HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইখলাছ মুক্তির পাথেয়
লেখকঃ ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী
৭
মুখলিছদের আলামতযারা ইখলাছ অবলম্বন করেন, তাদের বলা হয় মুখলিছ। তাদের কিছু গুণাবলি রয়েছে যা দেখে বুঝা যাবে যে তারা ইখলাছের গুণে সমৃদ্ধ। এ সকল গুণাবলির মধ্যে প্রধান প্রধান কয়েকটি আলোচনা করা হল :-
১-আল্লাহর সন্তুষ্টিই তাদের একান্ত কাম্য :
ইখলাছের উঁচু স্থানে অবস্থান করেন যারা, তাদের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে যাবতীয় কাজে-কর্মে তারা একমাত্র আল্লাহকেই উদ্দেশ্য করেন; খ্যাতি, প্রশংসা, কিংবা নশ্বর পার্থিব সম্পদের কিছুই তাদের উদ্দেশ্য নয়। তাদের এ অবস্থার কথা বহু আয়াত ও হাদীসে এসেছে :-
আল্লাহ তার প্রতি সমর্পিত বান্দাদের কথা উল্লেখ করে বলেন :-
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ . الكهف :28
তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদের সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধায় ডাকে তাদের প্রতিপালকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। (সূরা আল-কাহাফ : ২৮)
অর্থাৎ তারা তাদের দুআ ইবাদতের মাধমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, পার্থিব কোন স্বার্থ চায় না।
হাদীসে এসেছে-
عن أبي موسى رضى الله عنه قال : جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال : الرجل يقاتل للمغنم والرجل يقاتل للذكر، والرجل يقاتل ليرى مكانه، فمن في سبيل الله ؟ قال : من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله . أخرجه البخاري : 2810
সাহাবী আবু মুছা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, জনৈক ব্যক্তি জিহাদ করছে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ পাওয়ার জন্য, আরেক ব্যক্তি জিহাদ করছে লোকেরা তাকে স্মরণ করবে এ জন্য, অন্য এক ব্যক্তি জিহাদ করছে তার মর্যাদা বেড়ে যাবে সে জন্য। এর মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে সর্বশীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে লড়াই করছে সে-ই আল্লাহর পথ জিহাদ করছে। (বর্ণনায় : বুখারী)
মুখলিছ ব্যক্তি তার সকল কাজের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে আল্লাহর দীনকে সর্বশীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
২-তারা গোপনে কাজ করা পছন্দ করেন :
মুখলিছ বান্দারা নিজেদের সৎকর্মগুলো গোপনে সম্পাদন করতে ভালবাসেন। এমনিভাবে তারা অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করতে পছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলাও এ ধরনের লোকদের পছন্দ করেন।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-
إن الله يحب العبد التقي الغني الخفي . أخرجه مسلم
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভালবাসেন এমন বান্দাকে যে মুত্তাকী ও ধনী এবং দানশীলতায় গোপনীয়তা রক্ষাকারী। (বর্ণনায় : মুসলিম)
পূর্বসূরী সালাফে সালেহীনগণ এ গুণ অর্জনে গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমাম মাকদাসী বলেন : যারা ভাল ও নেক কাজ করেন তারা কখনো নিজেদের প্রচার ও সুখ্যাতি চান না। যে সকল কাজে সুখ্যাতি অর্জন করা যায় কখনো তার পিছনে ছুটেন না। কখনো যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে তা তাদের সামনে এসে লুটিয়ে পড়ে, তবে তারা ছুটে পালান। এক ধরনের বৈরাগ্য ও নিস্কৃয়তা তারা পছন্দ করেন। যেমন বর্ণিত আছে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে, একদিন তিনি তার বাসস্থান হতে বেরুলেন, অপেক্ষমান একটি দল তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাদের দিকে মুখ করে বললেন, কী কারণে তোমরা আমার অনুসরণে লিপ্ত? আল্লাহর শপথ! যদি জানতে আমি গৃহে কি রেখে এসেছি, তবে তোমরা আমার অনুসরণ হতে বিরত থাকতে। (মুখতাছার মিনহাজ আল-কাসেদীন : মাকদাসী)
বিষয়টির শুদ্ধতা নিরসনে খরীবীর মন্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, তারা পছন্দ করতেন বিশুদ্ধ-ইখলাছপূর্ণ আমলসমূহ লুকিয়ে রাখতে, এমনকি, একান্ত আপন সহধর্মিনী পর্যন্ত সে বিষয় সম্পর্কে যেন টের না পায়। সালমান ইবনে দীনার রহ. বলেন : তুমি তোমার মন্দ বিষয় গোপন করার তুলনায় ভাল কাজগুলো বেশী গোপন করো। বিশির আল-হাফী রহ. মন্তব্য করেন, খ্যাতি ও উত্তম খাদ্য বর্জন কর। এমন ব্যক্তি আখেরাতের আস্বাদ হতে বঞ্চিত হবে, পার্থিব জগতে যার একান্ত অভিলাষ ছিল মানুষের মাঝে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক। ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন : আমার ভাল লাগে মানুষ আমার কাছ থেকে শিখবে, কিন্তু আমার নাম বলবে না। (হুলিয়াতুল আউলিয়া : আল-ইসফাহানী)
আমাদের পূর্ববর্তী সাহাবা ও ইমামগণ শুধু কথা বলে যাননি। তারা নিজেদের ভাল কাজগুলো গোপন রাখার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
যেমন ওমর রা. মদীনার পল্লীর এক অন্ধ অসহায় বৃদ্ধা মহিলার সেবা করতেন প্রতি রাতে এসে। তার জন্য পানি বহন করতেন, খাদ্য তৈরী করে দিতেন, কাপড়-চোপড় পরিস্কার করতেন। একদিন তিনি দেখলেন তার আসার পূর্বে কেউ এসে তার কাজগুলো করে দিয়ে গেছে। পরের দিন তিনি আরো আগে আসলেন যাতে অন্য কেউ তার কাজ করার সুযোগ না নেয়। তিনি এসে দেখলেন, আবু বকর রা. বৃদ্ধার কাজগুলো গুছিয়ে দিচ্ছেন। আবু বকর রা.) তখন ছিলেন খলীফার দায়িত্বে। ওমর রা. তাকে দেখে বললেন, হে তুমি! আমার জীবন তোমার জন্য কুরবান হোক। (তারীখ আল-খুলাফা : আস-সুয়ূতী)
আরকেটি ঘটনা বর্ণিত আছে যে, একরাতে ওমর রা. ঘর থেকে বের হলেন। তালহা রা. তাকে অনুসরণ করে দেখতে পেলেন, ওমর রা. একটি গৃহে প্রবেশ করলেন। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বের হয়ে আরেকটি গৃহে ঢুকলেন। তালহা রা. ঘর দুটো চিনে রাখলেন। যখন ভোর হল তখন তিনি ঐ ঘরে প্রবেশ করলেন, দেখলেন এক অন্ধ বৃদ্ধা বসে আছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা ঐ লোকটি যে গত রাতে তোমার কাছে এসেছিল সে কি কাজে এসেছিল? বৃদ্ধা বলল, লোকটি আমার সাথে ওয়াদা করেছে যে, সে প্রতি রাতে এসে আমার কাজ করে দেবে; খাবার তৈরী করবে, কাপড়-চোপড় ধুয়ে দেবে। (হুলিয়াতুল আউলিয়া : আল-ইসফাহানী)
যাইনুল আবেদীন বিন আলী ইবনুল হুসাইন সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি মদীনার একশটি ঘরে খাদ্য দান করতেন। রাতে তিনি খাদ্য নিয়ে আসতেন এবং খাদ্যগুলো বিতরণ করে চলে যেতেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছিল, কেউ জানতো না যে কে খাদ্য দিয়ে গেছে। তিনি যখন ইন্তেকাল করলেন, তখন খাদ্য আসা বন্ধ হলে লোকজন বুঝতে পারল যে যইনুল আবেদীনই এ কাজ করে যাচ্ছিলেন। তার গোছলের সময় দেখা গেল তার পিঠে খাদ্যের বস্তা বহনের দাগ পড়ে গেছে। (সিয়ার আলাম আন-নুবালা : আজ-জাহাবী)
অবশ্য গোপনে আমল করার বিষয়টি নফল আমলের বেলায় প্রযোজ্য; ফরজ বা ওয়াজিবের বেলায় নয়। ফরজ ও ওয়াজিব প্রকাশ্যে আদায় করতে হয়।
৩- তাদের ভিতরের দিকটা বাহ্যিক দিকের চেয়ে ভাল থাকে :
মুখলিছ এমন হতে পারেন না যে, মানুষ যা দেখে, এমন কাজগুলো খুব ভাল করে আদায় করেন আর যা মানুষ দেখে না- শুধু আল্লাহ দেখেন সে সকল বিষয় যেনতেন করে আদায় করেন। তিনি যে কোন কাজ মুরাকাবার সাথে সম্পন্ন করবেন। মুরাকাবার সাথে সম্পন্ন করার অর্থ হল- সকল কাজে সর্বদা এ ভাবনা থাকা যে, আমি যা করছি আল্লাহ তা অবশ্যই দেখছেন।
ইবনে আতা রহ. বলেন: সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হল সকল সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মুরাকাবা করা। (ইহইয়া আল-উলূম আদ-দীন : আল-গাযালী)
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا . الفرقان : 64
এবং তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে। সূরা আল-ফুরকান : ৬৪
যারা প্রকাশ্যে ভাল কাজ করে আর গোপনে পাপে জড়িয়ে পরে তারা কখনো মুখলিছ হতে পারে না।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-
لأعلمن أقواما من أمتي يأتون يوم القيامة بحسنات أمثال جبال تهمامة بيضا فيجعلها الله هباءا منثورا، قال ثوبان : يا رسول الله صفهم لنا جلهم لنا أن لا نكون منهم ونحن لا نعلم، قال : أما إنهم إخوانكم ومن جلدتكم يأخذون من الليل كما تأخذون، ولكنهم إذا خلوا بمحارم الله اتهكوها . أخرجه ابن ماجة 4245 وصححه الألباني
আমার উম্মতের মধ্যে অনেকের কথা আমি জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামা অঞ্চলের সাদা পর্বতমালা পরিমাণ সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, কিন্তু আল্লাহ তাদের সৎ কর্মগুলো বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করে দিবেন। এ কথা শুনে সাওবান (রা.) বললেন, হে রাসূলুল্লাহ! তাদের পরিচয় দিন, আমরা যেন নিজেদের অজান্তে তাদের অন্তর্ভূক্ত না হয়ে যাই। তিনি বললেন: তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদের সাথেই থাকে। তোমরা যেমন রাত জেগে ইবাদত কর, তারাও করে। কিন্তু যখন একাকী হয় তখন আল্লাহর সীমা লংঘন করে (পাপে লিপ্ত হয়) (বর্ণনায় : ইবনে মাজাহ)
এ জাতীয় মানুষ কখনো মুখলিছ হতে পারে না; সমাজে ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু ব্যক্তিজীবন তাদের পাপে কলুষিত। কিভাবে তারা মুখলিছ হবে? যদি তারা সর্বাবস্থায় ও সকল কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা চিন্তা করত তাহলে কি করে লোকচক্ষুর অন্তরালে পাপে লিপ্ত হয়?
৪- তারা তাদের সৎকর্ম প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় করে :
মুখলিছ ব্যক্তি যত বেশী ইবাদত-বন্দেগী ও নেক আমল করে না কেন তারা সর্বদা এ ভয় রাখে যে, আমার কর্মগুলো আল্লাহ কবুল করবেন, না কি প্রত্যাখ্যান করবেন, তা আমি অবগত নই। তাদের এ গুণের কথা আল-কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে :-
وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آَتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ . المؤمنون :৬০
যারা তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে যে তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাবে। (সূরা মুমিনুন : ৬০)
হাদীসে এসেছে, আয়েশা রা. এ আয়াতের অর্থ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন-
أهم الذين يشربون الخمر ويسرقون؟ قال : لا يا بنت الصديق، ولكنهم الذين يصومون ويصلون ويتصدقون وهم يخافون أن لا تقبل منهم . أولئك يسارعون في الخيرات وهم لها سابقون . رواه الترمذي
আল্লাহ এ কথা কাদের জন্য বলেছেন, যারা মদ্যপান করে, চুরি করে তাদের জন্য? তিনি উত্তরে বললেন: না, হে সত্যবাদীর কন্যা (আয়েশা)! তারা হল, যারা সিয়াম পালন করে, সালাত আদায় করে, দান-ছাদাকা করে; সাথে সাথে এ ভয় রাখে যে, হয়ত আমার এ আমলগুলো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী। (বর্ণনায় : তিরমিজী)
মুখলিছ বান্দারা ইখলাছের সাথে সকল কাজ সম্পন্ন করে ও সাথে সাথে অন-রে এ ভয় পোষণ করে যে, আমি কাজটি যেভাবে করলে আল্লাহ কবুল করবেন সেভাবে করতে পেরেছি কি-না। আল্লাহ আমার ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে আমার কাজটি কবুল করবেন, না প্রত্যাখ্যান করবেন, এমন একটা ভয় অন্তরে সর্বদা বিরাজ করে।
এ ব্যাপারে একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত দেখা যায় ইমাম মাওয়ারেদী রহ.-এর জীবনে। তাফসীর, ফিকাহ, ইতিহাস ও রাজনীতিসহ বহু বিষয়ে তিনি শত শত গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত মানুষ জানত না তিনি যে কত গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইন্তেকালের সময় তিনি তার কাছের বিশ্বস্ত লোকটিকে বললেন, অমুক ব্যক্তির কাছে যে সকল কিতাব আছে সবগুলো আমার নিজের লেখা। আমি এগুলো প্রকাশ করিনি এ জন্য যে, আমি জানি না এগুলো ইখলাছের নিয়্যতে করেছি কি-না। যখন মৃত্যু নিকটে এসে যাবে আমি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকব তখন তুমি তোমার হাতটা আমার হাতের মধ্যে রাখবে। যদি দেখ আমি তোমার হাত ধরেছি ও চাপাচাপি করছি তাহলে তুমি বুঝে নেবে ওগুলোর কিছুই আল্লাহর কাছে কবুল হয়নি। তুমি তখন ঐ কিতাবগুলো দজলা নদীতে ফেলে দেবে। আর যদি দেখ আমি তোমার হাত না ধরে হাত খোলা রেখেছি তাহলে বুঝে নেবে ওগুলো আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে।
ইন্তেকালের সময় দেখা গেলে তিনি হাত খোলা রেখেছেন। পরে কিতাবগুলো প্রকাশ করা হয়, যা বিশ্বের হাজার মানুষ পাঠ করে এখনো উপকৃত হচ্ছে। (সিয়ার আলাম আন নুবালা : আয-যাহাবী)
৫- তারা মানুষের প্রশংসার অপেক্ষা করে না :
যখন তারা কোন সৃষ্টিজীবের কল্যাণের জন্য কাজ করে বা কোন মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য নিয়োজিত হয়, তাদের দু:খ কষ্ট দূর করতে নেমে পরে, তখন তারা কারো কাছ থেকে নিজের পারিশ্রমিক আশা করে না। কারো প্রশংসা কামনা করে না। শুধু আশা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি। রাসূলগণ এ বক্তব্যের সমর্থন করেছেন। যেমন-
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ . الشعراء :109
আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না ; আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আছে। (সূরা আশ-শুআরা : ১০৯)
এ জন্য যারা তাদের সাথে দূর্ব্যবহার করেছে, তাদের কিছু বলতেন না। যারা তাদের বাধা দিত তাদের সাথে বৈরিতা পোষণ করতেন না। এমনকি, মানুষ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুক-তাও কামনা করতেন না।
যেমন আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন-
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا . الإنسان : 9
এবং তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার্য দান করি, তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও কামনা করি না। (সূরা আল-ইনছান : ৯)
অর্থাৎ, আমরা যে দান করলাম তার বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান বা প্রশংসা অথবা কৃতজ্ঞতা পাওয়ার উদ্দেশ্য নেই। আমাদের উদ্দেশ্য হল আল্লাহর সন'ষ্টি।
আসলে যাদের সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে তারা কিন্তু মুখে এ কথা বলেনি। এটা ছিল তাদের অন-রের লুকায়িত কথা। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানেন ও জানিয়েছেন। এটা তাদের ইখলাছের বরকত। আল্লাহ তাআলা জানিয়েছেন অন্যদেরকে এ আদর্শে অনুপ্রাণিত করার জন্য। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
৬- তারা নিজেদের জন্য পদ-মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা কামনা করে না :
অনেক মানুষ আছেন, যারা ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ইখলাছ অবলম্বন ও দায়িত্ব কর্তব্য সঠিকভাবে আদায় করেই কাজ করেন। কিন্তু যদি তার পদমর্যাদা কমিয়ে দেয়া হয় বা সুযোগ সুবিধায় ঘাটতি হয়, তবে তিনি অস্থির হয়ে যান। আসলে যিনি সত্যিকার মুখলিছ তার এমন হওয়ার কথা নয়। সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে আবু বকর রা. ও উমার রা. মত শীর্ষস্থানীয় সাহাবাদের যখন উসামা ইবনে যায়েদের অধীনস্থ করা হল তখন তাদের মধ্যে সামান্য প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এমনিভাবে যখন খালিদ বিন ওয়ালীদ রা. কে সেনাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হল তখন তিনি পূর্বের মতই কাজ করতে থাকলেন। মুখলিছ যখন আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান আশা করেন তখন এ সকল বিষয় নিয়ে মন খারাপ করেন না।
যদি এমন হয় যে সুযোগ-সুবিধা ভাল পেলে সব কিছু ঠিকঠাক থাকে আর একটু অন্যরকম হলে সব গড়বড় হয়ে যায় তাহলে সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে এটা কিভাবে দাবী করা যায়? বরং সে নিজের প্রবৃত্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করে।
এ বিষয়টি একটি হাদীসে দু ব্যক্তির চরিত্রের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এভাবে :-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : تعس عبد الدينار، تعس عبد الدرهم، تعس عبد الخميلة، تعس عبد الخميصة، إن أعطى رضي وإن لم يعطى سخط، تعس وانتكس وإذا شيك فلا انتقش . طوبى لعبد آخذ بعنان فرسه في سبيل الله أشعس رأسه مغبرة قدماه، إن كان في الحراسة كان في الحراسة وإن كان في الساقة كان في الساقة، إن استأذن لم يؤذن له وإن شفع لم يشفع . أخرجه البخاري
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : টাকা-পয়সার দাস ধ্বংস হোক, রেশম কাপড়ের দাস ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক পোশাকের দাস। এদের অবস্থা এমন প্রদান করা হলে খুশী হয় আর না দিলে অসন্তুষ্ট হয়। ধ্বংস হোক! অবনত হোক! কাঁটা বিঁধলে তা যেন উঠাতে না পারে।
তবে সৌভাগ্যবান আল্লাহর ঐ বান্দা যে আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধরেছে, মাথার চুল এলোমেলো করেছে ও পদদ্বয় ধুলায় ধূসরিত করেছে। যদি তাকে পাহারার দায়িত্ব দেয়া তবে সে পাহারার দায়িত্ব পালন করে। যদি তাকে বাহিনীর পিছনে দায়িত্ব দেয়া হয় তবে তা পালন করে। যদি সে নেতার সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চায় তবে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না। যদি সে কারো জন্য শুপারিশ করে তবে তার শুপারিশ গ্রহণ করা হয় না। (বর্ণনায় : বুখারী)
১-আল্লাহর সন্তুষ্টিই তাদের একান্ত কাম্য :
ইখলাছের উঁচু স্থানে অবস্থান করেন যারা, তাদের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে যাবতীয় কাজে-কর্মে তারা একমাত্র আল্লাহকেই উদ্দেশ্য করেন; খ্যাতি, প্রশংসা, কিংবা নশ্বর পার্থিব সম্পদের কিছুই তাদের উদ্দেশ্য নয়। তাদের এ অবস্থার কথা বহু আয়াত ও হাদীসে এসেছে :-
আল্লাহ তার প্রতি সমর্পিত বান্দাদের কথা উল্লেখ করে বলেন :-
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ . الكهف :28
তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদের সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধায় ডাকে তাদের প্রতিপালকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। (সূরা আল-কাহাফ : ২৮)
অর্থাৎ তারা তাদের দুআ ইবাদতের মাধমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, পার্থিব কোন স্বার্থ চায় না।
হাদীসে এসেছে-
عن أبي موسى رضى الله عنه قال : جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال : الرجل يقاتل للمغنم والرجل يقاتل للذكر، والرجل يقاتل ليرى مكانه، فمن في سبيل الله ؟ قال : من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله . أخرجه البخاري : 2810
সাহাবী আবু মুছা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, জনৈক ব্যক্তি জিহাদ করছে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ পাওয়ার জন্য, আরেক ব্যক্তি জিহাদ করছে লোকেরা তাকে স্মরণ করবে এ জন্য, অন্য এক ব্যক্তি জিহাদ করছে তার মর্যাদা বেড়ে যাবে সে জন্য। এর মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে সর্বশীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে লড়াই করছে সে-ই আল্লাহর পথ জিহাদ করছে। (বর্ণনায় : বুখারী)
মুখলিছ ব্যক্তি তার সকল কাজের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে আল্লাহর দীনকে সর্বশীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
২-তারা গোপনে কাজ করা পছন্দ করেন :
মুখলিছ বান্দারা নিজেদের সৎকর্মগুলো গোপনে সম্পাদন করতে ভালবাসেন। এমনিভাবে তারা অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করতে পছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলাও এ ধরনের লোকদের পছন্দ করেন।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-
إن الله يحب العبد التقي الغني الخفي . أخرجه مسلم
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভালবাসেন এমন বান্দাকে যে মুত্তাকী ও ধনী এবং দানশীলতায় গোপনীয়তা রক্ষাকারী। (বর্ণনায় : মুসলিম)
পূর্বসূরী সালাফে সালেহীনগণ এ গুণ অর্জনে গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমাম মাকদাসী বলেন : যারা ভাল ও নেক কাজ করেন তারা কখনো নিজেদের প্রচার ও সুখ্যাতি চান না। যে সকল কাজে সুখ্যাতি অর্জন করা যায় কখনো তার পিছনে ছুটেন না। কখনো যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে তা তাদের সামনে এসে লুটিয়ে পড়ে, তবে তারা ছুটে পালান। এক ধরনের বৈরাগ্য ও নিস্কৃয়তা তারা পছন্দ করেন। যেমন বর্ণিত আছে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে, একদিন তিনি তার বাসস্থান হতে বেরুলেন, অপেক্ষমান একটি দল তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাদের দিকে মুখ করে বললেন, কী কারণে তোমরা আমার অনুসরণে লিপ্ত? আল্লাহর শপথ! যদি জানতে আমি গৃহে কি রেখে এসেছি, তবে তোমরা আমার অনুসরণ হতে বিরত থাকতে। (মুখতাছার মিনহাজ আল-কাসেদীন : মাকদাসী)
বিষয়টির শুদ্ধতা নিরসনে খরীবীর মন্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, তারা পছন্দ করতেন বিশুদ্ধ-ইখলাছপূর্ণ আমলসমূহ লুকিয়ে রাখতে, এমনকি, একান্ত আপন সহধর্মিনী পর্যন্ত সে বিষয় সম্পর্কে যেন টের না পায়। সালমান ইবনে দীনার রহ. বলেন : তুমি তোমার মন্দ বিষয় গোপন করার তুলনায় ভাল কাজগুলো বেশী গোপন করো। বিশির আল-হাফী রহ. মন্তব্য করেন, খ্যাতি ও উত্তম খাদ্য বর্জন কর। এমন ব্যক্তি আখেরাতের আস্বাদ হতে বঞ্চিত হবে, পার্থিব জগতে যার একান্ত অভিলাষ ছিল মানুষের মাঝে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক। ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন : আমার ভাল লাগে মানুষ আমার কাছ থেকে শিখবে, কিন্তু আমার নাম বলবে না। (হুলিয়াতুল আউলিয়া : আল-ইসফাহানী)
আমাদের পূর্ববর্তী সাহাবা ও ইমামগণ শুধু কথা বলে যাননি। তারা নিজেদের ভাল কাজগুলো গোপন রাখার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
যেমন ওমর রা. মদীনার পল্লীর এক অন্ধ অসহায় বৃদ্ধা মহিলার সেবা করতেন প্রতি রাতে এসে। তার জন্য পানি বহন করতেন, খাদ্য তৈরী করে দিতেন, কাপড়-চোপড় পরিস্কার করতেন। একদিন তিনি দেখলেন তার আসার পূর্বে কেউ এসে তার কাজগুলো করে দিয়ে গেছে। পরের দিন তিনি আরো আগে আসলেন যাতে অন্য কেউ তার কাজ করার সুযোগ না নেয়। তিনি এসে দেখলেন, আবু বকর রা. বৃদ্ধার কাজগুলো গুছিয়ে দিচ্ছেন। আবু বকর রা.) তখন ছিলেন খলীফার দায়িত্বে। ওমর রা. তাকে দেখে বললেন, হে তুমি! আমার জীবন তোমার জন্য কুরবান হোক। (তারীখ আল-খুলাফা : আস-সুয়ূতী)
আরকেটি ঘটনা বর্ণিত আছে যে, একরাতে ওমর রা. ঘর থেকে বের হলেন। তালহা রা. তাকে অনুসরণ করে দেখতে পেলেন, ওমর রা. একটি গৃহে প্রবেশ করলেন। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বের হয়ে আরেকটি গৃহে ঢুকলেন। তালহা রা. ঘর দুটো চিনে রাখলেন। যখন ভোর হল তখন তিনি ঐ ঘরে প্রবেশ করলেন, দেখলেন এক অন্ধ বৃদ্ধা বসে আছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা ঐ লোকটি যে গত রাতে তোমার কাছে এসেছিল সে কি কাজে এসেছিল? বৃদ্ধা বলল, লোকটি আমার সাথে ওয়াদা করেছে যে, সে প্রতি রাতে এসে আমার কাজ করে দেবে; খাবার তৈরী করবে, কাপড়-চোপড় ধুয়ে দেবে। (হুলিয়াতুল আউলিয়া : আল-ইসফাহানী)
যাইনুল আবেদীন বিন আলী ইবনুল হুসাইন সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি মদীনার একশটি ঘরে খাদ্য দান করতেন। রাতে তিনি খাদ্য নিয়ে আসতেন এবং খাদ্যগুলো বিতরণ করে চলে যেতেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছিল, কেউ জানতো না যে কে খাদ্য দিয়ে গেছে। তিনি যখন ইন্তেকাল করলেন, তখন খাদ্য আসা বন্ধ হলে লোকজন বুঝতে পারল যে যইনুল আবেদীনই এ কাজ করে যাচ্ছিলেন। তার গোছলের সময় দেখা গেল তার পিঠে খাদ্যের বস্তা বহনের দাগ পড়ে গেছে। (সিয়ার আলাম আন-নুবালা : আজ-জাহাবী)
অবশ্য গোপনে আমল করার বিষয়টি নফল আমলের বেলায় প্রযোজ্য; ফরজ বা ওয়াজিবের বেলায় নয়। ফরজ ও ওয়াজিব প্রকাশ্যে আদায় করতে হয়।
৩- তাদের ভিতরের দিকটা বাহ্যিক দিকের চেয়ে ভাল থাকে :
মুখলিছ এমন হতে পারেন না যে, মানুষ যা দেখে, এমন কাজগুলো খুব ভাল করে আদায় করেন আর যা মানুষ দেখে না- শুধু আল্লাহ দেখেন সে সকল বিষয় যেনতেন করে আদায় করেন। তিনি যে কোন কাজ মুরাকাবার সাথে সম্পন্ন করবেন। মুরাকাবার সাথে সম্পন্ন করার অর্থ হল- সকল কাজে সর্বদা এ ভাবনা থাকা যে, আমি যা করছি আল্লাহ তা অবশ্যই দেখছেন।
ইবনে আতা রহ. বলেন: সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হল সকল সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মুরাকাবা করা। (ইহইয়া আল-উলূম আদ-দীন : আল-গাযালী)
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا . الفرقان : 64
এবং তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে। সূরা আল-ফুরকান : ৬৪
যারা প্রকাশ্যে ভাল কাজ করে আর গোপনে পাপে জড়িয়ে পরে তারা কখনো মুখলিছ হতে পারে না।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-
لأعلمن أقواما من أمتي يأتون يوم القيامة بحسنات أمثال جبال تهمامة بيضا فيجعلها الله هباءا منثورا، قال ثوبان : يا رسول الله صفهم لنا جلهم لنا أن لا نكون منهم ونحن لا نعلم، قال : أما إنهم إخوانكم ومن جلدتكم يأخذون من الليل كما تأخذون، ولكنهم إذا خلوا بمحارم الله اتهكوها . أخرجه ابن ماجة 4245 وصححه الألباني
আমার উম্মতের মধ্যে অনেকের কথা আমি জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামা অঞ্চলের সাদা পর্বতমালা পরিমাণ সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, কিন্তু আল্লাহ তাদের সৎ কর্মগুলো বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করে দিবেন। এ কথা শুনে সাওবান (রা.) বললেন, হে রাসূলুল্লাহ! তাদের পরিচয় দিন, আমরা যেন নিজেদের অজান্তে তাদের অন্তর্ভূক্ত না হয়ে যাই। তিনি বললেন: তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদের সাথেই থাকে। তোমরা যেমন রাত জেগে ইবাদত কর, তারাও করে। কিন্তু যখন একাকী হয় তখন আল্লাহর সীমা লংঘন করে (পাপে লিপ্ত হয়) (বর্ণনায় : ইবনে মাজাহ)
এ জাতীয় মানুষ কখনো মুখলিছ হতে পারে না; সমাজে ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু ব্যক্তিজীবন তাদের পাপে কলুষিত। কিভাবে তারা মুখলিছ হবে? যদি তারা সর্বাবস্থায় ও সকল কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা চিন্তা করত তাহলে কি করে লোকচক্ষুর অন্তরালে পাপে লিপ্ত হয়?
৪- তারা তাদের সৎকর্ম প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় করে :
মুখলিছ ব্যক্তি যত বেশী ইবাদত-বন্দেগী ও নেক আমল করে না কেন তারা সর্বদা এ ভয় রাখে যে, আমার কর্মগুলো আল্লাহ কবুল করবেন, না কি প্রত্যাখ্যান করবেন, তা আমি অবগত নই। তাদের এ গুণের কথা আল-কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে :-
وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آَتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ . المؤمنون :৬০
যারা তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে যে তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাবে। (সূরা মুমিনুন : ৬০)
হাদীসে এসেছে, আয়েশা রা. এ আয়াতের অর্থ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন-
أهم الذين يشربون الخمر ويسرقون؟ قال : لا يا بنت الصديق، ولكنهم الذين يصومون ويصلون ويتصدقون وهم يخافون أن لا تقبل منهم . أولئك يسارعون في الخيرات وهم لها سابقون . رواه الترمذي
আল্লাহ এ কথা কাদের জন্য বলেছেন, যারা মদ্যপান করে, চুরি করে তাদের জন্য? তিনি উত্তরে বললেন: না, হে সত্যবাদীর কন্যা (আয়েশা)! তারা হল, যারা সিয়াম পালন করে, সালাত আদায় করে, দান-ছাদাকা করে; সাথে সাথে এ ভয় রাখে যে, হয়ত আমার এ আমলগুলো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী। (বর্ণনায় : তিরমিজী)
মুখলিছ বান্দারা ইখলাছের সাথে সকল কাজ সম্পন্ন করে ও সাথে সাথে অন-রে এ ভয় পোষণ করে যে, আমি কাজটি যেভাবে করলে আল্লাহ কবুল করবেন সেভাবে করতে পেরেছি কি-না। আল্লাহ আমার ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে আমার কাজটি কবুল করবেন, না প্রত্যাখ্যান করবেন, এমন একটা ভয় অন্তরে সর্বদা বিরাজ করে।
এ ব্যাপারে একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত দেখা যায় ইমাম মাওয়ারেদী রহ.-এর জীবনে। তাফসীর, ফিকাহ, ইতিহাস ও রাজনীতিসহ বহু বিষয়ে তিনি শত শত গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত মানুষ জানত না তিনি যে কত গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইন্তেকালের সময় তিনি তার কাছের বিশ্বস্ত লোকটিকে বললেন, অমুক ব্যক্তির কাছে যে সকল কিতাব আছে সবগুলো আমার নিজের লেখা। আমি এগুলো প্রকাশ করিনি এ জন্য যে, আমি জানি না এগুলো ইখলাছের নিয়্যতে করেছি কি-না। যখন মৃত্যু নিকটে এসে যাবে আমি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকব তখন তুমি তোমার হাতটা আমার হাতের মধ্যে রাখবে। যদি দেখ আমি তোমার হাত ধরেছি ও চাপাচাপি করছি তাহলে তুমি বুঝে নেবে ওগুলোর কিছুই আল্লাহর কাছে কবুল হয়নি। তুমি তখন ঐ কিতাবগুলো দজলা নদীতে ফেলে দেবে। আর যদি দেখ আমি তোমার হাত না ধরে হাত খোলা রেখেছি তাহলে বুঝে নেবে ওগুলো আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে।
ইন্তেকালের সময় দেখা গেলে তিনি হাত খোলা রেখেছেন। পরে কিতাবগুলো প্রকাশ করা হয়, যা বিশ্বের হাজার মানুষ পাঠ করে এখনো উপকৃত হচ্ছে। (সিয়ার আলাম আন নুবালা : আয-যাহাবী)
৫- তারা মানুষের প্রশংসার অপেক্ষা করে না :
যখন তারা কোন সৃষ্টিজীবের কল্যাণের জন্য কাজ করে বা কোন মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য নিয়োজিত হয়, তাদের দু:খ কষ্ট দূর করতে নেমে পরে, তখন তারা কারো কাছ থেকে নিজের পারিশ্রমিক আশা করে না। কারো প্রশংসা কামনা করে না। শুধু আশা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি। রাসূলগণ এ বক্তব্যের সমর্থন করেছেন। যেমন-
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ . الشعراء :109
আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না ; আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আছে। (সূরা আশ-শুআরা : ১০৯)
এ জন্য যারা তাদের সাথে দূর্ব্যবহার করেছে, তাদের কিছু বলতেন না। যারা তাদের বাধা দিত তাদের সাথে বৈরিতা পোষণ করতেন না। এমনকি, মানুষ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুক-তাও কামনা করতেন না।
যেমন আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন-
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا . الإنسان : 9
এবং তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার্য দান করি, তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও কামনা করি না। (সূরা আল-ইনছান : ৯)
অর্থাৎ, আমরা যে দান করলাম তার বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান বা প্রশংসা অথবা কৃতজ্ঞতা পাওয়ার উদ্দেশ্য নেই। আমাদের উদ্দেশ্য হল আল্লাহর সন'ষ্টি।
আসলে যাদের সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে তারা কিন্তু মুখে এ কথা বলেনি। এটা ছিল তাদের অন-রের লুকায়িত কথা। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানেন ও জানিয়েছেন। এটা তাদের ইখলাছের বরকত। আল্লাহ তাআলা জানিয়েছেন অন্যদেরকে এ আদর্শে অনুপ্রাণিত করার জন্য। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
৬- তারা নিজেদের জন্য পদ-মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা কামনা করে না :
অনেক মানুষ আছেন, যারা ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ইখলাছ অবলম্বন ও দায়িত্ব কর্তব্য সঠিকভাবে আদায় করেই কাজ করেন। কিন্তু যদি তার পদমর্যাদা কমিয়ে দেয়া হয় বা সুযোগ সুবিধায় ঘাটতি হয়, তবে তিনি অস্থির হয়ে যান। আসলে যিনি সত্যিকার মুখলিছ তার এমন হওয়ার কথা নয়। সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে আবু বকর রা. ও উমার রা. মত শীর্ষস্থানীয় সাহাবাদের যখন উসামা ইবনে যায়েদের অধীনস্থ করা হল তখন তাদের মধ্যে সামান্য প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এমনিভাবে যখন খালিদ বিন ওয়ালীদ রা. কে সেনাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হল তখন তিনি পূর্বের মতই কাজ করতে থাকলেন। মুখলিছ যখন আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান আশা করেন তখন এ সকল বিষয় নিয়ে মন খারাপ করেন না।
যদি এমন হয় যে সুযোগ-সুবিধা ভাল পেলে সব কিছু ঠিকঠাক থাকে আর একটু অন্যরকম হলে সব গড়বড় হয়ে যায় তাহলে সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে এটা কিভাবে দাবী করা যায়? বরং সে নিজের প্রবৃত্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করে।
এ বিষয়টি একটি হাদীসে দু ব্যক্তির চরিত্রের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এভাবে :-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : تعس عبد الدينار، تعس عبد الدرهم، تعس عبد الخميلة، تعس عبد الخميصة، إن أعطى رضي وإن لم يعطى سخط، تعس وانتكس وإذا شيك فلا انتقش . طوبى لعبد آخذ بعنان فرسه في سبيل الله أشعس رأسه مغبرة قدماه، إن كان في الحراسة كان في الحراسة وإن كان في الساقة كان في الساقة، إن استأذن لم يؤذن له وإن شفع لم يشفع . أخرجه البخاري
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : টাকা-পয়সার দাস ধ্বংস হোক, রেশম কাপড়ের দাস ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক পোশাকের দাস। এদের অবস্থা এমন প্রদান করা হলে খুশী হয় আর না দিলে অসন্তুষ্ট হয়। ধ্বংস হোক! অবনত হোক! কাঁটা বিঁধলে তা যেন উঠাতে না পারে।
তবে সৌভাগ্যবান আল্লাহর ঐ বান্দা যে আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধরেছে, মাথার চুল এলোমেলো করেছে ও পদদ্বয় ধুলায় ধূসরিত করেছে। যদি তাকে পাহারার দায়িত্ব দেয়া তবে সে পাহারার দায়িত্ব পালন করে। যদি তাকে বাহিনীর পিছনে দায়িত্ব দেয়া হয় তবে তা পালন করে। যদি সে নেতার সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চায় তবে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না। যদি সে কারো জন্য শুপারিশ করে তবে তার শুপারিশ গ্রহণ করা হয় না। (বর্ণনায় : বুখারী)
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন