HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইখলাছ মুক্তির পাথেয়

লেখকঃ ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী

ইখলাছের ফলাফল :
ইখলাছের ফলাফল রয়েছে অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :-

১- জান্নাত লাভ :

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-

إلا عباد الله المخلصين . أولئك لهم رزق معلوم . فواكه وهم مكرمون . في جنات النعيم . ( الصافات : 40-43)

কিন্তু তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ (ইখলাছ অবলম্বনকারী) বান্দা। তাদের জন্য রয়েছে নির্ধারিত রিযিক, ফলমূল, তারা হবে সম্মানিত, সূখদ কাননে। (সূরা আস-সাফফাত : ৪০ -৪৩)

একটি প্রসিদ্ধ বচন এই যে, সকল মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে জ্ঞানীরা বেঁচে যাবে। সকল জ্ঞানী ধংস হয়ে যাবে, তবে যারা কাজ করেছে, তারা বেঁচে যাবে। যারা কাজ করেছে, তারাও ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে যারা ইখলাছের সাথে (একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য) কাজ করেছে, তারা মুক্তি পাবে। (মিনহাজ আল-কাসেদীন : আল-মাকদিসী)



২-আমল কবুল হওয়া :

ইখলাছ হল আমল কবুলের শর্ত। ইবনে কাসীর রহ. বলেছেন : দুটো শর্তের সন্বিবেশ ব্যতীত আল্লাহ তাআলা আমল গ্রহণ করবেন না। প্রথম শর্ত হল আমলটি শরীয়ত অনুমোদিত হতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত আমলটি ইখলাছ (একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদিত) সহকারে শিরকমুক্ত ভাবে আদায় করতে হবে। (তাফসীরে ইবনু কাসীর)

আল্লামা সাজী বলেছেন : পাঁচটি গুণের মাধ্যমে জ্ঞানের পূর্ণতা লাভ হয়। গুণ পাঁচটি হল : আল্লাহর পরিচয় লাভ। হক বা যা সত্য তার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপণীত হওয়া। ইখলাছ বা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ মোতাবেক কাজ করা এবং হালাল খাদ্য গ্রহণ করা। যদি এর একটি অনুপস্থিত থাকে তাহলে তার আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। (আল-জামে লিআহকামিল কুরআন : কুরতুবী)

আল্লামা সিদ্দীক খান বলেন : ইখলাছ আমলের শুদ্ধতা ও কবুলের একটি অন্যতম শর্ত, এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। (আদ-দীনুল খালেছ : সিদ্দীক খান)

প্রমাণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস-

إن الله لا يقبل من العمل إلا ما كان خالصا وابتغى به وجهه .( أخرجه النسائي 3140( وصححه الألباني في سنن النسائي 2/659 (

আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন যা ইখলাছের সাথে এবং আল্ল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হয়। (বর্ণনায় : নাসায়ী)

হাদীসে আরো এসেছে-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إذا جمع الله الأولين والآخرين يوم القيامة ليوم لا ريب فيه نادي مناد من كان أشرك في عمل عمله لله فليطلب ثوابه من عند غير الله فإن الله أغنى الشركاء عن الشرك . أخرجه ابن ماجة 4203 وحسنه الألباني

রাসূলুল্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কিয়ামতের দিনে আল্ল্লাহ তাআলা যখন সকল মানুষকে একত্র করবেন তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত কাজে অন্য কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করেছে সে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে সেই শরীকের কাছ থেকে প্রতিদান বুঝে নেয়। কেননা, আল্ল্লাহ তাআলা সকল প্রকার অংশীদার ও অংশীদারিত্ব থেকে মুক্ত। (বর্ণনায় : ইবনে মাজাহ)

৩- আখিরাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআত লাভ :

বান্দা ইখলাছ অবলম্বনের ক্ষেত্রে যতবেশী অগ্রগামী হবে সে কিয়ামতের দিন ততবেশী শাফাআত লাভের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে।

আল্লাহর রাসূলের হাদীস এর প্রমাণ-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أسعد الناس بشفاعتي يوم القيامة من قال لا إله إلا الله خالصا من قلبه . ( أخرجه البخاري :99)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কিয়ামাতের দিন আমার শাফাআত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে ইখলাছের সাথে (একনিষ্ঠভাবে) বলেছে আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। (বর্ণনায় : বুখারী)

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন : এ হাদীসে তাওহীদের একটি সুক্ষ্ম রহস্য লুকায়িত আছে, তা এই যে, শাফাআত লাভের অন্যতম শর্ত হচ্ছে তাওহীদ অবলম্বন ও তাওহীদের পরিপন্থী বিষয় হতে দূরে থাকা। যে ব্যক্তি তার তাওহীদকে যত বেশী উন্নত ও পূর্ণ করতে পারবে সে তত বেশী শাফাআত লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যে শিরক করবে তার জন্য কোন শাফাআত নেই। (আদ-দীন আল-খালেছ : সিদ্দীক খান)

৪-হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্তর পবিত্র থাকে :

যখন কোন ব্যক্তির অন্তরে ইখলাছ স্থান পেয়ে যায় তখন সে অনেক বিপদ-আপদ, দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকে। যেমন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন :-

ثلاثة لا يغل عليهن قلب امرئ مؤمن : إخلاص العمل لله، والمناصحة لأئمة المسلمين ولزوم جماعتهم . ( أخرجه أحمد وابن ماجة )

তিনটি বিষয়ে মুমিনের অন্তর খিয়ানত করে না। ইখলাছের সাথে আমলসমূহ আল্লাহর জন্য নিবেদন করা, মুসলিম নেতাদের কল্যাণ কামনা ও মুসলিম জামাআতের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকা। (বর্ণনায় : আহমদ, ইবনে মাজাহ)

ইবনু আব্দুল বার রহ. বলেন: এ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে তার অন-র কখনো দুর্বল হবে না। কপটতা বা নিফাকী থেকে সে পবিত্র থাকবে। (আত-তামহীদ : ইবনে আব্দুল বার)

৫- গুনাহ মাফ ও অগণিত পুরস্কার লাভ :

যখন মুমিন ব্যক্তি ইখলাছসহ সকল আমল করবে তখন সে গুনাহ থেকে ক্ষমা পেয়ে যাবে এবং অনেক গুণে প্রতিদান লাভ করবে। যদিও কাজটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে ছোট অথবা পরিমাণে খুবই স্বল্প।

এ ব্যাপারে ইবনুল মুবারক রহ. বলেন : অনেক ক্ষুদ্র আমল আছে নিয়্যত যাকে অনেক বড় করে দেয়। আবার অনেক বড় আমল আছে নিয়্যত যাকে অনেক ছোট করে দেয়। (সিয়ার আলামুন নুবালা : আজ-যাহাবী)

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন : অনেক আমল এমন আছে যা মানুষ পরিপূর্ণ ইখলাছের সাথে সম্পাদন করে। ফলে এ আমলটি ইখলাছের পূর্ণতার কারণে তার কবীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। যেমন তিরমিজী ও ইবনে মাজার হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কিয়ামাতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তির ব্যাপারে চিৎকার দেয়া হবে। তার কাছে উপস্থিত করা হবে পাপকর্মের নিরানব্বইটি বিশাল নথি। প্রতিটি নথির ব্যপ্তি হবে দৃষ্টির দুরত্ব পরিমাণ। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি যে এ পাপকর্মগুলো করেছো তা কি তুমি অস্বীকার করবে? সে বলবে হে প্রতিপালক! আমি এগুলো অস্বীকার করতে পারি না। আল্লাহ বলবেন, তোমার উপর জুলুম করা হবে না। এরপর হাতের তালু পরিমাণ একটা টিকেট বের করা হবে যাতে লেখা থাকবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সে বলবে এত বিশাল পাপের সম্মুখে এ ছোট টিকেটের কি মূল্য আছে? অত:পর এ টিকেটটি একটি পাল্লায় রাখা হবে এবং তার পাপের বিশাল নথিগুলোকে রাখা হবে অপর পাল্লায়। টিকেটের পাল্লাই ভারী হবে।

কারণ এ ব্যক্তি ইখলাছের (একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য) সাথে লা-ইলাহা ইল্লাহর স্বাক্ষ্য দিয়েছে বলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়েছে। নয়ত যে সকল কবীরাগুণাহে লিপ্ত ব্যক্তিরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর স্বাক্ষ্য দিয়েছে, তারাও জাহান্নামে যাবে। হয়ত তারা ইখলাছের সাথে কালেমা পড়েনি।

এমনিভাবে যে পতিতা একটি পিপাসার্ত কুকুরকে কষ্ট করে পানি পান করিয়েছিল সে তা ইখলাছের সাথে করেছে বলেই তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। নয়তো যে কোন পতিতা এ কাজ করত, তারই ক্ষমা পাওয়ার কথা ছিল।

এমনিভাবে যে ব্যক্তি পথের কাঁটা দূর করে দেয়ার কারণে ক্ষমা পেয়েছিল সে তা ইখলাছের সাথে করার কারণে ক্ষমা পেয়েছে। নয়তো সকল কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিরা এ কাজটি করে ক্ষমা আদায় করে নিতে পারত।

পক্ষান্তরে : অনেক বড় বড় ব্যক্তি বিরাট গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে কিন্তু তাতে ইখলাছ (আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা) না থাকার কারণে তা ব্যর্থ হয়ে গেছে ও আমলকারী পুরস্কার ও প্রতিদানের পরিবর্তে শাসি-র পাত্রে পরিণত হয়েছে।

যেমন হাদীসে এসেছে-

إن أول الناس يقضى يوم القيامة عليه رجل استشهد فأتي به فعرفه نعمها فعرفها، قال فما عملت فيها، قال : قاتلت فيك حتى استشهدت، قال : كذبت، ولكنك قاتلت لأن يقال جريء فقد قيل، ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقى في النار . ورجل تعلم العلم وعلمه وقرأ القرآن فأتي به فعرفه نعمه فعرفها، قال : فما عملت فيها، قال : تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القرآن، قال : كذبت، ولكنك تعلمت العلم ليقال : عالم وقرأت القرآن ليقال هو قارئ فقد قيل، ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقى في النار . ورجل وسع الله عليه وأعطاه من أصناف المال كله فأتي به فعرفه نعمه فعرفها، قال : فما عملت فيها، قال : ما تركت من سبيل تحب أن ينفق فيها إلا أنفقت فيها لك، قال : كذبت ولكنك فعلت ليقال هو جواد، فقد قيل، ، ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقى في النار . أخرجه مسلم : 1905

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে হাজির করা হবে এবং আল্লাহ তার নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন। এবং সে তার প্রতি সকল নিয়ামত চিনতে পারবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন তুমি কি কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি তোমার পথে যুদ্ধ করেছি, শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন : তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি তো যুদ্ধ করেছ লোকে তোমাকে বীর বলবে এ উদ্দেশ্যে। আর তা বলা হয়েছে। অত:পর নির্দেশ দেয়া হবে, এবং তাকে টেনে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

তারপর এমন ব্যক্তির বিচার করা হবে, যে নিজে জ্ঞান অর্জন করেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন তেলাওয়াত করেছে। তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তার নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সে স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞেস করবেন কি কাজ করে এসেছ? সে বলবে আমি জ্ঞান অর্জন করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং আপনার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছ এ জন্য যে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলবে। কুরআন তেলাওয়াত করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, লোকে তোমাকে কারী বলবে। আর তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য।

তারপর বিচার করা হবে এমন ব্যক্তির, যাকে আল্লাহ দুনিয়াতে সকল ধরণের সম্পদ দান করেছিলেন। তাকে হাজির করে আল্লাহ নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সে সকল নেয়ামত স্মরণ করবে। আল্লাহ বলবেন, কি করে এসেছ? সে বলবে, আপনি যে সকল খাতে খরচ করা পছন্দ করেন আমি তার সকল খাতে সম্পদ ব্যয় করেছি, কেবল আপনারই জন্য। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি সম্পদ এ উদ্দেশ্যে খরচ করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীল বলবে। আর তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে, এবং তাকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। বর্ণনায় : মুসলিম।

হাদীসে আরো এসেছে :-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إني أخوف ما أخوف عليكم الشرك الأصغر، قالوا يا رسول الله وما الشرك الأصغر؟ قال : الرياء، يقول الله لهم يوم يجازي العباد بأعمالهم : اذهبوا إلى الذين كنتم تراؤون في الدنيا فانظروا هل تجدون عندهم جزاء . أخرجه البغوي في شرح السنة

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে যে বিষয়ে ভয় করি, সে বিষয়ে সাবধান করতে চাই; তা হল শিরক আছগর বা ছোট শিরক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন হে রাসূল! ছোট শিরক কি? তিনি বললেন : রিয়া (লোক দেখানো উদ্দেশ্যে কাজ করা)। যেদিন আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মের প্রতিদান দেবেন, সে দিন তিনি বলবেন : দুনিয়াতে তোমরা যাদের দেখানোর জন্য কাজ করেছ আজ তাদের কাছে যাও! দেখ, তাদের কাছে প্রতিদান পাও কি-না। (বগভী)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-

إن الله تبارك وتعالى يقول : أنا أغنى الشركاء عن الشرك، من عمل عملا أشرك فيه غيري فأنا منه بريء، هو للذي عمله . أخرجه مسلم : 2985

আল্লাহ তাআলা বলবেন : আমি শিরক ও অংশীদার থেকে বে-পরোয়া। যে কোন কাজে আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক করল আমি তার থেকে সম্পর্কমুক্ত। যার জন্য সে করেছে সেটা তারই জন্য। বর্ণনায়: মুসলিম

৬- আল্লাহর সাহায্য ও প্রতিষ্ঠা লাভ :

ঈমানদারদের আল্লাহর সাহায্য লাভ ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মূল উপাদান হল ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-

إنما ينصر الله هذه الأمة بضعيفها : بدعوتهم وصلاتهم وإخلاصهم . أخرجه النسائي : 3178 وصححه الألباني

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ উম্মাতকে সাহায্য করেন তাদের দূর্বলদের কারণে ; তাদের দুআ, সালাত ও ইখলাছের কারণে। (বর্ণনায় : নাসায়ী)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-

بشر هذه الأمة بالنصر والسناء والتمكين، فمن عمل منهم عمل الآخرة للدنيا لم يكن له في الآخرة نصيب ). صحيح ابن حبان )

আমার উম্মতকে সাহায্য, প্রাচুর্য ও তাদের প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দাও। আর তাদের কেউ যদি আখিরাতের কাজ করে পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে, আখিরাতে তার কোন অংশ নেই। (বর্ণনায় : ইবনে হিব্বান)

আমাদের পূর্বসূরী সালাফে সালেহীনদের জীবনের দিকে তাকালে দেখতে পাই, তারা আল্লাহর সাহায্য লাভ করেছেন নিজেদের ঈমানী শক্তি, ইখলাছ বা অন্তরের একনিষ্ঠতা ও ঈমান ও ইখলাছের আলোকে গঠিত পরিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের মাধ্যমে।

ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেছেন :-

فمن خلصت نيته في الحق ولو على نفسه كفاه الله ما بينه وبين الناس ) . السنن الكبرى للبيهقي (

যে সত্যের ব্যাপারে নিজ নিয়্যতকে খালেছ করে নিয়েছে, যদিও তা তার নিজের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে মানুষের অপকারিতা অসহযোগের ক্ষেত্রে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন। (সুনানুল কুবরা : বায়হাকী)

উক্ত মন্তব্য উল্লেখের পর ইবনুল কায়্যিম রহ. মন্তব্য করেন : বান্দা যখন আল্লাহর জন্য তার নিজের নিয়্যত স্থির করে নেয় এবং তার ইচ্ছা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, জ্ঞান-সবকিছু আল্লাহর জন্য হয়ে যায়, তখন আল্লাহর সাহায্য সর্বদা তার সাথে থাকে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও ইহসান করে আল্লাহ তাদের সাথে আছেন। তাকওয়া ও ইহসানের মূল হল সত্য প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হওয়া বা ইখলাছ অবলম্বন করা। আল্লাহর উপর জয়ী হতে পারে এমন কেউ নেই। যার সাথে আল্লাহ আছেন তার উপর কেউ জয় লাভ করতে পারে না, পারে না তাকে কেউ পরাজিত করতে। যার সাথে আল্লাহ আছেন তার ভয় কিসের? (ইলামুল-মুআক্কিয়ীন : ইবনুল কায়্যিম)

৭- মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও ভালবাসা লাভ :

আল্লাহ তাআলা ইখলাছ অবলম্বনকারী বান্দাদের জন্য মানুষের ভালবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভের ফয়সালা করেন। পক্ষান্তরে যে মানুষের মন পাওয়ার জন্য মানুষের কাছে আস্থাভাজন হওয়ার নিয়্যতে কাজ করে, সে মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা লাভ করতে পারে না। সে যা চায় তার উল্টোটাই পায়।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-

من سمع سمع الله به، ومن يرائي يرائي الله به . أخرجه البخاري : 6499

যে মানুষকে শুনাতে চায় আল্লাহ তার কথা শুনিয়ে দেন। যে মানুষকে দেখাতে চায় আল্লাহ মানুষের কাছে তাকে দেখিয়ে দেন। (বর্ণনায় : বুখারী)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :-

من كانت الدنيا همه فرق الله عليه أمره وجعل فقره بين عينيه ولم يأته من الدنيا إلا كتب له، ومن كانت الآخرة نيته جمع الله له أمره، وجعل غناه في قلبه وأتته الدنيا وهي راغمة . أخرجه ابن ماجة : 4105

যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য হবে পার্থিব স্বার্থ, আল্লাহ তার কাজগুলোকে এলোমেলো করে দেবেন। তার দু চোখে দরিদ্রতা দিয়ে দেবেন। তার জন্য যা কিছু নির্ধারিত আছে এর বাইরে দুনিয়ার কিছুই সে লাভ করতে পারবে না। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত, আল্লাহ তার কাজ-কর্ম গুছিয়ে দেবেন। তার অন্তরে সচ্ছলতা দান করবেন। দুনিয়ার সম্পদ অপমানিত হয়ে তার কাছে ফিরে আসবে। (বর্ণনায় : ইবনে মাজাহ)

আমাদের পূর্বসূরী সালাফে সালেহীন এ বিষয়ে কতটা সচেতন ছিলেন তা অনুমান করা যায় মুজাহিদ রহ. এর কথায়। তিনি বলেন : বান্দা যখন তার অন-র নিয়ে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয় আল্লাহ তখন সকল সৃষ্ট জীবের অন্তর তার দিকে ঝুকিয়ে দেন।

ফুজাইল রহ. বলেন : যে কামনা করে আলোচিত হওয়ার জন্য, যার একান্ত আকাঙ্খা এই যে, মানুষ তাকে স্মরণ করুক, তাকে কিন্তু স্মরণ করা হয় না। আর যে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করে এবং মানুষ তাকে স্মরণ করুক এটা কামনা করে না, আসলে তাকেই স্মরণ করা হয়। (ইলামুল-মুআক্কিয়ীন : ইবনুল কায়্যিম)

৮- বৈধ কাজগুলো ইবাদতে রূপান্তরিত হওয়া :

ইবাদত ও কাজে-কর্মে বান্দার একনিষ্ঠতা এবং বিশুদ্ধ নিয়ত তার পার্থিব কর্মগুলোকে উঁচু স্তরে উন্নীত করে এবং পরিণত করে গ্রহণযোগ্য ইবাদতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-

وفي بضع أحدكم صدقة، قالوا يارسول الله أيأتي أحدنا شهوته ويكون له فيها أجر؟ قال : أرأيت لو وضعها في حرام أكان عليه وزر ؟ فكذلك إذا وضعها في الحلال كان له أجر أخرجه مسلم : 1006

আর তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনকর্মেও রয়েছে সদকার ছাওয়াব। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যদি তার যৌন চাহিদা পূর্ণ করে তাহলে কি পুরস্কার? তিনি বললেন, আচ্ছা তোমরা কী মনে কর? ; যদি কেউ অবৈধ পন্থায় যৌন চাহিদা মেটায় তাহলে তার কি পাপ হবে? এমনিভাবে যদি কেউ বৈধ পন্থায় তার যৌন চাহিদা পূর্ণ করে তাহলে পুরস্কার পাবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)

কেন সে বৈধ পন্থায় যৌন চাহিদা মেটালেও সওয়াব পাবে? কারণ সে কাজটি করার সময় এ ধারণা করেছে যে, আমি বৈধ পন্থায় কাজটি করে সেই অবৈধ পন্থা থেকে বেঁচে থাকব, যেখানে আল্লাহ আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে আমি তার প্রতি একনিষ্ঠ (মুখলিছ) হতে পারব। আর এ ইখলাছ প্রসূত ধারণার কারণেই তার সামান্য মানবিক চাহিদা মেটানোর কাজটাও সওয়াবের কাজ হিসাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে।

হাদীস থেকে আরেকটি দৃষ্টান- :-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنك لن تنفق نفقة تبتغي بها وجه الله إلا أجرت عليها حتى ما تجعل في فم امرأتك ) . أخرجه البخاري )

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তুমি যা কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়্যতে খরচ করবে অবশ্যই তার পুরস্কার পাবে। এমনকি, তুমি যা কিছু তোমার স্ত্রীর মুখে দিয়েছ তারও সওয়াব পাবে। (বর্ণনায় : বুখারী)

স্ত্রী সন্তানদের জন্য খরচ করা পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব। এখানে পাপ-পুণ্যের কী আছে? তবু দেখুন, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রী সন্তানদের জন্য খরচ করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়্যত করে তাহলে সে সওয়াব ও পুরস্কার পেয়ে যাচ্ছে।

এমনিভাবে যদি কেউ নিজের খাওয়া-দাওয়ার জন্য ব্যয় করে এবং এর সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়্যত করে, তাহলে সে সওয়াব লাভ করছে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যে ব্যক্তি কোন বৈধ মানবিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে ইবাদত-বন্দেগীতে সামর্থ হাসিলের নিয়্যত করবে তার এ চাহিদা পূরণের কাজটা আল্লাহর কাছে ইবাদত হিসেবে কবুল হবে ও সে এতে সওয়াব পাবে। (মজমু আল-ফাতাওয়া: ইবনে তাইমিয়া)

যেমন আপনি নিয়্যত করলেন যে, আমি এখন বাজারে কেনা-কাটার জন্য যাব। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য হল, এ কেনা-কাটার মাধ্যমে আমি খেয়ে-দেয়ে যে শক্তি অর্জন করব তা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে ব্যয় করব। ব্যস! আপনার এ নিয়্যতের কারণে বাজারে কেনা-কাটা করাটা আপনার ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। এটাইতো ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া।

ইখলাছ যেমন সাধারণ বৈধ কাজকে ইবাদতে রূপান-রিত করে, তেমনি রিয়া বা লোক দেখানো উদ্দেশ্য ইবাদতকে বরবাদ করে প্রতিফল শূন্য করে দেয়।

যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ . ( البقرة : 264)

হে মুমিনগণ! দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং ক্লেশ দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিস্ফল করো না, যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকাল দিবসে ঈমান রাখে না। (সূরা বাকারা : ২৬৪)

অর্থাৎ, দানের কথা বলে বা খোঁটা দিয়ে যেভাবে দানের প্রতিফলকে ধ্বংস করা হয়, তেমনি মানুষকে দেখানোর বা শুনানোর জন্য দান করলে আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান পাওয়া যায় না। বাহ্যিক দিক দিয়ে যদিও মনে হবে সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য দান করেছে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য হল মানুষের প্রশংসা অর্জন। মানুষ তাকে দানশীল বলবে, তার দানের কথা প্রচার হলে মানুষ তাকে সমর্থন দেবে-ইত্যাদি।

সাহাবী উবাদাহ ইবনু সামেত রা. কে এক ব্যক্তি বলল, আমি আমার এ তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করব। এর মাধ্যমে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করব ও মানুষের প্রশংসা পাব। উবাদাহ তাকে বললেন, তুমি কিছুই পাবে না। তুমি কিছুই পাবে না। তৃতীয়বার উবাদাহ রা. বললেন, আল্লাহ বলেছেন : আমি শিরক ও অংশীদার থেকে বে-পরোয়া। যে ব্যক্তি আমার জন্য করা হয় এমন কোন কাজে আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক করল আমি তার থেকে সম্পর্কমুক্ত। আমাকে ছাড়া যার জন্য সে করেছে সেটা তারই জন্য বিবেচিত। (এহইয়া উলূমুদ্দীন: লিল-গাযালী )

৯- ইখলাছপূর্ণ নিয়্যতের মাধ্যমে পরিপূর্ণ আমলের সওয়াব অর্জন :

কোন কোন সময় মানুষ ইখলাছ ও বিশুদ্ধ নিয়্যতে কাজ করতে উদ্যোগী হয়, কিন্তু তার সম্পদের সীমাবদ্ধতা, শারীরিক দুর্বলতা-ইত্যাদি কারণে কাজটি সমাধা করতে পারে না। কখনো দেখা যায়, উক্ত ভাল কাজটি করার জন্য সে প্রবল প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু কোন কারণে কাজটি আঞ্জাম দিতে পারেনি। এমতাবস্থায় সে কাজটি সম্পন্ন করার সওয়াব পেয়ে যাবে। এবং তার ইখলাছের কারণে কাজটি যারা করতে পেরেছে তাদের সমমর্যাদা লাভ করবে।

যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

إن أقواما خلفنا بالمدينة ما سلكنا شعبا ولا واديا إلا وهم معنا، حسبهم العذر . أخرجه البخاري : 2839

আমরা কয়েকটি দলকে মদীনায় রেখে এসেছি। তারা আমাদের সাথে কোন পাহাড় অতিক্রম করেনি, কোন উপত্যকাও মাড়ায়নি। অথচ তারা আমাদের সাথে অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা লাভ করবে । অক্ষমতা তাদেরকে আটকে রেখেছে। (বর্ণনায় : বুখারী)

হাদীসে বর্ণিত সাহাবীগণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে অভিযানে অংশ নিতে পারেননি কোন অসুবিধার কারণে। কিন্তু তাদের বিশুদ্ধ নিয়্যত ও ইখলাছ ছিল অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য। তাই তারা অংশ গ্রহণ না করেও অংশগ্রহণকারীদের সম-মর্যাদার অধিকারী হবেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :-

من أتى إلى فراشه وهو ينوي أن يقوم يصلى من الليل، فغلبته عيناه حتى أصبح كتب له ما نوى وكان نومه صدقة عليه من ربه عز وجل . أخرجه النسائي 258 وصححه الألباني

যে ব্যক্তি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করবে-এ নিয়্যতে শুয়ে পড়ল। অবশেষে নিদ্রা তাকে কাবু করে ফেলল এবং সকাল হওয়ার আগে জাগতে পারল না। এমতাবস্থায় সে যা নিয়্যত করেছিল তা তার জন্য লেখা হয়ে যাবে। এবং এ নিদ্রা তার প্রভুর পক্ষ থেকে দান হিসেবে ধরা হবে। (বর্ণনায় : নাসায়ী)

তাহাজ্জুদের নিয়্যত করেও এ ব্যক্তি তাহাজ্জুদ পড়তে পাড়ল না বটে কিন্তু ইখলাছ ও বিশুদ্ধ নিয়্যতের কারণে সে তাহাজ্জুদের পূর্ণ সওয়াব পাবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :-

من سأل الشهادة بصدق بلغه الله منازل الشهداء وإن مات على فراشه . أخرجه مسلم 1909

যে বিশুদ্ধ মনে জিহাদে শরীক হয়ে আল্লাহর কাছে শহীদ হওয়া কামনা করবে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। (বর্ণনায় : মুসলিম)

ইখলাছ বা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে যে শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা করবে, সে শহীদ না হতে পারলেও আল্লাহ তাকে তার ইখলাছের কারণে শহীদের মর্যাদা দান করবেন।

আরেকটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-

قال رجل لأتصدقن الليلة بصدقة، فخرج بصدقته فوضعها في يد زانية، فأصبحوا يتحدثون : تصدق الليلة على زانية، قال أللهم لك الحمد على زانية، لأتصدقن بصدقة فخرج بصدقته فوضعها في يد غني فأصبحوا يتحدثون : تصدق على غني، قال : أللهم لك الحمد على غني، لأتصدقن بصدقة، فخرج بصدقته فوضعها في يد سارق، فأصبحوا يتحدثون : تصدق على سارق، فقال أللهم لك الحمد على زانية وعلى غني وعلى سارق فأتي، فقيل له : أما صدقتك فقد قبلت، أما الزانية فلعلها تستعف بها عن زناها، ولعل الغني يعتبر فينفق مما أعطاه الله ولعل السارق يستعف بها عن سرقته . أخرجه البخاري 1421: ومسلم : 1022

এক ব্যক্তি নিয়্যত করল, আমি রাতে কিছু ছদকা (দান) করব। যখন রাত এল সে ছদকা করল। কিন্তু ছদকা পড়ল এক ব্যভিচারী মহিলার হাতে। সকাল হলে লোকজন বলতে শুরু করল, গত রাতে জনৈক ব্যক্তি এক ব্যভিচারীকে ছদকা দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ ! ব্যভিচারীকে ছদাক দেয়ার ব্যাপারে তোমারই প্রশংসা। আমি রাতে আবার একটি ছদকা করব। পরের রাতে যখন সে ছদকা করল, তা পড়ল একজন ধনীর হাতে। যখন সকাল হল তখন লোকজন বলাবলি শুরু করল গত রাতে জনৈক ব্যক্তি এক ধনীকে ছদকা দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ! ধনীকে ছদকা দেয়ার ব্যাপারে তোমারই প্রশংসা। আমি রাতে আবার একটি ছদকা করব। যখন পরের রাতে সে ছদকা করল, তা পড়ল একজন চোরের হাতে। যখন সকাল হল তখন লোকজন বলতে শুরু করল, গত রাতে এক ব্যক্তি এক চোরকে ছদকা দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ! ব্যভিচারী, ধনী ও চোরকে ছদকা দেয়ার ব্যাপারে তোমারই প্রশংসা। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বলা হল তোমার সকল ছদকা (দান)-ই কবুল করা হয়েছে। সম্ভবত তোমার ছদকার কারণে ব্যভিচারী মহিলা তার পতিতাবৃত্তি থেকে ফিরে আসবে। ধনী ব্যক্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহী হবে। চোর তার চুরি কর্ম থেকে ফিরে আসবে। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)

দেখুন, এ ব্যক্তি তার ছদকা বা দান করার ব্যাপারে এতটাই ইখলাছ (আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়্যত) গ্রহণ করেছিল যে, ছদকা প্রদানে তার অতি গোপনীয়তা কাউকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে দেয়নি। এ গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বার বার এ ছদাক অনাকাংখিত হাতে পরলেও সে তার ইখলাছ থেকে সরে আসেনি। ইখলাছ অবলম্বনে ছিল অটল। ফলে তার কোন দান ব্যর্থ হয়নি।

ইবনে হাজার রহ. বলেন, এ হাদীস দ্বারা বুঝে আসে দানকারী নিয়্যত বিশুদ্ধ থাকলে তার দান অনাকাংখিত স্থানে পড়লেও তার দান বা ছদকা আল্লাহর কাছে কবুল হবে। (ফাতহুল বারী : ইবনে হাজার)

১০- ইখলাছ বিপদ মুসীবত থেকে মুক্তির কারণ :

নিয়্যতের ব্যাপারে ইখলাছ অবলম্বন ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আশ্রয় গ্রহণে সততা ও সত্যবাদিতা হল দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির মাধ্যম।

বিষয়টি স্পষ্ট করে যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :-

وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الْأَوَّلِينَ﴾ وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا فِيهِمْ مُنْذِرِينَ﴾ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنْذَرِينَ﴾ إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ﴾ الصافات : 71-74

তাদের পূর্বেও পূর্ববর্তীদের অধিকাংশ বিপথগামী হয়েছিল। এবং আমি তাদের মধ্যে সতর্ককারী প্রেরণ করেছিলাম। সুতরাং লক্ষ্য কর যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের পরিণাম কি হয়েছিল! তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ (ইখলাছ অবলম্বনকারী) বান্দাদের কথা স্বতন্ত্র। (সূরা সাফফাত : ৭১-৭৪)আল্লাহ আরো বলেন :-

هُوَ الَّذِي يُسَيِّرُكُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ حَتَّى إِذَا كُنْتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِمْ بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا بِهَا جَاءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَاءَهُمُ الْمَوْجُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَئِنْ أَنْجَيْتَنَا مِنْ هَذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ ﴿২২﴾ فَلَمَّا أَنْجَاهُمْ إِذَا هُمْ يَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ . ) يونس : 22-23)

তিনিই তোমাদিগকে জলে স্থলে ভ্রমন করান এবং তোমরা যখন নৌকারোহী হও এবং এগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বয়ে যায় এবং তারা এতে আনন্দিত হয়, অত:পর এগুলো বাত্যাহত এবং সর্বদিক থেকে তরংগাহত হয় এবং তারা তা দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে গেছে মনে করে, তখন তারা আনুগত্য ও ইখলাছের সাথে (বিশুদ্ধ চিত্তে) আল্লাহকে ডেকে বলে : তুমি আমাদেরকে এ থেকে উদ্ধার করলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন-র্ভূক্ত হব। অত:পর তিনি যখনই তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখনই তারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে জুলুম করতে থাকে। (সূরা ইউনূস : ২২-২৩)

এ রকম আরেকটি দৃষ্টান-, আল্লাহ তাআলা বলেন :-

وَإِذَا غَشِيَهُمْ مَوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ فَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمَا يَجْحَدُ بِآَيَاتِنَا إِلَّا كُلُّ خَتَّارٍ كَفُورٍ .( لقمان : 32)

যখন তরঙ্গ তাদের আচ্ছন্ন করে মেঘচ্ছায়ার মত, তখন তারা আল্লাহকে ডাকে তার আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্তে (ইখলাছের সাথে)। কিন্তু যখন তিনি তাদের উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছান তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে থাকে; কেবল বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে। (সূরা লুকমান : ৩২)

এ সকল আয়াতে স্পষ্টভাবেই ব্যক্ত করা হয়েছে যে আলোচিত বিপদগ্রস্থরা ইখলাছের সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার কারণেই বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছে।

এমনিভাবে বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে তিন বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির কথা আলোচিত হয়েছে যারা এক বিপদসংকুল ঝড়-বৃষ্টির রাতে পাহাড়ের এক গুহায় আটকে পড়েছিল। তখন প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ নেক আমলের অসীলায় দুআ করে বলেছিল, হে আল্লাহ ! আমি যদি এ কাজটি আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য (ইখলাছের সাথে) করে থাকি, তবে এর অসীলায় আমাদের এ বিপদ থেকে উদ্ধার কর! ফলে তারা বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)

এ হাদীস দ্বারা আমরা বুঝতে পারি আলোচিত তিন ব্যক্তির কাজ তিনটি ইখলাছ ভিত্তিক হওয়ার কারণে বিপদ থেকে আল্লাহ তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন।

১১- শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকা :

শয়তান সর্বদা আল্লাহর বান্দাদের ধোঁকা দিয়ে খারাপ পথে নিয়ে যায়। খারাপ কথা ও কাজ, পথ এবং মতকে মানুষের কাছে শোভনীয় ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে তাদের বিভ্রান্তু করে। কিন্তু মানুষ যদি সকল কাজে ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়ার ভাবনা ধারণ করে, তবে শয়তান তাকে ধোঁকা দিতে পারে না, আবদ্ধ করতে পারে না বিভ্রান্তির বেড়াজালে।

যেমন আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে :-

قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ ﴿39﴾ إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ ﴿40﴾( الحجر : 39-40)

শয়তান বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সে জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে দেব এবং আমি তাদের সকলকে বিপথগামী করব, তবে তাদের ব্যতীত, যারা আপনার ইখলাছ অবলম্বনকারী (একনিষ্ঠ) বান্দা। (সূরা আল-হিজর : ৩৯-৪০)

এ আয়াতে বলা হয়েছে, যারা নিজেদের ঈমান-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধ করে নেবে, সবকিছু যখন শুধু আল্লাহর জন্যই নিবেদন করবে, তখন তাদের বিভ্রান্ত করতে শয়তান কোন পথ খুঁজে পাবে না। (জামে আল-বয়ান : তাবারী)

ইখলাছ হল শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকার একটা মাধ্যম।

আবু সুফিয়ান আদ-দারানী বলেন : বান্দা যখন আল্লাহর জন্য ইখলাছ ধারন করে তখন সকল প্রকার কুমন্ত্রণা ও রিয়া বা লোক দেখানো ভাবনা থেকে মুক্ত থাকে। তিনি নিজেকে সম্বোধন করে বলতেন, তুমি আর কত কাঁদবে! তুমি ইখলাছ ধারণ কর, মুক্তি পাবে। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন : মানুষ যখন আল্লাহর জন্য ইখলাছ অবলম্বন করবে বা তার জন্য একনিষ্ঠ হবে, আল্লাহ তখন তাকে নির্বাচন করে নেন, তার অন্তরকে জাগ্রত করে দেন। তখন যত পাপ-পংকিল, অশ্লীলতা, অপকর্ম আছে সব কিছু তার কাছে ঘৃণিত মনে হয়। এবং এগুলোর লালনকে সে খুব ভয় করে চলে।

পক্ষান্তরে, যে অন্তর আল্লাহর জন্য নিবেদিত নয়, ইখলাছ ধারণ করতে পারেনি, সে যখন কোন ভাল কাজ করতে যায়, তখন মানুষের প্রশংসা পাওয়ার আশা করে, মানব সমাজে নিজের সুনাম ও খ্যাতির প্রত্যাশা করে, কখনো কখনো মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়া বা সুবিধা আদায়ের নিয়্যত করে। বা কখনো মানুষের সমালোচনা, গাল-মন্দ থেকে বেঁচে থাকার বিষয়টি প্রাধান্য দেয়। ফলে আল্লাহর কাছে তার সৎ কর্মটি অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এমনিভাবে সে শয়তানের ধোঁকায় পতিত হয়। তাই শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে নিজের কাজ-কর্মগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করতে ইখলাছ তথা সকল কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টার কোন বিকল্প নেই। (মাজমু আল-ফাতাওয়া : ইবনে তাইমিয়া)

১২- সৎকাজের সামর্থ, ভালবাসা ও বরকত লাভ :

বান্দা যখন তার সকল কাজ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য করবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে করবে তখন সে ভাল কাজের তাওফীক, মানুষের ভালবাসা ও আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত লাভ করবে।

মাকহূল রহ. মন্তব্য করেন, কোন যদি বান্দা একাধারে চল্লিশটি দিবস ইখলাছের সাথে যাপন করে, তবে সন্দেহ নেই, তার অন্তর থেকে বিচ্ছুরিত হবে হিকমত ও প্রজ্ঞার প্রস্রবন, জ্যোতি প্রকাশ পাবে তার কথা ও ভাষায়। (মাদারিজুস সালিকীন : ইবনুল জাওযী)

হামদূন কিসারকে যখন বলা হল, মহান পূর্বসুরীদের কথা ও বক্তব্য কি করে আমাদের কথা ও বক্তব্যের তুলনায় অধিক উপকারী ও কল্যাণকর রূপে দেখা দেয়? উত্তরে তিনি বললেন, কারণ, তারা কথা বলেন ইসলামের সম্মান, নফসের মুক্তি ও আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। আর আমাদের বক্তব্য হয় নফসের সম্মান, পার্থিবের অনুসন্ধান ও মানুষের সন'ষ্টি লাভের জন্য। (সফওয়াতুস সাফওয়াহ : ইবনুল জাওযী)

ইবনুল কায়্যিম রহ. মন্তব্য করেন, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কু-প্রবৃত্তির লালসা ত্যাগ করলে, আল্লাহর জন্য সকল কাজ নিবেদন করলে যে প্রশান্তি, মনোবল, বরকত অর্জিত হয় তা ঐ সকল লোক কখনো অর্জন করতে পারে না, যারা আল্লাহর জন্য না করে অন্য উদ্দেশ্যে করে। সে যত বড় আলেম, পীর, দরবেশ হোক, কখনো মুখলিছ ব্যক্তির ন্যায় সাহস, মনোবল, আধ্যাত্মিক শান্তি অর্জন করতে পারবে না। (আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. সুন্দর একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন যে, প্রচলিত আছে, এক ব্যক্তি শুনল, যদি কেউ চল্লিশ দিন ভোরে আল্লাহর জন্য ইখলাছ অবলম্বন করে তাহলে তার অন্তর ও মুখের কথা হিকমত (প্রজ্ঞা) পূর্ণ হবে। শোনার পর সে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ইখলাছের চর্চা (তার ধারণা অনুসারে) করল কিন্তু সে প্রজ্ঞা বা হিকমাত অর্জন করতে পারলো না। এরপর সে একজন বড় আলেমের কাছে গিয়ে অনুযোগ করলো যে, আমি যে হিকমত অর্জনের উদ্দেশ্যে আল্লাহর জন্য ইখলাছের চর্চা করেছি তার কিছুই পেলাম না। ইখলাছ অবলম্বন করেও কেন আমি তার ফল লাভ করতে পারলাম না। আলেম উত্তরে বললেন, তুমি তো ইখলাছ চর্চা করেছো হিকমাত (প্রজ্ঞা) অর্জনের জন্য, আল্লাহর জন্য তো নয়! তোমার ইখলাছই তো হয়নি। কাজেই, তার মাধ্যমে হিকমাত অর্জন করবে কিভাবে? তুমি যদি ইখলাছ চর্চা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য করতে তাহলে হিকমাত এমনিতেই অর্জিত হত। কিন্তু তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য না করে করেছো হিকমাত অর্জনের উদ্দেশ্যে। তাই ইখলাছও আদায় হয়নি আর তার প্রতিফল হিকমাতও অর্জন করতে পারনি। (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা : ইবনে তাইমিয়া)

১৩- ফিতনা ফাসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া :

ইখলাছ অবলম্বন করার কারণে বিভিন্ন ফিতনা-ফাসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইউসূফ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন :-

كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ . يوسف : 24

আমি তাকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবেই নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত (ইখলাছ অবলম্বনকারী) বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত। (সূরা ইউসূফ : ২৪)

ইখলাছের কারণে আল্লাহ তাকে অশ্লীলতা, ব্যভিচার ও অবৈধ প্রেমের ফিতনা থেকে রক্ষা করেছেন। মানুষের অন্তর এ জাতীয় অনাচারে তখনি লিপ্ত হয়ে পড়ে, যখন তার অন্তর শূন্য থাকে আল্লাহপ্রেম ও তার প্রতি সমর্পিত ইখলাছ থেকে। কারণ, মানুষের অন্তর মাত্রই প্রেমের আকাঙ্খী, সমর্পণের উদগ্র বাসনা তাকে উম্মত্ত করে রাখে সতত। আল্লাহ যার মাহবুব, ইলাহ ও একক উপাস্য নন, তার অন্তর স্বভাবতই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে খুঁজে নেবে।

ইবনুল কায়্যিম রহ. ইউসুফ আআইহিস সালাম প্রসঙ্গে বলেন : ইউসুফ আ. যখন আল্লাহর জন্য ইখলাছ বা নিষ্ঠা অবলম্বন করলেন, আল্লাহ তার কাছে এ সকল অশ্লীল বিষয়কে ঘৃণিত হিসেবে তুলে ধরলেন, ফলত: উক্ত অনাচার ও ফিতনা তাকে কোনভাবে ত্যাক্ত করতে পারল না। ...সুতরাং, ইখলাছ অবলম্বন, সন্দেহ নেই, অনাচার ও অকল্যাণ হতে মুক্তির সরল পথ। ইখলাছের ব্যাপারে যে যত দূর্বল থাকবে, সে ততবেশী অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচারে জড়িয়ে পড়বে। (আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)

অন্যত্র তিনি বলেন, ...এ কারণেই ইউসুফের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে উদ্ধৃত হয়েছে যে,-

كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ

এমনই ঘটেছিল, যাতে তার থেকে দূরিভূত করি অকল্যাণ ও অনাচার। নিশ্চয় তিনি আমার নিষ্ঠাবান বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত।

আয়াতটি প্রমাণ করে অনৈতিক প্রেম ও তার ফলে উদ্ভূত অন্যায়-অকল্যাণ-অনাচার রোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে, সর্বকাজে ইখলাছ অবলম্বন। এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে সালাফে সালিহীনের কারো কারো মন্তব্য এই যে, প্রেম হল অলস, কর্মশূন্য ও অথর্ব, অথবা বলা যায়, প্রেমিকশূন্য অন্তরের এক ধরনের কর্মব্যস্ততা ও মনোবৃত্তি। তিনি আরো বলেন, ছোট হোক কিংবা বড়, যাবতীয় পাপাচার তিনটি কান্ড হতে পত্র-পল্লবে বিস্তৃত হয়ে প্রকাশ পায়। কান্ড তিনটি হচ্ছে : আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক স্থাপন, অশুভ ও প্রবৃত্তির শক্তির পুজা অর্থাৎ শিরক, এবং জুলুল ও অনাচার...এ তিনটি একে অপরের সাথে শৃঙ্খলাবদ্ধ, গলায় গলায় জড়িত। শিরক তার অবশ্য পরিণতিতে ডেকে আনে জুলুম ও অনাচার। যেমনিভাবে ইখলাছ ও তাওহীদের প্রতি বান্দার সমর্পণ বান্দাকে মুক্ত করে এইসব অনাচার থেকে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন