HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
নাজাফ সম্মেলন
লেখকঃ সাইয়েদ আব্দুল্লাহ আস-সুওয়াইদী
৫
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনআর উল্লিখিত মাসের (শাওয়াল ১১৫৬ হি.) ২৫ তারিখ বৃহস্পতিবার যোহরের পূর্বে নির্দেশ আসল, যাতে আমরা সকলে প্রথম স্থানে উপস্থিত হই; ফলে আমরা সকলেই সেখানে একত্রিত হলাম, আর পারসিকগণ সমাধির দরজার দিকে গম্বুজের বাইরে বড় ধরেনের ভীড় করছিল যাদের সংখ্যা প্রায় ষাট হাজারে পৌঁছবে!!
অতঃপর আমরা যখন বসলাম, তখন তারা সাত বিগতের চেয়ে লম্বা এক পত্রিকা নিয়ে আসল; তার লাইনসমূহ তার দুই তৃতীয়াংশ পরিমাণ লম্বা; আর তৃতীয় একতৃতীয়াংশ চার ভাগে বিভক্ত, প্রত্যেক অংশকে ভাগ ভাগ করে দিয়েছে প্রায় চার আঙুল বা তার বেশি পরিমাণ সাদা অংশ দ্বারা; কিন্তু প্রথম লাইনসমূহরে চেয়ে অন্যান্য লাইনসমূহ অনেক ছোট। অতঃপর মোল্লা বাশী রেকাবের মুফতি আকা হোসাইনকে নির্দেশ দিলেন তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জনসমক্ষে পাঠ করার জন্য, আর সে ছিল এক ব্যতিক্রমধর্মী লম্বা মানুষ; অতঃপর সে পত্রিকাটি হাতে নিল, যা ফারসি ভাষায় লিখিত; তার মূলকথা ছিল:
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা রাসূল প্রেরণের প্রয়োজন মনে করলেন; ফলে তিনি রাসূলের পর রাসূল প্রেরণ করতে থাকলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের নবী মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত আসল।
আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ইন্তিকাল করলেন, তিনি ছিলেন সর্বশেষ নবী ও রাসূল; তখন সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম ঐক্যমত পোষণ করলেন যে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে যিনি মর্যাদাবান, উত্তম ও জ্ঞানী, তিনি হলেন আবূ বকর ইবন আবি কুহাফা রাদিয়াল্লাহু আনহু । অতঃপর তারা তাঁর নিকট বায়‘আতের ব্যাপারে একমত হলেন এবং সকলেই তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেন, এমনকি আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুও স্বেচ্ছায় স্বাধীনভাবে কোন রকম জোর-জবরদস্তি ছাড়াই তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেন; অতঃপর তাঁর বায়‘আত ও খিলাফত সমাপ্ত হল; আর সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমের ইজমা হল অকাট্য দলিল, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সম্মানিত কিতাবে তাঁদের প্রশংসা করেছেন, তিনি বলেন:
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِِ﴾ [ سورة التوبة : 100]
“মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী...” — (সূরা তাওবা: ১০০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَّقَدۡۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ ِ﴾ [ سورة الفتح : 18] الآية
“আল্লাহ তো মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা গাছের নীচে তোমার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করল”। — (সূরা আল-ফাতহ: ১৮); আর সে সময় ওখানে সাতশত সাহাবী ছিলেন, তাঁরা সকলেই সিদ্দীকের নিকট বায়‘আতে উপস্থিত ছিলেন।
অতঃপর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের জন্য ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্দিষ্ট করেছে; অতঃপর ইমাম আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ সকল সাহাবী তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেন। আর ওসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ব্যাপারেও তাঁদের ঐক্যবদ্ধ রায় ছিল।
অতঃপর ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাড়িতে শাহাদাত বরণ করেন এবং তিনি খলিফা হিসেবে কাউকে নির্দিষ্ট করে যেতে পারেন নি; সুতরাং খিলাফত শুন্য অবস্থায় রয়ে গেল; অতঃপর সাহাবীগণ ঐ সময়ে আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
আর তাঁরা চারজনই একই স্থানে এবং একই সময়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও ঝগরা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হয়নি; বরং তাঁদের প্রত্যেকেই একে অপরকে ভালবাসতেন এবং প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতেন; এমনকি শায়খাইন তথা আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সম্পর্কে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: তাঁরা উভয়ে ন্যায়পরায়ণ নেতা, তাঁরা হকের উপরে ছিলেন এবং হকের উপর মৃত্যু বরণ করেছেন। আর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তখন তিনি বলেন: তোমরা যে আমার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছ, তোমাদের মধ্যে কি আলী ইবন আবি তালিব ছিল?
সুতরাং হে ইরানের অধিবাসীগণ! তোমরা জেনে রাখ যে, তাঁদের মর্যাদা ও খিলাফত এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী। সুতরাং যে কেউ তাঁদেরকে গালি দেবে অথবা তাঁদের ত্রুটি বর্ণনা করবে, তার সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি, পরিবার-পরিজন এবং তার রক্ত শাহের জন্য বৈধ; আর তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লা‘নত!!
আর আমি হিজরি ১১৪৮ সালে মুগান মরুভূমিতে বায়‘আত গ্রহণের সময় তোমাদের সাথে গালি প্রত্যাহারের শর্ত আরোপ করেছিলাম; সুতরাং এখন আমি তা প্রত্যাহার করলাম। অতএব, যে ব্যক্তি (সাহাবীদেরকে) গালি দেবে, তাকে আমি হত্যা করব! তার সন্তান ও পরিবার-পরিজনকে বন্দী করব এবং তার মালামাল ক্রোক করব! ইরানের কোন প্রান্তে এবং তার আশে পাশে গালাগালি ও এ ধরনের কোন দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড চলবে না। আর এই সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে ইতর ও অভদ্র শাহ ইসমাঈল আল-সাফাবী’র [ইবন শাইখ হায়দর ইবন শাইখ জুনাইদ ইবন শাইখ ইবরাহীম ইবন খাজা আলী ইবন শাইখ মূসা ইবন শাইখ সফিউদ্দীন ইসহাক আল-আরদাবেলী। শাহ ইসমাঈল ৮৯২ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেছে এবং সাফাবী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছে; আর সে বাগদাদ দখল করেছে ৯১৫ হিজরিতে এবং ইরানের ইতিহাসে প্রথম বারের মত ৯১৬ হিজরিতে ঘোষণা করেছে যে, ইরানের রাষ্ট্রীয় মাযহাব হল শী‘আ মাযহাব; তার সাথে ৯২০ হিজরিতে সুলতান সলিম যুদ্ধ করে এবং তিনি ‘তাশালদিরান’ যুদ্ধে তার উপর বিজয় লাভ করেন; সে যুদ্ধে শাহ ইসমাঈল আহত হয় এবং পলায়ন করে। আর ঐ পরাজয়ের দশ বছর পর ৯৩০ হিজরিতে সে মারা যায় এবং আরদাবিলে তার পিতার পাশে তাকে দাফন করা হয়; সে যে শাস্তির উপযুক্ত, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাই তার উপর পতিত হোক!] আমলে। আর তার সন্তানগণ অব্যাহতভাবে তার প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে, শেষ পর্যন্ত গালাগালি বৃদ্ধি পেয়েছে; বিদ‘আত ছড়িয়ে পড়েছে এবং ভাঙ্গন ও অনৈক্য সম্প্রসারিত হল ৮৭৫ বছর ধরে। আর এই নিকৃষ্ট ও মন্দকর্মের প্রকাশের সময়কাল তিনশ বছর ।
(অতঃপর তিনি আরও অনেক কথা-বার্তা বলেন, যা এখানে আলোচনার অবকাশ নেই। আর এই পর্যন্তই লম্বা লেখাটির সমাপ্তি ঘটে)।
আর এই কাগজে যা এসেছে, তার কিছু বিষয়ে আমি [এ কথার বক্তা ( القائل ) হলেন আল্লামা শাইখ আবদুল্লাহ আল-সুওয়াইদী র.] আপত্তি উত্থাপন করেছি। যেমন আমি মোল্লা বাশীকে বললাম:
সাইয়্যিদুনা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র খিলাফত প্রসঙ্গে উল্লেখিত " النصب " শব্দের পরিবর্তে " العهد " শব্দটি ব্যবহার করুন। কারণ, " النصب " শব্দের মধ্যে কলঙ্ক রয়েছে যে, তারা নাসিবা ( الناصبة ); আর তোমরা নাসিবা ( الناصبة ) শব্দের তাফসীর কর ঐ ব্যক্তির দ্বারা যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র প্রতি ক্রোধের জ্বালায় নিজেকে ধ্বংস করেছে।
অতঃপর কতিপয় উপস্থিত ব্যক্তি আমার কথার বিরোধিতা করল এবং একজন বলল: এটা শব্দের প্রকাশ্য অর্থের বিপরীত; আর তার অর্থ হল আমি যা উল্লেখ করেছি; তাতে কারো মনে কিছু উদয় হবে না এবং কেউ তার ইচ্ছা করবে না; আর আমি আশঙ্কা করি তোমার কারণেই ফিতনা ছড়াবে। আর এই প্রসঙ্গে মোল্লা বাশীও তার মতই কথা বলল এবং সে চুপ করল।
আর আমি মোল্লা বাশীকে আরেকটি আপত্তির কথা বললাম:
নিশ্চয় শায়খাইন তথা আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা’র ব্যাপারে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কথা: " هما إمامان ... إلخ "-কে তোমরা কয়েকটি অর্থে প্রয়োগ কর, যেগুলো শায়খাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা’র ব্যাপারে মানানসই নয়।
অতঃপর ঐ প্রথম ব্যক্তিই পূর্বের ন্যায় আমার কথার প্রতিবাদ করল।
আর আমি তাকে (মোল্লা বাশীকে) আরেকটি আপত্তির কথা বললাম:
নিশ্চয় বায়‘আত গ্রহণের সময় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ব্যাপারে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কথাটি আমাদের নিকট সত্য বলে প্রমাণিত নয়, বরং তা মিথ্যা ও বানোয়াট। সুতরাং আমি তোমাদের নিকট শায়খাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা’র প্রশংসায় তোমরা যা উল্লেখ করেছ, তা ব্যতীত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কথার উল্লেখ করব; যা তাঁদের সম্মান বর্ণনার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট। আবার তোমরা যা উল্লেখ করেছ, তা ব্যতীত তোমাদের নিকট আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র প্রশংসার কথা উল্লেখ করব, যা সত্য বলে প্রমাণিত।
অতঃপর ঐ প্রথম ব্যক্তি আবার পূর্বের ন্যায় আমার কথার প্রতিবাদ করল।
এটা হল শাহের বক্তব্যের নীচের ছোট লাইনসমূহ; ইরানিদের ভাষায় তার অর্থ হল:
“গালি প্রত্যাহার করার শর্ত আমরা মেনে নিয়েছি; আর সাহাবীদের মর্যাদা ও খিলাফতের ধারাবাহিকতা কাগজে উল্লেখিত ধারাবাহিকতা অনুসারে সাব্যস্ত। সুতরাং আমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি গালি দেবে অথবা তার বিপরীত কিছু বলবে, তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লা‘নত। আর আমাদের উপর নাদির শাহের গযব এবং আমাদের সম্পদ, রক্ত, সন্তান-সন্তুতি ও পরিবার-পরিজন তার জন্য বৈধ”!
অতঃপর তারা তাদের বক্তব্যের নীচের সাদা অংশে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছে।
আর এর নীচের ছোট লাইনসমূহ ছিল নাজাফ, কারবালা, হিল ও খাওয়ারিযমের অধিবাসীদের ভাষায় (তার অর্থও প্রথমটির মত); অতঃপর তারাও তাদের বক্তব্যের নীচের উল্লেখিত সাদা অংশে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছে। তাদের মধ্যে ছিল: সাইয়্যেদ নসরুল্লাহ যিনি ইবন কাত্তা নামে পরিচিত এবং শাইখ জাওয়াদ আন-নাজাফী আল-কুফী প্রমুখ।
আর তার নীচের ছোট লাইনসমূহ ছিল আফগানীদের ভাষায় এবং তার অর্থ হল:
“ইরানীগণ যখন তারা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা মেনে নিয়েছে এবং তাদের নিকট থেকে তার বিপরীত কোন কিছু প্রকাশ পায়নি, তখন তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত; মুসলিমগণ যে সুযোগ-সুবিধা পাবে, তারাও তাই পাবে এবং যা তাদের বিপক্ষে, তা তাদেরও বিপক্ষে।
অতঃপর তারা তাদের নামের নীচের সাদা অংশে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছে।
আর এর নীচের অংশে ছিল ‘মা অরাউন্নহর’ ( ما وراء النهر )-এর আলেমগণের ভাষায় এবং তার অর্থ হল হুবহু আফগানীরা যা বলেছে তাই এবং তারাও তার নীচে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছে।
অতঃপর এই ফকির [অর্থাৎ আল্লামা সুওয়াইদী নিজে] কাগজের সামনের অংশের উপরে তার সাক্ষ্য-সনদ লিখেছে এইভাবে: “তিন দল যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং মেনে নিয়েছে, আমি তা প্রত্যক্ষ করেছি এবং তারা আমাকে তাদের উপর সাক্ষী মনোনীত করেছে”। আর আমিও এর উপরে আমার নামের নীচে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছি।
আর সেই সময়টি ছিল দেখার মত, দুনিয়ার এক আজিব দৃশ্য! আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের জন্য ছিল এক আনন্দঘন মুহূর্ত; আর কোন যুগেই তার মত দৃশ্যের অবতারণা হয়নি। আর তার মত এমন আনন্দ উৎসবও তেমন দেখা যায় না। এই জন্য সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত।
অতঃপর শাহ রৌপ্যের পাত্রে মিষ্টান্ন সরবরাহ করলেন; আমরা তা ভক্ষণ করলাম; তার সাথে স্বর্ণের পাত্রে সুগন্ধির ধোঁয়া, যাতে আম্বরও ছিল আমরা খেলাম এবং সুগন্ধ গ্রহণ করলাম। অত:পর শাহ এ সুগন্ধির পাত্রটি আলী রা. এর কবরের জন্য ওয়াকফ করলেন [এ জাতীয় কাজ অবৈধ। শাহ যেহেতু সত্যিকার দ্বীন্ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, তাই সে এ কাজ করেছিল। [সম্পাদক]]।
অতঃপর বের হলাম; ততক্ষণে দেখি পারস্য, আরব, তুরকিস্তান ও আফগানের বহু লোক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত তাদের সংখ্যা গণনা সম্ভব নয়, তারা সবাই সমবেত হয়েছে। আর আমাদের বের হওয়াটা ছিল বৃহস্পতিবার যোহরের পর।
অতঃপর আমাকে দ্বিতীয়বারের মত শাহের দরবারে নিয়ে আসা হল, আমি পূর্বের ন্যায় সেখানে প্রবেশ করলাম; আর তিনি আমাকে সামনে অগ্রসর হতে নির্দেশ দিতে থাকলেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রথম দিনের চেয়েও তার বেশি কাছাকাছি আমাকে নেয়া হল; অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং আহমদ খানকেও উত্তম প্রতিদান দিন; আল্লাহর শপথ! দলিল-প্রমাণ সংস্কার, ফিতনা নিবারণ ও মুসলিমদের রক্ত প্রবাহিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে চেষ্টর ত্রুটি করা হয়নি! আল্লাহ ওসমান বংশের সুলতানকে সাহায্য করেছেন, আল্লাহ তার ইজ্জত দিয়েছেন; আর আমি তা আরও উপরে উঠিয়ে দিয়েছি।
অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: হে আবদুল্লাহ আফেনদী! আপনি ধারণা করবেন না যে, শাহানশাহ এই ধরনের গর্ব-অহঙ্কার করে। এটা এমন কাজ যা আল্লাহ তা‘আলা সহজ করে দিয়েছেন এবং আমাকে তার তাওফিক দান করেছেন। যেমন আমার হাতে সাহাবীদের গালি দেয়ার প্রথা দূর হল; অথচ ওসমান বংশীয় সুলতান সলিমের আমল থেকে শুরু করে আজকের দিন পর্যন্ত তারা কত সৈন্যসামন্ত প্রস্তুত করেছে, কত সম্পদ ব্যয় করেছে এবং কত জীবন ধ্বংস করেছে, যাতে এই গালি প্রথা দূর করতে পারে; কিন্তু তারা তাতে সফল হয়নি। আলহমদুলিল্লাহ (আল্লাহর প্রশংসা) আমি তা সহজে দূর করতে সক্ষম হয়েছি। পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, এই নিকৃষ্ট কাজটির সূচনা হয় ইতর শাহ ইসমাঈলের হাতে; আর তাকে প্ররোচিত করেছে এলাহজানের অধিবাসীগণ; আর তা আমাদের এই দিন পর্যন্ত চলছিল।
অতঃপর আমি তাকে বললাম: ইনশাআল্লাহু তা‘আলা অনারব সকলেই পূর্বে যেভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত ছিল আবার সেটার দিকে ফিরে আসবে।
তখন তিনি বললেন: ইনশাআল্লাহু তা‘আলা, কিন্তু আস্তে আস্তে একটার পর একটা করে। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: হে আবদুল্লাহ আফেনদী! আমি যদি গর্ব করি, তবে আমি গর্ব করে বলতে পারি যে, আমার এই মজলিসটি হল চারটি সাম্রাজ্যের সমন্বয়ে একটি মজলিস; সুতরাং আমি ইরানের সুলতান, তুকিস্তানের সুলতান, ভারত রাজ্যের সুলতান এবং আফগান সুলতান!! কিন্তু এই কাজটি সম্ভব হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাওফিক দান করার কারণে; আমার অসিলায় এটা সকল মুসলিমের উপর এক বিরাট অনুগ্রহ। কেননা, সকল সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে গালি দেয়ার সংস্কৃতি দূর করেছি। আর আমি আশা করি যে, তাঁরা (সাহাবীগণ) আমার জন্য সুপারিশ করবেন।
অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: আমি চাচ্ছি যে, আপনাকে আহমদ খানের নিকট পাঠাতে; কারণ, আমি জানি সে আপনার অপেক্ষায় আছে; কিন্তু আমি আশা করি আপনি আগামী কাল পর্যন্ত থাকবেন। কারণ, আমি ফরমান জারি করেছি যে, আমরা কুফা মসজিদে জুম‘আর সালাত আদায় করব এবং আরও ফরমান জারি করেছি যে, মিম্বরে দাঁড়িয়েই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সাহাবীদের আলোচনা করতে। আমার পূর্বে [এর দ্বারা শাহের উদ্দেশ্য হল, প্রথমে সুলতান মাহমুদ খান ইবন সুলতান মুস্তফা খানকে ডাকা; সে ছিল তখন ওসমান বংশের সুলতান। আর শাহ নাদির তাকে তার বড় ভাইয়ের অবস্থানে নিয়োগ দিলেন এবং তাকে যথাযথ সম্মান দান করলেন। আর নিজেকে সুলতানের সামনে তার ছোট ভাই হিসেবে গণ্য করলেন; যা আপনি শীঘ্রই সামনের লেখায় দেখতে পাবেন; আল্লাহ এই শাহকে তাঁর ব্যাপক রহমত দ্বারা করুণা করুন এবং তার সম্মানকে উঁচু ইল্লিয়্যীনে সমুন্নত করুন।] আমার বড় ভাই ওসমান বংশের সুলতান জনাব খুনকারের জন্য দো‘আ করা হয়! আর সকল সুন্দর উপাধিগুলো উল্লেখ করা হয়! অতঃপর ছোট ভাইয়ের জন্য দো‘আ করা হয়, অর্থাৎ তার নিজের জন্য! কিন্তু খুনকারের দো‘আর চেয়ে আমার জন্য দো‘আ কম করা হয়। কারণ, ছোট ভাইয়ের কর্তব্য হল তার বড় ভাইকে সম্মান করা!!
অতঃপর তিনি বলেন: প্রকৃতপক্ষে সেই বড় এবং আমার চেয়ে সম্মানিত! কারণ, সে হল সুলতান (বাদশা) ইবন সুলতান; আর আমি যখন দুনিয়ায় আসি, তখন আমার বাব-দাদা কেউই সুলতান বা বাদশা ছিলেন না!
অতঃপর তিনি আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দিলেন, আমি তার নিকট থেকে বের হলাম; অতঃপর প্রত্যেক তাঁবুতে সাহাবীদের আলোচনা এবং তাঁদের গুণাবলী ও শৌর্য-বীর্যের বর্ণনা হতে লাগল; যেমন তারা আলোচনা করছিল আবূ বকর, ওমর ও ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের গুণাবলী ও মার্যাদার কথা এবং তার উপর কুরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে দলিল উদ্ঘাটন করছিল; যার বর্ণনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকজন পর্যন্ত করতে অপারগ ছিল। সাথে সাথে তারা সাহাবীগণকে গালির প্রবর্তন করার কারণে অনারবদের ও শাহ ইসমাঈলের মতের নিন্দা করছিল।
আর জুম‘আর দিন সকাল বেলায় তিনি কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন; আর নাজাফ থেকে তার দূরত্ব হল এক ফরসখ ও সামান্য কিছু। অতঃপর যখন যোহরের সময় নিকটবর্তী হল, তখন তিনি মুয়ায্যিনদেরকে আযানের নির্দেশ দিলেন এবং তারা জুম‘আর আযান ঘোষণা করল; অতঃপর আমি রাষ্ট্রের উযিরকে বললাম:
আমাদের মতে কুফার মসজিদে জুম‘আর সালাত শুদ্ধ নয়। ইমাম আবূ হানিফা র.-এর মতে শহর না হওয়ার কারণে; আর ইমাম শাফেয়ী র.-এর মতে শহরের অধিবাসীর সংখ্যা চল্লিশজন না হওয়ার কারণে।
অতঃপর তিনি বলেন: উদ্দেশ্য হল সেখানে আপনি উপস্থিত থেকে খুতবা শুনা। সুতরাং আপনি চাইলে সালাত আদায় করবেন, আর না চাইলে না।
অতঃপর আমি জামে মসজিদে গেলাম; তখন তাতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ভীড় দেখলাম; ইরানের সকল আলেম ও খানেরা উপস্থিত! আর তখন শাহের পক্ষ থেকে নিযুক্ত ইমাম ‘আলী মদদ’ মিম্বারের উপর ছিল; অতঃপর মোল্লা বাশী ও কারবালার আলেমদের মধ্যে পরামর্শ হল; এক পর্যায়ে মোল্লা বাশী ‘আলী মদদ’কে মিম্বর থেকে নামতে নির্দেশ দিলেন; আর কারবালায়ী মিম্বরে উঠল, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত ও সালাম পাঠ করল, অতঃপর বলল: “(সালাত ও সালাম) তাঁর পরের প্রথম খলিফা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর এবং দ্বিতীয় খলিফা সত্যভাষী সাইয়্যেদুনা ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর”। কিন্তু সে " عمر "-এর "ر" অক্ষরে যের পড়ল; অথচ খতীব আরবি ভাষার ইমাম; কিন্তু এটা তার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যা অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া বুঝতে পারবে না! আর তা হল " عمر " শব্দটি عدل ও معرفة হওয়ার কারণে منع الصرف ; এই খবিস তা منصرف হিসেবে পড়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে যে, তাতে عدل ও معرفة নেই?! আল্লাহ তাকে খতিবের পদ থেকে সরিয়ে দিক এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে অপমান-অপদস্থ করুক।
অতঃপর সে বলল: “(সালাত ও সালাম) তৃতীয় খলিফা কুরআন সংকলনকারী ওসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর; চতুর্থ খলিফা বনী গালিবের সিংহ সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর; আর তাঁর দুই সন্তান হাসান ও হোসাইন এবং বাকি সকল সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমের উপর।
হে আল্লাহ! তুমি ‘আল্লাহর ছায়ার’ রাষ্ট্রকে জগতের মধ্যে কায়েম ও দায়েম রাখ; সে হল বনী আদমের সুলতানদের সুলতান, দ্বিতীয় ইসকান্দার যূল কারনাইন, খাদেমুল হারামাইন আশ-শারীফাইন, সুলতান মাহমুদ খান ইবন সুলতান মুস্তফা খান; আল্লাহ তার খিলাফতকে শক্তিশালী করুন; তার সাম্রাজ্যকে স্থায়ী করুন; তাঁর একত্ববাদের সৈনিকদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের উপর বিজয় দান করুন”।
অতঃপর নাদির শাহের জন্য এর চেয়ে অনেক কম দো‘আ করল; কিছু ফারসি ভাষায়, আবার কিছু আরবি ভাষায়।
অতঃপর সে মিম্বর থেকে নামল, তারপর সালাতের ইকামত দেয়া হল; সে সামনে গেল এবং সালাতে দাখিল হল; তার সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হল এবং তার পেছনে আলেমগণ ডানে-বামে দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর সে সূরা ফাতিহা ও সূরা জুম‘আ পাঠ করল; তার দুই হাত উত্তোলন করল এবং রুকূর পূর্বে প্রকাশ্য উচ্চারণে কুনুত পাঠ করল; অতঃপর রুকূ করল এবং প্রকাশ্য উচ্চারণে রুকূর তাসবীহসমূহ পাঠ করল; অতঃপর " الله أكبر " বলে এবং " سمع الله لمن حمد " ও " ربنا لك الحمد " না বলেই রুকূ থেকে উঠল?! অতঃপর সোজা দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বারের মত প্রকাশ্য উচ্চারণে কুনুত পাঠ করল; অতঃপর সিজদায় গেল এবং সিজদার তাসবীহসমূহ পাঠ করল, আর তার সাথে উচ্চস্বরে আরও অন্য কিছু পাঠ করল; সিজদা থেকে মাথা উঠাল এবং দুই সিজদার মাঝখানে প্রকাশ্য উচ্চারণে কিছু পাঠ করল; অতঃপর দ্বিতীয় বারের মত সিজদা দিল এবং প্রকাশ্য উচ্চারণে প্রথম বারের মত সিজদার তাসবীহসমূহ পাঠ করল, সাথে আরও কিছু দো‘আ সংযুক্ত করল। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতের উদ্দেশ্যে দাঁড়াল এবং সূরা ফাতিহা ও সূরা মুনাফিকূন পাঠ করল; আর প্রথম রাকাতের মতই বাকি কাজগুলো করল এবং তাশাহ্হুদের জন্য বসল; অতঃপর আমাদের তাশাহুদের যা আছে, তার অনেক কিছুই সে পাঠ করল; তবে " السلام عليك أيها النبي و رحمة الله و بركاته " এই কথাটিও প্রকাশ্য উচ্চারণে পাঠ করল। অতঃপর তার দুই হাত তার মাথায় রাখা অবস্থায় শুধু ডান দিকে সালাম দিল।
অতঃপর শাহের পক্ষ থেকে অনেক মিষ্টি আসল এবং সেখানে মানুষের হৈচৈ ও ভীড় দেখা দিল; এমনকি তাতে মোল্লা বাশী’র মাথা থেকে পাগড়ি পড়ে গেল এবং তার মধ্যমা আঙুল আহত হল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম:
অতঃপর আমরা যখন বসলাম, তখন তারা সাত বিগতের চেয়ে লম্বা এক পত্রিকা নিয়ে আসল; তার লাইনসমূহ তার দুই তৃতীয়াংশ পরিমাণ লম্বা; আর তৃতীয় একতৃতীয়াংশ চার ভাগে বিভক্ত, প্রত্যেক অংশকে ভাগ ভাগ করে দিয়েছে প্রায় চার আঙুল বা তার বেশি পরিমাণ সাদা অংশ দ্বারা; কিন্তু প্রথম লাইনসমূহরে চেয়ে অন্যান্য লাইনসমূহ অনেক ছোট। অতঃপর মোল্লা বাশী রেকাবের মুফতি আকা হোসাইনকে নির্দেশ দিলেন তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জনসমক্ষে পাঠ করার জন্য, আর সে ছিল এক ব্যতিক্রমধর্মী লম্বা মানুষ; অতঃপর সে পত্রিকাটি হাতে নিল, যা ফারসি ভাষায় লিখিত; তার মূলকথা ছিল:
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা রাসূল প্রেরণের প্রয়োজন মনে করলেন; ফলে তিনি রাসূলের পর রাসূল প্রেরণ করতে থাকলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের নবী মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত আসল।
আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ইন্তিকাল করলেন, তিনি ছিলেন সর্বশেষ নবী ও রাসূল; তখন সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম ঐক্যমত পোষণ করলেন যে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে যিনি মর্যাদাবান, উত্তম ও জ্ঞানী, তিনি হলেন আবূ বকর ইবন আবি কুহাফা রাদিয়াল্লাহু আনহু । অতঃপর তারা তাঁর নিকট বায়‘আতের ব্যাপারে একমত হলেন এবং সকলেই তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেন, এমনকি আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুও স্বেচ্ছায় স্বাধীনভাবে কোন রকম জোর-জবরদস্তি ছাড়াই তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেন; অতঃপর তাঁর বায়‘আত ও খিলাফত সমাপ্ত হল; আর সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমের ইজমা হল অকাট্য দলিল, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সম্মানিত কিতাবে তাঁদের প্রশংসা করেছেন, তিনি বলেন:
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِِ﴾ [ سورة التوبة : 100]
“মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী...” — (সূরা তাওবা: ১০০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَّقَدۡۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ ِ﴾ [ سورة الفتح : 18] الآية
“আল্লাহ তো মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা গাছের নীচে তোমার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করল”। — (সূরা আল-ফাতহ: ১৮); আর সে সময় ওখানে সাতশত সাহাবী ছিলেন, তাঁরা সকলেই সিদ্দীকের নিকট বায়‘আতে উপস্থিত ছিলেন।
অতঃপর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের জন্য ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্দিষ্ট করেছে; অতঃপর ইমাম আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ সকল সাহাবী তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেন। আর ওসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ব্যাপারেও তাঁদের ঐক্যবদ্ধ রায় ছিল।
অতঃপর ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাড়িতে শাহাদাত বরণ করেন এবং তিনি খলিফা হিসেবে কাউকে নির্দিষ্ট করে যেতে পারেন নি; সুতরাং খিলাফত শুন্য অবস্থায় রয়ে গেল; অতঃপর সাহাবীগণ ঐ সময়ে আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
আর তাঁরা চারজনই একই স্থানে এবং একই সময়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও ঝগরা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হয়নি; বরং তাঁদের প্রত্যেকেই একে অপরকে ভালবাসতেন এবং প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতেন; এমনকি শায়খাইন তথা আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সম্পর্কে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: তাঁরা উভয়ে ন্যায়পরায়ণ নেতা, তাঁরা হকের উপরে ছিলেন এবং হকের উপর মৃত্যু বরণ করেছেন। আর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তখন তিনি বলেন: তোমরা যে আমার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছ, তোমাদের মধ্যে কি আলী ইবন আবি তালিব ছিল?
সুতরাং হে ইরানের অধিবাসীগণ! তোমরা জেনে রাখ যে, তাঁদের মর্যাদা ও খিলাফত এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী। সুতরাং যে কেউ তাঁদেরকে গালি দেবে অথবা তাঁদের ত্রুটি বর্ণনা করবে, তার সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি, পরিবার-পরিজন এবং তার রক্ত শাহের জন্য বৈধ; আর তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লা‘নত!!
আর আমি হিজরি ১১৪৮ সালে মুগান মরুভূমিতে বায়‘আত গ্রহণের সময় তোমাদের সাথে গালি প্রত্যাহারের শর্ত আরোপ করেছিলাম; সুতরাং এখন আমি তা প্রত্যাহার করলাম। অতএব, যে ব্যক্তি (সাহাবীদেরকে) গালি দেবে, তাকে আমি হত্যা করব! তার সন্তান ও পরিবার-পরিজনকে বন্দী করব এবং তার মালামাল ক্রোক করব! ইরানের কোন প্রান্তে এবং তার আশে পাশে গালাগালি ও এ ধরনের কোন দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড চলবে না। আর এই সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে ইতর ও অভদ্র শাহ ইসমাঈল আল-সাফাবী’র [ইবন শাইখ হায়দর ইবন শাইখ জুনাইদ ইবন শাইখ ইবরাহীম ইবন খাজা আলী ইবন শাইখ মূসা ইবন শাইখ সফিউদ্দীন ইসহাক আল-আরদাবেলী। শাহ ইসমাঈল ৮৯২ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেছে এবং সাফাবী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছে; আর সে বাগদাদ দখল করেছে ৯১৫ হিজরিতে এবং ইরানের ইতিহাসে প্রথম বারের মত ৯১৬ হিজরিতে ঘোষণা করেছে যে, ইরানের রাষ্ট্রীয় মাযহাব হল শী‘আ মাযহাব; তার সাথে ৯২০ হিজরিতে সুলতান সলিম যুদ্ধ করে এবং তিনি ‘তাশালদিরান’ যুদ্ধে তার উপর বিজয় লাভ করেন; সে যুদ্ধে শাহ ইসমাঈল আহত হয় এবং পলায়ন করে। আর ঐ পরাজয়ের দশ বছর পর ৯৩০ হিজরিতে সে মারা যায় এবং আরদাবিলে তার পিতার পাশে তাকে দাফন করা হয়; সে যে শাস্তির উপযুক্ত, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাই তার উপর পতিত হোক!] আমলে। আর তার সন্তানগণ অব্যাহতভাবে তার প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে, শেষ পর্যন্ত গালাগালি বৃদ্ধি পেয়েছে; বিদ‘আত ছড়িয়ে পড়েছে এবং ভাঙ্গন ও অনৈক্য সম্প্রসারিত হল ৮৭৫ বছর ধরে। আর এই নিকৃষ্ট ও মন্দকর্মের প্রকাশের সময়কাল তিনশ বছর ।
(অতঃপর তিনি আরও অনেক কথা-বার্তা বলেন, যা এখানে আলোচনার অবকাশ নেই। আর এই পর্যন্তই লম্বা লেখাটির সমাপ্তি ঘটে)।
আর এই কাগজে যা এসেছে, তার কিছু বিষয়ে আমি [এ কথার বক্তা ( القائل ) হলেন আল্লামা শাইখ আবদুল্লাহ আল-সুওয়াইদী র.] আপত্তি উত্থাপন করেছি। যেমন আমি মোল্লা বাশীকে বললাম:
সাইয়্যিদুনা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র খিলাফত প্রসঙ্গে উল্লেখিত " النصب " শব্দের পরিবর্তে " العهد " শব্দটি ব্যবহার করুন। কারণ, " النصب " শব্দের মধ্যে কলঙ্ক রয়েছে যে, তারা নাসিবা ( الناصبة ); আর তোমরা নাসিবা ( الناصبة ) শব্দের তাফসীর কর ঐ ব্যক্তির দ্বারা যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র প্রতি ক্রোধের জ্বালায় নিজেকে ধ্বংস করেছে।
অতঃপর কতিপয় উপস্থিত ব্যক্তি আমার কথার বিরোধিতা করল এবং একজন বলল: এটা শব্দের প্রকাশ্য অর্থের বিপরীত; আর তার অর্থ হল আমি যা উল্লেখ করেছি; তাতে কারো মনে কিছু উদয় হবে না এবং কেউ তার ইচ্ছা করবে না; আর আমি আশঙ্কা করি তোমার কারণেই ফিতনা ছড়াবে। আর এই প্রসঙ্গে মোল্লা বাশীও তার মতই কথা বলল এবং সে চুপ করল।
আর আমি মোল্লা বাশীকে আরেকটি আপত্তির কথা বললাম:
নিশ্চয় শায়খাইন তথা আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা’র ব্যাপারে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কথা: " هما إمامان ... إلخ "-কে তোমরা কয়েকটি অর্থে প্রয়োগ কর, যেগুলো শায়খাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা’র ব্যাপারে মানানসই নয়।
অতঃপর ঐ প্রথম ব্যক্তিই পূর্বের ন্যায় আমার কথার প্রতিবাদ করল।
আর আমি তাকে (মোল্লা বাশীকে) আরেকটি আপত্তির কথা বললাম:
নিশ্চয় বায়‘আত গ্রহণের সময় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ব্যাপারে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কথাটি আমাদের নিকট সত্য বলে প্রমাণিত নয়, বরং তা মিথ্যা ও বানোয়াট। সুতরাং আমি তোমাদের নিকট শায়খাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা’র প্রশংসায় তোমরা যা উল্লেখ করেছ, তা ব্যতীত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কথার উল্লেখ করব; যা তাঁদের সম্মান বর্ণনার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট। আবার তোমরা যা উল্লেখ করেছ, তা ব্যতীত তোমাদের নিকট আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র প্রশংসার কথা উল্লেখ করব, যা সত্য বলে প্রমাণিত।
অতঃপর ঐ প্রথম ব্যক্তি আবার পূর্বের ন্যায় আমার কথার প্রতিবাদ করল।
এটা হল শাহের বক্তব্যের নীচের ছোট লাইনসমূহ; ইরানিদের ভাষায় তার অর্থ হল:
“গালি প্রত্যাহার করার শর্ত আমরা মেনে নিয়েছি; আর সাহাবীদের মর্যাদা ও খিলাফতের ধারাবাহিকতা কাগজে উল্লেখিত ধারাবাহিকতা অনুসারে সাব্যস্ত। সুতরাং আমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি গালি দেবে অথবা তার বিপরীত কিছু বলবে, তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লা‘নত। আর আমাদের উপর নাদির শাহের গযব এবং আমাদের সম্পদ, রক্ত, সন্তান-সন্তুতি ও পরিবার-পরিজন তার জন্য বৈধ”!
অতঃপর তারা তাদের বক্তব্যের নীচের সাদা অংশে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছে।
আর এর নীচের ছোট লাইনসমূহ ছিল নাজাফ, কারবালা, হিল ও খাওয়ারিযমের অধিবাসীদের ভাষায় (তার অর্থও প্রথমটির মত); অতঃপর তারাও তাদের বক্তব্যের নীচের উল্লেখিত সাদা অংশে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছে। তাদের মধ্যে ছিল: সাইয়্যেদ নসরুল্লাহ যিনি ইবন কাত্তা নামে পরিচিত এবং শাইখ জাওয়াদ আন-নাজাফী আল-কুফী প্রমুখ।
আর তার নীচের ছোট লাইনসমূহ ছিল আফগানীদের ভাষায় এবং তার অর্থ হল:
“ইরানীগণ যখন তারা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা মেনে নিয়েছে এবং তাদের নিকট থেকে তার বিপরীত কোন কিছু প্রকাশ পায়নি, তখন তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত; মুসলিমগণ যে সুযোগ-সুবিধা পাবে, তারাও তাই পাবে এবং যা তাদের বিপক্ষে, তা তাদেরও বিপক্ষে।
অতঃপর তারা তাদের নামের নীচের সাদা অংশে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছে।
আর এর নীচের অংশে ছিল ‘মা অরাউন্নহর’ ( ما وراء النهر )-এর আলেমগণের ভাষায় এবং তার অর্থ হল হুবহু আফগানীরা যা বলেছে তাই এবং তারাও তার নীচে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছে।
অতঃপর এই ফকির [অর্থাৎ আল্লামা সুওয়াইদী নিজে] কাগজের সামনের অংশের উপরে তার সাক্ষ্য-সনদ লিখেছে এইভাবে: “তিন দল যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং মেনে নিয়েছে, আমি তা প্রত্যক্ষ করেছি এবং তারা আমাকে তাদের উপর সাক্ষী মনোনীত করেছে”। আর আমিও এর উপরে আমার নামের নীচে সই-স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছি।
আর সেই সময়টি ছিল দেখার মত, দুনিয়ার এক আজিব দৃশ্য! আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের জন্য ছিল এক আনন্দঘন মুহূর্ত; আর কোন যুগেই তার মত দৃশ্যের অবতারণা হয়নি। আর তার মত এমন আনন্দ উৎসবও তেমন দেখা যায় না। এই জন্য সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত।
অতঃপর শাহ রৌপ্যের পাত্রে মিষ্টান্ন সরবরাহ করলেন; আমরা তা ভক্ষণ করলাম; তার সাথে স্বর্ণের পাত্রে সুগন্ধির ধোঁয়া, যাতে আম্বরও ছিল আমরা খেলাম এবং সুগন্ধ গ্রহণ করলাম। অত:পর শাহ এ সুগন্ধির পাত্রটি আলী রা. এর কবরের জন্য ওয়াকফ করলেন [এ জাতীয় কাজ অবৈধ। শাহ যেহেতু সত্যিকার দ্বীন্ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, তাই সে এ কাজ করেছিল। [সম্পাদক]]।
অতঃপর বের হলাম; ততক্ষণে দেখি পারস্য, আরব, তুরকিস্তান ও আফগানের বহু লোক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত তাদের সংখ্যা গণনা সম্ভব নয়, তারা সবাই সমবেত হয়েছে। আর আমাদের বের হওয়াটা ছিল বৃহস্পতিবার যোহরের পর।
অতঃপর আমাকে দ্বিতীয়বারের মত শাহের দরবারে নিয়ে আসা হল, আমি পূর্বের ন্যায় সেখানে প্রবেশ করলাম; আর তিনি আমাকে সামনে অগ্রসর হতে নির্দেশ দিতে থাকলেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রথম দিনের চেয়েও তার বেশি কাছাকাছি আমাকে নেয়া হল; অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং আহমদ খানকেও উত্তম প্রতিদান দিন; আল্লাহর শপথ! দলিল-প্রমাণ সংস্কার, ফিতনা নিবারণ ও মুসলিমদের রক্ত প্রবাহিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে চেষ্টর ত্রুটি করা হয়নি! আল্লাহ ওসমান বংশের সুলতানকে সাহায্য করেছেন, আল্লাহ তার ইজ্জত দিয়েছেন; আর আমি তা আরও উপরে উঠিয়ে দিয়েছি।
অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: হে আবদুল্লাহ আফেনদী! আপনি ধারণা করবেন না যে, শাহানশাহ এই ধরনের গর্ব-অহঙ্কার করে। এটা এমন কাজ যা আল্লাহ তা‘আলা সহজ করে দিয়েছেন এবং আমাকে তার তাওফিক দান করেছেন। যেমন আমার হাতে সাহাবীদের গালি দেয়ার প্রথা দূর হল; অথচ ওসমান বংশীয় সুলতান সলিমের আমল থেকে শুরু করে আজকের দিন পর্যন্ত তারা কত সৈন্যসামন্ত প্রস্তুত করেছে, কত সম্পদ ব্যয় করেছে এবং কত জীবন ধ্বংস করেছে, যাতে এই গালি প্রথা দূর করতে পারে; কিন্তু তারা তাতে সফল হয়নি। আলহমদুলিল্লাহ (আল্লাহর প্রশংসা) আমি তা সহজে দূর করতে সক্ষম হয়েছি। পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, এই নিকৃষ্ট কাজটির সূচনা হয় ইতর শাহ ইসমাঈলের হাতে; আর তাকে প্ররোচিত করেছে এলাহজানের অধিবাসীগণ; আর তা আমাদের এই দিন পর্যন্ত চলছিল।
অতঃপর আমি তাকে বললাম: ইনশাআল্লাহু তা‘আলা অনারব সকলেই পূর্বে যেভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত ছিল আবার সেটার দিকে ফিরে আসবে।
তখন তিনি বললেন: ইনশাআল্লাহু তা‘আলা, কিন্তু আস্তে আস্তে একটার পর একটা করে। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: হে আবদুল্লাহ আফেনদী! আমি যদি গর্ব করি, তবে আমি গর্ব করে বলতে পারি যে, আমার এই মজলিসটি হল চারটি সাম্রাজ্যের সমন্বয়ে একটি মজলিস; সুতরাং আমি ইরানের সুলতান, তুকিস্তানের সুলতান, ভারত রাজ্যের সুলতান এবং আফগান সুলতান!! কিন্তু এই কাজটি সম্ভব হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাওফিক দান করার কারণে; আমার অসিলায় এটা সকল মুসলিমের উপর এক বিরাট অনুগ্রহ। কেননা, সকল সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে গালি দেয়ার সংস্কৃতি দূর করেছি। আর আমি আশা করি যে, তাঁরা (সাহাবীগণ) আমার জন্য সুপারিশ করবেন।
অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: আমি চাচ্ছি যে, আপনাকে আহমদ খানের নিকট পাঠাতে; কারণ, আমি জানি সে আপনার অপেক্ষায় আছে; কিন্তু আমি আশা করি আপনি আগামী কাল পর্যন্ত থাকবেন। কারণ, আমি ফরমান জারি করেছি যে, আমরা কুফা মসজিদে জুম‘আর সালাত আদায় করব এবং আরও ফরমান জারি করেছি যে, মিম্বরে দাঁড়িয়েই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সাহাবীদের আলোচনা করতে। আমার পূর্বে [এর দ্বারা শাহের উদ্দেশ্য হল, প্রথমে সুলতান মাহমুদ খান ইবন সুলতান মুস্তফা খানকে ডাকা; সে ছিল তখন ওসমান বংশের সুলতান। আর শাহ নাদির তাকে তার বড় ভাইয়ের অবস্থানে নিয়োগ দিলেন এবং তাকে যথাযথ সম্মান দান করলেন। আর নিজেকে সুলতানের সামনে তার ছোট ভাই হিসেবে গণ্য করলেন; যা আপনি শীঘ্রই সামনের লেখায় দেখতে পাবেন; আল্লাহ এই শাহকে তাঁর ব্যাপক রহমত দ্বারা করুণা করুন এবং তার সম্মানকে উঁচু ইল্লিয়্যীনে সমুন্নত করুন।] আমার বড় ভাই ওসমান বংশের সুলতান জনাব খুনকারের জন্য দো‘আ করা হয়! আর সকল সুন্দর উপাধিগুলো উল্লেখ করা হয়! অতঃপর ছোট ভাইয়ের জন্য দো‘আ করা হয়, অর্থাৎ তার নিজের জন্য! কিন্তু খুনকারের দো‘আর চেয়ে আমার জন্য দো‘আ কম করা হয়। কারণ, ছোট ভাইয়ের কর্তব্য হল তার বড় ভাইকে সম্মান করা!!
অতঃপর তিনি বলেন: প্রকৃতপক্ষে সেই বড় এবং আমার চেয়ে সম্মানিত! কারণ, সে হল সুলতান (বাদশা) ইবন সুলতান; আর আমি যখন দুনিয়ায় আসি, তখন আমার বাব-দাদা কেউই সুলতান বা বাদশা ছিলেন না!
অতঃপর তিনি আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দিলেন, আমি তার নিকট থেকে বের হলাম; অতঃপর প্রত্যেক তাঁবুতে সাহাবীদের আলোচনা এবং তাঁদের গুণাবলী ও শৌর্য-বীর্যের বর্ণনা হতে লাগল; যেমন তারা আলোচনা করছিল আবূ বকর, ওমর ও ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের গুণাবলী ও মার্যাদার কথা এবং তার উপর কুরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে দলিল উদ্ঘাটন করছিল; যার বর্ণনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকজন পর্যন্ত করতে অপারগ ছিল। সাথে সাথে তারা সাহাবীগণকে গালির প্রবর্তন করার কারণে অনারবদের ও শাহ ইসমাঈলের মতের নিন্দা করছিল।
আর জুম‘আর দিন সকাল বেলায় তিনি কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন; আর নাজাফ থেকে তার দূরত্ব হল এক ফরসখ ও সামান্য কিছু। অতঃপর যখন যোহরের সময় নিকটবর্তী হল, তখন তিনি মুয়ায্যিনদেরকে আযানের নির্দেশ দিলেন এবং তারা জুম‘আর আযান ঘোষণা করল; অতঃপর আমি রাষ্ট্রের উযিরকে বললাম:
আমাদের মতে কুফার মসজিদে জুম‘আর সালাত শুদ্ধ নয়। ইমাম আবূ হানিফা র.-এর মতে শহর না হওয়ার কারণে; আর ইমাম শাফেয়ী র.-এর মতে শহরের অধিবাসীর সংখ্যা চল্লিশজন না হওয়ার কারণে।
অতঃপর তিনি বলেন: উদ্দেশ্য হল সেখানে আপনি উপস্থিত থেকে খুতবা শুনা। সুতরাং আপনি চাইলে সালাত আদায় করবেন, আর না চাইলে না।
অতঃপর আমি জামে মসজিদে গেলাম; তখন তাতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ভীড় দেখলাম; ইরানের সকল আলেম ও খানেরা উপস্থিত! আর তখন শাহের পক্ষ থেকে নিযুক্ত ইমাম ‘আলী মদদ’ মিম্বারের উপর ছিল; অতঃপর মোল্লা বাশী ও কারবালার আলেমদের মধ্যে পরামর্শ হল; এক পর্যায়ে মোল্লা বাশী ‘আলী মদদ’কে মিম্বর থেকে নামতে নির্দেশ দিলেন; আর কারবালায়ী মিম্বরে উঠল, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত ও সালাম পাঠ করল, অতঃপর বলল: “(সালাত ও সালাম) তাঁর পরের প্রথম খলিফা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর এবং দ্বিতীয় খলিফা সত্যভাষী সাইয়্যেদুনা ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর”। কিন্তু সে " عمر "-এর "ر" অক্ষরে যের পড়ল; অথচ খতীব আরবি ভাষার ইমাম; কিন্তু এটা তার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যা অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া বুঝতে পারবে না! আর তা হল " عمر " শব্দটি عدل ও معرفة হওয়ার কারণে منع الصرف ; এই খবিস তা منصرف হিসেবে পড়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে যে, তাতে عدل ও معرفة নেই?! আল্লাহ তাকে খতিবের পদ থেকে সরিয়ে দিক এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে অপমান-অপদস্থ করুক।
অতঃপর সে বলল: “(সালাত ও সালাম) তৃতীয় খলিফা কুরআন সংকলনকারী ওসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর; চতুর্থ খলিফা বনী গালিবের সিংহ সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর; আর তাঁর দুই সন্তান হাসান ও হোসাইন এবং বাকি সকল সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমের উপর।
হে আল্লাহ! তুমি ‘আল্লাহর ছায়ার’ রাষ্ট্রকে জগতের মধ্যে কায়েম ও দায়েম রাখ; সে হল বনী আদমের সুলতানদের সুলতান, দ্বিতীয় ইসকান্দার যূল কারনাইন, খাদেমুল হারামাইন আশ-শারীফাইন, সুলতান মাহমুদ খান ইবন সুলতান মুস্তফা খান; আল্লাহ তার খিলাফতকে শক্তিশালী করুন; তার সাম্রাজ্যকে স্থায়ী করুন; তাঁর একত্ববাদের সৈনিকদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের উপর বিজয় দান করুন”।
অতঃপর নাদির শাহের জন্য এর চেয়ে অনেক কম দো‘আ করল; কিছু ফারসি ভাষায়, আবার কিছু আরবি ভাষায়।
অতঃপর সে মিম্বর থেকে নামল, তারপর সালাতের ইকামত দেয়া হল; সে সামনে গেল এবং সালাতে দাখিল হল; তার সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হল এবং তার পেছনে আলেমগণ ডানে-বামে দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর সে সূরা ফাতিহা ও সূরা জুম‘আ পাঠ করল; তার দুই হাত উত্তোলন করল এবং রুকূর পূর্বে প্রকাশ্য উচ্চারণে কুনুত পাঠ করল; অতঃপর রুকূ করল এবং প্রকাশ্য উচ্চারণে রুকূর তাসবীহসমূহ পাঠ করল; অতঃপর " الله أكبر " বলে এবং " سمع الله لمن حمد " ও " ربنا لك الحمد " না বলেই রুকূ থেকে উঠল?! অতঃপর সোজা দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বারের মত প্রকাশ্য উচ্চারণে কুনুত পাঠ করল; অতঃপর সিজদায় গেল এবং সিজদার তাসবীহসমূহ পাঠ করল, আর তার সাথে উচ্চস্বরে আরও অন্য কিছু পাঠ করল; সিজদা থেকে মাথা উঠাল এবং দুই সিজদার মাঝখানে প্রকাশ্য উচ্চারণে কিছু পাঠ করল; অতঃপর দ্বিতীয় বারের মত সিজদা দিল এবং প্রকাশ্য উচ্চারণে প্রথম বারের মত সিজদার তাসবীহসমূহ পাঠ করল, সাথে আরও কিছু দো‘আ সংযুক্ত করল। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতের উদ্দেশ্যে দাঁড়াল এবং সূরা ফাতিহা ও সূরা মুনাফিকূন পাঠ করল; আর প্রথম রাকাতের মতই বাকি কাজগুলো করল এবং তাশাহ্হুদের জন্য বসল; অতঃপর আমাদের তাশাহুদের যা আছে, তার অনেক কিছুই সে পাঠ করল; তবে " السلام عليك أيها النبي و رحمة الله و بركاته " এই কথাটিও প্রকাশ্য উচ্চারণে পাঠ করল। অতঃপর তার দুই হাত তার মাথায় রাখা অবস্থায় শুধু ডান দিকে সালাম দিল।
অতঃপর শাহের পক্ষ থেকে অনেক মিষ্টি আসল এবং সেখানে মানুষের হৈচৈ ও ভীড় দেখা দিল; এমনকি তাতে মোল্লা বাশী’র মাথা থেকে পাগড়ি পড়ে গেল এবং তার মধ্যমা আঙুল আহত হল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম:
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন