HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জামা‘আতে সালাত আদায় [বিধান, ফযীলত, ফায়েদা ও নিয়ম-কানূন]

লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয আল-মাদানী

১০
জামা‘আত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল:
সর্বনিম্ন শুধু দু’ জন দিয়েই জামা‘আত সংঘটিত হয়। একজন ইমাম ও একজন মুক্তাদি। চাই উক্ত মুক্তাদি কোনো নাবালক ছেলেই হোক অথবা কোনো মাহ্রাম মহিলা:

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الـْحَارِثِ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهَا فِي لَيْلَتِهَا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيْ مِنْ اللَّيْلِ فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِرَأْسِيْ فَأَقَامَنِيْ عَنْ يَمِينِهِ» .

“আমি একদা আমার খালা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হযরত মাইমূনা বিনতে আল-হারিস-এর নিকট রাত্রি যাপন করেছি। সে রাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরেই ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রি বেলায় সালাত আদায় করতে উঠলে আমিও তাঁর সাথে সালাত আদায়ের জন্য উঠলাম। অতঃপর আমি তাঁর বাঁয়েই দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে আমার মাথা ধরে তাঁর ডানেই দাঁড় করিয়ে দিলেন”। [বুখারী, হাদীস নং ১১৭, ৬৯৯ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৩]

মালিক ইবন হুওয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَى رَجُلَانِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدَانِ السَّفَرَ، فَقَالَ النَّبِـيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا أَنْتُمَا خَرَجْتُمَا، فَأَذِّنَا، ثُمَّ أَقِيمَا، ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا» .

“একদা দু’ ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সফরের মানসিকতা নিয়েই দেখা করতে আসলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: যখন তোমরা সফরের উদ্দেশ্যে বের হবে তখন তোমরা (জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য) আযান-ইক্বামত দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যিনি বয়স্ক তিনিই তোমাদের ইমামতি করবেন”। [বুখারী, হাদীস নং ৬৩০ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৪]

প্রয়োজনবশতঃ একজন পুরুষ ও একজন মহিলা নিয়ে যে কোনো সালাতের জামা‘আত সংঘটিত হয়:

আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا اسْتَيْقَظَ الرَّجُلُ مِنْ اللَّيْلِ وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّيَا رَكْعَتَيْنِ كُتِبَا مِنْ الذَّاكِرِينَ اللهُ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ» .

“যখন কোনো পুরুষ রাত্রি বেলায় জাগে এবং নিজ স্ত্রীকেও জাগায় অতঃপর উভয়ে দু’ রাকাত সালাত পড়ে তখন তাদের উভয়কে আল্লাহর অত্যধিক যিকিরকারী পুরুষ ও অত্যধিক যিকিরকারিণী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩০৯ ইবন মাজাহ্, হাদীস নং ১৩৩৫]

মূলতঃ দু’ জন পুরুষে যেমন জামা‘আত হয় তেমনিভাবে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা নিয়েও জামা‘আত হবে। এটিই হচ্ছে একটি মৌলিক বিধান। আর এর বিপরীত কোনো প্রমাণ নেই। যে ব্যক্তি তা নিষেধ করবে তাকে অবশ্যই এর বিপরীত প্রমাণ দিতে হবে। তবে মহিলাটি উক্ত পুরুষের কোনো মাহরম মহিলা না হলে একান্তে তাদের উভয়ের জামা‘আত শুদ্ধ হবে না।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! امْرَأَتِيْ خَرَجَتْ حَاجَّةً، وَاكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، قَالَ : ارْجِعْ فَحُجَّ مَعَ امْرَاَتِكَ» .

“কোনো পুরুষ কোনো বেগানা মহিলার সাথে কখনো একান্তে অবস্থান করবে না। তবে কোনো মাহরাম মহিলাকে নিয়ে একান্তে অবস্থান করা যায়। জনৈক ব্যক্তি তখন দাঁড়িয়ে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী তো একাকী হজ করতে বেরিয়েছে অথচ আমার নামটুকু অমুক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য লেখা হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: তুমি চলে যাও। তোমার স্ত্রীর সাথে হজ করো”।

একজন নাবালক ছেলে যেমন ফরয বা নফল সালাতের ইমাম হতে পারে তেমনিভাবে তাকে নিয়ে জামা‘আতের একটি সারিও হতে পারে:

আমর ইবন সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার পিতা বলেন:

«جِئْتُكُمْ وَاللَّهِ مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَقًّا فَقَالَ : صَلُّوا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِينِ كَذَا وَصَلُّوا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِينِ كَذَا فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا، فَنَظَرُوْا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّيْ، لِمَا كُنْتُ أَتَلَقَّى مِنَ الرُّكْبَانِ فَقَدَّمُوْنِيْ بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ، وَأَنَا ابْنُ سِتٍّ أَوْ سَبْعِ سِنِينَ، وَكَانَتْ عَلَيَّ بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّي فَقَالَتْ امْرَأَةٌ مِنَ الْحَيِّ أَلَا تُغَطُّوا عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ فَاشْتَرَوْا فَقَطَعُوْا لِيْ قَمِيصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِيْ بِذَلِكَ الْقَمِيصِ» .

“আল্লাহর কসম! আমি সত্যিই তোমাদের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এসেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: তোমরা এ সালাত এ সময়ে পড়বে এবং ও সালাত ও সময়ে পড়বে। যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের কোনো একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে কুর’আন বেশি জানে সে ইমামতি করবে। যখন তারা গোত্রের সবার ওপর চোখ বুলিয়ে দেখলো তখন তারা আমার চেয়ে বেশি কুরআন জানে এমন কাউকে খুঁজে পায় নি। কারণ, আমি তো ইতোমধ্যেই পথচারী আরোহীদের থেকে অনেক কিছুই শিখে ফেলেছি। তখন তারা আমাকে ইমামতির জন্য সামনে বাড়িয়ে দিলো। আমার বয়স ছিলো তখন ছয় বা সাত বছর। আমার গায়ে ছিলো তখন একটি চাদর। আমি যখন সাজদায় যেতাম তখন আমার চাদর খানা একটু উপরে চলে আসতো। তখন পাড়ার এক মহিলা বললো: তোমরা কি তোমাদের ইমাম সাহেবের পাছা খানা ঢেকে দিবে না। তখন তারা কাপড় কিনে আমাকে একটি জামা সেলাই করে দিলো। তাতে আমি এতো বেশি খুশি হলাম যা ইতোপূর্বে আর কখনো হই নি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩০২।]

উক্ত মজার ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায়ই ঘটেছিলো। তিনি অবশ্যই তা জেনেছেন ও সমর্থন করেছেন। তা না হলে আল্লাহ তা‘আলা তো তা অবশ্যই জানতেন। যদি তা সঠিকই না হতো তাহলে তিনি অবশ্যই তা ওহী মারফত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানিয়ে দিতেন। কারণ, তখন তো ছিলো বিধান নাযিল হওয়ার যুগ। আর কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কিরাম দীর্ঘ সময় একটি ভুলের ওপর থাকবেন অথচ আল্লাহ তা‘আলা তা দেখেও নীরব থাকবেন তা কখনোই হতে পারে না।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَمَا هُوَ إِلَّا أَنَا وَأُمِّيْ وَأُمُّ حَرَامٍ خَالَتِيْ فَقَالَ : قُومُوا فَلِأُصَلِّيَ بِكُمْ - فِي غَيْرِ وَقْتِ صَلَاةٍ - فَصَلَّى بِنَا، فَقَالَ رَجُلٌ لِثَابِتٍ : أَيْنَ جَعَلَ أَنَسًا مِنْهُ؟ قَالَ : جَعَلَهُ عَلَى يَمِينِهِ، ثُمَّ دَعَا لَنَا أَهْلَ الْبَيْتِ بِكُلِّ خَيْرٍ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِــرَةِ، فَقَالَتْ أُمِّيْ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! خُوَيْدِمُكَ ادْعُ اللَّهَ لَهُ، قَالَ : فَدَعَا لِي بِكُلِّ خَيْرٍ، وَكَانَ فِيْ آخِـرِ مَا دَعَا لِيْ بِهِ أَنْ قَالَ : اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيهِ» .

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএকদা আমাদের ঘরে আসলেন। তখন আমাদের ঘরে ছিলাম আমি, আমার আম্মা ও আমার খালা উম্মু হারাম। তখন তিনি বললেন: তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়বো। তখন কোনো ফরয সালাতের সময় ছিলো না। অতঃপর তিনি আমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়লেন। জনৈক ব্যক্তি বর্ণনাকারী হযরত সাবিত রহ. কে জিজ্ঞাসা করলো: আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো পার্শ্বে ছিলেন? তিনি বলেন: তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান পার্শ্বে ছিলেন। অতঃপর তিনি আমাদের ঘরের সকলের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ কল্যাণের দো‘আ করলেন। আমার আম্মু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার ছোট খাদেমটির জন্য বিশেষভাবে দো‘আ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য সমূহ কল্যাণের দো‘আ করলেন। তিনি আমার জন্য সর্ব শেষ যে দো‘আটি করলেন তা হলো: হে আল্লাহ! আপনি এর সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দিন এবং সেগুলোর মধ্যে বরকত দিন” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬০।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:

«أَنَّ جَدَّتَهُ مُلَيْكَةَ دَعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَتْهُ فَأَكَلَ مِنْهُ ثُمَّ قَالَ : قُومُوا فَأُصَلِّيَ لَكُمْ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ : فَقُمْتُ إِلَى حَصِيرٍ لَنَا قَدْ اسْوَدَّ مِنْ طُولِ مَا لُبِسَ فَنَضَحْتُهُ بِمَاءٍ فَقَامَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَفَفْتُ أَنَا وَالْيَتِيمُ وَرَاءَهُ وَالْعَجُوزُ مِنْ وَرَائِنَا فَصَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ انْصَرَفَ» .

“একদা তার দাদী মুলাইকাহ রাদিয়াল্লাহ আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছু খানা বানিয়ে তা খাওয়ার জন্য তাঁকে দাওয়াত করলেন। তখন তিনি এসে তা খেলেন অতঃপর বললেন: তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়বো। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি একটি পুরাণ পাটির উপর যা দীর্ঘ দিন থাকতে থাকতে কালো হয়ে গিয়েছিলো তার ওপর পানি ছিঁটিয়ে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর দাঁড়ালেন এবং আমি ও একজন এতিম তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। আর আমার দাদী আমাদের পেছনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে নিয়ে দু’ রাকাত সালাত পড়লেন। অতঃপর চলে গেলেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৮।]

কেউ কোনো সালাতের একটি রাকাত জামা‘আতের সাথে পেলেই সে পুরো জামা‘আত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে রুকু’ পেলেই কোনো রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। নতুবা নয়:

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنْ الصَّلَاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ» .

“যে ব্যক্তি কোনো সালাতের একটি রাকাত (ইমামের সাথে) পেলো সে যেন পুরো সালাতই ইমামের সাথে পেলো”। [বুখারী, হাদীস নং ৫৮০ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৭]

আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকু অবস্থায় পেলে তিনি তখন সালাতের সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনেই রুকু’ করে ফেললেন। ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে তিনি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ» .

“আল্লাহ তা‘আলা তোমার সালাতের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এ কাজ তুমি আর কখনো করবে না। তথা সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনে কখনো দ্রুত রুকু’ করবে না”। [বুখারী, হাদীস নং ৭৮৩]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ» .

“যখন তোমরা আমাদেরকে সালাতের সেজ্দাহ্রত অবস্থায় পাও তখন তোমরাও সাজদাহ করো। তবে উহাকে রাকাত হিসেবে ধরবে না। আর যে ব্যক্তি রুকু’ তথা রাকাত পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৯৩।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاَةِ فَقَدْ أَدْرَكَهَا قَبْلَ أَنْ يُقِيمَ الإِمَامُ صُلْبَهُ» .

“যে ব্যক্তি ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে নিজ পিঠ উঠানোর আগেই তাঁর সাথে রুকু’ পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”। [বায়হাক্বী, হাদীস নং ২৬৭৮; দারাক্বুত্ব্নী, হাদীস নং ১; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৫৯৫।]

তবে কোনো ব্যক্তি ওযরবশতঃ সালাতে হাজির হতে দেরি করে ফেললে এবং সে মসজিদে এসে সালাতের রুকু না পেয়ে তার কোনো একটি অংশ পেলে অথচ সে সর্বদা সালাতের পাবন্দ তবুও সে জামা‘আত পেলো না বলে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু তাকে নিয়্যাত ভালো ও ওযর থাকার দরুন জামা‘আতের সাওয়াব দেওয়া হবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ اللهُ جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا» .

“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলো অতঃপর দেখলো মানুষ সালাত পড়ে ফেলেছে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সালাত পড়ুয়াদের ন্যায় জামা‘আতের সাওয়াব দিয়ে দিবেন। এমনকি তাদের সাওয়াবে একটুও ঘাটতি করা হবে না”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৪।]

আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا» .

“যখন কোনো বান্দা রোগাক্রান্ত অথবা সফররত অবস্থায় থাকে তখন তার জন্য তার আমলনামায় মুক্বীম (নিজ এলাকা অথবা তেমন কোনো এলাকায় ইক্বামতের নিয়্যাতে অবস্থানরত অবস্থা) ও সুস্থ অবস্থার আমলের ন্যায় আমল লেখা হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৬।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তিনি বললেন:

«إِنَّ أَقْوَامًا بِالـْمَدِينَةِ خَلْفَنَا مَا سَلَكْنَا شِعْبًا وَلَا وَادِيًا إِلَّا وَهُمْ مَعَنَا فِيهِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ» .

“কিছু সংখ্যক লোক এমন রয়েছে যাদেরকে আমরা মদিনায় রেখে এসেছি অথচ আমরা যে কোনো গিরি পথ ও উপত্যকায় গিয়েছিলাম তারা সেখানে আমাদের সাথেই ছিলো। তাদেরকে মদিনায় একমাত্র ওযরই আটকে রেখেছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৩৮, ২৮৩৯।]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

«إِنَّ بِالْـمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلَا قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلَّا كَانُوا مَعَكُمْ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ؟ قَالَ : وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ» .

“মদিনায় এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে; তোমরা যে পথ বা উপত্যকাই অতিক্রম করেছো তারা তোমাদের সাথেই ছিলো। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! তারা তো বস্তুতঃ মদিনায় রয়েছে অথচ তারা আমাদের সাথে থাকলো কি ভাবে? তিনি বললেন: তারা সত্যিই মদিনায়। একমাত্র ওযরই তাদেরকে সেখানে আটকে রেখেছে। তবে তারা মানসিকভাবে তথা আগ্রহ ও উৎসাহের দিক দিয়ে তোমাদের সাথেই রয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪২৩।]

উক্ত হাদীসগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, কেউ কোনো শর’য়ী ওযরের কারণে কোনো সৎকর্ম করতে না পারলে তাকে উক্ত কর্ম সম্পাদনের সমপরিমাণই সাওয়াব দেওয়া হয়।

কেউ ইমাম সাহেবের সাথে প্রথম জামা‘আতে সালাত আদায় করতে না পারলে তার জন্য উক্ত মসজিদেই দ্বিতীয় জামা‘আত করা বৈধ:

একই মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত করার কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে যা নিম্নরূপ:

১. একই মসজিদে নিয়মিত দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। তথা প্রতি বেলায় কোনো মসজিদে দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। এমনটি করা বিদ‘আত।

২. কখনো কখনো কোনো মসজিদে দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। যা নিয়মিত নয়। তথা নিয়মিত ইমাম একটি জামা‘আত সম্পন্ন করে গেছেন। এ দিকে দু’ বা ততোধিক ব্যক্তি কোনো ওযরবশতঃ উক্ত জামা‘আতে হাজির হতে পারেনি। তখন তারা কি উক্ত মসজিদেই দ্বিতীয় জামা‘আত করতে পারবে? না কি নয়। তা নিয়েই আমাদের উক্ত আলোচনা।

কেউ কেউ বলেন: উক্ত মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত আর করা যাবে না। বরং তারা একাকী সালাত আদায় করবে। আর কেউ কেউ বলেন: তাদের জন্য দ্বিতীয় জামা‘আত করা জায়িয ও মুস্তাহাব। এটিই সঠিক মত। যা নিম্নে প্রমাণ সহ বর্ণিত হবে। ইনশাআল্লাহ।

৩. কোনো রাস্তা-ঘাটের মসজিদ। যেখানে কোনো নিয়মিত ইমাম নেই। সেখানে প্রতি বেলায় দু’ বা ততোধিক লোক ঢুকছে। আর সালাত পড়ে চলে যাচ্ছে। আবার দু’ বা ততোধিক লোক ঢুকছে। আর সালাত পড়ে চলে যাচ্ছে। এ জাতীয় মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত একেবারেই বৈধ। তাতে কোনো দ্বিমত নেই।

নিম্নে একই মসজিদে অনিয়মিত দ্বিতীয় জামা‘আত বৈধ হওয়ার প্রমাণ উল্লিখিত হয়েছে। যা উপরে বর্ণিত দ্বিতীয় পদ্ধতি।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে জোহরের সালাত আদায় করলেন। ইতিমধ্যে জনৈক সাহাবী মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি আমাদের সাথে জামা‘আতে উপস্থিত হলে না কেন? তখন তিনি কোনো একটি ওযর দেখিয়ে একাকী সালাত আদায় করতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّيَ مَعَهُ؟» .

“এমন কি কেউ আছে যে এর ওপর সাদাকা করবে তথা এর সাথে সালাত পড়বে”? [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৪; আহমদ, হাদীস নং ১০৯৮০, ১১৩৮০, ১১৮০৮; ইবন হিববান, হাদীস নং ২৩৯৭-২৩৯৯; আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ১০৫৭।]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

«أَيُّكُمْ يَتَّجِرُ عَلَى هَذَا؟ فَقَامَ رَجُلٌ فَصَلَّى مَعَهُ» .

“এমন কি কেউ আছে যে এর সাথে ব্যবসা করবে তথা এর সাথে সালাত পড়বে? তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে সালাত পড়লো”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২২০।]

ইমাম শাওকানী রহ. বলেন: যিনি তাঁর সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন তিনি ছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। [নাইলুল-আওত্বার ২/৩৮০।]

উক্ত হাদীস থেকে দু’টি জিনিস সুস্পষ্ট। যার একটি হচ্ছে, কাউকে কখনো একাকীভাবে ওয়াক্তিয়া তথা তখনকার ফরয সালাত আদায় করতে দেখলে উক্ত ফরয সালাত কিংবা নফল সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তার সাথে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। যদিও সে ইতোপূর্বে নিয়মিত জামা‘আতের সাথে উক্ত ফরয সালাত আদায় করে থাকে। তেমনিভাবে হাদীসটি একই মসজিদে অনিয়মিত দ্বিতীয় জামা‘আত জায়েয হওয়া প্রমাণ করে। জামা‘আতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোও দূর থেকে এর সমর্থন করে। কেউ যদি বলে, জামা‘আতের ফযীলতগুলো শুধু প্রথম জামা‘আতের সাথেই সীমাবদ্ধ তাহলে তাকে এ সংক্রান্ত অন্তত একটি বিশেষ প্রমাণ হলেও উল্লেখ করতে হবে।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা কিছু সংখ্যক লোককে সাথে নিয়ে একবার জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন মসজিদে আযান ও ইক্বামত দিয়ে দ্বিতীয় জামা‘আত আদায় করেন। [সহীহ বুখারী/জামা‘আতে সালাত পড়ার ফযীলত অধ্যায়।]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আলকামা, মাসরূক, আসওয়াদ, হাসান, ক্বাতাদাহ ও আত্বা রহ. তার এক বর্ণনায় উক্ত মত পোষণ করেন।

এদিকে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا تُصَلُّوا صَلَاةً فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ» .

“একই দিনে একই সালাত দু’ বার পড়া যাবে না”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৬০।]

তা থেকে উদ্দেশ্য একই দিনে একই ফরয সালাত ফরযের নিয়্যাতে দু’ বার পড়া। একই ফরয সালাত দ্বিতীয়বার নফলের নিয়্যাতে পড়া কখনো এর বিরোধী নয়।

একবার কোনো ফরয সালাত একাকী আদায় করলে তা দ্বিতীয় বার জামা‘আতের সাথে নফলের নিয়্যাতে আদায় করা যায়:

আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

«كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا أَوْ يُمِيتُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا؟ قَالَ : قُلْتُ : فَمَا تَأْمُرُنِيْ؟ قَالَ : صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ، وَفِيْ رِوَايَةٍ : وَلاَ تَقُلْ : إِنِّيْ قَدْ صَلَّيْتُ فَلاَ اُصَلِّيْ» .

“তুমি তখন কি করবে? যখন তোমার ওপর এমন সকল আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে। যারা সময় মতো সালাত না পড়ে সালাতকে সত্যিকারার্থে নির্জীব করে দিবে। তিনি বলেন: তখন আমি বললাম: আপনি তখন আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বলেন: তুমি সময় মতো নিজের সালাতটুকু পড়ে নিবে। অতঃপর তুমি আবার তাদেরকে উক্ত সালাত জামা‘আতে পড়তে দেখলে তা দ্বিতীয়বার পড়ে নিবে যা তোমার জন্য নফল হিসেবেই বিবেচিত হবে। তুমি কখনো এমন বলবে না যে, আমি তো উক্ত সালাত একবার পড়ে ফেলেছি। তাই আর পড়বো না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৮।]

ইয়াযীদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজ করতে গিয়েছিলাম। তখন আমি তাঁর সাথে মাস্জিদুল-খাইফে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে যখন তিনি মানুষের দিকে ফিরলেন তখন তিনি দু’ জন ব্যক্তিকে সবার পেছনে মসজিদের এক কোনায় সালাত না পড়ে বসে থাকতে দেখলেন। তখন তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন: এদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসো। অতঃপর তাদেরকে ভয়ার্তাবস্থায় তাঁর কাছে নিয়ে আসা হলে তিনি তাদেরকে বললেন: তোমরা আমাদের সাথে সালাত পড়লে না কেন? তারা বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো ইতোপূর্বে নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে এসেছি। তখন তিনি বললেন:

«فَلَا تَفْعَلَا؛ إِذَا صَلَّيْتُمَا فِي رِحَالِكُمَا، ثُمَّ أَتَيْتُمَا مَسْجِدَ جَمَاعَةٍ، فَصَلِّيَا مَعَهُمْ ؛ فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ» .

“তোমরা কখনো আর এমন করো না। তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে থাকলে অতঃপর মসজিদে আসলে সবার সাথে আবার মসজিদে সালাত পড়বে। যা তোমাদের জন্য নফল হবে”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২১৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৫৮।]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

«لَا تَفْعَلُوا، إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فِي رَحْلِهِ، ثُمَّ أَدْرَكَ الْإِمَامَ وَلَمْ يُصَلِّ، فَلْيُصَلِّ مَعَهُ؛ فَإِنَّهَا لَهُ نَافِلَةٌ» .

“তোমরা কখনো আর এমন করো না। তোমাদের কেউ নিজ ঘরে সালাত পড়ে থাকলে অতঃপর (মসজিদে এসে) আবারো ইমাম সাহেবকে উক্ত সালাত না পড়াবস্থায় পেলে সে যেন তার সাথে আবার সালাতটুকু পড়ে নেয়। যা তার জন্য নফল হবে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৫।]

মিহজান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। আর ইতিমধ্যে সালাতের আযান হয়ে গেলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে গিয়ে সালাত পড়ে আবার ফিরে আসলেন অথচ আমি সেখানেই বসে ছিলাম। তাঁর সাথে আমি সালাত আদায় করতে যাই নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ أَلَسْتَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ؟ قَالَ : بَلَى، وَلَكِنِّي كُنْتُ قَدْ صَلَّيْتُ فِي أَهْلِي، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا جِئْتَ فَصَلِّ مَعَ النَّاسِ، وَاِنْ كُنْتَ قَدْ صَلَّيْتَ» .

“তুমি কেন আমাদের সাথে সালাত পড়লে না? তুমি কি মুসলমান নও? মিহজান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি নিশ্চয় মুসলিম। তবে আমি ঘরে সালাত পড়ে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি যখন (মসজিদে) আসবে তখন মানুষের সাথে সালাত পড়বে। যদিও ইতোপূর্বে সালাত পড়ে থাকো”। [নাসাঈ, হাদীস নং ৮৫৭।]

উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِيْ أُمَرَاءُ، تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا، حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا، فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، فَقَالَ رَجُلٌ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! أُصَلِّي مَعَهُمْ؟ قَالَ : نَعَمْ، اِنْ شِئْتَ» .

“অচিরেই আমার মৃত্যুর পর তোমাদের ওপর এমন কিছু আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে যাদেরকে দুনিয়ার প্রচুর ঝামেলাময় কর্মকান্ড সময় মতো সালাত পড়া থেকে বিরত রাখবে। এমনকি কখনো কখনো সালাতের সঠিক সময়টুকুও পার হয়ে যাবে। তখন তোমরা সময় মতো সালাত পড়ে নিবে। জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি পরবর্তীতে উক্ত সালাত তাদের সাথে আবার পড়বো? হ্যাঁ। তোমার যদি মনে চায়”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩।]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«كَيْفَ بِكُمْ إِذَا أَتَتْ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ، يُصَلُّونَ الصَّلَاةَ لِغَيْرِ مِيقَاتِهَا؟ ! ، قُلْتُ : فَمَا تَأْمُرُنِي؟ إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ! قَالَ : صَلِّ الصَّلَاةَ لِمِيقَاتِهَا وَاجْعَلْ صَلَاتَكَ مَعَهُمْ سُبْحَةً» .

“তোমরা তখন কি করবে? যখন তোমাদের ওপর এমন কিছু আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে। যারা অসময়ে সালাত পড়বে। আমি বললাম: তখন আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি সময় মতো নিজের সালাতটুকু পড়ে নাও এবং তাদের সাথে যে সালাত পড়বে তা হবে তোমার জন্য নফল”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩।]

কেউ ইমাম সাহেবের সাথে পুরো সালাত না পেলে যতটুকু পেয়েছে তা পড়ে নিবে। যা তার শুরু সালাত বলেই বিবেচিত হবে। আর বাকি অংশটুকু সে সালামের পর পুরো করে নিবে:

মুগীরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা তাবুক যুদ্ধে থাকাবস্থায় ফজরের সালাতের কিছু পূর্বে আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষজন থেকে একটু দূরে সরে গেলাম। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠ থেকে নেমে প্রস্রাব করলেন। অতঃপর আমি ঘটি থেকে তাঁর হাতে পানি প্রবাহিত করলে তিনি সর্বপ্রথম তাঁর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন। এরপর তাঁর মুখমন্ডল ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত খুলতে চাইলে তা না পেরে তিনি হাত দু’টো জুববার নিচ থেকে বের করলেন। এরপর তিনি হাত দু’টো কনুই পর্যন্ত ধুলে এবং মাথা ও মোজা মাসেহ করলে আমি ও তিনি উটে সাওয়ার হলাম। আমরা সবার নিকট পৌঁছুলে দেখলাম, আব্দুর রহ্মান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাত পড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে ফজরের এক রাকাত সালাত শেষ হয়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সাথে সারিবদ্ধ হয়ে আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুর পেছনে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করলেন। আব্দুর রহ্মান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাম ফিরালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকি সালাত পুরো করার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। এ দিকে মুসলমানরা হতভম্ব হয়ে বার বার “সুব্হানাল্লাহ” “সুব্হানাল্লাহ” বলতে লাগলো। কারণ, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগেই তাদের সালাত শেষ করে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে তাদেরকে বললেন:

«قَــدْ أَصَبْتُـمْ أَوْ قَدْ اَحْسَنْتُـمْ» .

“তোমরা ঠিক করেছো কিংবা ভালো করেছো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৪; আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৮৫, ১৮১৯৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৯।]

উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের পর বাকি সালাতটুকু পুরো করলেন থেকে বুঝা যায় তাঁর পূর্বের সালাতটুকু তাঁর শুরু সালাত ছিলো। নিম্নোক্ত হাদীসও এর প্রমাণ বহন করে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَـةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ، وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ، وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا» .

“তোমরা যখন ইক্বামত শুনবে তখনই সালাতের দিকে রওয়ানা করবে। চলার সময় প্রশান্তি ও ভদ্রতা বজায় রাখবে। দৌড়ে যাবে না। অতঃপর যা পাবে তাই ইমামের সাথে পড়ে নিবে। আর বাকিটুকু পুরো করে নিবে”। [বুখারী, হাদীস নং ৬৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯০৮।]

কোনো কোনো বর্ণনায় فَاقْضُوْا শব্দ থাকলেও তা থেকে কোনো কাজ সম্পাদন করার অর্থই বুঝতে হবে। কোনো ছেড়ে যাওয়া কাজ হুবহু করার অর্থ নয়। তাহলে সবগুলো বর্ণনার মাঝে একটা সামঞ্জস্য সাধিত হবে।

মসজিদে এসে ইমাম সাহেবকে যে অবস্থায়ই পাবে সে অবস্থায়ই তাঁর সাথে সালাতে শরীক হবে। আগের রাক্’আতের সাজ্দাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত এমনিতেই দাঁড়িয়ে থাকবে না:

আলী ও মুআয রাদিয়াল্লাহ আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ الصَّلَاةَ، وَالْإِمَامُ عَلَى حَالٍ، فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ» .

“তোমাদের কেউ যখন জামা‘আতের সালাতে উপস্থিত হয়। আর সে দেখতে পাচ্ছে, ইমাম সাহেব কোনো এক অবস্থায় রয়েছেন। তখন সে তাই করবে যা ইমাম সাহেব করছেন”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৫৯১।]

তবে কোনো রাকাতের রুকু’ পেলেই উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। নতুবা নয় যা ইতোপূর্বে বিস্তারিত উল্লেখ হয়েছে।

কাউকে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে বাধা দেওয়া যাবে না:

কেউ কেউ নিজ প্রাইভেট ড্রাইভার কিংবা দোকানের কর্মচারীদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে বাধা দিয়ে থাকে। তা করা কোনোভাবেই তার জন্য জায়িয নয়। কারণ, জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব এবং তা আল্লাহ তা‘আলার একান্ত অধিকার তথা আনুগত্যও বটে। আর এ কথা জানা যে, আল্লাহ তা‘আলার অধিকার ও আনুগত্য সবার অধিকার ও আনুগত্যের ওপর। তাই আল্লাহ তা‘আলার অধিকার খর্ব করার সাধ্য কারোর নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ﴾ [ المائ‍دة : ٢ ]

“তোমরা নেক ও আল্লাহ্ভীরুতার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো। গুনাহ ও হঠকারিতার কাজে কাউকে সহযোগিতা করো না। সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কঠিন শাস্তিদাতা”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ২]

জামা‘আতের কাতার সোজা করা সুন্নাত কিংবা ওয়াজিব:

জামা‘আতের কাতার সোজা করা সুন্নাত। তবে কেউ কেউ তা ওয়াজিব বলেও মত ব্যক্ত করেছেন।

নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত আমাদের কাতারগুলো সোজা করতেন যেন তিনি তীর সোজা করছেন। যতক্ষণ না তিনি বুঝলেন, আমারা ব্যাপারটি বুঝে ফেলেছি। একদা তিনি সালাতের তাকবীর দিবেন দিবেন এমতাবস্থায় দেখলেন, জনৈক সাহাবীর ছাতি অন্যদের তুলনায় একটু সামনের দিকে বের হয়ে আছে তখন তিনি সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ» .

“তোমরা সালাতের কাতারগুলো সোজা করবে। নয় তো আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মাঝে ভিন্নতা সৃষ্টি করবেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৬।]

রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদিতে ইমাম সাহেবের আগে যাওয়া, সাথে সাথে যাওয়া অথবা অনেক পরে যাওয়া চলবে না। বরং যে কোনো কাজ ইমাম সাহেবের একটু পরেই করতে হবে।

“ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে পুরোপুরি রুকুতে চলে যাবেন তখন মুক্তাদিগণ রুকু করতে অগ্রসর হবেন। তেমনিভাবে ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে সাজদাহ’র জন্য জমিনে কপাল ঠেকাবেন তখনই মুক্তাদিগণ তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবেন। ইমাম সাহেবের আগে, বহু পরে ও সমানতালে কোনো রুকন আদায় করা যাবে না”।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَمَا يَخْشَى الَّذِيْ يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ أَوْ يُحَوِّلَ صُوْرَتَهُ صُوْرَةَ حِمَارٍ » .

“ঐ ব্যক্তি কি ভয় পাচ্ছে না যে ইমাম সাহেবের পূর্বেই রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করবেন অথবা তার গঠনকে গাধার গঠনে পরিণত করবেন”। [সহীহবুখারী, হাদীস নং ৬৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬২৩।]

আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الإِمَامُ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ» .

“ইমাম সাহেব তোমাদের আগেই রুকু করবেন এবং তোমাদের আগেই রুকু থেকে মাথা উঠাবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৪; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৫৯৩।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالْقُعُوْدِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ» .

“তোমরা আমার আগে রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ও সালাম আদায় করো না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৬।]

আব্দুল্লাহ ইবন মাস’ঊদ্ ও আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা একদা রুকন আদায়ে ইমামের অগ্রবর্তী জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

«لاَ وَحْدَكَ صَلَّيْتَ وَلاَ بِإِمَامِكَ اِقْتَدَيْتَ» .

“(তোমার সালাতই হয় নি) না তুমি একা সালাত পড়লে। না ইমাম সাহেবের সাথে পড়লে”। [উমদাতুল-ক্বারি ৮/৩৮৩; আবু দাউদ/আইনি ৩/১৫০।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ» .

“মূলতঃ ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলে তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন”। [সহীহবুখারী, হাদীস নং ৩৭৮, ৮০৫, ১১১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪, ৪১৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬০৩।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا كَبَّرَ الإِمَامُ فَكَبِّرُوْا وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ وَقَاْلَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَارْفَعُوْا وَقُوْلُوْا رَبَّنَا وَلَكَ الْـحَمْدُ وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوْا» .

“যখন ইমাম সাহেব তাকবীর সমাপ্ত করবেন তখন তোমরা তাকবীর বলবে। আর যখন তিনি রুকুতে চলে যাবেন তখন তোমরা রুকু শুরু করবে। আর যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে “সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন তোমরা রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে “রাববানা ওয়া লাকাল হাম্দ” বলবে। আর যখন তিনি সাজদায় যাবেন তখন তোমরা সাজদাহ শুরু করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২২, ৭৩৪, ৮০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪।]

বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْحَطَّ لِلسُّجُوْدِ لاَ يَحْنِيْ أَحَدٌ ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَبْهَتَهُ عَلَى الأَرْضِ» .

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামযখন সাজদাহ’র জন্য ঝুঁকে পড়তেন তখনো আমাদের কেউ নিজ পৃষ্ঠদেশ বাঁকা করতো না যতক্ষণ না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামনিজ কপাল জমিনে রাখতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯০, ৮১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬২১।]

মুসল্লীদের কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে একই জামা‘আতে সালাত আদায়ের বিধান:

মূলতঃ উক্ত মাসআলার তিনটি দিক হতে পারে। অন্য কথায় বলা যেতে পারে, কেউ জামা‘আতে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলো, সামনের কাতারগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তখন সে নিম্নোক্ত তিনটি কাজের যে কোনো একটি করতে পারে:

ক. সে মুসল্লীদের কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে উক্ত ইমামের পেছনেই সালাত পড়বে।

খ. সামনের কাতার থেকে কাউকে টেনে নিয়ে ভিন্ন আরেকটি কাতার বানিয়ে সালাত পড়বে।

গ. ইমাম সাহেবের ডান পার্শ্বে গিয়ে তাঁর সাথেই কাতার বানিয়ে সালাত পড়বে।

এ দিকগুলো হচ্ছে যদি সে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে চায়। আর যদি সে জামা‘আতে সালাত না পড়ে একাকী পড়তে চায় তা হলে তা হবে চতুর্থ আরেকটি দিক।

উক্ত চারটি দিকের প্রথমটিই হচ্ছে সঠিক মত। কারণ, লোকটির ওপর ছিলো মূলতঃ দু’টি ওয়াজিব। তার একটি হচ্ছে জামা‘আতে সালাত পড়া। অপরটি হচ্ছে জামা‘আতে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। যখন তার জন্য দ্বিতীয়টি করা সম্ভবপর নয় তখন সে শুধু প্রথমটিই করবে। যেমন: কোনো মহিলা একাকী হলে তাকেও কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

ﭽ ﮧ ﮨ ﮩ ﮪﭼ

“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]

বাকি তিনটি দিকের কোনোটি করা তার জন্য কোনোভাবেই সঠিক নয়। কারণ, দ্বিতীয়টি তথা সামনের কাতার থেকে কাউকে টেনে নিয়ে ভিন্ন আরেকটি কাতার বানিয়ে সালাত আদায় করতে গেলে নিম্নোক্ত তিনটি সমস্যা দেখা দিবে:

১. আগের কাতার থেকে একটি লোককে পেছনে টেনে নেয়ার কারণে তাতে একটি খালিস্থান সৃষ্টি হবে। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ কাতার পুরা করা ও তাতে কোনো খালি জায়গা না রাখা বিরোধী। যা কখনো চলতে দেওয়া যায় না।

২. উক্ত লোকটিকে একটি ভালো জায়গা থেকে তার চাইতে মানে নিম্ন এমন একটি জায়গায় নেওয়া হলো। যা করা সত্যিই অনুচিত।

৩. উক্ত লোকটিকে পেছনে টেনে নেওয়ার দরুন তার সালাতের মনোযোগে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করা হলো। যা করাও সত্যিই অনুচিত।

তৃতীয় দিক তথা ইমাম সাহেবের ডান পার্শ্বে গিয়ে তাঁর সাথেই কাতার বানিয়ে সালাত পড়াও সঠিক নয়। কারণ, ইমাম সাহেবকে তো স্থানের দিক দিয়েও তাঁর মুসল্লীদের তুলনায় একটু বিশেষ অবস্থানে থাকা উচিৎ। যেমনিভাবে তিনি সালাতের যে কোনো মৌখিক যিকির ও কাজে অন্যান্যদের তুলনায় কিছুটা অগ্রবর্তী রয়েছেন। এ দিকে কোনো মুসল্লী তাঁর সাথে পাশাপাশি দাঁড়ালে তাঁর আর স্থানগত কোনো বিশেষত্ব থাকে না।

চতুর্থ দিক তথা এমতাবস্থায় জামা‘আতে সালাত না পড়ে একাকী পড়া তাও কোনোভাবেই সঠিক নয়। কারণ, লোকটির ওপর মূলতঃ রয়েছে দু’টি ওয়াজিব। যার একটি হচ্ছে জামা‘আতে সালাত পড়া। অপরটি হচ্ছে জামা‘আতে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। যখন তার জন্য দ্বিতীয়টি করা সম্ভবপর নয় তখন সে শুধু প্রথমটিই করবে। দ্বিতীয়টি করতে পারছে না বলে প্রথমটিও সে বাদ দিবে তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।

ইমাম সাহেবের বরাবর পেছন থেকেই জামা‘আতের কাতারগুলো শুরু করতে হয়:

জামা‘আতের যে কোনো কাতার ইমাম সাহেবের বরাবর পেছন থেকেই শুরু করতে হয়। প্রথমে ডান দিকে অতঃপর বাম দিকে। এভাবেই যে কোনো কাতার পুরা করতে হয়। কারণ, ইমাম সাহেবই তো হচ্ছেন জামা‘আতের কেন্দ্র বিন্দু। এ দিকে কাতারের ডান দিকের ফযীলত তো রয়েছেই।

কেউ কেউ আবার কাতারের ডান দিকের একেবারে শেষাংশ থেকে কাতার শুরু করে। তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

মসজিদে ঢুকে তাতে দাঁড়ানোর কোনো জায়গা না পেলে যা করতে হয়:

মসজিদের ভেতরের জায়গা যখন শেষ হয়ে যায় তখন বাকি মুসল্লীদের জন্য মসজিদের বাহির থেকেই মসজিদের ভেতরকার ইমামের পেছনে ইক্তিদা করে তাঁর সাথেই জামা‘আতে সালাত পড়া জায়িয। তখন তারা সুবিধে মতো মসজিদের পেছনে, ডানে বা বাঁয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে তারা কখনোই ইমামের সামনের দিকে দাঁড়াবে না। এমতাবস্থায় ইমামকে দেখতে পাওয়ার কোনো শর্ত নেই। এমনকি এমতাবস্থায় মসজিদ ও মুসল্লীদের মাঝে কোনো রাস্তা, দেওয়াল বা পানির নালা থাকলেও কোনো অসুবিধে নেই। যখন তারা ইমাম সাহেবের আওয়াজ যে কোনোভাবে নিজ কানে শুনতে পাচ্ছে।

ইমাম সাহেবকে শেষ বৈঠকে পেলে যা করতে হয়:

যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পায় যে, ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে রয়েছেন। এ দিকে সে নিশ্চিত যে, তার পক্ষে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত পড়া সম্ভব। তা হলে সে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষা করবে। কারণ, অন্ততপক্ষে এক রাক’আত না পেলে জামা‘আত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় না। আর যদি সে নিশ্চিত নয় যে, সে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত আদায় করতে পারবে তা হলে সে শেষ বৈঠকেই ইমাম সাহেবের সাথে জামা‘আতে যোগ দিবে। কারণ, সালাতের কিছু অংশ জামা‘আতের সাথে পাওয়া তা একেবারে না পাওয়ার চাইতে অনেকটা ভালো।

আর যদি এমন হয় যে, সে দ্বিতীয় জামা‘আত পাবে না বলে প্রথম জামা‘আতের শেষ বৈঠকে ইমাম সাহেবের সাথে যোগ দিয়েছে অথচ এ দিকে দ্বিতীয় জামা‘আত শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্বিরাত বা তাকবীর ধ্বনি সে শুনতে পাচ্ছে। তখন সে উক্ত একাকী সালাত ছেড়ে দিয়ে জামা‘আতে শরীক হতে পারে কিংবা নফলের নিয়্যাতে দু’ রাকাত আদায় করে সে জামা‘আতে যোগ দিবে অথবা একাকী সালাত চালিয়ে যাবে।

মসজিদে ঢুকে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে যা করতে হয়:

কেউ মসজিদে প্রবেশ করে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে সে তাকবীরাতুল-ইহরাম বলে দ্রুত রুকু’তে চলে যাবে। কারণ, তখন তার জন্য রুকু’র তাকবীর বলা সুন্নাত। ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি রুকু’র তাকবীর বলারও সুযোগ পায় তাহলে তা হবে তার জন্য অতি উত্তম।

এমন পরিস্থিতিতে নিম্নে বর্ণিত তিনটি অবস্থার কোনো একটি ঘটতে পারে:

১. সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে উঠার আগেই সে তাঁর সাথে রুকু’ পেয়েছে। তখন সে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে এবং এমতাবস্থায় সূরা ফাতিহা পড়ার বাধ্যবাধকতা আর তার ওপর থাকবে না।

২. সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, সে রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে উঠে গিয়েছেন। তখন সে উক্ত রাকাত পায় নি বলে ধরে নেওয়া হবে এবং তাকে উক্ত রাকাত কাযা করতে হবে।

৩. সে এ ব্যাপারে সন্দিহান যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তে পেয়েছে না কি পায়নি। এমতাবস্থায় সে যে দিকে তার মন বেশি ধাবিত হয় তাই ধরে নিবে। যদি তার প্রবল ধারণা হয় যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তেই পেয়েছে তাহলে সে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নিবে। আর যদি এ ব্যাপারে তার প্রবল ধারণা হয় যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তে পায়নি তাহলে সে উক্ত রাকাত পায়নি বলে ধরে নিবে। এমতাবস্থায় যদি সালাতের কোনো অংশ তার ছুটে গিয়ে থাকে তা হলে সে এ জন্য সালামের পর দু’টি সাহু সাজ্দাহ দিবে। আর যদি সালাতের কোনো অংশ তার না ছুটে থাকে। তথা উক্ত রাকাতটি যদি সে সালাতের প্রথম রাকাত হয়ে থাকে। আর এ দিকে তার প্রবল ধারণা হলো যে, সে রাকাতটি পেয়েছে তাহলে তাকে আর কোনো সাহু সাজদাহ দিতে হবে না। কারণ, তার সালাত তখন তার ইমাম সাহেবের সালাতের সাথে পুরাপুরি সম্পৃক্ত। আর ইমাম সাহেব তাঁর মুক্তাদির অন্যান্য সকল সাহু সাজ্দাহ বহন করে থাকেন যদি তাঁর মুক্তাদির সালাতের কোনো রুকন না ছুটে থাকে। আর যদি রাকাত পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তার সন্দেহ হয় এবং তার মন কোনো দিকে প্রবলভাবে ধাবিত হয় না। তা হলে সে রুকু’ পায় নি বলেই ধরে নিবে। কারণ, তখন তার ব্যাপারে এটিই নিশ্চিত এবং এটিই স্বাভাবিক। আর তখন সে সন্দেহের জন্য সালামের আগে দু’টি সাহু সাজদাহ দিবে।

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। আর তা হচ্ছে এই যে, কেউ কেউ মসজিদে ঢুকে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে সে উচ্চ স্বরে ঘন ঘন গলাখাঁকারি দেয় যেন ইমাম সাহেব তার জন্য রুকু’তে আরেকটু দেরি করেন অথবা বলে:

إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন”। আবার বা কেউ কেউ জমিনে খুব জোরে পদক্ষেপণ করে নিজের উপস্থিতি জানা ন দেয়। উক্ত কর্মকান্ডগুলো কখনো করা ঠিক নয়। কারণ, তা ইমাম সাহেব ও অন্যান্য মুক্তাদিদেরকে বিরক্ত করার শামিল।

কেউ জামা‘আতের সাথে ছুটে যাওয়া বাকি সালাত একা পড়তে গেলে ইমাম সাহেবের সুত্রাহ আর তার জন্য সুত্রাহ থাকে না:

ইমাম সাহেবের সালাম ফেরানোর পর কোনো মুক্তাদি তার ছুটে যাওয়া সালাত আদায় করতে গিয়ে একা হয়ে গেলে তার সামনে দিয়ে কেউ চলা-ফেরা করতে পারবে না। কারণ, তখন আর ইমাম সাহেবের পূর্বেকার সুত্রাহ বা আড় তার জন্য সুত্রাহ বা আড় হিসেবে বাকি থাকে না। তখন সে একা বলেই বিবেচিত। তাই কেউ তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে গেলে সে তাকে যথাসাধ্য প্রতিহত করবে।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَىْ شَيْءٍ يَسْتُرُهُ مِنَ النَّاسِ فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلْيَـدْفَعْهُ، فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ» .

“তোমাদের কেউ কোনো বস্তুর আড়ালে সালাত পড়াবস্থায় তার সম্মুখ দিয়ে কোনো ব্যক্তি অতিক্রম করতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রতিহত করবে। তাতেও সে নিশ্চেষ্ট না হলে তাকে শক্তি প্রয়োগে বাধা দিবে। কারণ, সে হচ্ছে শয়তান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৭০০।]

কোন ইমাম সাহেব তাঁর নিজ মসজিদে এবং কোনো ঘরের মালিক তার ঘরে ইমামতির সর্বোচ্চ অধিকারী:

কোন ইমাম সাহেব তাঁর নিজ মসজিদে যেখানে তিনি নিয়মিত ইমাম হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন এবং কোনো ঘরের মালিক তাঁর নিজ ঘরে যেখানে কিছু সংখ্যক লোক তাঁর সাক্ষাতে এসেছে সেখানে সালাতের কোনো জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত হলে তিনিই তখন ইমামতির সর্বোচ্চ অধিকারী। যদি তিনি ভালোভাবে ক্বিরাত পড়তে পারেন এবং সালাতের প্রয়োজনীয় বিধি-বিধানও জানেন। তবে তিনি কাউকে ইমামতির জন্য অনুমতি দিলে সে ইমামতি করতে পারে। আর যদি ঘরের মালিক অথবা নিয়মিত ইমামের চাইতে সাক্ষাৎকারী কেউ ভালো ক্বিরাত পড়তে পারেন তাহলে তখন তাঁকেই ইমামতির জন্য সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

আবু মাসঊদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوْا فِيْ السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإِنْ كَانُوا فِيْ الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ سِلْمًا وَفِيْ رِوَايَةٍ : سِنًّا، وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلَّا بِاِذْنِهِ» .

“কোনো সম্প্রদায়ের ইমামতি তাদের মধ্যে যিনি কুরআন ভালোভাবে পড়তে পারেন তিনিই করবেন। যদি তারা সবাই সমভাবেই কুর’আন ভালোভাবে পড়তে পারে তাহলে তাদের মধ্যে হাদীস সম্পর্কে যিনি বেশি জানেন তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। আর যদি তারা সবাই হাদীস সম্পর্কে সমজ্ঞান রাখে তাহলে তাদের মধ্যে যিনি সবার আগে হিজরত করেছেন তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। আর যদি তারা সবাই সমসময়ে হিজরত করে থাকে তাহলে তাদের মধ্যে যাঁর বয়স বেশি তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। কেউ কারোর অধীনস্থ এলাকায় তার অনুমতি ছাড়া ইমামতি করবে না এবং কেউ অন্যের ঘরে তার সম্মানজনক বসার জায়গায় তার অনুমতি ছাড়া বসবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৩।]

যে ইমাম ভালোভাবে ক্বিরাত পড়তে পারেন না তাঁর ব্যাপারে যা করণীয়:

কোনো ইমাম সাহেব যদি ক্বিরাতে এমন ভুল করেন যে, যাতে আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটে বিশেষ করে তা যদি সূরা ফাতিহার মধ্যেই হয়ে থাকে তাহলে যে কোনোভাবে তাঁর পরিবর্তন আবশ্যক। আর যদি তিনি এমন ভুল করেন না যা আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটায় তাহলে তাঁর পেছনে সালাত পড়া যাবে। তবে তার ক্বিরাত আরো শুদ্ধ ও সুন্দর করার জন্য তাঁর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ দিকে কোনো ইমাম সাহেব যদি ক্বিরাত পড়তে গিয়ে হঠাৎ এমন কোনো ভুল করে ফেলেন যাতে আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটে তাহলে তাঁকে পেছন থেকে যে কোনো মুক্তাদি উক্ত জায়গাটুকু স্মরণ করিয়ে দিবে। তবে হঠাৎ যে কোনো সামান্য ভুল যা অর্থের কোনো পরিবর্তন ঘটায় না তা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে কোনো ইমাম সাহেবকে বার বার বিরক্ত করা ঠিক নয়। কারণ, এতে করে তিনি একেবারে অস্থির হয়ে সম্পূর্ণরূপে ক্বিরাতটুকুও ভুলে যেতে পারেন। তখন আর তাঁর পক্ষে ক্বিরাত চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিদ‘আতী ইমামের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:

কোনো এলাকায় আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামা‘আতপন্থী ভালো ইমাম পাওয়া গেলে সেখানকার কোনো বিদ‘আতীর পেছনে জামা‘আতে সালাত আদায়ের প্রশ্নই আসে না। তবে যদি কোনো এলাকায় এমন কোনো ভালো ইমাম না থাকে তাহলে সেখানকার বিদ‘আতী ইমামকেই কুরআন ও সহীহ হাদীসের দৃষ্টিতে কোনো ভালো আলিম দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ‘আত সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝাতে হবে। যদি সে উক্ত নসীহত গ্রহণ করে বিদ‘আতগুলো ছেড়ে দেয় তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া যাবে। আর যদি সে উক্ত নসীহত গ্রহণ না করে এবং তার বিদ‘আতটিও হচ্ছে কুফরি বিদ‘আত যেমনঃ সে বিপদাপদে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যকে ডাকে অথবা সে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোনো পশু জবাই ও মানত করে তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া কোনোভাবেই জায়িয হবে না এবং বস্তুতঃ সে ইমাম হওয়ারও উপযুক্ত নয়। আর যদি তার বিদ‘আতটি কুফরি পর্যায়ের না হয়ে থাকে যেমন: সালাতে নিয়্যাত উচ্চারণের বিদ‘আত তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া যাবে ঠিকই তবে তাকে সাধ্যমতো তা বুঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

যাদুকর, শির্কী তাবিজদাতা ও গায়েবের দাবিদার ইমামের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:

যাদুকর, শির্কী তাবিজদাতা ও গায়েবের দাবিদার ইমামের পেছনে সালাত আদায় করা জায়িয নয়। কারণ, সে তো কাফির কিংবা মুশ্রিক। আর এ কথা তো সবারই জানা যে, কাফির কিংবা মুশরিকের পেছনে সালাত আদায় করা কোনোভাবেই জায়েয নয়।

ফাসিকের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:

কোনো ইমাম সাহেব যদি ধূমপান কিংবা দাঁড়ি মুণ্ডন করেন অথবা যে কোনো প্রকাশ্য গুনাহ করেন তখন তাঁকে অবশ্যই এ ব্যাপারে নসীহত করতে হবে। যদি তিনি উক্ত নসীহত গ্রহণ করেন তাহলে তো ভালোই। আর যদি তিনি উক্ত নসীহত গ্রহণ না করেন তাহলে সম্ভব হলে তথা ফিতনার কোনো ভয় না থাকলে তাকে ইমামতি থেকে বাদ দিতে হবে। তা না হলে তাঁর পেছনে সালাত না পড়ে অন্য কোনো নেককার ইমামের পেছনে সালাত পড়বে। যাতে তাঁর শিক্ষা হয়ে যায় এবং তিনি এমন কাজ থেকে বিরত হোন। আর যদি সে এলাকায় তেমন কোনো নেককার ইমাম না থাকে অথবা অন্য কারোর পেছনে সালাত আদায় করতে গেলে ফিতনার ভয় থাকে তা হলে তাঁর পেছনেই সালাত পড়বে। তখন শরী‘আতের সূত্র অনুযায়ী দু’টি ক্ষতির কমটিই গ্রহণ করতে হবে। যেমনিভাবে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ও অন্যান্য সালফে সালিহীনগণ সে যুগের হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের পেছনেই সালাত পড়েছেন অথচ সেই ছিলো তখনকার যুগের সব চাইতে বড়ো যালিম। আর তা ছিলো কেবল ফিতনা ও মহা দ্বন্দ্বের ভয়ে এবং মানুষের মধ্যকার সেই পূর্বের ঐক্যটুকু টেকানোর জন্যে।

সালাতের ক্বিরাত লম্বা বা খাটো হওয়ার মানদণ্ড:

বর্তমান যুগে ইমাম ও মুক্তাদির মাঝে ক্বিরাত খাটো ও লম্বা হওয়া নিয়ে মুসলিম বিশ্বের যে কোনো এলাকায় দ্বন্দ্ব-বিরোধ সর্বদা লেগেই থাকে। তাই এর আমূল নিরসন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত দিয়েই করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্বিরাতই হবে খাটো ক্বিরাতের মানদন্ড। তবে কখনো কখনো কোনো ব্যাপক প্রয়োজনের কথা খেয়াল রেখে ক্বিরাতকে আরো খাটো করা যায়। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কখনো কখনো করেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা ইমামদেরকে ক্বিরাত খাটো করতেই আদেশ করতেন।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন:

«إِذَا أَمَّ أَحَدُكُمْ النَّاسَ فَلْيُخَفِّفْ، فَإِنَّ فِيهِمْ الصَّغِيرَ، وَالْكَبِيرَ، وَالضَّعِيفَ وَالـْمَرِيضَ، فَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاءَ» .

“তোমাদের কেউ মানুষের ইমামতি করলে সে যেন খাটো ক্বিরাত পড়ে। কারণ, মানুষের মধ্যে ছোট-বড়ো, দুর্বল ও অসুস্থ সবই রয়েছে। তবে সে যদি একা সালাত পড়ে তাহলে সে নিজ ইচ্ছা মাফিক ক্বিরাত পড়বে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৭]

ক্বিরাত খাটো করার সর্ব প্রথম নির্দেশ আসে মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যাপারে। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে তাদের ইমামতি করতেন। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ইশার সালাত পড়েছেন। তখন ইশার সালাত হতো প্রায় সূর্য ডুবার দু’ তিন ঘন্টা পর। অতঃপর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে সূরা বাক্বারাহ দিয়ে তাদের ইমামতি শুরু করলেন। এ দিকে জনৈক ব্যক্তি তা সহ্য করতে না পেরে তাঁর পেছন ছেড়ে একাকী সালাত পড়ে চলে গেলো। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু কে তা জানানো হলে তিনি তাকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করলেন। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ব্যাপারটি জানালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

«أَتُرِيدُ أَنْ تَكُونَ فَتَّانًا يَا مُعَاذُ ! ، إِذَا أَمَمْتَ النَّاسَ فَاقْرَأْ بِالشَّمْسِ وَضُحَاهَا، وَسَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَاقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ، وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى» .

“হে মু‘আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি কারতে চাও। যখন তুমি মানুষের ইমামতি করবে তখন “ওয়াশ-শামসি ওয়াদ্বোহাহা”, “সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল-আ‘লা”, ‘ইক্বরা’ বিস্মি রাব্বিকা” ও “ওয়াল্লাইলি ইযা ইয়াগ্শা” পড়বে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৫।]

এ দিকে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِالتَّخْفِيفِ وَيَؤُمُّنَا بِالصَّافَّاتِ» .

“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্বিরাত খাটো করতে আদেশ করতেন অথচ এ দিকে তিনি সূরা স্বাফ্ফাত দিয়ে আমাদের ইমামতি করতেন”। [আহমদ ২/২৬, ৪০, ১৫৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৮২৭; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৬০৬।]

এ থেকে বুঝা যায়, সূরা সাফ্ফাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টিতে খাটো সূরা। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, যেন নাহ্ল, ইউসুফ ও তাওবাহ এর মতো বড়ো সূরা পড়া না হয়।

অন্য দিকে আবু বার্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ مَا بَيْنَ السِّتِّينَ إِلَى الْمِائَةِ ايَةً» .

“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে (মাঝারি পর্যায়ের) ষাট থেকে এক শত আয়াত পর্যন্ত পড়তেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬১।]

মাঝারি পর্যায়ের ষাট থেকে এক শত আয়াতের সূরা যেমন: আহযাব, ফুরক্বান, নামল, ‘আনকাবূত ইত্যাদি। এগুলো হচ্ছে ফজরের সালাতের স্বাভাবিক ক্বিরাত।

অতএব, কেউ যদি ফজরের সালাতে সূরা ক্বাফ থেকে সূরা মুর্সালাত পর্যন্ত যে কোনো সূরা পড়ে তখন সে বড়ো সূরা পড়েছে বলে তার সাথে কোনো ধরণের উচ্চবাচ্যই করা যাবে না। কারণ, এগুলো হচ্ছে মাঝারি পর্যায়ের ক্বিরাত, যা খাটো সূরা বলেই বিবেচিত।

নফল পড়ুয়ার পেছনে ফরয পড়ার বিধান:

আপনি তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত অথবা কোনো নফল সালাত পড়ছেন এমতাবস্থায় কেউ এসে আপনাকে ইমাম বানিয়ে আপনার পেছনেই তার ফরয সালাতটুকু অথবা উক্ত নফলই জামা‘আতে পড়তে শুরু করলো তখন আপনি তাকে সরিয়ে দেবেন না। বরং তখন আপনি তার ইমাম বলেই বিবেচিত হবেন। আপনি আপনার সালাতটুকু ইমাম হিসেবে উচ্চ তাক্বীরেই পড়বেন। অতঃপর আপনার সালাত শেষে সে তার বাকি সালাতটুকু নিজেই পড়ে নিবে।

উপরোক্ত মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইশার সালাতই তা জায়িয হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ইশার সালাত পড়ে আবার নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে তাদের ইশার সালাতের ইমামতি করতেন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোনো বাধা দেন নি।

এ দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কিছু সংখ্যক সাহাবীগণকে নিয়ে ভয়ের মুহূর্তে যোহরের সালাত দু’ রাকাত পড়ে সালাম ফিরালেন। অতঃপর তিনি আবার আরো কিছু সংখ্যক সাহাবীগণকে নিয়ে আরো দু’ রাকাত সালাত পড়ে সালাম ফিরান। এতে করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ বার যোহরের সালাত আদায় করলেন। তাঁর প্রথমকার সালাতটুকু ছিলো ফরয। আর দ্বিতীয়বারের সালাতটুকু ছিলো নফল। এতে বুঝা গেলো নফল পড়ুয়ার পেছনে ফরয সালাত পড়া যায়। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৪৮]

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الْـحَارِثِ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهَا فِي لَيْلَتِهَا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيْ مِنْ اللَّيْلِ فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِرَأْسِيْ فَأَقَامَنِيْ عَنْ يَمِينِهِ» .

“আমি একদা আমার খালা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী মাইমূনাহ বিন্ত আল-হারিস-এর নিকট রাত্রি যাপন করেছি। সে রাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাঁর ঘরেই ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরাত্রি বেলায় সালাত আদায় করতে উঠলে আমিও তাঁর সাথে সালাত আদায়ের জন্য উঠলাম। অতঃপর আমি তাঁর বাঁয়েই দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে আমার মাথা ধরে তাঁর ডানেই দাঁড় করিয়ে দিলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭, ৬৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৩।]

কোনো ইমাম সাহেব যদি তার অযু নষ্ট হওয়ার দরুন কোনো মাস্বূককে তথা যে ব্যক্তি ইমাম সাহেবের সাথে সালাতের শুরুর কিছু অংশ পায় নি তাকে ইমাম বানিয়ে দেন তখন বাকি মুসল্লীদের যা করণীয়:

সালাতের চতুর্থ রাকাতে জনৈক ইমাম সাহেবের অযু নষ্ট হয়ে যায় তখন তিনি এমন এক ব্যক্তিকে বাকি সালাতটুকু পড়ানোর দায়িত্ব দিলেন যে তাঁর সাথে তৃতীয় রাক্’আতে অংশ গ্রহণ করেছে তখন বাকিরা যারা ইমাম সাহেবের সাথে শুরু থেকেই সালাত পড়ছিলেন দ্বিতীয় ইমামের সাথে চতুর্থ রাকাত শেষ করে বসে থাকবেন যতক্ষণ না দ্বিতীয় ইমাম তাঁর সবটুকু সালাত শেষ করে। অতঃপর যখন তিনি তাঁর বাকি সালাতটুকু শেষ করে সালাম ফিরাবেন তখন বাকি মুসল্লীরাও তাঁর সাথে সালাম ফিরাবে। এর পূর্বে নয়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ» .

“ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলে তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৮, ৮০৫, ১১১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪, ৪১৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬০৩।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالْقُعُوْدِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ» .

“তোমরা আমার আগে রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ও সালাম আদায় করো না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৬।]

কোনো মুসাফির যে কোনো ইমাম সাহেবের সাথে চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের শুধু শেষের দু’ রাকাত পেলে তার জন্য যা করণীয়:

তখন তার জন্য করণীয় হবে পূর্বের ছুটে যাওয়া বাকি দু’ রাকাত পড়ে সালাম ফিরানো। তখন সে নিজকে মুসাফির মনে করে উক্ত ইমামের সাথেই সালাম ফিরাবে না। কারণ, যখন সে উক্ত ইমামের পেছনেই সালাত আদায় করতে শুরু করলো তখন তাকে অবশ্যই তাঁর সাথে ছুটে যাওয়া বাকি সালাতটুকু আদায় করতে হবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ، وَعَلَيْـكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ، وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا» .

“তোমরা যখন ইক্বামত শুনবে তখনই সালাতের দিকে রওয়ানা করবে। চলার সময় প্রশান্তি ও ভদ্রতা বজায় রাখবে। দৌড়ে যাবে না। অতঃপর যা পাবে তাই ইমামের সাথে পড়ে নিবে। আর বাকিটুকু পুরো করে নিবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯০৮।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন