HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইখলাছ মুক্তির পাথেয়

লেখকঃ ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী

কিভাবে ইখলাছ অর্জন করবেন
ইখলাছ অর্জনের কিছু পদ্ধতি আছে যার প্রধান কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল :-

১-যথাযথভাবে আল্লাহর পরিচয় :

আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, তিনি মহান, তিনি ধনী, কারো মুখাপেক্ষী নন, সর্ববিষয় তার ক্ষমতাধীন, তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। মানুষ চোখ দিয়ে যা কিছু খিয়ানত করে, অন্তর দিয়ে যা কল্পনা করে, সবই তার জানা। তার হাতেই সকল ধরনের লাভ ও ক্ষতি; কল্যাণ ও অকল্যাণ। তার কোন কাজেই কোন অংশীদার নেই। তিনি যা ইচ্ছে করেন তা-ই হয়, তা ইচ্ছা করেন না, তা কোনভাবেই হবার নয়-এ ভাবনাগুলো সর্বদা তাজা ও সজীব রাখা।

সাথে সাথে নিজের প্রতি আল্লাহর নিয়ামত, অনুগ্রহ ও ইহসানের প্রতি খেয়াল রাখা। তার এ সকল নেয়ামতের পরিবর্তে আমি তার জন্য কিছু করতে পেরেছি কি? যদি কিছু করি তা কি বিশুদ্ধভাবে করছি যা আল্লাহর কাছে কবুলের শতভাগ সম্ভাবনা আছে? আল্লাহর অধিকার অনেক বড় ও ব্যাপক। তার হক বা অধিকার আমরা কতটুকু আদায় করতে পারি?

এ ধরনের ভাবনা মানুষকে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বা মুখলিছ হতে সাহায্য করে।

২- ইখলাছ শিক্ষা ও অনুশীলন :

ইখলাছ কি, কেন ও কিভাবে অর্জন সম্ভব-এ বিষয়টি ভালভাবে রপ্ত করতে হবে। ভালভাবে কোন বিষয় না জানলে তা অবলম্বন করা যায় না।

ইয়াহইয়া ইবনে কাসীর রহ. বলেন : তোমরা নিয়্যত শিক্ষা করে নাও, কারণ এটা আমলের চেয়ে বেশী গুরূত্বপূর্ণ। (হুলইয়াতুল আওলিয়া : আল-ইসফাহানী)

আল-মাকাদাসী রহ. বলেন : যে নিয়্যতের স্বরূপ জানে না সে কি করে নিয়্যতকে বিশুদ্ধ করবে। যে নিয়্যত বিশুদ্ধ করল, কিন্তু ইখলাছ সম্পর্কে জানলো না সে কি করে ইখলাছ অবলম্বন করবে। কাজেই প্রথম কাজ হল নিয়্যতকে শুদ্ধ করা তারপর ইখলাছ অবলম্বন করা। (মিনহাজ আল-কাসেদীন : আল-মাকদাসী)

৩- ইখলাছের সওয়াব ও পুরস্কার স্মরণ করা :

ইখলাছের তাৎপর্য ও তার প্রতিদানের কথা স্মরণ করা। মনে রাখা, ইখলাছ হল আমল কবুলের শর্ত। জান্নাতে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা। আর শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ধোঁকা থেকে বাঁচার একটা মজবুত কেল্লা।

যেমন বলেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন :-

قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . الحجر : 39-40

শয়তান বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সে জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে দেব এবং আমি তাদের সকলকে বিপথগামী করব, তবে তাদের নয়, যারা আপনার ইখলাছ অবলম্বনকারী (একনিষ্ঠ ) বান্দা। (সূরা আল-হিজর : ৩৯-৪০)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :-

إِنَّكُمْ لَذَائِقُو الْعَذَابِ الْأَلِيمِ ﴿38﴾ وَمَا تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿39﴾ إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ ﴿40﴾ أُولَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُومٌ ﴿41﴾ فَوَاكِهُ وَهُمْ مُكْرَمُونَ ﴿42﴾ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ ﴿43﴾ عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ ﴿44﴾ ( الصافات : 38-44)

তোমরা অবশ্যই মর্মন্তদ শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করবে এবং তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল পাবে। তবে তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ (মুখলিছ) বান্দা। তাদের জন্য আছে নির্ধারিত রিযক-ফলমূল ; আর তারা হবে সম্মানিত, সুখদ-কাননে তারা মুখোমুখি হয়ে আসীন হবে। (সূরা আস-সাফফাত : ৩৮-৪৪)

যে ব্যক্তি কোন নেক আমলের দ্বারা শুধু পার্থিব স্বার্থ অর্জন করার নিয়্যত করবে তাকে পার্থিব সে স্বার্থ দেয়া হবে পূর্ণভাবে। কিন্তু আখেরাতে থাকবে তার জন্য শাস্তি। কারণ তার নিয়্যত ও পুরো চিন্তাভাবনা ছিল দুনিয়াকে ঘিরে। আল্লাহ তো তার বান্দাদের অন্তরের নিয়্যত অনুযায়ী প্রতিদান দিবেন। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ ﴿15﴾ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿16﴾.( هود : 15-16)

যে পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমি তাদের কর্মের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেথায় তাদেরকে কম দেয়া হবে না। তাদের জন্য আখেরাতে আগুন ব্যতীত অন্য কিছুই নেই। আর তারা যা করে আখেরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে থাকে তা নিরর্থক। (সূরা হুদ : ১৫-১৬)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেই দিয়েছেন :-

من سمع سمع الله به ومن يرائي يرائي الله به أخرجه البخاري : 6499

যে মানুষকে শোনানোর জন্য কাজ করল আল্লাহ তা মানুষকে শুনিয়ে দেবেন। আর যে মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করল আল্লাহ তা মানুষকে দেখিয়ে দেবেন। (বর্ণনায় : বুখারী)

৪-আত্ম-জিজ্ঞাসা ও অধ্যবসায় :

যে কোন কাজ শুরু করার পূর্বে নিজেকে জিজ্ঞাসা করবে এ কাজ দ্বারা তোমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি? উত্তর যদি আপনার কাছে সঠিক ও শুদ্ধ মনে হয়, তবে কাজ শুরু করে দিন। আর যদি লক্ষ্য করেন, উত্তর সঠিক হচ্ছে না তাহলে নিয়্যত ঠিক করে নিন আপনার কাজটি শুরু করার পূর্বে।

আমাদের পূর্ববর্তী ইমামগণ এমনিভাবে কাজের পূর্বে মুরাকাবা বা আত্ম-জিজ্ঞাসা করে নিতেন। হাসান রহ. বলেন : কোন ব্যক্তি যদি একটি ছদকা করার নিয়্যত করত তখন নিজেকে প্রশ্ন করে নিত। যদি দেখত যে তার ছদকাটা আল্লাহর জন্যই করা হচ্ছে তখন সে অগ্রসর হত। আর যদি দেখত তার নিয়্যতে কোন সন্দেহ আছে তা হলে সে বিরত থাকত। (জামে আল-বয়ান : আত-তাবারী)

সালমান রা. বলতেন : প্রত্যেক কাজের শুরুতে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করবে যখন তুমি সংকল্প কর ও প্রত্যেক বিচারে তাকে স্মরণ করবে তখন তুমি রায় দেবে।

এর অর্থ এ নয় যে নিয়্যত খারাপ দেখলে কাজটি পরিত্যাগ করবে বরং নিয়্যতকে বিশুদ্ধ করে কাজটি শুরু করবে। এটা হল সঠিক নিয়্যতের অনুশীলন।

৫-আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা :

মানুষ আল্লাহর কাছে বেশী করে ধর্ণা দিয়ে তাঁর কাছে বেশী করে দুআ-প্রার্থনা করে ইখলাছ অবলম্বনের তাওফীক কামনা করবে। এ জন্য তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দৈনিক পাঁচ বার সালাতের মাধ্যমে আমাদের বলতে শিখিয়েছেন-

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

আমরা তোমারই ইবাদত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।

অর্থাৎ একমাত্র তোমারই উপাসনা করি অন্য কারো নয়; আর তোমার উপাসনার জন্য তোমারই কাছে সামর্থ চাই, অন্য কারো কাছে নয়। তোমার সাহায্য ছাড়া কেউ ভাল কাজ করতে পারে না এবং তোমার সাহায্য ছাড়া কেউ খারাপ কাজ থেকে ফিরে থাকতে পারে না।

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম শিরক থেকে ফিরে থাকা ও আল্লাহর তাওহীদে অটল থাকার জন্য প্রার্থনা করেছেন :-

وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ . إبراهيم :35

আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পুজা থেকে দূরে রেখ। (সূরা ইবরাহীম : ৩৫)

অর্থাৎ হে আমার প্রভু! আমার আমার সন্তানদের ও শিরকের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদের তাওহীদ ও ইখলাছ অবলম্বনকারী বানাও। (ফাতহুল বয়ান : সিদ্দীক খান)

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার শিক্ষা দিয়েছেন বহু হাদীসে। যেমন :-

عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه قال : خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم فقال : أيها الناس اتقوا هذا الشرك فإنه أخفى من دبيب النمل، فقال له من شاء الله أن يقول : وكيف نتقيه وهو أخفى من دبيب النمل يا رسول الله ، قال : قولوا : أللهم إنا نعوذبك من أن نشرك بك شيئا نعلمه ونستغفرك لما لا نعلم . أخرجه أحمد في المسند وحسنه الألباني

সাহাবী আবু মূছা আল-আশআরী বলেন : একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন: হে মানব সকল! তোমরা শিরক থেকে নিজেদের রক্ষা কর। কেননা তা অনুভবে পিঁপড়ার চলার শব্দের চেয়েও সুক্ষ্ম। একজন ব্যক্তি প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসূল! যা পিঁপড়ার চলার শব্দের চেয়েও হাল্কা-আমরা অনুভব করতে পারি না-তা থেকে কিভাবে বেঁচে থাকব? তিনি বললেন: তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, হে আল্লাহ! আমরা এমন শিরক থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি যা আমরা জানি। এবং এমন শিরক থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, যা আমরা জানি না। (মুসনাদ আহমদ)

তাই শিরক থেকে বেঁচে থাকতে এবং ইখলাছের উপর কায়েম থাকতে সর্বদা আল্লাহর কাছে সাহায্য ও সামর্থ প্রার্থনা করা উচিত।

৬-ইবাদত-বন্দেগী বেশী করা :

মানুষের কাছে শয়তানের প্রত্যাশা এই যে, সর্বতোভাবে সে আল্লাহর আনুগত্য পরিত্যাগ করুক, কিংবা নিয়্যত ও ধরণের দিক দিয়ে ইবাদত পালন করুক অযথার্থ প্রক্রিয়ায়। কিন্তু শয়তান যখন জানতে পারে যে, বান্দা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে, বর্জন করছে তার আনুগত্য; এবং যখনি সে বান্দাকে কুমন্ত্রণা দিচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে ইবাদত-বন্দেগী ও ইখলাছ, তখন সে ক্ষান্ত হয়, কারণ বান্দার এ অটলতাই তার জন্য প্রভূত কল্যাণের কারণ হবে সন্দেহ নেই। হাসান বসরী রা. বলেন: শয়তান তোমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে যখন দেখে যে তুমি সর্বদা আল্লাহর আনুগত্যে অটল, তখন সে তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে চলে যায়। আর যখন দেখে তুমি কখনো আনুগত্য করছো, আবার কখনো ছেড়ে দিচ্ছ তখন সে তোমার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে। (আয-যুহুদ : ইবনে মুবারক)

৭-আত্মতৃপ্তি পরিহার করা :

আমি খুব ভাল মানুষ, বা আমি অনেক লোকের চেয়ে সৎকর্ম বেশী করি- এ ধরণের অনুভূতি লালন করার নাম হল আত্মতৃপ্তি। এটা এক খারাপ আচরণ। শয়তান এ পথ দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে থাকে, ঢুকে পড়ে তার অন্তকরণে সন্তর্পণে।

যে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, সে যেন আল্লাহর প্রতি অনুগ্রহ করেছে বলে ধারনা পোষণ করে। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আত্মতৃপ্তিতে পতিত হওয়া কতিপয় মানুষের কথা বলেছেন এভাবে :-

يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ . الحجرات : 17

তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমাকে ধন্য করেছে বলে মনে করে। বল, তোমাদের ইসলাম গ্রহণ আমাকে ধন্য করেছে বলে মনে করো না, বরং আল্লাহ ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা হুজুরাত : ১৭)

ইমাম নববী রহ. বলেন : ইখলাছ অবলম্বনে যতগুলো বাধা আছে তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি হল অন্যতম। আত্মতৃপ্তি যাকে পেয়ে বসবে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। এমনিভাবে যে অহংকার করবে তার আমল নিষ্ফলতায় পর্যবসিত হবে। (আল-আরবাঈন আন-নববীয়্যাহ)

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন : মানুষ যখন কোন কাজ শুরু করবে তখন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়্যত করবে, আল্লাহ তাকে অনুগ্রহ করে এ কাজ করার সামর্থ দিয়েছেন এটা মনে রাখবে, তাঁরই দেয়া শক্তি ও সামর্থ দ্বারা এ কাজ করা হচ্ছে, তিনিই মুখ, অন্তর, চোখ, কানকে এ কাজে ব্যবহারের উপযোগী করেছেন এ অনুভূতি পোষণ করবে। এ রকম নিয়্যত ও অনুভূতি যদি কাজ করার শুরুতে না থাকে তাহলে আত্মতৃপ্তিতে পতিত হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। ফলে তার আমলট বৃথা যাবে। (আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)

সৃষ্টিজীব আমার কাজ সম্পর্কে জানুক, তারা আমার প্রশংসা করুক ও আমাকে তিরস্কার না করুক-এমন নিয়্যতে কাজ করলে তা এক ধরণের শিরক বলে আল্লাহর কাছে গণ্য হবে। (মজমু আল-ফাতাওয়া : ইবনে তাইমিয়া)

মানুষের সমালোচনা ও প্রশংসার প্রতি লক্ষ্য রেখে মুখলিছ বান্দা ইবাদত-বন্দেগী করতে পারে না। কেন সে মানুষের ভাল-মন্দ কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে। সে তো জানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :-

واعلم أن الأمة لوجتمعت على أن ينفعوك بشيء لم ينفعوك بشيء إلا قد كتبه الله لك، ولو اجتمعوا على أن يضروك بشيء لم يضروك بشيء إلا قد كتبه الله عليك، رفعت الأقلام وجفت الصحف . أخرجه الترمذي 2516 وصححه الألباني

জেনে রাখ! পুরো জাতি যদি তোমাকে উপকার করতে একত্র হয় তবুও তোমার কোন উপকার করতে পারবে না, তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন (তা অবশ্যই ঘটবে)। এমনিভাবে, পুরো জাতি যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্র হয় তবুও তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে আল্লাহ যা তোমার বিপক্ষে লিখে রেখেছেন (তা নিশ্চয় ঘটবে)। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে আর খাতা শুকিয়ে গেছে। (বর্ণনায় : তিরমিজী)

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন : আগুন ও পানি যেমন একত্র হতে পারে না। সাপ এবং গুই সাপ যেমন এক গর্তে থাকতে পারে না তেমনি একই হৃদয়ে ইখলাছ ও মানুষকে সন্তুষ্ট করার ভাবনা একত্র হতে পারে না। (আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)

মানুষের নজর কাড়ার প্রতি গুরুত্ব দিলে, তাদের সন'ষ্টি অর্জনের ভাবনা অন্তরে স্থান দিলে তা কাউকে উপকার করবে না ও ক্ষতি থেকেও ফিরাবে না। বরং এ ধরণের ভাবনা শুধু মানুষের ক্রোধ ও সমালোচনার যোগান দেয়।

৮-সৎ ও মুখলিছ লোকদের সঙ্গ অবলম্বন :

মানুষ যার সাথে উঠা-বসা ও চলাফেরা করে তার দ্বারা প্রভাবিত হয়। যদি কেউ মুখলিছ লোকদের সঙ্গ অবলম্বন করে তবে তার মধ্যে ইখলাছের ধারনা প্রবল হবে। আর যদি কোন ব্যক্তি লোক দেখানো ভাবনাধারী বা লোকশুনানো ধারণার বাহকের সাথে চলাফেরা করে তবে তার দৃষ্টিভংগি তার সঙ্গীর মতই হবে। এটা সকলের কাছে বোধগম্য। যেমন হাদীসে এসেছে-

المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل . أخرجه أحمد : 8212

মানুষ তার সঙ্গী-সাথীর দৃষ্টিভংগি গ্রহণ করে। তাই তোমরা খেয়াল করে দেখবে কে কার সাথে চলাফেরা করে। (বর্ণনায় : আহমদ)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন :-

مثل الجليس الصالح والسوء كحامل المسك ونافخ الكير، فحامل المسك إما أن يحذيك، وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحا طيبا، ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك وإما أن تجد منه ريحا خبيثا . أخرجه البخاري : 2234

সৎসঙ্গ অবলম্বনকারী ও অসৎসঙ্গ গ্রহণকারীদের দৃষ্টান্ত হল যথাক্রমে সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের মত। সুগন্ধি বিক্রেতা হয়ত তোমাকে কিছু সুগন্ধি দেবে অথবা তুমি তার থেকে সুগন্ধি কিনবে। যদি কোনটিই না হয়, তবে কমপক্ষে তার থেকে সুঘ্রাণ এমনিতেই পাবে। আর কামারের ব্যাপারটা হল, হয়ত তার আগুনের ফুলকিতে তোমার কাপড় পুরে যাবে অথবা তার হাপরের দুর্গন্ধ তোমাকে পেয়ে বসবে। (বর্ণনায় : বুখারী)

তাই যিনি ইখলাছ অবলম্বন করতে চান তাকে অবশ্যই সৎ-সঙ্গ নির্বাচন করতে হবে।

৯- মুখলিছ ও সৎ-কর্মপরায়ণদের আদর্শ রূপে গ্রহণ করা :

ইসলামের প্রথম যুগে নবী ও রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও ইমামগণ-যারা নিজেদের জীবনে ইখলাছের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন- তাদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করলে ইখলাছ অবলম্বনে সহায়ক হবে। প্রতিটি কাজে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা উচিত। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

الأحزاب : 21

তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্বরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব : ২১)

আল্লাহ আরো বলেন :-

أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهِ . الأنعام : 90

তাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ কর। (সূরা আল-আনআম : ৯০)

আল্লাহ আরো বলেন :-

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ . الممتحنة : 8

তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আল-মুমতাহিনা : ৯)

এমনিভাবে সৎকর্মপরায়ণদের অনুসরণ করার ব্যাপারে হাদীসেও নির্দেশ এসেছে :-

فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين عضوا عليها بالنواجذ . أخرجه ابن ماجة وصححه الألباني

তোমরা আমার সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শ দৃঢ়ভাবে আকরে ধরবে। (বর্ণনায় : ইবনু মাজাহ)

এ জন্য রাসুল ও তার সাহাবাদের সীরাত বা জীবনী অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। তাদের সীরাত অধ্যয়ন ব্যতীত তাদের আদর্শ কিভাবে জানা যাবে?

ইমাম আবু হানীফা রহ. বলেন : ফিকাহর কোন মাছআলা গবেষণার চেয়ে পূর্বসুরী আলেম-উলামাদের জীবনী অধ্যয়ন আমার কাছে প্রিয়। কারণ তাদের জীবনীতে পাওয়া যায় উম্মাহর সত্যিকার আদব-আখলাক ও আচার আচারণ। (জামে আল-বয়ান ওয়া ফাযলিহি : ইবনু আবদিল বির)

তাদের সীরাত বা জীবনী পাঠ করে মানুষ ইখলাছ অবলম্বনে উদ্বুদ্ধ হবে অবশ্যই।

১০- ইখলাছকে জীবনের একটি লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা :

ইখলাছ অবলম্বন করতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা অনেক। কিন্তু সত্যিকার মুখলিছদের সংখ্যা খুবই কম। এর কারণ ইখলাছ অবলম্বনে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা ইখলাছকে জীবনের একটি লক্ষ্য হিসেবে নিতে পারেনি। একে একটি লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলে এর অনুশীলনের প্রশ্ন আসে, মুহাসাবা বা আত্মসমালোচনার বিষয় আসে। এ ভাবনাগুলো ইখলাছ অবলম্বন করতে সহায়তা করে। যদি কেউ এটাকে অতিরিক্তি সওয়াবের বিষয় বা নফল কাজ হিসেবে মুল্যায়ন করে, তাবে সে হয়ত কখনো ইখলাছ অবলম্বনে সফল হতে পারবে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন