মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সূরাটিতে দু’টি বিষয়বস্ত্ত উল্লেখিত হয়েছে। ১- ক্বিয়ামতের দিন অবশ্যই মানুষ তার কর্মফল জানতে পারবে (১-১৫)। ২- মানুষের জীবন কষ্টে ও আনন্দের মধ্যে পরিবর্তনশীল থাকবে। অতঃপর চূড়ান্ত বিচারে ক্বিয়ামতের দিন সে জান্নাতী অথবা জাহান্নামী হবে (১৬-২৫)।
তাফসীর :
(১) إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ ‘যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে’। অর্থ أذكر يوم تفطرت السماء و انصدعت ‘স্মরণ কর যেদিন আকাশ চূর্ণ হবে ও বিদীর্ণ হবে’। এখানে ইস্রাফীল কর্তৃক শিঙ্গায় ফুঁক দেবার পরবর্তী অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। এর দ্বারা আকাশ যে শক্ত, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ বলেন, وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا ‘আর আমরা নির্মাণ করেছি তোমাদের উপর শক্ত সপ্তাকাশ’ (নাবা ৭৮/১২)।
(২) وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ ‘এবং তার পালনকর্তার আদেশ পালন করবে। আর এটাই তার কর্তব্য’। অর্থ استمعت وأطاعت لربها وحق لها أن تطيع ‘সে তার প্রভুর কথা শুনবে ও মান্য করবে। আর তার কর্তব্য হ’ল মান্য করা’। أَذِنَ لَهُ اَىْ اِسْتَمَعَ ‘সে মনোযোগ দিল’। حُقَّ لَهُ أَن يَّفْعَلَ كَذَا اَىْ حُقَّ فَثَبَتَ وَصَدَقَ ‘তার জন্য কাজটি করা নিশ্চিত হ’ল ও যথার্থ হ’ল’ (আল-মু‘জাম)। সেখান থেকে وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ অর্থ যাহহাক বলেন, أَطَاعَتْ وَحُقَّ لَهَا أن تُطِيْعَ رَبَّهَا ‘সে আনুগত্য করবে এবং তার প্রভুর আনুগত্য করাই তার কর্তব্য’ (কুরতুবী)। সে কিসে আনুগত্য করবে? اى سمعت له فى تصدعها وتشققها ‘সে আনুগত্য করবে তার ফেটে যাওয়ার ব্যাপারে ও বিদীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে’ (ক্বাসেমী)।
অত্র আয়াতে দলীল রয়েছে যে, আকাশ আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়নি। বরং তার একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন এবং তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ। আল্লাহর হুকুমেই আকাশ সৃষ্টি হয়েছে এবং আল্লাহর হুকুমেই আকাশ বিদীর্ণ হবে। আর এটাই তার কর্তব্য। ইস্রাফীল কর্তৃক শিঙ্গায় ফুঁক দানের তীব্র আওয়ায (ক্বাফ ৫০/২০) একটি অসীলা মাত্র। ফার্রা বলেন, অত্র আয়াতে ও ৪র্থ আয়াতে وَأَلْقَتْ -এর واو ‘অতিরিক্ত’ ( زائدة ) হিসাবে এসেছে (কুরতুবী)।
(৩) وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ ‘যেদিন পৃথিবী প্রসারিত হবে’। এতে বুঝা যায় যে, বর্তমান পৃথিবী চ্যাপ্টা নয়, বরং গোলাকার। যা ক্বিয়ামতের দিন সমান হয়ে যাবে। অর্থাৎ সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-ভূতলের কোন তারতম্য থাকবে না। সবকিছু একাকার ও সমান হয়ে নতুন এক পৃথিবীর রূপ ধারণ করবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ ‘যেদিন আকাশসমূহ ও পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হয়ে যাবে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী একক আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪৮)। পৃথিবী ঐদিন একাট্টা হয়ে যাবে এবং একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত দেখা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يُبَصَّرُونَهُمْ ‘তাদেরকে ঐদিন একে অপরের দৃষ্টিগোচর করা হবে’ (মা‘আরিজ ৭০/১১)। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, يَجْمَعُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ فِى صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَيُسْمِعُهُمُ الدَّاعِى وَيَنْفُذُهُمُ الْبَصَرُ ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পূর্বের ও পরের সবাইকে একটি মাটিতে একত্রিত করবেন। ফলে তারা একে অপরের কথা শুনতে পাবে ও একে অপরকে দেখতে পাবে’।[4]
(৪) وَأَلْقَتْ مَا فِيْهَا وَتَخَلَّتْ ‘এবং তার ভিতরকার সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও খালি হয়ে যাবে’। অর্থাৎ কবরসমূহ খালি করে সকল মৃতব্যক্তিকে বাইরে জীবিত নিক্ষেপ করবে।
একথাটাই অন্যত্র বলা হয়েছে এভাবে - وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا ‘সেদিন পৃথিবী তার ভিতরকার বোঝাসমূহ বের করে দিবে’ (যিলযাল ৯৯/২)।
(৫) وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ ‘আর সে তার পালনকর্তার আদেশ পালন করবে। আর এটাই তার কর্তব্য’- একথার মধ্যেও দলীল রয়েছে যে, আকাশের ন্যায় পৃথিবীও আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়নি। বরং তারও একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন এবং তাঁর হুকুমেই তার পূর্বের রূপ বিনষ্ট হয়ে আজ নতুন রূপ ধারণ করেছে। আর সর্বাবস্থায় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হুকুম পালন করাই তার প্রধান কর্তব্য এবং হুকুম পাওয়ার পর সে কাজটিই সে করবে ক্বিয়ামতের দিন।
এর মধ্যে একথারও দলীল রয়েছে যে, আকাশ ও পৃথিবীর এক ধরনের জীবন ও অনুভূতি রয়েছে, যা অন্য আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত হয়। যেমন বলা হয়েছে, ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِيْنَ - ‘অতঃপর তিনি মনোনিবেশ করেন আকাশের দিকে, যা ছিল ধুম্রবিশেষ। অনন্তর তিনি ওটাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা এলাম অনুগত হয়ে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/১১)। অথচ গাছের জীবন আছে, একথা বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খৃঃ) প্রমাণ করেছেন মাত্র গত ১৯২৬ সালে।
(৬) يَا أَيُّهَا الْإِنْسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَى رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلاَقِيْهِ ‘হে মানুষ! তুমি নিশ্চিতভাবে তোমার কৃতকর্মসহ তোমার প্রভুর পানে ফিরে চলেছ। অতঃপর তুমি তার সাথে সাক্ষাৎ করবে’। অর্থাৎ প্রভু পর্যন্তই তার শেষ গন্তব্যস্থল। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّ إِلَى رَبِّكَ الرُّجْعَى ‘নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার নিকটেই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল’ (‘আলাক্ব ৯৬/৮)। অন্যত্র বলা হয়েছে, وَأَنَّ إِلَى رَبِّكَ الْمُنْتَهَى ‘তোমার প্রতিপালকের নিকটেই সবকিছুর সমাপ্তি’ (নাজম ৫৩/৪২)। পূর্বের পাঁচটি আয়াতের বক্তব্যের পর মানুষকে ডেকে একথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ‘যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে এবং পৃথিবী প্রসারিত হয়ে নতুন রূপ ধারণ করবে, সেদিন অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন لاقى الإنسان كدحه من ربه ‘মানুষ তার প্রভুর নিকট থেকে তার কর্মফল হাতে-নাতে পেয়ে যাবে’।
الكَدُّ والكَدْحُ اى السعى والعمل بالمشقة অর্থ- চেষ্টা করা, কষ্টের সাথে কোন কাজ করা। كَادِحٌ অর্থ عامل وكاسب আমলকারী বা উপার্জনকারী। এখানে অর্থ إنك راجع إلى ربك رجوعا لا محالة ‘তুমি তোমার প্রভুর পানে দ্রুত ফিরে চলেছ নিশ্চিতভাবে’ (কুরতুবী)। অথবা ساعٍ إلى ربك سعيًا ‘দৌড়ে চলেছ তোমার প্রভুর পানে দ্রুতবেগে’ (ইবনু কাছীর)। অর্থাৎ তোমার কৃতকর্মসহ তুমি দ্রুত ফিরে চলেছ তোমার প্রতিপালকের নিকটে। আলোর গতির হিসাবে মানুষ প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেগে তার মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে। আল্লাহ বলেন, إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ، ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ ‘নিশ্চয়ই আমাদের নিকটেই তাদের প্রত্যাবর্তন’। ‘অতঃপর আমাদের উপরেই তাদের হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব’ (গাশিয়াহ ৮৮/২৫-২৬)।
(৭) فَأَمَّا مَنْ أُوْتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِيْنِهِ ‘অতঃপর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে’। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে বান্দার মুলাক্বাত দু’ভাবে হবে। কেউ আল্লাহর নিকট থেকে ডানহাতে আমলনামা পাবে। কেউ পাবে পিছন দিক থেকে বাম হাতে। এখানে ‘ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে’ বলার মাধ্যমে ডান হাতের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। এই মর্যাদা একইভাবে দুনিয়াতেও রয়েছে। যেমন ডান হাতে পরস্পরে মুছাফাহা করার মধ্যে সেই মর্যাদা প্রতিফলিত হয়। মুছাফাহার অর্থ إلصاق صفح الكف بالكف ‘পরস্পরের হাতের তালু মিলানো’ (লিসানুল আরব)। পরস্পরে ডান হাতের তালু মিলানোর মধ্যেই সেটা প্রতিভাত হয়। কিন্তু সেই সাথে বাম হাত লাগিয়ে দিলে উক্ত মর্যাদায় হস্তক্ষেপ হয়। যা ত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া ছহীহ হাদীছ সমূহের দলীল অনুযায়ী পরস্পরে ডান হাতে মুছাফাহা করাই সুন্নাত। দুইজনের বাম হাতে কিংবা চার হাতে মুছাফাহার কোন কওলী বা ফে‘লী দলীল নেই।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُوْرِهِ وَفِيْ شَأْنِهِ كُلِّهِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুতা পরিধান, চুল আঁচড়ানো, ওযূ করা এবং তার সকল শুভ কাজ ডান দিক দিয়ে করা পসন্দ করতেন’।[5]
প্রথম আয়াতে إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ ‘যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে’ বাক্যের শুরুতে إِذَا অব্যয়টি ‘শর্ত’ ( شرط ) এবং তার ‘জওয়াব’ ( الجزاء ) হ’ল فَأَمَّا مَنْ أُوْتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِيْنِهِ ‘অতঃপর যাকে তার আমলনামা ডানহাতে দেওয়া হবে’। কিসাঈ একথা বলেন। আবু জা‘ফর আন-নাহহাস বলেন, এটাই হ’ল সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও সুন্দর (কুরতুবী)।
(৮) فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَّسِيْرًا ‘সহজেই তার হিসাব-নিকাশ হয়ে যাবে’। অর্থ حسابا سهلا لا نوقش ‘সহজ হিসাব যাতে যাচাই-বাছাই করা হবে না’। বরং স্রেফ পেশ করা হবে মাত্র। যেমন মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَيْسَ ذَالِكَ الْحِسَابُ، إِنَّمَا ذَلِكَ الْعَرْضُ ، مَنْ نُوْقِشَ الْحِسَابَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عُذِّبَ ‘ওটা হিসাব নয়, বরং পেশ করা মাত্র। কেননা ক্বিয়ামতের দিন যার আমলনামা যাচাই করা হবে, সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে’।[6] মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, هَلَكَ ‘সে ধ্বংস হবে’। যেমন আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোন এক ছালাতে দো‘আ পাঠ করেন, اللَّهُمَّ حَاسِبْنِى حِسَاباً يَّسِيْرًا ‘হে আল্লাহ! আমার হিসাবে নিন সহজ হিসাব’। অতঃপর সালাম ফিরানোর পর আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সহজ হিসাব কি? তিনি বললেন, أَنْ يَنْظُرَ فِى كِتَابِهِ فَيَتَجَاوَزَ عَنْهُ إِنَّهُ مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ يَوْمَئِذٍ يَا عَائِشَةُ هَلَكَ ‘সেটা এই যে, তিনি কারু আমলনামার দিকে তাকাবেন। অতঃপর তাকে ছেড়ে দিবেন। কেননা ঐদিন যার হিসাব যাচাই করা হবে হে আয়েশা! সে ধ্বংস হবে’।[7] অতএব সূরা গাশিয়াহর শেষে বা কুরআনের যেসকল স্থানে হিসাবের কথা এসেছে, সেখানে পাঠক-শ্রোতা উভয়ের জন্য উক্ত দো‘আটি পাঠ করা মুস্তাহাব।
‘সহজ হিসাব’-এর নমুনা যেমন ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ মুমিন বান্দাকে শেষ বিচারের দিন কাছে ডেকে নিরিবিলিতে তার পাপগুলি বলবেন। তখন সে স্বীকার করবে ও নিজের ধ্বংস চিন্তায় ব্যাকুল হবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِى الدُّنْيَا، وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ . فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ، وَأَمَّا الْكُفَّارُ وَالْمُنَافِقُونَ فَيُنَادَى بِهِمْ عَلَى رُؤُوسِ الْخَلاَئِقِ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ، أَلاَ لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِينَ ‘দুনিয়াতে এগুলি আমি তোমার উপর গোপন রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এগুলি ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর তার ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। কিন্তু যারা কাফির ও মুনাফিক, তাদের বেলায় সৃষ্টিজগতের সামনে বলে দেওয়া হবে যে, ঐ লোকগুলি তাদের প্রতিপালকের উপর মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখো, যালেমদের উপরে আল্লাহর লা‘নত’।[8]
(৯) وَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُوْرًا ‘এবং সে তার পরিবারের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে’। অর্থাৎ يرجع إلى أهله فى الجنة ‘সে জান্নাতে তার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে’। মুমিন বান্দা ডান হাতে আমলনামা পাওয়ার পর খুশীতে বাগবাগ হয়ে তার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে। এর সহজ ব্যাখ্যা এই যে, দুনিয়ায় যারা তার পরিবার ছিল, তাদের কাছে ফিরে গিয়ে হৃষ্টচিত্তে নিজের সুন্দর কর্মফল জানাবে। যেভাবে দুনিয়ায় কোন পরীক্ষার সুন্দর রেজাল্ট হ’লে সন্তানেরা ছুটে গিয়ে তাদের পিতা-মাতাকে জানায়। তবে ক্বাতাদাহ বলেন, এর অর্থ أزواجه فى الجنة من الحور العين ‘জান্নাতে তার স্ত্রীগণ, যারা হবেন আনতনয়না সুন্দরী তন্বী হূরগণ’ (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)। এই ‘হূর’ তাদের দুনিয়ার স্ত্রীগণও হতে পারেন, যদি তারা জান্নাতী হন। তাছাড়া أهله অর্থাৎ ‘তার পরিবার’ বলতে কেবল স্ত্রী বুঝায় না। বরং স্ত্রী ও সন্তান সবাইকে বুঝায়। অতএব দুনিয়ার স্ত্রী ও সন্তানেরা জান্নাতী হ’লে তারাও তাদের স্বামী ও পিতা-মাতাদের সঙ্গে থাকবে ও তাদেরকে আমলনামা দেখিয়ে আনন্দ করবে।
ঈমানদার পুরুষগণের ঈমানদার স্ত্রীগণ যে জান্নাতে তাদের স্ত্রী হিসাবে সাথী হবে, সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন, اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ . ‘(অতএব) জান্নাতে প্রবেশ কর তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীগণ সানন্দে’ (যুখরুফ ৪৩/৭০)। অনুরূপভাবে ঈমানদার সন্তানগণ যে ঈমানদার পিতা-মাতার সাথে জান্নাতে থাকবে, সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন, وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيْمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَيْءٍ، كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِيْنٌ - ‘আর যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানেরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমরা তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তানদের। আর আমরা তাদের কর্মফলে বিন্দুমাত্র হরাস করব না। বস্ত্ততঃ প্রত্যেক ব্যক্তি স্ব স্ব কৃতকর্মের জন্য দায়ী’ (তূর ৫২/২১)।
শেষোক্ত আয়াত অনুযায়ী কেবল পিতা-মাতাই নয়; বরং ঈমানদার দাদা-পরদাদা ও তদূর্ধ্ব পিতামহ, পিতামহী, মাতামহ, মাতামহী যাদের সঙ্গে দুনিয়ায় দেখা হয়নি, জান্নাতে তাদের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হবে। জান্নাতীগণ সুন্দর পরিবেশে প্রফুল্লচিত্তে মুখোমুখি বসে একে অপরকে বলবে, قَالُوْا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِيْ أَهْلِنَا مُشْفِقِيْنَ- فَمَنَّ اللهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُوْمِ - ‘আমরা ইতিপূর্বে আমাদের বাড়ী-ঘরে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলাম’। ‘অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন’ (তূর ৫২/২৬-২৭)।ইবনু যায়েদ বলেন, আল্লাহ ঈমানদারগণকে তাদের দুনিয়ার ভীতি ও কষ্টের বিনিময়ে আখেরাতে জান্নাত দিবেন এবং অবিশ্বাসীদের দুনিয়ায় আনন্দ-ফূর্তির বিনিময়ে আখেরাতে জাহান্নামের শাস্তি দিবেন। একথা বলে তিনি পূর্বের আয়াত দু’টি (তূর ২৬-২৭) পাঠ করেন’ (কুরতুবী)।
(১০) وَأَمَّا مَنْ أُوْتِيَ كِتَابَهُ وَرَآءَ ظَهْرِهِ ‘পক্ষান্তরে যাকে তার আমলনামা তার পিঠের পিছন থেকে দেওয়া হবে’। অর্থাৎ পিঠের পিছন দিক হ’তে বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তি ডানহাতে নেবার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হবে এবং অবশেষে পিছন দিকে বাম হাতে নিতে বাধ্য হবে (কুরতুবী)।
(১১) فَسَوْفَ يَدْعُوْ ثُبُوْراً ‘সে তার ধ্বংসকে আহবান করবে’। এবং বলবে يا ويلاه، يا ثبوراه হায় দুর্ভোগ, হায় ধ্বংস! অন্যত্র বলা হয়েছে, وَإِذَا أُلْقُوْا مِنْهَا مَكَاناً ضَيِّقاً مُقَرَّنِيْنَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُوْراً- لاَ تَدْعُوا الْيَوْمَ ثُبُوْراً وَاحِداً وَادْعُوْا ثُبُوْراً كَثِيْراً - ‘যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় জাহান্নামের কোন এক সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন সেখানে তারা মৃত্যুকে আহবান করবে’। ‘(বলা হবে) আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেকোনা, বরং অনেক মৃত্যুকে ডাক’(ফুরক্বান ২৫/১৩-১৪)। কিন্তু তাতে কোন কাজ হবেনা। কেননা সেখানে কারু মৃত্যু হবেনা (আ‘লা ৮৭/১৩)। বরং তাকে বাঁচিয়ে রেখে কেবল শাস্তিই বৃদ্ধি করা হবে (নাবা ৭৮/৩০)।
ثُبُوْراً অর্থ هلاك ধ্বংস অর্থাৎ মৃত্যু। চূড়ান্তভাবে অপদস্থ ও শাস্তিপ্রাপ্ত হ’লে মানুষ নিজের ধ্বংস ও মৃত্যু কামনা করে থাকে। এখানে সেটাই বলা হয়েছে।
(১২) وَيَصْلَى سَعِيْراً ‘এবং জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করবে’। অর্থাৎ বাম হাতে আমলনামা পাওয়ার পরিণতি হিসাবে সে জাহান্নামের প্রজ্বলিত হুতাশনে প্রবেশ করবে। অবশ্য সে ইচ্ছা করে প্রবেশ করবে না। বরং তাকে হাঁকিয়ে নেওয়া হবে (যুমার ৩৯/৭১; ক্বাফ ৫০/২১)। সেটার ধরন কেমন হবে সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন, خُذُوْهُ فَغُلُّوْهُ، ثُمَّ الْجَحِيْمَ صَلُّوْهُ، ثُمَّ فِيْ سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُوْنَ ذِرَاعاً فَاسْلُكُوْهُ - ‘(ফেরেশতাদের বলা হবে) একে ধর, গলায় বেড়ী পরাও’। ‘অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ কর’। ‘অতঃপর সত্তর গজ দীর্ঘ শিকলে একে আচ্ছামত বাঁধো’ (হা-ক্কাহ ৬৯/৩০-৩২)।
(১৩) إِنَّهُ كَانَ فِيْ أَهْلِهِ مَسْرُوْراً ‘অথচ (দুনিয়াতে) সে তার পরিবারে হৃষ্টচিত্তেই ছিল’। অর্থাৎ সে কখনোই পরকালীন জওয়াবদিহিতার কথা আমলেই নিত না। সর্বদা খাও-দাও ফূর্তি কর- এই মতবাদে সে বিশ্বাসী ছিল। দুনিয়ার সেই সাময়িক অপরিণামদর্শী আনন্দ-ফূর্তির প্রতিফল স্বরূপ সে আজ আখেরাতে চিরস্থায়ী দুঃখে নিপতিত হ’ল এবং জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হ’ল।
(১৪) إِنَّهُ ظَنَّ أَنْ لَّنْ يَّحُوْرَ ‘সে ভেবেছিল যে, সে কখনোই (তার প্রভুর কাছে) ফিরে যাবে না’। অর্থাৎ أنه لن يرجع حيا مبعوثا فيحاسب ‘সে কখনোই জীবন্ত পুনরুত্থিত হয়ে ফিরে যাবে না এবং তাকে হিসাব দিতে হবে না’। তার ধারণা ছিল যে, সে প্রাকৃতিক নিয়মেই পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। বড় হয়েছে। আবার প্রাকৃতিক নিয়মেই মারা যাবে। তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তার রূহ কারু কাছ থেকে প্রেরিত হয়নি এবং কারু কাছে তা প্রত্যাবর্তিত হবে না। দুনিয়াতেই তার চাওয়া-পাওয়া শেষ। আখেরাত বলে কিছু নেই এবং তার কোন কাজের হিসাবও কাউকে কখনো দিতে হবে না।
الْحَوْرُ অর্থ الرجوع ফিরে যাওয়া, প্রত্যাবর্তন করা। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ما عرفت تفسيره حتى سمعت أعرابية تقول لبنتها حُورى أى إرجعى ‘আমি উক্ত শব্দের ব্যাখ্যা জানতে পেরেছি একজন বেদুঈন মহিলার কাছ থেকে। যখন সে তার মেয়েকে বলছিল, حُورى ‘ফিরে এসো’ (কুরতুবী)।
এখানে ফিরে আসা অর্থ আল্লাহর নিকটে প্রত্যাবর্তন করা। আব্দুল্লাহ বিন সারজিস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রার্থনা করেছেন, اَلَّلهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْحَوْرِ بَعْدَ الْكَوْرِ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আধিক্য হ’তে ক্ষতির দিকে ফিরে যাওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ ( أَىْ مِنَ الرُّجُوْعِ إِلَى النُّقْصَانِ بَعْدَ الزِّيَادَةِ )।[9]
ছহীহ মুসলিমের বর্ণনায় الكَور -এর বদলে الكَون এসেছে। الْحَور بعد الكَون -এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে মা‘মার ( مَعْمَر ) বলেন, এরা হ’ল ‘কুন্তী’ ( الكُنْتى )। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আগে সৎ ছিল, পরে অসৎ হয়ে গেছে। যে ব্যক্তি বলে আমি যৌবনে এমন ছিলাম তেমন ছিলাম ইত্যাদি (কুরতুবী)। এক্ষণে আয়াতের ব্যাখ্যা হবে যে, ঐ ব্যক্তি ভেবেছিল দুনিয়ার আনন্দ-ফূর্তি থেকে সে কখনোই আখেরাতে ধ্বংসের দিকে ফিরে যাবে না’।
(১৫) بَلَى إِنَّ رَبَّهُ كَانَ بِهِ بَصِيْراً ‘হ্যাঁ! (অবশ্যই সে ফিরে যাবে)। নিশ্চয়ই তার প্রভু তার বিষয়ে সবকিছু জানেন’। অর্থ إنه كان عالما من قبل أن يخلقه بأن مرجعه إليه ‘তাকে সৃষ্টির পূর্ব থেকেই তিনি জানতেন যে, তাকে তার কাছে ফিরে আসতে হবে’ (কুরতুবী)। البصر اي العلم অর্থ জানা। البصير اي العالم অর্থ জ্ঞানী (লিসানুল আরব)। بَصُرَ اى صار بصيرًا ‘সে জ্ঞানী হ’ল (আল-মু‘জাম)। আল্লাহ বলেন, قَالَ بَصُرْتُ بِمَا لَمْ يَبْصُرُوا بِهِ ... ‘সামেরী বলল, আমি দেখেছিলাম, যা তারা দেখেনি... (ত্বোয়াহা ২০/৯৬)। অর্থাৎ আমি জিব্রীলকে জেনেছিলাম, যা তারা জানেনি।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, সে যা ভেবেছিল, তা সঠিক ছিল না। বরং তাকে তার প্রতিপালকের কাছে ফিরে আসতেই হবে। কেননা তার সৃষ্টি থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সব খবরই আল্লাহ জানেন। সে যে এরূপ হঠকারিতা করবে সেকথাও তিনি আগে থেকে জানতেন।
এখানে فَلاَ أُقْسِمُ অর্থ فَأُقْسِمُ কালেমা لاَ অতিরিক্ত, যা বাক্যের মধ্যে صلة বা সংযোগের জন্য ও শ্রোতাকে সতর্ক ( تنبيه ) করার জন্য আনা হয়েছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَلاَ أُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُوْنَ (আল-হা-ক্কাহ ৬৯/৩৮), فَلاَ أُقْسِمُ بِرَبِّ الْمَشَارِقِ وَالْمَغَارِبِ (মা‘আরিজ ৭০/৪০), لاَ أُقْسِمُ بِهَذَا الْبَلَدِ (বালাদ ৯০/১), لاَ أُقْسِمُ بِيَوْمِ الْقِيَامَةِ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/১) ইত্যাদি। অত্র আয়াতে শপথকারী হ’লেন আল্লাহ এবং শপথকৃত বস্ত্ত হ’ল অস্ত যাওয়া সূর্যের লালিমা। শপথের মাধ্যমে পরবর্তী বক্তব্যের বিষয়বস্ত্তকে যোরদার করা হয়েছে। الشفق অর্থ ‘অস্ত যাওয়া সূর্যের লালিমা’। আরবদের পরিভাষাও তাই (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَوَقْتُ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَغِبِ الشَّفَقُ ‘মাগরিবের ওয়াক্ত হ’ল যতক্ষণ না সূর্যের লালিমা বিলুপ্ত হয়’।[10] অধিকাংশ ছাহাবী, তাবেঈ ও মুজতাহিদ বিদ্বানগণের মতামতও সেটাই (কুরতুবী)। তবে মুজাহিদ বলেন, প্রভাত সূর্যের লালিমা। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) থেকে দু’টি বর্ণনার একটিতে বলা হয়েছে যে, الشفق هو البياض ‘শাফাক্ব’ অর্থ সান্ধ্য লালিমার পরবর্তী শুভ্রতা (কুরতুবী)। ইবনু জারীর ত্বাবারী বলেন, أقسم اللهُ بالنهار مُدْبِرًا وبالليل مُقْبِلاً ‘আল্লাহ এখানে বিদায়ী দিবসের ও আগমনকারী রাত্রির শপথ করেছেন’ (ইবনু কাছীর)।
(১৭) وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ ‘এবং রাত্রির ও যা সে জমা করে’। অর্থাৎ তারকারাজি ও প্রাণীকুল। কেননা রাতের আগমনে একদিকে যেমন আকাশে নক্ষত্ররাজির সমাবেশ ঘটে, অন্যদিকে তেমনি পৃথিবীতে মানুষ ও পশু-পক্ষী সবাই স্ব স্ব আশ্রয়ে ফিরে আসে। যারা দিনের বেলায় বিভিন্ন কাজে-কর্মে চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। ফলে চূড়ান্ত বিচারে রাত্রিই এদেরকে জমা করে।
(১৮) وَالْقَمَرِ إِذَا اتَّسَقَ ‘এবং শপথ চন্দ্রের, যখন তা পূর্ণরূপ ধারণ করে’। হাসান বাছরী বলেন, إِذَا اتَّسَقَ অর্থ إذا امتلأ ‘যখন পূর্ণ হয়’ অর্থাৎ পূর্ণিমার চাঁদ।
(১৯) لَتَرْكَبُنَّ طَبَقاً عَنْ طَبَقٍ নিশ্চয়ই তোমরা এক স্তর হ’তে আরেক স্তরে অধিরোহন করবে’। অর্থাৎ এক অবস্থা হ’তে আরেক অবস্থায় তোমাদের উত্তরণ ঘটবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, أى حالاً بعد حالٍ ‘এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায়’।[11] যেমন আল্লাহ বলেন, اللهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ ضُعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضُعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضُعْفًا وَشَيْبَةً يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرُ ‘আল্লাহ যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেন দুর্বলরূপে। অতঃপর দুর্বলতার পরে দেন শক্তি। শক্তির পরে আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। বস্ত্ততঃ তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান’ (রূম ৩০/৫৪)।
পূর্বের তিনটি আয়াতে বর্ণিত তিনটি বস্ত্তর শপথের জওয়াব হিসাবে অত্র আয়াতটি এসেছে। এখানে বলা হয়েছে যে, হে মানুষ! অবশ্যই তোমাদের এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় উত্তরণ ঘটবে। যেমন- তোমরা প্রথমে মাতৃগর্ভে ছিলে শুক্রবিন্দু আকারে, তারপর জমাট রক্তবিন্দু, তারপর গোশতপিন্ড, তারপর জীবন্ত শিশু হয়ে ভূমিষ্ঠ হ’লে।[12] তারপর মায়ের দুধ ছেড়ে শক্ত খাবার খেতে শিখলে। অতঃপর আস্তে আস্তে শক্ত-সমর্থ জোয়ান হ’লে। তারপর বার্ধক্যে উপনীত হ’লে ও মৃত্যুবরণ করলে। জীবনকালে তোমরা কখনো ধনী ও সচ্ছল ছিলে, কখনো গরীব ও অসচ্ছল ছিলে। তোমরা রোগী হ’লে, অতঃপর সুস্থ হ’লে। বিপদগ্রস্ত হ’লে আবার বিপদমুক্ত হ’লে। তোমরা কষ্টে পড়লে, আবার সুখী হ’লে। এভাবে অবস্থার পরিবর্তন আমি ঘটিয়ে থাকি এবং জীবনের এই উত্থান-পতন ও অবস্থান বৈচিত্র্য তোমাদের ঘটবেই। আর এ থেকে তোমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে, নিজের জীবনকালে চাক্ষুষভাবে যখন এইসব উত্থান-পতন তোমরা দেখছ এবং জীবনের একেকটি স্তর অতিক্রম করছ, তখন অবশ্যই মৃত্যুর পর তোমার পুনরুত্থান ঘটবে এবং সেটাই হবে তোমার জীবনের সফরসূচীর চূড়ান্ত পর্ব। তারপরে আর কোন গন্তব্য নেই।
অনেকের ধারণা মৃত্যুই সবকিছুর শেষ এবং কবরই শেষ আশ্রয়স্থল। এই ধারণা ভুল। কেননা আল্লাহ বলেন, حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ ‘যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও’ (তাকাছুর ১০২/২)। এখানে ‘যিয়ারত’ শব্দ বলা হয়েছে। আর যিয়ারতকারী কখনো সে স্থানে স্থায়ী হয় না। অতএব তার স্থায়ী ঠিকানা হ’ল কবরের জীবন শেষে পুনরুত্থানের পর জান্নাত অথবা জাহান্নাম।
‘মৃত্যুর পরে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানুষের ইহকালীন জীবনের উপর পর্দা পড়ে যাবে’ (মুমিনূন ২৩/১০০)। অতঃপর পরকালীন জীবনের দৃশ্যাবলী তার সামনে উদ্ভাসিত হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كُنْتَ فِي غَفْلَةٍ مِنْ هَذَا فَكَشَفْنَا عَنْكَ غِطَاءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيْدٌ ‘তুমি ছিলে এদিন সম্পর্কে উদাসীন। আজ আমরা তোমার চক্ষু থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ণ’ (ক্বাফ ৫০/২২)।
উল্লেখ্য যে, জীবনচক্রের এই পরিবর্তন কেবল মানুষের ক্ষেত্রে নয়, বরং পশু-পক্ষী, উদ্ভিদরাজি, সাগর-নদী, সূর্য-চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সকল সৃষ্টবস্ত্তর মধ্যে রয়েছে। নদীর জোয়ার-ভাটা চন্দ্র ও সূর্যের উদয়-অস্ত, উদ্ভিদের উদ্গম-বৃদ্ধি ও মৃত্যু এরই প্রমাণ বহন করে।
এখানে আরেকটি চিন্তার বিষয় এই যে, আল্লাহ এখানে তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে বাছাই করে সূর্য, চন্দ্র ও রাত্রির কসম করলেন কেন? বলা চলে যে, এর উদ্দেশ্য হ’ল মুসলমানদের সৌরবিজ্ঞানে উদ্বুদ্ধ করা। যাতে তারা নভোমন্ডলে সঞ্চিত আল্লাহর নে‘মত সমূহ থেকে কল্যাণ আহরণ করতে পারে এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত হয়ে বলে, رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এগুলিকে বৃথা সৃষ্টি করো নি। তুমি মহা পবিত্র। অতএব আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হ’তে রক্ষা কর’ (আলে ইমরান ৩/১৯১)।
(২০) فَمَا لَهُمْ لاَ يُؤْمِنُوْنَ ‘অতএব তাদের কি হ’ল যে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে না?’ অর্থাৎ যাবতীয় নিদর্শন ও প্রমাণাদি স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কোন্ বস্ত্ত তাদেরকে ঈমান আনতে বাধা দিচ্ছে? এটি ইনকার অথবা বিস্ময়পূর্ণ প্রশ্নবোধক ( استفهام إنكار أوتعجب ) বাক্য।
(২১) وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لاَ يَسْجُدُوْنَ ‘এবং যখন তাদের কাছে কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদা করে না?’ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এই আয়াত পাঠ শেষে সিজদা করেন। অতঃপর বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে এখানে সিজদা করেছি’।[13]
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, أنها ليست من عزائم السجود، لأن المعنى : لا يُذعِنون ولا يطيعون فى العمل بواجباته - ‘এর অর্থ ফরয সিজদা নয়। কেননা এর তাৎপর্য হ’ল, তারা মাথা নত করে না এবং কুরআনের ওয়াজিব সমূহ প্রতিপালনের মাধ্যমে আনুগত্য প্রদর্শন করে না’ (কুরতুবী)। অর্থাৎ এখানে সিজদার পারিভাষিক অর্থ প্রযোজ্য হবে না। বরং আভিধানিক অর্থ প্রযোজ্য হবে। এক্ষণে لاَ يَسْجُدُوْنَ অর্থ হবে لاَ يَخْضِعُوْنَ وَلاَ يَنْقَادُوْنَ ‘তারা অবনত হয় না ও অনুগত হয় না’। তবে উপরে বর্ণিত হাদীছের আলোকে এখানে সিজদা করা মুস্তাহাব।
উল্লেখ্য যে, অত্র আয়াতে ঈমানের হরাস-বৃদ্ধির দলীল রয়েছে। যাতে ভ্রান্ত ফের্কা মুর্জিয়াদের প্রতিবাদ রয়েছে। কেননা তাদের নিকট ঈমানের কোন হরাস-বৃদ্ধি নেই। আবুবকর (রাঃ)-এর ঈমান ও সাধারণ মুসলমানের ঈমান সমান’। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيْمَانًا ‘প্রকৃত মুমিন তারাই, যখন তাদের সামনে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভীত হয় এবং যখন তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়’ (আনফাল ৮/২)।
(২২) بَلِ الَّذِيْنَ كَفَرُواْ يُكَذِّبُوْنَ ‘বরং কাফেররা এর প্রতি মিথ্যারোপ করে’। অর্থাৎ কাফেররা মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর আনীত শরী‘আতে মিথ্যারোপ করে এবং কুরআনের অকাট্য সত্যকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। মূলতঃ স্বার্থান্ধ হঠকারী ব্যক্তিরা কখনো এলাহী সত্যকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনা। আর সেকারণেই এরা তাতে সর্বদা মিথ্যারোপ করে এবং এক ধরনের সান্ত্বনা খুঁজে পায়।
(২৩) وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَا يُوْعُوْنَ ‘অথচ আল্লাহ ভালভাবেই জানেন যা তারা (বুকের মধ্যে) সঞ্চিত রেখেছে’। মুজাহিদ ও ক্বাতাদাহ বলেন, এর অর্থ بما يكتمون فى صدورهم ‘যা তারা লুকিয়ে রেখেছে তাদের বুকের মধ্যে’ (ইবনু কাছীর)। অর্থাৎ নবী ও কুরআন বিষয়ে যে মিথ্যারোপ এবং শত্রুতা তাদের অন্তরে লুক্কায়িত রয়েছে, আল্লাহ তা ভালভাবে জানেন। يُوْعُوْنَ ক্রিয়াটির মাদ্দাহ হ’ল الوِعَاءُ অর্থাৎ পাত্র, যাতে কিছু সঞ্চিত থাকে’। যেমন অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, وَجَمَعَ فَأَوْعَى ‘সে সম্পদ জমা করে। অতঃপর তা সঞ্চিত রাখে’ (মা‘আরিজ ৭০/১৮)। এর অর্থ স্মৃতিতে ধারণ করাও হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, (বিগত উম্মতগুলির ধ্বংস কাহিনী তোমাদের শুনানো হ’ল) لِنَجْعَلَهَا لَكُمْ تَذْكِرَةً وَتَعِيَهَا أُذُنٌ وَاعِيَةٌ ‘যাতে এগুলিকে তোমাদের জন্য আমরা দৃষ্টান্ত হিসাবে রেখে দিতে পারি এবং স্মৃতিধর কানগুলি এসব ঘটনা স্মরণে রাখে’ (হা-ক্কাহ ৬৯/১২)।
وَعَاهُ أى حَفِظَهُ ‘সে এটি মুখস্থ করেছে’। এক্ষণে আলোচ্য আয়াতের অর্থ দু’প্রকারের হ’তে পারে। ১- তারা মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও কুরআনের সত্যতার বিষয়টি বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। যদিও মুখে তা অস্বীকার করে। ২- উক্ত দু’টি বিষয়ে আক্রোশ ও বিদ্বেষ হৃদয়ে সঞ্চিত রাখে। দু’টিরই প্রতিফল পরবর্তী আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।-
(২৪) فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍْ ‘অতএব তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও’। অর্থাৎ যারা আল্লাহ, রাসূল, কুরআন ও আখেরাতকে অবিশ্বাস করে ও হৃদয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে, হে রাসূল! তুমি তাদের এ খবরটি জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাদের জন্য জাহান্নামের মর্মান্তিক আযাব প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। এটি নিঃসন্দেহে কঠিন দুঃসংবাদ। কিন্তু আল্লাহ একে ‘সুসংবাদ’ বলেছেন অবিশ্বাসীদের তাচ্ছিল্য করার জন্য।
(২৫) إِلاَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنٍ ‘কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার’। এখানে إلا (ব্যতীত) অর্থ لكن (কিন্তু)। কেননা বাক্যটি استثناء منقطع অর্থাৎ পূর্বের বাক্য থেকে বিছিন্ন একটি পৃথক বাক্য হিসাবে এসেছে। অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্ত্তত রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য নয়, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে। অনেক বিদ্বান এখানে إِلاَّ অর্থ واو (এবং) বলেছেন। অর্থাৎ এটি পূর্বের বাক্য হ’তে استثناء নয়, বরং সম্পূর্ণ নতুন বাক্য হিসাবে এসেছে। তখন অর্থ হবে ‘এবং যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে’ (কুরতুবী)।
لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنٍ অর্থ ثواب غير منقوص ولا مقطوع এমন ছওয়াব যা কম হবার নয় বা ছিন্ন হবার নয়’ (কুরতুবী)। এক কথায় তারা অফুরন্ত ছওয়াবের অধিকারী হবে। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوْذٍ ‘এ দান হবে অবিচ্ছিন্ন’ (হূদ ১১/১০৮)। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ، كُتِبَ لَهُ بِمِثْلٍ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا ‘যদি কেউ পীড়িত হয় বা সফরে থাকে, তাহ’লে বাড়ীতে সুস্থ অবস্থায় সে যে নেক আমল করত, সেইরূপ ছওয়াব তার জন্য লেখা হবে’।[14]
উল্লেখ্য যে, আখেরাতের পুরস্কার সদা বর্ধমান। তা দুনিয়ার মত নয় যে, গাছে কখনো ফল হয় কখনো হয় না। আল্লাহ বলেন, وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيْهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا ‘সেখানে তাদের জন্য রিযিক থাকবে সকালে ও সন্ধ্যায়’ (মারিয়াম ১৯/৬২)। তিনি বলেন, مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً ‘কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করবে। অতঃপর তিনি তাকে বহুগুণ দান করবেন’? (বাক্বারাহ ২/২৪৫)। আর উত্তম ঋণ অর্থ অগ্রিম নেক আমল সমূহ।
তবে হাদীছে এসেছে যে, শুধুমাত্র ‘আমল’ দ্বারা কেউ জান্নাত পাবে না। যদি না আল্লাহর রহমত শামিল হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ يُدْخِلُ أَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُهُ الْجَنَّةَ وَلاَ يُجِيْرُهُ مِنَ النَّارِ وَلاَ أَنَا إِلاَّ بِرَحْمَةٍ مِنَ اللهِ ‘তোমাদের আমল তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না বা জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারবে না এবং আমিও বাঁচতে পারব না, আল্লাহর রহমত ব্যতীত’।[15] তাছাড়া আল্লাহ বলেন, يدْخُلُ مَن يَّشَاءُ فِىْ رَحْمَتِهِ ‘তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমতের মধ্যে দাখিল করে নেন’ (দাহর ৭৬/৩১)। তিনি আরও বলেন, وَاللهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَنْ يَشَاءُ ‘আল্লাহ যাকে খুশী স্বীয় রহমতের জন্য খাছ করে নেন’ (বাক্বারাহ ২/১০৫)।
বস্ত্ততঃ ঈমানদারগণের উপরে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ আছে বলেই তারা ঈমান আনার ও সৎকর্ম করার তাওফীক লাভে ধন্য হয়েছে। অতএব তারা মূলতঃ আল্লাহর রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করবে, কেবলমাত্র তাদের আমলের কারণে নয়। কেননা ঈমান ও আমল তাদের জান্নাত লাভের অসীলা হ’তে পারে। কিন্তু মূল কারণ হ’ল আল্লাহর রহমত। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রহমতের মধ্যে শামিল করে নিন -আমীন!
সারকথা :
মানুষকে অবশ্যই তার কষ্টকর জীবন পাড়ি দিয়ে তার প্রভুর নিকটে ফিরে যেতে হবে। অতঃপর সেখানে গিয়ে তার কর্মফল অনুযায়ী সে জান্নাত অথবা জাহান্নামের অধিকারী হবে। অতএব মানুষ যেন লক্ষ্যচ্যুত না হয়।
[1]. এখানে একটি সিজদা করা মুস্তাহাব। এই সিজদার জন্য ওযূ বা ক্বিবলা শর্ত নয় (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৪র্থ সংস্করণ পৃ: ১৫৩)।
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।