HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

লেখকঃ ড. মোঃ আবদুল কাদের

প্রথম পরিচ্ছেদ: আন্তঃধর্মীয় সংলাপের সংজ্ঞা
সংলাপ এর পরিচয়

বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্যে ‘সংলাপ’ পদবাচ্যটির ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। বাংলা ভাষায় এটি বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়; যা দুটি শব্দ (সম্+লপ্+অ)- [সম্পাদকমন্ডলী, বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পরিমার্জিত সংস্করণ (ঢাকা: চতুর্থ মুদ্রণ, ২০০৩) পৃ.১১০২।]এর সমষ্টি। এর অর্থ: আলাপ, কথোপকথন, নাটকের চরিত্রসমূহের পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা [প্রাগুক্ত।] ইত্যাদি। সংলাপ শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ‘সং’ শব্দের অর্থ সম বা সমান [মি.যোসেফ বিশ্বাস, জাতীয় সংলাপ সেমিনার ১৯৯২-এর সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট, (মাসিক মঙ্গলবার্তা, ২য় বর্ষ ২য় সংখ্যা) পৃ.২৩।]। ইংরেজিতে ‘সংলাপ’ এর প্রতিশব্দ ডায়ালগ (Dialogue) ব্যবহৃত হয়। এ প্রসঙ্গে: সিলভানো গারেল্লে স্বীয় English-Bengali Christian Terminology নামক বইতে এভাবে উল্লেখ করেন: Dialogue: আলাপ-আলোচনা; কথোপকথন, সংলাপ [সিলভানো গারেলেস্না ও সন্তোষ মন্ডল, English-Bengali Christian Terminology, পৃ, ১০২।]। আরবীতে সংলাপ-এর প্রতিশব্দ ‘আল-হিওয়ার’ ( الحوار ) ব্যবহৃত হয়। ‘হিওয়ার’ ( حوار ) শব্দটি الحور ধাতুমূল থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ কোনো কিছু থেকে প্রত্যাবর্তন করা ( الرجوع عن الشيء ); কোনো কিছু বৃদ্ধির পর তা আবার কমে আসা ( النقصان بعد الزيادة ) অর্থ্যাৎ পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফেরত আসা [মুহাম্মদ শামছুদ্দীন খাজা, আল হিওয়ার আদাবুহু ওয়া মুনতালাকাতুহু ওয়া তারবিয়াতুল আবনাই আলাইহি, (রিয়াদ: মারকাজুল মালিক আব্দুল আযীয লিল হিওয়ার আল ওয়াতানী, ২য় সংস্করণ, ২০০৮ খ্রি.) পৃ.১৭।]। কুরআন মাজীদে এ অর্থটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় সূরা ইনশিকাকে। মহান আল্লাহ বলেন: ﴿ إِنَّهُۥ ظَنَّ أَن لَّن يَحُورَ ١٤ ﴾ [ الانشقاق : ١٤ ] “নিশ্চয় সে মনে করেছে যে, তার কখনই পরিবর্তন নেই।” আলোচ্য আয়াত প্রসঙ্গে আল্লামা শাওকানী বলেন: ‘লাঁই-ইয়াহূরা’ ( لن يحور ) এর অর্থ হল: লান-ইয়ারজিআ ( لن يرجع ) “সে কখনই ফিরে যাবে না”। [আশ-শাওকানী, মুহাম্মদ আলী, ফাতহুল কাদীর, সূরা ইনশিকাকের ১৪ নং আয়াতের তাফসীর, খ ৭, তা বি, পৃ. ৪৫৪।]

পারিভাষিক দিক থেকে ‘সংলাপ’ এর বিভিন্ন অর্থ লক্ষ্য করা যায়। সংলাপ হল নিজের সত্যতা, ধর্মীয় মূল বিশ্বাস, ন্যায্যতা, তথা সমুদয় মূল্যবোধ বজায় রেখে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও মহানুভবতা প্রদর্শন করে পারস্পরিক যে আলাপ সহভাগিতা করা হয়, তাই সংলাপ। [মি. যোসেফ বিশ্বাস, জাতীয় সংলাপ সেমিনার ১৯৯২-এর সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট, প্রাগুক্ত, পৃ.২৩।]

‘সংলাপ’ হচ্ছে, অন্যদেরকে বুঝবার বাসনায় তাদেরকে শ্রবণের সামর্থতা [সম্পাদকীয়, দ্বিমাসিক মঙ্গলবার্তা, (যশোর, জাতীয় ধর্মীয় সামাজিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র, ১০ম বর্ষ, ৬সংখ্যা, নভেম্বর-ডিসেম্বর, ২০০৫) পৃ.১।] ও বিবেকের আদান-প্রদানের প্রকাশ [প্রাগুক্ত।]।

‘সংলাপ’ মানে একজন অন্যজনের সাথে অন্তর হতে কথা বলা ও তার কথা শোনা। এর অর্থ পারস্পরিক দেওয়া-নেওয়া, পারস্পরিক আদান-প্রদান, ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস, অভিজ্ঞতার পারস্পরিক সহভাগিতা। [সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত, অধিবেশন১৪: সংলাপ, দ্বিমাসিক মঙ্গলবার্তা, (যশোর, জাতীয় ধর্মীয় সামাজিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র, ২য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, মে-জুন, ১৯৯৭)পৃ৬২।]

আন্তঃধর্মীয় সংলাপ পরিচিতি

সাধারণত বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যকার সংলাপই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ। ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, সম্মান প্রদর্শনপূর্বক পারস্পরিক যে ধর্মীয় যে আলোচনা করা হয়; তাই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ। এ প্রসঙ্গে খালিদ মুহাম্মদ আল-মুগামিসি বলেন:

هو حديث بين طرفين او اكثر حول قضية معينة، الهدف منها الوصول إلى الحقيقة، بعيدا عن الخصومة والتعصب، بل بطريقة علمية إقناعية، ولا يشترط فيها الحصول على نتائج فورية .

‘মোলিক সত্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দু’ বা ততোধিক ব্যক্তির মাঝে পারস্পরিক এমন আলাপ-আলোচনা যা প্রজ্ঞাপূর্ণ পন্থায় পরিচালিত এবং ঝগড়া বিবাদ ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ প্রীতিমুক্ত এবং তাৎক্ষণিক ফলাফল লাভের আকাংখা বিমুক্ত [খালিদ মুহাম্মদ আল-মুগামিসি, আল হিওয়ার আদাবুহু ওয়া তাতবিকাতুহু ফীত তারবিয়াতুল ইসলামিয়্যাহ, (রিয়াদ:মারকাজুল মালিক আব্দুল আযীয লিল হিওয়ার আল ওয়াতানী, ১ম সংস্করণ, ১৪২৫হি.) পৃ ২২।]।

ড. মুহাম্মদ আলী জা‘লুক আরো বলেন,

حديث بين طرفين او اطراف عدة لعرض وجهات النظر فيهم حول مسألة تنازع عليها، بقصد التوصل إلى حل مناسب، او نتيجة مناسبة .

‘সংলাপ’ হল বিরোধপূর্ণ কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ অথবা কাছাকাছি সমাধানে পৌঁছার লক্ষ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মাঝে কথোপকথন। [মুহাম্মদ শামছুদ্দীন খাজা, প্রাগুক্ত, পৃ১৭।]

আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি

সাম্প্রতিককালে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের ন্যায় আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি (Inter Religion Hermony) পরিভাষাটিও অত্যন্ত সুপরিচিত। আন্তঃসংলাপের পথপরিক্রমায় চূড়ান্তভাবে অর্জিত হয় আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি। বিশ্বায়নের এ যুগে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম যারাই নিজের ধর্মের পাশাপাশি অন্য ধর্মকে আন্তরিকভাবে অধ্যয়ন করেছেন তাদের প্রায় সবাই আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য কাজ করেছেন এবং করছেন। সারা পৃথিবীতে আজ অনেক খ্যাতনামা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ববিদ তাদের লেখা ও বক্তৃতার মাধ্যমে ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি, ভণ্ডামি ইত্যাদি দূর করার চেষ্টায় নিয়োজিত। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ড. মহানামব্রত ব্রক্ষ্মাচারী, স্বামী অক্ষরানন্দ, সিস্টার ইউজিনিয়া, অধ্যক্ষ দেওয়ান মুহম্মদ আজরফ প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের দুইজন অধ্যাপক আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে ছিলেন পথিকৃৎ। এরা হলেন ড. গোবিন্দ্রচন্দ্র দেব ও সাইয়েদ আব্দুল হাই। ভারতের ড. রাইমু- পানিকর, ড. এমন. এসা. এসা. রমন, ইংল্যান্ডের ড. কিনেথ ক্রাগ, ড. ফ্রান্সিস কার্ক, জাপানের নামামোরা হাজিমি, জার্মানি ড. সি. ডবিস্নউ, ট্রল, ইতালির ড. ফ্রান্সিস জান্নিনি, আমেরিকার ড. মোঃ আইয়ুব, ড. হুস্টান স্মিথ এবং ড. ক্যান্টওয়েল স্মিথের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এদের প্রত্যেকই মনে করেন যে, আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমেই ধর্মীয় সম্প্রীতির পথ অনেকটা সুগম হয়। [ড.আজিজুন্নাহার ইসলাম ও ড. কাজী নূরূল ইসলাম, তুলনামূলক ধর্ম ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, (ঢাকা:বাংলা একাডেমী, )পৃ৬৫-৬৬।]

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্দেশ্য

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্দেশ্য হলো পরস্পরকে জানা। এর উদ্দেশ্য অন্য ধর্মকে জয় করা নয়। অন্য ধর্মের সাথে সম্পূর্ণ একমত হয়ে বিশ্বজনীন ধর্ম প্রতিষ্ঠাও এর উদ্দেশ্য নয়। এর উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন ধমের্র মধ্যে অজ্ঞতাজনিত যে বিরোধ আছে তার মধ্যে সেতু বন্ধন রচনা করা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিকে অনুধাবন করা। যার ফলে প্রত্যেকেই তার নিজেদের ভাষায় নিজস্ব বক্তব্যকে ব্যক্ত করতে পারবে [প্রাগুক্ত।]। আধুনিক ধর্মতত্ত্ববিদ ড. কাজী নুরুল ইসলাম স্বীয় গবেষণা প্রবন্ধে তুলনামূলক ধর্ম ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্দেশ্য এভাবে ব্যক্ত করেন, ‘‘তুলনামূলক ধর্ম ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্দেশ্য হচ্ছে একাত্মতা নয় বরং ঐক্য ও উপলব্ধি, কর্তৃত্ব বা প্রভুত্ব নয় বরং উন্নয়ন। সংলাপের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিটি ব্যক্তি-হৃদয়ে অন্য সকলের জন্য কিছু জায়গা সৃষ্টি করা, সহানুভূতির উন্মেষ ঘটানো। [প্রাগুক্ত।]

অতএব, বলা যায় যে, বিভিন্ন ধর্মানুসারীর মধ্যে সংলাপের উদ্দেশ্য কোনো ধর্মকে জয় করা নয়, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয়, বা সামগ্রিক চুক্তি সম্পাদন বা সর্বজনীন ধর্মপ্রতিষ্ঠাও নয়; বরং বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যকার পারস্পরিক অজ্ঞানতা ও ভ্রান্ত ধারণার ফলে সৃষ্ট বিশাল শুণ্যতার ক্ষেত্রে একটা সেতু নির্মাণ করে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করার ব্যবস্থা করা। বস্তুত, আন্তঃধর্মীয় সংলাপের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো, প্রত্যেককে তার নিজের কথা বলতে দেওয়া এবং নিজস্ব উক্তির মাধ্যমে স্ব স্ব অন্তর্দৃষ্টি বা মর্মকথা প্রকাশ করতে দেওয়া। [প্রাগুক্ত।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন