HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
যিশু কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন
লেখকঃ ডা. জাকির নায়েক
৬
২. যিশু কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেনঃ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিঅর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনের জন্য। দরূদ ও সালাম পেশ করছি রাসূলুল্লাহ (সাঃ), তার পরিবারবর্গ এবং সকল সাহাবীদের উপর। অতঃপর বিতাড়িত তথা অভিশপ্ত শয়তানের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরম দয়ালু ও দয়াবান। আল্লাহ বলেছেন, আর তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, নিশ্চয়ই আমরা ঈসা মাসীহ ইবনে মারইয়ামকে হত্যা করেছি যিনি আল্লাহর একজন রাসূল ছিলেন। কিন্তু তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি। ক্রুশবিদ্ধও করতে পারেনি; বরং তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। আর যারা তাঁর সম্পর্কে মতভেদ করেছিল তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। কারণ তাদের কোন জ্ঞান ছিল না। তারা শুধু অনুমানকেই অনুসরণ করেছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে নিশ্চিতভাবেই হত্যা করেনি।”
“হে আমার প্রভু! আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিন। আমার বিষয়টাকে সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা কাটিয়ে দিন। আমার কথার মর্ম উপলব্ধি যেন তারা করে।”
শ্রদ্ধেয় প্যাস্টর রুকনুদ্দিন অথবা তিনি যেভাবে পছন্দ করেন প্যাস্টর রুক্নি, হেনরি পিও, প্যাস্টর সাজি, এছাড়াও বোম্বের বিভিন্ন চার্চের প্যাস্টর ভাইয়েরা, শ্রদ্ধেয় গুরুজন এবং প্রিয় ভাই ও বোনেরা আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই ইসলামিক সম্ভাষণে–
“আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহ্মাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।”
অর্থঃ আল্লাহর দয়া, শান্তি এবং রহমত আপনাদের সবার উপর বর্ষিত হোক।
আজকের আলোচনা শুরু করার আগে আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, ধর্মে যিশুখ্রিস্টকে আমরা মুসলিমরা কিভাবে দেখি? ইসলাম হলো একমাত্র অখ্রিস্টান ধর্ম, যে ধর্মে যিশুখ্রিস্টকে নবী বলে বিশ্বাস করা হয়। সে আসলে মুসলিম না, যে মুসলিম যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি আল্লাহর খুব গুরুত্বপূর্ণ নবীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ রাসূলও। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি হলেন মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্ট। এটাও আমরা মানি যে, তিনি অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কোনও পুরুষের ঔরসজাত না হয়েই তিনি জন্মেছিলেন। যেটা অনেক আধুনিক খ্রিস্টানরাও বিশ্বাস করে না। মৃতকে জীবিত করেছেন। আমরা এটাও মানি যে, তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে মৃতকে জীবিত করেছেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করেছেন। এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, যদি মুসলিম ও খ্রিস্টান দু’দলই যিশুকে ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে তাহলে আপনাদের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? হ্যা! পার্থক্য আছে। পার্থক্যটা হল খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা যিশুখ্রিস্টকে মনে করে যে, তিনিই হলেন ঈশ্বর। আর তারা বলে যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আর তিনি মানুষের পাপের জন্য মারা গিয়েছেন। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু মনে হয় আপনাদের মনে আছে, “যিশু কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন?” যেহেতু আমরা মুসলিম আর খ্রিষ্টান উভয় পক্ষই যিশুখ্রিষ্টকে মানি তাই আমি উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গিটা বলতে চাই। মুসলিম আর খ্রিষ্টানরা এ বিষয়টাকে কিভাবে মূল্যায়ন করে।
মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা যদি বলতে হয় তাহলে শুরুতেই যা বলতে হবে তা হচ্ছে মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হলো আসমানী কিতাব পবিত্র কোরআন। আজকের বক্তৃতার শুরুতেই আমি মহাপবিত্র কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করেছিলাম। পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াত এটি। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তুটা সম্পর্কে। আপনারা জানেন যে, আমাদের আজকের আলোচক প্যাস্টর রুক্নি একজন আরব খ্রিষ্টান মিশনারি। উনার মাতৃভাষা আরবি। সেজন্য আমার উদ্ধৃত আয়াতটির অনুবাদ উনাকে বলার কোন প্রয়োজন নেই। এ আয়াতের মাধ্যমেই তিনি যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন। তবে এখানে উপস্থিত বেশিরভাগ মানুষই আরবি ভাষা বোঝেন না। কারণ আরবি আমাদের মাতৃভাষা নয়। এখন আমি তাদের জন্য সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতটির অনুবাদ পেশ করছি। যেমন–
আর তারা (ইহুদীরা দম্ভ করে) বলেছে, আম্বিয়া মরিয়মের পুত্র ঈসা যিনি একজন আল্লাহর রাসূল ছিলেন তাকে হত্যা করেছি। আর তারা তাঁকে হত্যাও করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি। বরং তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। আর যারা তাঁর সম্পর্কে মতভেদ করেছিল তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিল এবং তাদের কোন জ্ঞান ছিল না। শুধু অনুমানকেই অনুসরণ করেছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করেনি।
পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটা স্পষ্ট করে বলেছে যে, যিশু খ্রিষ্টকে হত্যা করা হয়নি। সুতরাং আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে– অর্থাৎ তাকে তারা হত্যাও করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি। অর্থাৎ আর তারা নিশ্চিতভাবেই তাঁকে হত্যা করেনি। এখানে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট ও পরিষ্কার। সূরা নিসার এ আয়াত পরিষ্কার করেই বলেছে যে, তাঁকে হত্যা করা হয়নি। আমি যদি এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করি এবং আমাদের প্যাস্টর যা যা বলেছেন তার উত্তরে যদি দু’চার কথা না বলি বা তার যুক্তি যদি খণ্ডন না করি-তাহলে আজকের বিতর্ক অনুষ্ঠান ড্র হয়ে যাবে। অর্থাৎ আলোচনার ফলাফল অমীমাংসিত থেকে যাবে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী যিশুখ্রিষ্টকে আসলে কখনোই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়নি।
এরপর আমি বলতে চাই যে, আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি, খ্রিষ্টানদের বাইবেল ঈশ্বরের বাণী নয়। বড় জোড় এতটুকু বিশ্বাস করতে পারি যে, বাইবেলে এমন কিছু কথা থাকতে পারে যেটুকুকে আমরা ঈশ্বরের বাণী হিসেবে ধরে নিতে পারি। তাছাড়া আপনারা যখন বাইবেল পড়বেন তখন লক্ষ্য করবেন যে, উহাতে অবাস্তব গল্প, অশ্লীল কথাবার্তা বিদ্যমান আছে। কোনটির ভাষা এতই নোংরা যে, কেউ যদি আমাকে হাজার টাকাও দেয় তবুও আমি সেসব কথা মুখে উচ্চারণ করতে পারব না। বাইবেলে এ ধরনের অশ্লীল কথা আছে। এছাড়া বাইবেলে পরস্পর বিরোধী কথাবার্তাও রয়েছে। যদিও আমি বিশ্বাস করি না যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাণী। তারপরও আমি বাইবেল দিয়েই প্রমাণ করতে চাই যে, যিশুখ্রিষ্ট আসলে কখনোই ক্রুশবিদ্ধ হননি। কারণ প্যাস্টর রুক্নি আর এখানে উপস্থিত খ্রিস্টানরা মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাণী। সুতরাং আমি তাদের ধর্মগ্রন্থ দিয়েই প্রমাণ করব যে, যিশুখ্রিষ্ট কখনোই ক্রুশবিদ্ধ হননি। এছাড়া পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১১১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“আর তারা (ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা) বলে যে, ইহুদী ও খ্রিষ্টান ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
ইতোপূর্বে প্যাস্টরও বললেন, যত ভাল কাজই করেন আপনি পাপমুক্ত হতে পারবেন না। কোন কাজ হবে না। যতই যাকাত দেন, হজ্ব করেন, নামাজ পড়েন আর যতই কপালে দাগ পড়ুক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। যদি আপনি ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান না হন। তবে এ আয়াতের শেষে আল্লাহ এটাও বলেছেন–
“এটা তাদের মিথ্যা আশা। আপনি তাদের বলুন! তোমরা প্রমাণ পেশ কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
আল্লাহ মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাদেরকে প্রমাণ পেশ করতে বল। যদি আমি কোরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলি যে, কোরআন আল্লাহর বাণী সেজন্য একইভাবে তাদেরকেও বলব যে– অর্থাৎ তোমাদের প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। এখানে খ্রিষ্টানরা প্রমাণ হিসেবে দেয় এ বাইবেলকে। এটা তাদের বুরহান বা সুস্পষ্ট দলীল। খ্রিষ্টানরা এমনও বলে যে, আমার বাইবেল এটা বলেছে। আমার বাইবেল ওটা বলেছে। বাইবেলে অমুক কথা আছে, তমুক কথা আছে। আসুন তাহলে এবার দেখি। বাইবেলে আসলে কী বলা হয়েছে?
আপনারা হয়ত জানেন যে, পবিত্র বাইবেল পৃথিবীর দুই হাজারেরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তাহলে এবার আসুন দেখি, বাইবেলের বক্তব্য অনুসারেই যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে কিনা? আর এ বাইবেল থেকে আমি যে উপসংহারেই আসি না কেন ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি যে তেমনই হবে এমনটা ভাবা কিন্তু ঠিক হবে না। আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বাইবেলের উপসংহার আর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এক নাও হতে পারে।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিটা আমি পরিষ্কার করে বলেছি যে, পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাঁকে ক্রুশবিদ্ধও করেনি।”
এটা অত্যন্ত পরিষ্কার ঘোষণা। এখন আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়। “Was Christ Really Crusified?” এখন এ ইংরেজি শব্দ Crusify-এর অর্থ কি? Oxford Dictionary অনুযায়ী ‘ক্রুশিফাই’ অর্থ কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। একটা ক্রসের সাথে তাকে বেঁধে রেখে। আর ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী ‘ক্রুশিফাই’ অর্থ কাউকে ক্রসের সাথে পেরেক ঠুকে অথবা বেঁধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। এক কথায় কাউকে যদি ক্রুশিফাই করা হয় তাহলে সে তাহলে সেই মারা যাবে। যদি সে ক্রুশে মারা না যায় তাহলে সে ক্রুশিফায়েও হয়নি বলে ধরে নিতে হবে। এখন ‘রিজারেকশন’ শব্দটার অর্থ কি? Oxford Dictionary অনুযায়ী এর অর্থ কোন কাজ বা ঘটনা যেখানে মৃত্যু লোক জীবিত হয়। বড় হাতে R দিয়ে লেখা। ‘রিজারেকশন’ শব্দের অর্থ খ্রিস্ট মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন। আর ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী ‘রিজারেকশন’ অর্থ যে ঘটনায় মৃত মানুষ জীবিত হয়। কিন্তু বড় হাতের R দিয়ে লেখা ‘রিজারেকশন’ শব্দের অর্থ যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু আর সমাধির পরে তাঁর পুনরায় জীবিত হওয়ার ঘটনা। এক কথায়, যিশুর পুনরুত্থান হয়ে গেলে তাঁকে মারা যেতে হবে। যদি মারা না যান তিনি পুনরুত্থিত হবেন না। আশাকরি আপনারা সবাই এ সংজ্ঞাগুলো ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন।
‘গসপেল অব ম্যাথিউ এর ১৯ নং অধ্যায়ের ১৬ এবং ১৭ নং অনুচ্ছেদে যিশুখ্রিষ্টের নিজের কথার উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে যে, একজন মানুষ পাপমুক্ত হতে পারে যদি সে ঈশ্বরের আইন ও আদেশ পালন করে। তবে সেন্ট পল এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ আইন ও আদেশকে ঠুকে দিয়েছেন ক্রসের সাথে XXX। আপনারা প্যাস্টরকেই বলতে শুনেছেন XX। তিনিও এ আইন ও আদেশকে গেঁথে দিয়েছেন ক্রসের সাথে। আর তিনি কোলোশিয়ানসের ২ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত পলের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, পাপমুক্তি পাওয়ার একটাই উপায় আর তা হচ্ছে, যদি আমরা যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস করি। একই সাথে তিনি নিউটেস্টামেন্টের ফাস্ট কোরিস্থিয়ান্স ১৫ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আমি এ রেফারেন্সগুলো এজন্য বলি যে, আপনারা যাতে না ভাবেন যে, আমি এগুলো মনগড়া বা বানিয়ে বলছি। অথবা যদি আমি এভাবে বলি যে, বাইবেলে একথা আছে। নিউ টেস্টামেন্টে একথা আছে। তাহলে হাজার পৃষ্ঠার বিশ্বকোষ তথা বাইবেলে কোথায় খুঁজে তা পাবেন? সুতরাং আপনাদের সুবিধার জন্যই আমি রেফারেন্স দিয়ে থাকি।
সেন্ট পলের কথা অনুযায়ী ফাস্ট কোরিন্থিয়ানস-এর ১৫ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কে বলা আছে। আর যদি খ্রিষ্ট মৃত থেকে জীবিত না হয়ে থাকেন তাহলে আমার ধর্মপ্রচার মূল্যহীন আর তোমাদের বিশ্বাসও মূল্যহীন। প্যাস্টর রুক্নিও বললেন, যে যতই ভাল কাজ করেন, যতই দান করেন, যদি পাপের বোঝা নিয়ে যিশুর মৃত্যুকে না মানেন তাহলে এগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়বে। আর একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যে, খ্রিস্টান মিশনারীগণ প্রায়ই বলে থাকেন যে, আইজায়া’র ৬৪ নং অধ্যায়ের ৬ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, আমাদের সব ন্যায়নিষ্ঠা, আমাদের সব ভালো কাজ যেন একটা নোংরা বা ছেড়া কাপড়। যদি বিশ্বাস না করি যে যিশুখ্রিষ্ট মানুষের পাপের জন্য ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাহলে সব ভালো কাজ একটা নোংরা ছেড়া কাপড় সদৃশ।
আর প্যাস্টর রুক্নির কথা অনুযায়ী যা তিনি বক্তৃতার সময় বলেছেন, যদি কোন ক্রস না থাকে এবং ক্রুশবিদ্ধের ঘটনা না থাকে তাহলে বাইবেলের দাম দুই পয়সাও থাকবে না। আর তিনি বলেছেন, ক্রুশফিশান না থাকলে খ্রিষ্টান ধর্মও থাকবে না। আমিও অবশ্য এ ব্যাপারে একমত পোষণ করি। প্যাস্টর রুক্নি বললেন, তিনি ইন্ডিয়ায় এসেছিলেন এবং এখানে তিনি দুই যুগ ধরে আছেন। আর ইন্ডিয়ায় আসার পরেই তিনি সত্যিকার খ্রিষ্টান ধর্মের অর্থটা বুঝতে পেরেছেন। আগে সাধারণ খ্রিষ্টান ছিলেন। তবে তিনি একজন ধার্মিক খ্রিষ্টান হয়েছেন এখানকার মুসলমানদের দেখে। আমিও বলি যে, আজকের দিনে পূর্বে মাত্র একজন আরব খ্রিষ্টানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। প্যাস্টর রুক্নির আগে। তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল জেদ্দায়।
তিনি সিরিয়ার লোক। আর আমার বক্তৃতা শোনার পর আল্লাহর রহমতে তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ। আর এখন আমার জীবনে দ্বিতীয়বারের মত কোন আরব খ্রিষ্টানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তাই আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যাতে তিনি তাকেও হেদায়েত দান করেন। আল্লাহ সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি ভারতীয়দের নিকট থেকে খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষা পেয়েছেন। আশা করি, তিনি আবার মূল বিশ্বাস তথা ইসলামে ফিরে যাবেন। কারণ প্রত্যেক মানুষ এ ধর্ম বা বিশ্বাস নিয়েই জন্মায়। এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের পর তিনি মূল বিশ্বাসে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আশা করি এ অনুষ্ঠানের পর তিনি বুঝতে পারবেন যে, কোন ক্রুশিফিক্সন নেই, কোন ক্রস নেই এবং খ্রিস্টান ধর্মও নেই ইনশাআল্লাহ। আমিও সেটা করার চেষ্টা করব- ইনশাআল্লাহ।
আসুন দেখি সেন্টপল পুনরুত্থান সম্পর্কে কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, যিশুর পুনরুত্থান না হলে আমাদের বিশ্বাস মূল্যহীন, আমাদের শেখানো মূল্যহীন। ফার্স্ট কোরেনথিয়ানস ১৫ অধ্যায়ের ৪২ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদে সেন্ট পল বলেছেন যে, একইভাবে মানুষ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবে। সে মারা গিয়েছিল কলুষিত হয়ে। আর পুনরুত্থিত হবে মর্যাদার সাথে। সে মারা গিয়েছিল দুর্বল হয়ে। আর পুনরুত্থিত হবে শক্তির সাথে। সে মারা গিয়েছিল প্রাকৃতিকভাবে। আর পুনরুত্থিত হবে আধ্যাত্মিকভাবে। একটা প্রাকৃতিক শরীর আর অন্যটা আধ্যাত্মিক শরীর। তারা হলো আত্মা। আর একই কথা বলেছেন তার প্রভু যিশুখ্রিষ্ট। যেমন- গসপেল অব ল্যুকের ২০ নং অধ্যায়ের ২৭ থেকে ৩৬ অনুচ্ছেদে ঐ মহিলার গল্পটা বলা হয়েছে যার সাতজন স্বামী ছিল। আর ইহুদীদের রীতি ছিল যে, যদি কোন লোক বিয়ে করে তারপর মারা যায় আর যদি সন্তান না থাকে তখন তার পরের ভাই ঐ বিধবাকে বিয়ে করবে যাতে করে তাদের বংশ রক্ষা করতে পারে। যদি সেই ভাইও মারা যায় আর সেখানে সন্তান না হয় তারপরের ভাই ঐ মহিলাকে বিয়ে করবে। আর এভাবেই চলতে থাকবে। এভাবে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে, ঐ মহিলা একে একে সাত ভাইকেই বিয়ে করেছে। সব ভাই তাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে। অর্থাৎ একজন মহিলা সব ভাইয়েরই স্ত্রী হয়েছিল। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এটা ছিল ইহুদীদের রীতি।
অতঃপর সেই মহিলা মারা গেল। তখন ইহুদীরা যিশুখ্রিস্টকে প্রশ্ন করেছিল যে, পুনরুত্থান হলে ঐ মহিলা কোন ভাইয়ের স্ত্রী হবে? কেননা পুনরুত্থান হলে এই সাত ভাইয়ের প্রত্যেকেই পুনরুত্থিত হবে এবং ঐ মহিলাও পুনরুত্থিত হবে। আর ঐ অবস্থায় সে কোন ভাইয়ের স্ত্রী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে যিশুখ্রিষ্ট যা বলেছিলেন তা গসপেল অব ল্যুক ২০ নং অধ্যায়ের ৩৫ ও ৩৬ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন- সেখানে বলেছেন যে, পুনরুত্থিত শরীর বিয়ে করবে না তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না। ৩৬ নং অনুচ্ছেদ বলছে যে, তারা কখনো মারা যাবে না। তারা তখন দেবদূতের সমপর্যায়ের। তার মানে হচ্ছে তারা তখন দেবদূতের মতো। পুনরুত্থিত শরীর আসলে আধ্যাত্মিক শরীর। একথা কে বলেছেন? বলেছেন, যিশু খ্রিষ্ট। একই কথা সেন্ট পল ফাস্ট কোরিনথিয়ানস ১৫ নং অধ্যায়ের ৪২ থেকে ৪৪ নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলেছেন।
এছাড়া আপনারা গসপেলগুলোতে এমন একটি অনুচ্ছেদও পাবেন না যেটা বলেছে যে, যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি বাইবেলে দেখবেন যে, ক্রুসিফিক্সিনের গল্পে ঐ ঘটনার পরে যিশুর শিষ্যরা সবাই একটা ঘরে ছিল। অতঃপর যিশুখ্রিস্ট সেখানে আসলেন। এটা আছে গসপেল অব ল্যুকের ২৪ নং অধ্যায়ের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে। তাতে যিশুখ্রিস্ট শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বললেন, শালোম। এটা হিব্রু ভাষার শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে- তোমরা শান্তিতে থাক। এরপরের ৩৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যিশুর শিষ্যরা তখন খুব ভয় পেল। আর ভাবল যে, এটা যিশুর আত্মা। এখন আমি যদি আপনাদের একটি প্রশ্ন করি যে, শিষ্যরা কেন এভাবে ভাবল যে, যিশুখ্রিষ্ট একটা আত্মা। তাঁকে কি আত্মার মত দেখাচ্ছিল। আমি এ একই প্রশ্নটা অনেক খ্রিষ্টানকে করেছিলাম। তারা সবাই বলেছে, না। আর এ জবাবটা আমার নিকটও সঠিক বলেই মনে হয়েছে। কারণ, যিশুখ্রিস্টকে ঐসময় কোনভাবেই আত্মার মত দেখাচ্ছিল না, যখন যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফিক্সনের পরে আগমন করেছিলেন। তাহলে শিষ্যরা ভাবল কেন যে, তিনি আত্মা? কারণ হলো, এ ঘটনার পূর্বে তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল তাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছে। তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল যে, তাকে প্রেতাত্মারা নিয়ে গেছে এবং তিনি ইতোপূর্বে মারা গিয়েছেন। তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল যে, মারা যাওয়ার পর তাকে তিন দিন ধরে সমাধিতে রাখা হয়েছিল। তারা লোকজনের কথা শুনেছিল। কারণটা কি আপনারা জানেন? কারণ হচ্ছে, এগুলো কেউ চোখে দেখেননি?
মার্কের কথা অনুযায়ী গসপেল অব ল্যুকের ১৪ নং অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ বলেছে যে, যিশুর সব শিষ্য তাকে ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। আর এটা ছিল যিশুখ্রিস্টের জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্ত, ঐসময় তার শিষ্যদের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। এ প্রয়োজনের পরিমাণ ১০০% ছিল। গসপেল অব মার্কের ১৪ অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা যিশুখ্রিষ্টকে ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। একথা ডা. জাকির নায়েকের নিজস্ব উক্তি নয়। এটা হচ্ছে গসপেল অব মার্কের ১৪ অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ। তারা সবাই পালিয়ে গিয়েছিল আর লোকের মুখে শুনেছিল, সেজন্য তারা মনে করেছিল অথবা ভেবেছিল যে, যিশু একজন আত্মা। যিশুখ্রিষ্ট তখন তাদেরকে পরিষ্কার করে যা বলেছিলেন তা গসপেল অব ল্যুক এর ২৪ অধ্যায়ের ৩৯ ও ৪০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।
যিশু শিষ্যদেরকে বলেছেন যে, তোমরা আমার হাত পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। আমাকে স্পর্শ করে দেখ। আত্মার রক্তমাংসের শরীর থাকে না। আমাকে যেভাবে এখানে দেখছ। তিনি তাদেরকে নিজের হাত আর পা দেখালেন। তোমরা আমার হাত আর পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করছ না কেন? এটাতো আমি নিজেই। আমি তোমাদের প্রভু এবং শিক্ষক যিশুখ্রিষ্ট। তোমরা ভয় পাচ্ছ কেন? আমাকে তোমরা স্পর্শ করে দেখ। আমার হাত আর পা দেখ। আত্মায় রক্তমাংসের শরীর থাকে না। এভাবে তিনি হাত আর পা দেখিয়ে কি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন? তিনি একথা প্রমাণ করতে চাননি যে, তিনি আত্মা; বরং তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তিনি আসলে কোন আত্মা নন। তিনি পুনরুত্থিত হননি। এরপরের অনুচ্ছেদ গসপেলে অব ল্যুকের ২৪ নং অধ্যায়ের ৪১ থেকে ৪২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, শিষ্যরা এটা শুনে খুবই খুশি হলো। তারা ভেবেছিল যে, যিশু মারা গেছেন। যখন দেখল তিনি জীবিত তখন খুব খুশি, বেঁচে আছেন রক্তমাংসের শরীর নিয়ে এবং তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা খুশি হল।
যিশুখ্রিস্ট তখন শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের এখানে রান্না করা মাংস আছে? শিষ্যরা তাকে এক টুকরা মাছ আর মধু দিলেন। আর যিশুখ্রিস্টই তাদের সামনে ঐ খাবারগুলো খেলেন। এর দ্বারা তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি কি পুনরুত্থিত? তিনি কি আত্মা? নিশ্চয়ই না; বরং তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি আসলে রক্তমাংসের মানুষ। আর তাই খাবারগুলো তাদের সামনেই চিবিয়ে খেলেন। তিনি ঝলসানো মাছ আর মধু খেলেন, তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি পুনরুত্থিত হননি। তিনি কোন আত্মা নন; বরং তিনি রক্তমাংস দিয়ে তৈরী একজন মানুষ। পুনরুত্থান না থাকলে ক্রুসিফিক্সন না থাকলে, খ্রিস্টান ধর্মও থাকবে না।
আপনাদের হয়ত মেরি ম্যাগডালিনের সেই গল্পটা মনে আছে। যখন তিনি তৃতীয় দিন যিশুখ্রিস্টের সমাধিতে গেলেন। এ গল্পটা গসপেল অব জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে। এছাড়াও গসপেল অব মার্কের ১৬ নং অধ্যায়ের ২নং অনুচ্ছেদে আছে যে, সেটা ছিল সপ্তাহের প্রথম দিন। অর্থাৎ দিনটা ছিল রোববার। ইহুদীদের সপ্তাহের দিন হলো শনিবার। সুতরাং সপ্তাহের প্রথম দিন হলো রোববার। তাহলে সপ্তাহের সেই প্রথম দিনে ম্যারি ম্যাগডালিন সমাধির কাছে গেলেন। এখন মেরি ম্যাগডালিন কেন তৃতীয় দিন সমাধিতে যাবেন? যেহেতু তাদের মতে, যিশুখ্রিষ্ট আগেই মারা গেছেন তাহলে সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন কি? এর উত্তরটা দেয়া আছে ১ নং অনুচ্ছেদে।
গসপেল অব মার্কের ১নং অনুচ্ছেদে আছে যে, মেরি ম্যাগডালিন যিশুখ্রিষ্টকে ম্যাসাজ করতে গিয়েছিলেন। এখানে ‘অ্যানয়েন্ট’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজি ‘অ্যানয়েন্ট’ শব্দটার হিব্রু মূল শব্দ হলো ‘মাসাহা’।‘ মাসাহা’ শব্দের অর্থ ম্যাসাজ করা। মালিশ করা। তেল মাখানো। এর শব্দটা থেকে আরবি ভাষার শব্দটাও এসেছে ‘মসীহ’। আর ‘মসীহ’ শব্দের হিব্রু অর্থ হলো ‘মেসায়াহ’। ‘মেসায়াহ’ অর্থ হচ্ছে যাকে তেল মাখানো হয় বা যাকে মালিশ করা হয়। এটাকে যদি গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করেন সেটা হবে ‘ক্রোসটোস’। এখান থেকে ইংরেজি শব্দটা এসেছে ‘ক্রাইস্ট’। অর্থাৎ যাকে মালিশ করা হয়।
এখন আমি যদি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি যে, কেউ মারা যাওয়ার তিনদিন পরে কি তার মৃতদেহ ম্যাসাজ করা হয়? এর উত্তর হবে, না। মুসলিমরা আমরা কি তিন দিন পরে মৃতদেহ ম্যাসাজ করি? এর উত্তরটা হবে, না। তাহলে যিশুখ্রিষ্ট মারা যাওয়ার তিন দিন পরে মেরী ম্যাগডালিন কেন সেই সমাধিতে যাবেন। কারণটা জানেন কি? কারণ মেরি ম্যাগডালিন এবং জোসেফ অব অ্যারামেথিয়া আর নিকোডিমাস তারা যিশুর মৃত দেহকে গোসল করিয়েছিলেন? আর যখন যিশুখ্রিস্টের মৃতদেহকে সেই ক্রুস থেকে নামানো হলো মেরী হয়ত যিশুর শরীরে প্রাণের চিহ্ন দেখেছিলেন? সেখানে মেরী নিশ্চয়ই এভাবে বলত না যে, যিশু বেঁচে আছেন। আর তাহলে যিশুখ্রিস্টকে তখন মেরে ফেলা হত? যেহেতু মেরী যিশুর শরীরে প্রাণের চিহ্ন দেখেছেন ফলে তৃতীয় দিনে তিনি আবার ফিরে আসল। আর সে আশা করেছিল, জীবিত যিশুখ্রিস্ট মৃত যিশুখ্রিস্ট নয়। এ কথার বিবরণ আছে গসপেল আর জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১নং অনুচ্ছেদে।
এছাড়াও গসপেল অব মার্কের ১৬ নং অধ্যায়ের ৪নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, মেরী দেখল পাথরটা সরানো হয়েছে। যে কাপড়টা দিয়ে যিশুখ্রিষ্টকে জড়ানো হয়েছিল সেটা খোলা অবস্থায় একপাশে পড়ে আছে। এখন প্রশ্ন হলো পাথরটা সরানোর প্রয়োজন কি? আর মৃতদেহ জড়ানোর কাপড় সেটাও বা একপাশে সরানোর প্রয়োজন কি? যদি যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত হতেন আধ্যাত্মিক শরীর হিসেবে তাহলে সেই আত্মার বের হওয়ার জন্য সেই সমাধি কক্ষের পাথরটা সরানোর কোন প্রয়োজন ছিল কি? কোন আত্মাকে তো দরজা খুলে বের হতে হয় না। আবার দরজা খুলে প্রবেশও করতে হয় না? এজন্য পাথর সরানোর দরকার নেই। তাহলে তারপরও সরানো ছিল কেন? আত্মা যদি চলে যেতে চায় তাহলে কি তার শরীরে জড়ানো কাপড়টা খুলে দিতে হবে? আমার মনে হয় কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু রক্তমাংসের শরীর হলে সমাধি কক্ষের মুখে যে পাথরটা আছে সেটা সরাতে হবে। শরীরে জড়ানো কাপড়টা খুলে ফেলতে হবে। এসব কিছু এটাই প্রমাণ করে যে, যিশুখ্রিস্ট সমাধিকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় একজন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন।
আর সমাধিটার মালিক ছিল যিশুখ্রিস্টের একজন শিষ্য জোসেফ অব আরামাথিয়া- যিনি ছিলেন খুব ধনী ও ক্ষমতাবান ইহুদী। সেই লোক এ সমাধিকক্ষ বানিয়েছিলেন তার নিজের ভবিষ্যতের জন্য। সেখানেই যিশুখ্রিস্টকে রাখা হয়েছিল। সমাধিটা আসলে একটা ঘরের মত। আর জিম বিশপের কথা অনুযায়ী বাইবেল একথা বলেনি। জিম বিশপ বলেছেন, সমাধিকক্ষটা আয়তনে বেশ বড় ছিল। পাঁচ ফুট চওড়া। উচ্চতা ছিল সাতফুট। আর লম্বায় ছিল পনেরো ফুট। কারো জন্য এত বড় সমাধিকক্ষের প্রয়োজন কী? কারণ ঐ লোকটাকে প্রয়োজন হলে সাহায্য করা যাবে। বোম্বেতে আপনারা ছোট ছোট রুম দেখবেন। খুব বেশি হলে ৭৫ বর্গফুট। বোম্বেতে ৭৫ বর্গফুটের একটা ঘর বেশ বড়। সেই ঘরে পাঁচ ছয় জন লোক থাকতে পারে। বোম্বে বর্তমানে জায়গার দাম খুব বেশি। ৭৫ বর্গফুট, সেখানে দেখবেন চার পাঁচ জন লোক থাকে। তাহলে সেই ঘরে প্রয়োজনে সাহায্য করা যাবে? এখন আধ্যাত্মিক শরীরকে সাহায্য করার প্রয়োজন কী? কারণ আত্মার তো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না; বরং তারা এসেছিল একজন জীবিত মানুষকে সাহায্য করার জন্য।
বাইবেল পড়লে দেখবেন গসপেল অব জনের ২০নং অধ্যায়ের ১৫ নং অনুচ্ছেদে যিশু মেরী ম্যাগডালিনের সাথে কথা বলেছেন। আর তখন তারা উভয়ই পৃথিবীতে থেকে, মেরীর পাশে থেকে, কিন্তু স্বর্গে থেকে না। যিশু দেখলেন যে, মেরী কাঁদছেন। যিশু কাছে এসে বললেন, মহিলা তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কাকে খুঁজছ? যদিও তিনি ভালভাবেই জানতেন যে, মেরী কাদছে কেন? তারপরও তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। মেরী তখন যিশুকে মনে করলেন সেখানকার মালি। আর তাকে বলল, আপনি উনাকে নিয়ে কোথায় রেখেছেন? আমি তাকে নিয়ে যেতে এসেছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, মেরী ম্যাগডালিন কেন ভাবল যে, যিশুখ্রিস্ট হলেন সেখানকার বাগানের মালি? আপনাদের একটা প্রশ্ন করি, পুনরুত্থিত মানুষকে কি মালির মতো দেখায়? আপনারা কি বলেন? না।
তাহলে মেরী কেন মনে করলেন যে, যিশুখ্রিস্ট সেখানকার বাগানের মালি? এর উত্তরটা হলো আসলে যিশু তখন মালির ছদ্মবেশে ছিলেন। একজন আত্মা কেন মালির ছদ্মবেশ নিবে? তার কারণ- তিনি ইহুদীদের ভয় পাচ্ছিলেন। আত্মা কখনই কাউকে ভয় পাবে না। কারণ, বুক অব হিব্রুর ৯নং অধ্যায়ের ২৭ নং অনুচ্ছেদে আছে, মানুষ একবারই মারা যায়। তারপর আসবে শেষ বিচারের দিন। গসপেল অব ল্যুকের ২০নং অধ্যায়ের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে যিশু নিজেই বলেছেন, মানুষ একবার মরার পর আর মরবে না। আর যদি আত্মা হয় যান। তাহলে আর কাউকে ভয় পাবেন না। কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। আপনি দ্বিতীয়বার মরবেন না।
যিশু আত্মা হলে ছদ্মবেশ নিয়ে থাকবেন কেন? তিনি ভয় পাবেন কেন? তিনি কেন লুকিয়ে থাকবেন? কেন তিনি ইহুদীদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকবেন? এটাই প্রমাণ করে, তিনি পুনরুত্থিত হননি; বরং তিনি জীবিতই ছিলেন। যিশু তখন মেরীকে বলেছিলেন, মেরী। আর এ একটা শব্দেই মেরী ম্যাগডালিন তার প্রভু যিশুকে চিনে ফেলল। যেমন আমরা সবাই আমাদের প্রিয়জনকে ডাকার সময় বিশেষ ভঙ্গীতে ডাকি। আর সেই একই সুর এবং একই ভঙ্গিমায় প্রিয়জনকে ডাকলে তারা তখন খুব সহজেই বুঝে ফেলে যে, কে তাকে ডাকছে? তাই মেরীও সাথে সাথে বুঝে ফেলল যে, কে তাকে ডাকছে? মেরীও সাথে সাথে বুঝে ফেলল যে, এ মালি আসলে যিশুখ্রিষ্ট। তখন মেরী যিশুর দিকে ছুটে গেলেন।
গসপেল অব জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১৫, ১৬ ও ১৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, যিশুখ্রিস্ট মেরীকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। কেন? কোন কারণে যিশু নিষেধ করলেন? যিশুর শরীরে কি বিদ্যুৎ ছিল যে, কেউ স্পর্শ করলে বিদ্যুতের শক লাগবে? যিশুর শরীরে কি ডিনামাইট বাধা যে, কেউ স্পর্শ করলে তা ফেটে যাবে? তাহলে কেন তিনি তা স্পর্শ করতে মানা করলেন? এর কারণ একটাই। আর তা হচ্ছে তিনি একজন রক্তমাংসের মানুষ। একটু চিন্তা করুন, ক্রুশবিদ্ধ থাকার সময় তিনি যে শারীরিক আর মানসিক কষ্ট পেয়েছেন তার ধকল সামলে ওঠতে সময়ের প্রয়োজন ছিল। যিশু ক্রুশবিদ্ধ থাকার সময় অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন। এখন তার শরীর ক্ষত-বিক্ষত। আর তাই তিনি বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। তারপর আরো যেসব কথা বলেছিলেন তা গসপেল অব জন-এর ২০ নং অধ্যায়ের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, “আমি এখনো আমার পিতার কাছে ফিরে যাইনি।” এ কথার অর্থ কি? এ কথার অর্থ হচ্ছে তখনো তিনি মারা যান নি। যিশুখ্রিস্ট মেরী ম্যাগডালিনকে একেবারে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি তখনো পুনরুত্থিত হননি। আর একথাই প্রমাণ করে যে, তিনি তখনো জীবিত ছিলেন।
বাইবেলে আরো আছে যে, যিশুখ্রিস্ট বেঁচে আছেন। আপনারা গসপেল অব মার্ক ১৬ নং অধ্যায়ের ১১ নং অনুচ্ছেদ দেখতে পারেন। আর যিশু যে বেঁচে আছেন তা তাদেরকে মেরী ম্যাগডালিন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করেনি। ইহুদীদের আর একটা বদ অভ্যাস ছিল যে, তারা অবান্তর প্রশ্ন করতে অভ্যস্ত ছিল। নবীদের ঝামেলায় ফেলত।
পবিত্র কোরআন এ কথা বলেছে, বাইবেলেও একথা আছে। তারা মূসাকেও অবান্তর প্রশ্ন করেছিল। তাঁকে ঝামেলায় ফেলেছিল। মূসাকে অপছন্দ করেছিল। যিশুর সাথেও তারা একই কাজ করেছিল। এছাড়াও গসপেল অব ম্যাথিউর ১২নং অধ্যায়ের ৩৮নং অনুচ্ছেদে আছে যে, ইহুদীরা যিশুখ্রিস্টের কাছে এসে বলল প্রভু ব্যারাই- যার অর্থ হচ্ছে, প্রভু আপনি আমাদের একটা নিদর্শন দেখান। এখানে নিদর্শন মানে অলৌকিক কিছু। যিশুখ্রিষ্ট যেসব ভালো কাজ করেছিলেন সেগুলো দেখেও ইহুদীরা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। তারা অলৌকিক কোন কাজের নিদর্শন দেখতে চাইল। যেমন ধরুন, হয়ত আকাশে উড়ে বেড়ানো; পানির ওপর হেটে বেড়ানো; জ্বলন্ত কয়লার ওপর হাঁটা ইত্যাদি। তারা ইত্যাদি ধরনের নিদর্শন বা সাইন দেখতে চাইল। এখানে সাইন মানে ল্যাম্পপেটের সাইন নয়। রাস্তায় আপনারা বিভিন্ন ধরনের সাইন দেখেন। তেমন কোন সাইন নয়। এখানে সাইন মানে অলৌকিক নিদর্শন।
ইহুদীদের প্রশ্নের উত্তরে যিশুখ্রিস্ট কী বলেছিলেন? তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন? এসবের উত্তর সন্নিবেশিত আছে গসপেল অব ম্যাথিউর ১২ নং অধ্যায়ের ২৯ ও ৪০ নং অনুচ্ছেদে। সেখানে আছে যে, তোমরা অপরাধী আর ব্যাভিচারী জাতি; তোমরা নিদর্শন দেখতে চাও কি? অলৌকিক কিছু দেখতে চাও কি? কোন নিদর্শন দেখানো হবে না শুধু ইউনুসের নিদর্শন বাদে। যেভাবে ইউনুস তিনদিন আর তিন রাত ধরে তিমি মাছের পেটে ছিলেন সেই একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন আর তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবেন। যিশুখ্রিষ্ট তাদেরকে একথা বলেননি যে, তোমরা সেই অন্ধলোককে দেখ যাকে আমি সুস্থ করে তুলেছি। তোমরা সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করো যে আমাকে স্পর্শ করেই সুস্থ হয়েছিল। দুই হাজার শূকর মেরে প্রেতাত্মার আচ্ছন্ন একজনকে সারানোর কথাও বলেননি। পাঁচ হাজার লোককে একটা মাছ খাইয়েছিলেন অথবা তিনি হাজার লোককে একটি রুটি খাইয়েছিলেনএকথাও বলেননি; বরং তিনি বললেন, কোনো নিদর্শনই দেখানো হবে না ইউনুসের নিদর্শন বাদে। যিশুখ্রিষ্ট অলৌকিক কাজ সম্পর্কে এক কথায় বলে দিলেন। আর সেটা হচ্ছে ইউনুসের নিদর্শন। আর কোন লোক যদি ইউনুসের নিদর্শনটা জানতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই বাইবেল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। আর এজন্য তাকে ডক্টর অব ডিভিনিটিও অর্জন করতে হবে না। কারণ এগুলো আমরা স্কুল থেকেই জানি।
আর সব দেশেই এমনকি ভারতেও আপনি একজন খ্রিস্টান কিংবা মুসলিম কিংবা হিন্দু হিসেবে কোন না কোনভাবে হয়তো কমিক্সে অথবা উপদেশমূলক গল্পে ইউনুসের নিদর্শন সম্পর্কে পড়েছেন। তিমির পেটে ইউনুস এ গল্প সবাই জানে। তবে আপনি যদি পবিত্র বাইবেলের ইউনুসের নিদর্শনটা পড়তে চান তাহলে দেখবেন এ বিশাল বইতে ইউনুসের নিদর্শন দুই পৃষ্ঠারও কম। এমনকি দেড় পৃষ্ঠার চাইতেও কম। আপনাদের জন্য এ পৃষ্ঠাটার একটি কপি দেখাচ্ছি। এ বইটির দেড় পৃষ্ঠার চেয়েও কম। মাত্র চারটা অনুচ্ছেদ। আর এ হাজার পৃষ্ঠার বিশ্বকোষে এটা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে আপনারা সবাই গল্পটা মোটামুটি জানেন যে, মহান ঈশ্বর তাঁর নবী ইউনুস আলাইহিস সালাম কে বললেন, নিনেভ শহরের মানুষদের নিকট মহান ঈশ্বরের বাণী প্রচার কর।
কিন্তু ইউনুস বললেন, নিনেভ শহরের মানুষগুলো খুব খারাপ। ঈশ্বরের বাণী তো তারা মেনে চলবে না। আর ভাবলেন, তারা আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবে। আমার সময়টাই নষ্ট হবে। তাই তিনি চলে গেলেন। অর্থাৎ সেখান থেকে জাহাজে করে টারশিনো গেলেন। আর তখনই সাগরে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো। তখনকার দিনে নাবিকদের মধ্যে একটা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল যে, জাহাজে যাওয়ার পর সাগরে ঝড় ওঠার প্রধান কারণ হলো কেউ একজন ঈশ্বরকে অমান্য করছে। তারা তখন বের করার চেষ্টা করতো যে, এ ঘটনার জন্য দায়ী কে? তারা দায়ী লোকটিকে লটারী করে বের করত। অনুরূপভাবে, যখন লটারী করা হলো দেখা গেল ইউনুসই এখানে দায়ী।
ইউনুস আল্লাহ প্রেরিত একজন নবী ছিলেন। তাই তিনি তাদের দাবী মানলেন আর বললেন দেখ, এসব কিছুর জন্য আমিই দায়ী। মহান ঈশ্বর আমাকে নিনেভ শহরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁর আদেশ অমান্য করে এখন জোপা থেকে টারশিশে পালিয়ে যাচ্ছি। আমি অন্যায় করেছি। তোমরা আমাকে ধরে সাগরে নিক্ষেপ কর। কিন্তু তারা বলল, এ লোকটা কতই না ধার্মিক। সুতরাং আমরা তাকে কেন মেরে ফেলব? তারা জাহাজ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই করা গেল না; বরং ঝড় তখনো চলতেছিল। ইউনুস তাদেরকে বললেন, তোমরা আমাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। অবশেষে তারা রাজি হলো আর ইউনুসকে সাগরে নিক্ষেপ করল। সাগরে নিক্ষেপ করার পর ঝড়টা থেমে গেল। হয়তো এটা ছিল কাকতালীয় ঘটনা। কিছুক্ষণ পরে একটি বড়ো তিমি মাছ এসে ইউনুসকে গিলে ফেলল। সেই তিমি ইউনুস আলাইহিস সালাম-কে পেটে নিয়ে তিন দিন তিন রাত সাগরে ঘুরে বেড়াল। তারপর সাগরের পাড়ে বমি করে তাকে ফেলে দিল।
যিশুখ্রিষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে ইহুদীদের কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন যে, তোমাদের কোন নিদর্শন দেখানো হবে না শুধুমাত্র ইউনুসের নিদর্শন বাদে। আর ইউনুস নবী যেভাবে তিন দিন তিন রাত ধরে তিমি মাছের পেটে ছিলেন বুকের ভেতরে থাকবে। এখন আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি যে, ইউনুসকে সাগরে নিক্ষেপ করার সময় তিনি জীবিত না মৃত ছিলেন? উত্তর দেয়ার আগে আপনাদের বোঝার জন্য বলে দিচ্ছি যে, ইউনুস নিজ থেকেই বলেছিলেন, আমি অপরাধী, এজন্য আমিই দায়ী, আমাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। কেউ যদি তার প্রস্তাবে রাজী না হন, তখন হয়ত তার পা ভাঙবেন নতুবা ঘাড় ভেঙ্গে ফেলবেন কিংবা তার হাত মুচড়ে দিবেন। কিন্তু ইউনুস নিজ থেকেই বলেছিলেন, তাই এসব করার প্রয়োজন ছিল না; বরং তখন শুধু প্রয়োজন ছিল সাগরে নিক্ষেপ করার। সুতরাং বুঝতে বাকী রইল না যে, সাগরে নিক্ষেপ করার সময় তিনি জীবিত ছিলেন। তিমি মাছ এসে তাকে গিলে ফেলল। তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। আল্লাহর নিকট তিনি প্রার্থনা করেছিলেন তিমির পেটে অবস্থান করে। আর তখন জীবিত না থাকলে প্রার্থনা করতে পারতেন না। সুতরাং তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। অতএব এ ঘটনায় ইউনুস পুরোপুরি জীবিত ছিলেন জীবিত! জীবিত! জীবিত!!!
যখন কোন লোককে জাহাজ থেকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয় তখন তার মরে যাওয়ার কথা। যদি ঐ লোক মারা যায় তবে তা অলৌকিক হবে না; বরং যদি বেঁচে থাকেন এবং তা অলৌকিক ঘটনা। সুতরাং তিমি মাছ যখন গিলে ফেলল তখন তার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মরেননি। এটা নিঃসন্দেহে অলৌকিক। তিন দিন তিন রাতের গরমে আর অক্সিজেনের অভাবে সেই তিমি মাছের পেটে তার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মরেননি। এটাও অলৌকিক। একসাথে অনেকগুলো অলৌকিক ঘটনা। পুরো ঘটনাটাই অলৌকিক। যিশু বলেছেন, ইহুদীদের ইউনুস যেভাবে তিন দিন তিন রাত ছিলেন সেভাবে ঈশ্বরের পুত্রও তিন দিন তিন রাত থাকবে। অর্থাৎ যেভাবে ইউনুস নবী তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন। অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবে। ইউনুস জীবিত ছিলেন, কিন্তু যখন আমাদের খ্রিষ্টান ভাইদের এ প্রশ্নটা করি যে, আপনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু সমাধিকক্ষে কিভাবে ছিলেন? সবাই তখন মৃত। এখন আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি যে, ইউনুস ছিলেন জীবিত। অন্যদিকে যিশুখ্রিস্ট ছিলেন মৃত। তাহলে যিশুখ্রিস্ট কিভাবে ইউনুসের মত হলেন? অবশ্যই এরকম হলেন না। সম্পূর্ণ আলাদা।
তাহলে বুঝা গেল যে, যিশুর ভবিষ্যত বাণী এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। অথচ তিনি নিজে এ নিদর্শনের কথা বলেছেন। আরো বলেছেন যে, ইউনুসের নিদর্শন ব্যতীত অন্য কোন নিদর্শনই দেখানো হবে না। আর তার এ ভবিষ্যৎবাণীটা বাস্তবে ঘটেনি। কারণ ভবিষ্যতবাণীটা সত্য হতে গেলে যিশুখ্রিস্টের থাকা উচিত জীবিত। তিনি জীবিত ছিলেন। তা না হলে নবী যিশুখ্রিস্টকে বলতে হয় মিথ্যাবাদী, নাউযুবিল্লাহ। এটা আমরা কখনোই বলতে পারি না। যিশুখ্রিস্টকে আমরা সম্মান শ্রদ্ধা করি। তাহলে এ ভবিষ্যত বাণী সত্যি হওয়ার জন্য তাঁর জীবিত থাকা উচিত। আর তিনি সে সময় জীবিত ছিলেন- একথা আমি আগেও প্রমাণ করে দেখিয়েছি। একথা আগেও বলেছি যে, একজন লোককে ক্রুসিফাই হতে গেলে তাকে অবশ্যই সেই ক্রুশে ঝোলা অবস্থায় মারা যেতে হবে। যদি সেই লোক ক্রুসে ঝুলে মারা না যায় তাহলে সে ক্রুসিফাইড হয়নি।
এমন কিছু লোক আছে যারা বলবে যে, এ নিদর্শনের ব্যাপারটা আসলে জীবিত-মৃত নিয়ে নয়; বরং এর দ্বারা সময়ের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, তিন দিন তিন রাত ইউনুস যেভাবে তিমির পেটে ছিলেন তেমনি ঈশ্বরের পুত্র থাকবেন তিন দিন তিন রাত ধরে। তিন শব্দটা বলা হয়েছে চারবার। এখানে আসলে তিন সংখ্যাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জীবিত বা মৃতের ওপর নয়। আমি বলি তিনের মধ্যে অলৌকিকতা কোথায়? যদি বলি, দিল্লী যেতে আমার তিনদিন তিনরাত লাগে- এটা কোন অলৌকিক ব্যাপার হবে কি? তাহলে তিন সংখ্যায় অলৌকিকতা কোথায়? তিন দিন বা তিন সপ্তাহ। এটাতো অলৌকিক কোন কিছু নয়। কিন্তু তাদের বক্তব্য হচ্ছে, না এখানে সময়টাই আসল।
তাহলে আসুন, আমরা দেখি যিশু কি এভবিষ্যতবাণীটা পুরো করেছিলেন যেটা কিছু খ্রিস্টানদের মতে অলৌকিক ঘটনার মূল বিষয়। পূর্বেও বলেছি। এখনও বলছি, কোন খ্রিস্টানকে যদি জিজ্ঞাসা করি যে, পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী যিশুকে কখন ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল? খ্রিস্টানরা বলবে যে, কেন সেটাতো গুড-ফ্রাইডে ছিল। আমার প্রশ্ন শুক্রবারকে কেন গুড-ফ্রাইডে বলা হয়? তারা উত্তরে বলে, যিশু মানুষের পাপের জন্য সেদিন মারা গিয়েছিলেন। তাই শুক্রবার গুড-ফ্রাইডে।
আর বাইবেল পড়লে দেখবেন যে, যিশুখ্রিস্টের বিচার খুব তাড়াতাড়ি করা হয়েছিল। তাড়াতাড়ি করে তাঁকে ক্রুসে ঝোলানো হয়েছিল। তাড়াতাড়ি নামানো হয়েছিল। কারণটা প্যাস্টরও বলেছেন, সেই রাতে কাউকে ক্রুসে ঝুলিয়ে রাখা হতো না। এটার রেফারেন্স তিনি দেননি। এটা আছে ডিউটারোনসির ২১ অধ্যায়ের ২৩ নং অনুচ্ছেদে। সে স্থানটা অভিশপ্ত হবে। সেজন্য যিশুকে নামানো হয়েছিল। তারপর গোসল করানো হলো। আর ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অতঃপর সেই সমাধিকক্ষে তাকে রেখে দেয়া হলো। আর গসপেল অব জন ২০ অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে যে, সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সকালে দেখা গেল সমাধিতে কেউ নেই। আর এটা দেখেছিল মেরী ম্যাগডালিন। তাহলে অনুমান করা যায় যে, যিশু সেই সমাধিকক্ষে ছিলেন শুক্রবার রাতে।
এখানে আমি অনুমানের কথা বললাম কেন? কারণ বাইবেলে একথা বলা নেই যে, কোন সময় যিশু সমাধি ছেড়ে চলে গেছেন। হয়তো তিনি চলে গেছেন শুক্রবার গভীর রাতে কিংবা শনিবার সকালে। কিন্তু এ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। তাই অনুমান করে নিচ্ছি যে, যিশু রোববার সকালে বের হয়ে গেছেন। তাহলে যিশু সেই সমাধিতে ছিলেন শুক্রবার রাতে এটা অনুমান। এরপর সেই সমাধিতে ছিলেন শনিবার সকালে- এটাও অনুমান। যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন শনিবার রাতে - এটাও অনুমান। রোববার সকালে সমাধিকক্ষটা ফাঁকা। তাহলে যিশু সেখানে ছিলেন দুই রাত একদিন। কিন্তু বলা হয়েছিল তিন রাত তিন দিন। ইউনুস নবী যেভাবে তিমি মাছের পেটে ছিলেন, অনুরোপভাবে ঈশ্বরের পুত্র পৃথিবীর বুকের ভেতর থাকবে তিন দিন আর তিন রাত। অথচ যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন দুই রাত আর একদিন। এখন তিন দিন তিন রাত আর দুই রাত এক দিন কি এক? এ দুটা সময় কি এক সমান? অবশ্যই না। তাহলে তারা যে সময়ের ওপর গুরুত্ব দেয় সেটাও আসলে বাস্তবে ফলেনি। এতে ঘটনাটা দাড়াল এমন যে, যিশুখ্রিস্ট তখন জীবিত ছিলেন।
কাউকে ক্রুসিফাইড তখনই বলা হবে যখন সে ক্রুসেই মারা যায়। প্যাস্টার যখন আবার বক্তব্য রাখতে আসবেন তখন আমি তাকে কিছু প্রমাণ দেখাবো যে, যিশুকে ক্রুসিফাই করা হয়নি। তিনি পুনরুত্থিত হননি। তিনি জীবিতই ছিলেন। আর জীবিত থাকলে ক্রুসিফিক্সশন হয় না এবং পুনরুত্থানও হয় না। যিশুকে ক্রুসে ঝোলানোর পরে খুব তাড়াতাড়ি করে ৩ ঘণ্টা পরে নামানো হয়েছিল। তিন ঘণ্টায় ক্রুশে কারো মারা যাওয়া কঠিন। তাই যিশু জীবিত ছিলেন। যখন তাকে নামানো হয়েছিল ক্রুশবিদ্ধ অন্য দু’জন তখন বেঁচে ছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যিশুও বেঁচে ছিলেন এটা হচ্ছে দ্বিতীয় প্রমাণ। তৃতীয় বিষয়টা হলো, তার পা দুটি ভাঙ্গা হয়নি। মৃতের কাছে তার পায়ের কোন দাম নেই। একথা প্রমাণ করে যে, তিনি জীবিত ছিলেন। চতুর্থ বিষয়টা হলো, পাথর সরানো হয়েছিল এবং গায়ে জড়ানো কাপড়টা খোলা হয়েছিল। এতে প্রমাণ করে যে, তিনি জীবিত ছিলেন। পঞ্চমত বিষয়টা হলো, তিনি মালির ছদ্মবেশে ছিলেন। কেন? কারণ তিনি জীবিত ছিলেন। তাই ইহুদীদের কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলেন। ষষ্ঠ বিষয়টা হলো, সমাধিটা বেশ বড় ছিল। অনেক বড় রুম। মৃত একজন লোকের জন্য বড় ঘরের প্রয়োজনটা কি? তার মানে যিশু খ্রিস্ট জীবিত ছিলেন। সপ্তম বিষয়টি হলো, যখন মেরী ম্যাগডালিন যিশুখ্রিষ্টের কাছে গেল তখন যিশু তাকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। কেন? তিনি রক্ত মাংসের মানুষ। তিনি জীবিত ছিলেন। সুতরাং তার ব্যথা লাগবে। যন্ত্রণা পাবেন। এতে প্রমাণ করে তিনি জীবিত ছিলেন। যিশু তখন মেরীকে বলেছিলেন, আমি এখনও আমার পিতার নিকট ফিরে যাইনি। তার মানে তিনি জীবিত ছিলেন। নবম বিষয়টা হলো, মেরী ম্যাগডালিন তখন যিশুখ্রিস্টকে দেখে ভয় পাননি। দশম বিষয়টা হল, সেই উপরের রুমে যিশু তার হাত-পা দেখিয়েছিলেন প্রমাণ করতে যে, তিনি আত্মা নন; বরং তিনি মানুষ। এগারতম বিষয়টা হলো, শিষ্যরা যিশুকে দেখে খুশী হলো। কেন? কারণ তারা ভেবেছিল, যিশু মারা গিয়ে আত্মা হয়েছেন। তারা খুব খুশী হয়েছিল কারণ তিনি জীবিত। বারতম বিষয়টা হলো, যিশু সেখানে একটুকরা সেদ্ধ মাছ আর মধু খেলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি জীবিত ছিলেন। শিষ্যরা শুনেছিল মেরী ম্যাগডালিনের কাছে যে, তিনি জীবিত আছেন। তেরতম বিষয়টা হলো, ইউনুসের নিদর্শন। যেভাবে ইউনুস নবী তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন। একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর ভিতরে থাকবেন জীবিত অবস্থায়। সুতরাং যিশু জীবিত ছিলেন। ক্রুসিফিক্সন হননি। এমনকি পুনরুত্থানও হয় নি।
তাহলে - এক কথায় বলা যায় যে, বাইবেলের কথা অনুযায়ী যিশুকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি মারা যাননি। এখন বিষয় হলো Was Christ Realy Cruesified? তাই যদি ক্রুসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান তাহলে তিনি ক্রুসিফাইড হয়েছেন। অতএব যদি ক্রুসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা না যান তাহলে সেই ঘটনাকে আপনারা কি বলবেন? এর সমার্থক কোন শব্দ ইংরেজি ভাষায় নেই। যদি আপনারা ডিকশনারিতে এ শব্দটা খোঁজেন- তাহলে আমার কথার প্রমাণ দেখতে পাবেন। যে কাউকে ক্রুসে ঝোলানো হয়েছিল কিন্তু মারা যায়নি। এজন্য কোন শব্দই পাবেন না। তাহলে নতুন শব্দ বানাতে হবে। এখানে যে শব্দটা আমরা বলতে পারি তা হচ্ছে যিশুখ্রিষ্ট আসলে ক্রুসিফাইড হননি। তিনি ক্রুসিফিকটেড হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে শব্দটা CRUCIFIXION হবে না; বরং হবে CRUCIFICTION আর আসলেই এটা একটা ফিকশন। আমাদের নতুন শব্দ বানাতে হবে। সুতরাং একথা বলা যায় যে, যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফাইড হননি; বরং তিনি হয়েছিলেন ক্রুসি ফিকটেড। আশাকরি, আপনাদের দ্বিধা-দ্বন্দ এ বক্তব্যের মাধ্যমে দূর হবে। আর প্যাস্টরও মানবেন এবং তার মন থেকে দ্বিধা-সংশয় কেটে যাবে যে, আসলেই যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফাইড হননি। কোন ক্রুসিফিক্সন হয়নি। তাই Fixion নয় হবে Fiction। বক্তব্য শেষ করার আগে কোরআনের সূরা আল ইমরানের ৫৪ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। উহাতে সুন্দর করে বলা হয়েছে–
“আর তারা চক্রান্ত করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কৌশলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”
“আমাদের সর্বশেষ বক্তব্য হচ্ছে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের প্রতিপালন আল্লাহর জন্য।”
“হে আমার প্রভু! আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিন। আমার বিষয়টাকে সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা কাটিয়ে দিন। আমার কথার মর্ম উপলব্ধি যেন তারা করে।”
শ্রদ্ধেয় প্যাস্টর রুকনুদ্দিন অথবা তিনি যেভাবে পছন্দ করেন প্যাস্টর রুক্নি, হেনরি পিও, প্যাস্টর সাজি, এছাড়াও বোম্বের বিভিন্ন চার্চের প্যাস্টর ভাইয়েরা, শ্রদ্ধেয় গুরুজন এবং প্রিয় ভাই ও বোনেরা আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই ইসলামিক সম্ভাষণে–
“আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহ্মাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।”
অর্থঃ আল্লাহর দয়া, শান্তি এবং রহমত আপনাদের সবার উপর বর্ষিত হোক।
আজকের আলোচনা শুরু করার আগে আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, ধর্মে যিশুখ্রিস্টকে আমরা মুসলিমরা কিভাবে দেখি? ইসলাম হলো একমাত্র অখ্রিস্টান ধর্ম, যে ধর্মে যিশুখ্রিস্টকে নবী বলে বিশ্বাস করা হয়। সে আসলে মুসলিম না, যে মুসলিম যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি আল্লাহর খুব গুরুত্বপূর্ণ নবীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ রাসূলও। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি হলেন মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্ট। এটাও আমরা মানি যে, তিনি অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কোনও পুরুষের ঔরসজাত না হয়েই তিনি জন্মেছিলেন। যেটা অনেক আধুনিক খ্রিস্টানরাও বিশ্বাস করে না। মৃতকে জীবিত করেছেন। আমরা এটাও মানি যে, তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে মৃতকে জীবিত করেছেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করেছেন। এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, যদি মুসলিম ও খ্রিস্টান দু’দলই যিশুকে ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে তাহলে আপনাদের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? হ্যা! পার্থক্য আছে। পার্থক্যটা হল খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা যিশুখ্রিস্টকে মনে করে যে, তিনিই হলেন ঈশ্বর। আর তারা বলে যে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আর তিনি মানুষের পাপের জন্য মারা গিয়েছেন। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু মনে হয় আপনাদের মনে আছে, “যিশু কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন?” যেহেতু আমরা মুসলিম আর খ্রিষ্টান উভয় পক্ষই যিশুখ্রিষ্টকে মানি তাই আমি উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গিটা বলতে চাই। মুসলিম আর খ্রিষ্টানরা এ বিষয়টাকে কিভাবে মূল্যায়ন করে।
মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা যদি বলতে হয় তাহলে শুরুতেই যা বলতে হবে তা হচ্ছে মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হলো আসমানী কিতাব পবিত্র কোরআন। আজকের বক্তৃতার শুরুতেই আমি মহাপবিত্র কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করেছিলাম। পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াত এটি। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তুটা সম্পর্কে। আপনারা জানেন যে, আমাদের আজকের আলোচক প্যাস্টর রুক্নি একজন আরব খ্রিষ্টান মিশনারি। উনার মাতৃভাষা আরবি। সেজন্য আমার উদ্ধৃত আয়াতটির অনুবাদ উনাকে বলার কোন প্রয়োজন নেই। এ আয়াতের মাধ্যমেই তিনি যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন। তবে এখানে উপস্থিত বেশিরভাগ মানুষই আরবি ভাষা বোঝেন না। কারণ আরবি আমাদের মাতৃভাষা নয়। এখন আমি তাদের জন্য সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতটির অনুবাদ পেশ করছি। যেমন–
আর তারা (ইহুদীরা দম্ভ করে) বলেছে, আম্বিয়া মরিয়মের পুত্র ঈসা যিনি একজন আল্লাহর রাসূল ছিলেন তাকে হত্যা করেছি। আর তারা তাঁকে হত্যাও করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি। বরং তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। আর যারা তাঁর সম্পর্কে মতভেদ করেছিল তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিল এবং তাদের কোন জ্ঞান ছিল না। শুধু অনুমানকেই অনুসরণ করেছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করেনি।
পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটা স্পষ্ট করে বলেছে যে, যিশু খ্রিষ্টকে হত্যা করা হয়নি। সুতরাং আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে– অর্থাৎ তাকে তারা হত্যাও করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি। অর্থাৎ আর তারা নিশ্চিতভাবেই তাঁকে হত্যা করেনি। এখানে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট ও পরিষ্কার। সূরা নিসার এ আয়াত পরিষ্কার করেই বলেছে যে, তাঁকে হত্যা করা হয়নি। আমি যদি এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করি এবং আমাদের প্যাস্টর যা যা বলেছেন তার উত্তরে যদি দু’চার কথা না বলি বা তার যুক্তি যদি খণ্ডন না করি-তাহলে আজকের বিতর্ক অনুষ্ঠান ড্র হয়ে যাবে। অর্থাৎ আলোচনার ফলাফল অমীমাংসিত থেকে যাবে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী যিশুখ্রিষ্টকে আসলে কখনোই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়নি।
এরপর আমি বলতে চাই যে, আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি, খ্রিষ্টানদের বাইবেল ঈশ্বরের বাণী নয়। বড় জোড় এতটুকু বিশ্বাস করতে পারি যে, বাইবেলে এমন কিছু কথা থাকতে পারে যেটুকুকে আমরা ঈশ্বরের বাণী হিসেবে ধরে নিতে পারি। তাছাড়া আপনারা যখন বাইবেল পড়বেন তখন লক্ষ্য করবেন যে, উহাতে অবাস্তব গল্প, অশ্লীল কথাবার্তা বিদ্যমান আছে। কোনটির ভাষা এতই নোংরা যে, কেউ যদি আমাকে হাজার টাকাও দেয় তবুও আমি সেসব কথা মুখে উচ্চারণ করতে পারব না। বাইবেলে এ ধরনের অশ্লীল কথা আছে। এছাড়া বাইবেলে পরস্পর বিরোধী কথাবার্তাও রয়েছে। যদিও আমি বিশ্বাস করি না যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাণী। তারপরও আমি বাইবেল দিয়েই প্রমাণ করতে চাই যে, যিশুখ্রিষ্ট আসলে কখনোই ক্রুশবিদ্ধ হননি। কারণ প্যাস্টর রুক্নি আর এখানে উপস্থিত খ্রিস্টানরা মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাণী। সুতরাং আমি তাদের ধর্মগ্রন্থ দিয়েই প্রমাণ করব যে, যিশুখ্রিষ্ট কখনোই ক্রুশবিদ্ধ হননি। এছাড়া পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১১১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“আর তারা (ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা) বলে যে, ইহুদী ও খ্রিষ্টান ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
ইতোপূর্বে প্যাস্টরও বললেন, যত ভাল কাজই করেন আপনি পাপমুক্ত হতে পারবেন না। কোন কাজ হবে না। যতই যাকাত দেন, হজ্ব করেন, নামাজ পড়েন আর যতই কপালে দাগ পড়ুক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। যদি আপনি ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান না হন। তবে এ আয়াতের শেষে আল্লাহ এটাও বলেছেন–
“এটা তাদের মিথ্যা আশা। আপনি তাদের বলুন! তোমরা প্রমাণ পেশ কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
আল্লাহ মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাদেরকে প্রমাণ পেশ করতে বল। যদি আমি কোরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলি যে, কোরআন আল্লাহর বাণী সেজন্য একইভাবে তাদেরকেও বলব যে– অর্থাৎ তোমাদের প্রমাণ দেখাও, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। এখানে খ্রিষ্টানরা প্রমাণ হিসেবে দেয় এ বাইবেলকে। এটা তাদের বুরহান বা সুস্পষ্ট দলীল। খ্রিষ্টানরা এমনও বলে যে, আমার বাইবেল এটা বলেছে। আমার বাইবেল ওটা বলেছে। বাইবেলে অমুক কথা আছে, তমুক কথা আছে। আসুন তাহলে এবার দেখি। বাইবেলে আসলে কী বলা হয়েছে?
আপনারা হয়ত জানেন যে, পবিত্র বাইবেল পৃথিবীর দুই হাজারেরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তাহলে এবার আসুন দেখি, বাইবেলের বক্তব্য অনুসারেই যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে কিনা? আর এ বাইবেল থেকে আমি যে উপসংহারেই আসি না কেন ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি যে তেমনই হবে এমনটা ভাবা কিন্তু ঠিক হবে না। আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বাইবেলের উপসংহার আর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এক নাও হতে পারে।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিটা আমি পরিষ্কার করে বলেছি যে, পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে–
“তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাঁকে ক্রুশবিদ্ধও করেনি।”
এটা অত্যন্ত পরিষ্কার ঘোষণা। এখন আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়। “Was Christ Really Crusified?” এখন এ ইংরেজি শব্দ Crusify-এর অর্থ কি? Oxford Dictionary অনুযায়ী ‘ক্রুশিফাই’ অর্থ কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। একটা ক্রসের সাথে তাকে বেঁধে রেখে। আর ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী ‘ক্রুশিফাই’ অর্থ কাউকে ক্রসের সাথে পেরেক ঠুকে অথবা বেঁধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। এক কথায় কাউকে যদি ক্রুশিফাই করা হয় তাহলে সে তাহলে সেই মারা যাবে। যদি সে ক্রুশে মারা না যায় তাহলে সে ক্রুশিফায়েও হয়নি বলে ধরে নিতে হবে। এখন ‘রিজারেকশন’ শব্দটার অর্থ কি? Oxford Dictionary অনুযায়ী এর অর্থ কোন কাজ বা ঘটনা যেখানে মৃত্যু লোক জীবিত হয়। বড় হাতে R দিয়ে লেখা। ‘রিজারেকশন’ শব্দের অর্থ খ্রিস্ট মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন। আর ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী ‘রিজারেকশন’ অর্থ যে ঘটনায় মৃত মানুষ জীবিত হয়। কিন্তু বড় হাতের R দিয়ে লেখা ‘রিজারেকশন’ শব্দের অর্থ যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু আর সমাধির পরে তাঁর পুনরায় জীবিত হওয়ার ঘটনা। এক কথায়, যিশুর পুনরুত্থান হয়ে গেলে তাঁকে মারা যেতে হবে। যদি মারা না যান তিনি পুনরুত্থিত হবেন না। আশাকরি আপনারা সবাই এ সংজ্ঞাগুলো ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন।
‘গসপেল অব ম্যাথিউ এর ১৯ নং অধ্যায়ের ১৬ এবং ১৭ নং অনুচ্ছেদে যিশুখ্রিষ্টের নিজের কথার উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে যে, একজন মানুষ পাপমুক্ত হতে পারে যদি সে ঈশ্বরের আইন ও আদেশ পালন করে। তবে সেন্ট পল এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ আইন ও আদেশকে ঠুকে দিয়েছেন ক্রসের সাথে XXX। আপনারা প্যাস্টরকেই বলতে শুনেছেন XX। তিনিও এ আইন ও আদেশকে গেঁথে দিয়েছেন ক্রসের সাথে। আর তিনি কোলোশিয়ানসের ২ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত পলের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, পাপমুক্তি পাওয়ার একটাই উপায় আর তা হচ্ছে, যদি আমরা যিশুখ্রিষ্টের মৃত্যু এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস করি। একই সাথে তিনি নিউটেস্টামেন্টের ফাস্ট কোরিস্থিয়ান্স ১৫ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আমি এ রেফারেন্সগুলো এজন্য বলি যে, আপনারা যাতে না ভাবেন যে, আমি এগুলো মনগড়া বা বানিয়ে বলছি। অথবা যদি আমি এভাবে বলি যে, বাইবেলে একথা আছে। নিউ টেস্টামেন্টে একথা আছে। তাহলে হাজার পৃষ্ঠার বিশ্বকোষ তথা বাইবেলে কোথায় খুঁজে তা পাবেন? সুতরাং আপনাদের সুবিধার জন্যই আমি রেফারেন্স দিয়ে থাকি।
সেন্ট পলের কথা অনুযায়ী ফাস্ট কোরিন্থিয়ানস-এর ১৫ নং অধ্যায়ের ১৪ নং অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কে বলা আছে। আর যদি খ্রিষ্ট মৃত থেকে জীবিত না হয়ে থাকেন তাহলে আমার ধর্মপ্রচার মূল্যহীন আর তোমাদের বিশ্বাসও মূল্যহীন। প্যাস্টর রুক্নিও বললেন, যে যতই ভাল কাজ করেন, যতই দান করেন, যদি পাপের বোঝা নিয়ে যিশুর মৃত্যুকে না মানেন তাহলে এগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়বে। আর একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যে, খ্রিস্টান মিশনারীগণ প্রায়ই বলে থাকেন যে, আইজায়া’র ৬৪ নং অধ্যায়ের ৬ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, আমাদের সব ন্যায়নিষ্ঠা, আমাদের সব ভালো কাজ যেন একটা নোংরা বা ছেড়া কাপড়। যদি বিশ্বাস না করি যে যিশুখ্রিষ্ট মানুষের পাপের জন্য ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাহলে সব ভালো কাজ একটা নোংরা ছেড়া কাপড় সদৃশ।
আর প্যাস্টর রুক্নির কথা অনুযায়ী যা তিনি বক্তৃতার সময় বলেছেন, যদি কোন ক্রস না থাকে এবং ক্রুশবিদ্ধের ঘটনা না থাকে তাহলে বাইবেলের দাম দুই পয়সাও থাকবে না। আর তিনি বলেছেন, ক্রুশফিশান না থাকলে খ্রিষ্টান ধর্মও থাকবে না। আমিও অবশ্য এ ব্যাপারে একমত পোষণ করি। প্যাস্টর রুক্নি বললেন, তিনি ইন্ডিয়ায় এসেছিলেন এবং এখানে তিনি দুই যুগ ধরে আছেন। আর ইন্ডিয়ায় আসার পরেই তিনি সত্যিকার খ্রিষ্টান ধর্মের অর্থটা বুঝতে পেরেছেন। আগে সাধারণ খ্রিষ্টান ছিলেন। তবে তিনি একজন ধার্মিক খ্রিষ্টান হয়েছেন এখানকার মুসলমানদের দেখে। আমিও বলি যে, আজকের দিনে পূর্বে মাত্র একজন আরব খ্রিষ্টানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। প্যাস্টর রুক্নির আগে। তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল জেদ্দায়।
তিনি সিরিয়ার লোক। আর আমার বক্তৃতা শোনার পর আল্লাহর রহমতে তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ। আর এখন আমার জীবনে দ্বিতীয়বারের মত কোন আরব খ্রিষ্টানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তাই আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যাতে তিনি তাকেও হেদায়েত দান করেন। আল্লাহ সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি ভারতীয়দের নিকট থেকে খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষা পেয়েছেন। আশা করি, তিনি আবার মূল বিশ্বাস তথা ইসলামে ফিরে যাবেন। কারণ প্রত্যেক মানুষ এ ধর্ম বা বিশ্বাস নিয়েই জন্মায়। এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের পর তিনি মূল বিশ্বাসে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আশা করি এ অনুষ্ঠানের পর তিনি বুঝতে পারবেন যে, কোন ক্রুশিফিক্সন নেই, কোন ক্রস নেই এবং খ্রিস্টান ধর্মও নেই ইনশাআল্লাহ। আমিও সেটা করার চেষ্টা করব- ইনশাআল্লাহ।
আসুন দেখি সেন্টপল পুনরুত্থান সম্পর্কে কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, যিশুর পুনরুত্থান না হলে আমাদের বিশ্বাস মূল্যহীন, আমাদের শেখানো মূল্যহীন। ফার্স্ট কোরেনথিয়ানস ১৫ অধ্যায়ের ৪২ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদে সেন্ট পল বলেছেন যে, একইভাবে মানুষ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবে। সে মারা গিয়েছিল কলুষিত হয়ে। আর পুনরুত্থিত হবে মর্যাদার সাথে। সে মারা গিয়েছিল দুর্বল হয়ে। আর পুনরুত্থিত হবে শক্তির সাথে। সে মারা গিয়েছিল প্রাকৃতিকভাবে। আর পুনরুত্থিত হবে আধ্যাত্মিকভাবে। একটা প্রাকৃতিক শরীর আর অন্যটা আধ্যাত্মিক শরীর। তারা হলো আত্মা। আর একই কথা বলেছেন তার প্রভু যিশুখ্রিষ্ট। যেমন- গসপেল অব ল্যুকের ২০ নং অধ্যায়ের ২৭ থেকে ৩৬ অনুচ্ছেদে ঐ মহিলার গল্পটা বলা হয়েছে যার সাতজন স্বামী ছিল। আর ইহুদীদের রীতি ছিল যে, যদি কোন লোক বিয়ে করে তারপর মারা যায় আর যদি সন্তান না থাকে তখন তার পরের ভাই ঐ বিধবাকে বিয়ে করবে যাতে করে তাদের বংশ রক্ষা করতে পারে। যদি সেই ভাইও মারা যায় আর সেখানে সন্তান না হয় তারপরের ভাই ঐ মহিলাকে বিয়ে করবে। আর এভাবেই চলতে থাকবে। এভাবে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে, ঐ মহিলা একে একে সাত ভাইকেই বিয়ে করেছে। সব ভাই তাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে। অর্থাৎ একজন মহিলা সব ভাইয়েরই স্ত্রী হয়েছিল। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এটা ছিল ইহুদীদের রীতি।
অতঃপর সেই মহিলা মারা গেল। তখন ইহুদীরা যিশুখ্রিস্টকে প্রশ্ন করেছিল যে, পুনরুত্থান হলে ঐ মহিলা কোন ভাইয়ের স্ত্রী হবে? কেননা পুনরুত্থান হলে এই সাত ভাইয়ের প্রত্যেকেই পুনরুত্থিত হবে এবং ঐ মহিলাও পুনরুত্থিত হবে। আর ঐ অবস্থায় সে কোন ভাইয়ের স্ত্রী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে যিশুখ্রিষ্ট যা বলেছিলেন তা গসপেল অব ল্যুক ২০ নং অধ্যায়ের ৩৫ ও ৩৬ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন- সেখানে বলেছেন যে, পুনরুত্থিত শরীর বিয়ে করবে না তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না। ৩৬ নং অনুচ্ছেদ বলছে যে, তারা কখনো মারা যাবে না। তারা তখন দেবদূতের সমপর্যায়ের। তার মানে হচ্ছে তারা তখন দেবদূতের মতো। পুনরুত্থিত শরীর আসলে আধ্যাত্মিক শরীর। একথা কে বলেছেন? বলেছেন, যিশু খ্রিষ্ট। একই কথা সেন্ট পল ফাস্ট কোরিনথিয়ানস ১৫ নং অধ্যায়ের ৪২ থেকে ৪৪ নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলেছেন।
এছাড়া আপনারা গসপেলগুলোতে এমন একটি অনুচ্ছেদও পাবেন না যেটা বলেছে যে, যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি বাইবেলে দেখবেন যে, ক্রুসিফিক্সিনের গল্পে ঐ ঘটনার পরে যিশুর শিষ্যরা সবাই একটা ঘরে ছিল। অতঃপর যিশুখ্রিস্ট সেখানে আসলেন। এটা আছে গসপেল অব ল্যুকের ২৪ নং অধ্যায়ের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে। তাতে যিশুখ্রিস্ট শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বললেন, শালোম। এটা হিব্রু ভাষার শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে- তোমরা শান্তিতে থাক। এরপরের ৩৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যিশুর শিষ্যরা তখন খুব ভয় পেল। আর ভাবল যে, এটা যিশুর আত্মা। এখন আমি যদি আপনাদের একটি প্রশ্ন করি যে, শিষ্যরা কেন এভাবে ভাবল যে, যিশুখ্রিষ্ট একটা আত্মা। তাঁকে কি আত্মার মত দেখাচ্ছিল। আমি এ একই প্রশ্নটা অনেক খ্রিষ্টানকে করেছিলাম। তারা সবাই বলেছে, না। আর এ জবাবটা আমার নিকটও সঠিক বলেই মনে হয়েছে। কারণ, যিশুখ্রিস্টকে ঐসময় কোনভাবেই আত্মার মত দেখাচ্ছিল না, যখন যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফিক্সনের পরে আগমন করেছিলেন। তাহলে শিষ্যরা ভাবল কেন যে, তিনি আত্মা? কারণ হলো, এ ঘটনার পূর্বে তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল তাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছে। তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল যে, তাকে প্রেতাত্মারা নিয়ে গেছে এবং তিনি ইতোপূর্বে মারা গিয়েছেন। তারা লোকজনের মুখে শুনেছিল যে, মারা যাওয়ার পর তাকে তিন দিন ধরে সমাধিতে রাখা হয়েছিল। তারা লোকজনের কথা শুনেছিল। কারণটা কি আপনারা জানেন? কারণ হচ্ছে, এগুলো কেউ চোখে দেখেননি?
মার্কের কথা অনুযায়ী গসপেল অব ল্যুকের ১৪ নং অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ বলেছে যে, যিশুর সব শিষ্য তাকে ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। আর এটা ছিল যিশুখ্রিস্টের জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্ত, ঐসময় তার শিষ্যদের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। এ প্রয়োজনের পরিমাণ ১০০% ছিল। গসপেল অব মার্কের ১৪ অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা যিশুখ্রিষ্টকে ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। একথা ডা. জাকির নায়েকের নিজস্ব উক্তি নয়। এটা হচ্ছে গসপেল অব মার্কের ১৪ অধ্যায়ের ৫০ অনুচ্ছেদ। তারা সবাই পালিয়ে গিয়েছিল আর লোকের মুখে শুনেছিল, সেজন্য তারা মনে করেছিল অথবা ভেবেছিল যে, যিশু একজন আত্মা। যিশুখ্রিষ্ট তখন তাদেরকে পরিষ্কার করে যা বলেছিলেন তা গসপেল অব ল্যুক এর ২৪ অধ্যায়ের ৩৯ ও ৪০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।
যিশু শিষ্যদেরকে বলেছেন যে, তোমরা আমার হাত পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। আমাকে স্পর্শ করে দেখ। আত্মার রক্তমাংসের শরীর থাকে না। আমাকে যেভাবে এখানে দেখছ। তিনি তাদেরকে নিজের হাত আর পা দেখালেন। তোমরা আমার হাত আর পা দেখ। এটাতো আমি নিজেই। তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করছ না কেন? এটাতো আমি নিজেই। আমি তোমাদের প্রভু এবং শিক্ষক যিশুখ্রিষ্ট। তোমরা ভয় পাচ্ছ কেন? আমাকে তোমরা স্পর্শ করে দেখ। আমার হাত আর পা দেখ। আত্মায় রক্তমাংসের শরীর থাকে না। এভাবে তিনি হাত আর পা দেখিয়ে কি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন? তিনি একথা প্রমাণ করতে চাননি যে, তিনি আত্মা; বরং তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তিনি আসলে কোন আত্মা নন। তিনি পুনরুত্থিত হননি। এরপরের অনুচ্ছেদ গসপেলে অব ল্যুকের ২৪ নং অধ্যায়ের ৪১ থেকে ৪২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, শিষ্যরা এটা শুনে খুবই খুশি হলো। তারা ভেবেছিল যে, যিশু মারা গেছেন। যখন দেখল তিনি জীবিত তখন খুব খুশি, বেঁচে আছেন রক্তমাংসের শরীর নিয়ে এবং তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা খুশি হল।
যিশুখ্রিস্ট তখন শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের এখানে রান্না করা মাংস আছে? শিষ্যরা তাকে এক টুকরা মাছ আর মধু দিলেন। আর যিশুখ্রিস্টই তাদের সামনে ঐ খাবারগুলো খেলেন। এর দ্বারা তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি কি পুনরুত্থিত? তিনি কি আত্মা? নিশ্চয়ই না; বরং তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি আসলে রক্তমাংসের মানুষ। আর তাই খাবারগুলো তাদের সামনেই চিবিয়ে খেলেন। তিনি ঝলসানো মাছ আর মধু খেলেন, তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি পুনরুত্থিত হননি। তিনি কোন আত্মা নন; বরং তিনি রক্তমাংস দিয়ে তৈরী একজন মানুষ। পুনরুত্থান না থাকলে ক্রুসিফিক্সন না থাকলে, খ্রিস্টান ধর্মও থাকবে না।
আপনাদের হয়ত মেরি ম্যাগডালিনের সেই গল্পটা মনে আছে। যখন তিনি তৃতীয় দিন যিশুখ্রিস্টের সমাধিতে গেলেন। এ গল্পটা গসপেল অব জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে। এছাড়াও গসপেল অব মার্কের ১৬ নং অধ্যায়ের ২নং অনুচ্ছেদে আছে যে, সেটা ছিল সপ্তাহের প্রথম দিন। অর্থাৎ দিনটা ছিল রোববার। ইহুদীদের সপ্তাহের দিন হলো শনিবার। সুতরাং সপ্তাহের প্রথম দিন হলো রোববার। তাহলে সপ্তাহের সেই প্রথম দিনে ম্যারি ম্যাগডালিন সমাধির কাছে গেলেন। এখন মেরি ম্যাগডালিন কেন তৃতীয় দিন সমাধিতে যাবেন? যেহেতু তাদের মতে, যিশুখ্রিষ্ট আগেই মারা গেছেন তাহলে সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন কি? এর উত্তরটা দেয়া আছে ১ নং অনুচ্ছেদে।
গসপেল অব মার্কের ১নং অনুচ্ছেদে আছে যে, মেরি ম্যাগডালিন যিশুখ্রিষ্টকে ম্যাসাজ করতে গিয়েছিলেন। এখানে ‘অ্যানয়েন্ট’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজি ‘অ্যানয়েন্ট’ শব্দটার হিব্রু মূল শব্দ হলো ‘মাসাহা’।‘ মাসাহা’ শব্দের অর্থ ম্যাসাজ করা। মালিশ করা। তেল মাখানো। এর শব্দটা থেকে আরবি ভাষার শব্দটাও এসেছে ‘মসীহ’। আর ‘মসীহ’ শব্দের হিব্রু অর্থ হলো ‘মেসায়াহ’। ‘মেসায়াহ’ অর্থ হচ্ছে যাকে তেল মাখানো হয় বা যাকে মালিশ করা হয়। এটাকে যদি গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করেন সেটা হবে ‘ক্রোসটোস’। এখান থেকে ইংরেজি শব্দটা এসেছে ‘ক্রাইস্ট’। অর্থাৎ যাকে মালিশ করা হয়।
এখন আমি যদি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি যে, কেউ মারা যাওয়ার তিনদিন পরে কি তার মৃতদেহ ম্যাসাজ করা হয়? এর উত্তর হবে, না। মুসলিমরা আমরা কি তিন দিন পরে মৃতদেহ ম্যাসাজ করি? এর উত্তরটা হবে, না। তাহলে যিশুখ্রিষ্ট মারা যাওয়ার তিন দিন পরে মেরী ম্যাগডালিন কেন সেই সমাধিতে যাবেন। কারণটা জানেন কি? কারণ মেরি ম্যাগডালিন এবং জোসেফ অব অ্যারামেথিয়া আর নিকোডিমাস তারা যিশুর মৃত দেহকে গোসল করিয়েছিলেন? আর যখন যিশুখ্রিস্টের মৃতদেহকে সেই ক্রুস থেকে নামানো হলো মেরী হয়ত যিশুর শরীরে প্রাণের চিহ্ন দেখেছিলেন? সেখানে মেরী নিশ্চয়ই এভাবে বলত না যে, যিশু বেঁচে আছেন। আর তাহলে যিশুখ্রিস্টকে তখন মেরে ফেলা হত? যেহেতু মেরী যিশুর শরীরে প্রাণের চিহ্ন দেখেছেন ফলে তৃতীয় দিনে তিনি আবার ফিরে আসল। আর সে আশা করেছিল, জীবিত যিশুখ্রিস্ট মৃত যিশুখ্রিস্ট নয়। এ কথার বিবরণ আছে গসপেল আর জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১নং অনুচ্ছেদে।
এছাড়াও গসপেল অব মার্কের ১৬ নং অধ্যায়ের ৪নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, মেরী দেখল পাথরটা সরানো হয়েছে। যে কাপড়টা দিয়ে যিশুখ্রিষ্টকে জড়ানো হয়েছিল সেটা খোলা অবস্থায় একপাশে পড়ে আছে। এখন প্রশ্ন হলো পাথরটা সরানোর প্রয়োজন কি? আর মৃতদেহ জড়ানোর কাপড় সেটাও বা একপাশে সরানোর প্রয়োজন কি? যদি যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত হতেন আধ্যাত্মিক শরীর হিসেবে তাহলে সেই আত্মার বের হওয়ার জন্য সেই সমাধি কক্ষের পাথরটা সরানোর কোন প্রয়োজন ছিল কি? কোন আত্মাকে তো দরজা খুলে বের হতে হয় না। আবার দরজা খুলে প্রবেশও করতে হয় না? এজন্য পাথর সরানোর দরকার নেই। তাহলে তারপরও সরানো ছিল কেন? আত্মা যদি চলে যেতে চায় তাহলে কি তার শরীরে জড়ানো কাপড়টা খুলে দিতে হবে? আমার মনে হয় কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু রক্তমাংসের শরীর হলে সমাধি কক্ষের মুখে যে পাথরটা আছে সেটা সরাতে হবে। শরীরে জড়ানো কাপড়টা খুলে ফেলতে হবে। এসব কিছু এটাই প্রমাণ করে যে, যিশুখ্রিস্ট সমাধিকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় একজন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন।
আর সমাধিটার মালিক ছিল যিশুখ্রিস্টের একজন শিষ্য জোসেফ অব আরামাথিয়া- যিনি ছিলেন খুব ধনী ও ক্ষমতাবান ইহুদী। সেই লোক এ সমাধিকক্ষ বানিয়েছিলেন তার নিজের ভবিষ্যতের জন্য। সেখানেই যিশুখ্রিস্টকে রাখা হয়েছিল। সমাধিটা আসলে একটা ঘরের মত। আর জিম বিশপের কথা অনুযায়ী বাইবেল একথা বলেনি। জিম বিশপ বলেছেন, সমাধিকক্ষটা আয়তনে বেশ বড় ছিল। পাঁচ ফুট চওড়া। উচ্চতা ছিল সাতফুট। আর লম্বায় ছিল পনেরো ফুট। কারো জন্য এত বড় সমাধিকক্ষের প্রয়োজন কী? কারণ ঐ লোকটাকে প্রয়োজন হলে সাহায্য করা যাবে। বোম্বেতে আপনারা ছোট ছোট রুম দেখবেন। খুব বেশি হলে ৭৫ বর্গফুট। বোম্বেতে ৭৫ বর্গফুটের একটা ঘর বেশ বড়। সেই ঘরে পাঁচ ছয় জন লোক থাকতে পারে। বোম্বে বর্তমানে জায়গার দাম খুব বেশি। ৭৫ বর্গফুট, সেখানে দেখবেন চার পাঁচ জন লোক থাকে। তাহলে সেই ঘরে প্রয়োজনে সাহায্য করা যাবে? এখন আধ্যাত্মিক শরীরকে সাহায্য করার প্রয়োজন কী? কারণ আত্মার তো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না; বরং তারা এসেছিল একজন জীবিত মানুষকে সাহায্য করার জন্য।
বাইবেল পড়লে দেখবেন গসপেল অব জনের ২০নং অধ্যায়ের ১৫ নং অনুচ্ছেদে যিশু মেরী ম্যাগডালিনের সাথে কথা বলেছেন। আর তখন তারা উভয়ই পৃথিবীতে থেকে, মেরীর পাশে থেকে, কিন্তু স্বর্গে থেকে না। যিশু দেখলেন যে, মেরী কাঁদছেন। যিশু কাছে এসে বললেন, মহিলা তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কাকে খুঁজছ? যদিও তিনি ভালভাবেই জানতেন যে, মেরী কাদছে কেন? তারপরও তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। মেরী তখন যিশুকে মনে করলেন সেখানকার মালি। আর তাকে বলল, আপনি উনাকে নিয়ে কোথায় রেখেছেন? আমি তাকে নিয়ে যেতে এসেছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, মেরী ম্যাগডালিন কেন ভাবল যে, যিশুখ্রিস্ট হলেন সেখানকার বাগানের মালি? আপনাদের একটা প্রশ্ন করি, পুনরুত্থিত মানুষকে কি মালির মতো দেখায়? আপনারা কি বলেন? না।
তাহলে মেরী কেন মনে করলেন যে, যিশুখ্রিস্ট সেখানকার বাগানের মালি? এর উত্তরটা হলো আসলে যিশু তখন মালির ছদ্মবেশে ছিলেন। একজন আত্মা কেন মালির ছদ্মবেশ নিবে? তার কারণ- তিনি ইহুদীদের ভয় পাচ্ছিলেন। আত্মা কখনই কাউকে ভয় পাবে না। কারণ, বুক অব হিব্রুর ৯নং অধ্যায়ের ২৭ নং অনুচ্ছেদে আছে, মানুষ একবারই মারা যায়। তারপর আসবে শেষ বিচারের দিন। গসপেল অব ল্যুকের ২০নং অধ্যায়ের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে যিশু নিজেই বলেছেন, মানুষ একবার মরার পর আর মরবে না। আর যদি আত্মা হয় যান। তাহলে আর কাউকে ভয় পাবেন না। কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। আপনি দ্বিতীয়বার মরবেন না।
যিশু আত্মা হলে ছদ্মবেশ নিয়ে থাকবেন কেন? তিনি ভয় পাবেন কেন? তিনি কেন লুকিয়ে থাকবেন? কেন তিনি ইহুদীদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকবেন? এটাই প্রমাণ করে, তিনি পুনরুত্থিত হননি; বরং তিনি জীবিতই ছিলেন। যিশু তখন মেরীকে বলেছিলেন, মেরী। আর এ একটা শব্দেই মেরী ম্যাগডালিন তার প্রভু যিশুকে চিনে ফেলল। যেমন আমরা সবাই আমাদের প্রিয়জনকে ডাকার সময় বিশেষ ভঙ্গীতে ডাকি। আর সেই একই সুর এবং একই ভঙ্গিমায় প্রিয়জনকে ডাকলে তারা তখন খুব সহজেই বুঝে ফেলে যে, কে তাকে ডাকছে? তাই মেরীও সাথে সাথে বুঝে ফেলল যে, কে তাকে ডাকছে? মেরীও সাথে সাথে বুঝে ফেলল যে, এ মালি আসলে যিশুখ্রিষ্ট। তখন মেরী যিশুর দিকে ছুটে গেলেন।
গসপেল অব জনের ২০ নং অধ্যায়ের ১৫, ১৬ ও ১৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, যিশুখ্রিস্ট মেরীকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। কেন? কোন কারণে যিশু নিষেধ করলেন? যিশুর শরীরে কি বিদ্যুৎ ছিল যে, কেউ স্পর্শ করলে বিদ্যুতের শক লাগবে? যিশুর শরীরে কি ডিনামাইট বাধা যে, কেউ স্পর্শ করলে তা ফেটে যাবে? তাহলে কেন তিনি তা স্পর্শ করতে মানা করলেন? এর কারণ একটাই। আর তা হচ্ছে তিনি একজন রক্তমাংসের মানুষ। একটু চিন্তা করুন, ক্রুশবিদ্ধ থাকার সময় তিনি যে শারীরিক আর মানসিক কষ্ট পেয়েছেন তার ধকল সামলে ওঠতে সময়ের প্রয়োজন ছিল। যিশু ক্রুশবিদ্ধ থাকার সময় অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন। এখন তার শরীর ক্ষত-বিক্ষত। আর তাই তিনি বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। তারপর আরো যেসব কথা বলেছিলেন তা গসপেল অব জন-এর ২০ নং অধ্যায়ের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, “আমি এখনো আমার পিতার কাছে ফিরে যাইনি।” এ কথার অর্থ কি? এ কথার অর্থ হচ্ছে তখনো তিনি মারা যান নি। যিশুখ্রিস্ট মেরী ম্যাগডালিনকে একেবারে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি তখনো পুনরুত্থিত হননি। আর একথাই প্রমাণ করে যে, তিনি তখনো জীবিত ছিলেন।
বাইবেলে আরো আছে যে, যিশুখ্রিস্ট বেঁচে আছেন। আপনারা গসপেল অব মার্ক ১৬ নং অধ্যায়ের ১১ নং অনুচ্ছেদ দেখতে পারেন। আর যিশু যে বেঁচে আছেন তা তাদেরকে মেরী ম্যাগডালিন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করেনি। ইহুদীদের আর একটা বদ অভ্যাস ছিল যে, তারা অবান্তর প্রশ্ন করতে অভ্যস্ত ছিল। নবীদের ঝামেলায় ফেলত।
পবিত্র কোরআন এ কথা বলেছে, বাইবেলেও একথা আছে। তারা মূসাকেও অবান্তর প্রশ্ন করেছিল। তাঁকে ঝামেলায় ফেলেছিল। মূসাকে অপছন্দ করেছিল। যিশুর সাথেও তারা একই কাজ করেছিল। এছাড়াও গসপেল অব ম্যাথিউর ১২নং অধ্যায়ের ৩৮নং অনুচ্ছেদে আছে যে, ইহুদীরা যিশুখ্রিস্টের কাছে এসে বলল প্রভু ব্যারাই- যার অর্থ হচ্ছে, প্রভু আপনি আমাদের একটা নিদর্শন দেখান। এখানে নিদর্শন মানে অলৌকিক কিছু। যিশুখ্রিষ্ট যেসব ভালো কাজ করেছিলেন সেগুলো দেখেও ইহুদীরা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। তারা অলৌকিক কোন কাজের নিদর্শন দেখতে চাইল। যেমন ধরুন, হয়ত আকাশে উড়ে বেড়ানো; পানির ওপর হেটে বেড়ানো; জ্বলন্ত কয়লার ওপর হাঁটা ইত্যাদি। তারা ইত্যাদি ধরনের নিদর্শন বা সাইন দেখতে চাইল। এখানে সাইন মানে ল্যাম্পপেটের সাইন নয়। রাস্তায় আপনারা বিভিন্ন ধরনের সাইন দেখেন। তেমন কোন সাইন নয়। এখানে সাইন মানে অলৌকিক নিদর্শন।
ইহুদীদের প্রশ্নের উত্তরে যিশুখ্রিস্ট কী বলেছিলেন? তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন? এসবের উত্তর সন্নিবেশিত আছে গসপেল অব ম্যাথিউর ১২ নং অধ্যায়ের ২৯ ও ৪০ নং অনুচ্ছেদে। সেখানে আছে যে, তোমরা অপরাধী আর ব্যাভিচারী জাতি; তোমরা নিদর্শন দেখতে চাও কি? অলৌকিক কিছু দেখতে চাও কি? কোন নিদর্শন দেখানো হবে না শুধু ইউনুসের নিদর্শন বাদে। যেভাবে ইউনুস তিনদিন আর তিন রাত ধরে তিমি মাছের পেটে ছিলেন সেই একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন আর তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবেন। যিশুখ্রিষ্ট তাদেরকে একথা বলেননি যে, তোমরা সেই অন্ধলোককে দেখ যাকে আমি সুস্থ করে তুলেছি। তোমরা সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করো যে আমাকে স্পর্শ করেই সুস্থ হয়েছিল। দুই হাজার শূকর মেরে প্রেতাত্মার আচ্ছন্ন একজনকে সারানোর কথাও বলেননি। পাঁচ হাজার লোককে একটা মাছ খাইয়েছিলেন অথবা তিনি হাজার লোককে একটি রুটি খাইয়েছিলেনএকথাও বলেননি; বরং তিনি বললেন, কোনো নিদর্শনই দেখানো হবে না ইউনুসের নিদর্শন বাদে। যিশুখ্রিষ্ট অলৌকিক কাজ সম্পর্কে এক কথায় বলে দিলেন। আর সেটা হচ্ছে ইউনুসের নিদর্শন। আর কোন লোক যদি ইউনুসের নিদর্শনটা জানতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই বাইবেল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। আর এজন্য তাকে ডক্টর অব ডিভিনিটিও অর্জন করতে হবে না। কারণ এগুলো আমরা স্কুল থেকেই জানি।
আর সব দেশেই এমনকি ভারতেও আপনি একজন খ্রিস্টান কিংবা মুসলিম কিংবা হিন্দু হিসেবে কোন না কোনভাবে হয়তো কমিক্সে অথবা উপদেশমূলক গল্পে ইউনুসের নিদর্শন সম্পর্কে পড়েছেন। তিমির পেটে ইউনুস এ গল্প সবাই জানে। তবে আপনি যদি পবিত্র বাইবেলের ইউনুসের নিদর্শনটা পড়তে চান তাহলে দেখবেন এ বিশাল বইতে ইউনুসের নিদর্শন দুই পৃষ্ঠারও কম। এমনকি দেড় পৃষ্ঠার চাইতেও কম। আপনাদের জন্য এ পৃষ্ঠাটার একটি কপি দেখাচ্ছি। এ বইটির দেড় পৃষ্ঠার চেয়েও কম। মাত্র চারটা অনুচ্ছেদ। আর এ হাজার পৃষ্ঠার বিশ্বকোষে এটা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে আপনারা সবাই গল্পটা মোটামুটি জানেন যে, মহান ঈশ্বর তাঁর নবী ইউনুস আলাইহিস সালাম কে বললেন, নিনেভ শহরের মানুষদের নিকট মহান ঈশ্বরের বাণী প্রচার কর।
কিন্তু ইউনুস বললেন, নিনেভ শহরের মানুষগুলো খুব খারাপ। ঈশ্বরের বাণী তো তারা মেনে চলবে না। আর ভাবলেন, তারা আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবে। আমার সময়টাই নষ্ট হবে। তাই তিনি চলে গেলেন। অর্থাৎ সেখান থেকে জাহাজে করে টারশিনো গেলেন। আর তখনই সাগরে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো। তখনকার দিনে নাবিকদের মধ্যে একটা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল যে, জাহাজে যাওয়ার পর সাগরে ঝড় ওঠার প্রধান কারণ হলো কেউ একজন ঈশ্বরকে অমান্য করছে। তারা তখন বের করার চেষ্টা করতো যে, এ ঘটনার জন্য দায়ী কে? তারা দায়ী লোকটিকে লটারী করে বের করত। অনুরূপভাবে, যখন লটারী করা হলো দেখা গেল ইউনুসই এখানে দায়ী।
ইউনুস আল্লাহ প্রেরিত একজন নবী ছিলেন। তাই তিনি তাদের দাবী মানলেন আর বললেন দেখ, এসব কিছুর জন্য আমিই দায়ী। মহান ঈশ্বর আমাকে নিনেভ শহরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁর আদেশ অমান্য করে এখন জোপা থেকে টারশিশে পালিয়ে যাচ্ছি। আমি অন্যায় করেছি। তোমরা আমাকে ধরে সাগরে নিক্ষেপ কর। কিন্তু তারা বলল, এ লোকটা কতই না ধার্মিক। সুতরাং আমরা তাকে কেন মেরে ফেলব? তারা জাহাজ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই করা গেল না; বরং ঝড় তখনো চলতেছিল। ইউনুস তাদেরকে বললেন, তোমরা আমাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। অবশেষে তারা রাজি হলো আর ইউনুসকে সাগরে নিক্ষেপ করল। সাগরে নিক্ষেপ করার পর ঝড়টা থেমে গেল। হয়তো এটা ছিল কাকতালীয় ঘটনা। কিছুক্ষণ পরে একটি বড়ো তিমি মাছ এসে ইউনুসকে গিলে ফেলল। সেই তিমি ইউনুস আলাইহিস সালাম-কে পেটে নিয়ে তিন দিন তিন রাত সাগরে ঘুরে বেড়াল। তারপর সাগরের পাড়ে বমি করে তাকে ফেলে দিল।
যিশুখ্রিষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে ইহুদীদের কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন যে, তোমাদের কোন নিদর্শন দেখানো হবে না শুধুমাত্র ইউনুসের নিদর্শন বাদে। আর ইউনুস নবী যেভাবে তিন দিন তিন রাত ধরে তিমি মাছের পেটে ছিলেন বুকের ভেতরে থাকবে। এখন আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি যে, ইউনুসকে সাগরে নিক্ষেপ করার সময় তিনি জীবিত না মৃত ছিলেন? উত্তর দেয়ার আগে আপনাদের বোঝার জন্য বলে দিচ্ছি যে, ইউনুস নিজ থেকেই বলেছিলেন, আমি অপরাধী, এজন্য আমিই দায়ী, আমাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। কেউ যদি তার প্রস্তাবে রাজী না হন, তখন হয়ত তার পা ভাঙবেন নতুবা ঘাড় ভেঙ্গে ফেলবেন কিংবা তার হাত মুচড়ে দিবেন। কিন্তু ইউনুস নিজ থেকেই বলেছিলেন, তাই এসব করার প্রয়োজন ছিল না; বরং তখন শুধু প্রয়োজন ছিল সাগরে নিক্ষেপ করার। সুতরাং বুঝতে বাকী রইল না যে, সাগরে নিক্ষেপ করার সময় তিনি জীবিত ছিলেন। তিমি মাছ এসে তাকে গিলে ফেলল। তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। আল্লাহর নিকট তিনি প্রার্থনা করেছিলেন তিমির পেটে অবস্থান করে। আর তখন জীবিত না থাকলে প্রার্থনা করতে পারতেন না। সুতরাং তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। অতএব এ ঘটনায় ইউনুস পুরোপুরি জীবিত ছিলেন জীবিত! জীবিত! জীবিত!!!
যখন কোন লোককে জাহাজ থেকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয় তখন তার মরে যাওয়ার কথা। যদি ঐ লোক মারা যায় তবে তা অলৌকিক হবে না; বরং যদি বেঁচে থাকেন এবং তা অলৌকিক ঘটনা। সুতরাং তিমি মাছ যখন গিলে ফেলল তখন তার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মরেননি। এটা নিঃসন্দেহে অলৌকিক। তিন দিন তিন রাতের গরমে আর অক্সিজেনের অভাবে সেই তিমি মাছের পেটে তার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মরেননি। এটাও অলৌকিক। একসাথে অনেকগুলো অলৌকিক ঘটনা। পুরো ঘটনাটাই অলৌকিক। যিশু বলেছেন, ইহুদীদের ইউনুস যেভাবে তিন দিন তিন রাত ছিলেন সেভাবে ঈশ্বরের পুত্রও তিন দিন তিন রাত থাকবে। অর্থাৎ যেভাবে ইউনুস নবী তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন। অনুরূপভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর বুকে থাকবে। ইউনুস জীবিত ছিলেন, কিন্তু যখন আমাদের খ্রিষ্টান ভাইদের এ প্রশ্নটা করি যে, আপনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু সমাধিকক্ষে কিভাবে ছিলেন? সবাই তখন মৃত। এখন আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি যে, ইউনুস ছিলেন জীবিত। অন্যদিকে যিশুখ্রিস্ট ছিলেন মৃত। তাহলে যিশুখ্রিস্ট কিভাবে ইউনুসের মত হলেন? অবশ্যই এরকম হলেন না। সম্পূর্ণ আলাদা।
তাহলে বুঝা গেল যে, যিশুর ভবিষ্যত বাণী এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। অথচ তিনি নিজে এ নিদর্শনের কথা বলেছেন। আরো বলেছেন যে, ইউনুসের নিদর্শন ব্যতীত অন্য কোন নিদর্শনই দেখানো হবে না। আর তার এ ভবিষ্যৎবাণীটা বাস্তবে ঘটেনি। কারণ ভবিষ্যতবাণীটা সত্য হতে গেলে যিশুখ্রিস্টের থাকা উচিত জীবিত। তিনি জীবিত ছিলেন। তা না হলে নবী যিশুখ্রিস্টকে বলতে হয় মিথ্যাবাদী, নাউযুবিল্লাহ। এটা আমরা কখনোই বলতে পারি না। যিশুখ্রিস্টকে আমরা সম্মান শ্রদ্ধা করি। তাহলে এ ভবিষ্যত বাণী সত্যি হওয়ার জন্য তাঁর জীবিত থাকা উচিত। আর তিনি সে সময় জীবিত ছিলেন- একথা আমি আগেও প্রমাণ করে দেখিয়েছি। একথা আগেও বলেছি যে, একজন লোককে ক্রুসিফাই হতে গেলে তাকে অবশ্যই সেই ক্রুশে ঝোলা অবস্থায় মারা যেতে হবে। যদি সেই লোক ক্রুসে ঝুলে মারা না যায় তাহলে সে ক্রুসিফাইড হয়নি।
এমন কিছু লোক আছে যারা বলবে যে, এ নিদর্শনের ব্যাপারটা আসলে জীবিত-মৃত নিয়ে নয়; বরং এর দ্বারা সময়ের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, তিন দিন তিন রাত ইউনুস যেভাবে তিমির পেটে ছিলেন তেমনি ঈশ্বরের পুত্র থাকবেন তিন দিন তিন রাত ধরে। তিন শব্দটা বলা হয়েছে চারবার। এখানে আসলে তিন সংখ্যাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জীবিত বা মৃতের ওপর নয়। আমি বলি তিনের মধ্যে অলৌকিকতা কোথায়? যদি বলি, দিল্লী যেতে আমার তিনদিন তিনরাত লাগে- এটা কোন অলৌকিক ব্যাপার হবে কি? তাহলে তিন সংখ্যায় অলৌকিকতা কোথায়? তিন দিন বা তিন সপ্তাহ। এটাতো অলৌকিক কোন কিছু নয়। কিন্তু তাদের বক্তব্য হচ্ছে, না এখানে সময়টাই আসল।
তাহলে আসুন, আমরা দেখি যিশু কি এভবিষ্যতবাণীটা পুরো করেছিলেন যেটা কিছু খ্রিস্টানদের মতে অলৌকিক ঘটনার মূল বিষয়। পূর্বেও বলেছি। এখনও বলছি, কোন খ্রিস্টানকে যদি জিজ্ঞাসা করি যে, পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী যিশুকে কখন ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল? খ্রিস্টানরা বলবে যে, কেন সেটাতো গুড-ফ্রাইডে ছিল। আমার প্রশ্ন শুক্রবারকে কেন গুড-ফ্রাইডে বলা হয়? তারা উত্তরে বলে, যিশু মানুষের পাপের জন্য সেদিন মারা গিয়েছিলেন। তাই শুক্রবার গুড-ফ্রাইডে।
আর বাইবেল পড়লে দেখবেন যে, যিশুখ্রিস্টের বিচার খুব তাড়াতাড়ি করা হয়েছিল। তাড়াতাড়ি করে তাঁকে ক্রুসে ঝোলানো হয়েছিল। তাড়াতাড়ি নামানো হয়েছিল। কারণটা প্যাস্টরও বলেছেন, সেই রাতে কাউকে ক্রুসে ঝুলিয়ে রাখা হতো না। এটার রেফারেন্স তিনি দেননি। এটা আছে ডিউটারোনসির ২১ অধ্যায়ের ২৩ নং অনুচ্ছেদে। সে স্থানটা অভিশপ্ত হবে। সেজন্য যিশুকে নামানো হয়েছিল। তারপর গোসল করানো হলো। আর ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অতঃপর সেই সমাধিকক্ষে তাকে রেখে দেয়া হলো। আর গসপেল অব জন ২০ অধ্যায়ের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে যে, সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সকালে দেখা গেল সমাধিতে কেউ নেই। আর এটা দেখেছিল মেরী ম্যাগডালিন। তাহলে অনুমান করা যায় যে, যিশু সেই সমাধিকক্ষে ছিলেন শুক্রবার রাতে।
এখানে আমি অনুমানের কথা বললাম কেন? কারণ বাইবেলে একথা বলা নেই যে, কোন সময় যিশু সমাধি ছেড়ে চলে গেছেন। হয়তো তিনি চলে গেছেন শুক্রবার গভীর রাতে কিংবা শনিবার সকালে। কিন্তু এ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। তাই অনুমান করে নিচ্ছি যে, যিশু রোববার সকালে বের হয়ে গেছেন। তাহলে যিশু সেই সমাধিতে ছিলেন শুক্রবার রাতে এটা অনুমান। এরপর সেই সমাধিতে ছিলেন শনিবার সকালে- এটাও অনুমান। যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন শনিবার রাতে - এটাও অনুমান। রোববার সকালে সমাধিকক্ষটা ফাঁকা। তাহলে যিশু সেখানে ছিলেন দুই রাত একদিন। কিন্তু বলা হয়েছিল তিন রাত তিন দিন। ইউনুস নবী যেভাবে তিমি মাছের পেটে ছিলেন, অনুরোপভাবে ঈশ্বরের পুত্র পৃথিবীর বুকের ভেতর থাকবে তিন দিন আর তিন রাত। অথচ যিশুখ্রিস্ট সেই সমাধিতে ছিলেন দুই রাত আর একদিন। এখন তিন দিন তিন রাত আর দুই রাত এক দিন কি এক? এ দুটা সময় কি এক সমান? অবশ্যই না। তাহলে তারা যে সময়ের ওপর গুরুত্ব দেয় সেটাও আসলে বাস্তবে ফলেনি। এতে ঘটনাটা দাড়াল এমন যে, যিশুখ্রিস্ট তখন জীবিত ছিলেন।
কাউকে ক্রুসিফাইড তখনই বলা হবে যখন সে ক্রুসেই মারা যায়। প্যাস্টার যখন আবার বক্তব্য রাখতে আসবেন তখন আমি তাকে কিছু প্রমাণ দেখাবো যে, যিশুকে ক্রুসিফাই করা হয়নি। তিনি পুনরুত্থিত হননি। তিনি জীবিতই ছিলেন। আর জীবিত থাকলে ক্রুসিফিক্সশন হয় না এবং পুনরুত্থানও হয় না। যিশুকে ক্রুসে ঝোলানোর পরে খুব তাড়াতাড়ি করে ৩ ঘণ্টা পরে নামানো হয়েছিল। তিন ঘণ্টায় ক্রুশে কারো মারা যাওয়া কঠিন। তাই যিশু জীবিত ছিলেন। যখন তাকে নামানো হয়েছিল ক্রুশবিদ্ধ অন্য দু’জন তখন বেঁচে ছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যিশুও বেঁচে ছিলেন এটা হচ্ছে দ্বিতীয় প্রমাণ। তৃতীয় বিষয়টা হলো, তার পা দুটি ভাঙ্গা হয়নি। মৃতের কাছে তার পায়ের কোন দাম নেই। একথা প্রমাণ করে যে, তিনি জীবিত ছিলেন। চতুর্থ বিষয়টা হলো, পাথর সরানো হয়েছিল এবং গায়ে জড়ানো কাপড়টা খোলা হয়েছিল। এতে প্রমাণ করে যে, তিনি জীবিত ছিলেন। পঞ্চমত বিষয়টা হলো, তিনি মালির ছদ্মবেশে ছিলেন। কেন? কারণ তিনি জীবিত ছিলেন। তাই ইহুদীদের কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলেন। ষষ্ঠ বিষয়টা হলো, সমাধিটা বেশ বড় ছিল। অনেক বড় রুম। মৃত একজন লোকের জন্য বড় ঘরের প্রয়োজনটা কি? তার মানে যিশু খ্রিস্ট জীবিত ছিলেন। সপ্তম বিষয়টি হলো, যখন মেরী ম্যাগডালিন যিশুখ্রিষ্টের কাছে গেল তখন যিশু তাকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করো না। কেন? তিনি রক্ত মাংসের মানুষ। তিনি জীবিত ছিলেন। সুতরাং তার ব্যথা লাগবে। যন্ত্রণা পাবেন। এতে প্রমাণ করে তিনি জীবিত ছিলেন। যিশু তখন মেরীকে বলেছিলেন, আমি এখনও আমার পিতার নিকট ফিরে যাইনি। তার মানে তিনি জীবিত ছিলেন। নবম বিষয়টা হলো, মেরী ম্যাগডালিন তখন যিশুখ্রিস্টকে দেখে ভয় পাননি। দশম বিষয়টা হল, সেই উপরের রুমে যিশু তার হাত-পা দেখিয়েছিলেন প্রমাণ করতে যে, তিনি আত্মা নন; বরং তিনি মানুষ। এগারতম বিষয়টা হলো, শিষ্যরা যিশুকে দেখে খুশী হলো। কেন? কারণ তারা ভেবেছিল, যিশু মারা গিয়ে আত্মা হয়েছেন। তারা খুব খুশী হয়েছিল কারণ তিনি জীবিত। বারতম বিষয়টা হলো, যিশু সেখানে একটুকরা সেদ্ধ মাছ আর মধু খেলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি জীবিত ছিলেন। শিষ্যরা শুনেছিল মেরী ম্যাগডালিনের কাছে যে, তিনি জীবিত আছেন। তেরতম বিষয়টা হলো, ইউনুসের নিদর্শন। যেভাবে ইউনুস নবী তিন দিন তিন রাত তিমির পেটে ছিলেন। একইভাবে ঈশ্বরের পুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর ভিতরে থাকবেন জীবিত অবস্থায়। সুতরাং যিশু জীবিত ছিলেন। ক্রুসিফিক্সন হননি। এমনকি পুনরুত্থানও হয় নি।
তাহলে - এক কথায় বলা যায় যে, বাইবেলের কথা অনুযায়ী যিশুকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি মারা যাননি। এখন বিষয় হলো Was Christ Realy Cruesified? তাই যদি ক্রুসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান তাহলে তিনি ক্রুসিফাইড হয়েছেন। অতএব যদি ক্রুসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা না যান তাহলে সেই ঘটনাকে আপনারা কি বলবেন? এর সমার্থক কোন শব্দ ইংরেজি ভাষায় নেই। যদি আপনারা ডিকশনারিতে এ শব্দটা খোঁজেন- তাহলে আমার কথার প্রমাণ দেখতে পাবেন। যে কাউকে ক্রুসে ঝোলানো হয়েছিল কিন্তু মারা যায়নি। এজন্য কোন শব্দই পাবেন না। তাহলে নতুন শব্দ বানাতে হবে। এখানে যে শব্দটা আমরা বলতে পারি তা হচ্ছে যিশুখ্রিষ্ট আসলে ক্রুসিফাইড হননি। তিনি ক্রুসিফিকটেড হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে শব্দটা CRUCIFIXION হবে না; বরং হবে CRUCIFICTION আর আসলেই এটা একটা ফিকশন। আমাদের নতুন শব্দ বানাতে হবে। সুতরাং একথা বলা যায় যে, যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফাইড হননি; বরং তিনি হয়েছিলেন ক্রুসি ফিকটেড। আশাকরি, আপনাদের দ্বিধা-দ্বন্দ এ বক্তব্যের মাধ্যমে দূর হবে। আর প্যাস্টরও মানবেন এবং তার মন থেকে দ্বিধা-সংশয় কেটে যাবে যে, আসলেই যিশুখ্রিষ্ট ক্রুসিফাইড হননি। কোন ক্রুসিফিক্সন হয়নি। তাই Fixion নয় হবে Fiction। বক্তব্য শেষ করার আগে কোরআনের সূরা আল ইমরানের ৫৪ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। উহাতে সুন্দর করে বলা হয়েছে–
“আর তারা চক্রান্ত করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কৌশলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”
“আমাদের সর্বশেষ বক্তব্য হচ্ছে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের প্রতিপালন আল্লাহর জন্য।”
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন