HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নাজাফ সম্মেলন

লেখকঃ সাইয়েদ আব্দুল্লাহ আস-সুওয়াইদী

নাজাফ সম্মেলন
الحمد لله رب العالمين , و الصلاة و السلام على رسوله سيدنا محمد خاتم الأنبياء و المرسلين , و على آله و أصحابه الطاهرين .

(সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম তাঁর রাসূল আমাদের নেতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং শান্তি বর্ষিত হউক তাঁর পরিবার-পরিজন ও পুত-পবিত্র সাহাবীদের প্রতি) । অতঃপর—

যখন আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য কাঙ্খিত শরীয়তের পৃষ্ঠপোষকতা দান এবং বিদ‘আতপন্থী ও অপকর্মের প্ররোচনাদানকারীদেরকে প্রতিরোধ করাটাকে সহজ করে দিয়েছেন, তখন তিনি যে আমাকে আমার মনোবাসনা পূর্ণ করার ও তার দ্বারা সামগ্রীকভাবে ইসলামপন্থীদের সংশোধন করার; আমার হাতে সত্যকে জারি রাখার; আমার আলোচনা দ্বারা বাতিলের আগুন প্রশমিত করার তৌফিক প্রদান করলেন এবং শী‘আরা যে সমস্ত বাতিলের উপর ছিল, যেমন সাহাবীগণকে গালি দেওয়া, তাঁদেরকে কাফির বলা, আলী ইবন আবি তালিব রা.-কে সবচেয়ে মর্যাদাশীল ও খিলাফতের একমাত্র হকদার বলে দাবি করা, মু‘তা বিবাহকে (সাময়িক বিবাহকে) বৈধ করা, ওযুর সময় পদযুগল মাসেহ করা ইত্যাদি ধরনের নিকৃষ্ট কাজ, বিদ‘আত, সুস্পষ্ট ও মুতাওয়াতের পর্যায়ের গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা থেকে তাদেরকে বিরত রাখার তাওফিক দান করেছেন; তাঁর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমি তাঁর সম্মানিত ঘর বাইতুল্লাহ্‌র হজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

আর এই কাহিনীর সারসংক্ষেপ হল, যখন পারসিক রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়ল এবং আফগান রাষ্ট্র তাদের ইস্পাহান রাজ্য দখল করে নিল [আর এই ঘটনা ঘটেছিল ১১৩৫ হিজরিতে কালযাবী গোত্রের আমীর মাহমুদ আফগানীর হাতে; আর সে ছিল আমীর উয়াইসের পুত্র। আর তারা ছিল মূলত: কান্দাহার এলাকার। তার জীবনীর জন্য দ্রষ্টব্য— আল-দীন, সামী বেগ ( الدين سامي بك ), পৃ. ৪২২২]; আর ওসমানী রাজবংশও -আল্লাহ তাদের রাষ্ট্রকে তৌফিক দিয়ে সাহায্য করুন- তারাও কিছু এলাকার মালিক হল। আর এই ঘটনা ঘটেছিল আফগানগণ কর্তৃক ‘শাহ হোসাইন’ নিহত হওয়ার পর। অতঃপর তার ছেলে তহমাসেব আত্মপ্রকাশ করল হত্যা ও অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য; ফলে তার চতুষ্পাশে অবস্থানরত পারসিকগণ ঐক্যবদ্ধ হল। অবশেষে তাকে ঘিরে একত্রিত হল বহু জনগণ, যাদের মধ্যে নাদির শাহও ছিল।

তহমাসেব প্রজাদের বিষয়াদি নিয়ে খুব কমই চিন্তা-ভাবনা করত; সে মদ পানেই মত্ত থাকত। ফলে নাদির শাহ তার খুব কাছের মানুষে পরিণত হল; এমনকি এক পর্যায়ে সে হয়ে গেল তার শাসন ক্ষমতার একমাত্র অবলম্বন [অর্থাৎ তার উযির। আর তাদের পরিভাষা ছিল যে, তারা উযিরকে ‘রাষ্ট্রের অবলম্বন’ ( اعتماد الدولة ) উপাধিতে ভূষিত করত।] (উযির) এবং সে তার ক্ষমতার যাবতীয় বিষয় তার নিকট অর্পণ করল।

অতঃপর এই নাদির শাহ রাজ্যসমূহ উদ্ধার করতে শুরু করল; আর তারই ধারাবাহিকতায় আফগানের হাত থেকে ইস্ফাহানকে উদ্ধার করল এবং তাদেরকে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত করল। অতঃপর তাকে ‘তহমাসেব কুলী’ উপাধিতে ভূষিত করা হল; যার অর্থ হল ‘তহমাসেবের গোলাম’। আর এই উপাধি তার উপর এমন প্রাধান্য বিস্তার করল যে, তাকে তার প্রথম বা পূর্ব নামে চেনা যেত না।

অতঃপর তার চিন্তা ও পরিকল্পনার ব্যাপ্তি সম্প্রসারিত হল ওসমানী সম্রাজ্যের হাতে নিয়ন্ত্রিত রাজ্যসমূহের দিকে; সেগুলোকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য এবং যথারীতি সে বাগদাদকে অবরুদ্ধ করার জন্য এক বড় ধরনের সৈন্য সমাবেশ করল; আর তখন বাগদাদের শাসনকর্তা ছিলেন উযিরে আযম ফিল্ড মার্শাল ওসমানী রাষ্ট্রের ডান হাত উযিরের পুত্র উযির মরহুম হাসান পাশা’র ছেলে আহমদ পাশা। আর উল্লেখিত উযির এই বহিরাগত বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করতে আদিষ্ট ছিলেন না; বরং তিনি আদিষ্ট ছিলেন কিল্লা’র অভ্যন্তরীণভাগ হেফাযত করার জন্য। এমনকি তার পাগড়ি যদি দেয়ালের বাইরেও পড়ে যেত, তবে তিনি তা উদ্ধারের জন্য বের হতেন না! আর তার সাথে ছিলেন তিন উযির: কুরা মুস্তফা পাশা, সারি মুস্তফা পাশা ও জামাল উগলী আহমদ পাশা।

এই বিদ্রোহী বাগদাদকে আট মাস যাবত অবরুদ্ধ করে রাখে; এমনকি শেষ পর্যন্ত তাদের খাদ্যসম্ভার শেষ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা ঘোড়া ও গাধার মাংস ভক্ষণ করে, এমনকি তারা বিড়াল ও কুকুরের মাংসও ভক্ষণ করেছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে বাগদাদ থেকে হটিয়ে দিলেন এবং তার থেকে বাগদাদকে উদ্ধার করলেন। আর তা সম্ভব হয়েছে এইভাবে যে, ওসমানী সম্প্রদায় তার বিরুদ্ধে টবাল ওসমান পাশার নেতৃত্বে সৈন্য বাহিনী প্রস্তুত করল; অতঃপর তিনি বাগদাদমুখী হলেন। এক পর্যায়ে তিনি ‘তহমাসেব কুলী’সহ পারসিক সৈন্যগণকে পরাজিত করলেন এবং তাদেরকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলেন; কিন্তু তা সম্ভব হয়েছে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর।

অতঃপর সে (নাদির শাহ) পরাজয় ও পতনের পরে দ্বিতীয় বারের মত আগমন করে এবং বাগদাদকে অবরুদ্ধ করে ফেলে; আর তখনও বাগদাদের প্রশাসনিক প্রধান বা উযির ছিলেন আহমদ পাশা। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে বাগদাদকে মুক্ত করেছেন।

অতঃপর সে (নাদির শাহ) মনোযোগ দিল রোমের ‘আরযন রোম’ এর প্রতি; আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে রোমকেও মুক্ত করেছেন। আর সে যখন ‘মাগান’ নামক মরুভূমিতে ফিরে এল, তখন পারসিকগণ তার নিকট তার ব্যবস্থাপনায় রাজ্য পরিচালনার ব্যাপারে বায়‘আত গ্রহণ করে। আর সেই বায়‘আতের তারিখ ও শ্লোগান ছিল “যা ঘটেছে তার মধ্যে কল্যাণ” সন ১১৪৮ হি.। আর যে ব্যক্তি তার এই বায়‘আতের ব্যাপারে সম্মত ছিল না, সে ব্যক্তি উল্লেখিত তারিখ ও শ্লোগানকে পরিবর্তন করেছে এবং বলেছে: “যা ঘটেছে তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই”; আর তাও একই তারিখে হয়েছে, অর্থাৎ ১১৪৮ হিজরিতে।

অতঃপর সে (নাদির শাহ) মনোযোগ দিল ভারত অভিযানের দিকে; আর সেই দেশে তার অভিযান চলতে থাকে ভারত রাজ্যের (বর্তমান পাকিস্তানের) করাচী’র ‘জাহানাবাদ’ দখল করা পর্যন্ত। অনেক সংঘর্ষের পর সে তার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। অতঃপর সে সেখানকার (ভারতের) বাদশা শাহ মুহাম্মদের সাথে সন্ধি করে এবং ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ গ্রহণ করে যা গণনার বাইরে এবং শাহ মুহাম্মদের উপর নির্ধারিত অংক ও শ্রেণীর মালামাল বার্ষিক কর হিসেবে ধার্য করে। অতঃপর সে ভারত ত্যাগ করে এবং তুর্কিস্তান অভিযানের দিকে মনোযোগ দেয় এবং বলখ ও বুখারার উপর কর্তৃত্ব লাভ করে।

মোটকথা আফগান, তুর্কিস্তান ও সমগ্র ইরানের অধিবাসীগণ তার বশ্যতা স্বীকার করে। আর পারসিকদের ধারণা যে, ভারতের অধিবাসী ও তাদের শাসক শাহ মুহাম্মদসহ সকলেই তার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছে। আর শাহ মুহাম্মদ হলেন তার উকিল বা প্রতিনিধি। আর এই জন্যই তিনি নিজেকে শাহানশাহ উপাধিতে ভূষিত করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে যেন এই নাম ব্যতীত অন্য কোন নামে ডাকা না হয়; আর যে ব্যক্তি তার ব্যাপারে এই নাম ব্যতীত অন্য কোন নাম ব্যবহার করবে, তাকে সে সতর্ক করে দিয়েছে।

অতঃপর সে (নাদির শাহ) স্থিতি ও স্থায়িত্বের উদ্দেশ্যে মনোযোগ দিল দাগিস্তান অভিযানের দিকে; আর সেই সময়ের মধ্যে তার দুতগণের মাধ্যমে সে সার্বক্ষণিক ওসমানী রাষ্ট্রের খোজ-খবর রাখত। একবার সে তাদের নিকট থেকে রুহা সীমানা থেকে আব্বাদান অঞ্চলের খোঁজ-খবর নিত; তার এই রাজ্যটি তৈমুরের পক্ষ থেকে ওয়ারিস হিসেবে প্রাপ্ত বলে ধারণা করা হত। কারণ, সে দাবি করত যে, সেই তার (তৈমুরের) ওয়ারিস। আর সে তাদের নিকট এই স্বীকৃতিও তলব করত যে, এখন যে শী‘আ মাযহাবের উপর তারা প্রতিষ্ঠিত, তা হল জাফর সাদিকের মাযহাব এবং তা হক (সত্য)! আর তারা বলে: ইসলামের মাযহাব পাঁচটি। আর সে তার (জাফর সাদিকের) জন্য পবিত্র কাবা ঘরে পঞ্চম স্তম্ভের দাবি করে! সে আরও দাবি করে যে, সে যুবাইদার পথ থেকে হজের রাস্তা শুরু করবে এবং কুপ, জলাশয় বা চৌবাচ্চাসমূহ ইত্যাদি সংস্কার করবে। আর সে এও দাবি করে যে, সে হবে হাজিদের আমীর। আর যখন সে ইরাকের পথে বের হবে, তখন একজন আগে আগে গিয়ে জনগণকে সরিয়ে দেবে এবং ঠিক একই নিয়মে সে ফিরে আসবে!!

তার জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির এই চেষ্টা-সাধনার মিশন অবিরাম চলতে থাকে। এমনকি সে ইরাকীদের অধিকাংশ এলাকা ধ্বংস করে দেয়। আর সেখানে বিশৃঙ্খলা চলছিল ১১৫৬ হিজরি পর্যন্ত। অতঃপর আরবগণ যুদ্ধের সরঞ্জামাদিসহ বিশাল বাহিনী নিয়ে ইরাকে আগমন করল এবং বহু দলে বিভক্ত হয়ে ঐ ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ল। বাগদাদ অবরোধ করে রাখার জন্য প্রায় সত্তর হাজার সৈন্য রেখে দেয়া হল; আর বসরা অবরোধ করে রাখার জন্য প্রায় নব্বই হাজার সৈন্য প্রেরণ করা হল। অতঃপর তারা তাকে ছয় মাস যাবত অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। তবে তারা বসরাবাসীকে কামান ও বন্দুক দ্বারা আঘাত করেছিল। আর বাগদাদ অবরোধের ক্ষেত্রে তারা তার থেকে প্রায় এক ফরসখ দূরে ছিল; আর অবরোধের ধরন ছিল সেখানকার প্রধান প্রশাসক আহদম পাশা’র সাথে দেন-দরবারের মাধ্যমে।

আর নাদির শাহ ও তার বাকি সৈন্যগণ মনোযোগ দিল ‘শাহারযুর’ অভিযানের দিকে; সেখানকার অধিবাসীগণ তার বশ্যতা স্বীকার করল। অনুরূপভাবে অপরাপর সকল কুর্দি ও আরবগণও তার বশ্যতা স্বীকার করল। অতঃপর সে ‘কিরকুক কেল্লা’-র দিকে অভিযান পরিচালনা করল এবং তা আট দিন অবরুদ্ধ করে রাখল; ঐ বার সে তার উপর বিশ হাজার বার কামান হামলা করেছে এবং তার সমসংখ্যক বার বোমা হামলাও করেছে। ফলে তারা আত্মসমর্পন করেছে এবং তার বশ্যতা স্বীকার করেছে। অতঃপর সে ইরবেলের দিকে অভিযান পরিচালনা করে; তাতে তার অধিবাসীগণ তার নিকট আত্মসমর্পন করেছে এবং তার বশ্যতা স্বীকার করেছে।

অতঃপর সে মসুলের দিকে অভিযান পরিচালনা করে এমতাবস্থায় যে, তার সাথে প্রায় দুই লক্ষ যোদ্ধা ছিল। সে সাত দিন ধরে তার অধিবাসীদের উপর প্রায় চল্লিশ হাজার বার কামানের গোলা বর্ষণ করেছে এবং তার সমসংখ্যক বার বোমা হামলাও করেছে। অতঃপর তার অধিবাসীগণ তাদের যাবতীয় বিষয়াদি হেফাযতের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলার নিকট ন্যস্ত করে; অতঃপর সে বিস্ফোরকের জন্য গর্ত খনন করে এবং তা বারুদ ও সীসা দ্বারা ভর্তি করে। একপর্যায়ে তাতে সে আগুন জ্বালিয়ে দেয়; ফলে তা তার জন্য শোচনীয় পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর সে যখন উপলব্ধি করতে পারল যে, সে দীর্ঘকাল ব্যয় করেও সেখানে সফলতা অর্জন করতে পারবে না, তখন সে সেখান থেকে প্রস্থান করল এবং তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে বাগদাদ অভিমুখে রওয়ানা দিল; অতঃপর সে আমগমন করল এবং সাইয়্যিদুনা মূসা ইবন জাফরের এলাকায় (নগরে) [বর্তমানে এই এলাকাকে ‘আল-কাযেমীয়া’ নামে নামকরণ করা হয়।] অবতরণ করল। অতঃপর সে তার মূসা ইবন জাফর ও মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের কবর যিয়ারত করল। অতঃপর কাছাকাছি সময়ে সে দাজলা নদী অতিক্রম করে ইমাম আবূ হানিফা রহেমাহুল্লাহু তা‘আল’র কবর যিয়ারত করে [বর্তমানে ইমাম আবূ হানিফা রহেমাহুল্লাহু তা‘আল’র কবরের স্থানকে ‘আল-‘আজমীয়া’ নামে নামকরণ করা হয়।]।

আর দূতগণ সার্বক্ষণিক তার ও আহমদ পাশাকে নিয়ে মতবিরোধ করতে থাকে যে, সে (আহমদ পাশা) শী‘আ মাযহাবের বিশুদ্ধতার পক্ষে দেয়া মতামতের দাবি প্রত্যাহার করে নিয়েছে! আর শী‘আ মাযহাবই জাফর সাদিকের মাযহাব- এই বিশ্বাসও প্রত্যাহার করে নিয়েছে! অতঃপর সে ইমাম আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র যিয়ারতের উদ্দেশ্যে নাজাফ অভিমুখে রওয়ানা দিল; আরও উদ্দেশ্য ছিল যাতে সে স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত গম্বুজটি দেখতে পাবে।

সুতরাং সাওয়াল মাসের একুশ তারিখ রবিবার মাগরিবের পূর্ব মুহূর্তে আমি বসা ছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে উজির আহমদ পাশা’র এক দূত এসে আমাকে তার নিকট ডাকল। অতঃপর আমি মাগরিবের নামাযের পর গেলাম এবং প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করলাম; অতঃপর আমার দিকে তার (আহমদ আগা’র) কতিপয় অন্তরঙ্গ বন্ধু ও বিনোদন সঙ্গী বের হয়ে আসল। অতঃপর সে (আহমদ আগা) বলল:

কেন আপনাকে তলব করা হয়েছে, তা কি আপনি জানেন?

আমি বললাম: না

সে বলল: পাশা চাচ্ছেন আপনাকে নাদির শাহ’র নিকট পাঠাতে!

আমি বললাম: কী জন্য?

সে বলল: নিশ্চয় সে (অর্থাৎ নাদির শাহ) আলেমদের সাথে এমন একজন আলেমকে চাচ্ছে যিনি শী‘আ মাযহাবের অবস্থা নিয়ে পারসিকদের সাথে আলোচনা করবেন এবং তা বাতিল সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে দলিল পেশ করবেন; আর পারসিকগণ তার বিশুদ্ধতার উপর দলিল পেশ করবে। সুতরাং আমাদের আলেম [অর্থাৎ— আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আলেম।] যদি পরাজিত হয়, তবে সে পঞ্চম মাযহাবকে [অর্থাৎ— আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আলেম পঞ্চম মাযহাবকে স্বীকৃতি দিবে ও সত্য বলে মেনে নেবে ।] স্বীকৃতি দিতে ও মেনে নিতে বাধ্য হবে!!

এই কথা যখন আমার কানে ধাক্কা দিল, তখন আমার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেল এবং আমার মাংসপেশীগুলো কেঁপে উঠল; আর আমি বললাম:

হে আহমদ আগা! তুমি জান যে, রাফেযীগণ একগুঁয়ে ও অহঙ্কারী সম্প্রদায়! তারা কিভাবে আমার কথা মেনে নেবে?! আর বিশেষ করে তারা তারা অন্ধ বিশ্বাসের পেরেকে আবদ্ধ ও সংখ্যায় অধিক। আর এই শাহ হল যালিম, অন্যায়কারী ও অত্যাচারী। সুতরাং কিভাবে আমি তার মাযহাবকে বাতিল ও তার রায়কে মূর্খতা ও বোকামী বলার দুঃসাহস করি?! আবার কিভাবেই বা তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে, অথচ তারা আমাদের মতের স্বপক্ষের সকল হাদিসকে অস্বীকার করে; তারা হাদিসের ছয়টি প্রসিদ্ধ কিতাবসহ হাদিসের অন্যান্য কিতাবের বিশুদ্ধতার কথা স্বীকার করে না। আর তারা প্রত্যেকটি আয়াতকে তাবীল তথা অপব্যাখ্যা করে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে এবং বলে: দলিল যখন সন্দেহযুক্ত হয়, তখন তার দ্বারা দলিল দেয়ার উপযুক্ততা বাতিল বলে গণ্য হয়, যেমন তারা বলে থাকে: দলিল হওয়ার পূর্ব শর্ত হল তার উপর তার্কিক তথা বিবাদকারীগণ ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ইজতিহাদী (গবেষণামূলক) বিষয়গুলো ধারণার ফায়দা দেয়, সুতরাং কিভাবে আমি তাদের নিকট মোজা’র উপর মাসেহের বৈধতা প্রমাণ করব, অথচ তা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত? অতএব আমি যদি বলি: মোজা’র উপর মাসেহের হাদিস বর্ণনা করেছেন প্রায় সত্তরজন সাহাবী যাঁদের মধ্যে আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুও একজন, তখন তারা বলবে: আমাদের নিকট মোজা’র উপর মাসেহের অবৈধতা প্রমাণিত একশতেরও বেশি সাহাবী’র বর্ণনা দ্বারা যাঁদের মধ্যে আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রয়েছেন! আর আমি যদি বলি: তোমরা মোজা’র উপর মাসেহের অবৈধতার ব্যাপারে প্রমাণ স্বরূপ যেসব হাদিস পেশ করেছ সেগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট! তখন তারা বলবে: অনুরূপভাবে তোমরাও মোজা’র উপর মাসেহের বৈধতার ব্যাপারে প্রমাণ স্বরূপ যেসব হাদিস পেশ করেছ সেগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট! সুতরাং যা তাদের জওয়াব, তাই আমাদের জওয়াব! অতএব এ ধরনের আলোচনার দ্বারা কী ফায়দা হবে?! সুতরাং উযির মহোদয়ের নিকট আমার প্রত্যাশা যে, তিনি আমাকে এ ধরনের কষ্টসাধ্য কাজ থেকে রুখসত দেবেন এবং এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি হানাফী অথবা শাফেয়ী মতাবলম্বী মুফতি প্রেরণ করবেন। কারণ, এ ধরনের আলোচনার জন্য তাঁরাই হবেন যথোপযুক্ত।

অতঃপর আহমদ আগা বলেন: এটা অসম্ভব, পাশা মহোদয় এই কাজের জন্য আপনাকেই মনোনীত করেছেন, সুতরাং আপনি তা মেনে নিবেন, আপনার পক্ষ থেকে এর ব্যতিক্রম কিছু তিনি চান না। অতএব তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনি টু শব্দটিও উচ্চারণ করবেন না।

আল-সুয়াইদী বলেন: অতঃপর আমি উযির আহমদ পাশা’র সাথে ঐ রাত্রের অব্যবহিত সকালে একত্রিত হলাম; সে আমার সঙ্গে এই বিষয় বা কাজের বিশেষত্ব নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা করল এবং সে বলল:

আমি আল্লাহ তা‘লার নিকট প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন আপনার দলিল-প্রমাণকে শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করেন এবং আপনার ভাষায় সঠিক বিষয়টি প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করে দেন। আলোচনা হওয়া না হওয়া আপনার ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর নির্ভর করছে। তবে সম্পূর্ণভাবে আলোচনাকে পরিত্যাগ করবেন না; বরং আপনি তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাত উপলক্ষে কিছু আলোচনা পেশ করুন যাতে পারসিকগণ জানতে পারে যে, আপনি একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। আর আপনি যদি তাদের পক্ষ থেকে ইনসাফের বিষয় উপলব্ধি করতে পারেন এবং তারাও সঠিক বিষয় প্রকাশের ইচ্ছা পোষণ করে, তবে আপনি তাদের সাথে আলোচনা করুন এবং আপনাকে তাদের নিকট পেশ করুন।

অতঃপর তিনি বলেন: শাহ নাজাফে আছেন। আর আমি চাচ্ছি আপনাকে বুধবার সকালে তার নিকট নিয়ে যাব। আর সে আমার জন্য গৌরবোজ্জল পোষাক, বাহন ও খাদেম নিয়ে আসল। আমার সাথে তার বাহনের খাদেমও পাঠিয়ে দিল। আর আমরা পারসিক দুতগণের মুখোমুখি হলাম যারা আমাদের খোঁজে এসেছেন।

অতঃপর আমরা সাওয়াল মাসের ২২ তারিখ সোমবার আসরের সালাতের পূর্বমুহূর্তে বের হলাম এবং পথিমধ্যে আমি উভয় পক্ষের দলিলসমূহ নিয়ে জলপনা-কল্পনা করতে থাকলাম; আর যখন প্রশ্ন উত্থাপন হবে, তখন তার জওয়াবসমূহ কেমন হবে তা নিয়ে ভাবতে লাগলাম!

আর এটা আমার সার্বক্ষণিক অভ্যাস ও স্বভাব-প্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল, দলিলের কল্পনা ও সন্দেহ-সংশয় দূর করার চিন্তা-ভাবনা ছাড়া আর অন্য কোন চিন্তা আমার ছিল না; এমনকি আমি তাদের ধারণা ও সন্দেহ-সংশয়ের উপর ভিত্তি করে একশ’র অধিক দলিল-প্রমাণ কল্পনা করে ঠিক করে ফেলেছি! আর প্রতিটি দলিলকে কেন্দ্র করে একটি বা দুইটি বা তিনটি করে জওয়াবও ঠিক করেছি!

আর পথিমধ্যে আমি সঙ্কট ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছি, এমনকি আমার প্রস্রাব তাজা রক্তে পরিণত হয়েছে। অতঃপর আমি দুবাইস ইবন মাযিদের সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেছি; তখন তা ছিল পারসিকদের নিয়ন্ত্রণে। অতঃপর আমি সেখানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের কতিপয় ব্যক্তির সাক্ষাত পেয়েছি; তারা আমাকে সংবাদ দিলেন যে, শাহ এই মাস‘আলা’র জন্য তার দেশের প্রত্যেক মুফতিকে একত্রিত করেছে; এখন পর্যন্ত তাদের (মুফতিদের) সংখ্যা পৌঁছেছে সত্তর জনে, যাদের প্রত্যেকেই রাফেযী!!

অতঃপর যখন আমি এই কথা শুনতে পেলাম, তখন আমি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন’ পড়লাম [অর্থাৎ- আমি বললাম: " لا حول و لا قوة إلا بالله " এবং " إنا لله و إنا إليه راجعون "]; আর মনে মনে আরও কিছু বাক্য আবৃত্তি করলাম এবং বললাম: আমি যদি মনে করি যে, আমি বাহাস বা আলোচনার জন্য আদিষ্ট হইনি, তবে এর দ্বারা আমার মন পরিতৃপ্ত হবে না। আর যদি তাদের সাথে আলোচনা করি, তবে আমি আশঙ্কা করি যে, তারা আমার ব্যাপারে বাস্তবতার বিপরীত কথা শাহের কানে পৌঁছাবে।

অতঃপর আমি আমার মত ও চিন্তার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে অটল থাকলাম যে, আমি শাহের অনুপস্থিতিতে তাদের সাথে আলোচনায় বসব না! আমি তাকে বললাম: আমার (বিতর্কমূলক) আলোচনার জন্যে এমন একজন অভিজ্ঞ বিচারকের প্রয়োজন রয়েছে, যিনি না হবেন সুন্নী, যাতে কেউ এই অপবাদ দিতে না পারে যে, তিনি আমাকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন; আবার না হবেন শী‘আ, যাতে কেউ এই অপবাদও দিতে না পারে যে, তিনি তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। তখন আমরা এমন এক আলেমের প্রয়োজন অনুভব করি, যিনি হয় ইহুদী হবেন, না হয় খ্রিষ্টান হবেন অথবা এমন এক ব্যক্তি হবেন, যিনি সুন্নী এবং শী‘আ নন! আর আমি তাকে বললাম: আমরা আপনাকে পছন্দের লোক মনে করি! আর আপনিই আমাদের মধ্যে বিচারকের ভূমিকা পালন করবেন; আর আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন আপনাকে জিজ্ঞাসা করবেন! সুতরাং আপনি আমাদের বক্তব্য শ্রবণ করুন, যাতে আপনার নিকট সত্য বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।

অতঃপর আমি কল্পনা করলাম যে, যদি তার রায় তাদের পক্ষে চলে যায়, তখন আমি তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হব এবং তার সাথে আমার কথোপকথন হবে; যদিও তা আমার জীবন নাশের দিকে নিয়ে যায়! আর এই সব কিছুই চলছে আমার কল্পনার রাজ্যে।

অতঃপর আমি উল্লেখিত সমাবেশস্থল থেকে প্রতিশ্রুত বুধবার রাতের এশার নামাযের শেষ ওয়াক্তে বের হয়ে গেলাম; আর সে রাতটি ছিল হালকা বৃষ্টি আর কুয়শাচ্ছন্ন রাত্রি [ الدث শব্দের অর্থ: হালকা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আরব ব্যক্তি বলেন: “আকাশ আমাদের উপর হালকা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বর্ষণ করেছে; তাতে উৎকৃষ্ট জাতের ঘোড়া অসন্তুষ্ট এবং যা মুসাফিরকে কষ্ট দেয়”।]; মানুষ তার নিজের হাতটি পর্যন্ত দেখতে পায় না; আর তা ঐ রাতের চেয়ে কঠিন ভায়াবহ ও প্রচণ্ড শীতল, যার বর্ণনায় কবি বলেন:

“জমাট বাঁধা শিশিরে আচ্ছাদিত এমন এক রাত্রি

যার কোন প্রান্তে কুকুর দেখতে পায়না লম্বা-মোটা রশি”

অতঃপর আমরা ঐ রাতে ভ্রমণ করতে লাগলাম যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ‘যূল কিফল’ এর কবর খ্যাত নামক স্থানে এসে পৌঁছালাম। আর তা হল সমাবেশস্থল ও নাজাফের মধ্যকার দূরত্বের অর্ধেক পথ। সুতরাং আমরা সীমানা প্রাচীরের বাইরে অবতরণ করলাম এবং সামান্য সময় বিশ্রাম নিলাম। অতঃপর আবার ভ্রমণ করলাম এবং ‘বিরে দানদান’ ( بئر دندان ) নামক স্থানের কাছে ফজরের নামায আদায় করলাম। অতঃপর হন্তদন্ত হয়ে শাহের দূত এসে আমাকে বলল:

আপনি দ্রুত চলুন! কারণ, এই সময়ের মধ্যেই শাহ আপনাকে আহ্বান করবেন। অথচ আমার এবং শাহের তাঁবু’র মধ্যকার দূরত্ব ছিল দুই ফরসখ। অতঃপর আমি দুতকে বললাম:

শাহের কেমন অভ্যাস, সে যখন তার রাজ্যের কারও নিকট দূত প্রেরণ করেন, তখন কি তাকে আমার মত রাস্তায় তলব করেন, না কি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন, তারপর তলব করেন?

সে বলল: তিনি আপনাকে ব্যতীত আর কাউকে এভাবে রাস্তায় তলব করেন নি; আর তাছাড়া আপনাকে ব্যতীত আর কাউকে কোন দিন তলব করেন নি!

অতঃপর অন্ধকার কেটে গেল; আর আমি মনে মনে বললাম: শাহ তোমাকে এত দ্রুত এ জন্যই তলব করেছে যে, সে ইমামীয়া মাযহাবের স্বীকৃতি ও সত্যায়ণের শর্তে তোমাকে আশ্রয় দেবেন ও রক্ষা করবেন। সুতরাং তুমি যদি তার আহ্বানে সাড়া দাও, তবে সে তোমাকে সম্পদের প্রলোভন দেখাবে; অন্যথায় সে এই কাজে তোমাকে বাধ্য করবে! সুতরাং তোমার অভিমত কী?! অতএব, আমি এই পথে বের হয়েছি এই শর্তে যে, আমি হক কথা বলব, তাতে আমার জীবন যদি ধ্বংস হয়ে যায় যাক; কোন প্রলোভন আমাকে নত করতে পারবে না এবং কোন ভয়-ভীতি আমাকে টলাতে পারবে না!

আর আমি বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দিন ইন্তিকাল করেছেন, সেদিন ইসলামের অগ্রযাত্রা থেমে গিয়েছিল; অতঃপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কারণে তা আবার চলতে শুরু করে। “আল-কুরআন সৃষ্ট”— এই কথার বেড়াজালে দ্বিতীয় বারের মত আবার তার অগ্রযাত্রা থেমে গেল; অতঃপর আহমদ ইবন হাম্বল র.-এর কারণে তা আবার অগ্রসর হতে শুরু করে। আর আজকের এই দিনে ইসলামের অগ্রযাত্রা তৃতীয় বারের মত থেমে গেল; সুতরাং যদি আমি তার অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেই, তবে তার যাত্রা চিরদিনের জন্য থেমে যাবে। এর থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই, আর যদি অগ্রসর করতে পারি, তবে তা চিরদিন অগ্রসরমান থাকবে; সুতরাং তার চলা থেমে যাওয়া এবং চলমান থাকা তার অনুসারীদের থেমে যাওয়া ও চলমান থাকার উপর নির্ভরশীল। আর সন্দেহ নেই যে, ঐ শ্রেণীর লোকদের নিকট এই ফকিরের ব্যাপারে সুপ্রসিদ্ধ উত্তম ধারণা রয়েছে; সুতরাং তারা আমার ব্যাপারে বিশ্বাস করে যে, নিশ্চয় তারা নিকট ভাল ভালই; আর মন্দ মন্দই।

অতঃপর আমি আমার নিয়তকে সুদৃঢ় করলাম, আমার অন্তরকে ভাল করলাম এবং মৃত্যুর জন্য আমার মনকে প্রস্তুত করলাম, এমনকি তাকে আমি সহজ-সরল মনে করলাম এবং আমি বললাম: আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি আল্লাহ’র প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং পরকালের প্রতি; আমি আরও বিশ্বাস করি যে, তাকদীরের ভাল ও মন্দ সবকিছু আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আর আমি আমার বাহনকে তাড়া করছি আর বার বার শাহাদাতাইন পাঠ করছি। অতঃপর লম্বা খেজুর বৃক্ষের মত বড় সুউচ্চ দু’টি নিশানা দেখা গেল; আমি এতদুভয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমাকে বলা হল: এই দু’টি হল শাহের নিশানা বা নিদর্শন, যেগুলো সে পুঁতে রেখেছে যাতে সৈন্য বাহিনী’র শীর্ষস্থানীয় সৈনিকগণ তাদের তাঁবু বা শিবিরে অবতরণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারে। কারণ, তাদের মধ্য থেকে এমন কেউ কেউ রয়েছে, যারা অবতরণ করবে দুই নিশানা’র ডান পাশ দিয়ে; আবার এমন কেউ কেউ রয়েছে, যারা অবতরণ করবে দুই নিশানা’র বাম পাশ দিয়ে ... ইত্যাদি ইত্যাদি।

অতঃপর আমরা সফর করতে করতে তাঁবুসমূহ দেখতে পেলাম; আর তার তাঁবুটি ছিল বড় বড় সুউচ্চ সাতটি খুঁটি দ্বারা তৈরি। অতঃপর আমরা তাদের নিকট ‘কাশক খানা’ নামে পরিচিত মহলে এসে হাজির হলাম। আর তা হল সামনা সামনি এমন কতগুলো তাঁবু যার প্রত্যেক পাশে রয়েছে গম্বুজ আকৃতির পনেরটি করে তাঁবু; যাতে রয়েছে একটি প্রাসাদ বা হলঘর, কিন্তু তাতে খুঁটি নেই। শাহের তাঁবুর সাথে সংযুক্ত তাঁবুসমূহের একবারে মাথার তাঁবুর সাথে সংযুক্ত রয়েছে একটি বারান্দা বা করিডোর, তার মাঝখানে রয়েছে একটি দরজা, তার উপর রয়েছে একটি পর্দা; আর ডান পাশের তাঁবুসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রায় চার হাজার বন্দুকধারী যারা রাতে এবং দিনে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে; আর বাম পাশটি উম্মুক্ত তাতে রয়েছে কতগুলো অনির্ধারিত আসন।

অতঃপর আমি যখন ‘কাশক খানা’-এর নিকটবর্তী হলাম, তখন অবতরণ করলাম; অতঃপর আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এক ব্যক্তি বের হয়ে আসল এবং আমাকে অভিবাদন ও সম্মান জানাল। আর সে আমাকে পাশা ও তার বিশেষ অনুসারীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগল; আর পাশা’র অনুসারীদের ব্যাপারে তার এত বেশি জানা-শুনার কারণে আমি অবাক হতে লাগলাম। অতঃপর সে যখন আমার নিকট থেকে তা জানতে পারল, তখন বলল:

মনে হচ্ছে যেন আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না!

আমি বললাম: হ্যাঁ।

অতঃপর সে বলল: আমি আবদুল করীম বেগ। এক সময় আহমদ পাশা’র দরবারের খাদেম ছিলাম। এই কতদিন হল আমাকে ইরানী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দূত হিসেবে ওসমানী রাষ্ট্রে প্রেরণ করা হল।

সুতরাং সে যখন আমার সাথে আলাপ-আলোচনা করছিল, ঠিক তখনই আমাদের নিকট নয় ব্যক্তি আগমন করল। অতঃপর তার নজর যখন তাদের উপর পড়ল, তখন সে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে গেল; অতঃপর তারা আমাকে সালাম পেশ করল, আর আমিও তাদের প্রতি সালাম পেশ করলাম এমতাবস্থায় যে, আমি বসা, তাদের কাউকে চিনি না। অতঃপর আবদুল করীম আমাকে একে একে তাদের সবাইকে পরিচয় করে দিতে শুরু করল এবং আমাকে বলল:

এই হলেন রাজ্যসমূহের মানদণ্ড হাসান খান। আর ওনি হলেন মুস্তফা খান। আর ওনি হলেন নজর আলী খান। আর ওনি হলেন মির্জা কাফী।

অতঃপর আমি যখন ‘রাজ্যসমূহের মানদণ্ড’ ( معيار الممالك )-এর কথা শুনতে পেলাম, তখনই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম; অতঃপর সে এবং তার সঙ্গীগণ আমার সাথে মুসাহাফা (করমর্দন) করল এবং আমাকে অভিবাদন জানাল। আর ‘রাজ্যসমূহের মানদণ্ড’ ( معيار الممالك ) হল শাহের উযির, কুরজির অধিবাসী ও শাহ হোসাইনের দাস।

অতঃপর তারা আমাকে বলল: অনুগ্রহ করে শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চলুন।

অতঃপর তারা বারান্দার মাঝখানের পর্দাটি উঠাল; অতঃপর তার পিছনে অপর আরও একটি বারান্দা এবং উভয়ের মধ্যকার প্রশস্ততা হল তিন গজ; সেখানে নিয়ে তারা আমাকে দাঁড় করাল এবং বলল:

যখন আমরা থামব, তখন আপনি থামবেন; আর যখন আমরা হাঁটব, তখন আপনিও হাঁটবেন?

অতঃপর আমরা বাম দিক থেকে চলতে শুরু করলাম এবং বারান্দা অতিক্রম শেষ হয়ে গেল; আর তখন দেখা গেল এক প্রশস্ত আবরণ (পর্দা) যার দ্বারা করিডোর বা গ্যালারীকে ঘিরে রাখা হয়েছে, যা দূর থেকে দেখা যায়; আর তার মধ্যে রয়েছে তার স্ত্রীদের জন্য অনেকগুলো তাঁবু। অতঃপর আমি শাহের তাঁবু’র দিকে লক্ষ্য করলাম; আর সে আমার নিকট থেকে একটি তীর নিক্ষেপ করার মত জায়গা পরিমাণ (তিনশত থেকে চারশত গজ পরিমাণ) দূরত্বে একটি উঁচু চেয়ারে বসে আছে। অতঃপর যখন আমার উপর তার নজর পড়ল, তখন সে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে উঠল:

আবদুল্লাহ আফেনদিকে স্বাগতম! আমাকে আহমদ খান (অর্থাৎ আহমদ পাশা) সংবাদ দিয়েছে, সে বলেছে: আমি আপনার নিকট আবদুল্লাহ আফেনদিকে প্রেরণ করেছি।

অতঃপর সে আমাকে বলল: সামনে অগ্রসর হউন!

অতঃপর আমি প্রথম বারের মত সামনে অগ্রসর হলাম এবং থেমে গেলাম। সে আমাকে বলতে লাগল “সামনে অগ্রসর হউন!” আর আমি ছোট ছোট কদমে সামনে অগ্রসর হতে থাকলাম; শেষ পর্যন্ত আমি তার প্রায় পাঁচ গজ কাছাকাছি হয়ে গেলাম; অতঃপর আমি লম্বা এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, যা তার বসা থেকেই বুঝা যাচ্ছিল এবং তার মাথায় রয়েছে পারসিকদের টুপির ন্যায় একটি সাদা চৌকা টুপি, আর তার উপরে রয়েছে মণি-মুক্তা, ইয়াকুত, হিরক ও সকল প্রকার অলঙ্কার খচিত পাগড়ি; আর তার গলায় রয়েছে মণি-মুক্তা’র একাধিক মালা এবং তার বাহুতেও অনুরূপ। আর মণি-মুক্তা, হিরক ও ইয়াকুত খচিত কাপড়ের টুকরা বেঁধে রাখা হয়েছে তার বাহুতে। আর তার চেহারায় বার্ধক্য ও বেশি বয়সের ছাপ প্রকাশ পাচ্ছিল; এমনকি তার সামনের সারির দাঁতগুলো পড়ে গেছে। অতএব সে প্রায় আশি বছর বয়সের ব্যক্তি; তার দাড়িগুলো কালো কলপ করা, কিন্তু সুন্দর; তার আরও রয়েছে দু’টি ভাজ পড়া ভ্রু এবং আরও আছে হালকা পীতবর্ণের কিন্ত সুন্দর দু’টি চোখ। মোটকথা তার চেহারা-ছবি খুবই সুন্দর।

সুতরাং যখন তার উপর আমার দৃষ্টি পড়ল, তখন আমার মন থেকে তার ভয় দূর হয়ে গেল। অতঃপর সে আমাকে তুর্কমেনিস্তানীয় ভাষায় (প্রথম বারের সম্বোধনের ন্যায়) সম্বোধন করল এবং আমাকে বলল:

আহমদ খানের অবস্থা কেমন?

অতঃপর আমি বললাম: ভাল ও উত্তম।

অতঃপর সে বলল: আপনি কি জানেন কেন আমি আপনাকে আহ্বান করেছি?

আমি বললাম: না!

অতঃপর সে বলল: আমার রাজ্য দু’টি ভাগে বিভক্ত: তুর্কিস্তান ও আফগান, তারা ইরানীদেরকে বলে: “তোমরা কাফির”। কুফর খুব মন্দ জিনিস! আমার রাজ্যে এটা শোভনীয় নয় যে, এক দল আরেক দলকে কাফির বলবে! এখন আমি আপনাকে আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি (উকিল) মনোনীত করছি, যাতে আপনি কুফর সংক্রান্ত সকল অপবাদ দূর করতে পারেন এবং তৃতীয় আরেকটি দলের পক্ষে অভিমত পেশ করবেন, যা তারা গ্রহণ করবে। আর আপনি যা কিছু দেখবেন অথবা শুনবেন, তা আমাকে জানাবেন এবং আহমদ খানের নিকট পৌঁছাবেন।

অতঃপর তিনি আমাকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিলেন এবং আদেশ করলেন যে, আপনি আমার অতিথি কক্ষে রাষ্ট্রের উযিরের নিকট অবস্থান করুন; আরও আদেশ করলেন, যাতে আমি যোহরের নামাযের পর মোল্লা বাশী আলী আকবরের সঙ্গে একত্রিত হই।

অতঃপর আমি সেখান থেকে বের হলাম এমতাবস্থায় যে, আমি অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত। কারণ, পারসিকদের বিচারক আমার হাতে। আমি অতিথি কক্ষে আসলাম এবং কিছুক্ষণ বসলাম; অতঃপর উযির তার তাঁবু’র দিকে আসল এবং আমাকে খাবার গ্রহণের জন্য ডাকল। আর মেহমানদার ছিলেন নজর আলী খান এবং তার সহযোগিতায় ছিলেন আবদুল করীম বেগ ও আবূ যর বেগ। আর তারা সকলেই ছিলেন আমার খেদমতে নিয়োজিত।

অতঃপর আমি যখন উযিরের নিকট আগমন করলাম এবং তাকে সালাম পেশ করলাম, তখন জবাবস্বরূপ বসা অবস্থায় সে আমাকে সালাম দিল; আমার মনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হল যে, সে দাঁড়ায়নি কেন। অতঃপর আমি মনে মনে বললাম: আমাকে যখন বসতে দেয়া হবে, তখন আমি উযিরকে বলব: নিশ্চয় শাহ আদেশ করেছেন সকল কুফরি দূর করতে এবং এ জন্য সে আমাকে উকিল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে; সুতরাং আমি যে কুফরী দূর করব, তা হল তোমার থেকে প্রকাশিত কুফরী, কেননা তুমি আলেমদেরকে তুচ্ছ ও অপমান করার ইচ্ছা করেছ! আর তোমাকে হত্যা করে তা দূর করতে পারলেই খুশি হব!! অতঃপর আমি তার মজলিস থেকে উঠে শাহের নিকট গিয়ে পুরা ঘটনাটা তাকে বলব। আর এই সবটাই আমার মনের কল্পনা।

অতঃপর আমি যখন বসলাম, তখন সে দাঁড়াল এবং আমাকে অভিবাদন (মারহাবা) জানাল। আর সে হল খুব লম্বা ও ফর্সা মানুষ, চোখ দু’টি বড় বড় ও কলপ লাগানো দাড়ি; তবে সে বুদ্ধিমান লোক সকল কথপোকথন ও আলাপ-আলোচনা বুঝতে ও অনুধাবন করতে পারে। স্বভাবে সে নরম প্রকৃতির এবং চিন্তা-চেতনায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ঘেষা। যখন সে দাঁড়াল, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, তাদের অভ্যাস হচ্ছে আগন্তুক ব্যক্তি বসার পর তারা দাঁড়ায়। অতঃপর তার নিকটে দুপরের খাবার খেলাম; অতঃপর মোল্লা বাশী’র সাথে সাক্ষাত কারার জন্য আমাদের নিকট ফরমান আসল। অতঃপর আমি আমার বাহনে আরোহন করলাম, আর মেহমানদারগণ আমার সামনে সামনে হাঁটতে লাগল। অতঃপর পথিমধ্যে লম্বা এক ব্যক্তি আমার থেকে সরে পড়ল, যার পোষাক আফগানের পোষাকের মত; অতঃপর সে আমাকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানাল। অতঃপর আমি তাকে বললাম:

তুমি কে?

অতঃপর সে বলল: আমি আফগান মুফতী মোল্লা হামযা আল-কালানজানী।

অতঃপর আমি বললাম: হে মোল্লা হামযা! তুমি কি আরবিতে ভাল পারদর্শী?

সে বলল: হ্যাঁ।

অতঃপর আমি বললাম: নিশ্চয় শাহ আদেশ করেছে ইরানীদের নিকট প্রত্যেক কাফের ফতোয়া দানকারীকে প্রত্যাহার করে নিতে। তারা কখনও কখনও কুফরী বিষয়ে আমার সাথে বিতর্ক করে; অথবা তারা কুফরী বিষয়ের কিছু কিছু দিক উল্লেখ করে না; আর আমরা তাদের অবস্থা জানতে পারি না এবং তাদের ইবাদত সম্পর্কেও জানতে পারি না। ফলে আমি তার কুফরী’র বিষয়ে উপলব্ধি করতে পারি না, যাতে তাকে তা স্মরণ করিয়ে দিতে পারি, এমনকি তা দূর করতে পারি।

অতঃপর সে বলল: হে আমার গুরু! শাহের কথা দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে বেঁচে থাকবেন। সে তো শুধু আপনাকে মোল্লা বাশী’র নিকট পাঠিয়েছে যাতে সে কথার মাঝে ও আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে আপনার সাথে আলোচনা করে নিতে পারে; সুতরাং আপনি তাদের থেকে সতর্ক থাকুন!

অতঃপর আমি বললাম: আমি তাদের বেইনসাফী’র আশঙ্কা করি।

সে বলল: আপনি তা থেকে নিরাপদ থাকুন; কারণ, শাহ এই মজলিসে গোয়েন্দা নিয়োগ করেছে এবং এক গোয়েন্দার উপর আরেক গোয়েন্দা নিয়োগ করেছে; অতঃপর আরেক গোয়েন্দার উপর আরেক গোয়েন্দা নিয়োগ করেছে। আর গোয়েন্দাদের প্রত্যেকেই একজনের অবস্থা সম্পর্কে অপরজন কিছুই জানে না; সুতরাং শাহের নিকট অবাস্তব কিছু পৌঁছাবে না।

অতঃপর আমি যখন মোল্লা বাশী’র তাঁবুর নিকটবর্তী হলাম, তখন সে আমাকে স্বাগতম জানানোর জন্য পায়ে হেঁটে বের হয়ে আসল; আর সে হল খাটো আকৃতি ও ধূসর বর্ণের লোক, তার মাথার অর্ধেক পর্যন্ত কানপট্টির চিহ্ণ রয়েছে। অতঃপর আমি আমার বাহন থেকে অবতরণ করলাম, সে আমাকে স্বাগতম জানালো এবং তার উপরে মঞ্চে আমাকে বসালো; আর সে ছাত্রের মত করে বসল। অতঃপর মোল্লা বাশী আফগান মুফতীকে সম্বোধন করার আগ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কথা-বার্তা চলেছে। অতঃপর সে (মোল্লা বাশী) তাকে (আফগান মুফতীকে) বলল:

আজকে হাদী খাজা বাহরুল ইলমকে দেখেছ?

সে বলল: হ্যাঁ।

আর এই হাদী খাজা হলেন কাযী বুখারী, তার উপাধি হল “বাহরুল ইলম”, তিনি শাহের সেনা নিবাসে এসেছেন আমি আসার চার দিন পূর্বে, তার সাথে ‘মা অরাউন্নহর’ ( ما وراء النهر ) [এটা সালফে সালেহীনদের পরিভাষা; ‘মা অরাউন্নহর’ ( ما وراء النهر ) হল জাইহুন তথা আমু দরিয়া (Amudaria)-এর পূর্ব দিকে। এক সময়ে এর নামকরণ করা হয়েছিল চিতাবাঘের দেশ; অতঃপর ইসলামী যুগে এসে তার নামকরণ করা হয়: ‘মা অরাউন্নহর’ ( ما وراء النهر )। আর জাইহুন তথা আমু দরিয়ার পশ্চিম দিকে সংযুক্ত রয়েছে খোরাসান ও খাওয়ারেযম নামের দু’টি প্রদেশ।]-এর ছয়জন আলেম ছিলেন; অতঃপর মোল্লা বাশী বলেন:

তাকে “বাহরুল ইলম” উপধিতে ভূষিত করা কিভাবে শুদ্ধ হল, অথচ জ্ঞানের সাথে তার কোন পরিচয় নেই?! আল্লাহর শপথ, যদি আমি তাকে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র খিলাফতের ব্যাপারে দু’টি দলিল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, সে তার জবাব দিতে সক্ষম হবে না; বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিন্দাবাদে পারদর্শী কবিগণও তার জবাব দিতে সক্ষম হবে না! (এই কথাটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছেন), অতঃপর আমি তাকে বললাম:

সেই দু’টি দলিল কী, যার জবাব নেই?

তিনি বললেন: আলোচনা সম্পাদনার পূর্বে আমি আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করতে চাই: আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “মর্যাদার দিক থেকে আমার সাথে তোমার অবস্থান তেমন, যেমন মূসার সাথে হারুনের অবস্থান, তবে আমার পরে আর কোন নবী নেই”- কি আপনাদের নিকট কি বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত? তখন আমি বললাম: হ্যাঁ, এটা মাশহুর হাদিস।

অতঃপর তিনি বলেন: এই হাদিসের বক্তব্য দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের হকদার।

আমি বললাম: এর থেকে এই দলিল নেয়ার হেতু কী?

তিনি বলেন: যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র জন্য নবুয়ত ছাড়া হারুন আ.-এর সকল মর্যাদা সাব্যস্ত করেছেন; আর ইস্তিসনা তথা পৃথক করাটা হল জ্ঞানের মানদণ্ড। সুতরাং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র জন্য খিলাফত সাব্যস্ত হল; কারণ, খিলাফতটা হারুন আ.-এর সকল মর্যাদাকে অন্তর্ভুক্ত করে। কেননা, তিনি যদি ঐ সময় বসবাস করতেন, তবে তিনি মূসা আ.-এর খলিফা হতেন।

অতঃপর আমি বললাম: আপনার স্পষ্ট কথা প্রমাণ করে যে, এই বিষয়টি সকল কিছুকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে; সুতরাং সকল কিছুকে ইতিবাচক হিসেবে দেখার উপায় কী?

তিনি বলেন: ইস্তিগরাক ( الاستغراق )-এর মধ্যে যে ইযাফত ( الإضافة ) রয়েছে, তার থেকে ইস্তিসনা ( الاستثناء )-এর ইঙ্গিত দ্বারা।

অতঃপর আমি বললাম: প্রথমত এই হাদিসটি নসসে জলী নয়। এর কারণ হল তার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মতবিরোধ রয়েছে; কেউ বলেন: এটা সহীহ; আবার কেউ বলেন: এটা হাসান; আবার কেউ বলেন: এটা যঈফ; এমনকি ইবনুল জাওযী এটাকে মাউযু বলে দাবি করেছেন! সুতরাং তোমরা কিভাবে এর দ্বারা খিলাফত সাব্যস্ত করবে, অথচ তোমরাই তা প্রমাণের জন্য নসসে জলী’র শর্ত করে থাক।

অতঃপর তিনি বলেন: হ্যাঁ, আপনি যা উল্লেখ করেছেন, আমরা তা মানি। তবে আমাদের দলিল এটা নয়। বরং তা হল শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “তোমরা আলীকে মুমিনদের নেতা হিসেবে মেনে নাও” এবং হাদিসে ত্বায়ের ( حديث الطائر ) [অর্থাৎ প্রসিদ্ধ পাখির হাদিস।]-এর মত। কারণ, তোমরা দাবি কর যে, এই উভয় হাদিসই মাউযু; সুতরাং এই হাদিসের ব্যাপারে আমার কথাও তোমাদের কথার মতই। তবে আমার প্রশ্ন হল: তোমরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র জন্য খিলাফত সাব্যস্ত কর না কেন?

আমি বললাম: এই হাদিসটি কয়েকটি কারণে দলিল হওয়ার উপযুক্ত নয়:

তন্মধ্যে একটি কারণ হল: এখানে ইস্তিগরাক ( الاستغراق )-এর বিষয়টি নিষিদ্ধ; কারণ, হারুন আ.-এর সকল মর্যাদা মূসা আ.-এর সাথে নবী হিসেবে, আর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের এবং তোমাদের সকলের ঐক্যমতে নবী নন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথেও নবী নন এবং তার পরেও নবী নন। সুতরাং হারুন আ.-এর জন্য নির্ধারিত ও প্রমাণিত মর্যাদাসমূহ যদি নবুয়ত ব্যতীত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে নবী হিসেবে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র জন্য সাব্যস্ত হত, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র নবী হওয়াটা দাবি করা যেত!! কারণ, তার সাথে নবুয়তকে ইস্তিসনা ( الاستثناء ) পৃথক করা হয়নি, আর তা (নবুয়ত) হারুন আ.-এর মর্যাদার অংশবিশেষ।

তাছাড়া হারুন আ.-এর সকল মর্যাদা সাব্যস্ত হয়েছে মূসা আ.-এর সহোদর ভাই হিসেবে; আর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাই নন। আর ‘আম যখন ইস্তিসনা ( الاستثناء ) ছাড়া খাস হয়, তখন তা ধারণা ভিত্তিক দলিলের ফায়দা দেয়।

সুতরাং বক্তব্যটিকে একটি মনযিল বা স্তরের উপর প্রয়োগ করা উচিত, যেমনিভাবে প্রকাশ্য ‘তা’ (ة) টি একবচন [অর্থাৎ " منزلة " শব্দের মধ্যকার ‘তা’ (ة) টি] বুঝায়। অতএব ইযাফত ( الإضافة ) অংশবিশেষের জন্য হবে এবং এ ক্ষেত্রে এটাই মূলনীতি। আর হাদিসের মধ্যে " إلا " অর্থ " لكن " যেমন তাদের কথা:

فلان جواد إلا أنه جبان أي لكنه .

অর্থাৎ অমুক দানবীর কিন্তু সে কাপুরুষ।

সুতরাং বিষয়টি প্রত্যাবর্তন করেছে পরিত্যক্ত অবস্থায়, যার থেকে এ ক্ষেত্রে অনির্ধারিতভাবে কোন অংশকে উদ্দেশ্য করা হবে; আর এখানে আমরা শুধু বহির্ভাগকে নির্দিষ্ট করব; আর নির্ধারিত বলতে নির্দিষ্ট ঐ মনযিল বা মর্যাদা, যখন মূসা আ. হারুন আ.-কে বনী ইসরাঈলের উপর (সাময়িক) খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন এবং তার প্রমাণ হল আল্লাহ তা‘আলা’র বাণী:

﴿ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِيهِ هَٰرُونَ ٱخۡلُفۡنِي فِي قَوۡمِي﴾ [ سورة الأعراف : 142]

অর্থাৎ আর মূসা তার ভাই হারুনকে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে। (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৪২)

আর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র মর্যাদাগত অবস্থান হল তাবুক যুদ্ধে সময় তাঁকে মদিনার খিলাফতের দায়িত্ব প্রদান। [অর্থাৎ মূসা আ. কর্তৃক তাঁর ভাই হারুন আ.-কে প্রতিনিধি নিয়োগ করার মত, যখন তিনি পাহাড়ে গিয়েছেন লওহ তথা লিখিত ফলকসমূহ নিয়ে ফিরে আসার জন্য। আর হাদিস: " أنت مني منزلة هارون و موسى " (আমার সাথে তোমার অবস্থান তেমন, যেমন মূসার সাথে হারুনের অবস্থান) মূলত তাবুক যুদ্ধের কাহিনী প্রসঙ্গে বর্ণিত; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মদিনা মুনাওয়ারা’র খিলাফতের দায়িত্ব প্রদান করেছেন; আর তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন: " أنت مني منزلة هارون و موسى " (আমার সাথে তোমার অবস্থান তেমন, যেমন মূসার সাথে হারুনের অবস্থান)... হাদিস । যেমন কয়েক লাইন পরে আল্লামা সুওয়াইদী’র কথার মধ্যে স্পষ্টভাবে এর বর্ণনা আসবে।]

অতঃপর মোল্লা বাশী বলেন: তাঁকে খলিফা নিয়োগ করার দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, তিনিই সর্বোত্তম এবং তাঁর পরে তিনিই খলিফা।

অতঃপর আমি বললাম: আপনি যা বলেছেন তাই যদি ঠিকভাবে প্রমাণিত হয়, তবে দাবি করা হবে যে, ইবন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে খলিফা হওয়ার উপযুক্ত। কারণ, তিনি তাঁকে মদিনার খলিফা নিযুক্ত করেছেন! আর তিনি তাঁকে ছাড়া আরও অন্যকেও খলিফা নিযুক্ত করেছেন; সুতরাং আপনারা এই দলিল দ্বারা কেন অন্যকে বাদ দিয়ে শুধু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বিশেষভাবে খলিফা হওয়ার উপযুক্ত বলে মনে করেন; অথচ খলিফা (সাময়িক) হওয়ার ক্ষেত্রে কয়েক জনের পূর্ণ অংশিদারিত্ব রয়েছে?!

আরও মজার বিষয় হল, এটা যদি মর্যাদার বিষয় হত, তবে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু মনে মনে নিজেকে তুচ্ছ ভেবে কষ্ট অনুভব করতেন না এবং বলতেন না: “আপনি কি আমাকে নারী, শিশু ও দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন”?! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মনকে সান্তনা দেয়ার জন্য বলেন: “তুমি কি পছন্দ করনা যে, আমার সাথে তোমার অবস্থান হবে তেমন, যেমন মূসার সাথে হারুনের অবস্থান”?!

অতঃপর তিনি বললেন: আপনাদের মূলনীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, শব্দের ব্যাপকতাই বিবেচ্য বিষয়, নির্দিষ্ট কোন সবব বা কারণ বিবেচ্য বিষয় নয়।

আমি বললাম: নিশ্চয় আমি নির্দিষ্ট কোন সবব বা কারণকে দলিল হিসেবে নির্ধারণ করিনি; এটা শুধু একটা قرينة বা ইঙ্গিত মাত্র যার দ্বারা কিছু অনর্থক বিষয়কে চিহ্নিত করা।

অবশেষে তিনি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন!!

অতঃপর তিনি বললেন: আমার নিকট আরও একটি দলিল রয়েছে যা কোন প্রকার তাবীল ( التأويل ) গ্রহণ করে না; আর তা হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿فَقُلۡ تَعَالَوۡاْ نَدۡعُ أَبۡنَآءَنَا وَأَبۡنَآءَكُمۡ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمۡ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمۡ ثُمَّ نَبۡتَهِلۡ فَنَجۡعَل لَّعۡنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلۡكَٰذِبِينَ ٦١ ﴾ [ سورة آل عمران : 61]

অর্থাৎ- “... তুমি তাকে বল: আস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রগণকে ও তোমাদের পুত্রগণকে, আমাদের নারীগণকে ও তোমাদের নারীগণকে, আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে, অতঃপর আমরা বিনীত আবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের দেই আল্লাহর লানত।” — (সূরা আলে ইমরান: ৬১)

আমি তাকে বললাম: এই আয়াত থেকে দলিল গ্রহণের কারণ কী?

তখন তিনি বললেন: তার কারণ হল, যখন নাজরানের খ্রিষ্টানগণ ‘মুবাহালা’ করার জন্য আগমন করল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হোসাইনকে কোলে নিলেন; হাসানের হাত ধরলেন; ফাতিমাকে তাদের পিছনে এবং আলীকে তার (ফাতেমার) পিছনে রাখলেন; আর তিনি দো‘য়ার ক্ষেত্রে উত্তম ও মর্যাদাবানকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

আমি বললাম: এটা ‘মানাকিব’ তথা মানুষের উত্তম গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত; ফযিলত তথা মর্যাদার বিষয় নয়। আর প্রত্যেক সাহাবীই এমন কিছু বিশেষ গুণের দ্বারা বিশেষিত যা অন্যের মধ্যে পাওয়া যায় না; প্রত্যেক সীরাত গ্রন্থের পাঠকই তা পরিস্কারভাবে অবগত আছেন। আর তাছাড়া আল-কুরআন নাযিল হয়েছে আরবদের বাকরীতি ও তাদের পারস্পরিক কথপোকথন পদ্ধতির আলোকে। যদি ধরা হয় যে, দুই গোষ্ঠীর দুই বড় মহান ব্যক্তির মধ্যে যুদ্ধ ও বিতর্ক সংঘটিত হল; একজন অপরজনকে বলল: তুমি ও তোমার বিশেষ গোষ্ঠীর লোক বের হও; আর আমি ও আমার বিশেষ গোষ্ঠীর লোক বের হচ্ছি; অতঃপর আমরা পরস্পর মোকাবিলা করব, অন্য গোষ্ঠীর কোন লোক আমাদের সাথে আসবে না। এই কথার অর্থ এই নয় যে, মহান ব্যক্তিদ্বয়ের সাথে তাদের বিশেষ গোষ্ঠীর চেয়ে অন্য কোন বীর পুরুষ পাওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে নিকটতম লোকদের উপস্থিতিতে দো‘য়াও বিনয়কে আবশ্যক করে তোলে, যাতে দো‘য়া দ্রুত কবুল হয়।

অতঃপর তিনি বললেন: এই ধরনের বিনয়-নম্রতা অধিক মহব্বত ব্যতীত সৃষ্টি হয় না।

আর আমি বললাম: এই ধরনের মহব্বত স্বভাব ও প্রকৃতির দিকে ধাবিত; যেমনিভাবে মানুষের ভালবাসা তার নিজের ও সন্তানের প্রতি তার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান ব্যক্তির চেয়েও অধিক বেশি। সুতরাং এই ধরনের ভালবাসা পাপ ও পুণ্য কিছুই দাবি বা আবশ্যক করে না। আর সীমিত ভালবাসা যা দু’টি অগ্রসর বস্তুর একটিকে আবশ্যক করে তোলে; আর তা হল ঐচ্ছিক ভালবাসা।

অতঃপর তিনি বললেন: আয়াতের মধ্যে আরও একটি দিক রয়েছে যা আফযালিয়ত তথা অধিক উত্তমতাকে আবশ্যক করে; আর তা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের নফসকে আলী’র নফসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ, তাঁর কথার মধ্যে আছে " أبناءنا " (আমাদের ছেলে সন্তান), যার দ্বারা উদ্দেশ্য হল: হাসান ও হোসাইন; আর " نساءنا " (আমাদের স্ত্রী)-এর মধ্যে উদ্দেশ্য হল ফাতেমা; আর " أنفسنا " (আমাদের নফস)-এর মধ্যে আলী ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর অন্য কেউ অবশিষ্ট নেই।

তখন আমি বললাম: আল্লাহই ভাল জানেন; আপনার তো দেখছি উসূল তথা মূলনীতিমালার ব্যাপারে কোন ধারণা নেই! বরং আপনি আরবীও ভাল জানেন না!! কিভাবে " أنفسنا " (আমাদের নফস)-এর ব্যাখ্যা করা হল; অথচ " الأنفس " হল جمع قلة যা " نا " -এর দিকে إضافة (সম্মন্ধ) হয়েছে; যার দ্বারা সকলকে বুঝায়। আর جمع (বহুবচন)-এর মোকাবিলায় جمع (বহুবচন)-এর দ্বারা এককসমূহকে বিভক্তকরণ আবশ্যক করে। যেমন আমাদের কথা:

" ركب القوم دوابهم " أي ركب كل واحد دابته .

অর্থাৎ- “সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বাহনসমূহে আরোহন করল” অর্থাৎ— তাদের প্রত্যেকে তার বাহনে আরোহন করল।

আর এটা এমন একটি মাসআলা, যা উসূল তথা মূলনীতিমালার মধ্যেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়; আর جمع (বহুবচন)-এর ব্যাপারে চুড়ান্ত কথা হল: একের অধিক [অর্থাৎ " أنفسنا " (আমাদের নফস) শব্দটির মধ্যকার جمع (বহুবচন)-এর সিগাহ বা রূপটি একের অধিকের উপর প্রয়োগ হয়েছে; অর্থৎ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু।] ব্যক্তি বা বস্তুর উপরই جمع (বহুবচন)-এর প্রয়োগ হবে। আর তা শ্রুত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা’র বাণী:

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَۖ﴾ [ سورة النور : 26]

অর্থাৎ—“লোকে যা বলে, তারা তা থেকে পবিত্র”— (সূরা আন-নূর: ২৬); অর্থাৎ- আয়েশা ও সাফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।

এবং আল্লাহ তা‘আলা’র বাণী:

﴿ فَقَدۡ صَغَتۡ قُلُوبُكُمَاۖ﴾ [ سورة التحريم : 4]

অর্থাৎ—“কারণ, তোমাদের হৃদয় ঝুঁকে পড়েছে।” — (সূরা আত-তাহরীম: ৪); অর্থাৎ- তাদের দু’জনের জন্য দু’টি হৃদয়ের বেশি হতে পারে না (অথচ قلوب শব্দ বহুবচন)। আহলুল মীযান [অর্থৎ- যুক্তিবিদ্যা ( علم المنطق )।] তথা তর্কশাস্ত্রবিদগণ جمع (বহুবচন)-এর পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে বলেন: একের অধিক বুঝানোর জন্যই جمع (বহুবচন)-এর ব্যবহার করা হয়। যেমনিভাবে হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা’র ক্ষেত্রে " الأبناء " শব্দটি ব্যবহার হয়েছে; আর রূপক অর্থে " النساء " শব্দটি শুধুমাত্র ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা’র ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। হ্যাঁ, যদি " أنفسنا " (আমাদের নফস) শব্দটি " نفسي " শব্দ দ্বারা পরিবর্তন করা হয়, তবে কখনও কখনও প্রকাশ্য হিসাব অনুযায়ী একজনকে বুঝায়।

তাছাড়া আয়াতটি যদি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র খিলাফতের উপর দলিল হতে পারে, তবে তা হাসান, হোসাইন ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমের খিলাফতের উপরও সম্মিলিত অংশীদারিত্বের কারণে দলিল হতে পারে। তবে এ কথা কেউ বলে না; কেননা হাসান ও হোসাইন উভয় ছোট; আর ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা সকল নারীদের মত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন। সুতরাং আয়াতটি খিলাফতের উপর দলিল হতে পারে না।

অবশেষে তিনি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন!!

অতঃপর তিনি বললেন: আমার নিকট আরও একটি দলিল আছে; আর তা হল আল্লাহ তা‘আলা’র বাণী:

﴿ إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُمۡ رَٰكِعُونَ ٥٥ ﴾ [ سورة المائدة : 55]

অর্থাৎ—“তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ যারা বিনত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়।” — (সূরা আল-মায়িদা: ৫৫)

তাফসীরবিদগণ একমত হয়েছেন যে, এই আয়াতটি আলী’র প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, যখন তিনি তাঁর আংটিটি নামাযরত অবস্থায় ভিক্ষুককে দান করেছেন; আর " إنما " শব্দটি সীমিতকরণের জন্য; আর" الولي " শব্দটির অর্থ হল: “দানের ক্ষেত্রে তিনি তোমাদের চেয়ে উত্তম”।

তখন আমি বললাম: আমার নিকট এই আয়াতের অনেকগুলো জওয়াব রয়েছে।

আর আমি জওয়াব দেয়া শুরু করার পূর্বেই উপস্থিত কিছু সংখ্যক শী‘আ ফারসি ভাষায় মোল্লা বাশীকে সম্বোধন করে কিছু কথা বলল, যার অর্থ হচ্ছে: ওর সঙ্গে আলোচনা বাদ দাও; কারণ, সে একটা মূর্ত শয়তান! যখনই তুমি দলিলের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি বা অতিরঞ্জিত করছ, তখনই সে তোমাকে তার জওয়াব দিয়ে দিচ্ছে, আর তোমার মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে!!

অতঃপর সে আমার দিকে দৃষ্টি দিল এবং মুচকি হাসি হাসল! আর বলল:

নিশ্চয় আপনি একজন মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি, আপনি এর এবং অন্যান্য বিষয়ের জওয়াব দেবেন। কিন্তু আমার কথা তো ‘বাহরুল ইলম’-এর সাথে; তবে সে তো জওয়াব দিতে অক্ষম।

অতঃপর আমি বললাম: তোমার কথার শুরুতে যে কথা ছিল তা হল, “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিন্দাবাদে পারদর্শী কবিগণ তার জবাব দিতে সক্ষম হবে না!”?! সুতরাং সেই তো আমাকে তর্ক-বিতর্ক ও কথোপকথনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করেছে।

অতঃপর সে বলল: আমি পারসিক ব্যক্তি, আর আরবীও ভালভাবে বুঝতে পারি না, সুতরাং কোন কোন সময় আমার নিকট থেকে এমন শব্দ বের হয়ে যায়, যা আমার উদ্দেশ্য নয়!

অতঃপর আমি তাকে বললাম: তোমাকে আমি দু’টি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার জওয়াব দিতে শী‘আ মতের অনুসারীগণ সক্ষম নয়!

তখন সে বলল: সেগুলো কী?

আমি বললাম: প্রথমটি হল, সকল সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমের ব্যাপারে শী‘আদের অভিমত কী?

তখন সে বলল: তারা মুরতাদ হয়ে গেছে (পাঁচজন ব্যতীত, তারা হলেন: আলী, মিকদাদ, আবূ যর, সালমান ফারসী ও ‘আম্মার ইবন ইয়াসার); কেননা তারা খিলাফতের ব্যাপারে আলী’র নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেনি।

আমি বললাম: ব্যাপারটি যদি অনুরূপই হয়, তবে কিভাবে আলী তাঁর কন্যা উম্মে কুলসুমকে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমের নিকট বিয়ে দিয়েছিলেন??!

তখন সে বলল: তা জোরপূর্বক!

আমি বললাম: আল্লাহর কসম! আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ব্যাপারে তোমাদের আকিদা বা বিশ্বাস ঘাটতিপূর্ণ, যা কোন সামান্য মর্যাদার আরবও পছন্দ করবে না!! বনী হাশেম তো দূরে থাক, যারা আরবের নেতা, যাদের সম্মান হল আসল সম্মান , যাদের মর্যাদা হল আসল মর্যাদা, বংশগত দিক থেকে তাঁরা উচ্চ বংশের, মহত্বের দিক থেকে তাঁরা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও গর্বিত এবং তাঁদের অধিকাংশই উন্নত গুণাবলীর অধিকারী। একজন আদনা আরব তার ইজ্জত রক্ষায় তার জীবন বিলিয়ে দিতে পারে, তার স্ত্রীদের রক্ষায় মরতে পারে এবং তার ব্যক্তিসত্ত্বা তার স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনরে কারণেই শুধু সম্মানবোধ করে না। সুতরাং কিভাবে তোমরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র জন্য এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ বিশ্বাস লালন কর, যা নিষ্ঠুর আরবগণ পর্যন্ত মানতে রাজি নয়; অথচ তিনি হলেন মহাবীর, বনী গালিবের সিংহ এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে আল্লাহর সিংহ?! বরং আমরা কতজনকে দেখলাম, যে তার সন্তান-সন্তুতির জন্য লড়াই করেছে এবং নিহত হয়েছে।

সে বলল: হতে পারে ওমর উম্মে কুলসুমের আকৃতি ধারণকারীনী কোন জিনকে বিয়ে করেছেন?! [কুলাইনী “আল-ফুরু‘ মিনাল কাফী ( الفروع من الكافي ) নামক কিতাবের হা/২ পৃ.৩১১ -এর মধ্যে ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী কোথায় ইদ্দত পালন করবে’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেন: যখন ওমর ইন্তিকাল করে, তখন আলী উম্মে কুলসুমের নিকট গমন করেন; অতঃপর তাকে নিয়ে তার বাড়িতে আসেন। এই বর্ণনার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আবূ জাফর আল-তুসী তার ‘তাহযীবুল আহকাম’ ( تهذيب الأحكام ) নামক কিতাবের হা/২ পৃ.২৮০ -এর “বাবু ইদ্দাতিন নিসা”-এর মধ্যে।]

আমি বললাম: এটা তো প্রথমটার চেয়েও জঘন্য, এ ধরনের কথা কিভাবে বোধগম্য হয়?! আর আমরা যদি এই দরজা খুলে দেই, তবে শরীয়তের সকল দরজা বন্ধ হয়ে যাবে; এমনকি যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর নিকট আসে, তবে সে এই কথা বলার সম্ভাবনা রাখে যে, তুমি জিন, আমার স্বামীর আকৃতি ধারণ করেছ, সুতরাং সে তাকে তার নিকট গমন করতে নিষেধ করবে। অতঃপর সে যদি দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী নিয়ে এসে সাক্ষ্য দেয়ার ব্যবস্থা করায় যে, সে অমুক, তবে তাদের ব্যাপারে এই কথা বলার সম্ভাবনা রয়েছে যে, তারা উভয়ে জিন, এই দুই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির আকৃতি ধারণ করে এখানে এসেছে; আর এভাবে চলতে থাকবে ... এবং সম্ভাবনা রয়েছে যে, মানুষ কাউকে হত্যা করবে অথবা সে তার নিকট অধিকার (হক) দাবি করবে; অতঃপর তাকে সে বলবে: ঐ ঘটনায় আমি হক বা অধিকার দাবি করিনি; বরং সম্ভবত সে জিন, আমার আকৃতি ধারণ করেছে এবং জাফর সাদিক, যার মাযহাব অনুযায়ী তোমাদের ইবাদত- বন্দেগী হয়ে থাকে বলে তোমরা ধারণা করে থাক, সেও জিন তার (জাফর সাদিকের) আকৃতি ধারণ করেছে এবং স্বীকৃত এসব বিধি-বিধান তোমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে!!

অতঃপর আমি তাকে বললাম: অত্যাচারী খলিফার কর্মসমূহের বিধান কী? শী‘আদের নিকট তা কার্যকর কিনা?

তখন সে বলল: বিশুদ্ধ মনে করে না এবং কার্যকরও করে না।

অতঃপর আমি বললাম: আল্লাহ তোমাকে সন্ধান দিন, মুহাম্মদ ইবন হানাফীয়া ইবন আলী ইবন আবি তালিবের মা কোন বংশের লোক?

তখন সে বলল: বনী হানীফার।

অতঃপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম: বনী হানীফাকে কে বন্দী করেছে?!

সে বলল: আমি জানি না (অথচ সে মিথ্যা বলেছে)!

অতঃপর তাদের উপস্থিত আলেমদের কেউ কেউ বলল: তাদেরকে আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বন্দী করেছে।

অতঃপর আমি বললাম: আলী’র জন্য যুদ্ধবন্দী দাসীকে বিয়ে করা এবং তার থেকে সন্তান জন্ম দেওয়া কিভাবে বৈধ হল; অথচ তোমাদের ধারণা অনুযায়ী ইমাম অত্যাচারী খলিফার কোন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে না; আর লজ্জাস্থানের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা তো একটা স্বীকৃত বিষয়!

অতঃপর সে বলল: সম্ভবত তিনি তার পরিবারের নিকট তাকে দান করতে অনুরোধ করেছেন। অর্থাৎ- তারা তাকে তার সাথে বিয়ে দিয়েছে।

আমি বললাম: এই বিষয়ে দলিলের প্রয়োজন রয়েছে।

অতঃপর সে চুপসে গেছে!! আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত)।

অতঃপর আমি বললাম: আমি তোমার সামনে কোন হাদিস ও আয়াত নিয়ে আসিনি এই জন্য যে, যখনই আমি হাদিসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বলব, “প্রসিদ্ধ ছয়টি কিতাবের সংকলকদের কেউ অথবা অন্য কেই তা বর্ণনা করেছেন”, তখন তুমি বলবে: আমি তাকে বিশুদ্ধ বলি না, আর দলিলের শর্ত হল যে, তার ব্যাপারে বিবাদকারীগণ একমত হবেন। আর আমি যদি তোমার নিকট কোন আয়াত নিয়ে আসতাম এবং বলতাম, “তাফসীরবিদগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, তার হুকুম এই এবং তা নাযিল হয়েছে আবূ বকরের শানে”, তখন তুমি বলতে: তাফসীরবিদগণের ইজমা আলী’র দলিল হতে পারে না; দূরবর্তী কোন তাবীলের কথা উল্লেখ করতে এবং বলতে: দলিল যখন সন্দেহযুক্ত হবে, তখন তার দ্বারা দলিল পেশ করাটা বাতিল বলে গণ্য হবে। সুতরাং এটাই আমাকে প্রলুব্ধ করেছে আয়াত ও হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা থেকে বিরত থাকতে।

অতঃপর শাহ আসল বিতর্ক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ফরমান জারি করলেন এবং নির্দেশ দিলেন ইরান, আফগান ও ‘মা অরাউন্নহর’ ( ما وراء النهر )-এর আলেমদেরকে একত্রিত হয়ে পারস্পরিক ‘কাফির বলাবলির বিষয়গুলো’ দূর করার জন্য; আর আমি থাকব তাদের পর্যবেক্ষক, শাহের পক্ষের উকিল (প্রতিনিধি) এবং তিন ফিরকা (দল) যেসব ঐক্যমত পোষণ করবে তার সাক্ষী।

অতঃপর আমরা তাঁবুর সীমানা থেকে বের হলাম এমতাবস্থায় যে, আফগান, উজবেকিস্তান ও পারসিকগণ আঙুল দ্বারা আমার দিকে কী একটা ইঙ্গিত করছে; আর ঐ দিনটি ছিল দেখার মত এক দিন!!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন