HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলামী নীতিমালার আলোকে বরকত অর্জন
লেখকঃ সালেহ ইবন আবদুল আযীয ইবন মুহাম্মাদ আলে শাইখ
৩
বরকত অর্জনের অর্থআরবীতে বলা হয় تبرك يتبرك تبركا যা আরবী ‘ বারাকাহ’ শব্দ থেকে গৃহীত। তাহযীবুল লুগাহ নামক অভিধানে আবু মানসুর বলেন: “বারাকাহ শব্দের মূল হচ্ছে প্রাচুর্য ও প্রবৃদ্ধি।”
অতএব, বরকত মানে হচ্ছে কোনো জিনিসের সে প্রাচুর্য ও প্রবৃদ্ধি, তাবাররুকের মাধ্যমে বরকত লাভকারী যা পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। এ প্রাচুর্য ও প্রবৃদ্ধি কখনো স্থানের মধ্যে হতে পারে, কখনো হতে পারে ব্যক্তির মধ্যে, আর কখনো গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে। এটা হয়ে থাকে তার ভাষা ভিত্তিক প্রয়োগ অনুযায়ী। আর শর‘ঈ প্রয়োগের বিস্তারিত আলোচনা ইনশাআল্লাহ পরে আসছে।
প্রথম অর্থ (স্থানের মধ্যে বরকত) সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
﴿وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِيَ مِن فَوۡقِهَا وَبَٰرَكَ فِيهَا﴾ [ فصلت : ١٠ ]
“তিনি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা এবং তাতে দিয়েছেন বরকত”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১০]
﴿وَأَوۡرَثۡنَا ٱلۡقَوۡمَ ٱلَّذِينَ كَانُواْ يُسۡتَضۡعَفُونَ مَشَٰرِقَ ٱلۡأَرۡضِ وَمَغَٰرِبَهَا ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَاۖ﴾ [ الاعراف : ١٣٧ ]
“যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হত তাদেরকে আমি উত্তরাধিকারী করেছি যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের, যাতে আমি দিয়েছি বরকত”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩৭]
﴿لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [ الاعراف : ٩٦ ]
“আমরা অবশ্যই তাদের জন্য আকাশ ও যমীনের বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম।” [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৯৬]
﴿وَقُل رَّبِّ أَنزِلۡنِي مُنزَلٗا مُّبَارَكٗا﴾ [ المؤمنون : ٢٩ ]
“আর বল, হে আমার রব, আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও, যা হবে বরকতময়”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ২৯]
দ্বিতীয় অর্থ (ব্যক্তির মধ্যে বরকত) সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
﴿وَبَٰرَكۡنَا عَلَيۡهِ وَعَلَىٰٓ إِسۡحَٰقَۚ وَمِن ذُرِّيَّتِهِمَا مُحۡسِنٞ وَظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ مُبِينٞ ١١٣﴾ [ الصافات : ١١٣ ]
“আমরা তার ওপর বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাকের ওপরও। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী।” [সূরা আস-সাফ্ফাত, আয়াত: ১১৩]
আর নূহ আলাইহিস সালামের কাহিনী বর্ণনায় আল্লাহর বাণী:
﴿ٱهۡبِطۡ بِسَلَٰمٖ مِّنَّا وَبَرَكَٰتٍ عَلَيۡكَ وَعَلَىٰٓ أُمَمٖ مِّمَّن مَّعَكَۚ﴾ [ هود : ٤٨ ]
“অবতরণ করুন আমার পক্ষ হতে শান্তি ও বরকত সহকারে আপনার ওপর এবং যে সকল সম্প্রদায় আপনার সঙ্গে আছে তাদের ওপর”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৪৮]
তৃতীয় অর্থ (গুণাবলীতে বরকত) সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
﴿فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ﴾ [ النور : ٦١ ]
“অতঃপর তোমরা তোমাদের নিজেদের ওপর সালাম করবে আল্লাহর নিকট হতে অভিবাদনস্বরূপ যা বরকতময় পবিত্র।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬১]
আল্লাহর তা‘আলার বাণী:
﴿وَهَٰذَا ذِكۡرٞ مُّبَارَكٌ أَنزَلۡنَٰهُۚ أَفَأَنتُمۡ لَهُۥ مُنكِرُونَ ٥٠﴾ [ الانبياء : ٥٠ ]
“আর এটি বরকতময় উপদেশ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা তা অস্বীকার কর”? [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৫০]
আল্লাহর কিতাব নিয়ে চিন্তা করলে দেখতে পাবেন, তাতে এ বিষয়ের ওপর দলীল রয়েছে যে, বরকত আল্লাহর কাছ থেকেই অর্জিত হয় এবং একমাত্র আল্লাহর কাছেই তা চাওয়া যায়। তিনি সৃষ্টির যাকে ইচ্ছা ও যে বস্তুতে ইচ্ছা বরকত প্রদান করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [ الاعراف : ٥٤ ]
“জেনে রাখ, সৃষ্টি ও আদেশ তাঁরই। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ বরকতময়।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
তিনি আরও বলেন,
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ﴾ [ الفرقان : ١ ]
“কত বরকতময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার ওপর ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন!” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ০১]
তিনি আরও বলেন,
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِي جَعَلَ فِي ٱلسَّمَآءِ بُرُوجٗا﴾ [ الفرقان : ٦٠ ]
“কত বরকতময় তিনি যিনি আসমানে সৃষ্টি করেছেন তারকামণ্ডলী তাদের স্থান-সমেত!” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬০]
তিনি আরও বলেন,
﴿فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ﴾
“অতএব, সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়”! [সূরা আল-মুমিনূন: ১৪]
তিনি আরও বলেন,
﴿تَبَٰرَكَ ٱسۡمُ رَبِّكَ ذِي ٱلۡجَلَٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ ٧٨﴾ [ الرحمن : ٧٨ ]
“কত বরকতময় তোমার রবের নাম যিনি মহিমময় ও মহানুভব”! [সূরা আর-রহমান, আয়াত: ৭৮]
মূলতঃ تبارك শব্দ সম্বলিত আয়াতের সংখ্যা অনেক।
تبارك শব্দটি আল কুরআনে আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত হয়েই ব্যবহৃত হয়েছে। এ শব্দটি বরকতের যতপ্রকার অর্থ রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, উপকারী এবং সম্পর্ক ও প্রভাবের দিক দিয়ে সমধিক ব্যাপক অর্থ প্রদানকারী।
অতএব, বরকত আল্লাহরই মালিকানাভুক্ত। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, বহুবিধ সৃষ্টিকে তিনি বরকত দান করেছেন। তন্মধ্যে রয়েছে:
১. নবী ও রাসূলগণ। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَبَٰرَكۡنَا عَلَيۡهِ وَعَلَىٰٓ إِسۡحَٰقَۚ﴾ [ الصافات : ١١٣ ]
“আমরা তার ওপর বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাকের ওপরও”। [সূরা আস-সাফ্ফাত, আয়াত: ১১৩]
আর ইবরাহীম ও তার আহলে বাইত সম্পর্কে বলেন,
﴿رَحۡمَتُ ٱللَّهِ وَبَرَكَٰتُهُۥ عَلَيۡكُمۡ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ﴾ [ هود : ٧٣ ]
“হে আহলে বাইত! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৭৩]
নূহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,
﴿ٱهۡبِطۡ بِسَلَٰمٖ مِّنَّا وَبَرَكَٰتٍ عَلَيۡكَ﴾ [ هود : ٤٨ ]
“অবতরণ কর আমার পক্ষ থেকে তোমার ওপর শান্তি ও বরকত সহকারে”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৪৮]
আর ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,
﴿وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيۡنَ مَا كُنتُ﴾ [ مريم : ٣١ ]
“যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩১]
২. ইবাদাতের স্থানসমূহ, যেমন, মসজিদুল আকসা ও মসজিদুল হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র ও মহিমময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশকে আমরা বরকতময় করেছিলাম”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ০১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِنَّ أَوَّلَ بَيۡتٖ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكٗا﴾ [ ال عمران : ٩٦ ]
“নিশ্চয় মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা তো বাক্কায়, বরকতময়”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬]
৩. আল্লাহ তা‘আলা যে যিকির নাযিল করেছেন সে সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তা বরকতময়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَهَٰذَا ذِكۡرٞ مُّبَارَكٌ أَنزَلۡنَٰهُۚ أَفَأَنتُمۡ لَهُۥ مُنكِرُونَ ٥٠﴾ [ الانبياء : ٥٠ ]
“এটা বরকতময় উপদেশ। আমরা তা অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা একে অস্বীকার করবে?” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৫০]
আর এ যিকির হচ্ছে মহান আল-কুরআন। যেমন, আল্লাহ বলেছেন,
﴿وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ مُبَارَكٞ﴾ [ الانعام : ٩٢ ]
“এ হলো বরকতময় একটি কিতাব যা আমরা নাযিল করেছি”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯২]
﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِ﴾ [ص : ٢٩ ]
“এক বরকতময় কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে”। [সূরা সাদ, আয়াত: ২৯]
অতএব,, কুরআন হাকীম বরকতময় যিকির। আর এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা বরকতময় আমল। আল-কুরআনের বিশেষ জ্ঞানসমূহ এ চিন্তা-গবেষণারই অন্তর্গত। সুন্নাহ কুরআনের মুজমাল ও সংক্ষিপ্ত বিষয়সমূহকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। আর সুন্নাহও বরকতময়। কুরআন-সুন্নাহের অনুসরণও বরকতময়। কুরআনের আয়াতসমূহের গবেষণা ও সুন্নাহের সমঝ থেকে উদ্ভূত যে সকল জ্ঞান, তাও বরকতময়।
এ তিনটি প্রকারে খাস (বিশেষ) বরকত রয়েছে। এ ব্যাপারে আল কুরআন দলীল পেশ করেছে।
আর কোথাও রয়েছে ব্যাপক বরকত। এ বরকতও কয়েক প্রকারে বিভক্ত। তন্মধ্যে:
১. বৃষ্টি বরকতময়। কেননা এর দ্বারা মানুষের জীবিকা ও ফসল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি ঘটে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَنَزَّلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ مُّبَٰرَكٗا فَأَنۢبَتۡنَا بِهِۦ جَنَّٰتٖ وَحَبَّ ٱلۡحَصِيدِ ٩﴾ [ق: ٩ ]
“আসমান থেকে আমরা বর্ষণ করি বরকতময় পানি এবং তদ্বারা আমরা সৃষ্টি করি বরকতময় উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি”। [সূরা কাফ, আয়াত: ০৯]
২. তম্মধ্যে আরও রয়েছে যমীনে আল্লাহর বরকত দান। যেমন, তিনি বলেন,
﴿وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِيَ مِن فَوۡقِهَا وَبَٰرَكَ فِيهَا﴾ [ فصلت : ١٠ ]
“তিনি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা এবং তাতে দিয়েছেন বরকত”। [সূরা ফুসসিলাত. আয়াত: ১০]
﴿مَشَٰرِقَ ٱلۡأَرۡضِ وَمَغَٰرِبَهَا ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَا﴾ [ الاعراف : ١٣٧ ]
“যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের, যাতে আমরা দিয়েছি বরকত”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩৭]
৩. এর মধ্যে আরও রয়েছে আসমান থেকে যা আসে এবং যমীন থেকে যা উৎপন্ন হয় তাতে আল্লাহর বরকত দান। যেমন, তিনি বলেন,
﴿وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [ الاعراف : ٩٦ ]
“যদি সে সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের জন্য আকাশ ও যমীনের বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৯৬]
এ সকল কিছু এবং তদনুরূপ অন্যান্য বস্তু ব্যাপকার্থে বরকতময়, যদ্বারা উপকার ও কল্যাণ এবং প্রবৃদ্ধি ও প্রাচুর্য অর্জিত হয়।
সম্ভবত এতে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, যে বিশেষ বরকত ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট, স্থান ও গুণের সাথে নয়, তা (অন্যদের মাঝেও) এমনই সঞ্চারিত যে, এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দ্বারা বরকত অর্জন করা যায়। কেননা এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী বরকত রয়েছে।
কিন্তু ইবাদাতের স্থান যেমন, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সাথে খাস (বিশেষ) যে বরকত রয়েছে তা মসজিদের বিভিন্ন অংশ দ্বারা (অন্যদের মধ্যে) সঞ্চারিত হয় না। সুতরাং মুসলিমদের ইজমা‘ তথা সর্বসম্মত মতানুযায়ী মসজিদের স্তম্ভ ও দেওয়াল মাসেহ করা যাবে না। অথচ মসজিদসমূহ বরকতময়। ফলে জানা গেল যে, মসজিদসমূহের বরকতের অর্থ হলো ইবাদাতকারী এতে যে কল্যাণ অর্জন করে তার মধ্যে বৃদ্ধি ঘটা। কেননা মসজিদুল হারামে একটি সালাত আদায় অন্যত্র এক ল সালাত আদায়ের সমতুল্য এবং মসজিদে নববীতে একটি সালাত আদায় অন্যত্র এক হাজার সালাত আদায়ের সমতুল্য।
আর এটা রাসূলগণের বরকতেরই অনুরূপ। কেননা রাসূলগণের বরকতের একপ্রকার হচ্ছে অনুসরণ ও আমলের বরকত। তাদের সুন্নাতের যারা অনুসারী এবং হিদায়াত দ্বারা যারা সুপথ-প্রাপ্ত, সাওয়াবের ক্ষেত্রে তাদের প্রাচুর্য ও প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় (রাসূলগণের আদর্শ) অনুসরণের কারণে। এটাই উক্ত দু’প্রকারের সাথে খাস বরকতের অর্থ।
ব্যাপক বরকত এ থেকে ভিন্নতর। সে বরকত কখনো অর্জিত হয়, কখনো হয় না, কিংবা কোনো এক প্রকারে নিহিত থাকে, অন্য প্রকারে থাকে না। এটা সুস্পষ্ট যে, আকাশ থেকে যা কিছুই অবতীর্ণ হয় এবং যমীন থেকে যা কিছুই উৎপন্ন হয় সবসময় তা বরকতময় হয় না। বরং আল্লাহর প হতে বরকতের ব্যাপারটি অন্য কিছু বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। এসব বিষয় পাওয়া গেলে আল্লাহ বরকত দেন এবং পাওয়া না গেলে বরকত চলে যায়। সুতরাং স্থান ও পাত্রের দিক দিয়ে তা ব্যাপকার্থক বরকত। আর কালের দিক দিয়ে তা খাস বরকত, যা কোনো বস্তুর জন্য অপরিহার্য নয়।
বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার পর জানা দরকার যে, কুরআন ও সুন্নাহের যে সব স্থানে বরকত কথাটি এসেছে তা দু’প্রকার:
প্রথমত: ব্যক্তি সত্তার বরকত। এ বরকতের আছর বা প্রভাব হলো, উক্ত ব্যক্তির সাথে যত কিছুরই সংযোগ রয়েছে তা বরকতময় হবে। এ প্রকার বরকত নবী ও রাসূলগণের জন্য হয়ে থাকে। এতে অন্য কেউ তাদের অংশীদার হয় না। এমন কি এতে আবু বকর, উমার, উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম-এর ন্যায় বড় বড় সাহাবীগণও নবীগণের অংশীদার নন।
নবীগণের বরকতের আছর বা প্রভাব শুধু ঐ ব্যক্তিদের প্রতিই সঞ্চারিত হবে যারা নবী যে আদর্শের দাওয়াত দিয়েছেন তার ওপর চলেছেন, তার আমলের অনুসরণ করেছেন, তার নির্দেশ মান্য করেছেন এবং তার নিষেধ করা বস্তু থেকে বিরত থেকেছেন। এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ যখন অহুদ যুদ্ধে তার নির্দেশ অমান্য করল এবং তার নাফরমানী করল, তখন তার বরকত তাদের দিকে সঞ্চারিত হয় নি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর এ প্রকার বরকত সঞ্চারিত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য তার দেহের কোনো অংশ যদি তার মৃত্যুর পর কারো কাছে নিশ্চিতভাবে বর্তমান থাকে, তবে সেটার কথা আলাদা। আর সাহাবীদের যুগ অতিবাহিত হয়ে যাবার পর সে নিশ্চয়তাও রহিত হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত: আমল ও অনুসরণ করার বরকত। এটি ঐ সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়ী হয়। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ যতটুকু অনুসরণ করে ও মেনে নেয়, আদেশ ও নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে সে ততটুকু আমলের বরকত লাভ করতে পারে।
এজন্য ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারী গ্রন্থে [৯/৫৬৯] খেজুর গাছ সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে এসেছে- “নিশ্চয় এমন কিছু বৃক্ষ রয়েছে যার বরকত মুসলিম ব্যক্তির বরকতেরই অনুরূপ”। অতএব, প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার মর্যাদা অনুযায়ী বরকত রয়েছে।
আর এ বরকত ব্যক্তিসত্তার বরকত নয়। এটা নিশ্চিতভাবে জানা কথা এবং কেউ তা দাবীও করে নি। বরং এটা শুধু আমলেরই বরকত।
আল্লাহর সৎ, অনুসারী বান্দাদের মধ্যে ততটুকু পরিমাণ আমল ও অনুসরণের বরকত রয়েছে, ঐ বরকতের যতটুকু চাহিদা মোতাবেক কাজ তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং সুন্নাহ বিষয়ক আলেমের রয়েছে ইলমের বরকত এবং যিনি আল্লাহর কিতাবের হাফেজ ও এর সীমারেখা মেনে চলেন, তার মধ্যে উক্ত আমলের ফলাফল স্বরূপ বরকত থাকবে। আর তদনুরূপ সকল ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য।
সৎকর্মশীলগণের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বরকত ঐ ব্যক্তিরই হবে যিনি দীন ইসলামের সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করেন, এর ওয়াজিবসমূহের সর্বাধিক সংরক্ষণ করেন এবং হারাম-বস্তুসমূহ থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকেন।
হারাম কাজসমূহের অনেকগুলো অন্তর দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বহু লোক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা যে হারাম কাজ হয়ে থাকে তা হতে দূরে থাকে, অথচ অন্তরের দ্বারা হারাম কাজ করে বেড়ায়, এ ব্যাপারে কোনো পরোয়া করে না।
এভাবে কুরআন-সুন্নাহর দলীলসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান হয়। অতএব, নবীগণের মধ্যে যে বরকত রয়েছে তা ঐ বরকতের অন্তর্গত যাতে বরকতের উভয় প্রকার বিদ্যমান। আর তারা ছাড়া অন্যান্যদের যে বরকত দেওয়া হয়েছে তা হলো আমল, ইলম ও অনুসরণের বরকত। ফলে এ বরকতের আছর ও ফলাফল আপনি আমল ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা সঞ্চারিত হতে দেখবেন না, স্বয়ং কোনো ব্যক্তি দ্বারাও নয়, আর তার অংশ বিশেষ দ্বারাও নয়।
এজন্যই তায়াম্মুম শরী‘আতসম্মত হওয়ার কারণ বর্ণনায় উসাইদ ইবন হুদাইর বলেন, “হে আবু বকরের পরিবারবর্গ! আপনাদের মধ্যেই আল্লাহ মানুষের জন্য বরকত ঢেলে দিয়েছেন”। এটি ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থের তাফসীর অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
কথাটি যে শব্দে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের কাছে বর্ণিত হয়েছে তা হলো, “হে আবু বকরের পরিবারবর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়”। কথা দু’টোর অর্থ একই। আর এটা জানা কথা যে, উসাইদ কিংবা অন্য কেউ আবু বকর কিংবা তার পরিজনের কাছে ব্যক্তি সত্তার বরকত অনুসন্ধান করেন নি, যেমন, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল ইত্যাদি দ্বারা বরকত অর্জনের ক্ষেত্রে করতেন।
নিশ্চয় এ ছিল আমল তথা ঈমান, সত্যতা প্রতিপন্নকরণ, (দীনের) সহায়তা ও অনুসরণেরই বরকত।
যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়ায়রিয়া বিনতে আল হারেসকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন, তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে বরকতের কথা উল্লেখ করেছিলেন তা এ প্রকার বরকতেরই অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেছিলেন, “স্বীয় জাতির কাছে তার চেয়ে বেশি বরকতময় কোনো মহিলা আমি দেখি নি”। হাদীসটি উত্তম সনদে ইমাম আহমাদ মুসনাদ গ্রন্থে ও ইমাম আবু দাউদ সুনান গ্রন্থে বর্ণনা করেন।
এ হচ্ছে আমলের বরকত, কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়ায়রিয়াকে বিবাহ করেছেন। ফলে তা ছিল তার জাতির বহু লোকের দাসত্ব থেকে আযাদীর ও মুক্তির কারণ।
অতএব, বরকত মানে হচ্ছে কোনো জিনিসের সে প্রাচুর্য ও প্রবৃদ্ধি, তাবাররুকের মাধ্যমে বরকত লাভকারী যা পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। এ প্রাচুর্য ও প্রবৃদ্ধি কখনো স্থানের মধ্যে হতে পারে, কখনো হতে পারে ব্যক্তির মধ্যে, আর কখনো গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে। এটা হয়ে থাকে তার ভাষা ভিত্তিক প্রয়োগ অনুযায়ী। আর শর‘ঈ প্রয়োগের বিস্তারিত আলোচনা ইনশাআল্লাহ পরে আসছে।
প্রথম অর্থ (স্থানের মধ্যে বরকত) সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
﴿وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِيَ مِن فَوۡقِهَا وَبَٰرَكَ فِيهَا﴾ [ فصلت : ١٠ ]
“তিনি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা এবং তাতে দিয়েছেন বরকত”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১০]
﴿وَأَوۡرَثۡنَا ٱلۡقَوۡمَ ٱلَّذِينَ كَانُواْ يُسۡتَضۡعَفُونَ مَشَٰرِقَ ٱلۡأَرۡضِ وَمَغَٰرِبَهَا ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَاۖ﴾ [ الاعراف : ١٣٧ ]
“যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হত তাদেরকে আমি উত্তরাধিকারী করেছি যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের, যাতে আমি দিয়েছি বরকত”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩৭]
﴿لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [ الاعراف : ٩٦ ]
“আমরা অবশ্যই তাদের জন্য আকাশ ও যমীনের বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম।” [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৯৬]
﴿وَقُل رَّبِّ أَنزِلۡنِي مُنزَلٗا مُّبَارَكٗا﴾ [ المؤمنون : ٢٩ ]
“আর বল, হে আমার রব, আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও, যা হবে বরকতময়”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ২৯]
দ্বিতীয় অর্থ (ব্যক্তির মধ্যে বরকত) সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
﴿وَبَٰرَكۡنَا عَلَيۡهِ وَعَلَىٰٓ إِسۡحَٰقَۚ وَمِن ذُرِّيَّتِهِمَا مُحۡسِنٞ وَظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ مُبِينٞ ١١٣﴾ [ الصافات : ١١٣ ]
“আমরা তার ওপর বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাকের ওপরও। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী।” [সূরা আস-সাফ্ফাত, আয়াত: ১১৩]
আর নূহ আলাইহিস সালামের কাহিনী বর্ণনায় আল্লাহর বাণী:
﴿ٱهۡبِطۡ بِسَلَٰمٖ مِّنَّا وَبَرَكَٰتٍ عَلَيۡكَ وَعَلَىٰٓ أُمَمٖ مِّمَّن مَّعَكَۚ﴾ [ هود : ٤٨ ]
“অবতরণ করুন আমার পক্ষ হতে শান্তি ও বরকত সহকারে আপনার ওপর এবং যে সকল সম্প্রদায় আপনার সঙ্গে আছে তাদের ওপর”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৪৮]
তৃতীয় অর্থ (গুণাবলীতে বরকত) সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
﴿فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ﴾ [ النور : ٦١ ]
“অতঃপর তোমরা তোমাদের নিজেদের ওপর সালাম করবে আল্লাহর নিকট হতে অভিবাদনস্বরূপ যা বরকতময় পবিত্র।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬১]
আল্লাহর তা‘আলার বাণী:
﴿وَهَٰذَا ذِكۡرٞ مُّبَارَكٌ أَنزَلۡنَٰهُۚ أَفَأَنتُمۡ لَهُۥ مُنكِرُونَ ٥٠﴾ [ الانبياء : ٥٠ ]
“আর এটি বরকতময় উপদেশ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা তা অস্বীকার কর”? [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৫০]
আল্লাহর কিতাব নিয়ে চিন্তা করলে দেখতে পাবেন, তাতে এ বিষয়ের ওপর দলীল রয়েছে যে, বরকত আল্লাহর কাছ থেকেই অর্জিত হয় এবং একমাত্র আল্লাহর কাছেই তা চাওয়া যায়। তিনি সৃষ্টির যাকে ইচ্ছা ও যে বস্তুতে ইচ্ছা বরকত প্রদান করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [ الاعراف : ٥٤ ]
“জেনে রাখ, সৃষ্টি ও আদেশ তাঁরই। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ বরকতময়।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
তিনি আরও বলেন,
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ﴾ [ الفرقان : ١ ]
“কত বরকতময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার ওপর ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন!” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ০১]
তিনি আরও বলেন,
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِي جَعَلَ فِي ٱلسَّمَآءِ بُرُوجٗا﴾ [ الفرقان : ٦٠ ]
“কত বরকতময় তিনি যিনি আসমানে সৃষ্টি করেছেন তারকামণ্ডলী তাদের স্থান-সমেত!” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬০]
তিনি আরও বলেন,
﴿فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ﴾
“অতএব, সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়”! [সূরা আল-মুমিনূন: ১৪]
তিনি আরও বলেন,
﴿تَبَٰرَكَ ٱسۡمُ رَبِّكَ ذِي ٱلۡجَلَٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ ٧٨﴾ [ الرحمن : ٧٨ ]
“কত বরকতময় তোমার রবের নাম যিনি মহিমময় ও মহানুভব”! [সূরা আর-রহমান, আয়াত: ৭৮]
মূলতঃ تبارك শব্দ সম্বলিত আয়াতের সংখ্যা অনেক।
تبارك শব্দটি আল কুরআনে আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত হয়েই ব্যবহৃত হয়েছে। এ শব্দটি বরকতের যতপ্রকার অর্থ রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, উপকারী এবং সম্পর্ক ও প্রভাবের দিক দিয়ে সমধিক ব্যাপক অর্থ প্রদানকারী।
অতএব, বরকত আল্লাহরই মালিকানাভুক্ত। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, বহুবিধ সৃষ্টিকে তিনি বরকত দান করেছেন। তন্মধ্যে রয়েছে:
১. নবী ও রাসূলগণ। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَبَٰرَكۡنَا عَلَيۡهِ وَعَلَىٰٓ إِسۡحَٰقَۚ﴾ [ الصافات : ١١٣ ]
“আমরা তার ওপর বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাকের ওপরও”। [সূরা আস-সাফ্ফাত, আয়াত: ১১৩]
আর ইবরাহীম ও তার আহলে বাইত সম্পর্কে বলেন,
﴿رَحۡمَتُ ٱللَّهِ وَبَرَكَٰتُهُۥ عَلَيۡكُمۡ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ﴾ [ هود : ٧٣ ]
“হে আহলে বাইত! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৭৩]
নূহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,
﴿ٱهۡبِطۡ بِسَلَٰمٖ مِّنَّا وَبَرَكَٰتٍ عَلَيۡكَ﴾ [ هود : ٤٨ ]
“অবতরণ কর আমার পক্ষ থেকে তোমার ওপর শান্তি ও বরকত সহকারে”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৪৮]
আর ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,
﴿وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيۡنَ مَا كُنتُ﴾ [ مريم : ٣١ ]
“যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩১]
২. ইবাদাতের স্থানসমূহ, যেমন, মসজিদুল আকসা ও মসজিদুল হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র ও মহিমময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশকে আমরা বরকতময় করেছিলাম”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ০১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِنَّ أَوَّلَ بَيۡتٖ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكٗا﴾ [ ال عمران : ٩٦ ]
“নিশ্চয় মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা তো বাক্কায়, বরকতময়”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬]
৩. আল্লাহ তা‘আলা যে যিকির নাযিল করেছেন সে সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তা বরকতময়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَهَٰذَا ذِكۡرٞ مُّبَارَكٌ أَنزَلۡنَٰهُۚ أَفَأَنتُمۡ لَهُۥ مُنكِرُونَ ٥٠﴾ [ الانبياء : ٥٠ ]
“এটা বরকতময় উপদেশ। আমরা তা অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা একে অস্বীকার করবে?” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৫০]
আর এ যিকির হচ্ছে মহান আল-কুরআন। যেমন, আল্লাহ বলেছেন,
﴿وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ مُبَارَكٞ﴾ [ الانعام : ٩٢ ]
“এ হলো বরকতময় একটি কিতাব যা আমরা নাযিল করেছি”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯২]
﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِ﴾ [ص : ٢٩ ]
“এক বরকতময় কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে”। [সূরা সাদ, আয়াত: ২৯]
অতএব,, কুরআন হাকীম বরকতময় যিকির। আর এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা বরকতময় আমল। আল-কুরআনের বিশেষ জ্ঞানসমূহ এ চিন্তা-গবেষণারই অন্তর্গত। সুন্নাহ কুরআনের মুজমাল ও সংক্ষিপ্ত বিষয়সমূহকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। আর সুন্নাহও বরকতময়। কুরআন-সুন্নাহের অনুসরণও বরকতময়। কুরআনের আয়াতসমূহের গবেষণা ও সুন্নাহের সমঝ থেকে উদ্ভূত যে সকল জ্ঞান, তাও বরকতময়।
এ তিনটি প্রকারে খাস (বিশেষ) বরকত রয়েছে। এ ব্যাপারে আল কুরআন দলীল পেশ করেছে।
আর কোথাও রয়েছে ব্যাপক বরকত। এ বরকতও কয়েক প্রকারে বিভক্ত। তন্মধ্যে:
১. বৃষ্টি বরকতময়। কেননা এর দ্বারা মানুষের জীবিকা ও ফসল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি ঘটে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَنَزَّلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ مُّبَٰرَكٗا فَأَنۢبَتۡنَا بِهِۦ جَنَّٰتٖ وَحَبَّ ٱلۡحَصِيدِ ٩﴾ [ق: ٩ ]
“আসমান থেকে আমরা বর্ষণ করি বরকতময় পানি এবং তদ্বারা আমরা সৃষ্টি করি বরকতময় উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি”। [সূরা কাফ, আয়াত: ০৯]
২. তম্মধ্যে আরও রয়েছে যমীনে আল্লাহর বরকত দান। যেমন, তিনি বলেন,
﴿وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِيَ مِن فَوۡقِهَا وَبَٰرَكَ فِيهَا﴾ [ فصلت : ١٠ ]
“তিনি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা এবং তাতে দিয়েছেন বরকত”। [সূরা ফুসসিলাত. আয়াত: ১০]
﴿مَشَٰرِقَ ٱلۡأَرۡضِ وَمَغَٰرِبَهَا ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَا﴾ [ الاعراف : ١٣٧ ]
“যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের, যাতে আমরা দিয়েছি বরকত”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩৭]
৩. এর মধ্যে আরও রয়েছে আসমান থেকে যা আসে এবং যমীন থেকে যা উৎপন্ন হয় তাতে আল্লাহর বরকত দান। যেমন, তিনি বলেন,
﴿وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [ الاعراف : ٩٦ ]
“যদি সে সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের জন্য আকাশ ও যমীনের বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৯৬]
এ সকল কিছু এবং তদনুরূপ অন্যান্য বস্তু ব্যাপকার্থে বরকতময়, যদ্বারা উপকার ও কল্যাণ এবং প্রবৃদ্ধি ও প্রাচুর্য অর্জিত হয়।
সম্ভবত এতে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, যে বিশেষ বরকত ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট, স্থান ও গুণের সাথে নয়, তা (অন্যদের মাঝেও) এমনই সঞ্চারিত যে, এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দ্বারা বরকত অর্জন করা যায়। কেননা এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী বরকত রয়েছে।
কিন্তু ইবাদাতের স্থান যেমন, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সাথে খাস (বিশেষ) যে বরকত রয়েছে তা মসজিদের বিভিন্ন অংশ দ্বারা (অন্যদের মধ্যে) সঞ্চারিত হয় না। সুতরাং মুসলিমদের ইজমা‘ তথা সর্বসম্মত মতানুযায়ী মসজিদের স্তম্ভ ও দেওয়াল মাসেহ করা যাবে না। অথচ মসজিদসমূহ বরকতময়। ফলে জানা গেল যে, মসজিদসমূহের বরকতের অর্থ হলো ইবাদাতকারী এতে যে কল্যাণ অর্জন করে তার মধ্যে বৃদ্ধি ঘটা। কেননা মসজিদুল হারামে একটি সালাত আদায় অন্যত্র এক ল সালাত আদায়ের সমতুল্য এবং মসজিদে নববীতে একটি সালাত আদায় অন্যত্র এক হাজার সালাত আদায়ের সমতুল্য।
আর এটা রাসূলগণের বরকতেরই অনুরূপ। কেননা রাসূলগণের বরকতের একপ্রকার হচ্ছে অনুসরণ ও আমলের বরকত। তাদের সুন্নাতের যারা অনুসারী এবং হিদায়াত দ্বারা যারা সুপথ-প্রাপ্ত, সাওয়াবের ক্ষেত্রে তাদের প্রাচুর্য ও প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় (রাসূলগণের আদর্শ) অনুসরণের কারণে। এটাই উক্ত দু’প্রকারের সাথে খাস বরকতের অর্থ।
ব্যাপক বরকত এ থেকে ভিন্নতর। সে বরকত কখনো অর্জিত হয়, কখনো হয় না, কিংবা কোনো এক প্রকারে নিহিত থাকে, অন্য প্রকারে থাকে না। এটা সুস্পষ্ট যে, আকাশ থেকে যা কিছুই অবতীর্ণ হয় এবং যমীন থেকে যা কিছুই উৎপন্ন হয় সবসময় তা বরকতময় হয় না। বরং আল্লাহর প হতে বরকতের ব্যাপারটি অন্য কিছু বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। এসব বিষয় পাওয়া গেলে আল্লাহ বরকত দেন এবং পাওয়া না গেলে বরকত চলে যায়। সুতরাং স্থান ও পাত্রের দিক দিয়ে তা ব্যাপকার্থক বরকত। আর কালের দিক দিয়ে তা খাস বরকত, যা কোনো বস্তুর জন্য অপরিহার্য নয়।
বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার পর জানা দরকার যে, কুরআন ও সুন্নাহের যে সব স্থানে বরকত কথাটি এসেছে তা দু’প্রকার:
প্রথমত: ব্যক্তি সত্তার বরকত। এ বরকতের আছর বা প্রভাব হলো, উক্ত ব্যক্তির সাথে যত কিছুরই সংযোগ রয়েছে তা বরকতময় হবে। এ প্রকার বরকত নবী ও রাসূলগণের জন্য হয়ে থাকে। এতে অন্য কেউ তাদের অংশীদার হয় না। এমন কি এতে আবু বকর, উমার, উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম-এর ন্যায় বড় বড় সাহাবীগণও নবীগণের অংশীদার নন।
নবীগণের বরকতের আছর বা প্রভাব শুধু ঐ ব্যক্তিদের প্রতিই সঞ্চারিত হবে যারা নবী যে আদর্শের দাওয়াত দিয়েছেন তার ওপর চলেছেন, তার আমলের অনুসরণ করেছেন, তার নির্দেশ মান্য করেছেন এবং তার নিষেধ করা বস্তু থেকে বিরত থেকেছেন। এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ যখন অহুদ যুদ্ধে তার নির্দেশ অমান্য করল এবং তার নাফরমানী করল, তখন তার বরকত তাদের দিকে সঞ্চারিত হয় নি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর এ প্রকার বরকত সঞ্চারিত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য তার দেহের কোনো অংশ যদি তার মৃত্যুর পর কারো কাছে নিশ্চিতভাবে বর্তমান থাকে, তবে সেটার কথা আলাদা। আর সাহাবীদের যুগ অতিবাহিত হয়ে যাবার পর সে নিশ্চয়তাও রহিত হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত: আমল ও অনুসরণ করার বরকত। এটি ঐ সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়ী হয়। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ যতটুকু অনুসরণ করে ও মেনে নেয়, আদেশ ও নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে সে ততটুকু আমলের বরকত লাভ করতে পারে।
এজন্য ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারী গ্রন্থে [৯/৫৬৯] খেজুর গাছ সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে এসেছে- “নিশ্চয় এমন কিছু বৃক্ষ রয়েছে যার বরকত মুসলিম ব্যক্তির বরকতেরই অনুরূপ”। অতএব, প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার মর্যাদা অনুযায়ী বরকত রয়েছে।
আর এ বরকত ব্যক্তিসত্তার বরকত নয়। এটা নিশ্চিতভাবে জানা কথা এবং কেউ তা দাবীও করে নি। বরং এটা শুধু আমলেরই বরকত।
আল্লাহর সৎ, অনুসারী বান্দাদের মধ্যে ততটুকু পরিমাণ আমল ও অনুসরণের বরকত রয়েছে, ঐ বরকতের যতটুকু চাহিদা মোতাবেক কাজ তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং সুন্নাহ বিষয়ক আলেমের রয়েছে ইলমের বরকত এবং যিনি আল্লাহর কিতাবের হাফেজ ও এর সীমারেখা মেনে চলেন, তার মধ্যে উক্ত আমলের ফলাফল স্বরূপ বরকত থাকবে। আর তদনুরূপ সকল ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য।
সৎকর্মশীলগণের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বরকত ঐ ব্যক্তিরই হবে যিনি দীন ইসলামের সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করেন, এর ওয়াজিবসমূহের সর্বাধিক সংরক্ষণ করেন এবং হারাম-বস্তুসমূহ থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকেন।
হারাম কাজসমূহের অনেকগুলো অন্তর দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বহু লোক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা যে হারাম কাজ হয়ে থাকে তা হতে দূরে থাকে, অথচ অন্তরের দ্বারা হারাম কাজ করে বেড়ায়, এ ব্যাপারে কোনো পরোয়া করে না।
এভাবে কুরআন-সুন্নাহর দলীলসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান হয়। অতএব, নবীগণের মধ্যে যে বরকত রয়েছে তা ঐ বরকতের অন্তর্গত যাতে বরকতের উভয় প্রকার বিদ্যমান। আর তারা ছাড়া অন্যান্যদের যে বরকত দেওয়া হয়েছে তা হলো আমল, ইলম ও অনুসরণের বরকত। ফলে এ বরকতের আছর ও ফলাফল আপনি আমল ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা সঞ্চারিত হতে দেখবেন না, স্বয়ং কোনো ব্যক্তি দ্বারাও নয়, আর তার অংশ বিশেষ দ্বারাও নয়।
এজন্যই তায়াম্মুম শরী‘আতসম্মত হওয়ার কারণ বর্ণনায় উসাইদ ইবন হুদাইর বলেন, “হে আবু বকরের পরিবারবর্গ! আপনাদের মধ্যেই আল্লাহ মানুষের জন্য বরকত ঢেলে দিয়েছেন”। এটি ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থের তাফসীর অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
কথাটি যে শব্দে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের কাছে বর্ণিত হয়েছে তা হলো, “হে আবু বকরের পরিবারবর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়”। কথা দু’টোর অর্থ একই। আর এটা জানা কথা যে, উসাইদ কিংবা অন্য কেউ আবু বকর কিংবা তার পরিজনের কাছে ব্যক্তি সত্তার বরকত অনুসন্ধান করেন নি, যেমন, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল ইত্যাদি দ্বারা বরকত অর্জনের ক্ষেত্রে করতেন।
নিশ্চয় এ ছিল আমল তথা ঈমান, সত্যতা প্রতিপন্নকরণ, (দীনের) সহায়তা ও অনুসরণেরই বরকত।
যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়ায়রিয়া বিনতে আল হারেসকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন, তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে বরকতের কথা উল্লেখ করেছিলেন তা এ প্রকার বরকতেরই অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেছিলেন, “স্বীয় জাতির কাছে তার চেয়ে বেশি বরকতময় কোনো মহিলা আমি দেখি নি”। হাদীসটি উত্তম সনদে ইমাম আহমাদ মুসনাদ গ্রন্থে ও ইমাম আবু দাউদ সুনান গ্রন্থে বর্ণনা করেন।
এ হচ্ছে আমলের বরকত, কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়ায়রিয়াকে বিবাহ করেছেন। ফলে তা ছিল তার জাতির বহু লোকের দাসত্ব থেকে আযাদীর ও মুক্তির কারণ।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন