HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইখলাছ মুক্তির পাথেয়
লেখকঃ ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী
৯
ইখলাছের পথে যা বাধা হয়ে দাড়ায়এমন কিছু বিষয় আছে যা ইখলাছের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। নিম্নে আমরা তার উল্লেখযোগ্য কিছু উপস্থাপন করছি।
প্রথমত : রিয়া ও ছুমআ :
রিয়া অর্থ লোক দেখানো ভাবনা আর ছুমআ অর্থ মানুষকে শোনানো বা প্রচারের ভাবনা।
পারিভাষিক অর্থে রিয়া হল মানুষকে দেখিয়ে তাদের প্রশংসা অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগী তথা সৎকর্মগুলো প্রকাশ করা। (ফাতহুল বারী : ইবনু হাজর)
ইমাম গাযালী রহ. বলেন : রিয়া হল ভাল কাজ-কর্ম মানুষকে দেখিয়ে তাদের অন-রে নিজের স্থান করে নেয়া, যাতে লোকের কাছে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
আর ছুমআ হল নিজের ইবাদত-বন্দেগীর কথা মানুষকে শোনানো। (আল-ইখলাছ : আল-আশকর)
রিয়া ও ছুমআর ব্যাপারে হাদীসে সতর্কবাণী এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-
ألا أخبركم بما هو أخوف عليكم عندي من المسيح الدجال، قال : قلنا بلى ، فقال : الشرك الخفي أن يقوم الرجل يصلي فيزين صلاته لما يرى من نظر رجل . رواه ابن ماجة : 4204
আমি কি তোমাদের এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করবো না যাকে আমি দাজ্জালের চেয়ে বেশী ভয় করি? আমরা বললাম, অবশ্যই আপনি আমাদের বলে দেবেন। তিনি বললেন : তা হল সুক্ষ্ম শিরক, তা এমন যে, কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দর করে আদায় করল, কিন্তু তার অন-রে ক্রিয়াশীল ছিল অন্যকে দেখানোর ভাবনা। (বর্ণনায় : ইবনে মাজাহ)
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন : মানুষের কর্তব্য এই যে, সে আল্লাহর হুকুমসমূহ পালন করবে, তাঁর নিষেধ থেকে ফিরে থাকবে শুধু তাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে। এছাড়া যদি সে এর মাধ্যমে নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব লাভের নিয়্যত করে, অন্যকে অবমাননা করার সংকল্প করে, তাহলে এটা হবে জাহিলিয়্যাত। যা আল্লাহর কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। আবার সে যদি এ কাজগুলো মানুষকে দেখানো বা প্রচারের উদ্দেশ্যে করে, তবে তার কোন সওয়াব থাকবে না। (মিনহাজ আস-সুন্নাহ : ইবনু তাইমিয়া)
দ্বিতীয়ত : আত্মতৃপ্তি
আত্মতৃপ্তি মানে এক ধরণের আত্মম্ভরিতা বা অহংকার। এটা কথা-বার্তা, চাল-চলন, কাজ-কর্মে অহংকার প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আত্মতৃপ্তি রোগে আক্রান- ব্যক্তি নিজেকে অত্যন- সৎ মনে করে, পাক-সাফ ও অন্যের চেয়ে এগিয়ে আছি-এমন একটি ধারণা তার মাঝে সর্বদা কাজ করে। আত্মতৃপ্তি মানুষের আত্মার জন্য একটি ভয়াবহ ব্যধি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-
ثلاث مهلكات : شح مطاع، وهو متبع، وإعجاب المرء بنفسه . رواه الطبراني في الأوسط : 5452 وحسنه الألباني
তিনটি বিষয় মানুষকে ধ্বংস করে দেয় : অব্যাহত কৃপণতা, নিজ প্রবৃত্তির আনুগত্য, নিজের ব্যাপারে সু-ধারণা পোষণ বা আত্মতৃপ্তি। (বর্ণনায় : তাবারানী)
আত্মতৃপ্তি মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। কারণ এ রোগে আক্রান- ব্যক্তি নিজের ইবাদত-বন্দেগীকে বড় করে দেখে, তার ধারণা, সে স্বয়ং আল্লাহর উপকার করছে, আল্লাহ তাআলা যে নিজ অনুগ্রহে তাকে ভাল পথে চলার সামর্থ দিয়েছেন এ কথা সে ভুলতে বসে। ফলে, সে ইখলাছের সকল বিপদ থেকে অন্ধ হয়ে যায়। তার ইখলাছ অবলম্বনে কি কি বাধা রয়েছে এ সম্পর্কে সে সম্পূর্ন বে-খবরে পরিণত হয়।
আয়েশা রা. কে প্রশ্ন করা হয়েছিল মানুষ কখন খারাপ হয়? তিনি বললেন : যখন মনে করে, সে খুব ভাল, তখন খারাপ হয়ে যায়। (ইহইয়াউ ঊলুম আদ-দীন : আল-গাযালী)
মাছরূক রহ. বলেন : মানুষের আলেম হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে সে আল্লাহকে ভয় করবে। আর জাহেল (মূর্খ) হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে সে আত্মতৃপ্তিতে ভুগবে। (আদ-দুরুল মানসূর : আস-সুয়ূতী)
আত্মতৃপ্তি নামের এ ধ্বংসাত্মক রোগ থেকে কিভাবে বেঁচে থাকা যায়? কিভাবে এর চিকিৎসা সম্ভব?
নিজের আত্মাকে সত্যিকার অর্থে অনুভব করতে হবে, লালন করতে হবে তাকে এবং নিজের প্রতিপালককে চিনতে-জানতে হবে। প্রতিপালকের সাথে নিজেকে চিনতে হবে এভাবে যে, আমার প্রতিপালক কত মহান! তিনি আমার উপর কত অনুগ্রহ করেছেন। আমার মত লক্ষ-কোটি মানুষ রয়েছে, তাদেরকে তাঁর অনুগত হওয়ার সুযোগ দেননি, আমাকে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমার কি কৃতিত্ব আছে? আমি কি ছিলাম? তিনি তাঁর একান্ত অনুগ্রহে আমাকে এ পর্যন্ত আসতে দিয়েছেন। আমি এখন যে সকল সৎ-কর্ম করছি তার সবগুলো কি তাঁর পছন্দ মত করছি? কি নিশ্চয়তা আছে এর?
একদিন মালেক ইবনু দীনারের কাছ দিয়ে মুহাল্লাব ইবনু আবি সাফারাহ বীরের মত হেলে দুলে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তার এ অবস্থা দেখে মালেক ইবনে দীনার তাকে বললেন, তুমি কি জানো না যুদ্ধের ময়দানে শক্র সারি ব্যতীত এ রকম হাঁটা ঠিক নয়? মুহাল্লাব উত্তরে গর্ব করে বললেন, তুমি কি চেন না আমি কে? মালেক ইবনে দীনার বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাকে ভাল করে চিনি। মুহাল্লাব বললেন, তুমি আমার সম্পর্কে কি জানো? মালেক ইবনে দীনার বললেন, তোমার শুরুটা ছিল এক দুর্গন্ধময় বীর্য। তোমার শেষটা হবে একটি পঁচা লাশ। এর মধ্যবর্তী সময়ে তুমি বহন করে চলছ কতগুলো ময়লা-আবর্জনা।
আসলে মানুষ যতই গর্ব ও অহংকার করে থাক না কেন, প্রত্যেকের আসল পরিচয় তো এটাই, যা মালেক ইবনে দীনার রহ. বললেন। তাই, এ ধরণের অনুভুতি জাগ্রত রাখলে গর্ব, অহংকার, আত্মতৃপ্তি নামক রোগ-ব্যধি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
তৃতীয়ত : নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ :
নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ ইখলাছ অবলম্বনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রবৃত্তির অনুসরণ বলতে বুঝায় নিজের মনে যা চায় সেটাই করা বা তার দিকে ঝুঁকে পড়া। নিজের প্রবৃত্তির অনুগত হয়ে পড়া। প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসেবে নেয়া বলতে এটাকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنْتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا﴾ أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا﴾ . الفرقان : 43-44
তুমি কি দেখ না তাকে, যে তার কামনা-বাসনাকে ইলাহ (উপাস্য) রূপে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার কর্মবিধায়ক হবে? তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শোনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মতই ; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। (সূরা আল-ফুরকান : ৪৩-৪৪)
আল্লাহ আরো বলেন :-
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ . الجاثية : 23
তুমি কি লক্ষ্য করেছো তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে? আল্লাহ জেনে-শুনে তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয় সীল করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর উপর দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে পথনির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা আল-জাসিয়া : ২৩)
আল্লাহ আরো বলেন :-
فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنَ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ . القصص : 50
এরপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখবে তারা তো নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আল্লাহর পথনির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ যালিম সমপ্রদায়কে পথনির্দেশ করেন না। (সূরা আল-কাছাছ : ৫০)
যে প্রবৃত্তির অনুগত হয়ে পড়ে তার সম্পর্কে আল্লাহর বক্তব্য এমনি পরিস্কার। প্রবৃত্তির অনুগত হওয়া বলতে বুঝায়; যখন যা মনে চায়, তাই করা। তাকওয়া ও পরহেযগারী, হারাম-হালাল, জায়েয-না জায়েয, মাকরূহ-মুবাহ ইত্যাদির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা।
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন : যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে প্রবৃত্তি তাকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে দেয়, ফলে সে স্থির করতে পারে না যে আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য তার করণীয় কি, আল্লাহ ও রাসূল যাতে সন্তুষ্ট হন সে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারে না, আল্লাহ ও রাসূল যাতে ক্রোধান্বিত হন, তাতে তো তার রাগ জন্মায় না। বরং নিজের সন্তুষ্টি ও নিজের অসন্তুষ্টিই হল তার লক্ষ্য। (মিনহাজ আস-সুন্নাহ : ইবনু তাইমিয়া)
যারা জান্নাতের অধিকারী হবে তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন :
وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى . النازعات : 40
সে নিজেকে প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে বিরত রেখেছে। (সূরা আন-নাযেআত :৪০)
অতএব প্রবৃত্তির অনুসরণ ইখলাছে পরিপন্থী ও নেক আমল বিনষ্টকারী।
উমার ইবনু আব্দুল আযীয রহ. বলেছেন : তুমি এমন হয়ো না যে সত্য যদি তোমার মনপুত হয় তাহলে গ্রহণ করবে আর যদি তোমার মনের বিরুদ্ধে যায় তাহলে বিরোধিতা করবে। এমন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সত্য গ্রহণ করলে তুমি কোন প্রতিদান পাবে না। এবং বাতিল বর্জন করে শাসি- থেকে বাঁচতে পারবে না। কারণ তুমি যে সত্য গ্রহণ করেছো ও মিথ্যাকে বর্জন করেছো তা তোমার মনের মত হওয়ার কারণে। আল্লাহর জন্য নয়। (শরহু আল-আকীদাহ আত-তাহাবীয়্যাহ)
ইমাম শাতেবী রহ. বলেছেন: প্রবৃত্তির চাহিদায় কোন ভাল কাজও প্রশংসনীয় হতে পারে না। (আল-মুআফিকাত : শাতেবী)
আসলেই প্রবৃত্তির বিরোধিতা করা একটা মস্তবড় কঠিন কাজ। এ কাজ করতে না পারার কারণেই অনেক ইহুদী ও খৃষ্টান এবং বহু অমুসলিম ব্যক্তি ইসলামকে সত্য বলে অনুভব করার পরেও তা কবুল করতে পারেনি। তারা নিজেদের সমপ্রদায়, দেশ, ধন-সম্পদ বিসর্জন দিতে রাজী হয়েছে কিন্তু প্রবৃত্তির বিরোধিতা করতে রাজী হয়নি। তাদের লক্ষ করেই আল্লাহ বলেছেন :-
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ . الجاثية : 23
তুমি কি লক্ষ্য করেছো তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে? আল্লাহ জেনে-শুনে তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয় সীল করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর উপর দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে পথনির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা আল-জাসিয়া : ২৩)
ইমাম শাতেবী রহ. চমৎকার বলেছেন : শরীয়তের বিধি-বিধানের উদ্দেশ্য হল মানুষকে তার প্রবৃত্তির গোলামীকে বের করে আল্লাহর গোলামীতে স্বাধীন করে দেয়া। শরীয়তের পূর্বে সে প্রবৃত্তির বাধ্যগত দাস ছিল ইসলামী শরীয়ত গ্রহণের ফলে সে আল্লাহর স্বাধীন দাসে পরিণত হলো। (আল-মুআফিকাত : শাতেবী)
অতএব যিনি ইখলাছ অবলম্বন করতে চান তার কর্তব্য হল, নিজের সংকল্প ও ইচ্ছাকে দৃঢ় করা, আল্লাহর নিকট উপস্থিতিকে ভয় করা, নিজের প্রবৃত্তিকে বাধা দেয়া। তাহলে স্থায়ী বাসস্থান হিসেবে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যাবে। (আল-ইখলাছ : আল- আশকর)
হাসান বসরী রহ. বলেন : সর্বোত্তম জিহাদ হল প্রবৃত্তির বিরাধিতা। (আদাবুদ্দুনিয়া ওয়াদ-দীন : আল-মাওয়ারেদী)
ইবনুল জাওযী রহ. বলেন : মানুষের কর্তব্য হল, সকল সৎকর্ম করবে আল্লাহকে সন'ষ্ট করার জন্য, আল্লাহকে নিজের সম্মুখে উপস্থিত জেনে ও আল্লাহর নির্দেশ বাস-বায়নের জন্য। যদি এ তিনটি শর্ত পূরণ করে সৎকর্ম বা নেক আমল করা যায়, তাহলে সকল সৃষ্টিজীব তার পক্ষে থাকবে, সকল কল্যাণ তার কাছেই ছুটে আসবে। আর যদি মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রবৃত্তির দাসত্ব করা হয় তবে ফলাফল হবে উল্টো। (তাফসীর ইবনু কাসীর)
চতুর্থ : সৎকাজে মানুষের প্রশংসা :
মুখলিছ ব্যক্তি সর্বদাই নিজের প্রসার ও প্রচারকে এবং নিজ কাজের সুখ্যাতিকে অপছন্দ করে।
আলী রা. বলেছেন : তুমি প্রসিদ্ধি লাভ করবে এ জন্য কোন কাজ শুরু করবে না। মানুষে তোমাকে স্মরণ করবে এ উদ্দেশ্যে নিজের ব্যক্তিত্বকে উন্নত করবে না। শিখবে ও গোপন রাখবে। নীরবতা অবলম্বন করবে, তাহলে নিরাপদ থাকবে। সৎ-কর্মপরায়ণ লোকদের দেখলে খুশী হবে এবং অসৎ লোকদের দেখলে ক্রোধান্বিত হবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর)
তবে হ্যাঁ, মুখলিছ ব্যক্তি যে প্রসিদ্ধি বা মানুষের প্রশংসা পায়, তা অনিচ্ছায় লাভ হয়। সে তা লাভ করার নিয়্যত করেনি। নিজের অনিচ্ছায় কোন সুখ্যাতি বা মানুষের প্রশংসা অর্জন হলে ইখলাছের কোন ক্ষতি হয় না।
হাদীসে এসেছে-
عن ابي ذر رضى الله عنه قال : قيل لرسول الله صلى الله عليه وسلم : أرأيت الرجل يعمل العمل من الخير ويحمده الناس عليه، قال : تلك عاجل بشرى المؤمن . رواه مسلم : 2642
আবু জর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি যে কল্যাণকর কাজ করল এবং মানুষ এর জন্য তার প্রশংসা করল? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এটা মুমিন ব্যক্তির জন্য অগ্রিম সুসংবাদ। (বর্ণনায় : মুসলিম)
পঞ্চম : রিয়ার ভয়ে নেক আমল ত্যাগ করা :
কোন ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করতে মনস্থির করল। ইতিমধ্যে সে খেয়াল করে দেখল কাজটি করলে মানুষ দেখবে ও প্রশংসা করবে। তাই সে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবনায় পড়ে যাবে এ আশংকায় কাজটি ত্যাগ করল। এটা শয়তানের আরকেটি কুমন্ত্রণা।
ইবনু হাযম রহ. বলেন : রিয়া ত্যাগ করার ব্যাপারেও শয়তানের চক্রান্ত আছে। তাহল, মানুষের মনে এ ধারণা সৃষ্টি করে দেয়া যে এ ভাল কাজটি করলে লোকেরা দেখবে, এতে তুমি রিয়ার দোষে দুষ্ট হবে। এ ধারণার পর মানুষ ভাল কাজ সম্পাদন থেকে বিরত থাকল। (আল-আখলাক ও আস-সিয়ার : ইবনু হাযম)
শয়তান যদি এমনি একটা পথ খুলে নেয় তাহলে সকল ভাল কাজে এমনি করে বাধা দিতে থাকবে। (আল-ইখলাছ : আল-আশকর)
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন : যদি কারো নির্দিষ্ট কোন নফল আমল থাকে যেমন চাশতের সালাত, তাহাজ্জুদ-ইত্যাদি তাহলে সে এগুলো আদায় করবে, যেখানেই সে থাকুক না কেন। মানুষ দেখবে, সে রিয়ার মধ্যে পড়ে যাবে-এ ভয়ে ত্যাগ করবে না। কাজেই যে সকল নেক আমল শরীয়ত অনুমোদিত তা কখনো রিয়া হবে এ ভয়ে করে ত্যাগ করা যাবে না। (মাজমু আল-ফাতাওয়া : ইবনে তাইমিয়া)
ফুজাইল রহ. বলেন: মানুষে দেখবে এ ভয়ে ভাল কাজ ত্যাগ করা একটি রিয়া, কেননা মানুষের জন্যই সে কাজটা ত্যাগ করল। আর মানুষ দেখবে এ উদ্দেশ্যে ভাল কাজ করা হল শিরক। আর ইখলাছ হল এ দুটো থেকেই বেঁচে থাকা। (সিয়ার আলাম আন-নুবালা : আয-যাহাবী)
প্রথমত : রিয়া ও ছুমআ :
রিয়া অর্থ লোক দেখানো ভাবনা আর ছুমআ অর্থ মানুষকে শোনানো বা প্রচারের ভাবনা।
পারিভাষিক অর্থে রিয়া হল মানুষকে দেখিয়ে তাদের প্রশংসা অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগী তথা সৎকর্মগুলো প্রকাশ করা। (ফাতহুল বারী : ইবনু হাজর)
ইমাম গাযালী রহ. বলেন : রিয়া হল ভাল কাজ-কর্ম মানুষকে দেখিয়ে তাদের অন-রে নিজের স্থান করে নেয়া, যাতে লোকের কাছে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
আর ছুমআ হল নিজের ইবাদত-বন্দেগীর কথা মানুষকে শোনানো। (আল-ইখলাছ : আল-আশকর)
রিয়া ও ছুমআর ব্যাপারে হাদীসে সতর্কবাণী এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-
ألا أخبركم بما هو أخوف عليكم عندي من المسيح الدجال، قال : قلنا بلى ، فقال : الشرك الخفي أن يقوم الرجل يصلي فيزين صلاته لما يرى من نظر رجل . رواه ابن ماجة : 4204
আমি কি তোমাদের এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করবো না যাকে আমি দাজ্জালের চেয়ে বেশী ভয় করি? আমরা বললাম, অবশ্যই আপনি আমাদের বলে দেবেন। তিনি বললেন : তা হল সুক্ষ্ম শিরক, তা এমন যে, কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দর করে আদায় করল, কিন্তু তার অন-রে ক্রিয়াশীল ছিল অন্যকে দেখানোর ভাবনা। (বর্ণনায় : ইবনে মাজাহ)
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন : মানুষের কর্তব্য এই যে, সে আল্লাহর হুকুমসমূহ পালন করবে, তাঁর নিষেধ থেকে ফিরে থাকবে শুধু তাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে। এছাড়া যদি সে এর মাধ্যমে নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব লাভের নিয়্যত করে, অন্যকে অবমাননা করার সংকল্প করে, তাহলে এটা হবে জাহিলিয়্যাত। যা আল্লাহর কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। আবার সে যদি এ কাজগুলো মানুষকে দেখানো বা প্রচারের উদ্দেশ্যে করে, তবে তার কোন সওয়াব থাকবে না। (মিনহাজ আস-সুন্নাহ : ইবনু তাইমিয়া)
দ্বিতীয়ত : আত্মতৃপ্তি
আত্মতৃপ্তি মানে এক ধরণের আত্মম্ভরিতা বা অহংকার। এটা কথা-বার্তা, চাল-চলন, কাজ-কর্মে অহংকার প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আত্মতৃপ্তি রোগে আক্রান- ব্যক্তি নিজেকে অত্যন- সৎ মনে করে, পাক-সাফ ও অন্যের চেয়ে এগিয়ে আছি-এমন একটি ধারণা তার মাঝে সর্বদা কাজ করে। আত্মতৃপ্তি মানুষের আত্মার জন্য একটি ভয়াবহ ব্যধি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-
ثلاث مهلكات : شح مطاع، وهو متبع، وإعجاب المرء بنفسه . رواه الطبراني في الأوسط : 5452 وحسنه الألباني
তিনটি বিষয় মানুষকে ধ্বংস করে দেয় : অব্যাহত কৃপণতা, নিজ প্রবৃত্তির আনুগত্য, নিজের ব্যাপারে সু-ধারণা পোষণ বা আত্মতৃপ্তি। (বর্ণনায় : তাবারানী)
আত্মতৃপ্তি মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। কারণ এ রোগে আক্রান- ব্যক্তি নিজের ইবাদত-বন্দেগীকে বড় করে দেখে, তার ধারণা, সে স্বয়ং আল্লাহর উপকার করছে, আল্লাহ তাআলা যে নিজ অনুগ্রহে তাকে ভাল পথে চলার সামর্থ দিয়েছেন এ কথা সে ভুলতে বসে। ফলে, সে ইখলাছের সকল বিপদ থেকে অন্ধ হয়ে যায়। তার ইখলাছ অবলম্বনে কি কি বাধা রয়েছে এ সম্পর্কে সে সম্পূর্ন বে-খবরে পরিণত হয়।
আয়েশা রা. কে প্রশ্ন করা হয়েছিল মানুষ কখন খারাপ হয়? তিনি বললেন : যখন মনে করে, সে খুব ভাল, তখন খারাপ হয়ে যায়। (ইহইয়াউ ঊলুম আদ-দীন : আল-গাযালী)
মাছরূক রহ. বলেন : মানুষের আলেম হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে সে আল্লাহকে ভয় করবে। আর জাহেল (মূর্খ) হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে সে আত্মতৃপ্তিতে ভুগবে। (আদ-দুরুল মানসূর : আস-সুয়ূতী)
আত্মতৃপ্তি নামের এ ধ্বংসাত্মক রোগ থেকে কিভাবে বেঁচে থাকা যায়? কিভাবে এর চিকিৎসা সম্ভব?
নিজের আত্মাকে সত্যিকার অর্থে অনুভব করতে হবে, লালন করতে হবে তাকে এবং নিজের প্রতিপালককে চিনতে-জানতে হবে। প্রতিপালকের সাথে নিজেকে চিনতে হবে এভাবে যে, আমার প্রতিপালক কত মহান! তিনি আমার উপর কত অনুগ্রহ করেছেন। আমার মত লক্ষ-কোটি মানুষ রয়েছে, তাদেরকে তাঁর অনুগত হওয়ার সুযোগ দেননি, আমাকে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমার কি কৃতিত্ব আছে? আমি কি ছিলাম? তিনি তাঁর একান্ত অনুগ্রহে আমাকে এ পর্যন্ত আসতে দিয়েছেন। আমি এখন যে সকল সৎ-কর্ম করছি তার সবগুলো কি তাঁর পছন্দ মত করছি? কি নিশ্চয়তা আছে এর?
একদিন মালেক ইবনু দীনারের কাছ দিয়ে মুহাল্লাব ইবনু আবি সাফারাহ বীরের মত হেলে দুলে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তার এ অবস্থা দেখে মালেক ইবনে দীনার তাকে বললেন, তুমি কি জানো না যুদ্ধের ময়দানে শক্র সারি ব্যতীত এ রকম হাঁটা ঠিক নয়? মুহাল্লাব উত্তরে গর্ব করে বললেন, তুমি কি চেন না আমি কে? মালেক ইবনে দীনার বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাকে ভাল করে চিনি। মুহাল্লাব বললেন, তুমি আমার সম্পর্কে কি জানো? মালেক ইবনে দীনার বললেন, তোমার শুরুটা ছিল এক দুর্গন্ধময় বীর্য। তোমার শেষটা হবে একটি পঁচা লাশ। এর মধ্যবর্তী সময়ে তুমি বহন করে চলছ কতগুলো ময়লা-আবর্জনা।
আসলে মানুষ যতই গর্ব ও অহংকার করে থাক না কেন, প্রত্যেকের আসল পরিচয় তো এটাই, যা মালেক ইবনে দীনার রহ. বললেন। তাই, এ ধরণের অনুভুতি জাগ্রত রাখলে গর্ব, অহংকার, আত্মতৃপ্তি নামক রোগ-ব্যধি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
তৃতীয়ত : নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ :
নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ ইখলাছ অবলম্বনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রবৃত্তির অনুসরণ বলতে বুঝায় নিজের মনে যা চায় সেটাই করা বা তার দিকে ঝুঁকে পড়া। নিজের প্রবৃত্তির অনুগত হয়ে পড়া। প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসেবে নেয়া বলতে এটাকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنْتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا﴾ أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا﴾ . الفرقان : 43-44
তুমি কি দেখ না তাকে, যে তার কামনা-বাসনাকে ইলাহ (উপাস্য) রূপে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার কর্মবিধায়ক হবে? তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শোনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মতই ; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। (সূরা আল-ফুরকান : ৪৩-৪৪)
আল্লাহ আরো বলেন :-
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ . الجاثية : 23
তুমি কি লক্ষ্য করেছো তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে? আল্লাহ জেনে-শুনে তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয় সীল করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর উপর দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে পথনির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা আল-জাসিয়া : ২৩)
আল্লাহ আরো বলেন :-
فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنَ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ . القصص : 50
এরপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখবে তারা তো নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আল্লাহর পথনির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ যালিম সমপ্রদায়কে পথনির্দেশ করেন না। (সূরা আল-কাছাছ : ৫০)
যে প্রবৃত্তির অনুগত হয়ে পড়ে তার সম্পর্কে আল্লাহর বক্তব্য এমনি পরিস্কার। প্রবৃত্তির অনুগত হওয়া বলতে বুঝায়; যখন যা মনে চায়, তাই করা। তাকওয়া ও পরহেযগারী, হারাম-হালাল, জায়েয-না জায়েয, মাকরূহ-মুবাহ ইত্যাদির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা।
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন : যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে প্রবৃত্তি তাকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে দেয়, ফলে সে স্থির করতে পারে না যে আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য তার করণীয় কি, আল্লাহ ও রাসূল যাতে সন্তুষ্ট হন সে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারে না, আল্লাহ ও রাসূল যাতে ক্রোধান্বিত হন, তাতে তো তার রাগ জন্মায় না। বরং নিজের সন্তুষ্টি ও নিজের অসন্তুষ্টিই হল তার লক্ষ্য। (মিনহাজ আস-সুন্নাহ : ইবনু তাইমিয়া)
যারা জান্নাতের অধিকারী হবে তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন :
وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى . النازعات : 40
সে নিজেকে প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে বিরত রেখেছে। (সূরা আন-নাযেআত :৪০)
অতএব প্রবৃত্তির অনুসরণ ইখলাছে পরিপন্থী ও নেক আমল বিনষ্টকারী।
উমার ইবনু আব্দুল আযীয রহ. বলেছেন : তুমি এমন হয়ো না যে সত্য যদি তোমার মনপুত হয় তাহলে গ্রহণ করবে আর যদি তোমার মনের বিরুদ্ধে যায় তাহলে বিরোধিতা করবে। এমন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সত্য গ্রহণ করলে তুমি কোন প্রতিদান পাবে না। এবং বাতিল বর্জন করে শাসি- থেকে বাঁচতে পারবে না। কারণ তুমি যে সত্য গ্রহণ করেছো ও মিথ্যাকে বর্জন করেছো তা তোমার মনের মত হওয়ার কারণে। আল্লাহর জন্য নয়। (শরহু আল-আকীদাহ আত-তাহাবীয়্যাহ)
ইমাম শাতেবী রহ. বলেছেন: প্রবৃত্তির চাহিদায় কোন ভাল কাজও প্রশংসনীয় হতে পারে না। (আল-মুআফিকাত : শাতেবী)
আসলেই প্রবৃত্তির বিরোধিতা করা একটা মস্তবড় কঠিন কাজ। এ কাজ করতে না পারার কারণেই অনেক ইহুদী ও খৃষ্টান এবং বহু অমুসলিম ব্যক্তি ইসলামকে সত্য বলে অনুভব করার পরেও তা কবুল করতে পারেনি। তারা নিজেদের সমপ্রদায়, দেশ, ধন-সম্পদ বিসর্জন দিতে রাজী হয়েছে কিন্তু প্রবৃত্তির বিরোধিতা করতে রাজী হয়নি। তাদের লক্ষ করেই আল্লাহ বলেছেন :-
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ . الجاثية : 23
তুমি কি লক্ষ্য করেছো তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে? আল্লাহ জেনে-শুনে তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয় সীল করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর উপর দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে পথনির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা আল-জাসিয়া : ২৩)
ইমাম শাতেবী রহ. চমৎকার বলেছেন : শরীয়তের বিধি-বিধানের উদ্দেশ্য হল মানুষকে তার প্রবৃত্তির গোলামীকে বের করে আল্লাহর গোলামীতে স্বাধীন করে দেয়া। শরীয়তের পূর্বে সে প্রবৃত্তির বাধ্যগত দাস ছিল ইসলামী শরীয়ত গ্রহণের ফলে সে আল্লাহর স্বাধীন দাসে পরিণত হলো। (আল-মুআফিকাত : শাতেবী)
অতএব যিনি ইখলাছ অবলম্বন করতে চান তার কর্তব্য হল, নিজের সংকল্প ও ইচ্ছাকে দৃঢ় করা, আল্লাহর নিকট উপস্থিতিকে ভয় করা, নিজের প্রবৃত্তিকে বাধা দেয়া। তাহলে স্থায়ী বাসস্থান হিসেবে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যাবে। (আল-ইখলাছ : আল- আশকর)
হাসান বসরী রহ. বলেন : সর্বোত্তম জিহাদ হল প্রবৃত্তির বিরাধিতা। (আদাবুদ্দুনিয়া ওয়াদ-দীন : আল-মাওয়ারেদী)
ইবনুল জাওযী রহ. বলেন : মানুষের কর্তব্য হল, সকল সৎকর্ম করবে আল্লাহকে সন'ষ্ট করার জন্য, আল্লাহকে নিজের সম্মুখে উপস্থিত জেনে ও আল্লাহর নির্দেশ বাস-বায়নের জন্য। যদি এ তিনটি শর্ত পূরণ করে সৎকর্ম বা নেক আমল করা যায়, তাহলে সকল সৃষ্টিজীব তার পক্ষে থাকবে, সকল কল্যাণ তার কাছেই ছুটে আসবে। আর যদি মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রবৃত্তির দাসত্ব করা হয় তবে ফলাফল হবে উল্টো। (তাফসীর ইবনু কাসীর)
চতুর্থ : সৎকাজে মানুষের প্রশংসা :
মুখলিছ ব্যক্তি সর্বদাই নিজের প্রসার ও প্রচারকে এবং নিজ কাজের সুখ্যাতিকে অপছন্দ করে।
আলী রা. বলেছেন : তুমি প্রসিদ্ধি লাভ করবে এ জন্য কোন কাজ শুরু করবে না। মানুষে তোমাকে স্মরণ করবে এ উদ্দেশ্যে নিজের ব্যক্তিত্বকে উন্নত করবে না। শিখবে ও গোপন রাখবে। নীরবতা অবলম্বন করবে, তাহলে নিরাপদ থাকবে। সৎ-কর্মপরায়ণ লোকদের দেখলে খুশী হবে এবং অসৎ লোকদের দেখলে ক্রোধান্বিত হবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর)
তবে হ্যাঁ, মুখলিছ ব্যক্তি যে প্রসিদ্ধি বা মানুষের প্রশংসা পায়, তা অনিচ্ছায় লাভ হয়। সে তা লাভ করার নিয়্যত করেনি। নিজের অনিচ্ছায় কোন সুখ্যাতি বা মানুষের প্রশংসা অর্জন হলে ইখলাছের কোন ক্ষতি হয় না।
হাদীসে এসেছে-
عن ابي ذر رضى الله عنه قال : قيل لرسول الله صلى الله عليه وسلم : أرأيت الرجل يعمل العمل من الخير ويحمده الناس عليه، قال : تلك عاجل بشرى المؤمن . رواه مسلم : 2642
আবু জর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি যে কল্যাণকর কাজ করল এবং মানুষ এর জন্য তার প্রশংসা করল? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এটা মুমিন ব্যক্তির জন্য অগ্রিম সুসংবাদ। (বর্ণনায় : মুসলিম)
পঞ্চম : রিয়ার ভয়ে নেক আমল ত্যাগ করা :
কোন ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করতে মনস্থির করল। ইতিমধ্যে সে খেয়াল করে দেখল কাজটি করলে মানুষ দেখবে ও প্রশংসা করবে। তাই সে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবনায় পড়ে যাবে এ আশংকায় কাজটি ত্যাগ করল। এটা শয়তানের আরকেটি কুমন্ত্রণা।
ইবনু হাযম রহ. বলেন : রিয়া ত্যাগ করার ব্যাপারেও শয়তানের চক্রান্ত আছে। তাহল, মানুষের মনে এ ধারণা সৃষ্টি করে দেয়া যে এ ভাল কাজটি করলে লোকেরা দেখবে, এতে তুমি রিয়ার দোষে দুষ্ট হবে। এ ধারণার পর মানুষ ভাল কাজ সম্পাদন থেকে বিরত থাকল। (আল-আখলাক ও আস-সিয়ার : ইবনু হাযম)
শয়তান যদি এমনি একটা পথ খুলে নেয় তাহলে সকল ভাল কাজে এমনি করে বাধা দিতে থাকবে। (আল-ইখলাছ : আল-আশকর)
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন : যদি কারো নির্দিষ্ট কোন নফল আমল থাকে যেমন চাশতের সালাত, তাহাজ্জুদ-ইত্যাদি তাহলে সে এগুলো আদায় করবে, যেখানেই সে থাকুক না কেন। মানুষ দেখবে, সে রিয়ার মধ্যে পড়ে যাবে-এ ভয়ে ত্যাগ করবে না। কাজেই যে সকল নেক আমল শরীয়ত অনুমোদিত তা কখনো রিয়া হবে এ ভয়ে করে ত্যাগ করা যাবে না। (মাজমু আল-ফাতাওয়া : ইবনে তাইমিয়া)
ফুজাইল রহ. বলেন: মানুষে দেখবে এ ভয়ে ভাল কাজ ত্যাগ করা একটি রিয়া, কেননা মানুষের জন্যই সে কাজটা ত্যাগ করল। আর মানুষ দেখবে এ উদ্দেশ্যে ভাল কাজ করা হল শিরক। আর ইখলাছ হল এ দুটো থেকেই বেঁচে থাকা। (সিয়ার আলাম আন-নুবালা : আয-যাহাবী)
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন