মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর উপর আমলের আবশ্যকতা আর তার অস্বীকারকারীর কাফের হওয়া
লেখকঃ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.
৭
সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা ওয়াজিব হওয়া বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের বর্ণনা:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/275/7
রাসূলের সুন্নাত (তথা তাঁর কথা, কাজ, অনুমোদন, শারীরিক ও গুণগত বৈশিষ্ট্য) এর যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা ফরয হওয়ার বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের কিছু কথা এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
যেমন, বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আরবের কিছু লোক মুরতাদ হল। আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহসিকতার সাথে বললেন, আল্লাহর কসম যে ব্যক্তি সালাত ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তার কথা শোনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনি তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أمِرْتُ أَنْ أقَاتِلَ النَّاسَ حَتى يَقُولُوا لا إِلهَ إِلا الله فَإِذا قَالوها عَصَمُوا مِني دِمَاءَهُم وَأَموَالَهُم إِلا بحقَّها »
“আমাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক ইলাহ নেই’ একথার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত মানুষের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যখন সে তা বলবে, তখন তার জান মাল নিরাপদ হয়ে যাবে, তবে এ কালেমার হক বা দাবী অনুযায়ী হলে সেটা ভিন্ন কথা”।
তার কথা শোনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘যাকাত কি আল্লাহর হক নয়? আল্লাহর কসম যদি একটি রশিও যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যাকাত হিসেবে তারা প্রদান করত তা দিতে যদি কেউ অস্বীকার করে, আমি তা দিতে অস্বীকার করার কারণে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।’ তারপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি বুঝতে পারলাম, আল্লাহ তা‘আলা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অন্তরকে যুদ্ধের জন্য খুলে দিয়েছেন এবং এটিই হক। সাহাবীগণ তাঁর আহ্বানে সাড়া দিলেন, তারা মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তাদের পুনরায় ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনেন। আর যারা মুরতাদ হওয়ার পর সেটার উপর অবিচল থেকেছিল তাদের তারা হত্যা করেছিলেন। এ ঘটনার মধ্যে সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা জরুরি হওয়ার সু-স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
একজন দাদী আবু বকরের নিকট এসে সে তার উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে কোনো অংশ বর্ণিত হয় নি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য কোনো অংশ বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে আমি মানুষকে জিজ্ঞাসা করব, তারপর তিনি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, তখন একজন সাহাবী সাক্ষ্য দিলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাদিকে ‘সুদুস’ তথা ছয় ভাগের একভাগ দিয়েছেন। তারপর তিনি দাদির জন্য ‘সুদুস’ বা ছয় ভাগের একভাগের ফায়সালা প্রদান করেন।
অনুরূপভাবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার আমেল তথা কর্মকর্তাদের মানুষের মাঝে বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তারা যেন প্রথমে আল্লাহর কিতাব থেকে ফয়সালা গ্রহণ করে, যদি আল্লাহর কিতাবে ফায়সালা খুঁজে না পায়, তারা যেন আল্লাহর রাসূলের সূন্নাহ্ দ্বারা ফায়সালা করে।
তদ্রূপ যখন গর্ভের সন্তানকে নষ্ট তথা কারো আঘাতজনিত কারণে গর্ভপাত হয়ে মৃত অবস্থায় প্রসব হয়ে গেলে সে সন্তানের রক্তপণের বিধান সম্পর্কে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কোনো সমাধান না থাকাতে তিনি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করেন। তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মুগীরা ইবনে শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু দাড়িয়ে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে একটি দাস বা দাসী স্বাধীন করে দেওয়ার ফায়সালা করেছিলেন। এটা শোনার উপর ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা অনুসারে ফয়সালা দিয়েছিলেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর ঘরে মহিলার ইদ্দত পালন করার বিষয় ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অজানা থাকাতে ফায়সালা দেয়া তার নিকট কঠিন মনে হল, তখন ফুরাই‘আহ্ বিনতে মালেক ইবন সিনান রাদিয়াল্লাহু আনহা, যিনি আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বোন ছিলেন, তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে স্বামীর ঘরে ইদ্দত পালন করার নির্দেশ দেন। তারপর ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মহিলার কথা অনুযায়ী বিষয়টির ফায়সালা করেন।
অনুরূপভাবে ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কর্মকর্তা ওলিদ ইবন ‘উকবার উপর মদ পান করার অপরাধের হদ কায়েম করার ফায়সালা সুন্নাহ্ দ্বারাই করেছিলেন।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌঁছল যে, ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হজ্জে তামাত্তু করতে নিষেধ করেন তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হজ ও ওমরা উভয়েরই এহরাম বাঁধেন এবং বলেন, ‘আল্লাহর রাসূলের সূন্নাহকে আমি কারো কথায় ছাড়বো না।’
এক লোক আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথা দ্বারা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাসের নিকট তামাত্তু হজের উপর ইফরাদ হজের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার দলীল পেশ করলে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘আমি আশংকা করছি তোমাদের উপর আসমান থেকে পাথরের বৃষ্টির মত বিপর্যয় নেমে আসার। আমি তোমাদেরকে বলি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আর তোমরা বল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন।’ যদি সুন্নতের বিপরীতে আবু বকর ও ওমরের কথা দিয়ে দলীল পেশ করলে, তার উপর শাস্তির আশংকা করা হয়, তাহলে যারা আবু বকর ও ওমর থেকে নীচের লোক তাদের কথায় অথবা নিজের মতামত ও ইজতিহাদের ভিত্তিতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নাহকে যারা ছেড়ে দেন তাদের পরিণতি কি হতে পারে?!
যখন কিছু লোক আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের নিকট সুন্নাহ্ বিষয়ে বিতর্ক করল, তখন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বললেন, আমরা কী ওমরের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশিত নাকি রাসূলের সুন্নার আনুগত্য করার প্রতি নির্দেশিত?
ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা যখন হাদিস আলোচনা করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি আমাদেরকে আল্লাহর কিতাব থেকে বর্ণনা করুন। এ কথা শোনে তিনি খুব ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বলেন, সুন্নাহ্ আল্লাহর কিতাবেরই ব্যাখ্যা। যদি সুন্নাহ না হত, তাহলে আমরা জোহরের সালাত চার রাকাত, মাগরিবের সালাত তিন রাকাত, ফজরের সালাত দুই রাকাত জানতে পারতাম না। যাকাতের বিধান বিস্তারিত জানতে পারতাম না এবং শরিয়তের অন্যান্য বিষয়গুলো জানার সুযোগ হত না।
বস্তুত রাসূলের সুন্নাহর যথাযথ সম্মান, তার উপর আমল ফরয হওয়া ও তার বিরোধিতা করার পরিণতি বিষয়ে সাহাবীগণ থেকে অনেক বর্ণনা ও ভাষ্য এসেছে। যেমন,
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন এ হাদিস বর্ণনা করেন,
«لا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ »
“তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে (মহিলাদেরকে) মসজিদে গমনে বাধা দিও না” [বুখারি, জুম‘আ অধ্যায়, হাদিস: ৮৫৮, মুসলিম, সালাত অধ্যায়, হাদিস: ৪৪২, তিরমিযী, জুম‘আ অধ্যায়, হাদিস: ৫৭০, নাসায়ী, মাসাজেদ অধ্যায়, ৭০৬, আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, হাদিস: ৫৬৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬, আহমদ: ১৬/২, দারেমী, ৪৪২।] তখন তার কোনো এক ছেলে বলে বসল, ‘আল্লাহর কসম, আমরা তাদের মসজিদে গমনে বাধা দিব।’ তার কথা শোনে আব্দুল্লাহ খুব ক্ষুব্ধ হলেন এবং তাকে কঠিন বকা দিলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে বলছি আল্লাহর রাসূল বলেছেন আর তুমি বলছ, ‘আমরা অবশ্যই তাদের বাধা দেব।’ (তোমার এ কথা বলা কখনই ঠিক হয়নি।)
রাসূলের সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কোনো এক আত্মীয়কে দেখলেন যে সে পাথরকুচি নিক্ষেপ করছে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
«نهى الخذف وقال إٍنه لا يصيد صيدًا ولا ينكأ عدوا ولكنه يكسر السن ويفقأ العين »
“পাথরকুচি নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, ‘এর দ্বারা কোনো শিকারী শিকার করা যায় না এবং কোনো দুশমনকে আঘাত করা যায় না বরং এতে মানুষের দাত ভাঙ্গা হয় এবং চোখ নষ্ট করা হয়” [বুখারি, আদব অধ্যায় হাদিস: ৫৮৬৬, মুসলিম, শিকার ও জবেহ অধ্যায় হাদিস: ১৯৫৪, নাসায়ী কাসামাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৮১৫, ইবনে মাজাহ, শিকার অধ্যায়, ৩২২৭, আহমদ, হাদিস ৫৬/৫, দারেমী, মুকাদ্দিমা, হাদিস: ৪৪০] তারপর তিনি দেখতে পেলেন যে তার সে আত্মীয় আবারও পাথরকুচি নিক্ষেপ করছে, তখন তিনি বললেন, ‘আমি তোমার সাথে কখনোই কথা বলব না। আমি তোমাকে খবর দিলাম আল্লাহর রাসূল পাথর নিক্ষেপ করেছেন তারপরও তুমি পাথর নিক্ষেপ করলে?
ইমাম বাইহাকী রহ. আইয়ুব সাখতিয়ানি রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে সুন্নাহ্ থেকে কোনো হাদীস শোনাও, তখন যদি সে বলে, তুমি এটা রেখে আমাকে কুরআন থেকে শোনাও, তাহলে মনে রাখবে যে নিঃসন্দেহ লোকটি গোমরাহ তথা পথভ্রষ্ট।
ইমাম আওযা‘ঈ রহ. বলেন, সুন্নাহ্ হলো আল্লাহর কিতাবের বিচারক অথবা সুন্নাহ্ আল্লাহর কিতাবের শর্তমুক্তভাবে বর্ণিত বিধানসমূহের জন্য শর্ত আরোপকারী অথবা সুন্নাহ এমন সব বিধান নিয়ে এসেছে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যেমন, আল্লাহর বাণী-
“আর আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন; যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে।” [সূরা আন-নাহল: ৪৪]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-
«أَلا إِني أوتِيتُ الكِتابَ ومثلَه مَعَهُ »
মনে রাখবে, আমাকে কিতাব দেয়া হয়েছে, এবং তার সাথে তার মত আরও দেয়া হয়েছে। [তিরমিযী, ইলম অধ্যায়, হাদিস ২৬৬৪, আবুদ দাউদ, সূন্নাহ আধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৪, ইবন মাজাহ, মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১২।] তা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমাম বাইহাকী রহ. আমের আশ-শা‘বী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি কতক লোককে বলেন, إِنما هلكتم في حين تركتم الآثار ‘তোমরা তো তখনই ধ্বংস হয়েছ যখন তোমরা ভাষ্য বা নির্দেশনা ছেড়ে দিয়েছ’ এ কথা দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে যখন তোমরা সহীহ হাদিসসমূহ ছেড়ে দিয়েছ তখনই তোমরা ধ্বংস হয়ে গেলে।
ইমাম বাইহাকী রহ. আওযায়ী রহ. থেকে আরও বর্ণনা করেন, তিনি তার কতক সাথীকে বলেন, যখন তোমাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো হাদিস পৌঁছে, তখন এর বিপরীত অন্য কোনো কথা বলা থেকে তুমি সম্পূর্ণ বিরত থাক। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে মুবাল্লিগ বা প্রচারকারী ছিলেন। [তার কথাই আল্লাহর কথা]
ইমাম বাইহাকী রহ. বিশিষ্ট ইমাম সূফিয়ান ইবন সা‘ঈদ আস-সাওরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, প্রকৃত ইলম হচ্ছে, হাদিসের ইলম।
ইমাম মালেক রহ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দিক ইশারা করে বলেন, একমাত্র এ কবরওয়ালা ছাড়া আমরা সবাই বিতর্কিত। আমরা প্রত্যাখ্যানকারী ও প্রত্যাখ্যাত। (অর্থাৎ এ কবরবাসী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম নয়, তার কোনো কথা বাদ দেওয়া যাবে না)
ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত কোনো হাদিস সামনে আসে তখন তা মাথা ও চোখের উপর।
ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, যখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণনা করা সত্ত্বেও যদি সেটা গ্রহণ না করি, তবে মনে রাখবে, আমি তোমাদের সাক্ষ্য করে বলছি, আমার বিবেক নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন কোনো কথা বলি, আর হাদিস আমার কথার বিপক্ষে হয়, তাহলে আমার কথাকে তোমরা দেয়ালের ওপর নিক্ষেপ কর।
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. তার কোনো কোনো সাথীকে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমার তাকলীদ করো না, মালেক রহ. ও শাফেয়ী রহ. এরও তাকলীদ করো না, তোমরা আমরা যেখান থেকে গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে গ্রহণ কর।
তিনি আরও বলেন, আমি সে সব লোকদের বিষয়ে আশ্চর্য বোধ করি, যারা হাদিসের সনদ সম্পর্কে জানে, হাদিসটি সহীহ কিনা তাও জানে, তারপরও সুফিয়ানের নিকট যায় তার মতামতের জন্য। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে।” [সূরা নূর, আয়াত: ৬৩] তিনি বলেন, তোমরা কি জান ফিতনা তথা বিপর্যয় কি? ফিতনা হল, আল্লাহর সাথে শির্ক করা, হতে পারে যখন কোনো ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো কথাকে প্রত্যাখ্যান করবে, তখন তার অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি বক্রতা ঢেলে দেয়া হবে, তখন সে ধ্বংস হবে।
ইমাম বাইহাকী রহ. বিশিষ্ট তাবে‘ঈ মুজাহিদ ইবন জাবার রহ. হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
“অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট [সূরা আন-নিসা: ৫৯]” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আল্লাহর দিকে প্রত্যার্পণ করার অর্থ, আল্লাহর কিতাবের দিক প্রত্যর্পণ করা আর আল্লাহর রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করার অর্থ, রাসূলের সুন্নতের দিক প্রত্যার্পণ করা।
ইমাম বাইহাকী রহ. যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের পূর্বের আলেমগণ বলতেন, সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে মুক্তি পাওয়া।
আল্লামা ইবনে কুদামাহ রহ. স্বীয় ‘রাওদাতুন নাযের’ গ্রন্থে উসুলুল আহকাম তথা ‘শরীয়তের বিধি-বিধানের মূল উৎস’ বর্ণনায় যা লিখেছেন তার সরাসরি ভাষ্য হচ্ছে, “দলীল-প্রমাণাদি গ্রহণের দ্বিতীয় মূল উৎস হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা প্রামাণ্য হওয়ার দলীল হচ্ছে, তার মু‘জিযাসমূহ; সেগুলোর তার সত্যবাদিতার উপর প্রমাণ বহন করছে। আর আল্লাহ তা‘আলা তার অনুসরণ-অনুকরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার আদেশের বিরোধিতা করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।’
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩।]-এর তাফসীরে বলেন, এখানে ‘তার নির্দেশের’ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথ, তার অনুসৃত পদ্ধতি, তার দেখানো নিয়ম, তার সুন্নাহ্ ও তার শরীয়ত বুঝানো হয়েছে। সুতরাং সকল কথা ও কর্ম তার কথা ও কর্মের সাথে পরিমাপ করা হবে, অতঃপর যে কথা ও কর্ম তার কথার সাথে মিলবে তা গ্রহণ করা হবে আর যে কথা ও কর্ম তার সাথে মিলবে না তা যে বলেছে বা করেছে তার উপর প্রত্যাখ্যান করা হবে, সে যেই হোক না কেন। যেমন, বুখারি মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদিসের কিতাবসমূহে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করে, যার উপর আমার নির্দেশনা নাই তা প্রত্যাখ্যাত”। [বুখারি সুলাহ অধ্যায়, হাদিস: ২৫৫০, মুসলিম বিচার ফায়সালাহ অধ্যায়, হাদিস: ১৭১৮, আবু দাউদ সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস, ৪৬০৬, ইবন মাজাহ; মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১৪, আহমদ, হাদিস: ২৫৬/৬] তাহলে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে বা গোপনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত দ্বীনের বিরোধিতা করে, সে যেন ভয় করে এবং সতর্ক হয় যে أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ তাকে ফিতনা পেয়ে বসবে অর্থাৎ কুফর, নেফাক বা বিদআত তার অন্তরে ঢেলে দেয়া হবে অথবা أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে; সেটা হতে পারে দুনিয়াতেই যেমন, হত্যা অথবা শাস্তি প্রয়োগ অথবা বন্দীত্ব ইত্যাদি অবমাননাকর জীবন, যেমনটি ইমাম আহমদ রহ. বর্ণিত হাদীসে এসেছে, যা মুহাদ্দিস আবদুর রাযযাক বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তাকে মা‘মার হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি হামাম ইবন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এ হাদিসটি আমাদেরকে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আমার দৃষ্টান্ত ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালালো, তারপর যখন আগুনের আশ-পাশ আলোকিত হল, তখন কীট-পতঙ্গ, পোকা-মাকড় যেগুলো আগুনের মধ্যে ঝাপ দেয়, তাতে তারা পড়তে আরম্ভ করল। আর লোকটি তাদের বাধা দিল, কিন্তু তারা তাকে পরাভূত করে তাতেই ঝাঁপ দিচ্ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার দৃষ্টান্ত এ লোকটির মতই; আমি তোমাদের কোমর ধরে তোমাদের আগুন থেকে দূরে সরাচ্ছি, বলতে থাকছি, আগুন! আগুন! তা থেকে দূরে থাক, কিন্তু তোমরা আমাকে পরাভূত করে তাতেই ঝাঁপ দিচ্ছ। [বুখারি, রিকাক অধ্যায়, হাদিস: ৬১১৮, মুসলিম, ফাযায়েল অধ্যায়, হাদিস: ২২৪৪, তিরমিযী, আমসাল অধ্যায়, হাদিস: ২৮৭৪, আহমদ, হাদিস: ৩১২/২] বুখারি ও মুসলিম হাদিসটিকে মুহাদ্দিস আব্দুর রাযযাক কর্তৃক বর্ণিত হাদিস হিসেবে সংকলন করেন।’
তোমরা জেনে রাখ! -আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করুন- যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস -চাই তা তার কথা হোক বা কর্ম হোক- দলীল হওয়াকে অস্বীকার করল, সে কুফরি করল, সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে গেল। তার হাশর ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে হবে অথবা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কোনো কাফের দলের সাথে হবে।’
সুন্নতের গুরুত্ব, সুন্নতের উপর আমল করা বাধ্যতামূলক হওয়া এবং সুন্নতের বিরোধিতা করা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার বিষয়ে সাহাবী, তাবে‘ঈ ও তাদের পরবর্তী আহলে ইলম থেকে অসংখ্য বাণী বর্ণিত রয়েছে। আশা করি, আমরা এখানে যে সব আয়াত, হাদিস ও বাণী উল্লেখ করেছি, তা হকের অনুসন্ধানকারীর জন্য যথেষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য কামনা করি এমন সব আমলের তাওফীক যা তাঁকে খুশি করে আর নিরাপত্তা কামনা করি তার বিক্ষুব্ধ হওয়া কারণসমূহ হতে। আর আল্লাহ কাছে আমাদের কামনা তিনি যেন আমাদের সবাইকে সঠিক পথের হিদায়াত দেন। নিশ্চয় তিনি শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।
وصلى الله وسلم على عبده ورسوله نبينا محمد وعلى آله وأصحابه وأتباعه بإحسان .
আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/275/7
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।