মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ঋতুবতী মহিলার পক্ষে উচ্চারণ করে কুরআন তিলাওয়াত করা নাজায়েয এবং নিষিদ্ধ। তবে যদি শুধু চোখ দিয়ে দেখে অথবা মুখ দিয়ে উচ্চারণ ব্যতীত শুধু মনে মনে পড়ে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। যেমন, কুরআন শরীফ চোখের সামনে আছে অথবা কুরআন মাজীদের আয়াত সম্বলিত কোনো বোর্ড সামনে আছে। এমতাবস্থায় ঋতুবতী নারী যদি আয়াতগুলোর দিকে তাকায় এবং মনে মনে পড়ে তাহলে এটা জায়েয হওয়ার পিছনে কারো কোনো দ্বিমত নেই বলে ইমাম নাওয়াওয়ী শারহুল মুহায্যাব ২য় খণ্ডের ৩৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।
ইমাম বুখারী, ইবন জারীর তাবারী এবং ইবনুল মুনযির বলেছেন, এটা জায়েয। ফাতহুল বারী ১ম খণ্ডের ৩০৮ পৃষ্ঠায় ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেঈর (পুরাতন অভিমতের) উদ্ধৃতি দিয়ে এবং বুখারী শরীফে ইবরাহীম নাখ‘ঈর উদ্ধৃতি পেশ করে বলা হয়েছে যে, ঋতুবতী নারীর কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার মধ্যে কোনো অসুবিধা নেই।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. (ফাতাওয়া গ্রন্থে মাজমূআ ইবন কাসেম ২৬তম খণ্ডের ১৯১ পৃষ্ঠায়) বলেন, ‘ঋতুবতী নারীর পক্ষে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ, এ ব্যাপারে কোনোই প্রমাণ নেই। কেননা ‘ঋতুবতী নারী এবং অপবিত্র ব্যক্তি কুরআন শরীফ থেকে কিছুই পড়তে পারবে না” বলে যে হাদীসটি রয়েছে তা হাদীস বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুর্বল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেও নারীদের রক্তস্রাব আসতো। এখন যদি এই রক্তস্রাবের কারণে সালাতের মতো কুরআন শরীফের তিলাওয়াতও তাদের জন্য হারাম হয়ে থাকতো তাহলে নিশ্চয় সাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের বৃহত্তর স্বার্থে তা বর্ণনা করতেন এবং তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণকে এ ব্যাপারে শিক্ষা দিতেন এবং কেউ না কেউ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করতেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ঋতুবতী নারীর কুরআন তিলাওয়াত হারাম প্রসঙ্গে কেউই কোনো কিছু বর্ণনা করেন নি। সুতরাং কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই যেখানে সে ক্ষেত্রে হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতকে হারাম হিসেবে গণ্য করা জায়েয হবে না। আর যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নারীদের হায়েয হওয়া সত্বেও তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেন নি। তাই সাব্যস্ত হলো যে, আসলে তা হারাম নয়।’
এ প্রসঙ্গে ওলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মতামত সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর এখন এটিই বলা উচিৎ হবে যে, ঋতুবতী নারীর পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া উচ্চারণ করে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত না করাই উত্তম। তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে যেমন, শিক্ষিকা নারী ছাত্রীদেরকে শিখানোর উদ্দেশ্যে মুখে উচ্চারণ করে কুরআন শরীফ পড়তেই হবে। এমনিভাবে পরীক্ষার্থীনী পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে হায়েয অবস্থায়ও কুরআন শরীফ পড়তে পারবে।
২. সাওম: ঋতুবতী নারীর পক্ষে ফরয-নফল সর্ব প্রকার সাওম রাখা হারাম এবং সাওম রাখাও তার জন্য জায়েয হবে না। কিন্তু ফরয সাওমের কাযা তার ওপর ওয়াজিব। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমাদের যখন রক্তস্রাব হতো তখন আমাদেরকে শুধু সাওমের কাযা করার আদেশ দেওয়া হতো। কিন্তু সালাতের কাযা করার আদেশ দেওয়া হতো না।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
সাওম অবস্থায় রক্তস্রাব আসলে তাহলে সাওম নষ্ট হয়ে যায়। যদিও রক্তস্রাব সূর্যাস্তের সামান্য পূর্বে এসে থাকে। তবে ঐ সাওমটি ফরয হয়ে থাকলে তার কাযা ওয়াজিব। কিন্তু সাওম পালনকারীনী মহিলা যদি সাওম অবস্থায় সূর্যাস্তের পূর্বে লজ্জাস্থানের বেদনা অনুভব করে এবং প্রকৃতপক্ষে রক্তস্রাব সূর্যাস্তের পরেই আরম্ভ হয়ে থাকে তাহলে উক্ত নারীর সাওম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং বিশুদ্ধ অভিমত অনুসারে সাওম নষ্ট হবে না। কারণ পেটের অভ্যন্তরের রক্তের কোনো হুকুম নেই। এর প্রমাণ, পুরুষের ন্যায় স্বপ্নদোষ হয় এমন একজন মহিলা সম্পর্কে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো যে, “তার ওপর কি গোসল করা ফরয? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, যদি সে বীর্য দেখতে পায়।” উক্ত হাদীসে গোসল ফরয হবে কি না এ হুকুমটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বীর্য দেখা ও না দেখার সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। এমনিভাবে বের না হওয়া পর্যন্ত বা দেখা না দেওয়া পর্যন্ত হায়েযেরও বিধি-বিধান কার্যকরী হবে না, বরং কার্যকরী তখনই হবে যখন রক্ত দেখা দিবে।
হায়েয অবস্থায় ফজরের সময় শুরু হলে ঐ দিনের সাওম রাখা জায়েয নয়। যদিও ফজরের সামান্য সময় পরে পবিত্র হয়ে থাকে। আর যদি ফজরের একটু আগে রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্ধ হওয়ার পর সাওম রাখে তাহলে তা জায়েয আছে। এমতাবস্থায় গোসল ফজরের পরে করলেও কোনো দোষ নেই। যেমন, বীর্যস্খলন হেতু শরীর অপবিত্র হওয়ার পর কোনো ব্যক্তি যদি অপবিত্রাবস্থায় সাওমের নিয়ত করে এবং গোসল ফজরের পরে করে তাতে কোনো দোষ নেই। তার সাওম শুদ্ধ হয়ে যাবে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত স্পষ্ট হাদীস রয়েছে:
» َانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ جِمَاعٍ غَيْرِ احْتِلاَمٍ ثُمَّ يَصُوْمُ فِيْ رَمَضَانَ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নদোষ ব্যতীত স্ত্রী সহবাসের কারণে অপবিত্র অবস্থায় ভোরে উঠে রমাযানের সাওম রাখতেন।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
৩. বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ: ঋতুবতী নারীর জন্য বাইতুল্লাহ শরীফের ফরয ও নফল উভয় প্রকার তাওয়াফ করা হারাম। যদি করা হয় তাহলে তা শুদ্ধ হবে না। এর প্রমাণ হচ্ছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার রক্তস্রাব আরম্ভ হওয়ার পর সাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন:
“পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তুমি কা‘বা শরীফের তাওয়াফ ছাড়া হজের অন্যান্য কাজগুলো করে যাও।” এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হায়েয অবস্থায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন। বুঝা গেল, রক্তস্রাব অবস্থায় কা‘বা শরীফের তাওয়াফ করা হারাম। তবে হজ ও উমরার অন্যান্য কাজ যেমন সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে দৌঁড়ানো, ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান করা, মুযদালিফা ও মিনায় রাত্রি যাপন করা এবং জামরায় পাথর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি হারাম নয়। এ থেকে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল যে, যদি কোনো মহিলা পবিত্রাবস্থায় তাওয়াফ করে এবং তাওয়াফ শেষ হওয়া মাত্রই হায়েয শুরু হলো অথবা সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়ানোর সময় হায়েয দেখা দিল তাহলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
৪. ঋতুবতী নারীর জন্য বিদায়ী তওয়াফ জরুরী নয়: হজ ও উমরার করণীয় কাজগুলো শেষ করে নিজের দেশের দিকে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে যদি কোনো মহিলার রক্তস্রাব আরম্ভ হয়ে যায় এবং রওয়ানা হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে বিদায়ী তওয়াফ করা থেকে উক্ত মহিলা মুক্তি পেয়ে যাবে অর্থাৎ বিদায়ী তওয়াফ আর করা লাগবে না। কেননা এ প্রসঙ্গে ইবন আব্বাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস রয়েছে। তিনি বলেন,
“(সকল হজকারী)-কে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাদের শেষ কাজ যেন কা‘বা শরীফের তাওয়াফ দিয়েই হয়। কিন্তু ঋতুবর্তী নারীর জন্য এই আদেশ শিথিল করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের সেই বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে না।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
প্রকাশ থাকে যে, ঋতুবতী নারীর জন্য বিদায়ের প্রাক্কালে মসজিদে হারামের দরজায় গিয়ে মোনাজাত বা প্রার্থনা করা উচিৎ নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে কোনো কিছু বর্ণিত হয়নি। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হওয়ার ওপরই সমস্ত ইবাদতের মূল ভিত্তি। শুধু তাই নয় বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীস এই হুকুমের বিরোধিতা করে। যেমনটি সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত। সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার তাওয়াফে যিয়ারার (ফরয তাওয়াফ) পর যখন ঋতুস্রাব দেখা দিল তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন: “এখন তাহলে মদীনার দিকে বের হয়ে পড়”। এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মসজিদের দরজার দিকে যাওয়ার জন্য আদেশ দেননি। যদি বিষয়টি শরী‘আতসম্মত হতো তাহলে নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বর্ণনা করতেন। তবে হজ ও উমরার ফরয তাওয়াফ থেকে ঋতুবতী নারী অব্যাহতি পাবে না, বরং পবিত্রতা অর্জন করার পর তাকে ফরয তাওয়াফ করতেই হবে।
৫. মসজিদে ঋতুবতী নারীর অবস্থান: ঋতুবতী নারীর মসজিদে এমনকি ঈদগাহে সালাতের স্থানে অবস্থান করা হারাম। এ প্রসঙ্গে উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসটিকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা যায়। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
“স্বাধীন, পর্দানশীন ও ঋতুবতী নারীরা যেন বের হয়। হাদীসে এও উল্লেখ আছে: ঋতুবতী নারীরা সালাতের স্থান থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে।”
৬. স্ত্রী সহবাস: রক্তস্রাব চলাকালীন স্ত্রী সহবাস করা স্বামীর জন্য যেমন হারাম ঠিক তেমনি ঐ অবস্থায় স্বামীকে মিলনের সুযোগ দেওয়াও স্ত্রীর জন্য হারাম। এ হুকুমটি সরাসরি পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলে দাও যে, এটা কদর্য বস্তু, কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাক এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকট যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পবিত্র না হয়।’’ [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২২]
উক্ত আয়াতে (মাহীয) শব্দ দ্বারা হায়েযের সময় এবং লজ্জাস্থানকে বুঝানো হয়েছে। এভাবে হাদীস দ্বারাও বিষয়টি প্রমাণিত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “স্ত্রী সহবাস ছাড়া বাকী সব কিছু করতে পার।” [সহীহ মুসলিম।]
সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, রক্তস্রাব অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত মুসলিম একমত। এখানে কারো কোনো রকম দ্বিমত নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে তার জন্য এমন একটি অসৎ কাজে লিপ্ত হওয়া কোনোভাবেই বৈধ হবে না, যার ওপর কুরআন, সুন্নাহ এবং মুসলিমদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর পরও যারা এ অবৈধ কাজে লিপ্ত হবে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের অন্তর্ভুক্ত এবং মুমিনদের মতাদর্শের পরিপন্থী পথের অনুসারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহায্যাব ২য় খণ্ডের ৩৭ নং পৃষ্ঠায় ইমাম শাফেঈ রহ.-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, ঋতুস্রাব চলাকালে যে ব্যক্তি স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হবে তার কবীরা গুনাহ হবে। আমাদের ওলামায়ে কেরাম যেমন ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেছেন: যে ব্যক্তি হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলনকে হালাল মনে করবে সে কাফির হয়ে যাবে।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি পুরুষের জন্য ঋতুস্রাব চলাকালীন সঙ্গম ব্যতীত স্ত্রীর সাথে এমন সব কাজ করাকে জায়েয করে দিয়েছেন যার মাধ্যমে স্বামী আপন কামোত্তেজনা নির্বাপিত করতে পারে। যেমন, চুমু দেওয়া, আলিঙ্গন করা এবং লজ্জাস্থান ছাড়া অন্যান্য অঙ্গের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা পূর্ণ করা। তবে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ ব্যবহার না করাই উত্তম। কাপড় বা পর্দা জড়িয়ে আড়াল করে নিলে অসুবিধা নেই। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋতুস্রাব চলাকালীন আমাকে আদেশ করলে আমি ইযার পরতাম। তখন তিনি আমাকে আলিঙ্গন করতেন।”
৭. তালাক: হায়েয অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া স্বামীর জন্য হারাম। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ১ম আয়াতে বলেন,
‘‘হে নবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দাও।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১]
অর্থাৎ এমন সময়ে তালাক দিবে যার মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যেন তালাকের পর থেকে নির্দিষ্ট ইদ্দত গণনা করতে পারে। আর এটা গর্ভবতী অবস্থায় অথবা সঙ্গমবিহীন পবিত্রতার সময়ে তালাক দেওয়া ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ, রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেওয়া হলে স্ত্রী ইদ্দত গণনা করতে পারবে না বরং অসুবিধার সম্মুখীন হবে। কেননা যে হায়েযের মধ্যে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে সেটা তো ইদ্দতের মধ্যে গণ্য হবে না। এমনিভাবে যদি পবিত্রতার অবস্থায় সঙ্গমের পর তালাক দেওয়া হয় তখনও ইদ্দতকাল নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে না। কেননা এই সঙ্গমের দ্বারা স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ অজানা থাকবে। যদি গর্ভবতী না হয়ে থাকে তাহলে হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দত গণনা করবে। এমতাবস্থায় যেহেতু ইদ্দতের প্রকার সম্পর্কে কোনো কিছু নিশ্চিত জানা নেই সেহেতু বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক দেওয়া হারাম।
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম প্রমাণিত হয়েছে এবং বুখারী ও মুসলিমসহ হাদীসের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও এটিই প্রতীয়মান হয়। যেমন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি স্বীয় স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দিলে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে বিষয়ে অবহিত করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে বললেন:
“তুমি তাকে আদেশ কর সে যেন তালাক প্রত্যাহার করে স্ত্রীকে নিয়ে আসে এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রাখে। অতঃপর পুনরায় যখন ঋতুস্রাব দেখা দিবে এবং সেই ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন নিজের নিকট রাখতে চাইলে রাখবে এবং তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিবে। আর এটাই হচ্ছে সেই ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তালাক দেওয়ার জন্য নির্দেশ করেছেন।”
যদি কোনো স্বামী ঋতুস্রাব অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং এর জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করতঃ স্ত্রীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের হুকুম মোতাবেক তালাক দিতে পারে। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার পর যে হায়েযে তালাক দেওয়া হয়েছে সে হায়েয থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছেই রাখবে। অতঃপর পুনরায় যখন রক্তস্রাব দেখা দিবে এবং তা থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন চাইলে তাকে স্ত্রী হিসেবে নিজের কাছে রেখেও দিতে পারবে আবার তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, রক্তস্রাব অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রে তা জায়েয আছে:
প্রথম: বিবাহের পর স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই অথবা বিবাহের পর সহবাসের পূর্বেই রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয় তাহলে তা হারাম নয়। কেননা এমতাবস্থায় স্ত্রীর ওপর কোনো ইদ্দত পালন ওয়াজিব নয়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে তালাক প্রদান করা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী হবে না।
দ্বিতীয়: রক্তস্রাব যদি গর্ভবতী অবস্থায় দেখা দেয় তাহলে তালাক প্রদান করা হারাম নয়।
তৃতীয়: তালাক যদি কোনো কিছুর বিনিময়ে দেওয়া হয় তাহলে হায়েয অবস্থায়ও তালাক দেওয়া জায়েয। যেমন, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-বিবাদ এবং খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করলে স্বামী বিনিময় নিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, যদিও স্ত্রী রক্তস্রাবের অবস্থায় থাকে। প্রমাণস্বরূপ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস উপস্থাপন করা যায়:
“সাবেত ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামীর চরিত্র এবং ধর্ম সম্পর্কে আমি কোনো রকম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি না। তবে ইসলামের মধ্যে কুফুরীকে আমি অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিতে পারবে? উত্তরে মহিলা বললেন: জি হ্যাঁ। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবেত ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন: তুমি বাগানটি নিয়ে তাকে তালাক দিয়ে দাও।” [সহীহ বুখারী।]
স্ত্রী রক্তস্রাব অবস্থায় আছে না পবিত্র অবস্থায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি। সুতরাং বুঝা গেল যে, বিনিময় নিয়ে তালাক দেওয়া জায়েয আছে যদিও স্ত্রী হায়েয অবস্থায় থাকে।
দ্বিতীয়ত: এই তালাক তো অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে স্ত্রীর বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটা পথ মাত্র। সুতরাং যে কোনো সময়ে এবং যে কোনো অবস্থাতে প্রয়োজন দেখা দিলে এ ধরনের তালাক দেওয়া জায়েয।
মুগনী গ্রন্থের ৭ম খণ্ডে ৫২ পৃষ্ঠায় ‘খোলা’ অর্থাৎ ঋতুস্রাবগ্রস্ত স্ত্রীর পক্ষে অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে তালাক নেওয়া জায়েয হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমন ক্ষতি থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্যই হায়েয চলাকালে তালাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাকে ইদ্দতকাল দীর্ঘ হলে। আর অর্থ নিয়ে তালাক নেওয়ার বিধানটিও ক্ষতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয় সে উদ্দেশ্যেই শরী‘আত কর্তৃক বিধিত হয়েছে। ক্ষতি বলতে যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য অথবা স্ত্রীর স্বামীকে অপছন্দ করা, তাকে ঘৃণা করা এবং তার সাথে সংসার করতে অনীহা প্রকাশ করা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এ অবস্থার সৃষ্টি হলে মূলত এটা স্ত্রীর জন্য ইদ্দতকাল দীর্ঘ হওয়ার চেয়েও বড় সমস্যা। সুতরাং সামান্য ক্ষতি হলেও বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রক্তস্রাবের অবস্থায়ও বিনিময় দিয়ে তালাক নেওয়া জায়েয এবং এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থের বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারী উক্ত মহিলার অবস্থা সম্পর্কে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি।
হায়েয অবস্থায় নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা প্রতিটি জিনিসের হালাল হওয়াটাই হচ্ছে প্রকৃত নিয়ম এবং শরী‘আতের দিক দিয়ে এটা নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো প্রমাণও নেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, হায়েয অবস্থায় স্বামীকে স্ত্রীর নিকট যেতে দেওয়া যাবে কি না? উত্তরে বলতে হবে, যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে স্বামী সঙ্গম থেকে বিরত থাকবে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। অন্যথায় সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে পবিত্র হওয়ার আগে স্বামীকে স্ত্রীর নিকট পাঠানো যাবে না বা যেতে দেওয়া হবে না।
৮. হায়েযের মাধ্যমে তালাকের ইদ্দত গণনা করা:
কোনো পুরুষ যদি স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করার পর অথবা নির্জন স্থানে একত্রিত হওয়ার পর তালাক দেয় তাহলে পূর্ণ তিন হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দতকাল গণনা করা তালাকপ্রাপ্তা নারীর ওপর ফরয। তবে শর্ত হচ্ছে উক্ত স্ত্রীকে ঋতুবতী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এবং অন্তঃসত্ত্বা হবে না। প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ঘোষণা:
‘‘গর্ভবতী নারীদের ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ৪]
আর যদি তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ঋতুবতী নারীদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকে, যেমন কম বয়স্কা, যার রক্তস্রাব এখনো আরম্ভ হয়নি বা অতিবয়স্কা নারী যার বয়োঃবৃদ্ধির কারণে হায়েয আসার সম্ভাবনা নেই অথবা অস্ত্রোপচার জনিত কারণে গর্ভাশয় নষ্ট হওয়ায় হায়েয আসছে না -ইত্যাদি কারণে যে সকল মহিলার রক্তস্রাবের সম্ভাবনা নেই তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ তিন মাস। প্রমাণ হচ্ছে পবিত্র কুরআনের বাণী:
‘‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই তাদেরকে নিয়ে সন্দেহ হলে (হায়েয দ্বারা ইদ্দত গণনা সম্ভব না হলে) তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস। এমনিভাবে যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি তাদের ইদ্দতকালও অনুরূপ হবে।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ৪]
ঋতুবতী নারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্বেও যে সমস্ত মহিলার নির্দিষ্ট কোনো কারণে যেমন অসুস্থতা বা দুগ্ধ পান করানোর ফলে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত হায়েয আসে না তারা ইদ্দতের মধ্যেই পড়ে থাকবে। যদিও ইদ্দতকাল দীর্ঘ হয়ে যায়। অতঃপর যখন রক্তস্রাব আরম্ভ হবে তখন ইদ্দত গণনা শুরু করবে। আর যদি নির্দিষ্ট কারণটি শেষ হওয়ার পরেও রক্তস্রাব না আসে যেমন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেছে অথবা দুধ পান করানো শেষ হয়ে গিয়েছে অথচ হায়েয বন্ধই রয়েছে তাহলে কারণটি শেষ হওয়ার পর থেকে পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করবে এবং এটাই বিশুদ্ধ অভিমত, যা শরী‘আতের বিধান অনুসারে কার্যকরী হয়ে থাকে। কেননা নির্দিষ্ট কারণ শেষ হওয়ার পরেও হায়েয না আসা বিনা কারণে হায়েয বন্ধ থাকার মতই। আর কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হায়েয বন্ধ থাকলে পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করতে হয়। তন্মধ্যে ৯ মাস গর্ভের কারণে সতর্কতাবশতঃ, আর তিন মাস ইদ্দতের কারণে।
যদি বিবাহের পর স্পর্শ করার অথবা স্বামী-স্ত্রী কোনো নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই তালাক দেওয়া হয় তাহলে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে আদৌ ইদ্দত পালন করতে হবে না, না হায়েযের মাধ্যমে না অন্য কোনো পন্থায়। কারণ, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মুমিন বান্দাদেরকে সম্মোধন করে বলেন,
‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা মু‘মিনা নারীদেরকে বিয়ে করার পর এবং স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্যে তাদের পালনীয় কোনো ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে।’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪৯]
৯. হায়েযের মাধ্যমে গর্ভাশয় সন্তানমুক্ত হওয়া সম্পর্কিত হুকুম:
গর্ভে ভ্রূণশূন্যতার সাথে শরী‘আতের কয়েকটি হুকুম সম্পৃক্ত। তন্মধ্যে যদি গর্ভাবস্থায় স্বামী মারা যায় তখন ঐ গর্ভজাত সন্তান তার উত্তরসূরী হবে। উক্ত মহিলাকে যদি পুনঃবিবাহ দেওয়া হয় স্বামী মহিলাটির ঋতুস্রাব অথবা গর্ভে সন্তান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করবে না। এখন যদি সে অন্তঃসত্ত্বা হয় তাহলে মৃত ব্যক্তির সাথে সেই সন্তানটির উত্তরাধিকারের হুকুম দেওয়া হবে। কেননা তার মৃত্যুর সময় সন্তানের অস্তিত্ব গর্ভাশয়ে ছিল। আর যদি মহিলাটির ঋতুস্রাব হয় তখন (ভ্রূণ) পূর্ব স্বামীর ওয়ারিস হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কেননা ঋতুস্রাব দ্বারা গর্ভাশয় ভ্রূণমুক্ত বলেই সর্বসম্মতিক্রমে বিবেচনা করা হয়।
১০. গোসল ওয়াজিব প্রসঙ্গ:
ঋতুবতী নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে পুরো শরীরের পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে আবি হুবাইশকে বলেছিলেন:
“সুতরাং যখন তোমার রক্তস্রাব আরম্ভ হবে তখন সালাত ছেড়ে দিবে। আর যখন বন্ধ হবে তখন গোসল করে সালাত পড়বে।” [সহীহ বুখারী।]
ওয়াজিব গোসল সমাপনের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে পুরো দেহটাকে চুলের গোড়াসহ গোসলের মধ্যে শামিল করে নেওয়া। আর উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত পন্থায় গোসল করা। জনৈকা আসমা বিনতে শাকাল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঋতুবতী মহিলার গোসল সম্পর্কে প্রশ্ন করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমরা বরইপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতঃপর মাথায় পানি ঢালবে এবং উত্তমরূপে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছাবে এবং সম্পূর্ণ শরীরে পানি ঢেলে দিবে। পরে কস্তুরী মাখানো এক টুকরা কাপড় দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করবে। একথা শুনে আসমা বললেন: কস্তুরী মাখানো বস্ত্র দ্বারা কীভাবে পবিত্রতা হাসিল করবো? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সুবহানাল্লাহ!। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চুপিসারে তাকে বললেন: রক্তের চিহ্ন উক্ত কস্তুরী মিশ্রিত কাপড় দ্বারা ঘষে মুছে ফেলবে।” [সহীহ বুখারী।]
গোসলের সময় নারীদের মাথায় চুল বাঁধা থাকলে তা খোলা আবশ্যক নয়। তবে যদি এমন শক্তভাবে বাঁধা থাকে যে, চুলের গোড়ায় পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থাকে তাহলে বন্ধন খোলা বাধ্যতামূলক। সহীহ মুসলিমে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদীস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, আমি আমার মাথার চুল বেঁধে রাখি। এখন অপবিত্রতার গোসলের সময় (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী ‘অপবিত্রতা ও হায়েযের গোসলের সময়’) আমি কি তা খুলে নিব? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
“না, বরং তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তুমি মাথার উপর তিন অঁজলা পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর সারা শরীরে পানি ঢেলে পবিত্রতা অর্জন করবে।”
সালাতের ওয়াক্ত চলাকালে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে ঋতুবতী মহিলার ওপর তাড়াতাড়ি গোসল করা অত্যাবশ্যক, যাতে উক্ত সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে পারে। তবে ঋতুবতী মহিলা যদি সফরে থাকে এবং সঙ্গে পানি না থাকে অথবা সাথে পানি আছে কিন্তু ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে অথবা অসুস্থতার কারণে ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তাহলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নিবে। এ অবস্থা চলতে থাকবে যতক্ষণ না বাধা দূরীভূত হবে, যখন বাধা দূরীভূত হবে তখন গোসল করবে।
কিছু কিছু মহিলা এমনও আছেন যারা সালাতের ওয়াক্তের মধ্যেই রক্তস্রাব বন্ধ হওয়া সত্বেও গোসল করতে বিলম্ব করেন এবং এই বলে কারণ দেখিয়ে থাকেন যে এই সময়ে পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্র হওয়া সম্ভব নয়। মূলত এটা কোনো দলীল বা ওযর হতে পারে না। কেননা ওয়াজিবের সর্বনিম্ন স্তর অনুসারে কোনো রকম গোসল সেরে ওয়াক্তের মধ্যে সালাত আদায় করা সম্পূর্ণ সম্ভব, অসম্ভবের কিছুই নেই। অতঃপর দীর্ঘ সময় পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্রতা অর্জন করে নিতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/649/9
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।