HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামী নীতিমালার আলোকে বরকত অর্জন

লেখকঃ সালেহ ইবন আবদুল আযীয ইবন মুহাম্মাদ আলে শাইখ

পরিচ্ছেদ: সালাফ ও সালাফিয়াতের প্রতি সম্পর্কিত হওয়ার অর্থ
মুসলিমগণ দু’প্রকার:

একদল হলো সালাফে সালেহীনের অনুসারী।

আরেক দল হলো পরবর্তী যুগের লোকদের সমঝের অনুসারী। এদেরকে প্রায়ই বিদ‘আতে লিপ্ত হতে দেখা যায়। কেননা যারা ইলম ও আমল এবং সমঝ ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে সালাফে সালেহীনের তরীকা পছন্দ করে না, এর অনিবার্য পরিণতিতে তারা বিদ‘আতে আক্রান্ত হন এবং পরিশেষে বিদ‘আতী বলে পরিচিত হন।

আর সালফে সালেহীন হলেন: উত্তম যুগের আলিম ব্যক্তিবর্গ। তাদের সম্মুখ সারীতে ও অগ্রভাগে রয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ- আল্লাহ যাদের প্রশংসা করেছেন স্বীয় বাণী দ্বারা:

﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا ﴾ [ الفتح : ٢٩ ]

“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। তুমি তাদেরকে রুকু ও সেজদায় অবনত দেখবে”। [সূরা আল-ফাতাহ, আয়াত: ২৯]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তাদের প্রশংসা করেছেন এ কথা বলে যে, “সর্বোত্তম লোক হলো আমার যুগের লোকেরা, অতঃপর তাদের পরবর্তী লোকেরা, এরপর তৎপরবর্তী যুগের লোকেরা...”।

সমস্ত সাহাবীদের প্রশংসায় এবং তাদের চলার পদ্ধতি অনুসরণের ব্যাপারে স্বয়ং সাহাবীগণ এবং তাদের সঠিক অনুসারীদেরও একের পর এক বক্তব্য এসেছে।

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “তোমাদের কেউ যদি কারো আদর্শ অনুসরণ করতে চায়, সে যেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের আদর্শ অনুসরণ করে। কেননা তারা এ উম্মাতের মধ্যে সবচেয়ে পুণ্যময় হৃদয় ও গভীর জ্ঞানের অধিকারী, যে সমস্ত ব্যাপারে তাদের জ্ঞান নেই সে সমস্ত ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে নেই বললেই চলে, অনুরূপভাবে তারা সর্বাধিক সঠিক হেদায়াতের ওপর এবং (আমলের দিক থেকে) সর্বোত্তম অবস্থায় ছিলেন। তারা এমন একদল লোক যাদেরকে আল্লাহ তাঁর নবীর সাহচর্যের জন্য এবং তাঁর দীন কায়েমের জন্য মনোনীত করেছেন। সুতরাং তাদের মর্যাদা সম্পর্কে জানুন এবং তাদেরকে পদে পদে অনুসরণ করুন। কেননা তারাই ছিলেন সরল সঠিক হিদায়াতের ওপর”।

এ বিষয়টি আহলে সুন্নাতের সবার সর্বসম্মত মত। এ ব্যাপারে কোনো মতবিরোধ নেই। অতএব, তারা যখন এমন বিশাল মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, তখন এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, মুসলিম ব্যক্তি আল কুরআন ও সুন্নাহ বুঝা, বিশ্লেষণ ও তদনুযায়ী আমলের ক্ষেত্রে তাদের অনুসৃত নীতির সাথে সম্পর্কিত হতে গৌরববোধ করবে।

মুসলিম উম্মার বিভ্রান্ত প্রত্যেক ফিরকাই সালাফে সালেহীন কুরআন ও হাদীসকে যেভাবে বুঝেছেন তার বিপরীত বুঝ নিয়ে কুরআন-হাদীসের দলীল নিজ নিজ মত ও উদ্দেশ্যের সমর্থনে প্রমাণ হিসাবে পেশ করছে। এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তারা একে অপরকে কাফির বলছে এবং আল্লাহর কিতাবের একাংশ দিয়ে অন্য অংশের ওপর আঘাত হানছে। প্রত্যেক ফিরকার দাবী অনুযায়ী এসব কিছুই তারা কুরআন-হাদীসকে যে যেভাবে বুঝছে সেভাবে করছে। ফলে বিভ্রান্ত প্রত্যেক ফিরকাই বলছে যে, আমরা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করি। এতে দুর্বল দৃষ্টিসম্পন্ন ও কম ইলমের অধিকারী লোকদের কাছে বিষয়টি অস্পষ্ট হয়ে গেল।

এসব বিভ্রান্তিকর দাবী ও কথা থেকে বের হবার উপায় হলো সর্বোত্তম যুগের নীতির অনুসরণ। সে যুগের লোকেরা কুরআন-সুন্নাহের বক্তব্য থেকে যা বুঝেছেন তাই হক ও সত্য, আর যা তারা বুঝেননি এবং আমলও করেন নি তা সত্য ও সঠিক নয়।

আর অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে যারা জ্ঞান আহরণ করেছেন, তারা সুন্দরভাবে তাদেরকে অনুসরণ করেছেন। অতএব, যে-ই আল-কুরআন ও সুন্নাহ বুঝার ক্ষেত্রে সাহাবীদের এ নীতির অনুসরণ করেছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তাদের যেসব রেওয়ায়েত বিশুদ্ধ, তা গ্রহণ করে আর নিরেট বুদ্ধিভিত্তিক মতামত ও নব উদ্ভাবিত সমঝ ত্যাগ করে, সে-ই সালাফী হিসাবে পরিচিত হবে। আর যে সে রকম হতে পারবে না, সে খালাফী ও বিদ‘আতী বলে গণ্য হবে।

এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জানা দরকার যে, প্রত্যেকটি ইলমী মাসআলা তিনটি অবস্থা থেকে মুক্ত নয়:

এক: এ মাসআলার অনুকূলে সাহাবী ও তাদের অনুসারীবৃন্দ বক্তব্য রেখেছেন এবং তাদের সকলেই সে অনুযায়ী আমল করেছেন, কিংবা কিছুসংখ্যক সে অনুযায়ী আমল করছেন এবং অন্য কেউ তার বিরোধিতা করেন নি।

দুই: কিছুসংখ্যক সাহাবী সে অনুযায়ী আমল করেছেন, তবে অধিকাংশ সাহাবী মাসআলাটিতে তাদের খেলাফ করেছেন।

তিন: উক্ত মাসআলা অনুযায়ী তাদের কেউ আমল করেন নি।

অতএব, এ হলো মোট তিন প্রকার:

প্রথম প্রকার, যাতে সকল সাহাবী মাসআলা অনুযায়ী আমল করেছেন, অথবা কেউ কেউ করেছেন তবে অন্য কেউ বিরোধিতা করেছেন বলে জানা যায়নি, সন্দেহাতীতভাবে তা এমন সুন্নাত যার অনুসরণ করা যায় এবং যা পুরোপুরি স্পষ্ট নীতি, সরল পথ ও সুস্পষ্ট প্রমাণ। অতএব, উক্ত মাসআলায় তাদের বিরোধিতা করা কারো জন্যই জায়েয নেই। আকীদা ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে এর উদাহরণ অনেক এবং এত অধিক যে, তা উল্লেখের প্রয়োজন নেই।

দ্বিতীয় প্রকার হলো যাতে কতিপয় সাহাবী উক্ত মাসআলা অনুযায়ী আমল করেছেন এবং অধিকাংশ সাহাবী তাদের খেলাফ করেছেন। কেননা স্বল্পসংখ্যক সাহাবী যে মত এখতিয়ার করেছেন এবং যেরূপ আমল করেছেন, অধিকাংশ সাহাবী তা ভিন্ন অন্য মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন ও অন্যরূপ আমল করেছেন। ইমাম শাতেবী ‘আল-মুয়াফিকাত ফী উসুলুশ শরী‘আহ’ গ্রন্থে (খ. ৩, পৃ. ৫৭) অধিকাংশ সাহাবীর অনুসরণ ওয়াজিব হওয়ার প্রসঙ্গে বলেন: “উক্ত ভিন্ন আমলই (তথা অধিকাংশ সাহাবীর আমলই) অনুসৃত সুন্নাত এবং সরল পথ। অন্যদিকে যে কাজটি অল্প সংখ্যক ব্যতীত আর কেউ করেনি, সে কাজটির ব্যাপারে এবং সে অনুযায়ী আমলের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। আর যা অধিক ব্যাপক ও অধিকাংশের আমল, তা-ই সর্বদা করা উচিত।

কেননা এ স্বল্পসংখ্যকের বিরোধিতা করে পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক সর্বদা ভিন্ন আমল হয়ত শর‘ঈ কোনো কারণে সাধিত হয়েছে, কিংবা শর‘ঈ কারণ ছাড়া অন্য কোনো কারণে।

কিন্তু স্বল্পসংখ্যকের বিপরীত তাদের এ আমল শর‘ঈ কারণ ছাড়া অন্য কারণে হওয়ার ব্যাপারটি ঠিক নয়। বরং অবশ্যই তা হয়েছে শর‘ঈ কোনো কারণে, যার ভিত্তিতে তারা আমল করার প্রয়াস পেয়েছেন। আর এ বিষয়টি যখন সাব্যস্ত হয়ে গেল, তখন স্বল্পসংখ্যকের মতানুযায়ী আমল করার ব্যাপারটি উক্ত শর‘ঈ কারণটির বিরোধী বলে গণ্য হবে- যার ভিত্তিতে অধিকাংশ সাহাবীগণ চিন্তাভাবনা করে আমল করেছেন। যদিও তা প্রকৃতপক্ষে বিরোধী না হয়ে থাকে। অতএব, তারা যা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা ও যে আমল তারা সর্বদা করেছেন তদনুরূপ আমল করা জরুরী”। [ইমাম শাতেবী অনেকগুলো উদাহরণ পেশ করেছেন। নুরূপভাবে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াও তার ‘আত-তাওয়াসসুল ওয়াল উসীলাহ’ গ্রন্থে অনেকগুলো উদাহরণ পেশ করেছেন।]

এরপর তিনি বলেন (খ. ৭০, পৃ. ৭১) ‘এজন্য আমলকারীর উচিত পূর্ববর্তীদের নিয়ম অনুযায়ী যেন আমল করতে পারে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। তাই স্বল্পসংখ্যকের পদ্ধতিতে আমলের অনুমতি সে যেন নিজেকে না দেয়। অবশ্য একান্ত প্রয়োজনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন আমল করা যেতে পারে, যদি তাতে অনুমতি থাকে এবং আমল রহিত হওয়ার কিংবা দলীল শুদ্ধ না হওয়ার আশংকা না থাকে অথবা এমন আশংকা না থাকে যে, পেশকৃত দলীলটি প্রমাণ হিসাবে গণ্য হওয়ার মত শক্তিশালী নয়।

কিন্তু যদি কেউ সর্বদা স্বল্পসংখ্যকের আমল অনুসরণ করে, তবে তাতে নিম্নের ব্যাপারগুলো অবধারিত হয়ে পড়বে:

এক: পূর্ববর্তীগণ সর্বদা যে কাজ করতেন তার বিরোধিতা করা অপরিহার্য হয়ে পড়বে। আর পূর্ববর্তী সালাফদের বিরোধিতা করার মধ্যে বড় বিপদ রয়েছে।

দুই: সালাফগণ সর্বদা যে কাজ করতেন তা ছেড়ে দেওয়া অবধারিত হয়ে যাবে। কেননা উদ্দেশ্য হলো তারা এ বর্ণনাগুলোর বিপরীতমুখী কাজে সর্বদা রত ছিলেন। সুতরাং তারা যে আমল করেন নি সে অনুযায়ী আমলে রত থাকা তারা যে আমল সর্বদা করতেন তার বিপরীত।

তিন: এটা অধিকাংশ সাহাবী যে আমল করেছেন তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কারণ এবং বিপরীত আমল (তথা স্বল্পসংখ্যকের আমল) প্রসিদ্ধি লাভ করার হেতু। কেননা কাজের অনুসরণ কথার অনুসরণের চেয়ে সুদূরপ্রসারী। আর এটা যখন ঘটে এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে যার অনুসরণ করা হয়, তখন ব্যাপারটি হয়ে দাঁড়ায় আরও ভয়াবহ।

সাবধান! সাবধান! পূর্ববর্তীদের বিরোধিতা করা থেকে সতর্ক থাকুন। তাতে যদি কোনো ফযীলত থাকত, তাহলে পূর্ববর্তীরাই তার বেশি হকদার হতেন। আল্লাহরই সাহায্য প্রার্থনা করছি”। [ইমাম শাতেবীর কথা এখানেই শেষ]

আর তৃতীয় প্রকার যাতে উক্ত মাসআলা অনুযায়ী সাহাবীদের কেউই আমল করেন নি, এমতাবস্থায় বিতর্কের অবকাশ নেই যে, সকল সাহাবীর আমলের বহির্ভূত যে আমল তা বিদ‘আত ও নিন্দনীয় (যদি উক্ত কাজের মাধ্যমে আমলকারী তার রবের নৈকট্য লাভের আশা করে। অবশ্য যদি তা (ইবাদাত না হয়ে) আদত তথা দৈনন্দিন প্রথার অন্তর্গত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হলো) তা মুবাহ বলে গণ্য হবে।

আর এজন্য যে ব্যক্তিই এমন কোনো আমল করে যা সালাফ তথা পূর্ববর্তী আলিমগণের তরীকা মাফিক নয় এবং কুরআন ও সুন্নাহকে তারা যেভাবে বুঝেছেন সে অনুযায়ীও নয়, তাকে বলা হবে: “তুমি বাতিলপন্থী, বিদ‘আতী ও যে পথ মুমিনদের নয় সে পথের অনুসারী”।

ইলমের সাথে সম্পর্কিত কিছু লোক বিভিন্ন স্বার্থ ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সে সব নব উদ্ভাবিত বিষয় (তথা বিদ‘আত)-কে উত্তম বলে চালিয়ে দিচ্ছে, যদ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ নৈকট্য লাভ (তথা ইবাদাত) করেন নি।

‘এসবই দীনের ক্ষেত্রে ভুল হিসেবে বিবেচিত এবং নাস্তিকদের পথ অনুসরণের নামান্তর। কেননা যারা এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করেছে এবং এ পথে চলেছে, হয় শরী‘আতকে তারা এমনভাবে বুঝেছে যেমনটি পূর্ববর্তীগণ বুঝেন নি অথবা শরী‘আতকে (সঠিকভাবে) বুঝা থেকে তারা দূরে সরে গিয়েছে।

এ শেষোক্ত কথাটিই সঠিক। কেননা সালাফে সালেহীনের অগ্রবর্তী দলই সরল সঠিক পথের ওপর ছিলেন। তারা উপরোক্ত দলীলসমূহ প্রভৃতি থেকে তা-ই বুঝেছেন যে নীতির ওপর তারা ছিলেন। আর এ নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ তাদের মধ্যে ছিল না এবং সে অনুযায়ী তারা আমলও করেন নি'। [ইমাম শাতেবীর আল মুয়াফাকাত খ. ৩, পৃ. ৭৩।]

নব উদ্ভাবিত বিষয়গুলো কয়েক ভাগে বিভক্ত: তন্মধ্যে কিছু আছে শির্ক, আর কিছু এমন বিদ‘আত যা শির্কের দিকে নিয়ে যায়, আর কিছু এমন বিদ‘আত যা সুন্নাতকে মিটিয়ে দেয়।

আর এ উদ্ভাবিত বিষয়গুলোর কোনো প্রকারই সাহাবী ও তাবেঈদের যুগে কখনই ছিল না। কেননা তাদের যুগে এমন কোনো কবর ছিল না যার পাশে ইবাদাতের নিয়তে অবস্থান করা হত, যার ওপর গম্বুজ নির্মাণ করা হত এবং যার অধিবাসীদের উসীলায় শাফা‘আত চাওয়া হত।

আর তাদের সময়ে নবী ও সৎ ব্যক্তিবর্গের সম্মান অথবা মান-মর্যাদা কিংবা ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে অসীলা করার ব্যাপারটি ছিল না এবং কবরের কাছে দো‘আ করার প্রচলনও ছিল না। তাদের সময়ে মীলাদ তথা জন্মদিবস পালন এবং মীলাদ-মাহফিল বা জন্মদিবসের অনুষ্ঠান নামেও কিছু ছিল না। মুসলমানদের সর্বসম্মতিক্রমে এসব কিছুই তাদের মাঝে অনুপস্থিত ছিল।

অতএব, এ-ই যখন অবস্থা, তখন পরবর্তীরা এ বিদ‘আতসমূহের উপযোগিতা প্রমাণের জন্য যেসব ভ্রান্ত যুক্তি পেশ করছেন, তা তিনভাগে বিভক্ত:

এক: কুরআনুল কারীমের আয়াত, তারা বাড়াবাড়ি করে এর অর্থ বিকৃত করে নিজ নিজ উদ্দেশ্য অনুযায়ী ব্যাখ্যা করছে।

দুই: হাদীস, তা আবার দু’ প্রকার:

প্রথম প্রকার: সহীহ হাদীসসমূহ যা তাদের উদ্দেশ্য ও বুঝের মুওয়াফিক নয়। তবে তারা এগুলোর অর্থ নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী বিকৃত করে নিয়েছে।

দ্বিতীয় প্রকার: মিথ্যা ও দুর্বল হাদীস। তাদের কাছে এ ধরনের হাদীসের সংখ্যাই বেশি এবং তারা এগুলো নিয়ে খুবই খুশী। এগুলোর প্রচার ও প্রসারের জন্য চলে তাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা।

তিন: কিসসা-কাহিনী ও স্বপ্ন, যা তারা পারস্পরিক ধারা পরম্পরায় বর্ণনা করে থাকে এমনভাবে যে, মনে হয় তা শরী‘আত প্রণয়নের একটি উৎস।

তারা আল-কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীসসমূহ দ্বারা যে দলীল পেশ করছে, তা থেকে নিষ্কৃতির উপায় দু'টি:

১. বিদ‘আতীগণ যে কথা দ্বারা দলীল পেশ করছে, তা মূলতঃ দলীলের উদ্দিষ্ট অর্থ নয়। কেননা উক্ত দলীল দ্বারা বিদ‘আতীরা যা বুঝে থাকে, সালাফের অনুসারী আহলে সুন্নাতের বুঝ তা থেকে ভিন্নতর। অতএব, সালাফের বুঝের মাধ্যমে খালাফের বুঝ প্রত্যাখ্যাত হবে।

২. দ্বিতীয় বিষয়টি প্রথম কথা থেকেই উৎসারিত। আর তা হলো এ প্রশ্ন করা যে, সালাফে সালেহীন কি উক্ত দলীলের ক্ষেত্রে খালাফ তথা পরবর্তী লোকদের বুঝ অনুযায়ী আমল করেছেন, নাকি আমল করেন নি?

সর্বসম্মত মত হলো, সালাফগণ এ উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ দ্বারা কখনোই আমল করেন নি। কোনো বিদ‘আতীই সালাফগণ থেকে এমন কোনো আমল প্রমাণ করতে সক্ষম হবে না, যা সাহাবীদের আমলের খেলাফ। কেননা আহলে সুন্নাত পূর্ববর্তীগণ তথা সাহাবী ও তাবেঈদের আমলের অনুসারী। আর খালাফগণ এর বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। তারা এমন কাজ করে যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়নি।

এ অর্থেই উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: “অচিরেই এমন লোকজন আসবে যারা আল কুরআন থেকে কিছু ভ্রান্ত যুক্তি বের করে তা দ্বারা তোমাদের সাথে ঝগড়া করবে। অতএব, তোমরা সুন্নাহ দিয়ে তাদের মোকাবেলা কর। কেননা সুন্নাহ বিশারদগণ আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখে।” [দারেমী এটি বর্ণনা করেছেন, খ. ১, পৃ. ৪৭। এছাড়া লালকাই সুন্নাহ গ্রন্থে এবং ইবনে আবদুল বির 'জামেউ বয়ানিল ইলমি ওয়া ফাদলিহী’ গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে দারাকুতনী ও ইবন আবি যমানাইন ‘ফসুলুস সুন্নাহ’ গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। মাকদেসী আল-হুজ্জাহ আ‘লা তারেকিল মাহাজ্জাহ’ গ্রন্থে এবং আরও অনেকে এর পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন।]

এজন্যই কোনো বিভ্রান্ত ফিরকা কিংবা খালাফীদের কাউকেই আপনি এমনটি পাবেন না যে, তারা নিজ নিজ মতের ওপর বাহ্যিক দলীল পেশ করতে অক্ষম। অথচ এ ক্ষেত্রে দলীল শুদ্ধ হওয়াটাই হলো আসল ব্যাপার, দলীল পেশ করতে সমর্থ হওয়া নয়।

ইমাম শাতেবী এ ধরনের সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলার পর (খ. ৩, পৃ. ৭৭) বলেন: ‘এ কারণেই শর‘ঈ দলীল ও প্রমাণ নিয়ে যারা চিন্তা গবেষণা করবেন, তাদের ওপর ওয়াজিব হলো, উক্ত দলীল থেকে পূর্ববর্তীগণ কি বুঝেছেন ও এ দলীল দ্বারা আমলের ক্ষেত্রে তাদের কি ভূমিকা ছিল, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কেননা এটাই সত্যে উপনীত হওয়ার অধিক উপযোগী এবং ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে অধিক শক্তিশালী।

এ ব্যাপারটি যখন স্পষ্ট হয়ে গেল এবং সত্য প্রতিভাত হলো, তখন সালাফে সালেহীনের প্রতি সম্পর্কিত হতে যারা গৌরববোধ করে, তারা উল্লিখিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি এটাও জানে যে:

১. সাহাবীদের যে আমলটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত ছিল, তারা সে অনুযায়ী আমল করেছেন।

২. যে আমল মাত্র একজন সাহাবী করেছেন অথবা কিছু সংখ্যক করেছেন আর বাদ বাকী সাহাবীগণ প্রথমোক্তদের বিরোধিতা করেছেন- এ ক্ষেত্রে তারা বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রত্যাবর্তিত করেছেন, যেমনটি তাদের রব তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা তিনি বলেন:

﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا﴾ [ النساء : ٥٩ ]

“কোনো বিষয়ে তোমরা মতভেদ করলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক। এটাই উত্তম এবং পরিণামের দিক দিয়ে প্রকৃষ্টতর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]

এখানে আল্লাহর দিকে বিষয়টি প্রত্যাবর্তিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এর মানে হলো আল্লাহর কালাম তথা অবতারিত কুরআন হাকীমের দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকেও প্রত্যাবর্তন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হলো তার জীবদ্দশায় তার কাছে প্রত্যাবর্তন করা এবং তার মৃত্যুর পর তার সহীহ সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করে অধিকাংশের আমল অনুসরণের জন্য চিন্তা গবেষণা করা।

আল-হামদুলিল্লাহ! আহলে সুন্নাতের এ নিয়মে কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় নি। এতে কোনো গরমিলও দেখা যায়নি। এটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট নিয়ম এবং পরিষ্কার নীতি ও সরল-সোজা পথ। চার ইমাম তাদের অধিকাংশ মাসআলায় এ নিয়মের ওপরই চলেছেন। আল্লাহ তাদেরকে রহম করুন এবং তাদের সাওয়াব বৃদ্ধি করুন।৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীয়ে কেরাম ইবাদাতের ক্ষেত্রে যে সকল আমল করেন নি, সেগুলো (কেউ করলে তা হবে) উদ্ভাবিত আমল যা খালাফী তথা পরবর্তীরা চালু করেছে।

সাহাবী ও তাবেঈগণ যা কিছু থেকে বিরত ছিলেন, তা ছিল তাদের সঠিক চিন্তাভাবনা প্রসূত এবং আল-কুরআন ও সুন্নাহর দলীলসমূহকে প্রশংসনীয়রূপে বুঝার কারণে। পরবর্তীকালের বিদ‘আত প্রচলনকারীদের তৈরি করা একই আসবাব ও কারণ সাহাবীদের যুগেও পাওয়া যাওয়া সত্ত্বেও তারা শরী‘আতের ব্যাপার ভালো করে বুঝে-শুনেই সে সব পরিত্যাগ করেছিলেন। আর তাদের পরিত্যাগ করার কাজটি (আমাদের জন্য) অনুকরণীয় সুন্নাত এবং অনুসৃত পথ।

পরবর্তী লোকজন যে আমল দ্বারা পুণ্য ও সাওয়াব পাওয়ার আশা করে থাকে অথচ সাহাবীরা সে আমল থেকে বিমুখ থেকেছেন, তা দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা সাহাবীগণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ লাভের প্রত্যাশী ছিলেন এবং শরী‘আতসম্মত ইবাদাতে লিপ্ত হতে সবচেয়ে বেশি চিন্তা-ভাবনা করতেন। তারা শরী‘আতসম্মত প্রত্যেকটি আমলকে কার্যে পরিণত করতেন এবং তদ্বারা সাওয়াবের আশা করতেন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতেন।

গ্রহণে ও বর্জনে, বুদ্ধি ও জ্ঞানে, বুঝে ও আমলে যে ব্যক্তি তাদের অনুসরণ করে, সে কতই না বুদ্ধিমান! আর সকল কল্যাণ ও নৈকট্য লাভের কতই না উপযুক্ত এবং প্রত্যেক ব্যাপারে তাওফীকপ্রাপ্ত হওয়ার কতই না যোগ্য!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন