HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মানব সম্পদ উন্নয়নে ইসলাম

লেখকঃ ড. হুসাইন আহমাদ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
মানব সম্পদ উন্নয়নে ইসলাম

ড. হুসাইন আহমাদ

সম্পাদনা : ড. মোঃ আবদুল কাদের

মানব সম্পদ উন্নয়নে ইসলাম
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এবং নবী ও রাসূল পাঠিয়ে কোরআন শিক্ষা দিয়ে আল্লাহর জমিনে তাঁর প্রতিনীতিত্বের দায়িত্ব অর্পন করেছেন। তাই সংগত কারণেই মানুষ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হওয়া বাঞ্চনীয়। যাঁরা তাঁদের বিবেক বুদ্ধি ও আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেকে ও এ পৃথিবীকে সুন্দর ও কল্যানে পরিপূর্ণ করবে। কিন্তু এ মানবগোষ্ঠী নিজেদের কর্মদোষে এ পৃথিবীকে কুলষিত করেছে ও নিজেই পৃথিবীর সমস্যা ও বোঝা হয়ে গিয়েছে। পাশবিক স্বভাবে অভ্যস্থ হীনতাগ্রস্থদের হীনতমে নেমে গিয়েছে। আল্লাহ বলেন: ﴿ثُمَّ رَدَدۡنَٰهُ أَسۡفَلَ سَٰفِلِينَ ٥﴾ ‘‘অতপর আমি তাদেরকে হীনতাগ্রস্থদের হীনতমে পরিণত করি’’।

এটা বললে অতোক্তি হবে না যে, বর্তমানে মানুষ হিংস্র প্রাণী অপেক্ষা একশ্রেণীর মানুষকে অধিক ভয় পায়। এরা সম্পদ‘ত নয়ই; বরং সমাজের সমস্যার মুল কারণ। আর এক শ্রেণীর অধিকার বঞ্চিত মানুষ তাদের ভুল সীদ্ধান্তের কারনে অজ্ঞ বেকার পুঙ্গ হয়ে সমাজে সমস্যা বনে গিয়েছে। অধিকার বঞ্চিতদের অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠা করে, বেকারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সম্পদে পরিণত করা যায়। তাছাড়া নৈতিকতা বর্জিত পাশবিক স্বভাবের মানুষকে নৈতিক আদর্শিক শিক্ষা প্রদান, শাসন ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্থ করে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। আর তখনই মানব সম্পদ উন্নয়ন হয়েছে বলা যাবে। এ প্রবন্ধে মানব সম্পদ উন্নয়নের এ প্রক্রিয়াই পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর দ্বারা মানুষের আর্থ সামাজিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে সামান্যতম উন্নয়ন সাধন হলে আমার শ্রম স্বার্থক হবে।]

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿لَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ فِيٓ أَحۡسَنِ تَقۡوِيمٖ ٤﴾ [ التين :4]

‘‘আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে’’। [আল্ কুরআনঃ সুরা তীন ৯৫: ৪] অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে সৌন্দর্যতা দান করেছেন। আর এ মানব জাতিকে অন্ধকার হতে আলোর পথে দিক নির্দেশনা দিয়ে সম্পদে পরিণত করার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসুল প্রেরিত হয়েছে। এরশাদ হয়েছে

﴿ وَلِكُلِّ قَوۡمٍ هَادٍ﴾ [ الرعد : 7 ]

‘‘এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আছে পথ প্রদর্শক’’। [আল্ কুরআনঃ রাদ ১৩: ৭] যারা মানবতার মুক্তি ও উন্নয়নের জন্য আমৃত্যু চেষ্টা ও সাধনা অব্যাহত রেখেছিলেন।

মানব সম্পদ এ দুটি শব্দের মধ্যে মানব বলতে মানুষ জাতি তথা আদম ও মাতা হাওয়া (আঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা যে জাতি সৃষ্টি করেছেন তাকে বুঝানো হয়েছে। আর সম্পদ বলতে যে সব দ্রব্য সামগ্রীর উপযোগ আছে যোগান সীমাবদ্ধ এবং বিক্রয় যোগ্য সে সব দ্রব্য সামগ্রীকে অর্থনীতিতে সম্পদ বলে। [মোঃ মাসুম আলী ও মোঃ নূরুল আলমঃ মাধ্যমিক অর্থনীতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্ত্তক বোর্ড ঢাকা, খৃ. ২০০১ পৃ. ২৮।]

যে সমস্ত দ্রব্যের আর্থিক মূল্য আছে অর্থশাস্ত্রে উহা তাকে সম্পদ বলে। এ সম্পদের চারটি বৈশিষ্ঠ রয়েছে। ১. উপযোগ ২. অপ্রাচুর্যতা ৩. হস্তান্তর যোগ্যতা ৪. বাহ্যিকতা। [আনিসুর রহমানঃ আধুনিক অর্থশাস্ত্র, পুথিঘর লিঃ ফরাশগঞ্জ ঢাকা একাদশ সংস্করণ, খৃ. ১৯৯৮ পৃ. ৩৪।]

অর্থনীতিতে দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনে ব্যবহার ও প্রাপ্তি যোগ্য উৎপাদনকে সম্পদ বলে। অন্যভাবে বলা চলে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার যোগ্য সেবার পরিমানই সম্পদ। বৈশিষ্ঠের প্রেক্ষিতে সম্পদের সংজ্ঞা বিবেচনা করা যায়, যে সব বস্ত্ত ও অবস্ত্তগত দ্রব্যের উপযোগ আছে কিন্তু যোগান সীমাবদ্ধ এবং হস্তান্তর যোগ্যতা আছে তাকে সম্পদ বলা যায়। [মনতোষ চক্রবর্ত্তীঃ ব্যষ্টিক অর্থনীতি ৪র্থ সংস্করণ খৃ. ২০০০ পৃ. ২৫।]

উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক ও আর্দশিক উন্নয়ন বুঝানো হয়েছে।

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। যেমন এরশাদ হচ্ছে-

﴿وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ وَحَمَلۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنَٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّب وَفَضَّلۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِيلٗا ٧٠﴾ [ الإسراء : 70 ]

আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি তাদেরকে উত্তম রিয্‌ক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাঁদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। [আল্ কুরআনঃ সুরা বনী ইসরাঈল ১৭:৭০]

কিন্তু এ মানব জাতি নিজেদের কর্মদোষে সৃষ্টির নিন্মতম স্তরে পৌছে গিয়েছে যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “অতঃপর আমি তাদেরকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিনত করি” [আল্ কুরআনঃ সুরা তীন ৯৫: ৫।] আর মানুষ যখন নিম্ল স্তরে নেমে যায়। সমাজে তাদের উপযোগিতাও থাকে না বরং সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ তখন অনাকাংখিত ও বোঝা হয়ে দাড়ায় এ শ্রেনীর মানুষকে সম্পদে পরিনত করণার্থে নিম্নরুপ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

মানুষ যাতে সম্পদে পরিনত হতে পারে তার জন্য প্রথমত তার মৌলিক প্রয়োজন পুরনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। মানুষের মৌলিক পাঁচটি প্রয়োজন হচেছ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। [আব্দুল খালেকঃ ইসলামী অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য দ্বিতীয় সংস্করণ খৃ. ১৯৭৭ পৃ. ৩।] এ ক্ষেত্রে সম্পদের সুষম বন্টন, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা পরিবর্তন করে যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা বাঞ্চনীয়। কেননা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ধনী আরো সম্পদশালী আর গরীব ক্রমাম্বয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পক্ষান্তরে যাকাত তথা ইসলামী অর্থব্যবস্থা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জনগনের জীবন যাত্রার মানউন্নয়নের সুচক নয়, বা তার পর্যাপ্ত প্রতি ফলনও নয়। দেশের জনসংখ্যার বৃহত অংশকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার থেকে দুরে, দরিদ্র, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যহীন পরিবেশে জীবন যাপন করে, দেশের নারী সমাজ বেকার ও শিক্ষিত যুবকেরা অর্থনৈতিক অনগ্রসর। এ অবস্থায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ব্যাতীত টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। অপর পক্ষে অদক্ষ পুষ্টিহীন জনশক্তি উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যহত করে। [মোঃ শামসুল কবীর খানঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি, প্রকাশনা শাখা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জুরী কমিশন, আগাঁরগাও, ঢাকা, ১২০৭ ২য় সংস্করণ খৃ. ২০০০ পৃ. ৭৫।] সুতারং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি তথা মানব সম্পদে পরিনত করার লক্ষে নিম্নোক্ত খাতসমূহের দুর্বলতা দ্রুততার সাথে কেটে উঠা আবশ্যক। এখাতগুলো হচেছ শিক্ষা ব্যবস্থা, পরিবার কল্যাণ, নারী ও শিশু, যুব উন্নয়ন, সমাজ কল্যাণ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কল্যান।

এ দুর্বলতা থেকে নিস্কৃতির জন্য সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে যেমন প্রাথমিক শিক্ষা সার্বজনীন, বাধ্যতামুলক ও অবৈতনিক করা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার বিনিময় খাদ্য কর্মসুচীর আওতায় চাল ও গম প্রদান, এইচ, এস, সি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ও উপবৃত্তি প্রদান করছে, এবং ২০১০ সালের মধ্যে নিরক্ষর মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানের জন্য স্বাস্থসেবা বৃদ্ধি করেছে।

মানব সম্পদ উন্নয়নে নারীর অধিকার বাস্তবায়ন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন-

﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [ البقرة : 28 ]

নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমনি আছে তাদের উপর পুরুষদের। [আল্ কুরআনঃ সুরা বাকারা ২: ২২৮।]

নারী মাতৃজাতি বলেই সন্তানদের সকল দুঃখ সমস্যা সম্পর্কে নারীগণ বেশী সচেতন। [মোঃ শামছুল কবীর খানঃ বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য, প্রকাশনা শাখা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জুরী কমিশন আগাঁরগাও, ঢাকা ১২০৭ খৃ. ২০০০ পৃ. ৭৫।] সন্তান প্রতিপালনে নারীর ভূমিকাই মুখ্য বিধায় নারী অধিকার অন্যসব থেকে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত। কিন্তু সমাজের প্রাচীন ধ্যান ধারনার কারণে এবং পুরুষ শাসিত সমাজে অনেক ক্ষেত্রে নারী অধিকার উপেক্ষিত হয়। নিম্লে মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

সম্পদে মালিকানা লাভের অধিকার নারীর চিরন্তণ অধিকার। সে চাইলে বৈধ যে কোন মালের মালিক হতে পারে। যেমন এরশাদ হচ্ছে:

﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبُواْۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبۡنَۚ ٣٢﴾ [ النساء : 32 ]

”পুরুষ যা অর্জন করবে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। [আল্ কুরআনঃ সুরা নেসা ৪: ৩২]

শিক্ষার অধিকার এ ক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়েরই সমান অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমত ইসলামী আকীদা, আবশ্যিক ইবাদত সংক্রান্ত জ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন। রাসুল (সাঃ) বলেন [সহীহ ইবনে মাজাহ পৃ. ২০।]

» طلب العلم فريضة على كل مسلم «

ইলেম শিক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরয।

সম্পদ ব্যয় করার অধিকার : বৈধ সকল ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যায় তার সম্পদ ব্যয় করার অধিকার চিরন্তন।

পাত্র নির্বাচনের অধিকার: ইসলাম নারীকে তার জীবনসঙ্গী নির্বাচনের অধিকার দিয়েছে রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছে:

« لا تنكح الأيم حتى تستامر ولا تنكح البكر حتى تستأذن- قالوا يارسول الله وكيف إذنها- قال أن تسكت»

বিধবা বিবাহ করবে না যতক্ষন তার অভিমত না নেওয়া হয়, কুমারী বিবাহ করবে না যতক্ষন তার থেকে অনুমতি না নেওয়া হয়। তারা বললেন হে রাসুল (সাঃ) তার অনুমতি কিভাবে বুঝা যাবে? রাসুল বললেন যে তার চুপ থাকা। [সহীহ বুখারীঃ পৃ.১৭৭]

ধর্মীয় বিধান পালনের অধিকারঃ ধর্মীয় দিগন্তে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। ইবাদতের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। আল্লাহর ইবাদত করে তারা যে কোন স্তরে উন্নীত হতে পারে। দ্বীনের দাওয়াত ও ধর্মীয় অন্যান্য ক্রিয়াকর্মে তাদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তবে শারীরিক অসুবিধার ক্ষেত্রে অব্যবহৃত দেয়া হয়েছে। নফলের ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতির কথা বলা হয়েছে। আল-কোরআনে বলা হয়েছেঃ

﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗٞ ٧١﴾ [ التوبة : 71]

”মুমিন নর নারী একে অপরের বন্ধু। তারা সৎকাজে নির্দেশ দেয়, অসৎকার্য নিষেধ করে। সালাত কয়েম করে, যাকাত দেয়, আল্লাহ্ এবং রাসুলের আনুগত্য করে তাদের প্রতি আল্লাহ্ দয়া পরবশ হবেন। [আল্ কুরআনঃ সুরা তওবা ৯: ৭১] হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।”

«لا تصوم المرأة وزوجها شاهد يوم من غيررمضان إلا باذنه»

কোন মহিলা যদি তার স্বামীর নিকট থাকে তবে তার অনুমতি ছাড়া সে রোজা রাখতে পারবেনা। (রমজানের রোজা ব্যতীত) [সহীহ ইবনে মাযাহঃ পৃ.১২৭]

পছন্দের অধিকারঃ সে যদি ভাল মেয়েদের ভালবাসে বা পছন্দ করে তবে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে যেতে ও হাদীয়া দিতে পারবে। তাদের সাথে চিঠি পত্র আদান প্রদান ও খোজ খবর নিতে পারবে। তেমনি তারা অপছন্দ করবে খারাপ মেয়েদের তাদের সাথে রাগ করবে আল্লাহ্ উদ্দেশ্যে সম্পর্কচেছদ করবে। [মুহাম্মদ মুজীবুর রহমানঃ মুসলিম রমনী, আল্ আরামাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, বাংলাদেশ, খৃ. ১৯৯৮ পৃ. ৯৪]

ওসিয়ত করবার অধিকারঃ যা তার মৃত্যুর পূর্বে অথবা পরে কার্যকর হবে, এতে বাধাদানের অধিকার কারো নেই। কারন আখেরাতের ছওয়াব সকলেই প্রয়োজন। এজন্য আল্লাহক পাক বলেন

﴿ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗاۚ﴾ [ المزمل : 20 ]

এবং তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য যে সমস্ত নেক কার্য করবে তাকে উপস্থিত পাবে আল্লাহ পাকের সকাশে আরও উত্তম ও মহান হিসেবে। [আল্ কুরআনঃ সুরা মুযযাম্মিল ৭৩: ২০।]

সাজগোজ করার অধিকারঃ নারী চাইলে তার স্বামীর জন্য সাজগোজ করবে এক্ষেত্রে গহনা, সুন্দর জামা, লিপিষ্টিক পাউডার ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে তবে এমন পোষাক পরবে না যা উলঙ্গের মত দেখা যায় ও কাফেরদের মত পোষাক পরবে না। এ ব্যপারে কোরআনের নির্দেশ হলো [আল্ কুরআনঃ সুরা আহযাব ৩৩: ৩৩।]

﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [ الأحزاب : 33]

আর তেমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না

পানাহারের অধিকারঃ নারীগণ হালাল সর্বপ্রকার খাবার পুরুষের মতই গ্রহন করার অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্র কোন প্রকার পার্থক্য নেই আল্লাহ্ বলেন

﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١﴾ [ الأعراف : 31 ]

আহার করিবে ও পান করিবে। কিন্তু অপচয় করিবেনা। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। [আল্ কুরআনঃ সুরা আরাফ ৭:৩১]

জিহাদে অংশগ্রহনের অধিকারঃ দেশ ও ধর্ম রক্ষায় ইসলাম নারী পুরুষকে সমভাবে দায়িত্ব দিয়েছে। জেহাদে অংশ গ্রহন শুধু পুরষ বা শুধু নারীর উপর ফরজ নয়। আল্লাহর বানী:

﴿ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ٤١﴾ [ التوبة : 41]

অভিযানে বের হয়ে পড়, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় হোক (রণসম্ভরে বেশী হোক কম হোক) সংগ্রাম কর আল্লাহ্র পথে তোমাদের সম্পদও জীবন দিয়ে। [আল্ কুরআনঃ সুরা তাওবা ৯: ৪১]

সামাজিক ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহনের অধিকারঃ ইসলাম নারীকে ধর্মীয় ও সামাজিক ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহনের পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। ঐতিহাসিক তথ্যাবলীতে দেখা যায় যে, ইসলামের স্বর্ণযুগে যখন সমাজ জীবনে ইসলামের সত্যিকার শিক্ষা বাস্তবাযিত হয়েছিল সে সময় মহিলারা বহিরাংগনে শিক্ষা গ্রহন, শিক্ষা দান, ব্যবসা বানিজ্য, পুরুষের সাথে পরামর্শ ও যুদ্ধে অংশ্রগ্রহনেও তাঁদের জন্য কোন সীমাবদ্ধতা ছিল না। এছাড়া মা হিসেবে পিতা অপেক্ষা সন্তানের অধিকতর ভালবাসা পাবার চিরন্তন অধিকার নারীর রয়েছে। [শামছুল আলম ও আনিসুর রহমানঃ ইসলামী ঐতিহ্য পরিবার পরিকল্পনা, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, আই, ই, এম ইউনিট ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর যৌথ প্রকাশনা, খৃ. ১৯৯৫ পৃ. ৭৫।]

বিশেষ করে একজন মহিলা যখন গর্ভবতী হন তখন প্রথমতঃ তার নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের দরকার হয়। দ্বিতীয়ত তার গর্ভাস্থিত ভ্রুনের ঠিকমত গঠন ও বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত খাদ্যের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ দুজনের খাবার একত্রে খেতে হয়।

অন্যদিকে একথা খুবই স্বাভাবিক একজন পুষ্টিহীন মা অপুষ্ঠ শিশুরই জন্ম দেবেন। এজন্য মায়ের পুষ্টির ব্যাপারে অতিরিক্ত যত্ন নেয়া প্রয়োজন। গর্ভের শিশু সঠিক গঠন ও বৃদ্ধির জন্য সুষম বাড়তি খাবার দিতে হবে। এ বাড়তি খাবার মায়ের স্বাভাবিক খাদ্য হতে ২০০-৩০০ ক্যালোরী বেশী শক্তি যোগাবার উপযোগী হবে। নীচে একজন সাধারন কর্মক্ষম স্বাভাবিক মহিলা ও গর্ভবতী মহিলা কতখানি খাদ্য গ্রহন করা উচিত তার একটা তালিকা দেয়া হল।

খাদ্য দ্রব্যের নাম

স্বাভাবিক মহিলা

গর্ভবতী মহিলা

চাল/ডাল

৩৫০ গ্রাম

৩৭৫ গ্রাম

ডাল

৪০ ’’

৬০’’

মাছ/গোশত/ডিম

৬০ ’’

৬০’’

আলু/মিষ্টিআলু

৬০ ’’

৬২’’

যেকোন শাক

১৫০ ’’

১৮০’’

যে কোন সব্জী

৯০ ’’

৯০’’

চিনি/গুড়

---------

৩০’’

ফল

১টা ৫৫ ’’

১টা/ ৫৫’’

তৈল/ঘি

৪০ ’’

৫০’’

খাদ্য শক্তি

২১০০ কিঃ ক্যাঃ

২৩৬০ কিঃ ক্যাঃ প্রায় [অধ্যাপক মাওলানা মোঃ তমিজ উদ্দিন, আবু উবাইদ মোঃ মহসিন মাওলানা কাজী আবু হুরায়রাঃ পরিবার কল্যাণ, ইমাম প্রশিক্ষন একাডেমী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ খৃ. ১৯৯৪ পৃ. ৮৭।]

সুতরাং এ কথা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায় একটি কর্মক্ষম, দক্ষ ও সুস্থ মানব সম্পদ হিসেবে নারীকে গড়ে তুলতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গর্ভবতী মহিলার পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।

মানব সম্পদ উন্নয়নে শিশু অধিকার ও শিশু পরিচর্যাও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বস্ত্তত ইসলাম চৌদ্দশ বছরের অধিককাল যাবত শিশুদের বিষয় গুরত্বারোপ করে অসছে এবং শিশুদের পরিচর্যার বিষয়টিকে ইসলামের মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভূক্ত করত তাকে একটি সার্বক্ষনিক পালনীয় বিধানে পরিণত করেছে। [মাওলানা এ, বি রফিক আহমাদ ও মাওলানা মুহাম্মদ মুসাঃ ইসলামে শিশু পরিচর্যা ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত খৃ. ১৯৮৭ পৃ.] ইসলাম যে শিশুর জন্ম মুহুর্ত থেকেই তার অধিকারসমূহ চিহ্নিত করে ক্ষান্ত হয়েছে তা নয়, ববং তার জন্মের পূর্ব থেকেই ইসলাম তার অধিকার সমূহ নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে শৈশব হচেছ সৌন্দর্য, আনন্দ, স্বপন, সৌভাগ্য ও ভালবাসায় পরিপূর্ণ এক চমৎকার জগত।

কোরআনে বিধৃত শৈশব সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনাই ভালবাসা ও মহত্বে পরিপূর্ণ। আল্লাহ নিজেই শৈশব নামে শপথ করেছেন এভাবে-

﴿ لَآ أُقۡسِمُ بِهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ١ وَأَنتَ حِلُّۢ بِهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ﴾ [ البلد : 1-3 ]

না আমি এ নগরীর নামে শপথ করে বলছি যখন তুমি এ নগরীতে অবস্থান করছো। আরো শপথ করছি জন্মদাতার নামে ও যা সে (তার ঔরসে) জন্ম দিয়েছো [আল্ কুরআনঃ সুরা বালাদ ৯০ ১-৩।] (সন্তানের নামে) শিশু জীবনের সৌন্দর্য আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন

﴿ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا﴾ [ الكهف : 46 ]

সম্পদ ও পুত্র সন্তান হচেছ পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য বিশেষ। [আল্ কুরআনঃ সুরা কাহাফ ১৮: ৪৬।]

সুতরাং পার্থিব জীবনের সুখ শান্তি ও সৌন্দর্য এ শিশুদের ভবিষতে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। পিতা মাতার উপর সন্তানের দশটি অধিকার রয়েছে। [শামসুল আলম ও আনিসুর রহমানঃ ইসলামী ঐতিহ্য পরিবার পরিকল্পনা, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের, আই, ই, এম ইউনিট ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর যৌথ প্রকাশনা খৃ. ১৯৯৫ পৃ. ৫০।]

পিতা মাতার উপর সন্তানের দশটি অধিকার রয়েছে।
যা নিম্নরূপঃ

১. বংশগত ও জন্মগত পবিত্রতা ও সুস্থতার অধিকার : প্রত্যেক মানব শিশু বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে জন্মগত পবিত্রতা ও সুস্থ শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণের অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ অথবা মাত্রাতিরিক্ত যৌন মিলনের অসুস্থতার সময়ে ও যৌন মিলনের ফলে শিশু অধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

» تخيروا لنطفكم فإن العرق دساس أو نزاع «

কোথায় তোমার বীর্য স্থাপন করবে তা চিন্তা ভাবনা করে স্থির করে নাও। বংশধারা যেন সঠিক হয়। [আবু আব্দুল্লাহ ইবনে ঈসমাইনঃ ইবন ঈসমাইল আল-বাখারীঃ সহীহুল বোখারী, দিল্লি, কুতুবখানা রশীদিয়া হিঃ ১৪০৯, পৃ. ৭৬০।]

২. বেঁচে থাকার অধিকার: দারিদ্রতার ভয়, পরিাবারিক সুনাম রক্ষার্থে অথবা অন্য যে কোন কারণে শিশু হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিন্দা করেছে।

﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ﴾ [ الأنعام : 151 ]

দরিদ্রতার কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না আমি তোমাদের এবং তাদের রিযিক দিয়ে থাকি। [আল্ কুরআনঃ সুরা আনআম ৬: ১৫১।]

৩. মাতৃদুগ্ধ পান আশ্রয়, প্রতিপালন ও স্বাস্থসেবার অধিকার : আল কোরআনে বলা হয়েছে।

﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ لِمَنۡ أَرَادَ أَن يُتِمَّ ٱلرَّضَاعَةَۚ﴾ [ البقرة : 233 ]

যে স্তন্য পানকাল পূর্ণ করতে চান, তাদের জন্য জননীগণ সন্তানগণকে পূর্ণ দু বছরের স্তন্যপান করাবেন। [আল্ কুরআনঃ সুরা বাকারা ২: ২৩৩।]

৪. জন্মগত বৈধতা এবং ভাল নামের অধিকার: বৈধ পন্থায় পৃথিবীতে আসবারও সন্দেহ মুক্ত পিতৃত্বের পরিচয় প্রদানের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে এবং শিশুর সুন্দর নাম রাখতে হবে। আল্লাহর নবী বলেছেন - الولد للفراش যে (পিতার) শয্যায় সন্তান জন্মগ্রহণ করে শিশু সেই শয্যারই [আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু ইসমাইল আল-বোখারীঃ সহীহুল বোখারী, দিল্লি কুতুবখানা রশীদিয়াহ হি. ১৪০৯, পৃ. ৭৬৭।] তোমরা সুন্দর নাম রাখ। [আবু দাউদ সুলাইমান ইবনু আশআছ আস-সিজিস্তানী, সুনানে আবী দাউদ, দিল্লী, কুতুবখানা রশীদিয়া, তা, বি, ৬৭৬।]

৫. পৃথক শয্যায় নিদ্রা যাবার অধিকার: প্রত্যেক শিশুকেই পৃথক একক শয্যায় নিদ্রা যাবার অধিকার রয়েছে। রাসূল(স:) এরশাদ করেন-

«مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع واضربوهم عليها وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع «

৭ বছর বয়সে শিশুকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও, ১০ বছর হয়ে গেলে তাদেরকে নামাজ না পড়লে শাস্তি দাও এবং তাদের জন্য পৃথক পৃথক শয্যার ব্যবস্থা কর। [প্রাগুক্ত পৃ. ৭১]

৬. ধর্মীয় শিক্ষা ও আখলাক উন্নয়নের অধিকার : শিশুদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করা পিতা মাতার নৈতিক দায়িত্ব। হযরত লোকমান (আঃ) যে ভাষায় স্বীয় পুত্রকে নির্দেশ দিয়েছেন তার উল্লেখ কোরানুল কারীমে রয়েছে।

﴿يَٰبُنَيَّ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱنۡهَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَآ أَصَابَكَۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ١٧﴾ [ لقمان : 17 ]

হে আমার পুত্র সালাত কায়েম কর, সৎ কর্মের নির্দেশ দাও, অসৎ কর্মে নিষেধ কর এবং বিপদে আপদে ধৈর্য্য ধারন কর। ইহাই দৃঢ় সংকল্প পূর্ণ হৃদয়ের কাজ। [আল্ কুরআনঃ সুরা লুকমান ৩১: ১৭]

৭. ভবিষৎ আর্থিক নিরাপত্তা: আল্লাহর নবী বলেছেন

«لأن تذر ورثتك أغنياء خير من أن تذرهم عالة يتكففون الناس»

নিজের সন্তানকে অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর ফেলে যাবার চেয়ে অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া ভাল [শামছুল আলম আনিসুর রহমানঃ ইসলামী ঐতিহ্য পরিবার পরিকল্পনা, পরিবার পরিবল্পনা অধিদপ্তর, আই, ই, এম ইউনিট ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর যৌথ প্রকাশনা খৃ. ১৯৯৫ পৃ. ৫৪]

৮. শিক্ষা প্রশিক্ষন, খেলাধুলা ও আত্মরক্ষার অধিকার: সন্তানকে লেখাপড়া, পারিবারিক, বৈষয়িক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে-

«عن أبى سلمان مؤ لى أبى رافع قال : قلت يا رسول لله : للولد علينا حق كحقنا عليهم ؟ قال نعم حق الولد على الوالد أن يعلمه الكتابة والسباحة وللرماية، لايرزقه إلا طيبا»

পিতামাতা নিকট সন্তানের অধিকার হলো তাঁর সন্তানকে লিখতে শিক্ষা দেবে, সাতাঁর শিক্ষা দেবে এবং তীরন্দাজ হতে শিক্ষা দেবে। তারা এমন কিছু শিক্ষা দেবেন না যা সন্তানকে ন্যায়নিষ্ঠ করে না। [প্রাগুক্ত পৃ. ৫৪]

৯. লিংগভেদে সমব্যবহারের অধিকার: আল্লাহর নবী বলেছেন

» اعدلوا بين أولادكم «

তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে ইনসাফ কায়েম করো [প্রাগুক্ত পৃ.৫৬],

যেমন তোমরা তোমাদের সংগে আচরণেও ইনসাফ কামনা করে থাকো।

১০. বৈধ আয় থেকে প্রতিপালিত হবার অধিকার : সুতরাং পিতা-মাতাকে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বৈধ আয় খরচ করতে হবে।

উপরে বর্ণিত অধিকার গুলো সন্তান যদি সুষ্ঠ ভাবে পায় তাহলে প্রতিটি মানুষ সম্পদে পরিণত হবে এবং তাঁর জীবন, দেশও জাতীর কল্যাণে আসবে। আল্লাহ্ রাববুল আলামীন এ বিশ্ব জগত এক সুন্দর পরিকল্পনা অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। তাই ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রত্যেক বিষয়েই পরিকল্পিত উপায়ে কাজ করা বাঞ্চনীয়। পরিকল্পনা বিহীন কাজ উত্তম ফলায়ক হতে পারে না। এমনকি পরিকল্পনা ব্যতীত কোন গঠন মুলক কাজ সম্ভবই নয়। [মাওলানা মুহাম্মদ শফিকুর রহমানঃ ইসলাম ও পারিবারিক জীবন, আই, ই, এম, ইউনিট পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, আজিমপুর ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত খৃ. ১৯৯৩ পৃ. ৫।] আল্লাহ্র কর্মে পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়।

﴿َمَا خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا لَٰعِبِينَ ٣٨ مَا خَلَقۡنَٰهُمَآ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٩﴾ . [ الدخان : 38-39 ]

আমি আকাশ মন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যকার কোন কিছুই খেলাচছলে সৃষ্টি করনি। আমি তো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। [আল্ কুরআনঃ সুরা দুখান ৪৪-৩৮।]

﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : 49 ]

আমি সব কিছু এক সুনিদিষ্ট পরিমাপে সৃষ্টি করেছি। [আল্ কুরআনঃ সুরা কামার ৫৪: ৪৯।]

সুতারং মানব সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবারের প্রয়োজনীয়তা অনীস্বীকার্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত একটি জন বহুল দেশে। এ দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বৃদ্ধির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী। এশিয়া ইউকের ২০০০ সালের মে মাসের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ কোটি লোক এবং বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.২ শতাংশ। ১৯৯৯ সনে প্রতি হাজারে স্থুল জন্মহার প্রায় ২৩.৬ এবং স্থুল মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে ১৪৮.৩৯৩ ব;কি; আয়তন বিশিষ্ট এ দেশের জনসংখ্যা চলতি শতাব্দীর প্রথম ৫বছরে অনুমানিক ১৪ কোটি হতে পারে বলে বিশেষদের ধারনা। [মোঃ শামছুল করীম খানঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, আগাঁরগাও, ঢাকা ১২০৭ খৃ. ২০০ পৃ. ৪৪] তবে এদেশের বৃহত জনগোষ্ঠীকে যদি সুস্থ, শিক্ষিত, দক্ষ, অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা যায় তাহলে এ জনসংখ্যা বিশাল মানব সম্পদে পরিনত হতে পারে।

অন্যথা এদের দ্বারা অশান্তি বিশৃংখলা হত্যা সন্ত্রাস, ধর্ষণের, মত প্রভৃতি অপর্কম সংগঠিত হওয়াই স্বাভাবিক। আল্লাহ্ তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরুপ [আল্ কুরআনঃ সুরা আনফাল ৮: ২৮।] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন

﴿وَلۡيَخۡشَ ٱلَّذِينَ لَوۡ تَرَكُواْ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ ذُرِّيَّةٗ ضِعَٰفًا خَافُواْ عَلَيۡهِمۡ فَلۡيَتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡيَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدًا٩ ﴾ [ النساء : 9 ]

তাদের ভয় করা উচিত তারা যদি অসহায় সন্তান রেখে দুনিয়া থেকে সচলে যায় তবে মৃত্যুর সময় সন্তানদের সম্পর্কে তাকে আশংকা ও উদ্বিগ্ন করবে। [আল্ কুরআনঃ সুরা নিসা ৪: ৯] অতএব পরিবার পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তুলতে হবে। কেননা পরিকল্পনা ও পরিণাম চিন্তা না করে বিবাহ, বাল্যবিবাহ ও বাহুবিবাহের কারনে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় মহিলার সংখ্যা বাড়ছে তেমনি ঘন ঘন সন্তান জন্ম দেবার কারনে সদ্য ভুমিষ্ট শিশু অপুষ্টি, রাতকানা, লেংড়া ও দুর্বল হিসেবে দুনিয়াতে আগমন করছে। যারা পরবর্তীতে সমাজে বেকারত্বের কষাঘাতে ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারনে সমাজে সংঘটিত নানাবিধি অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যা ইসলাম,মেডিকেল সাইনন্স ও সুস্থ বিবেক কোন ভাবে সমর্থন করে না। সুতরাং বলা যায় মানুষ সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের প্রয়োজনীয় অনস্বীকার্য। অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপটা যখন সহ্যের বাইরে চলে যায় তখনই দেখা যায় ক্ষুধার জ্বালায় একজন স্নেহময়ী মাকে তার সন্তানকে গলা টিপে মারতে উদ্যত হতে। দেখা যায় কোলের সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে নিজেকে ভারমুক্ত করে একজন গর্ভধারিনী মাকে পালিয়ে যেতে। [মাওলানা এ কে, এম সিরাজুল ইসলাম পরিবার পরিকল্পনা ও ইসলাম, বাংলাদেশ ফামিলী প্লানিং এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত খৃ. ১৯৮৩ পৃ. ১০।] এ নিমর্ম বাস্তবতা অতীত ও বর্তমান সব সময় পরিলক্ষিত হচেছ। অথচ পবিত্র কোরআন শরীফে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের ব্যাপারে অনেক উদাহরন বিদ্যামান। যারা পরিকল্পনাহীন ভাবে ঘন ঘন সন্তান জন্ম দিচেছন তারা কি ভাবছেন না আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি শিশুকে দুই থেকে আড়াই বছর মাতৃদুগ্ধপানের অধিকার দিয়েছেন

﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ ﴾ [ البقرة : 233 ]

মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ পান করাবে। [আল্ কুরআনঃ সুরা বাকারা ২: ২৩৩।]

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র এরশাদ করেছেন

﴿ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ﴾ [ الأحقاف : 15 ]

তার দুধপান করানোর সময়কাল ত্রিশ মাস। [আল্ কুরআনঃ সুরা আহকাফ ৪৬ : ১৫।] আল্লাহর এ বানী দ্বারা শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের অধিকার ও দুধ পানের সময়সীমা বর্ননা করা হয়েছে। পরোক্ষভাবে এটাও বুঝানো উদ্দেশ্য যে মাতৃদুগ্ধ পানকালীন সময়ে সন্তান ধারণকারা উচিত হবে না। কারণ মাতৃগর্ভে সন্তান আসলে স্বাভাবিক নিয়মেই মায়ের দুধ বন্দ হয়ে যায়। ফলে শিশু দুধ পানের অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ্র এ নিদের্শনার দ্বারা আমরা পরিকল্পনার আভাস পাই। তাছাড়া ইসলামী শরীয়ত মা ও শিশু স্বাস্থ রক্ষার্থে সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্র বৈধ বলেছে। মহান আল্লাহ্ বলেন

﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٖ مِّن طِينٖ ١٢ ثُمَّ جَعَلۡنَٰهُ نُطۡفَةٗ فِي قَرَارٖ مَّكِينٖ ١٣ ثُمَّ خَلَقۡنَا ٱلنُّطۡفَةَ عَلَقَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡعَلَقَةَ مُضۡغَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡمُضۡغَةَ عِظَٰمٗا فَكَسَوۡنَا ٱلۡعِظَٰمَ لَحۡمٗا ثُمَّ أَنشَأۡنَٰهُ خَلۡقًا ءَاخَرَۚ فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ ١٤﴾ [ المؤمنون : 12-14 ]

আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে অতঃপর আমি উহাকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে, পরে শুক্র বিন্দুকে পরিনত করি আলাক এ অতঃপর আলাককে পরিনত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি পঞ্জরে অতঃপর অস্থি পঞ্জরকে ঢেকে দেয় গোসত দ্বারা অবশেষ উহাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে অতঃপর সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান [আল্ কুরআনঃ সুরা মুমিনুন ২৩: ১২-১৪।]। এখানে আমরা মানুষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আল্লাহর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে পাই। এছাড়া পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এর অসংখ্য প্রমান রয়েছে। তাই একথা দ্বীধাহীন চিত্তে বলা যায় পরিকল্পনা বৈধই নয় বরং প্রতিটি ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। তবে এর দ্বারা শুধুমাত্র জন্ম নিয়ন্ত্রন বুঝলে ভুল হবে। এর সাথে এটাও প্রমানিত হলো যে মানব সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবার গঠণের ভূমিকা অত্যাধিক।

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী প্রতিটি মানব সন্তান যদিও শিশুদের জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় আরো কম বয়সে সাবালকত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে। [জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এ্যাকশন রিসার্চ স্টাডি অনদি ইন্সটিটিউশন ডিভেলপমন্ট হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত, খৃ. ২০০২ পৃ. ৮]

ইসলামী শরীয়াতে ছেলেদের স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের হায়েজ বা ঋতুস্রাব হলে বালেগ হয়। তবে ১৫ বছর বয়স হলে স্বপ্নদোষ ও হায়েজ না হলেও বালেগ বলে গন্য করা হবে। তবে এ হিসেব চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী হবে। [মাওলান আশরাফ আলী থানভী (রাঃ), বেহেশতী জেওর, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, চকবাজার, ঢাকা, অষ্টম মুন্দ্রন খৃ. ১৯৮৫ পৃ. ১৯২।]

বর্তমান অন্যায় অত্যাচার চুরি ডাকাতি, সন্ত্রাস হত্যা ধর্ষন সহ নানা ধরনের অপরাধের সয়লাব চলছে। এ অবস্থা হতে মুক্তি পেতে হলে মানুষকে ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্থ, নৈতিক শিক্ষার প্রসার ও নীতিবান করে গড়ে তুলতে হবে। আইন বা শাসনের দ্বারা পুরাপুরি এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষের মাঝে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধির ফলে এর সাথ সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তি বর্গ সমাজের জন্য সম্পদ না হয়ে বোঝা হিসেবে পরিগনিত হচেছ সুতারং মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তাঁরা হলেন মুবাল্লিগ, ওলামায়ে কেয়াম, ইমাম-মুয়াজ্জিন, ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্ত ব্যক্তি। এ শ্রেনীর লোকদের এখনও মানুষের মাঝে গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে তাছাড়া ধর্মের প্রতি মানুষের দুর্বলতাও রয়েছে।

তাই ধর্মীয় নেতাদের মানব সম্পদ উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত করলে অধিক ফলপ্রসু হবে। যদিও ধর্মীয় নেতাগণ ব্যক্তিগত উদ্দোগেও ইমানী দায়িত্বের কারণে মানুষদেরকে কল্যানের পথে সদাসর্বদা আহবান করছেন। খুশির সংবাদ এই বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়েছে। আজ মানবতা বিধংসী এইডস রোগ থেকে বাঁচার জন্য ধর্মীয় অনুশাসন পালন করতে বলা হচেছ। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার ধর্মমন্ত্রনালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউডেশন মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্প গ্রহন করেছে। এবং মসজিদের ইমাম মুয়াজিন ও আলেমদের কে বৈষয়িক ও অতি জরুরী নানা বিষয়ের ট্রেনিং প্রদান করছেন যা মানব সম্পদ উন্নয়নে সমাজে সুদুর প্রসারী ভূমিকা রাখছে।

কারন ইমাম ও মুয়াযযিনদের রয়েছে সদা প্রস্ত্তত একটি গ্রহণযোগ্য মঞ্চ যেখান থেকে যে কোন গুরুত্ব বিষয় অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মাঝে পৌছিয়ে দেয়া সম্ভব। কেননা এদেশে রয়েছে প্রায় দুলক্ষ মসজিদ। এ মসজিদ সমূহে রয়েছে চার লক্ষ ইমাম ও মুয়াযযিন। [জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদঃ এ্যাকশন বির্সাচ স্টাডি অন দি ইন্সটিটিউশনাল ডিভেল পমেট হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত ২০০২ পৃ. ১০.১১.১৫.১৬.১৭. ১৮ ২০. ২১. ২৬. ৩০. ৩৭।] এ মঞ্চ তথা মসজিদের মেহরাব থেকে প্রদত্ত বত্তৃতা অন্য যেকোন স্থানের বক্তৃতা হতে অধিক গ্রহন যোগ্যতা রাখে।

এছাড়া নানা প্রকার সামাজিক কর্মকান্ড বিবাহ তালাক, ওয়াজ, মিলাদ, কুরবানী আকিকা ইত্যাদি বিষয়ে জনগন তাদের অতি কাছাকাছি হবার সুযোগ পায় সুতরাং এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে তারা মানুষদের নৈতিক শিক্ষায় ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্থ করে গড়ে তুলতে পারে। তখনই একটি মানুষরে উপযোগীতা ও গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে এবং তার দ্বারা কল্যান কর কর্ম সম্পাদিত হবে। তখন তাকে সম্পদ হিসাবে পরিগনিত করা হবে।

আমাদের দেশে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রচুর যারা মানব সম্পদ উন্নয়নে বড় রকমের বাধা কেননা কর্মহীনতা শক্তিমান অভাবী ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে অভাব পুরনের জন্য চুরি ডাকাতি সন্ত্রাস কালোবাজারি চাঁদাবাজী ইত্যাদির মত ঘৃনীত পথ বেচে নেয়। সুতরাং মানুষ সম্পদ উন্নয়ন করতে হলে এ সমস্ত বেকারের কর্ম সংস্থান করতে হবে। সেক্ষেত্রে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে এবং কারিগরি শিক্ষা প্রদান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষন দিতে হবে। প্রচলিত আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদেরকে নিয়ন্ত্রন এবং ইসলামী শিক্ষা প্রদানকরে ধর্মীয় অনুসাশন পালনের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। এদেশে কর্মসংস্থান না হলে বিদেশে পাঠিয়ে তাদের বেকারত্ব ঘুচাতে হবে। এবং সরকারী ঋনপ্রদান করে খাস ও পতিত জমি আবাদে নিয়োজিত করে উৎপাদনের অংশীদারীত্বের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘোচাতে হবে।

এ সনদে জন্মের অব্যাহিত পরইে শিশুকে নিবন্ধিত করণ করতে এবং জন্ম থেকে তার নামকরণ, একটি জাতীয়তা অর্জনের, এবং যতটা দ্রুত সম্ভব পিতামাতার পরিচয় জানবার ও তাদের হাতে প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার থাকবে।

শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুদের অবৈধভাবে বিদেশে পাচার এবং দেশে ফিরতে না দেয়া প্রতিহত করতে ব্যবস্থা নেবে। শিশুর স্বাধীন ভাবে ভাব প্রকাশের অধিকার থাকবে। এই অধিকারের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত নির্বিশেষে সব ধরনের তথ্য ও ধ্যান ধারনা জানতে চাওয়া, গ্রহন করা এবং অবহিত করার। স্বাধীনতা এটি মৌখিক ভাবে লিখিত মুদ্রিত কিংবা চারুশিল্পের আকারে অথবা শিশুর পছন্দেই অন্য কোন পন্থায় হতে পারে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুর চিন্তা বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুদের সংঘবদ্ধ হবার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে স্বীকার করে। শিশুর প্রতিপালন শিক্ষাদান ও বিকাশের ব্যাপারে পিতামাতা উভয়ের অভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে এই নীতির স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে শরীক রাষ্ট্রসমুহ সর্বাত্বক প্রয়াসী হবে। শিশুকে লালন পালন, শিক্ষাদান ও গড়ে তোলার প্রাথমিক দায়িত্ব হচেছ পিতামাতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন সম্মত অভিভাবকের শিশুর সর্বোত্তম স্বর্থই সবে তাদের মূল চিন্তা। শরীক রাষ্ট্রসমূহ সর্বাত্বক প্রয়াসী হবে শিশুকে লালন পালন শিক্ষাদান ও গড়ে তোলার প্রাথমিক দায়িত্ব হচেছ পিতামাতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন সম্মত অভিভাবকের শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থই হবে তাদের মূল চিন্তা। শরীক রাষ্ট্র সমূহ পিতামাতা আইনানুগ অভিভাবক অথবা শিশু পরিচর্যায় নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থাকা কালীন শিশুকে আঘাত অথবা অত্যাচার অবহেলা অমনোযোগী আচরন দুর্বাবহার অথবা শোষণ এবং যৌন অত্যাচারসহ সহ সকল ধরনের শরীরিক ও মানসিক হিংস্রতা থেকে সুরক্ষার জন্য যথোপযুক্ত আইনানুগ প্রশাসনিক, সামজিক এবং শিক্ষাগত সকল ব্যবস্থা নেবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ স্বীকার করেছে যে, মানসিক অথবা শরীরিকভাবে পঙ্গু শিশু এমন পরিবেশে পরিপূর্ণ ও সুন্দর জীবযাপন করবে সেখানে মর্যাদার নিশ্চয়তা থাকবে, আন্তনির্ভরতা বাড়বে এবং সমাজে শিশুর সক্রিয় অংশ গ্রহনের পথ সুগম হবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ প্রতিটি শিশুর শারিরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক, এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত জীবন মানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। শরীক রাষ্ট্রসমুহ সকল প্রকারের যৌন অপব্যবহার ও যৌন উৎপীড়ন থেকে শিশুর সুরক্ষায় সচেষ্ট হবে। এ উদ্দেশ্যে বিশেষ করে নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ রোধ করতে শরীক রাষ্ট্রগুলো জাতীয় দ্বিপক্ষীয় এবং বাহুপক্ষীয় সকল উপযোগী কার্য ব্যবস্থা নেবে।

(ক) কোন বে আইনী যৌন ক্রিয়াকর্মে লিপ্ত হতে শিশুকে প্ররোচিত কিংবা বাধ্য করা;

(খ) পতিতাবৃত্তি কিংবা অন্যান্য বেআইনী যৌন তৎপরতায় শিশুদের অপব্যহার করা। যৌন অশ্লীলতাপূর্ণ কোন ক্রিয়াকর্মে বা বিষয়বস্ত্ততে শিশুদের অপব্যবহার করা। [মসজিদ জরিপ রিপোট ইমাম প্রশিক্ষন একাডেমী ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৯৮ পৃ. ২৩|]

এছাড়া শিশু অধিকার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় এ সনদে উল্লেখ রয়েছে।

‘‘মানব সম্পদ উন্নয়নঃ একটি পর্যালোচনা’’ শীর্ষক প্রবন্ধের পর্যালোচনায় একথা প্রমাণিত হল, যে মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে হলে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন অনস্বীকার্য। (১) মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, (২) নারী অধিকার বাস্তবায়ন (৩) শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও যথার্থ পরিচর্যা (৩) শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, সর্বোপরি মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করণের মাধ্যমে মানুষকে নৈতিক ও আর্দশিক শিক্ষার দ্বারা ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে এবং সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের বাবস্থা করতে হবে। আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস মানবতার কল্যাণে সামান্যতম ভুমিকা রাখলে স্বার্থকতা খুঁজে পাব।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন