HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
লেখকঃ ড. মোঃ আবদুল কাদের
৭
পঞ্চম পরিচ্ছেদ: সুন্নাতে নববীতে আন্তঃধর্মীয় সংলাপরাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও মুশরিকদের সাথে যেসব মুজাদালাহ বা সর্বোত্তম পন্থায় যুক্তি উপস্থাপন করেছেন সেগুলোর কিছু দৃষ্টান্ত নিম্নে তুলে ধরা হলো:
ইয়াহূদীদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিতর্ক:
মদীনায় বিভিন্ন সময়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের সাথে ধর্মীয় বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। কারণ তারা তাঁর আশে-পাশেই থাকত। তারাও তাঁর সাথে ধর্মীয় বিষয়ে অনেক মতবিনিময় করত এবং বিভিন্ন ভ্রান্ত প্রশ্ন ও সন্দেহের অবতারণা করত। আর তিনি রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোর অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ জওয়াব দিতেন। যার কিছু নমূনা নিম্নে উপস্থাপিত হলো:
আব্দুল্লাহ ইবন্ সালাম এর সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথোপকথনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে,
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম শুনলেন যে, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করেছেন। তিনি তাঁর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করব যা নবী ব্যতীত কেউ উত্তর দিতে পারে না। তারপর তিনি বললেন, কিয়ামতের প্রথম আলামত কি? জান্নাতীরা প্রথম কোনো খাবার খাবে? সন্তান কিভাবে পিতার মত এবং কিভাবে তার মাতুলদের মত হয়?তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,আমাকে এই মাত্র জিবরাঈল তা জানিয়েছে। তখন আব্দুল্লাহ বললেন,ইয়াহূদীদের নিকট এ ফেরেশতা তাদের শত্রু। তারপর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,কিয়ামতের প্রথম আলামত হচ্ছে,একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে নিয়ে যাবে। আর জান্নাতীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। আর সন্তান কারো সাদৃশ্য হওয়ার পিছনে যুক্তি হলো, যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য অগ্রণী হয় সন্তান পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীর বীর্য অগ্রণী হয় তখন সন্তান স্ত্রীর মত হয়। তখন তিনি বললেন,আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আপনি আল্লাহর রাসূল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদীরা মিথ্যুক জাতি, যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করার আগে আমার ইসলামের কথা তারা জেনে যায় তবে আমাকে মিথ্যুক বানিয়ে ছাড়বে। তারপর আব্দুল্লাহ ইয়াহূদীদের কাছে আসলেন এবং তাদের ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল: আমাদের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি এবং জ্ঞানী ব্যক্তির সন্তান। আমাদের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি এবং উত্তম ব্যক্তির সন্তান। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে? তারা বলল, আলস্নাহ্ তাকে এ ধরনের কাজ করা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। তখন আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম বের হয়ে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত হক কোনো মা‘বুদ নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলল,সে আমাদের সবচেয়ে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের সন্তান। এভাবে তারা তার উপর আক্রমনাত্মক কথা বলতে লাগল [ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৩২৯, ৩৯১১, ৩৯৩৮, ৪৪৮০।]।
আব্দুল্লাহ ইবন্ উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
‘‘ইয়াহূদীরা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে এসে বলল: তাদের মধ্যে একজন পুরুষ ও মহিলা যিনা করেছে। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন: তোমরা কি তাওরাতে রজম সম্পর্কে কিছু পেয়েছ?তারা বলল: ‘‘তাদেরকে অপমানিত করব এবং তাদেরকে বেত্রাঘাত করা হবে।’’তখন তাদের আব্দুল্লাহ ইবন্ সালাম বলেন: তোমরা মিথ্যা বলেছ, সেখানে রজমের কথা রয়েছে। তখন তারা তাওরাত নিয়ে এসে তা খুলে ধরল। অতঃপর তাদের একজন রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে আগের ও পরের বাক্যাবলী পাঠ করল। তখন আব্দুল্লাহ্ ইবন্ সালাম বললেন: তুমি হাত উঠাও। অতঃপর যখন হাত উঠানো হলো তখনি সেখানে রজমের আয়াত দেখা গেল। তখন তারা বলল: হে মুহাম্মাদ! আপনি সত্য বলেছেন। এতে রজমের আয়াত রয়েছে। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। আর তাদেরকে পাথর মারা হলো।’’ [প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৩৬৩।]
তাছাড়া, ধর্মীয় আলোচনার জন্য রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং ইহুদীদের ‘মিদরাস’ [প্রাগুক্ত।]-এর গমন করেছেন। এ আলোচনায় সাধারণত উলুহিয়্যাত-ঈশ্বরতত্ত্ব, ধর্মীয় গ্রন্থ, রাসূলতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরূপ পারস্পরিক আলোচনার ফলে আবদুল্লাহ ইবন সালাম,সা‘লাবা ইবন সাঈদ,আসাদ ইবন উসাইদ-এর মত প্রভাবশালী ইহুদী পন্ডিত ও নেতৃবৃন্দ ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
‘‘একবার রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের একটি শিক্ষায়তনে প্রবেশ করলেন যেখানে একদল ইয়াহূদী অবস্থান করছিল। তিনি তাদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করলেন। তখন নু’মান ইবন্ আমর এবং হারেস ইবন্ যায়দ বলেন: হে মুহাম্মাদ! তোমার দিন কোনটি?তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি ইবরাহীমের দীনের উপর। তখন তারা উভয়ে বলল: ইবরাহীম তো ইয়াহূদী ছিল। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে তাওরাত নিয়ে আস, আমাদের ও তোমাদের মাঝে সেটাকে ফয়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ কর। কিন্তু তারা উভয়ে তা করতে অস্বীকার করল। তখন আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন: ‘‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যাদেরকে কিতাবের অংশ প্রদান করা হয়েছিল?তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান করা হয়েছিল যাতে ওটা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়;তারপর তাদের একদল ফিরে দাঁড়ায়,আর তারাই পরাম্মুখ।’’ [ইবন্ হিশাম, আবদুল মালিক ইবনে হিশাম, আস-সীরাতুন নবওয়ীয়্যাহ, ২য় খ- (জর্দান: মাকতাবাতুল মানার, ১ম সংস্করণ, ১৪০৯ হি.), পৃ. ২৩০; তাবারী, প্রাগুক্ত, ষষ্ট খ-, পৃ. ২৭৭, আয়াতটি সূরা আলে ইমরানের ২৩ নং আয়াত।]
এ ছাড়াও ইয়াহূদীদের বিভিন্ন প্রতিনিধিদল রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসত, বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করত এবং বিতর্কে লিপ্ত হত [ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত, ২য় খ-, পৃ.২১৮-২১৯।]।
খ্রিষ্টানদের সাথে তাদের ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক:
খ্রিষ্টানদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের তুলনায় স্বল্প পরিমাণ ধর্মীয় বিতর্ক করেছেন। কারণ তারা মূলত মদীনা থেকে দূরে অবস্থান করত। ফলে মুসলিমদের সাথে তাদের খুব কম সাক্ষাত হতো। তারপরও যখনি কোনো প্রতিনিধিদল রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করত তখনি তারা ধর্মীয় বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হত। এক্ষেত্রে হাবশা ও নাজরানের খ্রিষ্টানদের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে।
সীরাতে ইবন্ হিশামে এ জাতীয় একর্টি ধর্মীয় সংলাপ এসেছে। যার বিষয়বস্তু হলো: খ্রিষ্টানগণ রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে ঈসা ইবন্ মারইয়াম সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করল। তারা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঈসা আলাইহিসসালামের পিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করল এবং তারা আল্লাহ্ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার অপবাদ ও মিথ্যা বলে বেড়াতে লাগল। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: ‘তোমরা জান যে, যত সন্তানই আছে তারা তাদের পিতার সদৃশ হয়? তারা বলল: অবশ্যই । তিনি বললেন: তোমরা কি জান না যে, আমাদের প্রভু চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই? অথচ ঈসার অস্তিত্ব বিলীন হবে?তখন তারা বলল: অবশ্যই। তিনি আরও বললেন: আমাদের রব সবকিছুর ধারক-বাহক,তিনি সবকিছুর সংরক্ষণ করেন ও রিযক দিয়ে থাকেন? তারা বলল: নিশ্চয়ই। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে ঈসা ইবন্ মারঈয়াম কি এগুলোর কোনো কিছু করতে সক্ষম? তখন তারা বলল: না। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা কি জান না যে, আসমান ও যমীনের কোনো সৃষ্টিই তাঁর কাছে গোপন নেই? তারা বলল: নিশ্চয়ই। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার প্রভু ঈসাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রেহেমের মধ্যে আকৃতি দান করেছেন। তিনি আরও বললেন: আর আমার প্রতিপালক খানা-পিনা করেন না এবং কোনো অপবিত্র কাজও ঘটান না?তখন তারা বলল: নিশ্চয়ই। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা কি জান না যে,অন্যান্য মহিলাদের মত ঈসাও মায়ের গর্ভে লালিত-পালিত হয়েছেন? তারপর অন্যান্য মহিলারা যেভাবে বাচ্ছা প্রসব করে তিনি তার মাও তাকে সেভাবে প্রসব করেছেন এবং অন্যান্য বাচ্ছাদের মত তাকেও খাওয়ানো হয়েছে। তারপর তিনি খাবারও খেয়েছেন,পানও করেছেন এবং অপবিত্রও হয়েছেন? তারা বলল: অবশ্যই। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে তোমরা যা ধারনা করছ তা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? এরপর তাদের সবাই চুপ হয়ে গেল। এ পরিপ্রেক্ষিতেই প্রথম থেকে আশির অধিক আয়াত নাযিল হয়। [ওয়াহেদী, আবুল হাসান আলী, আসবাবু নুযুলিল কুরআন (সৌদী আরব: দারুল কিবলাহ, ১৪০৪ হি.), পৃ.৯০-৯১।]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে,হাবশা থেকে একদল খ্রিষ্টান রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমণ করে। তারা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিভিন্ন দীনি প্রশ্ন করে দু’ধর্মের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে ইসলাম গ্রহণ করে [সীরাতে ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত, ২য় খ- , পৃ.৩৬।]।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদী ইবন্ হাতিমের সাথে তার দীন খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিতে পরাস্ত করে আল্লাহর দীন মানতে উদ্বুদ্ধ করেন। যার ফলশ্রতিতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ‘আদী ইবন্ হাতিম বলেন: ‘‘যখন আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন,তখন তাঁকে এমন প্রচন্ড আকারে ঘৃণা করলাম এবং তাঁর থেকে পালিয়ে যমীনের একপ্রান্ত রোমের পাশ্বস্থ আরবভূমিতে আশ্রয় নিলাম। তারপর আমি আমার প্রথম স্থানের চেয়েও সে স্থানে অবস্থান করাটা অত্যধিক অপছন্দ করলাম। তারপর আমি স্বয়ং বললাম, আমি যদি লোকটির কাছে যেতাম এবং তার কাছ থেকে কিছু শুনতাম তাহলে কেমন হয়। তারপর আমি মদীনায় আসলাম। মানুষের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে পড়ল। তারা বলাবলি করতে লাগল যে,আদী ইবন্ হাতিম আত-ত্বায়ী এসেছে। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ‘আদী! তুমি ইসলাম গ্রহণ কর তাহলে নিরাপত্তা পাবে। আমি বললাম আমি একটি দীনের উপর আছি। তিনি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার দীন সম্পর্কে আমি তোমার থেকেও অধিক জ্ঞাত। আমি বললাম: আপনি কি আমার দীন সম্পর্কে আমার থেকেও অধিক জ্ঞাত?তিনি বললেন: হাঁ। ‘আদী ইবন্ হাতেম বলেন: রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি তিনবার উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বললেন: তুমি কি ‘রন্ডকুচী’ নও? (অর্থাৎ এমন সম্প্রদায় যারা খ্রিষ্টান ও সাবেয়ী এ দু’ধরনের ধর্মের মধ্য পন্থার অনুসারী) আমি বললাম: অবশ্যই। তিনি বললেন: তুমি কি তোমার সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দাও না? আমি বললাম: হাঁ। তিনি বললেন: তুমি কি ‘লুটের সম্পদের চারভাগে এক ভাগ নাও না? আমি বললাম: নিশ্চয়ই। তিনি বললেন: কিন্তু এটা তো তোমার ধর্মমতে অবৈধ। ‘আদী ইবন্ হাতিম বলেন: এতে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। তারপর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সম্ভবত এটাই সম্ভবত তোমাকে আমাদের দীন থেকে দূরে রেখেছে, কারণ তুমি দেখতে পাচ্ছ যে, আমাদের এখানে অভাব-অনটন রয়েছে।’’ [ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, প্রাগুক্ত, ৪র্থ খ-, পৃ. ৩৭৮, ২৫৭-২৫৮।]
ইবনে কাইয়্যেম রাহেমাহুল্লাহ এ সমস্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীসের ভাষ্য এবং সীরাতের বিভিন্ন ঘটনা যেমন নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ধর্মীয় বিতর্ক এগুলোর শিক্ষা বর্ণনায় বলেন:
এ ঘটনা থেকে যে শিক্ষা আমরা পাই তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: আহলে কিতাবদের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক করা জায়েয বরং মুস্তাহাব। আবার ক্ষেত্রবিশেষে ওয়াজিবও যখন এটা স্পষ্ট হবে যে,এ আলোচনায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে তাদের অনেকেই ইসলামের সুমহান আদর্শ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। আর বুদ্ধিভিত্তিক ও জ্ঞান ভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন করে তাদের বিভিন্ন সন্দেহ ও প্রশ্নের অপনোদন করা প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় [ইবনুল কাইয়্যেম, যাদুল মা‘আদ ফি হাদয়ি খাইরিল ইবাদ, ৩য় খ-, পৃ. ৬৩৯।]।
তাছাড়া, মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের পর আরব-খ্রিষ্টানদের প্রধান কেন্দ্র-নাজরান থেকে একদল প্রতিনিধি মদীনায় আসেন। খ্রিষ্টানদের এক নেতার নেতৃত্বে চৌদ্দ জন পাদ্রীসহ ষাটজন প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেন। তারা ইসলাম ও খ্রিষ্টানধর্ম সম্পর্কে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাদের ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। [ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫০৮-৫১৭।] এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সূরা আলে-ইমরান অবর্তীণ হয়।
অনুরূপভাবে ইরানের আধিবাসী প্রখ্যাত সাহাবী সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও সত্যদীন অনুসন্ধানের জন্য বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে মদীনায় আসেন। তিনি জন্মসূত্রে ছিলেন মাজদাক ধর্মের অনুসারী। এ ধর্মমত তাঁকে পরিতৃপ্ত করে পারেনি। তাই তিনি খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু এতেও তিনি তাঁর কাঙ্ক্ষিত সত্য লাভে অসমর্থ হন। পরিশেষে মদীনায় রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করেন এবং বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ইসলামের সত্যতায় স্থিরচিত্ত হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। [প্রাগুক্ত, পৃ. ২১৭-২২৫।]
মুশরিকদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ধর্মীয় বিতর্ক:
বিভিন্ন বর্ণনায় প্রায়শই দেখা যায় যে, কতিপয় মুশরিক দলবদ্ধভাবে ধর্ম সম্পর্কে বিতর্ক-জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁর পাশে সমবেত হয়। মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। [ড. আহমদ শালাবী, আল-মানাহিজুল ইসলামিয়্যা, ১ম খ- (কায়রো : মাকতাবাতুন নাহদাতুল মিসরিয়্যা, ১৯৯৩), পৃ. ১৩৯।] তন্মধ্যে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
তুফাইল ইবন আমর আদ্-দাওসী ছিলেন ঘোর পৌত্তলিক। কেবল ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়ে তিনি মক্কায় রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি রাসূল রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সত্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করে কৃতার্থ হন। [ইবন হিশাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৪৭।] এভাবে অনেক পৌত্তলিক দলগত ও ব্যক্তিগতভাবে রাসূলের সাথে ধর্মালোচনায় মিলিত হন।
ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘‘হে কুরাইশ সম্প্রদায়! নিশ্চয় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদতে কোনো কল্যাণ নেই। কিন্তু কুরাইশগণ জানত যে, খ্রিষ্টানগণ ঈসা আলাইহিসসালামের ইবাদত করত। সুতরাং মুহাম্মাদ সম্পর্কে তুমি কি বলবে? তখন তারা মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বলল: হে মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তুমি কি বিশ্বাস করনা যে, ঈসা নবী ছিলেন এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের মধ্যে একজন ছিলেন? যদি তুমি তোমার কথায় সত্য হও তাহলে তাদের ইলাহও তো তোমাদের বক্তব্যমত হওয়া উচিত। তখন কুরআনে ইরশাদ হলো, যখন মারইয়াম-তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন আপনার সম্প্রদায় তাতে শোরগোল আরম্ভ করে দেয়, এবং বলে, ‘আমাদের উপাস্যগুলো শ্রেষ্ঠ না ‘ঈসা?’ এরা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা তো এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। তিনি তো ছিলেন আমারই এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বনী ইস্রাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত।’’ [ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, প্রাগুক্ত, ১/৩১৩, ৬/৩০২। আয়াতটি সূরা আয-যুখরুফঃ ৫৭-৫৯।]
অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমরান ইবন্ হুসাইনের পিতা হুসাইনকে বলেন:
হে হুসাইন! তুমি আজ কয়জনের ইবাদত কর? হুসাইন উত্তর করলেন: সাতজনের, ছয়জন যমীনে আর একজন আসমানে। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার আবেগ ও ভীতির জন্য কাকে গণ্য করো? উত্তরে হুসাইন বলেন: যিনি আসমানে আছেন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে হুসাইন! তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করো তবে আমি তোমাকে এমন দু’টি কালেমা শিক্ষা দেব যা তোমার উপকারে আসবে। তারপর যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে যে দু’টি কালেমা শেখানোর ওয়াদা করেছেন সে দু’টি শিক্ষা দিন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বল,হে আল্লাহ ! আমাকে সঠিক পথের দিশা মনে ঢেলে দিন এবং আমাকে আমার অন্তরের অকল্যাণ থেকে বাঁচান। [ইমাম তিরমিযী, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৪০৫।]
এখানেও আমরা দেখতে পাই যে,মুশরিকদের দীনের ব্যাপারে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্যক অবগত হয়ে তাদের সাথে দীনি বিতর্ক করে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুরূপভাবে ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ﴿ إِنَّكُمۡ وَمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمۡ لَهَا وَٰرِدُونَ ٩٨ ﴾ [ الانبياء : ٩٨ ] ‘‘তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদাত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে।’’[সূরা আল-আম্বিয়া:৯৮] এ আয়াত নাযিল হলো, তখন মুশরিকরা বলতে লাগল, ফেরেশতা, উযাইর এবং ঈসা এরও তো ইবাদত করা হয়, তারাও কি জাহান্নামে যাবে? তখন আল্লাহ্ নাযিল করলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ ١٠١ ﴾ [ الانبياء : ١٠١ ]
‘‘যাদের জন্য আমার কাছ থেকে পূর্ব থেকেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা থেকে দূরে রাখা হবে।’’ [সূরা আল-আম্বিয়া:১০১] [হাফেয ইমাদুদ্দিন ইসমাইল ইবনে কাসীর আদ-দামেশকী, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৫ম খ-(বৈরুত, দারুল মা‘রিফাহ, ১৪০৭ হি.) পৃ. ৩৮০।]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,কাফের মুশরিকরা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঈসা আলাইহিস্ সালাম নিয়ে বাদানুবাদ শুরু করে দিল। বিশেষ করে ওলীদ ইবনে মুগীরাহ। তখন আল্লাহ্ নাযিল করলেন,
﴿ ۞وَلَمَّا ضُرِبَ ٱبۡنُ مَرۡيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوۡمُكَ مِنۡهُ يَصِدُّونَ ٥٧ وَقَالُوٓاْ ءَأَٰلِهَتُنَا خَيۡرٌ أَمۡ هُوَۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلَۢاۚ بَلۡ هُمۡ قَوۡمٌ خَصِمُونَ ٥٨ إِنۡ هُوَ إِلَّا عَبۡدٌ أَنۡعَمۡنَا عَلَيۡهِ وَجَعَلۡنَٰهُ مَثَلٗا لِّبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٥٩ وَلَوۡ نَشَآءُ لَجَعَلۡنَا مِنكُم مَّلَٰٓئِكَةٗ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَخۡلُفُونَ ٦٠ وَإِنَّهُۥ لَعِلۡمٞ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمۡتَرُنَّ بِهَا ٦١ ﴾ [ الزخرف : ٥٧، ٦١ ]
‘‘যখন মারইয়াম-তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন আপনার সম্প্রদায় তাতে শোরগোল আরম্ভ করে দেয়, এবং বলে, ‘আমাদের উপাস্যগুলো শ্রেষ্ঠ না ‘ঈসা?’ এরা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা তো এক বিণ্ডাকারী সম্প্রদায়। তিনি তো ছিলেন আমারই এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বনী ইস্রাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত। আমি ইচ্ছে করলে তোমাদের মধ্য থেকে ফিরিশ্তা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হত।‘ঈসা তো কিয়ামতের নিশ্চিত নিদর্শন; কাজেই তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ করো না এবং আমাকে অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।’’ [সূরা আয-যুখরুফ: ৫৭-৬১] [প্রাগুক্ত।]
তদ্রুপ মুশরিকদের পুনরুত্থান সংক্রান্ত সংলাপ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ। পবিত্র কুরআনে ও রাসূলের হাদীসে তার বর্ণনা এসেছে,একবার উবাই ইবনে খালাফ রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসল। তার হাতে ছিল একটি পুরাতন হাঁড়। সে সেটা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলল, হে মুহাম্মাদ! তুমি কি মনে কর যে, আল্লাহ্ এটারও পুনরুত্থান ঘটাবেন? তিনি বললেন, হাঁ, তোমাকেও আল্লাহ্ মৃত্যু দিবেন এবং পুনরুত্থান করবেন তারপর তোমাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তখন আল্লাহ্ আগত আয়াতসমূহ নাযিল করেন:
﴿ أَوَ لَمۡ يَرَ ٱلۡإِنسَٰنُ أَنَّا خَلَقۡنَٰهُ مِن نُّطۡفَةٖ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٞ مُّبِينٞ ٧٧ وَضَرَبَ لَنَا مَثَلٗا وَنَسِيَ خَلۡقَهُۥۖ قَالَ مَن يُحۡيِ ٱلۡعِظَٰمَ وَهِيَ رَمِيمٞ ٧٨ قُلۡ يُحۡيِيهَا ٱلَّذِيٓ أَنشَأَهَآ أَوَّلَ مَرَّةٖۖ وَهُوَ بِكُلِّ خَلۡقٍ عَلِيمٌ ٧٩ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلشَّجَرِ ٱلۡأَخۡضَرِ نَارٗا فَإِذَآ أَنتُم مِّنۡهُ تُوقِدُونَ ٨٠ ﴾ [ يس : ٧٧، ٨٠ ]
‘‘মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। এবং সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। সে বলে, ‘কে অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে যখন তা পচে গলে যাবে?’ বলুন,‘তাতে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।’ তিনি তোমাদের জন্য সবুজ গাছ থেকে আগুন উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা থেকে প্রজ্বলিত কর। যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।’’ [সূরা ইয়াসীন:৭৭-৮০] [প্রাগুক্ত।]
ইয়াহূদীদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিতর্ক:
মদীনায় বিভিন্ন সময়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের সাথে ধর্মীয় বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। কারণ তারা তাঁর আশে-পাশেই থাকত। তারাও তাঁর সাথে ধর্মীয় বিষয়ে অনেক মতবিনিময় করত এবং বিভিন্ন ভ্রান্ত প্রশ্ন ও সন্দেহের অবতারণা করত। আর তিনি রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোর অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ জওয়াব দিতেন। যার কিছু নমূনা নিম্নে উপস্থাপিত হলো:
আব্দুল্লাহ ইবন্ সালাম এর সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথোপকথনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে,
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম শুনলেন যে, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করেছেন। তিনি তাঁর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করব যা নবী ব্যতীত কেউ উত্তর দিতে পারে না। তারপর তিনি বললেন, কিয়ামতের প্রথম আলামত কি? জান্নাতীরা প্রথম কোনো খাবার খাবে? সন্তান কিভাবে পিতার মত এবং কিভাবে তার মাতুলদের মত হয়?তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,আমাকে এই মাত্র জিবরাঈল তা জানিয়েছে। তখন আব্দুল্লাহ বললেন,ইয়াহূদীদের নিকট এ ফেরেশতা তাদের শত্রু। তারপর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,কিয়ামতের প্রথম আলামত হচ্ছে,একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে নিয়ে যাবে। আর জান্নাতীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। আর সন্তান কারো সাদৃশ্য হওয়ার পিছনে যুক্তি হলো, যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য অগ্রণী হয় সন্তান পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীর বীর্য অগ্রণী হয় তখন সন্তান স্ত্রীর মত হয়। তখন তিনি বললেন,আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আপনি আল্লাহর রাসূল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদীরা মিথ্যুক জাতি, যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করার আগে আমার ইসলামের কথা তারা জেনে যায় তবে আমাকে মিথ্যুক বানিয়ে ছাড়বে। তারপর আব্দুল্লাহ ইয়াহূদীদের কাছে আসলেন এবং তাদের ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল: আমাদের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি এবং জ্ঞানী ব্যক্তির সন্তান। আমাদের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি এবং উত্তম ব্যক্তির সন্তান। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে? তারা বলল, আলস্নাহ্ তাকে এ ধরনের কাজ করা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। তখন আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম বের হয়ে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত হক কোনো মা‘বুদ নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলল,সে আমাদের সবচেয়ে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের সন্তান। এভাবে তারা তার উপর আক্রমনাত্মক কথা বলতে লাগল [ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৩২৯, ৩৯১১, ৩৯৩৮, ৪৪৮০।]।
আব্দুল্লাহ ইবন্ উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
‘‘ইয়াহূদীরা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে এসে বলল: তাদের মধ্যে একজন পুরুষ ও মহিলা যিনা করেছে। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন: তোমরা কি তাওরাতে রজম সম্পর্কে কিছু পেয়েছ?তারা বলল: ‘‘তাদেরকে অপমানিত করব এবং তাদেরকে বেত্রাঘাত করা হবে।’’তখন তাদের আব্দুল্লাহ ইবন্ সালাম বলেন: তোমরা মিথ্যা বলেছ, সেখানে রজমের কথা রয়েছে। তখন তারা তাওরাত নিয়ে এসে তা খুলে ধরল। অতঃপর তাদের একজন রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে আগের ও পরের বাক্যাবলী পাঠ করল। তখন আব্দুল্লাহ্ ইবন্ সালাম বললেন: তুমি হাত উঠাও। অতঃপর যখন হাত উঠানো হলো তখনি সেখানে রজমের আয়াত দেখা গেল। তখন তারা বলল: হে মুহাম্মাদ! আপনি সত্য বলেছেন। এতে রজমের আয়াত রয়েছে। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। আর তাদেরকে পাথর মারা হলো।’’ [প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৩৬৩।]
তাছাড়া, ধর্মীয় আলোচনার জন্য রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং ইহুদীদের ‘মিদরাস’ [প্রাগুক্ত।]-এর গমন করেছেন। এ আলোচনায় সাধারণত উলুহিয়্যাত-ঈশ্বরতত্ত্ব, ধর্মীয় গ্রন্থ, রাসূলতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরূপ পারস্পরিক আলোচনার ফলে আবদুল্লাহ ইবন সালাম,সা‘লাবা ইবন সাঈদ,আসাদ ইবন উসাইদ-এর মত প্রভাবশালী ইহুদী পন্ডিত ও নেতৃবৃন্দ ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
‘‘একবার রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের একটি শিক্ষায়তনে প্রবেশ করলেন যেখানে একদল ইয়াহূদী অবস্থান করছিল। তিনি তাদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করলেন। তখন নু’মান ইবন্ আমর এবং হারেস ইবন্ যায়দ বলেন: হে মুহাম্মাদ! তোমার দিন কোনটি?তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি ইবরাহীমের দীনের উপর। তখন তারা উভয়ে বলল: ইবরাহীম তো ইয়াহূদী ছিল। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে তাওরাত নিয়ে আস, আমাদের ও তোমাদের মাঝে সেটাকে ফয়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ কর। কিন্তু তারা উভয়ে তা করতে অস্বীকার করল। তখন আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন: ‘‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যাদেরকে কিতাবের অংশ প্রদান করা হয়েছিল?তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান করা হয়েছিল যাতে ওটা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়;তারপর তাদের একদল ফিরে দাঁড়ায়,আর তারাই পরাম্মুখ।’’ [ইবন্ হিশাম, আবদুল মালিক ইবনে হিশাম, আস-সীরাতুন নবওয়ীয়্যাহ, ২য় খ- (জর্দান: মাকতাবাতুল মানার, ১ম সংস্করণ, ১৪০৯ হি.), পৃ. ২৩০; তাবারী, প্রাগুক্ত, ষষ্ট খ-, পৃ. ২৭৭, আয়াতটি সূরা আলে ইমরানের ২৩ নং আয়াত।]
এ ছাড়াও ইয়াহূদীদের বিভিন্ন প্রতিনিধিদল রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসত, বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করত এবং বিতর্কে লিপ্ত হত [ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত, ২য় খ-, পৃ.২১৮-২১৯।]।
খ্রিষ্টানদের সাথে তাদের ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক:
খ্রিষ্টানদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের তুলনায় স্বল্প পরিমাণ ধর্মীয় বিতর্ক করেছেন। কারণ তারা মূলত মদীনা থেকে দূরে অবস্থান করত। ফলে মুসলিমদের সাথে তাদের খুব কম সাক্ষাত হতো। তারপরও যখনি কোনো প্রতিনিধিদল রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করত তখনি তারা ধর্মীয় বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হত। এক্ষেত্রে হাবশা ও নাজরানের খ্রিষ্টানদের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে।
সীরাতে ইবন্ হিশামে এ জাতীয় একর্টি ধর্মীয় সংলাপ এসেছে। যার বিষয়বস্তু হলো: খ্রিষ্টানগণ রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে ঈসা ইবন্ মারইয়াম সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করল। তারা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঈসা আলাইহিসসালামের পিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করল এবং তারা আল্লাহ্ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার অপবাদ ও মিথ্যা বলে বেড়াতে লাগল। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: ‘তোমরা জান যে, যত সন্তানই আছে তারা তাদের পিতার সদৃশ হয়? তারা বলল: অবশ্যই । তিনি বললেন: তোমরা কি জান না যে, আমাদের প্রভু চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই? অথচ ঈসার অস্তিত্ব বিলীন হবে?তখন তারা বলল: অবশ্যই। তিনি আরও বললেন: আমাদের রব সবকিছুর ধারক-বাহক,তিনি সবকিছুর সংরক্ষণ করেন ও রিযক দিয়ে থাকেন? তারা বলল: নিশ্চয়ই। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে ঈসা ইবন্ মারঈয়াম কি এগুলোর কোনো কিছু করতে সক্ষম? তখন তারা বলল: না। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা কি জান না যে, আসমান ও যমীনের কোনো সৃষ্টিই তাঁর কাছে গোপন নেই? তারা বলল: নিশ্চয়ই। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার প্রভু ঈসাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রেহেমের মধ্যে আকৃতি দান করেছেন। তিনি আরও বললেন: আর আমার প্রতিপালক খানা-পিনা করেন না এবং কোনো অপবিত্র কাজও ঘটান না?তখন তারা বলল: নিশ্চয়ই। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা কি জান না যে,অন্যান্য মহিলাদের মত ঈসাও মায়ের গর্ভে লালিত-পালিত হয়েছেন? তারপর অন্যান্য মহিলারা যেভাবে বাচ্ছা প্রসব করে তিনি তার মাও তাকে সেভাবে প্রসব করেছেন এবং অন্যান্য বাচ্ছাদের মত তাকেও খাওয়ানো হয়েছে। তারপর তিনি খাবারও খেয়েছেন,পানও করেছেন এবং অপবিত্রও হয়েছেন? তারা বলল: অবশ্যই। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে তোমরা যা ধারনা করছ তা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? এরপর তাদের সবাই চুপ হয়ে গেল। এ পরিপ্রেক্ষিতেই প্রথম থেকে আশির অধিক আয়াত নাযিল হয়। [ওয়াহেদী, আবুল হাসান আলী, আসবাবু নুযুলিল কুরআন (সৌদী আরব: দারুল কিবলাহ, ১৪০৪ হি.), পৃ.৯০-৯১।]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে,হাবশা থেকে একদল খ্রিষ্টান রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমণ করে। তারা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিভিন্ন দীনি প্রশ্ন করে দু’ধর্মের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে ইসলাম গ্রহণ করে [সীরাতে ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত, ২য় খ- , পৃ.৩৬।]।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদী ইবন্ হাতিমের সাথে তার দীন খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে যুক্তিতে পরাস্ত করে আল্লাহর দীন মানতে উদ্বুদ্ধ করেন। যার ফলশ্রতিতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ‘আদী ইবন্ হাতিম বলেন: ‘‘যখন আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন,তখন তাঁকে এমন প্রচন্ড আকারে ঘৃণা করলাম এবং তাঁর থেকে পালিয়ে যমীনের একপ্রান্ত রোমের পাশ্বস্থ আরবভূমিতে আশ্রয় নিলাম। তারপর আমি আমার প্রথম স্থানের চেয়েও সে স্থানে অবস্থান করাটা অত্যধিক অপছন্দ করলাম। তারপর আমি স্বয়ং বললাম, আমি যদি লোকটির কাছে যেতাম এবং তার কাছ থেকে কিছু শুনতাম তাহলে কেমন হয়। তারপর আমি মদীনায় আসলাম। মানুষের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে পড়ল। তারা বলাবলি করতে লাগল যে,আদী ইবন্ হাতিম আত-ত্বায়ী এসেছে। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ‘আদী! তুমি ইসলাম গ্রহণ কর তাহলে নিরাপত্তা পাবে। আমি বললাম আমি একটি দীনের উপর আছি। তিনি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার দীন সম্পর্কে আমি তোমার থেকেও অধিক জ্ঞাত। আমি বললাম: আপনি কি আমার দীন সম্পর্কে আমার থেকেও অধিক জ্ঞাত?তিনি বললেন: হাঁ। ‘আদী ইবন্ হাতেম বলেন: রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি তিনবার উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বললেন: তুমি কি ‘রন্ডকুচী’ নও? (অর্থাৎ এমন সম্প্রদায় যারা খ্রিষ্টান ও সাবেয়ী এ দু’ধরনের ধর্মের মধ্য পন্থার অনুসারী) আমি বললাম: অবশ্যই। তিনি বললেন: তুমি কি তোমার সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দাও না? আমি বললাম: হাঁ। তিনি বললেন: তুমি কি ‘লুটের সম্পদের চারভাগে এক ভাগ নাও না? আমি বললাম: নিশ্চয়ই। তিনি বললেন: কিন্তু এটা তো তোমার ধর্মমতে অবৈধ। ‘আদী ইবন্ হাতিম বলেন: এতে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। তারপর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সম্ভবত এটাই সম্ভবত তোমাকে আমাদের দীন থেকে দূরে রেখেছে, কারণ তুমি দেখতে পাচ্ছ যে, আমাদের এখানে অভাব-অনটন রয়েছে।’’ [ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, প্রাগুক্ত, ৪র্থ খ-, পৃ. ৩৭৮, ২৫৭-২৫৮।]
ইবনে কাইয়্যেম রাহেমাহুল্লাহ এ সমস্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীসের ভাষ্য এবং সীরাতের বিভিন্ন ঘটনা যেমন নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ধর্মীয় বিতর্ক এগুলোর শিক্ষা বর্ণনায় বলেন:
এ ঘটনা থেকে যে শিক্ষা আমরা পাই তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: আহলে কিতাবদের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক করা জায়েয বরং মুস্তাহাব। আবার ক্ষেত্রবিশেষে ওয়াজিবও যখন এটা স্পষ্ট হবে যে,এ আলোচনায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে তাদের অনেকেই ইসলামের সুমহান আদর্শ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। আর বুদ্ধিভিত্তিক ও জ্ঞান ভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন করে তাদের বিভিন্ন সন্দেহ ও প্রশ্নের অপনোদন করা প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় [ইবনুল কাইয়্যেম, যাদুল মা‘আদ ফি হাদয়ি খাইরিল ইবাদ, ৩য় খ-, পৃ. ৬৩৯।]।
তাছাড়া, মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের পর আরব-খ্রিষ্টানদের প্রধান কেন্দ্র-নাজরান থেকে একদল প্রতিনিধি মদীনায় আসেন। খ্রিষ্টানদের এক নেতার নেতৃত্বে চৌদ্দ জন পাদ্রীসহ ষাটজন প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেন। তারা ইসলাম ও খ্রিষ্টানধর্ম সম্পর্কে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাদের ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। [ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫০৮-৫১৭।] এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সূরা আলে-ইমরান অবর্তীণ হয়।
অনুরূপভাবে ইরানের আধিবাসী প্রখ্যাত সাহাবী সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও সত্যদীন অনুসন্ধানের জন্য বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে মদীনায় আসেন। তিনি জন্মসূত্রে ছিলেন মাজদাক ধর্মের অনুসারী। এ ধর্মমত তাঁকে পরিতৃপ্ত করে পারেনি। তাই তিনি খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু এতেও তিনি তাঁর কাঙ্ক্ষিত সত্য লাভে অসমর্থ হন। পরিশেষে মদীনায় রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করেন এবং বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ইসলামের সত্যতায় স্থিরচিত্ত হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। [প্রাগুক্ত, পৃ. ২১৭-২২৫।]
মুশরিকদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ধর্মীয় বিতর্ক:
বিভিন্ন বর্ণনায় প্রায়শই দেখা যায় যে, কতিপয় মুশরিক দলবদ্ধভাবে ধর্ম সম্পর্কে বিতর্ক-জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁর পাশে সমবেত হয়। মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। [ড. আহমদ শালাবী, আল-মানাহিজুল ইসলামিয়্যা, ১ম খ- (কায়রো : মাকতাবাতুন নাহদাতুল মিসরিয়্যা, ১৯৯৩), পৃ. ১৩৯।] তন্মধ্যে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
তুফাইল ইবন আমর আদ্-দাওসী ছিলেন ঘোর পৌত্তলিক। কেবল ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়ে তিনি মক্কায় রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি রাসূল রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সত্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করে কৃতার্থ হন। [ইবন হিশাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৪৭।] এভাবে অনেক পৌত্তলিক দলগত ও ব্যক্তিগতভাবে রাসূলের সাথে ধর্মালোচনায় মিলিত হন।
ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘‘হে কুরাইশ সম্প্রদায়! নিশ্চয় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদতে কোনো কল্যাণ নেই। কিন্তু কুরাইশগণ জানত যে, খ্রিষ্টানগণ ঈসা আলাইহিসসালামের ইবাদত করত। সুতরাং মুহাম্মাদ সম্পর্কে তুমি কি বলবে? তখন তারা মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বলল: হে মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তুমি কি বিশ্বাস করনা যে, ঈসা নবী ছিলেন এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের মধ্যে একজন ছিলেন? যদি তুমি তোমার কথায় সত্য হও তাহলে তাদের ইলাহও তো তোমাদের বক্তব্যমত হওয়া উচিত। তখন কুরআনে ইরশাদ হলো, যখন মারইয়াম-তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন আপনার সম্প্রদায় তাতে শোরগোল আরম্ভ করে দেয়, এবং বলে, ‘আমাদের উপাস্যগুলো শ্রেষ্ঠ না ‘ঈসা?’ এরা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা তো এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। তিনি তো ছিলেন আমারই এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বনী ইস্রাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত।’’ [ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, প্রাগুক্ত, ১/৩১৩, ৬/৩০২। আয়াতটি সূরা আয-যুখরুফঃ ৫৭-৫৯।]
অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমরান ইবন্ হুসাইনের পিতা হুসাইনকে বলেন:
হে হুসাইন! তুমি আজ কয়জনের ইবাদত কর? হুসাইন উত্তর করলেন: সাতজনের, ছয়জন যমীনে আর একজন আসমানে। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার আবেগ ও ভীতির জন্য কাকে গণ্য করো? উত্তরে হুসাইন বলেন: যিনি আসমানে আছেন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে হুসাইন! তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করো তবে আমি তোমাকে এমন দু’টি কালেমা শিক্ষা দেব যা তোমার উপকারে আসবে। তারপর যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে যে দু’টি কালেমা শেখানোর ওয়াদা করেছেন সে দু’টি শিক্ষা দিন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বল,হে আল্লাহ ! আমাকে সঠিক পথের দিশা মনে ঢেলে দিন এবং আমাকে আমার অন্তরের অকল্যাণ থেকে বাঁচান। [ইমাম তিরমিযী, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৪০৫।]
এখানেও আমরা দেখতে পাই যে,মুশরিকদের দীনের ব্যাপারে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্যক অবগত হয়ে তাদের সাথে দীনি বিতর্ক করে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুরূপভাবে ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ﴿ إِنَّكُمۡ وَمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمۡ لَهَا وَٰرِدُونَ ٩٨ ﴾ [ الانبياء : ٩٨ ] ‘‘তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদাত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে।’’[সূরা আল-আম্বিয়া:৯৮] এ আয়াত নাযিল হলো, তখন মুশরিকরা বলতে লাগল, ফেরেশতা, উযাইর এবং ঈসা এরও তো ইবাদত করা হয়, তারাও কি জাহান্নামে যাবে? তখন আল্লাহ্ নাযিল করলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ ١٠١ ﴾ [ الانبياء : ١٠١ ]
‘‘যাদের জন্য আমার কাছ থেকে পূর্ব থেকেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা থেকে দূরে রাখা হবে।’’ [সূরা আল-আম্বিয়া:১০১] [হাফেয ইমাদুদ্দিন ইসমাইল ইবনে কাসীর আদ-দামেশকী, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৫ম খ-(বৈরুত, দারুল মা‘রিফাহ, ১৪০৭ হি.) পৃ. ৩৮০।]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,কাফের মুশরিকরা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঈসা আলাইহিস্ সালাম নিয়ে বাদানুবাদ শুরু করে দিল। বিশেষ করে ওলীদ ইবনে মুগীরাহ। তখন আল্লাহ্ নাযিল করলেন,
﴿ ۞وَلَمَّا ضُرِبَ ٱبۡنُ مَرۡيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوۡمُكَ مِنۡهُ يَصِدُّونَ ٥٧ وَقَالُوٓاْ ءَأَٰلِهَتُنَا خَيۡرٌ أَمۡ هُوَۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلَۢاۚ بَلۡ هُمۡ قَوۡمٌ خَصِمُونَ ٥٨ إِنۡ هُوَ إِلَّا عَبۡدٌ أَنۡعَمۡنَا عَلَيۡهِ وَجَعَلۡنَٰهُ مَثَلٗا لِّبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٥٩ وَلَوۡ نَشَآءُ لَجَعَلۡنَا مِنكُم مَّلَٰٓئِكَةٗ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَخۡلُفُونَ ٦٠ وَإِنَّهُۥ لَعِلۡمٞ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمۡتَرُنَّ بِهَا ٦١ ﴾ [ الزخرف : ٥٧، ٦١ ]
‘‘যখন মারইয়াম-তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন আপনার সম্প্রদায় তাতে শোরগোল আরম্ভ করে দেয়, এবং বলে, ‘আমাদের উপাস্যগুলো শ্রেষ্ঠ না ‘ঈসা?’ এরা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা তো এক বিণ্ডাকারী সম্প্রদায়। তিনি তো ছিলেন আমারই এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বনী ইস্রাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত। আমি ইচ্ছে করলে তোমাদের মধ্য থেকে ফিরিশ্তা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হত।‘ঈসা তো কিয়ামতের নিশ্চিত নিদর্শন; কাজেই তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ করো না এবং আমাকে অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।’’ [সূরা আয-যুখরুফ: ৫৭-৬১] [প্রাগুক্ত।]
তদ্রুপ মুশরিকদের পুনরুত্থান সংক্রান্ত সংলাপ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ। পবিত্র কুরআনে ও রাসূলের হাদীসে তার বর্ণনা এসেছে,একবার উবাই ইবনে খালাফ রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসল। তার হাতে ছিল একটি পুরাতন হাঁড়। সে সেটা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলল, হে মুহাম্মাদ! তুমি কি মনে কর যে, আল্লাহ্ এটারও পুনরুত্থান ঘটাবেন? তিনি বললেন, হাঁ, তোমাকেও আল্লাহ্ মৃত্যু দিবেন এবং পুনরুত্থান করবেন তারপর তোমাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তখন আল্লাহ্ আগত আয়াতসমূহ নাযিল করেন:
﴿ أَوَ لَمۡ يَرَ ٱلۡإِنسَٰنُ أَنَّا خَلَقۡنَٰهُ مِن نُّطۡفَةٖ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٞ مُّبِينٞ ٧٧ وَضَرَبَ لَنَا مَثَلٗا وَنَسِيَ خَلۡقَهُۥۖ قَالَ مَن يُحۡيِ ٱلۡعِظَٰمَ وَهِيَ رَمِيمٞ ٧٨ قُلۡ يُحۡيِيهَا ٱلَّذِيٓ أَنشَأَهَآ أَوَّلَ مَرَّةٖۖ وَهُوَ بِكُلِّ خَلۡقٍ عَلِيمٌ ٧٩ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلشَّجَرِ ٱلۡأَخۡضَرِ نَارٗا فَإِذَآ أَنتُم مِّنۡهُ تُوقِدُونَ ٨٠ ﴾ [ يس : ٧٧، ٨٠ ]
‘‘মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। এবং সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। সে বলে, ‘কে অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে যখন তা পচে গলে যাবে?’ বলুন,‘তাতে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।’ তিনি তোমাদের জন্য সবুজ গাছ থেকে আগুন উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা থেকে প্রজ্বলিত কর। যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।’’ [সূরা ইয়াসীন:৭৭-৮০] [প্রাগুক্ত।]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন