HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

লেখকঃ ড. মোঃ আবদুল কাদের

তৃতীয় পরিচ্ছেদ: আন্তঃধর্মীয় সংলাপের শরয়ী বিধান
আল-কুরআন মহান আল্লাহর বাণী। বিশ্বের সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ ও বিশুদ্ধতম গ্রন্থ। সংলাপের শর‘ঈ মর্যাদা বা ভিত্তি, বিষয়বস্তু, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, কৌশল ও পদ্ধতিসমূহ, মূলনীতি, কাদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে ইত্যাদি বিষয়ে আল-কুরআন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে। আল-কুরআন মুসলিমদেরকে এভাবে উৎসাহ প্রদান করে মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ فَمَنۡ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡعِلۡمِ فَقُلۡ تَعَالَوۡاْ نَدۡعُ أَبۡنَآءَنَا وَأَبۡنَآءَكُمۡ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمۡ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمۡ ثُمَّ نَبۡتَهِلۡ فَنَجۡعَل لَّعۡنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلۡكَٰذِبِينَ ٦١ ﴾ [ ال عمران : ٦١ ]

“ঈসা সম্বন্ধে তোমার সাথে যে তর্ক করে তাকে বল, এস আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রগণকে ও তোমাদের পুত্রগণকে, আমাদের নারীগণকে ও তোমাদের নারীগণকে আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের তারপর অন্তর দিয়ে প্রার্থনা করি, বিনীত আবেদন করি এবং রাখি মিথ্যাবাদীদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। [.আল-কুরআন, সূরা আলে-ইমরান ৩: ৬১।]

আল-কুরআনের অনুপম প্রেরণায় উজ্জীবিত ইসলামে বিশ্বাসীগণ ভিন্ন বিশ্বাসীদের ধর্মীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ উৎসাহিত করেছে। মুসলিমরা সাধারণত কখনো কারোর ধর্মকে দমন করে রাখে নি বা ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে নি, সম্মান দেখিয়েছে। ইসলামী সাম্রাজ্যে সব নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ ছিল। বিভিন্ন ধর্মীয় পন্ডিতদের উপস্থিতিতে আন্তঃধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মুসলিম খলিফা হারুন অর রশীদ ৮ম শতাব্দির শেষের দিকে বিভিন্ন ধর্মের স্কলার নিয়ে আলোচনা করতেন ধর্মনীতি। বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মীয় মুল্যবোধের প্রতি যথাপোযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন এবং সংলাপীয় পদ্ধতিতে কুরআনের অবতরণ কুরআনুল কারীমের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

সংলাপের ভিত্তি বা শরয়ী মর্যাদা

জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে ইসলামকে গোটা মানবজাতির কাছে সার্বজনীনরূপে বিশ্বব্যাপী প্রচার, প্রসার করতে ইসলামে যে সকল আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে সংলাপ বা ‘হিওয়ার’ তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইসলাম সংলাপকে শুধু সমর্থনই করে না বরং সংলাপের ভিত্তি, বিষয়বস্তু, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কৌশল ও পদ্ধতিসমূহ, মুলনীতি, কাদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে ইত্যাদি বিষয়ে নান্দনিক যে দিক-নিদের্শনা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপ এর শর‘ঈ মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ ١٢٥ ﴾ [ النحل : ١٢٥ ]

“আপনি আপনার রবের পথে আহ্বান করুন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশসমূহের দ্বারা এবং তাদের সহিত উত্তম পদ্ধতিতে বির্তক করুন। আপনার রব, তার পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়, সে সম্বন্ধে বিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি সবিশেষ অবগত।” [. আল-কুরআন, সূরা আন-নাহল: ১২৫-১২৬।]

উল্লেখিত আয়াতে কারীমায় বর্ণিত আদেশসূচক ক্রিয়াপদ “জা-দিলহুম” পদবাচ্যটির উৎপত্তি হয়েছে ‘জাদলুন’ ধাতুমূল থেকে। এর অর্থ ঝগড়া করা, বিবাদ করা, বির্তক করা। অর্থাৎ আপনি তাদের সাথে বির্তক করুন সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। আদেশসূচক এ ক্রিয়াপদকে কেউ কেউ সাধারণ পর্যায়ের নির্দেশ মনে করলেও এর উপর গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, সংলাপ শুধু জায়েযই নয় বরং ফরয এবং সংলাপের ব্যাপারে আমরা আদিষ্ট। উল্লেখিত আয়াতে কারীমায় একই সাথে দুটি আদেশসূচক বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে, যাতে কুরআন মাজীদের অভিনব বাচনভঙ্গি ও অলঙ্কারিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। আরবীতে আদেশ বুঝানোর জন্য ফি‘লুল আমর ( فعل الأمر ) বা আদেশসূচক ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। উক্ত আয়াতে কারীমাতেও অনুরূপ আদেশ বুঝানোর জন্য যথাক্রমে উদ‘উ ( ادع ) এবং জাদিলহুম جادلهم শীর্ষক দুটি আদেশসূচক ক্রিয়া উল্লেখ হয়েছে; যা ফরয হওয়া বা আবশ্যক হওয়াকে বুঝায়।

মুসলিম বিশ্বের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ড. ইউসুফ আল-কারযাভী পবিত্র মক্কা নগরীতে রাবেতা আলম আল ইসলামীর উদ্দেশ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন: “সংলাপের ব্যাপারে আমরা আদিষ্ট। কেউ কেউ বলেন, সংলাপ জায়েয। আমি আরেকটু বাড়িয়ে বলবো সংলাপ ফরয। আমরা সংলাপের ব্যাপারে নির্দেশিত। কেননা এটা দাওয়াতেরই একটি অংশ। সূরা আন-নাহলে যে আয়াতে দাওয়াতের নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে আপনি আপনার রবের পথে আহ্বান করুন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশসমূহের দ্বারা এবং তাদের সহিত উত্তমপদ্ধতিতে বির্তক করুন। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে উত্তম উপদেশ ও জ্ঞানগর্ভ কথা এটি মুসলিমদের জন্য যারা দ্বীনকে সমর্থন করে; আর উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্কটি হল দীনের বিরোধীদের জন্য। ইসলামের সমর্থকদের জন্য উত্তম উপদেশ যথেষ্ট। কিন্তু ইসলামকে যারা সমর্থন করে না তাদের ব্যাপারে উত্তম উপদেশ যথেষ্ট নয় বরং তাদের সাথে বির্তক করতে হবে উত্তম পন্থায়। বিতর্কের সঠিক ব্যাপার হল উত্তম পন্থায়। অর্থাৎ নম্র পন্থায় ভদ্রোচিতভাবে, এমন ভাষায় যা অন্তরে দাগ কাটে ।

আন্তঃধর্মীয় সংলাপে আল-কুরআনের পদ্বতি

মার্জিত সম্বোধন

মার্জিত ‘সম্বোধন’ সংলাপের প্রাণ। একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিষয়ের গুরুত্ব বুঝানো ও শ্রোতামণ্ডলীর মনোযোগ আকর্ষণই এর অন্যতম লক্ষ্য। আল-কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সংলাপগুলোতে যে সকল ‘সম্বোধন’ বিদ্যমান সেগুলোতে মানবজাতির জন্য রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ দিকনিদের্শনা। এক্ষেত্রে কোনরূপ পার্থক্য ছাড়াই জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষকে মহান আল্লাহ বিভিন্নভাবে সম্বোধন করেছেন।

আন্তঃধর্মীয় সংলাপে সম্বোধনের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ কখনো ইয়া আয়্যুহান-নাছ ( يايها الناس ) বা হে মানবজাতি! কখনো ইয়া আয়্যুহান নাছ( يايها الناس )-এর পরিবর্তে ‘‘ইয়া আয়্যুহাল ইনসান’’ ( يايها الإنسان ) কখনো বা ইয়া আহলাল কিতাব يا اهل الكتاب বা হে কিতাবধারী! বলে সম্বোধন করেছেন। কুরআন মাজীদে ‘ইয়া আয়্যুহান-নাছ ( يايها الناس ) বা হে মানবজাতি! শীর্ষক পদবাচ্যটি ৯টি সূরার ১৯টি স্থানে ইয়া আয়্যুহাল ইনসান’’ ( يايها الإنسان ) শীর্ষক পদবাচ্যটি ২টি সূরায় ২টি স্থানে ও ইয়া আহলাল কিতাব يا اهل الكتاب বা হে কিতাবধারী! শীর্ষক পদবাচ্যটি ৩টি সূরার ১২টি স্থানে উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়া সম্বোধন ব্যতিরেকে শুধু ‘আন-নাছ’ (মানবজাতি) এ শব্দটি ৫৪ সূরায় ২৪০ স্থানে উল্লেখ রয়েছে। [. আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, মায়েদা।]

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের ধারাবাহিকতায় আল-কুরআনে বর্ণিত মহান আল্লাহর অনুপম ও হৃদয়স্পর্শী সম্বোধন নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। অবিশ্বাসীদের প্রতি আল-কুরআনের মর্যাদাপূর্ণ ও মার্জিত সম্বোধন মানব হৃদয়কে স্পর্শ করে। কুরআনে কারীমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কারো প্রতি অসম্মানজনক আচরণমূলক কোনো শব্দও খুঁজে পাওয়া যায় না।

কৌশল ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপস্থাপন

সংলাপের উপাদানসমূহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার সাথে বক্তব্য উপস্থাপন। মহান আল্লাহ বলে,

“কৌশল ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ দ্বারা তুমি তোমার রবের পথে আহ্বান কর এবং তাদের সাথে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক কর।” [. আল-কুরআন, সূরা আল-নাহল: ১২৫-১২৬।]

সূরা আন-নাহল-এর উল্লেখিত আয়াতে কারীমায় দাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালাসহ মুসলিম এবং অমুসলিমদের মাঝে অনুষ্ঠিতব্য সংলাপের নীতিমালা ব্যক্ত হয়েছে; যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ তাদের সাথে দাওয়াতের পদ্ধতি হচ্ছে, নম্র পন্থায়, ভদ্রোচিতভাবে, এমন ভাষায় যা অন্তরে দাগ কাটে যেমন কুরআন আমাদের শিখিয়েছে।

অযাচিত তর্ক-বিতর্ক বর্জন

অযাচিত তর্ক-বিতর্ক মানুষের সম্পর্ক বিনষ্ট করে এবং হৃদয়ের গভীর থেকে ভালবাসার সম্পর্ক ও সৌহার্দ্য ধ্বংস করে। তাই সব সময়েই এ ধরণের তর্ক-বিতর্ক পরিত্যাজ্য। আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে ফলপ্রসু করতে হলে অযাচিত তর্ক-বিতর্ক বর্জন আবশ্যক। সংলাপে অংশগ্রহণকারী চাই সে ইয়াহূদী বা খ্রিষ্টান হোক বা ভিন্ন বিশ্বাসের হোক সকলের সাথে অযাচিত তর্ক বিতর্ক পরিহার করতে নির্দেশ প্রদান করে ইসলাম। সূরা আনকাবুতে এ প্রসঙ্গটি এভাবে এসেছে:

﴿ ۞وَلَا تُجَٰدِلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنۡهُمۡۖ وَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱلَّذِيٓ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَأُنزِلَ إِلَيۡكُمۡ وَإِلَٰهُنَا وَإِلَٰهُكُمۡ وَٰحِدٞ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ٤٦ ﴾ [ العنكبوت : ٤٦ ]

‘‘তোমরা উত্তম পন্থা ব্যতীত কিতাবীদের সাথে বিতর্ক করবে না, তবে তাদের সাথে করতে পার, যারা তাদের মধ্যে সীমালংঘনকারী এবং বল, ‘আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাকে আমরা বিশ্বাস করি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ একই এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী।’’ [. সূরা আল আনকাবুত ২৯:৪৬।]

উল্লেখিত আয়াতে কারীমায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপের এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনিদের্শনা ব্যক্ত করা হয়েছে। আহলে কিতাব বা ইয়াহূদী খ্রিষ্টানদের সাথে অকারণে জাদল (তর্ক-বিতর্ক) করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম রাযী স্বীয় তাফসীর আল-কাবীর-এ উল্লেখ করেন: আল-জিদাল বা বিতর্ক দু’প্রকার: ‘হক’ বা সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তর্ক বিতর্ক এবং বাতিল মিথ্যা প্রতিষ্ঠার জন্যে তর্ক-বিতর্ক। সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে জিদাল করা হয় তা মূলত: নবী রাসূলদের পেশা। আর মিথ্যা প্রতিষ্ঠায় যে তর্ক-বিতর্ক তা নিন্দনীয়।’ তাই জিদাল বা তর্ক করতে হলে অত্যন্ত সুন্দর পদ্ধতিতে হক প্রতিষ্ঠার জন্য করতে হবে, শুধুমাত্র তর্কের জন্য তর্ক যেন না করা হয়।

বিনয়-নম্রতা

বিনয়-নম্রতা সংলাপের এক অন্যতম উপাদান। সংলাপকে ফলপ্রসু ও অর্থবহ করে তুলতে বিনয়-নম্রতা ও কোমলতার অনুসরণ অপরিহার্য। বিশেষ করে আন্তঃধর্মীয় সংলাপে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এর প্রসঙ্গে আল-কুরআনে বর্ণিত মূসা আলাইহিস সালাম ও হারুন আলাইহিস সালাম এবং ফিরাউনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য সংলাপ কিভাবে পরিচালিত হবে তার নির্দেশনা ব্যক্ত হয়েছে সূরা ত্বহায়। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ ٱذۡهَبۡ أَنتَ وَأَخُوكَ بِ‍َٔايَٰتِي وَلَا تَنِيَا فِي ذِكۡرِي ٤٢ ٱذۡهَبَآ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ إِنَّهُۥ طَغَىٰ ٤٣ فَقُولَا لَهُۥ قَوۡلٗا لَّيِّنٗا لَّعَلَّهُۥ يَتَذَكَّرُ أَوۡ يَخۡشَىٰ ٤٤ ﴾ [ طه : ٤٢، ٤٤ ]

‘‘তুমি ও তোমার ভ্রাতা আমার নিদের্শনসহ যাত্রা কর এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করিও না। তোমরা উভয়ে ফির‘আউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।’’ [সূরা- ত্বা-হা: ৪২-৪৪।]

যে সকল বিষয় ঐক্যমত রয়েছে সেগুলি থেকেই সংলাপের শুভ সূচনা

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনিদের্শনা হল, সংলাপে অংশগ্রহণকারী পক্ষদ্বয়ের কাছে যে সকল বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে সেগুলো থেকেই সংলাপের সূচনা হওয়া। সূরা আশ-শু‘আরা-এর ﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ٢١٤ ﴾ [ الشعراء : ٢١٤ ] “এবং আপনি আপনার নিকট আত্মীয়-স্বজনদেরকে ভীতি প্রদর্শন করুন।” শীর্ষক আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতের প্রেক্ষিতে কুরায়শদের সাথে সাফা পর্বতের পাদদেশে তাদেরকে আহ্বান পূর্বক একটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ করেন; যা মূলত: দিকনির্দেশনাপূর্ণ একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ। এ প্রসঙ্গটি ইমাম বুখারী ইবন আব্বাস রা-এর উদ্ধৃতি এভাবে উল্লেখ করেন, তিনি বলেন:

لَمَّا نَزَلَتْ : { وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ } [ الشعراء : 214] ، صَعِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الصَّفَا، فَجَعَلَ يُنَادِي : «يَا بَنِي فِهْرٍ، يَا بَنِي عَدِيٍّ» - لِبُطُونِ قُرَيْشٍ - حَتَّى اجْتَمَعُوا فَجَعَلَ الرَّجُلُ إِذَا لَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يَخْرُجَ أَرْسَلَ رَسُولًا لِيَنْظُرَ مَا هُوَ، فَجَاءَ أَبُو لَهَبٍ وَقُرَيْشٌ، فَقَالَ : «أَرَأَيْتَكُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خَيْلًا بِالوَادِي تُرِيدُ أَنْ تُغِيرَ عَلَيْكُمْ، أَكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟» قَالُوا : نَعَمْ، مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلَّا صِدْقًا، قَالَ : «فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيدٍ»

অর্থাৎ যখন ﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ٢١٤ ﴾ [ الشعراء : ٢١٤ ] শীর্ষক আয়াতে কারীমা নাযিল হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পবর্তে আরোহন করে কুরায়শদের দুই গোত্রকে এভাবে আহ্বান করতে থাকেন, ওহে বনী ফিহর। ওহে বনী আদী! অর্থাৎ ওহে ফিহরের বংশধর! ওহে ‘আদীর বংশধরেরা! এরপর উভয় গোত্রের লোকজন আহ্বানে সাড়া দিয়ে একত্রিত হল। যারা উপস্থিত হতে পারল না তারা স্বীয় প্রতিনিধি প্রেরণ করল যাতে তারাও আহুত বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে। গোত্রপতি আবু লাহাবও সেখানে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেই যে, পাহাড়ের পাদদেশে এমন এক অশ্বরোহী বাহিনী অবস্থান করছে যারা তোমাদেরকে নিশ্চিত আক্রমন করবে, তোমরা কি আমার এ সংবাদটি বিশ্বাস করবে? তারা বলল; হ্যাঁ, আমরা সকলেই বিশ্বাস করব। কেননা তোমার ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা এ যে, তুমি সত্যবাদী। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আখিরাতের কঠিন শাস্তির ব্যাপারে আমি তোমাদের জন্য একজন ভীতি প্রদর্শনকারী।’ [বুখারী, হাদীস নং ৪৭৭০।]

উল্লেখিত আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় বর্ণিত হাদীসে বনী ‘আদী ও বনী ফিহর ও কুরায়শদের অন্যান্য প্রতিনিধিদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সংলাপ বর্ণিত হয়েছে তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ বিষয়ের উল্লেখের মাধ্যমে সংলাপ আরম্ভ করেছেন যে বিষয়ে সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের উভয় পক্ষ ঐকমত্য ছিলেন। সে বিষয়টি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সত্যবাদিতা।

ক্ষমা-মার্জনা, উদারতা ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন

পরমত সহিষ্ণুতা সংলাপের অনন্য ভূষণ। পারস্পরিক ক্ষমা, মার্জনা, উদারতা ইত্যাদি গুণাবলীর মাধ্যমেই পরমত সহিষ্ণুতা অর্জিত হয়। উল্লিখিত গুণাবলি অর্জনে মহান আল্লাহ এভাবে নির্দেশ করেছে:

﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [ الاعراف : ١٩٩ ]

তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকার্যের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদিগকে এড়িয়ে চল। [. আল-কুরআন, সূরা আল আরাফ ৭: ১৯৯।]

পারস্পরিক ক্ষমা, মার্জনা, উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতা অর্জনে ইসলামের নির্দেশনা সুষ্পষ্ট। ইসলামের প্রাথমিক যুগে একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদুল হারামে অবস্থান করছিলেন। এ সময় কতিপয় মুশরিক দলবদ্ধভাবে ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সমবেত হন এবং তারা নানাভাবে তর্কবিতর্ক করতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জ্ঞানগর্ভ, ধৈর্যপূর্ণ ও মনোজ্ঞ আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

পরমত অনুসারীর প্রতি গালমন্দ বা কটাক্ষতা বর্জন

কটাক্ষ বা গালমন্দ মানবমর্যাদা পরিপন্থী। আত্মসম্মানে আঘাত হানে এবং হৃদয়ে গভীর যখম সৃষ্টি করে। সংলাপের কাংখিত সফলতা অর্জনে গালমন্দ ও কটাক্ষতা পরিত্যাজ্য। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ وَلَا تَسُبُّواْ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّواْ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٖۗ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمۡ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرۡجِعُهُمۡ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٠٨ ﴾ [ الانعام : ١٠٨ ]

আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না। কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞনতাবশত আল্লাহকেও গালি দিবে। [. আল-কুরআন, সূরা আল আনআম ৬: ১০৮।]

ইসলাম অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি খারাপ ব্যবহার পরিহারের নির্দেশ প্রদান করে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের শির্ক, কুফর, দুর্নীতি ইত্যাদি কজের গঠনমূলক সমালোচনা করা হলেও তাদেরকে গালি-গালাজ, কটুক্তি বা দুর্ব্যবহার সর্বোতভাবে বর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে।

বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রামাণ্য যুক্তি উপস্থাপন

সংলাপের কাংখিত সফলতা অর্জনে প্রয়োজন প্রামাণ্য, নির্ভরযোগ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি ও প্রামাণাদি উপস্থাপন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী:

﴿ قُلۡ أَتَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗاۚ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٧٦ ﴾ [ المائ‍دة : ٧٦ ]

‘‘বল, তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদাত কর যারা তোমাদের কোনো ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা নেই? আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’’ [. আল-কুরআন, সূরা আল মায়িদা: ৭৬।]

অতএব, যে ধর্মের সাথে সংলাপ হবে তাকে অবশ্যই সে ধর্ম সম্পর্কে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান রাখতে হবে। শুধুমাত্র ধর্মীয় জ্ঞান সেখানে যথেষ্ট মনে করার কোনো উপায় নেই।

জ্ঞানের গভীরতা

নিজ বিশ্বাসসহ ভিন্ন বিশ্বাসের প্রতি জ্ঞানের গভীরতা সংলাপের কাংখিত সফলতা অর্জনের জন্য অত্যাবশ্যক। আল-কুরআন প্রসঙ্গটি এভাবে ব্যক্ত করে:

﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِي ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَلَا هُدٗى وَلَا كِتَٰبٖ مُّنِيرٖ ٨ ﴾ [ الحج : ٨ ]

“মানুষের মধ্য কেউ কেউ আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে; তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথ নির্দেশ, না আছে কোনো দীপ্তিমান কিতাব। [আল-কুরআন, সূরা হাজ্জ ২২:৮।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন