HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
হজের পরে
লেখকঃ মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্ফান
৭
হজের পর করণীয়বিদায় তাওয়াফ শেষে যেন দুনিয়ায় নবাগত শিশু, ক্ষমাপ্রাপ্ত, প্রশংসনীয় চেষ্টা, গৃহীত আমল ও মাবরুর-গৃহীত হজ (যার প্রতিদান জান্নাত) সমাপ্ত করে ফিরে ধন্য হবেন হাজীগণ ।
প্রত্যেকেই চায় হজ আদায়ের জন্য মক্কা যাবে, আল্লাহ তা‘আলাকে রাজী-খুশী করবে ও ইসলামের পাঁচটি রুকনের পঞ্চম রুকন বাস্তবায়ন করে ধন্য হবে। এ মর্মে হাজী সাহেবগণ কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করেন। যাবতীয় কষ্ট অতিক্রম করে কুপ্রবৃত্তির ওপর বিজয় লাভ করে তাকওয়ার লেবাস অর্জন করেন।
সুতরাং এ হজ আদায় শেষে নবজাতকের বেশে গুনাহ-খাতা মুক্ত দেশে ফিরে যাবেন। তারপর কি পুনরায় পূর্বের ন্যায় পাপাচারে প্রত্যাবর্তন বিবেক সম্মত হবে? অতএব, কীভাবে তিনি তার নব-ভুমিষ্ট সাদৃশ নিষ্পাপ অবস্থাকে সংরক্ষণ করবেন ও কীভাবে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন এবং সঠিক আমলে অবিচল ও অটল থাকবেন? তার জন্যই নিম্নের বিষয়গুলো সবিনয়ে নিবেদন করছি:
প্রথম: এ বছর আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাকে হজ আদায়ের তাওফীক প্রদান করে ধন্য করেছেন, তার উচিৎ মাওলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও প্রশংসা করা। কেননা তিনিই তাকে এ মহান ইবাদাত সম্পাদন করার সুযোগ ও শক্তি দান করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧﴾ [ ابراهيم : ٧ ]
“যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিবো, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৭]
দ্বিতীয়: যেভাবে হজ সফরে বেশি বেশি দো‘আ-যিকির, ইস্তেগফার-ক্ষমা প্রার্থনা ও নিজের অপারগতা তুলে ধরে কাকুতি-মিনতি পেশ করেছি, পরবর্তীতেও তার ধারাবাহিতকতা বজায় রাখব।
তৃতীয়: আমরা হজ সফরে নিশ্চিত ছিলাম যে, এটি কোনো সাধারণ ও বিনোদনমূলক সফর ছিল না; বরং তা ছিল শিক্ষা-দীক্ষার প্রশিক্ষণ কোর্স ও একটি ঈমানী সফর। যাতে আমরা চেষ্টা করেছি যাবতীয় গুনাহ-খাতা থেকে মুক্তি পাওয়ার, স্বীয়কৃত অন্যায়-অত্যাচার থেকে মুক্ত হওয়ার। হজ মাবরুর পেয়ে মা‘সুম প্রত্যাবর্তন করার।
সুতরাং হজ যেন পরিবর্তনের কেন্দ্র বিন্দু। উত্তম পথের নব উদ্যোগ, স্বভাব-চরিত্র, আদত-অভ্যাস, আকীদা-বিশ্বাস প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের শুভ পদক্ষেপ। অতএব, আমরা কি উত্তমতার দিকে পরিবর্তন হবো না? অথচ আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ﴾ [ الرعد : ١١ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে”। [সূরা রা‘দ, আয়াত: ১১]
চতুর্থ: হজ সফরে আমরা ঈমানের মজা এবং সৎকর্মের স্বাদ অনুভব করেছি, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের গুরুত্বও জেনেছি, হিদায়াতের পথে চলেছি। সুতরাং এ সবের পর আমরা কি তা পরবর্তী জীবনে জারী রাখব না? ভ্রষ্টতা থেকে বেঁচে থাকব না? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠﴾ [ فصلت : ٣٠ ]
“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফিরিশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩০]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
﴿فَٱسۡتَقِمۡ كَمَآ أُمِرۡتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطۡغَوۡاْۚ إِنَّهُۥ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١٢ ﴾ [ هود : ١١٢ ]
“অতএব, আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন, দৃঢ় থাকুন এবং সেই লোকেরাও যারা (কুফুরী থেকে) তাওবা করে আপনার সাথে রয়েছে, আর তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না; নিশ্চয় তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্যকভাবে প্রত্যক্ষ করেন”। [সূরা হূদ, আয়াত: ১১২]
পঞ্চম: হালাল অর্থে আমরা হজের সুযোগ গ্রহণ করেছি, পোশাক, পানাহার পবিত্র ও হালাল গ্রহণ করেছি এবং হালালের যে বরকত তাও উপলব্ধি করেছি। অতএব, অবশিষ্ট জীবনে তা কি ধরে রাখব না?
ষষ্ঠ: সেই ঈমানী সফর থেকে আমরা বের হয়েছি যাতে আমরা মৃত্যু ও তার যন্ত্রণা, কবর ও তার আযাব এবং কিয়ামত ও তার ভয়াবহতা খুব করে স্মরণ করেছি বিশেষ করে কাফন সাদৃশ ইহরামের গোসল ও বস্ত্র পরিধানের সময়। এগুলো কি আমরা সর্বদা স্মরণ রাখব না? যে বিষয়গুলো আমাদেরকে হকের পথে, হিদায়াতের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবে এবং মৃত্যু পর্যন্ত সৎকর্মে অবিচল ও হারাম থেকে বেঁচে থাকার প্রতি উৎসাহ দিবে।
সপ্তম: হজ সফরে আমরা স্মরণ করেছি নবীদের, অনুসরণ করেছি আমাদের পিতা ইবরাহীম খলীলের। যিনি তাওহীদের পতাকাকে সমুন্নত করেন ও ইখলাসের শিক্ষা দেন। অতএব, আমরা হজে আল্লাহর জন্য ইখলাসকে আঁকড়ে ধরি এবং আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত ও তরীকাকে অনুসরণ করি যেন আমাদের আমলগুলো গ্রহণযোগ্য হয়। অবশিষ্ট জীবন কি এমর্মে অতিবাহিত করা উচিৎ হবে না?
অষ্টম: হজের পূর্বে আমরা তাওবায় সচেষ্ট হই এবং অন্যের প্রতি যুলুম-অন্যায় ও অবিচার হয়ে থাকলে তা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি। মূলতঃ এ নীতি অবলম্বন তো সব সময়ের জন্যই।
নবম: হজের পূর্বে আমরা তাকওয়া-আল্লাহভীতি যথাযথ অবলম্বন করেছি। আমাদের অন্তরকে পাপাচার, গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রেখেছি। অনর্থক ঝগড়া-বিবাদ পরিত্যাগ করেছি, যা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নির্দেশও করেন,
﴿ٱلۡحَجُّ أَشۡهُرٞ مَّعۡلُومَٰتٞۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي ٱلۡحَجِّۗ وَمَا تَفۡعَلُواْ مِنۡ خَيۡرٖ يَعۡلَمۡهُ ٱللَّهُۗ وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ وَٱتَّقُونِ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٧﴾ [ البقرة : ١٩٧ ]
“কেউ যদি ঐ মাসগুলোর মধ্যে হজের সংকল্প করে, তবে সে হজের মধ্যে সহবাস, দুষ্কার্য ও কলহ করতে পারবে না এবং তোমরা যে কোনো সৎকর্ম কর না কেন, আল্লাহ তা পরিজ্ঞাত আছেন; আর তোমরা (নিজেদের) পাথেয় সঞ্চয় করে নাও। বস্তুতঃ নিশ্চিত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহভীতি এবং হে জ্ঞানবানগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৭]
আর তাকওয়া এমন জিনিস যা সর্বাবস্থায় জরুরি, হজের পূর্বে এবং পরেও। সুতরাং আমরা কি যাবতীয় হারাম থেকে বেঁচে থাকার, আমাদের ও আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করব না? আর তা সৃষ্টি হবে, তাঁর আদেশসমূহ মান্য করা ও নিষেধসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই। যে এমন করবে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য এমন পথ খুলে দিবেন ও এমন রুযী দান করবেন যা সে কল্পনাও করে না।
দশম: হজ পরবর্তীতে আমরা অহংকার-বড়ত্ব প্রকাশ ও রিয়া অর্থাৎ লোকদেরকে স্বীয় আমলের প্রদর্শন করে জানিয়ে শুনিয়ে দেখিয়ে নিজে তৃপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকব। কেননা এমন মানসিকতা সৎ আমল নষ্ট করে দেয়।
একাদশ: নিজেকে হজের মাধ্যমে সম্মানিত জাহির করা; তা হাজী, আলহাজ ইত্যাদি টাইটেল গ্রহণ ও প্রচার করে বা এ টাইটেলকে পুঁজি করে দুনিয়াবী স্বার্থ অর্জন করা। এ নীতি আমলটিকে নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
* হজ পরবর্তীতে দুনিয়াবী লোভ-লালসার প্রাধান্য ও পূর্ণ দুনিয়াদার হওয়া, যেমন দোষণীয়, অনুরূপ হালাল রীতি অনুযায়ী ও উপযোগী পর্যায়ে দুনিয়াবী ব্যস্ততাকে বর্জন করে সংসার ত্যাগীও হওয়া ঠিক হবে না।
দ্বাদশ: হজের সফরে আমরা বহু শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করেছি। তার মধ্যে অন্যতম হল আল্লাহর জন্য নিজেকে সোপর্দ করে দেওয়া, যেমন করেছেন পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, তার ছেলে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও তার মাতা হাজের আলাইহাস সালাম।
আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে হজের পর মৃত্যু পর্যন্ত পাপাচার থেকে বেঁচে থেকে সৎ আমলের ওপর অটল থাকার সামর্থ দান করুন। আমীন!
আপনাদের দো‘আ কামনায়
মু. আব্দুর রব আফ্ফান
arabaffan@gmail.com/www.allahhuakber.com
প্রত্যেকেই চায় হজ আদায়ের জন্য মক্কা যাবে, আল্লাহ তা‘আলাকে রাজী-খুশী করবে ও ইসলামের পাঁচটি রুকনের পঞ্চম রুকন বাস্তবায়ন করে ধন্য হবে। এ মর্মে হাজী সাহেবগণ কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করেন। যাবতীয় কষ্ট অতিক্রম করে কুপ্রবৃত্তির ওপর বিজয় লাভ করে তাকওয়ার লেবাস অর্জন করেন।
সুতরাং এ হজ আদায় শেষে নবজাতকের বেশে গুনাহ-খাতা মুক্ত দেশে ফিরে যাবেন। তারপর কি পুনরায় পূর্বের ন্যায় পাপাচারে প্রত্যাবর্তন বিবেক সম্মত হবে? অতএব, কীভাবে তিনি তার নব-ভুমিষ্ট সাদৃশ নিষ্পাপ অবস্থাকে সংরক্ষণ করবেন ও কীভাবে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন এবং সঠিক আমলে অবিচল ও অটল থাকবেন? তার জন্যই নিম্নের বিষয়গুলো সবিনয়ে নিবেদন করছি:
প্রথম: এ বছর আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাকে হজ আদায়ের তাওফীক প্রদান করে ধন্য করেছেন, তার উচিৎ মাওলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও প্রশংসা করা। কেননা তিনিই তাকে এ মহান ইবাদাত সম্পাদন করার সুযোগ ও শক্তি দান করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧﴾ [ ابراهيم : ٧ ]
“যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিবো, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৭]
দ্বিতীয়: যেভাবে হজ সফরে বেশি বেশি দো‘আ-যিকির, ইস্তেগফার-ক্ষমা প্রার্থনা ও নিজের অপারগতা তুলে ধরে কাকুতি-মিনতি পেশ করেছি, পরবর্তীতেও তার ধারাবাহিতকতা বজায় রাখব।
তৃতীয়: আমরা হজ সফরে নিশ্চিত ছিলাম যে, এটি কোনো সাধারণ ও বিনোদনমূলক সফর ছিল না; বরং তা ছিল শিক্ষা-দীক্ষার প্রশিক্ষণ কোর্স ও একটি ঈমানী সফর। যাতে আমরা চেষ্টা করেছি যাবতীয় গুনাহ-খাতা থেকে মুক্তি পাওয়ার, স্বীয়কৃত অন্যায়-অত্যাচার থেকে মুক্ত হওয়ার। হজ মাবরুর পেয়ে মা‘সুম প্রত্যাবর্তন করার।
সুতরাং হজ যেন পরিবর্তনের কেন্দ্র বিন্দু। উত্তম পথের নব উদ্যোগ, স্বভাব-চরিত্র, আদত-অভ্যাস, আকীদা-বিশ্বাস প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের শুভ পদক্ষেপ। অতএব, আমরা কি উত্তমতার দিকে পরিবর্তন হবো না? অথচ আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ﴾ [ الرعد : ١١ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে”। [সূরা রা‘দ, আয়াত: ১১]
চতুর্থ: হজ সফরে আমরা ঈমানের মজা এবং সৎকর্মের স্বাদ অনুভব করেছি, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের গুরুত্বও জেনেছি, হিদায়াতের পথে চলেছি। সুতরাং এ সবের পর আমরা কি তা পরবর্তী জীবনে জারী রাখব না? ভ্রষ্টতা থেকে বেঁচে থাকব না? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠﴾ [ فصلت : ٣٠ ]
“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফিরিশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩০]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
﴿فَٱسۡتَقِمۡ كَمَآ أُمِرۡتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطۡغَوۡاْۚ إِنَّهُۥ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١٢ ﴾ [ هود : ١١٢ ]
“অতএব, আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন, দৃঢ় থাকুন এবং সেই লোকেরাও যারা (কুফুরী থেকে) তাওবা করে আপনার সাথে রয়েছে, আর তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না; নিশ্চয় তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্যকভাবে প্রত্যক্ষ করেন”। [সূরা হূদ, আয়াত: ১১২]
পঞ্চম: হালাল অর্থে আমরা হজের সুযোগ গ্রহণ করেছি, পোশাক, পানাহার পবিত্র ও হালাল গ্রহণ করেছি এবং হালালের যে বরকত তাও উপলব্ধি করেছি। অতএব, অবশিষ্ট জীবনে তা কি ধরে রাখব না?
ষষ্ঠ: সেই ঈমানী সফর থেকে আমরা বের হয়েছি যাতে আমরা মৃত্যু ও তার যন্ত্রণা, কবর ও তার আযাব এবং কিয়ামত ও তার ভয়াবহতা খুব করে স্মরণ করেছি বিশেষ করে কাফন সাদৃশ ইহরামের গোসল ও বস্ত্র পরিধানের সময়। এগুলো কি আমরা সর্বদা স্মরণ রাখব না? যে বিষয়গুলো আমাদেরকে হকের পথে, হিদায়াতের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবে এবং মৃত্যু পর্যন্ত সৎকর্মে অবিচল ও হারাম থেকে বেঁচে থাকার প্রতি উৎসাহ দিবে।
সপ্তম: হজ সফরে আমরা স্মরণ করেছি নবীদের, অনুসরণ করেছি আমাদের পিতা ইবরাহীম খলীলের। যিনি তাওহীদের পতাকাকে সমুন্নত করেন ও ইখলাসের শিক্ষা দেন। অতএব, আমরা হজে আল্লাহর জন্য ইখলাসকে আঁকড়ে ধরি এবং আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত ও তরীকাকে অনুসরণ করি যেন আমাদের আমলগুলো গ্রহণযোগ্য হয়। অবশিষ্ট জীবন কি এমর্মে অতিবাহিত করা উচিৎ হবে না?
অষ্টম: হজের পূর্বে আমরা তাওবায় সচেষ্ট হই এবং অন্যের প্রতি যুলুম-অন্যায় ও অবিচার হয়ে থাকলে তা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি। মূলতঃ এ নীতি অবলম্বন তো সব সময়ের জন্যই।
নবম: হজের পূর্বে আমরা তাকওয়া-আল্লাহভীতি যথাযথ অবলম্বন করেছি। আমাদের অন্তরকে পাপাচার, গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রেখেছি। অনর্থক ঝগড়া-বিবাদ পরিত্যাগ করেছি, যা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নির্দেশও করেন,
﴿ٱلۡحَجُّ أَشۡهُرٞ مَّعۡلُومَٰتٞۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي ٱلۡحَجِّۗ وَمَا تَفۡعَلُواْ مِنۡ خَيۡرٖ يَعۡلَمۡهُ ٱللَّهُۗ وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ وَٱتَّقُونِ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٧﴾ [ البقرة : ١٩٧ ]
“কেউ যদি ঐ মাসগুলোর মধ্যে হজের সংকল্প করে, তবে সে হজের মধ্যে সহবাস, দুষ্কার্য ও কলহ করতে পারবে না এবং তোমরা যে কোনো সৎকর্ম কর না কেন, আল্লাহ তা পরিজ্ঞাত আছেন; আর তোমরা (নিজেদের) পাথেয় সঞ্চয় করে নাও। বস্তুতঃ নিশ্চিত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহভীতি এবং হে জ্ঞানবানগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৭]
আর তাকওয়া এমন জিনিস যা সর্বাবস্থায় জরুরি, হজের পূর্বে এবং পরেও। সুতরাং আমরা কি যাবতীয় হারাম থেকে বেঁচে থাকার, আমাদের ও আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করব না? আর তা সৃষ্টি হবে, তাঁর আদেশসমূহ মান্য করা ও নিষেধসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই। যে এমন করবে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য এমন পথ খুলে দিবেন ও এমন রুযী দান করবেন যা সে কল্পনাও করে না।
দশম: হজ পরবর্তীতে আমরা অহংকার-বড়ত্ব প্রকাশ ও রিয়া অর্থাৎ লোকদেরকে স্বীয় আমলের প্রদর্শন করে জানিয়ে শুনিয়ে দেখিয়ে নিজে তৃপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকব। কেননা এমন মানসিকতা সৎ আমল নষ্ট করে দেয়।
একাদশ: নিজেকে হজের মাধ্যমে সম্মানিত জাহির করা; তা হাজী, আলহাজ ইত্যাদি টাইটেল গ্রহণ ও প্রচার করে বা এ টাইটেলকে পুঁজি করে দুনিয়াবী স্বার্থ অর্জন করা। এ নীতি আমলটিকে নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
* হজ পরবর্তীতে দুনিয়াবী লোভ-লালসার প্রাধান্য ও পূর্ণ দুনিয়াদার হওয়া, যেমন দোষণীয়, অনুরূপ হালাল রীতি অনুযায়ী ও উপযোগী পর্যায়ে দুনিয়াবী ব্যস্ততাকে বর্জন করে সংসার ত্যাগীও হওয়া ঠিক হবে না।
দ্বাদশ: হজের সফরে আমরা বহু শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করেছি। তার মধ্যে অন্যতম হল আল্লাহর জন্য নিজেকে সোপর্দ করে দেওয়া, যেমন করেছেন পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, তার ছেলে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও তার মাতা হাজের আলাইহাস সালাম।
আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে হজের পর মৃত্যু পর্যন্ত পাপাচার থেকে বেঁচে থেকে সৎ আমলের ওপর অটল থাকার সামর্থ দান করুন। আমীন!
আপনাদের দো‘আ কামনায়
মু. আব্দুর রব আফ্ফান
arabaffan@gmail.com/www.allahhuakber.com
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন