HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

বিশ্ব বাবা দিবস ইসলামী দৃষ্টিকোণ

লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
বিশ্ব বাবা দিবস : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

বিশ্ব বাবা দিবস : ইসলামী দৃষ্টিকোণ
আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশে বা দেশের বাহিরে অনেক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। যেমন বিশ্ব নারী দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্দি দিবস, বিশ্ব আবহাওয়া দিবস, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, মে দিবস, শিশু দিবস, তামাকমুক্ত দিবস, জাতিসঙ্গ দিবস, বিশ্ব পরিবেশ দিবস, বিশ্ব শরনার্থী দিবস ইত্যাদি নানা রকম দিবস। এত দিবস যে ইদানীং পালিত হয় যার সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে আছে বলে আমার মনে হয় না।

যে দিবসগুলো আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন করা হয় তাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।

এক. এমন বিষয় নিয়ে কতগুলো দিবস পালন করা হয়, যে গুলোর সাথে কোন ধর্ম বা জাতির সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নেই। মানুষকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতন করার জন্য দিবসগুলো উদযাপনের প্রচলন করা হয়েছে। যেমন বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস, মাদক বিরোধী দিবস, জলবায়ু দিবস, বিশ্ব শরনার্থী দিবস ইত্যাদি।

দুই. কতগুলো দিবস আছে যেগুলোর মূল উৎপত্তি কোন ধর্মের বা জাতির সংস্কৃতি বা বিশ্বাস থেকে। কিন্তু পরে এগুলোকে আন্তর্জাতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বিশ্ব মা দিবস, বিশ্ব বাবা দিবস, ইংরেজী নববর্ষ ইত্যাদি।

তিন. আবার কতগুলো দিবস আছে যেগুলো কোন ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক ঘটনার স্মরণে পালিত হয়ে থাকে। যেমন মে দিবস, হিরোশিমা দিবস ইত্যাদি।

প্রথম প্রকারের দিবস সার্বজনীনভাবে পালিত হতে পারে, এতে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোন আপত্তি নেই। কারণ এতে মানব কল্যাণের বিষয় জড়িত। মানুষকে অকল্যাণ ও অনিষ্টতা থেকে সাবধান করা ও কল্যাণ, উন্নতির দিকে আহবান করার ক্ষেত্রে ইসলামের চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদের ভূমিকা বেশি নেই।

তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকারের দিবস পালন সম্পর্কে অবশ্যই ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি সতন্ত্র।

দ্বিতীয় প্রকার দিবস পালন সম্পর্কে কথা হলো : যে ধর্মে এটা প্রচলন হয়েছে, যে জাতি এটা প্রচলন করেছে, তারা এটা পালন করলে ইসলামের বলার কি আছে? ইসলাম তো তাদের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো যদি এটা অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় কিংবা ইসলামের স্কুলে নাম লিখিয়ে আবার যদি অন্য স্কুলে ক্লাস করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটা সমস্যা সৃষ্টি করারই কথা।

এটা যদি মুসলমানগণ পুণ্য কাজ বলে উদযাপন করে, তাহলে দুটো অন্যায় করা হল।

প্রথমত: বিদআত আমল

দ্বিতীয়ত: কাফেরদের অনুস্বরণ

আর যদি পুণ্য মনে না করে এমনিতেই কওে, বা সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতিরে করে তাহলে কাফেরদের আনুগত্য করার ও তাদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বনের অপরাধে অপরাধী হবে।

থেকে গেল তৃতীয় প্রকারের কথা। ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক কোন ঘটনার স্মরণে কোন দিবস পালন করা একটি অনর্থক কাজ। এতে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, অর্থের অপচয় হয়, অন্য জাতি, ধর্ম বা সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণার চর্চা করা হয়। নিজেদের অহংকার করতে শেখায়। তাই এ সকল কারণে ইসলাম এটাকে অনুমোদন করতে পারে না। ইসলামী সংস্কৃতিতে দিবস পালনের কোন অনুমোদন নেই।

বাবা দিবসের সূচনা যেভাবে:
আমেরিকার ওয়াশিংটনের স্পোকান শহরে সোনোরা লুইস ডডের মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়। তখন ডডের বয়স ছিল ষোল বছর। আর ডডের বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন সবেমাত্র যুদ্ধ থেকে ফিরেছে। তারপর থেকে ডড দেখেছে তার বাবা ছয় ভাই-বোনকে মানুষ করার জন্য রাত দিন কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাদের স্বার্থে সে আর বিবাহ করেনি। বাবা তাদেরকে মায়েব অভাব বুঝতে দেয়নি। যেন বাবাই তাদের মা। বাবাই ছিল তাদের সবকিছু।

১৯০৯ সালে ডডের বয়স যখন সাতাশ বছর তখন সে দেখল মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি দিন আছে অথচ বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের কোন দিন নেই। ডড ভাবলো, মা দিবসের মত বাবা দিবসও থাকা উচিত। তাই সে বাবা দিবস পালনের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে লাগল। তার প্রচেষ্টায় এর পরের বছর ১৯১০ সালে ওয়াশিংটনের স্পোকান শহরে কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হল বাবা দিবস। এরপর ১৯১৬ সালে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিবসকে সমর্থন করেন। এক সময় এটা তাদের জাতীয় আইন সভাতেও স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশে।

বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস:
আমেরিকায় বাবা দিবস পালিত হয় জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। তাদের সাথে এ তারিখে বাবা দিবস পালন করে কানাডা, বাহামা, বুলগেরিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, কোষ্টারিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রীস, গায়ানা, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মাল্টা, মরিসাস, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর শ্লোভাকিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, ত্রিনিদাদ, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, ভেনিজুয়েলা, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের আমেরিকান ভক্ত কিছু মানুষ।

কিন্তু অন্যান্য দেশে এ দিবস পালনে কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়।

যেমন মার্চ মাসের ১৯ তারিখে বাবা দিবস পালন করে বলিভিয়া, ইটালী, হন্ডুরাস, পর্তুগাল ও স্পেন।

মে মাসের ৮ তারিখে বাবা দিবস পালন করে দক্ষিণ কোরিয়া।

অন্যদিকে জুন মাসের প্রথম রবিবার বাবা দিবস পালন করে লিথুয়ানিয়া। ডেনমার্কে বাবা দিবস পালন করা হয় ৫ই জুনে। আর জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করে অষ্ট্রিয়া, ইকুয়েডর ও বেলজিয়াম। ১৭ই জুন বাবা দিবস পালন করা হয় এলসালভেদর ও গুয়েতেমালায়। আর নিকারাগুয়া, পোল্যান্ড ও উগান্ডা ২৩ শে জুন বাবা দিবস পালন করে। দক্ষিণ আমেরিকার উরুগুয়ে জুলাই মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালন করে বাবা দিবস। ডোমিনিক রিপাবলিক জুলাই মাসের শেষ রবিবার পালন করে বাবা দিবস। ব্রাজিল বাবা দিবস পালন করে আগষ্ট মাসের দ্বিতীয় রবিবার। আগষ্টের ৮ তারিখ বাবা দিবস পালন করে তাইওয়ান ও চীন। আর্জেন্টিনা বাবা দিবস পালন করে ২৪ আগষ্ট। অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড বাবা দিবস পালন করে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রবিবার। এই মাসের পূর্ণিমায় বাবা দিবস পালন করে নেপাল। পশ্চিম ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ বাবা দিবস পালন করে ৫ অক্টোবর। আর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করে এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেন। এশিয়ার আরেকটি দেশ থাইল্যান্ড বাবা দিবস পালন করে ৫ ডিসেম্বর।

বাবা দিবস খৃষ্টানদের ধর্মীয় আচার:
বাবা দিবস হলো খৃষ্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এটা কোন মুসলিম পালন করতে পারে না।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম এটার উৎপত্তি হয়েছে আমেরিকায়। প্রায় সকল দেশেই তা পালন করা হয় রবিবারে। তারিখ ভিন্ন ভিন্ন হলেও। যে দিনটি হল খৃষ্টানদের সাপ্তাহিক উৎসবের দিন। আমি যতদূর খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছি এ বছর ১৫ জুন রবিবার বাংলাদেশের সকল গির্জায় বাবা দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়েছে। এমনকি এ দিন সকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাইবেল পাঠ অনুষ্ঠানের পুরোটাই ছিল বাবা দিবসের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা। যীশু বা বাইবেলে বাবা দিবস সম্পর্কে কোন কথা না থাকলেও খৃষ্টানরা এটা তাদের ধর্মীয় আচার বলে গ্রহণ করে নিয়েছে। আর খৃষ্টানদের ধর্মটা এরকমই। প্রায় একশ ভাগই ভেজাল। তাদের নবী বলেছে কি-না বা তাদের ধর্মগ্রন্থে আছে কি-না সেটা তাদের কাছে কোন বিষয় নয়। পাদ্রীদের পছন্দ হয়েছে তো তা ধর্মের অংশ হয়ে গেছে। তাই মা দিবস, বাবা দিবস তাদেরই প্রচলিত তাদের ধর্মীয় দিবস। কোন মুসলিম, যে ইসলাম পছন্দ করে সে কখনো এ সকল দিবস পালন করতে পারে না। আর যে ইসলাম পছন্দ করে না, আমেরিকার দাসত্বে বিশ্বাসী, তাদের কৃষ্টি-কালচার খুব পছন্দ হয়, পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ করে, তাদের সম্পর্কে আমাদের এখানে কিছু বলার নেই। এ প্রবন্ধ তাদের জন্য নয়। ইসলামপ্রিয় মুসলমানদের সতর্ক করা আমাদের মিশন। তাদের ইসলামকে নির্ভেজাল ও অবিকৃত রাখা আমাদের কর্তব্যের অংশ। উপরের আলোচনায় আমরা আরো দেখেছি যেসব দেশে বাবা দিবস পালিত হয়, তার প্রায় সবগুলোই খৃষ্টান অধ্যুসিত দেশ।

আরো মজার ব্যাপার হলো বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন তারিখে বাবা দিবস পালন করা হয়। কিন্তু যে দিন আমেরিকাতে বাবা দিবস পালন করা হয় সে দিনটাকে কেন ‘বিশ্ব’ বাবা দিবস বলা হবে? আমেরিকার নাম কি বিশ্ব? না কি এটা সাড়া বিশ্বকে মার্কিনিকরণ কর্মসূচীর অংশ? আমাদের দেশের সরকারী বেসরকারী মিডিয়াগুলো কেন এ দিনটাকে ‘বিশ্ব’ বাবা দিবস বলে প্রচার করে থাকে? তারা কি মার্কিন আধিপত্যবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের কন্ট্র্যাক্ট পেয়ে গেছেন? এ প্রশ্নগুলো তাদের কাছেই থাকলো।

মুসলিমরা কেন বাবা দিবস বর্জন করবে?
প্রথমত: বাবাকে সম্মান করা, তাকে ভালোবাসা, তার সাথে সদাচরণ করা, তার সেবা করা ইসলামে একটি ইবাদত। এ ইবাদেতর পন্থা-পদ্ধতি ইসলামে নির্ধারিত। এ ক্ষেত্রে নতুন কোন বিষয় বা পদ্ধতি পালন বেদআত বলে গণ্য হবে। ইসলাম পিতা-মাতাকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছে অন্য কোন ধর্ম বা সমাজ ততটা দেয়নি। বাবা মায়ের জন্য একটি দিবস পালন করে দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে বলে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করার মানে হল; তাদেরকে সর্বদা গুরুত্ব দেয়ার সময় আমার নেই। অথচ ইসলাম বলে তাদেরকে সর্বদাই গুরুত্ব দিতে হবে। এমনকি নিজের স্ত্রী, সন্তানদের চেয়েও। মুসলমানের প্রতিটি দিবস হবে মা দিবস, প্রতিটি দিবসই হবে বাবা দিবস। আল-কুরআন মাতা-পিতাকে যে গুরুত্ব দিতে বলেছে তা প্রতিটি মুহুর্তের জন্যই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামঘোষণা করেছেন

من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد . ( مسلم ১২/১৬)

‘‘যে কেউ এমন আমল করবে যা করতে আমরা (ধর্মীয়ভাবে) নির্দেশ দেইনি তা প্রত্যাখ্যাত।’’ [সহীহ মুসলিম ১৬/১২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :

من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد . ( رواه البخاري ২৬৯৭ ومسلم )

‘‘যে আমাদের এ ধর্মে এমন কিছুর প্রচলন করবে যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’’ [সহীহ আল-বুখারী ২৬৯৮, সহীহ মুসলিম]

দ্বিতীয়ত : খৃষ্টানদের অনুকরণে বাবা দিবস পালন করার অর্থ হল তাদের ধর্মীয় বিষয়কে সানন্দে গ্রহণ করা। ধর্মীয় বিষয়ে তাদের আনুগত্য করা, তাদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করা। এটা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من تشبه بقوم فهو منهم . رواه أبو داود وصححه الألباني

সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’’ [আবু দাউদ]

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন এ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ হল, যে অমুসলিম বা কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে কাফের হয়ে যাবে। যদি এ বাহ্যিক অর্থ (কাফের হওয়ার হুকুম) আমরা না ও ধরি তবুও কমপক্ষে এ কাজটি যে হারাম তাতে সন্দেহ নেই।

মা দিবস পালন, বাবা দিবস পালন যে খৃষ্টানদের আবিস্কার এটা উপরের আলোচনায় পরিস্কার হয়ে গেছে।

মুসলিম হয়েও যারা ইসলাম পছন্দ করেন না তাদের জন্য আমাদের কোন বক্তব্য নেই। আমাদের এ বক্তব্য তাদের জন্য যারা ইসলামকে পছন্দ করেন ও সামর্থানুযায়ী সে অনুসারে নিজ জীবন পরিচালনার চেতনা লালন করেন।

কোন অমুসলিম হোক সে ইহুদী, খৃষ্টান বা হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ, তাদের কোন ধর্মীয় আচার বা কৃষ্টি-কালচার মুসলমানদের জন্য অনুসরণ বৈধ নয়। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআন ও হাদীসে যথেষ্ট বানী, আদেশ-নিষেধ রয়েছে। আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছেন যারা জীবনের সকল কিছুকে পাশ্চাত্য করণ করতে আগ্রহী। এমনকি আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকেও। ইসলামের প্রশ্নে তারা হীনমন্যতায় ভুগেন। তাদের জন্য আমাদের কোন উপদেশ উপকারে আসবে বলে আমরা মনে করি না। তাদের সম্পর্কে আল-কুরআনে যা বলা হয়েছে তাই খাটে :

وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ذَلِكَ ﴿146﴾

‘‘তারা সঠিক পথ দেখলেও তাকে পথ হিসাবে গ্রহণ করবে না। কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তা পথ হিসাবে গ্রহণ করবে।’’ [সূরা আল-আরাফ, আয়াত ১৪৬]

বাবা দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা কী?
পাশ্চাত্যের দেশসমূহে নীতি-নৈতিকতার অধঃপতন ও ভোগবাদী চিন্তা-ভাবনা এত প্রবল যে সেখানে মাতা-পিতার খেদমত বা সেবার কথা কল্পনা করা যায় না। সে সকল দেশে অগণিত প্রবীণ আশ্রম রয়েছে। বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে তারা এ সকল আশ্রমে ভর্তি করিয়ে দেয়। তারা শেষ বয়সে এসে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করে। মুসলিম দেশের লোকজন যখন তাদের সম্পর্কে জানার জন্য তাদের মুখোমুখি হয়, জিজ্ঞেস করে ‘প্রবীন আশ্রমে কেমন কাটছে আপনার দিনকাল।’ তখন তারা বলে, ‘এতো এক নরক। আমরা নরকে আছি। শেষ বয়সে অনেককে মনে পড়ে কিন্তু তাদের দেখতে পাই না।’

এ সকল দেশের নৈতিকভাবে অধঃপতিত মানুষেরা যদি বছরের একটি দিন তাদের মা বাবাকে ভালোবাসা জানানোর জন্য বরাদ্দ করে তখন তাতে ক্ষতি কী?

আমরা মুসলিমরা বাবা দিবস পালন করবো কোন দুঃখে? আমরাতো আল্লাহর রহমত ও তাঁর করুণায় প্রতিদিন বাবাকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, খেদমত করি, খোজ-খবর নেই। তাকে কোথাও নির্বাসনে পাঠাই না।

আমাদের দেশ ও সমাজে এ দিবসের আমদানী করে কি এ মেসেজ দেয়া হচ্ছে যে, বাবা মায়ের জন্য এত কিছু করার প্রয়োজন কি? এত সময়ই বা কোথায়? বছরে একটি দিন তাদের জন্য বরাদ্দ করে দাও! ব্যস তাদের হক আদায় হয়ে যাবে!

আল্লাহ আমাদের মুসলমানদের এ ধরণের অনৈতিক আচরণ ও চিন্তা-ভাবনা থেকে থেকে রক্ষা করুন!

আল্লাহ রাববুল আলামীন ও তাঁর রাসূল বাবা মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ও যত্ন নিতে যা বলেছেন, যেভাবে বলেছেন, এমন কেহ বলেনি, বলতে পারেনি।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

‘‘আমি মানুষকে মাতা-পিতার সাথে সুন্দর আচরণের তাগিদ দিয়েছি।

তার মা অনেক কষ্টে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং বহু কষ্ট করে ভূমিষ্ট করেছে। গর্ভে ধারণ করা ও দুধ পান করানোর (কঠিন কাজের) সময়কাল হলো আড়াই বছর।’’ [সূরা আল-আহকাফ]

তিনি আরো বলেন:

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

‘‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, আর তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মাতা-পিতার সাথে সদাচরণ-সুন্দর ব্যবহার করবে।’’ [সূরা আন-নিসা আয়াত ৩৬]

ইসলামী দৃষ্টি ভংগিতে শুধু মাতা-পিতা জীবিত থাকাকালে তাদের সাথে সদাচরণ যথেষ্ঠ নয়। তাদের মৃত্যুর পর সন্তানের উপর দায়িত্ব থেকে যায় তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ﴿23﴾ وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا ﴿24﴾

‘‘তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না ও পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপণীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলোনা এবং তাদের ধমক দিও না। এবং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। তাদের উভয়ের জন্য দয়ার সাথে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে আমাকে তারা লালন-পালন করেছেন।’’ [সূরা আল-ইসরা, আয়াত ২৩-২৪]

তাদের মৃত্যুর পর তাদের শান্তির জন্য দু‘আ-প্রার্থনা করা, তাদের জন্য কল্যাণ হয় এমন কাজ করে তা তাদের আত্নার জন্য উৎসর্গ করা সন্তানের দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব কোন দিবস, বছর বা মাস দিয়ে সীমিত করা হয়নি।

আবু হুরাইরা রা. বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমার সুন্দর আচরণের সবচাইতে বেশি হকদার কে? তিনি বললেন: তোমার মা। সে পূনরায় জিজ্ঞেস করলো, এরপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। সে পূনরায় জিজ্ঞেস করলো তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। সে আবারও জিজ্ঞেস করলো এরপর কে? তিনি বললেন: তোমার পিতা। [৬ সহিহ আল বুখারী, এইচ এম সাঈদ কম্পানী,আদব মঞ্জিল, করাচী, কিতাবুল আদব, ২খ, পৃ;৮৮২; সহিহ মুসলিম, প্রাগুক্ত আরো দ্রঃ ইবন মাজাহ, পৃ. ২৬০ আল মুসতাদরাক, ৪খ, পৃ. ১৫০ ফাতহুর রববানী ১৯খ , পৃ. ৩৮]

বাহ্য ইবন হাকিম তাঁর পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কার সাথে সবচেয়ে বেশী ভালো ব্যবহার করব? তিনি বললেন: ‘তোমার মায়ের সাথে।’ আমি পূনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন : ‘তোমার মায়ের সাথে।’ তিনি আবারও জিজ্ঞস করলেন: তারপর কার সাথে? এবারও তিনি বললেন: ‘তোমার মায়ের সাথে।’ আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন: ‘তোমার পিতার সাথে। অত:পর পর্যায়ক্রমে নিকটতম আত্মীয়- স্বজনের সাথে।’ [৭ আল মুস্তাদরাক, ৪খ, পৃ. ১৫০;]

মিকদাম ইবন মা’দিকারাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন। অর্থাৎ তাদের সাথে সদাচরণ করার আদেশ দিচ্ছেন। একথা তিনি তিনবার বললেন । নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের পিতাদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ পর্যায়ক্রমে নিকটবর্তীদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন। (সদাচারের) [৮ ইবনে মাজাহ; পৃ. ২৬০]

এ সামান্য কয়েকটি বানীর প্রতি লক্ষ্য করে দেখুন! এ ধরনের আরো অসংখ্য নির্দেশ রয়েছে মায়ের সাথে সুন্দর আচরণ করার জন্য।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শয়তান মানুষের ভাল কাজকে বিনষ্ট করার জন্য তার সাথে এমন কিছু মিশ্রন ঘটায়, যার কারণে তার ভাল কাজটি আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে যেয়ে আমরা যেন শয়তানের পদাংক অনুসরণে লিপ্ত না হয়ে যাই। প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিন আমরা মাকে ও বাবাকে ভালোবাসব, তাকে শ্রদ্ধা করব, তাদের সেবা করব, তাদের কথা মান্য করব, তাদের উপহার দেব, তার মনে সামান্য কষ্ট লাগে বা বিরক্ত হয় এমন কোন কথা বা কাজ আমরা সর্বদা পরিহার করব। এটা হল ইসলামের প্রভু মহান আল্লাহ ও ইসলামের নবীর নির্দেশ। কোন দিন বা সময়ের সাথে এ নির্দেশটাকে সীমাবদ্ধ করা হয়নি। যদি কেহ করতে চান সেটা হবে সীমালংঘন।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন