HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
যিশু কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন
লেখকঃ ডা. জাকির নায়েক
৫
১. খ্রিস্ট ধর্মে ক্রসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যপ্যাস্টর রুক্নদ্দিনঃ প্রথমেই বলতে চাই যে, আমার নাম হলো রুক্নি। আর এটা হলো ‘রুক্নদ্দিন’ শব্দের অপভ্রংশ। আমি সাধারণত রুক্নদ্দিন শব্দটা ব্যবহার করি না। অফিশিয়াল কাগজপত্রেও আমার নাম রুক্নি। আমাকে এ নামেই ডাকবেন। যাহোক, আজকের আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা যেত, কিন্তু একদিনে সেটা সম্ভবপর হবে না। তাই আজকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করেছি। কারণ, এভাবে আমরা নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা চালিয়ে গেলে একে অন্যকে সহজে বুঝতে পারব। এ বিষয়টা নির্বাচনের কারণ সম্পর্কে আপনারা জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমি তিনটি বিষয় সম্পর্কে বলেছিলাম। উনারা তন্মধ্যে এ বিষয়টিকে নির্বাচন করেছেন। আপনারা হয়ত জানেন যে, এ বিষয়টা খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসের খুবই মৌলিক একটি বিষয়। এ বিষয়টি নিয়ে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য আছে। মতপার্থক্য থাকলেও ডা. জাকির নায়েকের আহবান অনুযায়ী আমি খোলাখুলি কথা বলতে চাই। তবে অবশ্যই একে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কথা বলব। তাই এখন আমি ক্রস সম্পর্কে খ্রিস্ট ধর্মের বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করব।
আপনারা আপনাদের পছন্দমত যেটা খুশি সেটা গ্রহণ করবেন এবং যেটা খুশী বর্জন করবেন। তবে আমরা একে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান দেখাবো। যদি আমার সাথে একমত না-ও হন, সে ক্ষেত্রেও আপনাকে সম্মান করবো। আর আপনার এ মতামতের প্রতিও আমি সম্মান দেখাবো। এ আলোচনার মধ্যে পবিত্র বাইবেলের কিছু উদ্ধৃতি দিব। তবে এভাবে উদ্ধৃতি দিতে থাকলে সেটা আর শেষ হবে না। কারণ, বাইবেলে প্রায় কয়েকশ অনুচ্ছেদ আছে যেখানে ক্রসের কথা বলা হয়েছে। তাই বাইবেল থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিব, কিন্তু সেই উদ্ধৃতিগুলোর কোন রেফারেঞ্জ দিব না। পবিত্র বাইবেল থেকে প্রসঙ্গক্রমে আমি যে সব উদ্ধৃতি দিব -তা শুধু আলোচনার স্বার্থে। মনে রাখবেন, এখানে আমার উদ্দেশ্য আপনাদের বাইবেল মুখস্ত করানো নয়; বরং আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনারা যাতে আমাদের কথাগুলোর অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন। খ্রিস্ট ধর্মে ক্রসের গুরুত্ব বুঝতে পারেন এবং খ্রিস্ট ধর্মে কেন ক্রসকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়? এর কারণটা কি? কেন এ বিষয়টা এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্রথমে আমি ‘ক্রস’ সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই। ক্রসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেকেই মনে করে যে, ক্রস একটি ফ্যাশন। যেমন আমি গেলাম জাবলি বাজারে। তারপর বিভিন্ন দোকানে ‘ক্রস’ খুঁজতে লাগলাম। অতঃপর একটি দোকান থেকে সোনালী রংয়ের ‘ক্রস’ কিনলাম এবং গলায় ঝুলিয়ে দিলাম। এভাবে ক্রস একটি ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। কেউ হয়ত একুশ ক্যারেট, কেউ বা আঠারো ক্যারেট আবার কেউ সতেরো ক্যারেট সোনার ‘ক্রস’ কিনেন এবং গলায় ঝোলান। এসব ‘ক্রস’ দেখতে খুব সুন্দর ; ফ্যাশনেবল এবং ড্রেসের সাথে ম্যাচ করেছে ইত্যাদি। অনেকেই ‘ক্রস’ সম্পর্কে এমনটাই ভাবে। অনেক খ্রিস্টানও ‘ক্রস’ সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করেন। অনেকদিন পূর্বে আমিও এভাবেই ভাবতাম।
আমি একটি সাধারণ খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নিয়েছি, বড় হয়েছি। তবে বিশ্বাস করা শুরু করেছি ১৬ বছর পূর্ব থেকে। খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে আমি ভারতে আসি নি; বরং এসেছিলাম একজন সাধারণ খ্রিস্টান হিসাবে। তবে এ কথা সত্য যে, ভারতে এসেই আমি একজন প্রকৃত খ্রিস্টান হতে পেরেছি। তাহলে আমি এখানে এসেই যিশুকে বিশ্বাস করেছি। এখন আমি ক্রসের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই।
প্রথমত, ‘ক্রস’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? পবিত্র বাইবেল কখনো বলছে না যে, ক্রস হলো খুব আকর্ষণীয় বিষয়। যেটা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো যায়। প্রকৃত অর্থে পবিত্র বাইবেলে ‘ক্রস’ সম্পর্কে উল্টো কথাই বেশি বলা হয়েছে। বাইবেলের যে অংশটিকে আমরা বলি পুরানো অংশ বা ইহুদীদের বই। বাইবেলের প্রথম অর্ধেকে এটা আছে। ইংরেজী ভাষায় একে বলে ওল্ড টেস্টামেন্ট। সেখানে বলা হয়েছে যে, ‘ক্রস’ জিনিসটা আসলে ভালো নয়। আপনারা হয়ত অবাক হবেন। এখানে বলা হয়েছে যে, ক্রস খুব কুৎসিৎ জিনিস। ক্রস এমন একটা জায়গা, যেখানে দেয়া হয় অভিশাপ। ‘ক্রস’ এমন একটি বিষয়, যেখানে হয়ত কাউকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। কাউকে অভিশাপ দেয়া হয় আবার কাউকে সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। আর ইহুদীদের গ্রন্থেও এমন কথা বলা হয়েছে। বাইবেলের প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, “অভিশপ্ত সেই লোক যাকে গাছে ঝুলানো হয়। এখানে গাছের কথা বলে আসলে বোঝানো হয়েছে একটি ক্রসকে, যা যিশু খ্রিষ্টের সময়কালে সংঘটিত হয়েছিল। তবে এ ক্রসের ব্যাপারটা আমি আপনাদের নিকট পরে ব্যাখ্যা করব।
আপনারা হয়ত জানেন বা নাও জানতে পারেন যে, পবিত্র বাইবেলের দু’টা সেকশন বা শাখা আছে। গোটা বাইবেলে মোট ছেষট্টিটা বই আছে। এ বইগুলো লেখা হয়েছে সব মিলে প্রায় চার হাজার বছর ধরে। তাই বাইবেল একটা বই নয় বরং অনেকগুলো বইয়ের সমষ্টি। আর বাইবেলের প্রথম অংশ অর্থাৎ ইহুদীদের বইগুলো, যেখানে নবীদের কথা আছে। বিভিন্ন নবীগণ তাদের সময়ের কথা আর ইহুদীদের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছেন। আর একেবারে প্রথম বই থেকে আরম্ভ করে বাইবেলে কখনো সরাসরি বলা হয়েছে আবার কখনো পরোক্ষভাবে ক্রসের কথা বলা হয়েছে।
এবার আমরা ক্রসের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করব। কারণ, এ সম্পর্কে, আমি এখন পর্যন্ত আলোকপাত করিনি। তাহলে এবার এ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক। ‘ক্রস’ বিষয়টা এসেছে গসপেল থেকে। সেখানেই পাপ থেকে মুক্তি ব্যাপারটা আলোচিত হয়েছে। আর সেখান থেকেই ‘ক্রস’ বিষয়টা এসেছে। পবিত্র বাইবেল আমাদের বলে যে, মানুষ আসলে পাপী। প্রত্যেক মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই পাপী। আর এ পাপের সৃষ্টি হয়েছে সেই আদমের সময় থেকে। যেমন ধরুন, আমি জন্মেছি তারপর বড় হয়েছি। আর প্রকৃতিক নিয়মেই আমি একজন পাপী। এ কারণেই আমি পাপ করি। কথাবার্তা, ব্যবহার ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে আমি অহরহ পাপ করে বেড়াই। এতদ্ব্যতীত বাইবেল আরও বলেছে যে, যদি মানুষ পাপ করে তাহলে সে মারা যাবে। তার মৃত্যুদণ্ড হয়। আত্মার মৃত্যু আছে আবার শরীরের মৃত্যু আছে ইত্যাদি। অতএব পৃথিবীর সব মানুষকেই এ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। কারণ আমরা পাপী।
আর ঈশ্বর যেহেতু পাপের শাস্তি দেন সেহেতু কোন মানুষই ঈশ্বরের পাশে দাঁড়াতে পারবে না। এক সাথে থাকতে পারবে না। এখন তাহলে আপনারা বুঝতে পারলেন যে, এ পাপ এতই গুরুতর মারাত্মক এবং বিশাল যে, আমি যাই ভাল কাজ করি না কেন সেটা তার তুলনায় খুবই নগণ্য। সেটা দিয়ে আমার জীবনের সব পাপ দূর করা যাবে না। লক্ষ্য করুন, আমি যদি গরীবদের সাহায্য করি সেটা নিঃসন্দেহে ভাল কাজ। কিন্তু এ ভাল কাজটা দিয়ে আমার জীবনের সব পাপ মুছে ফেলা যাবে না। সুতরাং এ কাজটা অনেক ভাল হলেও এর দ্বারা আমার জীবনের সব পাপ মুছে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।
এবার যিশুর বিষয়টিতে আসুন। ঈশ্বর যিশুকে পাঠিয়েছেন একজন নিস্পাপ মানুষ হিসাবে, যে কোন পাপ করেনি। যে মানুষটা কষ্ট করবে কিন্তু পাপ করবে না। পুরোপুরি ব্যতিক্রম। তিনি জীবনে কখনো পাপ করেননি এবং তাকে বিভিন্ন সময় প্রলুব্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি পাপ করেননি। সে জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি তার প্রাপ্য নয়। এ শাস্তি আমাদের প্রাপ্য। তার বেঁচে থাকার কথা ছিল সারা জীবন। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গিতে লক্ষ্য করলে এটা ছিল যিশুখ্রিস্টের বৈশিষ্ট্য। আর মানুষ হিসাবে দেখলে তিনি এ পৃথিবীতেই ছুটে বেড়িয়েছিলেন। অন্যান্য সবার মত জীবিকার জন্য কাজ করেছেন, আবার অনেক কিছুই করেছেন আমাদের সবার মতো। তবে আধ্যাত্মিক দৃষ্টি দিয়ে বলা যায় যে, মৃত্যু জিনিসটা যিশুর প্রাপ্য ছিল না। কারণ, জাগতিক কোন পাপ কখনোই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায় যে, যিশু একজন নিস্পাপ মানুষ। যিশুখ্রিস্ট ঈশ্বরকে মেনেছেন আর পরে তাকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাহলে ঈশ্বরের সুবিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে যিশুর মৃত্যুটা ছিল ঐ পাপের মূল্য।
একজন নিস্পাপ মানুষ যার এ মৃত্যু প্রাপ্য ছিল না কিন্তু মরতে প্রস্তুত ছিলেন অন্য সবার পাপের জন্য। এ পাপের মূল্য দেওয়ার জন্য। সে জন্য তিনি যে মূল্য দিচ্ছেন তাতেই সবপাপ মুছে যাবে। আমরা সবাই যে সব আত্মত্যাগ করি নিজেদের পাপমুক্তির চেষ্টা করি - সেগুলো দিয়ে সব পাপ মুছতে পারব না; কিন্তু যিশু ছিলেন একজন নিস্পাপ মানুষ এবং সারাজীবন ধরে ঈশ্বরের আদেশ পালন করেছেন। সেজন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেন ঈশ্বর স্বয়ং সেটাকে মানুষের পাপের মূল্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন। আর এজন্যই যিশুখ্রিস্টের ‘ক্রস’ খ্রিস্টানদের মৃত্যুটার অধিক গুরুত্বপুর্ণ জিনিস। এ একই কারণে যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুটার প্রয়োজন ছিল। ঈশ্বর এ বিষয়টা পূর্ব থেকেই জানতেন বিধায় যিশুখ্রিষ্টের ‘ক্রস’ হল খ্রিস্টানীয়দের জীবনে সফলতার চাবিকাঠি।
যারা তাকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রেখেছে। বাইবেলে বলা হয়েছে যে, তাদের সব পাপ মুছে গেছে। সুতরাং বুঝা গেল যিশু তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের পাপের মূল্য দিয়ে গেছেন। আর এটাই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের মূল্য অনেক বেশি। সেজন্য খ্রিস্টানদের জীবন থেকে ক্রসটা সরিয়ে ফেললে খ্রিস্ট ধর্মটা টিকে থাকতে পারে না।
তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। শুধু মুসলিমরা নয়, অন্যান্য অনেকেই মনে করেন যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। অবশ্য ডা. জাকির নায়েক আমার চেয়ে অনেক বিস্তারিত জানেন। তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ সম্পর্কে আমি বেশ কিছু কথা বলতে চাই। যদিও ইতোপূর্বে খ্রিস্টানদের জীবনে ক্রসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছি এবং বলেছি যে, ক্রসের কারণেই আমার জীবনের সব পাপ মুছে গিয়েছে। সুতরাং ক্রস মহান ঈশ্বরের উপহার। ঈশ্বর নিজেই এখানে পাপের মূল্য দিয়েছেন। আর তাই তিনি যে মূল্য দিয়েছেন সেটা অনেক মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাপ থেকে মুক্তির জন্য। তেমন আত্মত্যাগ এটা নয়, যেমন আত্মত্যাগ আমি করি। এটা হবে দূষিত আত্মত্যাগ। কিন্তু যিশু একজন নিস্পাপ মানুষ হয়েও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন যেন তিনি একজন সাধারণ পাপী। তিনি পাপীদের শাস্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু তিনি পাপী ছিলেন না। যখন তার আত্মাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তিনি বললেন তুমি মরবে না। ওটা আমাকে দাও। আমিও এখন তোমাদের জন্য মরবো।
এখন আসি বাইবেলে বর্ণিত কয়েকটি ঐতিহাসিক জিনিস যা আমি আপনাদের দেখাবো। বাইবেলের বেশকিছু অনুচ্ছেদ পরোক্ষভাবে যিশুখ্রিস্টের জন্মমৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি অনুচ্ছেদে সরাসরি বলা হয়েছে। আবার কোথাও পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। যেহেতু হাতে সময় কম সেহেতু আমি দুই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
আপনারা হয়ত জানেন যে, পবিত্র বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বই লিখেছিলেন নবী মূসা। এ পাঁচটি বইয়ের প্রথমটির নাম জেনেসিস। এখানে বলা আছে যে, ঈশ্বর কিভাবে এ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তারপরে মানুষ সৃষ্টি করলেন, তখনকার দিনে ব্যাবিলন কেমন ছিল ইত্যাদি? আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আপনাদের বেশিরভাগ লোকই আদম ও হাওয়ার গল্পটি কোথাও না কোথাও শুনেছেন। আদম ও হাওয়া কিভাবে সৃষ্টি হলেন এবং তারা ঈশ্বরের অতি নিকটে অবস্থান করেছিলেন? আদম-হাওয়া ও ঈশ্বরের মাঝখানে কোন বাঁধা ছিল না। সে জন্য আদম-হাওয়া ও ঈশ্বর এক সাথে ছিল, একে অন্যের সাথে কথা বলেছেন। সেখানে সৃষ্টিকর্তার সাথে আদম ও হাওয়া স্বর্গে একসাথে ছিলেন। কেন? কারণ তারা কেউ কোন পাপ করেনি। ঐ সময়টা ছিল পাপের পূর্ববর্তী সময়। তারপর শয়তান একটা শাপের ছদ্মবেশ নিয়ে তথায় আসল এবং তাদেরকে দিয়ে একটা পাপ কাজ করাল।
বাইবেলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। আদম ও হাওয়াকে একটা ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা খেয়েছিলেন। ঐ ফলটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করার বিষয়টি। ঈশ্বর তাদেরকে যে কাজটা করতে নিষেধ করেছিল, তারা ঠিক সেটিই করেছেন। যখন তারা এ কাজটা করল তখন পাপের শুরু হলো। ঐ মুহুর্তেই আদম-হাওয়া এবং ঈশ্বর আলাদা হয়ে গেলেন। অনেকেই বলে থাকেন যে, যদি একবার ঈশ্বরকে দেখতে পেতাম। যদি অন্যরা তাকে দেখে তবে আমি কেন তাদের দেখতে পাব না? এভাবেই অনেকেই ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। কারণ, তার চারপাশে শুধু শয়তানই দেখে। এসব পাপ মানুষই তৈরি করেছে। ঈশ্বর না। মহান ঈশ্বর সবসময় আমাদের প্রতি সুবিচার করে থাকেন। সেরকম কিছু ঘটনার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করছি।
‘যখন আদম ও হাওয়া ঈশ্বরকে অমান্য করল তখন ঈশ্বর খুব রেগে গেলেন সেই সাপের ওপর, হাওয়ার ওপর, আদমের ওপর আর এদের প্রত্যেককেই ঈশ্বর একটা করে অভিশাপ দিলেন। ঈশ্বর সাপকে অভিশাপ দিলেন যে সাপ সব সময়ই মাটির উপর দিয়ে সব সময় গড়িয়ে গড়িয়ে চলবে। আর হাওয়াকে অভিশাপ দিলেন। যে, তুমি তোমার স্বামীকে নিষিদ্ধ ফল খেতে প্রলুব্ধ করেছ তাই এখন থেকে তোমার স্বামী তোমাকে শাসন করবে আর তুমি তার অধীনে থাকবে- তার ওপরে নির্ভর করবে। আর এতদ্ব্যতীতও তুমি সন্তান প্রসবের সময় প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করবে। আর আদমের ক্ষেত্রে এটা হবে যে, সে যখন জমিতে কাজ করবে জমি তাকে সহজে কোন খাবার দিবে না। তাকে ঘাম ঝরাতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। এ খাবার সংগ্রহ করার জন্য। আর তারা মরণশীল হয়ে গেল। তাদের জীবনে মৃত্যু আসল। তারা আর অমর থাকল না। তবে একটা ব্যাপার খুব গুরুত্বপুর্ণ তা হলো ক্রসের ব্যাপার।”
এখানে ক্রসের কথাটি পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে সেটা এখন বলছি। হ্যা! বলা আছে যে, ঈশ্বর আদম-হাওয়াকে অনেক অভিশাপ দেয়ার পর বললেন .......(এটা বুক অব জেনেসিসের ৩য় অধ্যায়ের প্রথম দিকে আছে, আপনারা ইচ্ছা করলে লিখে নিতে পারেন) সে জন্য মহান প্রভু ঈশ্বর তাদেরকে স্বর্গের বাগান থেকে বের করে দিলেন। এখানে আদম ও হাওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে। স্বর্গ থেকে তাদের পৃথিবীতে প্রেরণ করা হল। ঈশ্বর তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে একজন প্রহরী রাখলেন। ঈশ্বর আদমকে তাড়িয়ে দিলেন আর একজন প্রহরীকে বসালেন স্বর্গের সেই বাগানের পূর্ব দরজায়। সেখানকার জীবন বৃক্ষকে পাহারা দেওয়ার জন্য একটা আগুনের তরবারি যার অগ্রভাগে সবদিকেই বিস্তৃত ছিল।
এ বিষয়টার বিবরণ জেনেসিসের ৩য় অধ্যায়ের ২৩ ও ২৪ অনুচ্ছেদে আছে। তাহলে বিষয়টা দাড়াঁল এমন যে, ঈশ্বর তাদেরকে বিভিন্ন রকম শাস্তি দেয়ার পরে অর্থাৎ তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার পরে তাদের স্বর্গের বাগান থেকে বের করে দিলেন। ইডেনের এ বাগানটিকে অনেকেই স্বর্গের বাগান বলে থাকেন। আদম ও হাওয়া এ বাগানের মধ্যে আনন্দ ফুর্তি করতেন। ঈশ্বর তাদেরকে এ বাগান থেকে চিরতরে তাড়িয়ে দিলেন। তারপর ঈশ্বর এ বাগানে প্রবেশের দরজায় কি করলেন? তিনি সেই দরজায় একজন দেবদূতকে বসালেন। দেবদূতদের মধ্যেও অনেক রকম শ্রেণীবিভাগ আছে। এদের নাম চেরোমি। এরা ঈশ্বরের খুব কাছে থাকে। এ দেবদূত স্বর্গের দরজা পাহারা দিতে লাগল। তার হাতে ছিল আগুনের তরবারি। আর সেই তরবারীর মাথা চারদিকে ছড়ানো। যাতে করে সেই বাগানে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
তাহলে এখন স্বর্গের বাগানে প্রবেশের উপায় কি? স্বর্গের বাগানে প্রবেশের একমাত্র উপায় হলো ঐ প্রহরীকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। ঐ প্রহরীর হাতে একটা তরবারী আছে। যেটা দিয়ে সে স্বর্গের বাগানের দরজা পাহারা দিচ্ছে। একজন খ্রিস্টান হিসাবে পবিত্র বাইবেল ব্যাখ্যা করে আমি বুঝেছি যে, স্বর্গের সেই বাগানে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তাকে ঐ তরবারি দিয়ে হত্যা করা হবে। কারণ মহান ঈশ্বর ন্যায়বান আর ন্যায়বিচার বলেই তরবারিটা ঘাড়ের ওপর পড়বে। বিষয়টা বুঝতে পারলেন! এজন্য আদম সেখানে আসতে পারবে না যেহেতু স্বর্গের বাগানে তরবারি হাতে প্রহরী আছে। ঐ তরবারিটা তাকেই হত্যা করবে যে স্বর্গের বাগানে প্রবেশ করতে চাইবে। আর আমরা দেখি যে, যিশু স্বেচ্ছায় তার জীবন দিলেন তাঁর মহান পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী। ঐ তরবারিটা তার ওপর পড়েছিল। আর সে জন্য ঐ দিন থেকেই স্বর্গের বাগানের সেই দরজাটা খুলে গেল।
স্বর্গের দরজা শুধু খ্রিস্টানদের জন্য নয়; বরং তা বিশ্ববাসী সকলের জন্য। তা হলে বুঝতে পারলেন, বলেছেন, আমিই দরজা। তোমরা ঈশ্বরকে চিনতে চাও? আমিই হলাম দরজা। যিশু ঐ তরবারিটাকে তার ঘাড়ে পড়তে দিয়েছিলেন। তাহলে এখানে পরোক্ষভাবে ক্রসের কথা বলা হয়েছে। এখন অন্য বিষয় দিয়ে আলোচনা করি। বাইবেলে ক্রস নিয়ে এমন পরোক্ষ মন্তব্য আছে। আবার বেশ কিছু প্রত্যক্ষ মন্তব্যও আছে। এখানে শুধু ক্রসের কথাই বলছি, অন্য কিছু নয়। অন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি, এটা সেই বিখ্যাত গল্প আমাদের বিশ্বাসীদের সবার পূর্বপুরুষকে নিয়ে। তিনি হলেন ইবরাহীম। এখন এ সম্পর্কে কিছু কথা বলি।
অনেকেই হয়ত এটা জানে না যে, খ্রিস্টান এবং মুসলমান এরা একে অন্যের ভাই। খুব কম লোকেই এ কথাটা জানে। প্রকৃতপক্ষে ভাই। এটা কিন্তু আপনাদের খুশি করার জন্য বলছি না। সত্যি বলছি। খ্রিস্টানরা হল ইবরাহীম নবীর আধ্যাত্বিক উত্তরসূরী। আইজ্যাকের মাধ্যমে। না না দুঃখিত। ইসমাইল। ইসমাইলের আর এক ভাই। তিনি হলেন আইজ্যাক। তাহলে মুসলিম ও খ্রিস্টান আমরা সবাই এসেছি ইবরাহীম থেকে। তারা দুই ভাই। তবে সহোদর না; বরং সৎভাই। তাদের দু’জনের মা আলাদা। তাই যখন মুসলিমদের ভাই বলছি এটা আপনাদের খুশি করার জন্য নয়। আমরা আসলেই ভাই। আমাদের উভয়ের আধ্যাত্মিক পূর্ব পুরুষ হলেন ইবরাহীম। নবী ইবরাহীম। একই মানুষ। ঠিক আছে তো?
প্রথমে এ বিষয়টা সম্পর্কে বলেছিলাম। এভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে কথা বলতে চেষ্টা করব। আমি খুব ভাল আলোচক নই। আকর্ষণীয় কোন কিছু থাকলেও তা আপনাদের জানাব। আচ্ছা এখন আমরা ইবরাহীমের জীবনটা দেখি। ইবরাহীম। তাকে ঈশ্বর পরীক্ষা করেছিলেন স্বীয় পুত্রের মাধ্যমে। আইজ্যাক তথা ইসহাক। আমি জানি আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা বাইবেল সম্পর্কে তেমন জানেন না। সে জন্য মাঝে মধ্যে আমি প্রয়োজন অনুসারে আমি ব্যাখ্যা করব। কারণ আমি জানি যে, আপনাদের অনেকেই বাইবেল পড়েননি। কেউ কেউ হয়ত পড়েছেন। আসলে আমি এখানে খুব বিস্তারিতভাবে বলতে চাচ্ছি না। ঘটনাটা আপনাদের আমি সংক্ষিপ্ত আকারে বলছি। ইবরাহীমকে ঈশ্বর উর নগরী থেকে চলে যেতে বলেছিলেন কারণ সেটা পাপের নগরী ছিল। উর শহরটার অবস্থান বর্তমান ইরাকে, বসরার সন্নিকটে। আমি সেখানে গিয়েছি। জায়গাটা আসলে একটা মরুভূমি। যেখানে এখন কেউ থাকে না। কিছু স্মৃতি স্তম্ভ আছে। তাই এটা যেহেতু পাপের নগরী তাই ঈশ্বর তাকে তা থেকে চলে যেতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তোমাকে এর চেয়ে ভাল জায়গার সন্ধান দিব। সেটা এর চাইতে ভাল নগরী, সবাই জানতেন তারপরও তিনি ঈশ্বরের কথা শুনে চলে গেলেন। ঈশ্বর। তার প্রতিশ্রুতি তখনই পূরণ করলেন না, অনেক সময় নিলেন।
ইবরাহীম অনেক আগেই সারাকে বিয়ে করেছিলেন। আর সারার গর্ভে তাদের কোন সন্তান হয়নি। ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আমি তোমাদের গর্ভে অনেক সন্তান দিব। আকাশের তারকা দেখ। সেখানে কি অনেক তারকা দেখছ না? তেমনি তোমারও অনেক সন্তান হবে। সাগরের তীরে বালুর স্তুপ দেখেছ? তেমনি তোমার অনেক সন্তান হবে। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তিনি অনেক দিন নিঃসন্তান ছিলেন। তারপরও তিনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছেন। তিনি বিশ্বাস হারাননি। বুঝলেন? তারপর অনেকদিন পার হয়ে গেল কিন্তু কোন সন্তান হলো না। এরপর ইবরাহীম হতাশ হয়ে গেলেন। আর ঐ সময়ের একজন লোক একাধিক মহিলাকে বিয়ে করতে পারত। এমনকি তারা তাদের দাস দাসীদেরও বিয়ে করতে পারত। এ ব্যাপারে কোন রকম বাধা-নিষেধ ছিল না।
এমনি একদিন সারা তাঁর স্বামীকে বললেন, আপনি কেন আপনার দাসীদের একজনকে বিয়ে করছেন না? তাহলে আপনার সন্তান হবে। তখন হযরত ইবরাহীম মিশরের এক দাসীকে বিয়ে করলেন তাঁর নাম ছিল হাজেরা। হাজেরার গর্ভে যে সন্তান হলো তার নাম ইসমাইল। এরপর ইবরাহীমের আর একটি পুত্র সন্তান হলো। ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। আর তার প্রথমা স্ত্রী সারা গর্ভবতী হলেন। তিনি আইজ্যাক তথা ইসহাককে জন্ম দিলেন। চিন্তা করুন, এত দিন পর ইবরাহীম এ সন্তান পেয়ে কেমন খুশী হয়েছিলেন? আপনার নিজের ব্যাপার যদি চিন্তা করেন যে, আপনি বিবাহিত। আর যদি ২০/২৫ ধরে আপনি নিঃসন্তান অথচ ঈশ্বর আপনাকে সন্তানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কথা দিয়েছেন।
তাছাড়া মনে করুন, আপনি বড়লোক। সুতরাং আপনি চলে গেলে কে উত্তরাধিকারী হবে? তারপর এত কিছুর পর ২০/২৫ বছর পরে আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হলেন। একটা পুত্র সন্তান হলো। ঐ ছেলেকে আপনি কতখানি ভালবাসবেন? অনেকদিন আপনি ঐ ছেলের জন্য অপেক্ষা করেছেন। ইবরাহীমের ক্ষেত্রেও তেমনিই ঘটেছিল। তাই তিনি স্বীয় পুত্র আইজ্যাক তথা ইসহাককে খুব ভালবাসতেন। তারপর একদিন কি ঘটল। একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটল। অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যাপার বলা যায়। জেনেসিসের ২২ নং অধ্যায়ে এ ঘটনার বিবরণ আছে। এতে বলা হয়েছে, যে, এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর ঈশ্বর ইবরাহীমকে পরীক্ষা করলেন। ঈশ্বর তাকে বললেন ইবরাহীম। তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন। আমি এখানে। তিনি বললেন, তুমি তোমার পুত্র আইজ্যাককে নাও- যাকে তুমি খুব ভালবাস। অতঃপর তাকে নিয়ে মোরাইয়া অঞ্চলে যাও। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তাকে উৎসর্গ করবে। একটি পাহাড়ের উপর উৎসর্গ করবে। যেটার বিবরণ আমি তোমাকে পরে দিব। ইবরাহীমের জন্য এটা একটা দুঃসংবাদ। অনেকদিন অপেক্ষা করার পর। আর আইজ্যাক এখন কিশোর। সে তখন তার বাবার বোঝা বহন করতে পারে। এখানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর বললেন, যে তুমি আইজ্যাককে উৎসর্গ কর। ঠিক আছে?
এবার আমি ঘটনাটি সংক্ষেপে বলি। পুরো ঘটনাটি বিস্তারিত বলছি না। তখন ইবরাহীম মনে দারুন কষ্ট নিয়ে কি করলেন? খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলেন। আইজ্যাককে উৎসর্গ করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাথে নিলেন। যেমন– ছুড়ি, দড়ি, ইত্যাদি। তারপর ঈশ্বরের কথা মত আইজ্যাককে সাথে নিয়ে বের হলেন। তারপর তার ভৃত্যকে সরিয়ে দিলেন। আইজ্যাককে নিয়ে তিনি মোরাইয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন। যেখানে ঈশ্বর তাকে যেতে বলেছেন। যাক এখনই আকর্ষণীয় ঘটনা ঘটেছিল। সে ঘটনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘটনাটি আমি সংক্ষেপে বলছি।
আইজ্যাক তাঁর বাবা ইবরাহীমকে বললেন যে, হে আমার পিতা। ইবরাহীম বললেন! এই তো আমি, আমার পুত্র। আইজ্যাক বলল যে, আপনি কাঠ আর আগুন নিচ্ছেন। কিন্তু কোরবানীর ভেড়া কোথায়? ছেলেটা বলল, আপনি তো আগুন নিয়েছেন আরও নিয়েছেন কাঠ। কিন্তু আমরা দুইজন কেন পাহাড়ে যাচ্ছি? আপনি এমন সময় সাধারণত একটা ভেড়া কোরবানী দেন। সেই ভেড়াটা কোথায়? হ্যাঁ। দেখুন, তারপরে কি ঘটল? তখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার পুত্র! ঈশ্বর নিজেই এখানে আমাদের জন্য একটা ভেড়া সরবরাহ করবেন। তারপর তারা দুইজন পাহাড়ে উঠলেন। এ কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইবরাহীম বিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিজেই এখানে একটা কিছু উৎসর্গ করবেন। দেখুন, তিনি এখানে বলেননি যে, ঈশ্বর এখানে একজনকে উৎসর্গ করবেন; বরং তিনি বললেন, ঈশ্বর নিজে থেকেই এখানে কিছু একটা উৎসর্গ করবেন।
এখন আপনারা যদি পবিত্র বাইবেল পড়েন, নিউ টেস্টামেন্টে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেখতে পাবেন। নিউ টেস্টামেন্ট হলো পবিত্র বাইবেলের দ্বিতীয় অংশ। সেখানে বলা আছে ইবরাহীম বিশ্বাসের সাথেই বলেছিলেন আইজ্যাকের সাথে কথা বলার সময়ে। আর সে রকম ঘটনাই ঘটেছিল। আইজ্যাক জীবিত থেকে মৃত্যু হন নি। তারা পাহাড়ে উঠল। তারপর তারা ঈশ্বরের নির্দেশিত স্থানে আসল। ইবরাহীম সেখানে একটি বেদি বানিয়েছিলেন। সেখানে কাঠগুলি সাজিয়ে রাখলেন এবং আইজ্যাককে বাধলেন। তারপর আইজ্যাককে সেই বেদির উপর সোয়ালেন। লক্ষ্য করুন, আইজ্যাক কিন্তু তখন পালিয়ে যাননি। সে এই কাজে কোন প্রকার বাধা দেন নি। যদিও সে ততদিনে অনেক বড় হয়েছে। তিনি তখন ইচ্ছা করলে পালিয়ে যেতে পারতেন।
এর পর কি ঘটল? যখন ইবরাহীম হাত বাড়িয়ে ঐ ছুরিটা নিয়ে আইজ্যাককে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন তখন একজন দেবদূত তার কাছে এসে বলল, ইবরাহীম, শোন। তিনি সাড়া দিয়ে বললেন, এখানে আমি। দেবদূত বললেন তোমার পুত্রের শরীর স্পর্শ করো না। তার কোন রকম ক্ষতি করো না। কারণ আমরা জানতে পেরেছি যে, তুমি ঈশ্বরকে মানো। ঈশ্বরের আদেশে একমাত্র পুত্রকেও উৎসর্গ করতে দ্বিধা করনি।
তখন ইবরাহীম তাঁর চোখ মেলে দেখলেন যে, তাঁর পিছনেই একটা ভেড়া ঝোঁপের মধ্যে তার শিং আটঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ইবরাহীম তখন সেই ভেড়াটিকে নিয়ে তার ছেলের পরিবর্তে তার ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করলেন। এবার ইবরাহীম ঐ জায়গার নাম দিলেন ঈশ্বরের পাহাড়। ঈশ্বরই সব যোগান দিবেন। এ চরম নাটকীয় ঘটনায় শিক্ষণীয় বা সারমর্ম হলো যে, ইবরাহীম তাঁর ছেলে আইজ্যাককে বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিজে থেকেই কিছু একটা উৎসর্গ করবেন। ঈশ্বর এখানে একটি উৎসর্গ দাবি করেছেন। আমি এখানে নিজে থেকেও কিছু কথা বলছি আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে।
ঈশ্বর দাবি করেছেন একটা উৎসর্গ, কিছু একটা উৎসর্গ করতে হবে। ঈশ্বর স্বয়ং এটা দাবি করেছেন। কিন্তু এখানে উৎসর্গ করার ভেড়াটা কোথায়? ঈশ্বর নিজে থেকেই এখানে একটা কিছু সরবরাহ করবেন। প্রকারান্তে তাই হয়েছিল একই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি আইজ্যাককে মারেন নি, আইজ্যাককে তিনি রক্ষা করেছেন। ঈশ্বর আইজ্যাককে মারার কথা চিন্তা করেননি। পবিত্র বাইবেলে তিনি একথাই বলেছেন। বরং তিনি ইব্রাহীমকে পরীক্ষা করেছিলেন। ঈশ্বর এভাবে বাচ্চাদেরকে উৎসর্গ করেন না। তিনি আইজ্যাককে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তাহলে তিনি কোন আইজ্যাককে কেড়ে নিবেন? ঠিক আছে!
আর তারপর ঈশ্বর অলৌকিক কাজ করলেন। ঈশ্বর একজন দেবদূত পাঠিয়ে ইবরাহীমকে উৎসর্গের কাজে বাধা দিলেন। যাতে আইজ্যাকের বদলে অন্য কিছু উৎসর্গিত হয়। কিন্তু আইজ্যাক যেন বেঁচে থাকেন। আমরা খ্রিস্টানরা এ বিষয়টাকে এভাবেই দেখি। ঈশ্বর আমাকে বাঁচালেন। আমাকে বাঁচালেন মানে আইজ্যাকের জায়গায় আমাকে কল্পনা করুন। যারা যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে তারা আইজ্যাককেও মান্য করে। ঈশ্বর আমাকে সেই পাপের মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচিয়েছেন। আমার উপর একটা মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন। আর ঈশ্বরের সুবিচার দাবি করে যে, পাপের শাস্তি হলো মৃত্যু। বুঝতে পারলেন? আর এটাই হয়ত ঠিক হবে যে, আমি এখন মারা গেলে নরকে যাব। ঠিক আছে। তাই ঈশ্বর এখানে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। যিশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে সেই উৎসর্গ হলেন।
আপনারা যিশুকে দেখেছেন কি? যে যিশুকে বিশ্বাস করেন? আপনি তাকে হৃদয়ে ধারণ করেন? আর এটা যদি সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে ঈশ্বরের সুবিচারকেও ভাল করে বুঝতে পারবেন। এটা আমার ভালোর জন্য। আর অন্য কেউ মারা গেলে সেটা যথেষ্ট নয়। কিন্তু যিশু আমার জন্য স্পেশাল ভাবে মারা যাচ্ছেন। এভাবে অনেক মানুষই একে অপরের জন্য জীবন দিয়ে দেয়। আবার কখনও কখনও স্ত্রীর জন্য স্বামী জীবন দিয়ে দেয়। কারণ একটাই- সে তার স্ত্রীকে ভালবাসে। এটাই খুব মহান কাজ, খুব ভাল কাজ। তাই না?
কিন্তু এখানে আমি পাপ মুক্তির কথা বলছি ছোট খাট কোন মুক্তির কথা বলছিনা। এখানে আমরা মুক্তি পাচ্ছি আদি পাপ থেকে। দোযখ থেকে, দোযখের আগুন থেকে। তাই যে কোন উৎসর্গে কাজ হবে না। আর নিউ টেস্টামেন্ট বাইবেলের দ্বিতীয় অংশটি বলছে-এখানে অবশ্য বিশ্বাসীদের কথা অর্থাৎ খ্রিস্টানদের কথা বলা হয়েছে- ঈশ্বর আমাদের জন্য কোন ছাগল উৎসর্গ করেন নি। অথবা কোন গরু অথবা কোন পশুও উৎসর্গ করেন নি। আমি আসলে কথাগুলো আমার নিজের মত করে বলছি। তিনি উৎসর্গ করেছেন তাঁর একমাত্র প্রিয়পুত্র যিশুখ্রিস্টকে। হ্যাঁ। যিশু উৎসর্গের এ ব্যাপার বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্টে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে স্থান পেয়েছে। যেহেতু যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাই আমার সব পাপ মুছে গেছে। আর মহান ঈশ্বরের কাছে পাপেরও শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। তাই শ্রেণীভেদে পাপের বিভিন্ন রকম শাস্তি হয়ে থাকে।
আমাদের কিন্তু যিশু নিজেই পাপের শাস্তি নিলেন। একমাত্র তিনিই আমাদের সকলের পাপের ভার বহন করলেন। দেখলেন বিষয়টা কত গুরুত্বপূর্ণ?
তবে অন্য কেউ মারা গেলে আমার পাপের কিছুই হবে না। আমি পাপ থেকে মুক্তি পাব না। কিন্তু একজন বিশেষ লোক বা নিস্পাপ লোক যদি অন্যের পাপের জন্য আত্মত্যাগ করতে চায় তাহলে ঐ ব্যাক্তির সব পাপ মুছে যাবে। আচ্ছা। এখন ওল্ড টেস্টামেন্টে যে সব বিবরণ আছে উহা বিস্তারিত বলছিনা। শুধু বিভিন্ন জায়গার উদ্ধৃতি দিচ্ছি। পরে প্রয়োজনে আপনারা সেগুলো যাচাই করে দেখতে পারবেন। আমার হাতে সময় খুবই কম।
ওল্ড টেস্টামেন্টে ঈশ্বর রূপক হিসেবে ক্রসের কথা বলেছেন। আপনারা বোধহয় গল্পটা যখন ইহুদীরা সবাই মিশর থেকে চলে আসল তখনকার সময়ের। এটা ইহুদী জাতির ইতিহাস। গল্পটা খুবই প্রসিদ্ধ। তারা কয়েকটি বছর ধরে মিশরে দাস ছিল। অতঃপর মহান ঈশ্বর সেখান থেকে তাদেরকে নিয়ে আসলেন বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে। আর ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন যে, আজ রাতে তোমাদের সব শত্রুদের মেরে ফেলব। ঐ সময় তাদের যারা শত্রু ছিল, তারা সবাই মারা যাবে। আর তোমরা তখন চলে যেতে পারবে। তখন ঈশ্বর তাদেরকে একটি ভেড়া উৎসর্গ করতে বললেন। যে ভেড়াটা একেবারে নিখুঁত। অসুস্থ, অন্ধ বা খোড়া নয়। একেবারে নিখুঁত ভেড়া। ঈশ্বর তাদের বলল যে, এ ভেড়াটার রক্ত তোমাদের ঘরের দরজায় লাগাবে। আর রাতে মৃত্যুর দেবদূত আসবে। যে দরজায় এ রক্তের ছাপ থাকবে না তাদের প্রথম সন্তানটির মৃত্যু হবে। ফলে তারা সবাই ভেড়া উৎসর্গ করে দরজায় রক্ত মাখালো। আর ঐ একই রাতে ইহুদীদের সবাইকে মিশর ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হলো। সেই দিনই তারা অনুমতি পেল। হ্যা! তাহলে এটাই ছিল নির্দেশ যে, নিখুঁত একটা ভেড়া লাগবে। সুতরাং যেমন তেমন ভেড়া এনো না; বরং একটা নিখুঁত ভেড়া নিয়ে এসো। তাতেই তোমাদের মুক্তি ঘটবে মৃত্যু থেকে। এটাই হলো রূপক।
প্রকৃতপক্ষে এটা আসলে ভেড়া ছিল না। যিশু পরে আসবেন এ উৎসর্গটা তারই রূপক। এরপরের ইতিহাস লক্ষ্য করবেন যে, ইহুদীরা ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল। এমনটা অনেকরাই করেছিল। তারা দশবার বিদ্রোহ করেছিল। ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল। তখন কিছু সাপ এসে তাদেরকে কামড়াল। সাপের বিষে অনেকেই কষ্ট পেল। এসব কথা বাইবেলে বর্ণিত আছে। তারপর ঈশ্বর মূসাকে এসবের প্রতিকার করতে বললেন। তিনি ব্রোঞ্জের ব্রাচ দিয়ে একটি সাপ বানাতে বললেন। আর সে সাপটা ঝুলিয়ে রাখলেন। অতঃপর ইহুদীদের সবাই যখন ঐ সাপের দিকে তাকাল তখন তাদের শরীর থেকে সাপের বিষ নেমে গেল।
নিউ টেস্টামেন্টে উপরোল্লেখিত ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, এখানে সাপটা হচ্ছে আসলে শয়তানের একটা প্রতীক। সাপ একটা সাধারণ প্রাণী। এটা আসলে শয়তান নয়। তারপরে কি ঘটলো? যিশুকে ক্রুশে ঝুলানো হয়েছিল। মূসার সেই সাপের মত। যদিও তিনি ছিলেন নিস্পাপ, দেবদূতের চেয়েও নিস্পাপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আমাদের সকলের পাপের বোঝা বহন করেছেন ক্রুশবিদ্ধ হয়ে। আপনারা যিশুকে দেখুন, হৃদয়ে ধারণ করুন আজকেই আপনার সব পাপ মুছে যাবে। আজকেই আপনি পাপমুক্ত হয়ে যাবেন। কোন প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই; বরং যিশুকে বিশ্বাস করলে আজই পাপমুক্ত হয়ে যাবেন। যিশুর প্রতি লক্ষ্য করুন, তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আর এজন্যই এ ক্রস আমাদের নিকট এত গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক।
এবার যদি ইহুদী জাতির ইতিহাস লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন যে, ঈশ্বর তাদের বলেছেন, তোমরা একটা ভেড়া আনো। যেটার কোন খুঁত নেই। যেটার কোন অসুখ নেই। যেটা অন্ধ নয়। যে ভেড়াটা খোড়া নয় এবং বয়স বেশি নয়। শুধু সে রকম ভেড়াকেই আমি উৎসর্গ হিসেবে গ্রহণ করব। ঈশ্বর তাদের ভবিষ্যতের যিশুখ্রিষ্টের কথাই বলেছিলেন যে, একেবারে নিখুঁত ভেড়া। যদি পাপের কথা চিন্তা করি তাহলে মানুষ হিসাবে যিশু আপনার আমার মতই ছিলেন। ঈশ্বর হিসেবে সব ক্ষমতা আর শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের মতই ছিলেন। তার মতই সাধারণ মানুষ কষ্ট পায় আর পাপ করে। দুঃখিত, পাপের পথে প্রলুব্ধ হয় বা প্রলুব্ধ করা হয়। তাহলে নিশ্চয়ই এটি একটি মৌলিক বিষয়। যদি নিউ টেস্টামেন্ট পড়েন সেখানে ক্রস সম্পর্কে অনেক কথাই পাবেন। পূরো নিউ টেস্টামেন্টের ভিত্তিই হলো যিশু খ্রিষ্টের ক্রস। নিউ টেস্টামেন্টের একজন বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা অ্যাপোস্টল পল বলেছেন, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথা বলেছি। আর কিছুই বলার নেই। অনেকেই পলকে অনুরোধ করেছিল যে, তুমি ক্রসটাকে বাদ দিয়ে খ্রিস্ট ধর্মটা প্রচার কর।
তিনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথাই বলছি। যারা বিশ্বাস করে না তাদের নিকট এ বিষয়টা বোকামী।
সাধারণভাবে এ ক্রোসের ব্যাপারটাকে সবাই বোকামী মনে করবে। ব্যাপারটা দাঁড়ায় এ রকম যে, ঈশ্বর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। হাস্যকর। ভাববেন যে, বিষয়টা নিঃসন্দেহে হাস্যকর। কিন্তু প্রকৃতার্থে এটা হলো ঈশ্বরের পাণ্ডিত্য বা বিজ্ঞতা বা বিচক্ষণতা। কারণ, ঈশ্বরের জ্ঞান আমাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা। ঈশ্বরকে সুবিচারের মানদণ্ডটা সবসময় ঠিক রেখে কাজ করতে হয়। তাই পাপের শাস্তি হিসাবে তিনি নিস্পাপ একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। পৃথিবীর সবার জন্য। আজকে মানুষ বিশ্বাস করবে যে, যিশু ক্রুশে মারা গেছেন। সমাধিতে তিন দিন থাকার পর তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে পুনরায় ঈশ্বর হিসেবে তাঁর দায়িত্ব বুঝে নিলেন। যে মানুষ এ কথাগুলো বিশ্বাস করবে সে পাপমুক্ত হয়ে যাবে। বিশ্বাসীদের গন্তব্য বদলে যাবে। নরকে না গিয়ে তিনি স্বর্গে যাবেন। আর এতদ্ব্যতীত অনেক উপকার পাবেন। ক্রুশে বিশ্বাস করলে আপনি যে সব উপকার পাবেন এখানে তার একটি মাত্র উল্লেখ করলাম।
আপনি যদি নিউ টেস্টামেন্ট পড়েন তাহলে দেখবেন পুরো নিউ টেস্টামেন্টের ভিত্তি হল এ ক্রস। ক্রসটি যদি বাদ দেন তাহলে পুরো বাইবেলের দাম দুই পয়সাও হবে না। বাইবেলে ইহুদীদের বই আছে। আর খ্রিস্টানদের বই আছে। খ্রিস্টানদের বইতে বলা আছে যে, যিশু কিভাবে কষ্ট পেয়ে মারা যাবেন। খুব কষ্ট। আইজায়ার ৫৩ নং অধ্যায় পরিষ্কার করে বলা আছে। আমি আর কয়েক মিনিট সময় নিচ্ছি। এখন সবশেষে বলছি নিউ টেস্টামেন্টের সর্বশেষ বইতে স্বর্গের বর্ণনা দেয়া আছে। ঈশ্বরের একজন ভৃত্য-যার নাম হলো জন দ্য অ্যাপোস্টল। বাইবেলে দু’জনার কথা আছে। একজন হলো জন অ্যাপোস্টল। তিনি একদা স্বপ্নে বেহেশত দেখলেন। এছাড়াও জন অ্যাপোস্টল বলেছেন যে, ইউফ্রেটিসের তীরে গোলযোগ বাধতে। অর্থাৎ বর্তমান ইরাকে। তিনি অনেক পূর্বেই এসব কথা বলে গিয়েছিলেন। আপনারাও ইউফ্রেটিসের গোলযোগের কথা বলেছেন। আরও অনেক কথা বলেছেন। তবে এ কথাটা বিশেষভাবে বলেছেন। তিনি স্বর্গে দেখেছেন সেই উৎসর্গ করা ভেড়াকে। হ্যাঁ যিশুখ্রিস্ট শারীরিকভাবে ভেড়া নন; বরং তিনি একজন মানুষ। ঠিক আছে। কিন্তু রূপক।
হিসেবে তিনি ঈশ্বরের নিখুঁত ভেড়া। ইহুদীদের পুরো ইতিহাসেই এর বর্ণনা পাবেন। নিউ টেস্টামেন্টের পুরো ইতিহাস জুড়েই এসব আপনারা দেখবেন। যিশুকে ভেড়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। স্বর্গে তাঁকে বলা হবে উৎসর্গকৃত সেই ভেড়া। সুতরাং আপনারা যদি আমাদের খ্রিস্টান ধর্ম থেকে ক্রুসকে বাদ দেন তাহলে খ্রিস্টান ধর্মের কিছুই থাকবে না। সেখানে তাহলে শুধু কিছু বিধি-নিষেধ থাকবে। পাপমুক্তি থাকবে না। পাপ আমাদের ছেড়ে যাবে না। কিছুই থাকবে না। মনে রাখবেন, ক্রুসের ব্যাপারটা খুবই মৌলিক। কেননা এ ক্রুসই আমাদের বলে দিয়েছে যে, ঈশ্বর আমাদের জন্যই মারা গিয়েছে। হা! তিনি স্বর্গ থেকে ধরায় নেমে এসেছেন। তিনি মানুষ হিসেবে হেঁটে বেড়িয়েছেন। মানুষ হিসেবে তিনি কষ্ট সহ্য করেছেন। আমাদের মতো তাঁকেও প্রলুব্ধ করা হয়েছে। একথা হয়ত আপনি ভাবতেও পারবেন না। ঠিক আছে?
আপনারা যিশুকে বিশ্বাস করুন। তিনি জয় করেছেন লোভকে। বিভিন্ন আসক্তিকে, বাজে অভ্যাসগুলোকে, আমাদের সবার পাপকে। যিশু আমাদের সবকিছু থেকে মুক্ত করেছেন। আপনারা শুধু তাঁকে বিশ্বাস করুন। তারপর বাসায় ফিরে যান। তার নিকট প্রার্থনা হচ্ছে আমার সময় শেষ। ভালো কথা, পাঁচ মিনিট অনেক সময়, এতে অনেক কথা বলা যায়। আচ্ছা কি বলছিলাম? পাঁচ মিনিট কম সময় নয়। কোন সমস্যা নেই। আচ্ছা এবার যিশুর ক্রুস সম্পর্কে একটি প্রমাণ দিতে চাই। এ ব্যাপারে অন্যতম একটি প্রমাণ হলো, আমাদের এ পবিত্র বাইবেল। অর্থাৎ এর অর্ধেক হলো ইহুদীদের বই। আর বাকী অর্ধেক হলো খ্রিস্টানদের বই। পুরো বাইবেলেই ক্রুসের কথা আছে? প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ দু’ভাবেই বলা আছে। আপনারা ইচ্ছা করলে পরে দেখতে পারেন। বাইবেলের দাম খুবই কম। বোম্বেতে অনেক দোকানে বাইবেল পাওয়া যায়। আর যদি আপনারা এ বিষয়ে কিছুই না জানেন তাহলে পরে বলব।
আর যিশুখ্রিস্ট যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তার অন্য একটা প্রমাণ দিব। এ প্রমাণটা আমাদের পবিত্র বাইবেল থেকে নয়; বরং এ প্রমাণটা দিব যিশুখ্রিস্টের শত্রুদের কাছ থেকে। যারা যিশুকে ঘৃণা করতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইহুদীরা ঐতিহাসিকভাবে যিশুখ্রিস্টকে প্রত্যাখান করেছিল। তাদের দাবি ছিল, এ লোক খ্রিস্ট নয়; বরং এ হলো নকল খ্রিস্ট। তাই তারা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এখন আপনারা হয়তো জানেন যে, ইহুদী জাতি ইতিহাস সংরক্ষণ করে। ইহুদীদের জীবনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে তারা সেই ঘটনা সংরক্ষণ করে রাখে। সেই সংরক্ষিত বইটার নাম টিলমুড। আপনারা হয়তো টিলমুডের নাম শুনেছেন। আপনারা যদি এ টিলমুড বইটা দেখেন যেটা যিশুর সময়কালের সন্নিকটবর্তী দুই হাজার বছরের পূর্বের। তাহলে সেখানে দেখতে পাবেন যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এখানে অনেক ভুল কথা আছে। তারা বলেছে, তিনি নকল খ্রিস্ট। তিনি ভুল প্রচার করেছেন। তিনি নাকি যাদুকর। এভাবে অনেক ভুল কথাই আছে। তবে এ কথাটাও আছে যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি নাকি অন্যায় করেছিলেন, তবে কথাগুলো ঠিক নয়। এটা ক্রুসের পক্ষে বাইরের একটা প্রমাণ।
খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী অসুস্থ মানুষের জন্য আশীর্বাদ করি। আশীর্বাদ করি, দুষ্ট আত্মা থেকে বাঁচার জন্য এবং জীবনের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য। প্রার্থনা করলে ঈশ্বর মুক্তি দিবেন। খ্রিস্টানরা আসলে সঠিক শিক্ষাই দিচ্ছে। এগুলোর প্রমাণ বারবার করা হয়েছে। আমি নিজেই মেরুদণ্ডের অসুখ থেকে সুস্থ হয়েছি। উপস্থিত ডাক্তাররা হয়তো বিষয়টা বুঝবেন যে, আমি কোন ব্যাপারে বলছি। অ্যাংকলিভসিং স্পনডেলাইটিস। এ রোগের চিকিৎসা নেই। এজন্য আপনাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। আপনি কখনো হাঁটতে পারবেন না। এ অসুখে সারাজীবনই ভুগতে হয়। আর এখন থেকে ষোল বছর পূর্বে তারা আমার জন্য প্রার্থনা করেছিল। আমি আস্তে আস্তে সাত দিনে সুস্থ হয়ে গেলাম। আমি ধার্মিক ছিলাম না। শুধু যিশুকে বিশ্বাস করেছি। এমনকি এ ঘটনার আগে পবিত্র বাইবেলটাও আমি পুরোপুরি পড়িনি। আর ঈশ্বরও বলে গিয়েছেন যে, এ লোকগুলো সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে। তাই ক্রুস বাস্তব ঘটনা। আর এ কারণেই আমি সুস্থ হলাম।
এমন অনেক মানুষকে আমি দেখেছি যে, তারা মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। আপনারা হয়তো এ ব্যাপারে আমার সাথে তর্ক করবেন। কিন্তু আমার হাতে বেশি সময় নেই। তাই তর্ক করতে পারব না। এখনকার দিনেও এমন ঘটনা ঘটে। আমি নিজেই এমন ঘটনা দেখেছি। একবার আমি বোম্বে জিমখানার পাশে হাটছিলাম। এমন সময় একটা বাচ্চা মেয়ের ওপর দিয়ে একটি স্কুটার চলে গেল। আমি দেখলাম যে, সে মারা গেছে। মেয়েটার বয়স খুবই কম ছিল। আমি আসলে ডাক্তার নই। তাই আমি বলতে পারব না যে, তার হৃৎপিণ্ডটা তখনো সচল ছিল কি না? শুধু খালি চোখে দেখলাম যে, মেয়েটা মারা গেছে। কোন নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। আর নড়াচড়াও করছে না। মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। তখন আমি যিশুর কাছে প্রার্থনা করছিলাম। অতঃপর যখন আমরা ঐ হাসপাতালে পৌছলাম তখন মেয়েটা আবার শ্বাস নেয়া শুরু করল। আর ডাক্তাররাও তখন মেয়েটার চিকিৎসা করা শুরু করল। ঠিক আছে? তবে এটা নিশ্চিত না যে, মেয়েটা মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিলাম।
তবে এমন অনেক প্রমাণ আছে যে, যিশুর নামে লোকজন মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। আজকাল মৃত্যুর একটা সংজ্ঞা আছে। অসুস্থকে খ্রিস্টানরা সুস্থ করে তুলছে যিশুখ্রিস্টের নাম নিয়ে। ঈশ্বর যিশুখ্রিষ্টের নামে আমাদের করুণা করেছেন, আমাদের ভালোবেসেছেন। যিশুখ্রিষ্টের নামে ক্রুশবিদ্ধ যিশু। তাই যিশুকে বিশ্বাস করেন। ঈশ্বর আপনার সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন। সমস্যা আর থাকবে না। আজকে আমার হাতে আর সময় নেই। সময় থাকলে সবার জন্যই প্রার্থনা করতাম। এখন সময় নেই, তবে অন্য কোন সময় আমাদের সভায় আসতে পারেন। সভাটি হয় দামোদর হল ক্লাশরুমে সকাল নয় ঘটিকায়। আগামী রোববার। একবার চলে আসুন সবার জন্য আমরা সেদিন প্রার্থনা করব। চার্চের সবাই আপনাদের জন্য প্রার্থনা করবে। আমরা খুব জ্ঞানী নই। আমরা খুব মহান নই। এখানে যেমনটা দেখছেন তেমনই।
আবারো বলছি, আমরা সাধারণ মানুষ। আমি এখানে টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমিও একজন সাধারণ মানুষ। এমনকি আমাদের প্যাস্টর তিনিও কাজ করেন এবং তার স্ত্রীও একটা হাসপাতালে চাকুরী করেন। তাই বলছি, আমরা আসলে খুব বড় মানুষ নই। আমরা শুধু বাইবেলের কথা বলি। তবে যদি যিশুর কাছে প্রার্থনা করেন, তাহলে অধিকাংশ সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। অবশ্য যদি এগুলোতে আপনার বিশ্বাস থাকে। ঈশ্বর নিজেই এ ক্রুসের ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন। এটা সত্যি কথা। আর অনেকভাবেই ক্রুসের বাস্তবতা প্রমাণ করা যায়। সবাইকে ধন্যবাদ।
আপনারা আপনাদের পছন্দমত যেটা খুশি সেটা গ্রহণ করবেন এবং যেটা খুশী বর্জন করবেন। তবে আমরা একে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান দেখাবো। যদি আমার সাথে একমত না-ও হন, সে ক্ষেত্রেও আপনাকে সম্মান করবো। আর আপনার এ মতামতের প্রতিও আমি সম্মান দেখাবো। এ আলোচনার মধ্যে পবিত্র বাইবেলের কিছু উদ্ধৃতি দিব। তবে এভাবে উদ্ধৃতি দিতে থাকলে সেটা আর শেষ হবে না। কারণ, বাইবেলে প্রায় কয়েকশ অনুচ্ছেদ আছে যেখানে ক্রসের কথা বলা হয়েছে। তাই বাইবেল থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিব, কিন্তু সেই উদ্ধৃতিগুলোর কোন রেফারেঞ্জ দিব না। পবিত্র বাইবেল থেকে প্রসঙ্গক্রমে আমি যে সব উদ্ধৃতি দিব -তা শুধু আলোচনার স্বার্থে। মনে রাখবেন, এখানে আমার উদ্দেশ্য আপনাদের বাইবেল মুখস্ত করানো নয়; বরং আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনারা যাতে আমাদের কথাগুলোর অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন। খ্রিস্ট ধর্মে ক্রসের গুরুত্ব বুঝতে পারেন এবং খ্রিস্ট ধর্মে কেন ক্রসকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়? এর কারণটা কি? কেন এ বিষয়টা এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্রথমে আমি ‘ক্রস’ সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই। ক্রসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেকেই মনে করে যে, ক্রস একটি ফ্যাশন। যেমন আমি গেলাম জাবলি বাজারে। তারপর বিভিন্ন দোকানে ‘ক্রস’ খুঁজতে লাগলাম। অতঃপর একটি দোকান থেকে সোনালী রংয়ের ‘ক্রস’ কিনলাম এবং গলায় ঝুলিয়ে দিলাম। এভাবে ক্রস একটি ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। কেউ হয়ত একুশ ক্যারেট, কেউ বা আঠারো ক্যারেট আবার কেউ সতেরো ক্যারেট সোনার ‘ক্রস’ কিনেন এবং গলায় ঝোলান। এসব ‘ক্রস’ দেখতে খুব সুন্দর ; ফ্যাশনেবল এবং ড্রেসের সাথে ম্যাচ করেছে ইত্যাদি। অনেকেই ‘ক্রস’ সম্পর্কে এমনটাই ভাবে। অনেক খ্রিস্টানও ‘ক্রস’ সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করেন। অনেকদিন পূর্বে আমিও এভাবেই ভাবতাম।
আমি একটি সাধারণ খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নিয়েছি, বড় হয়েছি। তবে বিশ্বাস করা শুরু করেছি ১৬ বছর পূর্ব থেকে। খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে আমি ভারতে আসি নি; বরং এসেছিলাম একজন সাধারণ খ্রিস্টান হিসাবে। তবে এ কথা সত্য যে, ভারতে এসেই আমি একজন প্রকৃত খ্রিস্টান হতে পেরেছি। তাহলে আমি এখানে এসেই যিশুকে বিশ্বাস করেছি। এখন আমি ক্রসের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই।
প্রথমত, ‘ক্রস’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? পবিত্র বাইবেল কখনো বলছে না যে, ক্রস হলো খুব আকর্ষণীয় বিষয়। যেটা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো যায়। প্রকৃত অর্থে পবিত্র বাইবেলে ‘ক্রস’ সম্পর্কে উল্টো কথাই বেশি বলা হয়েছে। বাইবেলের যে অংশটিকে আমরা বলি পুরানো অংশ বা ইহুদীদের বই। বাইবেলের প্রথম অর্ধেকে এটা আছে। ইংরেজী ভাষায় একে বলে ওল্ড টেস্টামেন্ট। সেখানে বলা হয়েছে যে, ‘ক্রস’ জিনিসটা আসলে ভালো নয়। আপনারা হয়ত অবাক হবেন। এখানে বলা হয়েছে যে, ক্রস খুব কুৎসিৎ জিনিস। ক্রস এমন একটা জায়গা, যেখানে দেয়া হয় অভিশাপ। ‘ক্রস’ এমন একটি বিষয়, যেখানে হয়ত কাউকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। কাউকে অভিশাপ দেয়া হয় আবার কাউকে সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। আর ইহুদীদের গ্রন্থেও এমন কথা বলা হয়েছে। বাইবেলের প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, “অভিশপ্ত সেই লোক যাকে গাছে ঝুলানো হয়। এখানে গাছের কথা বলে আসলে বোঝানো হয়েছে একটি ক্রসকে, যা যিশু খ্রিষ্টের সময়কালে সংঘটিত হয়েছিল। তবে এ ক্রসের ব্যাপারটা আমি আপনাদের নিকট পরে ব্যাখ্যা করব।
আপনারা হয়ত জানেন বা নাও জানতে পারেন যে, পবিত্র বাইবেলের দু’টা সেকশন বা শাখা আছে। গোটা বাইবেলে মোট ছেষট্টিটা বই আছে। এ বইগুলো লেখা হয়েছে সব মিলে প্রায় চার হাজার বছর ধরে। তাই বাইবেল একটা বই নয় বরং অনেকগুলো বইয়ের সমষ্টি। আর বাইবেলের প্রথম অংশ অর্থাৎ ইহুদীদের বইগুলো, যেখানে নবীদের কথা আছে। বিভিন্ন নবীগণ তাদের সময়ের কথা আর ইহুদীদের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছেন। আর একেবারে প্রথম বই থেকে আরম্ভ করে বাইবেলে কখনো সরাসরি বলা হয়েছে আবার কখনো পরোক্ষভাবে ক্রসের কথা বলা হয়েছে।
এবার আমরা ক্রসের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করব। কারণ, এ সম্পর্কে, আমি এখন পর্যন্ত আলোকপাত করিনি। তাহলে এবার এ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক। ‘ক্রস’ বিষয়টা এসেছে গসপেল থেকে। সেখানেই পাপ থেকে মুক্তি ব্যাপারটা আলোচিত হয়েছে। আর সেখান থেকেই ‘ক্রস’ বিষয়টা এসেছে। পবিত্র বাইবেল আমাদের বলে যে, মানুষ আসলে পাপী। প্রত্যেক মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই পাপী। আর এ পাপের সৃষ্টি হয়েছে সেই আদমের সময় থেকে। যেমন ধরুন, আমি জন্মেছি তারপর বড় হয়েছি। আর প্রকৃতিক নিয়মেই আমি একজন পাপী। এ কারণেই আমি পাপ করি। কথাবার্তা, ব্যবহার ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে আমি অহরহ পাপ করে বেড়াই। এতদ্ব্যতীত বাইবেল আরও বলেছে যে, যদি মানুষ পাপ করে তাহলে সে মারা যাবে। তার মৃত্যুদণ্ড হয়। আত্মার মৃত্যু আছে আবার শরীরের মৃত্যু আছে ইত্যাদি। অতএব পৃথিবীর সব মানুষকেই এ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। কারণ আমরা পাপী।
আর ঈশ্বর যেহেতু পাপের শাস্তি দেন সেহেতু কোন মানুষই ঈশ্বরের পাশে দাঁড়াতে পারবে না। এক সাথে থাকতে পারবে না। এখন তাহলে আপনারা বুঝতে পারলেন যে, এ পাপ এতই গুরুতর মারাত্মক এবং বিশাল যে, আমি যাই ভাল কাজ করি না কেন সেটা তার তুলনায় খুবই নগণ্য। সেটা দিয়ে আমার জীবনের সব পাপ দূর করা যাবে না। লক্ষ্য করুন, আমি যদি গরীবদের সাহায্য করি সেটা নিঃসন্দেহে ভাল কাজ। কিন্তু এ ভাল কাজটা দিয়ে আমার জীবনের সব পাপ মুছে ফেলা যাবে না। সুতরাং এ কাজটা অনেক ভাল হলেও এর দ্বারা আমার জীবনের সব পাপ মুছে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।
এবার যিশুর বিষয়টিতে আসুন। ঈশ্বর যিশুকে পাঠিয়েছেন একজন নিস্পাপ মানুষ হিসাবে, যে কোন পাপ করেনি। যে মানুষটা কষ্ট করবে কিন্তু পাপ করবে না। পুরোপুরি ব্যতিক্রম। তিনি জীবনে কখনো পাপ করেননি এবং তাকে বিভিন্ন সময় প্রলুব্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি পাপ করেননি। সে জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি তার প্রাপ্য নয়। এ শাস্তি আমাদের প্রাপ্য। তার বেঁচে থাকার কথা ছিল সারা জীবন। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গিতে লক্ষ্য করলে এটা ছিল যিশুখ্রিস্টের বৈশিষ্ট্য। আর মানুষ হিসাবে দেখলে তিনি এ পৃথিবীতেই ছুটে বেড়িয়েছিলেন। অন্যান্য সবার মত জীবিকার জন্য কাজ করেছেন, আবার অনেক কিছুই করেছেন আমাদের সবার মতো। তবে আধ্যাত্মিক দৃষ্টি দিয়ে বলা যায় যে, মৃত্যু জিনিসটা যিশুর প্রাপ্য ছিল না। কারণ, জাগতিক কোন পাপ কখনোই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায় যে, যিশু একজন নিস্পাপ মানুষ। যিশুখ্রিস্ট ঈশ্বরকে মেনেছেন আর পরে তাকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাহলে ঈশ্বরের সুবিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে যিশুর মৃত্যুটা ছিল ঐ পাপের মূল্য।
একজন নিস্পাপ মানুষ যার এ মৃত্যু প্রাপ্য ছিল না কিন্তু মরতে প্রস্তুত ছিলেন অন্য সবার পাপের জন্য। এ পাপের মূল্য দেওয়ার জন্য। সে জন্য তিনি যে মূল্য দিচ্ছেন তাতেই সবপাপ মুছে যাবে। আমরা সবাই যে সব আত্মত্যাগ করি নিজেদের পাপমুক্তির চেষ্টা করি - সেগুলো দিয়ে সব পাপ মুছতে পারব না; কিন্তু যিশু ছিলেন একজন নিস্পাপ মানুষ এবং সারাজীবন ধরে ঈশ্বরের আদেশ পালন করেছেন। সেজন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেন ঈশ্বর স্বয়ং সেটাকে মানুষের পাপের মূল্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন। আর এজন্যই যিশুখ্রিস্টের ‘ক্রস’ খ্রিস্টানদের মৃত্যুটার অধিক গুরুত্বপুর্ণ জিনিস। এ একই কারণে যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুটার প্রয়োজন ছিল। ঈশ্বর এ বিষয়টা পূর্ব থেকেই জানতেন বিধায় যিশুখ্রিষ্টের ‘ক্রস’ হল খ্রিস্টানীয়দের জীবনে সফলতার চাবিকাঠি।
যারা তাকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রেখেছে। বাইবেলে বলা হয়েছে যে, তাদের সব পাপ মুছে গেছে। সুতরাং বুঝা গেল যিশু তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের পাপের মূল্য দিয়ে গেছেন। আর এটাই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের মূল্য অনেক বেশি। সেজন্য খ্রিস্টানদের জীবন থেকে ক্রসটা সরিয়ে ফেললে খ্রিস্ট ধর্মটা টিকে থাকতে পারে না।
তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। শুধু মুসলিমরা নয়, অন্যান্য অনেকেই মনে করেন যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। অবশ্য ডা. জাকির নায়েক আমার চেয়ে অনেক বিস্তারিত জানেন। তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ সম্পর্কে আমি বেশ কিছু কথা বলতে চাই। যদিও ইতোপূর্বে খ্রিস্টানদের জীবনে ক্রসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছি এবং বলেছি যে, ক্রসের কারণেই আমার জীবনের সব পাপ মুছে গিয়েছে। সুতরাং ক্রস মহান ঈশ্বরের উপহার। ঈশ্বর নিজেই এখানে পাপের মূল্য দিয়েছেন। আর তাই তিনি যে মূল্য দিয়েছেন সেটা অনেক মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাপ থেকে মুক্তির জন্য। তেমন আত্মত্যাগ এটা নয়, যেমন আত্মত্যাগ আমি করি। এটা হবে দূষিত আত্মত্যাগ। কিন্তু যিশু একজন নিস্পাপ মানুষ হয়েও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন যেন তিনি একজন সাধারণ পাপী। তিনি পাপীদের শাস্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু তিনি পাপী ছিলেন না। যখন তার আত্মাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তিনি বললেন তুমি মরবে না। ওটা আমাকে দাও। আমিও এখন তোমাদের জন্য মরবো।
এখন আসি বাইবেলে বর্ণিত কয়েকটি ঐতিহাসিক জিনিস যা আমি আপনাদের দেখাবো। বাইবেলের বেশকিছু অনুচ্ছেদ পরোক্ষভাবে যিশুখ্রিস্টের জন্মমৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি অনুচ্ছেদে সরাসরি বলা হয়েছে। আবার কোথাও পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। যেহেতু হাতে সময় কম সেহেতু আমি দুই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
আপনারা হয়ত জানেন যে, পবিত্র বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বই লিখেছিলেন নবী মূসা। এ পাঁচটি বইয়ের প্রথমটির নাম জেনেসিস। এখানে বলা আছে যে, ঈশ্বর কিভাবে এ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তারপরে মানুষ সৃষ্টি করলেন, তখনকার দিনে ব্যাবিলন কেমন ছিল ইত্যাদি? আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আপনাদের বেশিরভাগ লোকই আদম ও হাওয়ার গল্পটি কোথাও না কোথাও শুনেছেন। আদম ও হাওয়া কিভাবে সৃষ্টি হলেন এবং তারা ঈশ্বরের অতি নিকটে অবস্থান করেছিলেন? আদম-হাওয়া ও ঈশ্বরের মাঝখানে কোন বাঁধা ছিল না। সে জন্য আদম-হাওয়া ও ঈশ্বর এক সাথে ছিল, একে অন্যের সাথে কথা বলেছেন। সেখানে সৃষ্টিকর্তার সাথে আদম ও হাওয়া স্বর্গে একসাথে ছিলেন। কেন? কারণ তারা কেউ কোন পাপ করেনি। ঐ সময়টা ছিল পাপের পূর্ববর্তী সময়। তারপর শয়তান একটা শাপের ছদ্মবেশ নিয়ে তথায় আসল এবং তাদেরকে দিয়ে একটা পাপ কাজ করাল।
বাইবেলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। আদম ও হাওয়াকে একটা ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা খেয়েছিলেন। ঐ ফলটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করার বিষয়টি। ঈশ্বর তাদেরকে যে কাজটা করতে নিষেধ করেছিল, তারা ঠিক সেটিই করেছেন। যখন তারা এ কাজটা করল তখন পাপের শুরু হলো। ঐ মুহুর্তেই আদম-হাওয়া এবং ঈশ্বর আলাদা হয়ে গেলেন। অনেকেই বলে থাকেন যে, যদি একবার ঈশ্বরকে দেখতে পেতাম। যদি অন্যরা তাকে দেখে তবে আমি কেন তাদের দেখতে পাব না? এভাবেই অনেকেই ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। কারণ, তার চারপাশে শুধু শয়তানই দেখে। এসব পাপ মানুষই তৈরি করেছে। ঈশ্বর না। মহান ঈশ্বর সবসময় আমাদের প্রতি সুবিচার করে থাকেন। সেরকম কিছু ঘটনার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করছি।
‘যখন আদম ও হাওয়া ঈশ্বরকে অমান্য করল তখন ঈশ্বর খুব রেগে গেলেন সেই সাপের ওপর, হাওয়ার ওপর, আদমের ওপর আর এদের প্রত্যেককেই ঈশ্বর একটা করে অভিশাপ দিলেন। ঈশ্বর সাপকে অভিশাপ দিলেন যে সাপ সব সময়ই মাটির উপর দিয়ে সব সময় গড়িয়ে গড়িয়ে চলবে। আর হাওয়াকে অভিশাপ দিলেন। যে, তুমি তোমার স্বামীকে নিষিদ্ধ ফল খেতে প্রলুব্ধ করেছ তাই এখন থেকে তোমার স্বামী তোমাকে শাসন করবে আর তুমি তার অধীনে থাকবে- তার ওপরে নির্ভর করবে। আর এতদ্ব্যতীতও তুমি সন্তান প্রসবের সময় প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করবে। আর আদমের ক্ষেত্রে এটা হবে যে, সে যখন জমিতে কাজ করবে জমি তাকে সহজে কোন খাবার দিবে না। তাকে ঘাম ঝরাতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। এ খাবার সংগ্রহ করার জন্য। আর তারা মরণশীল হয়ে গেল। তাদের জীবনে মৃত্যু আসল। তারা আর অমর থাকল না। তবে একটা ব্যাপার খুব গুরুত্বপুর্ণ তা হলো ক্রসের ব্যাপার।”
এখানে ক্রসের কথাটি পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে সেটা এখন বলছি। হ্যা! বলা আছে যে, ঈশ্বর আদম-হাওয়াকে অনেক অভিশাপ দেয়ার পর বললেন .......(এটা বুক অব জেনেসিসের ৩য় অধ্যায়ের প্রথম দিকে আছে, আপনারা ইচ্ছা করলে লিখে নিতে পারেন) সে জন্য মহান প্রভু ঈশ্বর তাদেরকে স্বর্গের বাগান থেকে বের করে দিলেন। এখানে আদম ও হাওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে। স্বর্গ থেকে তাদের পৃথিবীতে প্রেরণ করা হল। ঈশ্বর তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে একজন প্রহরী রাখলেন। ঈশ্বর আদমকে তাড়িয়ে দিলেন আর একজন প্রহরীকে বসালেন স্বর্গের সেই বাগানের পূর্ব দরজায়। সেখানকার জীবন বৃক্ষকে পাহারা দেওয়ার জন্য একটা আগুনের তরবারি যার অগ্রভাগে সবদিকেই বিস্তৃত ছিল।
এ বিষয়টার বিবরণ জেনেসিসের ৩য় অধ্যায়ের ২৩ ও ২৪ অনুচ্ছেদে আছে। তাহলে বিষয়টা দাড়াঁল এমন যে, ঈশ্বর তাদেরকে বিভিন্ন রকম শাস্তি দেয়ার পরে অর্থাৎ তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার পরে তাদের স্বর্গের বাগান থেকে বের করে দিলেন। ইডেনের এ বাগানটিকে অনেকেই স্বর্গের বাগান বলে থাকেন। আদম ও হাওয়া এ বাগানের মধ্যে আনন্দ ফুর্তি করতেন। ঈশ্বর তাদেরকে এ বাগান থেকে চিরতরে তাড়িয়ে দিলেন। তারপর ঈশ্বর এ বাগানে প্রবেশের দরজায় কি করলেন? তিনি সেই দরজায় একজন দেবদূতকে বসালেন। দেবদূতদের মধ্যেও অনেক রকম শ্রেণীবিভাগ আছে। এদের নাম চেরোমি। এরা ঈশ্বরের খুব কাছে থাকে। এ দেবদূত স্বর্গের দরজা পাহারা দিতে লাগল। তার হাতে ছিল আগুনের তরবারি। আর সেই তরবারীর মাথা চারদিকে ছড়ানো। যাতে করে সেই বাগানে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
তাহলে এখন স্বর্গের বাগানে প্রবেশের উপায় কি? স্বর্গের বাগানে প্রবেশের একমাত্র উপায় হলো ঐ প্রহরীকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। ঐ প্রহরীর হাতে একটা তরবারী আছে। যেটা দিয়ে সে স্বর্গের বাগানের দরজা পাহারা দিচ্ছে। একজন খ্রিস্টান হিসাবে পবিত্র বাইবেল ব্যাখ্যা করে আমি বুঝেছি যে, স্বর্গের সেই বাগানে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তাকে ঐ তরবারি দিয়ে হত্যা করা হবে। কারণ মহান ঈশ্বর ন্যায়বান আর ন্যায়বিচার বলেই তরবারিটা ঘাড়ের ওপর পড়বে। বিষয়টা বুঝতে পারলেন! এজন্য আদম সেখানে আসতে পারবে না যেহেতু স্বর্গের বাগানে তরবারি হাতে প্রহরী আছে। ঐ তরবারিটা তাকেই হত্যা করবে যে স্বর্গের বাগানে প্রবেশ করতে চাইবে। আর আমরা দেখি যে, যিশু স্বেচ্ছায় তার জীবন দিলেন তাঁর মহান পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী। ঐ তরবারিটা তার ওপর পড়েছিল। আর সে জন্য ঐ দিন থেকেই স্বর্গের বাগানের সেই দরজাটা খুলে গেল।
স্বর্গের দরজা শুধু খ্রিস্টানদের জন্য নয়; বরং তা বিশ্ববাসী সকলের জন্য। তা হলে বুঝতে পারলেন, বলেছেন, আমিই দরজা। তোমরা ঈশ্বরকে চিনতে চাও? আমিই হলাম দরজা। যিশু ঐ তরবারিটাকে তার ঘাড়ে পড়তে দিয়েছিলেন। তাহলে এখানে পরোক্ষভাবে ক্রসের কথা বলা হয়েছে। এখন অন্য বিষয় দিয়ে আলোচনা করি। বাইবেলে ক্রস নিয়ে এমন পরোক্ষ মন্তব্য আছে। আবার বেশ কিছু প্রত্যক্ষ মন্তব্যও আছে। এখানে শুধু ক্রসের কথাই বলছি, অন্য কিছু নয়। অন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি, এটা সেই বিখ্যাত গল্প আমাদের বিশ্বাসীদের সবার পূর্বপুরুষকে নিয়ে। তিনি হলেন ইবরাহীম। এখন এ সম্পর্কে কিছু কথা বলি।
অনেকেই হয়ত এটা জানে না যে, খ্রিস্টান এবং মুসলমান এরা একে অন্যের ভাই। খুব কম লোকেই এ কথাটা জানে। প্রকৃতপক্ষে ভাই। এটা কিন্তু আপনাদের খুশি করার জন্য বলছি না। সত্যি বলছি। খ্রিস্টানরা হল ইবরাহীম নবীর আধ্যাত্বিক উত্তরসূরী। আইজ্যাকের মাধ্যমে। না না দুঃখিত। ইসমাইল। ইসমাইলের আর এক ভাই। তিনি হলেন আইজ্যাক। তাহলে মুসলিম ও খ্রিস্টান আমরা সবাই এসেছি ইবরাহীম থেকে। তারা দুই ভাই। তবে সহোদর না; বরং সৎভাই। তাদের দু’জনের মা আলাদা। তাই যখন মুসলিমদের ভাই বলছি এটা আপনাদের খুশি করার জন্য নয়। আমরা আসলেই ভাই। আমাদের উভয়ের আধ্যাত্মিক পূর্ব পুরুষ হলেন ইবরাহীম। নবী ইবরাহীম। একই মানুষ। ঠিক আছে তো?
প্রথমে এ বিষয়টা সম্পর্কে বলেছিলাম। এভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে কথা বলতে চেষ্টা করব। আমি খুব ভাল আলোচক নই। আকর্ষণীয় কোন কিছু থাকলেও তা আপনাদের জানাব। আচ্ছা এখন আমরা ইবরাহীমের জীবনটা দেখি। ইবরাহীম। তাকে ঈশ্বর পরীক্ষা করেছিলেন স্বীয় পুত্রের মাধ্যমে। আইজ্যাক তথা ইসহাক। আমি জানি আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা বাইবেল সম্পর্কে তেমন জানেন না। সে জন্য মাঝে মধ্যে আমি প্রয়োজন অনুসারে আমি ব্যাখ্যা করব। কারণ আমি জানি যে, আপনাদের অনেকেই বাইবেল পড়েননি। কেউ কেউ হয়ত পড়েছেন। আসলে আমি এখানে খুব বিস্তারিতভাবে বলতে চাচ্ছি না। ঘটনাটা আপনাদের আমি সংক্ষিপ্ত আকারে বলছি। ইবরাহীমকে ঈশ্বর উর নগরী থেকে চলে যেতে বলেছিলেন কারণ সেটা পাপের নগরী ছিল। উর শহরটার অবস্থান বর্তমান ইরাকে, বসরার সন্নিকটে। আমি সেখানে গিয়েছি। জায়গাটা আসলে একটা মরুভূমি। যেখানে এখন কেউ থাকে না। কিছু স্মৃতি স্তম্ভ আছে। তাই এটা যেহেতু পাপের নগরী তাই ঈশ্বর তাকে তা থেকে চলে যেতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তোমাকে এর চেয়ে ভাল জায়গার সন্ধান দিব। সেটা এর চাইতে ভাল নগরী, সবাই জানতেন তারপরও তিনি ঈশ্বরের কথা শুনে চলে গেলেন। ঈশ্বর। তার প্রতিশ্রুতি তখনই পূরণ করলেন না, অনেক সময় নিলেন।
ইবরাহীম অনেক আগেই সারাকে বিয়ে করেছিলেন। আর সারার গর্ভে তাদের কোন সন্তান হয়নি। ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আমি তোমাদের গর্ভে অনেক সন্তান দিব। আকাশের তারকা দেখ। সেখানে কি অনেক তারকা দেখছ না? তেমনি তোমারও অনেক সন্তান হবে। সাগরের তীরে বালুর স্তুপ দেখেছ? তেমনি তোমার অনেক সন্তান হবে। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তিনি অনেক দিন নিঃসন্তান ছিলেন। তারপরও তিনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছেন। তিনি বিশ্বাস হারাননি। বুঝলেন? তারপর অনেকদিন পার হয়ে গেল কিন্তু কোন সন্তান হলো না। এরপর ইবরাহীম হতাশ হয়ে গেলেন। আর ঐ সময়ের একজন লোক একাধিক মহিলাকে বিয়ে করতে পারত। এমনকি তারা তাদের দাস দাসীদেরও বিয়ে করতে পারত। এ ব্যাপারে কোন রকম বাধা-নিষেধ ছিল না।
এমনি একদিন সারা তাঁর স্বামীকে বললেন, আপনি কেন আপনার দাসীদের একজনকে বিয়ে করছেন না? তাহলে আপনার সন্তান হবে। তখন হযরত ইবরাহীম মিশরের এক দাসীকে বিয়ে করলেন তাঁর নাম ছিল হাজেরা। হাজেরার গর্ভে যে সন্তান হলো তার নাম ইসমাইল। এরপর ইবরাহীমের আর একটি পুত্র সন্তান হলো। ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। আর তার প্রথমা স্ত্রী সারা গর্ভবতী হলেন। তিনি আইজ্যাক তথা ইসহাককে জন্ম দিলেন। চিন্তা করুন, এত দিন পর ইবরাহীম এ সন্তান পেয়ে কেমন খুশী হয়েছিলেন? আপনার নিজের ব্যাপার যদি চিন্তা করেন যে, আপনি বিবাহিত। আর যদি ২০/২৫ ধরে আপনি নিঃসন্তান অথচ ঈশ্বর আপনাকে সন্তানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কথা দিয়েছেন।
তাছাড়া মনে করুন, আপনি বড়লোক। সুতরাং আপনি চলে গেলে কে উত্তরাধিকারী হবে? তারপর এত কিছুর পর ২০/২৫ বছর পরে আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হলেন। একটা পুত্র সন্তান হলো। ঐ ছেলেকে আপনি কতখানি ভালবাসবেন? অনেকদিন আপনি ঐ ছেলের জন্য অপেক্ষা করেছেন। ইবরাহীমের ক্ষেত্রেও তেমনিই ঘটেছিল। তাই তিনি স্বীয় পুত্র আইজ্যাক তথা ইসহাককে খুব ভালবাসতেন। তারপর একদিন কি ঘটল। একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটল। অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যাপার বলা যায়। জেনেসিসের ২২ নং অধ্যায়ে এ ঘটনার বিবরণ আছে। এতে বলা হয়েছে, যে, এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর ঈশ্বর ইবরাহীমকে পরীক্ষা করলেন। ঈশ্বর তাকে বললেন ইবরাহীম। তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন। আমি এখানে। তিনি বললেন, তুমি তোমার পুত্র আইজ্যাককে নাও- যাকে তুমি খুব ভালবাস। অতঃপর তাকে নিয়ে মোরাইয়া অঞ্চলে যাও। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তাকে উৎসর্গ করবে। একটি পাহাড়ের উপর উৎসর্গ করবে। যেটার বিবরণ আমি তোমাকে পরে দিব। ইবরাহীমের জন্য এটা একটা দুঃসংবাদ। অনেকদিন অপেক্ষা করার পর। আর আইজ্যাক এখন কিশোর। সে তখন তার বাবার বোঝা বহন করতে পারে। এখানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর বললেন, যে তুমি আইজ্যাককে উৎসর্গ কর। ঠিক আছে?
এবার আমি ঘটনাটি সংক্ষেপে বলি। পুরো ঘটনাটি বিস্তারিত বলছি না। তখন ইবরাহীম মনে দারুন কষ্ট নিয়ে কি করলেন? খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলেন। আইজ্যাককে উৎসর্গ করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাথে নিলেন। যেমন– ছুড়ি, দড়ি, ইত্যাদি। তারপর ঈশ্বরের কথা মত আইজ্যাককে সাথে নিয়ে বের হলেন। তারপর তার ভৃত্যকে সরিয়ে দিলেন। আইজ্যাককে নিয়ে তিনি মোরাইয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন। যেখানে ঈশ্বর তাকে যেতে বলেছেন। যাক এখনই আকর্ষণীয় ঘটনা ঘটেছিল। সে ঘটনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘটনাটি আমি সংক্ষেপে বলছি।
আইজ্যাক তাঁর বাবা ইবরাহীমকে বললেন যে, হে আমার পিতা। ইবরাহীম বললেন! এই তো আমি, আমার পুত্র। আইজ্যাক বলল যে, আপনি কাঠ আর আগুন নিচ্ছেন। কিন্তু কোরবানীর ভেড়া কোথায়? ছেলেটা বলল, আপনি তো আগুন নিয়েছেন আরও নিয়েছেন কাঠ। কিন্তু আমরা দুইজন কেন পাহাড়ে যাচ্ছি? আপনি এমন সময় সাধারণত একটা ভেড়া কোরবানী দেন। সেই ভেড়াটা কোথায়? হ্যাঁ। দেখুন, তারপরে কি ঘটল? তখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার পুত্র! ঈশ্বর নিজেই এখানে আমাদের জন্য একটা ভেড়া সরবরাহ করবেন। তারপর তারা দুইজন পাহাড়ে উঠলেন। এ কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইবরাহীম বিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিজেই এখানে একটা কিছু উৎসর্গ করবেন। দেখুন, তিনি এখানে বলেননি যে, ঈশ্বর এখানে একজনকে উৎসর্গ করবেন; বরং তিনি বললেন, ঈশ্বর নিজে থেকেই এখানে কিছু একটা উৎসর্গ করবেন।
এখন আপনারা যদি পবিত্র বাইবেল পড়েন, নিউ টেস্টামেন্টে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেখতে পাবেন। নিউ টেস্টামেন্ট হলো পবিত্র বাইবেলের দ্বিতীয় অংশ। সেখানে বলা আছে ইবরাহীম বিশ্বাসের সাথেই বলেছিলেন আইজ্যাকের সাথে কথা বলার সময়ে। আর সে রকম ঘটনাই ঘটেছিল। আইজ্যাক জীবিত থেকে মৃত্যু হন নি। তারা পাহাড়ে উঠল। তারপর তারা ঈশ্বরের নির্দেশিত স্থানে আসল। ইবরাহীম সেখানে একটি বেদি বানিয়েছিলেন। সেখানে কাঠগুলি সাজিয়ে রাখলেন এবং আইজ্যাককে বাধলেন। তারপর আইজ্যাককে সেই বেদির উপর সোয়ালেন। লক্ষ্য করুন, আইজ্যাক কিন্তু তখন পালিয়ে যাননি। সে এই কাজে কোন প্রকার বাধা দেন নি। যদিও সে ততদিনে অনেক বড় হয়েছে। তিনি তখন ইচ্ছা করলে পালিয়ে যেতে পারতেন।
এর পর কি ঘটল? যখন ইবরাহীম হাত বাড়িয়ে ঐ ছুরিটা নিয়ে আইজ্যাককে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন তখন একজন দেবদূত তার কাছে এসে বলল, ইবরাহীম, শোন। তিনি সাড়া দিয়ে বললেন, এখানে আমি। দেবদূত বললেন তোমার পুত্রের শরীর স্পর্শ করো না। তার কোন রকম ক্ষতি করো না। কারণ আমরা জানতে পেরেছি যে, তুমি ঈশ্বরকে মানো। ঈশ্বরের আদেশে একমাত্র পুত্রকেও উৎসর্গ করতে দ্বিধা করনি।
তখন ইবরাহীম তাঁর চোখ মেলে দেখলেন যে, তাঁর পিছনেই একটা ভেড়া ঝোঁপের মধ্যে তার শিং আটঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ইবরাহীম তখন সেই ভেড়াটিকে নিয়ে তার ছেলের পরিবর্তে তার ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করলেন। এবার ইবরাহীম ঐ জায়গার নাম দিলেন ঈশ্বরের পাহাড়। ঈশ্বরই সব যোগান দিবেন। এ চরম নাটকীয় ঘটনায় শিক্ষণীয় বা সারমর্ম হলো যে, ইবরাহীম তাঁর ছেলে আইজ্যাককে বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিজে থেকেই কিছু একটা উৎসর্গ করবেন। ঈশ্বর এখানে একটি উৎসর্গ দাবি করেছেন। আমি এখানে নিজে থেকেও কিছু কথা বলছি আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে।
ঈশ্বর দাবি করেছেন একটা উৎসর্গ, কিছু একটা উৎসর্গ করতে হবে। ঈশ্বর স্বয়ং এটা দাবি করেছেন। কিন্তু এখানে উৎসর্গ করার ভেড়াটা কোথায়? ঈশ্বর নিজে থেকেই এখানে একটা কিছু সরবরাহ করবেন। প্রকারান্তে তাই হয়েছিল একই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি আইজ্যাককে মারেন নি, আইজ্যাককে তিনি রক্ষা করেছেন। ঈশ্বর আইজ্যাককে মারার কথা চিন্তা করেননি। পবিত্র বাইবেলে তিনি একথাই বলেছেন। বরং তিনি ইব্রাহীমকে পরীক্ষা করেছিলেন। ঈশ্বর এভাবে বাচ্চাদেরকে উৎসর্গ করেন না। তিনি আইজ্যাককে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তাহলে তিনি কোন আইজ্যাককে কেড়ে নিবেন? ঠিক আছে!
আর তারপর ঈশ্বর অলৌকিক কাজ করলেন। ঈশ্বর একজন দেবদূত পাঠিয়ে ইবরাহীমকে উৎসর্গের কাজে বাধা দিলেন। যাতে আইজ্যাকের বদলে অন্য কিছু উৎসর্গিত হয়। কিন্তু আইজ্যাক যেন বেঁচে থাকেন। আমরা খ্রিস্টানরা এ বিষয়টাকে এভাবেই দেখি। ঈশ্বর আমাকে বাঁচালেন। আমাকে বাঁচালেন মানে আইজ্যাকের জায়গায় আমাকে কল্পনা করুন। যারা যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে তারা আইজ্যাককেও মান্য করে। ঈশ্বর আমাকে সেই পাপের মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচিয়েছেন। আমার উপর একটা মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন। আর ঈশ্বরের সুবিচার দাবি করে যে, পাপের শাস্তি হলো মৃত্যু। বুঝতে পারলেন? আর এটাই হয়ত ঠিক হবে যে, আমি এখন মারা গেলে নরকে যাব। ঠিক আছে। তাই ঈশ্বর এখানে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। যিশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে সেই উৎসর্গ হলেন।
আপনারা যিশুকে দেখেছেন কি? যে যিশুকে বিশ্বাস করেন? আপনি তাকে হৃদয়ে ধারণ করেন? আর এটা যদি সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে ঈশ্বরের সুবিচারকেও ভাল করে বুঝতে পারবেন। এটা আমার ভালোর জন্য। আর অন্য কেউ মারা গেলে সেটা যথেষ্ট নয়। কিন্তু যিশু আমার জন্য স্পেশাল ভাবে মারা যাচ্ছেন। এভাবে অনেক মানুষই একে অপরের জন্য জীবন দিয়ে দেয়। আবার কখনও কখনও স্ত্রীর জন্য স্বামী জীবন দিয়ে দেয়। কারণ একটাই- সে তার স্ত্রীকে ভালবাসে। এটাই খুব মহান কাজ, খুব ভাল কাজ। তাই না?
কিন্তু এখানে আমি পাপ মুক্তির কথা বলছি ছোট খাট কোন মুক্তির কথা বলছিনা। এখানে আমরা মুক্তি পাচ্ছি আদি পাপ থেকে। দোযখ থেকে, দোযখের আগুন থেকে। তাই যে কোন উৎসর্গে কাজ হবে না। আর নিউ টেস্টামেন্ট বাইবেলের দ্বিতীয় অংশটি বলছে-এখানে অবশ্য বিশ্বাসীদের কথা অর্থাৎ খ্রিস্টানদের কথা বলা হয়েছে- ঈশ্বর আমাদের জন্য কোন ছাগল উৎসর্গ করেন নি। অথবা কোন গরু অথবা কোন পশুও উৎসর্গ করেন নি। আমি আসলে কথাগুলো আমার নিজের মত করে বলছি। তিনি উৎসর্গ করেছেন তাঁর একমাত্র প্রিয়পুত্র যিশুখ্রিস্টকে। হ্যাঁ। যিশু উৎসর্গের এ ব্যাপার বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্টে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে স্থান পেয়েছে। যেহেতু যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাই আমার সব পাপ মুছে গেছে। আর মহান ঈশ্বরের কাছে পাপেরও শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। তাই শ্রেণীভেদে পাপের বিভিন্ন রকম শাস্তি হয়ে থাকে।
আমাদের কিন্তু যিশু নিজেই পাপের শাস্তি নিলেন। একমাত্র তিনিই আমাদের সকলের পাপের ভার বহন করলেন। দেখলেন বিষয়টা কত গুরুত্বপূর্ণ?
তবে অন্য কেউ মারা গেলে আমার পাপের কিছুই হবে না। আমি পাপ থেকে মুক্তি পাব না। কিন্তু একজন বিশেষ লোক বা নিস্পাপ লোক যদি অন্যের পাপের জন্য আত্মত্যাগ করতে চায় তাহলে ঐ ব্যাক্তির সব পাপ মুছে যাবে। আচ্ছা। এখন ওল্ড টেস্টামেন্টে যে সব বিবরণ আছে উহা বিস্তারিত বলছিনা। শুধু বিভিন্ন জায়গার উদ্ধৃতি দিচ্ছি। পরে প্রয়োজনে আপনারা সেগুলো যাচাই করে দেখতে পারবেন। আমার হাতে সময় খুবই কম।
ওল্ড টেস্টামেন্টে ঈশ্বর রূপক হিসেবে ক্রসের কথা বলেছেন। আপনারা বোধহয় গল্পটা যখন ইহুদীরা সবাই মিশর থেকে চলে আসল তখনকার সময়ের। এটা ইহুদী জাতির ইতিহাস। গল্পটা খুবই প্রসিদ্ধ। তারা কয়েকটি বছর ধরে মিশরে দাস ছিল। অতঃপর মহান ঈশ্বর সেখান থেকে তাদেরকে নিয়ে আসলেন বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে। আর ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন যে, আজ রাতে তোমাদের সব শত্রুদের মেরে ফেলব। ঐ সময় তাদের যারা শত্রু ছিল, তারা সবাই মারা যাবে। আর তোমরা তখন চলে যেতে পারবে। তখন ঈশ্বর তাদেরকে একটি ভেড়া উৎসর্গ করতে বললেন। যে ভেড়াটা একেবারে নিখুঁত। অসুস্থ, অন্ধ বা খোড়া নয়। একেবারে নিখুঁত ভেড়া। ঈশ্বর তাদের বলল যে, এ ভেড়াটার রক্ত তোমাদের ঘরের দরজায় লাগাবে। আর রাতে মৃত্যুর দেবদূত আসবে। যে দরজায় এ রক্তের ছাপ থাকবে না তাদের প্রথম সন্তানটির মৃত্যু হবে। ফলে তারা সবাই ভেড়া উৎসর্গ করে দরজায় রক্ত মাখালো। আর ঐ একই রাতে ইহুদীদের সবাইকে মিশর ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হলো। সেই দিনই তারা অনুমতি পেল। হ্যা! তাহলে এটাই ছিল নির্দেশ যে, নিখুঁত একটা ভেড়া লাগবে। সুতরাং যেমন তেমন ভেড়া এনো না; বরং একটা নিখুঁত ভেড়া নিয়ে এসো। তাতেই তোমাদের মুক্তি ঘটবে মৃত্যু থেকে। এটাই হলো রূপক।
প্রকৃতপক্ষে এটা আসলে ভেড়া ছিল না। যিশু পরে আসবেন এ উৎসর্গটা তারই রূপক। এরপরের ইতিহাস লক্ষ্য করবেন যে, ইহুদীরা ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল। এমনটা অনেকরাই করেছিল। তারা দশবার বিদ্রোহ করেছিল। ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল। তখন কিছু সাপ এসে তাদেরকে কামড়াল। সাপের বিষে অনেকেই কষ্ট পেল। এসব কথা বাইবেলে বর্ণিত আছে। তারপর ঈশ্বর মূসাকে এসবের প্রতিকার করতে বললেন। তিনি ব্রোঞ্জের ব্রাচ দিয়ে একটি সাপ বানাতে বললেন। আর সে সাপটা ঝুলিয়ে রাখলেন। অতঃপর ইহুদীদের সবাই যখন ঐ সাপের দিকে তাকাল তখন তাদের শরীর থেকে সাপের বিষ নেমে গেল।
নিউ টেস্টামেন্টে উপরোল্লেখিত ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, এখানে সাপটা হচ্ছে আসলে শয়তানের একটা প্রতীক। সাপ একটা সাধারণ প্রাণী। এটা আসলে শয়তান নয়। তারপরে কি ঘটলো? যিশুকে ক্রুশে ঝুলানো হয়েছিল। মূসার সেই সাপের মত। যদিও তিনি ছিলেন নিস্পাপ, দেবদূতের চেয়েও নিস্পাপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আমাদের সকলের পাপের বোঝা বহন করেছেন ক্রুশবিদ্ধ হয়ে। আপনারা যিশুকে দেখুন, হৃদয়ে ধারণ করুন আজকেই আপনার সব পাপ মুছে যাবে। আজকেই আপনি পাপমুক্ত হয়ে যাবেন। কোন প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই; বরং যিশুকে বিশ্বাস করলে আজই পাপমুক্ত হয়ে যাবেন। যিশুর প্রতি লক্ষ্য করুন, তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আর এজন্যই এ ক্রস আমাদের নিকট এত গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক।
এবার যদি ইহুদী জাতির ইতিহাস লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন যে, ঈশ্বর তাদের বলেছেন, তোমরা একটা ভেড়া আনো। যেটার কোন খুঁত নেই। যেটার কোন অসুখ নেই। যেটা অন্ধ নয়। যে ভেড়াটা খোড়া নয় এবং বয়স বেশি নয়। শুধু সে রকম ভেড়াকেই আমি উৎসর্গ হিসেবে গ্রহণ করব। ঈশ্বর তাদের ভবিষ্যতের যিশুখ্রিষ্টের কথাই বলেছিলেন যে, একেবারে নিখুঁত ভেড়া। যদি পাপের কথা চিন্তা করি তাহলে মানুষ হিসাবে যিশু আপনার আমার মতই ছিলেন। ঈশ্বর হিসেবে সব ক্ষমতা আর শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের মতই ছিলেন। তার মতই সাধারণ মানুষ কষ্ট পায় আর পাপ করে। দুঃখিত, পাপের পথে প্রলুব্ধ হয় বা প্রলুব্ধ করা হয়। তাহলে নিশ্চয়ই এটি একটি মৌলিক বিষয়। যদি নিউ টেস্টামেন্ট পড়েন সেখানে ক্রস সম্পর্কে অনেক কথাই পাবেন। পূরো নিউ টেস্টামেন্টের ভিত্তিই হলো যিশু খ্রিষ্টের ক্রস। নিউ টেস্টামেন্টের একজন বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা অ্যাপোস্টল পল বলেছেন, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথা বলেছি। আর কিছুই বলার নেই। অনেকেই পলকে অনুরোধ করেছিল যে, তুমি ক্রসটাকে বাদ দিয়ে খ্রিস্ট ধর্মটা প্রচার কর।
তিনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথাই বলছি। যারা বিশ্বাস করে না তাদের নিকট এ বিষয়টা বোকামী।
সাধারণভাবে এ ক্রোসের ব্যাপারটাকে সবাই বোকামী মনে করবে। ব্যাপারটা দাঁড়ায় এ রকম যে, ঈশ্বর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। হাস্যকর। ভাববেন যে, বিষয়টা নিঃসন্দেহে হাস্যকর। কিন্তু প্রকৃতার্থে এটা হলো ঈশ্বরের পাণ্ডিত্য বা বিজ্ঞতা বা বিচক্ষণতা। কারণ, ঈশ্বরের জ্ঞান আমাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা। ঈশ্বরকে সুবিচারের মানদণ্ডটা সবসময় ঠিক রেখে কাজ করতে হয়। তাই পাপের শাস্তি হিসাবে তিনি নিস্পাপ একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। পৃথিবীর সবার জন্য। আজকে মানুষ বিশ্বাস করবে যে, যিশু ক্রুশে মারা গেছেন। সমাধিতে তিন দিন থাকার পর তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে পুনরায় ঈশ্বর হিসেবে তাঁর দায়িত্ব বুঝে নিলেন। যে মানুষ এ কথাগুলো বিশ্বাস করবে সে পাপমুক্ত হয়ে যাবে। বিশ্বাসীদের গন্তব্য বদলে যাবে। নরকে না গিয়ে তিনি স্বর্গে যাবেন। আর এতদ্ব্যতীত অনেক উপকার পাবেন। ক্রুশে বিশ্বাস করলে আপনি যে সব উপকার পাবেন এখানে তার একটি মাত্র উল্লেখ করলাম।
আপনি যদি নিউ টেস্টামেন্ট পড়েন তাহলে দেখবেন পুরো নিউ টেস্টামেন্টের ভিত্তি হল এ ক্রস। ক্রসটি যদি বাদ দেন তাহলে পুরো বাইবেলের দাম দুই পয়সাও হবে না। বাইবেলে ইহুদীদের বই আছে। আর খ্রিস্টানদের বই আছে। খ্রিস্টানদের বইতে বলা আছে যে, যিশু কিভাবে কষ্ট পেয়ে মারা যাবেন। খুব কষ্ট। আইজায়ার ৫৩ নং অধ্যায় পরিষ্কার করে বলা আছে। আমি আর কয়েক মিনিট সময় নিচ্ছি। এখন সবশেষে বলছি নিউ টেস্টামেন্টের সর্বশেষ বইতে স্বর্গের বর্ণনা দেয়া আছে। ঈশ্বরের একজন ভৃত্য-যার নাম হলো জন দ্য অ্যাপোস্টল। বাইবেলে দু’জনার কথা আছে। একজন হলো জন অ্যাপোস্টল। তিনি একদা স্বপ্নে বেহেশত দেখলেন। এছাড়াও জন অ্যাপোস্টল বলেছেন যে, ইউফ্রেটিসের তীরে গোলযোগ বাধতে। অর্থাৎ বর্তমান ইরাকে। তিনি অনেক পূর্বেই এসব কথা বলে গিয়েছিলেন। আপনারাও ইউফ্রেটিসের গোলযোগের কথা বলেছেন। আরও অনেক কথা বলেছেন। তবে এ কথাটা বিশেষভাবে বলেছেন। তিনি স্বর্গে দেখেছেন সেই উৎসর্গ করা ভেড়াকে। হ্যাঁ যিশুখ্রিস্ট শারীরিকভাবে ভেড়া নন; বরং তিনি একজন মানুষ। ঠিক আছে। কিন্তু রূপক।
হিসেবে তিনি ঈশ্বরের নিখুঁত ভেড়া। ইহুদীদের পুরো ইতিহাসেই এর বর্ণনা পাবেন। নিউ টেস্টামেন্টের পুরো ইতিহাস জুড়েই এসব আপনারা দেখবেন। যিশুকে ভেড়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। স্বর্গে তাঁকে বলা হবে উৎসর্গকৃত সেই ভেড়া। সুতরাং আপনারা যদি আমাদের খ্রিস্টান ধর্ম থেকে ক্রুসকে বাদ দেন তাহলে খ্রিস্টান ধর্মের কিছুই থাকবে না। সেখানে তাহলে শুধু কিছু বিধি-নিষেধ থাকবে। পাপমুক্তি থাকবে না। পাপ আমাদের ছেড়ে যাবে না। কিছুই থাকবে না। মনে রাখবেন, ক্রুসের ব্যাপারটা খুবই মৌলিক। কেননা এ ক্রুসই আমাদের বলে দিয়েছে যে, ঈশ্বর আমাদের জন্যই মারা গিয়েছে। হা! তিনি স্বর্গ থেকে ধরায় নেমে এসেছেন। তিনি মানুষ হিসেবে হেঁটে বেড়িয়েছেন। মানুষ হিসেবে তিনি কষ্ট সহ্য করেছেন। আমাদের মতো তাঁকেও প্রলুব্ধ করা হয়েছে। একথা হয়ত আপনি ভাবতেও পারবেন না। ঠিক আছে?
আপনারা যিশুকে বিশ্বাস করুন। তিনি জয় করেছেন লোভকে। বিভিন্ন আসক্তিকে, বাজে অভ্যাসগুলোকে, আমাদের সবার পাপকে। যিশু আমাদের সবকিছু থেকে মুক্ত করেছেন। আপনারা শুধু তাঁকে বিশ্বাস করুন। তারপর বাসায় ফিরে যান। তার নিকট প্রার্থনা হচ্ছে আমার সময় শেষ। ভালো কথা, পাঁচ মিনিট অনেক সময়, এতে অনেক কথা বলা যায়। আচ্ছা কি বলছিলাম? পাঁচ মিনিট কম সময় নয়। কোন সমস্যা নেই। আচ্ছা এবার যিশুর ক্রুস সম্পর্কে একটি প্রমাণ দিতে চাই। এ ব্যাপারে অন্যতম একটি প্রমাণ হলো, আমাদের এ পবিত্র বাইবেল। অর্থাৎ এর অর্ধেক হলো ইহুদীদের বই। আর বাকী অর্ধেক হলো খ্রিস্টানদের বই। পুরো বাইবেলেই ক্রুসের কথা আছে? প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ দু’ভাবেই বলা আছে। আপনারা ইচ্ছা করলে পরে দেখতে পারেন। বাইবেলের দাম খুবই কম। বোম্বেতে অনেক দোকানে বাইবেল পাওয়া যায়। আর যদি আপনারা এ বিষয়ে কিছুই না জানেন তাহলে পরে বলব।
আর যিশুখ্রিস্ট যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তার অন্য একটা প্রমাণ দিব। এ প্রমাণটা আমাদের পবিত্র বাইবেল থেকে নয়; বরং এ প্রমাণটা দিব যিশুখ্রিস্টের শত্রুদের কাছ থেকে। যারা যিশুকে ঘৃণা করতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইহুদীরা ঐতিহাসিকভাবে যিশুখ্রিস্টকে প্রত্যাখান করেছিল। তাদের দাবি ছিল, এ লোক খ্রিস্ট নয়; বরং এ হলো নকল খ্রিস্ট। তাই তারা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এখন আপনারা হয়তো জানেন যে, ইহুদী জাতি ইতিহাস সংরক্ষণ করে। ইহুদীদের জীবনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে তারা সেই ঘটনা সংরক্ষণ করে রাখে। সেই সংরক্ষিত বইটার নাম টিলমুড। আপনারা হয়তো টিলমুডের নাম শুনেছেন। আপনারা যদি এ টিলমুড বইটা দেখেন যেটা যিশুর সময়কালের সন্নিকটবর্তী দুই হাজার বছরের পূর্বের। তাহলে সেখানে দেখতে পাবেন যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এখানে অনেক ভুল কথা আছে। তারা বলেছে, তিনি নকল খ্রিস্ট। তিনি ভুল প্রচার করেছেন। তিনি নাকি যাদুকর। এভাবে অনেক ভুল কথাই আছে। তবে এ কথাটাও আছে যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি নাকি অন্যায় করেছিলেন, তবে কথাগুলো ঠিক নয়। এটা ক্রুসের পক্ষে বাইরের একটা প্রমাণ।
খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী অসুস্থ মানুষের জন্য আশীর্বাদ করি। আশীর্বাদ করি, দুষ্ট আত্মা থেকে বাঁচার জন্য এবং জীবনের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য। প্রার্থনা করলে ঈশ্বর মুক্তি দিবেন। খ্রিস্টানরা আসলে সঠিক শিক্ষাই দিচ্ছে। এগুলোর প্রমাণ বারবার করা হয়েছে। আমি নিজেই মেরুদণ্ডের অসুখ থেকে সুস্থ হয়েছি। উপস্থিত ডাক্তাররা হয়তো বিষয়টা বুঝবেন যে, আমি কোন ব্যাপারে বলছি। অ্যাংকলিভসিং স্পনডেলাইটিস। এ রোগের চিকিৎসা নেই। এজন্য আপনাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। আপনি কখনো হাঁটতে পারবেন না। এ অসুখে সারাজীবনই ভুগতে হয়। আর এখন থেকে ষোল বছর পূর্বে তারা আমার জন্য প্রার্থনা করেছিল। আমি আস্তে আস্তে সাত দিনে সুস্থ হয়ে গেলাম। আমি ধার্মিক ছিলাম না। শুধু যিশুকে বিশ্বাস করেছি। এমনকি এ ঘটনার আগে পবিত্র বাইবেলটাও আমি পুরোপুরি পড়িনি। আর ঈশ্বরও বলে গিয়েছেন যে, এ লোকগুলো সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে। তাই ক্রুস বাস্তব ঘটনা। আর এ কারণেই আমি সুস্থ হলাম।
এমন অনেক মানুষকে আমি দেখেছি যে, তারা মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। আপনারা হয়তো এ ব্যাপারে আমার সাথে তর্ক করবেন। কিন্তু আমার হাতে বেশি সময় নেই। তাই তর্ক করতে পারব না। এখনকার দিনেও এমন ঘটনা ঘটে। আমি নিজেই এমন ঘটনা দেখেছি। একবার আমি বোম্বে জিমখানার পাশে হাটছিলাম। এমন সময় একটা বাচ্চা মেয়ের ওপর দিয়ে একটি স্কুটার চলে গেল। আমি দেখলাম যে, সে মারা গেছে। মেয়েটার বয়স খুবই কম ছিল। আমি আসলে ডাক্তার নই। তাই আমি বলতে পারব না যে, তার হৃৎপিণ্ডটা তখনো সচল ছিল কি না? শুধু খালি চোখে দেখলাম যে, মেয়েটা মারা গেছে। কোন নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। আর নড়াচড়াও করছে না। মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। তখন আমি যিশুর কাছে প্রার্থনা করছিলাম। অতঃপর যখন আমরা ঐ হাসপাতালে পৌছলাম তখন মেয়েটা আবার শ্বাস নেয়া শুরু করল। আর ডাক্তাররাও তখন মেয়েটার চিকিৎসা করা শুরু করল। ঠিক আছে? তবে এটা নিশ্চিত না যে, মেয়েটা মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিলাম।
তবে এমন অনেক প্রমাণ আছে যে, যিশুর নামে লোকজন মৃত থেকে জীবিত হয়েছে। আজকাল মৃত্যুর একটা সংজ্ঞা আছে। অসুস্থকে খ্রিস্টানরা সুস্থ করে তুলছে যিশুখ্রিস্টের নাম নিয়ে। ঈশ্বর যিশুখ্রিষ্টের নামে আমাদের করুণা করেছেন, আমাদের ভালোবেসেছেন। যিশুখ্রিষ্টের নামে ক্রুশবিদ্ধ যিশু। তাই যিশুকে বিশ্বাস করেন। ঈশ্বর আপনার সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন। সমস্যা আর থাকবে না। আজকে আমার হাতে আর সময় নেই। সময় থাকলে সবার জন্যই প্রার্থনা করতাম। এখন সময় নেই, তবে অন্য কোন সময় আমাদের সভায় আসতে পারেন। সভাটি হয় দামোদর হল ক্লাশরুমে সকাল নয় ঘটিকায়। আগামী রোববার। একবার চলে আসুন সবার জন্য আমরা সেদিন প্রার্থনা করব। চার্চের সবাই আপনাদের জন্য প্রার্থনা করবে। আমরা খুব জ্ঞানী নই। আমরা খুব মহান নই। এখানে যেমনটা দেখছেন তেমনই।
আবারো বলছি, আমরা সাধারণ মানুষ। আমি এখানে টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমিও একজন সাধারণ মানুষ। এমনকি আমাদের প্যাস্টর তিনিও কাজ করেন এবং তার স্ত্রীও একটা হাসপাতালে চাকুরী করেন। তাই বলছি, আমরা আসলে খুব বড় মানুষ নই। আমরা শুধু বাইবেলের কথা বলি। তবে যদি যিশুর কাছে প্রার্থনা করেন, তাহলে অধিকাংশ সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। অবশ্য যদি এগুলোতে আপনার বিশ্বাস থাকে। ঈশ্বর নিজেই এ ক্রুসের ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন। এটা সত্যি কথা। আর অনেকভাবেই ক্রুসের বাস্তবতা প্রমাণ করা যায়। সবাইকে ধন্যবাদ।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন