মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বস্ত্তর স্বভাবগত প্রবণতার দর্শনকেই মূলতঃ ‘ধর্মদর্শন’ বলা হয়। বায়ু সর্বদা প্রবাহিত হয়, পানি সবকিছুকে ভিজিয়ে দেয়, আগুন সবকিছুকে জ্বালিয়ে দেয়, এগুলিই ওদের ধর্ম। ওরা নীরবে ওদের ধর্ম মেনে চলে, যতক্ষণ না সৃষ্টিকর্তার অন্য কোন হুকুম আসে। যেমন আগুন ইবরাহীমকে পোড়ায়নি, পানি ইউনুসকে ডুবিয়ে মারেনি। বায়ু সুলায়মানকে উল্টে ফেলে দেয়নি। কিন্তু মানুষ? মায়ের গর্ভে চার মাসের ছোট্ট দেহে তার অদৃশ্য রূহটি প্রবেশ করল। ৯ মাস ১০ দিন সেখানে থেকে পুষ্ট হয়ে তিন পর্দার গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে দুনিয়ায় ভূমিষ্ট হ’ল। আস্তে আস্তে বড় হ’ল, জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়ল। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে চিন্তার হাযার গলির মধ্যে ঢুকে পড়ল। জড়বাদী গলি, নাস্তিক্যবাদী গলি, বস্ত্তবাদী গলি, যুক্তিবাদী গলি, বুদ্ধিবাদী গলি, অদৃষ্টবাদী গলি, মুক্তবুদ্ধি গলি ইত্যাদি। এতগুলি চিন্তার সড়ক ও গলিপথ ঘুরতে ঘুরতে সে এক সময় বুদ্ধিহত হবার উপক্রম হয়। কিন্তু প্রশ্নের জওয়াব সে খুঁজে পায়না। ওদিকে দৈহিক দিক দিয়ে সে ইতিমধ্যে শৈশব ও যৌবন বেরিয়ে প্রৌঢ়ত্ব শেষ করে বার্ধক্যের কিনারে দাঁড়িয়ে গেছে। কেননা দেহ চলে তার নিজস্ব গতিতে নিজস্ব ধর্মে, তার সৃষ্টিকর্তার বিধান মতে। মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে সে এসেছে পৃথিবীর উদার ভূখন্ডে। যা বিশ্বলোকের মহাশূন্যে ঝুলন্ত একটি ঘুর্ণায়মান গ্রহ মাত্র। কে সৃষ্টি করল এই সুন্দর পৃথিবীকে। কীভাবে ঝুলে আছে মহাশূন্যে আনুমানিক প্রায় ৬.৬ সেক্সটিলিয়ন টন ওযনের এই বিশাল গ্রহটি, তার বুকে পাহাড়-সাগর, নদী-নালা, মাটি, গাছ-পালা, পশু-পক্ষী ও কোটি মানুষের বোঝা নিয়ে। চন্দ্র সূর্য উঠছে ডুবছে। বায়ু আপন নিয়মে প্রবাহিত হচ্ছে। সাগর-নদীতে জোয়ার-ভাটা হচ্ছে। ফুল ও ফসলে ভরে উঠছে মাঠ ও গাছ-পালা। মাছে ভরে থাকছে সাগর ও নদী-নালা। সবই চলছে নীরবে আপন গতিতে।
কেবল আমিই রয়েছি বিপদে। কেননা আমার স্বাধীন জ্ঞানশক্তি আমাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না। কখনো আমি আস্তিক, কখনো আমি নাস্তিক, কখনো সংশয়বাদী, কখনো দিশেহারা। মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমি এখন নিশ্চিত হয়েছি যে, সূচনা ও লয়-এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন সত্তা আছেন। যিনি সবকিছু করছেন দূরদর্শী পরিকল্পনা অনুযায়ী। যিনি স্রষ্টা। তাই সৃষ্টির চর্মচক্ষু তাকে দেখতে পায় না। যে রূহটি বিগত ৬০/৭০ বছর আমার সাথে আমার দেহে বিরাজ করছে, তাকে আজও আমি দেখতে পাইনি। কিন্তু ওটা যে আছে এবং ওটা যে জীবন্ত, তার প্রমাণ তো আমি নিজে। আমার চলাফেরা, আমার কর্মব্যস্ততা সবই তো একটিই কারণে যে, আমার দেহে প্রাণ আছে। যদিও তাকে আমি কখনো দেখিনি। তেমনিভাবে আমার জন্ম, শৈশব, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য, আমার খাদ্য-পানীয়, আমার দৈহিক ও মানসিক শক্তি-সামর্থ্য, এই পৃথিবী ও বিশ্বলোকের সৃষ্টি ও পরিচালনা সবকিছুর পিছনে একজন অদৃশ্য মহাশক্তিধর সত্তা আছেন, যাঁর হুকুমেই সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে, যার বিধান মতে সবকিছু চলছে এবং যার নির্দেশেই একদিন সবকিছু ধ্বংস হবে। কেননা যার সূচনা আছে, তার শেষ আছে। শেষ হবেন না কেবল তিনি, যিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও বিধানদাতা। যার সূচনা নেই, শেষও নেই। যিনি আদি, যিনি অন্ত, যিনি আছেন ও থাকবেন চিরদিন। যিনি চিরঞ্জীব, যিনি সকল শক্তির আধার ও বিশ্ব চরাচরের ধারক।
এখন আমি নিশ্চিত যে আমার একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। কিন্তু তাঁর বিধান কোথায় পাব? অন্য সব সৃষ্টি চলছে স্ব স্ব বিধান মতে। কিন্তু আমার চলার পথ কি? সে পথের বিধান কি? আমার সামনে মদ আছে, দুধ আছে। কোন্টা খাব। অথচ আমারই গোয়ালের পোষা গরু দিব্যি ঘাস ও শুকনো বিচালী খাচ্ছে ও শক্ত-সমর্থ হচ্ছে। তাকে জোর করলেও পোলাও-বিরানী খাবে না, বিয়ার-হুইস্কি খাবে না বা গাঁজা টানবে না। কিন্তু আমার অবস্থা কী? আমাকে যে জ্ঞান ও চিন্তার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আমি এখন কোন্টা খাব? কোন্ পথে চলব? রাস্তা দিয়ে রথ যাচ্ছে। নিজেদের হাতে কাদামাটি দিয়ে গড়া দেবমূর্তি নিয়ে মানুষ চলেছে। সারাদিন পূজা দিয়ে এবার তাকে ডুবিয়ে দেবে। কি হলো এতে? কি পেলাম তাতে? কোন জবাব না পেয়ে কবি গেয়েছেন, রথযাত্রা সমারোহ মহা ধূমধাম, ভক্তেরা সব লুটায়ে শির করিছে প্রণাম। রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি। মূর্তি ভাবে আমিই দেব হাসে অন্তর্যামী’। আমার চিন্তা থমকে গেল। যে সৃষ্টিকর্তা তার অন্য সৃষ্টিকে বিধান দিলেন, তিনি কি তার সেরা সৃষ্টি মানুষকে কোন বিধান দেননি? নিশ্চয়ই তিনি দায়িত্বহীন সৃষ্টিকর্তা নয়। তাইতো দেখছি নবী-রাসূলগণ বলছেন, আমরা আল্লাহর বার্তাবহ। হে মানুষ! আল্লাহর বিধান মানো ও আমাদের আনুগত্য কর। তুমি হালাল খাও হারাম খেয়ো না। তুমি দুধ খাও, মদ খেয়ো না’। তাইতো এ যে আমার বিবেকের কথা। মন বলছে মদ খাই, হারাম খাই, কিন্তু বিবেক যে নিষেধ করছে। মন বলছে সূদ খাই, ঘুষ খাই, চুরি করি, মানুষ খুন করি। কিন্তু বিবেক যে ধিক্কার দিয়ে নিষেধ করছে। তাহ’লে তো দেখছি আমার স্বভাবধর্ম নবী-রাসূলগণের অনুগত। তাহ’লে কেন আমি দিশেহারা হয়ে ঘুরছি? আদম থেকে ঈসা পর্যন্ত যুগে যুগে সকল নবী মানুষকে এক আল্লাহর দাসত্ব করার প্রতি আহবান জানিয়ে গেছেন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) বিগত সকল নবীর সত্যায়ন করে গেছেন। তার মাধ্যমে আল্লাহ বিশ্ববাসীর জন্য চূড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ বিধান প্রেরণ করেছেন। কুরআন ও হাদীছরূপে যা আমার সামনে বিদ্যমান। তাহ’লে কেন আমি দিশেহারার মত এপথে ওপথে দৌড়াচ্ছি? শেষনবীর রেখে যাওয়া ছিরাতে মুস্তাক্বীম তথা সরল পথ ছেড়ে কেন আমি অন্য পথে?
সৃষ্টিকর্তাকে পেলাম, তাঁর বিধান পেলাম, এক্ষণে আমার শেষ ঠিকানা কি? যে রূহ এসেছিল একদিন অদৃশ্যলোক থেকে মায়ের গর্ভে, যা এখন আমার দেহের অভ্যন্তরে অবস্থান করে আমাকে কর্মতৎপর করে রেখেছে, এ রূহ যখন দেহ পিঞ্জর ছেড়ে বেরিয়ে যাবে, তখন আমার পরিণতি কি হবে? আমার পরিণতি কি এই মাটিতেই শেষ? আমি নিয়ত দেখছি যালেম তার শক্তি ও বুদ্ধির জোরে অসহায় ও দুর্বলের উপর যুলুম করে যাচ্ছে। এরপরেও সে দুনিয়াতে খ্যাতি ও প্রশংসা কুড়াচ্ছে। অন্য দিকে সৎ ও নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও মযলূম মার খাচ্ছে ও বদনাম কুড়াচ্ছে। এভাবে যালেম ও মযলূম উভয়ে এক সময় দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যাচ্ছে। অথচ যালেম তার শাস্তি পেল না। মযলূম তার প্রতিদান পেল না। এটাই কি সৃষ্টিকর্তার বিধান? মনটা বিদ্রোহী হয়ে উঠলো।
কিন্তু না, নেমে এসেছে আসমানী তারবার্তা। শেষনবীর মুখে ঐ যে শোনা যায় গুরু গম্ভীর ঘোষণা। ‘ওরা পরস্পরে কি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে?’ ‘মহা সংবাদ সম্পর্কে?’ ‘যে বিষয়ে ওরা মতভেদ করে?’ ‘কখনোই না। শীঘ্র ওরা জানতে পারবে’। ‘অতঃপর কখনোই না। শীঘ্র ওরা জানতে পারবে’ (নাবা ৭৮/১-৫)। হে মানুষ! ‘ভয় কর তোমরা সেই দিনকে, যেদিন তোমরা ফিরে আসবে আল্লাহর কাছে। অতঃপর প্রত্যেকেই তার কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)।
হ্যাঁ হ্যাঁ এক্ষণে আমি খুঁজে পেয়েছি আমার পথের ঠিকানা। আমি আপনা-আপনি সৃষ্টি হইনি। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি তাঁরই দাসত্ব করব। তার কাছেই চাইব। তাঁর কাছেই আশ্রয় নেব। তিনি আমাকে পথহারা অবস্থায় ছেড়ে দেননি। যুগে যুগে তিনি পাঠিয়েছেন আসমানী তারবার্তা তাঁর নবীগণের মাধ্যমে। আমি শেষনবী (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া বিধানগ্রন্থ কুরআন ও হাদীছ মানব ও সে পথেই চলব। অতঃপর মৃত্যুর পরে ফিরে যাব সেখানে, যেখান থেকে আমার রূহের সফর শুরু হয়েছিল। সেদিন আমি পাব আমার সৎকর্মের পুরস্কার। যালেম পাবে তার প্রাপ্য শাস্তি, মযলূম পাবে তার ন্যায্য প্রতিদান। হ্যাঁ, আমি এখন শান্ত, আমার জীবন এখন ধন্য। আমি চলব এখন সেই পথে, যে পথে চললে আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাকে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে পুরস্কৃত করবেন। আমি মানব সেই বিধান যা মেনে চললে আমি ইহকাল ও পরকালে হব সম্মানিত ও মর্যাদা মন্ডিত। আমি আর সংশয়বাদী নই। আমি এখন নিশ্চিন্ত। তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত- এই তিনটি আলোকস্তম্ভের উপরে আমার জীবনতরী চলবে। এর বাইরে সবকিছু শয়তানী খোশ-খেয়াল ও মায়া-মরীচিকা ভিন্ন কিছুই নয়।
এটাই হ’ল মানুষের ধর্ম দর্শন। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার চেহারাকে দ্বীনের প্রতি একনিষ্ঠ কর। এটাই আল্লাহর ফিৎরত বা স্বভাবধর্ম। যার উপরে তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানেনা’। ‘সবাই তোমরা তাঁর অভিমুখী হও এবং তাঁকে ভয় কর’... (রূম ৩০/৩০-৩১)। পিতা-মাতার কারণে কিংবা ভ্রান্ত পরিবেশের কারণে মানুষ কাফের, মুশরিক, বিদ‘আতী হ’তে পারে। কিন্তু সত্য গ্রহণের যোগ্যতা প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই সুপ্ত থাকে। যার কারণেই ফেরাঊন মৃত্যুর পূর্বক্ষণে আল্লাহকে স্বীকার করেছিল।
অতএব মানুষের কর্তব্য হবে তার স্বভাবধর্মের অনুসারী হওয়া। আর সেটাই হ’ল ‘ইসলাম’। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন হ’ল ‘ইসলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। তিনি বলেন, আমি জিন ও ইনসানকে আমার দাসত্ব ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি (যারিয়াত ৫১/৫৬)। মানব প্রকৃতির মধ্যেই আল্লাহর প্রতি দাসত্ব ও আনুগত্যের আগ্রহ ও যোগ্যতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যদিও মানুষ শয়তানী ধোঁকায় পড়ে সাময়িকভাবে প্রতারিত হয়। আল্লাহ আমাদের সরল পথে পরিচালিত করুন- আমীন!
[1]. আত-তাহরীক ১৩তম বর্ষ ৮ম সংখ্যা মে ২০১০।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/760/5
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।