HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
মানব সম্পদ উন্নয়নে ইসলাম
লেখকঃ ড. হুসাইন আহমাদ
৫
পিতা মাতার উপর সন্তানের দশটি অধিকার রয়েছে।যা নিম্নরূপঃ
১. বংশগত ও জন্মগত পবিত্রতা ও সুস্থতার অধিকার : প্রত্যেক মানব শিশু বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে জন্মগত পবিত্রতা ও সুস্থ শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণের অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ অথবা মাত্রাতিরিক্ত যৌন মিলনের অসুস্থতার সময়ে ও যৌন মিলনের ফলে শিশু অধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
» تخيروا لنطفكم فإن العرق دساس أو نزاع «
কোথায় তোমার বীর্য স্থাপন করবে তা চিন্তা ভাবনা করে স্থির করে নাও। বংশধারা যেন সঠিক হয়। [আবু আব্দুল্লাহ ইবনে ঈসমাইনঃ ইবন ঈসমাইল আল-বাখারীঃ সহীহুল বোখারী, দিল্লি, কুতুবখানা রশীদিয়া হিঃ ১৪০৯, পৃ. ৭৬০।]
২. বেঁচে থাকার অধিকার: দারিদ্রতার ভয়, পরিাবারিক সুনাম রক্ষার্থে অথবা অন্য যে কোন কারণে শিশু হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিন্দা করেছে।
﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ﴾ [ الأنعام : 151 ]
দরিদ্রতার কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না আমি তোমাদের এবং তাদের রিযিক দিয়ে থাকি। [আল্ কুরআনঃ সুরা আনআম ৬: ১৫১।]
৩. মাতৃদুগ্ধ পান আশ্রয়, প্রতিপালন ও স্বাস্থসেবার অধিকার : আল কোরআনে বলা হয়েছে।
﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ لِمَنۡ أَرَادَ أَن يُتِمَّ ٱلرَّضَاعَةَۚ﴾ [ البقرة : 233 ]
যে স্তন্য পানকাল পূর্ণ করতে চান, তাদের জন্য জননীগণ সন্তানগণকে পূর্ণ দু বছরের স্তন্যপান করাবেন। [আল্ কুরআনঃ সুরা বাকারা ২: ২৩৩।]
৪. জন্মগত বৈধতা এবং ভাল নামের অধিকার: বৈধ পন্থায় পৃথিবীতে আসবারও সন্দেহ মুক্ত পিতৃত্বের পরিচয় প্রদানের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে এবং শিশুর সুন্দর নাম রাখতে হবে। আল্লাহর নবী বলেছেন - الولد للفراش যে (পিতার) শয্যায় সন্তান জন্মগ্রহণ করে শিশু সেই শয্যারই [আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু ইসমাইল আল-বোখারীঃ সহীহুল বোখারী, দিল্লি কুতুবখানা রশীদিয়াহ হি. ১৪০৯, পৃ. ৭৬৭।] তোমরা সুন্দর নাম রাখ। [আবু দাউদ সুলাইমান ইবনু আশআছ আস-সিজিস্তানী, সুনানে আবী দাউদ, দিল্লী, কুতুবখানা রশীদিয়া, তা, বি, ৬৭৬।]
৫. পৃথক শয্যায় নিদ্রা যাবার অধিকার: প্রত্যেক শিশুকেই পৃথক একক শয্যায় নিদ্রা যাবার অধিকার রয়েছে। রাসূল(স:) এরশাদ করেন-
«مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع واضربوهم عليها وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع «
৭ বছর বয়সে শিশুকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও, ১০ বছর হয়ে গেলে তাদেরকে নামাজ না পড়লে শাস্তি দাও এবং তাদের জন্য পৃথক পৃথক শয্যার ব্যবস্থা কর। [প্রাগুক্ত পৃ. ৭১]
৬. ধর্মীয় শিক্ষা ও আখলাক উন্নয়নের অধিকার : শিশুদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করা পিতা মাতার নৈতিক দায়িত্ব। হযরত লোকমান (আঃ) যে ভাষায় স্বীয় পুত্রকে নির্দেশ দিয়েছেন তার উল্লেখ কোরানুল কারীমে রয়েছে।
﴿يَٰبُنَيَّ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱنۡهَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَآ أَصَابَكَۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ١٧﴾ [ لقمان : 17 ]
হে আমার পুত্র সালাত কায়েম কর, সৎ কর্মের নির্দেশ দাও, অসৎ কর্মে নিষেধ কর এবং বিপদে আপদে ধৈর্য্য ধারন কর। ইহাই দৃঢ় সংকল্প পূর্ণ হৃদয়ের কাজ। [আল্ কুরআনঃ সুরা লুকমান ৩১: ১৭]
৭. ভবিষৎ আর্থিক নিরাপত্তা: আল্লাহর নবী বলেছেন
«لأن تذر ورثتك أغنياء خير من أن تذرهم عالة يتكففون الناس»
নিজের সন্তানকে অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর ফেলে যাবার চেয়ে অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া ভাল [শামছুল আলম আনিসুর রহমানঃ ইসলামী ঐতিহ্য পরিবার পরিকল্পনা, পরিবার পরিবল্পনা অধিদপ্তর, আই, ই, এম ইউনিট ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর যৌথ প্রকাশনা খৃ. ১৯৯৫ পৃ. ৫৪]
৮. শিক্ষা প্রশিক্ষন, খেলাধুলা ও আত্মরক্ষার অধিকার: সন্তানকে লেখাপড়া, পারিবারিক, বৈষয়িক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে-
«عن أبى سلمان مؤ لى أبى رافع قال : قلت يا رسول لله : للولد علينا حق كحقنا عليهم ؟ قال نعم حق الولد على الوالد أن يعلمه الكتابة والسباحة وللرماية، لايرزقه إلا طيبا»
পিতামাতা নিকট সন্তানের অধিকার হলো তাঁর সন্তানকে লিখতে শিক্ষা দেবে, সাতাঁর শিক্ষা দেবে এবং তীরন্দাজ হতে শিক্ষা দেবে। তারা এমন কিছু শিক্ষা দেবেন না যা সন্তানকে ন্যায়নিষ্ঠ করে না। [প্রাগুক্ত পৃ. ৫৪]
৯. লিংগভেদে সমব্যবহারের অধিকার: আল্লাহর নবী বলেছেন
» اعدلوا بين أولادكم «
তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে ইনসাফ কায়েম করো [প্রাগুক্ত পৃ.৫৬],
যেমন তোমরা তোমাদের সংগে আচরণেও ইনসাফ কামনা করে থাকো।
১০. বৈধ আয় থেকে প্রতিপালিত হবার অধিকার : সুতরাং পিতা-মাতাকে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বৈধ আয় খরচ করতে হবে।
উপরে বর্ণিত অধিকার গুলো সন্তান যদি সুষ্ঠ ভাবে পায় তাহলে প্রতিটি মানুষ সম্পদে পরিণত হবে এবং তাঁর জীবন, দেশও জাতীর কল্যাণে আসবে। আল্লাহ্ রাববুল আলামীন এ বিশ্ব জগত এক সুন্দর পরিকল্পনা অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। তাই ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রত্যেক বিষয়েই পরিকল্পিত উপায়ে কাজ করা বাঞ্চনীয়। পরিকল্পনা বিহীন কাজ উত্তম ফলায়ক হতে পারে না। এমনকি পরিকল্পনা ব্যতীত কোন গঠন মুলক কাজ সম্ভবই নয়। [মাওলানা মুহাম্মদ শফিকুর রহমানঃ ইসলাম ও পারিবারিক জীবন, আই, ই, এম, ইউনিট পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, আজিমপুর ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত খৃ. ১৯৯৩ পৃ. ৫।] আল্লাহ্র কর্মে পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়।
﴿َمَا خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا لَٰعِبِينَ ٣٨ مَا خَلَقۡنَٰهُمَآ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٩﴾ . [ الدخان : 38-39 ]
আমি আকাশ মন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যকার কোন কিছুই খেলাচছলে সৃষ্টি করনি। আমি তো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। [আল্ কুরআনঃ সুরা দুখান ৪৪-৩৮।]
﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : 49 ]
আমি সব কিছু এক সুনিদিষ্ট পরিমাপে সৃষ্টি করেছি। [আল্ কুরআনঃ সুরা কামার ৫৪: ৪৯।]
সুতারং মানব সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবারের প্রয়োজনীয়তা অনীস্বীকার্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত একটি জন বহুল দেশে। এ দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বৃদ্ধির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী। এশিয়া ইউকের ২০০০ সালের মে মাসের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ কোটি লোক এবং বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.২ শতাংশ। ১৯৯৯ সনে প্রতি হাজারে স্থুল জন্মহার প্রায় ২৩.৬ এবং স্থুল মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে ১৪৮.৩৯৩ ব;কি; আয়তন বিশিষ্ট এ দেশের জনসংখ্যা চলতি শতাব্দীর প্রথম ৫বছরে অনুমানিক ১৪ কোটি হতে পারে বলে বিশেষদের ধারনা। [মোঃ শামছুল করীম খানঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, আগাঁরগাও, ঢাকা ১২০৭ খৃ. ২০০ পৃ. ৪৪] তবে এদেশের বৃহত জনগোষ্ঠীকে যদি সুস্থ, শিক্ষিত, দক্ষ, অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা যায় তাহলে এ জনসংখ্যা বিশাল মানব সম্পদে পরিনত হতে পারে।
অন্যথা এদের দ্বারা অশান্তি বিশৃংখলা হত্যা সন্ত্রাস, ধর্ষণের, মত প্রভৃতি অপর্কম সংগঠিত হওয়াই স্বাভাবিক। আল্লাহ্ তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরুপ [আল্ কুরআনঃ সুরা আনফাল ৮: ২৮।] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন
﴿وَلۡيَخۡشَ ٱلَّذِينَ لَوۡ تَرَكُواْ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ ذُرِّيَّةٗ ضِعَٰفًا خَافُواْ عَلَيۡهِمۡ فَلۡيَتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡيَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدًا٩ ﴾ [ النساء : 9 ]
তাদের ভয় করা উচিত তারা যদি অসহায় সন্তান রেখে দুনিয়া থেকে সচলে যায় তবে মৃত্যুর সময় সন্তানদের সম্পর্কে তাকে আশংকা ও উদ্বিগ্ন করবে। [আল্ কুরআনঃ সুরা নিসা ৪: ৯] অতএব পরিবার পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তুলতে হবে। কেননা পরিকল্পনা ও পরিণাম চিন্তা না করে বিবাহ, বাল্যবিবাহ ও বাহুবিবাহের কারনে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় মহিলার সংখ্যা বাড়ছে তেমনি ঘন ঘন সন্তান জন্ম দেবার কারনে সদ্য ভুমিষ্ট শিশু অপুষ্টি, রাতকানা, লেংড়া ও দুর্বল হিসেবে দুনিয়াতে আগমন করছে। যারা পরবর্তীতে সমাজে বেকারত্বের কষাঘাতে ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারনে সমাজে সংঘটিত নানাবিধি অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যা ইসলাম,মেডিকেল সাইনন্স ও সুস্থ বিবেক কোন ভাবে সমর্থন করে না। সুতরাং বলা যায় মানুষ সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের প্রয়োজনীয় অনস্বীকার্য। অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপটা যখন সহ্যের বাইরে চলে যায় তখনই দেখা যায় ক্ষুধার জ্বালায় একজন স্নেহময়ী মাকে তার সন্তানকে গলা টিপে মারতে উদ্যত হতে। দেখা যায় কোলের সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে নিজেকে ভারমুক্ত করে একজন গর্ভধারিনী মাকে পালিয়ে যেতে। [মাওলানা এ কে, এম সিরাজুল ইসলাম পরিবার পরিকল্পনা ও ইসলাম, বাংলাদেশ ফামিলী প্লানিং এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত খৃ. ১৯৮৩ পৃ. ১০।] এ নিমর্ম বাস্তবতা অতীত ও বর্তমান সব সময় পরিলক্ষিত হচেছ। অথচ পবিত্র কোরআন শরীফে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের ব্যাপারে অনেক উদাহরন বিদ্যামান। যারা পরিকল্পনাহীন ভাবে ঘন ঘন সন্তান জন্ম দিচেছন তারা কি ভাবছেন না আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি শিশুকে দুই থেকে আড়াই বছর মাতৃদুগ্ধপানের অধিকার দিয়েছেন
﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ ﴾ [ البقرة : 233 ]
মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ পান করাবে। [আল্ কুরআনঃ সুরা বাকারা ২: ২৩৩।]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র এরশাদ করেছেন
﴿ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ﴾ [ الأحقاف : 15 ]
তার দুধপান করানোর সময়কাল ত্রিশ মাস। [আল্ কুরআনঃ সুরা আহকাফ ৪৬ : ১৫।] আল্লাহর এ বানী দ্বারা শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের অধিকার ও দুধ পানের সময়সীমা বর্ননা করা হয়েছে। পরোক্ষভাবে এটাও বুঝানো উদ্দেশ্য যে মাতৃদুগ্ধ পানকালীন সময়ে সন্তান ধারণকারা উচিত হবে না। কারণ মাতৃগর্ভে সন্তান আসলে স্বাভাবিক নিয়মেই মায়ের দুধ বন্দ হয়ে যায়। ফলে শিশু দুধ পানের অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ্র এ নিদের্শনার দ্বারা আমরা পরিকল্পনার আভাস পাই। তাছাড়া ইসলামী শরীয়ত মা ও শিশু স্বাস্থ রক্ষার্থে সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্র বৈধ বলেছে। মহান আল্লাহ্ বলেন
﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٖ مِّن طِينٖ ١٢ ثُمَّ جَعَلۡنَٰهُ نُطۡفَةٗ فِي قَرَارٖ مَّكِينٖ ١٣ ثُمَّ خَلَقۡنَا ٱلنُّطۡفَةَ عَلَقَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡعَلَقَةَ مُضۡغَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡمُضۡغَةَ عِظَٰمٗا فَكَسَوۡنَا ٱلۡعِظَٰمَ لَحۡمٗا ثُمَّ أَنشَأۡنَٰهُ خَلۡقًا ءَاخَرَۚ فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ ١٤﴾ [ المؤمنون : 12-14 ]
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে অতঃপর আমি উহাকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে, পরে শুক্র বিন্দুকে পরিনত করি আলাক এ অতঃপর আলাককে পরিনত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি পঞ্জরে অতঃপর অস্থি পঞ্জরকে ঢেকে দেয় গোসত দ্বারা অবশেষ উহাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে অতঃপর সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান [আল্ কুরআনঃ সুরা মুমিনুন ২৩: ১২-১৪।]। এখানে আমরা মানুষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আল্লাহর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে পাই। এছাড়া পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এর অসংখ্য প্রমান রয়েছে। তাই একথা দ্বীধাহীন চিত্তে বলা যায় পরিকল্পনা বৈধই নয় বরং প্রতিটি ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। তবে এর দ্বারা শুধুমাত্র জন্ম নিয়ন্ত্রন বুঝলে ভুল হবে। এর সাথে এটাও প্রমানিত হলো যে মানব সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবার গঠণের ভূমিকা অত্যাধিক।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী প্রতিটি মানব সন্তান যদিও শিশুদের জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় আরো কম বয়সে সাবালকত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে। [জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এ্যাকশন রিসার্চ স্টাডি অনদি ইন্সটিটিউশন ডিভেলপমন্ট হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত, খৃ. ২০০২ পৃ. ৮]
ইসলামী শরীয়াতে ছেলেদের স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের হায়েজ বা ঋতুস্রাব হলে বালেগ হয়। তবে ১৫ বছর বয়স হলে স্বপ্নদোষ ও হায়েজ না হলেও বালেগ বলে গন্য করা হবে। তবে এ হিসেব চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী হবে। [মাওলান আশরাফ আলী থানভী (রাঃ), বেহেশতী জেওর, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, চকবাজার, ঢাকা, অষ্টম মুন্দ্রন খৃ. ১৯৮৫ পৃ. ১৯২।]
বর্তমান অন্যায় অত্যাচার চুরি ডাকাতি, সন্ত্রাস হত্যা ধর্ষন সহ নানা ধরনের অপরাধের সয়লাব চলছে। এ অবস্থা হতে মুক্তি পেতে হলে মানুষকে ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্থ, নৈতিক শিক্ষার প্রসার ও নীতিবান করে গড়ে তুলতে হবে। আইন বা শাসনের দ্বারা পুরাপুরি এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষের মাঝে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধির ফলে এর সাথ সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তি বর্গ সমাজের জন্য সম্পদ না হয়ে বোঝা হিসেবে পরিগনিত হচেছ সুতারং মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তাঁরা হলেন মুবাল্লিগ, ওলামায়ে কেয়াম, ইমাম-মুয়াজ্জিন, ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্ত ব্যক্তি। এ শ্রেনীর লোকদের এখনও মানুষের মাঝে গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে তাছাড়া ধর্মের প্রতি মানুষের দুর্বলতাও রয়েছে।
তাই ধর্মীয় নেতাদের মানব সম্পদ উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত করলে অধিক ফলপ্রসু হবে। যদিও ধর্মীয় নেতাগণ ব্যক্তিগত উদ্দোগেও ইমানী দায়িত্বের কারণে মানুষদেরকে কল্যানের পথে সদাসর্বদা আহবান করছেন। খুশির সংবাদ এই বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়েছে। আজ মানবতা বিধংসী এইডস রোগ থেকে বাঁচার জন্য ধর্মীয় অনুশাসন পালন করতে বলা হচেছ। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার ধর্মমন্ত্রনালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউডেশন মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্প গ্রহন করেছে। এবং মসজিদের ইমাম মুয়াজিন ও আলেমদের কে বৈষয়িক ও অতি জরুরী নানা বিষয়ের ট্রেনিং প্রদান করছেন যা মানব সম্পদ উন্নয়নে সমাজে সুদুর প্রসারী ভূমিকা রাখছে।
কারন ইমাম ও মুয়াযযিনদের রয়েছে সদা প্রস্ত্তত একটি গ্রহণযোগ্য মঞ্চ যেখান থেকে যে কোন গুরুত্ব বিষয় অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মাঝে পৌছিয়ে দেয়া সম্ভব। কেননা এদেশে রয়েছে প্রায় দুলক্ষ মসজিদ। এ মসজিদ সমূহে রয়েছে চার লক্ষ ইমাম ও মুয়াযযিন। [জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদঃ এ্যাকশন বির্সাচ স্টাডি অন দি ইন্সটিটিউশনাল ডিভেল পমেট হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত ২০০২ পৃ. ১০.১১.১৫.১৬.১৭. ১৮ ২০. ২১. ২৬. ৩০. ৩৭।] এ মঞ্চ তথা মসজিদের মেহরাব থেকে প্রদত্ত বত্তৃতা অন্য যেকোন স্থানের বক্তৃতা হতে অধিক গ্রহন যোগ্যতা রাখে।
এছাড়া নানা প্রকার সামাজিক কর্মকান্ড বিবাহ তালাক, ওয়াজ, মিলাদ, কুরবানী আকিকা ইত্যাদি বিষয়ে জনগন তাদের অতি কাছাকাছি হবার সুযোগ পায় সুতরাং এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে তারা মানুষদের নৈতিক শিক্ষায় ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্থ করে গড়ে তুলতে পারে। তখনই একটি মানুষরে উপযোগীতা ও গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে এবং তার দ্বারা কল্যান কর কর্ম সম্পাদিত হবে। তখন তাকে সম্পদ হিসাবে পরিগনিত করা হবে।
আমাদের দেশে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রচুর যারা মানব সম্পদ উন্নয়নে বড় রকমের বাধা কেননা কর্মহীনতা শক্তিমান অভাবী ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে অভাব পুরনের জন্য চুরি ডাকাতি সন্ত্রাস কালোবাজারি চাঁদাবাজী ইত্যাদির মত ঘৃনীত পথ বেচে নেয়। সুতরাং মানুষ সম্পদ উন্নয়ন করতে হলে এ সমস্ত বেকারের কর্ম সংস্থান করতে হবে। সেক্ষেত্রে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে এবং কারিগরি শিক্ষা প্রদান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষন দিতে হবে। প্রচলিত আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদেরকে নিয়ন্ত্রন এবং ইসলামী শিক্ষা প্রদানকরে ধর্মীয় অনুসাশন পালনের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। এদেশে কর্মসংস্থান না হলে বিদেশে পাঠিয়ে তাদের বেকারত্ব ঘুচাতে হবে। এবং সরকারী ঋনপ্রদান করে খাস ও পতিত জমি আবাদে নিয়োজিত করে উৎপাদনের অংশীদারীত্বের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘোচাতে হবে।
এ সনদে জন্মের অব্যাহিত পরইে শিশুকে নিবন্ধিত করণ করতে এবং জন্ম থেকে তার নামকরণ, একটি জাতীয়তা অর্জনের, এবং যতটা দ্রুত সম্ভব পিতামাতার পরিচয় জানবার ও তাদের হাতে প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার থাকবে।
শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুদের অবৈধভাবে বিদেশে পাচার এবং দেশে ফিরতে না দেয়া প্রতিহত করতে ব্যবস্থা নেবে। শিশুর স্বাধীন ভাবে ভাব প্রকাশের অধিকার থাকবে। এই অধিকারের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত নির্বিশেষে সব ধরনের তথ্য ও ধ্যান ধারনা জানতে চাওয়া, গ্রহন করা এবং অবহিত করার। স্বাধীনতা এটি মৌখিক ভাবে লিখিত মুদ্রিত কিংবা চারুশিল্পের আকারে অথবা শিশুর পছন্দেই অন্য কোন পন্থায় হতে পারে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুর চিন্তা বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুদের সংঘবদ্ধ হবার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে স্বীকার করে। শিশুর প্রতিপালন শিক্ষাদান ও বিকাশের ব্যাপারে পিতামাতা উভয়ের অভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে এই নীতির স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে শরীক রাষ্ট্রসমুহ সর্বাত্বক প্রয়াসী হবে। শিশুকে লালন পালন, শিক্ষাদান ও গড়ে তোলার প্রাথমিক দায়িত্ব হচেছ পিতামাতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন সম্মত অভিভাবকের শিশুর সর্বোত্তম স্বর্থই সবে তাদের মূল চিন্তা। শরীক রাষ্ট্রসমূহ সর্বাত্বক প্রয়াসী হবে শিশুকে লালন পালন শিক্ষাদান ও গড়ে তোলার প্রাথমিক দায়িত্ব হচেছ পিতামাতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন সম্মত অভিভাবকের শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থই হবে তাদের মূল চিন্তা। শরীক রাষ্ট্র সমূহ পিতামাতা আইনানুগ অভিভাবক অথবা শিশু পরিচর্যায় নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থাকা কালীন শিশুকে আঘাত অথবা অত্যাচার অবহেলা অমনোযোগী আচরন দুর্বাবহার অথবা শোষণ এবং যৌন অত্যাচারসহ সহ সকল ধরনের শরীরিক ও মানসিক হিংস্রতা থেকে সুরক্ষার জন্য যথোপযুক্ত আইনানুগ প্রশাসনিক, সামজিক এবং শিক্ষাগত সকল ব্যবস্থা নেবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ স্বীকার করেছে যে, মানসিক অথবা শরীরিকভাবে পঙ্গু শিশু এমন পরিবেশে পরিপূর্ণ ও সুন্দর জীবযাপন করবে সেখানে মর্যাদার নিশ্চয়তা থাকবে, আন্তনির্ভরতা বাড়বে এবং সমাজে শিশুর সক্রিয় অংশ গ্রহনের পথ সুগম হবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ প্রতিটি শিশুর শারিরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক, এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত জীবন মানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। শরীক রাষ্ট্রসমুহ সকল প্রকারের যৌন অপব্যবহার ও যৌন উৎপীড়ন থেকে শিশুর সুরক্ষায় সচেষ্ট হবে। এ উদ্দেশ্যে বিশেষ করে নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ রোধ করতে শরীক রাষ্ট্রগুলো জাতীয় দ্বিপক্ষীয় এবং বাহুপক্ষীয় সকল উপযোগী কার্য ব্যবস্থা নেবে।
(ক) কোন বে আইনী যৌন ক্রিয়াকর্মে লিপ্ত হতে শিশুকে প্ররোচিত কিংবা বাধ্য করা;
(খ) পতিতাবৃত্তি কিংবা অন্যান্য বেআইনী যৌন তৎপরতায় শিশুদের অপব্যহার করা। যৌন অশ্লীলতাপূর্ণ কোন ক্রিয়াকর্মে বা বিষয়বস্ত্ততে শিশুদের অপব্যবহার করা। [মসজিদ জরিপ রিপোট ইমাম প্রশিক্ষন একাডেমী ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৯৮ পৃ. ২৩|]
এছাড়া শিশু অধিকার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় এ সনদে উল্লেখ রয়েছে।
‘‘মানব সম্পদ উন্নয়নঃ একটি পর্যালোচনা’’ শীর্ষক প্রবন্ধের পর্যালোচনায় একথা প্রমাণিত হল, যে মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে হলে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন অনস্বীকার্য। (১) মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, (২) নারী অধিকার বাস্তবায়ন (৩) শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও যথার্থ পরিচর্যা (৩) শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, সর্বোপরি মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করণের মাধ্যমে মানুষকে নৈতিক ও আর্দশিক শিক্ষার দ্বারা ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে এবং সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের বাবস্থা করতে হবে। আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস মানবতার কল্যাণে সামান্যতম ভুমিকা রাখলে স্বার্থকতা খুঁজে পাব।
১. বংশগত ও জন্মগত পবিত্রতা ও সুস্থতার অধিকার : প্রত্যেক মানব শিশু বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে জন্মগত পবিত্রতা ও সুস্থ শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণের অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ অথবা মাত্রাতিরিক্ত যৌন মিলনের অসুস্থতার সময়ে ও যৌন মিলনের ফলে শিশু অধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
» تخيروا لنطفكم فإن العرق دساس أو نزاع «
কোথায় তোমার বীর্য স্থাপন করবে তা চিন্তা ভাবনা করে স্থির করে নাও। বংশধারা যেন সঠিক হয়। [আবু আব্দুল্লাহ ইবনে ঈসমাইনঃ ইবন ঈসমাইল আল-বাখারীঃ সহীহুল বোখারী, দিল্লি, কুতুবখানা রশীদিয়া হিঃ ১৪০৯, পৃ. ৭৬০।]
২. বেঁচে থাকার অধিকার: দারিদ্রতার ভয়, পরিাবারিক সুনাম রক্ষার্থে অথবা অন্য যে কোন কারণে শিশু হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিন্দা করেছে।
﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ﴾ [ الأنعام : 151 ]
দরিদ্রতার কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না আমি তোমাদের এবং তাদের রিযিক দিয়ে থাকি। [আল্ কুরআনঃ সুরা আনআম ৬: ১৫১।]
৩. মাতৃদুগ্ধ পান আশ্রয়, প্রতিপালন ও স্বাস্থসেবার অধিকার : আল কোরআনে বলা হয়েছে।
﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ لِمَنۡ أَرَادَ أَن يُتِمَّ ٱلرَّضَاعَةَۚ﴾ [ البقرة : 233 ]
যে স্তন্য পানকাল পূর্ণ করতে চান, তাদের জন্য জননীগণ সন্তানগণকে পূর্ণ দু বছরের স্তন্যপান করাবেন। [আল্ কুরআনঃ সুরা বাকারা ২: ২৩৩।]
৪. জন্মগত বৈধতা এবং ভাল নামের অধিকার: বৈধ পন্থায় পৃথিবীতে আসবারও সন্দেহ মুক্ত পিতৃত্বের পরিচয় প্রদানের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে এবং শিশুর সুন্দর নাম রাখতে হবে। আল্লাহর নবী বলেছেন - الولد للفراش যে (পিতার) শয্যায় সন্তান জন্মগ্রহণ করে শিশু সেই শয্যারই [আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু ইসমাইল আল-বোখারীঃ সহীহুল বোখারী, দিল্লি কুতুবখানা রশীদিয়াহ হি. ১৪০৯, পৃ. ৭৬৭।] তোমরা সুন্দর নাম রাখ। [আবু দাউদ সুলাইমান ইবনু আশআছ আস-সিজিস্তানী, সুনানে আবী দাউদ, দিল্লী, কুতুবখানা রশীদিয়া, তা, বি, ৬৭৬।]
৫. পৃথক শয্যায় নিদ্রা যাবার অধিকার: প্রত্যেক শিশুকেই পৃথক একক শয্যায় নিদ্রা যাবার অধিকার রয়েছে। রাসূল(স:) এরশাদ করেন-
«مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع واضربوهم عليها وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع «
৭ বছর বয়সে শিশুকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও, ১০ বছর হয়ে গেলে তাদেরকে নামাজ না পড়লে শাস্তি দাও এবং তাদের জন্য পৃথক পৃথক শয্যার ব্যবস্থা কর। [প্রাগুক্ত পৃ. ৭১]
৬. ধর্মীয় শিক্ষা ও আখলাক উন্নয়নের অধিকার : শিশুদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করা পিতা মাতার নৈতিক দায়িত্ব। হযরত লোকমান (আঃ) যে ভাষায় স্বীয় পুত্রকে নির্দেশ দিয়েছেন তার উল্লেখ কোরানুল কারীমে রয়েছে।
﴿يَٰبُنَيَّ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱنۡهَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَآ أَصَابَكَۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ١٧﴾ [ لقمان : 17 ]
হে আমার পুত্র সালাত কায়েম কর, সৎ কর্মের নির্দেশ দাও, অসৎ কর্মে নিষেধ কর এবং বিপদে আপদে ধৈর্য্য ধারন কর। ইহাই দৃঢ় সংকল্প পূর্ণ হৃদয়ের কাজ। [আল্ কুরআনঃ সুরা লুকমান ৩১: ১৭]
৭. ভবিষৎ আর্থিক নিরাপত্তা: আল্লাহর নবী বলেছেন
«لأن تذر ورثتك أغنياء خير من أن تذرهم عالة يتكففون الناس»
নিজের সন্তানকে অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর ফেলে যাবার চেয়ে অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া ভাল [শামছুল আলম আনিসুর রহমানঃ ইসলামী ঐতিহ্য পরিবার পরিকল্পনা, পরিবার পরিবল্পনা অধিদপ্তর, আই, ই, এম ইউনিট ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর যৌথ প্রকাশনা খৃ. ১৯৯৫ পৃ. ৫৪]
৮. শিক্ষা প্রশিক্ষন, খেলাধুলা ও আত্মরক্ষার অধিকার: সন্তানকে লেখাপড়া, পারিবারিক, বৈষয়িক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে-
«عن أبى سلمان مؤ لى أبى رافع قال : قلت يا رسول لله : للولد علينا حق كحقنا عليهم ؟ قال نعم حق الولد على الوالد أن يعلمه الكتابة والسباحة وللرماية، لايرزقه إلا طيبا»
পিতামাতা নিকট সন্তানের অধিকার হলো তাঁর সন্তানকে লিখতে শিক্ষা দেবে, সাতাঁর শিক্ষা দেবে এবং তীরন্দাজ হতে শিক্ষা দেবে। তারা এমন কিছু শিক্ষা দেবেন না যা সন্তানকে ন্যায়নিষ্ঠ করে না। [প্রাগুক্ত পৃ. ৫৪]
৯. লিংগভেদে সমব্যবহারের অধিকার: আল্লাহর নবী বলেছেন
» اعدلوا بين أولادكم «
তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে ইনসাফ কায়েম করো [প্রাগুক্ত পৃ.৫৬],
যেমন তোমরা তোমাদের সংগে আচরণেও ইনসাফ কামনা করে থাকো।
১০. বৈধ আয় থেকে প্রতিপালিত হবার অধিকার : সুতরাং পিতা-মাতাকে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বৈধ আয় খরচ করতে হবে।
উপরে বর্ণিত অধিকার গুলো সন্তান যদি সুষ্ঠ ভাবে পায় তাহলে প্রতিটি মানুষ সম্পদে পরিণত হবে এবং তাঁর জীবন, দেশও জাতীর কল্যাণে আসবে। আল্লাহ্ রাববুল আলামীন এ বিশ্ব জগত এক সুন্দর পরিকল্পনা অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। তাই ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রত্যেক বিষয়েই পরিকল্পিত উপায়ে কাজ করা বাঞ্চনীয়। পরিকল্পনা বিহীন কাজ উত্তম ফলায়ক হতে পারে না। এমনকি পরিকল্পনা ব্যতীত কোন গঠন মুলক কাজ সম্ভবই নয়। [মাওলানা মুহাম্মদ শফিকুর রহমানঃ ইসলাম ও পারিবারিক জীবন, আই, ই, এম, ইউনিট পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, আজিমপুর ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত খৃ. ১৯৯৩ পৃ. ৫।] আল্লাহ্র কর্মে পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়।
﴿َمَا خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا لَٰعِبِينَ ٣٨ مَا خَلَقۡنَٰهُمَآ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٩﴾ . [ الدخان : 38-39 ]
আমি আকাশ মন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যকার কোন কিছুই খেলাচছলে সৃষ্টি করনি। আমি তো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। [আল্ কুরআনঃ সুরা দুখান ৪৪-৩৮।]
﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : 49 ]
আমি সব কিছু এক সুনিদিষ্ট পরিমাপে সৃষ্টি করেছি। [আল্ কুরআনঃ সুরা কামার ৫৪: ৪৯।]
সুতারং মানব সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবারের প্রয়োজনীয়তা অনীস্বীকার্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত একটি জন বহুল দেশে। এ দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বৃদ্ধির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী। এশিয়া ইউকের ২০০০ সালের মে মাসের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ কোটি লোক এবং বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.২ শতাংশ। ১৯৯৯ সনে প্রতি হাজারে স্থুল জন্মহার প্রায় ২৩.৬ এবং স্থুল মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে ১৪৮.৩৯৩ ব;কি; আয়তন বিশিষ্ট এ দেশের জনসংখ্যা চলতি শতাব্দীর প্রথম ৫বছরে অনুমানিক ১৪ কোটি হতে পারে বলে বিশেষদের ধারনা। [মোঃ শামছুল করীম খানঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, আগাঁরগাও, ঢাকা ১২০৭ খৃ. ২০০ পৃ. ৪৪] তবে এদেশের বৃহত জনগোষ্ঠীকে যদি সুস্থ, শিক্ষিত, দক্ষ, অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা যায় তাহলে এ জনসংখ্যা বিশাল মানব সম্পদে পরিনত হতে পারে।
অন্যথা এদের দ্বারা অশান্তি বিশৃংখলা হত্যা সন্ত্রাস, ধর্ষণের, মত প্রভৃতি অপর্কম সংগঠিত হওয়াই স্বাভাবিক। আল্লাহ্ তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরুপ [আল্ কুরআনঃ সুরা আনফাল ৮: ২৮।] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন
﴿وَلۡيَخۡشَ ٱلَّذِينَ لَوۡ تَرَكُواْ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ ذُرِّيَّةٗ ضِعَٰفًا خَافُواْ عَلَيۡهِمۡ فَلۡيَتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡيَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدًا٩ ﴾ [ النساء : 9 ]
তাদের ভয় করা উচিত তারা যদি অসহায় সন্তান রেখে দুনিয়া থেকে সচলে যায় তবে মৃত্যুর সময় সন্তানদের সম্পর্কে তাকে আশংকা ও উদ্বিগ্ন করবে। [আল্ কুরআনঃ সুরা নিসা ৪: ৯] অতএব পরিবার পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তুলতে হবে। কেননা পরিকল্পনা ও পরিণাম চিন্তা না করে বিবাহ, বাল্যবিবাহ ও বাহুবিবাহের কারনে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় মহিলার সংখ্যা বাড়ছে তেমনি ঘন ঘন সন্তান জন্ম দেবার কারনে সদ্য ভুমিষ্ট শিশু অপুষ্টি, রাতকানা, লেংড়া ও দুর্বল হিসেবে দুনিয়াতে আগমন করছে। যারা পরবর্তীতে সমাজে বেকারত্বের কষাঘাতে ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারনে সমাজে সংঘটিত নানাবিধি অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যা ইসলাম,মেডিকেল সাইনন্স ও সুস্থ বিবেক কোন ভাবে সমর্থন করে না। সুতরাং বলা যায় মানুষ সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের প্রয়োজনীয় অনস্বীকার্য। অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপটা যখন সহ্যের বাইরে চলে যায় তখনই দেখা যায় ক্ষুধার জ্বালায় একজন স্নেহময়ী মাকে তার সন্তানকে গলা টিপে মারতে উদ্যত হতে। দেখা যায় কোলের সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে নিজেকে ভারমুক্ত করে একজন গর্ভধারিনী মাকে পালিয়ে যেতে। [মাওলানা এ কে, এম সিরাজুল ইসলাম পরিবার পরিকল্পনা ও ইসলাম, বাংলাদেশ ফামিলী প্লানিং এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত খৃ. ১৯৮৩ পৃ. ১০।] এ নিমর্ম বাস্তবতা অতীত ও বর্তমান সব সময় পরিলক্ষিত হচেছ। অথচ পবিত্র কোরআন শরীফে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের ব্যাপারে অনেক উদাহরন বিদ্যামান। যারা পরিকল্পনাহীন ভাবে ঘন ঘন সন্তান জন্ম দিচেছন তারা কি ভাবছেন না আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি শিশুকে দুই থেকে আড়াই বছর মাতৃদুগ্ধপানের অধিকার দিয়েছেন
﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ ﴾ [ البقرة : 233 ]
মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ পান করাবে। [আল্ কুরআনঃ সুরা বাকারা ২: ২৩৩।]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র এরশাদ করেছেন
﴿ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ﴾ [ الأحقاف : 15 ]
তার দুধপান করানোর সময়কাল ত্রিশ মাস। [আল্ কুরআনঃ সুরা আহকাফ ৪৬ : ১৫।] আল্লাহর এ বানী দ্বারা শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের অধিকার ও দুধ পানের সময়সীমা বর্ননা করা হয়েছে। পরোক্ষভাবে এটাও বুঝানো উদ্দেশ্য যে মাতৃদুগ্ধ পানকালীন সময়ে সন্তান ধারণকারা উচিত হবে না। কারণ মাতৃগর্ভে সন্তান আসলে স্বাভাবিক নিয়মেই মায়ের দুধ বন্দ হয়ে যায়। ফলে শিশু দুধ পানের অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ্র এ নিদের্শনার দ্বারা আমরা পরিকল্পনার আভাস পাই। তাছাড়া ইসলামী শরীয়ত মা ও শিশু স্বাস্থ রক্ষার্থে সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্র বৈধ বলেছে। মহান আল্লাহ্ বলেন
﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٖ مِّن طِينٖ ١٢ ثُمَّ جَعَلۡنَٰهُ نُطۡفَةٗ فِي قَرَارٖ مَّكِينٖ ١٣ ثُمَّ خَلَقۡنَا ٱلنُّطۡفَةَ عَلَقَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡعَلَقَةَ مُضۡغَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡمُضۡغَةَ عِظَٰمٗا فَكَسَوۡنَا ٱلۡعِظَٰمَ لَحۡمٗا ثُمَّ أَنشَأۡنَٰهُ خَلۡقًا ءَاخَرَۚ فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ ١٤﴾ [ المؤمنون : 12-14 ]
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে অতঃপর আমি উহাকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে, পরে শুক্র বিন্দুকে পরিনত করি আলাক এ অতঃপর আলাককে পরিনত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি পঞ্জরে অতঃপর অস্থি পঞ্জরকে ঢেকে দেয় গোসত দ্বারা অবশেষ উহাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে অতঃপর সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান [আল্ কুরআনঃ সুরা মুমিনুন ২৩: ১২-১৪।]। এখানে আমরা মানুষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আল্লাহর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে পাই। এছাড়া পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এর অসংখ্য প্রমান রয়েছে। তাই একথা দ্বীধাহীন চিত্তে বলা যায় পরিকল্পনা বৈধই নয় বরং প্রতিটি ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। তবে এর দ্বারা শুধুমাত্র জন্ম নিয়ন্ত্রন বুঝলে ভুল হবে। এর সাথে এটাও প্রমানিত হলো যে মানব সম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবার গঠণের ভূমিকা অত্যাধিক।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী প্রতিটি মানব সন্তান যদিও শিশুদের জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় আরো কম বয়সে সাবালকত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে। [জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এ্যাকশন রিসার্চ স্টাডি অনদি ইন্সটিটিউশন ডিভেলপমন্ট হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত, খৃ. ২০০২ পৃ. ৮]
ইসলামী শরীয়াতে ছেলেদের স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের হায়েজ বা ঋতুস্রাব হলে বালেগ হয়। তবে ১৫ বছর বয়স হলে স্বপ্নদোষ ও হায়েজ না হলেও বালেগ বলে গন্য করা হবে। তবে এ হিসেব চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী হবে। [মাওলান আশরাফ আলী থানভী (রাঃ), বেহেশতী জেওর, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, চকবাজার, ঢাকা, অষ্টম মুন্দ্রন খৃ. ১৯৮৫ পৃ. ১৯২।]
বর্তমান অন্যায় অত্যাচার চুরি ডাকাতি, সন্ত্রাস হত্যা ধর্ষন সহ নানা ধরনের অপরাধের সয়লাব চলছে। এ অবস্থা হতে মুক্তি পেতে হলে মানুষকে ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্থ, নৈতিক শিক্ষার প্রসার ও নীতিবান করে গড়ে তুলতে হবে। আইন বা শাসনের দ্বারা পুরাপুরি এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষের মাঝে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধির ফলে এর সাথ সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তি বর্গ সমাজের জন্য সম্পদ না হয়ে বোঝা হিসেবে পরিগনিত হচেছ সুতারং মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তাঁরা হলেন মুবাল্লিগ, ওলামায়ে কেয়াম, ইমাম-মুয়াজ্জিন, ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্ত ব্যক্তি। এ শ্রেনীর লোকদের এখনও মানুষের মাঝে গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে তাছাড়া ধর্মের প্রতি মানুষের দুর্বলতাও রয়েছে।
তাই ধর্মীয় নেতাদের মানব সম্পদ উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত করলে অধিক ফলপ্রসু হবে। যদিও ধর্মীয় নেতাগণ ব্যক্তিগত উদ্দোগেও ইমানী দায়িত্বের কারণে মানুষদেরকে কল্যানের পথে সদাসর্বদা আহবান করছেন। খুশির সংবাদ এই বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়েছে। আজ মানবতা বিধংসী এইডস রোগ থেকে বাঁচার জন্য ধর্মীয় অনুশাসন পালন করতে বলা হচেছ। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার ধর্মমন্ত্রনালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউডেশন মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্প গ্রহন করেছে। এবং মসজিদের ইমাম মুয়াজিন ও আলেমদের কে বৈষয়িক ও অতি জরুরী নানা বিষয়ের ট্রেনিং প্রদান করছেন যা মানব সম্পদ উন্নয়নে সমাজে সুদুর প্রসারী ভূমিকা রাখছে।
কারন ইমাম ও মুয়াযযিনদের রয়েছে সদা প্রস্ত্তত একটি গ্রহণযোগ্য মঞ্চ যেখান থেকে যে কোন গুরুত্ব বিষয় অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মাঝে পৌছিয়ে দেয়া সম্ভব। কেননা এদেশে রয়েছে প্রায় দুলক্ষ মসজিদ। এ মসজিদ সমূহে রয়েছে চার লক্ষ ইমাম ও মুয়াযযিন। [জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদঃ এ্যাকশন বির্সাচ স্টাডি অন দি ইন্সটিটিউশনাল ডিভেল পমেট হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত ২০০২ পৃ. ১০.১১.১৫.১৬.১৭. ১৮ ২০. ২১. ২৬. ৩০. ৩৭।] এ মঞ্চ তথা মসজিদের মেহরাব থেকে প্রদত্ত বত্তৃতা অন্য যেকোন স্থানের বক্তৃতা হতে অধিক গ্রহন যোগ্যতা রাখে।
এছাড়া নানা প্রকার সামাজিক কর্মকান্ড বিবাহ তালাক, ওয়াজ, মিলাদ, কুরবানী আকিকা ইত্যাদি বিষয়ে জনগন তাদের অতি কাছাকাছি হবার সুযোগ পায় সুতরাং এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে তারা মানুষদের নৈতিক শিক্ষায় ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্থ করে গড়ে তুলতে পারে। তখনই একটি মানুষরে উপযোগীতা ও গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে এবং তার দ্বারা কল্যান কর কর্ম সম্পাদিত হবে। তখন তাকে সম্পদ হিসাবে পরিগনিত করা হবে।
আমাদের দেশে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রচুর যারা মানব সম্পদ উন্নয়নে বড় রকমের বাধা কেননা কর্মহীনতা শক্তিমান অভাবী ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে অভাব পুরনের জন্য চুরি ডাকাতি সন্ত্রাস কালোবাজারি চাঁদাবাজী ইত্যাদির মত ঘৃনীত পথ বেচে নেয়। সুতরাং মানুষ সম্পদ উন্নয়ন করতে হলে এ সমস্ত বেকারের কর্ম সংস্থান করতে হবে। সেক্ষেত্রে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে এবং কারিগরি শিক্ষা প্রদান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষন দিতে হবে। প্রচলিত আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদেরকে নিয়ন্ত্রন এবং ইসলামী শিক্ষা প্রদানকরে ধর্মীয় অনুসাশন পালনের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। এদেশে কর্মসংস্থান না হলে বিদেশে পাঠিয়ে তাদের বেকারত্ব ঘুচাতে হবে। এবং সরকারী ঋনপ্রদান করে খাস ও পতিত জমি আবাদে নিয়োজিত করে উৎপাদনের অংশীদারীত্বের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘোচাতে হবে।
এ সনদে জন্মের অব্যাহিত পরইে শিশুকে নিবন্ধিত করণ করতে এবং জন্ম থেকে তার নামকরণ, একটি জাতীয়তা অর্জনের, এবং যতটা দ্রুত সম্ভব পিতামাতার পরিচয় জানবার ও তাদের হাতে প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার থাকবে।
শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুদের অবৈধভাবে বিদেশে পাচার এবং দেশে ফিরতে না দেয়া প্রতিহত করতে ব্যবস্থা নেবে। শিশুর স্বাধীন ভাবে ভাব প্রকাশের অধিকার থাকবে। এই অধিকারের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত নির্বিশেষে সব ধরনের তথ্য ও ধ্যান ধারনা জানতে চাওয়া, গ্রহন করা এবং অবহিত করার। স্বাধীনতা এটি মৌখিক ভাবে লিখিত মুদ্রিত কিংবা চারুশিল্পের আকারে অথবা শিশুর পছন্দেই অন্য কোন পন্থায় হতে পারে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুর চিন্তা বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুদের সংঘবদ্ধ হবার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে স্বীকার করে। শিশুর প্রতিপালন শিক্ষাদান ও বিকাশের ব্যাপারে পিতামাতা উভয়ের অভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে এই নীতির স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে শরীক রাষ্ট্রসমুহ সর্বাত্বক প্রয়াসী হবে। শিশুকে লালন পালন, শিক্ষাদান ও গড়ে তোলার প্রাথমিক দায়িত্ব হচেছ পিতামাতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন সম্মত অভিভাবকের শিশুর সর্বোত্তম স্বর্থই সবে তাদের মূল চিন্তা। শরীক রাষ্ট্রসমূহ সর্বাত্বক প্রয়াসী হবে শিশুকে লালন পালন শিক্ষাদান ও গড়ে তোলার প্রাথমিক দায়িত্ব হচেছ পিতামাতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন সম্মত অভিভাবকের শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থই হবে তাদের মূল চিন্তা। শরীক রাষ্ট্র সমূহ পিতামাতা আইনানুগ অভিভাবক অথবা শিশু পরিচর্যায় নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থাকা কালীন শিশুকে আঘাত অথবা অত্যাচার অবহেলা অমনোযোগী আচরন দুর্বাবহার অথবা শোষণ এবং যৌন অত্যাচারসহ সহ সকল ধরনের শরীরিক ও মানসিক হিংস্রতা থেকে সুরক্ষার জন্য যথোপযুক্ত আইনানুগ প্রশাসনিক, সামজিক এবং শিক্ষাগত সকল ব্যবস্থা নেবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ স্বীকার করেছে যে, মানসিক অথবা শরীরিকভাবে পঙ্গু শিশু এমন পরিবেশে পরিপূর্ণ ও সুন্দর জীবযাপন করবে সেখানে মর্যাদার নিশ্চয়তা থাকবে, আন্তনির্ভরতা বাড়বে এবং সমাজে শিশুর সক্রিয় অংশ গ্রহনের পথ সুগম হবে। শরীক রাষ্ট্রসমূহ প্রতিটি শিশুর শারিরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক, এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত জীবন মানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। শরীক রাষ্ট্রসমুহ সকল প্রকারের যৌন অপব্যবহার ও যৌন উৎপীড়ন থেকে শিশুর সুরক্ষায় সচেষ্ট হবে। এ উদ্দেশ্যে বিশেষ করে নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ রোধ করতে শরীক রাষ্ট্রগুলো জাতীয় দ্বিপক্ষীয় এবং বাহুপক্ষীয় সকল উপযোগী কার্য ব্যবস্থা নেবে।
(ক) কোন বে আইনী যৌন ক্রিয়াকর্মে লিপ্ত হতে শিশুকে প্ররোচিত কিংবা বাধ্য করা;
(খ) পতিতাবৃত্তি কিংবা অন্যান্য বেআইনী যৌন তৎপরতায় শিশুদের অপব্যহার করা। যৌন অশ্লীলতাপূর্ণ কোন ক্রিয়াকর্মে বা বিষয়বস্ত্ততে শিশুদের অপব্যবহার করা। [মসজিদ জরিপ রিপোট ইমাম প্রশিক্ষন একাডেমী ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৯৮ পৃ. ২৩|]
এছাড়া শিশু অধিকার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় এ সনদে উল্লেখ রয়েছে।
‘‘মানব সম্পদ উন্নয়নঃ একটি পর্যালোচনা’’ শীর্ষক প্রবন্ধের পর্যালোচনায় একথা প্রমাণিত হল, যে মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে হলে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন অনস্বীকার্য। (১) মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, (২) নারী অধিকার বাস্তবায়ন (৩) শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও যথার্থ পরিচর্যা (৩) শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, সর্বোপরি মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করণের মাধ্যমে মানুষকে নৈতিক ও আর্দশিক শিক্ষার দ্বারা ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে এবং সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের বাবস্থা করতে হবে। আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস মানবতার কল্যাণে সামান্যতম ভুমিকা রাখলে স্বার্থকতা খুঁজে পাব।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন