hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন

লেখকঃ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

২৮
সূরা ক্বারে‘আহ
(করাঘাতকারী)

সূরা কুরায়েশ-এর পরে মক্কায় অবতীর্ণ।

সূরা ১০১, আয়াত ১১, শব্দ ৩৬, বর্ণ ১৫৮।

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)

(১) করাঘাতকারী!

الْقَارِعَةُ

(২) করাঘাতকারী কি?

مَا الْقَارِعَةُ

(৩) তুমি কি জানো, করাঘাতকারী কি?

وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ

(৪) যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত

يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ

(৫) এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মত।

وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوشِ

(৬) অতঃপর যার ওযনের পাল্লা ভারি হবে,

فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ

(৭) সে (জান্নাতে) সুখী জীবন যাপন করবে।

فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ

(৮) আর যার ওযনের পাল্লা হালকা হবে,

وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ

(৯) তার ঠিকানা হবে ‘হাভিয়াহ’।

فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ

(১০) তুমি কি জানো তা কি?

وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ

(১১) প্রজ্বলিত অগ্নি।

نَارٌ حَامِيَةٌ

বিষয়বস্ত্ত :

অত্র সূরায় দু’টি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এক- ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের বর্ণনা (১-৫ আয়াত)। দুই- নেকী ও বদীর ওযন এবং তার প্রতিদান ও প্রতিফল সম্পর্কে বর্ণনা (৬-১১ আয়াত)।

তাফসীর :

(১-৩)  اَلْقَارِعَةُ، مَا الْقَارِعَةُ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ  ‘করাঘাতকারী’! ‘করাঘাতকারী কি’? ‘তুমি কি জানো, করাঘাতকারী কি’?।

قَرَعَ يَقْرَعُ قَرْعًا  অর্থ  قرع الباب بشدة فى امر فظيع  ‘ভীতিকর কারণে জোরে দরজা খটখটানো’। সেখান থেকে  اَلْقَارِعَةُ  ‘করাঘাতকারী’।

পারিভাষিক অর্থে  اَلْقَارِعَةُ  অর্থ  الساعة  ‘ক্বিয়ামত’। ইবনু কাছীর বলেন, এটি ক্বিয়ামতের বিভিন্ন নাম সমূহের অন্যতম। যেমন আল-হাক্কাহ, আল-গাশিয়াহ, আত-ত্বাম্মাহ, আছ-ছাখখাহ প্রভৃতি। অতঃপর এই দিনের ভয়ংকর অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে- ‘তুমি কি জানো ক্বারে‘আহ কি’? এর মাধ্যমে দ্রুত শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং একে যোরে করাঘাতকারী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকর কম্পন ও প্রচন্ড শব্দ প্রাণীজগতের কানে ও হৃদয়ে তীব্র আঘাত করবে ও ভয়ে হৃৎকম্পন শুরু হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,  وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلاَّ مَنْ شَاءَ اللهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ - ‘আর যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সবাই ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে এবং সবাই তাঁর নিকটে আসবে বিনীত অবস্থায়’ (নমল ২৭/৮৭; যুমার ৩৯/৬৮)।

مَا الْقَارِعَةُ  -এর মধ্যে  مَا  অব্যয়টি  كلمة استفهام على جهة التعظيم والتفخيم على شأنها -‘ঐদিনের ঘটনার বড়ত্ব ও ভয়াবহতা বুঝানোর জন্য প্রশ্নবোধক অব্যয়’। যেমন অন্যত্র এসেছে,  اَلْحَاقَّةُ، مَا الْحَاقَّةُ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحَاقَّةُ  (কুরতুবী)। এখানে  الْقَارِعَةُ  ‘মুবতাদা’ এবং  مَا الْقَارِعَةُ  ‘খবর’ হয়েছে। এর বিপরীতটা নয়। কেননা খবরটাই এখানে মুখ্য বিষয়’ (ক্বাসেমী)।

(৪)  يَوْمَ يَكُوْنُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوْثِ  ‘যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত’।

يَوْمَ  -এর শেষ অক্ষর যবরযুক্ত হয়েছে উহ্য ক্রিয়ার ‘কর্ম’ ( مفعول فيه ) হওয়ার কারণে। অর্থাৎ اُذْكُرْ يَوْمَ ... ‘স্মরণ কর সেদিনের কথা, যেদিন ...’।

এর মাধ্যমে ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকর অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।  الفَرَاش  বলতে ঐসব পতংগকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলিকে উন্মুক্ত ও জ্বলন্ত আগুনের চারপাশে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। একই মর্মে অন্যত্র আল্লাহ বলেন,  خُشَّعاً أَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْأَجْدَاثِ كَأَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنْتَشِرٌ  ‘তারা সেদিন ভীত-নমিত নেত্রে বের হবে কবর থেকে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল সদৃশ’ (ক্বামার ৫৪/৭)। আখেরী যামানার নবী ও শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) মানুষকে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া পতঙ্গদল ( الْفَرَاشِ ) এবং নিজেকে তাদের মুক্তিদাতা হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, ‘আমার উদাহরণ হ’ল সেই ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন জ্বালালো। অতঃপর পতঙ্গসমূহ দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। আর ঐ ব্যক্তি তাদের বাধা দিতে লাগল। কিন্তু পতঙ্গদল তাকে পরাস্ত করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকল। হে লোকসকল! আমিও তেমনি ( آخُذُ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ )তোমাদের কোমর ধরে আগুন থেকে পিছনে টানছি। আর তোমরা তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছ। আমি তোমাদের বারবার ডাকছি,  هَلُمَّ عَنِ النَّارِ هَلُمَّ عَنِ النَّارِ  ‘আগুন ছেড়ে আমার দিকে এস’! কিন্তু তোমরা আমাকে পরাজিত করে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছ’।[1]

(৫)  وَتَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْش  ‘এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মত’।

পূর্বের আয়াতের ন্যায় অত্র আয়াতের মাধ্যমে ক্বিয়ামতের দিনের ভীতিকর অবস্থা বুঝানো হয়েছে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে,  وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَاباً - ‘সেদিন পর্বতমালা চালিত হয়ে মরীচিকা হয়ে যাবে’ (নাবা ৭৮/২০)। আরও বলা হয়েছে,  وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا ، فَكَانَتْ هَبَاَءً مُّنْبَثًّا  ‘যেদিন পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে’। ‘অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা সদৃশ’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৫-৬)। কাফেররা এটা বিশ্বাস করতে চাইত না। তাই আল্লাহ বলেন,  وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّيْ نَسْفاً، فَيَذَرُهَا قَاعاً صَفْصَفاً - ‘তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে প্রশ্ন করে। তুমি বল, আমার পালনকর্তা পাহাড়সমূহকে সমূলে উৎপাটিত করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন’। ‘অতঃপর পৃথিবীকে সম্পূর্ণ সমতল করে ছাড়বেন’ (ত্বোয়াহা ২০/১০৫-১০৬)।

الْعِهْنِ  অর্থ  الصوف المصبوغ  ‘রং করা পশম’।  الْمَنْفُوْش  অর্থ ‘ঐ পশম যা হাত দিয়ে ধুনা হয়। অতঃপর তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে উড়তে থাকে’ (কুরতুবী)। এর মাধ্যমে ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকর অবস্থার বাণীচিত্র অংকন করা হয়েছে।

(৬)  فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهُ  ‘অতঃপর যার ওযনের পাল্লা ভারি হবে’।

مَوَازِيْنُهُ  অর্থ  موازين حسناته  ‘নেকীর পাল্লা সমূহ’। একবচনে  مِيْزَانٌ  অর্থ  وَزْنٌ  আরবরা শব্দটিকে  حَذَاءٌ  ‘সমান সমান’ বা ‘সম্মুখ’ অর্থে ব্যবহার করে। যেমন তারা বলে,  دارى بميزان دارك ووزن دارك  ‘আমার ঘর তোমার ঘরের সম্মুখ বরাবর অবস্থিত’ (ক্বাসেমী)। সেখান থেকে ‘দাড়িপাল্লা’ অর্থ হয়েছে। যাতে দু’দিকের দু’টি পাল্লা বরাবর থাকে। এখানে  مَوَازِيْنُ  বহুবচন হয়েছে বান্দার আমল সমূহের হিসাবে। কেননা প্রত্যেক আমলের ওযন ও হিসাব পৃথক হবে। উক্ত ওযন কিভাবে করা হবে, সেটি গায়েবী বিষয়। যা কেবল আল্লাহ জানেন।

(৭)  فَهُوَ فِيْ عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ  ‘সে (জান্নাতে) সুখী জীবন যাপন করবে’।

عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ  অর্থ  حياة مرضية  ‘সন্তোষভাজন জীবন’ যাতে আল্লাহ ও বান্দা উভয়ে সন্তুষ্ট।  عَيْشٌ  অর্থ আরাম, জীবন।  عِيْشَةٍ  অর্থ জীবন যাপন।  رَاضِيَةٍ  কর্তৃকারক ( اسم فاعل ) হ’লেও তা কর্মকারক ( اسم مفعول ) অর্থে এসেছে।

ক্বিয়ামতের দৃশ্য বর্ণনার পর এক্ষণে আল্লাহ দুনিয়াতে আমলকারীদের পরকালীন পুরস্কার সম্পর্কে বর্ণনা করছেন। যাদের আমল আল্লাহর নিকটে কবুল হবে, তাদের ওযনের পাল্লা ভারি হবে। তারা জান্নাত লাভে ধন্য হবে এবং সেখানে সুখে-শান্তিতে থাকবে।

(৮)  وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهُ  ‘আর যার ওযনের পাল্লা হালকা হবে’।

এই ওযন কিভাবে হবে, সেটি গায়েবী বিষয়। যা মানুষের বোধগম্য নয়। কেননা এবিষয়ে কুরআন বা হাদীছে কিছু বলা হয়নি। উল্লেখ্য, যাদের নেকী ও বদীর ওযন সমান সমান হবে, তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে আ‘রাফ নামক স্থানে বন্দী থাকবে’ (আ‘রাফ ৭/৪৬-৪৮)। এরা হ’ল মুনাফিক। যারা মুসলমানদের সাথে বসবাস করত। পুলছেরাত পার হওয়ার সময় মুমিন নর-নারীগণ তাদের ঈমানের জ্যোতিতে দ্রুত পার হয়ে যাবে চোখের পলকে। জাহান্নামের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না। কিন্তু মুনাফিকরা তাদের মুনাফেকীর অন্ধকারে আটকে যাবে। আল্লাহ বলেন,  يَوْمَ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِيْنَ آمَنُوا انْظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُوْرِكُمْ قِيْلَ ارْجِعُوا وَرَاءَكُمْ فَالْتَمِسُوا نُوْرًا فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُوْرٍ لَهُ بَابٌ بَاطِنُهُ فِيْهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهُ مِنْ قِبَلِهِ الْعَذَابُ- يُنَادُونَهُمْ أَلَمْ نَكُنْ مَعَكُمْ قَالُوا بَلَى وَلَكِنَّكُمْ فَتَنْتُمْ أَنْفُسَكُمْ وَتَرَبَّصْتُمْ وَارْتَبْتُمْ وَغَرَّتْكُمُ الْأَمَانِيُّ حَتَّى جَاءَ أَمْرُ اللهِ وَغَرَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ- فَالْيَوْمَ لاَ يُؤْخَذُ مِنْكُمْ فِدْيَةٌ وَلاَ مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوا مَأْوَاكُمُ النَّارُ هِيَ مَوْلاَكُمْ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ ‘সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও নারীরা মুমিনদের ডেকে বলবে, তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, যাতে তোমাদের নূর থেকে আমরা কিছু নিতে পারি। তখন তাদের বলা হবে, পিছনে ফিরে যাও এবং সেখানে নূর তালাশ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝে একটি প্রাচীর দাঁড় করানো হবে যাতে একটি দরজা থাকবে। যার ভিতর অংশে থাকবে রহমত ও বাহির অংশে আযাব’। ‘তারা মুমিনদের ডেকে বলবে, আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? জবাবে মুমিনরা বলবে, হ্যাঁ। কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। তোমরা প্রতীক্ষা করেছিলে, সন্দেহ করেছিলে এবং মিথ্যা আশা তোমাদের প্রতারিত করেছিল। অবশেষে আল্লাহর হুকুম (মৃত্যু) এসে গিয়েছিল। বস্ত্ততঃ প্রতারক (শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল’। এইসব লোকের শেষ পরিণতি হবে জাহান্নাম। যেমন পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আজ তোমাদের নিকট থেকে কোন মুক্তিপণ নেওয়া হবে না এবং কাফিরদের নিকট থেকেও নয়। জাহান্নামই তোমাদের আবাসস্থল। এটাই তোমাদের সাথী। আর এটা কতই না নিকৃষ্ট ঠিকানা’ (হাদীদ ৫৭/১৩-১৫)। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন!

(৯)  فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ  ‘তার ঠিকানা হবে ‘হাভিয়াহ’।

(১০)  وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ  ‘তুমি কি জানো তা কি?’

(১১)  نَارٌ حَامِيَةٌ  ‘প্রজ্বলিত অগ্নি’।

অর্থাৎ যার কোন সৎকর্ম নেই অথবা থাকলেও তার চাইতে অসৎকর্মের পরিমাণ বেশী, তার ঠিকানা হবে ‘হাভিয়া’। একই মর্মে অন্যত্র আল্লাহ বলেন,  وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ، وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهُ فَأُوْلَـئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْا أَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوْا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُوْنَ - ‘আর সেদিন ওযন হবে যথার্থ। অতঃপর যাদের (নেকীর) পাল্লা ভারি হবে, তারা সফলকাম হবে’। ‘পক্ষান্তরে যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে সেইসব লোক, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। কেননা তারা আমাদের আয়াতসমূহ অস্বীকার করত’ (আ‘রাফ ৭/৮-৯)। আল্লাহ আরও বলেন,  وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلاَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئاً وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِيْنَ - ‘আর আমরা ক্বিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারু প্রতি যুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষাদানা পরিমাণ হয়, আমরা তা উপস্থিত করব। আর হিসাব গ্রহণের জন্য আমরাই যথেষ্ট’ (আম্বিয়া ২১/৪৭)।

( هَاوِيَةٌ ) ‘হাভিয়া’ জাহান্নামের একটি নাম। সব জাহান্নামেরই দহন ক্ষমতা বেশী। কিন্তু ‘হাভিয়া’-র বেলায় ‘প্রজ্বলিত অগ্নি’ বলায় একথা নিশ্চিতভাবে এসে যায় যে, হাভিয়ার দহন ক্ষমতা চূড়ান্তভাবে বেশী। ইবনু কাছীর জাহান্নামের আটটি নামের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা- নার, জাহীম, সাক্বার, জাহান্নাম, হাভিয়াহ, হাফেরাহ, লাযা, হুত্বামাহ (ইবনু কাছীর, সূরা নাযে‘আত ১০ আয়াতের তাফসীর)।

এখানে  أُمُّهُ  বলে ‘আশ্রয়স্থল’ বুঝানো হয়েছে। যেমন মা তার সন্তানের আশ্রয়স্থল হয়ে থাকেন।  هَوَى يَهْوِى هَوِيًّا  অর্থ, উপর থেকে নীচে নিক্ষেপ করা’। সেখান থেকে  صفت  হয়েছে  هَاوِيَةٌ । অর্থ  المهواة التى لا يدرك قعرها ‘নিক্ষেপস্থল, যা এমন গভীর, যার তলদেশের নাগাল পাওয়া যায় না’ (তানতাভী)। এখানে হাভিয়াকে  أُمُّهُ  বা ‘তার মা’ বলে উপমা দিয়ে পাপীকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে (ক্বাসেমী)। কেননা তাদেরকে অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوْهِهِمْ ذُوْقُوْا مَسَّ سَقَرَ - ‘যেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে (এবং বলা হবে,) জাহান্নামের স্বাদ আস্বাদন কর’ (ক্বামার ৫৪/৪৮)।

مَا هِيَهْ  মূলে ছিল  مَا هِيَ  তবে আয়াত শেষে ওয়াকফের বিরতি বুঝানোর জন্য হা সাকিন ( هْ ) বৃদ্ধি করা হয়েছে (কুরতুবী)।

نَارٌ حَامِيَةٌ  অর্থ  حارة بلغة النهاية فى الحرارة  ‘এমন প্রজ্বলিত অগ্নি, যা দহন ক্ষমতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে’ (তানতাভী)।

জাহান্নামের পরিচয় :

(১) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বুখারী, মুসলিম, আহমাদ প্রভৃতির বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,  نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ  ‘জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চাইতে ৭০ গুণ বেশী দাহিকা শক্তি সম্পন্ন।[2]

(২) মুসনাদে আহমাদের অন্য বর্ণনায় এসেছে ১০০ গুণ বেশী।[3] ত্বাবারাণী আওসাত্ব-এর বর্ণনায় এসেছে যে, দুনিয়ার আগুনের তুলনায় জাহান্নামের আগুন ১০০ গুণ বেশী কালো।[4] এসকল বর্ণনা দ্বারা কেবল আধিক্য বুঝানো হয়েছে।

(৩) নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে যে,  إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ لَهُ نَعْلاَنِ وَشِرَاكَانِ مِنْ نَارِ يَغْلِىْ مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِى الْمِرْجَلُ  ‘জাহান্নামে সবচেয়ে হালকা আযাব হবে ঐ ব্যক্তির, যার দু’পায়ে আগুনের জুতা ও ফিতা পরিহিত থাকবে। যাতে তার মাথার মগজ টগবগ করে ফুটবে। যেমন উত্তপ্ত কড়াইয়ের পানি টগবগ করে ফুটে থাকে’।[5]

(৪) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, يُؤْتَى جَهَنَّمُ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُوْنَ اَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُوْنَ اَلْفَ مَلَكٍ تَجُرُّوْنَهَا . ‘ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় টেনে নিয়ে যাওয়া হবে যে, তার সত্তর হাজার লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে। তাঁরা জাহান্নামকে টেনে বিচারের মাঠে উপস্থিত করবে।[6]

সারকথা : ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে এবং মানুষকে ন্যায়-অন্যায়ের বিচার ও ফলাফল অবশ্যই পেতে হবে।

[1]. বুখারী হা/৬৪৮৩, মুসলিম হা/২২৮৪; মিশকাত হা/১৪৯।

[2]. বুখারী হা/৩২৬৫, মুসলিম হা/২৮৪৩; মিশকাত হা/৫৬৬৫।

[3]. আহমাদ হা/৮৯১০,সনদ ছহীহ; আলবানী ছহীহুল জামে‘ হা/৭০০৬।

[4]. ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/৪৮৫; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮৫৭৬, হায়ছামী বলেন, সকল সূত্রই ছহীহ-এর রাবী।

[5]. মুসলিম হা/২১৩, বুখারী হা/৬৫৬১, হাকেম ১/২৮৭ ‘জুম‘আ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৫৬৬৭

[6]. মুসলিম হা/২৮৪২; মিশকাত হা/৫৬৬৬।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন