে জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি তার প্রাপ্য নয়। এ শাস্তি আমাদের প্রাপ্য। তার বেঁচে থাকার কথা ছিল সারা জীবন। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গিতে লক্ষ্য করলে এটা ছিল যিশুখ্রিস্টের বৈশিষ্ট্য। আর মানুষ হিসাবে দেখলে তিনি এ পৃথিবীতেই ছুটে বেড়িয়েছিলেন। অন্যান্য সবার মত জীবিকার জন্য কাজ করেছেন, আবার অনেক কিছুই করেছেন আমাদের সবার মতো। তবে আধ্যাত্মিক দৃষ্টি দিয়ে বলা যায় যে, মৃত্যু জিনিসটা যিশুর প্রাপ্য ছিল না। কারণ, জাগতিক কোন পাপ কখনোই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায় যে, যিশু একজন নিস্পাপ মানুষ। যিশুখ্রিস্ট ঈশ্বরকে মেনেছেন আর পরে তাকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাহলে ঈশ্বরের সুবিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে যিশুর মৃত্যুটা ছিল ঐ পাপের মূল্য।
একজন নিস্পাপ মানুষ যার এ মৃত্যু প্রাপ্য ছিল না কিন্তু মরতে প্রস্তুত ছিলেন অন্য সবার পাপের জন্য। এ পাপের মূল্য দেওয়ার জন্য। সে জন্য তিনি যে মূল্য দিচ্ছেন তাতেই সবপাপ মুছে যাবে। আমরা সবাই যে সব আত্মত্যাগ করি নিজেদের পাপমুক্তির চেষ্টা করি - সেগুলো দিয়ে সব পাপ মুছতে পারব না; কিন্তু যিশু ছিলেন একজন নিস্পাপ মানুষ এবং সারাজীবন ধরে ঈশ্বরের আদেশ পালন করেছেন। সেজন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেন ঈশ্বর স্বয়ং সেটাকে মানুষের পাপের মূল্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন। আর এজন্যই যিশুখ্রিস্টের ‘ক্রস’ খ্রিস্টানদের মৃত্যুটার অধিক গুরুত্বপুর্ণ জিনিস। এ একই কারণে যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুটার প্রয়োজন ছিল। ঈশ্বর এ বিষয়টা পূর্ব থেকেই জানতেন বিধায় যিশুখ্রিষ্টের ‘ক্রস’ হল খ্রিস্টানীয়দের জীবনে সফলতার চাবিকাঠি।
যারা তাকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রেখেছে। বাইবেলে বলা হয়েছে যে, তাদের সব পাপ মুছে গেছে। সুতরাং বুঝা গেল যিশু তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের পাপের মূল্য দিয়ে গেছেন। আর এটাই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের মূল্য অনেক বেশি। সেজন্য খ্রিস্টানদের জীবন থেকে ক্রসটা সরিয়ে ফেললে খ্রিস্ট ধর্মটা টিকে থাকতে পারে না।
তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। শুধু মুসলিমরা নয়, অন্যান্য অনেকেই মনে করেন যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। অবশ্য ডা. জাকির নায়েক আমার চেয়ে অনেক বিস্তারিত জানেন। তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ সম্পর্কে আমি বেশ কিছু কথা বলতে চাই। যদিও ইতোপূর্বে খ্রিস্টানদের জীবনে ক্রসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছি এবং বলেছি যে, ক্রসের কারণেই আমার জীবনের সব পাপ মুছে গিয়েছে। সুতরাং ক্রস মহান ঈশ্বরের উপহার। ঈশ্বর নিজেই এখানে পাপের মূল্য দিয়েছেন। আর তাই তিনি যে মূল্য দিয়েছেন সেটা অনেক মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাপ থেকে মুক্তির জন্য। তেমন আত্মত্যাগ এটা নয়, যেমন আত্মত্যাগ আমি করি। এটা হবে দূষিত আত্মত্যাগ। কিন্তু যিশু একজন নিস্পাপ মানুষ হয়েও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন যেন তিনি একজন সাধারণ পাপী। তিনি পাপীদের শাস্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু তিনি পাপী ছিলেন না। যখন তার আত্মাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তিনি বললেন তুমি মরবে না। ওটা আমাকে দাও। আমিও এখন তোমাদের জন্য মরবো।
এখন আসি বাইবেলে বর্ণিত কয়েকটি ঐতিহাসিক জিনিস যা আমি আপনাদের দেখাবো। বাইবেলের বেশকিছু অনুচ্ছেদ পরোক্ষভাবে যিশুখ্রিস্টের জন্মমৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি অনুচ্ছেদে সরাসরি বলা হয়েছে। আবার কোথাও পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। যেহেতু হাতে সময় কম সেহেতু আমি দুই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
আপনারা হয়ত জানেন যে, পবিত্র বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বই লিখেছিলেন নবী মূসা। এ পাঁচটি বইয়ের প্রথমটির নাম জেনেসিস। এখানে বলা আছে যে, ঈশ্বর কিভাবে এ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তারপরে মানুষ সৃষ্টি করলেন, তখনকার দিনে ব্যাবিলন কেমন ছিল ইত্যাদি? আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আপনাদের বেশিরভাগ লোকই আদম ও হাওয়ার গল্পটি কোথাও না কোথাও শুনেছেন। আদম ও হাওয়া কিভাবে সৃষ্টি হলেন এবং তারা ঈশ্বরের অতি নিকটে অবস্থান করেছিলেন? আদম-হাওয়া ও ঈশ্বরের মাঝখানে কোন বাঁধা ছিল না। সে জন্য আদম-হাওয়া ও ঈশ্বর এক সাথে ছিল, একে অন্যের সাথে কথা বলেছেন। সেখানে সৃষ্টিকর্তার সাথে আদম ও হাওয়া স্বর্গে একসাথে ছিলেন। কেন? কারণ তারা কেউ কোন পাপ করেনি। ঐ সময়টা ছিল পাপের পূর্ববর্তী সময়। তারপর শয়তান একটা শাপের ছদ্মবেশ নিয়ে তথায় আসল এবং তাদেরকে দিয়ে একটা পাপ কাজ করাল।
বাইবেলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। আদম ও হাওয়াকে একটা ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা খেয়েছিলেন। ঐ ফলটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করার বিষয়টি। ঈশ্বর তাদেরকে যে কাজটা করতে নিষেধ করেছিল, তারা ঠিক সেটিই করেছেন। যখন তারা এ কাজটা করল তখন পাপের শুরু হলো। ঐ মুহুর্তেই আদম-হাওয়া এবং ঈশ্বর আলাদা হয়ে গেলেন। অনেকেই বলে থাকেন যে, যদি একবার ঈশ্বরকে দেখতে পেতাম। যদি অন্যরা তাকে দেখে তবে আমি কেন তাদের দেখতে পাব না? এভাবেই অনেকেই ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। কারণ, তার চারপাশে শুধু শয়তানই দেখে। এসব পাপ মানুষই তৈরি করেছে। ঈশ্বর না। মহান ঈশ্বর সবসময় আমাদের প্রতি সুবিচার করে থাকেন। সেরকম কিছু ঘটনার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করছি।
‘যখন আদম ও হাওয়া ঈশ্বরকে অমান্য করল তখন ঈশ্বর খুব রেগে গেলেন সেই সাপের ওপর, হাওয়ার ওপর, আদমের ওপর আর এদের প্রত্যেককেই ঈশ্বর একটা করে অভিশাপ দিলেন। ঈশ্বর সাপকে অভিশাপ দিলেন যে সাপ সব সময়ই মাটির উপর দিয়ে সব সময় গড়িয়ে গড়িয়ে চলবে। আর হাওয়াকে অভিশাপ দিলেন। যে, তুমি তোমার স্বামীকে নিষিদ্ধ ফল খেতে প্রলুব্ধ করেছ তাই এখন থেকে তোমার স্বামী তোমাকে শাসন করবে আর তুমি তার অধীনে থাকবে- তার ওপরে নির্ভর করবে। আর এতদ্ব্যতীতও তুমি সন্তান প্রসবের সময় প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করবে। আর আদমের ক্ষেত্রে এটা হবে যে, সে যখন জমিতে কাজ করবে জমি তাকে সহজে কোন খাবার দিবে না। তাকে ঘাম ঝরাতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। এ খাবার সংগ্রহ করার জন্য। আর তারা মরণশীল হয়ে গেল। তাদের জীবনে মৃত্যু আসল। তারা আর অমর থাকল না। তবে একটা ব্যাপার খুব গুরুত্বপুর্ণ তা হলো ক্রসের ব্যাপার।”
এখানে ক্রসের কথাটি পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে সেটা এখন বলছি। হ্যা! বলা আছে যে, ঈশ্বর আদম-হাওয়াকে অনেক অভিশাপ দেয়ার পর বললেন .......(এটা বুক অব জেনেসিসের ৩য় অধ্যায়ের প্রথম দিকে আছে, আপনারা ইচ্ছা করলে লিখে নিতে পারেন) সে জন্য মহান প্রভু ঈশ্বর তাদেরকে স্বর্গের বাগান থেকে বের করে দিলেন। এখানে আদম ও হাওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে। স্বর্গ থেকে তাদের পৃথিবীতে প্রেরণ করা হল। ঈশ্বর তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে একজন প্রহরী রাখলেন। ঈশ্বর আদমকে তাড়িয়ে দিলেন আর একজন প্রহরীকে বসালেন স্বর্গের সেই বাগানের পূর্ব দরজায়। সেখানকার জীবন বৃক্ষকে পাহারা দেওয়ার জন্য একটা আগুনের তরবারি যার অগ্রভাগে সবদিকেই বিস্তৃত ছিল।
এ বিষয়টার বিবরণ জেনেসিসের ৩য় অধ্যায়ের ২৩ ও ২৪ অনুচ্ছেদে আছে। তাহলে বিষয়টা দাড়াঁল এমন যে, ঈশ্বর তাদেরকে বিভিন্ন রকম শাস্তি দেয়ার পরে অর্থাৎ তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার পরে তাদের স্বর্গের বাগান থেকে বের করে দিলেন। ইডেনের এ বাগানটিকে অনেকেই স্বর্গের বাগান বলে থাকেন। আদম ও হাওয়া এ বাগানের মধ্যে আনন্দ ফুর্তি করতেন। ঈশ্বর তাদেরকে এ বাগান থেকে চিরতরে তাড়িয়ে দিলেন। তারপর ঈশ্বর এ বাগানে প্রবেশের দরজায় কি করলেন? তিনি সেই দরজায় একজন দেবদূতকে বসালেন। দেবদূতদের মধ্যেও অনেক রকম শ্রেণীবিভাগ আছে। এদের নাম চেরোমি। এরা ঈশ্বরের খুব কাছে থাকে। এ দেবদূত স্বর্গের দরজা পাহারা দিতে লাগল। তার হাতে ছিল আগুনের তরবারি। আর সেই তরবারীর মাথা চারদিকে ছড়ানো। যাতে করে সেই বাগানে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
তাহলে এখন স্বর্গের বাগানে প্রবেশের উপায় কি? স্বর্গের বাগানে প্রবেশের একমাত্র উপায় হলো ঐ প্রহরীকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। ঐ প্রহরীর হাতে একটা তরবারী আছে। যেটা দিয়ে সে স্বর্গের বাগানের দরজা পাহারা দিচ্ছে। একজন খ্রিস্টান হিসাবে পবিত্র বাইবেল ব্যাখ্যা করে আমি বুঝেছি যে, স্বর্গের সেই বাগানে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তাকে ঐ তরবারি দিয়ে হত্যা করা হবে। কারণ মহান ঈশ্বর ন্যায়বান আর ন্যায়বিচার বলেই তরবারিটা ঘাড়ের ওপর পড়বে। বিষয়টা বুঝতে পারলেন! এজন্য আদম সেখানে আসতে পারবে না যেহেতু স্বর্গের বাগানে তরবারি হাতে প্রহরী আছে। ঐ তরবারিটা তাকেই হত্যা করবে যে স্বর্গের বাগানে প্রবেশ করতে চাইবে। আর আমরা দেখি যে, যিশু স্বেচ্ছায় তার জীবন দিলেন তাঁর মহান পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী। ঐ তরবারিটা তার ওপর পড়েছিল। আর সে জন্য ঐ দিন থেকেই স্বর্গের বাগানের সেই দরজাটা খুলে গেল।
স্বর্গের দরজা শুধু খ্রিস্টানদের জন্য নয়; বরং তা বিশ্ববাসী সকলের জন্য। তা হলে বুঝতে পারলেন, বলেছেন, আমিই দরজা। তোমরা ঈশ্বরকে চিনতে চাও? আমিই হলাম দরজা। যিশু ঐ তরবারিটাকে তার ঘাড়ে পড়তে দিয়েছিলেন। তাহলে এখানে পরোক্ষভাবে ক্রসের কথা বলা হয়েছে। এখন অন্য বিষয় দিয়ে আলোচনা করি। বাইবেলে ক্রস নিয়ে এমন পরোক্ষ মন্তব্য আছে। আবার বেশ কিছু প্রত্যক্ষ মন্তব্যও আছে। এখানে শুধু ক্রসের কথাই বলছি, অন্য কিছু নয়। অন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি, এটা সেই বিখ্যাত গল্প আমাদের বিশ্বাসীদের সবার পূর্বপুরুষকে নিয়ে। তিনি হলেন ইবরাহীম। এখন এ সম্পর্কে কিছু কথা বলি।
অনেকেই হয়ত এটা জানে না যে, খ্রিস্টান এবং মুসলমান এরা একে অন্যের ভাই। খুব কম লোকেই এ কথাটা জানে। প্রকৃতপক্ষে ভাই। এটা কিন্তু আপনাদের খুশি করার জন্য বলছি না। সত্যি বলছি। খ্রিস্টানরা হল ইবরাহীম নবীর আধ্যাত্বিক উত্তরসূরী। আইজ্যাকের মাধ্যমে। না না দুঃখিত। ইসমাইল। ইসমাইলের আর এক ভাই। তিনি হলেন আইজ্যাক। তাহলে মুসলিম ও খ্রিস্টান আমরা সবাই এসেছি ইবরাহীম থেকে। তারা দুই ভাই। তবে সহোদর না; বরং সৎভাই। তাদের দু’জনের মা আলাদা। তাই যখন মুসলিমদের ভাই বলছি এটা আপনাদের খুশি করার জন্য নয়। আমরা আসলেই ভাই। আমাদের উভয়ের আধ্যাত্মিক পূর্ব পুরুষ হলেন ইবরাহীম। নবী ইবরাহীম। একই মানুষ। ঠিক আছে তো?
প্রথমে এ বিষয়টা সম্পর্কে বলেছিলাম। এভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে কথা বলতে চেষ্টা করব। আমি খুব ভাল আলোচক নই। আকর্ষণীয় কোন কিছু থাকলেও তা আপনাদের জানাব। আচ্ছা এখন আমরা ইবরাহীমের জীবনটা দেখি। ইবরাহীম। তাকে ঈশ্বর পরীক্ষা করেছিলেন স্বীয় পুত্রের মাধ্যমে। আইজ্যাক তথা ইসহাক। আমি জানি আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা বাইবেল সম্পর্কে তেমন জানেন না। সে জন্য মাঝে মধ্যে আমি প্রয়োজন অনুসারে আমি ব্যাখ্যা করব। কারণ আমি জানি যে, আপনাদের অনেকেই বাইবেল পড়েননি। কেউ কেউ হয়ত পড়েছেন। আসলে আমি এখানে খুব বিস্তারিতভাবে বলতে চাচ্ছি না। ঘটনাটা আপনাদের আমি সংক্ষিপ্ত আকারে বলছি। ইবরাহীমকে ঈশ্বর উর নগরী থেকে চলে যেতে বলেছিলেন কারণ সেটা পাপের নগরী ছিল। উর শহরটার অবস্থান বর্তমান ইরাকে, বসরার সন্নিকটে। আমি সেখানে গিয়েছি। জায়গাটা আসলে একটা মরুভূমি। যেখানে এখন কেউ থাকে না। কিছু স্মৃতি স্তম্ভ আছে। তাই এটা যেহেতু পাপের নগরী তাই ঈশ্বর তাকে তা থেকে চলে যেতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তোমাকে এর চেয়ে ভাল জায়গার সন্ধান দিব। সেটা এর চাইতে ভাল নগরী, সবাই জানতেন তারপরও তিনি ঈশ্বরের কথা শুনে চলে গেলেন। ঈশ্বর। তার প্রতিশ্রুতি তখনই পূরণ করলেন না, অনেক সময় নিলেন।
ইবরাহীম অনেক আগেই সারাকে বিয়ে করেছিলেন। আর সারার গর্ভে তাদের কোন সন্তান হয়নি। ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আমি তোমাদের গর্ভে অনেক সন্তান দিব। আকাশের তারকা দেখ। সেখানে কি অনেক তারকা দেখছ না? তেমনি তোমারও অনেক সন্তান হবে। সাগরের তীরে বালুর স্তুপ দেখেছ? তেমনি তোমার অনেক সন্তান হবে। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তিনি অনেক দিন নিঃসন্তান ছিলেন। তারপরও তিনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছেন। তিনি বিশ্বাস হারাননি। বুঝলেন? তারপর অনেকদিন পার হয়ে গেল কিন্তু কোন সন্তান হলো না। এরপর ইবরাহীম হতাশ হয়ে গেলেন। আর ঐ সময়ের একজন লোক একাধিক মহিলাকে বিয়ে করতে পারত। এমনকি তারা তাদের দাস দাসীদেরও বিয়ে করতে পারত। এ ব্যাপারে কোন রকম বাধা-নিষেধ ছিল না।
এমনি একদিন সারা তাঁর স্বামীকে বললেন, আপনি কেন আপনার দাসীদের একজনকে বিয়ে করছেন না? তাহলে আপনার সন্তান হবে। তখন হযরত ইবরাহীম মিশরের এক দাসীকে বিয়ে করলেন তাঁর নাম ছিল হাজেরা। হাজেরার গর্ভে যে সন্তান হলো তার নাম ইসমাইল। এরপর ইবরাহীমের আর একটি পুত্র সন্তান হলো। ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। আর তার প্রথমা স্ত্রী সারা গর্ভবতী হলেন। তিনি আইজ্যাক তথা ইসহাককে জন্ম দিলেন। চিন্তা করুন, এত দিন পর ইবরাহীম এ সন্তান পেয়ে কেমন খুশী হয়েছিলেন? আপনার নিজের ব্যাপার যদি চিন্তা করেন যে, আপনি বিবাহিত। আর যদি ২০/২৫ ধরে আপনি নিঃসন্তান অথচ ঈশ্বর আপনাকে সন্তানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কথা দিয়েছেন।
তাছাড়া মনে করুন, আপনি বড়লোক। সুতরাং আপনি চলে গেলে কে উত্তরাধিকারী হবে? তারপর এত কিছুর পর ২০/২৫ বছর পরে আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হলেন। একটা পুত্র সন্তান হলো। ঐ ছেলেকে আপনি কতখানি ভালবাসবেন? অনেকদিন আপনি ঐ ছেলের জন্য অপেক্ষা করেছেন। ইবরাহীমের ক্ষেত্রেও তেমনিই ঘটেছিল। তাই তিনি স্বীয় পুত্র আইজ্যাক তথা ইসহাককে খুব ভালবাসতেন। তারপর একদিন কি ঘটল। একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটল। অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যাপার বলা যায়। জেনেসিসের ২২ নং অধ্যায়ে এ ঘটনার বিবরণ আছে। এতে বলা হয়েছে, যে, এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর ঈশ্বর ইবরাহীমকে পরীক্ষা করলেন। ঈশ্বর তাকে বললেন ইবরাহীম। তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন। আমি এখানে। তিনি বললেন, তুমি তোমার পুত্র আইজ্যাককে নাও- যাকে তুমি খুব ভালবাস। অতঃপর তাকে নিয়ে মোরাইয়া অঞ্চলে যাও। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তাকে উৎসর্গ করবে। একটি পাহাড়ের উপর উৎসর্গ করবে। যেটার বিবরণ আমি তোমাকে পরে দিব। ইবরাহীমের জন্য এটা একটা দুঃসংবাদ। অনেকদিন অপেক্ষা করার পর। আর আইজ্যাক এখন কিশোর। সে তখন তার বাবার বোঝা বহন করতে পারে। এখানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর বললেন, যে তুমি আইজ্যাককে উৎসর্গ কর। ঠিক আছে?
এবার আমি ঘটনাটি সংক্ষেপে বলি। পুরো ঘটনাটি বিস্তারিত বলছি না। তখন ইবরাহীম মনে দারুন কষ্ট নিয়ে কি করলেন? খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলেন। আইজ্যাককে উৎসর্গ করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাথে নিলেন। যেমন– ছুড়ি, দড়ি, ইত্যাদি। তারপর ঈশ্বরের কথা মত আইজ্যাককে সাথে নিয়ে বের হলেন। তারপর তার ভৃত্যকে সরিয়ে দিলেন। আইজ্যাককে নিয়ে তিনি মোরাইয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন। যেখানে ঈশ্বর তাকে যেতে বলেছেন। যাক এখনই আকর্ষণীয় ঘটনা ঘটেছিল। সে ঘটনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘটনাটি আমি সংক্ষেপে বলছি।
আইজ্যাক তাঁর বাবা ইবরাহীমকে বললেন যে, হে আমার পিতা। ইবরাহীম বললেন! এই তো আমি, আমার পুত্র। আইজ্যাক বলল যে, আপনি কাঠ আর আগুন নিচ্ছেন। কিন্তু কোরবানীর ভেড়া কোথায়? ছেলেটা বলল, আপনি তো আগুন নিয়েছেন আরও নিয়েছেন কাঠ। কিন্তু আমরা দুইজন কেন পাহাড়ে যাচ্ছি? আপনি এমন সময় সাধারণত একটা ভেড়া কোরবানী দেন। সেই ভেড়াটা কোথায়? হ্যাঁ। দেখুন, তারপরে কি ঘটল? তখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার পুত্র! ঈশ্বর নিজেই এখানে আমাদের জন্য একটা ভেড়া সরবরাহ করবেন। তারপর তারা দুইজন পাহাড়ে উঠলেন। এ কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইবরাহীম বিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিজেই এখানে একটা কিছু উৎসর্গ করবেন। দেখুন, তিনি এখানে বলেননি যে, ঈশ্বর এখানে একজনকে উৎসর্গ করবেন; বরং তিনি বললেন, ঈশ্বর নিজে থেকেই এখানে কিছু একটা উৎসর্গ করবেন।
এখন আপনারা যদি পবিত্র বাইবেল পড়েন, নিউ টেস্টামেন্টে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেখতে পাবেন। নিউ টেস্টামেন্ট হলো পবিত্র বাইবেলের দ্বিতীয় অংশ। সেখানে বলা আছে ইবরাহীম বিশ্বাসের সাথেই বলেছিলেন আইজ্যাকের সাথে কথা বলার সময়ে। আর সে রকম ঘটনাই ঘটেছিল। আইজ্যাক জীবিত থেকে মৃত্যু হন নি। তারা পাহাড়ে উঠল। তারপর তারা ঈশ্বরের নির্দেশিত স্থানে আসল। ইবরাহীম সেখানে একটি বেদি বানিয়েছিলেন। সেখানে কাঠগুলি সাজিয়ে রাখলেন এবং আইজ্যাককে বাধলেন। তারপর আইজ্যাককে সেই বেদির উপর সোয়ালেন। লক্ষ্য করুন, আইজ্যাক কিন্তু তখন পালিয়ে যাননি। সে এই কাজে কোন প্রকার বাধা দেন নি। যদিও সে ততদিনে অনেক বড় হয়েছে। তিনি তখন ইচ্ছা করলে পালিয়ে যেতে পারতেন।
এর পর কি ঘটল? যখন ইবরাহীম হাত বাড়িয়ে ঐ ছুরিটা নিয়ে আইজ্যাককে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন তখন একজন দেবদূত তার কাছে এসে বলল, ইবরাহীম, শোন। তিনি সাড়া দিয়ে বললেন, এখানে আমি। দেবদূত বললেন তোমার পুত্রের শরীর স্পর্শ করো না। তার কোন রকম ক্ষতি করো না। কারণ আমরা জানতে পেরেছি যে, তুমি ঈশ্বরকে মানো। ঈশ্বরের আদেশে একমাত্র পুত্রকেও উৎসর্গ করতে দ্বিধা করনি।
তখন ইবরাহীম তাঁর চোখ মেলে দেখলেন যে, তাঁর পিছনেই একটা ভেড়া ঝোঁপের মধ্যে তার শিং আটঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ইবরাহীম তখন সেই ভেড়াটিকে নিয়ে তার ছেলের পরিবর্তে তার ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করলেন। এবার ইবরাহীম ঐ জায়গার নাম দিলেন ঈশ্বরের পাহাড়। ঈশ্বরই সব যোগান দিবেন। এ চরম নাটকীয় ঘটনায় শিক্ষণীয় বা সারমর্ম হলো যে, ইবরাহীম তাঁর ছেলে আইজ্যাককে বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিজে থেকেই কিছু একটা উৎসর্গ করবেন। ঈশ্বর এখানে একটি উৎসর্গ দাবি করেছেন। আমি এখানে নিজে থেকেও কিছু কথা বলছি আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে।
ঈশ্বর দাবি করেছেন একটা উৎসর্গ, কিছু একটা উৎসর্গ করতে হবে। ঈশ্বর স্বয়ং এটা দাবি করেছেন। কিন্তু এখানে উৎসর্গ করার ভেড়াটা কোথায়? ঈশ্বর নিজে থেকেই এখানে একটা কিছু সরবরাহ করবেন। প্রকারান্তে তাই হয়েছিল একই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি আইজ্যাককে মারেন নি, আইজ্যাককে তিনি রক্ষা করেছেন। ঈশ্বর আইজ্যাককে মারার কথা চিন্তা করেননি। পবিত্র বাইবেলে তিনি একথাই বলেছেন। বরং তিনি ইব্রাহীমকে পরীক্ষা করেছিলেন। ঈশ্বর এভাবে বাচ্চাদেরকে উৎসর্গ করেন না। তিনি আইজ্যাককে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তাহলে তিনি কোন আইজ্যাককে কেড়ে নিবেন? ঠিক আছে!
আর তারপর ঈশ্বর অলৌকিক কাজ করলেন। ঈশ্বর একজন দেবদূত পাঠিয়ে ইবরাহীমকে উৎসর্গের কাজে বাধা দিলেন। যাতে আইজ্যাকের বদলে অন্য কিছু উৎসর্গিত হয়। কিন্তু আইজ্যাক যেন বেঁচে থাকেন। আমরা খ্রিস্টানরা এ বিষয়টাকে এভাবেই দেখি। ঈশ্বর আমাকে বাঁচালেন। আমাকে বাঁচালেন মানে আইজ্যাকের জায়গায় আমাকে কল্পনা করুন। যারা যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে তারা আইজ্যাককেও মান্য করে। ঈশ্বর আমাকে সেই পাপের মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচিয়েছেন। আমার উপর একটা মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন। আর ঈশ্বরের সুবিচার দাবি করে যে, পাপের শাস্তি হলো মৃত্যু। বুঝতে পারলেন? আর এটাই হয়ত ঠিক হবে যে, আমি এখন মারা গেলে নরকে যাব। ঠিক আছে। তাই ঈশ্বর এখানে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। যিশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে সেই উৎসর্গ হলেন।
আপনারা যিশুকে দেখেছেন কি? যে যিশুকে বিশ্বাস করেন? আপনি তাকে হৃদয়ে ধারণ করেন? আর এটা যদি সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে ঈশ্বরের সুবিচারকেও ভাল করে বুঝতে পারবেন। এটা আমার ভালোর জন্য। আর অন্য কেউ মারা গেলে সেটা যথেষ্ট নয়। কিন্তু যিশু আমার জন্য স্পেশাল ভাবে মারা যাচ্ছেন। এভাবে অনেক মানুষই একে অপরের জন্য জীবন দিয়ে দেয়। আবার কখনও কখনও স্ত্রীর জন্য স্বামী জীবন দিয়ে দেয়। কারণ একটাই- সে তার স্ত্রীকে ভালবাসে। এটাই খুব মহান কাজ, খুব ভাল কাজ। তাই না?
কিন্তু এখানে আমি পাপ মুক্তির কথা বলছি ছোট খাট কোন মুক্তির কথা বলছিনা। এখানে আমরা মুক্তি পাচ্ছি আদি পাপ থেকে। দোযখ থেকে, দোযখের আগুন থেকে। তাই যে কোন উৎসর্গে কাজ হবে না। আর নিউ টেস্টামেন্ট বাইবেলের দ্বিতীয় অংশটি বলছে-এখানে অবশ্য বিশ্বাসীদের কথা অর্থাৎ খ্রিস্টানদের কথা বলা হয়েছে- ঈশ্বর আমাদের জন্য কোন ছাগল উৎসর্গ করেন নি। অথবা কোন গরু অথবা কোন পশুও উৎসর্গ করেন নি। আমি আসলে কথাগুলো আমার নিজের মত করে বলছি। তিনি উৎসর্গ করেছেন তাঁর একমাত্র প্রিয়পুত্র যিশুখ্রিস্টকে। হ্যাঁ। যিশু উৎসর্গের এ ব্যাপার বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্টে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে স্থান পেয়েছে। যেহেতু যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাই আমার সব পাপ মুছে গেছে। আর মহান ঈশ্বরের কাছে পাপেরও শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। তাই শ্রেণীভেদে পাপের বিভিন্ন রকম শাস্তি হয়ে থাকে।
আমাদের কিন্তু যিশু নিজেই পাপের শাস্তি নিলেন। একমাত্র তিনিই আমাদের সকলের পাপের ভার বহন করলেন। দেখলেন বিষয়টা কত গুরুত্বপূর্ণ?
তবে অন্য কেউ মারা গেলে আমার পাপের কিছুই হবে না। আমি পাপ থেকে মুক্তি পাব না। কিন্তু একজন বিশেষ লোক বা নিস্পাপ লোক যদি অন্যের পাপের জন্য আত্মত্যাগ করতে চায় তাহলে ঐ ব্যাক্তির সব পাপ মুছে যাবে। আচ্ছা। এখন ওল্ড টেস্টামেন্টে যে সব বিবরণ আছে উহা বিস্তারিত বলছিনা। শুধু বিভিন্ন জায়গার উদ্ধৃতি দিচ্ছি। পরে প্রয়োজনে আপনারা সেগুলো যাচাই করে দেখতে পারবেন। আমার হাতে সময় খুবই কম।
ওল্ড টেস্টামেন্টে ঈশ্বর রূপক হিসেবে ক্রসের কথা বলেছেন। আপনারা বোধহয় গল্পটা যখন ইহুদীরা সবাই মিশর থেকে চলে আসল তখনকার সময়ের। এটা ইহুদী জাতির ইতিহাস। গল্পটা খুবই প্রসিদ্ধ। তারা কয়েকটি বছর ধরে মিশরে দাস ছিল। অতঃপর মহান ঈশ্বর সেখান থেকে তাদেরকে নিয়ে আসলেন বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে। আর ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন যে, আজ রাতে তোমাদের সব শত্রুদের মেরে ফেলব। ঐ সময় তাদের যারা শত্রু ছিল, তারা সবাই মারা যাবে। আর তোমরা তখন চলে যেতে পারবে। তখন ঈশ্বর তাদেরকে একটি ভেড়া উৎসর্গ করতে বললেন। যে ভেড়াটা একেবারে নিখুঁত। অসুস্থ, অন্ধ বা খোড়া নয়। একেবারে নিখুঁত ভেড়া। ঈশ্বর তাদের বলল যে, এ ভেড়াটার রক্ত তোমাদের ঘরের দরজায় লাগাবে। আর রাতে মৃত্যুর দেবদূত আসবে। যে দরজায় এ রক্তের ছাপ থাকবে না তাদের প্রথম সন্তানটির মৃত্যু হবে। ফলে তারা সবাই ভেড়া উৎসর্গ করে দরজায় রক্ত মাখালো। আর ঐ একই রাতে ইহুদীদের সবাইকে মিশর ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হলো। সেই দিনই তারা অনুমতি পেল। হ্যা! তাহলে এটাই ছিল নির্দেশ যে, নিখুঁত একটা ভেড়া লাগবে। সুতরাং যেমন তেমন ভেড়া এনো না; বরং একটা নিখুঁত ভেড়া নিয়ে এসো। তাতেই তোমাদের মুক্তি ঘটবে মৃত্যু থেকে। এটাই হলো রূপক।
প্রকৃতপক্ষে এটা আসলে ভেড়া ছিল না। যিশু পরে আসবেন এ উৎসর্গটা তারই রূপক। এরপরের ইতিহাস লক্ষ্য করবেন যে, ইহুদীরা ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল। এমনটা অনেকরাই করেছিল। তারা দশবার বিদ্রোহ করেছিল। ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল। তখন কিছু সাপ এসে তাদেরকে কামড়াল। সাপের বিষে অনেকেই কষ্ট পেল। এসব কথা বাইবেলে বর্ণিত আছে। তারপর ঈশ্বর মূসাকে এসবের প্রতিকার করতে বললেন। তিনি ব্রোঞ্জের ব্রাচ দিয়ে একটি সাপ বানাতে বললেন। আর সে সাপটা ঝুলিয়ে রাখলেন। অতঃপর ইহুদীদের সবাই যখন ঐ সাপের দিকে তাকাল তখন তাদের শরীর থেকে সাপের বিষ নেমে গেল।
নিউ টেস্টামেন্টে উপরোল্লেখিত ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, এখানে সাপটা হচ্ছে আসলে শয়তানের একটা প্রতীক। সাপ একটা সাধারণ প্রাণী। এটা আসলে শয়তান নয়। তারপরে কি ঘটলো? যিশুকে ক্রুশে ঝুলানো হয়েছিল। মূসার সেই সাপের মত। যদিও তিনি ছিলেন নিস্পাপ, দেবদূতের চেয়েও নিস্পাপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আমাদের সকলের পাপের বোঝা বহন করেছেন ক্রুশবিদ্ধ হয়ে। আপনারা যিশুকে দেখুন, হৃদয়ে ধারণ করুন আজকেই আপনার সব পাপ মুছে যাবে। আজকেই আপনি পাপমুক্ত হয়ে যাবেন। কোন প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই; বরং যিশুকে বিশ্বাস করলে আজই পাপমুক্ত হয়ে যাবেন। যিশুর প্রতি লক্ষ্য করুন, তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আর এজন্যই এ ক্রস আমাদের নিকট এত গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক।
এবার যদি ইহুদী জাতির ইতিহাস লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন যে, ঈশ্বর তাদের বলেছেন, তোমরা একটা ভেড়া আনো। যেটার কোন খুঁত নেই। যেটার কোন অসুখ নেই। যেটা অন্ধ নয়। যে ভেড়াটা খোড়া নয় এবং বয়স বেশি নয়। শুধু সে রকম ভেড়াকেই আমি উৎসর্গ হিসেবে গ্রহণ করব। ঈশ্বর তাদের ভবিষ্যতের যিশুখ্রিষ্টের কথাই বলেছিলেন যে, একেবারে নিখুঁত ভেড়া। যদি পাপের কথা চিন্তা করি তাহলে মানুষ হিসাবে যিশু আপনার আমার মতই ছিলেন। ঈশ্বর হিসেবে সব ক্ষমতা আর শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের মতই ছিলেন। তার মতই সাধারণ মানুষ কষ্ট পায় আর পাপ করে। দুঃখিত, পাপের পথে প্রলুব্ধ হয় বা প্রলুব্ধ করা হয়। তাহলে নিশ্চয়ই এটি একটি মৌলিক বিষয়। যদি নিউ টেস্টামেন্ট পড়েন সেখানে ক্রস সম্পর্কে অনেক কথাই পাবেন। পূরো নিউ টেস্টামেন্টের ভিত্তিই হলো যিশু খ্রিষ্টের ক্রস। নিউ টেস্টামেন্টের একজন বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা অ্যাপোস্টল পল বলেছেন, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথা বলেছি। আর কিছুই বলার নেই। অনেকেই পলকে অনুরোধ করেছিল যে, তুমি ক্রসটাকে বাদ দিয়ে খ্রিস্ট ধর্মটা প্রচার কর।
তিনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথাই বলছি। যারা বিশ্বাস করে না তাদের নিকট এ বিষয়টা বোকামী।
সাধারণভাবে এ ক্রোসের ব্যাপারটাকে সবাই বোকামী মনে করবে। ব্যাপারটা দাঁড়ায় এ রকম যে, ঈশ্বর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। হাস্যকর। ভাববেন যে, বিষয়টা নিঃসন্দেহে হাস্যকর। কিন্তু প্রকৃতার্থে এটা হলো ঈশ্বরের পাণ্ডিত্য বা বিজ্ঞতা বা বিচক্ষণতা। কারণ, ঈশ্বরের জ্ঞান আমাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা। ঈশ্বরকে সুবিচারের মানদণ্ডটা সবসময় ঠিক রেখে কাজ করতে হয়। তাই পাপের শাস্তি হিসাবে তিনি নিস্পাপ একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। পৃথিবীর সবার জন্য। আজকে মানুষ বিশ্বাস করবে যে, যিশু ক্রুশে মারা গেছেন। সমাধিতে তিন দিন থাকার পর তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে পুনরায় ঈশ্বর হিসেবে তাঁর দায়িত্ব বুঝে নিলেন। যে মানুষ এ কথাগুলো বিশ্বাস করবে সে পাপমুক্ত হয়ে যাবে। বিশ্বাসীদের গন্তব্য বদলে যাবে। নরকে না গিয়ে তিনি স্বর্গে যাবেন। আর এতদ্ব্যতীত অনেক উপকার পাবেন। ক্রুশে বিশ্বাস করলে আপনি যে সব উপকার পাবেন এখানে তার একটি মাত্র উল্লেখ করলাম।
আপনি যদি নিউ টেস্টামেন্ট পড়েন তাহলে দেখবেন পুরো নিউ টেস্টামেন্টের ভিত্তি হল এ ক্রস। ক্রসটি যদি বাদ দেন তাহলে পুরো বাইবেলের দাম দুই পয়সাও হবে না। বাইবেলে ইহুদীদের বই আছে। আর খ্রিস্টানদের বই আছে। খ্রিস্টানদের বইতে বলা আছে যে, যিশু কিভাবে কষ্ট পেয়ে মারা যাবেন। খুব কষ্ট। আইজায়ার ৫৩ নং অধ্যায় পরিষ্কার করে বলা আছে। আমি আর কয়েক মিনিট সময় নিচ্ছি। এখন সবশেষে বলছি নিউ টেস্টামেন্টের সর্বশেষ বইতে স্বর্গের বর্ণনা দেয়া আছে। ঈশ্বরের একজন ভৃত্য-যার নাম হলো জন দ্য অ্যাপোস্টল। বাইবেলে দু’জনার কথা আছে। একজন হলো জন অ্যাপোস্টল। তিনি একদা স্বপ্নে বেহেশত দেখলেন। এছাড়াও জন অ্যাপোস্টল বলেছেন যে, ইউফ্রেটিসের তীরে গোলযোগ বাধতে। অর্থাৎ বর্তমান ইরাকে। তিনি অনেক পূর্বেই এসব কথা বলে গিয়েছিলেন। আপনারাও ইউফ্রেটিসের গোলযোগের কথা বলেছেন। আরও অনেক কথা বলেছেন। তবে এ কথাটা বিশেষভাবে বলেছেন। তিনি স্বর্গে দেখেছেন সেই উৎসর্গ করা ভেড়াকে। হ্যাঁ যিশুখ্রিস্ট শারীরিকভাবে ভেড়া নন; বরং তিনি একজন মানুষ। ঠিক আছে। কিন্তু রূপক।
হিসেবে তিনি ঈশ্বরের নিখুঁত ভেড়া। ইহুদীদের পুরো ইতিহাসেই এর বর্ণনা পাবেন। নিউ টেস্টামেন্টের পুরো ইতিহাস জুড়েই এসব আপনারা দেখবেন। যিশুকে ভেড়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। স্বর্গে তাঁকে বলা হবে উৎসর্গকৃত সেই ভেড়া। সুতরাং আপনারা যদি আমাদের খ্রিস্টান ধর্ম থেকে ক্রুসকে বাদ দেন তাহলে খ্রিস্টান ধর্মের কিছুই থাকবে না। সেখানে তাহলে শুধু কিছু বিধি-নিষেধ থাকবে। পাপমুক্তি থাকবে না। পাপ আমাদের ছেড়ে যাবে না। কিছুই থাকবে না। মনে রাখবেন, ক্রুসের ব্যাপারটা খুবই মৌলিক। কেননা এ ক্রুসই আমাদের বলে দিয়েছে যে, ঈশ্বর আমাদের জন্যই মারা গিয়েছে। হা! তিনি স্বর্গ থেকে ধরায় নেমে এসেছেন। তিনি মানুষ হিসেবে হেঁটে বেড়িয়েছেন। মানুষ হিসেবে তিনি কষ্ট সহ্য করেছেন। আমাদের মতো তাঁকেও প্রলুব্ধ করা হয়েছে। একথা হয়ত আপনি ভাবতেও পারবেন না। ঠিক আছে?
আপনারা যিশুকে বিশ্বাস করুন। তিনি জয় করেছেন লোভকে। বিভিন্ন আসক্তিকে, বাজে অভ্যাসগুলোকে, আমাদের সবার পাপকে। যিশু আমাদের সবকিছু থেকে মুক্ত করেছেন। আপনারা শুধু তাঁকে বিশ্বাস করুন। তারপর বাসায় ফিরে যান। তার নিকট প্রার্থনা হচ্ছে আমার সময় শেষ। ভালো কথা, পাঁচ মিনিট অনেক সময়, এতে অনেক কথা বলা যায়। আচ্ছা কি বলছিলাম? পাঁচ মিনিট কম সময় নয়। কোন সমস্যা নেই। আচ্ছা এবার যিশুর ক্রুস সম্পর্কে একটি প্রমাণ দিতে চাই। এ ব্যাপারে অন্যতম একটি প্রমাণ হলো, আমাদের এ পবিত্র বাইবেল। অর্থাৎ এর অর্ধেক হলো ইহুদীদের বই। আর বাকী অর্ধেক হলো খ্রিস্টানদের বই। পুরো বাইবেলেই ক্রুসের কথা আছে? প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ দু’ভাবেই বলা আছে। আপনারা ইচ্ছা করলে পরে দেখতে পারেন। বাইবেলের দাম খুবই কম। বোম্বেতে অনেক দোকানে বাইবেল পাওয়া যায়। আর যদি আপনারা এ বিষয়ে কিছুই না জানেন তাহলে পরে বলব।
আর যিশুখ্রিস্ট যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তার অন্য একটা প্রমাণ দিব। এ প্রমাণটা আমাদের পবিত্র বাইবেল থেকে নয়; বরং এ প্রমাণটা দিব যিশুখ্রিস্টের শত্রুদের কাছ থেকে। যারা যিশুকে ঘৃণা করতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইহুদীরা ঐতিহাসিকভাবে যিশুখ্রিস্টকে প্রত্যাখান করেছিল। তাদের দাবি ছিল, এ লোক খ্রিস্ট নয়; বরং এ হলো নকল খ্রিস্ট। তাই তারা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এখন আপনারা হয়তো জানেন যে, ইহুদী জাতি ইতিহাস সংরক্ষণ করে। ইহুদীদের জীবনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে তারা সেই ঘটনা সংরক্ষণ করে রাখে। সেই সংরক্ষিত বইটার নাম টিলমুড। আপনারা হয়তো টিলমুডের নাম শুনেছেন। আপনারা যদি এ টিলমুড বইটা দেখেন যেটা যিশুর সময়কালের সন্নিকটবর্তী দুই হাজার বছরের পূর্বের। তাহলে সেখানে দেখতে পাবেন যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এখানে অনেক ভুল কথা আছে। তারা বলেছে, তিনি নকল খ্রিস্ট। তিনি ভুল প্রচার করেছেন। তিনি নাকি যাদুকর। এভাবে অনেক ভুল কথাই আছে। তবে এ কথাটাও আছে যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি নাকি অন্যায় করেছিলেন, তবে কথাগুলো ঠিক নয়। এটা ক্রুসের পক্ষে বাইরের একটা প্রমাণ।
খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী অসুস্থ মানুষের জন্য আশীর্বাদ করি। আশীর্বাদ করি, দুষ্ট আত্মা থেকে বাঁচার জন্য এবং জীবনের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য। প্রার্থনা করলে ঈশ্বর মুক্তি দিবেন। খ্রিস্টানরা আসলে সঠিক শিক্ষাই দিচ্ছে। এগুলোর প্রমাণ বারবার করা হয়েছে। আমি নিজেই মেরুদণ্ডের অসুখ থেকে সুস্থ হয়েছি। উপস্থিত ডাক্তাররা হয়তো বিষয়টা বুঝবেন যে, আমি কোন ব্যাপারে বলছি। অ্যাংকলিভসিং স্পনডেলাইটিস। এ রোগের চিকিৎসা নেই। এজন্য আপনাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। আপনি কখনো হাঁটতে পারবেন না। এ অসুখে সারাজীবনই ভুগতে হয়। আর এখন থেকে ষোল বছর পূর্বে তারা আমার জন্য প্রার্থনা করেছিল। আমি আস্তে আস্তে সাত দিনে সুস্থ হয়ে গেলাম। আমি ধার্মিক ছিলাম না। শুধু যিশুকে বিশ্বাস করেছি। এমনকি এ ঘটনার আগে পবিত্র বাইবেলটাও আমি পুরোপুরি পড়িনি। আর ঈশ্বরও বলে গিয়েছেন যে, এ লোকগুলো সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে। তাই ক্রুস বাস্তব ঘটনা। আর এ কারণেই আমি সুস্থ হলাম।
এমন অনেক মানুষকে আমি দেখেছি যে, তারা মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। আপনারা হয়তো এ ব্যাপারে আমার সাথে তর্ক করবেন। কিন্তু আমার হাতে বেশি সময় নেই। তাই তর্ক করতে পারব না। এখনকার দিনেও এমন ঘটনা ঘটে। আমি নিজেই এমন ঘটনা দেখেছি। একবার আমি বোম্বে জিমখানার পাশে হাটছিলাম। এমন সময় একটা বাচ্চা মেয়ের ওপর দিয়ে একটি স্কুটার চলে গেল। আমি দেখলাম যে, সে মারা গেছে। মেয়েটার বয়স খুবই কম ছিল। আমি আসলে ডাক্তার নই। তাই আমি বলতে পারব না যে, তার হৃৎপিণ্ডটা তখনো সচল ছিল কি না? শুধু খালি চোখে দেখলাম যে, মেয়েটা মারা গেছে। কোন নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। আর নড়াচড়াও করছে না। মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। তখন আমি যিশুর কাছে প্রার্থনা করছিলাম। অতঃপর যখন আমরা ঐ হাসপাতালে পৌছলাম তখন মেয়েটা আবার শ্বাস নেয়া শুরু করল। আর ডাক্তাররাও তখন মেয়েটার চিকিৎসা করা শুরু করল। ঠিক আছে? তবে এটা নিশ্চিত না যে, মেয়েটা মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিলাম।
তবে এমন অনেক প্রমাণ আছে যে, যিশুর নামে লোকজন মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। আজকাল মৃত্যুর একটা সংজ্ঞা আছে। অসুস্থকে খ্রিস্টানরা সুস্থ করে তুলছে যিশুখ্রিস্টের নাম নিয়ে। ঈশ্বর যিশুখ্রিষ্টের নামে আমাদের করুণা করেছেন, আমাদের ভালোবেসেছেন। যিশুখ্রিষ্টের নামে ক্রুশবিদ্ধ যিশু। তাই যিশুকে বিশ্বাস করেন। ঈশ্বর আপনার সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন। সমস্যা আর থাকবে না। আজকে আমার হাতে আর সময় নেই। সময় থাকলে সবার জন্যই প্রার্থনা করতাম। এখন সময় নেই, তবে অন্য কোন সময় আমাদের সভায় আসতে পারেন। সভাটি হয় দামোদর হল ক্লাশরুমে সকাল নয় ঘটিকায়। আগামী রোববার। একবার চলে আসুন সবার জন্য আমরা সেদিন প্রার্থনা করব। চার্চের সবাই আপনাদের জন্য প্রার্থনা করবে। আমরা খুব জ্ঞানী নই। আমরা খুব মহান নই। এখানে যেমনটা দেখছেন তেমনই।
আবারো বলছি, আমরা সাধারণ মানুষ। আমি এখানে টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমিও একজন সাধারণ মানুষ। এমনকি আমাদের প্যাস্টর তিনিও কাজ করেন এবং তার স্ত্রীও একটা হাসপাতালে চাকুরী করেন। তাই বলছি, আমরা আসলে খুব বড় মানুষ নই। আমরা শুধু বাইবেলের কথা বলি। তবে যদি যিশুর কাছে প্রার্থনা করেন, তাহলে অধিকাংশ সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। অবশ্য যদি এগুলোতে আপনার বিশ্বাস থাকে। ঈশ্বর নিজেই এ ক্রুসের ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন। এটা সত্যি কথা। আর অনেকভাবেই ক্রুসের বাস্তবতা প্রমাণ করা যায়। সবাইকে ধন্যবাদ।
আপনারা আপনাদের পছন্দমত যেটা খুশি সেটা গ্রহণ করবেন এবং যেটা খুশী বর্জন করবেন। তবে আমরা একে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান দেখাবো। যদি আমার সাথে একমত না-ও হন, সে ক্ষেত্রেও আপনাকে সম্মান করবো। আর আপনার এ মতামতের প্রতিও আমি সম্মান দেখাবো। এ আলোচনার মধ্যে পবিত্র বাইবেলের কিছু উদ্ধৃতি দিব। তবে এভাবে উদ্ধৃতি দিতে থাকলে সেটা আর শেষ হবে না। কারণ, বাইবেলে প্রায় কয়েকশ অনুচ্ছেদ আছে যেখানে ক্রসের কথা বলা হয়েছে। তাই বাইবেল থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিব, কিন্তু সেই উদ্ধৃতিগুলোর কোন রেফারেঞ্জ দিব না। পবিত্র বাইবেল থেকে প্রসঙ্গক্রমে আমি যে সব উদ্ধৃতি দিব -তা শুধু আলোচনার স্বার্থে। মনে রাখবেন, এখানে আমার উদ্দেশ্য আপনাদের বাইবেল মুখস্ত করানো নয়; বরং আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনারা যাতে আমাদের কথাগুলোর অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন। খ্রিস্ট ধর্মে ক্রসের গুরুত্ব বুঝতে পারেন এবং খ্রিস্ট ধর্মে কেন ক্রসকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়? এর কারণটা কি? কেন এ বিষয়টা এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্রথমে আমি ‘ক্রস’ সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই। ক্রসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেকেই মনে করে যে, ক্রস একটি ফ্যাশন। যেমন আমি গেলাম জাবলি বাজারে। তারপর বিভিন্ন দোকানে ‘ক্রস’ খুঁজতে লাগলাম। অতঃপর একটি দোকান থেকে সোনালী রংয়ের ‘ক্রস’ কিনলাম এবং গলায় ঝুলিয়ে দিলাম। এভাবে ক্রস একটি ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। কেউ হয়ত একুশ ক্যারেট, কেউ বা আঠারো ক্যারেট আবার কেউ সতেরো ক্যারেট সোনার ‘ক্রস’ কিনেন এবং গলায় ঝোলান। এসব ‘ক্রস’ দেখতে খুব সুন্দর ; ফ্যাশনেবল এবং ড্রেসের সাথে ম্যাচ করেছে ইত্যাদি। অনেকেই ‘ক্রস’ সম্পর্কে এমনটাই ভাবে। অনেক খ্রিস্টানও ‘ক্রস’ সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করেন। অনেকদিন পূর্বে আমিও এভাবেই ভাবতাম।
আমি একটি সাধারণ খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নিয়েছি, বড় হয়েছি। তবে বিশ্বাস করা শুরু করেছি ১৬ বছর পূর্ব থেকে। খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে আমি ভারতে আসি নি; বরং এসেছিলাম একজন সাধারণ খ্রিস্টান হিসাবে। তবে এ কথা সত্য যে, ভারতে এসেই আমি একজন প্রকৃত খ্রিস্টান হতে পেরেছি। তাহলে আমি এখানে এসেই যিশুকে বিশ্বাস করেছি। এখন আমি ক্রসের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই।
প্রথমত, ‘ক্রস’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? পবিত্র বাইবেল কখনো বলছে না যে, ক্রস হলো খুব আকর্ষণীয় বিষয়। যেটা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো যায়। প্রকৃত অর্থে পবিত্র বাইবেলে ‘ক্রস’ সম্পর্কে উল্টো কথাই বেশি বলা হয়েছে। বাইবেলের যে অংশটিকে আমরা বলি পুরানো অংশ বা ইহুদীদের বই। বাইবেলের প্রথম অর্ধেকে এটা আছে। ইংরেজী ভাষায় একে বলে ওল্ড টেস্টামেন্ট। সেখানে বলা হয়েছে যে, ‘ক্রস’ জিনিসটা আসলে ভালো নয়। আপনারা হয়ত অবাক হবেন। এখানে বলা হয়েছে যে, ক্রস খুব কুৎসিৎ জিনিস। ক্রস এমন একটা জায়গা, যেখানে দেয়া হয় অভিশাপ। ‘ক্রস’ এমন একটি বিষয়, যেখানে হয়ত কাউকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। কাউকে অভিশাপ দেয়া হয় আবার কাউকে সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। আর ইহুদীদের গ্রন্থেও এমন কথা বলা হয়েছে। বাইবেলের প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, “অভিশপ্ত সেই লোক যাকে গাছে ঝুলানো হয়। এখানে গাছের কথা বলে আসলে বোঝানো হয়েছে একটি ক্রসকে, যা যিশু খ্রিষ্টের সময়কালে সংঘটিত হয়েছিল। তবে এ ক্রসের ব্যাপারটা আমি আপনাদের নিকট পরে ব্যাখ্যা করব।
আপনারা হয়ত জানেন বা নাও জানতে পারেন যে, পবিত্র বাইবেলের দু’টা সেকশন বা শাখা আছে। গোটা বাইবেলে মোট ছেষট্টিটা বই আছে। এ বইগুলো লেখা হয়েছে সব মিলে প্রায় চার হাজার বছর ধরে। তাই বাইবেল একটা বই নয় বরং অনেকগুলো বইয়ের সমষ্টি। আর বাইবেলের প্রথম অংশ অর্থাৎ ইহুদীদের বইগুলো, যেখানে নবীদের কথা আছে। বিভিন্ন নবীগণ তাদের সময়ের কথা আর ইহুদীদের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছেন। আর একেবারে প্রথম বই থেকে আরম্ভ করে বাইবেলে কখনো সরাসরি বলা হয়েছে আবার কখনো পরোক্ষভাবে ক্রসের কথা বলা হয়েছে।
এবার আমরা ক্রসের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করব। কারণ, এ সম্পর্কে, আমি এখন পর্যন্ত আলোকপাত করিনি। তাহলে এবার এ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক। ‘ক্রস’ বিষয়টা এসেছে গসপেল থেকে। সেখানেই পাপ থেকে মুক্তি ব্যাপারটা আলোচিত হয়েছে। আর সেখান থেকেই ‘ক্রস’ বিষয়টা এসেছে। পবিত্র বাইবেল আমাদের বলে যে, মানুষ আসলে পাপী। প্রত্যেক মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই পাপী। আর এ পাপের সৃষ্টি হয়েছে সেই আদমের সময় থেকে। যেমন ধরুন, আমি জন্মেছি তারপর বড় হয়েছি। আর প্রকৃতিক নিয়মেই আমি একজন পাপী। এ কারণেই আমি পাপ করি। কথাবার্তা, ব্যবহার ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে আমি অহরহ পাপ করে বেড়াই। এতদ্ব্যতীত বাইবেল আরও বলেছে যে, যদি মানুষ পাপ করে তাহলে সে মারা যাবে। তার মৃত্যুদণ্ড হয়। আত্মার মৃত্যু আছে আবার শরীরের মৃত্যু আছে ইত্যাদি। অতএব পৃথিবীর সব মানুষকেই এ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। কারণ আমরা পাপী।
আর ঈশ্বর যেহেতু পাপের শাস্তি দেন সেহেতু কোন মানুষই ঈশ্বরের পাশে দাঁড়াতে পারবে না। এক সাথে থাকতে পারবে না। এখন তাহলে আপনারা বুঝতে পারলেন যে, এ পাপ এতই গুরুতর মারাত্মক এবং বিশাল যে, আমি যাই ভাল কাজ করি না কেন সেটা তার তুলনায় খুবই নগণ্য। সেটা দিয়ে আমার জীবনের সব পাপ দূর করা যাবে না। লক্ষ্য করুন, আমি যদি গরীবদের সাহায্য করি সেটা নিঃসন্দেহে ভাল কাজ। কিন্তু এ ভাল কাজটা দিয়ে আমার জীবনের সব পাপ মুছে ফেলা যাবে না। সুতরাং এ কাজটা অনেক ভাল হলেও এর দ্বারা আমার জীবনের সব পাপ মুছে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।
এবার যিশুর বিষয়টিতে আসুন। ঈশ্বর যিশুকে পাঠিয়েছেন একজন নিস্পাপ মানুষ হিসাবে, যে কোন পাপ করেনি। যে মানুষটা কষ্ট করবে কিন্তু পাপ করবে না। পুরোপুরি ব্যতিক্রম। তিনি জীবনে কখনো পাপ করেননি এবং তাকে বিভিন্ন সময় প্রলুব্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি পাপ করেননি। সে জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি তার প্রাপ্য নয়। এ শাস্তি আমাদের প্রাপ্য। তার বেঁচে থাকার কথা ছিল সারা জীবন। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গিতে লক্ষ্য করলে এটা ছিল যিশুখ্রিস্টের বৈশিষ্ট্য। আর মানুষ হিসাবে দেখলে তিনি এ পৃথিবীতেই ছুটে বেড়িয়েছিলেন। অন্যান্য সবার মত জীবিকার জন্য কাজ করেছেন, আবার অনেক কিছুই করেছেন আমাদের সবার মতো। তবে আধ্যাত্মিক দৃষ্টি দিয়ে বলা যায় যে, মৃত্যু জিনিসটা যিশুর প্রাপ্য ছিল না। কারণ, জাগতিক কোন পাপ কখনোই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায় যে, যিশু একজন নিস্পাপ মানুষ। যিশুখ্রিস্ট ঈশ্বরকে মেনেছেন আর পরে তাকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাহলে ঈশ্বরের সুবিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে যিশুর মৃত্যুটা ছিল ঐ পাপের মূল্য।
একজন নিস্পাপ মানুষ যার এ মৃত্যু প্রাপ্য ছিল না কিন্তু মরতে প্রস্তুত ছিলেন অন্য সবার পাপের জন্য। এ পাপের মূল্য দেওয়ার জন্য। সে জন্য তিনি যে মূল্য দিচ্ছেন তাতেই সবপাপ মুছে যাবে। আমরা সবাই যে সব আত্মত্যাগ করি নিজেদের পাপমুক্তির চেষ্টা করি - সেগুলো দিয়ে সব পাপ মুছতে পারব না; কিন্তু যিশু ছিলেন একজন নিস্পাপ মানুষ এবং সারাজীবন ধরে ঈশ্বরের আদেশ পালন করেছেন। সেজন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেন ঈশ্বর স্বয়ং সেটাকে মানুষের পাপের মূল্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন। আর এজন্যই যিশুখ্রিস্টের ‘ক্রস’ খ্রিস্টানদের মৃত্যুটার অধিক গুরুত্বপুর্ণ জিনিস। এ একই কারণে যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুটার প্রয়োজন ছিল। ঈশ্বর এ বিষয়টা পূর্ব থেকেই জানতেন বিধায় যিশুখ্রিষ্টের ‘ক্রস’ হল খ্রিস্টানীয়দের জীবনে সফলতার চাবিকাঠি।
যারা তাকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রেখেছে। বাইবেলে বলা হয়েছে যে, তাদের সব পাপ মুছে গেছে। সুতরাং বুঝা গেল যিশু তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের পাপের মূল্য দিয়ে গেছেন। আর এটাই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের মূল্য অনেক বেশি। সেজন্য খ্রিস্টানদের জীবন থেকে ক্রসটা সরিয়ে ফেললে খ্রিস্ট ধর্মটা টিকে থাকতে পারে না।
তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। শুধু মুসলিমরা নয়, অন্যান্য অনেকেই মনে করেন যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। অবশ্য ডা. জাকির নায়েক আমার চেয়ে অনেক বিস্তারিত জানেন। তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ সম্পর্কে আমি বেশ কিছু কথা বলতে চাই। যদিও ইতোপূর্বে খ্রিস্টানদের জীবনে ক্রসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছি এবং বলেছি যে, ক্রসের কারণেই আমার জীবনের সব পাপ মুছে গিয়েছে। সুতরাং ক্রস মহান ঈশ্বরের উপহার। ঈশ্বর নিজেই এখানে পাপের মূল্য দিয়েছেন। আর তাই তিনি যে মূল্য দিয়েছেন সেটা অনেক মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাপ থেকে মুক্তির জন্য। তেমন আত্মত্যাগ এটা নয়, যেমন আত্মত্যাগ আমি করি। এটা হবে দূষিত আত্মত্যাগ। কিন্তু যিশু একজন নিস্পাপ মানুষ হয়েও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন যেন তিনি একজন সাধারণ পাপী। তিনি পাপীদের শাস্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু তিনি পাপী ছিলেন না। যখন তার আত্মাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তিনি বললেন তুমি মরবে না। ওটা আমাকে দাও। আমিও এখন তোমাদের জন্য মরবো।
এখন আসি বাইবেলে বর্ণিত কয়েকটি ঐতিহাসিক জিনিস যা আমি আপনাদের দেখাবো। বাইবেলের বেশকিছু অনুচ্ছেদ পরোক্ষভাবে যিশুখ্রিস্টের জন্মমৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি অনুচ্ছেদে সরাসরি বলা হয়েছে। আবার কোথাও পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। যেহেতু হাতে সময় কম সেহেতু আমি দুই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
আপনারা হয়ত জানেন যে, পবিত্র বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বই লিখেছিলেন নবী মূসা। এ পাঁচটি বইয়ের প্রথমটির নাম জেনেসিস। এখানে বলা আছে যে, ঈশ্বর কিভাবে এ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তারপরে মানুষ সৃষ্টি করলেন, তখনকার দিনে ব্যাবিলন কেমন ছিল ইত্যাদি? আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আপনাদের বেশিরভাগ লোকই আদম ও হাওয়ার গল্পটি কোথাও না কোথাও শুনেছেন। আদম ও হাওয়া কিভাবে সৃষ্টি হলেন এবং তারা ঈশ্বরের অতি নিকটে অবস্থান করেছিলেন? আদম-হাওয়া ও ঈশ্বরের মাঝখানে কোন বাঁধা ছিল না। সে জন্য আদম-হাওয়া ও ঈশ্বর এক সাথে ছিল, একে অন্যের সাথে কথা বলেছেন। সেখানে সৃষ্টিকর্তার সাথে আদম ও হাওয়া স্বর্গে একসাথে ছিলেন। কেন? কারণ তারা কেউ কোন পাপ করেনি। ঐ সময়টা ছিল পাপের পূর্ববর্তী সময়। তারপর শয়তান একটা শাপের ছদ্মবেশ নিয়ে তথায় আসল এবং তাদেরকে দিয়ে একটা পাপ কাজ করাল।
বাইবেলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। আদম ও হাওয়াকে একটা ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা খেয়েছিলেন। ঐ ফলটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করার বিষয়টি। ঈশ্বর তাদেরকে যে কাজটা করতে নিষেধ করেছিল, তারা ঠিক সেটিই করেছেন। যখন তারা এ কাজটা করল তখন পাপের শুরু হলো। ঐ মুহুর্তেই আদম-হাওয়া এবং ঈশ্বর আলাদা হয়ে গেলেন। অনেকেই বলে থাকেন যে, যদি একবার ঈশ্বরকে দেখতে পেতাম। যদি অন্যরা তাকে দেখে তবে আমি কেন তাদের দেখতে পাব না? এভাবেই অনেকেই ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। কারণ, তার চারপাশে শুধু শয়তানই দেখে। এসব পাপ মানুষই তৈরি করেছে। ঈশ্বর না। মহান ঈশ্বর সবসময় আমাদের প্রতি সুবিচার করে থাকেন। সেরকম কিছু ঘটনার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করছি।
‘যখন আদম ও হাওয়া ঈশ্বরকে অমান্য করল তখন ঈশ্বর খুব রেগে গেলেন সেই সাপের ওপর, হাওয়ার ওপর, আদমের ওপর আর এদের প্রত্যেককেই ঈশ্বর একটা করে অভিশাপ দিলেন। ঈশ্বর সাপকে অভিশাপ দিলেন যে সাপ সব সময়ই মাটির উপর দিয়ে সব সময় গড়িয়ে গড়িয়ে চলবে। আর হাওয়াকে অভিশাপ দিলেন। যে, তুমি তোমার স্বামীকে নিষিদ্ধ ফল খেতে প্রলুব্ধ করেছ তাই এখন থেকে তোমার স্বামী তোমাকে শাসন করবে আর তুমি তার অধীনে থাকবে- তার ওপরে নির্ভর করবে। আর এতদ্ব্যতীতও তুমি সন্তান প্রসবের সময় প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করবে। আর আদমের ক্ষেত্রে এটা হবে যে, সে যখন জমিতে কাজ করবে জমি তাকে সহজে কোন খাবার দিবে না। তাকে ঘাম ঝরাতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। এ খাবার সংগ্রহ করার জন্য। আর তারা মরণশীল হয়ে গেল। তাদের জীবনে মৃত্যু আসল। তারা আর অমর থাকল না। তবে একটা ব্যাপার খুব গুরুত্বপুর্ণ তা হলো ক্রসের ব্যাপার।”
এখানে ক্রসের কথাটি পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে সেটা এখন বলছি। হ্যা! বলা আছে যে, ঈশ্বর আদম-হাওয়াকে অনেক অভিশাপ দেয়ার পর বললেন .......(এটা বুক অব জেনেসিসের ৩য় অধ্যায়ের প্রথম দিকে আছে, আপনারা ইচ্ছা করলে লিখে নিতে পারেন) সে জন্য মহান প্রভু ঈশ্বর তাদেরকে স্বর্গের বাগান থেকে বের করে দিলেন। এখানে আদম ও হাওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে। স্বর্গ থেকে তাদের পৃথিবীতে প্রেরণ করা হল। ঈশ্বর তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে একজন প্রহরী রাখলেন। ঈশ্বর আদমকে তাড়িয়ে দিলেন আর একজন প্রহরীকে বসালেন স্বর্গের সেই বাগানের পূর্ব দরজায়। সেখানকার জীবন বৃক্ষকে পাহারা দেওয়ার জন্য একটা আগুনের তরবারি যার অগ্রভাগে সবদিকেই বিস্তৃত ছিল।
এ বিষয়টার বিবরণ জেনেসিসের ৩য় অধ্যায়ের ২৩ ও ২৪ অনুচ্ছেদে আছে। তাহলে বিষয়টা দাড়াঁল এমন যে, ঈশ্বর তাদেরকে বিভিন্ন রকম শাস্তি দেয়ার পরে অর্থাৎ তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার পরে তাদের স্বর্গের বাগান থেকে বের করে দিলেন। ইডেনের এ বাগানটিকে অনেকেই স্বর্গের বাগান বলে থাকেন। আদম ও হাওয়া এ বাগানের মধ্যে আনন্দ ফুর্তি করতেন। ঈশ্বর তাদেরকে এ বাগান থেকে চিরতরে তাড়িয়ে দিলেন। তারপর ঈশ্বর এ বাগানে প্রবেশের দরজায় কি করলেন? তিনি সেই দরজায় একজন দেবদূতকে বসালেন। দেবদূতদের মধ্যেও অনেক রকম শ্রেণীবিভাগ আছে। এদের নাম চেরোমি। এরা ঈশ্বরের খুব কাছে থাকে। এ দেবদূত স্বর্গের দরজা পাহারা দিতে লাগল। তার হাতে ছিল আগুনের তরবারি। আর সেই তরবারীর মাথা চারদিকে ছড়ানো। যাতে করে সেই বাগানে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
তাহলে এখন স্বর্গের বাগানে প্রবেশের উপায় কি? স্বর্গের বাগানে প্রবেশের একমাত্র উপায় হলো ঐ প্রহরীকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। ঐ প্রহরীর হাতে একটা তরবারী আছে। যেটা দিয়ে সে স্বর্গের বাগানের দরজা পাহারা দিচ্ছে। একজন খ্রিস্টান হিসাবে পবিত্র বাইবেল ব্যাখ্যা করে আমি বুঝেছি যে, স্বর্গের সেই বাগানে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তাকে ঐ তরবারি দিয়ে হত্যা করা হবে। কারণ মহান ঈশ্বর ন্যায়বান আর ন্যায়বিচার বলেই তরবারিটা ঘাড়ের ওপর পড়বে। বিষয়টা বুঝতে পারলেন! এজন্য আদম সেখানে আসতে পারবে না যেহেতু স্বর্গের বাগানে তরবারি হাতে প্রহরী আছে। ঐ তরবারিটা তাকেই হত্যা করবে যে স্বর্গের বাগানে প্রবেশ করতে চাইবে। আর আমরা দেখি যে, যিশু স্বেচ্ছায় তার জীবন দিলেন তাঁর মহান পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী। ঐ তরবারিটা তার ওপর পড়েছিল। আর সে জন্য ঐ দিন থেকেই স্বর্গের বাগানের সেই দরজাটা খুলে গেল।
স্বর্গের দরজা শুধু খ্রিস্টানদের জন্য নয়; বরং তা বিশ্ববাসী সকলের জন্য। তা হলে বুঝতে পারলেন, বলেছেন, আমিই দরজা। তোমরা ঈশ্বরকে চিনতে চাও? আমিই হলাম দরজা। যিশু ঐ তরবারিটাকে তার ঘাড়ে পড়তে দিয়েছিলেন। তাহলে এখানে পরোক্ষভাবে ক্রসের কথা বলা হয়েছে। এখন অন্য বিষয় দিয়ে আলোচনা করি। বাইবেলে ক্রস নিয়ে এমন পরোক্ষ মন্তব্য আছে। আবার বেশ কিছু প্রত্যক্ষ মন্তব্যও আছে। এখানে শুধু ক্রসের কথাই বলছি, অন্য কিছু নয়। অন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি, এটা সেই বিখ্যাত গল্প আমাদের বিশ্বাসীদের সবার পূর্বপুরুষকে নিয়ে। তিনি হলেন ইবরাহীম। এখন এ সম্পর্কে কিছু কথা বলি।
অনেকেই হয়ত এটা জানে না যে, খ্রিস্টান এবং মুসলমান এরা একে অন্যের ভাই। খুব কম লোকেই এ কথাটা জানে। প্রকৃতপক্ষে ভাই। এটা কিন্তু আপনাদের খুশি করার জন্য বলছি না। সত্যি বলছি। খ্রিস্টানরা হল ইবরাহীম নবীর আধ্যাত্বিক উত্তরসূরী। আইজ্যাকের মাধ্যমে। না না দুঃখিত। ইসমাইল। ইসমাইলের আর এক ভাই। তিনি হলেন আইজ্যাক। তাহলে মুসলিম ও খ্রিস্টান আমরা সবাই এসেছি ইবরাহীম থেকে। তারা দুই ভাই। তবে সহোদর না; বরং সৎভাই। তাদের দু’জনের মা আলাদা। তাই যখন মুসলিমদের ভাই বলছি এটা আপনাদের খুশি করার জন্য নয়। আমরা আসলেই ভাই। আমাদের উভয়ের আধ্যাত্মিক পূর্ব পুরুষ হলেন ইবরাহীম। নবী ইবরাহীম। একই মানুষ। ঠিক আছে তো?
প্রথমে এ বিষয়টা সম্পর্কে বলেছিলাম। এভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে কথা বলতে চেষ্টা করব। আমি খুব ভাল আলোচক নই। আকর্ষণীয় কোন কিছু থাকলেও তা আপনাদের জানাব। আচ্ছা এখন আমরা ইবরাহীমের জীবনটা দেখি। ইবরাহীম। তাকে ঈশ্বর পরীক্ষা করেছিলেন স্বীয় পুত্রের মাধ্যমে। আইজ্যাক তথা ইসহাক। আমি জানি আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা বাইবেল সম্পর্কে তেমন জানেন না। সে জন্য মাঝে মধ্যে আমি প্রয়োজন অনুসারে আমি ব্যাখ্যা করব। কারণ আমি জানি যে, আপনাদের অনেকেই বাইবেল পড়েননি। কেউ কেউ হয়ত পড়েছেন। আসলে আমি এখানে খুব বিস্তারিতভাবে বলতে চাচ্ছি না। ঘটনাটা আপনাদের আমি সংক্ষিপ্ত আকারে বলছি। ইবরাহীমকে ঈশ্বর উর নগরী থেকে চলে যেতে বলেছিলেন কারণ সেটা পাপের নগরী ছিল। উর শহরটার অবস্থান বর্তমান ইরাকে, বসরার সন্নিকটে। আমি সেখানে গিয়েছি। জায়গাটা আসলে একটা মরুভূমি। যেখানে এখন কেউ থাকে না। কিছু স্মৃতি স্তম্ভ আছে। তাই এটা যেহেতু পাপের নগরী তাই ঈশ্বর তাকে তা থেকে চলে যেতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তোমাকে এর চেয়ে ভাল জায়গার সন্ধান দিব। সেটা এর চাইতে ভাল নগরী, সবাই জানতেন তারপরও তিনি ঈশ্বরের কথা শুনে চলে গেলেন। ঈশ্বর। তার প্রতিশ্রুতি তখনই পূরণ করলেন না, অনেক সময় নিলেন।
ইবরাহীম অনেক আগেই সারাকে বিয়ে করেছিলেন। আর সারার গর্ভে তাদের কোন সন্তান হয়নি। ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আমি তোমাদের গর্ভে অনেক সন্তান দিব। আকাশের তারকা দেখ। সেখানে কি অনেক তারকা দেখছ না? তেমনি তোমারও অনেক সন্তান হবে। সাগরের তীরে বালুর স্তুপ দেখেছ? তেমনি তোমার অনেক সন্তান হবে। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তিনি অনেক দিন নিঃসন্তান ছিলেন। তারপরও তিনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছেন। তিনি বিশ্বাস হারাননি। বুঝলেন? তারপর অনেকদিন পার হয়ে গেল কিন্তু কোন সন্তান হলো না। এরপর ইবরাহীম হতাশ হয়ে গেলেন। আর ঐ সময়ের একজন লোক একাধিক মহিলাকে বিয়ে করতে পারত। এমনকি তারা তাদের দাস দাসীদেরও বিয়ে করতে পারত। এ ব্যাপারে কোন রকম বাধা-নিষেধ ছিল না।
এমনি একদিন সারা তাঁর স্বামীকে বললেন, আপনি কেন আপনার দাসীদের একজনকে বিয়ে করছেন না? তাহলে আপনার সন্তান হবে। তখন হযরত ইবরাহীম মিশরের এক দাসীকে বিয়ে করলেন তাঁর নাম ছিল হাজেরা। হাজেরার গর্ভে যে সন্তান হলো তার নাম ইসমাইল। এরপর ইবরাহীমের আর একটি পুত্র সন্তান হলো। ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। আর তার প্রথমা স্ত্রী সারা গর্ভবতী হলেন। তিনি আইজ্যাক তথা ইসহাককে জন্ম দিলেন। চিন্তা করুন, এত দিন পর ইবরাহীম এ সন্তান পেয়ে কেমন খুশী হয়েছিলেন? আপনার নিজের ব্যাপার যদি চিন্তা করেন যে, আপনি বিবাহিত। আর যদি ২০/২৫ ধরে আপনি নিঃসন্তান অথচ ঈশ্বর আপনাকে সন্তানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কথা দিয়েছেন।
তাছাড়া মনে করুন, আপনি বড়লোক। সুতরাং আপনি চলে গেলে কে উত্তরাধিকারী হবে? তারপর এত কিছুর পর ২০/২৫ বছর পরে আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হলেন। একটা পুত্র সন্তান হলো। ঐ ছেলেকে আপনি কতখানি ভালবাসবেন? অনেকদিন আপনি ঐ ছেলের জন্য অপেক্ষা করেছেন। ইবরাহীমের ক্ষেত্রেও তেমনিই ঘটেছিল। তাই তিনি স্বীয় পুত্র আইজ্যাক তথা ইসহাককে খুব ভালবাসতেন। তারপর একদিন কি ঘটল। একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটল। অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যাপার বলা যায়। জেনেসিসের ২২ নং অধ্যায়ে এ ঘটনার বিবরণ আছে। এতে বলা হয়েছে, যে, এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর ঈশ্বর ইবরাহীমকে পরীক্ষা করলেন। ঈশ্বর তাকে বললেন ইবরাহীম। তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন। আমি এখানে। তিনি বললেন, তুমি তোমার পুত্র আইজ্যাককে নাও- যাকে তুমি খুব ভালবাস। অতঃপর তাকে নিয়ে মোরাইয়া অঞ্চলে যাও। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তাকে উৎসর্গ করবে। একটি পাহাড়ের উপর উৎসর্গ করবে। যেটার বিবরণ আমি তোমাকে পরে দিব। ইবরাহীমের জন্য এটা একটা দুঃসংবাদ। অনেকদিন অপেক্ষা করার পর। আর আইজ্যাক এখন কিশোর। সে তখন তার বাবার বোঝা বহন করতে পারে। এখানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর বললেন, যে তুমি আইজ্যাককে উৎসর্গ কর। ঠিক আছে?
এবার আমি ঘটনাটি সংক্ষেপে বলি। পুরো ঘটনাটি বিস্তারিত বলছি না। তখন ইবরাহীম মনে দারুন কষ্ট নিয়ে কি করলেন? খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলেন। আইজ্যাককে উৎসর্গ করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাথে নিলেন। যেমন– ছুড়ি, দড়ি, ইত্যাদি। তারপর ঈশ্বরের কথা মত আইজ্যাককে সাথে নিয়ে বের হলেন। তারপর তার ভৃত্যকে সরিয়ে দিলেন। আইজ্যাককে নিয়ে তিনি মোরাইয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন। যেখানে ঈশ্বর তাকে যেতে বলেছেন। যাক এখনই আকর্ষণীয় ঘটনা ঘটেছিল। সে ঘটনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘটনাটি আমি সংক্ষেপে বলছি।
আইজ্যাক তাঁর বাবা ইবরাহীমকে বললেন যে, হে আমার পিতা। ইবরাহীম বললেন! এই তো আমি, আমার পুত্র। আইজ্যাক বলল যে, আপনি কাঠ আর আগুন নিচ্ছেন। কিন্তু কোরবানীর ভেড়া কোথায়? ছেলেটা বলল, আপনি তো আগুন নিয়েছেন আরও নিয়েছেন কাঠ। কিন্তু আমরা দুইজন কেন পাহাড়ে যাচ্ছি? আপনি এমন সময় সাধারণত একটা ভেড়া কোরবানী দেন। সেই ভেড়াটা কোথায়? হ্যাঁ। দেখুন, তারপরে কি ঘটল? তখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার পুত্র! ঈশ্বর নিজেই এখানে আমাদের জন্য একটা ভেড়া সরবরাহ করবেন। তারপর তারা দুইজন পাহাড়ে উঠলেন। এ কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইবরাহীম বিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিজেই এখানে একটা কিছু উৎসর্গ করবেন। দেখুন, তিনি এখানে বলেননি যে, ঈশ্বর এখানে একজনকে উৎসর্গ করবেন; বরং তিনি বললেন, ঈশ্বর নিজে থেকেই এখানে কিছু একটা উৎসর্গ করবেন।
এখন আপনারা যদি পবিত্র বাইবেল পড়েন, নিউ টেস্টামেন্টে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেখতে পাবেন। নিউ টেস্টামেন্ট হলো পবিত্র বাইবেলের দ্বিতীয় অংশ। সেখানে বলা আছে ইবরাহীম বিশ্বাসের সাথেই বলেছিলেন আইজ্যাকের সাথে কথা বলার সময়ে। আর সে রকম ঘটনাই ঘটেছিল। আইজ্যাক জীবিত থেকে মৃত্যু হন নি। তারা পাহাড়ে উঠল। তারপর তারা ঈশ্বরের নির্দেশিত স্থানে আসল। ইবরাহীম সেখানে একটি বেদি বানিয়েছিলেন। সেখানে কাঠগুলি সাজিয়ে রাখলেন এবং আইজ্যাককে বাধলেন। তারপর আইজ্যাককে সেই বেদির উপর সোয়ালেন। লক্ষ্য করুন, আইজ্যাক কিন্তু তখন পালিয়ে যাননি। সে এই কাজে কোন প্রকার বাধা দেন নি। যদিও সে ততদিনে অনেক বড় হয়েছে। তিনি তখন ইচ্ছা করলে পালিয়ে যেতে পারতেন।
এর পর কি ঘটল? যখন ইবরাহীম হাত বাড়িয়ে ঐ ছুরিটা নিয়ে আইজ্যাককে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন তখন একজন দেবদূত তার কাছে এসে বলল, ইবরাহীম, শোন। তিনি সাড়া দিয়ে বললেন, এখানে আমি। দেবদূত বললেন তোমার পুত্রের শরীর স্পর্শ করো না। তার কোন রকম ক্ষতি করো না। কারণ আমরা জানতে পেরেছি যে, তুমি ঈশ্বরকে মানো। ঈশ্বরের আদেশে একমাত্র পুত্রকেও উৎসর্গ করতে দ্বিধা করনি।
তখন ইবরাহীম তাঁর চোখ মেলে দেখলেন যে, তাঁর পিছনেই একটা ভেড়া ঝোঁপের মধ্যে তার শিং আটঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ইবরাহীম তখন সেই ভেড়াটিকে নিয়ে তার ছেলের পরিবর্তে তার ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করলেন। এবার ইবরাহীম ঐ জায়গার নাম দিলেন ঈশ্বরের পাহাড়। ঈশ্বরই সব যোগান দিবেন। এ চরম নাটকীয় ঘটনায় শিক্ষণীয় বা সারমর্ম হলো যে, ইবরাহীম তাঁর ছেলে আইজ্যাককে বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিজে থেকেই কিছু একটা উৎসর্গ করবেন। ঈশ্বর এখানে একটি উৎসর্গ দাবি করেছেন। আমি এখানে নিজে থেকেও কিছু কথা বলছি আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে।
ঈশ্বর দাবি করেছেন একটা উৎসর্গ, কিছু একটা উৎসর্গ করতে হবে। ঈশ্বর স্বয়ং এটা দাবি করেছেন। কিন্তু এখানে উৎসর্গ করার ভেড়াটা কোথায়? ঈশ্বর নিজে থেকেই এখানে একটা কিছু সরবরাহ করবেন। প্রকারান্তে তাই হয়েছিল একই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি আইজ্যাককে মারেন নি, আইজ্যাককে তিনি রক্ষা করেছেন। ঈশ্বর আইজ্যাককে মারার কথা চিন্তা করেননি। পবিত্র বাইবেলে তিনি একথাই বলেছেন। বরং তিনি ইব্রাহীমকে পরীক্ষা করেছিলেন। ঈশ্বর এভাবে বাচ্চাদেরকে উৎসর্গ করেন না। তিনি আইজ্যাককে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তাহলে তিনি কোন আইজ্যাককে কেড়ে নিবেন? ঠিক আছে!
আর তারপর ঈশ্বর অলৌকিক কাজ করলেন। ঈশ্বর একজন দেবদূত পাঠিয়ে ইবরাহীমকে উৎসর্গের কাজে বাধা দিলেন। যাতে আইজ্যাকের বদলে অন্য কিছু উৎসর্গিত হয়। কিন্তু আইজ্যাক যেন বেঁচে থাকেন। আমরা খ্রিস্টানরা এ বিষয়টাকে এভাবেই দেখি। ঈশ্বর আমাকে বাঁচালেন। আমাকে বাঁচালেন মানে আইজ্যাকের জায়গায় আমাকে কল্পনা করুন। যারা যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে তারা আইজ্যাককেও মান্য করে। ঈশ্বর আমাকে সেই পাপের মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচিয়েছেন। আমার উপর একটা মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন। আর ঈশ্বরের সুবিচার দাবি করে যে, পাপের শাস্তি হলো মৃত্যু। বুঝতে পারলেন? আর এটাই হয়ত ঠিক হবে যে, আমি এখন মারা গেলে নরকে যাব। ঠিক আছে। তাই ঈশ্বর এখানে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। যিশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে সেই উৎসর্গ হলেন।
আপনারা যিশুকে দেখেছেন কি? যে যিশুকে বিশ্বাস করেন? আপনি তাকে হৃদয়ে ধারণ করেন? আর এটা যদি সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে ঈশ্বরের সুবিচারকেও ভাল করে বুঝতে পারবেন। এটা আমার ভালোর জন্য। আর অন্য কেউ মারা গেলে সেটা যথেষ্ট নয়। কিন্তু যিশু আমার জন্য স্পেশাল ভাবে মারা যাচ্ছেন। এভাবে অনেক মানুষই একে অপরের জন্য জীবন দিয়ে দেয়। আবার কখনও কখনও স্ত্রীর জন্য স্বামী জীবন দিয়ে দেয়। কারণ একটাই- সে তার স্ত্রীকে ভালবাসে। এটাই খুব মহান কাজ, খুব ভাল কাজ। তাই না?
কিন্তু এখানে আমি পাপ মুক্তির কথা বলছি ছোট খাট কোন মুক্তির কথা বলছিনা। এখানে আমরা মুক্তি পাচ্ছি আদি পাপ থেকে। দোযখ থেকে, দোযখের আগুন থেকে। তাই যে কোন উৎসর্গে কাজ হবে না। আর নিউ টেস্টামেন্ট বাইবেলের দ্বিতীয় অংশটি বলছে-এখানে অবশ্য বিশ্বাসীদের কথা অর্থাৎ খ্রিস্টানদের কথা বলা হয়েছে- ঈশ্বর আমাদের জন্য কোন ছাগল উৎসর্গ করেন নি। অথবা কোন গরু অথবা কোন পশুও উৎসর্গ করেন নি। আমি আসলে কথাগুলো আমার নিজের মত করে বলছি। তিনি উৎসর্গ করেছেন তাঁর একমাত্র প্রিয়পুত্র যিশুখ্রিস্টকে। হ্যাঁ। যিশু উৎসর্গের এ ব্যাপার বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্টে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে স্থান পেয়েছে। যেহেতু যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাই আমার সব পাপ মুছে গেছে। আর মহান ঈশ্বরের কাছে পাপেরও শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। তাই শ্রেণীভেদে পাপের বিভিন্ন রকম শাস্তি হয়ে থাকে।
আমাদের কিন্তু যিশু নিজেই পাপের শাস্তি নিলেন। একমাত্র তিনিই আমাদের সকলের পাপের ভার বহন করলেন। দেখলেন বিষয়টা কত গুরুত্বপূর্ণ?
তবে অন্য কেউ মারা গেলে আমার পাপের কিছুই হবে না। আমি পাপ থেকে মুক্তি পাব না। কিন্তু একজন বিশেষ লোক বা নিস্পাপ লোক যদি অন্যের পাপের জন্য আত্মত্যাগ করতে চায় তাহলে ঐ ব্যাক্তির সব পাপ মুছে যাবে। আচ্ছা। এখন ওল্ড টেস্টামেন্টে যে সব বিবরণ আছে উহা বিস্তারিত বলছিনা। শুধু বিভিন্ন জায়গার উদ্ধৃতি দিচ্ছি। পরে প্রয়োজনে আপনারা সেগুলো যাচাই করে দেখতে পারবেন। আমার হাতে সময় খুবই কম।
ওল্ড টেস্টামেন্টে ঈশ্বর রূপক হিসেবে ক্রসের কথা বলেছেন। আপনারা বোধহয় গল্পটা যখন ইহুদীরা সবাই মিশর থেকে চলে আসল তখনকার সময়ের। এটা ইহুদী জাতির ইতিহাস। গল্পটা খুবই প্রসিদ্ধ। তারা কয়েকটি বছর ধরে মিশরে দাস ছিল। অতঃপর মহান ঈশ্বর সেখান থেকে তাদেরকে নিয়ে আসলেন বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে। আর ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন যে, আজ রাতে তোমাদের সব শত্রুদের মেরে ফেলব। ঐ সময় তাদের যারা শত্রু ছিল, তারা সবাই মারা যাবে। আর তোমরা তখন চলে যেতে পারবে। তখন ঈশ্বর তাদেরকে একটি ভেড়া উৎসর্গ করতে বললেন। যে ভেড়াটা একেবারে নিখুঁত। অসুস্থ, অন্ধ বা খোড়া নয়। একেবারে নিখুঁত ভেড়া। ঈশ্বর তাদের বলল যে, এ ভেড়াটার রক্ত তোমাদের ঘরের দরজায় লাগাবে। আর রাতে মৃত্যুর দেবদূত আসবে। যে দরজায় এ রক্তের ছাপ থাকবে না তাদের প্রথম সন্তানটির মৃত্যু হবে। ফলে তারা সবাই ভেড়া উৎসর্গ করে দরজায় রক্ত মাখালো। আর ঐ একই রাতে ইহুদীদের সবাইকে মিশর ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হলো। সেই দিনই তারা অনুমতি পেল। হ্যা! তাহলে এটাই ছিল নির্দেশ যে, নিখুঁত একটা ভেড়া লাগবে। সুতরাং যেমন তেমন ভেড়া এনো না; বরং একটা নিখুঁত ভেড়া নিয়ে এসো। তাতেই তোমাদের মুক্তি ঘটবে মৃত্যু থেকে। এটাই হলো রূপক।
প্রকৃতপক্ষে এটা আসলে ভেড়া ছিল না। যিশু পরে আসবেন এ উৎসর্গটা তারই রূপক। এরপরের ইতিহাস লক্ষ্য করবেন যে, ইহুদীরা ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল। এমনটা অনেকরাই করেছিল। তারা দশবার বিদ্রোহ করেছিল। ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল। তখন কিছু সাপ এসে তাদেরকে কামড়াল। সাপের বিষে অনেকেই কষ্ট পেল। এসব কথা বাইবেলে বর্ণিত আছে। তারপর ঈশ্বর মূসাকে এসবের প্রতিকার করতে বললেন। তিনি ব্রোঞ্জের ব্রাচ দিয়ে একটি সাপ বানাতে বললেন। আর সে সাপটা ঝুলিয়ে রাখলেন। অতঃপর ইহুদীদের সবাই যখন ঐ সাপের দিকে তাকাল তখন তাদের শরীর থেকে সাপের বিষ নেমে গেল।
নিউ টেস্টামেন্টে উপরোল্লেখিত ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, এখানে সাপটা হচ্ছে আসলে শয়তানের একটা প্রতীক। সাপ একটা সাধারণ প্রাণী। এটা আসলে শয়তান নয়। তারপরে কি ঘটলো? যিশুকে ক্রুশে ঝুলানো হয়েছিল। মূসার সেই সাপের মত। যদিও তিনি ছিলেন নিস্পাপ, দেবদূতের চেয়েও নিস্পাপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আমাদের সকলের পাপের বোঝা বহন করেছেন ক্রুশবিদ্ধ হয়ে। আপনারা যিশুকে দেখুন, হৃদয়ে ধারণ করুন আজকেই আপনার সব পাপ মুছে যাবে। আজকেই আপনি পাপমুক্ত হয়ে যাবেন। কোন প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই; বরং যিশুকে বিশ্বাস করলে আজই পাপমুক্ত হয়ে যাবেন। যিশুর প্রতি লক্ষ্য করুন, তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আর এজন্যই এ ক্রস আমাদের নিকট এত গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক।
এবার যদি ইহুদী জাতির ইতিহাস লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন যে, ঈশ্বর তাদের বলেছেন, তোমরা একটা ভেড়া আনো। যেটার কোন খুঁত নেই। যেটার কোন অসুখ নেই। যেটা অন্ধ নয়। যে ভেড়াটা খোড়া নয় এবং বয়স বেশি নয়। শুধু সে রকম ভেড়াকেই আমি উৎসর্গ হিসেবে গ্রহণ করব। ঈশ্বর তাদের ভবিষ্যতের যিশুখ্রিষ্টের কথাই বলেছিলেন যে, একেবারে নিখুঁত ভেড়া। যদি পাপের কথা চিন্তা করি তাহলে মানুষ হিসাবে যিশু আপনার আমার মতই ছিলেন। ঈশ্বর হিসেবে সব ক্ষমতা আর শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের মতই ছিলেন। তার মতই সাধারণ মানুষ কষ্ট পায় আর পাপ করে। দুঃখিত, পাপের পথে প্রলুব্ধ হয় বা প্রলুব্ধ করা হয়। তাহলে নিশ্চয়ই এটি একটি মৌলিক বিষয়। যদি নিউ টেস্টামেন্ট পড়েন সেখানে ক্রস সম্পর্কে অনেক কথাই পাবেন। পূরো নিউ টেস্টামেন্টের ভিত্তিই হলো যিশু খ্রিষ্টের ক্রস। নিউ টেস্টামেন্টের একজন বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা অ্যাপোস্টল পল বলেছেন, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথা বলেছি। আর কিছুই বলার নেই। অনেকেই পলকে অনুরোধ করেছিল যে, তুমি ক্রসটাকে বাদ দিয়ে খ্রিস্ট ধর্মটা প্রচার কর।
তিনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথাই বলছি। যারা বিশ্বাস করে না তাদের নিকট এ বিষয়টা বোকামী।
সাধারণভাবে এ ক্রোসের ব্যাপারটাকে সবাই বোকামী মনে করবে। ব্যাপারটা দাঁড়ায় এ রকম যে, ঈশ্বর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। হাস্যকর। ভাববেন যে, বিষয়টা নিঃসন্দেহে হাস্যকর। কিন্তু প্রকৃতার্থে এটা হলো ঈশ্বরের পাণ্ডিত্য বা বিজ্ঞতা বা বিচক্ষণতা। কারণ, ঈশ্বরের জ্ঞান আমাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা। ঈশ্বরকে সুবিচারের মানদণ্ডটা সবসময় ঠিক রেখে কাজ করতে হয়। তাই পাপের শাস্তি হিসাবে তিনি নিস্পাপ একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। পৃথিবীর সবার জন্য। আজকে মানুষ বিশ্বাস করবে যে, যিশু ক্রুশে মারা গেছেন। সমাধিতে তিন দিন থাকার পর তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে পুনরায় ঈশ্বর হিসেবে তাঁর দায়িত্ব বুঝে নিলেন। যে মানুষ এ কথাগুলো বিশ্বাস করবে সে পাপমুক্ত হয়ে যাবে। বিশ্বাসীদের গন্তব্য বদলে যাবে। নরকে না গিয়ে তিনি স্বর্গে যাবেন। আর এতদ্ব্যতীত অনেক উপকার পাবেন। ক্রুশে বিশ্বাস করলে আপনি যে সব উপকার পাবেন এখানে তার একটি মাত্র উল্লেখ করলাম।
আপনি যদি নিউ টেস্টামেন্ট পড়েন তাহলে দেখবেন পুরো নিউ টেস্টামেন্টের ভিত্তি হল এ ক্রস। ক্রসটি যদি বাদ দেন তাহলে পুরো বাইবেলের দাম দুই পয়সাও হবে না। বাইবেলে ইহুদীদের বই আছে। আর খ্রিস্টানদের বই আছে। খ্রিস্টানদের বইতে বলা আছে যে, যিশু কিভাবে কষ্ট পেয়ে মারা যাবেন। খুব কষ্ট। আইজায়ার ৫৩ নং অধ্যায় পরিষ্কার করে বলা আছে। আমি আর কয়েক মিনিট সময় নিচ্ছি। এখন সবশেষে বলছি নিউ টেস্টামেন্টের সর্বশেষ বইতে স্বর্গের বর্ণনা দেয়া আছে। ঈশ্বরের একজন ভৃত্য-যার নাম হলো জন দ্য অ্যাপোস্টল। বাইবেলে দু’জনার কথা আছে। একজন হলো জন অ্যাপোস্টল। তিনি একদা স্বপ্নে বেহেশত দেখলেন। এছাড়াও জন অ্যাপোস্টল বলেছেন যে, ইউফ্রেটিসের তীরে গোলযোগ বাধতে। অর্থাৎ বর্তমান ইরাকে। তিনি অনেক পূর্বেই এসব কথা বলে গিয়েছিলেন। আপনারাও ইউফ্রেটিসের গোলযোগের কথা বলেছেন। আরও অনেক কথা বলেছেন। তবে এ কথাটা বিশেষভাবে বলেছেন। তিনি স্বর্গে দেখেছেন সেই উৎসর্গ করা ভেড়াকে। হ্যাঁ যিশুখ্রিস্ট শারীরিকভাবে ভেড়া নন; বরং তিনি একজন মানুষ। ঠিক আছে। কিন্তু রূপক।
হিসেবে তিনি ঈশ্বরের নিখুঁত ভেড়া। ইহুদীদের পুরো ইতিহাসেই এর বর্ণনা পাবেন। নিউ টেস্টামেন্টের পুরো ইতিহাস জুড়েই এসব আপনারা দেখবেন। যিশুকে ভেড়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। স্বর্গে তাঁকে বলা হবে উৎসর্গকৃত সেই ভেড়া। সুতরাং আপনারা যদি আমাদের খ্রিস্টান ধর্ম থেকে ক্রুসকে বাদ দেন তাহলে খ্রিস্টান ধর্মের কিছুই থাকবে না। সেখানে তাহলে শুধু কিছু বিধি-নিষেধ থাকবে। পাপমুক্তি থাকবে না। পাপ আমাদের ছেড়ে যাবে না। কিছুই থাকবে না। মনে রাখবেন, ক্রুসের ব্যাপারটা খুবই মৌলিক। কেননা এ ক্রুসই আমাদের বলে দিয়েছে যে, ঈশ্বর আমাদের জন্যই মারা গিয়েছে। হা! তিনি স্বর্গ থেকে ধরায় নেমে এসেছেন। তিনি মানুষ হিসেবে হেঁটে বেড়িয়েছেন। মানুষ হিসেবে তিনি কষ্ট সহ্য করেছেন। আমাদের মতো তাঁকেও প্রলুব্ধ করা হয়েছে। একথা হয়ত আপনি ভাবতেও পারবেন না। ঠিক আছে?
আপনারা যিশুকে বিশ্বাস করুন। তিনি জয় করেছেন লোভকে। বিভিন্ন আসক্তিকে, বাজে অভ্যাসগুলোকে, আমাদের সবার পাপকে। যিশু আমাদের সবকিছু থেকে মুক্ত করেছেন। আপনারা শুধু তাঁকে বিশ্বাস করুন। তারপর বাসায় ফিরে যান। তার নিকট প্রার্থনা হচ্ছে আমার সময় শেষ। ভালো কথা, পাঁচ মিনিট অনেক সময়, এতে অনেক কথা বলা যায়। আচ্ছা কি বলছিলাম? পাঁচ মিনিট কম সময় নয়। কোন সমস্যা নেই। আচ্ছা এবার যিশুর ক্রুস সম্পর্কে একটি প্রমাণ দিতে চাই। এ ব্যাপারে অন্যতম একটি প্রমাণ হলো, আমাদের এ পবিত্র বাইবেল। অর্থাৎ এর অর্ধেক হলো ইহুদীদের বই। আর বাকী অর্ধেক হলো খ্রিস্টানদের বই। পুরো বাইবেলেই ক্রুসের কথা আছে? প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ দু’ভাবেই বলা আছে। আপনারা ইচ্ছা করলে পরে দেখতে পারেন। বাইবেলের দাম খুবই কম। বোম্বেতে অনেক দোকানে বাইবেল পাওয়া যায়। আর যদি আপনারা এ বিষয়ে কিছুই না জানেন তাহলে পরে বলব।
আর যিশুখ্রিস্ট যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তার অন্য একটা প্রমাণ দিব। এ প্রমাণটা আমাদের পবিত্র বাইবেল থেকে নয়; বরং এ প্রমাণটা দিব যিশুখ্রিস্টের শত্রুদের কাছ থেকে। যারা যিশুকে ঘৃণা করতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইহুদীরা ঐতিহাসিকভাবে যিশুখ্রিস্টকে প্রত্যাখান করেছিল। তাদের দাবি ছিল, এ লোক খ্রিস্ট নয়; বরং এ হলো নকল খ্রিস্ট। তাই তারা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এখন আপনারা হয়তো জানেন যে, ইহুদী জাতি ইতিহাস সংরক্ষণ করে। ইহুদীদের জীবনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে তারা সেই ঘটনা সংরক্ষণ করে রাখে। সেই সংরক্ষিত বইটার নাম টিলমুড। আপনারা হয়তো টিলমুডের নাম শুনেছেন। আপনারা যদি এ টিলমুড বইটা দেখেন যেটা যিশুর সময়কালের সন্নিকটবর্তী দুই হাজার বছরের পূর্বের। তাহলে সেখানে দেখতে পাবেন যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এখানে অনেক ভুল কথা আছে। তারা বলেছে, তিনি নকল খ্রিস্ট। তিনি ভুল প্রচার করেছেন। তিনি নাকি যাদুকর। এভাবে অনেক ভুল কথাই আছে। তবে এ কথাটাও আছে যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি নাকি অন্যায় করেছিলেন, তবে কথাগুলো ঠিক নয়। এটা ক্রুসের পক্ষে বাইরের একটা প্রমাণ।
খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী অসুস্থ মানুষের জন্য আশীর্বাদ করি। আশীর্বাদ করি, দুষ্ট আত্মা থেকে বাঁচার জন্য এবং জীবনের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য। প্রার্থনা করলে ঈশ্বর মুক্তি দিবেন। খ্রিস্টানরা আসলে সঠিক শিক্ষাই দিচ্ছে। এগুলোর প্রমাণ বারবার করা হয়েছে। আমি নিজেই মেরুদণ্ডের অসুখ থেকে সুস্থ হয়েছি। উপস্থিত ডাক্তাররা হয়তো বিষয়টা বুঝবেন যে, আমি কোন ব্যাপারে বলছি। অ্যাংকলিভসিং স্পনডেলাইটিস। এ রোগের চিকিৎসা নেই। এজন্য আপনাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। আপনি কখনো হাঁটতে পারবেন না। এ অসুখে সারাজীবনই ভুগতে হয়। আর এখন থেকে ষোল বছর পূর্বে তারা আমার জন্য প্রার্থনা করেছিল। আমি আস্তে আস্তে সাত দিনে সুস্থ হয়ে গেলাম। আমি ধার্মিক ছিলাম না। শুধু যিশুকে বিশ্বাস করেছি। এমনকি এ ঘটনার আগে পবিত্র বাইবেলটাও আমি পুরোপুরি পড়িনি। আর ঈশ্বরও বলে গিয়েছেন যে, এ লোকগুলো সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে। তাই ক্রুস বাস্তব ঘটনা। আর এ কারণেই আমি সুস্থ হলাম।
এমন অনেক মানুষকে আমি দেখেছি যে, তারা মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। আপনারা হয়তো এ ব্যাপারে আমার সাথে তর্ক করবেন। কিন্তু আমার হাতে বেশি সময় নেই। তাই তর্ক করতে পারব না। এখনকার দিনেও এমন ঘটনা ঘটে। আমি নিজেই এমন ঘটনা দেখেছি। একবার আমি বোম্বে জিমখানার পাশে হাটছিলাম। এমন সময় একটা বাচ্চা মেয়ের ওপর দিয়ে একটি স্কুটার চলে গেল। আমি দেখলাম যে, সে মারা গেছে। মেয়েটার বয়স খুবই কম ছিল। আমি আসলে ডাক্তার নই। তাই আমি বলতে পারব না যে, তার হৃৎপিণ্ডটা তখনো সচল ছিল কি না? শুধু খালি চোখে দেখলাম যে, মেয়েটা মারা গেছে। কোন নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। আর নড়াচড়াও করছে না। মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। তখন আমি যিশুর কাছে প্রার্থনা করছিলাম। অতঃপর যখন আমরা ঐ হাসপাতালে পৌছলাম তখন মেয়েটা আবার শ্বাস নেয়া শুরু করল। আর ডাক্তাররাও তখন মেয়েটার চিকিৎসা করা শুরু করল। ঠিক আছে? তবে এটা নিশ্চিত না যে, মেয়েটা মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিলাম।
তবে এমন অনেক প্রমাণ আছে যে, যিশুর নামে লোকজন মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। আজকাল মৃত্যুর একটা সংজ্ঞা আছে। অসুস্থকে খ্রিস্টানরা সুস্থ করে তুলছে যিশুখ্রিস্টের নাম নিয়ে। ঈশ্বর যিশুখ্রিষ্টের নামে আমাদের করুণা করেছেন, আমাদের ভালোবেসেছেন। যিশুখ্রিষ্টের নামে ক্রুশবিদ্ধ যিশু। তাই যিশুকে বিশ্বাস করেন। ঈশ্বর আপনার সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন। সমস্যা আর থাকবে না। আজকে আমার হাতে আর সময় নেই। সময় থাকলে সবার জন্যই প্রার্থনা করতাম। এখন সময় নেই, তবে অন্য কোন সময় আমাদের সভায় আসতে পারেন। সভাটি হয় দামোদর হল ক্লাশরুমে সকাল নয় ঘটিকায়। আগামী রোববার। একবার চলে আসুন সবার জন্য আমরা সেদিন প্রার্থনা করব। চার্চের সবাই আপনাদের জন্য প্রার্থনা করবে। আমরা খুব জ্ঞানী নই। আমরা খুব মহান নই। এখানে যেমনটা দেখছেন তেমনই।
আবারো বলছি, আমরা সাধারণ মানুষ। আমি এখানে টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমিও একজন সাধারণ মানুষ। এমনকি আমাদের প্যাস্টর তিনিও কাজ করেন এবং তার স্ত্রীও একটা হাসপাতালে চাকুরী করেন। তাই বলছি, আমরা আসলে খুব বড় মানুষ নই। আমরা শুধু বাইবেলের কথা বলি। তবে যদি যিশুর কাছে প্রার্থনা করেন, তাহলে অধিকাংশ সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। অবশ্য যদি এগুলোতে আপনার বিশ্বাস থাকে। ঈশ্বর নিজেই এ ক্রুসের ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন। এটা সত্যি কথা। আর অনেকভাবেই ক্রুসের বাস্তবতা প্রমাণ করা যায়। সবাইকে ধন্যবাদ।
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনের জন্য। দরূদ ও সালাম পেশ করছি রাসূলুল্লাহ (সাঃ), তার পরিবারবর্গ এবং সকল সাহাবীদের উপর। অতঃপর বিতাড়িত তথা অভিশপ্ত শয়তানের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরম দয়ালু ও দয়াবান। আল্লাহ বলেছেন, আর তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, নিশ্চয়ই আমরা ঈসা মাসীহ ইবনে মারইয়ামকে হত্যা করেছি যিনি আল্লাহর একজন রাসূল ছিলেন। কিন্তু তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি। ক্রুশবিদ্ধও করতে পারেনি; বরং তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। আর যারা তাঁর সম্পর্কে মতভেদ করেছিল তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। কারণ তাদের কোন জ্ঞান ছিল না। তারা শুধু অনুমানকেই অনুসরণ করেছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে নিশ্চিতভাবেই হত্যা করেনি।”
“হে আমার প্রভু! আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিন। আমার বিষয়টাকে সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা কাটিয়ে দিন। আমার কথার মর্ম উপলব্ধি যেন তারা করে।”
শ্রদ্ধেয় প্যাস্টর রুকনুদ্দিন অথবা তিনি যেভাবে পছন্দ করেন প্যাস্টর রুক্নি, হেনরি পিও, প্যাস্টর সাজি, এছাড়াও বোম্বের বিভিন্ন চার্চের প্যাস্টর ভাইয়েরা, শ্রদ্ধেয় গুরুজন এবং প্রিয় ভাই ও বোনেরা আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই ইসলামিক সম্ভাষণে–
“আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহ্মাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।”
অর্থঃ আল্লাহর দয়া, শান্তি এবং রহমত আপনাদের সবার উপর বর্ষিত হোক।
আজকের আলোচনা শুরু করার আগে আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, ধর্মে যিশুখ্রিস্টকে আমরা মুসলিমরা কিভাবে দেখি? ইসলাম হলো একমাত্র অখ্রিস্টান ধর্ম, যে ধর্মে যিশুখ্রিস্টকে নবী বলে বিশ্বাস করা হয়। সে আসলে মুসলিম না, যে মুসলিম যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি আল্লাহর খুব গুরুত্বপূর্ণ নবীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ রাসূলও। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি হলেন মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্ট। এটাও আমরা মানি যে, তিনি অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কোনও পুরুষের ঔরসজাত না হয়েই তিনি জন্মেছিলেন। যেটা অনেক আধুনিক খ্রিস্টানরাও বিশ্বাস করে না। মৃতকে জীবিত করেছেন। আমরা এটাও মানি যে, তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে মৃতকে জীবিত করেছেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করেছেন। এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, যদি মুসলিম ও খ্রিস্টান দু’দলই যিশুকে ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে তাহলে আপনাদের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? হ্যা! পার্থক্য আছে। পার্থক্যটা হল খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা যিশুখ্রিস্টকে মনে করে যে, তিনিই হলেন ঈশ্বর। আর তারা বলে যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আর তিনি মানুষের পাপের জন্য মারা গিয়েছেন। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু মনে হয় আপনাদের মনে আছে, “যিশু কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন?” যেহেতু আমরা মুসলিম আর খ্রিষ্টান উভয় পক্ষই যিশুখ্রিষ্টকে মানি তাই আমি উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গিটা বলতে চাই। মুসলিম আর খ্রিষ্টানরা এ বিষয়টাকে কিভাবে মূল্যায়ন করে।
মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা যদি বলতে হয় তাহলে শুরুতেই যা বলতে হবে তা হচ্ছে মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হলো আসমানী কিতাব পবিত্র কোরআন। আজকের বক্তৃতার শুরুতেই আমি মহাপবিত্র কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করেছিলাম। পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াত এটি। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তুটা সম্পর্কে। আপনারা জানেন যে, আমাদের আজকের আলোচক প্যাস্টর রুক্নি একজন আরব খ্রিষ্টান মিশনারি। উনার মাতৃভাষা আরবি। সেজন্য আমার উদ্ধৃত আয়াতটির অনুবাদ উনাকে বলার কোন প্রয়োজন নেই। এ আয়াতের মাধ্যমেই তিনি যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন। তবে এখানে উপস্থিত বেশিরভাগ মানুষই আরবি ভাষা বোঝেন না। কারণ আরবি আমাদের মাতৃভাষা নয়। এখন আমি তাদের জন্য সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতটির অনুবাদ পেশ করছি। যেমন–
আর তারা (ইহুদীরা দম্ভ করে) বলেছে, আম্বিয়া মরিয়মের পুত্র ঈসা যিনি একজন আল্লাহর রাসূল ছিলেন তাকে হত্যা করেছি। আর তারা তাঁকে হত্যাও করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি। বরং তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। আর যারা তাঁর সম্পর্কে মতভেদ করেছিল তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিল এবং তাদের কোন জ্ঞান ছিল না। শুধু অনুমানকেই অনুসরণ করেছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করেনি।
পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটা স্পষ্ট করে বলেছে যে, যিশু খ্রিষ্টকে হত্যা করা হয়নি। সুতরাং আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে– অর্থাৎ তাকে তারা হত্যাও করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি। অর্থাৎ আর তারা নিশ্চিতভাবেই তাঁকে হত্যা করেনি। এখানে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট ও পরিষ্কার। সূরা নিসার এ আয়াত পরিষ্কার করেই বলেছে যে, তাঁকে হত্যা করা হয়নি। আমি যদি এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করি এবং আমাদের প্যাস্টর যা যা বলেছেন তার উত্তরে যদি দু’চার কথা না বলি বা তার যুক্তি যদি খণ্ডন না করি-তাহলে আজকের বিতর্ক অনুষ্ঠান ড্র হয়ে যাবে। অর্থাৎ আলোচনার ফলাফল অমীমাংসিত থেকে যাবে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী যিশুখ্রিষ্টকে আসলে কখনোই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়নি।
এরপর আমি বলতে চাই যে, আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি, খ্রিষ্টানদের বাইবেল ঈশ্বরের বাণী নয়। বড় জোড় এতটুকু বিশ্বাস করতে পারি যে, বাইবেলে এমন কিছু কথা থাকতে পারে যেটুকুকে আমরা ঈশ্বরের বাণী হিসেবে ধরে নিতে পারি। তাছাড়া আপনারা যখন বাইবেল পড়বেন তখন লক্ষ্য করবেন যে, উহাতে অবাস্তব গল্প, অশ্লীল কথাবার্তা বিদ্যমান আছে। কোনটির ভাষা এতই নোংরা যে, কেউ যদি আমাকে হাজার টাকাও দেয় তবুও আমি সেসব কথা মুখে উচ্চারণ করতে পারব না। বাইবেলে এ ধরনের অশ্লীল কথা আছে। এছাড়া বাইবেলে পরস্পর বিরোধী কথাবার্তাও রয়েছে। যদিও আমি বিশ্বাস করি না যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাণী। তারপরও আমি বাইবেল দিয়েই প্রমাণ করতে চাই যে, যিশুখ্রিষ্ট আসলে কখনোই ক্রুশবিদ্ধ হননি। কারণ প্যাস্টর রুক্নি আর এখানে উপস্থিত খ্রিস্টানরা মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাণী। সুতরাং আমি তাদের ধর্মগ্রন্থ দিয়েই প্রমাণ করব যে, যিশুখ্রিষ্ট কখনোই ক্রুশবিদ্ধ হননি। এছাড়া পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১১১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“আর তারা (ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা) বলে যে, ইহুদী ও খ্রিষ্টান ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
ইতোপূর্বে প্যাস্টরও বললেন, যত ভাল কাজই করেন আপনি পাপমুক্ত হতে পারবেন না। কোন কাজ হবে না। যতই যাকাত দেন, হজ্ব করেন, নামাজ পড়েন আর যতই কপালে দাগ পড়ুক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। যদি আপনি ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান না হন। তবে এ আয়াতের শেষে আল্লাহ এটাও বলেছেন–
“এটা তাদের মিথ্যা আশা। আপনি তাদের বলুন! তোমরা প্রমাণ পেশ কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
আল্লাহ মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাদেরকে প্রমাণ পেশ করতে বল। যদি আমি কোরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলি যে, কোরআন আল্লাহর বাণী সেজন্য একইভাবে তাদেরকেও বলব যে– অর্থাৎ তোমাদের প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। এখানে খ্রিষ্টানরা প্রমাণ হিসেবে দেয় এ বাইবেলকে। এটা তাদের বুরহান বা সুস্পষ্ট দলীল। খ্রিষ্টানরা এমনও বলে যে, আমার বাইবেল এটা বলেছে। আমার বাইবেল ওটা বলেছে। বাইবেলে অমুক কথা আছে, তমুক কথা আছে। আসুন তাহলে এবার দেখি। বাইবেলে আসলে কী বলা হয়েছে?
আপনারা হয়ত জানেন যে, পবিত্র বাইবেল পৃথিবীর দুই হাজারেরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তাহলে এবার আসুন দেখি, বাইবেলের বক্তব্য অনুসারেই যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে কিনা? আর এ বাইবেল থেকে আমি যে উপসংহারেই আসি না কেন ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি যে তেমনই হবে এমনটা ভাবা কিন্তু ঠিক হবে না। আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বাইবেলের উপসংহার আর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এক নাও হতে পারে।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিটা আমি পরিষ্কার করে বলেছি যে, পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাঁকে ক্রুশবিদ্ধও করেনি।”
এটা অত্যন্ত পরিষ্কার ঘোষণা। এখন আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়। “Was Christ Really Crusified?” এখন এ ইংরেজি শব্দ Crusify-এর অর্থ কি? Oxford Dictionary অনুযায়ী ‘ক্রুশিফাই’ অর্থ কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। একটা ক্রসের সাথে তাকে বেঁধে রেখে। আর ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী ‘ক্রুশিফাই’ অর্থ কাউকে ক্রসের সাথে পেরেক ঠুকে অথবা বেঁধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। এক কথায় কাউকে যদি ক্রুশিফাই করা হয় তাহলে সে তাহলে সেই মারা যাবে। যদি সে ক্রুশে মারা না যায় তাহলে সে ক্রুশিফায়েও হয়নি বলে ধরে নিতে হবে। এখন ‘রিজারেকশন’ শব্দটার অর্থ কি? Oxford Dictionary অনুযায়ী এর অর্থ কোন কাজ বা ঘটনা যেখানে মৃত্যু লোক জীবিত হয়। বড় হাতে R দিয়ে লেখা। ‘রিজারেকশন’ শব্দের অর্থ খ্রিস্ট মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন। আর ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী ‘রিজারেকশন’ অর্থ যে ঘটনায় মৃত মানুষ জীবিত হয়। কিন্তু বড় হাতের R দিয়ে লেখা ‘রিজারেকশন’ শব্দের অর্থ যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু আর সমাধির পরে তাঁর পুনরায় জীবিত হওয়ার ঘটনা। এক কথায়, যিশুর পুনরুত্থান হয়ে গেলে তাঁকে মারা যেতে হবে। যদি মারা না যান তিনি পুনরুত্থিত হবেন না। আশাকরি আপনারা সবাই এ সংজ্ঞাগুলো ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন।
‘গসপেল অব ম্যাথিউ এর ১৯ নং অধ্যায়ের ১৬ এবং ১৭ নং অনুচ্ছেদে যিশুখ্রিষ্টের নিজের কথার উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে যে, একজন মানুষ পাপমুক্ত হতে পারে যদি সে ঈশ্বরের আইন ও আদেশ পালন করে। তবে সেন্ট পল এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ আইন ও আদেশকে ঠুকে দিয়েছেন ক্রসের সাথে XXX। আপনারা প্যাস্টরকেই বলতে শুনেছেন XX। তিনিও এ আইন ও আদেশকে গেঁথে দিয়েছেন ক্রসের সাথে। আর তিনি কোলোশিয়ানসের ২ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত পলের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, পাপমুক্তি পাওয়ার একটাই উপায় আর তা হচ্ছে, যদি আমরা যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস করি। একই সাথে তিনি নিউটেস্টামেন্টের ফাস্ট কোরিস্থিয়ান্স ১৫ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আমি এ রেফারেন্সগুলো এজন্য বলি যে, আপনারা যাতে না ভাবেন যে, আমি এগুলো মনগড়া বা বানিয়ে বলছি। অথবা যদি আমি এভাবে বলি যে, বাইবেলে একথা আছে। নিউ টেস্টামেন্টে একথা আছে। তাহলে হাজার পৃষ্ঠার বিশ্বকোষ তথা বাইবেলে কোথায় খুঁজে তা পাবেন? সুতরাং আপনাদের সুবিধার জন্যই আমি রেফারেন্স দিয়ে থাকি।
সেন্ট পলের কথা অনুযায়ী ফাস্ট কোরিন্থিয়ানস-এর ১৫ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কে বলা আছে। আর যদি খ্রিষ্ট মৃত থেকে জীবিত না হয়ে থাকেন তাহলে আমার ধর্মপ্রচার মূল্যহীন আর তোমাদের বিশ্বাসও মূল্যহীন। প্যাস্টর রুক্নিও বললেন, যে যতই ভাল কাজ করেন, যতই দান করেন, যদি পাপের বোঝা নিয়ে যিশুর মৃত্যুকে না মানেন তাহলে এগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়বে। আর একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যে, খ্রিস্টান মিশনারীগণ প্রায়ই বলে থাকেন যে, আইজায়া’র ৬৪ নং অধ্যায়ের ৬ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, আমাদের সব ন্যায়নিষ্ঠা, আমাদের সব ভালো কাজ যেন একটা নোংরা বা ছেড়া কাপড়। যদি বিশ্বাস না করি যে যিশুখ্রিষ্ট মানুষের পাপের জন্য ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাহলে সব ভালো কাজ একটা নোংরা ছেড়া কাপড় সদৃশ।
আর প্যাস্টর রুক্নির কথা অনুযায়ী যা তিনি বক্তৃতার সময় বলেছেন, যদি কোন ক্রস না থাকে এবং ক্রুশবিদ্ধের ঘটনা না থাকে তাহলে বাইবেলের দাম দুই পয়সাও থাকবে না। আর তিনি বলেছেন, ক্রুশফিশান না থাকলে খ্রিষ্টান ধর্মও থাকবে না। আমিও অবশ্য এ ব্যাপারে একমত পোষণ করি। প্যাস্টর রুক্নি বললেন, তিনি ইন্ডিয়ায় এসেছিলেন এবং এখানে তিনি দুই যুগ ধরে আছেন। আর ইন্ডিয়ায় আসার পরেই তিনি সত্যিকার খ্রিষ্টান ধর্মের অর্থটা বুঝতে পেরেছেন। আগে সাধারণ খ্রিষ্টান ছিলেন। তবে তিনি একজন ধার্মিক খ্রিষ্টান হয়েছেন এখানকার মুসলমানদের দেখে। আমিও বলি যে, আজকের দিনে পূর্বে মাত্র একজন আরব খ্রিষ্টানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। প্যাস্টর রুক্নির আগে। তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল জেদ্দায়।
তিনি সিরিয়ার লোক। আর আমার বক্তৃতা শোনার পর আল্লাহর রহমতে তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ। আর এখন আমার জীবনে দ্বিতীয়বারের মত কোন আরব খ্রিষ্টানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তাই আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যাতে তিনি তাকেও হেদায়েত দান করেন। আল্লাহ সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি ভারতীয়দের নিকট থেকে খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষা পেয়েছেন। আশা করি, তিনি আবার মূল বিশ্বাস তথা ইসলামে ফিরে যাবেন। কারণ প্রত্যেক মানুষ এ ধর্ম বা বিশ্বাস নিয়েই জন্মায়। এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের পর তিনি মূল বিশ্বাসে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আশা করি এ অনুষ্ঠানের পর তিনি বুঝতে পারবেন যে, কোন ক্রুশিফিক্সন নেই, কোন ক্রস নেই এবং খ্রিস্টান ধর্মও নেই ইনশাআল্লাহ। আমিও সেটা করার চেষ্টা করব- ইনশাআল্লাহ।
আসুন দেখি সেন্টপল পুনরুত্থান সম্পর্কে কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, যিশুর পুনরুত্থান না হলে আমাদের বিশ্বাস মূল্যহীন, আমাদের শেখানো মূল্যহীন। ফার্স্ট কোরেনথিয়ানস ১৫ অধ্যায়ের ৪২ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদে সেন্ট পল বলেছেন যে, একইভাবে মানুষ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবে। সে মারা গিয়েছিল কলুষিত হয়ে। আর পুনরুত্থিত হবে মর্যাদার সাথে। সে মারা গিয়েছিল দুর্বল হয়ে। আর পুনরুত্থিত হবে শক্তির সাথে। সে মারা গিয়েছিল প্রাকৃতিকভাবে। আর পুনরুত্থিত হবে আধ্যাত্মিকভাবে। একটা প্রাকৃতিক শরীর আর অন্যটা আধ্যাত্মিক শরীর। তারা হলো আত্মা। আর একই কথা বলেছেন তার প্রভু যিশুখ্রিষ্ট। যেমন- গসপেল অব ল্যুকের ২০ নং অধ্যায়ের ২৭ থেকে ৩৬ অনুচ্ছেদে ঐ মহিলার গল্পটা বলা হয়েছে যার সাতজন স্বামী ছিল। আর ইহুদীদের রীতি ছিল যে, যদি কোন লোক বিয়ে করে তারপর মারা যায় আর যদি সন্তান না থাকে তখন তার পরের ভাই ঐ বিধবাকে বিয়ে করবে যাতে করে তাদের বংশ রক্ষা করতে পারে। যদি সেই ভাইও মারা যায় আর সেখানে সন্তান না হয় তারপরের ভাই ঐ মহিলাকে বিয়ে করবে। আর এভাবেই চলতে থাকবে। এভাবে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে, ঐ মহিলা একে একে সাত ভাইকেই বিয়ে করেছে। সব ভাই তাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে। অর্থাৎ একজন মহিলা সব ভাইয়েরই স্ত্রী হয়েছিল। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এটা ছিল ইহুদীদের রীতি।
অতঃপর সেই মহিলা মারা গেল। তখন ইহুদীরা যিশুখ্রিস্টকে প্রশ্ন করেছিল যে, পুনরুত্থান হলে ঐ মহিলা কোন ভাইয়ের স্ত্রী হবে? কেননা পুনরুত্থান হলে এই সাত ভাইয়ের প্রত্যেকেই পুনরুত্থিত হবে এবং ঐ মহিলাও পুনরুত্থিত হবে। আর ঐ অবস্থায় সে কোন ভাইয়ের স্ত্রী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে যিশুখ্রিষ্ট যা বলেছিলেন তা গসপেল অব ল্যুক ২০ নং অধ্যায়ের ৩৫ ও ৩৬ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন- সেখানে বলেছেন যে, পুনরুত্থিত শরীর বিয়ে করবে না তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না। ৩৬ নং অনুচ্ছেদ বলছে যে, তারা কখনো মারা যাবে না। তারা তখন দেবদূতের সমপর্যায়ের। তার মানে হচ্ছে তারা তখন দেবদূতের মতো। পুনরুত্থিত শরীর আসলে আধ্যাত্মিক শরীর। একথা কে বলেছেন? বলেছেন, যিশু খ্রিষ্ট। একই কথা সেন্ট পল ফাস্ট কোরিনথিয়ানস ১৫ নং অধ্যায়ের ৪২ থেকে ৪৪ নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলেছেন।
এছাড়া আপনারা গসপেলগুলোতে এমন একটি অনুচ্ছেদও পাবেন না যেটা বলেছে যে, যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি বাইবেলে দেখবেন যে, ক্রুসিফিক্সিনের গল্পে ঐ ঘটনার পরে যিশুর শিষ্যরা সবাই একটা ঘরে ছিল। অতঃপর যিশুখ্রিস্ট সেখানে আসলেন। এটা আছে গসপেল অব ল্যুকের ২৪ নং অধ্যায়ের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে। তাতে যিশুখ্রিস্ট শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বললেন, শালোম। এটা হিব্রু ভাষার শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে- তোমরা শান্তিতে থাক। এরপরের ৩৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যিশুর শিষ্যরা তখন খুব ভয় পেল। আর ভাবল যে, এটা যিশুর আত্মা। এখন আমি যদি আপনাদের একটি প্রশ্ন করি যে, শিষ্যরা কেন এভাবে ভাবল যে, যিশুখ্রিষ্ট একটা আত্মা। তাঁকে কি আত্মার মত দেখাচ্ছিল। আমি এ একই প্রশ্নটা অনেক খ্রিষ্টানকে করেছিলাম। তারা সবাই বলেছে, না। আর এ জবাবটা আমার নিকটও সঠিক বলেই মনে হয়েছে। কারণ, যিশুখ্রিস্টকে ঐসময় কোনভাবেই আত্মার মত দেখাচ্ছিল না, যখন যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফিক্সনের পরে আগমন করেছিলেন। তাহলে শিষ্যরা ভাবল কেন যে, তিনি আত্মা? কারণ হলো, এ ঘটনার পূর্বে তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল তাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছে। তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল যে, তাকে প্রেতাত্মারা নিয়ে গেছে এবং তিনি ইতোপূর্বে মারা গিয়েছেন। তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল যে, মারা যাওয়ার পর তাকে তিন দিন ধরে সমাধিতে রাখা হয়েছিল। তারা লোকজনের কথা শুনেছিল। কারণটা কি আপনারা জানেন? কারণ হচ্ছে, এগুলো কেউ চোখে দেখেননি?
মার্কের কথা অনুযায়ী গসপেল অব ল্যুকের ১৪ নং অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ বলেছে যে, যিশুর সব শিষ্য তাকে ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। আর এটা ছিল যিশুখ্রিস্টের জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্ত, ঐসময় তার শিষ্যদের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। এ প্রয়োজনের পরিমাণ ১০০% ছিল। গসপেল অব মার্কের ১৪ অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা যিশুখ্রিষ্টকে ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। একথা ডা. জাকির নায়েকের নিজস্ব উক্তি নয়। এটা হচ্ছে গসপেল অব মার্কের ১৪ অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ। তারা সবাই পালিয়ে গিয়েছিল আর লোকের মুখে শুনেছিল, সেজন্য তারা মনে করেছিল অথবা ভেবেছিল যে, যিশু একজন আত্মা। যিশুখ্রিষ্ট তখন তাদেরকে পরিষ্কার করে যা বলেছিলেন তা গসপেল অব ল্যুক এর ২৪ অধ্যায়ের ৩৯ ও ৪০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।
যিশু শিষ্যদেরকে বলেছেন যে, তোমরা আমার হাত পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। আমাকে স্পর্শ করে দেখ। আত্মার রক্তমাংসের শরীর থাকে না। আমাকে যেভাবে এখানে দেখছ। তিনি তাদেরকে নিজের হাত আর পা দেখালেন। তোমরা আমার হাত আর পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করছ না কেন? এটাতো আমি নিজেই। আমি তোমাদের প্রভু এবং শিক্ষক যিশুখ্রিষ্ট। তোমরা ভয় পাচ্ছ কেন? আমাকে তোমরা স্পর্শ করে দেখ। আমার হাত আর পা দেখ। আত্মায় রক্তমাংসের শরীর থাকে না। এভাবে তিনি হাত আর পা দেখিয়ে কি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন? তিনি একথা প্রমাণ করতে চাননি যে, তিনি আত্মা; বরং তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তিনি আসলে কোন আত্মা নন। তিনি পুনরুত্থিত হননি। এরপরের অনুচ্ছেদ গসপেলে অব ল্যুকের ২৪ নং অধ্যায়ের ৪১ থেকে ৪২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, শিষ্যরা এটা শুনে খুবই খুশি হলো। তারা ভেবেছিল যে, যিশু মারা গেছেন। যখন দেখল তিনি জীবিত তখন খুব খুশি, বেঁচে আছেন রক্তমাংসের শরীর নিয়ে এবং তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা খুশি হল।
যিশুখ্রিস্ট তখন শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের এখানে রান্না করা মাংস আছে? শিষ্যরা তাকে এক টুকরা মাছ আর মধু দিলেন। আর যিশুখ্রিস্টই তাদের সামনে ঐ খাবারগুলো খেলেন। এর দ্বারা তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি কি পুনরুত্থিত? তিনি কি আত্মা? নিশ্চয়ই না; বরং তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি আসলে রক্তমাংসের মানুষ। আর তাই খাবারগুলো তাদের সামনেই চিবিয়ে খেলেন। তিনি ঝলসানো মাছ আর মধু খেলেন, তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি পুনরুত্থিত হননি। তিনি কোন আত্মা নন; বরং তিনি রক্তমাংস দিয়ে তৈরী একজন মানুষ। পুনরুত্থান না থাকলে ক্রুসিফিক্সন না থাকলে, খ্রিস্টান ধর্মও থাকবে না।
আপনাদের হয়ত মেরি ম্যাগডালিনের সেই গল্পটা মনে আছে। যখন তিনি তৃতীয় দিন যিশুখ্রিস্টের সমাধিতে গেলেন। এ গল্পটা গসপেল অব জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে। এছাড়াও গসপেল অব মার্কের ১৬ নং অধ্যায়ের ২নং অনুচ্ছেদে আছে যে, সেটা ছিল সপ্তাহের প্রথম দিন। অর্থাৎ দিনটা ছিল রোববার। ইহুদীদের সপ্তাহের দিন হলো শনিবার। সুতরাং সপ্তাহের প্রথম দিন হলো রোববার। তাহলে সপ্তাহের সেই প্রথম দিনে ম্যারি ম্যাগডালিন সমাধির কাছে গেলেন। এখন মেরি ম্যাগডালিন কেন তৃতীয় দিন সমাধিতে যাবেন? যেহেতু তাদের মতে, যিশুখ্রিষ্ট আগেই মারা গেছেন তাহলে সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন কি? এর উত্তরটা দেয়া আছে ১ নং অনুচ্ছেদে।
গসপেল অব মার্কের ১নং অনুচ্ছেদে আছে যে, মেরি ম্যাগডালিন যিশুখ্রিষ্টকে ম্যাসাজ করতে গিয়েছিলেন। এখানে ‘অ্যানয়েন্ট’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজি ‘অ্যানয়েন্ট’ শব্দটার হিব্রু মূল শব্দ হলো ‘মাসাহা’।‘ মাসাহা’ শব্দের অর্থ ম্যাসাজ করা। মালিশ করা। তেল মাখানো। এর শব্দটা থেকে আরবি ভাষার শব্দটাও এসেছে ‘মসীহ’। আর ‘মসীহ’ শব্দের হিব্রু অর্থ হলো ‘মেসায়াহ’। ‘মেসায়াহ’ অর্থ হচ্ছে যাকে তেল মাখানো হয় বা যাকে মালিশ করা হয়। এটাকে যদি গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করেন সেটা হবে ‘ক্রোসটোস’। এখান থেকে ইংরেজি শব্দটা এসেছে ‘ক্রাইস্ট’। অর্থাৎ যাকে মালিশ করা হয়।
এখন আমি যদি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি যে, কেউ মারা যাওয়ার তিনদিন পরে কি তার মৃতদেহ ম্যাসাজ করা হয়? এর উত্তর হবে, না। মুসলিমরা আমরা কি তিন দিন পরে মৃতদেহ ম্যাসাজ করি? এর উত্তরটা হবে, না। তাহলে যিশুখ্রিষ্ট মারা যাওয়ার তিন দিন পরে মেরী ম্যাগডালিন কেন সেই সমাধিতে যাবেন। কারণটা জানেন কি? কারণ মেরি ম্যাগডালিন এবং জোসেফ অব অ্যারামেথিয়া আর নিকোডিমাস তারা যিশুর মৃত দেহকে গোসল করিয়েছিলেন? আর যখন যিশুখ্রিস্টের মৃতদেহকে সেই ক্রুস থেকে নামানো হলো মেরী হয়ত যিশুর শরীরে প্রাণের চিহ্ন দেখেছিলেন? সেখানে মেরী নিশ্চয়ই এভাবে বলত না যে, যিশু বেঁচে আছেন। আর তাহলে যিশুখ্রিস্টকে তখন মেরে ফেলা হত? যেহেতু মেরী যিশুর শরীরে প্রাণের চিহ্ন দেখেছেন ফলে তৃতীয় দিনে তিনি আবার ফিরে আসল। আর সে আশা করেছিল, জীবিত যিশুখ্রিস্ট মৃত যিশুখ্রিস্ট নয়। এ কথার বিবরণ আছে গসপেল আর জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১নং অনুচ্ছেদে।
এছাড়াও গসপেল অব মার্কের ১৬ নং অধ্যায়ের ৪নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, মেরী দেখল পাথরটা সরানো হয়েছে। যে কাপড়টা দিয়ে যিশুখ্রিষ্টকে জড়ানো হয়েছিল সেটা খোলা অবস্থায় একপাশে পড়ে আছে। এখন প্রশ্ন হলো পাথরটা সরানোর প্রয়োজন কি? আর মৃতদেহ জড়ানোর কাপড় সেটাও বা একপাশে সরানোর প্রয়োজন কি? যদি যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত হতেন আধ্যাত্মিক শরীর হিসেবে তাহলে সেই আত্মার বের হওয়ার জন্য সেই সমাধি কক্ষের পাথরটা সরানোর কোন প্রয়োজন ছিল কি? কোন আত্মাকে তো দরজা খুলে বের হতে হয় না। আবার দরজা খুলে প্রবেশও করতে হয় না? এজন্য পাথর সরানোর দরকার নেই। তাহলে তারপরও সরানো ছিল কেন? আত্মা যদি চলে যেতে চায় তাহলে কি তার শরীরে জড়ানো কাপড়টা খুলে দিতে হবে? আমার মনে হয় কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু রক্তমাংসের শরীর হলে সমাধি কক্ষের মুখে যে পাথরটা আছে সেটা সরাতে হবে। শরীরে জড়ানো কাপড়টা খুলে ফেলতে হবে। এসব কিছু এটাই প্রমাণ করে যে, যিশুখ্রিস্ট সমাধিকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় একজন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন।
আর সমাধিটার মালিক ছিল যিশুখ্রিস্টের একজন শিষ্য জোসেফ অব আরামাথিয়া- যিনি ছিলেন খুব ধনী ও ক্ষমতাবান ইহুদী। সেই লোক এ সমাধিকক্ষ বানিয়েছিলেন তার নিজের ভবিষ্যতের জন্য। সেখানেই যিশুখ্রিস্টকে রাখা হয়েছিল। সমাধিটা আসলে একটা ঘরের মত। আর জিম বিশপের কথা অনুযায়ী বাইবেল একথা বলেনি। জিম বিশপ বলেছেন, সমাধিকক্ষটা আয়তনে বেশ বড় ছিল। পাঁচ ফুট চওড়া। উচ্চতা ছিল সাতফুট। আর লম্বায় ছিল পনেরো ফুট। কারো জন্য এত বড় সমাধিকক্ষের প্রয়োজন কী? কারণ ঐ লোকটাকে প্রয়োজন হলে সাহায্য করা যাবে। বোম্বেতে আপনারা ছোট ছোট রুম দেখবেন। খুব বেশি হলে ৭৫ বর্গফুট। বোম্বেতে ৭৫ বর্গফুটের একটা ঘর বেশ বড়। সেই ঘরে পাঁচ ছয় জন লোক থাকতে পারে। বোম্বে বর্তমানে জায়গার দাম খুব বেশি। ৭৫ বর্গফুট, সেখানে দেখবেন চার পাঁচ জন লোক থাকে। তাহলে সেই ঘরে প্রয়োজনে সাহায্য করা যাবে? এখন আধ্যাত্মিক শরীরকে সাহায্য করার প্রয়োজন কী? কারণ আত্মার তো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না; বরং তারা এসেছিল একজন জীবিত মানুষকে সাহায্য করার জন্য।
বাইবেল পড়লে দেখবেন গসপেল অব জনের ২০নং অধ্যায়ের ১৫ নং অনুচ্ছেদে যিশু মেরী ম্যাগডালিনের সাথে কথা বলেছেন। আর তখন তারা উভয়ই পৃথিবীতে থেকে, মেরীর পাশে থেকে, কিন্তু স্বর্গে থেকে না। যিশু দেখলেন যে, মেরী কাঁদছেন। যিশু কাছে এসে বললেন, মহিলা তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কাকে খুঁজছ? যদিও তিনি ভালভাবেই জানতেন যে, মেরী কাদছে কেন? তারপরও তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। মেরী তখন যিশুকে মনে করলেন সেখানকার মালি। আর তাকে বলল, আপনি উনাকে নিয়ে কোথায় রেখেছেন? আমি তাকে নিয়ে যেতে এসেছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, মেরী ম্যাগডালিন কেন ভাবল যে, যিশুখ্রিস্ট হলেন সেখানকার বাগানের মালি? আপনাদের একটা প্রশ্ন করি, পুনরুত্থিত মানুষকে কি মালির মতো দেখায়? আপনারা কি বলেন? না।
তাহলে মেরী কেন মনে করলেন যে, যিশুখ্রিস্ট সেখানকার বাগানের মালি? এর উত্তরটা হলো আসলে যিশু তখন মালির ছদ্মবেশে ছিলেন। একজন আত্মা কেন মালির ছদ্মবেশ নিবে? তার কারণ- তিনি ইহুদীদের ভয় পাচ্ছিলেন। আত্মা কখনই কাউকে ভয় পাবে না। কারণ, বুক অব হিব্রুর ৯নং অধ্যায়ের ২৭ নং অনুচ্ছেদে আছে, মানুষ একবারই মারা যায়। তারপর আসবে শেষ বিচারের দিন। গসপেল অব ল্যুকের ২০নং অধ্যায়ের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে যিশু নিজেই বলেছেন, মানুষ একবার মরার পর আর মরবে না। আর যদি আত্মা হয় যান। তাহলে আর কাউকে ভয় পাবেন না। কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। আপনি দ্বিতীয়বার মরবেন না।
যিশু আত্মা হলে ছদ্মবেশ নিয়ে থাকবেন কেন? তিনি ভয় পাবেন কেন? তিনি কেন লুকিয়ে থাকবেন? কেন তিনি ইহুদীদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকবেন? এটাই প্রমাণ করে, তিনি পুনরুত্থিত হননি; বরং তিনি জীবিতই ছিলেন। যিশু তখন মেরীকে বলেছিলেন, মেরী। আর এ একটা শব্দেই মেরী ম্যাগডালিন তার প্রভু যিশুকে চিনে ফেলল। যেমন আমরা সবাই আমাদের প্রিয়জনকে ডাকার সময় বিশেষ ভঙ্গীতে ডাকি। আর সেই একই সুর এবং একই ভঙ্গিমায় প্রিয়জনকে ডাকলে তারা তখন খুব সহজেই বুঝে ফেলে যে, কে তাকে ডাকছে? তাই মেরীও সাথে সাথে বুঝে ফেলল যে, কে তাকে ডাকছে? মেরীও সাথে সাথে বুঝে ফেলল যে, এ মালি আসলে যিশুখ্রিষ্ট। তখন মেরী যিশুর দিকে ছুটে গেলেন।
গসপেল অব জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১৫, ১৬ ও ১৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, যিশুখ্রিস্ট মেরীকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। কেন? কোন কারণে যিশু নিষেধ করলেন? যিশুর শরীরে কি বিদ্যুৎ ছিল যে, কেউ স্পর্শ করলে বিদ্যুতের শক লাগবে? যিশুর শরীরে কি ডিনামাইট বাধা যে, কেউ স্পর্শ করলে তা ফেটে যাবে? তাহলে কেন তিনি তা স্পর্শ করতে মানা করলেন? এর কারণ একটাই। আর তা হচ্ছে তিনি একজন রক্তমাংসের মানুষ। একটু চিন্তা করুন, ক্রুশবিদ্ধ থাকার সময় তিনি যে শারীরিক আর মানসিক কষ্ট পেয়েছেন তার ধকল সামলে ওঠতে সময়ের প্রয়োজন ছিল। যিশু ক্রুশবিদ্ধ থাকার সময় অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন। এখন তার শরীর ক্ষত-বিক্ষত। আর তাই তিনি বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। তারপর আরো যেসব কথা বলেছিলেন তা গসপেল অব জন-এর ২০ নং অধ্যায়ের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, “আমি এখনো আমার পিতার কাছে ফিরে যাইনি।” এ কথার অর্থ কি? এ কথার অর্থ হচ্ছে তখনো তিনি মারা যান নি। যিশুখ্রিস্ট মেরী ম্যাগডালিনকে একেবারে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি তখনো পুনরুত্থিত হননি। আর একথাই প্রমাণ করে যে, তিনি তখনো জীবিত ছিলেন।
বাইবেলে আরো আছে যে, যিশুখ্রিস্ট বেঁচে আছেন। আপনারা গসপেল অব মার্ক ১৬ নং অধ্যায়ের ১১ নং অনুচ্ছেদ দেখতে পারেন। আর যিশু যে বেঁচে আছেন তা তাদেরকে মেরী ম্যাগডালিন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করেনি। ইহুদীদের আর একটা বদ অভ্যাস ছিল যে, তারা অবান্তর প্রশ্ন করতে অভ্যস্ত ছিল। নবীদের ঝামেলায় ফেলত।
পবিত্র কোরআন এ কথা বলেছে, বাইবেলেও একথা আছে। তারা মূসাকেও অবান্তর প্রশ্ন করেছিল। তাঁকে ঝামেলায় ফেলেছিল। মূসাকে অপছন্দ করেছিল। যিশুর সাথেও তারা একই কাজ করেছিল। এছাড়াও গসপেল অব ম্যাথিউর ১২নং অধ্যায়ের ৩৮নং অনুচ্ছেদে আছে যে, ইহুদীরা যিশুখ্রিস্টের কাছে এসে বলল প্রভু ব্যারাই- যার অর্থ হচ্ছে, প্রভু আপনি আমাদের একটা নিদর্শন দেখান। এখানে নিদর্শন মানে অলৌকিক কিছু। যিশুখ্রিষ্ট যেসব ভালো কাজ করেছিলেন সেগুলো দেখেও ইহুদীরা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। তারা অলৌকিক কোন কাজের নিদর্শন দেখতে চাইল। যেমন ধরুন, হয়ত আকাশে উড়ে বেড়ানো; পানির ওপর হেটে বেড়ানো; জ্বলন্ত কয়লার ওপর হাঁটা ইত্যাদি। তারা ইত্যাদি ধরনের নিদর্শন বা সাইন দেখতে চাইল। এখানে সাইন মানে ল্যাম্পপেটের সাইন নয়। রাস্তায় আপনারা বিভিন্ন ধরনের সাইন দেখেন। তেমন কোন সাইন নয়। এখানে সাইন মানে অলৌকিক নিদর্শন।
ইহুদীদের প্রশ্নের উত্তরে যিশুখ্রিস্ট কী বলেছিলেন? তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন? এসবের উত্তর সন্নিবেশিত আছে গসপেল অব ম্যাথিউর ১২ নং অধ্যায়ের ২৯ ও ৪০ নং অনুচ্ছেদে। সেখানে আছে যে, তোমরা অপরাধী আর ব্যাভিচারী জাতি; তোমরা নিদর্শন দেখতে চাও কি? অলৌকিক কিছু দেখতে চাও কি? কোন নিদর্শন দেখানো হবে না শুধু ইউনুসের নিদর্শন বাদে। যেভাবে ইউনুস তিনদিন আর তিন রাত ধরে তিমি মাছের পেটে ছিলেন সেই একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন আর তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবেন। যিশুখ্রিষ্ট তাদেরকে একথা বলেননি যে, তোমরা সেই অন্ধলোককে দেখ যাকে আমি সুস্থ করে তুলেছি। তোমরা সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করো যে আমাকে স্পর্শ করেই সুস্থ হয়েছিল। দুই হাজার শূকর মেরে প্রেতাত্মার আচ্ছন্ন একজনকে সারানোর কথাও বলেননি। পাঁচ হাজার লোককে একটা মাছ খাইয়েছিলেন অথবা তিনি হাজার লোককে একটি রুটি খাইয়েছিলেনএকথাও বলেননি; বরং তিনি বললেন, কোনো নিদর্শনই দেখানো হবে না ইউনুসের নিদর্শন বাদে। যিশুখ্রিষ্ট অলৌকিক কাজ সম্পর্কে এক কথায় বলে দিলেন। আর সেটা হচ্ছে ইউনুসের নিদর্শন। আর কোন লোক যদি ইউনুসের নিদর্শনটা জানতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই বাইবেল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। আর এজন্য তাকে ডক্টর অব ডিভিনিটিও অর্জন করতে হবে না। কারণ এগুলো আমরা স্কুল থেকেই জানি।
আর সব দেশেই এমনকি ভারতেও আপনি একজন খ্রিস্টান কিংবা মুসলিম কিংবা হিন্দু হিসেবে কোন না কোনভাবে হয়তো কমিক্সে অথবা উপদেশমূলক গল্পে ইউনুসের নিদর্শন সম্পর্কে পড়েছেন। তিমির পেটে ইউনুস এ গল্প সবাই জানে। তবে আপনি যদি পবিত্র বাইবেলের ইউনুসের নিদর্শনটা পড়তে চান তাহলে দেখবেন এ বিশাল বইতে ইউনুসের নিদর্শন দুই পৃষ্ঠারও কম। এমনকি দেড় পৃষ্ঠার চাইতেও কম। আপনাদের জন্য এ পৃষ্ঠাটার একটি কপি দেখাচ্ছি। এ বইটির দেড় পৃষ্ঠার চেয়েও কম। মাত্র চারটা অনুচ্ছেদ। আর এ হাজার পৃষ্ঠার বিশ্বকোষে এটা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে আপনারা সবাই গল্পটা মোটামুটি জানেন যে, মহান ঈশ্বর তাঁর নবী ইউনুস আলাইহিস সালাম কে বললেন, নিনেভ শহরের মানুষদের নিকট মহান ঈশ্বরের বাণী প্রচার কর।
কিন্তু ইউনুস বললেন, নিনেভ শহরের মানুষগুলো খুব খারাপ। ঈশ্বরের বাণী তো তারা মেনে চলবে না। আর ভাবলেন, তারা আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবে। আমার সময়টাই নষ্ট হবে। তাই তিনি চলে গেলেন। অর্থাৎ সেখান থেকে জাহাজে করে টারশিনো গেলেন। আর তখনই সাগরে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো। তখনকার দিনে নাবিকদের মধ্যে একটা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল যে, জাহাজে যাওয়ার পর সাগরে ঝড় ওঠার প্রধান কারণ হলো কেউ একজন ঈশ্বরকে অমান্য করছে। তারা তখন বের করার চেষ্টা করতো যে, এ ঘটনার জন্য দায়ী কে? তারা দায়ী লোকটিকে লটারী করে বের করত। অনুরূপভাবে, যখন লটারী করা হলো দেখা গেল ইউনুসই এখানে দায়ী।
ইউনুস আল্লাহ প্রেরিত একজন নবী ছিলেন। তাই তিনি তাদের দাবী মানলেন আর বললেন দেখ, এসব কিছুর জন্য আমিই দায়ী। মহান ঈশ্বর আমাকে নিনেভ শহরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁর আদেশ অমান্য করে এখন জোপা থেকে টারশিশে পালিয়ে যাচ্ছি। আমি অন্যায় করেছি। তোমরা আমাকে ধরে সাগরে নিক্ষেপ কর। কিন্তু তারা বলল, এ লোকটা কতই না ধার্মিক। সুতরাং আমরা তাকে কেন মেরে ফেলব? তারা জাহাজ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই করা গেল না; বরং ঝড় তখনো চলতেছিল। ইউনুস তাদেরকে বললেন, তোমরা আমাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। অবশেষে তারা রাজি হলো আর ইউনুসকে সাগরে নিক্ষেপ করল। সাগরে নিক্ষেপ করার পর ঝড়টা থেমে গেল। হয়তো এটা ছিল কাকতালীয় ঘটনা। কিছুক্ষণ পরে একটি বড়ো তিমি মাছ এসে ইউনুসকে গিলে ফেলল। সেই তিমি ইউনুস আলাইহিস সালাম-কে পেটে নিয়ে তিন দিন তিন রাত সাগরে ঘুরে বেড়াল। তারপর সাগরের পাড়ে বমি করে তাকে ফেলে দিল।
যিশুখ্রিষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে ইহুদীদের কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন যে, তোমাদের কোন নিদর্শন দেখানো হবে না শুধুমাত্র ইউনুসের নিদর্শন বাদে। আর ইউনুস নবী যেভাবে তিন দিন তিন রাত ধরে তিমি মাছের পেটে ছিলেন বুকের ভেতরে থাকবে। এখন আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি যে, ইউনুসকে সাগরে নিক্ষেপ করার সময় তিনি জীবিত না মৃত ছিলেন? উত্তর দেয়ার আগে আপনাদের বোঝার জন্য বলে দিচ্ছি যে, ইউনুস নিজ থেকেই বলেছিলেন, আমি অপরাধী, এজন্য আমিই দায়ী, আমাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। কেউ যদি তার প্রস্তাবে রাজী না হন, তখন হয়ত তার পা ভাঙবেন নতুবা ঘাড় ভেঙ্গে ফেলবেন কিংবা তার হাত মুচড়ে দিবেন। কিন্তু ইউনুস নিজ থেকেই বলেছিলেন, তাই এসব করার প্রয়োজন ছিল না; বরং তখন শুধু প্রয়োজন ছিল সাগরে নিক্ষেপ করার। সুতরাং বুঝতে বাকী রইল না যে, সাগরে নিক্ষেপ করার সময় তিনি জীবিত ছিলেন। তিমি মাছ এসে তাকে গিলে ফেলল। তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। আল্লাহর নিকট তিনি প্রার্থনা করেছিলেন তিমির পেটে অবস্থান করে। আর তখন জীবিত না থাকলে প্রার্থনা করতে পারতেন না। সুতরাং তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। অতএব এ ঘটনায় ইউনুস পুরোপুরি জীবিত ছিলেন জীবিত! জীবিত! জীবিত!!!
যখন কোন লোককে জাহাজ থেকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয় তখন তার মরে যাওয়ার কথা। যদি ঐ লোক মারা যায় তবে তা অলৌকিক হবে না; বরং যদি বেঁচে থাকেন এবং তা অলৌকিক ঘটনা। সুতরাং তিমি মাছ যখন গিলে ফেলল তখন তার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মরেননি। এটা নিঃসন্দেহে অলৌকিক। তিন দিন তিন রাতের গরমে আর অক্সিজেনের অভাবে সেই তিমি মাছের পেটে তার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মরেননি। এটাও অলৌকিক। একসাথে অনেকগুলো অলৌকিক ঘটনা। পুরো ঘটনাটাই অলৌকিক। যিশু বলেছেন, ইহুদীদের ইউনুস যেভাবে তিন দিন তিন রাত ছিলেন সেভাবে ঈশ্বরের পুত্রও তিন দিন তিন রাত থাকবে। অর্থাৎ যেভাবে ইউনুস নবী তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন। অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবে। ইউনুস জীবিত ছিলেন, কিন্তু যখন আমাদের খ্রিষ্টান ভাইদের এ প্রশ্নটা করি যে, আপনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু সমাধিকক্ষে কিভাবে ছিলেন? সবাই তখন মৃত। এখন আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি যে, ইউনুস ছিলেন জীবিত। অন্যদিকে যিশুখ্রিস্ট ছিলেন মৃত। তাহলে যিশুখ্রিস্ট কিভাবে ইউনুসের মত হলেন? অবশ্যই এরকম হলেন না। সম্পূর্ণ আলাদা।
তাহলে বুঝা গেল যে, যিশুর ভবিষ্যত বাণী এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। অথচ তিনি নিজে এ নিদর্শনের কথা বলেছেন। আরো বলেছেন যে, ইউনুসের নিদর্শন ব্যতীত অন্য কোন নিদর্শনই দেখানো হবে না। আর তার এ ভবিষ্যৎবাণীটা বাস্তবে ঘটেনি। কারণ ভবিষ্যতবাণীটা সত্য হতে গেলে যিশুখ্রিস্টের থাকা উচিত জীবিত। তিনি জীবিত ছিলেন। তা না হলে নবী যিশুখ্রিস্টকে বলতে হয় মিথ্যাবাদী, নাউযুবিল্লাহ। এটা আমরা কখনোই বলতে পারি না। যিশুখ্রিস্টকে আমরা সম্মান শ্রদ্ধা করি। তাহলে এ ভবিষ্যত বাণী সত্যি হওয়ার জন্য তাঁর জীবিত থাকা উচিত। আর তিনি সে সময় জীবিত ছিলেন- একথা আমি আগেও প্রমাণ করে দেখিয়েছি। একথা আগেও বলেছি যে, একজন লোককে ক্রুসিফাই হতে গেলে তাকে অবশ্যই সেই ক্রুশে ঝোলা অবস্থায় মারা যেতে হবে। যদি সেই লোক ক্রুসে ঝুলে মারা না যায় তাহলে সে ক্রুসিফাইড হয়নি।
এমন কিছু লোক আছে যারা বলবে যে, এ নিদর্শনের ব্যাপারটা আসলে জীবিত-মৃত নিয়ে নয়; বরং এর দ্বারা সময়ের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, তিন দিন তিন রাত ইউনুস যেভাবে তিমির পেটে ছিলেন তেমনি ঈশ্বরের পুত্র থাকবেন তিন দিন তিন রাত ধরে। তিন শব্দটা বলা হয়েছে চারবার। এখানে আসলে তিন সংখ্যাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জীবিত বা মৃতের ওপর নয়। আমি বলি তিনের মধ্যে অলৌকিকতা কোথায়? যদি বলি, দিল্লী যেতে আমার তিনদিন তিনরাত লাগে- এটা কোন অলৌকিক ব্যাপার হবে কি? তাহলে তিন সংখ্যায় অলৌকিকতা কোথায়? তিন দিন বা তিন সপ্তাহ। এটাতো অলৌকিক কোন কিছু নয়। কিন্তু তাদের বক্তব্য হচ্ছে, না এখানে সময়টাই আসল।
তাহলে আসুন, আমরা দেখি যিশু কি এভবিষ্যতবাণীটা পুরো করেছিলেন যেটা কিছু খ্রিস্টানদের মতে অলৌকিক ঘটনার মূল বিষয়। পূর্বেও বলেছি। এখনও বলছি, কোন খ্রিস্টানকে যদি জিজ্ঞাসা করি যে, পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী যিশুকে কখন ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল? খ্রিস্টানরা বলবে যে, কেন সেটাতো গুড-ফ্রাইডে ছিল। আমার প্রশ্ন শুক্রবারকে কেন গুড-ফ্রাইডে বলা হয়? তারা উত্তরে বলে, যিশু মানুষের পাপের জন্য সেদিন মারা গিয়েছিলেন। তাই শুক্রবার গুড-ফ্রাইডে।
আর বাইবেল পড়লে দেখবেন যে, যিশুখ্রিস্টের বিচার খুব তাড়াতাড়ি করা হয়েছিল। তাড়াতাড়ি করে তাঁকে ক্রুসে ঝোলানো হয়েছিল। তাড়াতাড়ি নামানো হয়েছিল। কারণটা প্যাস্টরও বলেছেন, সেই রাতে কাউকে ক্রুসে ঝুলিয়ে রাখা হতো না। এটার রেফারেন্স তিনি দেননি। এটা আছে ডিউটারোনসির ২১ অধ্যায়ের ২৩ নং অনুচ্ছেদে। সে স্থানটা অভিশপ্ত হবে। সেজন্য যিশুকে নামানো হয়েছিল। তারপর গোসল করানো হলো। আর ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অতঃপর সেই সমাধিকক্ষে তাকে রেখে দেয়া হলো। আর গসপেল অব জন ২০ অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে যে, সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সকালে দেখা গেল সমাধিতে কেউ নেই। আর এটা দেখেছিল মেরী ম্যাগডালিন। তাহলে অনুমান করা যায় যে, যিশু সেই সমাধিকক্ষে ছিলেন শুক্রবার রাতে।
এখানে আমি অনুমানের কথা বললাম কেন? কারণ বাইবেলে একথা বলা নেই যে, কোন সময় যিশু সমাধি ছেড়ে চলে গেছেন। হয়তো তিনি চলে গেছেন শুক্রবার গভীর রাতে কিংবা শনিবার সকালে। কিন্তু এ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। তাই অনুমান করে নিচ্ছি যে, যিশু রোববার সকালে বের হয়ে গেছেন। তাহলে যিশু সেই সমাধিতে ছিলেন শুক্রবার রাতে এটা অনুমান। এরপর সেই সমাধিতে ছিলেন শনিবার সকালে- এটাও অনুমান। যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন শনিবার রাতে - এটাও অনুমান। রোববার সকালে সমাধিকক্ষটা ফাঁকা। তাহলে যিশু সেখানে ছিলেন দুই রাত একদিন। কিন্তু বলা হয়েছিল তিন রাত তিন দিন। ইউনুস নবী যেভাবে তিমি মাছের পেটে ছিলেন, অনুরোপভাবে ঈশ্বরের পুত্র পৃথিবীর বুকের ভেতর থাকবে তিন দিন আর তিন রাত। অথচ যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন দুই রাত আর একদিন। এখন তিন দিন তিন রাত আর দুই রাত এক দিন কি এক? এ দুটা সময় কি এক সমান? অবশ্যই না। তাহলে তারা যে সময়ের ওপর গুরুত্ব দেয় সেটাও আসলে বাস্তবে ফলেনি। এতে ঘটনাটা দাড়াল এমন যে, যিশুখ্রিস্ট তখন জীবিত ছিলেন।
কাউকে ক্রুসিফাইড তখনই বলা হবে যখন সে ক্রুসেই মারা যায়। প্যাস্টার যখন আবার বক্তব্য রাখতে আসবেন তখন আমি তাকে কিছু প্রমাণ দেখাবো যে, যিশুকে ক্রুসিফাই করা হয়নি। তিনি পুনরুত্থিত হননি। তিনি জীবিতই ছিলেন। আর জীবিত থাকলে ক্রুসিফিক্সশন হয় না এবং পুনরুত্থানও হয় না। যিশুকে ক্রুসে ঝোলানোর পরে খুব তাড়াতাড়ি করে ৩ ঘণ্টা পরে নামানো হয়েছিল। তিন ঘণ্টায় ক্রুশে কারো মারা যাওয়া কঠিন। তাই যিশু জীবিত ছিলেন। যখন তাকে নামানো হয়েছিল ক্রুশবিদ্ধ অন্য দু’জন তখন বেঁচে ছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যিশুও বেঁচে ছিলেন এটা হচ্ছে দ্বিতীয় প্রমাণ। তৃতীয় বিষয়টা হলো, তার পা দুটি ভাঙ্গা হয়নি। মৃতের কাছে তার পায়ের কোন দাম নেই। একথা প্রমাণ করে যে, তিনি জীবিত ছিলেন। চতুর্থ বিষয়টা হলো, পাথর সরানো হয়েছিল এবং গায়ে জড়ানো কাপড়টা খোলা হয়েছিল। এতে প্রমাণ করে যে, তিনি জীবিত ছিলেন। পঞ্চমত বিষয়টা হলো, তিনি মালির ছদ্মবেশে ছিলেন। কেন? কারণ তিনি জীবিত ছিলেন। তাই ইহুদীদের কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলেন। ষষ্ঠ বিষয়টা হলো, সমাধিটা বেশ বড় ছিল। অনেক বড় রুম। মৃত একজন লোকের জন্য বড় ঘরের প্রয়োজনটা কি? তার মানে যিশু খ্রিস্ট জীবিত ছিলেন। সপ্তম বিষয়টি হলো, যখন মেরী ম্যাগডালিন যিশুখ্রিষ্টের কাছে গেল তখন যিশু তাকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। কেন? তিনি রক্ত মাংসের মানুষ। তিনি জীবিত ছিলেন। সুতরাং তার ব্যথা লাগবে। যন্ত্রণা পাবেন। এতে প্রমাণ করে তিনি জীবিত ছিলেন। যিশু তখন মেরীকে বলেছিলেন, আমি এখনও আমার পিতার নিকট ফিরে যাইনি। তার মানে তিনি জীবিত ছিলেন। নবম বিষয়টা হলো, মেরী ম্যাগডালিন তখন যিশুখ্রিস্টকে দেখে ভয় পাননি। দশম বিষয়টা হল, সেই উপরের রুমে যিশু তার হাত-পা দেখিয়েছিলেন প্রমাণ করতে যে, তিনি আত্মা নন; বরং তিনি মানুষ। এগারতম বিষয়টা হলো, শিষ্যরা যিশুকে দেখে খুশী হলো। কেন? কারণ তারা ভেবেছিল, যিশু মারা গিয়ে আত্মা হয়েছেন। তারা খুব খুশী হয়েছিল কারণ তিনি জীবিত। বারতম বিষয়টা হলো, যিশু সেখানে একটুকরা সেদ্ধ মাছ আর মধু খেলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি জীবিত ছিলেন। শিষ্যরা শুনেছিল মেরী ম্যাগডালিনের কাছে যে, তিনি জীবিত আছেন। তেরতম বিষয়টা হলো, ইউনুসের নিদর্শন। যেভাবে ইউনুস নবী তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন। একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর ভিতরে থাকবেন জীবিত অবস্থায়। সুতরাং যিশু জীবিত ছিলেন। ক্রুসিফিক্সন হননি। এমনকি পুনরুত্থানও হয় নি।
তাহলে - এক কথায় বলা যায় যে, বাইবেলের কথা অনুযায়ী যিশুকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি মারা যাননি। এখন বিষয় হলো Was Christ Realy Cruesified? তাই যদি ক্রুসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান তাহলে তিনি ক্রুসিফাইড হয়েছেন। অতএব যদি ক্রুসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা না যান তাহলে সেই ঘটনাকে আপনারা কি বলবেন? এর সমার্থক কোন শব্দ ইংরেজি ভাষায় নেই। যদি আপনারা ডিকশনারিতে এ শব্দটা খোঁজেন- তাহলে আমার কথার প্রমাণ দেখতে পাবেন। যে কাউকে ক্রুসে ঝোলানো হয়েছিল কিন্তু মারা যায়নি। এজন্য কোন শব্দই পাবেন না। তাহলে নতুন শব্দ বানাতে হবে। এখানে যে শব্দটা আমরা বলতে পারি তা হচ্ছে যিশুখ্রিষ্ট আসলে ক্রুসিফাইড হননি। তিনি ক্রুসিফিকটেড হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে শব্দটা CRUCIFIXION হবে না; বরং হবে CRUCIFICTION আর আসলেই এটা একটা ফিকশন। আমাদের নতুন শব্দ বানাতে হবে। সুতরাং একথা বলা যায় যে, যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফাইড হননি; বরং তিনি হয়েছিলেন ক্রুসি ফিকটেড। আশাকরি, আপনাদের দ্বিধা-দ্বন্দ এ বক্তব্যের মাধ্যমে দূর হবে। আর প্যাস্টরও মানবেন এবং তার মন থেকে দ্বিধা-সংশয় কেটে যাবে যে, আসলেই যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফাইড হননি। কোন ক্রুসিফিক্সন হয়নি। তাই Fixion নয় হবে Fiction। বক্তব্য শেষ করার আগে কোরআনের সূরা আল ইমরানের ৫৪ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। উহাতে সুন্দর করে বলা হয়েছে–
“আর তারা চক্রান্ত করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কৌশলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”
“আমাদের সর্বশেষ বক্তব্য হচ্ছে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের প্রতিপালন আল্লাহর জন্য।”
“হে আমার প্রভু! আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিন। আমার বিষয়টাকে সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা কাটিয়ে দিন। আমার কথার মর্ম উপলব্ধি যেন তারা করে।”
শ্রদ্ধেয় প্যাস্টর রুকনুদ্দিন অথবা তিনি যেভাবে পছন্দ করেন প্যাস্টর রুক্নি, হেনরি পিও, প্যাস্টর সাজি, এছাড়াও বোম্বের বিভিন্ন চার্চের প্যাস্টর ভাইয়েরা, শ্রদ্ধেয় গুরুজন এবং প্রিয় ভাই ও বোনেরা আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই ইসলামিক সম্ভাষণে–
“আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহ্মাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।”
অর্থঃ আল্লাহর দয়া, শান্তি এবং রহমত আপনাদের সবার উপর বর্ষিত হোক।
আজকের আলোচনা শুরু করার আগে আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, ধর্মে যিশুখ্রিস্টকে আমরা মুসলিমরা কিভাবে দেখি? ইসলাম হলো একমাত্র অখ্রিস্টান ধর্ম, যে ধর্মে যিশুখ্রিস্টকে নবী বলে বিশ্বাস করা হয়। সে আসলে মুসলিম না, যে মুসলিম যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি আল্লাহর খুব গুরুত্বপূর্ণ নবীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ রাসূলও। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি হলেন মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্ট। এটাও আমরা মানি যে, তিনি অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কোনও পুরুষের ঔরসজাত না হয়েই তিনি জন্মেছিলেন। যেটা অনেক আধুনিক খ্রিস্টানরাও বিশ্বাস করে না। মৃতকে জীবিত করেছেন। আমরা এটাও মানি যে, তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে মৃতকে জীবিত করেছেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করেছেন। এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, যদি মুসলিম ও খ্রিস্টান দু’দলই যিশুকে ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে তাহলে আপনাদের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? হ্যা! পার্থক্য আছে। পার্থক্যটা হল খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা যিশুখ্রিস্টকে মনে করে যে, তিনিই হলেন ঈশ্বর। আর তারা বলে যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আর তিনি মানুষের পাপের জন্য মারা গিয়েছেন। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু মনে হয় আপনাদের মনে আছে, “যিশু কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন?” যেহেতু আমরা মুসলিম আর খ্রিষ্টান উভয় পক্ষই যিশুখ্রিষ্টকে মানি তাই আমি উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গিটা বলতে চাই। মুসলিম আর খ্রিষ্টানরা এ বিষয়টাকে কিভাবে মূল্যায়ন করে।
মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা যদি বলতে হয় তাহলে শুরুতেই যা বলতে হবে তা হচ্ছে মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হলো আসমানী কিতাব পবিত্র কোরআন। আজকের বক্তৃতার শুরুতেই আমি মহাপবিত্র কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করেছিলাম। পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াত এটি। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তুটা সম্পর্কে। আপনারা জানেন যে, আমাদের আজকের আলোচক প্যাস্টর রুক্নি একজন আরব খ্রিষ্টান মিশনারি। উনার মাতৃভাষা আরবি। সেজন্য আমার উদ্ধৃত আয়াতটির অনুবাদ উনাকে বলার কোন প্রয়োজন নেই। এ আয়াতের মাধ্যমেই তিনি যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন। তবে এখানে উপস্থিত বেশিরভাগ মানুষই আরবি ভাষা বোঝেন না। কারণ আরবি আমাদের মাতৃভাষা নয়। এখন আমি তাদের জন্য সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতটির অনুবাদ পেশ করছি। যেমন–
আর তারা (ইহুদীরা দম্ভ করে) বলেছে, আম্বিয়া মরিয়মের পুত্র ঈসা যিনি একজন আল্লাহর রাসূল ছিলেন তাকে হত্যা করেছি। আর তারা তাঁকে হত্যাও করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি। বরং তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। আর যারা তাঁর সম্পর্কে মতভেদ করেছিল তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিল এবং তাদের কোন জ্ঞান ছিল না। শুধু অনুমানকেই অনুসরণ করেছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করেনি।
পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটা স্পষ্ট করে বলেছে যে, যিশু খ্রিষ্টকে হত্যা করা হয়নি। সুতরাং আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে– অর্থাৎ তাকে তারা হত্যাও করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি। অর্থাৎ আর তারা নিশ্চিতভাবেই তাঁকে হত্যা করেনি। এখানে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট ও পরিষ্কার। সূরা নিসার এ আয়াত পরিষ্কার করেই বলেছে যে, তাঁকে হত্যা করা হয়নি। আমি যদি এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করি এবং আমাদের প্যাস্টর যা যা বলেছেন তার উত্তরে যদি দু’চার কথা না বলি বা তার যুক্তি যদি খণ্ডন না করি-তাহলে আজকের বিতর্ক অনুষ্ঠান ড্র হয়ে যাবে। অর্থাৎ আলোচনার ফলাফল অমীমাংসিত থেকে যাবে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী যিশুখ্রিষ্টকে আসলে কখনোই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়নি।
এরপর আমি বলতে চাই যে, আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি, খ্রিষ্টানদের বাইবেল ঈশ্বরের বাণী নয়। বড় জোড় এতটুকু বিশ্বাস করতে পারি যে, বাইবেলে এমন কিছু কথা থাকতে পারে যেটুকুকে আমরা ঈশ্বরের বাণী হিসেবে ধরে নিতে পারি। তাছাড়া আপনারা যখন বাইবেল পড়বেন তখন লক্ষ্য করবেন যে, উহাতে অবাস্তব গল্প, অশ্লীল কথাবার্তা বিদ্যমান আছে। কোনটির ভাষা এতই নোংরা যে, কেউ যদি আমাকে হাজার টাকাও দেয় তবুও আমি সেসব কথা মুখে উচ্চারণ করতে পারব না। বাইবেলে এ ধরনের অশ্লীল কথা আছে। এছাড়া বাইবেলে পরস্পর বিরোধী কথাবার্তাও রয়েছে। যদিও আমি বিশ্বাস করি না যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাণী। তারপরও আমি বাইবেল দিয়েই প্রমাণ করতে চাই যে, যিশুখ্রিষ্ট আসলে কখনোই ক্রুশবিদ্ধ হননি। কারণ প্যাস্টর রুক্নি আর এখানে উপস্থিত খ্রিস্টানরা মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাণী। সুতরাং আমি তাদের ধর্মগ্রন্থ দিয়েই প্রমাণ করব যে, যিশুখ্রিষ্ট কখনোই ক্রুশবিদ্ধ হননি। এছাড়া পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১১১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“আর তারা (ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা) বলে যে, ইহুদী ও খ্রিষ্টান ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
ইতোপূর্বে প্যাস্টরও বললেন, যত ভাল কাজই করেন আপনি পাপমুক্ত হতে পারবেন না। কোন কাজ হবে না। যতই যাকাত দেন, হজ্ব করেন, নামাজ পড়েন আর যতই কপালে দাগ পড়ুক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। যদি আপনি ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান না হন। তবে এ আয়াতের শেষে আল্লাহ এটাও বলেছেন–
“এটা তাদের মিথ্যা আশা। আপনি তাদের বলুন! তোমরা প্রমাণ পেশ কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
আল্লাহ মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাদেরকে প্রমাণ পেশ করতে বল। যদি আমি কোরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলি যে, কোরআন আল্লাহর বাণী সেজন্য একইভাবে তাদেরকেও বলব যে– অর্থাৎ তোমাদের প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। এখানে খ্রিষ্টানরা প্রমাণ হিসেবে দেয় এ বাইবেলকে। এটা তাদের বুরহান বা সুস্পষ্ট দলীল। খ্রিষ্টানরা এমনও বলে যে, আমার বাইবেল এটা বলেছে। আমার বাইবেল ওটা বলেছে। বাইবেলে অমুক কথা আছে, তমুক কথা আছে। আসুন তাহলে এবার দেখি। বাইবেলে আসলে কী বলা হয়েছে?
আপনারা হয়ত জানেন যে, পবিত্র বাইবেল পৃথিবীর দুই হাজারেরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তাহলে এবার আসুন দেখি, বাইবেলের বক্তব্য অনুসারেই যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে কিনা? আর এ বাইবেল থেকে আমি যে উপসংহারেই আসি না কেন ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি যে তেমনই হবে এমনটা ভাবা কিন্তু ঠিক হবে না। আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বাইবেলের উপসংহার আর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এক নাও হতে পারে।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিটা আমি পরিষ্কার করে বলেছি যে, পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাঁকে ক্রুশবিদ্ধও করেনি।”
এটা অত্যন্ত পরিষ্কার ঘোষণা। এখন আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়। “Was Christ Really Crusified?” এখন এ ইংরেজি শব্দ Crusify-এর অর্থ কি? Oxford Dictionary অনুযায়ী ‘ক্রুশিফাই’ অর্থ কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। একটা ক্রসের সাথে তাকে বেঁধে রেখে। আর ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী ‘ক্রুশিফাই’ অর্থ কাউকে ক্রসের সাথে পেরেক ঠুকে অথবা বেঁধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। এক কথায় কাউকে যদি ক্রুশিফাই করা হয় তাহলে সে তাহলে সেই মারা যাবে। যদি সে ক্রুশে মারা না যায় তাহলে সে ক্রুশিফায়েও হয়নি বলে ধরে নিতে হবে। এখন ‘রিজারেকশন’ শব্দটার অর্থ কি? Oxford Dictionary অনুযায়ী এর অর্থ কোন কাজ বা ঘটনা যেখানে মৃত্যু লোক জীবিত হয়। বড় হাতে R দিয়ে লেখা। ‘রিজারেকশন’ শব্দের অর্থ খ্রিস্ট মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন। আর ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী ‘রিজারেকশন’ অর্থ যে ঘটনায় মৃত মানুষ জীবিত হয়। কিন্তু বড় হাতের R দিয়ে লেখা ‘রিজারেকশন’ শব্দের অর্থ যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু আর সমাধির পরে তাঁর পুনরায় জীবিত হওয়ার ঘটনা। এক কথায়, যিশুর পুনরুত্থান হয়ে গেলে তাঁকে মারা যেতে হবে। যদি মারা না যান তিনি পুনরুত্থিত হবেন না। আশাকরি আপনারা সবাই এ সংজ্ঞাগুলো ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন।
‘গসপেল অব ম্যাথিউ এর ১৯ নং অধ্যায়ের ১৬ এবং ১৭ নং অনুচ্ছেদে যিশুখ্রিষ্টের নিজের কথার উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে যে, একজন মানুষ পাপমুক্ত হতে পারে যদি সে ঈশ্বরের আইন ও আদেশ পালন করে। তবে সেন্ট পল এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ আইন ও আদেশকে ঠুকে দিয়েছেন ক্রসের সাথে XXX। আপনারা প্যাস্টরকেই বলতে শুনেছেন XX। তিনিও এ আইন ও আদেশকে গেঁথে দিয়েছেন ক্রসের সাথে। আর তিনি কোলোশিয়ানসের ২ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত পলের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, পাপমুক্তি পাওয়ার একটাই উপায় আর তা হচ্ছে, যদি আমরা যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস করি। একই সাথে তিনি নিউটেস্টামেন্টের ফাস্ট কোরিস্থিয়ান্স ১৫ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আমি এ রেফারেন্সগুলো এজন্য বলি যে, আপনারা যাতে না ভাবেন যে, আমি এগুলো মনগড়া বা বানিয়ে বলছি। অথবা যদি আমি এভাবে বলি যে, বাইবেলে একথা আছে। নিউ টেস্টামেন্টে একথা আছে। তাহলে হাজার পৃষ্ঠার বিশ্বকোষ তথা বাইবেলে কোথায় খুঁজে তা পাবেন? সুতরাং আপনাদের সুবিধার জন্যই আমি রেফারেন্স দিয়ে থাকি।
সেন্ট পলের কথা অনুযায়ী ফাস্ট কোরিন্থিয়ানস-এর ১৫ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কে বলা আছে। আর যদি খ্রিষ্ট মৃত থেকে জীবিত না হয়ে থাকেন তাহলে আমার ধর্মপ্রচার মূল্যহীন আর তোমাদের বিশ্বাসও মূল্যহীন। প্যাস্টর রুক্নিও বললেন, যে যতই ভাল কাজ করেন, যতই দান করেন, যদি পাপের বোঝা নিয়ে যিশুর মৃত্যুকে না মানেন তাহলে এগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়বে। আর একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যে, খ্রিস্টান মিশনারীগণ প্রায়ই বলে থাকেন যে, আইজায়া’র ৬৪ নং অধ্যায়ের ৬ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, আমাদের সব ন্যায়নিষ্ঠা, আমাদের সব ভালো কাজ যেন একটা নোংরা বা ছেড়া কাপড়। যদি বিশ্বাস না করি যে যিশুখ্রিষ্ট মানুষের পাপের জন্য ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাহলে সব ভালো কাজ একটা নোংরা ছেড়া কাপড় সদৃশ।
আর প্যাস্টর রুক্নির কথা অনুযায়ী যা তিনি বক্তৃতার সময় বলেছেন, যদি কোন ক্রস না থাকে এবং ক্রুশবিদ্ধের ঘটনা না থাকে তাহলে বাইবেলের দাম দুই পয়সাও থাকবে না। আর তিনি বলেছেন, ক্রুশফিশান না থাকলে খ্রিষ্টান ধর্মও থাকবে না। আমিও অবশ্য এ ব্যাপারে একমত পোষণ করি। প্যাস্টর রুক্নি বললেন, তিনি ইন্ডিয়ায় এসেছিলেন এবং এখানে তিনি দুই যুগ ধরে আছেন। আর ইন্ডিয়ায় আসার পরেই তিনি সত্যিকার খ্রিষ্টান ধর্মের অর্থটা বুঝতে পেরেছেন। আগে সাধারণ খ্রিষ্টান ছিলেন। তবে তিনি একজন ধার্মিক খ্রিষ্টান হয়েছেন এখানকার মুসলমানদের দেখে। আমিও বলি যে, আজকের দিনে পূর্বে মাত্র একজন আরব খ্রিষ্টানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। প্যাস্টর রুক্নির আগে। তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল জেদ্দায়।
তিনি সিরিয়ার লোক। আর আমার বক্তৃতা শোনার পর আল্লাহর রহমতে তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ। আর এখন আমার জীবনে দ্বিতীয়বারের মত কোন আরব খ্রিষ্টানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তাই আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যাতে তিনি তাকেও হেদায়েত দান করেন। আল্লাহ সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি ভারতীয়দের নিকট থেকে খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষা পেয়েছেন। আশা করি, তিনি আবার মূল বিশ্বাস তথা ইসলামে ফিরে যাবেন। কারণ প্রত্যেক মানুষ এ ধর্ম বা বিশ্বাস নিয়েই জন্মায়। এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের পর তিনি মূল বিশ্বাসে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আশা করি এ অনুষ্ঠানের পর তিনি বুঝতে পারবেন যে, কোন ক্রুশিফিক্সন নেই, কোন ক্রস নেই এবং খ্রিস্টান ধর্মও নেই ইনশাআল্লাহ। আমিও সেটা করার চেষ্টা করব- ইনশাআল্লাহ।
আসুন দেখি সেন্টপল পুনরুত্থান সম্পর্কে কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, যিশুর পুনরুত্থান না হলে আমাদের বিশ্বাস মূল্যহীন, আমাদের শেখানো মূল্যহীন। ফার্স্ট কোরেনথিয়ানস ১৫ অধ্যায়ের ৪২ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদে সেন্ট পল বলেছেন যে, একইভাবে মানুষ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবে। সে মারা গিয়েছিল কলুষিত হয়ে। আর পুনরুত্থিত হবে মর্যাদার সাথে। সে মারা গিয়েছিল দুর্বল হয়ে। আর পুনরুত্থিত হবে শক্তির সাথে। সে মারা গিয়েছিল প্রাকৃতিকভাবে। আর পুনরুত্থিত হবে আধ্যাত্মিকভাবে। একটা প্রাকৃতিক শরীর আর অন্যটা আধ্যাত্মিক শরীর। তারা হলো আত্মা। আর একই কথা বলেছেন তার প্রভু যিশুখ্রিষ্ট। যেমন- গসপেল অব ল্যুকের ২০ নং অধ্যায়ের ২৭ থেকে ৩৬ অনুচ্ছেদে ঐ মহিলার গল্পটা বলা হয়েছে যার সাতজন স্বামী ছিল। আর ইহুদীদের রীতি ছিল যে, যদি কোন লোক বিয়ে করে তারপর মারা যায় আর যদি সন্তান না থাকে তখন তার পরের ভাই ঐ বিধবাকে বিয়ে করবে যাতে করে তাদের বংশ রক্ষা করতে পারে। যদি সেই ভাইও মারা যায় আর সেখানে সন্তান না হয় তারপরের ভাই ঐ মহিলাকে বিয়ে করবে। আর এভাবেই চলতে থাকবে। এভাবে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে, ঐ মহিলা একে একে সাত ভাইকেই বিয়ে করেছে। সব ভাই তাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে। অর্থাৎ একজন মহিলা সব ভাইয়েরই স্ত্রী হয়েছিল। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এটা ছিল ইহুদীদের রীতি।
অতঃপর সেই মহিলা মারা গেল। তখন ইহুদীরা যিশুখ্রিস্টকে প্রশ্ন করেছিল যে, পুনরুত্থান হলে ঐ মহিলা কোন ভাইয়ের স্ত্রী হবে? কেননা পুনরুত্থান হলে এই সাত ভাইয়ের প্রত্যেকেই পুনরুত্থিত হবে এবং ঐ মহিলাও পুনরুত্থিত হবে। আর ঐ অবস্থায় সে কোন ভাইয়ের স্ত্রী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে যিশুখ্রিষ্ট যা বলেছিলেন তা গসপেল অব ল্যুক ২০ নং অধ্যায়ের ৩৫ ও ৩৬ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন- সেখানে বলেছেন যে, পুনরুত্থিত শরীর বিয়ে করবে না তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না। ৩৬ নং অনুচ্ছেদ বলছে যে, তারা কখনো মারা যাবে না। তারা তখন দেবদূতের সমপর্যায়ের। তার মানে হচ্ছে তারা তখন দেবদূতের মতো। পুনরুত্থিত শরীর আসলে আধ্যাত্মিক শরীর। একথা কে বলেছেন? বলেছেন, যিশু খ্রিষ্ট। একই কথা সেন্ট পল ফাস্ট কোরিনথিয়ানস ১৫ নং অধ্যায়ের ৪২ থেকে ৪৪ নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলেছেন।
এছাড়া আপনারা গসপেলগুলোতে এমন একটি অনুচ্ছেদও পাবেন না যেটা বলেছে যে, যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি বাইবেলে দেখবেন যে, ক্রুসিফিক্সিনের গল্পে ঐ ঘটনার পরে যিশুর শিষ্যরা সবাই একটা ঘরে ছিল। অতঃপর যিশুখ্রিস্ট সেখানে আসলেন। এটা আছে গসপেল অব ল্যুকের ২৪ নং অধ্যায়ের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে। তাতে যিশুখ্রিস্ট শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বললেন, শালোম। এটা হিব্রু ভাষার শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে- তোমরা শান্তিতে থাক। এরপরের ৩৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যিশুর শিষ্যরা তখন খুব ভয় পেল। আর ভাবল যে, এটা যিশুর আত্মা। এখন আমি যদি আপনাদের একটি প্রশ্ন করি যে, শিষ্যরা কেন এভাবে ভাবল যে, যিশুখ্রিষ্ট একটা আত্মা। তাঁকে কি আত্মার মত দেখাচ্ছিল। আমি এ একই প্রশ্নটা অনেক খ্রিষ্টানকে করেছিলাম। তারা সবাই বলেছে, না। আর এ জবাবটা আমার নিকটও সঠিক বলেই মনে হয়েছে। কারণ, যিশুখ্রিস্টকে ঐসময় কোনভাবেই আত্মার মত দেখাচ্ছিল না, যখন যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফিক্সনের পরে আগমন করেছিলেন। তাহলে শিষ্যরা ভাবল কেন যে, তিনি আত্মা? কারণ হলো, এ ঘটনার পূর্বে তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল তাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছে। তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল যে, তাকে প্রেতাত্মারা নিয়ে গেছে এবং তিনি ইতোপূর্বে মারা গিয়েছেন। তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল যে, মারা যাওয়ার পর তাকে তিন দিন ধরে সমাধিতে রাখা হয়েছিল। তারা লোকজনের কথা শুনেছিল। কারণটা কি আপনারা জানেন? কারণ হচ্ছে, এগুলো কেউ চোখে দেখেননি?
মার্কের কথা অনুযায়ী গসপেল অব ল্যুকের ১৪ নং অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ বলেছে যে, যিশুর সব শিষ্য তাকে ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। আর এটা ছিল যিশুখ্রিস্টের জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্ত, ঐসময় তার শিষ্যদের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। এ প্রয়োজনের পরিমাণ ১০০% ছিল। গসপেল অব মার্কের ১৪ অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা যিশুখ্রিষ্টকে ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। একথা ডা. জাকির নায়েকের নিজস্ব উক্তি নয়। এটা হচ্ছে গসপেল অব মার্কের ১৪ অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ। তারা সবাই পালিয়ে গিয়েছিল আর লোকের মুখে শুনেছিল, সেজন্য তারা মনে করেছিল অথবা ভেবেছিল যে, যিশু একজন আত্মা। যিশুখ্রিষ্ট তখন তাদেরকে পরিষ্কার করে যা বলেছিলেন তা গসপেল অব ল্যুক এর ২৪ অধ্যায়ের ৩৯ ও ৪০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।
যিশু শিষ্যদেরকে বলেছেন যে, তোমরা আমার হাত পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। আমাকে স্পর্শ করে দেখ। আত্মার রক্তমাংসের শরীর থাকে না। আমাকে যেভাবে এখানে দেখছ। তিনি তাদেরকে নিজের হাত আর পা দেখালেন। তোমরা আমার হাত আর পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করছ না কেন? এটাতো আমি নিজেই। আমি তোমাদের প্রভু এবং শিক্ষক যিশুখ্রিষ্ট। তোমরা ভয় পাচ্ছ কেন? আমাকে তোমরা স্পর্শ করে দেখ। আমার হাত আর পা দেখ। আত্মায় রক্তমাংসের শরীর থাকে না। এভাবে তিনি হাত আর পা দেখিয়ে কি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন? তিনি একথা প্রমাণ করতে চাননি যে, তিনি আত্মা; বরং তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তিনি আসলে কোন আত্মা নন। তিনি পুনরুত্থিত হননি। এরপরের অনুচ্ছেদ গসপেলে অব ল্যুকের ২৪ নং অধ্যায়ের ৪১ থেকে ৪২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, শিষ্যরা এটা শুনে খুবই খুশি হলো। তারা ভেবেছিল যে, যিশু মারা গেছেন। যখন দেখল তিনি জীবিত তখন খুব খুশি, বেঁচে আছেন রক্তমাংসের শরীর নিয়ে এবং তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা খুশি হল।
যিশুখ্রিস্ট তখন শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের এখানে রান্না করা মাংস আছে? শিষ্যরা তাকে এক টুকরা মাছ আর মধু দিলেন। আর যিশুখ্রিস্টই তাদের সামনে ঐ খাবারগুলো খেলেন। এর দ্বারা তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি কি পুনরুত্থিত? তিনি কি আত্মা? নিশ্চয়ই না; বরং তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি আসলে রক্তমাংসের মানুষ। আর তাই খাবারগুলো তাদের সামনেই চিবিয়ে খেলেন। তিনি ঝলসানো মাছ আর মধু খেলেন, তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি পুনরুত্থিত হননি। তিনি কোন আত্মা নন; বরং তিনি রক্তমাংস দিয়ে তৈরী একজন মানুষ। পুনরুত্থান না থাকলে ক্রুসিফিক্সন না থাকলে, খ্রিস্টান ধর্মও থাকবে না।
আপনাদের হয়ত মেরি ম্যাগডালিনের সেই গল্পটা মনে আছে। যখন তিনি তৃতীয় দিন যিশুখ্রিস্টের সমাধিতে গেলেন। এ গল্পটা গসপেল অব জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে। এছাড়াও গসপেল অব মার্কের ১৬ নং অধ্যায়ের ২নং অনুচ্ছেদে আছে যে, সেটা ছিল সপ্তাহের প্রথম দিন। অর্থাৎ দিনটা ছিল রোববার। ইহুদীদের সপ্তাহের দিন হলো শনিবার। সুতরাং সপ্তাহের প্রথম দিন হলো রোববার। তাহলে সপ্তাহের সেই প্রথম দিনে ম্যারি ম্যাগডালিন সমাধির কাছে গেলেন। এখন মেরি ম্যাগডালিন কেন তৃতীয় দিন সমাধিতে যাবেন? যেহেতু তাদের মতে, যিশুখ্রিষ্ট আগেই মারা গেছেন তাহলে সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন কি? এর উত্তরটা দেয়া আছে ১ নং অনুচ্ছেদে।
গসপেল অব মার্কের ১নং অনুচ্ছেদে আছে যে, মেরি ম্যাগডালিন যিশুখ্রিষ্টকে ম্যাসাজ করতে গিয়েছিলেন। এখানে ‘অ্যানয়েন্ট’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজি ‘অ্যানয়েন্ট’ শব্দটার হিব্রু মূল শব্দ হলো ‘মাসাহা’।‘ মাসাহা’ শব্দের অর্থ ম্যাসাজ করা। মালিশ করা। তেল মাখানো। এর শব্দটা থেকে আরবি ভাষার শব্দটাও এসেছে ‘মসীহ’। আর ‘মসীহ’ শব্দের হিব্রু অর্থ হলো ‘মেসায়াহ’। ‘মেসায়াহ’ অর্থ হচ্ছে যাকে তেল মাখানো হয় বা যাকে মালিশ করা হয়। এটাকে যদি গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করেন সেটা হবে ‘ক্রোসটোস’। এখান থেকে ইংরেজি শব্দটা এসেছে ‘ক্রাইস্ট’। অর্থাৎ যাকে মালিশ করা হয়।
এখন আমি যদি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি যে, কেউ মারা যাওয়ার তিনদিন পরে কি তার মৃতদেহ ম্যাসাজ করা হয়? এর উত্তর হবে, না। মুসলিমরা আমরা কি তিন দিন পরে মৃতদেহ ম্যাসাজ করি? এর উত্তরটা হবে, না। তাহলে যিশুখ্রিষ্ট মারা যাওয়ার তিন দিন পরে মেরী ম্যাগডালিন কেন সেই সমাধিতে যাবেন। কারণটা জানেন কি? কারণ মেরি ম্যাগডালিন এবং জোসেফ অব অ্যারামেথিয়া আর নিকোডিমাস তারা যিশুর মৃত দেহকে গোসল করিয়েছিলেন? আর যখন যিশুখ্রিস্টের মৃতদেহকে সেই ক্রুস থেকে নামানো হলো মেরী হয়ত যিশুর শরীরে প্রাণের চিহ্ন দেখেছিলেন? সেখানে মেরী নিশ্চয়ই এভাবে বলত না যে, যিশু বেঁচে আছেন। আর তাহলে যিশুখ্রিস্টকে তখন মেরে ফেলা হত? যেহেতু মেরী যিশুর শরীরে প্রাণের চিহ্ন দেখেছেন ফলে তৃতীয় দিনে তিনি আবার ফিরে আসল। আর সে আশা করেছিল, জীবিত যিশুখ্রিস্ট মৃত যিশুখ্রিস্ট নয়। এ কথার বিবরণ আছে গসপেল আর জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১নং অনুচ্ছেদে।
এছাড়াও গসপেল অব মার্কের ১৬ নং অধ্যায়ের ৪নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, মেরী দেখল পাথরটা সরানো হয়েছে। যে কাপড়টা দিয়ে যিশুখ্রিষ্টকে জড়ানো হয়েছিল সেটা খোলা অবস্থায় একপাশে পড়ে আছে। এখন প্রশ্ন হলো পাথরটা সরানোর প্রয়োজন কি? আর মৃতদেহ জড়ানোর কাপড় সেটাও বা একপাশে সরানোর প্রয়োজন কি? যদি যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত হতেন আধ্যাত্মিক শরীর হিসেবে তাহলে সেই আত্মার বের হওয়ার জন্য সেই সমাধি কক্ষের পাথরটা সরানোর কোন প্রয়োজন ছিল কি? কোন আত্মাকে তো দরজা খুলে বের হতে হয় না। আবার দরজা খুলে প্রবেশও করতে হয় না? এজন্য পাথর সরানোর দরকার নেই। তাহলে তারপরও সরানো ছিল কেন? আত্মা যদি চলে যেতে চায় তাহলে কি তার শরীরে জড়ানো কাপড়টা খুলে দিতে হবে? আমার মনে হয় কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু রক্তমাংসের শরীর হলে সমাধি কক্ষের মুখে যে পাথরটা আছে সেটা সরাতে হবে। শরীরে জড়ানো কাপড়টা খুলে ফেলতে হবে। এসব কিছু এটাই প্রমাণ করে যে, যিশুখ্রিস্ট সমাধিকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় একজন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন।
আর সমাধিটার মালিক ছিল যিশুখ্রিস্টের একজন শিষ্য জোসেফ অব আরামাথিয়া- যিনি ছিলেন খুব ধনী ও ক্ষমতাবান ইহুদী। সেই লোক এ সমাধিকক্ষ বানিয়েছিলেন তার নিজের ভবিষ্যতের জন্য। সেখানেই যিশুখ্রিস্টকে রাখা হয়েছিল। সমাধিটা আসলে একটা ঘরের মত। আর জিম বিশপের কথা অনুযায়ী বাইবেল একথা বলেনি। জিম বিশপ বলেছেন, সমাধিকক্ষটা আয়তনে বেশ বড় ছিল। পাঁচ ফুট চওড়া। উচ্চতা ছিল সাতফুট। আর লম্বায় ছিল পনেরো ফুট। কারো জন্য এত বড় সমাধিকক্ষের প্রয়োজন কী? কারণ ঐ লোকটাকে প্রয়োজন হলে সাহায্য করা যাবে। বোম্বেতে আপনারা ছোট ছোট রুম দেখবেন। খুব বেশি হলে ৭৫ বর্গফুট। বোম্বেতে ৭৫ বর্গফুটের একটা ঘর বেশ বড়। সেই ঘরে পাঁচ ছয় জন লোক থাকতে পারে। বোম্বে বর্তমানে জায়গার দাম খুব বেশি। ৭৫ বর্গফুট, সেখানে দেখবেন চার পাঁচ জন লোক থাকে। তাহলে সেই ঘরে প্রয়োজনে সাহায্য করা যাবে? এখন আধ্যাত্মিক শরীরকে সাহায্য করার প্রয়োজন কী? কারণ আত্মার তো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না; বরং তারা এসেছিল একজন জীবিত মানুষকে সাহায্য করার জন্য।
বাইবেল পড়লে দেখবেন গসপেল অব জনের ২০নং অধ্যায়ের ১৫ নং অনুচ্ছেদে যিশু মেরী ম্যাগডালিনের সাথে কথা বলেছেন। আর তখন তারা উভয়ই পৃথিবীতে থেকে, মেরীর পাশে থেকে, কিন্তু স্বর্গে থেকে না। যিশু দেখলেন যে, মেরী কাঁদছেন। যিশু কাছে এসে বললেন, মহিলা তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কাকে খুঁজছ? যদিও তিনি ভালভাবেই জানতেন যে, মেরী কাদছে কেন? তারপরও তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। মেরী তখন যিশুকে মনে করলেন সেখানকার মালি। আর তাকে বলল, আপনি উনাকে নিয়ে কোথায় রেখেছেন? আমি তাকে নিয়ে যেতে এসেছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, মেরী ম্যাগডালিন কেন ভাবল যে, যিশুখ্রিস্ট হলেন সেখানকার বাগানের মালি? আপনাদের একটা প্রশ্ন করি, পুনরুত্থিত মানুষকে কি মালির মতো দেখায়? আপনারা কি বলেন? না।
তাহলে মেরী কেন মনে করলেন যে, যিশুখ্রিস্ট সেখানকার বাগানের মালি? এর উত্তরটা হলো আসলে যিশু তখন মালির ছদ্মবেশে ছিলেন। একজন আত্মা কেন মালির ছদ্মবেশ নিবে? তার কারণ- তিনি ইহুদীদের ভয় পাচ্ছিলেন। আত্মা কখনই কাউকে ভয় পাবে না। কারণ, বুক অব হিব্রুর ৯নং অধ্যায়ের ২৭ নং অনুচ্ছেদে আছে, মানুষ একবারই মারা যায়। তারপর আসবে শেষ বিচারের দিন। গসপেল অব ল্যুকের ২০নং অধ্যায়ের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে যিশু নিজেই বলেছেন, মানুষ একবার মরার পর আর মরবে না। আর যদি আত্মা হয় যান। তাহলে আর কাউকে ভয় পাবেন না। কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। আপনি দ্বিতীয়বার মরবেন না।
যিশু আত্মা হলে ছদ্মবেশ নিয়ে থাকবেন কেন? তিনি ভয় পাবেন কেন? তিনি কেন লুকিয়ে থাকবেন? কেন তিনি ইহুদীদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকবেন? এটাই প্রমাণ করে, তিনি পুনরুত্থিত হননি; বরং তিনি জীবিতই ছিলেন। যিশু তখন মেরীকে বলেছিলেন, মেরী। আর এ একটা শব্দেই মেরী ম্যাগডালিন তার প্রভু যিশুকে চিনে ফেলল। যেমন আমরা সবাই আমাদের প্রিয়জনকে ডাকার সময় বিশেষ ভঙ্গীতে ডাকি। আর সেই একই সুর এবং একই ভঙ্গিমায় প্রিয়জনকে ডাকলে তারা তখন খুব সহজেই বুঝে ফেলে যে, কে তাকে ডাকছে? তাই মেরীও সাথে সাথে বুঝে ফেলল যে, কে তাকে ডাকছে? মেরীও সাথে সাথে বুঝে ফেলল যে, এ মালি আসলে যিশুখ্রিষ্ট। তখন মেরী যিশুর দিকে ছুটে গেলেন।
গসপেল অব জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১৫, ১৬ ও ১৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, যিশুখ্রিস্ট মেরীকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। কেন? কোন কারণে যিশু নিষেধ করলেন? যিশুর শরীরে কি বিদ্যুৎ ছিল যে, কেউ স্পর্শ করলে বিদ্যুতের শক লাগবে? যিশুর শরীরে কি ডিনামাইট বাধা যে, কেউ স্পর্শ করলে তা ফেটে যাবে? তাহলে কেন তিনি তা স্পর্শ করতে মানা করলেন? এর কারণ একটাই। আর তা হচ্ছে তিনি একজন রক্তমাংসের মানুষ। একটু চিন্তা করুন, ক্রুশবিদ্ধ থাকার সময় তিনি যে শারীরিক আর মানসিক কষ্ট পেয়েছেন তার ধকল সামলে ওঠতে সময়ের প্রয়োজন ছিল। যিশু ক্রুশবিদ্ধ থাকার সময় অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন। এখন তার শরীর ক্ষত-বিক্ষত। আর তাই তিনি বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। তারপর আরো যেসব কথা বলেছিলেন তা গসপেল অব জন-এর ২০ নং অধ্যায়ের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, “আমি এখনো আমার পিতার কাছে ফিরে যাইনি।” এ কথার অর্থ কি? এ কথার অর্থ হচ্ছে তখনো তিনি মারা যান নি। যিশুখ্রিস্ট মেরী ম্যাগডালিনকে একেবারে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি তখনো পুনরুত্থিত হননি। আর একথাই প্রমাণ করে যে, তিনি তখনো জীবিত ছিলেন।
বাইবেলে আরো আছে যে, যিশুখ্রিস্ট বেঁচে আছেন। আপনারা গসপেল অব মার্ক ১৬ নং অধ্যায়ের ১১ নং অনুচ্ছেদ দেখতে পারেন। আর যিশু যে বেঁচে আছেন তা তাদেরকে মেরী ম্যাগডালিন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করেনি। ইহুদীদের আর একটা বদ অভ্যাস ছিল যে, তারা অবান্তর প্রশ্ন করতে অভ্যস্ত ছিল। নবীদের ঝামেলায় ফেলত।
পবিত্র কোরআন এ কথা বলেছে, বাইবেলেও একথা আছে। তারা মূসাকেও অবান্তর প্রশ্ন করেছিল। তাঁকে ঝামেলায় ফেলেছিল। মূসাকে অপছন্দ করেছিল। যিশুর সাথেও তারা একই কাজ করেছিল। এছাড়াও গসপেল অব ম্যাথিউর ১২নং অধ্যায়ের ৩৮নং অনুচ্ছেদে আছে যে, ইহুদীরা যিশুখ্রিস্টের কাছে এসে বলল প্রভু ব্যারাই- যার অর্থ হচ্ছে, প্রভু আপনি আমাদের একটা নিদর্শন দেখান। এখানে নিদর্শন মানে অলৌকিক কিছু। যিশুখ্রিষ্ট যেসব ভালো কাজ করেছিলেন সেগুলো দেখেও ইহুদীরা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। তারা অলৌকিক কোন কাজের নিদর্শন দেখতে চাইল। যেমন ধরুন, হয়ত আকাশে উড়ে বেড়ানো; পানির ওপর হেটে বেড়ানো; জ্বলন্ত কয়লার ওপর হাঁটা ইত্যাদি। তারা ইত্যাদি ধরনের নিদর্শন বা সাইন দেখতে চাইল। এখানে সাইন মানে ল্যাম্পপেটের সাইন নয়। রাস্তায় আপনারা বিভিন্ন ধরনের সাইন দেখেন। তেমন কোন সাইন নয়। এখানে সাইন মানে অলৌকিক নিদর্শন।
ইহুদীদের প্রশ্নের উত্তরে যিশুখ্রিস্ট কী বলেছিলেন? তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন? এসবের উত্তর সন্নিবেশিত আছে গসপেল অব ম্যাথিউর ১২ নং অধ্যায়ের ২৯ ও ৪০ নং অনুচ্ছেদে। সেখানে আছে যে, তোমরা অপরাধী আর ব্যাভিচারী জাতি; তোমরা নিদর্শন দেখতে চাও কি? অলৌকিক কিছু দেখতে চাও কি? কোন নিদর্শন দেখানো হবে না শুধু ইউনুসের নিদর্শন বাদে। যেভাবে ইউনুস তিনদিন আর তিন রাত ধরে তিমি মাছের পেটে ছিলেন সেই একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন আর তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবেন। যিশুখ্রিষ্ট তাদেরকে একথা বলেননি যে, তোমরা সেই অন্ধলোককে দেখ যাকে আমি সুস্থ করে তুলেছি। তোমরা সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করো যে আমাকে স্পর্শ করেই সুস্থ হয়েছিল। দুই হাজার শূকর মেরে প্রেতাত্মার আচ্ছন্ন একজনকে সারানোর কথাও বলেননি। পাঁচ হাজার লোককে একটা মাছ খাইয়েছিলেন অথবা তিনি হাজার লোককে একটি রুটি খাইয়েছিলেনএকথাও বলেননি; বরং তিনি বললেন, কোনো নিদর্শনই দেখানো হবে না ইউনুসের নিদর্শন বাদে। যিশুখ্রিষ্ট অলৌকিক কাজ সম্পর্কে এক কথায় বলে দিলেন। আর সেটা হচ্ছে ইউনুসের নিদর্শন। আর কোন লোক যদি ইউনুসের নিদর্শনটা জানতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই বাইবেল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। আর এজন্য তাকে ডক্টর অব ডিভিনিটিও অর্জন করতে হবে না। কারণ এগুলো আমরা স্কুল থেকেই জানি।
আর সব দেশেই এমনকি ভারতেও আপনি একজন খ্রিস্টান কিংবা মুসলিম কিংবা হিন্দু হিসেবে কোন না কোনভাবে হয়তো কমিক্সে অথবা উপদেশমূলক গল্পে ইউনুসের নিদর্শন সম্পর্কে পড়েছেন। তিমির পেটে ইউনুস এ গল্প সবাই জানে। তবে আপনি যদি পবিত্র বাইবেলের ইউনুসের নিদর্শনটা পড়তে চান তাহলে দেখবেন এ বিশাল বইতে ইউনুসের নিদর্শন দুই পৃষ্ঠারও কম। এমনকি দেড় পৃষ্ঠার চাইতেও কম। আপনাদের জন্য এ পৃষ্ঠাটার একটি কপি দেখাচ্ছি। এ বইটির দেড় পৃষ্ঠার চেয়েও কম। মাত্র চারটা অনুচ্ছেদ। আর এ হাজার পৃষ্ঠার বিশ্বকোষে এটা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে আপনারা সবাই গল্পটা মোটামুটি জানেন যে, মহান ঈশ্বর তাঁর নবী ইউনুস আলাইহিস সালাম কে বললেন, নিনেভ শহরের মানুষদের নিকট মহান ঈশ্বরের বাণী প্রচার কর।
কিন্তু ইউনুস বললেন, নিনেভ শহরের মানুষগুলো খুব খারাপ। ঈশ্বরের বাণী তো তারা মেনে চলবে না। আর ভাবলেন, তারা আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবে। আমার সময়টাই নষ্ট হবে। তাই তিনি চলে গেলেন। অর্থাৎ সেখান থেকে জাহাজে করে টারশিনো গেলেন। আর তখনই সাগরে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো। তখনকার দিনে নাবিকদের মধ্যে একটা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল যে, জাহাজে যাওয়ার পর সাগরে ঝড় ওঠার প্রধান কারণ হলো কেউ একজন ঈশ্বরকে অমান্য করছে। তারা তখন বের করার চেষ্টা করতো যে, এ ঘটনার জন্য দায়ী কে? তারা দায়ী লোকটিকে লটারী করে বের করত। অনুরূপভাবে, যখন লটারী করা হলো দেখা গেল ইউনুসই এখানে দায়ী।
ইউনুস আল্লাহ প্রেরিত একজন নবী ছিলেন। তাই তিনি তাদের দাবী মানলেন আর বললেন দেখ, এসব কিছুর জন্য আমিই দায়ী। মহান ঈশ্বর আমাকে নিনেভ শহরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁর আদেশ অমান্য করে এখন জোপা থেকে টারশিশে পালিয়ে যাচ্ছি। আমি অন্যায় করেছি। তোমরা আমাকে ধরে সাগরে নিক্ষেপ কর। কিন্তু তারা বলল, এ লোকটা কতই না ধার্মিক। সুতরাং আমরা তাকে কেন মেরে ফেলব? তারা জাহাজ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই করা গেল না; বরং ঝড় তখনো চলতেছিল। ইউনুস তাদেরকে বললেন, তোমরা আমাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। অবশেষে তারা রাজি হলো আর ইউনুসকে সাগরে নিক্ষেপ করল। সাগরে নিক্ষেপ করার পর ঝড়টা থেমে গেল। হয়তো এটা ছিল কাকতালীয় ঘটনা। কিছুক্ষণ পরে একটি বড়ো তিমি মাছ এসে ইউনুসকে গিলে ফেলল। সেই তিমি ইউনুস আলাইহিস সালাম-কে পেটে নিয়ে তিন দিন তিন রাত সাগরে ঘুরে বেড়াল। তারপর সাগরের পাড়ে বমি করে তাকে ফেলে দিল।
যিশুখ্রিষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে ইহুদীদের কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন যে, তোমাদের কোন নিদর্শন দেখানো হবে না শুধুমাত্র ইউনুসের নিদর্শন বাদে। আর ইউনুস নবী যেভাবে তিন দিন তিন রাত ধরে তিমি মাছের পেটে ছিলেন বুকের ভেতরে থাকবে। এখন আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি যে, ইউনুসকে সাগরে নিক্ষেপ করার সময় তিনি জীবিত না মৃত ছিলেন? উত্তর দেয়ার আগে আপনাদের বোঝার জন্য বলে দিচ্ছি যে, ইউনুস নিজ থেকেই বলেছিলেন, আমি অপরাধী, এজন্য আমিই দায়ী, আমাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। কেউ যদি তার প্রস্তাবে রাজী না হন, তখন হয়ত তার পা ভাঙবেন নতুবা ঘাড় ভেঙ্গে ফেলবেন কিংবা তার হাত মুচড়ে দিবেন। কিন্তু ইউনুস নিজ থেকেই বলেছিলেন, তাই এসব করার প্রয়োজন ছিল না; বরং তখন শুধু প্রয়োজন ছিল সাগরে নিক্ষেপ করার। সুতরাং বুঝতে বাকী রইল না যে, সাগরে নিক্ষেপ করার সময় তিনি জীবিত ছিলেন। তিমি মাছ এসে তাকে গিলে ফেলল। তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। আল্লাহর নিকট তিনি প্রার্থনা করেছিলেন তিমির পেটে অবস্থান করে। আর তখন জীবিত না থাকলে প্রার্থনা করতে পারতেন না। সুতরাং তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। অতএব এ ঘটনায় ইউনুস পুরোপুরি জীবিত ছিলেন জীবিত! জীবিত! জীবিত!!!
যখন কোন লোককে জাহাজ থেকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয় তখন তার মরে যাওয়ার কথা। যদি ঐ লোক মারা যায় তবে তা অলৌকিক হবে না; বরং যদি বেঁচে থাকেন এবং তা অলৌকিক ঘটনা। সুতরাং তিমি মাছ যখন গিলে ফেলল তখন তার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মরেননি। এটা নিঃসন্দেহে অলৌকিক। তিন দিন তিন রাতের গরমে আর অক্সিজেনের অভাবে সেই তিমি মাছের পেটে তার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মরেননি। এটাও অলৌকিক। একসাথে অনেকগুলো অলৌকিক ঘটনা। পুরো ঘটনাটাই অলৌকিক। যিশু বলেছেন, ইহুদীদের ইউনুস যেভাবে তিন দিন তিন রাত ছিলেন সেভাবে ঈশ্বরের পুত্রও তিন দিন তিন রাত থাকবে। অর্থাৎ যেভাবে ইউনুস নবী তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন। অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবে। ইউনুস জীবিত ছিলেন, কিন্তু যখন আমাদের খ্রিষ্টান ভাইদের এ প্রশ্নটা করি যে, আপনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু সমাধিকক্ষে কিভাবে ছিলেন? সবাই তখন মৃত। এখন আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি যে, ইউনুস ছিলেন জীবিত। অন্যদিকে যিশুখ্রিস্ট ছিলেন মৃত। তাহলে যিশুখ্রিস্ট কিভাবে ইউনুসের মত হলেন? অবশ্যই এরকম হলেন না। সম্পূর্ণ আলাদা।
তাহলে বুঝা গেল যে, যিশুর ভবিষ্যত বাণী এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। অথচ তিনি নিজে এ নিদর্শনের কথা বলেছেন। আরো বলেছেন যে, ইউনুসের নিদর্শন ব্যতীত অন্য কোন নিদর্শনই দেখানো হবে না। আর তার এ ভবিষ্যৎবাণীটা বাস্তবে ঘটেনি। কারণ ভবিষ্যতবাণীটা সত্য হতে গেলে যিশুখ্রিস্টের থাকা উচিত জীবিত। তিনি জীবিত ছিলেন। তা না হলে নবী যিশুখ্রিস্টকে বলতে হয় মিথ্যাবাদী, নাউযুবিল্লাহ। এটা আমরা কখনোই বলতে পারি না। যিশুখ্রিস্টকে আমরা সম্মান শ্রদ্ধা করি। তাহলে এ ভবিষ্যত বাণী সত্যি হওয়ার জন্য তাঁর জীবিত থাকা উচিত। আর তিনি সে সময় জীবিত ছিলেন- একথা আমি আগেও প্রমাণ করে দেখিয়েছি। একথা আগেও বলেছি যে, একজন লোককে ক্রুসিফাই হতে গেলে তাকে অবশ্যই সেই ক্রুশে ঝোলা অবস্থায় মারা যেতে হবে। যদি সেই লোক ক্রুসে ঝুলে মারা না যায় তাহলে সে ক্রুসিফাইড হয়নি।
এমন কিছু লোক আছে যারা বলবে যে, এ নিদর্শনের ব্যাপারটা আসলে জীবিত-মৃত নিয়ে নয়; বরং এর দ্বারা সময়ের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, তিন দিন তিন রাত ইউনুস যেভাবে তিমির পেটে ছিলেন তেমনি ঈশ্বরের পুত্র থাকবেন তিন দিন তিন রাত ধরে। তিন শব্দটা বলা হয়েছে চারবার। এখানে আসলে তিন সংখ্যাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জীবিত বা মৃতের ওপর নয়। আমি বলি তিনের মধ্যে অলৌকিকতা কোথায়? যদি বলি, দিল্লী যেতে আমার তিনদিন তিনরাত লাগে- এটা কোন অলৌকিক ব্যাপার হবে কি? তাহলে তিন সংখ্যায় অলৌকিকতা কোথায়? তিন দিন বা তিন সপ্তাহ। এটাতো অলৌকিক কোন কিছু নয়। কিন্তু তাদের বক্তব্য হচ্ছে, না এখানে সময়টাই আসল।
তাহলে আসুন, আমরা দেখি যিশু কি এভবিষ্যতবাণীটা পুরো করেছিলেন যেটা কিছু খ্রিস্টানদের মতে অলৌকিক ঘটনার মূল বিষয়। পূর্বেও বলেছি। এখনও বলছি, কোন খ্রিস্টানকে যদি জিজ্ঞাসা করি যে, পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী যিশুকে কখন ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল? খ্রিস্টানরা বলবে যে, কেন সেটাতো গুড-ফ্রাইডে ছিল। আমার প্রশ্ন শুক্রবারকে কেন গুড-ফ্রাইডে বলা হয়? তারা উত্তরে বলে, যিশু মানুষের পাপের জন্য সেদিন মারা গিয়েছিলেন। তাই শুক্রবার গুড-ফ্রাইডে।
আর বাইবেল পড়লে দেখবেন যে, যিশুখ্রিস্টের বিচার খুব তাড়াতাড়ি করা হয়েছিল। তাড়াতাড়ি করে তাঁকে ক্রুসে ঝোলানো হয়েছিল। তাড়াতাড়ি নামানো হয়েছিল। কারণটা প্যাস্টরও বলেছেন, সেই রাতে কাউকে ক্রুসে ঝুলিয়ে রাখা হতো না। এটার রেফারেন্স তিনি দেননি। এটা আছে ডিউটারোনসির ২১ অধ্যায়ের ২৩ নং অনুচ্ছেদে। সে স্থানটা অভিশপ্ত হবে। সেজন্য যিশুকে নামানো হয়েছিল। তারপর গোসল করানো হলো। আর ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অতঃপর সেই সমাধিকক্ষে তাকে রেখে দেয়া হলো। আর গসপেল অব জন ২০ অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে যে, সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সকালে দেখা গেল সমাধিতে কেউ নেই। আর এটা দেখেছিল মেরী ম্যাগডালিন। তাহলে অনুমান করা যায় যে, যিশু সেই সমাধিকক্ষে ছিলেন শুক্রবার রাতে।
এখানে আমি অনুমানের কথা বললাম কেন? কারণ বাইবেলে একথা বলা নেই যে, কোন সময় যিশু সমাধি ছেড়ে চলে গেছেন। হয়তো তিনি চলে গেছেন শুক্রবার গভীর রাতে কিংবা শনিবার সকালে। কিন্তু এ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। তাই অনুমান করে নিচ্ছি যে, যিশু রোববার সকালে বের হয়ে গেছেন। তাহলে যিশু সেই সমাধিতে ছিলেন শুক্রবার রাতে এটা অনুমান। এরপর সেই সমাধিতে ছিলেন শনিবার সকালে- এটাও অনুমান। যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন শনিবার রাতে - এটাও অনুমান। রোববার সকালে সমাধিকক্ষটা ফাঁকা। তাহলে যিশু সেখানে ছিলেন দুই রাত একদিন। কিন্তু বলা হয়েছিল তিন রাত তিন দিন। ইউনুস নবী যেভাবে তিমি মাছের পেটে ছিলেন, অনুরোপভাবে ঈশ্বরের পুত্র পৃথিবীর বুকের ভেতর থাকবে তিন দিন আর তিন রাত। অথচ যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন দুই রাত আর একদিন। এখন তিন দিন তিন রাত আর দুই রাত এক দিন কি এক? এ দুটা সময় কি এক সমান? অবশ্যই না। তাহলে তারা যে সময়ের ওপর গুরুত্ব দেয় সেটাও আসলে বাস্তবে ফলেনি। এতে ঘটনাটা দাড়াল এমন যে, যিশুখ্রিস্ট তখন জীবিত ছিলেন।
কাউকে ক্রুসিফাইড তখনই বলা হবে যখন সে ক্রুসেই মারা যায়। প্যাস্টার যখন আবার বক্তব্য রাখতে আসবেন তখন আমি তাকে কিছু প্রমাণ দেখাবো যে, যিশুকে ক্রুসিফাই করা হয়নি। তিনি পুনরুত্থিত হননি। তিনি জীবিতই ছিলেন। আর জীবিত থাকলে ক্রুসিফিক্সশন হয় না এবং পুনরুত্থানও হয় না। যিশুকে ক্রুসে ঝোলানোর পরে খুব তাড়াতাড়ি করে ৩ ঘণ্টা পরে নামানো হয়েছিল। তিন ঘণ্টায় ক্রুশে কারো মারা যাওয়া কঠিন। তাই যিশু জীবিত ছিলেন। যখন তাকে নামানো হয়েছিল ক্রুশবিদ্ধ অন্য দু’জন তখন বেঁচে ছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যিশুও বেঁচে ছিলেন এটা হচ্ছে দ্বিতীয় প্রমাণ। তৃতীয় বিষয়টা হলো, তার পা দুটি ভাঙ্গা হয়নি। মৃতের কাছে তার পায়ের কোন দাম নেই। একথা প্রমাণ করে যে, তিনি জীবিত ছিলেন। চতুর্থ বিষয়টা হলো, পাথর সরানো হয়েছিল এবং গায়ে জড়ানো কাপড়টা খোলা হয়েছিল। এতে প্রমাণ করে যে, তিনি জীবিত ছিলেন। পঞ্চমত বিষয়টা হলো, তিনি মালির ছদ্মবেশে ছিলেন। কেন? কারণ তিনি জীবিত ছিলেন। তাই ইহুদীদের কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলেন। ষষ্ঠ বিষয়টা হলো, সমাধিটা বেশ বড় ছিল। অনেক বড় রুম। মৃত একজন লোকের জন্য বড় ঘরের প্রয়োজনটা কি? তার মানে যিশু খ্রিস্ট জীবিত ছিলেন। সপ্তম বিষয়টি হলো, যখন মেরী ম্যাগডালিন যিশুখ্রিষ্টের কাছে গেল তখন যিশু তাকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। কেন? তিনি রক্ত মাংসের মানুষ। তিনি জীবিত ছিলেন। সুতরাং তার ব্যথা লাগবে। যন্ত্রণা পাবেন। এতে প্রমাণ করে তিনি জীবিত ছিলেন। যিশু তখন মেরীকে বলেছিলেন, আমি এখনও আমার পিতার নিকট ফিরে যাইনি। তার মানে তিনি জীবিত ছিলেন। নবম বিষয়টা হলো, মেরী ম্যাগডালিন তখন যিশুখ্রিস্টকে দেখে ভয় পাননি। দশম বিষয়টা হল, সেই উপরের রুমে যিশু তার হাত-পা দেখিয়েছিলেন প্রমাণ করতে যে, তিনি আত্মা নন; বরং তিনি মানুষ। এগারতম বিষয়টা হলো, শিষ্যরা যিশুকে দেখে খুশী হলো। কেন? কারণ তারা ভেবেছিল, যিশু মারা গিয়ে আত্মা হয়েছেন। তারা খুব খুশী হয়েছিল কারণ তিনি জীবিত। বারতম বিষয়টা হলো, যিশু সেখানে একটুকরা সেদ্ধ মাছ আর মধু খেলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি জীবিত ছিলেন। শিষ্যরা শুনেছিল মেরী ম্যাগডালিনের কাছে যে, তিনি জীবিত আছেন। তেরতম বিষয়টা হলো, ইউনুসের নিদর্শন। যেভাবে ইউনুস নবী তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন। একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর ভিতরে থাকবেন জীবিত অবস্থায়। সুতরাং যিশু জীবিত ছিলেন। ক্রুসিফিক্সন হননি। এমনকি পুনরুত্থানও হয় নি।
তাহলে - এক কথায় বলা যায় যে, বাইবেলের কথা অনুযায়ী যিশুকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি মারা যাননি। এখন বিষয় হলো Was Christ Realy Cruesified? তাই যদি ক্রুসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান তাহলে তিনি ক্রুসিফাইড হয়েছেন। অতএব যদি ক্রুসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা না যান তাহলে সেই ঘটনাকে আপনারা কি বলবেন? এর সমার্থক কোন শব্দ ইংরেজি ভাষায় নেই। যদি আপনারা ডিকশনারিতে এ শব্দটা খোঁজেন- তাহলে আমার কথার প্রমাণ দেখতে পাবেন। যে কাউকে ক্রুসে ঝোলানো হয়েছিল কিন্তু মারা যায়নি। এজন্য কোন শব্দই পাবেন না। তাহলে নতুন শব্দ বানাতে হবে। এখানে যে শব্দটা আমরা বলতে পারি তা হচ্ছে যিশুখ্রিষ্ট আসলে ক্রুসিফাইড হননি। তিনি ক্রুসিফিকটেড হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে শব্দটা CRUCIFIXION হবে না; বরং হবে CRUCIFICTION আর আসলেই এটা একটা ফিকশন। আমাদের নতুন শব্দ বানাতে হবে। সুতরাং একথা বলা যায় যে, যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফাইড হননি; বরং তিনি হয়েছিলেন ক্রুসি ফিকটেড। আশাকরি, আপনাদের দ্বিধা-দ্বন্দ এ বক্তব্যের মাধ্যমে দূর হবে। আর প্যাস্টরও মানবেন এবং তার মন থেকে দ্বিধা-সংশয় কেটে যাবে যে, আসলেই যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফাইড হননি। কোন ক্রুসিফিক্সন হয়নি। তাই Fixion নয় হবে Fiction। বক্তব্য শেষ করার আগে কোরআনের সূরা আল ইমরানের ৫৪ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। উহাতে সুন্দর করে বলা হয়েছে–
“আর তারা চক্রান্ত করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কৌশলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”
“আমাদের সর্বশেষ বক্তব্য হচ্ছে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের প্রতিপালন আল্লাহর জন্য।”
প্যাস্টর রুক্নিঃ থ্যাঙ্ক ইউ, ডা. জাকির! আপনার লেকচারের জন্য। আপনি অনেক অযৌক্তিক কথা বললেন। আপনি পবিত্র বাইবেলের বিভিন্ন কথার ভুল ব্যাখ্যা দিলেন। আর এ ব্যাখ্যাগুলো আপনি এত অযৌক্তিকভাবে দিলেন যে, আমার জন্য আলোচনা করাটাও কঠিন। তবে আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। সবগুলো নিয়ে বলছি না। আমি আপনাদের সামনে কয়েকটা পয়েন্ট বলব। কারণ, এখানে আমার উদ্দেশ্য কোনো বিতর্ক করা না। এখানে আমার উদ্দেশ্য হলো আপনাদের জীবনে মুক্তির পথ দেখানো পাপ থেকে যিশুখ্রিস্টের মাধ্যমে। সেটাই আমার উদ্দেশ্য। বিতর্কে হারলেও কোন ক্ষতি নেই। ঠিক আছে? এখানে সেটাই আমার উদ্দেশ্য।
আচ্ছা, এখন এক নম্বর হলো পবিত্র বাইবেলে কিছু আপত্তিকর কথা আছে। কারণ হলো বাইবেল আসলে সত্যের ব্যাপারে খুবই বিশ্বস্ত। এটাকে বলা যায় একটা আয়না। যদি আপনার চেহারা কুৎসিত হয় বাইবেল বলবে, আপনি সুন্দর। বাইবেল এরকমই। সেজন্য এখানে দুই ধরনের মানুষকেই দেখবেন। এখানে পাপী আর অপরাধীদের দেখবেন যে, মানুষ কতখানি ঈশ্বরকে অমান্য করতে পারে। আর একই সাথে বাইবেল দেখায় যে, ঈশ্বরকে ভালোবাসলে মানুষ কতখানি মান্য করতে পারে। আর সেজন্য বাইবেলে মানুষের দুই রকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথাই বলা হয়েছে। বাইবেল বলবে না, সেইন্ট পল খুব ভালো মানুষ, কখনো ভুল করেও না। আপনারাই দেখবেন-সেইন্ট পলের অনেক দোষ আছে। আপনারা অন্য ধর্মে দেখেন ইসলামেও দেখবেন তারা কি করে? মানুষকে ঈশ্বরের মতো বানিয়ে দেয়। যে সেই লোক একদম নিখুঁত। কখনো ভুল করে না। একমাত্র যীশুই পাপ করেননি।
ঠিক আছে? সেইন্ট পলের ভালো দিক আছে। খারাপ দিকও আছে। সে খুব বদমেজাজী ছিল। আমি কখনোই সিনিয়র প্যাস্টর হিসেবে চাইতাম না। তিনি প্যাস্টরদের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করতেন। ঝগড়া করেছিলেন পিটারের সাথে, ঐযে খাবার নিয়ে জনের সাথে! আচ্ছা এমন অনেক ঘটনা। বাইবেলে আপনারা দুই চেহারাই দেখবেন। এরকম দেখবেন যে অনেক নবীর ধর্মেই দুর্বলতা ছিল। তাদেরও খুঁত ছিল। যেমন- ইউসুফ আলাইহিস সালাম। তিনি মাঝেমধ্যে স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। ভবিষ্যতের কথা বলে দিতেন। তিনি ঈশ্বরের খুবই বিশ্বাসী ভৃত্য, তারপরও দুর্বলতা ছিল। তিনি অনেক মানুষের স্বপ্ন শুনে তাদের ভবিষ্যৎ বলে দিয়েছেন। তাহলে নবীদেরও অনেক দুর্বলতা ছিল। এরকম আরো অনেক আছে। অনেক। মানুষের যেমন ভালো দিকগুলো আছে তেমনি খারাপ দিকগুলোও আছে। বাইবেল আমাদের দেখায় যে, কেউ নিখুঁত নয়। ভালো দিকগুলো দেখায়, আবার খারাপগুলোও দেখায়।
আর একমাত্র যীশুখ্রীষ্টই জীবনে কোনোদিন কোনো পাপ করেনি। এমনকি তিনিও ছোটবেলায় বাবা-মার অবাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাদের মেনে চলেছেন। অবশ্য তিনি সেভাবে সঙ্গ দেন নি যেভাবে আশা করা যায় একটা ছেলের কাছ থেকে। ষোলো বছর বয়সের নাকি বারো বছর বয়স? তখন তারা তিরস্কার করল যিশুও তাদের মানলেন। তিনি শিখছিলেন। আর মানুষ হিসেবে তিনি আনুগত্য শিখলেন। আগে জানতেন। পরে শিখলেন। এটাই মানুষ যিশু। তবে পাপের কথা বললে তিনি কখনোই পাপ করেননি। তাহলে বাইবেল সব সত্যি কথাই বলে- ভালো আর খারাপ। আপনারা মানুষ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চান? তাহলে বাইবেল পড়েন। জানতে চান, মানুষ কত ভালো হতে পারে। ঈশ্বর আমাদের যে কাউকে এমন করে দিতে পারেন। আর এটাও দেখবেন যে, একজন সাধারণ অশিক্ষিত জেলে পুরো পৃথিবীর একজন নেতা হতে পারে।
একথা পবিত্র বাইবেলেই পাবেন। এজন্য পিএইচডি-র দরকার নেই। এম.এস.সির কোনো দরকার নেই। এমন কোনো ডিগ্রী লাগবে না। আপনি শুধু বাইবেল পড়েন দেখবেন জন একজন সাধারণ অশিক্ষিত মানুষ। সে পুরো পৃথিবীর নেতা হবে। ঠিক আছে? এতক্ষণ বললাম, বাইবেলকে কিভাবে দেখবেন? এছাড়া ঈশ্বর রূপক হিসেবে অনেক কিছু বলেছেন। এভাবে রূপক দিয়ে ঈশ্বর অনেক কিছু বুঝিয়েছেন।
আচ্ছা গেল একটা পয়েন্ট। এবারে আমি ডিকশনারি ক্যাপিটাল R স্মল R নিয়ে কথা বলছি। আমি ডিকশনারি চেক করে দেখিনি। তবে ডা. জাকির যা বললেন, সেখান থেকে বুঝলাম ক্যাপিটাল R দিয়ে রেজারেকশন একটা উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে। আমার ধারণা উনি ভুল বুঝেছেন। তাহলে রেজারেকশন হলো পুনরুত্থান তারপর কমা, যিশু পুনরুত্থিত হয়েছেন। ক্যাপিটাল R। এটা একটা উদাহরণ। মনে হচ্ছে, উনি ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। আমার মনে হয় না এখানে ধর্মীয় কথা বলা হয়েছে। এটা উদাহরণ। আর ডিকশনারিতে শব্দ নিয়ে এমন অনেক উদাহরণ থাকে। ব্যাপারটা এমন না যে আমরা ক্যাপিটাল R দিয়ে যিশুর পুনরুত্থান বোঝাই R স্মল R দিয়ে অন্য কারো পুনরুত্থান বোঝাই। ব্যাপারটা এমন না।
আচ্ছা। উনি আরেকটা কথা বলেছেন সব আদেশ ক্রসকে কেন্দ্র করে। আসলে সেইন্ট পল এখানে শুধু আদেশের কথা বলছেন না। পল এখানে বলছেন এ আদেশ আমাদের সবাইকে কিভাবে বিচার করছে। আমি একজন পাপী। এখানে আমার বিচারের কথা বলা হয়েছে। সেই আদেশের কারণেই যিশুখ্রিষ্ট নিজে স্বেচ্ছায় ক্রুসিফাই হয়েছেন। এখানে বাইবেল অথবা অন্য কিছুকে ক্রুসিফাই করা হচ্ছে না। এটার কোনো মানে হয় না অযৌক্তিক। ঈশ্বরের আইন পবিত্র আর বিশুদ্ধ। এ আইন পাপকে উন্মোচিত করে। প্রতিকার করে না উন্মোচন করে। যিশু এ পাপের প্রতিকার করেছেন। ঠিক আছে? এখানে আদেশগুলোকে ক্রুসিফাই করা হচ্ছে না। এ আদেশগুলো আমাকে যে অভিশাপ আর শাস্তি দেয় সেগুলোকেই ক্রুসিফাই করা হযেছে। না হলে আমি হয়তো নরকেই যেতাম। যীশু আমাদের জন্য এসব করেছেন। আর যীশু মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন।
পুরো বাইবেল বলছে। ডা. জাকির বললেন, বাইবেল বলছে না যিশু মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন। পুরো বাইবেল বলছে। আমি কথাটা শুনে অবাক হয়েছি। আমি একটু বাইবেলটা ভালো করে দেখি। আমার প্যাস্টর বাইবেলটা দেখুক। আপনারাও পড়ে দেখতে পারেন। আমি একটা উদাহরণ দেই ম্রাথিউ ২৮৬ অনুচ্ছেদ আপনারা নিজেরাই পড়ে দেখেন। পরে এরকম আরেকটা উদাহরণ হলো আপনারা দেখবেন রেভেলিশন ১ অধ্যায়ের ১৮ অনুচ্ছেদে যিশুর আত্মা বলছেন, তিনি তার নিজের কথা বলছেন। আমি মৃত ছিলাম। এখন জীবিত হয়েছি। আমি মৃত ছিলাম এখন জীবিত হয়েছি। এখানে রূপক কিছু বলা হচ্ছে না। তিনি মারা গিয়েছিলেন। তারপর আবার জীবিত হয়েছেন।
এখানে শব্দ নিয়ে কোনোরকম খেলা করা হচ্ছে না পরিষ্কার। এবার আরেকটা ব্যাপার হলো যিশুখ্রিষ্টের আত্মাকেও তখন মানুষ যিশুর মতোই দেখাচ্ছিল। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর যিশু যখন ফিরে আসলেন তখন অনেক ব্যাপারে রহস্য ছিল। আর এগুলো পরে বন্ধ ছিল তিনি দেয়াল ফুঁড়ে ঢুকেছিলেন। যিশুর নতুন শরীরে প্রাকৃতিক কিছু বাধা দিতে পারত না। দুই নম্বর, যিশু তার এ শরীরকে লুকিয়ে রাখতে পারতেন। যিশু তার দুই শিষ্যের সাথে হেঁটেছিলেন পুনরুত্থানের পর। তাঁর শিষ্যরা তখন পাশে থাকলেও তাকে চিনতে পারেননি। তারপর যিশু তাদেরকে ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন, বিভিন্ন কথা বললেন। তারপর তারা তাদের ঘরে গেল আর রুটি খেল। তখন তারা বুঝল, এটা তো যীশু। শুধু মেরী ম্যাগডালিন তাকে চেনেননি, এমনটা নয়। অন্যরাও তাকে তখন চিনতে পারেনি।
যিশু যখন নিজের পরিচয় দিলেন, তখন তারা তাকে চিনতে পারল। এতে মনে হয় যে, যিশুর সেই শরীরের কিছু বিশেষত্ব ছিল। তিনি তার আকার বদলাতে পারতেন। আর যিশুখ্রিষ্ট তার হাত দেখিয়েছিলেন কেন? তিনি তার হাতে কিছু একটা দেখাতে চেয়েছিলেন। তার হাতে তখন একটা গর্ত থাকার কথা। দেখ! আমিই সেই যিশু। যিশু তার শিষ্যদের পুরো শরীর দেখালেন যেসব জায়গায় রোমান সৈন্যরা তাকে মেরেছিল। দেখ আমি যিশু। আমি অন্য কোনো লোক নই। এ শরীরে তোমরা ক্রসের সব চিহ্নই দেখবে। এ চিহ্নগুলো যিশুর শরীরেই আছে। তাহলে যিশুর এ শরীর যদিও শরীরটা একবারে নতুন তবে সেখানে পুরোনো শরীরের চিহ্নগুলোও ছিল। রহস্য। আমরা যিশুর নতুন শরীর সম্পর্কে কিছুই জানি না। কিন্তু এটা জানি যে, সেটা অলৌকিক শরীর। শরীরের দ্যুতি ছিল অন্যরকম। অনেক উজ্জ্বল দ্যুতি।
আর সেই শরীর দেখে আপনারাও দেখতে পারতেন ঐযে ঐ হলো ব্রাদার রুক্নি। এটা তার পুনরুত্থিত শরীর। তবে অনেক সময়ে হয়তো আমাকে চিনতে পারবেন না। আমি দেয়াল ভেদ করে যেতে পারব না। তার শরীরে অনেক চিহ্ন ছিল। সেগুলো দেখিয়েছিলেন। এ যে আমার হাত এটা দেখে কিছু মনে করতে পারছ? দেখ! এই যে আমি রুক্নি। একটা বিশেষ কিছু। যিশু সেটাই বলেছেন, এ কথাগুলোই বলেছেন। তিন নম্বর যে, সমাধিটা অনেক বড় ছিল। এটা বাইবেলে পরিষ্কার বলা আছে, সমাধিটার মালিক ছিল খুব ধনী। একজন ধনী লোক কখনো সস্তা, ছোট ঘর বানাবে না। সে তার জন্য একটা বড় সমাধিই তৈরী করবে। যিশু এ সমাধির ভেতরে.....এ প্রশ্নটাই আসলে অবান্তর। তিনি তো এ সমাধিকক্ষে বসবাস করার জন্য যাননি। এটাতো কারো থাকার জায়গা না।
বাইবেলে একেবারে পরিষ্কার আছে সমাধিটা ছিল এক ধনী লোকের। আর সে তার পরিবারের সবার জন্য বড় একটা সমাধি বানাতেই পারে। আরেকটা কথা আপনাদের মনে করিয়ে দিই যে, ইব্রাহীমের সময় থেকে এটা ছিল তাদের রীতি, তারা মৃতদেহ রাখত গুহার ভেতরে। মাটিতে কবর দিত না। কখনো কখনো তারা মৃতদেহ কবর দিত। কখনো পুড়িয়ে ফেলা হতো। সাধারণত মৃতদেহকে তারা গুহার ভেতরে রাখত। ইবরাহীম আর তার স্ত্রী সারাকে একটা সমাধিতে রাখা হয়েছিল। সেটা একটা গুহা। তাদেরকে মাটিতে কবর দেয়া হয়নি। তাহলে এ ধনী লোক যিশুকে যেখানে রাখলেন সেই সমাধিটা আসলে ধনীদের জন্য। তাই আয়তনেও বড়। আপনারা বলতে পারেন যে, পাথরটা কেন সরানো হয়েছিল?
উত্তরটা খুব সোজা বাইবেলে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরের এক দেবদূত পাথরটা সরিয়েছিল। যিশুর এক শিষ্য সম্ভবত মেরি ম্যাগডালিন অথবা অন্য কেউ আসল। সেই দেবদূত তখন পাথরটা সরালো, পৃথিবী কেঁপে ওঠলো, সেখানে সৈন্য দু’জন ভয় পেয়ে গেল। তারপর তারা মৃত মানুষের মতো সেখানে পড়ে গেল। আর দেবদূত তখন দুই মহিলাকে বলল, তোমরা ভয় পেও না। তোমাদের দেখানোর জন্য এটা করি নি। এটার পেছনে অন্য কারণ আছে। আমি এ লোকগুলোকে ভয় দেখাতে চেয়েছি, তোমাদের না। পাথরটা সরিয়েছি তোমাদের দেখানোর জন্য। দেখ! যিশু এ সমাধির ভেতরে নেই। দেখ! সমাধিটা একেবারে খালি এটাই আসল কারণ। সমাধিটা খালি ছিল। এজন্যই দেবদূত সেই পাথরটা সরিয়েছিলেন। আজ তাদের জানিয়েছেন যিশুর শরীর সেই সমাধিতে নেই। যিশু সেই সমাধিতে নেই। আর সেই কাপড়টা পরারও কোনো প্রয়োজন নেই।
এখনকার দিনে মৃতদেহকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। তখনকার দিনে কি করা হতো জানি না। সেই কাপড়টাও তারপর একপাশে সরিয়ে রাখলেন। ভাঁজ করে রাখলেন। কাপড়টা খুলে ভাঁজ করে রাখলেন। এতক্ষণ বললাম, সমাধিটা বড় ছিল কেন? ঠিক আছে? পরের পয়েন্টটা হলো ইউনুস নবীর অলৌকিক ঘটনা নিয়ে। যিশু বলেছেন, যেভাবে ইউনুস নবী সেই তিমি মাছের পেটে ছিলেন। তারপর আরো অনেক কিছু। যিশু এমনটা বলেননি, আমি সেইভাবে তিমির পেটে যাবো আর তিমিটা আমাকে নিয়ে তিন দিন সাগরে ঘুরবে। যিশু এমন কথা বলেননি। তিনি বলেছেন ইউনুসের মতো।
এখানে উদাহরণ দিয়েছেন, ইউনুসের মতো আমিও এভাবে তিন দিন থাকব পৃথিবীর বুকের ভেতরে। যদি এর শব্দগত অর্থ ধরেন দেখবেন, যিশু কি তিমির পেটে গিয়েছিলেন? না যান নি। তিনি ছিলেন একটা সমাধিতে আর সেই জায়গাটা ছিল একটা কবরস্থান। এটা রূপক হিসেবে বলা হয়েছে। ইউনুস নবী যেভাবে তিন দিন তিমির পেটের ভেতরে ছিলেন একইভাবে আমিও একটা সমাধিতে থাকব তিন দিন ধরে। এছাড়াও পবিত্র বাইবেলেই বলা হয়েছে, তিনি তৃতীয় দিনে উত্থিত হয়েছেন। এখানে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি চব্বিশ ঘণ্টায় একদিন তারপর এত মিনিট এত সেকেন্ড। এক ঘণ্টা আগে, না এক ঘণ্টা পরে, তিনি কখন উঠেছিলেন সেই সময়টা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা আছে, তৃতীয় দিন তার সমাধিতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি চলে গেছেন। এখানে নির্দিষ্ট করে কোনো সময় উল্লেখ করা হয় নি।
আর সবশেষে আপনাদের একটা কথা বলতে চাই, পবিত্র বাইবেলেই বলা হয়েছে যিশুখ্রিস্ট মৃত অবস্থা থেকে আবার জীবিত হয়েছিলেন, অর্থাৎ ক্রুসিফাই হওয়ার পরে তার পুনরুত্থান এ ব্যাপারটা সব মানুষের জন্য না। শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা বিশ্বাসী। শুধু পাঁচশো অনুসারীর জন্য; বারো জন আর একশো বিশ সব মিলিয়ে আনুমানিক পাঁচশো জন দেখেছিল। পুরো ইহুদী জাতি তার এটা কি অবিশ্বাস করেছিল? বিশ্বস্ত ছিল না। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারেনি। সেজন্য তারা যিশুখ্রিস্টকে মৃত থেকে পুনরুত্থিত হতে দেখেনি। তারা যিশুকে জীবিত অবস্থায় দেখেনি। তার মৃত্যুর পরে। তাই আপনাদের বলি, অবিশ্বাসীদের পথ ধরে হাঁটলে আপনারা কিছুই দেখতে পাবেন না। কারণ, ঈশ্বরই আপনার কাছে এগুলো প্রকাশ করবেন যদি আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন। সরল মনে বিশ্বাস করলেই আপনি সব দেখবেন। স্থির বিশ্বাস। যিশু আসলে ঈশ্বরের একটি উপহার। তাহলেই আমরা সব বুঝতে পারব। যদি আপনারা এমন করেন যে এ কমাটা একটু ডানদিকে সরাই ঐ কমাটা বামদিকে সরাই। তারপর দেখবো যে, এ কথাগুলো অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। এমন করবেন না। আজকেই যিশুকে গ্রহণ করুন। মনকে নরম করুন। আপনারা তাহলে পাপ থেকে মুক্তি পাবেন। মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান সেটা অন্য সময়ে হবে। আপনাদের ধন্যবাদ।
প্যাস্টর রুক্নিঃ আচ্ছা এ ব্যাপারটা নতুন না। আমরা আগেও এমনটা দেখেছি। আগেকার দিনে চীন আর রাশিয়ায় এমনটা অনেক হয়েছে। মানুষকে জোর করে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। এখানে আপনি আসলে ঈশ্বরকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে আমি আপনার সাথে ঈশ্বরকে নিয়ে এ ঠাট্টা করব না। আমি এখানে এটা করব না। শুধু বিশ্বাসী হলে হবে না। এখানে আসলে এটার উপযুক্ত সময় আছে। একটা কথা চালু ছিল যে, যিশু যদি উপর থেকে পড়ে যান তার পা ভেঙ্গে যাবে না। দেবদূতরা তাকে রক্ষা করবে। শয়তান যিশুকে লাফ দিয়ে এটা প্রমাণ করতে বলল। তিনি বললেন, না। ঈশ্বরকে প্রলুব্ধ করানো। আমিও একই উত্তর দিলাম প্রলুব্ধ করবেন না।
প্যাস্টার রুক্নিঃ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর বাইবেলের অনেক জায়গায় এটার উল্লেখ আছে। সেখানে আপনার প্রশ্নের উত্তর পাবেন। ইতিহাসে ক্রসের ব্যাপারটা অনেক জায়গায় আছে। খ্রীষ্টানরা যারা যিশুখ্রিস্টের পরে এসেছে তারা যিশুকে বিশ্বাস করে। আর তারা রক্ষা পাবে। কারণ, তারা যিশুকে বিশ্বাস করে। যিশুর আগের বিশ্বাসীরা যেমন, ইবরাহীম এছাড়াও আরো যেসব বিখ্যাত মানুষ ছিলেন তারা বিশ্বাস নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েছেন। তারা নবী ছিলেন। আর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েছিলেন। যিশু কবে আসবেন সেই দিকে? তারা যিশুকে বিশ্বাস করেছেন। এজন্য তারা রক্ষা পেয়েছেন। এটা বলা আছে, তারা যখন মারা যান তখনও তারা ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। তারপর যিশু যখন মারা গেলেন তখন তিনি যে কাজটা সেখানে করলেন তা হচ্ছে তিনি সেখানে গেলেন যেখানে সব নবীরা ছিলেন। আর তাদের মুক্ত করে দিলেন। কারণ, তারা বিশ্বাস নিয়ে মরেছিলেন। তারা স্বর্গে যেতে পারছিল না। কারণ, তাহলে তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়নি।
এ নবীদের আত্মা তখন অন্য কোনো আধ্যাত্মিক জায়গায় ছিল। যিশুখ্রিস্ট তখন তাদের কাছে গেলেন তাদের মুক্ত করলেন। আর যিশু যখন ক্রমে মারা গেলেন দেখা গেল পুরোনা আমলের নবীদের কবরগুলো সব খালি। তাদেরকে জেরুজালেমেই দেখা গেল। সবাই নিজের চোখেই তাদের দেখেছে। তাহলে আগের লোকজনেরা ভবিষ্যতের খ্রিস্টকে দেখবে বিশ্বাস নিয়ে তাহলে রক্ষা পাবে। যিশু তাদের পাপের জন্যও প্রায়শ্চিত্ত করবেন। আর বর্তমানের লোকজন যেমন আমি আর অন্যরা পেছনে তাকাব। আর যিশুর প্রতি বিশ্বাসই আমাদের রক্ষা করবে। ক্রসের প্রভাবটা সবসময় থাকবে। ক্রসটা আসলে চিরস্থায়ী। আগের মানুষের জন্য ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানের জন্য। আপনাদের ধন্যবাদ।
প্যাস্টর রুক্নিঃ হ্যাঁ, মানুষ আসলে সবাই পাপী হয়ে জন্মায় না। পাপের প্রকৃতি নিয়ে জন্মায়। ঠিক আছে? তার মানে সব মানুষের মধ্যেই পাপ করার প্রবৃত্তিটা রয়েছে। কিন্তু একটা শিশু মারা গেলে কি হবে? সে নিস্পাপ সে স্বর্গে যাবে। আমি এটাই বিশ্বাস করি। ঠিক আছে? তবে এ শিশু তার বাবা-মায়ের পাপের বোঝা নেবে না। আর এ ব্যাপারে ডা. জাকির বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন পুত্র তার পিতার পাপের বোঝা নেবে না। এখানে পাপ আর নরকে শাস্তি ভোগের কথা বলা হচ্ছে। ওকে? তাহলে পাপের প্রবৃত্তি এটা পেয়েছি আদি পিতা আদমের কাছ থেকে। পাপ করি, কারণ আমি একজন পাপী বুঝলেন? পাপী মানে পাপের প্রবৃত্তি আছে। এটা উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছি। ঠিক আছে? এটা আসলে পাপী নয়। যখন মানুষ পাপ করে সে তখন শুধু নিজের ক্ষতি করে। তাহলে আপনার সমস্যাটার সমাধান হলো। অন্য ব্যাপারটা হচ্ছে মানুষের ওপর অভিশাপ পড়তে পারে। এখানে পাপ আছে। আর অভিশাপও আছে। এটা নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই।
আমি আমার বাবার পাপের বোঝা বইবো না। আমার ওপর অভিশাপ আছে। আপনারাও এ ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। আমার বাবা অনেক ভুল করেছেন। তবে ঈশ্বরের দয়ায় তিনি বিশ্বাসী হয়েই মারা গেছেন। তা সত্ত্বেও আমি এখন ভুগি। কারণ, তিনি অনেক ভুল করেছিলেন। উত্তরাধিকার হিসেবে আমি তার পাপের বোঝা বহন করছি না। এমনটা নয়। আমি আমার বাবার পাপের বোঝা বহন করছি না। ঠিক আছে? তিনি অনেক কাজই করেছিলেন, যেগুলো পাপ। আর দেখি যে, আজকে আমি অনেক ধরনের বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হই। এটা অভিশাপ। আসলেই অভিশাপ। পাপ আর অভিশাপকে আলাদা করবেন। পাপ আর অভিশাপ আসলে আলাদা। অভিশাপের একটা ক্ষতি যেটা হলো এ পাপের ফলাফল। অভিশাপ হলো পাপের কারণে কষ্ট। ঠিক আছে? তাহলে যিশু আমার জীবনে দুইটা কাজ করতে পারেন। প্রথমত, তিনি আমার পাপের বোঝা বহন করেছেন। তাই ঈশ্বর আমাকে পাপের শাস্তি দেবেন না। আমি পাপমুক্ত হয়ে যাব। দ্বিতীয়ত, তিনি অভিশাপও ভেঙ্গেছেন। আমার জীবন থেকে। সেজন্য বাইবেলও বলছে। যিশু শুধুমাত্র ক্রুসিফাই হয়ে আমাদের পাপ থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তা নয়। এছাড়াও তিনি আমাদের অভিশাপগুলোও নিজের সাথে নিয়েছেন। আমার এ অভিশাপ। এগুলোও তিনি নিয়েছেন যে, অভিশাপগুলো ছিল আসলে আপনার ওপর। যিশুকে বিশ্বাস করেন। অভিশাপগুলো আপনার জীবন থেকে চলে যাবে। তাহলে দেখবেন শুধু পাপ আরো দেখবেন অভিশাপ। দুইটা আলাদা জিনিস। আশা করি, উত্তরটা ঠিকমতো দিতে পেরেছি। আশা করি, অন্তত আপনারা তা বুঝতে পেরেছেন।
ডা. জাকির নায়েকঃ
আচ্ছা, এখন এক নম্বর হলো পবিত্র বাইবেলে কিছু আপত্তিকর কথা আছে। কারণ হলো বাইবেল আসলে সত্যের ব্যাপারে খুবই বিশ্বস্ত। এটাকে বলা যায় একটা আয়না। যদি আপনার চেহারা কুৎসিত হয় বাইবেল বলবে, আপনি সুন্দর। বাইবেল এরকমই। সেজন্য এখানে দুই ধরনের মানুষকেই দেখবেন। এখানে পাপী আর অপরাধীদের দেখবেন যে, মানুষ কতখানি ঈশ্বরকে অমান্য করতে পারে। আর একই সাথে বাইবেল দেখায় যে, ঈশ্বরকে ভালোবাসলে মানুষ কতখানি মান্য করতে পারে। আর সেজন্য বাইবেলে মানুষের দুই রকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথাই বলা হয়েছে। বাইবেল বলবে না, সেইন্ট পল খুব ভালো মানুষ, কখনো ভুল করেও না। আপনারাই দেখবেন-সেইন্ট পলের অনেক দোষ আছে। আপনারা অন্য ধর্মে দেখেন ইসলামেও দেখবেন তারা কি করে? মানুষকে ঈশ্বরের মতো বানিয়ে দেয়। যে সেই লোক একদম নিখুঁত। কখনো ভুল করে না। একমাত্র যীশুই পাপ করেননি।
ঠিক আছে? সেইন্ট পলের ভালো দিক আছে। খারাপ দিকও আছে। সে খুব বদমেজাজী ছিল। আমি কখনোই সিনিয়র প্যাস্টর হিসেবে চাইতাম না। তিনি প্যাস্টরদের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করতেন। ঝগড়া করেছিলেন পিটারের সাথে, ঐযে খাবার নিয়ে জনের সাথে! আচ্ছা এমন অনেক ঘটনা। বাইবেলে আপনারা দুই চেহারাই দেখবেন। এরকম দেখবেন যে অনেক নবীর ধর্মেই দুর্বলতা ছিল। তাদেরও খুঁত ছিল। যেমন- ইউসুফ আলাইহিস সালাম। তিনি মাঝেমধ্যে স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। ভবিষ্যতের কথা বলে দিতেন। তিনি ঈশ্বরের খুবই বিশ্বাসী ভৃত্য, তারপরও দুর্বলতা ছিল। তিনি অনেক মানুষের স্বপ্ন শুনে তাদের ভবিষ্যৎ বলে দিয়েছেন। তাহলে নবীদেরও অনেক দুর্বলতা ছিল। এরকম আরো অনেক আছে। অনেক। মানুষের যেমন ভালো দিকগুলো আছে তেমনি খারাপ দিকগুলোও আছে। বাইবেল আমাদের দেখায় যে, কেউ নিখুঁত নয়। ভালো দিকগুলো দেখায়, আবার খারাপগুলোও দেখায়।
আর একমাত্র যীশুখ্রীষ্টই জীবনে কোনোদিন কোনো পাপ করেনি। এমনকি তিনিও ছোটবেলায় বাবা-মার অবাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাদের মেনে চলেছেন। অবশ্য তিনি সেভাবে সঙ্গ দেন নি যেভাবে আশা করা যায় একটা ছেলের কাছ থেকে। ষোলো বছর বয়সের নাকি বারো বছর বয়স? তখন তারা তিরস্কার করল যিশুও তাদের মানলেন। তিনি শিখছিলেন। আর মানুষ হিসেবে তিনি আনুগত্য শিখলেন। আগে জানতেন। পরে শিখলেন। এটাই মানুষ যিশু। তবে পাপের কথা বললে তিনি কখনোই পাপ করেননি। তাহলে বাইবেল সব সত্যি কথাই বলে- ভালো আর খারাপ। আপনারা মানুষ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চান? তাহলে বাইবেল পড়েন। জানতে চান, মানুষ কত ভালো হতে পারে। ঈশ্বর আমাদের যে কাউকে এমন করে দিতে পারেন। আর এটাও দেখবেন যে, একজন সাধারণ অশিক্ষিত জেলে পুরো পৃথিবীর একজন নেতা হতে পারে।
একথা পবিত্র বাইবেলেই পাবেন। এজন্য পিএইচডি-র দরকার নেই। এম.এস.সির কোনো দরকার নেই। এমন কোনো ডিগ্রী লাগবে না। আপনি শুধু বাইবেল পড়েন দেখবেন জন একজন সাধারণ অশিক্ষিত মানুষ। সে পুরো পৃথিবীর নেতা হবে। ঠিক আছে? এতক্ষণ বললাম, বাইবেলকে কিভাবে দেখবেন? এছাড়া ঈশ্বর রূপক হিসেবে অনেক কিছু বলেছেন। এভাবে রূপক দিয়ে ঈশ্বর অনেক কিছু বুঝিয়েছেন।
আচ্ছা গেল একটা পয়েন্ট। এবারে আমি ডিকশনারি ক্যাপিটাল R স্মল R নিয়ে কথা বলছি। আমি ডিকশনারি চেক করে দেখিনি। তবে ডা. জাকির যা বললেন, সেখান থেকে বুঝলাম ক্যাপিটাল R দিয়ে রেজারেকশন একটা উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে। আমার ধারণা উনি ভুল বুঝেছেন। তাহলে রেজারেকশন হলো পুনরুত্থান তারপর কমা, যিশু পুনরুত্থিত হয়েছেন। ক্যাপিটাল R। এটা একটা উদাহরণ। মনে হচ্ছে, উনি ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। আমার মনে হয় না এখানে ধর্মীয় কথা বলা হয়েছে। এটা উদাহরণ। আর ডিকশনারিতে শব্দ নিয়ে এমন অনেক উদাহরণ থাকে। ব্যাপারটা এমন না যে আমরা ক্যাপিটাল R দিয়ে যিশুর পুনরুত্থান বোঝাই R স্মল R দিয়ে অন্য কারো পুনরুত্থান বোঝাই। ব্যাপারটা এমন না।
আচ্ছা। উনি আরেকটা কথা বলেছেন সব আদেশ ক্রসকে কেন্দ্র করে। আসলে সেইন্ট পল এখানে শুধু আদেশের কথা বলছেন না। পল এখানে বলছেন এ আদেশ আমাদের সবাইকে কিভাবে বিচার করছে। আমি একজন পাপী। এখানে আমার বিচারের কথা বলা হয়েছে। সেই আদেশের কারণেই যিশুখ্রিষ্ট নিজে স্বেচ্ছায় ক্রুসিফাই হয়েছেন। এখানে বাইবেল অথবা অন্য কিছুকে ক্রুসিফাই করা হচ্ছে না। এটার কোনো মানে হয় না অযৌক্তিক। ঈশ্বরের আইন পবিত্র আর বিশুদ্ধ। এ আইন পাপকে উন্মোচিত করে। প্রতিকার করে না উন্মোচন করে। যিশু এ পাপের প্রতিকার করেছেন। ঠিক আছে? এখানে আদেশগুলোকে ক্রুসিফাই করা হচ্ছে না। এ আদেশগুলো আমাকে যে অভিশাপ আর শাস্তি দেয় সেগুলোকেই ক্রুসিফাই করা হযেছে। না হলে আমি হয়তো নরকেই যেতাম। যীশু আমাদের জন্য এসব করেছেন। আর যীশু মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন।
পুরো বাইবেল বলছে। ডা. জাকির বললেন, বাইবেল বলছে না যিশু মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন। পুরো বাইবেল বলছে। আমি কথাটা শুনে অবাক হয়েছি। আমি একটু বাইবেলটা ভালো করে দেখি। আমার প্যাস্টর বাইবেলটা দেখুক। আপনারাও পড়ে দেখতে পারেন। আমি একটা উদাহরণ দেই ম্রাথিউ ২৮৬ অনুচ্ছেদ আপনারা নিজেরাই পড়ে দেখেন। পরে এরকম আরেকটা উদাহরণ হলো আপনারা দেখবেন রেভেলিশন ১ অধ্যায়ের ১৮ অনুচ্ছেদে যিশুর আত্মা বলছেন, তিনি তার নিজের কথা বলছেন। আমি মৃত ছিলাম। এখন জীবিত হয়েছি। আমি মৃত ছিলাম এখন জীবিত হয়েছি। এখানে রূপক কিছু বলা হচ্ছে না। তিনি মারা গিয়েছিলেন। তারপর আবার জীবিত হয়েছেন।
এখানে শব্দ নিয়ে কোনোরকম খেলা করা হচ্ছে না পরিষ্কার। এবার আরেকটা ব্যাপার হলো যিশুখ্রিষ্টের আত্মাকেও তখন মানুষ যিশুর মতোই দেখাচ্ছিল। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর যিশু যখন ফিরে আসলেন তখন অনেক ব্যাপারে রহস্য ছিল। আর এগুলো পরে বন্ধ ছিল তিনি দেয়াল ফুঁড়ে ঢুকেছিলেন। যিশুর নতুন শরীরে প্রাকৃতিক কিছু বাধা দিতে পারত না। দুই নম্বর, যিশু তার এ শরীরকে লুকিয়ে রাখতে পারতেন। যিশু তার দুই শিষ্যের সাথে হেঁটেছিলেন পুনরুত্থানের পর। তাঁর শিষ্যরা তখন পাশে থাকলেও তাকে চিনতে পারেননি। তারপর যিশু তাদেরকে ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন, বিভিন্ন কথা বললেন। তারপর তারা তাদের ঘরে গেল আর রুটি খেল। তখন তারা বুঝল, এটা তো যীশু। শুধু মেরী ম্যাগডালিন তাকে চেনেননি, এমনটা নয়। অন্যরাও তাকে তখন চিনতে পারেনি।
যিশু যখন নিজের পরিচয় দিলেন, তখন তারা তাকে চিনতে পারল। এতে মনে হয় যে, যিশুর সেই শরীরের কিছু বিশেষত্ব ছিল। তিনি তার আকার বদলাতে পারতেন। আর যিশুখ্রিষ্ট তার হাত দেখিয়েছিলেন কেন? তিনি তার হাতে কিছু একটা দেখাতে চেয়েছিলেন। তার হাতে তখন একটা গর্ত থাকার কথা। দেখ! আমিই সেই যিশু। যিশু তার শিষ্যদের পুরো শরীর দেখালেন যেসব জায়গায় রোমান সৈন্যরা তাকে মেরেছিল। দেখ আমি যিশু। আমি অন্য কোনো লোক নই। এ শরীরে তোমরা ক্রসের সব চিহ্নই দেখবে। এ চিহ্নগুলো যিশুর শরীরেই আছে। তাহলে যিশুর এ শরীর যদিও শরীরটা একবারে নতুন তবে সেখানে পুরোনো শরীরের চিহ্নগুলোও ছিল। রহস্য। আমরা যিশুর নতুন শরীর সম্পর্কে কিছুই জানি না। কিন্তু এটা জানি যে, সেটা অলৌকিক শরীর। শরীরের দ্যুতি ছিল অন্যরকম। অনেক উজ্জ্বল দ্যুতি।
আর সেই শরীর দেখে আপনারাও দেখতে পারতেন ঐযে ঐ হলো ব্রাদার রুক্নি। এটা তার পুনরুত্থিত শরীর। তবে অনেক সময়ে হয়তো আমাকে চিনতে পারবেন না। আমি দেয়াল ভেদ করে যেতে পারব না। তার শরীরে অনেক চিহ্ন ছিল। সেগুলো দেখিয়েছিলেন। এ যে আমার হাত এটা দেখে কিছু মনে করতে পারছ? দেখ! এই যে আমি রুক্নি। একটা বিশেষ কিছু। যিশু সেটাই বলেছেন, এ কথাগুলোই বলেছেন। তিন নম্বর যে, সমাধিটা অনেক বড় ছিল। এটা বাইবেলে পরিষ্কার বলা আছে, সমাধিটার মালিক ছিল খুব ধনী। একজন ধনী লোক কখনো সস্তা, ছোট ঘর বানাবে না। সে তার জন্য একটা বড় সমাধিই তৈরী করবে। যিশু এ সমাধির ভেতরে.....এ প্রশ্নটাই আসলে অবান্তর। তিনি তো এ সমাধিকক্ষে বসবাস করার জন্য যাননি। এটাতো কারো থাকার জায়গা না।
বাইবেলে একেবারে পরিষ্কার আছে সমাধিটা ছিল এক ধনী লোকের। আর সে তার পরিবারের সবার জন্য বড় একটা সমাধি বানাতেই পারে। আরেকটা কথা আপনাদের মনে করিয়ে দিই যে, ইব্রাহীমের সময় থেকে এটা ছিল তাদের রীতি, তারা মৃতদেহ রাখত গুহার ভেতরে। মাটিতে কবর দিত না। কখনো কখনো তারা মৃতদেহ কবর দিত। কখনো পুড়িয়ে ফেলা হতো। সাধারণত মৃতদেহকে তারা গুহার ভেতরে রাখত। ইবরাহীম আর তার স্ত্রী সারাকে একটা সমাধিতে রাখা হয়েছিল। সেটা একটা গুহা। তাদেরকে মাটিতে কবর দেয়া হয়নি। তাহলে এ ধনী লোক যিশুকে যেখানে রাখলেন সেই সমাধিটা আসলে ধনীদের জন্য। তাই আয়তনেও বড়। আপনারা বলতে পারেন যে, পাথরটা কেন সরানো হয়েছিল?
উত্তরটা খুব সোজা বাইবেলে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরের এক দেবদূত পাথরটা সরিয়েছিল। যিশুর এক শিষ্য সম্ভবত মেরি ম্যাগডালিন অথবা অন্য কেউ আসল। সেই দেবদূত তখন পাথরটা সরালো, পৃথিবী কেঁপে ওঠলো, সেখানে সৈন্য দু’জন ভয় পেয়ে গেল। তারপর তারা মৃত মানুষের মতো সেখানে পড়ে গেল। আর দেবদূত তখন দুই মহিলাকে বলল, তোমরা ভয় পেও না। তোমাদের দেখানোর জন্য এটা করি নি। এটার পেছনে অন্য কারণ আছে। আমি এ লোকগুলোকে ভয় দেখাতে চেয়েছি, তোমাদের না। পাথরটা সরিয়েছি তোমাদের দেখানোর জন্য। দেখ! যিশু এ সমাধির ভেতরে নেই। দেখ! সমাধিটা একেবারে খালি এটাই আসল কারণ। সমাধিটা খালি ছিল। এজন্যই দেবদূত সেই পাথরটা সরিয়েছিলেন। আজ তাদের জানিয়েছেন যিশুর শরীর সেই সমাধিতে নেই। যিশু সেই সমাধিতে নেই। আর সেই কাপড়টা পরারও কোনো প্রয়োজন নেই।
এখনকার দিনে মৃতদেহকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। তখনকার দিনে কি করা হতো জানি না। সেই কাপড়টাও তারপর একপাশে সরিয়ে রাখলেন। ভাঁজ করে রাখলেন। কাপড়টা খুলে ভাঁজ করে রাখলেন। এতক্ষণ বললাম, সমাধিটা বড় ছিল কেন? ঠিক আছে? পরের পয়েন্টটা হলো ইউনুস নবীর অলৌকিক ঘটনা নিয়ে। যিশু বলেছেন, যেভাবে ইউনুস নবী সেই তিমি মাছের পেটে ছিলেন। তারপর আরো অনেক কিছু। যিশু এমনটা বলেননি, আমি সেইভাবে তিমির পেটে যাবো আর তিমিটা আমাকে নিয়ে তিন দিন সাগরে ঘুরবে। যিশু এমন কথা বলেননি। তিনি বলেছেন ইউনুসের মতো।
এখানে উদাহরণ দিয়েছেন, ইউনুসের মতো আমিও এভাবে তিন দিন থাকব পৃথিবীর বুকের ভেতরে। যদি এর শব্দগত অর্থ ধরেন দেখবেন, যিশু কি তিমির পেটে গিয়েছিলেন? না যান নি। তিনি ছিলেন একটা সমাধিতে আর সেই জায়গাটা ছিল একটা কবরস্থান। এটা রূপক হিসেবে বলা হয়েছে। ইউনুস নবী যেভাবে তিন দিন তিমির পেটের ভেতরে ছিলেন একইভাবে আমিও একটা সমাধিতে থাকব তিন দিন ধরে। এছাড়াও পবিত্র বাইবেলেই বলা হয়েছে, তিনি তৃতীয় দিনে উত্থিত হয়েছেন। এখানে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি চব্বিশ ঘণ্টায় একদিন তারপর এত মিনিট এত সেকেন্ড। এক ঘণ্টা আগে, না এক ঘণ্টা পরে, তিনি কখন উঠেছিলেন সেই সময়টা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা আছে, তৃতীয় দিন তার সমাধিতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি চলে গেছেন। এখানে নির্দিষ্ট করে কোনো সময় উল্লেখ করা হয় নি।
আর সবশেষে আপনাদের একটা কথা বলতে চাই, পবিত্র বাইবেলেই বলা হয়েছে যিশুখ্রিস্ট মৃত অবস্থা থেকে আবার জীবিত হয়েছিলেন, অর্থাৎ ক্রুসিফাই হওয়ার পরে তার পুনরুত্থান এ ব্যাপারটা সব মানুষের জন্য না। শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা বিশ্বাসী। শুধু পাঁচশো অনুসারীর জন্য; বারো জন আর একশো বিশ সব মিলিয়ে আনুমানিক পাঁচশো জন দেখেছিল। পুরো ইহুদী জাতি তার এটা কি অবিশ্বাস করেছিল? বিশ্বস্ত ছিল না। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারেনি। সেজন্য তারা যিশুখ্রিস্টকে মৃত থেকে পুনরুত্থিত হতে দেখেনি। তারা যিশুকে জীবিত অবস্থায় দেখেনি। তার মৃত্যুর পরে। তাই আপনাদের বলি, অবিশ্বাসীদের পথ ধরে হাঁটলে আপনারা কিছুই দেখতে পাবেন না। কারণ, ঈশ্বরই আপনার কাছে এগুলো প্রকাশ করবেন যদি আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন। সরল মনে বিশ্বাস করলেই আপনি সব দেখবেন। স্থির বিশ্বাস। যিশু আসলে ঈশ্বরের একটি উপহার। তাহলেই আমরা সব বুঝতে পারব। যদি আপনারা এমন করেন যে এ কমাটা একটু ডানদিকে সরাই ঐ কমাটা বামদিকে সরাই। তারপর দেখবো যে, এ কথাগুলো অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। এমন করবেন না। আজকেই যিশুকে গ্রহণ করুন। মনকে নরম করুন। আপনারা তাহলে পাপ থেকে মুক্তি পাবেন। মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান সেটা অন্য সময়ে হবে। আপনাদের ধন্যবাদ।
প্যাস্টর রুক্নিঃ আচ্ছা এ ব্যাপারটা নতুন না। আমরা আগেও এমনটা দেখেছি। আগেকার দিনে চীন আর রাশিয়ায় এমনটা অনেক হয়েছে। মানুষকে জোর করে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। এখানে আপনি আসলে ঈশ্বরকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে আমি আপনার সাথে ঈশ্বরকে নিয়ে এ ঠাট্টা করব না। আমি এখানে এটা করব না। শুধু বিশ্বাসী হলে হবে না। এখানে আসলে এটার উপযুক্ত সময় আছে। একটা কথা চালু ছিল যে, যিশু যদি উপর থেকে পড়ে যান তার পা ভেঙ্গে যাবে না। দেবদূতরা তাকে রক্ষা করবে। শয়তান যিশুকে লাফ দিয়ে এটা প্রমাণ করতে বলল। তিনি বললেন, না। ঈশ্বরকে প্রলুব্ধ করানো। আমিও একই উত্তর দিলাম প্রলুব্ধ করবেন না।
প্যাস্টার রুক্নিঃ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর বাইবেলের অনেক জায়গায় এটার উল্লেখ আছে। সেখানে আপনার প্রশ্নের উত্তর পাবেন। ইতিহাসে ক্রসের ব্যাপারটা অনেক জায়গায় আছে। খ্রীষ্টানরা যারা যিশুখ্রিস্টের পরে এসেছে তারা যিশুকে বিশ্বাস করে। আর তারা রক্ষা পাবে। কারণ, তারা যিশুকে বিশ্বাস করে। যিশুর আগের বিশ্বাসীরা যেমন, ইবরাহীম এছাড়াও আরো যেসব বিখ্যাত মানুষ ছিলেন তারা বিশ্বাস নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েছেন। তারা নবী ছিলেন। আর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েছিলেন। যিশু কবে আসবেন সেই দিকে? তারা যিশুকে বিশ্বাস করেছেন। এজন্য তারা রক্ষা পেয়েছেন। এটা বলা আছে, তারা যখন মারা যান তখনও তারা ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। তারপর যিশু যখন মারা গেলেন তখন তিনি যে কাজটা সেখানে করলেন তা হচ্ছে তিনি সেখানে গেলেন যেখানে সব নবীরা ছিলেন। আর তাদের মুক্ত করে দিলেন। কারণ, তারা বিশ্বাস নিয়ে মরেছিলেন। তারা স্বর্গে যেতে পারছিল না। কারণ, তাহলে তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়নি।
এ নবীদের আত্মা তখন অন্য কোনো আধ্যাত্মিক জায়গায় ছিল। যিশুখ্রিস্ট তখন তাদের কাছে গেলেন তাদের মুক্ত করলেন। আর যিশু যখন ক্রমে মারা গেলেন দেখা গেল পুরোনা আমলের নবীদের কবরগুলো সব খালি। তাদেরকে জেরুজালেমেই দেখা গেল। সবাই নিজের চোখেই তাদের দেখেছে। তাহলে আগের লোকজনেরা ভবিষ্যতের খ্রিস্টকে দেখবে বিশ্বাস নিয়ে তাহলে রক্ষা পাবে। যিশু তাদের পাপের জন্যও প্রায়শ্চিত্ত করবেন। আর বর্তমানের লোকজন যেমন আমি আর অন্যরা পেছনে তাকাব। আর যিশুর প্রতি বিশ্বাসই আমাদের রক্ষা করবে। ক্রসের প্রভাবটা সবসময় থাকবে। ক্রসটা আসলে চিরস্থায়ী। আগের মানুষের জন্য ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানের জন্য। আপনাদের ধন্যবাদ।
প্যাস্টর রুক্নিঃ হ্যাঁ, মানুষ আসলে সবাই পাপী হয়ে জন্মায় না। পাপের প্রকৃতি নিয়ে জন্মায়। ঠিক আছে? তার মানে সব মানুষের মধ্যেই পাপ করার প্রবৃত্তিটা রয়েছে। কিন্তু একটা শিশু মারা গেলে কি হবে? সে নিস্পাপ সে স্বর্গে যাবে। আমি এটাই বিশ্বাস করি। ঠিক আছে? তবে এ শিশু তার বাবা-মায়ের পাপের বোঝা নেবে না। আর এ ব্যাপারে ডা. জাকির বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন পুত্র তার পিতার পাপের বোঝা নেবে না। এখানে পাপ আর নরকে শাস্তি ভোগের কথা বলা হচ্ছে। ওকে? তাহলে পাপের প্রবৃত্তি এটা পেয়েছি আদি পিতা আদমের কাছ থেকে। পাপ করি, কারণ আমি একজন পাপী বুঝলেন? পাপী মানে পাপের প্রবৃত্তি আছে। এটা উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছি। ঠিক আছে? এটা আসলে পাপী নয়। যখন মানুষ পাপ করে সে তখন শুধু নিজের ক্ষতি করে। তাহলে আপনার সমস্যাটার সমাধান হলো। অন্য ব্যাপারটা হচ্ছে মানুষের ওপর অভিশাপ পড়তে পারে। এখানে পাপ আছে। আর অভিশাপও আছে। এটা নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই।
আমি আমার বাবার পাপের বোঝা বইবো না। আমার ওপর অভিশাপ আছে। আপনারাও এ ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। আমার বাবা অনেক ভুল করেছেন। তবে ঈশ্বরের দয়ায় তিনি বিশ্বাসী হয়েই মারা গেছেন। তা সত্ত্বেও আমি এখন ভুগি। কারণ, তিনি অনেক ভুল করেছিলেন। উত্তরাধিকার হিসেবে আমি তার পাপের বোঝা বহন করছি না। এমনটা নয়। আমি আমার বাবার পাপের বোঝা বহন করছি না। ঠিক আছে? তিনি অনেক কাজই করেছিলেন, যেগুলো পাপ। আর দেখি যে, আজকে আমি অনেক ধরনের বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হই। এটা অভিশাপ। আসলেই অভিশাপ। পাপ আর অভিশাপকে আলাদা করবেন। পাপ আর অভিশাপ আসলে আলাদা। অভিশাপের একটা ক্ষতি যেটা হলো এ পাপের ফলাফল। অভিশাপ হলো পাপের কারণে কষ্ট। ঠিক আছে? তাহলে যিশু আমার জীবনে দুইটা কাজ করতে পারেন। প্রথমত, তিনি আমার পাপের বোঝা বহন করেছেন। তাই ঈশ্বর আমাকে পাপের শাস্তি দেবেন না। আমি পাপমুক্ত হয়ে যাব। দ্বিতীয়ত, তিনি অভিশাপও ভেঙ্গেছেন। আমার জীবন থেকে। সেজন্য বাইবেলও বলছে। যিশু শুধুমাত্র ক্রুসিফাই হয়ে আমাদের পাপ থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তা নয়। এছাড়াও তিনি আমাদের অভিশাপগুলোও নিজের সাথে নিয়েছেন। আমার এ অভিশাপ। এগুলোও তিনি নিয়েছেন যে, অভিশাপগুলো ছিল আসলে আপনার ওপর। যিশুকে বিশ্বাস করেন। অভিশাপগুলো আপনার জীবন থেকে চলে যাবে। তাহলে দেখবেন শুধু পাপ আরো দেখবেন অভিশাপ। দুইটা আলাদা জিনিস। আশা করি, উত্তরটা ঠিকমতো দিতে পেরেছি। আশা করি, অন্তত আপনারা তা বুঝতে পেরেছেন।
ডা. জাকির নায়েকঃ
শ্রদ্ধেয় প্যাস্টর রুক্নি। আপনি বললেন, আমি নাকি অযৌক্তিক কথা বলেছি। যদিও আমার সব প্রশ্নের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। আপনি অবশ্য আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আর আমিও ইনশাআল্লাহ এখন তার প্রশ্নের উত্তর দেব। আর আপনারাই বিচার করবেন কার কথা অযৌক্তিক। আমার নাকি প্যাস্টরের। প্যাস্টর রুক্নি বললেন যে, ডিকশনারির সংজ্ঞাগুলো তিনি চেক করে দেখেননি। তবে এটা জেনেছেন যে, আমি সত্যি বলেছি। বড় হাতের আর ডিকশনারির বক্তব্য অনুযায়ী বলা হয়েছে, যিশুখ্রিস্ট উঠেছিলেন মৃত অবস্থা থেকে।
পুনরুত্থানের জন্য তাকে অবশ্যই উঠতে হবে। প্যাস্টরকে ডিকশনারির সব কথা মেনে নিতে বলছি না। কারণ, ডিকশনারির সব কথা তিনি হয়তো মানবেন না। আমিও হয়তো মানব না। তবে তিনি বাইবেল তো মানবেন। সেইন্ট পল এরকথা বলেছেন ফার্স্ট কোরিনথিয়নে ১৫ নং অধ্যায়ের ৪৪ নং অনুচ্ছেদে যে, পুনরুত্থানে শরীর আত্মা হয়ে যায়। আপনি যিশুকে মানেন? নাকি মানেন না? বোধহয় মানেন। তাহলে যিশুখ্রিষ্টের নিজের কথা অনুযায়ী তিনি যদি পুনরুত্থিত হন তাহলে তিনি এখন আত্মা হয়ে, মানুষ হয়ে আসবেন না।
আমার বলা চৌদ্দটা পয়েন্টের সবগুলোই প্রমাণ করে যে, যিশু জীবিত ছিলেন। তিনি বললেন, সবকিছুই ক্রসকে কেন্দ্র করে। ঈশ্বরের সব আদেশ। এটা কার কথা? পল! আমি বলিনি। পল বলেছেন, কোলোশিয়ানস্ ২নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যেটা যিশুখ্রিস্টের শিক্ষার বিরুদ্ধে যায়। গসপেল অব ম্যাথিও ১৯নং অধ্যায়ের ১৬ ও ১৭নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, ঈশ্বরের আদেশ মেনে চলো। আমিও মানি। যিশু ঠিক কথাই বলেছেন। পাপ থেকে মুক্তি চাইলে ঈশ্বরকে মেনে চলুন। পল বলেছেন, সবকিছুই ক্রসকে কেন্দ্র করে। প্যাস্টরও বললেন, আমাদের ভালো কাজগুলো সব মূল্যহীন। ক্রুসিফিক্সন না থাকলে বাইবেলের দাম দুই পয়সাও না। এখন বাইবেল দিয়েই প্রমাণ করছি ক্রুসিফিক্সন হয়নি। যিশুখ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। তিনি একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম আমাকে গসপেলের মাত্র একটা অনুচ্ছেদ দেখে বলা আছে যে, যিশুখ্রিস্ট মৃত অবস্থা থেকে পুনরুত্থিত। একটাও পাবেন না। তিনি গসপেল অব ম্যাথিও ২৮ অধ্যায়ের ৬ নং অনুচ্ছেদটা বললেন, আমি অনুচ্ছেদটি পড়ছি “তিনি এখানে নেই কারণ তিনি উত্থিত হয়েছেন যেমনটা বলেছিলাম। আসো দেখে যাও। মহান প্রভু কোথায় শুয়েছিলেন? তিনি উত্থিত হয়েছেন।”
এখানে বলা হয়নি যে, যিশু পনুরুত্থিত হয়েছেন। উত্থিত মানে তিনি জীবিত। আমি ঘুমাই তারপর উত্থিত হই। তার মানে কি আমি পুনরুত্থিত? তার মানে কি এই? প্যাস্টর বললেন, একটা মেয়েকে দেখেছিলেন তার কথা অনুযায়ী মেয়েটা মারা গিয়েছিল। তারপর প্যাস্টরের কথা অনুযায়ী যিশুর দয়ায় মেয়েটা বেঁচে গেছে। তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। মেয়েটা কি পুনরুত্থিত হয়েছে? না মেয়েটা মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছে। যিশুখ্রিস্ট ক্রুসিফাইড হয়ে মৃত অবস্থা থেকে জীবিত হননি। তিনি মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছেন। চার নম্বর পয়েন্টে প্যাস্টর বললেন, বাইবেলে আছে যিশু নাকি দেয়াল ভেদ করে এসেছিলেন? বাইবেলে এমন কথা বলা হয়নি। এটা অনুমান। অনুমান করা হয়। আর পুরো ঘটনাটা জানলে আপনারাও বুঝবেন। তবে হাতে সময় কম।
যিশুখ্রিস্ট তার হাত-পা দেখিয়েছিলেন কি জন্য? গর্তগুলো দেখানোর জন্য। এটা কে বলেছেন, প্যাস্টর। বাইবেল বলেনি। গসপেল ব্যুক ২৪ নং অধ্যায়ের ৩৭ নং অনুচ্ছেদ বলছে যে, তোমরা আমার হাত পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। তোমরা আমার হাত-পা দেখ। এটা তো আমি। কারণ, আত্মার রক্তমাংসের শরীর থাকে না। তিনি তার হাত-পায়ের ক্ষতগুলো দেখান নি। এ কথা তিনি বলেননি। যিশুর শিষ্য থমাস দেখতে চেয়েছিল। সেই উপরের ঘরে বলেছিলেন, আমি কোনো আত্মা নই। কী প্রমাণ হয়? তিনি পুনরুত্থিত হননি। ছয় নম্বর পয়েন্ট, তিনি বললেন সমাধিটা বড় ছিল, কারণ এটার মালিক ছিল ধনী। এ কথাটা আমি আগেই বলেছি। সমাধিটার মালিক ছিল খুব ধনী আর প্রভাবশালী। আরামাথিয়ার জোসেফ। সেটা আমিও বলেছি। সাত নম্বর পয়েন্ট, পাথরটা কেন সরানো হয়েছিল? প্যাস্টর উত্তরে বললেন দেবদূত পাথরটা সরিয়েছিল।
আমি একথা বলিনি, কে পাথরটা সরিয়েছে? প্রশ্নটা ছিল কেন সরানো হয়েছে? প্যাস্টর বললেন, লোকজনকে বোঝানোর জন্য যে যিশু মারা যান নি। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম লোকজনকে বোঝানোর জন্যে পাথরটা সরানো হয়েছিল। যিশুর দেহকে জড়িয়ে রাখা কাপড়টা খোলার প্রয়োজন হলো কেন? দুইটা প্রশ্ন এক সাথে- পাথর সরানো আর কাপড়টা খুলে ফেলা। কাপড়টা খুলে রাখা হয়েছিল। একথা বলা আছে গসপেল অব জন ২০ নং অধ্যায়ে যে, কাপড়টা খুলে রাখা হয়েছিল। গসপেল অব মার্কের ১৬ অধ্যায়েও আছে। এগুলোর কোনো উত্তর নেই।
একমাত্র উত্তর হলো যিশুখ্রিস্ট আসলে তখন জীবিত ছিলেন। আর যেহেতু জীবিত ছিলেন তাই কাপড়টা খুলতে হয়েছিল এবং পাথরটাও সরিয়ে ছিলেন। প্যাস্টর বললেন, যিশু বলেননি যে তিনি তিমির পেটে যাবেন। আমি কখন বলেছি, যিশু তিমির পেটে যাবেন? কথাটা পরিষ্কার, যিশুখ্রিস্ট অনুচ্ছেদে আছে যে, ইউনুস নবী যেভাবে তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবেন। যিশুখ্রিস্ট একথা কখনোই বলেন নি যে, তিনি তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবেন। ভেতরে থাকবেন।
আমার ধারণা, আপনি যিশুখ্রিস্টের পরিষ্কার করে বলা কথাটা বুঝতে পারছেন না। যেভাবে ইউনুস তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর বুকের ভেতরে থাকবেন। যিশু তিমির পেটে এ কথাটা তাহলে আসছে কোত্থেকে? এটা পানির মতো পরিষ্কার। ইউনুস যেভাবে তিমির পেটে ছিলেন অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র পৃথিবীর বুকে থাকবেন। ইউনুস ছিলেন জীবিত। তাই যিশুখ্রিস্ট যদি এ ভবিষ্যদ্বাণীটা পূরণ করতে চান তাহলে তিনিও থাকবেন জীবিত। কিন্তু খ্রীষ্টানরা বলে, তিনি ছিলেন মৃত। ভবিষ্যদ্বাণীটা পূরণ করতে গেলে তাকে জীবিত থাকতে হবে। প্যাস্টর বললেন, সময়ের কথা। আমিও একমত। গসপেল বলছে, তৃতীয় দিনে তিনি উত্থিত হয়েছেন।
এছাড়াও খ্রিষ্টান মিশনারিরা একথা বলেন। তারা বলেন তাই তো প্যাস্টরও বললেন, একদিন মানে চব্বিশ ঘণ্টা না। আর তর্কের খাতিরে আমি একথাটা মেনে নিলাম। এক মিশনারিও আমাকে বলেছিল। ধরুন, আপনি নিউইয়র্কে গেলেন, দুপুর দুইটায় সেখানে পৌছালেন। আর পরের দিন নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে গেলেন খুব সকালবেলায়। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি নিউইয়র্কে কয়দিন ছিলেন? আমি খুব সকাল বেলায়। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি নিউইয়র্কে কয়দিন ছিলেন? আমি বলব দুই দিন। টেকনিক্যালি কথাটা ভুল। তবে বুঝার জন্য আমি মেনে নিলাম, কোনো সমস্যা নেই। আমি চব্বিশ ঘণ্টাও থাকলাম না। তারপরও দুই দিন, আচ্ছা ঠিক আছে। তর্কের খাতিরে মানলাম।
আর বাইবেল বলছে, প্যাস্টরও বললেন আমিও একমত যে, যিশুখ্রিস্ট, তিনি উত্থিত হয়েছিলেন তৃতীয় দিনে। একটা দিনের অংশ সেটাকেও ধরা হচ্ছে একটা পুরো দিন। তাই প্যাস্টরের কথা মানলাম অতো খুটিয়ে দেখলাম না যে, কখন তাকে সমাধিতে রাখা হলো শুক্রবারে সন্ধ্যার পরে। ধরুন, আপনি বললেন, সন্ধার আগে। সেটাও মানলাম তর্কের খাতিরে মানলাম। যদি বললেন বিকেল। সেটাও মানলাম। যদি তিনি বলেন যে, যিশু রবিবার সকালে সমাধি ছেড়ে যান নি তিনি গেছেন বিকেলে। সেটাও মানলাম। তাহলে যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন। দিনের একটা অংশকেও পুরো দিন ধরছি। প্রথম দিনটা শুক্রবার দিন শুক্রবার রাত। শনিবার দিন শনিবার রাত। রবিবার সকাল। এর পরেও যদি সময় বাড়ান। আগে আর পেছনে। তারপরও পাবেন তিন দিন আর দুই রাত।
ইউনুসের নিদর্শন এমনটা বলছে না যে, ইউনুস যেভাবে তিন দিন ছিলেন তিমি মাছের পেটে অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিনদিন থাকবেন পৃথিবীর বুকের ভিতরে। বলা আছে, ইউনুস যেভাবে ছিলেন তিন দিন তিন রাত অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র থাকবেন তিন দিন এবং তিন রাত পৃথিবীর বুকের ভেতরে। এখানে কি পেলেন? তিন দিন আর দুই রাত। তিন দিন-তিন রাত কোনোভাবে হচ্ছে না। যত জিমন্যাসটিক্সই করেন। এমনকি যদি আইনস্টাইনকেও নিয়ে আসেন বাইবেল থেকে প্রমাণ করতে পারবেন না। এটা তিন দিন তিন রাত। কখনো না।
আর যদি কোনো মিশনারি বলেন, তিনি নিউইয়র্কে গেলেন একদিন দুপুর দুইটায়। পরের দিন সকালে আসলেন এটা দুই দিন। এটা মানলাম কিন্তু যদি বলে আমি নিউইয়র্কে দুই দিন দুই রাত ছিলাম আমি বলবো, তিনি মিথ্যাবাদী। বড় প্রকসের মিথ্যাবাদী। এটা বলতে পারেন দুই দিন। এটাও মানলাম যে একটা দিনের অংশই পুরো দিন। তর্কের খাতিরে মানলাম। কিন্তু দুই দিন দুই রাত বলতে পারবেন না। যদি এমনটা বলেন মিথ্যা বলছেন। প্যাস্টর বললেন শেষ পয়েন্ট, তিনি বললেন, যিশুখ্রিস্টকে কেউ নাকি জীবিত অবস্থায় দেখেনি। এটা আগেই প্রমাণ করেছি। আমি চৌদ্দটা পয়েন্টের কথা বলেছি। তিনি কয়েকটার উত্তর দিয়েছেন। সেই যুক্তিগুলো আবার খণ্ডন করেছি। যুক্তি বলে যিশুখ্রিস্ট তখন ছিলেন জীবিত। তার মানে সেন্ট পলের কথা অনুযায়ী যিশুখ্রিস্টের নিজের কথা অনুযায়ী ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী তিনি ক্রুসিফাইড হন নি এবং পুনরুত্থিত হন নি।
আর যদি ক্রুসিফাইড না হন ক্রুসফিক্সন নেই খ্রিষ্টান ধর্মেও নেই। আর প্যাস্টর তার এসব কথা লেকচারে বললেন। এ কথাটা তিনি বেশ ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন। সেটা হলো মানুষের আদি পাপ। যে মানুষজাতির প্রত্যেকেই চার্চও এমন শিক্ষা দেয় যে, সব মানুষই পাপের মধ্যে জন্মায়। প্রত্যেকটা শিশুই এ পাপ নিয়ে জন্মায়। উনি যে আদি পাপের কথা বললেন, আর যেটা বলেছেন ঠিকই বলেছেন। তবে তাঁর সিদ্ধান্ত সেটা যৌক্তিক না। তিনি বললেন যে, আদম আর হাওয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহকে অমান্য করেছিলেন। আর তারা একটা নিষিদ্ধ গাছ থেকে নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন। সে জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদের শাস্তি দিলেন। আর তিনি বললেন বেহেশত থেকে বের হয়ে যাও। এটাই যথেষ্ট না?
এ ছাড়াও বলা আছে, উনি রেফারেন্সটা বলেননি। জেনেসিস ৩ অধ্যায়ের ১৬ নং অনুচ্ছেদ বলছে যে, পুরুষরা তোমরা কষ্ট করে উপার্জন করবে। আর নারী তোমরা তোমাদের স্বামীর অধীনে থাকবে। আর তোমরা প্রসব যন্ত্রণা পাবে। গর্ভধারণ অভিশাপ। বাইবেল তেমনই বলছে। আর খ্রিষ্টানরা বলে যে, প্রত্যেক শিশু পাপের মধ্যে জন্মায় আদমের সময় থেকে। আদমের সময় থেকে পৃথিবীর শেষ শিশু না জন্মানো পর্যন্ত সবাই পাপের ভেতরে। আমি একটা প্রশ্ন করি। যখন আদম সেই নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন? খাওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করেছিলেন? না হয়তো প্যাস্টরকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, আমাকে জিজ্ঞাসা করেননি। আমাকে জিজ্ঞাসা না করলে আমি কেন দায়ী থাকব? কেন? অযৌক্তিক। ঈশ্বর কি অযৌক্তিক? না। খ্রিষ্টানরা পাপের প্রায়শ্চিত্তের কথা বলে।
যে ঈশ্বর তার একমাত্র পুত্রকে পাঠিয়েছেন প্রায়শ্চিত্ত করতে যাতে সে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারে। আসুন দেখি, পবিত্র বাইবেল এ ব্যাপারে কি বলে? তারা পাপের প্রায়শ্চিত্ত সম্পর্কে বলেন যে, যিশুখ্রিস্ট জীবন দিয়েছেন মানুষ জাতির পাপের জন্য। একথাটা তিনিও বলেছেন, আর খ্রিস্টান মিশনারিরাও বলেন। বাইবেল বলছে, যে পাপ করবে সে মারা যাবে। এ কথাটা দুইবার আছে ওল্ড টেস্টামেন্টে। ইজেকিল ১৮ নং অধ্যায়ের ২০ নং অনুচ্ছেদে। ইজেকিল ১৮নং অধ্যায়ের ৪নং অনুচ্ছেদে আছে, যে পাপ করবে সে মারা যাবে। তবে যদি ইজেকিলের ২০ নং অনুচ্ছেদটি পড়েন, সেখানেই অনুচ্ছেদটা শেষ হয় নি। এটা হলো অনুচ্ছেদটার শুরু, পুরো অনুচ্ছেদটা বলছে। খ্রিষ্টান মিশনারিরা বলেন, যে পাপ করবে সে মারা যাবে। তবে পুত্র পিতার পাপের বোঝা বইবে না। আর পিতাও পুত্রের পাপের বোঝা বইবে না। ভালো লোকের ভালো কাজ তার সাথেই থাকবে। খারাপ লোকের খারাপ কাজও তার সাথে থাকবে।
এর পরের অনুচ্ছেদটি বলছে ইজেকিল ১৮নং অ্যায় ২১ নং অনুচ্ছেদ এখানে বলা হয়েছে, যদি সেই ব্যাক্তি পাপ থেকে সরে আসে আর তারপর থেকে সব ভালো কাজ করে সে বেঁচে থাকবে। সে মারা যাবে না। এটা কে বলেছে? বাইবেল ওল্ড টেস্টামেন্টে ইজেকিল ১৮ নং অধ্যায়। ২০ থেকে ২১নং অনুচ্ছেদ। সে মারা যাবে না। যদি ভালো কাজ করেন আপনি মারা যাবেন না। যিশুখ্রিস্ট নিজেই বলেছেন, পাপ থেকে মুক্তি চাইলে ঈশ্বরের আদেশ মেনে চলো। আর সেন্ট পল বলেছেন, যে যদি যিশু মৃত থেকে উত্থিত না হন আমাদের শিক্ষা মূল্যহীন, তোমাদের বিশ্বাসও মূল্যহীন। আমি প্রমাণ করেছি যে, যিশুখ্রিস্ট আসলেই ক্রুসিফাইড হয়েছিলেন। এটা ভুল ধারণা। কারণ, বাইবেলের ওপর অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন যারা বলেন যে, যিশুখ্রিস্ট আসলে ক্রুসবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। হ্যাঁ, ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। তবে নামানোর সময় জীবিত ছিলেন।
খ্রিষ্টান ধর্মের প্রথমদিকে কম করে হলেও সাতটা গোত্র ছিল যারা বিশ্বাস করত যে, যিশুখ্রিস্টের বদলে অন্য কাউকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। এটাকে তারা বলে সাব্স্টিটিশন থিয়োরি। সে সময় ব্যাসিলিনিয়ানরা এটা বিশ্বাস করত। কার্পোক্রটরাও। সবাই খ্রীস্টান। এটাই বিশ্বাস করত যে, সেখানে যিশুখ্রিস্টের বদলে অন্য কাউকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। গসপেল অব বারনাবাসে আছে। প্যাস্টর সম্ভবত এটা মানেন না। বারনাবাস যিশুখ্রিস্টের সময়কালীন একজন চাক্ষুষ সাক্ষী। তিনি বলেছেন যে, তখন যিশুখ্রিস্টের বদলে আসলে জুডাসকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। যদি আপনারা নাজাহ হামাদির পুথি পড়েন দেখবেন এখানেও বলা হয়েছে যে, যিশুখ্রিস্ট ক্রুসিফাইড হন নি। এরাও খ্রীষ্টান।
আমি এই কথাগুলো আগে বলি নি। কারণ, প্যাস্টর বলবেন, যে তিনি গসপল অব বারনাবাসে বিশ্বাস করেন না। তিনি নাজাহ হামদির পুথিগুলো বিশ্বাস করেন না। তিনি তাহলে কি বিশ্বাস করেন? বিশ্বাস করেন এ বাইবেল। আমি বাইবেল থেকেই প্রমাণ করেছি যে, যিশুখ্রিস্ট নাকি আমাদের পাপের জন্য মারা গিয়েছেন? স্বেচ্ছায় মারা গেছেন। যদি গসপেল অব ম্যাথিও পড়েন দেখবেন ২৭ নং অধ্যায়ের ৪৬ নং অনুচ্ছেদ বলছে। এছাড়াও গসপেল অব মার্ক ১৫ নং অধ্যায়ের ৩৪ নং অনুচ্ছেদ বলছে, যখন যিশুকে ক্রুশে ঝোলানো হলো তিনি কাঁদছিলেন এল্লাই এল্লাই লামা সাবাকতানি। এল্লাই এল্লাই লামা সাবাকতানি। যার অর্থ হে ঈশ্বর, হে ঈশ্বর, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে। চিন্তা করুন যিশুখ্রিস্ট স্বেচ্ছায় ক্রুশবিদ্ধ হলেন। তারপর সেখান থেকে কাঁদছিলেন ঈশ্বর, ঈশ্বর, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে? এতে প্রমাণ হয় যে, তিনি স্বেচ্ছায় ক্রুশবিদ্ধ হননি। তাহলে কাঁদবেন কেন? হোক সেটা মারাঠি বাইবেল অথবা উর্দু বাইবেল অথবা হিব্রু উদ্ধৃতিটা সব বাইবেলেই আছে। এল্লাই এল্লাই লামা সাবাকতানি। অনুবাদটা তার পরে। ঈশ্বর, ইশ্বর, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে? এতে প্রমাণ হয় যে, যিশুখ্রিস্ট স্বেচ্ছায় ক্রুশবিদ্ধ হননি।
এবারে আমার লেকচারটি শেষ করার আগে বলবো যে, যিশুখ্রিস্ট আসলে ক্রুসিফাইড হন নি। এটা ছিল ক্রুসিফিকশন। আমি আমার লেকচার শুরু করার সময় পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম। সূরা ইসরা’র ১নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“যখন সত্য এসে মিথ্যার সামনে দাঁড়ায় মিথ্যা তখন বিলুপ্ত হয়। কারণ, মিথ্যা তার প্রকৃতিগত কারণেই বিলুপ্ত হবে।”
সমাপ্ত
পিস টিভির আরো দুটি লেকচার সিরিজ সংযোজন করা হল–
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ–
ক. আঃ রহিম গ্রীন ও
খ. ইউসুফ এসটেস।
পুনরুত্থানের জন্য তাকে অবশ্যই উঠতে হবে। প্যাস্টরকে ডিকশনারির সব কথা মেনে নিতে বলছি না। কারণ, ডিকশনারির সব কথা তিনি হয়তো মানবেন না। আমিও হয়তো মানব না। তবে তিনি বাইবেল তো মানবেন। সেইন্ট পল এরকথা বলেছেন ফার্স্ট কোরিনথিয়নে ১৫ নং অধ্যায়ের ৪৪ নং অনুচ্ছেদে যে, পুনরুত্থানে শরীর আত্মা হয়ে যায়। আপনি যিশুকে মানেন? নাকি মানেন না? বোধহয় মানেন। তাহলে যিশুখ্রিষ্টের নিজের কথা অনুযায়ী তিনি যদি পুনরুত্থিত হন তাহলে তিনি এখন আত্মা হয়ে, মানুষ হয়ে আসবেন না।
আমার বলা চৌদ্দটা পয়েন্টের সবগুলোই প্রমাণ করে যে, যিশু জীবিত ছিলেন। তিনি বললেন, সবকিছুই ক্রসকে কেন্দ্র করে। ঈশ্বরের সব আদেশ। এটা কার কথা? পল! আমি বলিনি। পল বলেছেন, কোলোশিয়ানস্ ২নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যেটা যিশুখ্রিস্টের শিক্ষার বিরুদ্ধে যায়। গসপেল অব ম্যাথিও ১৯নং অধ্যায়ের ১৬ ও ১৭নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, ঈশ্বরের আদেশ মেনে চলো। আমিও মানি। যিশু ঠিক কথাই বলেছেন। পাপ থেকে মুক্তি চাইলে ঈশ্বরকে মেনে চলুন। পল বলেছেন, সবকিছুই ক্রসকে কেন্দ্র করে। প্যাস্টরও বললেন, আমাদের ভালো কাজগুলো সব মূল্যহীন। ক্রুসিফিক্সন না থাকলে বাইবেলের দাম দুই পয়সাও না। এখন বাইবেল দিয়েই প্রমাণ করছি ক্রুসিফিক্সন হয়নি। যিশুখ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। তিনি একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম আমাকে গসপেলের মাত্র একটা অনুচ্ছেদ দেখে বলা আছে যে, যিশুখ্রিস্ট মৃত অবস্থা থেকে পুনরুত্থিত। একটাও পাবেন না। তিনি গসপেল অব ম্যাথিও ২৮ অধ্যায়ের ৬ নং অনুচ্ছেদটা বললেন, আমি অনুচ্ছেদটি পড়ছি “তিনি এখানে নেই কারণ তিনি উত্থিত হয়েছেন যেমনটা বলেছিলাম। আসো দেখে যাও। মহান প্রভু কোথায় শুয়েছিলেন? তিনি উত্থিত হয়েছেন।”
এখানে বলা হয়নি যে, যিশু পনুরুত্থিত হয়েছেন। উত্থিত মানে তিনি জীবিত। আমি ঘুমাই তারপর উত্থিত হই। তার মানে কি আমি পুনরুত্থিত? তার মানে কি এই? প্যাস্টর বললেন, একটা মেয়েকে দেখেছিলেন তার কথা অনুযায়ী মেয়েটা মারা গিয়েছিল। তারপর প্যাস্টরের কথা অনুযায়ী যিশুর দয়ায় মেয়েটা বেঁচে গেছে। তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। মেয়েটা কি পুনরুত্থিত হয়েছে? না মেয়েটা মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছে। যিশুখ্রিস্ট ক্রুসিফাইড হয়ে মৃত অবস্থা থেকে জীবিত হননি। তিনি মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছেন। চার নম্বর পয়েন্টে প্যাস্টর বললেন, বাইবেলে আছে যিশু নাকি দেয়াল ভেদ করে এসেছিলেন? বাইবেলে এমন কথা বলা হয়নি। এটা অনুমান। অনুমান করা হয়। আর পুরো ঘটনাটা জানলে আপনারাও বুঝবেন। তবে হাতে সময় কম।
যিশুখ্রিস্ট তার হাত-পা দেখিয়েছিলেন কি জন্য? গর্তগুলো দেখানোর জন্য। এটা কে বলেছেন, প্যাস্টর। বাইবেল বলেনি। গসপেল ব্যুক ২৪ নং অধ্যায়ের ৩৭ নং অনুচ্ছেদ বলছে যে, তোমরা আমার হাত পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। তোমরা আমার হাত-পা দেখ। এটা তো আমি। কারণ, আত্মার রক্তমাংসের শরীর থাকে না। তিনি তার হাত-পায়ের ক্ষতগুলো দেখান নি। এ কথা তিনি বলেননি। যিশুর শিষ্য থমাস দেখতে চেয়েছিল। সেই উপরের ঘরে বলেছিলেন, আমি কোনো আত্মা নই। কী প্রমাণ হয়? তিনি পুনরুত্থিত হননি। ছয় নম্বর পয়েন্ট, তিনি বললেন সমাধিটা বড় ছিল, কারণ এটার মালিক ছিল ধনী। এ কথাটা আমি আগেই বলেছি। সমাধিটার মালিক ছিল খুব ধনী আর প্রভাবশালী। আরামাথিয়ার জোসেফ। সেটা আমিও বলেছি। সাত নম্বর পয়েন্ট, পাথরটা কেন সরানো হয়েছিল? প্যাস্টর উত্তরে বললেন দেবদূত পাথরটা সরিয়েছিল।
আমি একথা বলিনি, কে পাথরটা সরিয়েছে? প্রশ্নটা ছিল কেন সরানো হয়েছে? প্যাস্টর বললেন, লোকজনকে বোঝানোর জন্য যে যিশু মারা যান নি। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম লোকজনকে বোঝানোর জন্যে পাথরটা সরানো হয়েছিল। যিশুর দেহকে জড়িয়ে রাখা কাপড়টা খোলার প্রয়োজন হলো কেন? দুইটা প্রশ্ন এক সাথে- পাথর সরানো আর কাপড়টা খুলে ফেলা। কাপড়টা খুলে রাখা হয়েছিল। একথা বলা আছে গসপেল অব জন ২০ নং অধ্যায়ে যে, কাপড়টা খুলে রাখা হয়েছিল। গসপেল অব মার্কের ১৬ অধ্যায়েও আছে। এগুলোর কোনো উত্তর নেই।
একমাত্র উত্তর হলো যিশুখ্রিস্ট আসলে তখন জীবিত ছিলেন। আর যেহেতু জীবিত ছিলেন তাই কাপড়টা খুলতে হয়েছিল এবং পাথরটাও সরিয়ে ছিলেন। প্যাস্টর বললেন, যিশু বলেননি যে তিনি তিমির পেটে যাবেন। আমি কখন বলেছি, যিশু তিমির পেটে যাবেন? কথাটা পরিষ্কার, যিশুখ্রিস্ট অনুচ্ছেদে আছে যে, ইউনুস নবী যেভাবে তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবেন। যিশুখ্রিস্ট একথা কখনোই বলেন নি যে, তিনি তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবেন। ভেতরে থাকবেন।
আমার ধারণা, আপনি যিশুখ্রিস্টের পরিষ্কার করে বলা কথাটা বুঝতে পারছেন না। যেভাবে ইউনুস তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর বুকের ভেতরে থাকবেন। যিশু তিমির পেটে এ কথাটা তাহলে আসছে কোত্থেকে? এটা পানির মতো পরিষ্কার। ইউনুস যেভাবে তিমির পেটে ছিলেন অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র পৃথিবীর বুকে থাকবেন। ইউনুস ছিলেন জীবিত। তাই যিশুখ্রিস্ট যদি এ ভবিষ্যদ্বাণীটা পূরণ করতে চান তাহলে তিনিও থাকবেন জীবিত। কিন্তু খ্রীষ্টানরা বলে, তিনি ছিলেন মৃত। ভবিষ্যদ্বাণীটা পূরণ করতে গেলে তাকে জীবিত থাকতে হবে। প্যাস্টর বললেন, সময়ের কথা। আমিও একমত। গসপেল বলছে, তৃতীয় দিনে তিনি উত্থিত হয়েছেন।
এছাড়াও খ্রিষ্টান মিশনারিরা একথা বলেন। তারা বলেন তাই তো প্যাস্টরও বললেন, একদিন মানে চব্বিশ ঘণ্টা না। আর তর্কের খাতিরে আমি একথাটা মেনে নিলাম। এক মিশনারিও আমাকে বলেছিল। ধরুন, আপনি নিউইয়র্কে গেলেন, দুপুর দুইটায় সেখানে পৌছালেন। আর পরের দিন নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে গেলেন খুব সকালবেলায়। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি নিউইয়র্কে কয়দিন ছিলেন? আমি খুব সকাল বেলায়। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি নিউইয়র্কে কয়দিন ছিলেন? আমি বলব দুই দিন। টেকনিক্যালি কথাটা ভুল। তবে বুঝার জন্য আমি মেনে নিলাম, কোনো সমস্যা নেই। আমি চব্বিশ ঘণ্টাও থাকলাম না। তারপরও দুই দিন, আচ্ছা ঠিক আছে। তর্কের খাতিরে মানলাম।
আর বাইবেল বলছে, প্যাস্টরও বললেন আমিও একমত যে, যিশুখ্রিস্ট, তিনি উত্থিত হয়েছিলেন তৃতীয় দিনে। একটা দিনের অংশ সেটাকেও ধরা হচ্ছে একটা পুরো দিন। তাই প্যাস্টরের কথা মানলাম অতো খুটিয়ে দেখলাম না যে, কখন তাকে সমাধিতে রাখা হলো শুক্রবারে সন্ধ্যার পরে। ধরুন, আপনি বললেন, সন্ধার আগে। সেটাও মানলাম তর্কের খাতিরে মানলাম। যদি বললেন বিকেল। সেটাও মানলাম। যদি তিনি বলেন যে, যিশু রবিবার সকালে সমাধি ছেড়ে যান নি তিনি গেছেন বিকেলে। সেটাও মানলাম। তাহলে যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন। দিনের একটা অংশকেও পুরো দিন ধরছি। প্রথম দিনটা শুক্রবার দিন শুক্রবার রাত। শনিবার দিন শনিবার রাত। রবিবার সকাল। এর পরেও যদি সময় বাড়ান। আগে আর পেছনে। তারপরও পাবেন তিন দিন আর দুই রাত।
ইউনুসের নিদর্শন এমনটা বলছে না যে, ইউনুস যেভাবে তিন দিন ছিলেন তিমি মাছের পেটে অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিনদিন থাকবেন পৃথিবীর বুকের ভিতরে। বলা আছে, ইউনুস যেভাবে ছিলেন তিন দিন তিন রাত অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র থাকবেন তিন দিন এবং তিন রাত পৃথিবীর বুকের ভেতরে। এখানে কি পেলেন? তিন দিন আর দুই রাত। তিন দিন-তিন রাত কোনোভাবে হচ্ছে না। যত জিমন্যাসটিক্সই করেন। এমনকি যদি আইনস্টাইনকেও নিয়ে আসেন বাইবেল থেকে প্রমাণ করতে পারবেন না। এটা তিন দিন তিন রাত। কখনো না।
আর যদি কোনো মিশনারি বলেন, তিনি নিউইয়র্কে গেলেন একদিন দুপুর দুইটায়। পরের দিন সকালে আসলেন এটা দুই দিন। এটা মানলাম কিন্তু যদি বলে আমি নিউইয়র্কে দুই দিন দুই রাত ছিলাম আমি বলবো, তিনি মিথ্যাবাদী। বড় প্রকসের মিথ্যাবাদী। এটা বলতে পারেন দুই দিন। এটাও মানলাম যে একটা দিনের অংশই পুরো দিন। তর্কের খাতিরে মানলাম। কিন্তু দুই দিন দুই রাত বলতে পারবেন না। যদি এমনটা বলেন মিথ্যা বলছেন। প্যাস্টর বললেন শেষ পয়েন্ট, তিনি বললেন, যিশুখ্রিস্টকে কেউ নাকি জীবিত অবস্থায় দেখেনি। এটা আগেই প্রমাণ করেছি। আমি চৌদ্দটা পয়েন্টের কথা বলেছি। তিনি কয়েকটার উত্তর দিয়েছেন। সেই যুক্তিগুলো আবার খণ্ডন করেছি। যুক্তি বলে যিশুখ্রিস্ট তখন ছিলেন জীবিত। তার মানে সেন্ট পলের কথা অনুযায়ী যিশুখ্রিস্টের নিজের কথা অনুযায়ী ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী তিনি ক্রুসিফাইড হন নি এবং পুনরুত্থিত হন নি।
আর যদি ক্রুসিফাইড না হন ক্রুসফিক্সন নেই খ্রিষ্টান ধর্মেও নেই। আর প্যাস্টর তার এসব কথা লেকচারে বললেন। এ কথাটা তিনি বেশ ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন। সেটা হলো মানুষের আদি পাপ। যে মানুষজাতির প্রত্যেকেই চার্চও এমন শিক্ষা দেয় যে, সব মানুষই পাপের মধ্যে জন্মায়। প্রত্যেকটা শিশুই এ পাপ নিয়ে জন্মায়। উনি যে আদি পাপের কথা বললেন, আর যেটা বলেছেন ঠিকই বলেছেন। তবে তাঁর সিদ্ধান্ত সেটা যৌক্তিক না। তিনি বললেন যে, আদম আর হাওয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহকে অমান্য করেছিলেন। আর তারা একটা নিষিদ্ধ গাছ থেকে নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন। সে জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদের শাস্তি দিলেন। আর তিনি বললেন বেহেশত থেকে বের হয়ে যাও। এটাই যথেষ্ট না?
এ ছাড়াও বলা আছে, উনি রেফারেন্সটা বলেননি। জেনেসিস ৩ অধ্যায়ের ১৬ নং অনুচ্ছেদ বলছে যে, পুরুষরা তোমরা কষ্ট করে উপার্জন করবে। আর নারী তোমরা তোমাদের স্বামীর অধীনে থাকবে। আর তোমরা প্রসব যন্ত্রণা পাবে। গর্ভধারণ অভিশাপ। বাইবেল তেমনই বলছে। আর খ্রিষ্টানরা বলে যে, প্রত্যেক শিশু পাপের মধ্যে জন্মায় আদমের সময় থেকে। আদমের সময় থেকে পৃথিবীর শেষ শিশু না জন্মানো পর্যন্ত সবাই পাপের ভেতরে। আমি একটা প্রশ্ন করি। যখন আদম সেই নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন? খাওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করেছিলেন? না হয়তো প্যাস্টরকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, আমাকে জিজ্ঞাসা করেননি। আমাকে জিজ্ঞাসা না করলে আমি কেন দায়ী থাকব? কেন? অযৌক্তিক। ঈশ্বর কি অযৌক্তিক? না। খ্রিষ্টানরা পাপের প্রায়শ্চিত্তের কথা বলে।
যে ঈশ্বর তার একমাত্র পুত্রকে পাঠিয়েছেন প্রায়শ্চিত্ত করতে যাতে সে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারে। আসুন দেখি, পবিত্র বাইবেল এ ব্যাপারে কি বলে? তারা পাপের প্রায়শ্চিত্ত সম্পর্কে বলেন যে, যিশুখ্রিস্ট জীবন দিয়েছেন মানুষ জাতির পাপের জন্য। একথাটা তিনিও বলেছেন, আর খ্রিস্টান মিশনারিরাও বলেন। বাইবেল বলছে, যে পাপ করবে সে মারা যাবে। এ কথাটা দুইবার আছে ওল্ড টেস্টামেন্টে। ইজেকিল ১৮ নং অধ্যায়ের ২০ নং অনুচ্ছেদে। ইজেকিল ১৮নং অধ্যায়ের ৪নং অনুচ্ছেদে আছে, যে পাপ করবে সে মারা যাবে। তবে যদি ইজেকিলের ২০ নং অনুচ্ছেদটি পড়েন, সেখানেই অনুচ্ছেদটা শেষ হয় নি। এটা হলো অনুচ্ছেদটার শুরু, পুরো অনুচ্ছেদটা বলছে। খ্রিষ্টান মিশনারিরা বলেন, যে পাপ করবে সে মারা যাবে। তবে পুত্র পিতার পাপের বোঝা বইবে না। আর পিতাও পুত্রের পাপের বোঝা বইবে না। ভালো লোকের ভালো কাজ তার সাথেই থাকবে। খারাপ লোকের খারাপ কাজও তার সাথে থাকবে।
এর পরের অনুচ্ছেদটি বলছে ইজেকিল ১৮নং অ্যায় ২১ নং অনুচ্ছেদ এখানে বলা হয়েছে, যদি সেই ব্যাক্তি পাপ থেকে সরে আসে আর তারপর থেকে সব ভালো কাজ করে সে বেঁচে থাকবে। সে মারা যাবে না। এটা কে বলেছে? বাইবেল ওল্ড টেস্টামেন্টে ইজেকিল ১৮ নং অধ্যায়। ২০ থেকে ২১নং অনুচ্ছেদ। সে মারা যাবে না। যদি ভালো কাজ করেন আপনি মারা যাবেন না। যিশুখ্রিস্ট নিজেই বলেছেন, পাপ থেকে মুক্তি চাইলে ঈশ্বরের আদেশ মেনে চলো। আর সেন্ট পল বলেছেন, যে যদি যিশু মৃত থেকে উত্থিত না হন আমাদের শিক্ষা মূল্যহীন, তোমাদের বিশ্বাসও মূল্যহীন। আমি প্রমাণ করেছি যে, যিশুখ্রিস্ট আসলেই ক্রুসিফাইড হয়েছিলেন। এটা ভুল ধারণা। কারণ, বাইবেলের ওপর অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন যারা বলেন যে, যিশুখ্রিস্ট আসলে ক্রুসবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। হ্যাঁ, ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। তবে নামানোর সময় জীবিত ছিলেন।
খ্রিষ্টান ধর্মের প্রথমদিকে কম করে হলেও সাতটা গোত্র ছিল যারা বিশ্বাস করত যে, যিশুখ্রিস্টের বদলে অন্য কাউকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। এটাকে তারা বলে সাব্স্টিটিশন থিয়োরি। সে সময় ব্যাসিলিনিয়ানরা এটা বিশ্বাস করত। কার্পোক্রটরাও। সবাই খ্রীস্টান। এটাই বিশ্বাস করত যে, সেখানে যিশুখ্রিস্টের বদলে অন্য কাউকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। গসপেল অব বারনাবাসে আছে। প্যাস্টর সম্ভবত এটা মানেন না। বারনাবাস যিশুখ্রিস্টের সময়কালীন একজন চাক্ষুষ সাক্ষী। তিনি বলেছেন যে, তখন যিশুখ্রিস্টের বদলে আসলে জুডাসকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। যদি আপনারা নাজাহ হামাদির পুথি পড়েন দেখবেন এখানেও বলা হয়েছে যে, যিশুখ্রিস্ট ক্রুসিফাইড হন নি। এরাও খ্রীষ্টান।
আমি এই কথাগুলো আগে বলি নি। কারণ, প্যাস্টর বলবেন, যে তিনি গসপল অব বারনাবাসে বিশ্বাস করেন না। তিনি নাজাহ হামদির পুথিগুলো বিশ্বাস করেন না। তিনি তাহলে কি বিশ্বাস করেন? বিশ্বাস করেন এ বাইবেল। আমি বাইবেল থেকেই প্রমাণ করেছি যে, যিশুখ্রিস্ট নাকি আমাদের পাপের জন্য মারা গিয়েছেন? স্বেচ্ছায় মারা গেছেন। যদি গসপেল অব ম্যাথিও পড়েন দেখবেন ২৭ নং অধ্যায়ের ৪৬ নং অনুচ্ছেদ বলছে। এছাড়াও গসপেল অব মার্ক ১৫ নং অধ্যায়ের ৩৪ নং অনুচ্ছেদ বলছে, যখন যিশুকে ক্রুশে ঝোলানো হলো তিনি কাঁদছিলেন এল্লাই এল্লাই লামা সাবাকতানি। এল্লাই এল্লাই লামা সাবাকতানি। যার অর্থ হে ঈশ্বর, হে ঈশ্বর, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে। চিন্তা করুন যিশুখ্রিস্ট স্বেচ্ছায় ক্রুশবিদ্ধ হলেন। তারপর সেখান থেকে কাঁদছিলেন ঈশ্বর, ঈশ্বর, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে? এতে প্রমাণ হয় যে, তিনি স্বেচ্ছায় ক্রুশবিদ্ধ হননি। তাহলে কাঁদবেন কেন? হোক সেটা মারাঠি বাইবেল অথবা উর্দু বাইবেল অথবা হিব্রু উদ্ধৃতিটা সব বাইবেলেই আছে। এল্লাই এল্লাই লামা সাবাকতানি। অনুবাদটা তার পরে। ঈশ্বর, ইশ্বর, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে? এতে প্রমাণ হয় যে, যিশুখ্রিস্ট স্বেচ্ছায় ক্রুশবিদ্ধ হননি।
এবারে আমার লেকচারটি শেষ করার আগে বলবো যে, যিশুখ্রিস্ট আসলে ক্রুসিফাইড হন নি। এটা ছিল ক্রুসিফিকশন। আমি আমার লেকচার শুরু করার সময় পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম। সূরা ইসরা’র ১নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“যখন সত্য এসে মিথ্যার সামনে দাঁড়ায় মিথ্যা তখন বিলুপ্ত হয়। কারণ, মিথ্যা তার প্রকৃতিগত কারণেই বিলুপ্ত হবে।”
সমাপ্ত
পিস টিভির আরো দুটি লেকচার সিরিজ সংযোজন করা হল–
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ–
ক. আঃ রহিম গ্রীন ও
খ. ইউসুফ এসটেস।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন