hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামী আন্দোলনে বিজয়ের স্বরূপ

লেখকঃ ডঃ নাছের বিন সোলায়মান আল-ওমর

১৬
বিজয় সম্পর্কিত হাদীছ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে এমন কিছু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যার দ্বারা বিজয়ের মর্ম ও পরাজয় সম্পর্কিত আমাদের ভুল ধারণা অনুধাবন করা যায়। নিম্নের হাদীছগুলির প্রামাণ্য আলোচনা থেকে তা স্পষ্ট হবে।-

১নং হাদীছ:

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قاَلَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : عُرِضَتْ عَلَىَّ الْأُمَمُ فَأَخَذَ وَ النَّبِىُّ يَمُرُّ مَعَهُ النَّفَرُ النَّبِىُّ يَمُرُّ مَعَهُ الْأُمَّةُ وَالنَّبِىُّ يَمُرُّ مَعَهُ الْعَشْرَةُ وَالنَّبِىُّ يَمُرُّ مَعَهُ الْخَمْسَةُ وَالنَّبِىُّ يَمُرُّ وَحْدَهُ فَنَظَرْتُ فَإِذَا سَوَادٌ كَثِيْرٌ قُلْتُ يَاجِبْرِيْلُ هؤُلاَءِ أُمَّتِىْ قَالَ لاَوَلِكِنْ انْظُرْ إِلَى الْأفُقِ فَنَظَرْتُ فَإِذَا سَوَادٌ كَثِيْرٌ قَالَ هوُلاَءِ أُمَّتُكَ , وَهؤُلاءِ سَبْعُوْنَ ألْفًا قُدَّامُهُمْ لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ وَلاَعَذَابَ -

আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বিভিন্ন উম্মতকে আমার সামনে উত্থাপন করা হ’ল। নবীগণ এক এক করে অতিক্রম করতে লাগলেন। দেখা গেল, কোন নবীর সাথে রয়েছে একটি দল, কোন নবীর সাথে রয়েছে একটি গোত্র, কোন নবীর সাথে দশ জন, কোন নবীর সাথে রয়েছে পাঁচ জন, আর কোন নবী অতিক্রম করছেন একাকী। তারপর আমি দেখলাম অনেক দল। আমি বললাম, ‘জিবরীল! এরা কি আমার উম্মত? তিনি বললেন, না। আপনি বরং দিগন্তের দিকে তাকান। আমি তাকিয়ে দেখলাম অনেক দল। তিনি বললেন, এরা সব আপনার উম্মত। এদের সামনে রয়েছে ৭০ হাযার লোক। তাদের না হবে হিসাব, না হবে আযাব’।[1]

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عُرِضَتْ عَلَىَّ الْأُمَمُ فَجَعَلَ يَمُرُّ النَّبِىُّ مَعَهُ الرَّجُلُ وَ النَّبِىُّ مَعَهُ الرَّجُلاَنِ وَالنَّبِىُّ مَعَهُ الرَّهْطُ وَالنَّبِىُّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ -

‘বিভিন্ন উম্মতকে আমার সামনে পেশ করা হ’ল। দেখা গেল, একজন নবী অতিক্রম করছেন তাঁর সাথে রয়েছে একজন লোক। আরেক নবীর সাথে রয়েছে দু’জন, আরেক জনের সাথে রয়েছে অনধিক দশ জনের একটি দল। কোন নবী এমনও রয়েছেন সাথে একজনও নেই’।[2]

ছহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনু আববাসের বাচনিক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে উদ্ধৃত হয়েছে এভাবে-

عُرِضَتْ عَلَىَّ الْأُمَمُ فَرَأَيْتُ النَّبِىَّ وَمَعَهُ الرُّهَيْطَ وَالنَّبِىُّ مَعَهُ الرَّجُلُ والَرَّجُلاَنِ وَالنَّبِىُّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ إِذْ رُفِعَ لِىْ سَوَادٌ عَظِيْمٌ -

‘বিভিন্ন উম্মতকে আমার সামনে পেশ করা হ’ল। আমি দেখলাম, একজন নবীর সাথে রয়েছে (অনধিক দশজনের) ক্ষুদ্র একটি দল। আরেক নবীকে দেখলাম তাঁর সাথে রয়েছে একজন বা দু’জন লোক। আরেক নবীকে দেখলাম তাঁর সাথে একজনও নেই। ইতিমধ্যে আমার সামনে তুলে ধরা হ’ল একটি বিরাট দল’।[3]

আমাদের আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে অত্র হাদীছগুলির সম্পর্ক নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলিতে রয়েছে। রাসূলুল্লহ (ছাঃ) প্রথমে একটি বা বেশী মানুষের দল কিংবা বৃহৎ দল দেখতে পান। তারপর আরেকটি বেশী মানুষের দল দেখতে পান, যারা দিগন্ত জুড়ে ছিল। প্রথম দল ছিল মূসা (আঃ)-এর উম্মত এবং দ্বিতীয় দল হ’ল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মত। এই দৃশ্য মহানবী (ছাঃ)-এর প্রকাশ্য বিজয়ের এক প্রতিচ্ছবি। কেননা দ্বীনের প্রসার ও লোকদের উত্তরোত্তর ঈমান আনয়নের ফলেই এমন একটা পর্যায় ও সংখ্যায় তারা উপনীত হয়েছিল। এটাই সেই প্রথম শ্রেণীর বিজয়, যার আলোচনা ইতিপূর্বে করা হয়েছে। এমনিভাবে ঐ নবীও বিজয়ী, যাঁর সাথে একটি দল রয়েছে।

হাদীছে এসেছে, কোন নবী দশজন অনুসারী সহ অতিক্রম করেছেন, কোন নবীর সাথে ছিল পাঁচ জন, কারও সাথে ছিল মাত্র একজন, কেউবা ছিলেন একা। কিন্তু আমরা নবী-রাসূলগণের কারও বিজয়ে সন্দেহ করি না। আল্লাহ তো আমাদের সে রকমই বলেছেন,

إنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ َيَقُوْمُ الْأشْهاَدُ -

‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণ ও মুমিনদেরকে দুনিয়ার জীবন ও ক্বিয়ামত দিবসে সাহায্য করব’ (মুমিন ৪০/৫১)।

লক্ষ্য করুন, আমরা কোন নবীকে পাচ্ছি যে তিনি ক্বিয়ামত দিবসে দশজন অনুসারী নিয়ে হাযির হবেন। দ্বিতীয় জন হাযির হবেন পাঁচ জনকে নিয়ে, তৃতীয় জন দু’জনকে নিয়ে, চতুর্থ জন একজনকে নিয়ে এবং পঞ্চম জন একাই।

আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই নবীগণের দশ-পাঁচ বা দু-একজন অনুসারীর অনেকেই নবীগণের জীবনাবসানের পর ঈমান এনেছেন। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর যে সকল উম্মতকে দেখেছিলেন তারা কেবলই তাঁর জীবদ্দশায় ঈমান আনয়নকারী নন; বরং তারা অনেকে তাঁর জীবদ্দশায় ঈমান এনেছিলেন এবং অনেকে তাঁর জীবনাবসানের পর ঈমান এনেছিলেন। যদিও তিনি অন্য নবীগণের থেকে স্বতন্ত্র ছিলেন, ছিলেন শেষ ও মোহরাঙ্কিত নবী।

এতে করে আমরা বুঝি, বিজয় শুধুই অনুসারীদের সংখ্যাধিক্য ও হুড়হুড় করে জনগণের ঈমান গ্রহণের মাঝে সীমিত নয়। এটা বিজয়ের নানা শ্রেণীর একটি। বিশেষ করে অনুসারীরা যখন সঠিক কর্মনীতির উপর বহাল থাকবে। ফলে সংখ্যার কম-বেশীতে কিছু আসবে-যাবে না। আর প্রত্যেক নবীরই আখেরাতের আগে দুনিয়াতেই আল্লাহ প্রদত্ত সাহায্য প্রাপ্তি সম্পর্কে আমরা কোন সন্দেহ করতে পারি না। তাঁরা যে স্বল্প সংখ্যক অনুসারী বানাতে পারলেন কিংবা মোটেও পারলেন না তবে কি তাঁরা আল্লাহর সাহায্য পাননি? অবশ্যই পেয়েছেন, কিন্তু অনুসারীদের সংখ্যা হিসাব করলে তা বোঝা যায় না।

অতএব ফলকথা এই দাড়াচ্ছে যে, এখানে সাহায্য ও বিজয়ের আরও অনেক শ্রেণী রয়েছে, যার এক বা একাধিক শ্রেণী ঐ নবীগণ পেয়েছেন। কিন্তু অনেকের মগযে এমনকি কোন কোন প্রচারকের নিকটও তা ধরা পড়ে না।

এই সত্য ও বাস্তবতাকে উপলব্ধিতে আনা ও উহার আঙ্গিকে আমাদের কাজ চালিয়ে যাওয়া, বিজয় ও সাহায্যের অন্যতম শ্রেণী। বরং বিজয় নিশ্চিত করার প্রথম পদক্ষেপ।

২নং হাদীছ :

عَنْ خَبَّابِ بْنِ الْأَرَتِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ شَكَوْنَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً فِىْ ظِلِّ الْكَعْبَةِ، فَقُلْنَا : أَلاَ تَسْتَنْصِرُ لَنَا أَوَ تَدْعُوْلَنَا فَقَالَ قَدْ كَانَ مَنْ قَبْلَكُمْ يْؤْخَذُ الرَّجُلُ فَيُحْفَرْ لَهُ فِى الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيْهَا، ثُمَّ يُؤْتِى بِالْمِنْشَارِ فَيُوْضَعُ عَلىَ رَأَسِهِ فَيُجْعَلُ نِصْفِيْنِ، وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الْحَدِيْدِ مَا دُوْنَ لَحْمِهِ وَعَظْمِهِ مَا يَبْعَدُهُ ذَلِكَ عَنْ دِيْنِهِ وَاللهِ لَيُتِمَّنَّ تَعَالىَ هَذَا الْأَمْرَ حَتَّى يَِسِيْرَ الرَّاكِبُ مِنَ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ فَلاَ يَخَافُ إلاَّ الله وَالذِّئْبُ عَلىَ غَنَمِهِ وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُوْنَ -

‘খাববাব বিন আরাত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কা‘বার চত্বরে চাদরকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে ছিলেন। ইত্যবসরে আমরা তাঁর নিকট অভিযোগ করে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দো‘আ করবেন না? তিনি এ কথা শুনে বললেন, ‘তোমাদের পূর্ব যুগে কোন ঈমানদার লোককে ধরে আনা হ’ত, তার জন্য মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তাতে তাকে রাখা হ’ত। তারপর করাত আনা হ’ত এবং তার মাথার উপর রেখে তাকে চিরে দু’ভাগ করে ফেলা হ’ত। আবার কোন সময় লোহার চিরুনী দিয়ে তার গোশত হাড্ডি আলাদা করে ফেলা হ’ত। এতসব কিছু সত্ত্বেও তাকে তার দ্বীন থেকে বিচ্যুত করা যেত না। আল্লাহর শপথ, অবশ্যই আল্লাহ এই দ্বীনকে পূর্ণতা দান করবেন। তখন একজন আরোহী (ইয়ামনের রাজধানী) ছান‘আ হ’তে হাযারামাউত (ইয়ামনের অন্য একটি শহর) পর্যন্ত দীর্ঘ পথ সফর করবে। এই সুদূর পথে সে আল্লাহ ও তার ছাগপালের উপর নেকড়ের ভয় ব্যতীত আর কোন ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা খুব তাড়াহুড়া করছ’।[4]

উক্ত হাদীছের পর্যালোচনা থেকে আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলি জানতে পারি:

(১) খাববাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আল্লাহর সাহায্যের নিমিত্ত দো‘আ চাইতে এসেছিলেন। তাঁর কথায় বোঝা যায় কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণকে যে নানারূপ কষ্ট দিত, তার প্রতিকার বিধানের জন্য দো‘আ করতে বলেছিলেন। এরূপ প্রতিকার প্রতি বিধান প্রকাশ্য বিজয়ের অংশ। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকে মোড় ঘুরিয়ে আরেক বিজয়ের বার্তা প্রদান করেছেন। তা হ’ল যাবতীয় কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেও আল্লাহর দ্বীনের উপর অবিচল থাকা। আর তাতে দ্বীন ও আক্বীদা রক্ষায় যদি একজন মুসলমানের জীবন কুরবানী হয়ে যায়, তবুও কোন পরওয়া নেই। এতে বাহ্যিকভাবে পরাজয় মনে হ’লেও মূলে বিজয় অর্জিত হবে। সে শহীদী মৃত্যুবরণ করবে এবং জান্নাত লাভ করবে।

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পরে তাঁকে প্রকাশ্য বিজয়ের কথাও বলেছেন। সেটা যে হবে তাও নিশ্চিত। কিন্তু এও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, দ্বীনের উপর অবিচলতা ও ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ব্যতীত তা লাভ করা যাবে না।

(৩) আমরা লক্ষ্য করলে দেখি যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা উল্লেখ করেছেন এবং যে জন্য কসম খেয়েছেন তা হ’ল দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা লাভ। ইসলাম যে তাঁরই হাতে পূর্ণতা লাভ করবে সে কথাই তিনি কসম করে উল্লেখ করেছেন। এই পূর্ণতা লাভ এক প্রকার বিজয়। তবে প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী প্রচারকের জীবদ্দশায় নাও ঘটতে পারে। ছান‘আ থেকে হাযারমাউত পর্যন্ত একজন আরোহীর নির্বিঘ্নে ভ্রমণ নিশ্চিত হয়েছিল; কিন্তু তা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ওফাতের পর। সুতরাং একজন প্রচারকের এ সম্পর্কে সজাগ থাকা কর্তব্য। তার খেয়াল রাখা দরকার যে, দ্বীনের বিজয় তার একার জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।

(৪) ‘কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছ’ রাসূলের এই উক্তিটি খুবই বাস্তব। দ্বীন বিজয়ের উদগ্র বাসনায় অনেক প্রচারক এমন কিছু করে বসে, যা উহার বিজয়কে পিছিয়ে দেয়। তাড়াহুড়া এমনই একটি কাজ। এই প্রচারকরা তাদের কাজের ফলাফল দুনিয়ার জীবনেই শুধু নয়; বরং কাজে নামার প্রথমেই দেখতে চায়। অথচ এটা কোন নবী-রাসূলের জীবনেও ঘটেনি।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর সাহায্য, প্রচারকের ধৈর্য, চিত্তের দৃঢ়তা ও বৈরী অবস্থাকে মানসিকভাবে মেনে নেওয়া এবং সেই সঙ্গে তাড়াহুড়া না করা। তিনি আমাদেরকে এও শিখিয়েছেন যে, আমাদের মন-মগযে বিজয় বলতে যা অতি দ্রুত ভেসে ওঠে, বিজয় আসলে তার থেকেও ব্যাপকতর। উহা শুধু প্রকাশ্য বিজয়ের তথা শত্রুকে পদানত করার মাঝে সীমাবদ্ধ নয় এবং প্রকাশ্য বিজয় প্রচারকের জীবদ্দশায় নিশ্চিত হওয়া যরূরী নয়।

৩নং হাদীছ :

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِى اللهُ عَنْهُ قَالَ قاَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى االلهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّّ قَالَ مَنْ عَادَىِ لِىْ وَلِياًّ فَقَدْ أَذَِّنْتُهُ بِالْحَرْبِ -

‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কারণে আমার ওয়ালী বা বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা রাখবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছি’।[5]

অত্র হাদীছ হ’তে পরিষ্কারভাবে জানা যায় যে, মুমিন যখন দৃঢ় বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তার সাথে আছেন আর এ বিশ্বাস তার জন্য অপরিহার্যও বটে, তখন সে আল্লাহর বন্ধুত্বে পরিণত হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু আল্লাহ তো অবশ্যই তার সাথে কষ্টদাতা ও শত্রুতাকারীর বিরুদ্ধে যু্দ্ধ ঘোষণা করছেন, তখন আল্লাহ যে তাকে সাহায্য করবেন সে বিশ্বাসও তাকে সন্দেহাতীতভাবে রাখতে হবে। কেননা এ সংঘর্ষ তো কেবল প্রচারক ও তার শত্রুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং আল্লাহ পর্যন্ত সম্প্রসারিত। এরূপ সংঘর্ষে কে বিজয়ী হবে আর কে পরাজিত হবে তা নির্ণয় করতে কোন যুক্তি-বুদ্ধি খরচের প্রয়োজন পড়ে না। বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে একই রকম। কেননা বিজয়ের ধরন, স্থান ও কাল আল্লাহই নির্ধারণ করেন। যদিও অনেক ধরনের বিজয় আমাদের ক্ষুদ্র দৃষ্টি, সীমাবদ্ধ কামনা ও মানবীয় চিন্তা-গবেষণায় ধরা পড়ে না।

অবশ্য আমাদের নিশ্চিত জেনে রাখতে হবে যে, এই সংঘর্ষ প্রথম থেকেই ছিন্নমূল, শুরুর আগেই এর ফলাফল পরিজ্ঞাত। এই বিশ্বাস সহ আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে যাব। আমরা তাড়াহুড়াও করব না, হতাশও হব না এবং এমন কোন পদক্ষেপও নিব না, যাতে আল্লাহর প্রতিশ্রুত নিশ্চিত সাহায্য থেকে বঞ্চিত হ’তে হয়।

৪ নং হাদীছ :

ইয়াসির তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া ও পুত্র আম্মার (রাঃ) প্রথম যুগের মুসলমান ছিলেন। যেহেতু ইয়াসির (রাঃ) মক্কার আদি বাসিন্দা ছিলেন না। তাই মক্কার নির্দয় নিষ্ঠুর মুশরিকরা তাঁদের উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছিল। এহেন অত্যাচারের ফলেই সুমাইয়া (রাঃ) সর্বপ্রথম শহীদ হয়ে যান। কিন্তু তাদেরকে অত্যাচার মুক্ত করার ক্ষমতা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছিল না। মুশরিকরা তাঁদের যে স্থানে নির্যাতন করত সেই পথে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাঝে মাঝে যেতেন। তিনি তাঁদের ধৈর্যধারণে মানসিক সাহায্য যোগাতেন। উক্ত ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِى اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى االلهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا مَرَّبِهِمْ وَهُمْ يُعَذَّبُوْنَ يَقُوْلُ صَبْرًَا آَلَ يَاسِرٍ فَإنَّ مَوْعِدَكُمُ الْجَنَّةُ -

ওছমান বিন আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন তাদের উপর শাস্তি প্রদানকালে অতিক্রম করতেন তখন বলতেন, ‘ইয়াসির পরিবার! তোমরা ধৈর্যধারণ কর। কেননা তোমাদের প্রতিশ্রুত স্থান হ’ল জান্নাত’।[6] ধৈর্য-সহিষ্ণুতা বড় রকমের বিজয়। ধৈর্যের মাধ্যমে মানুষ তার কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারে; পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাসকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। মহৎ মানুষদের চিহ্নই ধৈর্য। আল্লাহ বলেন, نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ ‘সে কত না ভাল বান্দা! সে ভীষণভাবে আল্লাহভিমুখী’।

ধৈর্যশীল মানুষ ধৈর্যের মাধ্যমে প্রথমতঃ নিজের উপর, দ্বিতীয়তঃ শত্রুর উপর জয়ী হয়, তৃতীয়তঃ সে তার বিশ্বাসের উৎসকে সাহায্য করে। আমরা যখন ইসলামের প্রথম দিকে বিজয়ের কথা আলোচনা করি তখন ইয়াসির (রাঃ)-এর পরিবারের ইয়াসির, সুমাইয়া ও আম্মারের কথা স্মরণ হয়। এই পরিবারটি দ্বীনের জন্য তাদের ধৈর্য, সংগ্রাম ও জীবন কুরবানীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন হেতু সেই সব লোকের কাতারে শামিল হয়েছিলেন, যারা দ্বীন ইসলামের গৌরব ও বিজয়ের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছেন। তারা প্রথমতঃ নিজেরা জয়ী হয়েছিলেন। দ্বিতীয়তঃ মুশরিকদের উপর জয়ী হয়েছিলেন, তৃতীয়তঃ ইসলামকে সাহায্য করেছিলেন। এরপর তাদের জান্নাতের সুসংবাদ মিলেছে। আল্লাহ বলেন, فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ‘যে ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হ’ল এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হ’ল, সেই তো সফল হ’ল’ (আলে ইমরান ১৮৫)।

[1]. বুখারী হা/৬৫৪১।

[2]. বুখারী হা/৫৭৫২; মিশকাত হা/৫২৯৬।

[3]. মুসলিম হা/৩৭৪।

[4]. বুখারী হা/৩৬১২।

[5]. বুখারী হা/৬৫০২; মিশকাত হা/২২৬৬।

[6]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/৫৬৪৬, ৩/৩৮৮-৮৯; শায়খ আলবানী একে ছহীহ বলেছেন- দ্রঃ ফিক্বহুস সিরাহ ১০৭ পৃ.।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন