HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কুরআনুল কারিমে সম্পদ ও নফসের জিহাদ একসাথে উল্লেখ করার হিকমত

লেখকঃ ড. তাওফিক আলী যাবাদী

আলেমদের দৃষ্টিতে জিহাদের ক্ষেত্রে নফসের আগে সম্পদের উল্লেখ করার হিকমত :
আল্লামা আলুসি –রাহিমাহুল্লাহ- বলেন : “হয়তো নফসের আগে সম্পদের জিহাদ উল্লেখ করার কারণ এই যে, সচরাচর সম্পদের জিহাদই বেশী সংঘটিত হয়, সম্পদের দ্বারাই জিহাদের অধিক প্রয়োজন মিটানো হয়, যেমন সম্পদের জিহাদ ব্যতীত নফসের জিহাদ কল্পনা করা যায় না। কেউ বলেছেন : বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য করেই এসব আয়াতে আগে সম্পদ ও পরে নফসের জিহাদ উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন জিহাদের প্রস্তুতির জন্য সম্পদের প্রয়োজন আগে হয়, অতঃপর হয় নফসের প্রয়োজন”। {আল-আলুসি : (৭/১৪১)}

আবূ হাইয়ান –রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন : “নফসের আগে সম্পদ উল্লেখ করার কারণ এই যে, জিহাদকারী তথা মুজাহিদ হচ্ছে বিক্রেতা, {সে নিজের সম্পদ ও জান বিক্রি করে আল্লাহর সন্তুটি ও জান্নাত লাভকারী} তাই নফসের উল্লেখ পরে করা হয়েছে, যেহেতু নফসের খরচে রয়েছে অধিক কষ্ট ও কঠিন পরীক্ষা, যা একজন বিক্রেতা সর্বশেষ তদবির ব্যতীত হাত ছাড়া করতে চায় না। আর ক্রেতা {আল্লাহ তাআলা} কেনার সময় প্রথম নফসের উল্লেখ করেছেন, {সূরা তাওরা : ১১১} এ দিকে ইঙ্গিত করার জন্য যে, তার আগ্রহ নফসের দিকেই অধিক ও প্রচুর, কারণ ক্রেতা সব সময় উত্তম ও উৎকৃষ্ট বস্তুর প্রতিই আগ্রহী থাকে”। {আল-বাহরুল মুহিত : (৪/২৪২)}

(আল্লামা যারকাশী) সাহেবুল বুরহান –রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন : “সম্পদের উল্লেখ আগে করার কারণ এই যে, জিহাদ সর্ব প্রথম সম্পদের ত্যাগ চায়, এ হিসেবেই সম্পদের উল্লেখ নফসের আগে করা হয়েছে”। {আল-বুরহান : (৩/২৫৬)}

ইব্‌নুল কাইয়্যিম –রাহিমাহুল্লাহ- নফসের আগে সম্পদের জিহাদ উল্লেখ করার হিকমত সম্পর্কে বলেন: “প্রথমত : এটা প্রমাণ করে যে, সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ করা ওয়াজিব, যেরূপ ওয়াজিব নফসের দ্বারা জিহাদ করা। শত্রু ঝাঁপিয়ে পড়লে সক্ষম ব্যক্তির উপর নিজের নফস নিয়ে বের হওয়া ওয়াজিব, আর যদি অক্ষম হয় তাহলে তার উপর ওয়াজিব সম্পদ দ্বারা সৈন্য ভাড়া করা।

যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থা, সাহাবীগণের জীবনী ও জিহাদের সময় তাদের সম্পদ খরচ করার অবস্থা চিন্তা ও গবেষণা করবেন, তারা এ কথার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। অধিকন্তু সম্পদের উল্লেখ আগে করে তাদের ধারণাও খণ্ডন করা হয়েছে— যারা বলে, নফসের জিহাদে অক্ষম ব্যক্তি সম্পদের জিহাদে অংশ গ্রহণে সক্ষম হলে তার উপর তা ওয়াজিব নয়। তাই যেখানে জিহাদের উল্লেখ করা হয়েছে সম্পদের কথা আগে বলা হয়েছে। তাই কীভাবে বলা হয় : নফসের জিহাদে অক্ষম ব্যক্তি সম্পদের জিহাদের সাড়া দেবে না?

যদি বলা হয় : নফসের জিহাদের চেয়ে সম্পদের জিহাদ বড় ও মহান, তাহলে এটাও তাদের কথার চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ— যারা বলে নফসের জিহাদে অক্ষম ব্যক্তির উপর সম্পদের জিহাদ ওয়াজিব হবে না। তাদের ভ্রান্তি স্পষ্ট।

এভাবেই আমাদের সামনে নফসের আগে সম্পদ উল্লেখ করার অনেক ফায়দা স্পষ্ট হয়।

দ্বিতীয় ফায়দা : সম্পদ নফসের প্রিয়তম ও প্রেমাষ্পদ বস্তু। এ সম্পদ অর্জন করার জন্য ব্যক্তি নিজেকে ব্যয় করে, ঝুকি নেয়, কখনো মৃত্যুর সম্মুখীন হয়— যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সম্পদই তার প্রিয়তম ও প্রেমাষ্পদ বস্তু। তাই আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় মুজাহিদদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে জিহাদে তাদের প্রিয়মত ও প্রেমাষ্পদ বস্তু ব্যয় করে। কারণ তাদের নিকট আল্লাহর নৈকট্য এবং তার প্রিয় হওয়াই সবচেয়ে বেশী পছন্দ, তাদের জন্য আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রিয় বস্তু এ জগতে আর নেই। যখন তারা আল্লাহর মহব্বতে তাদের প্রিয় বস্তু খরচ করল, তাদেরকে এর চেয়ে উন্নত পরবর্তী স্তরে উন্নীত করল, অর্থাৎ তার জন্যে তাদের নফস ত্যাগ করা, এটাই মহব্বতের সর্বশেষ স্তর। কারণ মানুষের নিকট তার নফসের চেয়ে অধিক প্রিয় বস্তু আর নেই। যখন সে কোন জিনিস পছন্দ করে, তার জন্য সে নিজের প্রিয় বস্তু সম্পদ ও নফস খরচ করে। যখন নফস ত্যাগ করার প্রয়োজন হয়, সে তার প্রিয় বস্তুকে প্রধান্য দিয়ে নফস পর্যন্ত ত্যাগ করে। সাধারণত এমনই ঘটে, এটাই মানুষ ও প্রাণীর স্বভাব। এ জন্য দেখি মানুষ তার সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তানের পক্ষ থেকে প্রতিহত ও মোকাবিলা করে, যখন সে পরাজয় অনুভব করে, তার জীবন ও নফসের আশঙ্কা করে, তখন সে পলায়ন করে ও তাদেরকে ত্যাগ করে। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের থেকে এটা পছন্দ করেন না, বরং তাদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তারা তাঁর জন্য নিজেদের নফস পর্যন্ত ত্যাগ করে, প্রিয় বস্তু তথা সম্পদ ত্যাগ করার পরবর্তী ধাপে। অধিকন্তু নফস ত্যাগ করা সর্বশেষ স্তর, কারণ বান্দা প্রথমে সম্পদ খরচ করে জান রক্ষা করে, যখন সম্পদ শেষ হয়ে যায় তখন নিজের নফসই ত্যাগ করে। তাই জিহাদের ক্ষেত্রে নফসের আগে সম্পদের উল্লেখ করা বাস্তবতারই প্রতিধ্বনি। আর আল্লাহ তাআলার বাণী :

إنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْـمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم . ( التوبة : ١١١ )

“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন”। [সূরা তাওবা: ১১১] এখানে আগে নফস উল্লেখ করাই যুক্তিযুক্ত, কারণ এটাই মূল পণ্য, এর উপরই বেচাকেনার চুক্তি; এ পণ্যই তার রব গ্রহণ করতে চান; এ পণ্যই তিনি নিজের জন্য কেনার প্রস্তাব করেছেন; যার মূল্য নির্ধারণ করেছেন তিনি নিজের সন্তুষ্টি ও স্বীয় জান্নাত। অতএব বেচাকেনার চুক্তি দ্বারা এ নফসই মূল উদ্দেশ্য, আর সম্পদ হচ্ছে তার অনুগামী। ক্রেতা যখন নফসের মালিক হবে, তখন সে এমনিতেই তার সম্পদের মালিক বনে যাবে। কারণ গোলাম ও তার সম্পদের মালিক তার মুনিব, তার কোন অধিকার নেই এতে। অতএব সত্যিকার মালিক যখন নফসের মালিক হবেন, তখন তিনি তার সম্পদ ও যাবতীয় বস্তুর মালিক হবেন”। {বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ : (পৃ.৮৬)}

আল্লামা শানকিতি –রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন : “জিহাদের মূল হচ্ছে প্রচেষ্টা ও শক্তি ব্যয় করা, আর সম্পদ হচ্ছে যুদ্ধের মেরুদণ্ড, সৈন্যবাহিনীর নির্ভরতার প্রতীক। এটা অস্ত্র দ্বারা জিহাদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। সম্পদের দ্বারা অস্ত্র কেনা যায়, ভাড়া করা যায় সৈন্য;, যেমন শত্রু দেশের সাথে যুদ্ধের সময় বন্ধু দেশ থেকে সৈন্য ভাড়া করা হয়। সেনাবাহিনী তৈরী করার জন্যও সম্পদের প্রয়োজন হয়। এ জন্যই যখন জিহাদের নির্দেশ আসে তখন আল্লাহ তাআলা অসুস্থ ও দুর্বলদের থেকে তা মওকুফ করে দেন, অনুরূপ মওকুফ করে দেন গরিবদের থেকে, যারা নিজেদের প্রস্তুত করার মত সামান্য অর্থ-সম্পদের অধিকারী ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদের ক্ষমা করেন, কারণ তার কাছেও তাদের সজ্জিত করার কোন সামর্থ ছিল না। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلا عَلَى الْمَرْضَى وَلا عَلَى الَّذِينَ لا يَجِدُونَ مَا يُنْفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِنْ سَبِيلٍ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ** وَلا عَلَى الَّذِينَ إذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوْا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلاَّ يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ . ( التوبة : 91-92)

“কোন দোষ নেই দুর্বলদের উপর, অসুস্থদের উপরও যারা দান করার মত কিছু পায় না তাদের উপর ... আর তাদের উপরও কোন দোষ নেই, যারা ‎‎ তোমার কাছে আসে, যাতে তুমি তাদের বাহন ‎‎ জোগাতে পার। তুমি বললে, ‘আমি তোমাদেরকেবহন করানোর জন্য কিছু পাচ্ছি না, তখন তারাফিরে গেল, তাদের চোখ অশ্র“তে ভেসে যাওয়াঅবস্থায়, এ দুঃখে যে, তারা পাচ্ছে না এমন কিছুযা তারা ব্যয় করবে”। [সূরা তাওবা : ৯১-৯২]

আরো একটি বিবেচনা : যারা অস্ত্র দ্বারা যুদ্ধ করতে পারে না, যেমন নারী ও দুর্বলরা তারা সম্পদ দ্বারা যুদ্ধ করবে, যেমন যায়েদ ইব্‌ন খালেদ –রাদিয়াল্লাহ আনহু- থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

مَنْ جَهَّزَ غَازِياً فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَدْ غَزَا، وَمَنْ خَلَفَ غَازِياً فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا .

“আল্লাহর রাস্তায় কোন মুজাহিদকে যে সজ্জিত করল, যে জিহাদে অংশ গ্রহণ করল, যে কোন মুজাহিদের পারিবারকে সুন্দরভাবে দেখাশোনা করল, সে জিহাদে অংশ গ্রহণ করল”। {সহিহ আল-বুখারি : হাদিস নং-(২৬৩১)}

আর দ্বিতীয় আয়াত (সূরা তাওবা-১১১) : এটা হচ্ছে অদল-বদল, পেশ করা ও গ্রহণ করার স্থান অথবা বলা যায় দরাদরির স্থান, তাই নফস আগে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ জীবিত ব্যক্তির নিকট এটাই সবচেয়ে মূল্যবান, তার মোকাবিলায় রাখা হয়েছে জান্নাত, কারণ বিনিময় হিসেবে যা দেয়া যায়, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে মূল্যবান। এ বিষয়ে খুব সুন্দর বলা হয়েছে নিচের কবিতায় :

أُثامِـــنُ بالنفس النفيسةِ ربَّها ... وليس لها في الخَلْقِ كلِّهـم ثمن

بها تملك الأخرى؛ فإن أنا بعتُها ... بشيء من الدنيا؛ فذاك هو الغبـن

لئن ذهبتْ نفسٌ بدنيــا أصيبها ... لقد ذهبت نفسي وقَدْ ذهب الثمَن

আমি মূল্যবান নফসের মূল্য নির্ধারণ করেছি তার রবের সাথে,

পুরো সৃষ্টিকুল যে নফসের মূল্য হতে পারে না;

এর দ্বারা সে আখেরাতের মালিক হবে, আর আমি যদি নফস বিক্রি করি

দুনিয়ার কোন জিনিসের মোকাবিলায়, তাহলে এটাই তো ক্ষতি;

যদি একটি নফস অর্জিত দুনিয়ার কারণে চলে যায়,

তাহলে আমার নফস গেল, গেল আমার মূলধনও।

এখানে আল্লাহর সাথে ব্যবসা হচ্ছে, তার উপর ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা এবং সম্পদ, নফস ও নেক আমল দ্বারা জিহাদ করা। যেমন বলা হয়েছে :

فاعمل لنفسك قبل الموت مجتهداً؛ ... فإنما الربح والخسران في العملِ

তুমি মৃত্যুর পূর্বে নিজের জন্য যথাসাথ্য আমল কর,

কারণ লাভ বা ক্ষতি আমলের মধ্যেই।

{আদওয়াউল বায়ান : (৮/২৪৮)}

আবু বকর জাযায়েরি বলেন : “আল্লাহ তাআলা প্রথমে সম্পদের জিহাদের প্রতি উৎসাহী করেছেন, যেহেতু সম্পদের জিহাদই আগে হয়, পরবর্তীতে হয় নফসের জিহাদ”। {আয়সারুত তাফাসির: (১৩৪)}

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন