মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সূরাটিতে ক্বিয়ামতের দৃশ্যাবলী বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি আমরা পূর্বোক্ত সূরা তাকভীরের শুরুতে বর্ণনা করেছি।
এতদ্ব্যতীত হযরত জাবের (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে যে, একদিন হযরত মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) স্বীয় মহল্লার জামা‘আতে মাগরিব কিংবা এশার ছালাতে ইমামতি করার সময় ক্বিরাআত দীর্ঘ করেন। তাতে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে অভিযোগ আসে। তখন তিনি মু‘আয (রাঃ)-কে ডেকে বলেন, أَفَتَّانٌ يَا مُعَاذُ أَيْنَ كُنْتَ عَنْ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى وَالضُّحَى وَإِذَا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ ‘মু‘আয তুমি কি লোকদের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছ? তুমি সূরা আ‘লা, যোহা, ইনফিত্বার পড়ো না কেন? [1] এর দ্বারা বুঝা যায় যে, এই সূরাগুলি এশার ছালাতে পড়া উচিত। যাতে বান্দা ক্বিয়ামত ও আখেরাতের কথা স্মরণ করে ও ঘুমাতে যাওয়ার আগেই গোনাহ থেকে তওবা করে।
বিষয়বস্ত্ত :
সূরাটিতে চারটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে। ১- ক্বিয়ামতের কিছু দৃশ্যের অবতারণা (১-৫ আয়াত)। ২- নিজের সৃষ্টিতে অপারগ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ কেন তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ থেকে বিভ্রান্ত হ’ল সেজন্য ধিক্কার প্রদান (৬-৮ আয়াত)। ৩- মানুষকে বৃথা সৃষ্টি করা হয়নি। বরং তার সকল কর্মকান্ড লিপিবদ্ধ হচ্ছে, সে বিষয়ে হুঁশিয়ারী প্রদান (৯-১২ আয়াত)। ৪- লেখক ফেরেশতাগণের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ক্বিয়ামতের দিন মানুষের সৎকর্মশীল ও অসৎকর্মশীল দু’দলে বিভক্ত হওয়ার বর্ণনা (১৩-১৯ আয়াত)।
اِنْفَطَرَتْ অর্থ انشقت بأمر الله ‘বিদীর্ণ হবে আল্লাহর হুকুমে’ (কুরতুবী)। নিশ্চিত বিষয় যা ভবিষ্যতে ঘটবে, এমন মর্ম প্রকাশের জন্য এখানে অতীতকালের ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ক্বিয়ামতের নিশ্চয়তা বুঝানো হয়েছে।
অত্র আয়াতে ক্বিয়ামত শুরুর প্রাক্কালে আকাশের অবস্থা কেমন হবে, তা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন একই শব্দে অন্যত্র বলা হয়েছে, السَّمَاءُ مُنْفَطِرٌ بِهِ كَانَ وَعْدُهُ مَفْعُوْلاً ‘যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে। তার ওয়াদা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে’ (মুযযাম্মিল ৭৩/১৮)। অন্যত্র বলা হয়েছে, وَيَوْمَ تَشَقَّقُ السَّمَاءُ بِالْغَمَامِ وَنُزِّلَ الْمَلاَئِكَةُ تَنْزِيْلاً ‘যেদিন আকাশ মেঘমালাসহ বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদের নামিয়ে দেওয়া হবে’ (ফুরক্বান ২৫/২৫)।
পরস্পরের মধ্যকার মধ্যাকর্ষণ শক্তি যখন আল্লাহর হুকুমে ছিন্ন হয়ে যাবে, তখন মহাশূন্যে সূর্য-চন্দ্র, গ্রহ-নক্ষত্র যা কিছু আছে সবই বিছিন্ন হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়বে ও আলোহীন হয়ে যাবে।
اِنْتَثَرَتْ বা ঝরে পড়া শব্দের মধ্যেই ইঙ্গিত রয়েছে বেঁধে রাখার। বিজ্ঞানী ব্যক্তিকে এ শব্দের মাধ্যমে আল্লাহ চৌদ্দশত বছর পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছেন মধ্যাকর্ষণ শক্তির তথ্য। যদিও বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭ খৃঃ) তার সন্ধান পেয়েছেন মাত্র ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, فَجَّرَ اللهُ بَعْضَهَا فِىْ بَعْضٍ ‘আল্লাহ পানির একাংশকে অপর অংশের মধ্যে মিলিয়ে দিবেন’। ফলে সাগরসমূহ মিলিত হয়ে একটি সাগরে পরিণত হবে। ক্বাতাদাহ বলেন, اختلط مالحها بعذبها ‘লবণাক্ত পানি মিঠা পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে যাবে’ (ইবনু কাছীর)।
উপরোক্ত বিষয়গুলি ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে সংঘঠিত হবে, যা ইতিপূর্বে সূরা তাকভীরের শুরুতে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে وإذا البحار سجرت ‘যেদিন সমুদ্রগুলি অগ্নিময় হবে।’ দু’টি আয়াতে দু’টি অবস্থা বর্ণিত হ’তে পারে। প্রথমে সাগরসমূহ উদ্বেলিত হয়ে একাকার হবে। অতঃপর তা সবই অগ্নিময় হবে।
সুদ্দী বলেন, অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ এমনভাবে আন্দোলিত হবে যে, কবরসমূহ উন্মুক্ত হবে এবং তার ভিতরকার মাইয়েত সব বেরিয়ে আসবে’। ভূপৃষ্ঠের তাযা কবর ছাড়াও যেসব কবরে লাশ মাটি হয়ে গেছে কিংবা যাদের লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বা বাঘ-কুমীরের পেটে গেছে, সকলের রূহ যেখানে আবৃত থাকে, সেটাই হ’ল তার ‘কবর’। সেই কবরে তাকে শাস্তি বা শান্তি পৌঁছানো হয়। যেভাবে স্বপ্নজগতে আনন্দ বা বেদনার অনুভূতি হয়। সেই কবর থেকেই সে বেরিয়ে আসবে আল্লাহর হুকুমে দেহ ধারণ করে। ফার্রা প্রমুখ বলেন, এর দ্বারা ক্বিয়ামতপূর্ব আলামতের কথা বলা হয়েছে যে, সেই সময় ভূপৃষ্ঠের যাবতীয় সোনা-রূপা বেরিয়ে আসবে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا ‘যেদিন পৃথিবী তার ভিতরকার সব বোঝা বের করে দিবে’ (যিলযাল ৯৯/২)। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ভূগর্ভে আল্লাহপাক তার বান্দার জন্য বহু মূল্যবান রত্ন ও ধাতুসমূহ সঞ্চিত রেখেছেন। বান্দাকে তা উত্তোলন করে কাজে লাগাতে হবে।
(৫) عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ ‘যেদিন প্রত্যেকে জানবে সে অগ্রে ও পশ্চাতে কি প্রেরণ করেছে’।
পূর্বের চারটি আয়াতের জওয়াব হিসাবে এসেছে। অর্থাৎ যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে, সাগরসমূহ একাকার হয়ে যাবে এবং কবরসমূহ উন্মোচিত হবে, সেদিন ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে এবং মানুষের হাতে তাদের স্ব স্ব আমলনামা তুলে দেয়া হবে। তখন তারা তাদের আগে-পিছের ভাল-মন্দ সব কর্মকান্ডের রেকর্ড সেখানে দেখতে পাবে’। একই মর্মে অন্যত্র বলা হয়েছে, يُنَبَّأُ الْإِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ ‘যেদিন মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হবে আগে-পিছে যা কিছু সে করেছে’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৩)। তাকে বলা হবে, اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا ‘তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/১৪)।
ক্বিয়ামত অস্বীকারকারী লোকদের উদ্দেশ্যে ধিক্কার দিয়ে একথা বলা হয়েছে। ওমর ফারূক (রাঃ) বলেন, মানুষ ধোঁকা খায় তার মূর্খতার কারণে (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, إِنَّهُ كَانَ ظَلُوْماً جَهُوْلاً ‘মানুষ অত্যাচারী ও মূর্খ (আহযাব ৩৩/৭২)। এর কারণ হ’ল মানুষ অন্যায় করার সাথে সাথে আল্লাহ তাকে গ্রেফতার করেন না। তাতে সে আরও বেড়ে যায় ও সীমা অতিক্রম করে। শুরুতে আল্লাহর এই ক্ষমা তাকে ধোঁকায় ফেলে। অতঃপর একসময় সে ক্বিয়ামত ও আখেরাতে জওয়াবদিহিতাকে অস্বীকার করে বসে। এটাই হ’ল তার সবচেড়ে বড় মূর্খতা। আল্লাহ যেহেতু প্রথমে তাকে পাকড়াও না করে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দেন, এটাকে তাই আল্লাহর করুণা হিসাবে গণ্য করা হয়েছে এবং সেজন্য এখানে আল্লাহর ‘কারীম’ বা ‘মহান’ গুণবাচক নামটির অবতারণা করা হয়েছে। এর দ্বারা এবিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে যে, মন্দ কর্মসমূহ নিয়ে মহান আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়ানো যায় না (ইবনু কাছীর)।
এখানে مَا প্রশ্নবোধক ( اسةفهامية ) এসেছে। এর জবাব উহ্য থাকলেও পরবর্তী আয়াত সমূহে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, সেটি হ’ল আল্লাহর সহনশীলতা ও তাঁর অবকাশ দান। বরং غَرُّهُ كَرَمُهُ ‘আল্লাহর মহত্ত্ব হ’ল তাদের বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ’। অতএব আয়াতের সারমর্ম হ’ল, لا تغتروا بحلم الله وكرمه فتتركوا العمل فى قربات الله ‘তোমরা আল্লাহর সহনশীলতা ও তাঁর দয়ার কারণে ধোঁকা খেয়োনা এবং আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের সৎকর্মসমূহ ছেড়ে দিয়ো না’।
যুন্নূন মিছরী বলেন, كم من مغرور تحت السَّتر وهو لا يشعُر ‘বহু ধোঁকা খাওয়া মানুষ রয়েছে আল্লাহর (ক্ষমার) পর্দার নীচে। অথচ সে তা বুঝতে পারে না’ (কুরতুবী)। অর্থাৎ অনেক মানুষের দোষ-ত্রুটি ও গোনাহের উপর আল্লাহ পর্দা ফেলে রেখেছেন। তাদেরকে লাঞ্ছিত করেননি। ফলে তারা আরো ধোঁকায় পড়ে গেছে। মোটকথা আল্লাহর ক্ষমাকে মানুষ সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে এবং বেপরওয়া হয়ে সীমা অতিক্রম করে ও আল্লাহকে ভুলে যায়। ক্বিয়ামতে অবিশ্বাসীরাই এটা বেশী করে থাকে। তবে মুমিনরা তওবা করে ফিরে আসে। যা অবিশ্বাসীরা করে না।
অত্র আয়াত দ্বারা এটাও বুঝা যায় যে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির বিষয়টি এখানে মুখ্য নয়। বরং মুখ্য বিষয় হ’ল মানুষ। তার জন্যই সবকিছুর সৃষ্টি। অতএব তার বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতাই আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বেশী ক্রোধ উদ্দীপক।
অর্থাৎ جعلك سَويًّا معتدل القامة فى بطن امك ‘তোমার মায়ের গর্ভে তোমাকে সুবিন্যস্ত ও সুষম অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন’। অত্র আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে তার সৃষ্টিকৌশল বর্ণনা করেছেন, যাতে সে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি অনুগত হয় এবং তাকে ভুলে শয়তানের তাবেদার না হয়। এখানে সৃষ্টি, বিন্যস্তকরণ ও সুষমকরণ, তিনটি অবস্থার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য বহু চিন্তার খোরাক রয়েছে।
প্রথমে বলা হয়েছে ‘যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’। সৃষ্টি দু’রকমের। এক- অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়ন। যেভাবে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয় (বাক্বারাহ ২/৩০-৩৯)। দুই- অস্তিত্ব থেকে পৃথক অস্তিত্বে আনয়ন। যেমন পিতা-মাতার মাধ্যমে সন্তানের জন্মগ্রহণ। এই সৃষ্টি করা হয়েছে স্বামীর শুক্রাণুর মাধ্যমে স্ত্রীর গর্ভে। আর মাতৃগর্ভ ব্যতীত অন্য কোথাও মানবশিশু সৃষ্টি হয় না। জনৈক বিজ্ঞানী তার ল্যাবরেটরীতে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মানবদেহ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ২০টি গ্যাসীয় অণু নিয়ে সমন্বয়ের চেষ্টা করেও অবশেষে মানবশিশুর ভ্রুণ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হন।[2] ভ্রুণ সৃষ্টি করার পর তাকে হাত-পা, চোখ-কান ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা ‘সুবিন্যস্ত’ করা হয় (সাজদাহ ৩২/৯)। যেমন এক হাত আরেক হাত থেকে বা এক পা আরেক পা থেকে দীর্ঘ না হওয়া। একইভাবে আঙ্গুলগুলি অসমভাবে খাটো ও লম্বা না হওয়া ইত্যাদি। অতঃপর তাকে ‘সুষম’ করা হয়। অর্থাৎ দেহের আকৃতি, প্রকৃতি, রক্তের গ্রুপ, দৈহিক শক্তি ও সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তি, স্বভাব-চরিত্র সবকিছুকে সুষম করা হয়। যেমন মুরগী স্রেফ দু’পায়ে চলে ও গরু-ছাগল চার হাত-পা দিয়ে চলে। অথচ মানুষ সবাই দু’পা দিয়ে চলে ও দু’হাত দিয়ে কাজ করে। যদি এটা আল্লাহ না করতেন, তাহ’লে মানুষের মধ্যে পরস্পরে কোন সামঞ্জস্য থাকতো না। কেউ হতো ১০ হাত লম্বা, কেউ হতো দু’হাত লম্বা। কেউ ভাত-রুটি খেতো, কেউ ঘাস-পাতা খেতো। মানুষের সৃষ্টি ও চরিত্রের সামঞ্জস্য বিচার করে কোন খাদ্য, পানীয় বা ঔষধ তৈরী করা যেত না। দেহের মাপের আন্দায করে কোন পোষাকের ডিজাইন তৈরী হতো না। জামা-কাপড়, জুতা, স্যান্ডেল কিছুই বানানো যেত না। পরিবার, সমাজ ও দেশ পরিচালনার জন্য কোন সাধারণ নীতি-কৌশল বা আইনও তৈরী করা যেত না। ফলে পৃথিবীব্যাপী সৃষ্টি হতো এক দারুণ বিশৃংখলা।[3]
বুস্র বিন জিহাশ আল-ক্বারশী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন নিজ হাতের তালুতে থুথু ফেলেন। অতঃপর সেখানে আঙ্গুল রেখে বলেন, আল্লাহ বলেছেন, يَا ابْنَ آدَمَ أَنَّى تُعْجِزُنِى وقَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ مِثْلِ هَذِهِ حَتَّى إِذَا سَوَّيْتُكَ وَعَدَلْتُكَ مَشَيْتَ بَيْنَ بُرْدَيْنِ وَلِلأَرْضِ مِنْكَ وَئِيدٌ فَجَمَعْتَ وَمَنَعْتَ حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ التَّرَاقِىَ ‘হে আদম সন্তান! তুমি কিভাবে আমাকে অক্ষম করবে? অথচ তোমাকে আমি সৃষ্টি করেছি এটির মত করে? অতঃপর যখন আমি তোমাকে বিন্যস্ত করেছি ও সুষম করেছি, তখন তুমি সকাল-সন্ধ্যায় চলাফেরা করতে থাকলে। আর পৃথিবীতে পেলে কঠিন জীবন। অতঃপর তুমি মাল সঞ্চয় করলে ও বখীল হ’লে। অবশেষে যখন মৃত্যুক্ষণ এসে গেল, তখন তুমি বললে, أَتَصَدَّقُ وَأَنَّى أَوَانُ الصَّدَقَةِ আমি ছাদাক্বা করব। অথচ কোথায় তখন ছাদাক্বার সময়’? (ইবনু কাছীর)।[4]
(৮) فِيْ أَيِّ صُوْرَةٍ مَّا شَاءَ رَكَّبَكَ ‘তিনি তোমাকে তেমন আকৃতিতে গঠন করেছেন, যেভাবে তিনি চেয়েছেন’।
في أيِّ شبه من الوالد أو الأم أو الجد أو غيرهم . অর্থ ‘পিতা-মাতা, দাদা-নানা বা অন্য যেকোন চেহারার সাথে সামঞ্জস্য করে তিনি সৃষ্টি করেন’।
অর্থাৎ فى أبدع الصور وأعجبها ‘কোনরূপ পূর্ব নমুনা ছাড়াই তিনি বিস্ময়করভাবে নব নব আকৃতিতে সৃষ্টি করেন’। একই পিতা-মাতার সন্তান অথচ কারু সঙ্গে কারু মিল নেই। রঙে-রূপে, স্বভাবে-চরিত্রে, মেধায় ও বুদ্ধিমত্তায়, স্বাস্থ্যে ও সামর্থ্যে সব দিক দিয়েই প্রত্যেক সন্তান সম্পূর্ণ নতুন। ফারসী কবির ভাষায়, ہرگل را رنگ وبوئے ديگر است ‘প্রত্যেক ফুলের রং ও সুগন্ধি পৃথক’। এরপরেও তাদের মধ্যে থাকে এক ধরনের মিল। যা দেখলেই বুঝা যায়। সন্তানের চেহারায় যেন পিতা-মাতার চেহারা ভেসে ওঠে। তার স্বভাবে ও কর্মে পিতা-মাতার স্বভাব ও কর্মের অনেকটা প্রতিফলন ঘটে। বৈষম্যের মধ্যেও এই যে মিল, আবার মিলের মধ্যেও এই যে বৈষম্য, নব নব আকৃতি ও প্রতিভা সৃষ্টির এই যে অলৌকিক ক্রিয়া-কৌশল, তা কেবলমাত্র আল্লাহর পক্ষেই সম্ভব। কষ্মিনকালেও কোন মানুষের পক্ষে এটি সম্ভব নয়। অতএব হে অহংকারী বান্দা! এর পরেও কি তুমি আল্লাহকে অস্বীকার করবে?
(৯) كَلاَّ بَلْ تُكَذِّبُوْنَ بِالدِّيْنِ ‘কখনোই না। বরং তোমরা বিচার দিবসকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছ’।
আল্লাহ নেই, ক্বিয়ামত নেই, হিসাব-নিকাশ নেই বলে হে অবিশ্বাসীরা তোমরা যেসব কথা বলছ, তা কখনোই ঠিক নয়। বরং আসল কথা এই যে, তোমরা আখেরাতে জওয়াবদিহিতাকে মিথ্যা বলতে চাও। কেননা তোমরা হিসাব দিবসকেই বেশী ভয় পাও। যেমন দুর্নীতিবাজরা দুনিয়াতে জবাবদিহিতাকেই বেশী ভয় পায়। ক্বিয়ামতকেও তারা একই কারণে ভয় পায়। আর সেজন্যেই তাকে মিথ্যা বলে তৃপ্তি খুঁজতে চায়। তারা বলে, إِنْ هِيَ إِلاَّ حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوْتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِيْنَ ‘একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন। আমরা এখানেই মরি ও বাঁচি। আমরা আদৌ পুনরুত্থিত হব না’ (মুমিনূন ২৩/৩৭)।
এখানে كَلاَّ অর্থ حَقًّا হতে পারে। অর্থাৎ ‘অবশ্যই তোমরা বিচার দিবসকে মিথ্যা মনে করো’। كَلاَّ অর্থ لا হ’তে পারে। অর্থাৎ ليس كما تقولون ‘তোমরা যেমনটি বলছ, তেমনটি নয়’। তখন كَلاَّ হবে حرف ردع وزجر ধমক ও ধিক্কারসূচক অব্যয়। অর্থাৎ ‘আল্লাহর ধৈর্য ও দয়ার কারণে তোমরা ধোঁকা খেয়ো না’।
ইবনুল আম্বারী বলেন, كَلاَّ -এর পরে ওয়াক্ফ করা অর্থাৎ বিরতি দেওয়াটা হবে মন্দকার্য ( قبيح )। বরং আয়াতের শেষে বিরতি দেওয়াই হবে উত্তম ( جيد ) ’। এখানে ‘তোমরা’ বলতে মক্কাবাসী মুশরিকদের বুঝানো হ’লেও তা সকল যুগের সকল অবিশ্বাসীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। এখানে الدِّيْنُ অর্থ الحساب বা يوم الحساب । অর্থাৎ বিচার দিবস। بَلْ এসেছে لنفى ما تقدم وتحقيق ما بعده ‘পূর্বের বিষয়টি না করার জন্য এবং পরের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য’ (কুরতুবী)। অর্থাৎ لا شئ يغرك بربك الكريم الا تكذيبك بالمعاد والحساب ‘তোমার প্রভু থেকে তোমাকে বিভ্রান্ত হওয়ার একমাত্র কারণ হ’ল পুনরুত্থান ও হিসাব দিবসকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা’।
(১০-১২) وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِيْن، كِرَاماً كَاتِبِيْنَ، يَعْلَمُوْنَ مَا تَفْعَلُوْنَ ‘অথচ তোমাদের উপরে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত রয়েছে’ ‘সম্মানিত লেখকবৃন্দ’। ‘তারা জানেন তোমরা যা কর’।
এখানে إِنَّ ও لَ দু’টি নিশ্চয়তাবোধক অব্যয় দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক ও লেখক ফেরেশতাদ্বয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
অত্র আয়াত তিনটিতে আল্লাহ স্বীয় বান্দাকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন যে, তোমাদের পাহারাদার ও তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে আমি ফেরেশতাদের নিযু্ক্ত করেছি। তারা তোমাদের সবকিছু জানেন এবং তারা সর্বদা তোমাদের ভাল-মন্দ কাজ-কর্ম লিপিবদ্ধ করছেন। তোমরা যে ক্বিয়ামতকে অস্বীকার করছ, এটাও তারা লিখছেন। অতএব সাবধান হও! তারা অতি সম্মানিত। তাদের সামনে আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধী কোন কথা তোমরা বলো না এবং কোন মন্দ কাজ তোমরা করো না। কেননা এতে যেমন তারা অসম্মানিত হন, তেমনি তোমরাও গোনাহগার হয়ে থাক।
উল্লেখ্য যে, আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মানুষের দৃষ্টির বাইরে একটি আত্মিক জগত ( عوالم روحية ) রয়েছে। যেখানকার অশরীরী আত্মাগুলি সর্বদা মানুষের নানাবিধ সেবায় নিয়োজিত রয়েছে (তানতাভী)। অথচ কুরআন ও হাদীছ দেড় হাযার বছর আগেই আমাদেরকে সে বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে। বরং ঈমানের ৬টি স্তম্ভের দ্বিতীয়টি হ’ল ফেরেশতাগণের উপরে ঈমান আনা। উক্ত ৬টি বিশ্বাসকে একত্রে ‘ঈমানে মুফাছছাল’ বলা হয়। যেগুলির উপর বিশ্বাস স্থাপন না করলে কেউ মুমিন বা মুসলিম হ’তে পারে না।
জানা আবশ্যক যে, জিনেরাও অশরীরী আত্মা। তবে তারা আগুনের তৈরী ও ফেরেশতাগণ নূরের তৈরী। জিনদের মধ্যে মুমিন ও কাফের আছে। ফাসেক জিনগুলি মানুষের ক্ষতি করে ও পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। তারা মানুষের চাইতে শক্তিশালী। কিন্তু ফেরেশতাগণ জিনের চাইতে শক্তিশালী। তারা সবাই মুমিন এবং সবাই আল্লাহর হুকুমে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকে। রাণী বিলক্বীসের সিংহাসন জিন সর্দার এনে দিতে চেয়েছিল সুলায়মান (আঃ) তাঁর স্থান থেকে উঠে দাঁড়াবার পূর্বে। কিন্তু ফেরেশতা ওটা এনে দিয়েছিলেন তার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই’ (নমল ২৭/৩৯-৪০)। এতে বুঝা যায় ফেরেশতা জিনের চাইতে বহুগুণ শক্তিশালী।
কাফের-মুশরিকদের উপরে লেখক ফেরেশতা থাকবে কি-না এবিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, থাকবে না। কেননা তারা তো অবিশ্বাসী এবং তাদের চেহারা দেখেই ক্বিয়ামতের দিন চেনা যাবে’ (রহমান ৫৫/৪১)। কেউ বলেছেন, থাকবে। কেননা আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামতের দিন তাদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে’ (আল-হাক্কাহ ৬৯/২৫)। যদি আমলনামা লেখাই না হবে, তাহ’লে কি দেওয়া হবে? তবে কুফর ও শিরকের কারণে তাদের কোন নেকীর কাজ যেহেতু আল্লাহর নিকটে গৃহীত হবে না, সেহেতু ডান পার্শ্বের ফেরেশতার জন্য লিখবার কিছু থাকবে না। এমতাবস্থায় তিনি পাপকর্ম লেখক বামপার্শ্বের ফেরেশতার লেখনীর সাক্ষী হবেন। আর অপেক্ষায় থাকবেন কখন ঐ অবিশ্বাসী মুশরিক ব্যক্তিটি তওবা করে ঈমানদার হবে (কুরতুবী)।
ফেরেশতাগণ পায়খানার সময়, স্ত্রী মিলনের সময় ও গোসলের সময় বান্দাকে ছেড়ে যান বলে কুরতুবী ও ইবনু কাছীর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর বরাতে মুসনাদে বাযযার ও ইবনু আবী হাতেম থেকে কয়েকটি হাদীছ এনেছেন, যা সনদের দিক দিয়ে সবল নয় এবং যা কুরআনের উপরোক্ত আয়াতের বিরোধী। তাছাড়া অন্যত্র আল্লাহ বলেন, إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِيْنِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيْدٌ، مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلاَّ لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ - ‘যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল লিপিবদ্ধ করে’। ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই লিপিবদ্ধ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী (ফেরেশতা) রয়েছে’ (ক্বাফ ৫০/১৭-১৮)। এখানে কথা দ্বারা কথা ও কাজ দু’টিই বুঝানো হয়েছে। অতএব এটাই ঠিক যে, ফেরেশতাগণ সর্বাবস্থায় থাকেন এবং বৈধ-অবৈধ কর্মগুলি লিপিবদ্ধ করেন।
এখানে মানুষকে আবরার ও ফুজ্জার দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘আবরার’ একবচনে بَرٌّ এরা তারাই যারা সৎকর্মশীল ও খাঁটি ঈমানদার। যারা আল্লাহ প্রদত্ত ফরয-ওয়াজিবসমূহ ঠিকমত আদায় করে এবং নিষেধসমূহ হ’তে বিরত থাকে। পক্ষান্তরে ‘ফুজ্জার’ একবচনে فَاجِرٌ এরা তারাই যারা এর বিপরীত। অর্থাৎ ফাসিক-মুনাফিক, কাফির-মুশরিক সবাই এই দলভুক্ত।
এই দুই দল বিষয়ে আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيْقٌ فِي السَّعِيْر ‘একদল জান্নাতে ও একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (শূরা ৪২/৭)। দু’দলের এই বিভক্তি তাদের আক্বীদা ও আমল তথা বিশ্বাস ও কর্মের ভিত্তিতে হবে। যদিও আল্লাহর ইলমে তা আগে থেকেই ছিল। আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবাইকে একদলভুক্ত করে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ বলেন, وَلَوْ شَاءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ ‘আল্লাহ চাইলে তোমাদের সবাইকে এক দলভুক্ত করে দিতেন। কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে যে বিধানসমূহ দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নিতে। অতএব তোমরা আল্লাহর আনুগত্যপূর্ণ কর্মসমূহে প্রতিযোগিতা কর’...(মায়েদাহ ৫/৪৮)। তিনি বলেন, وَلَوْ شَاءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَلَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ - ‘যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে তিনি তোমাদেরকে একজাতি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন ও যাকে ইচ্ছা সুপথ প্রদর্শন করেন। আর তোমরা যা কিছু কর, সে বিষয়ে অবশ্যই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে’ (নাহল ১৬/৯৩)। তিনি বলেন, إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ إِمَّا شَاكِرًا وَّإِمَّا كَفُورًا ‘আমরা মানুষকে রাস্তা বাৎলে দিয়েছি। এক্ষণে সে হয় কৃতজ্ঞ বান্দা হবে, নয় অকৃতজ্ঞ হবে’ (দাহর ৭৬/৩)। এভাবে আল্লাহ মানুষের জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তিকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, ভাল অথবা মন্দ পথ বেছে নেবার জন্য। অত্র আয়াতে অদৃষ্টবাদী ভ্রান্ত ফেরকা জাবরিয়াদের প্রতিবাদ রয়েছে।
(১৫) يَصْلَوْنَهاَ يَوْمَ الدِّيْن ‘তারা বিচার দিবসে তাতে প্রবেশ করবে’।
অর্থ يَحْتَرِقُوْنَ بِهَا ‘জাহান্নামের আগুনে তাদের পোড়ানো হবে’। صَلِىَ صَلًى وَصِلًى النَّارَ ‘আগুনে জ্বলা’। صَلَى صَلْيًا النَّارَ ‘আগুনে নিক্ষেপ করা’। সেখান থেকে ভাবার্থ নেওয়া হয়েছে, বিচার শেষে ফলাফল হিসাবে কেউ জান্নাতে ও কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যদিও কবরে থাকতে তারা এর কিছু স্বাদ আস্বাদন করেছিল। এখানে ها সর্বনাম দ্বারা جَحِيْمٌ বুঝালে অর্থ হবে ‘তারা ঐদিন জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।
(১৬) وَمَا هُمْ عَنْهَا بِغَآئِبِيْنَ ‘তারা সেখান থেকে দূরে থাকবে না’। অর্থাৎ আযাব থেকে কবরে ও জাহান্নামে কখনোই তাদের অবকাশ দেওয়া হবে না। বরং তারা সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। এখানে কেবল জাহান্নামে প্রবেশ করা ও তার শাস্তির কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হ’ল বান্দাকে এ থেকে ভয় প্রদর্শন করা। নইলে জাহান্নামীরা যেমন সেখানে প্রবেশ করবে, জান্নাতীরাও তেমনি জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকর অবস্থা বুঝানোর জন্য প্রশ্নবোধক বাক্যটি পরপর দু’বার আনা হয়েছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, الْقَارِعَةُ، مَا الْقَارِعَةُ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ ‘করাঘাতকারী’ ‘করাঘাতকারী কি’? ‘তুমি কি জানো করাঘাতকারী কি?’ (ক্বারে‘আহ ১০৩/১-৩)। করাঘাতকারী অর্থ ক্বিয়ামত কথাটি বারবার প্রশ্নবোধক বাক্য প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রোতার কর্ণকুহর থেকে তার হৃদয়ের গভীরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানেও একইভাবে বলা হয়েছে। যাতে বান্দার অন্তরে ক্বিয়ামত বিষয়ে সামান্যতম সন্দেহ উঁকি-ঝুকি মারতে না পারে। অতঃপর সেদিনের বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে,
(১৯) يَوْمَ لاَ تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْئاً وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ ِللهِ ‘যেদিন কেউ কারও কোন উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর’।
দুনিয়াতে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা মানুষ ব্যবহার করে প্রায় স্বাধীনভাবে। কিন্তু ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কেউ কারু সামান্যতম উপকার করতে পারবে না। দুনিয়ার জেলখানায় তার নমুনা রয়েছে। এখানে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কেউ কারু প্রতি মানবিক সাহায্য পর্যন্ত করতে পারে না।
ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ কারু জন্য সুফারিশ করতে পারবে না’ মর্মে অনেকগুলি আয়াত এসেছে। যেমন আল্লাহ বলেন, مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ ‘এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে’? (বাক্বারাহ ২/২৫৫)। তিনি আরও বলেন, وَلاَ يَشْفَعُوْنَ إِلاَّ لِمَنِ ارْتَضَى ‘তারা (ফেরেশতারা) সুফারিশ করতে পারে কেবল তার জন্য যার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট’ (আম্বিয়া ২১/২৮)। তিনি বলেন, لاَ تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلاَّ مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى ‘তাদের কোন সুফারিশ কাজে আসবে না। যতক্ষণ না আল্লাহ অনুমতি দেন যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট’ (নাজম ৫৩/২৬)। এছাড়াও রয়েছে ছাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে স্বীয় কওমের উদ্দেশ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর দেওয়া সেই যুগান্তকারী ভাষণ, يَا بَنِى عَبْدِ مَنَافٍ أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ فَإِنِّى لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا - ‘হে বনু আবদে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। কেননা আমি তোমাদেরকে আল্লাহর হাত থেকে বাঁচানোর কোনই ক্ষমতা রাখি না’।[5]
প্রশ্ন হ’তে পারে, দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কর্তৃত্ব আল্লাহর। তাহ’লে বিশেষ করে ঐদিন ‘সব কর্তৃত্ব আল্লাহর’ বলার কারণ কি? জবাব এই যে, আল্লাহর হুকুমে দুনিয়াতে মানুষ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন। এটা হ’ল তার জন্য স্বাধীন জগত ( عالم اختيارى )। কিন্তু আখেরাত হ’ল বাধ্যগত জগত ( عالم اضطرارى )। সেখানে তার নিজস্ব ইচ্ছা চলবে না। কেবলমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত। আল্লাহ সেদিন বলবেন,
‘আজ কর্তৃত্ব কার? কেবলমাত্র আল্লাহর। যিনি এক ও মহাপরাক্রান্ত’। ‘আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের বদলা দেওয়া হবে। আজ কারু প্রতি যুলুম করা হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রুত হিসাব সম্পাদনকারী’ (গাফির/মুমিন ৪০/১৬-১৭)।
সারকথা :
সূরাটিতে ক্বিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে এবং সেদিনের সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে উদাসীন মানুষকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। অতএব হে মানুষ সাবধান হও!
[1]. নাসাঈ হা/৯৯ ‘এশার ছালাতের ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ; হাদীছের মূল ও প্রথমাংশ ছহীহায়েনে রয়েছে; বিস্তারিত সূরা ফজরের তাফসীরে দেখুন)।
[5]. বুখারী হা/৩৫২৭, মুসলিম হা/২০৪; মিশকাত হা/৫৩৭৩।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/340/9
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।