HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

জীবন দর্শন

লেখকঃ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

১০
সার্বভৌমত্ব দর্শন[1]
টেরিটরি, পপুলেশন, গভর্ণমেন্ট ও সভারেন্টি তথা নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড, জনসংখ্যা, সরকার ও সার্বভৌমত্ব-এই চারটি স্তম্ভ মিলে রাষ্ট্র গঠিত হয়। এর মধ্যে সার্বভৌমত্বের স্থান সবার উপরে। যা না থাকলে তাকে রাষ্ট্র বলা যায় না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্বে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনসংখ্যা ও সরকার ছিল। কিন্তু সার্বভৌমত্ব ছিল না বিধায় তা কোন রাষ্ট্র বলে অভিহিত হ’ত না। এক্ষণে সার্বভৌমত্ব বলতে সেই চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে বুঝায়, যাকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। রাষ্ট্রের ভিতরে প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যে ক্ষমতা মেনে চলে এবং না মানলে দন্ডনীয় হয়। যে শক্তি বিদেশের কোন নিয়ন্ত্রণ মানে না, সেটাই হ’ল সার্বভৌম শক্তি। রাষ্ট্রের এই সার্বভৌম ক্ষমতা নির্দিষ্ট ভূখন্ডের বাইরে প্রযোজ্য হয় না। কেননা তাতে অন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লংঘিত হয়। সার্বভৌম ক্ষমতা হ’ল সর্বব্যাপক, স্থায়ী, অবিভাজ্য, হস্তান্তরের অযোগ্য, মৌলিক, চরম ও সীমাহীন। দেহের মধ্যে আত্মা যেমন সকল শক্তির উৎস। অথচ তাকে দেখা যায় না। সেটি কোথায় থাকে তাও বলা যায় না। কিন্তু অনুভব করা যায়। অমনিভাবে সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের কোথায় থাকে, সরকারের মধ্যে, না জাতীয় সংসদের মধ্যে, না নির্বাচক মন্ডলীর মধ্যে, না জনগণের মধ্যে, তা ঠিক করে বলা যায় না। অথচ এটা হারিয়ে গেলেই রাতারাতি সবকিছু পরাধীন হয়ে যায়। প্রাণের ব্যবহারকারী যেমন দেহ, তেমনি সার্বভৌমত্বের ব্যবহারকারী ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা হ’ল সরকার। বিগত যুগে শক্তিশালী গোত্রনেতা, রাজা ও সম্রাটগণ এই ক্ষমতা ব্যবহার ও প্রয়োগ করতেন। বর্তমান যুগে তা ব্যবহার করেন জনগণের নির্বাচিত সরকার। সেকারণেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবি বলেছেন, রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ইচ্ছাই হ’ল সার্বভৌমিকতা’। রাষ্ট্রের ইচ্ছা বলতে এখানে জনগণের ইচ্ছাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা রাষ্ট্র কোন প্রাণী নয় এবং তার কোন ইচ্ছাশক্তি নেই। আর এ কারণেই এযুগে বলা হয়ে থাকে যে, ‘জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস’ এবং ‘অধিকাংশের রায়ই চূড়ান্ত’।

খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দী হ’তে এযাবত বিতর্ক চলছে, রাষ্ট্র ব্যক্তির জন্য, না ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য। অধ্যাপক ল্যাস্কি, মেটল্যান্ড, গিয়ার্কে, বার্কার প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তো পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার নয়। এটি রাষ্ট্রের অন্তর্গত অন্যান্য সংঘ ও সমিতির মধ্যে অবস্থিত। এ মতের অনুসারীদের অনেকে এমনও মত প্রকাশ করেছেন যে, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার তিরোধান হওয়া আবশ্যক। সম্প্রতি নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে, বিচার বিভাগ সার্বভৌম না জাতীয় সংসদ সার্বভৌম? রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্বের সঠিক দর্শন ও প্রকৃত ক্ষমতা কি- এরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিগত পাঁচশ’ বছরে একমত হ’তে পারেননি। যেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ জ্ঞানী মানুষগুলির অবস্থা এই, সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন? তাদেরকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলা অর্থ তাদেরকে স্রেফ স্বেচ্ছাচারী করে তোলা। অথচ কে না জানে যে, স্বেচ্ছাচারী মানুষ হিংস্র পশুর চাইতে ভয়ংকর। বাস্তবিক পক্ষে এসব বিতর্কের সমাধান আজও হয়নি এবং হবেও না। কেননা মানুষ চূড়ান্ত সত্যের সন্ধান জানেনা এবং তার ভবিষ্যৎ মঙ্গলামঙ্গলের সঠিক খবর রাখে না।

বস্ত্ততঃ গোত্র, সমাজ, সংস্থা, সংগঠন, রাষ্ট্র ইত্যাদি মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই গড়ে তোলে মানবতার সুরক্ষার জন্য ও মানবীয় স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। আর এজন্যেই রাষ্ট্রকে মানুষ দিয়েছে সর্বোচ্চ ক্ষমতা। কিন্তু এই ক্ষমতা ব্যবহারকারীগণ যদি মানবতার সুরক্ষা না করে মানবতাকে ধ্বংসের কাজে ব্রতী হয়, তাহ’লে ঐ ক্ষমতা অবশ্যই তিরোহিত হওয়া কাম্য হবে। সেযুগের ইরাকে নমরূদের চারশ’ বছরের রাজত্বকালে যত মানুষ নিহত ও নিগৃহীত হয়েছে, এযুগে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এক দিনেই এক নিমেষে তার চেয়ে নিঃসন্দেহে বহুগুণ বেশী মানুষ নিহত ও পঙ্গু হয়েছে এবং আজও পৃথিবীব্যাপী এইরূপ ধ্বংসকারিতা চলছে। সবকিছুই করা হচ্ছে জনগণের নামে ও জনগণের সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়ে। ভাবখানা এই, যারা মরছে ও নির্যাতিত হচ্ছে, ওরা জনগণ নয়, বরং যারা মারছে ও নির্যাতন করছে, ওরাই কেবল জনগণ। শাসকদের এই সন্ত্রাসী চরিত্রের কারণ হ’ল এই যে, তাদের কাছে মানবীয় স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের কোন পরিষ্কার ধারণা নেই। জানা নেই সার্বভৌমত্বের দর্শন কী?

সার্বভৌমত্বের মৌলিক দর্শন হ’ল, সর্বোচ্চ সত্তার সীমাহীন ক্ষমতার অধীনে মাটি ও মানবতা নিরাপদ থাকা। প্রশ্ন হ’ল, মানুষ কি কখনো সর্বোচ্চ সত্তা হ’তে পারে? মানুষের কি সীমাহীন ক্ষমতা রয়েছে? মানুষের অধীনে কি মাটি ও মানবতা নিরাপদ থাকে? যদিও সবখানে মানুষই থাকবে। মানুষই রাষ্ট্রপ্রধান হবে, মানুষই রাষ্ট্র চালাবে, মানুষই মাটি ও মানবতা রক্ষা করবে। কিন্তু যখন তার দর্শন হবে এই যে, সবার উপরে আমিই সত্য, আমার উপরে নাই- তখনই ঐ মানুষটি হবে একটা হিংস্র পশু। পক্ষান্তরে যখন ঐ মানুষটির দর্শন হবে এই যে, আমি এক মহান সত্তা দ্বারা সৃষ্ট এবং আমি তার গোলাম। তাঁর দাসত্ব করা ও তাঁর প্রেরিত অভ্রান্ত বিধান সমূহ বাস্তবায়ন করাই আমার দায়িত্ব, আমাকে সকল কর্মের হিসাব তাঁর কাছে দিতে হবে এবং তাঁর কাছেই আমাকে ফিরে যেতে হবে, তখন ঐ মানুষটিই হবে মাটি ও মানবতার প্রকৃত রক্ষক। সে হবে মানুষের পাহারাদার ও দিন-রাতের সেবক। তখনি রাষ্ট্র হবে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন। তখন আল্লাহ ছাড়া সে কাউকে ভয় করবে না।

কুরআনে তিনটি বিষয় পরিষ্কার বলা হয়েছে। (১) আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস (২) আল্লাহ প্রেরিত বিধান সমূহ চূড়ান্ত সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ এবং তা শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় (৩) অধিকাংশ লোক প্রবৃত্তির অনুসারী এবং সংখ্যা কখনো সত্য ও মিথ্যার মানদন্ড নয়’। প্রশ্ন হ’ল, অধিকাংশ লোকের সমর্থন ছাড়া তো আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কায়েম হবে না। জবাব এই যে, এ বিষয়ের উপরেই জনগণের মতামত নিতে হবে যে, তারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব চায়, না মানুষের সার্বভৌমত্ব চায়। তারা আল্লাহর বিধান মতে শাসিত হ’তে চায়, না স্বেচ্ছাচারী কিছু মানুষের দ্বারা শাসিত ও নির্যাতিত হ’তে চায়? যতদিন দেশের মানুষের স্পষ্ট মতামত এ ব্যাপারে না পাওয়া যাবে, ততদিন কেবল দাওয়াত ও সংস্কারের কাজ করে যেতে হবে। কিন্তু ক্ষমতা লাভের জন্য কোনরূপ চরমপন্থা অবলম্বন করা যাবে না। কিংবা নির্বাচনের নামে কোনরূপ প্রলোভন, ভয় প্রদর্শন ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। মানুষকে প্রথমে দু’টি সার্বভৌমত্বের পার্থক্য বুঝাতে হবে। অতঃপর স্বাধীনভাবে তাকে মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। যখন তারা বুঝে-সুঝে স্বেচ্ছায় আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে কবুল করবে, তখনই কেবল ইসলামী খেলাফত কায়েম হবে এবং মানুষ আল্লাহর গোলামীর অধীনে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হবে। বস্ত্ততঃ এলাহী সার্বভৌমত্বের দর্শন হ’ল, নির্যাতিত মানবতার সত্যিকারের মুক্তির দর্শন। আললাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!

[1]. আত-তাহরীক ১৩তম বর্ষ ৭ম সংখ্যা এপ্রিল ২০১০।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন