HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল্লাহর দিকে আহ্বান ও দাঈর গুণাবলি

লেখকঃ শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.

আল্লাহর দিকে আহ্বান ও দা‘ঈর গুণাবলি
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আর শুভপরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য, যালেম ছাড়া আর কারও উপর আক্রমণ নেই। আর আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ, যিনি শরীকবিহীন তিনি ছাড়া হক কোনো ইলাহ নেই, তিনি পূর্বাপর সবার ইলাহ, আসমান ও যমীনসমূহের ধারণকারী। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, তাঁর বন্ধু, তাঁর ওহীর আমানতদার। তাকে তিনি সমস্ত মানুষের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শনকারী হিসেবে এবং তাঁর অনুমতিক্রমে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীরূপে ও আলোকিত ছেরাগরূপে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তার উপর, তার পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথী দের উপর সালাত পাঠ করুন, যারা আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে তার প্রদর্শিত পথে চলেছেন এবং এর উপর ধৈর্যধারণ করেছেন, আর এ পথে জ্বিহাদ করেছেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদের দ্বারা তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন, তার বাণীকে সমুন্নত করেছেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। আর তার উপর অনেক অনেক সালাম পেশ করুন। তারপর,

আল্লাহ জ্বিন-ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। তাঁর আদেশ-নিষেধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্যে, এবং তাঁর নাম ও গুণাবলিসহ তাকে জানার জন্য।

﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾ [ سورة الذاريات : 56.]

‘আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। [যারিয়াত, ৫৬।]

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴾ [ سورة البقرة : 21]

‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।’ [বাকারাহ, ২১।]

তিনি আরও বলেন,

﴿ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ سَبۡعَ سَمَٰوَٰتٖ وَمِنَ ٱلۡأَرۡضِ مِثۡلَهُنَّۖ يَتَنَزَّلُ ٱلۡأَمۡرُ بَيۡنَهُنَّ لِتَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ وَأَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عِلۡمَۢا ١٢ ﴾ [ الطلاق : ١٢ ]

‘তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীন সৃষ্টি করেছেন; এগুলির মাঝে তাঁর নির্দেশ অবতীর্ণ হয় যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে।’ [সূরা ত্বালাক্ব, ১২।]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা সুষ্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি সৃষ্টিকুল সৃজন করেছেন, যেন তাঁর ইবাদত করা হয়, যথাযথ ভাবে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করা হয় এবং তাঁর আদেশ-নিষেধের অনুসরণ করা হয়। কারণ ইবাদত হল: আল্লাহর আদেশ-নিষেধসমূহকে সম্মান করার সাথে সাথে তাঁর একত্ববাদকে স্বীকার করা এবং তাঁর আনুগত্য করা। আকাশ-যমীন ও এ দুয়ের মাঝে সবকিছুর সৃষ্টির রহস্য বর্ণনা করে তিনি বলেন, এসব সৃষ্টি করেছেন, যাতে সৃষ্টিকুল এটা জানতে পারে যে, আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং তাঁর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে-সবকিছুই তাঁর জ্ঞানের অধীন।

এর মাধ্যমে তা জানা গেল সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি ও অস্তিত্বদানের রহস্য কি, আর তা হচ্ছে, সৃষ্টিকুল আল্লাহর নাম ও গুণাবলিসহ তাঁর পরিচয় জানবে এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান ও সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত মর্মে জ্ঞান লাভ করবে। যেমনিভাবে এদের সৃষ্টি ও অস্তিত্বদানের হিকমত হল, তারা তাঁর ইবাদত করবে, তাঁকে সম্মান করবে, তাঁর মহত্ব স্বীকার করবে এবং তাঁর বড়ত্বের কারণে তারা তাঁর কাছে নত হবে।

ইবাদত হচ্ছে: আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে নিবেদন করা এবং তাঁর কাছে অবনত হওয়া। মহান আল্লাহ মুকাল্লাফ তথা শরীয়ত প্রতিপালনের দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে আদেশ-নিষেধ বিষয়ক দায়িত্বগুলো সম্পাদন করার যে হুকুম দিয়েছেন সে সব আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে দূরে অবস্থান করাকেও ইবাদত বলা হয়েছে; কারণ এগুলো আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর কাছে নতশির হওয়ার মাধ্যমে আদায় করা হয়ে থাকে।

যখন মানুষের পক্ষে শুধুমাত্র বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে ইবাদতের স্বরূপ ও তার মূল তত্ত্বকথা বিস্তারিতভাবে আয়ত্ব করা সম্ভব নয়, অনুরূপভাবে ওই বিবেকের মাধ্যমে আহকাম তথা শরয়ী বিধি-নিষেধ সবিস্তারে জানাও অসম্ভব, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা যে উদ্দেশ্যে মাখলুক সৃষ্টি করেছেন সে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য প্রেরণ করলেন অসংখ্য নবী-রাসূল, অবতীর্ণ করলেন অনেক কিতাব। যাতে তারা জেনে শুনে আল্লাহর ইবাদত করে, এবং জেনে শুনে নিষিদ্ধ কাজসমূহ ত্যাগ করে। সে বিচারে রাসূলগণ হলেন মাখলুকের পথ প্রদর্শক এবং হেদায়াতের ইমাম। জ্বিন-ইনসান সকলকে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের দিকে আহ্বানকারী। আল্লাহ তাদের মাধ্যমে স্বীয় বান্দাদের সম্মানিত করেছেন, তাদের প্রেরণ করে নিজ বান্দাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন এবং তাদের হাতেই স্পষ্ট করেছেন সঠিক ও সরল পথ; যাতে বান্দাদের নিজেদের ভালো-মন্দ বিষয়ে পরিষ্কার জানা থাকে, এবং বলতে না পারে যে আল্লাহ আমাদের কাছে কী চেয়েছেন তা আমরা জানতে পারি নি, আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা এবং ভীতিপ্রদর্শনকারী আসে নি। এভাবেই আল্লাহ এরূপ ওজর-আপত্তির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন রাসূলদের প্রেরণ ও কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করে ।

যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ﴾ [ النحل : ٣٦ ]

‘আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি এই বার্তা দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগি কর, এবং তাগুতকে বর্জন কর। ’ [সূলা নাহল ৩৬।]

তিনি আরও বলেন,

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥ ﴾ [ الانبياء : ٢٥ ]

‘আমি তোমার পূর্বে কোন রাসূল প্রেরণ করেনি এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ছাড়া অন্য কোন মা’বুদ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।’ [সূরা আম্বিয়া, ২৫।]

আরও বলেন,

﴿ لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا رُسُلَنَا بِٱلۡبَيِّنَٰتِ وَأَنزَلۡنَا مَعَهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡمِيزَانَ لِيَقُومَ ٱلنَّاسُ بِٱلۡقِسۡطِۖ ﴾ [ الحديد : ٢٥ ]

‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদের প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ এবং তাদের সঙ্গে পাঠিয়েছি কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদণ্ড; যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।’ [সূরা হাদীদ, ২৫।]

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

﴿ كَانَ ٱلنَّاسُ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ فَبَعَثَ ٱللَّهُ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ فِيمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِۚ ﴾ [ البقرة : ٢١٣ ]

‘মানব জাতি একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল; অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে নবীগণকে প্রেরণ করলেন এবং সত্যসহ তাদের সাথে কিতাব নাযিল করলেন, যাতে মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত।’ [সূরা বাক্বারা, ২২৫।]

অতঃএব আল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে তিনি রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন, মানুষের মাঝে হক এবং ইনসাফ ভিত্তিক ফায়সালা করার জন্য, আর শরীয়ত ও আকীদার যে সব বিষয়ে তারা বিরোধ করেছিল তা স্পষ্ট করার জন্য। কারণ আল্লাহর বাণী كان الناس أمة واحدة ‘মানব জাতি ছিল একটি উম্মাহ-জাতি, এর অর্থ হলো তারা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, হক বিষয়ে তারা কোন মতবিরোধ করত না; আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকে আল্লাহর রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের নবুয়্যত কাল পর্যন্ত। তারা ছিল হিদায়াতের উপর, আয়াতের এ তাফসীরই করেছেন সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও পূর্ববর্তী-পরবর্তী অনেক মনীষীগণ। অতঃপর নূহ আলাইহিস সালামের কওমের মাঝে শির্কের অনুপ্রবেশ ঘটে। তারা পরস্পর মতবিরোধ করলো এবং বিরোধ করলো তাদের উপর অবশ্য পালনীয় আল্লাহর হক বিষয়ে। আর তারা যখন শির্ক ও ঝগড়া-বিবাদে জড়ালো তখন আল্লাহ তা‘আলা নূহ এবং পরবর্তী রাসূলদের প্রেরণ করলেন।

যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ

﴿ ۞إِنَّآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ كَمَآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ نُوحٖ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ مِنۢ بَعۡدِهِۦۚ ﴾ [ النساء : ١٦٣ ]

‘নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি যেরূপ প্রত্যাদেশ করেছিলাম নূহ ও তৎপরবর্তী নবীগণের প্রতি।’ [সূরা নিসা, ১৬৩।]

﴿ وَمَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ ٱلَّذِي ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٦٤ ﴾ [ النحل : ٦٤ ]

‘আমি তো তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে এবং মুমিনদের জন্যে পথনির্দেশ ও দয়াস্বরূপ।’ [সূরা নাহাল, ৬৪।]

সুতরাং আল্লাহ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, মানুষ যে সব বিষয়ে মতভেদ করেছিল সে বিষয়ে আল্লাহর হুকুম বর্ণনা করার জন্যে, মানুষের অজানা বিষয়ে আল্লাহর বিধানের বর্ণনা দেয়ার জন্যে, তাদেরকে শরীয়ত আঁকড়ে ধরা ও তার নির্ধারিত সীমায় অবস্থানের আদেশ দান এবং ইহকাল ও পরকালে তাদের জন্যে ক্ষতিকর বিষয়াদি থেকে বারণ করার জন্যে। আল্লাহ তা‘আলা রাসূল প্রেরণের ধারা সমাপ্ত করেছেন রাসূলদের ইমাম, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহর মাধ্যমে। তিনিসহ সকল নবীদের উপর আল্লাহ্‌র উত্তম সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত রিসালত পৌঁছিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মতের কল্যাণ কামনা করেছেন, আল্লাহর জন্যে যথার্থভাবে লড়েছেন, গোপন ও প্রকাশ্যে আল্লাহর প্রতি দা‘ওয়াত দিয়েছেন এবং আল্লাহর খাতিরে কঠিন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন যেমন ধৈর্য ধারণ করেছিলেন তাঁর পূর্বে আগমনকারী নবী-রাসূলগণ -আলাইহিমুস সালাতু ওয়াসসালাম। তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন যেমন তারা ধৈর্য ধারণ করেছিলেন এবং রিসালত পৌঁছানোর দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন যেমনি করে তারা এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে তিনি নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন অনেক বেশি এবং সহ্যও করেছেন অনেক বেশি। আর তিনি রিসালতের দায়িত্ব পরিপূর্ণরূপে সম্পাদন করেছেন। তাঁর ও তাদের সকলের উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক। তেইশ বছর অবস্থান করে আল্লাহর রিসালাত পৌঁছিয়েছেন এবং তাঁর দিকে আহ্বান করেছেন, তাঁর আহকাম তথা বিধি-বিধান প্রচার-প্রসার করেছেন। তন্মধ্যে উম্মুল কুরা তথা মক্কায় তের বছর, প্রথমে গোপনে পরে প্রকাশ্যে। হক প্রকাশ্যে উচ্চারণ করেছেন এবং নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন, দা‘ওয়াতে এবং মানুষ কর্তৃক অত্যাচারে তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন। অথচ তারা তাঁর সততা এবং আমানতদারী বিষয়ে জানতো। তারা স্বীকৃতি দিত তার শ্রেষ্ঠত্বের, তাঁর বংশ, তাঁর মান-মর্যাদার। তবে নেতাদের কামনা-বাসনা ও হিংসা-বিদ্বেষ আর সাধারণের মূর্খতা এবং অন্ধানুকরণ ছিল এর কারণ। তাই নেতারা অস্বীকার করলো, অহংকার করলো, হিংসা করলো, আর সাধারণ লোকেরা অন্ধানুকরণ করল এবং নেতাদের অনুসরণ করল ও খারাপ কাজ করল, এ কারণে তিনি অনেক কঠিন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। তাদের নেতারা যে জেনে-শুনে ও গোয়ার্তুমি করে সত্যের বিরোধিতা করেছিল তার প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿قَدۡ نَعۡلَمُ إِنَّهُۥ لَيَحۡزُنُكَ ٱلَّذِي يَقُولُونَۖ فَإِنَّهُمۡ لَا يُكَذِّبُونَكَ وَلَٰكِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ يَجۡحَدُونَ ٣٣ ﴾ [ الانعام : ٣٣ ]

‘আমি অবশ্যই জানি যে, তারা যা বলে তা তোমাকে দুঃখ দেয়। কিন্তু তারা তো তোমাকে অস্বীকার করে না, বরং যালিমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।’ [সূরা আনআম, ৩৩।]

আল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যারোপ করতো না, তাদের অন্তরে গোপনে তাঁর সততা ও আমানতদারী সম্পর্কে সম্যক জানত। বরং তারা তাঁকে সম্বোধনই করতো ‘আল আমীন’ বলে; এবং এটি ওহী অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই। তবে তারা সত্যকে অস্বীকার করল, বিদ্বেষ ও অবাধ্যতাবশত। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সবের কোন পরওয়া করেন নি, বরং ধৈর্য ধারণ করেছেন, সওয়াবের আশা করেছেন এবং আপন লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছেন অবিচলতার সাথে। এ ভাবেই তিনি ছিলেন সর্বদা মহান আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী, নির্যাতনে ধৈর্যশীল, দা‘ওয়াতের প্রতি জিহাদকারী, যন্ত্রনা প্রদান থেকে দূরে অবস্থানকারী, কষ্ট সহ্যকারী, এবং যথাসাধ্য তাদের থেকে সংঘটিত অসৌজন্যমূলক আচার-আচরণ মার্জনাকারী। এক পর্যায়ে অবস্থা খুব মারাত্মক আকার ধারণ করল। তারা তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। ঠিক এ সময়ে আল্লাহ তাঁকে মদীনায় হিজরত করার অনুমতি দিলেন, তিনি মদীনায় হিজরত করে চলে আসলেন, আর মদীনা হয়ে গেল ইসলামের প্রথম রাজধানী। মদীনায় আল্লাহর দ্বীনের বিজয় হলো এবং সেখানে মুসলিমদের একটি রাষ্ট্র ও শক্তির ভিত সূচিত হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হকের প্রচার ও প্রসারতার ধারা চালিয়ে গেলেন নির্ভীকভাবে। তরবারির মাধ্যমে জিহাদ শুরু করলেন। মানুষকে কল্যাণ ও হিদায়াতের দিকে আহ্বানের জন্য দূত পাঠাতে লাগলেন দিকে দিকে। তারা মানুষকে তাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দা‘ওয়াতের মর্ম ব্যাখ্যা করতে থাকলেন অবিরাম। আর তিনি তাঁর সাথীদেরকে যুদ্ধাভিযানে পাঠিয়েছেন, নিজেও বিখ্যাত যুদ্ধগুলোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এক পর্যায়ে তার হাতে আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করলেন, দ্বীনকে পূর্ণতা দিলেন, তাঁর ও তাঁর উম্মতের উপর নিয়ামতকে পরিপূর্ণ করলেন। এ দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ এবং যথাযথভাবে পৌঁছানোর পর তাঁকে মৃত্যু দান করা হয়েছে। তাঁর অবর্তমানে এ আমানত সাহাবায়ে কেরাম বহন করলেন এবং তাঁর পথ অনুসরণ করলেন। আল্লাহর দিকে আহ্বান করলেন এবং তারা হকের দা‘ঈ, আল্লাহর পথে জিহাদকারী হয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়লেন। আল্লাহর স্বার্থে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তারা ভয় করতেন না। তারা আল্লাহর রিসালাতকে পৌঁছাতেন, তাঁকে ভয় করতেন অন্য কাউকে নয়। ছড়িয়ে পড়লেন বিশ্বময় বিজয়ী মুজাহিদ, সরল পথের দা‘ঈ, কার্যকর সংস্কারক হিসেবে। তারা আল্লাহর দ্বীন প্রচার করতেন, তাঁর শরীয়ত মানুষকে শিক্ষা দিতেন এবং তারা মানুষের জন্যে আকীদাহ বিষয় ব্যাখ্যা করতেন যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছিল রাসূলগণ। যে আকীদার মূল ভাষ্য হলো, আন্তরিকভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য সবকিছু-গাছ, পাথর, মূর্তি ইত্যাদির ইবাদাত পরিত্যাগ করা। অতএব ডাকা যাবে না আল্লাহকে ছাড়া, সাহায্য প্রার্থনা করা যাবে না আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে, বিচার-ফায়সালা মানা যাবে না আল্লাহর শরীয়ত ছাড়া, নামায আদায় করা যাবে না তাঁর উদ্দেশ্যে ব্যতীত, মান্নত করা যাবে না তাঁর নামে ছাড়া, এক কথায় সকল ইবাদত তাঁর জন্য হওয়া।

এবং তারা মানুষের কল্যাণে ব্যাখ্যা করেছেন যে, ইবাদত আল্লাহর হক্ব এবং তাদের সামনে এ বিষয়ে অবতীর্ণ আয়াতগুলো পাঠ করেছেন। যেমন-

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ﴾ [ البقرة : ٢١ ]

‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর’ [সূরা বাকারাহ ,২১।]

﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ﴾ [ الاسراء : ٢٣ ]

‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না’ [সূরা ইসরা, ২৩]

﴿ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ﴾ [ الفاتحة : ٥ ]

‘আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।’ [সূরা ফাতিহা, ০৫।]

﴿فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ]

‘সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকেও ডেকো না’ [সূরা জ্বীন, ১৮।]

﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣ ﴾ [ الانعام : ١٦٢، ١٦٣ ]

‘বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহর জন্যে, যিনি সকল সৃষ্টির রব। তাঁর কোন শরীক নেই, আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম।’ [সূরা আনআম, ১৬২-১৬৩।]

তারা এর উপর ইস্পাত কঠিন ধৈর্য ধারণ করেছেন এবং আল্লাহর পথে মহা সংগ্রাম করেছেন। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করেছেন। তাদের অনুসরণ করেছেন আরব- অনারবের তাবেঈন তাবে তাবেঈন- হিদায়েতের ইমামগণ। তারা এ পথের পথিক হয়েছেন, দা‘ওয়াত ইলাল্লাহ্‌র পথে চলেছেন, বহন করেছেন দা‘ওয়াতের বোঝা, আমানত আদায় করেছেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করেছেন ধৈর্য, সততা, আন্তরিকতার সাথে। যারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে গেছে এবং দ্বীনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অথচ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত জিযয়া আদায় করে নি, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। কারণ তারাই দা‘ওয়াতের প্রকৃত ধ্বজাধারী। সুতরাং রাসূলের পর তারাই দা‘ওয়াতের বাহক, পথ প্রদর্শনের ইমাম। এমনিভাবে সাহাবাদের পরবর্তী যারা এসেছেন তারাও এ পথ অনুসরণ করেছেন। এ পথে ধৈর্য ধারণ করেছেন। আর আল্লাহর দ্বীন প্রসার লাভ করেছে, সাহাবা এবং পর্যায়ক্রমে তাদের পরবর্তী দ্বীনী জ্ঞানে জ্ঞানী ও ঈমানদারদের হাতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এ দা‘ওয়াতী মিশনে আরব- অনারব, আরব উপদ্বীপের উত্তর ও দক্ষিনের এবং এর বাইরে সমগ্র বিশ্ব হতে অংশ গ্রহণ করেছেন অনেক দ্বীনদার মানুষ; যাদের ভাগ্য আল্লাহ সুপ্রসন্ন করেছেন, যারা ইসলাম কবুল করেছেন, দা‘ওয়াত ও জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছেন, এর জন্যে ধৈর্য ধারণ করেছেন। যাদের ধৈর্য, ঈমান, আল্লাহর পথে লড়াইয়ের ফলস্বরূপ এসেছিল সৌভাগ্য, নেতৃত্ব, দ্বীনের ইমামত। তাদের ক্ষেত্রে বনী ইসরাঈলদের প্রসঙ্গে আগত আল্লাহর বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

﴿ وَجَعَلۡنَا مِنۡهُمۡ أَئِمَّةٗ يَهۡدُونَ بِأَمۡرِنَا لَمَّا صَبَرُواْۖ وَكَانُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا يُوقِنُونَ ٢٤ ﴾ [ السجدة : ٢٤ ]

‘আর আমি তাদের মধ্য হতে কিছু লোককে নেতা মনোনীত করেছিলাম যারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতো। তারা ধৈর্যধারণ করতো আর তারা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী।’ [সূরা সাজদাহ, ২৪।]

কুরআনের এ অমোঘ বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে রাসূলের সাহাবা ও তাদের অনুগামীদের মাঝে। তারা ইমাম, হেদায়েতের পথ প্রদর্শক, হক্বের প্রতি আহ্বানকারী ও অনুকরণীয় আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তাদের ইস্পাত কঠিন ধৈর্য ও দৃঢ় ঈমান তাদেরকে এ মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। কারণ ধৈর্য ও দৃঢ় বিশ্বাসের ফলে দ্বীনের ইমামত ও নেতৃত্ব লাভ হয়। সুতরাং নবী সহচরবৃন্দ ও অদ্যাবধি যারা সর্বকাজে তাদের অনুসরণ করেছে তারাই মূলত: সত্যের পথপ্রদর্শক ও ন্যায়ের পথে নেতৃত্বদানকারী।

উপরোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সত্যানুসন্ধিৎসু প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট পরিস্কার হয়ে গেল যে, আল্লাহর দিকে আহ্বান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সর্বকালে সর্বস্থানে উম্মতের জন্য এ দা‘ওয়াতের প্রয়োজনীয়তা অত্যাধিক বরং এটি অত্যাবশ্যকীয়ও বটে।

দা‘ওয়াত বিষয়ক বক্ষমান নিবন্ধে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পাবে।

দা‘ওয়াতের হুকুম ও ফযিলত

আদায় ও পদ্ধতি

দা‘ওয়াতী বিষয়বস্তু

দা‘ওয়াত কর্মীর জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি, যা তাকে অবশ্যই অর্জন করতে ও সে পথে চলতে হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন