HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

জুমু‘আর দিনের বিধান

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

জুমু‘আর সালাতের আদবসমূহ
এক- গোসল করা।

জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাতের উদ্দেশ্যে গোসল করা সুন্নাত। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«غسل الجمعة واجب على كل محتلم، وسواك، ويمس من الطيب ما قدر عليه» [ رواه مسلم وغيره ].

“প্রত্যেক বালেগ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপর জুম‘আর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা ওয়াজিব। যদি সম্ভব হয় খোশবু বা আতর ব্যবহার করবে”। [মুসলিম, হাদিস: ৮৪৬; বুখারি, হাদিস: ৮৫৮] অপর একটি হাদিস আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن هذا يوم عيد جعله الله للمسلمين، فمن جاء الجمعة فليغتسل، وإن كان طيب فليمس منه، وعليكم بالسواك» [ رواه ابن ماجة بإسناد حسن ].

“এটি ঈদের দিন। আল্লাহ তা‘আলা এটিকে মুসলিমদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয়, সে যেন গোসল করে নেয়। আর যদি খোশবু থাকে তা থেকে শরীরে লাগাবে। আর অবশ্যই তোমরা মিসওয়াক করবে”। [ইবনে মাযা, হাদিস: ১০৯৮]

দুই- শরীরকে ময়লা আবর্জনা থেকে পরিষ্কার এবং দুর্গন্ধ মুক্ত করবে। শরীরে তেল, আতর ও খোশবু লাগাবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إذا كان يوم الجمعة فاغتسل الرجل وغسل رأسه، ثم تطيب من أطيب طيبه، ولبس من صالح ثيابه، ثم خرج إلى الصلاة ولم يفرق بين اثنين، ثم استمع إلى الإمام غفر له من الجمعة إلى الجمعة وزيادة ثلاثة أيام» [ حسن . رواه بن خزيمة في صحيحه ].

“যখন কোন ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সুন্দর করে গোসল করে, ভালোভাবে মাথা ধোয়, উত্তম সু-গন্ধি ব্যবহার করে, সুন্দর কাপড় পরিধান করে, অত:পর সে সালাতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে যায় না এবং সে ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার এক জুমু‘আ হতে অপর জুমু‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেন”। [ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ১৮০৩]

তিন- দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক অন্বেষণ করবে না:

সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من اغتسل يوم الجمعة، وتطهر بما استطاع من طهر، ثم ادَّهن أو مس من طيب، ثم راح فلم يفرق بين اثنين، فصلى ما كتب له، ثم إذا خرج الإمام أنصت غفر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى» [ رواه البخاري ].

“যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং সাধ্য অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর তেল ও খোশবু ব্যবহার করে মসজিদে গমন করে- দুই লোকের মাঝখানে কোন প্রকার ফাঁক করে না, তাওফীক অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব সালাত আদায় করে অত:পর যখন ইমাম বের হয়, তার খুতবা শোনার প্রতি মনোযোগী হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এক জুমু‘আ থেকে নিয়ে অপর জুমু‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন”। [বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৯১০]

চার- সুন্দর কাপড় পরিধান করা:

আব্দুল্লাহ বিন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জুমু‘আর দিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন,

«ما على أحدكم لو اشترى ثوبين ليوم الجمعة سوى ثوب مهنته» [ صحيح . رواه أبو داود وابن ماجة ].

“তোমাদের কেউ যদি কর্মস্থলের পোশাক বাদ দিয়ে জুমু‘আর দিনের জন্য দুটি কাপড় ক্রয় করে, তাতে কোন অসুবিধা নাই”। [আবু দাউদ, ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৯৫]

পাঁচ- জায়গা থেকে উঠানো যাবে না:

জুমু‘আর দিন একজনকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে সে জায়গায় বসবে না। এ ধরনের কর্ম থেকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

نهى النبي أن يقيم الرجل أخاه من مقعده ويجلس فيه . قال الراوي عن نافع : قلت لنافع : الجمعة؟ قال : الجمعة وغيرها . [ رواه البخاري ].

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে তার স্থান থেকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে বসা থেকে নিষেধ করেন। নাফে রহ. থেকে বর্ণনাকারী বলেন, আমি নাফে রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, এটি কি জুমু‘আর দিন? তিনি বললেন, জুমু‘আ ও অন্য যে কোন দিন”। [বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৯১১]

ছয়- মসজিদে ঘুম আসলে স্থান পরিবর্তন করা:

জুমু‘আর দিন তন্দ্রা আসলে স্থান পরিবর্তন করা। অনেককে দেখা যায় মসজিদে এসে ঘুমায়। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إذا نعس أحدكم يوم الجمعة فليتحول عن محله ذلك» [ صحيح . رواه أبو داود، والترمذي، وابن خزيمة ].

“যখন তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয় সে যেন স্থান পরিবর্তন করে নেয়”। [বর্ণনায় ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ১৮১৯ তিরমিযি, হাদিস: ৫২৬]

সাত- মসজিদে তাড়াতাড়ি যাওয়া:

জুম‘আর দিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে চলে যাওয়া। যে ব্যক্তি মসজিদে যত আগে যাবে সে তত বেশি সাওয়াব পাবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«من اغتسل يوم الجمعة غسل الجنابة ثم راح في الساعة الأولى فكأنما قرب بدنه، ومن راح في الساعة الثانية فكأنما قرب بقرة، ومن راح في الساعة الثالثة فكأنما قرب كبشًا أقرن، ومن راح في الساعة الرابعة فكأنما قرب دجاجة، ومن راح في الساعة الخامسة فكأنما قرب بيضة، فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر» [ رواه مالك في " الموطأ، والبخاري، ومسلم، والترمذي ، وأبو داود وغيرهم ].

“যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন ফরয গোসলের মত গোসল করে, তারপর প্রথম সময়ে মসজিদে গমন করে, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি উট কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি গরু কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ভেড়া কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি মুরগী আল্লাহর রাস্তায় দান করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করল। অত:পর যখন ইমাম উপস্থিত হয়, তখন ফেরেশতারাও উপস্থিত হয় এবং তার খুতবা শ্রবণ করে”। [মালেক স্বীয় মুয়াত্তা, হাদিস: ১০১/১; বুখারি, হাদিস: ৮৮১; মুসলিম, হাদিস: ৮৫০; তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৯; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৫১]

আট- মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করা:

তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকআত সালাত আদায় করা খুবই জরুরি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই সালাত বিষয়ে খুব গুরুত্ব প্রদান করেছেন। আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إذا دخل أحدكم المسجد فلا يجلس حتى يصلي ركعتين» [ متفق عليه ].

“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন দুই রাক’আত সালাত আদায় করা ছাড়া না বসে”। [বুখারি, হাদিস: ৪৪৪; মুসলিম, হাদিস: ৭১৪]

অপর একটি বর্ণনায় জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,

وعن جابر - رضي الله عنه - قال : أتيت النبي صلى الله عليه وسلم وهو في المسجد فقال : «صل ركعتين» [ متفق عليه ].

অর্থ, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম যখন তিনি মসজিদে ছিলেন, তিনি বললেন, “দুই রাকআত সালাত আদায় কর”। [বুখারি, হাদিস: ৪৪৩; মুসলিম, হাদিস: ৭১৫।]

অনুরূপভাবে ইমাম যখন খুতবা দিচ্ছে তখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করছ, তাহলেও দুই রাকাত সালাত আদায় করে নিবে। প্রমাণ-

فعن جابر بن عبد الله قال : جاء رجل والنبي صلى الله عليه وسلم يخطب الناس يوم الجمعة، فقال : «أصليت يا فلان؟» قال : لا، قال : «قم فأركع» [ رواه البخاري ].

অর্থ, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুমু‘আর দিন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়ল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তাকে দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক, তুমি সালাত আদায় করছ? লোকটি বলল, না, আল্লাহর রাসূল বললেন, “তুমি দাঁড়াও এবং সালাত আদায় কর”। [বুখারি, হাদিস:৯৩০; মুসলিম, হাদিস: ৮৭৫; আবু দাউদ, হাদিস: ১১১৫]

নয়- শান্ত-সৃষ্ট ভাবে জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া:

জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হতে তাড়াহুড়া করবে না। ভাব গাম্ভীর্যের সাথে সালাতে উপস্থিত হবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

«إذا أقيمت الصلاة فلا تأتوها تسعون، وأتوها تمشون عليكم السكينة، فما أدركتم فصلوا، وما فاتكم فأتِموا» [ رواه البخاري ].

“যখন সালাতের একামত হয়, তখন তোমরা সালাতে দৌড়ে এসো না। তোমরা পায়ে হেঁটে ধীরে ধীরে সালাতে উপস্থিত হও। সালাতের যতটুকু ইমামের সাথে পেলে, ততটুকু পড় আর যতটুকু ছুটে গেল তা পূর্ণ কর”। [বুখারি, হাদিস:৯০৮; মুসলিম, হাদিস: ৬০২]

দশ- জুমু‘আর সালাতের পূর্বে মসজিদে জড়ো-গোলাকার-হয়ে বসা নিষিদ্ধ:

জুমু‘আর দিন জুমু‘আর মসজিদের সালাতের পূর্বে জুমু‘আর সালাতের বিঘ্ন ঘটায় এ ধরনের কোন হালাকা কায়েম করা নিষিদ্ধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন।

প্রমাণ-

عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى أن يحلق في المسجد يوم الجمعة قبل الصلاة . [ حسن . رواه أبو داود، والترمذي، وابن خزيمة ].

অর্থ, আমর ইবনে শুয়াইব, তার পিতা থেকে এবং তিনি তার দাদা থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন সালাতের পূর্বে মসজিদে গোল হয়ে বসা থেকে নিষেধ করেছেন”। [আবু দাউদ, হাদিস: ১০৭৯; তিরমিযি, হাদিস: ৩২২; ইবনু খজাইমাহ, হাদিস: ১৩০৪; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১৩৩]

এগারো- উভয় খুতবা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা:

জুমুম‘আর দিন দুটি খুতবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। অনেকেই মনে করে প্রথম খুতবা শোনা জরুরি দ্বিতীয় খুতবা শোনা জরুরী নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল। উভয় খুতবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। খুতবা চলা কালীন সময় কোন প্রকার কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ কর’ এ কথাও বলা যাবে না। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت» [ رواه البخاري ومسلم ]. وزاد أحمد في روايته : «ومن لغا فليس له في جمعته تلك شيء» .

“ইমামের খুতবা দেয়া অবস্থায় তুমি যদি তোমার সাথীকে বল, তুমি চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কথা বললে”। [বুখারি, হাদিস: ১৮০৪; মুসলিম, হাদিস: ৮৫১] ইমাম আহমদ তার বর্ণনাতে হাদিসে আরও বর্ধিত করেন, অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন অনর্থক কর্ম করল, তার জন্য ঐ জুমু’আতে আর কিছু রইল না।

বার- দুই জনের মাঝে ফাঁকা করবে না:

জুমু‘আর দিন অনেক লোককে দেখা যায়, মসজিদে দেরীতে আসে। কিন্তু সে সামনে গিয়ে বসার জন্য মানুষের মাঝে ফাঁক করে সামনে যায়। এতে মানুষের কষ্ট হয়। মানুষকে কষ্ট দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে লোক পরে আসবে সে যেখানে যায়গা পাবে সেখানে বসে পড়বে। কাউকে কষ্ট দেবে না এবং সামনে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। প্রমাণ- আব্দুল্লাহ বিন বছর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

جاء رجل يتخطى رقاب الناس يوم الجمعة والنبي صلى الله عليه وسلم يخطب، فقال النبي صلى الله عليه وسلم : «اجلس فقد آذيت وآنيت» [ صحيح . رواه أحمد، وأبو داود، والنسائي، وابن خزيمة، وابن حبان، وليس عند أبي داود والنسائي وآنيت، وعند ابن خزيمة : فقد آذيت وأوذيت، ورواه ابن ماجة من حديث جابر بن عبد الله ].

“জুমু‘আর দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিল এমন সময় এক লোক এসে মানুষদের ফাঁক করা আরম্ভ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি বস, তুমি লোকদের কষ্ট দিচ্ছ ও নিজেও কষ্ট করছ”। [হাদিসটি সহীহ, বর্ণনায় আহমদ, আবু দাউদ, হাদিস: ১১১৮; নাসায়ী, হাদিস: ১৩৯৯; ও ইবনু খুজাইমা এবং ইবনু হিব্বান। তবে আবু দাউদ ও নাসায়ীতে وآنيت শব্দটি নাই। আর ইবনে খুজাইমার এ শব্দে فقد آذيت وأوذيت، হাদিসটি বর্ণনা করেন। ইবনে মাজা, হাদিস নং ১১১৫- হাদিসটি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন।]

তের- সালাত আদায় কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে না:

সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কঠিন হুসিয়ারী উচ্চারণ করেন। আবু জাহাম আব্দুল্লাহ বিন হারেস বিন আস-সাম্মাতুল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لو يعلم المار بين يدي المصلي ماذا عليه لكان أن يقف أربعين خيرًا له من أن يمر بين يديه» ( قال أبو النضر : لا أدري قال أربعين يوما أو شهرا أو سنة ). [ رواه البخاري، ومسلم، وأبو داود، والترمذي، والنسائي، وابن ماجة ].

“সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যে কত বড় অপরাধ তা যদি অতিক্রমকারী জানতে পারত, তাহলে চল্লিশ (দিন) পর্যন্ত অপেক্ষা তার অতিক্রম করার চেয়ে উত্তম হত”। [বুখারি, হাদিস: ৫১০; মুসলিম, হাদিস: ৫০৭; আবু দাউদ, হাদিস: ৭০১; তিরমিযি, হাদিস: ৩৩৬; নাসায়ী, হাদিস: ৭৫।]

চৌদ্দ- ইমাম মসজিদে প্রবেশের পর কোন নফল সালাত পড়বে না:

ইমাম সাহেব মসজিদে প্রবেশ করার সাথে কোন প্রকার নফল সালাত, জিকির-আযকার করবে না। মুয়াজ্জিনের আযানের উত্তর দেয়ার পর ইমামের খুতবা শোনায় মনোযোগী হবে। আব্দুল্লাহ বিন আমর হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يحضر الجمعة ثلاثة نفر؛ فرجل حضرها يلغو، فذلك حظه منها، ورجل حضرها بدعاء، فهو رجل دعا الله إن شاء أعطاه وإن شاء منعه، ورجل حضرها بإنصات وسكوت، ولم يتخط رقبة مسلم، ولم يؤذ أحدا، فهي كفارة له إلى يوم الجمعة التي تليها وزيادة ثلاثة أيام، وذلك أن الله يقول : ﴿مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا﴾» [ حسن . رواه أبو داود، وابن خزيمة في صحيحه ].

“তিন ধরনের মানুষ জুমু‘আর দিন মসজিদে উপস্থিত হয়ে থাকে। এক ধরনের মানুষ যারা জুমু‘আর দিন মসজিদে এসে কথাবার্তা বলে অনর্থক কাজ করে। তারা অবশ্যই তাদের কর্মের পরিণাম ভোগ করবে। আরেক ধরনের লোক যারা মসজিদে এসে দু‌‘আ মুনাজাতে লিপ্ত থাকে। আল্লাহ চাইলে লোকটির দু‌‘আ কবুল করবেন অথবা দু‌‘আ কবুল করবেন না। আরেক ধরনের লোক যারা চুপ-চাপ করে মসজিদে উপস্থিত হয়, দুই লোকের মাঝে ফাঁকা করে না এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। এটা তার জন্য এ জুম‘আ থেকে নিয়ে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহের জন্য কাফফারা হবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا﴾» যে কোন নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তার সাওয়াবকে দশ গুণ বাড়িয়ে দেন”। [আবু দাউদ, হাদিস: ১১১৩ ও ইবনু খুজাইমা, হাদিস: ১৮১৩ স্বীয় সহীহতে।]

পনের- জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাতের পূর্বে ইহতেবা করে বসা মাকরূহ:

জুম‘আর দিন মসজিদে ইহতেবা করে বসা নিষিদ্ধ। ইহতেবা বলা হয়, নিতম্বের উপর বসে দুই হাঁটু খাড়া করে দেয়া এবং তার উপর কাপড় পরে দুই হাত দিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে হাঁটুর নিচে ধরে রাখা। [দেখুন, ফতহুল বারী।] প্রমাণ-

عن سهل بن معاذ عن أبيه أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن الحبوة يوم الجمعة والإمام يخطب . [ حسن . رواه أبو داود، والترمذي ].

অর্থ, সাহাল ইবনে মুয়ায রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর দিন ইমামের খুতবা দেয়ার সময় ইহতেবা করা থেকে নিষেধ করেছেন। [আবু দাউদ, হাদিস: ১১১০; তিরমিযি, হাদিস: ৫১৪]

ষোল- জুমু‘আর সালাতে সূরাতুল জুমু‘আ ও আল-মুনাফিকুন অথবা সূরা আল-আ’লা ও আল-গাশিয়া পড়া:

জুমু‘আর সালাতে ইমামের জন্য সূরাতুল জুম‘আ ও আল-মুনাফিকুন বা সূরা আল-আ’লা বা আল-গাশিয়া পড়া মোস্তাহাব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরা গুলো জুমু‘আ ও ঈদের সালাতে পড়তেন। [মুসলিম হাদিস: ১৫, ৮৯১]

সতের- জুমু‘আর দিনকে রোযার জন্য খাস করা:

জুমু‘আর দিনকে রোজার জন্য খাস করা যাবে না। তবে যদি রোযা রাখতে চায় তবে জুম‘আর দিনের আগে বা পরে রোযা রাখবে। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لا يصومن أحدكم يوم الجمعة، إلا أن يصوم يوما قبله أو يوما بعده» [ متفق عليه واللفظ للبخاري ].

“তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমু‘আর দিন রোজা না রাখে। জুমু‘আর একদিন আগে বা পরে মিলিয়ে রোজা রাখবে”। [বুখারি, হাদিস: ১৯৮৫]

আঠারো- জুমু‘আর রাতে ইবাদত করা:

শুধু জুমু‘আর দিন রোজা রাখা এবং জুমু‘আর রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মাকরুহ। আবু হুরাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لا تخصوا ليلة الجمعة بقيام، ولا تخصوا يوم الجمعة بصيام من بين الأيام، إلا أن يكون في صوم يصومه أحدكم» [ مسلم ].

“তোমার জুমু‘আর রাতকে কিয়ামুল লাইলের জন্য খাস করো না এবং রোজার রাখার জন্য তোমরা জুমু‘আর দিনকে অন্যান্য দিন বাদ দিয়ে খাস করো না। তবে কারো যদি নির্ধারিত তারিখে রোজার রাখার অভ্যাস থাকে সে ঐ দিন রোজা রাখতে পারবে”। [মুসলিম, হাদিস: ১১১৪]

উনিশ- জুমু‘আর দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা সুন্নত:

জুমু‘আর দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা মোস্তাহাব। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من قرأ سورة الكهف يوم الجمعة أضاء له من النور ما بين الجمعتين» [ الحاكم والبيهقي وصححه الألباني ].

“যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তা‘আলা এ জুমু‘আ থেকে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার জন্য নূরের আলো দ্বারা আলোকিত করে রাখবে”। [বাইহাকী, হাদিস: ৬০৬, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন।]

২০- জুমু‘আর দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অধিক হারে দুরূদ পড়া:

আউস বিন আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে, বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة، فيه خلق آدم، وفيه قبض، وفيه النفخة، وفيه الصعقة، فأكثروا علي من الصلاة فيه، فإن صلاتكم معروضة علي» [ أحمد وأصحاب السنن وصححه النووي وحسنه المنذري ].

“সবচেয়ে উত্তম দিন জুমু‘আর দিন। এ দিন আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তার রূহ কবজ করা হয়েছে। এ দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং এ দিনই পুনরুত্থান হবে। তোমরা এ দিন আমার উপর বেশি বেশি করে দুরূদ পড়। কারণ, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়”। [আবুদ দাউদ, হাদিস:১০৪৭ নাসায়ী, হাদিস:১৩৪৫ ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৮৫]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন