HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
দুর্নীতি রোধে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা ইসলামী দৃষ্টিকোণ
লেখকঃ ড. মো. আকতার হোসেন
কর্মকর্তা-কর্মচারি সরকারের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি। রাষ্ট্র বা প্রজাতন্ত্রের সেবক। তাদের মাধ্যমে সরকারের যেমন সুনাম বৃদ্ধি পেতে পারে, তদ্রূপ তাদের কার্যকলাপে সরকারের দুর্নামও হতে পারে। রাষ্ট্রের সফলতা ও বিফলতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সেবায় নিয়োজিত কর্মচারীদের ভূমিকা মূখ্য। সরকারের যে কোনো সম্পদ, যে কোনো নির্দেশ এবং যে কোনো তথ্য সরকারী কর্মকর্তার নিকট আমানত হিসেবে গণ্য এবং আমানত রক্ষা করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। এজন্য ইসলাম সরকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে যেমন পথ নির্দেশ করেছে তেমনি কর্মকর্তা নিয়োগ ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য ও বলিষ্ঠতার শর্তারোপ করেছে। অপরদিকে কর্মকর্তার দুর্নীতি, প্রতারণা, ফাঁকি, জালিয়াতি ও শঠতা ইত্যাদি মারাত্মক অন্যায় ও শরী‘আহ বিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“সরকারী দায়িত্ব একটি আমানত। কিয়ামতের দিন তা লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে। অবশ্য সেই ব্যক্তির জন্য নয় যে তা দায়িত্বানুভুতি সহকারে গ্রহণ করে এবং তার ওপর অর্পিত কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করে।” [আল্লামা আলাউদ্দিন আলী আল-মুত্তাকী, কানযুল উম্মাল ফি- সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফয়াল, ৫ম খন্ড (বৈরুত, তা.বি) হাদীস নং-৬৮ ও ১২২।]
“সরকারী দায়িত্ব একটি আমানত। কিয়ামতের দিন তা লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে। অবশ্য সেই ব্যক্তির জন্য নয় যে তা দায়িত্বানুভুতি সহকারে গ্রহণ করে এবং তার ওপর অর্পিত কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করে।” [আল্লামা আলাউদ্দিন আলী আল-মুত্তাকী, কানযুল উম্মাল ফি- সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফয়াল, ৫ম খন্ড (বৈরুত, তা.বি) হাদীস নং-৬৮ ও ১২২।]
কর্মকর্তা-কর্মচারী বলতে রাষ্ট্র বা প্রজাতন্ত্র কর্তৃক নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে বুঝায়। যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কার্যাবলী পরিচালনা করে থাকে। আরবী ভাষায় কর্মচারীদেরকে মুলাযিম বা মুওয়ায্যিফ বলে। রাসূলের যুগে অনুরূপ কর্মচারী নিয়োগ করা হতো। [গবেষণা বিভাগ, বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন, ৩য় খন্ড, (ঢাকা: ই.ফা.বা, ২০০১ ইং), পৃ৩৭৯।]
মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে তিনটি দিক বিবেচনার কথা বলেছেন। বিষয় তিনটি হলো, সততা ও বিশ্বস্ততা, দৈহিক শক্তি এবং জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি। আমরা জানি মাদইয়ানের সে মহান ব্যক্তি যখন মূসা আলাইহিস সালামকে কর্মচারী নিয়োগ করেছিলেন সে ঘটনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ خَيۡرَ مَنِ ٱسۡتَٔۡجَرۡتَ ٱلۡقَوِيُّ ٱلۡأَمِينُ ﴾ [ القصص : ٢٦ ]
“তোমার কর্মে নিয়োগের জন্য শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিই উত্তম।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ২৬]
আমরা এই আয়াতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পেলাম-দৈহিক শক্তি ও বিশ্বস্ততা। যে কোনো কর্ম সম্পাদন করার ক্ষেত্রে দৈহিক শক্তির বিকল্প নেই। দুর্বল ও ক্ষীণ ব্যক্তির পক্ষে কোনো কর্ম সম্পাদন সম্ভবপর নয়। অপরদিকে কর্মকর্তা সৎ ও বিশ্বস্ত হলে দায়িত্ব পালনে তৎপর হবে; যত্ন সহকারে কর্ম সম্পাদন করবে এবং সকল ক্ষেত্রে সততার স্বাক্ষর রাখবে। আল-কুরআনের অপর একটি আয়াতে জ্ঞান ও স্মৃতি শক্তির বিষয়টি বলা হয়েছে:
﴿قَالَ ٱجۡعَلۡنِي عَلَىٰ خَزَآئِنِ ٱلۡأَرۡضِۖ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٞ ٥٥﴾ [ يوسف : ٥٥ ]
“ইউসুফ বললেন, আপনি আমাকে দেশের ধন সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন, আমি বিশ্বস্ত রক্ষক এবং সুবিজ্ঞ।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৫]
জ্ঞানই শক্তি, এই জ্ঞান বা প্রজ্ঞাই মানুষের সঠিক পথের সন্ধান দেয়। দৈহিক শক্তি ও সততার সাথে জ্ঞানের সমন্বয় ঘটাতে হবে। যে কোনো কর্ম সম্পাদনের জন্য বাস্তব জ্ঞানের আবশ্যকতা অপরিহার্য। যেমন, আমরা দেখতে পাই বনী ইসরাঈলের লোকেরা তাদের নবীর কাছে তাদের জাতির জন্য একজন শাসক নিয়োগের আবেদন করলে আল্লাহ তা‘আলা নবীর মাধ্যমে তালুতের নাম ঘোষণা করেন। তখন তারা আপত্তি জানায় যে, তালুত গরীব ও সহায় সম্বলহীন, সে শাসক হওয়ার যোগ্য নয়। এর প্রতিউত্তরে আল্লাহ বলেন,
﴿قَالَ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰهُ عَلَيۡكُمۡ وَزَادَهُۥ بَسۡطَةٗ فِي ٱلۡعِلۡمِ وَٱلۡجِسۡمِۖ﴾ [ البقرة : ٢٤٧ ]
“আল্লাহই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দৈনিক শক্তিতে সমৃদ্ধ করেছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৪৭]
আমাদের দেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় এটা মূলতঃ তার জ্ঞান বা শিক্ষার যোগ্যতাকে পরীক্ষা করা হয়। সে উক্ত পদের যোগ্য কিনা যাচাই-বাছাই করা হয়। দরখাস্ত করার পূর্বে চারিত্রিক সনদপত্র চাওয়া হয় তার সততা ও বিশ্বস্ততার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। এপর বিসিএস বা সরকারী নিয়োগে মেডিকেল চেকআপ করা হয় তার স্বাস্থ্য বা শক্তি-সামর্থ পরীক্ষা করা জন্য। এগুলো সবই ইসলামসম্মত। উপরের আলোচনা থেকে আমাদের কাছে এগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপের কারণে দলীয় অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দান করা হয়। আবার উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাদ দিয়ে অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়। ইসলাম এর বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ার বাণী উচ্চারণ করেছে। বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সরকারী কর্মে যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগ দানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন যে, অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দিলে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে এবং দুর্নীতির প্রসার ঘটবে। যেমন, হাদীসে এসেছে:
«إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ»
“যখন অযোগ্য ব্যক্তির ওপর কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে তখন তুমি মহাপ্রলয়ের অপেক্ষা কর।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯।]
﴿ إِنَّ خَيۡرَ مَنِ ٱسۡتَٔۡجَرۡتَ ٱلۡقَوِيُّ ٱلۡأَمِينُ ﴾ [ القصص : ٢٦ ]
“তোমার কর্মে নিয়োগের জন্য শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিই উত্তম।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ২৬]
আমরা এই আয়াতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পেলাম-দৈহিক শক্তি ও বিশ্বস্ততা। যে কোনো কর্ম সম্পাদন করার ক্ষেত্রে দৈহিক শক্তির বিকল্প নেই। দুর্বল ও ক্ষীণ ব্যক্তির পক্ষে কোনো কর্ম সম্পাদন সম্ভবপর নয়। অপরদিকে কর্মকর্তা সৎ ও বিশ্বস্ত হলে দায়িত্ব পালনে তৎপর হবে; যত্ন সহকারে কর্ম সম্পাদন করবে এবং সকল ক্ষেত্রে সততার স্বাক্ষর রাখবে। আল-কুরআনের অপর একটি আয়াতে জ্ঞান ও স্মৃতি শক্তির বিষয়টি বলা হয়েছে:
﴿قَالَ ٱجۡعَلۡنِي عَلَىٰ خَزَآئِنِ ٱلۡأَرۡضِۖ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٞ ٥٥﴾ [ يوسف : ٥٥ ]
“ইউসুফ বললেন, আপনি আমাকে দেশের ধন সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন, আমি বিশ্বস্ত রক্ষক এবং সুবিজ্ঞ।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৫]
জ্ঞানই শক্তি, এই জ্ঞান বা প্রজ্ঞাই মানুষের সঠিক পথের সন্ধান দেয়। দৈহিক শক্তি ও সততার সাথে জ্ঞানের সমন্বয় ঘটাতে হবে। যে কোনো কর্ম সম্পাদনের জন্য বাস্তব জ্ঞানের আবশ্যকতা অপরিহার্য। যেমন, আমরা দেখতে পাই বনী ইসরাঈলের লোকেরা তাদের নবীর কাছে তাদের জাতির জন্য একজন শাসক নিয়োগের আবেদন করলে আল্লাহ তা‘আলা নবীর মাধ্যমে তালুতের নাম ঘোষণা করেন। তখন তারা আপত্তি জানায় যে, তালুত গরীব ও সহায় সম্বলহীন, সে শাসক হওয়ার যোগ্য নয়। এর প্রতিউত্তরে আল্লাহ বলেন,
﴿قَالَ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰهُ عَلَيۡكُمۡ وَزَادَهُۥ بَسۡطَةٗ فِي ٱلۡعِلۡمِ وَٱلۡجِسۡمِۖ﴾ [ البقرة : ٢٤٧ ]
“আল্লাহই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দৈনিক শক্তিতে সমৃদ্ধ করেছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৪৭]
আমাদের দেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় এটা মূলতঃ তার জ্ঞান বা শিক্ষার যোগ্যতাকে পরীক্ষা করা হয়। সে উক্ত পদের যোগ্য কিনা যাচাই-বাছাই করা হয়। দরখাস্ত করার পূর্বে চারিত্রিক সনদপত্র চাওয়া হয় তার সততা ও বিশ্বস্ততার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। এপর বিসিএস বা সরকারী নিয়োগে মেডিকেল চেকআপ করা হয় তার স্বাস্থ্য বা শক্তি-সামর্থ পরীক্ষা করা জন্য। এগুলো সবই ইসলামসম্মত। উপরের আলোচনা থেকে আমাদের কাছে এগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপের কারণে দলীয় অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দান করা হয়। আবার উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাদ দিয়ে অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়। ইসলাম এর বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ার বাণী উচ্চারণ করেছে। বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সরকারী কর্মে যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগ দানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন যে, অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দিলে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে এবং দুর্নীতির প্রসার ঘটবে। যেমন, হাদীসে এসেছে:
«إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ»
“যখন অযোগ্য ব্যক্তির ওপর কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে তখন তুমি মহাপ্রলয়ের অপেক্ষা কর।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯।]
সরকারী বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীগণের দায়িত্ব কর্তব্য অনেক। তাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো সরকার বা কর্তৃপক্ষের আদেশ ও নির্দেশ যথাযথভাবে মান্য করে তা কার্যে পরিণত করা। সরকার বা কর্তৃপক্ষকে কুরআনের পরিভাষায় “উলিল আমর” বলা হয়। মহান আল্লাহ পাক সকল কর্মচারীকে কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহর বাণী:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ﴾ [ النساء : ٥٩ ]
“হে মুমিনগণ যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য করা রাসূলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন।” [সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কর্তৃপক্ষের আদেশ নিষেধ মান্য করাও আনুগত্য করার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَطَاعَ أَمِيرِي فَقَدْ أَطَاعَنِي»
“যে ব্যক্তি আমীর বা নেতার আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৩৭।]
তবে কর্তৃপক্ষের ন্যায় ও সঠিক আদেশের আনুগত্য অপরিহার্য, অন্যায় ও পাপযুক্ত কোন আদেশ মান্য করা আনুগত্যের শর্ত নয় বা বাধ্য নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ»
“আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজে কোনো আনুগত্য নেই, আনুগত্য কেবল ন্যায়সঙ্গত কাজে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪০; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ২৫২৬; নাসাঈ, হাদীস নং ৪২০৫।]
তবে কর্তৃপক্ষের আদেশ যদি কোনো কর্মচারীর ব্যক্তিগতভাবে মনঃপুত না হয় তবুও তার ধৈর্য্য সহকারে মান্য করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ»
“মুসলিম ব্যক্তির ওপর নির্দেশ, শ্রবণ ও আনুগত্য করা অপরিহার্য, তা তার মনঃপুত হোক বা না হোক, যতক্ষণ পর্যন্ত পাপ কর্মের নির্দেশ প্রদান না করা হয়। পাপ কর্মের নির্দেশ প্রদান করা হলে এরূপ অবস্থায় শ্রবণও নেই, আনুগত্যও নেই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩৯।]
আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তার প্রথম ভাষণে বলেন,
«أطيعوني ماأطعت الله ورسوله فيكم فإن عصيت فلا طاعة لي عليكم»
“আমি যতক্ষণ তোমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যাধীনে তোমাদের নির্দেশ প্রদান করব, ততক্ষণ তোমরা আমার অনুগত্য করবে। আমি অবাধ্যচারী হলে আমার আনুগত্য করা তোমাদের কর্তব্য নয়।” [ইবন হিশাম, আস-সীরাতুন নাবাবীয়্যাহ, ৪র্থ খণ্ড (মিনার, কায়রো: দারুর রাইয়্যান, ১ম প্রকাশ, ১৯৭৮ ইং), পৃ. ৩৫৯।]
বিশিষ্ট মুফাসসীর ইমাম রাযী ‘নেতার আদশে মান্য করা’ সম্পর্কে আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন যে, কর্তৃপক্ষের যথার্থ আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। কিন্ত তিনি অন্যায় অবিচারের নির্দেশ দিলে উক্ত নির্দেশ মান্য করা অপরিহার্য নয় বরং হারাম। [আবুল ফযল মুহাম্মদ ফখুরুদ্দীন আল রাযী, মাফাতীহুল গাইব, ১ম খণ্ড (বৈরুত: দারুল ফিকর, ১ম প্রকাশ, ১৯৮১ ইং) পৃ. ৩৫৯।]
সরকারী কর্মচারী যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন, নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলার ঘোষণা:
﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيّ﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]
“ধর্মের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই। সত্যপথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।” [সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৬]
অমুসলিম কর্মচারীরা মুসলিম কর্মচারীদের মত সমান অধিকার ভোগ করবেন। বিশেষ করে নিজ ধর্ম পালনের অধিকার।
দ্বিতীয় খলিফা উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর আসবাক নামক একজন খ্রিস্টান দাস ছিল। সেই দাসের নিজ বক্তব্য হলো, “আমি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খ্রিস্টান দাস ছিলাম। তিনি আমাকে ইসলাম কবুলের দাওয়াত দিতেন। কিন্তু আমি তা প্রতাখ্যান করতাম। তিনি বলতেন ইসলামে জোর-জবরদস্তির অবকাশ নেই।” [আব্দুর রহমান ইবন আবী হাতিম, আল জিহাদ (বৈরুত: দারুল মারিফাহ, ১৪০৫ হি.) পৃ. ১৪৫।]
কর্মচারীগণ ধর্ম পালনের সাথে সাথে অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহনশীল মনোভাব প্রকাশ করবে। অন্য কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো থেকে বিরত থাকবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার নিষেধাজ্ঞা নিম্নরূপ:
﴿وَلَا تَسُبُّواْ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّواْ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٖۗ ﴾ [ الانعام : ١٠٨ ]
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না। কেননা তারা বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৮]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا، وَبَشِّرُوا، وَلاَ تُنَفِّرُوا»
“সহজ কর, কঠোরতা করো না। লোকদেরকে সুসংবাদ দাও, বিদ্বেষ ছড়িও না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯।]
এরপর কর্মচারীদের কর্তব্য হলো তারা সরকারী গোপনীয় তথ্য ফাঁস করবে না। সরকারী তথ্য ফাঁস করা বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল এবং মারাত্মক অমাজর্নীয় অপরাধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يُقَالُ : هَذِهِ غَدْرَةُ فُلَانٍ»
“কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি পতাকা থাকবে এবং বলা হবে-এটা অমুক ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩৬।]
কর্মচারীরা বেতনের অতিরিক্ত কোনো উপহার-উপঢৌকন ও দানসামগ্রী জনগণের নিকট থেকে গ্রহণ করতে পারবে না। এটা ঘুষের শামিল যা ইসলামে সরাসরি নিষিদ্ধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মচারীদের প্রদত্ত যে কোনো উপহারকে ঘুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
«هدايا العمال سحت»
“সরকারী কর্মচারীদেরকে প্রদত্ত উপঢৌকন ঘুষ হিসেবে গণ্য”। [আহম্মদ ইবন হাম্বল, আল-মুসনাদ, ৫ম খণ্ড (মিসর: দারুল মারিয়াহ, ১৯৫৮ ইং), পৃ. ৪২৫, হাদীস নং ২৩৯৯৯।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَرَزَقْنَاهُ رِزْقًا، فَمَا أَخَذَ بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ غُلُولٌ»
“কোনো ব্যক্তিকে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগদানের পর তার নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত যেটা গ্রহণ করবে সেটা আত্মসাৎকৃত মাল।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৯৪৩।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে কর্মচারী নিয়োগ করে যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালেন। সে ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, এটা যাকাতের মাল আর এটা আমাকে উপঢৌকনস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন:
«مَا بَالُ الْعَامِلِ نَبْعَثُهُ فَيَجِيءُ فَيَقُولُ هَذَا لَكُمْ وَهَذَا أُهْدِيَ لِي، أَلَا جَلَسَ فِي بَيْتِ أُمِّهِ أَوْ أَبِيهِ فَيَنْظُرَ أَيُهْدَى لَهُ أَمْ لَا؟»
“সরকারী কর্মচারীর কী হলো! আমরা যখন তাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে কোথায়ও প্রেরণ করি তখন সে ফিরে এসে বলে এই মাল আপনাদের (সরকারের) এবং এটা আমাকে প্রদত্ত উপহার। সে তার বাড়িতে বসে থেকে দেখুক তাকে উপহার দেওয়া হয় কি-না।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৯৪৬।]
বাংলাদেশের সংবিধানের ২১ নং ধারা অনুযায়ী সরকারী কর্মচারীদের ছয়টি কর্তব্যের কথা জানা যায়। তা হলো, সংবিধান মান্য করা, আইন মান্য করা, শৃংখলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা, জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা, সকল সময়ে জনগণের সেবা করবার চেষ্টা করা। [গাজী শামসুর রহমান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ভাষ্য, (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১ম সংস্করণ ১৯৭৭ইং/ ১৩৮৪ বাং), পৃ. ৫০, ধারা ২১।]
কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই ছয়টি কর্তব্য একজন কর্মচারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উলিল আমরের আনুগত্যের প্রকাশ সংবিধান মান্য করার মাধ্যমে ঘটে থাকে। আইন অমান্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে অমার্জনীয় অপরাধ। একজন কর্মচারী দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীয় দায়িত্ব পালন করবে। তার দ্বারা কেউ জুলুমের স্বীকার হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ»
“মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে না তার ওপর যুলুম করতে পারে। আর না তাকে শত্রুর হাতে সোর্পদ করতে পারে। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরণে রত থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরণ করবেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪২, ৬৯৫১; তিরমিযী, হাদীস নং ১৪২৬।]
জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা একজন কর্মচারীর ঈমানী দায়িত্ব। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُؤۡتُواْ ٱلسُّفَهَآءَ أَمۡوَٰلَكُمُ ٱلَّتِي جَعَلَ ٱللَّهُ لَكُمۡ قِيَٰمٗا﴾ [ النساء : ٥ ]
“আল্লাহ যে সম্পদকে তোমার অস্তিত্ব রক্ষার উপায় করে দিয়েছেন। তা তোমরা অবুঝ লোকদের হাতে তুলে দিও না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ﴾ [ النساء : ٢٩ ]
“হে ইমানদারগণ! তোমরা অন্যায় ও অবৈধভাবে পরস্পরের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৮]
জনগণের সেবা করা একজন সরকারী কর্মকর্তার নৈতিক দায়িত্ব। সে সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত জনগণের সেবক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’টি হাদীস:
«خير الناس من ينفع الناس»
“যে ব্যক্তি মানুষের কল্যাণ করে, সেই ব্যক্তিই উত্তম।” [সহীহ বুখারী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৩৯।]
«والله في عون العبد ماكان العبد في عون أخيه»
“আল্লাহ তা‘আলা ততক্ষণ তার বান্দার সাহায্যে রত থাকেন, বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১৪২৫, ১৯৩০, ২৯৪৫; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৪৯৪৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২২৫।]
শৃঙ্খলা রক্ষা করা কর্মচারীর অন্যতম কর্তব্য। বিশৃঙ্খলা ইসলাম কখনো বরদাশত করে না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَٰحِهَا ﴾ [ الاعراف : ٥٦ ]
“পৃথিবীতে তোমরা বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৬]
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ﴾ [ القصص : ٧٧ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করে না।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭৭]
সরকারী কর্মচারীদের সকল ব্যক্তির সাথে সদ্বব্যবহার, ভদ্রতাপূর্ণ আচরণ করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
«إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا»
“তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোক তারা যাদের চরিত্র ও ব্যবহার তোমাদের সরকলের অপেক্ষা উত্তম।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৯।]
সরকারী অফিসের কর্মচারীগণ কখনো প্রতারণার আশ্রয় নেবে না। কেননা প্রতারণা, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ফাঁকি, ঠকবাজি ও শঠতা ইত্যাদি মারাত্মক অন্যায়, জঘন্য অপরাধ ও শরী‘আহ বিরোধী কাজ। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي»
“যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২।]
তিনি আরও বলেন,
«مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِنَ المُسْلِمِينَ، فَيَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهُمْ، إِلَّا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الجَنَّةَ»
“মুসলিম জনগণের জন্য নিয়োগকৃত কোনো শাসক বা কর্মচারী তাদের সাথে প্রতারণাকারী হিসেবে মারা গেলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ হারাম করে দেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৫১।]
দুর্নীতি ও প্রতারনা বিভিন্নভাবে, নানাবিধ কৌশলে ও বিচিত্র পন্থায় হতে পারে। যেমন, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে হয়রানী করা, নিজের পদমর্যাদা বাড়িয়ে বলে কাউকে প্রভাবিত করা, প্রতিশ্রুতি দিয়ে পূর্ণ না করা ইত্যাদি। ইসলামে এটা নিষিদ্ধ।
আত্মসাৎ বা আমানতের খেয়ানত একটি মারাত্মক অপরাধ। সরকারের সকল কর্মচারী এ হীন কর্ম থেকে বিরত থাকবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেন,
«لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ»
“যে ব্যক্তি আমানতের খেয়ানত করে তার ঈমান নাই।” [আহমদ, হাদীস নং ১৫৫৬৮।]
আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে ব্যাধির অনুপ্রবেশ ঘটেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে তা হলো ঘুষ বা দুর্নীতি। ঘুষ বা দুর্নীতি ছাড়া অনেক অফিসে ফাইল চলে না। পদন্নোতি হয় না। বাংলাদেশ যে দুর্নীতির শীর্ষে তার অন্যতম কারণ দুর্নীতি ও ঘুষ। ইহা একটি অবৈধ ও নিকৃষ্ট কর্ম। ঘুষ গ্রহিতার ওপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত বর্ষিত হয়। প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীকে উৎকোচ বা ঘুষ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা এ জাতীয় অবৈধ লেনদেন থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَتَرَىٰ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِ وَأَكۡلِهِمُ ٱلسُّحۡتَۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٦٢ ﴾ [ المائدة : ٦٢ ]
“তুমি অনেককে পাপকর্মে, সীমালংঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর দেখবে। তারা যা করে তা কতই নিকৃষ্ট।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬২]
﴿سَمَّٰعُونَ لِلۡكَذِبِ أَكَّٰلُونَ لِلسُّحۡتِۚ ﴾ [ المائدة : ٤٢ ]
“তারা মিথ্যা শুনতে অতি আগ্রহী এবং অবৈধ ভক্ষণে অতি আসক্ত।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়া: ৪২]
তাফসীরকারকগণ অবৈধ ভক্ষন দ্বারা ঘুষকে বুঝিয়েছেন। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,
«لعنة الله علي الراشي والمرتشي في الحكم»
“রাষ্ট্রীয় বা সরকারী ব্যাপারে যে ব্যক্তি ঘুষ দেয় এবং যে ব্যক্তি ঘুষ নেয় তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।” [আহমদ, হাদীস নং ৯০২১।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ঘুষ দাতা গ্রহীতাকে অভিসম্পাত দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আমর বলেন,
«لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الراشي والمرتشي»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতাকে লানৎ বা অভিসম্পাত দিয়েছেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৩৬, ১৩৩৭; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৩৫৮০।]
ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামী। রাসূল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« الراشي والمرتشي كلاهما في النار»
“ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ই আগুনে যাবে।” [ইউসুফ আল-কারযাভী, আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম, অনু: মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, ইসলামে হালাল হারামের বিধান, (ঢাকা: খায়রুন প্রকাশনী, ৬ষ্ঠ প্রকাশ, ১৯৯৭ ইং) পৃ২০২।]
সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশ্বস্ততার সাথে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। দায়িত্বে কোনো সরকারী কর্মচারীরা অবহেলা করবে না। এটা নিয়োগবিধির পরিপন্থী কাজ এ বিষয়ে মা‘কাল ইবন ইয়াসার বলেন, আমি প্রিয় নবীকে শুনেছি, “যে মুসলিমদের কোনো বিষয়ে কর্মচারী নিযুক্ত হলো, অতঃপর সে তাদের কল্যাণ ও স্বার্থের জন্য সেই ধরনের চেষ্টা করে নি যে ধরনের চেষ্টা সে স্বীয় কল্যাণ ও স্বার্থের জন্য করে। আল্লাহ পাক তাকে অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।” [তিরমিযী, আস-সুনান, ১ম খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৮।] কর্মচারীদের দায়িত্বে কোনো প্রকার অবহেলার কারণে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسُۡٔولٗا ٣٤ ﴾ [ الاسراء : ٣٤ ]
“তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন কর, প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৪]
এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
«المُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ»
“মুসলিমগণ তাদের চুক্তির শর্তাবলী মান্য করতে বাধ্য।” [তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৫২।]
কাজে অবহেলা ও ফাঁকিবাজী জান্নাতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ أَمِيرٍ يَلِي أَمْرَ الْمُسْلِمِينَ، ثُمَّ لَا يَجْهَدُ لَهُمْ، وَيَنْصَحُ، إِلَّا لَمْ يَدْخُلْ مَعَهُمُ الْجَنَّةَ»
“মুসলিম রাষ্ট্রে পদাধিকারী নিজের পদের দায়িত্ব পালন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা না করলে এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ না করলে সে কখনও মুসলিমদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪২।]
কোনো কর্মচারী উপযুক্ত কারণ ও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। এটা কর্তব্যে অবহেলা ও আনুগত্যহীনতার নামান্তর। কর্মচারী সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে সংগত আচরণ করবে। কেননা এতে সরকারের সুনাম ও দুর্নাম নির্ভর করে। সর্বোপরি একজন কর্মচারী সরকারী আইনের পূর্ণ অনুসরনের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে তার যথাযথ ভূমিকা রাখবে। এতে সরকারের যেমন সুনাম বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হবে।
কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাহীন নয়। সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব পালন কর্মচারীর কর্তব্য নয়। স্বয়ং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কর্মচারীদেরকে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজের নির্দেশ দিতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَمَرَهُمْ، أَمَرَهُمْ مِنَ الأَعْمَالِ بِمَا يُطِيقُونَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কর্মচারীদের তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কোনো কাজের আদেশ দিতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০।]
তিনি কর্মচারীদেরকে নির্দেশ দেন:
«كلفوا من الأعمال بما تطيقون»
“তোমরা সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ কর।” [ইমাম মাজাহ, ২য় খন্ড, পৃ. ১২১৭।] এটাই আল্লাহর বিধান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿لَا تُكَلَّفُ نَفۡسٌ إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [ البقرة : ٢٣٣ ]
“কারো ওপর তার সাধ্যতীত কার্যভার চাপানো যায় না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩৩]
অপর আয়াতে বলেন,
﴿لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [ البقرة : ٢٨٦ ]
“আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো কষ্ট দায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬]
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ﴾ [ النساء : ٥٩ ]
“হে মুমিনগণ যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য করা রাসূলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন।” [সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কর্তৃপক্ষের আদেশ নিষেধ মান্য করাও আনুগত্য করার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَطَاعَ أَمِيرِي فَقَدْ أَطَاعَنِي»
“যে ব্যক্তি আমীর বা নেতার আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৩৭।]
তবে কর্তৃপক্ষের ন্যায় ও সঠিক আদেশের আনুগত্য অপরিহার্য, অন্যায় ও পাপযুক্ত কোন আদেশ মান্য করা আনুগত্যের শর্ত নয় বা বাধ্য নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ»
“আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজে কোনো আনুগত্য নেই, আনুগত্য কেবল ন্যায়সঙ্গত কাজে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪০; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ২৫২৬; নাসাঈ, হাদীস নং ৪২০৫।]
তবে কর্তৃপক্ষের আদেশ যদি কোনো কর্মচারীর ব্যক্তিগতভাবে মনঃপুত না হয় তবুও তার ধৈর্য্য সহকারে মান্য করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ»
“মুসলিম ব্যক্তির ওপর নির্দেশ, শ্রবণ ও আনুগত্য করা অপরিহার্য, তা তার মনঃপুত হোক বা না হোক, যতক্ষণ পর্যন্ত পাপ কর্মের নির্দেশ প্রদান না করা হয়। পাপ কর্মের নির্দেশ প্রদান করা হলে এরূপ অবস্থায় শ্রবণও নেই, আনুগত্যও নেই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩৯।]
আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তার প্রথম ভাষণে বলেন,
«أطيعوني ماأطعت الله ورسوله فيكم فإن عصيت فلا طاعة لي عليكم»
“আমি যতক্ষণ তোমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যাধীনে তোমাদের নির্দেশ প্রদান করব, ততক্ষণ তোমরা আমার অনুগত্য করবে। আমি অবাধ্যচারী হলে আমার আনুগত্য করা তোমাদের কর্তব্য নয়।” [ইবন হিশাম, আস-সীরাতুন নাবাবীয়্যাহ, ৪র্থ খণ্ড (মিনার, কায়রো: দারুর রাইয়্যান, ১ম প্রকাশ, ১৯৭৮ ইং), পৃ. ৩৫৯।]
বিশিষ্ট মুফাসসীর ইমাম রাযী ‘নেতার আদশে মান্য করা’ সম্পর্কে আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন যে, কর্তৃপক্ষের যথার্থ আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। কিন্ত তিনি অন্যায় অবিচারের নির্দেশ দিলে উক্ত নির্দেশ মান্য করা অপরিহার্য নয় বরং হারাম। [আবুল ফযল মুহাম্মদ ফখুরুদ্দীন আল রাযী, মাফাতীহুল গাইব, ১ম খণ্ড (বৈরুত: দারুল ফিকর, ১ম প্রকাশ, ১৯৮১ ইং) পৃ. ৩৫৯।]
সরকারী কর্মচারী যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন, নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলার ঘোষণা:
﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيّ﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]
“ধর্মের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই। সত্যপথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।” [সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৬]
অমুসলিম কর্মচারীরা মুসলিম কর্মচারীদের মত সমান অধিকার ভোগ করবেন। বিশেষ করে নিজ ধর্ম পালনের অধিকার।
দ্বিতীয় খলিফা উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর আসবাক নামক একজন খ্রিস্টান দাস ছিল। সেই দাসের নিজ বক্তব্য হলো, “আমি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খ্রিস্টান দাস ছিলাম। তিনি আমাকে ইসলাম কবুলের দাওয়াত দিতেন। কিন্তু আমি তা প্রতাখ্যান করতাম। তিনি বলতেন ইসলামে জোর-জবরদস্তির অবকাশ নেই।” [আব্দুর রহমান ইবন আবী হাতিম, আল জিহাদ (বৈরুত: দারুল মারিফাহ, ১৪০৫ হি.) পৃ. ১৪৫।]
কর্মচারীগণ ধর্ম পালনের সাথে সাথে অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহনশীল মনোভাব প্রকাশ করবে। অন্য কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো থেকে বিরত থাকবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার নিষেধাজ্ঞা নিম্নরূপ:
﴿وَلَا تَسُبُّواْ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّواْ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٖۗ ﴾ [ الانعام : ١٠٨ ]
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না। কেননা তারা বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৮]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا، وَبَشِّرُوا، وَلاَ تُنَفِّرُوا»
“সহজ কর, কঠোরতা করো না। লোকদেরকে সুসংবাদ দাও, বিদ্বেষ ছড়িও না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯।]
এরপর কর্মচারীদের কর্তব্য হলো তারা সরকারী গোপনীয় তথ্য ফাঁস করবে না। সরকারী তথ্য ফাঁস করা বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল এবং মারাত্মক অমাজর্নীয় অপরাধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يُقَالُ : هَذِهِ غَدْرَةُ فُلَانٍ»
“কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি পতাকা থাকবে এবং বলা হবে-এটা অমুক ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩৬।]
কর্মচারীরা বেতনের অতিরিক্ত কোনো উপহার-উপঢৌকন ও দানসামগ্রী জনগণের নিকট থেকে গ্রহণ করতে পারবে না। এটা ঘুষের শামিল যা ইসলামে সরাসরি নিষিদ্ধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মচারীদের প্রদত্ত যে কোনো উপহারকে ঘুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
«هدايا العمال سحت»
“সরকারী কর্মচারীদেরকে প্রদত্ত উপঢৌকন ঘুষ হিসেবে গণ্য”। [আহম্মদ ইবন হাম্বল, আল-মুসনাদ, ৫ম খণ্ড (মিসর: দারুল মারিয়াহ, ১৯৫৮ ইং), পৃ. ৪২৫, হাদীস নং ২৩৯৯৯।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَرَزَقْنَاهُ رِزْقًا، فَمَا أَخَذَ بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ غُلُولٌ»
“কোনো ব্যক্তিকে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগদানের পর তার নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত যেটা গ্রহণ করবে সেটা আত্মসাৎকৃত মাল।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৯৪৩।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে কর্মচারী নিয়োগ করে যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালেন। সে ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, এটা যাকাতের মাল আর এটা আমাকে উপঢৌকনস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন:
«مَا بَالُ الْعَامِلِ نَبْعَثُهُ فَيَجِيءُ فَيَقُولُ هَذَا لَكُمْ وَهَذَا أُهْدِيَ لِي، أَلَا جَلَسَ فِي بَيْتِ أُمِّهِ أَوْ أَبِيهِ فَيَنْظُرَ أَيُهْدَى لَهُ أَمْ لَا؟»
“সরকারী কর্মচারীর কী হলো! আমরা যখন তাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে কোথায়ও প্রেরণ করি তখন সে ফিরে এসে বলে এই মাল আপনাদের (সরকারের) এবং এটা আমাকে প্রদত্ত উপহার। সে তার বাড়িতে বসে থেকে দেখুক তাকে উপহার দেওয়া হয় কি-না।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৯৪৬।]
বাংলাদেশের সংবিধানের ২১ নং ধারা অনুযায়ী সরকারী কর্মচারীদের ছয়টি কর্তব্যের কথা জানা যায়। তা হলো, সংবিধান মান্য করা, আইন মান্য করা, শৃংখলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা, জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা, সকল সময়ে জনগণের সেবা করবার চেষ্টা করা। [গাজী শামসুর রহমান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ভাষ্য, (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১ম সংস্করণ ১৯৭৭ইং/ ১৩৮৪ বাং), পৃ. ৫০, ধারা ২১।]
কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই ছয়টি কর্তব্য একজন কর্মচারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উলিল আমরের আনুগত্যের প্রকাশ সংবিধান মান্য করার মাধ্যমে ঘটে থাকে। আইন অমান্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে অমার্জনীয় অপরাধ। একজন কর্মচারী দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীয় দায়িত্ব পালন করবে। তার দ্বারা কেউ জুলুমের স্বীকার হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ»
“মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে না তার ওপর যুলুম করতে পারে। আর না তাকে শত্রুর হাতে সোর্পদ করতে পারে। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরণে রত থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরণ করবেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪২, ৬৯৫১; তিরমিযী, হাদীস নং ১৪২৬।]
জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা একজন কর্মচারীর ঈমানী দায়িত্ব। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُؤۡتُواْ ٱلسُّفَهَآءَ أَمۡوَٰلَكُمُ ٱلَّتِي جَعَلَ ٱللَّهُ لَكُمۡ قِيَٰمٗا﴾ [ النساء : ٥ ]
“আল্লাহ যে সম্পদকে তোমার অস্তিত্ব রক্ষার উপায় করে দিয়েছেন। তা তোমরা অবুঝ লোকদের হাতে তুলে দিও না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ﴾ [ النساء : ٢٩ ]
“হে ইমানদারগণ! তোমরা অন্যায় ও অবৈধভাবে পরস্পরের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৮]
জনগণের সেবা করা একজন সরকারী কর্মকর্তার নৈতিক দায়িত্ব। সে সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত জনগণের সেবক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’টি হাদীস:
«خير الناس من ينفع الناس»
“যে ব্যক্তি মানুষের কল্যাণ করে, সেই ব্যক্তিই উত্তম।” [সহীহ বুখারী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৩৯।]
«والله في عون العبد ماكان العبد في عون أخيه»
“আল্লাহ তা‘আলা ততক্ষণ তার বান্দার সাহায্যে রত থাকেন, বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১৪২৫, ১৯৩০, ২৯৪৫; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৪৯৪৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২২৫।]
শৃঙ্খলা রক্ষা করা কর্মচারীর অন্যতম কর্তব্য। বিশৃঙ্খলা ইসলাম কখনো বরদাশত করে না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَٰحِهَا ﴾ [ الاعراف : ٥٦ ]
“পৃথিবীতে তোমরা বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৬]
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ﴾ [ القصص : ٧٧ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করে না।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭৭]
সরকারী কর্মচারীদের সকল ব্যক্তির সাথে সদ্বব্যবহার, ভদ্রতাপূর্ণ আচরণ করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
«إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا»
“তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোক তারা যাদের চরিত্র ও ব্যবহার তোমাদের সরকলের অপেক্ষা উত্তম।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৯।]
সরকারী অফিসের কর্মচারীগণ কখনো প্রতারণার আশ্রয় নেবে না। কেননা প্রতারণা, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ফাঁকি, ঠকবাজি ও শঠতা ইত্যাদি মারাত্মক অন্যায়, জঘন্য অপরাধ ও শরী‘আহ বিরোধী কাজ। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي»
“যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২।]
তিনি আরও বলেন,
«مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِنَ المُسْلِمِينَ، فَيَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهُمْ، إِلَّا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الجَنَّةَ»
“মুসলিম জনগণের জন্য নিয়োগকৃত কোনো শাসক বা কর্মচারী তাদের সাথে প্রতারণাকারী হিসেবে মারা গেলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ হারাম করে দেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৫১।]
দুর্নীতি ও প্রতারনা বিভিন্নভাবে, নানাবিধ কৌশলে ও বিচিত্র পন্থায় হতে পারে। যেমন, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে হয়রানী করা, নিজের পদমর্যাদা বাড়িয়ে বলে কাউকে প্রভাবিত করা, প্রতিশ্রুতি দিয়ে পূর্ণ না করা ইত্যাদি। ইসলামে এটা নিষিদ্ধ।
আত্মসাৎ বা আমানতের খেয়ানত একটি মারাত্মক অপরাধ। সরকারের সকল কর্মচারী এ হীন কর্ম থেকে বিরত থাকবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেন,
«لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ»
“যে ব্যক্তি আমানতের খেয়ানত করে তার ঈমান নাই।” [আহমদ, হাদীস নং ১৫৫৬৮।]
আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে ব্যাধির অনুপ্রবেশ ঘটেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে তা হলো ঘুষ বা দুর্নীতি। ঘুষ বা দুর্নীতি ছাড়া অনেক অফিসে ফাইল চলে না। পদন্নোতি হয় না। বাংলাদেশ যে দুর্নীতির শীর্ষে তার অন্যতম কারণ দুর্নীতি ও ঘুষ। ইহা একটি অবৈধ ও নিকৃষ্ট কর্ম। ঘুষ গ্রহিতার ওপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত বর্ষিত হয়। প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীকে উৎকোচ বা ঘুষ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা এ জাতীয় অবৈধ লেনদেন থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَتَرَىٰ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِ وَأَكۡلِهِمُ ٱلسُّحۡتَۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٦٢ ﴾ [ المائدة : ٦٢ ]
“তুমি অনেককে পাপকর্মে, সীমালংঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর দেখবে। তারা যা করে তা কতই নিকৃষ্ট।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬২]
﴿سَمَّٰعُونَ لِلۡكَذِبِ أَكَّٰلُونَ لِلسُّحۡتِۚ ﴾ [ المائدة : ٤٢ ]
“তারা মিথ্যা শুনতে অতি আগ্রহী এবং অবৈধ ভক্ষণে অতি আসক্ত।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়া: ৪২]
তাফসীরকারকগণ অবৈধ ভক্ষন দ্বারা ঘুষকে বুঝিয়েছেন। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,
«لعنة الله علي الراشي والمرتشي في الحكم»
“রাষ্ট্রীয় বা সরকারী ব্যাপারে যে ব্যক্তি ঘুষ দেয় এবং যে ব্যক্তি ঘুষ নেয় তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।” [আহমদ, হাদীস নং ৯০২১।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ঘুষ দাতা গ্রহীতাকে অভিসম্পাত দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আমর বলেন,
«لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الراشي والمرتشي»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতাকে লানৎ বা অভিসম্পাত দিয়েছেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৩৬, ১৩৩৭; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৩৫৮০।]
ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামী। রাসূল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« الراشي والمرتشي كلاهما في النار»
“ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ই আগুনে যাবে।” [ইউসুফ আল-কারযাভী, আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম, অনু: মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, ইসলামে হালাল হারামের বিধান, (ঢাকা: খায়রুন প্রকাশনী, ৬ষ্ঠ প্রকাশ, ১৯৯৭ ইং) পৃ২০২।]
সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশ্বস্ততার সাথে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। দায়িত্বে কোনো সরকারী কর্মচারীরা অবহেলা করবে না। এটা নিয়োগবিধির পরিপন্থী কাজ এ বিষয়ে মা‘কাল ইবন ইয়াসার বলেন, আমি প্রিয় নবীকে শুনেছি, “যে মুসলিমদের কোনো বিষয়ে কর্মচারী নিযুক্ত হলো, অতঃপর সে তাদের কল্যাণ ও স্বার্থের জন্য সেই ধরনের চেষ্টা করে নি যে ধরনের চেষ্টা সে স্বীয় কল্যাণ ও স্বার্থের জন্য করে। আল্লাহ পাক তাকে অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।” [তিরমিযী, আস-সুনান, ১ম খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৮।] কর্মচারীদের দায়িত্বে কোনো প্রকার অবহেলার কারণে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسُۡٔولٗا ٣٤ ﴾ [ الاسراء : ٣٤ ]
“তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন কর, প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৪]
এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
«المُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ»
“মুসলিমগণ তাদের চুক্তির শর্তাবলী মান্য করতে বাধ্য।” [তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৫২।]
কাজে অবহেলা ও ফাঁকিবাজী জান্নাতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ أَمِيرٍ يَلِي أَمْرَ الْمُسْلِمِينَ، ثُمَّ لَا يَجْهَدُ لَهُمْ، وَيَنْصَحُ، إِلَّا لَمْ يَدْخُلْ مَعَهُمُ الْجَنَّةَ»
“মুসলিম রাষ্ট্রে পদাধিকারী নিজের পদের দায়িত্ব পালন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা না করলে এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ না করলে সে কখনও মুসলিমদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪২।]
কোনো কর্মচারী উপযুক্ত কারণ ও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। এটা কর্তব্যে অবহেলা ও আনুগত্যহীনতার নামান্তর। কর্মচারী সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে সংগত আচরণ করবে। কেননা এতে সরকারের সুনাম ও দুর্নাম নির্ভর করে। সর্বোপরি একজন কর্মচারী সরকারী আইনের পূর্ণ অনুসরনের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে তার যথাযথ ভূমিকা রাখবে। এতে সরকারের যেমন সুনাম বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হবে।
কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাহীন নয়। সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব পালন কর্মচারীর কর্তব্য নয়। স্বয়ং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কর্মচারীদেরকে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজের নির্দেশ দিতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَمَرَهُمْ، أَمَرَهُمْ مِنَ الأَعْمَالِ بِمَا يُطِيقُونَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কর্মচারীদের তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কোনো কাজের আদেশ দিতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০।]
তিনি কর্মচারীদেরকে নির্দেশ দেন:
«كلفوا من الأعمال بما تطيقون»
“তোমরা সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ কর।” [ইমাম মাজাহ, ২য় খন্ড, পৃ. ১২১৭।] এটাই আল্লাহর বিধান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿لَا تُكَلَّفُ نَفۡسٌ إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [ البقرة : ٢٣٣ ]
“কারো ওপর তার সাধ্যতীত কার্যভার চাপানো যায় না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩৩]
অপর আয়াতে বলেন,
﴿لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [ البقرة : ٢٨٦ ]
“আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো কষ্ট দায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬]
জবাবদিহিতার মানসিকতা দায়িত্ব পালনে প্রত্যেকটি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সচেতন করে তোলে। কর্মে প্রতারণা, অবহেলা ও ফাঁকিবাজির থেকে বিরত রাখে। দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা করলে কর্তৃপক্ষ বা সরকার তথা আল্লাহ তা‘আলার দরবারে জবাবদিহী করতে হবে। এ ব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسُۡٔولٗا ٣٤﴾ [ الاسراء : ٣٤ ]
“তোমরা তোমাদের অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন কর। কেননা অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৪]
আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে আরও বলেন-
﴿وَلَتُسَۡٔلُنَّ عَمَّا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٩٣ ﴾ [ النحل : ٩٣ ]
“তোমরা যা কর সে বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৩]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেন,
«أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ، وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا، وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»
“সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোনো ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব, সাবধান, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৩৮।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«وإنها أمانة وإنها يوم القيامة خزى وندامة إلا من أخذ بحقها وادى الذى عليه فيها»
“(সরকারী দায়িত্ব) একটি আমানত। কিয়ামতের দিন তা লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে। অবশ্য সেই ব্যক্তির জন্য নয় যে এটা দায়িত্বানুভুতি সহকারে গ্রহণ করে এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পন্ন করে।” [আল-মুতকী, কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদীস নং ৬৮, ৬২২।]
অতএব, কুরআন ও হাদীসের আলোকে বুঝা গেল একজন মুসলিম কর্মচারীকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের জন্য ইহকালে কর্তৃপক্ষ বা সরকাররের কাছে জবাবদিহী করতে হবে। আর পরকালে আল্লাহ তা‘আলার নিকট চূড়ান্তভাবে জবাবদিহী করতে হবে।
﴿وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسُۡٔولٗا ٣٤﴾ [ الاسراء : ٣٤ ]
“তোমরা তোমাদের অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন কর। কেননা অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৪]
আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে আরও বলেন-
﴿وَلَتُسَۡٔلُنَّ عَمَّا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٩٣ ﴾ [ النحل : ٩٣ ]
“তোমরা যা কর সে বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৩]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেন,
«أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ، وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا، وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»
“সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোনো ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব, সাবধান, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৩৮।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«وإنها أمانة وإنها يوم القيامة خزى وندامة إلا من أخذ بحقها وادى الذى عليه فيها»
“(সরকারী দায়িত্ব) একটি আমানত। কিয়ামতের দিন তা লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে। অবশ্য সেই ব্যক্তির জন্য নয় যে এটা দায়িত্বানুভুতি সহকারে গ্রহণ করে এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পন্ন করে।” [আল-মুতকী, কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদীস নং ৬৮, ৬২২।]
অতএব, কুরআন ও হাদীসের আলোকে বুঝা গেল একজন মুসলিম কর্মচারীকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের জন্য ইহকালে কর্তৃপক্ষ বা সরকাররের কাছে জবাবদিহী করতে হবে। আর পরকালে আল্লাহ তা‘আলার নিকট চূড়ান্তভাবে জবাবদিহী করতে হবে।
সরকারী বেসরকারী সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের দুর্নীতি রোধকল্পে কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
চাকুরীতে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে যে, আমাদের দেশের নিয়োগ প্রক্রিয়া ইসলাম সমর্থন করে। এক্ষেত্রে বিধিমালা অনুসরণ করে চাকুরীর ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা বা উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে অযোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া বন্ধ করা হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।
কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের সকল প্রকার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে। যাতে ঘুষ গ্রহণ, অর্থের সম্পদ অর্জন, কর্মে অবহেলা ও ফাঁকিবাজী থেকে বিরত থাকে।
নিয়োগ দানের সময় তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। যাতে চাকুরীকালীন সময়ে অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করে আঢেল সম্পত্তির মালিক না হয়।
সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে মধ্যে নৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে তুলতে হবে। কর্মে অবহেলা, ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে হবে।
চাকুরীতে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে যে, আমাদের দেশের নিয়োগ প্রক্রিয়া ইসলাম সমর্থন করে। এক্ষেত্রে বিধিমালা অনুসরণ করে চাকুরীর ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা বা উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে অযোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া বন্ধ করা হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।
কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের সকল প্রকার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে। যাতে ঘুষ গ্রহণ, অর্থের সম্পদ অর্জন, কর্মে অবহেলা ও ফাঁকিবাজী থেকে বিরত থাকে।
নিয়োগ দানের সময় তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। যাতে চাকুরীকালীন সময়ে অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করে আঢেল সম্পত্তির মালিক না হয়।
সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে মধ্যে নৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে তুলতে হবে। কর্মে অবহেলা, ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে হবে।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন