hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম-১ ঈমান

লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন

৭১
প্রশ্ন: (৬৭) আকীদার মাসআলায় কি অজ্ঞতার অজুহাত গ্রহণযোগ্য?
উত্তর: আকীদার ক্ষেত্রে অজ্ঞতার অজুহাত গ্রহণ করা হবে কি না এ বিষয়টি অন্যান্য ফিক্হী মাসআলার ন্যায় মতবিরোধপূর্ণ। ব্যক্তি বিশেষের উপর বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে কখনো কখনো এ মতভেদ শাব্দিক হতে পারে। অর্থাৎ বিদ্বানগণ একমত যে, কোনো একটি কথা বা কাজ করা বা ছেড়ে দেওয়াটা কুফুরী। কুফুরীতে লিপ্ত হলো, নির্দিষ্টভাবে তার ওপর কি কুফুরীর বিধান প্রযোজ্য হবে? কেননা সেখানে কুফুরীর শর্তসমূহ বিদ্যামান এবং কাফির না হওয়ার প্রতিবন্ধতা নেই। না কি কাফির হওয়ার দাবী অবর্তমান থাকায় বা কাফির হওয়ার কোনো প্রতিবন্ধক থাকায় উক্ত ব্যক্তিকে কাফির বলা প্রযোজ্য হবে না? এ ব্যাপারে আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। যেসমস্ত কারণে মানুষ কাফির হয়ে যায় সেগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতা দু’ধরণের হতে পারে।

(১) এমন ব্যক্তি থেকে কুফুরী প্রকাশ পাওয়া, যে ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের অনুসারী অথবা সে কোনো দীনই বিশ্বাস করে না এবং সে এটা কোনো সময় কল্পনাও করতে পারে নি যে, সে যে বিষয়ের ওপর রয়েছে, তা ইসলাম বহির্ভুত। এ ব্যক্তির ওপর দুনিয়াতে কাফিরের বিধান প্রয়োগ করা হবে। আখেরাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য মত হলো, আল্লাহ পরকালে তাকে যেভাবে পরীক্ষা করবেন। তাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন; কিন্তু আমরা এ কথা ভালো করেই জানি যে, বিনা অপরাধে কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَا يَظۡلِمُ رَبُّكَ أَحَدٗا﴾ [ الكهف : ٤٩ ]

“আপনার রব কাউকে যুলুম করবেন না।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৪৯]

দুনিয়াতে তার ওপর কুফুরীর বিধান প্রয়োগ হওয়ার কারণ এই যে, সে ইসলামকে দীন হিসেবে গ্রহণ করে নি। তাই তার ওপর ইসলামের বিধান প্রয়োগ হবেনা। পক্ষান্তরে আখেরাতে তাকে পরীক্ষা করার ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. তার রচিত “তরীকুল হিজরাতাইন” নামক বইয়ে মুশরিক শিশুদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন।

(২) এমন লোক থেকে কুফুরী প্রকাশ পাওয়া, যার ধর্ম ইসলাম, কিন্তু সে এ কুফুরী আকীদা নিয়ে বসবাস করছে অথচ সে জানে না যে, এ আকীদা ইসলাম বিরোধী। কেউ তাকে সতর্কও করে নেই। মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হবে। পরকালের বিষয়টি আল্লাহর হাতে। কুরআন, সুন্নাহ এবং আলিমদের বাণী থেকে এ মর্মে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا﴾ [ الاسراء : ١٥ ]

“রাসূল না পাঠিয়ে আমি কাউকে শাস্তি দেব না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهۡلِكَ ٱلۡقُرَىٰ حَتَّىٰ يَبۡعَثَ فِيٓ أُمِّهَا رَسُولٗا يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِنَاۚ وَمَا كُنَّا مُهۡلِكِي ٱلۡقُرَىٰٓ إِلَّا وَأَهۡلُهَا ظَٰلِمُونَ ٥٩﴾ [ القصص : ٥٩ ]

“আপনার রব জনপদ সমূহকে ধ্বংস করেন না, যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্থলে রাসূল প্রেরণ না করেন, যিনি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং আমি জনপদ সমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা জুলুম করে।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৫৯]

আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿رُّسُلٗا مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى ٱللَّهِ حُجَّةُۢ بَعۡدَ ٱلرُّسُلِۚ﴾ [ النساء : ١٦٥ ]

“সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি ওজুহাত বা যুক্তি খাড়া করার মতো কোনো অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৫]

আল্লাহ বলেন

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ﴾ [ ابراهيم : ٤ ]

“আমি সব রাসূলকেই তাদের জাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিস্কারভাবে বোঝাতে পারেন। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪]

আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবায় বলেন,

﴿وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُضِلَّ قَوۡمَۢا بَعۡدَ إِذۡ هَدَىٰهُمۡ حَتَّىٰ يُبَيِّنَ لَهُم مَّا يَتَّقُونَۚ﴾ [ التوبة : ١١٥ ]

“আর আল্লাহ কোনো জাতিকে হিদায়াত করার পর পথভ্রষ্ট করেন না যতক্ষণ না তাদের জন্য পরিষ্কারভাবে বলে দেন সে সব বিষয়, যা থেকে তাদের বেঁচে থাকা দরকার।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১৫]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ مُبَارَكٞ فَٱتَّبِعُوهُ وَٱتَّقُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٥٥ أَن تَقُولُوٓاْ إِنَّمَآ أُنزِلَ ٱلۡكِتَٰبُ عَلَىٰ طَآئِفَتَيۡنِ مِن قَبۡلِنَا وَإِن كُنَّا عَن دِرَاسَتِهِمۡ لَغَٰفِلِينَ ١٥٦ أَوۡ تَقُولُواْ لَوۡ أَنَّآ أُنزِلَ عَلَيۡنَا ٱلۡكِتَٰبُ لَكُنَّآ أَهۡدَىٰ مِنۡهُمۡۚ فَقَدۡ جَآءَكُم بَيِّنَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞۚ ١٥٧﴾ [ الانعام : ١٥٥، ١٥٧ ]

“এটি এমন একটি বরকতময় গ্রন্থ, যা আমরা অবতীর্ণ করেছি। অতএব, তোমরা এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর, যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও এবং যাতে তোমরা এ কথা বলতে না পার যে, গ্রন্থ তো কেবল আমাদের পূর্ববর্তী দু’টি সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা সেগুলোর পাঠ ও পঠন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিংবা এ কথা বলতে না পার যে, যদি আমাদের প্রতি কোনো গ্রন্থ অবতীর্ণ হত, আমরা তাদের চাইতে অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত হতাম। অবশ্যই তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত এসে গেছে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৫-৫৭]

এমনি আরো অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, মানুষের কাছে দীনের শিক্ষা দান ও তা বর্ণনা করার পূর্বে হুজ্জত কায়েম হবে না।

সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ»

“ঐ সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, এ উম্মাতের কোনো ইয়াহূদী বা নাসারা আমার কথা শুনে আমার আনিত বিষয়সমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন না করে মারা গেলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।]

আলেমগণ বলেন, কোনো নও মুসলিম বা অমুসলিম দেশে বসবাসকারী বা মুসলিমদের এলাকা থেকে দূরবর্তী স্থানের অধিবাসী হওয়ার কারণে কেউ যদি কুফুরী কাজে লিপ্ত হয়, তাকে কাফির হওয়ার ফাতওয়া দেওয়া যাবে না। [মুগনী ৮/১৩১] শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া বলেন, যারা আমাকে চেনে, তারা অবশ্যই জানে যে, নির্দিষ্টভাবে কাউকে কাফির বা ফাসিক বলা থেকে আমি কঠোরভাবে নিষেধ করে থাকি। তবে যে ব্যক্তি কাফির বা ফাসিক হওয়ার কারণসমূহ সম্পর্কে অবগত আছে, তার কথা ভিন্ন। আমি আবারও বলছি যে, এ উম্মতের কেউ ভুলক্রমে অন্যায় কাজে লিপ্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। চাই আকীদার মাসআলায় ভুল করুক কিংবা অন্য কোনো মাসআলায়। সালাফে সালেহীন অনেক মাসআলায় মতভেদ করেছেন। তারপরও কেউ কাউকে কাফির বলেন নি। তাদের থেকে এও বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি এরূপ কথা বলবে, সে কাফির হয়ে যাবে, এটা ঠিক, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট কর্মের উপরে হুকুম লাগানো এবং ব্যক্তির ওপর হুকুম লাগানোর মাঝে পার্থক্য রয়েছে। শাইখুল ইসলাম আরো বলেন, কাউকে কাফির বলা অত্যন্ত ভয়ানক বিষয়। করা হয়েছে। , , সে নও মুসলিম অথবা সে আলিম-উলামা থেকে দূরের কোনো জনপদে বসবাস করছে। যার কারণে ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারেনি। কাজেই এরূপ ক্ষেত্রে দীনের কোনো বিষয় অস্বীকার করলেই তাকে কাফির বলা যাবে না। যতক্ষণ না তার কাছে হুজ্জত (কুরআন-সুন্নাহর দলীলসমূহ) পেশ করা হবে। এও হতে পারে যে, সে দলীল-প্রমাণ শুনে নি অথবা শুনেছে কিন্তু বিশুদ্ধ সূত্রে তার কাছে পৌঁছে নি। কখনো এও হতে পারে যে, সে একজন আলিম। তার কাছে দলীল রয়েছে বা দলীলের ব্যাখ্যা রয়েছে। যদিও তা সঠিক নয়। [মাজমূআয়ে ফাতোয়া ইবন তাইমীয়াঃ ৩/৩৩৯।]

শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহ্হাব রহ. বলেন, আমি ঐ ব্যক্তিকে কাফির বলি, যে দীনে মুহাম্মাদী সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তাকে গালি-গালাজ করল। শুধু তাই নয় বরং মানুষকে আল্লাহর দীন থেকে বিরত রাখে এবং ধার্মিক লোকদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। আমি এ শ্রেণির লোকদেরকে কাফির বলে থাকি। [আদ্ দুরারুস সানীয়া ১/৫৬।] তিনি আরো বলেন, যারা বলে আমরা ব্যাপকভাবে মানুষকে কাফির বলি এবং দীন পালনে সক্ষম ব্যক্তিকেও আমাদের কাছে হিজরত করে চলে আসতে বলি, তারা অপবাদ প্রদানকারী মিথ্যুক। তারা মানুষকে আল্লাহর দীন গ্রহণ করতে বাঁধা দিয়ে থাকে। আবদুল কাদের জিলানী এবং সায়্যেদ আহমদ বাদভীর কবরের উপরে যে মূর্তি রয়েছে, তার উপাসকদেরকে যদি অজ্ঞতার কারণে এবং তাদেরকে কেউ সতর্ক না করার কারণে কাফির না বলি, তাহলে কীভাবে আমরা এমন নির্দোষ লোকদেরকে আমাদের দিকে হিজরত না করার কারণে কাফির বলব, যারা কখনো আল্লাহর সাথে শরীক করে নি এবং আমাদেরকে কুফর প্রতিপন্ন করে নি ও আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করে নি? [আদ দুরারুস সানীয়া ১/৬৬।]

আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত এবং আলিমদের কথা অনুযায়ী দলীল-প্রমাণ পেশ করা ব্যতীত কাউকে কাফির বলা যাবে না। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের দাবীও তাই। তিনি অযুহাত পেশ করার সুযোগ দূর না করে কাউকে শাস্তি দিবেন না। বিবেক দ্বারা মানুষের ওপর আল্লাহর হক সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। যদি তাই হত, তাহলে রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে হুজ্জত পেশ করা যথেষ্ট হত না।

সুতরাং একজন মুসলিম ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম হিসেবেই পরিগণিত হবে, যতক্ষণ না শরী‘আতের দলীলের মাধ্যমে তার ইসলাম ভঙ্গ হবে। কাজেই কাফির বলার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, তা না হলে দু’টি বড় ধরণের ভয়ের কারণ রয়েছে।

(১) আল্লাহর ওপর মিথ্যাচারিতার অপবাদ। সাথে সাথে যার ওপর হুকুম লাগানো হলো তাকেও এমন দোষে দোষী সাব্যস্ত করা হলো, যা থেকে সে সম্পূর্ণ মুক্ত। আল্লাহর ওপর মিথ্যাচারিতার অপবাদ এভাবে হয় যে, এমন ব্যক্তিকে কাফির বলা হয়েছে, যাকে আল্লাহ কাফির বলেন নি। এটি আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা হারাম করার শামিল। কেননা কাউকে কাফির বলা বা না বলা এটি কেবল আল্লাহরই অধিকার। যেমনিভাবে কোনো কিছু হারাম করা বা হালাল করার দায়িত্ব আল্লাহর উপরে।

(২) দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো মুসলিম ব্যক্তি যে অবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত, তার বিপরীত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। কেননা যখন কোনো মুসলিমকে লক্ষ্য করে কাফির বলবে, তখন সে যদি কাফির না হয়, তাহলে ফাতওয়া দানকারী নিজেই কাফির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সহীহ মুসলিমে ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِأَخِيهِ يَا كَافِرُ فَقَدْ بَاءَ بِهِ أَحَدُهُمَا»

“যখন কোনো ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে কাফির বলবে, তখন তাদের দু’জনের একজন কাফিরে পরিণত হবে।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যাকে কাফির বলা হলো, সে যদি কাফির হয়ে থাকে তাহলে কাফির হবে। অন্যথায় ফাতওয়া দানকারী নিজেই কাফেরে পরিণত হবে। [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।]

সহীহ মুসলিমে আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে,

«وَمَنْ دَعَا رَجُلًا بِالْكُفْرِ أَوْ قَالَ عَدُوَّ اللَّهِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلَّا حَارَ عَلَيْهِ»

“যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে কাফির বলবে অথবা আল্লাহর শত্রু বলবে, সে অনুরূপ না হয়ে থাকলে যে বলল সে নিজেই কাফির বা আল্লাহর শত্রু হিসাবে পরিণত হয়ে যাবে।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।]

যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে কাফির বলে, সে নিজের আমল নিয়ে অহংকার করে এবং অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকে। এ ধরণের ব্যক্তি দু’টি সমস্যার সম্মুখীন। নিজের আমলকে খুব বড় মনে করলে আমল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার মধ্যে অহংকার আসার কারণে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ»

“আল্লাহ বলেন, অহংকার আমার চাদর। বড়ত্ব আমার পোষাক। যে ব্যক্তি আমার এ দু’টির যে কোনো একটি পোষাক নিয়ে টানাটানি করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।” [আবু দাউদ, অধ্যায়: কিতাবুল লিবাস।] সুতরাং কাউকে কাফির বলার পূর্বে দু’টি বিষয় খেয়াল করতে হবে:

(১) আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নায় কাজটিকে কুফুরী বলা হয়েছে কি না। যাতে করে আল্লাহর ওপর মিথ্যাচারিতায় লিপ্ত না হয়।

(২) যার ভিতরে কাফির হওয়ার কারণ ও শর্তসমূহ বিদ্যমান এবং কাফির না হওয়ার যাবতীয় বাঁধামুক্ত। কেবল তার উপরই কুফুরীর বিধান প্রয়োগ করা। কাফির হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, জেনে-শুনে শরী‘আত বিরোধী এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যা কুফুরীকে আবশ্যক করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥﴾ [ النساء : ١١٥ ]

“আর সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনগণের বিপরীত পথের অনুগামী হয়, আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তন করাবো, যাতে সে প্রত্যাবর্তন করতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর ওটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]

উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার শর্ত হলো হিদায়াত সুস্পষ্ট হওয়ার পর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরোধিতা করা।

কাজটি করলে কাফির হয়ে যাবে, এটা জানা কি জরুরি? নাকি কাজটি শরী‘আতে নিষেধ এতটুকু জানাই যথেষ্ট? যদিও কাজটির ফলাফল সম্পর্কে অবগত না থাকে।

উত্তর হলো, কাজটি শরী‘আতে নিষেধ একথা জেনে তাতে লিপ্ত হলেই হুকুম লাগানোর জন্য যথেষ্ট। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করার কারণে এক লোকের ওপর কাফফরা ওয়াজিব করেছিলেন। কারণ, সে জানতো দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম; কিন্তু কাফফরা ওয়াজিব হওয়ার কথা জানতো না। বিবাহিত পুরুষ ব্যভিচারকে হারাম জেনে তাতে লিপ্ত হলে তাকে রজম করতে হবে। যদিও সে বিবাহিত যেনাকারীর শাস্তি যে রজম, তা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে।

জোর পূর্বক কাউকে কুফুরী কাজে বাধ্য করা হলে, তাকে কাফির বলা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَن كَفَرَ بِٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ إِيمَٰنِهِۦٓ إِلَّا مَنۡ أُكۡرِهَ وَقَلۡبُهُۥ مُطۡمَئِنُّۢ بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَٰكِن مَّن شَرَحَ بِٱلۡكُفۡرِ صَدۡرٗا فَعَلَيۡهِمۡ غَضَبٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٦﴾ [ النحل : ١٠٦ ]

“কেউ ঈমান আনার পরে আল্লাহর সাথে কুফুরীতে লিপ্ত হলে এবং কুফুরীর জন্য অন্তরকে খুলে দিলে তার ওপর আপততি হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি। তবে তার জন্যে নয়, যাকে কুফুরীর জন্যে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০৬]

অধিক আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে বা চিন্তিত অবস্থায় অথবা রাগান্বিত হয়ে অথবা ভীত অবস্থায় কুফুরী বাক্য উচ্চারণ করলে কাফির হয়ে যাবে না। আল্লাহর বাণী,

﴿وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا﴾ [ الاحزاب : ٥ ]

“ভুলক্রমে কোনো অপরাধ করলে তোমাদের কোনো দোষ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫]

সহীহ মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ»

“গুনাহ করার পর বান্দা যখন তাওবা করে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশি খুশী হন, যে একটি বাহনের উপর আরোহন করে মরুভূমির উপর দিয়ে পথ চলতে ছিল। এমন সময় বাহনটি তার খাদ্য-পানীয় সব নিয়ে পলায়ন করল। এতে লোকটি নিরাশ হয়ে একটি গাছের নিচে এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ নিদ্রায় থাকার পর হঠাৎ উঠে দেখে বাহনটি তার সমস্ত আসবাব পত্রসহ মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে বাহনটির লাগাম ধরে আনন্দে বলে উঠল, হে আল্লাহ! আপনি আমার গোলাম, আমি আপনার রব। খুশীতে আত্মহারা হয়েই সে এ ধরণের ভুল করেছে।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুত তাওবাহ।]

কাফির বলার পথে আরেকটি বাধা হলো কাজটি কুফুরী হওয়ার ব্যাপারে কুফুরীতে লিপ্ত ব্যক্তির কাছে তাবীল বা ব্যাখ্যা থাকা। যে কারণে সে মনে করে যে, সে সত্যের ওপরই আছে। কাজেই সে তার ধারণা মতে পাপ বা শরী‘আত বিরোধী কাজে লিপ্ত হয় নি। আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে যেখানে আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا﴾ [ الاحزاب : ٥ ]

“ভুলক্রমে কোনো অপরাধ করলে তোমাদের কোনো দোষ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَا﴾ [ البقرة : ٢٨٦ ]

“আল্লাহ কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬]

ইমাম ইবন কুদামা আল-মাকদেসী বলেন, কোনো প্রকার সন্দেহ বা ব্যাখ্যা ব্যাতীত কেউ যদি নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হালাল ভেবে হত্যা করে এবং তাদের সম্পদ আত্মসাৎ করে, তাহলেও সে কাফির হয়ে যাবে। আর যদি তাবীল করে কাফির ভেবে হত্যা করে এবং সম্পদ হালাল জেনে আত্মসাৎ করে, তবে তাদেরকে কাফির বলা হবে না। এ জন্যে খারেজীদেরকে অধিকাংশ আলিমগণ কাফির বলেন নি। অথচ তারা মুসলিমদের জান-মাল হালাল মনে করে এবং এ কাজের দ্বারা তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবে বলে মনে করে। তাদেরকে কাফির না বলার কারণ এই যে, তারা তাবীল বা অপব্যাখ্যা করে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছিল। তিনি আরো বলেন, খারেজীরা অনেক ছাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীদের রক্ত ও সম্পদ হালাল মনে করত। শুধু তাই নয় এ কাজকে তারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যম মনে করত। তা সত্বেও আলিমগণ তাদেরকে কাফির বলেন নি। কারণ, তাদের কাছে অপব্যাখ্যা ছিল। [খারেজীর বিশ্বাস এই যে, কোন মুসলমান যদি কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফির হয়ে যায় এবং তার জান-মাল হালাল হয়ে যায়।]

ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, কুরআনের বিরোধীতা করা খারেজীদের উদ্দেশ্য ছিল না; বরং কুরআন বুঝতে গিয়ে ভুল করার কারণে তারা বিদ‘আতে লিপ্ত হয়ে পাপী মুমিনদেরকে কাফির মনে করেছে। [মাজমূআ‘ ফাতওয়া ইবন তাইমিয়া ১৩/৩০।] তিনি আরো বলেন, খারেজীরা কুরআনের বিরোধীতা করে মুমিনদেরকে কাফির বলেছে। অথচ কুরআনের ভাষায় মুমিনদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তারা বিনা ইলমে, সুন্নার অনুসরণ না করে এবং প্রকৃত জ্ঞানীদের কাছে না গিয়ে কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতগুলোর অপব্যাখ্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, ইমামগণ ঐক্যবদ্ধভাবে খারেজীদেরকে নিন্দা করেছেন এবং গোমরাহ বলেছেন। তবে তাদেরকে কাফির বলার ক্ষেত্রে দু’টি বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বা অন্য কোনো সাহাবী তাদেরকে কাফির বলেন নি; বরং তাদেরকে যালেম এবং সীমা লংঘনকারী মুসলিম হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল ও অন্যান্য ইমামগণ থেকেও এ ধরণের কথা বর্ণিত আছে। ইমাম ইবন তাইমীয়া আরো বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারেজীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলেছেন। চতুর্থ খলীফা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। সাহাবী ও পরবর্তী উত্তম যুগের ইমামগণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, সা‘দ ইবন আবি ওয়াক্কাস বা অন্য কোনো সাহাবী খারেজীদেরকে কাফির বলেন নি; বরং তাদেরকে মুসলিম মনে করেছেন। তারা যখন অন্যায়ভাবে মানুষের রক্তপাত শুরু করল এবং মুসলিমদের ধন-সম্পদের ওপর আক্রমণ করল তখন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের এ যুলুম এবং বিদ্রোহ দমন করার জন্য যুদ্ধ করেছেন। তাদেরকে কাফির মনে করে যুদ্ধ করেন নি। তাই তিনি তাদের মহিলাদেরকে দাসী হিসাবে বন্দী করেন নি এবং তাদের সম্পদকে গণীমত হিসেবে গ্রহণ করেন নি। তাদের গোমরাহী কুরআনের দলীল, মুসলিমদের ইজমা‘ দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দিয়েছেন। তথাপিও আলিমগণ তাদেরকে কাফির বলেন নি। তাহলে কীভাবে এমন ফিরকার লোকদেরকে কাফির বলবেন, যাদের চেয়ে বড় আলিমগণ অনেক মাসআলায় ভুল করেছেন। সুতরাং এক দলের পক্ষে অপর দলকে কাফির বলা এবং জান-মাল হালাল মনে করা জায়েয নেই। যদিও তাদের ভিতরে বিদ‘আত বর্তমান রয়েছে। মূল কথা তারা যে বিষয়ে মতভেদ করেছে সে সম্পর্কে তারা সকলেই অজ্ঞ। ’বীল করে কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বা কাউকে কাফির বলে, তবে উক্ত মুসলিমকে কাফির বলা যাবে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী থেকে যে হুকুম সাব্যস্ত হয়, দাওয়াত না পৌঁছিয়ে বান্দার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে হাম্বলী মাযহাবের আলিমগণের তিন ধরণের বক্তব্য রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কুরআনের বক্তব্যই সঠিক। আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا﴾ [ الاسراء : ١٥ ]

“রাসূল না পাঠিয়ে আমরা কাউকে শাস্তি দেব না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫]

﴿رُّسُلٗا مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى ٱللَّهِ حُجَّةُۢ بَعۡدَ ٱلرُّسُلِۚ﴾ [ النساء : ١٦٥ ]

“সুসংবাদ দাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অযুহাত পেশ করার মত কোনো অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৫]

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আছে, আল্লাহর চেয়ে অধিক ওযর-অযুহাত গ্রহণকারী আর কেউ নেই। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা সুসংবাদ দাতা এবং ভয় প্রদর্শনকারী হিসাবে রাসূল প্রেরণ করেছেন।

মোটকথা অজ্ঞতার কারণে কেউ কুফুরী করলে অথবা কুফুরী বাক্য উচ্চারণ করলে কাফির হবে না। , রাসূলের সুন্নাত এবং আলিমদের পথ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন