HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

খলিফা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে ইনসাফপন্থীদের কিছু বাণী

লেখকঃ আব্দুল মুহসিন ইবন হামদ আল-আব্বাদ

সাহাবীদের মর্যাদা সম্পর্কে মনীষীদের বাণী
আমি এখন কিছু বাণী উল্লেখ করব, যা উম্মতের আদর্শ-পুরুষগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের সম্পর্কে বলেছেন, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও তাদের অন্তর্ভুক্ত, অতঃপর সেসব বাণীও উল্লেখ করব, যা শুধুমাত্র মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সংশ্লিষ্ট।

ইমাম তাহাভী রহ. তার প্রসিদ্ধ আকীদা গ্রন্থে বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মহব্বত করি, তাদের কাউকে মহব্বত করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করি না, তাদের কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি না। সাহাবীদের সাথে যারা বিদ্বেষ পোষণ করে ও খারাপভাবে তাদেরকে স্মরণ করে, আমরা তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করি। আমরা যখন তাদের কাউকে স্মরণ করি কল্যাণের সাথেই করি। আমরা বিশ্বাস করি সাহাবীদের মহব্বত করা দীন, ঈমান ও ইহসানের অংশ, আর তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা কুফুরী, নিফাক ও সীমালঙ্ঘনের অংশ”।

তাহাভীয়ার ব্যাখ্যাকার বলেন, “যার অন্তরে সর্বোত্তম উম্মত ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠ অলিদের হিংসা রয়েছে, যাদের মর্যাদা নবীদের পর, তার চেয়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত কে, বরং ইয়াহূদী-খৃস্টানরাও তার চেয়ে এক বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ। ইয়াহূদীদের বলা হয়েছিল, তোমাদের ধর্মে শ্রেষ্ঠ কারা? তারা উত্তরে বলেছে, মুসার সাথীগণ। খৃস্টানদের বলা হয়েছিল, তোমাদের ধর্মে শ্রেষ্ঠ কারা? তারা উত্তরে বলেছে, ঈসার সাথীগণ। রাফেযীদের (শিয়াদের) বলা হয়েছিল: তোমাদের ধর্মে সবচেয়ে খারাপ কারা? তারা উত্তরে বলেছিল মুহাম্মদের সাথীগণ। এ বিবেচনায় শিয়া-রাফেযীরা ইয়াহূদী-খৃস্টানদের থেকেও নিকৃষ্ট। হাতে গোনা কয়েকজন সাহাবী ব্যতীত কাউকে তারা মন্দ বলা থেকে বাদ রাখে নি। বস্তুত তারা যেসব সাহাবীকে গাল-মন্দ করে, তাদের মধ্যে এমন সাহাবীও আছেন, যারা অনেকগুণ বেশি মর্যাদার অধিকারী সেসব সাহাবী থেকে, যারা তাদের গালমন্দ থেকে রেহাই পেয়েছে”। [দেখুন: শারহুত তাহাভীয়াহ পৃ. (৪৬৯)।]

ইমাম বগভি (শারহুস সুন্নাহ) গ্রন্থে বলেন, ইমাম মালিক বলেছেন, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীকে খারাপ জানে ও তার সম্পর্কে বিদ্বেষ লালন করে, মুসলিমদের গণিমতে তার কোনো অংশ নেই। অতঃপর তিনি আল্লাহ তা‘আলার বাণী পড়ে শুনান:

﴿مَّآ أَفَآءَ ٱللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡقُرَىٰ﴾ إلى قوله تعالى : ﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [ الحشر : ٧-١٠ ]

“আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তার রাসূলকে ফায় হিসেবে যা দিয়েছেন ......এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭-১০]

ইমাম মালিকের নিকট জনৈক ব্যক্তির আলোচনা হয়, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের বদনাম করে, তখন তিনি নিচের আয়াত পাঠ করলেন,

﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِي ٱلۡإِنجِيلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطۡ‍َٔهُۥ فَ‍َٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ ٢٩﴾ [ محمد : 29]

“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকুকারী, সাজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সাজদাহর চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইঞ্জিলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মতো, যে তার কঁচিপাতা উদগত ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়ে স্বীয় কাণ্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষিকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]

অতঃপর ইমাম মালিক রহ. বলেন, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবী সম্পর্কে বিদ্বেষ নিয়ে সকাল করবে (বিদ্বেষ পোষণ করবে), নিম্নের আয়াত তার বিপক্ষে অবস্থান নিবে”। [শারহুস সুন্নাহ (১/২২৯)।]

﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [ الحشر : ١٠ ]

“এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

ইমাম শাওকানী রহ. আল্লাহ তা‘আলার উক্ত বাণীর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, মুহাজির ও আনসারদের জন্য ইস্তিগফার শেষে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, যেন মুমিনদের সম্পর্কে তোমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ না থাকে। অত্র আয়াতে মুমিন বলে যাদেরকে বুঝানো হয়েছে, তাদের ভেতর সাহাবীগণ অবশ্যই দাখিল। কারণ, শ্রেষ্ঠ মুমিন তারাই। অতএব, নির্বিশেষে সকল সাহাবীর জন্য যারা ইস্তেগফার ও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রার্থনা করে না, তারা অবশ্যই আল্লাহর নির্দেশের বিরোধিতা করছে। আর যদি তাদের অন্তরে সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ থাকে, সন্দেহ নেই শয়তান তাদেরকে স্পর্শ করেছে, তারা আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত। তারা আল্লাহর অলী ও উম্মতের শ্রেষ্ঠ সদস্যদের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে, তাদের জন্য লাঞ্ছনার দ্বার উন্মুক্ত, যা তাদেরকে জাহান্নামে পৌঁছাবে, যদি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন ও তার নিকট ফরিয়াদ না করে। যদি তারা না বলে, হে আল্লাহ! আমাদের অন্তর থেকে সাহাবীদের বিদ্বেষ দূর কর। আর যদি তাদের অন্তরের বিদ্বেষ কোনো সাহাবীকে গাল-মন্দ করতে প্ররোচিত করে, তাহলে তারা তাদের গলার রশি শয়তানের হাতে তুলে দিয়েছে, তারা আল্লাহর গোস্বা ও ক্রোধে নিমজ্জিত, সন্দেহ নেই।

সাহাবীদের বিদ্বেষ তাকেই আক্রান্ত করে, যে রাফেযীদের কোনো নিদর্শন গ্রহণ করে অথবা উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির শত্রুতায় লিপ্ত হয়, তাকে নিয়ে শয়তান কঠিনভাবে খেলা করে, তার সামনে বানানো মিথ্যা, সাজানো ঘটনা ও চলে আসা কুসংস্কারকে সুশোভিত করে আল্লাহর কিতাব থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখে, যার অগ্র ও পশ্চাৎ দিয়ে শয়তান আসতে পারে না। তাদেরকে আরও দূরে সরিয়ে রাখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত থেকে, যা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে প্রত্যেক যুগের বড় বড় ইমামদের পরম্পরায়। তারা হিদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহী ও সফলতার বিনিময়ে ক্ষতিকে ক্রয় করেছে, আর শয়তান তাদেরকে এক ধাপ থেকে অপর ধাপ এবং এক অবস্থা থেকে অপর অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে, ফলে তারা আল্লাহর কিতাব, তার রাসূলের সুন্নত, সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, আল্লাহর ভালো বান্দা ও সকল মুমিনের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। তারা আল্লাহর ফরয ছেড়ে, তার দীনের নিদর্শনকে বাদ দিয়ে ইসলাম ও তার অনুসারীদের ষড়যন্ত্রে সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আল্লাহর দীন ও তার অনুসারীদের বিপক্ষে তারা প্রত্যেক শহর ও গ্রামে অবস্থান নিয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই বেষ্টন করে আছেন। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় শাওকানি রহ. এসব আলোচনা করেছেন।

অতঃপর তিনি বলেন, সা‘দ ইবন ওয়াক্কাস বলেছেন, “মানুষ তিনটি স্তরে বিভক্ত, দু’টি স্তর চলে গেছে, একটি স্তর বাকি আছে। তৃতীয় স্তরের ভেতর সর্বোত্তম তারাই, যারা নিম্নের আয়াতের অনুসারী, তারপর তিনি তিলাওয়াত করেন:

﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [ الحشر : ١٠ ]

“এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, মানুষকে নির্দেশ করা হয়েছে সাহাবীদের জন্য ইস্তেগফার কর, কিন্তু তারা তাদেরকে গাল-মন্দ করেছে। অতঃপর তিনি নিম্নের আয়াত পাঠ করেন। [ফাতহুল কাদির (৫/১৯৭-১৯৮)]

﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [ الحشر : ١٠ ]

গ্রন্থকার আব্দুল মুহসিন বলেন, ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থের শেষে এ হাদীস এনেছেন; কিন্তু তিনি উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন নি।

ইমাম নাওয়াওয়ী মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, কাদী ইয়াদ বলেছেন, “বাহ্যত বুঝা যায়, আয়েশা এ কথা তখন বলেছেন, যখন শুনেছেন মিসরিরা উসমান সম্পর্কে কিছু বলছে, শামের লোকেরা আলী সম্পর্কে কিছু বলছে এবং হারুরিরা সকল সাহাবী সম্পর্কেই আজে-বাজে বকছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ইস্তেগফার দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিম্নের বাণীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন:

﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [ الحشر : ١٠ ]

এ আয়াত থেকে ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে গাল-মন্দ করে, মুসলিমদের গণিমতের তার কোনো হক নেই। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা গণিমতের হক তাদেরকে দিয়েছেন, যারা পরে এসে পূর্ববর্তী সাহাবীদের জন্য ইস্তেগফার করে। আল্লাহ ভালো জানেন। [শারহুন নাওয়াওয়ী (১৮/১৫৮)।]

ইবন উমার থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তিকে কতক মুহাজিরের সমালোচনা করতে শুনেন, তিনি তার সামনে পড়লেন: ( للفقراء المهاجرين ) অতঃপর বলেন, এরা হলেন মুহাজির, তুমি কি তাদের কেউ? সে বলল, না, অতঃপর পাঠ করলেন: ( والذين تبوءوا الدار والإيمان ) এবার বলেন, এরা হলেন আনসারী, তুমি কি তাদের কেউ? সে বলল: না, অতঃপর পড়লেন: ( والذين جاءوا من بعدهم ) এরা হলেন পরবর্তী অনুসারী, তুমি কি তাদের কেউ? সে বলল, আশা করছি। তিনি বলেন, যে সাহাবীদের গাল-মন্দ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [ফাতহুল কাদির (৫/১৯৮)।]

‘কিতাবুস সুন্নাহ’-তে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের ব্যাপারে সুন্দর নীতি অবলম্বন করা ও তাদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা সুন্নত। যে সকল লোক সাহাবীকে গাল-মন্দ করে অথবা তাদের কোনো একজনকে গাল-মন্দ করে সে রাফেযী বিদ‘আতী। সাহাবীদের মহব্বত করা সুন্নত, তাদের জন্য দো‘আ করা আল্লাহর নির্দেশ, তাদের অনুসরণ করা ইবাদত ও তাদের আদর্শ গ্রহণ করা সৌভাগ্য।

তিনি আরও বলেন, সাহাবীদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা ও তাদের ছিদ্রান্বেষণ করা কারো জন্যই বৈধ নয়। শাসকের কর্তব্য এরূপ ব্যক্তিকে শাসানো ও শাস্তি প্রদান করা, তাদেরকে ক্ষমা করার অধিকার শাসকের নেই, বরং শাসক প্রথম তাদেরকে শাস্তি দিবে অতঃপর তাওবা তলব করবে, যদি তওবা করে গ্রহণ করা হবে, অন্যথায় পুনরায় শাস্তি দিয়ে জেলে দিবে, যতক্ষণ না তাওবা করে ফিরে আসে”।

ইমাম আবু উসমান সাবুনী (আকীদাতুস সালাফ ও আসহাবুল হাদীস) গ্রন্থে বলেন, সালাফ ও আসহাবুল হাদীসগণ সাহাবীদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও তাদের সম্পর্কে এমন আলোচনা থেকে জিহ্বাকে বিরত রাখেন, যা তাদের দোষ অথবা ত্রুটিকে প্রকাশ করে, বরং তারা সবার জন্য দো‘আ করে ও তাদের সবার সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করে”।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ (আল-আকীদা আল-ওয়াসিতিয়্যাহ) গ্রন্থে বলেন, “আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নীতি হচ্ছে, অন্তর ও মুখকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের দোষ চর্চা থেকে নিরাপদ রাখা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা নিম্নের বাণীতে বলেছেন,

﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [ الحشر : ١٠ ]

“এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

সাহাবীদের সম্পর্কে স্বীয় অন্তর ও মুখকে যে নিরাপদ রাখে, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পালন করে, কারণ তিনি বলেছেন,

«لاتسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصيفه» .

“তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গাল-মন্দ কর না, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার নফস, যদি তোমাদের কেউ উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ সদকা করে, তাদের কারো এক মুদ অথবা অর্ধ মুদ পর্যন্ত পৌঁছবে না”। অতঃপর ইবন তাইমিয়াহ বলেন, “আহলুস সুন্নাহ রাফেযীদের থেকে আলাদা, যারা সাহাবীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ ও তাদেরকে গাল-মন্দ করে, অনুরূপ নাসেবিদের থেকেও আলাদা, যারা কথা ও কাজ দিয়ে আহলে বায়েতকে কষ্ট দেয়। আহলুস সুন্নাহ সাহাবীদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ বিষয় মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। তারা বিশ্বাস করে, সাহাবীদের বদনাম সংক্রান্ত কতক বর্ণনা মিথ্যা, কতক বর্ণনা সীমালঙ্ঘন ও কতক বর্ণনা সঠিকভাবে পেশ করা হয় নি।”

সাহাবীদের বিরোধের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে: এসব বিরোধের জন্য তারা অপারগ ছিলেন। কেউ ছিলেন সঠিক ইজতিহাদকারী, কেউ ছিলেন ভুল ইজতিহাদকারী। এতদ সত্ত্বেও আহলুস সুন্নাহ বিশ্বাস করে না যে, প্রত্যেক সাহাবী ছোট-বড় সকল পাপ থেকে মুক্ত ছিলেন, বরং মোটের ওপর তাদের থেকে পাপ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। তবে তাদের যে আমল ও ফযীলত রয়েছে, সেটি তাদের থেকে প্রকাশ পাওয়া পাপকে মোচন করার জন্য যথেষ্ট, যদি পাপ প্রকাশ পায়। এমন কি তাদের যেসব পাপ মোচন হবে, পরবর্তীদের তা হবে না, কারণ তাদের পাপ মোচনকারী অনেক নেকি রয়েছে, যেরূপ নেকি পরবর্তী কোনো উম্মতের নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, সাহাবীগণ সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, তারা যদি একমুদ সদকা করেন, সেটি তাদের পরবর্তী কারো উহুদ পাহাড় পরিমাণ সদকার চেয়েও উত্তম। যদি তাদের থেকে কোনো পাপ প্রকাশ পায়, অবশ্যই তারা সে পাপ থেকে তাওবা করেছেন, অথবা এমন কোনো নেক কাজ করেছেন যেটি তাদের পাপকে নিঃশেষ করে দিয়েছে, অথবা তাদের পাপকে পূর্বের ফযীলতের কারণে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ দ্বারা তাদের পাপকে ক্ষমা করা হবে, কারণ তার সুপারিশের অধিক হকদার তারাই অথবা দুনিয়াতে কোনো মুসীবত দিয়ে তাদের পাপ মোচন করা হয়েছে। এসব কথা হচ্ছে তাদের প্রমাণিত পাপের ক্ষেত্রে, পক্ষান্তরে যেখানে তারা ইজতিহাদ করেছেন তাতে বলার কি আছে?! যদি সঠিক করে থাকেন দু’টি সাওয়াব, ভুল করলে একটি সাওয়াব, আর ভুলটি ক্ষমাযোগ্য।

প্রকৃতপক্ষে, সাহাবীদের যেসব কাজের সমালোচনা করা হয়, সেগুলো তাদের নেকি, ভালো কাজ ও মর্যাদার বিপরীত অনেক কম। যেমন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা, তার রাস্তায় জিহাদ করা, হিজরত ও সাহায্য করা, ইলমে নাফে‘ অর্জন ও নেক আমল করা ইত্যাদি। সাহাবীগণের জীবন চরিত যে বিবেক ও বিচক্ষণতার দৃষ্টিতে দেখবে, আল্লাহর দেওয়া তাদের ফযীলত যে পর্যালোচনা করবে, সে অবশ্যই জানবে নবীদের পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত তারা। তাদের সমান আগেও কেউ ছিল না, পরেও কেউ হবে না। তারা এ উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম সদস্য এবং আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত”।

শাইখ ইয়াহইয়া ইবন আবু বকর আল-আমেরী ইয়ামানী (রিয়াদুল মুস্তাতাবাহ ফি মান লাহু রিওয়াইয়াহ ফিস সাহিহাইন মিনাস সাহাবাহ) গ্রন্থে বলেন, “দীনদার ও নিরাপত্তার অনুসন্ধানী প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে জরুরি সাহাবীদের বিষয়গুলো সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, তাদের পরস্পরের মাঝে সৃষ্ট ইখতিলাফ ও মতবিরোধ এবং তাদের ভুলের স্বপক্ষে ওজর পেশ করা ও সঠিক কারণ দর্শানো। তাদের ইখতিলাফ থেকে বের হওয়ার উত্তম পথ খুঁজে বের করা। সাহাবীদের ইজমাকে মেনে নেওয়া। কারণ, তাদের অবস্থা সম্পর্কে তারাই বেশি জানতেন। উপস্থিত ব্যক্তি যা দেখেন, অনুপস্থিত ব্যক্তি তা দেখেন না। জ্ঞানীদের আদর্শ দোষ করলে কারণ অনুসন্ধান করা, আর মুনাফিকদের নীতি ছিদ্রান্বেষণ করা। উপরন্তু দীনের সাধারণ বিধান হচ্ছে মুসলিমদের অপরাধ ঢেকে রাখা। অতএব, সাহাবীদের দোষের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি হওয়া উচিৎ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« لاتسبوا أحدا من أصحابي» وقوله صلى الله عليه و سلم «من حسن إسلام المرء تركه مالا يعنيه»

“তোমরা আমার সাহাবীদের কাউকে গাল-মন্দ কর না”। তিনি অন্যত্র বলেছেন, “ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ করার সৌন্দর্য হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করা”। এটাই আমাদের আদর্শ এবং পূর্বপুরুষদের নীতি। এ ছাড়া অন্যান্য পথ পতনের কারণ ও ধ্বংস ব্যতীত কিছু নয়”। [রিয়াদুল মুস্তাতাবাহ পৃ. (৩১১)।]

হাফিয ইবন হাজার (ফাতহুল বারি) গ্রন্থে বর্ণনা করেন: “আবু মুজাফফার বলেছেন, ব্যক্তির লাঞ্ছিত হওয়ার প্রমাণ সাহাবীদের কোনো বিচ্যুতির পিছু নেওয়া, বরং এটি তার বিদ‘আত ও গোমরাহীর নিদর্শন”। [ফাতহুল বারি (৪/৩৬৫)।]

মায়মুনি রহ. বলেন, “আমাকে আহমদ ইবন হাম্বল বলেছেন, হে আবুল হাসান, যখন কোনো ব্যক্তিকে দেখ, কোনো সাহাবীকে খারাপভাবে উল্লেখ করছে, তার ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ কর”। [আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (৮/১৩৯)।]

খতীব বাগদাদী (আল-কিফায়াহ) গ্রন্থে বর্ণনা করেন: আবু যুর‘আহ বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তিকে দেখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীকে অসম্মান করছে, জেনে নাও সে যিন্দিক। (গোপন কাফের) তার কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হক, কুরআনও হক। আর কুরআন ও সুন্নতকে আমাদের নিকট পৌঁছিয়েছেন তার সাহাবীগণ। সে চাচ্ছে সাহাবীগণ মিথ্যা ও বাতিল প্রমাণিত হোক, যার পশ্চাতে কিতাব ও সুন্নাহ স্বাভাবিক ভাবেই বাতিল প্রমাণিত হবে, প্রকৃতপক্ষে তারা বাতিল ও যিন্দিক, এ কথাই ঠিক”। [আল কিফায়াহ পৃ. (৪৯)।]

﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ ١٠٠﴾ [ التوبة : 100]

হাফিয ইবন কাসির রহ. আল্লাহ তা‘আলার উক্ত বাণীর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে জানাচ্ছেন যে, তিনি মুহাজির ও আনসারদের ওপর সন্তুষ্ট, অনুরূপ সন্তুষ্ট ইহসানের সাথে তাদের অনুসারীদের ওপর। সুতরাং যে তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে অথবা তাদের সবাইকে গাল-মন্দ করে অথবা তাদের কোনো একজনকে অপছন্দ বা গাল-মন্দ করে তার জন্য ধ্বংস অবধারিত। বিশেষভাবে সাহাবীদের সরদার, রাসূলের পর সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে যে অসদাচরণ করে, যেমন প্রথম সিদ্দিক ও মহান খলিফা আবু বকর ইবন আবু কুহাফা। রাফেযীদের হতভাগা একটি দল শ্রেষ্ঠ সাহাবীদের অপছন্দ ও গাল-মন্দ করে, তাদের আচরণ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত রাখুন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, তাদের অন্তরগুলো বক্র ও দিকভ্রান্ত। আল্লাহ যাদের ওপর সন্তুষ্ট, তাদেরকে যখন তারা গাল-মন্দ করে, তখন কুরআনের প্রতি তাদের ঈমান কোথায় থাকে?!

আল্লাহ যাদের ওপর সন্তুষ্ট, আহলুস সুন্নাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট। আল্লাহ ও তার রাসূল যাদেরকে গাল-মন্দ করে, তাদেরকে তারাও গাল-মন্দ করে। যে আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব করে, তার সাথে তারাও বন্ধুত্ব করে, অনুরূপ যে আল্লাহর সাথে শত্রুতা করে, তার সাথে তারাও শত্রুতা করে। আহলুস সুন্নাহ পূর্বসূরিদের অনুসরণ করে, বিদ‘আত তৈরি করে না, তারা পূর্বসূরিদের পশ্চাতে চলে, নতুন রাস্তা সৃষ্টি করে না। প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর দল ও মুমিন বান্দা।”

হাফিয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, “আহলুস সুন্নাহ সবাই একমত যে, সাহাবীদের মাঝে যেসব যুদ্ধ ও মতভেদ সংঘটিত হয়েছে, সে জন্য তাদেরকে গাল-মন্দ করা যাবে না, যদিও জানা যায় তাদের ভেতর কে সঠিক ছিল, কারণ তারা ইজতিহাদ ব্যতীত কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হননি। যার ইজতিহাদ ভুল, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, বরং সে একটি সাওয়াব লাভ করবে, আর যার ইজতিহাদ সঠিক তার জন্য রয়েছে দু’টি সাওয়াব”। [ফাতহুল বারি (১৩/৩৪)।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন