HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নামাযে আমরা কীভাবে দু‘আ করব

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
নামাযে আমরা

কীভাবে দু‘আ করব

সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থবহ তাসবীহ ও দু‘আ যা নবী ﷺ নামাযের শুরুতে, রুকূতে, রুকূ থেকে দাঁড়িয়ে ও সিজদায় আমল করেছেন এবং উম্মতকেও আমল করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

সম্পাদনায় :

মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল

নামাযের শুরুতে
সমাজের অধিকাংশ লোক বেনামাযী। তারা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে না। তবে যারা নামায আদায় করেন তাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছেন, যারা নামাযে পড়ার মতো বিভিন্ন দু‘আ সম্পর্কে তেমন জানেন না। অথচ এসব দু‘আর মধ্যে বান্দার দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নিহিত।

অধিকাংশ মুসল্লী নামাযে দাঁড়িয়ে সানা হিসেবে কেবল ‘‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ...’’

এ দু‘আ পাঠ করে থাকেন। এর স্থলে অন্য কোন সহীহ দু‘আ আছে- এটা অনেকেরই জানা নেই। অথচ নবী ﷺ নামাযের শুরুতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহ দু‘আ পাঠ করতেন। যার উপর আমল করা আমাদের সকলের কর্তব্য। নিচে এ সংক্রামত্ম দু‘আগুলো উল্লেখ করা হলো :

১. নামাযের শুরুতে নবী ﷺ পাপ থেকে ক্ষমা চাইতেন :

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি তাকবীর বলার পর কিরাআত আরম্ভ করার আগে কিছু সময় চুপ থাকেন, এ সময় আপনি কী পড়েন? তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এ দু‘আ পড়ি :

اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-’ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইয়ুনাক্বক্বাস সাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াস্সালজি ওয়াল বারাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার গোনাহগুলোর মধ্যে এমন ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেরূপ ব্যবধান সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করে দাও যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৪, সহীহ মুসলিম, হা/ ১৩৮২।]

২. নামাযের শুরুতে নবী ﷺ অনেক বিষয়ে দু‘আ করতেন :

আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন।

وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ - قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، - لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ، وَاهْدِنِىْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لِاَحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ، اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ

উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন। লা-শারীকালাহু ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আনতাল মা-লিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযানবী। ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ। ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক। লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সায়্যিআহা লা-ইয়াসরিফু আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফী ইয়াদাইক। ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইক, আনা-বিকা ওয়া ইলাইক, তাবারাকতা ওয়া তা‘আলাইত। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।

অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আর তুমি আমাকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দান করো। কেননা উত্তম চরিত্র তুমি ছাড়া আর কেউ দান করতে পারে না। আর তুমি আমাকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখো। কেননা তুমি ছাড়া কেউ মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাযির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। অমঙ্গল তোমার দিক থেকে নয়। আমি তোমার সাহায্যে এবং তোমার দিকেই মনোনিবেশ করি। হে আল্লাহ! তুমি বরকতময় এবং মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; নাসাঈ, হা/৮৯৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৬২; হা/১৭৭১; মিশকাত, হা/৮১৩।]

রুকূতে
অধিকাংশ মুসল্লী রুকূতে গিয়ে কেবল ‘‘সুব্হা-না রাবিবয়াল আযীম’’- এ তাসবীহটি পাঠ করে থাকেন। অথচ রুকূতে গিয়ে আল্লাহর নবী ﷺ অনেক সুন্দর বাক্য দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করতেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। যা বিভিন্ন হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো :

১. রুকূতে নবী ﷺ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন :

আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ বেশি করে রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]

২. রুকূতে নবী ﷺ আল্লাহর গুণগান করতেন :

আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে পড়তেন-

سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ

উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ।

অর্থ : আল্লাহ পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত; তিনি জিবরাঈল (আঃ) সহ সকল ফেরেশতার রব। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]

৩. রুকূতে নবী ﷺ আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব বর্ণনা করতেন :

আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর সাথে নামাযে দাঁড়ালাম। সে নামাযে তিনি সূরা বাকারা পড়ার পরিমাণ সময় রুকূর মধ্যে ছিলেন। এ সময় তিনি এ তাসবীহ পাঠ করেন-

سُبْحَانَ ذِى الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ

উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি।

অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার যিনি প্রতাপশালী, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের মালিক। [আবূ দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসায়ী হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]

৪. রুকূতে নবী ﷺ বিনয় প্রকাশ করতেন :

আলী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ যখন রুকূতে যেতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন-

اَللّٰهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَ لَكَ اَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِىْ وَ بَصَرِىْ وَ مُخِّىْ وَ عَظْمِىْ وَ عَصَبِىْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশা‘আ লাকা সাম্য়ী ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্খী ওয়া ‘আয্মী ওয়া ‘আসাবী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং শিরা-উপশিরা সবই আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১০৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬০; ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৭; ইবনে হিববান, হা/১৯০১; মুসনাদে বাযযার, হা/৫৩৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৭৪; দার কুতনী, হা/১২৯৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৫২; সুনানে সুগরা লি বায়হাকী, হা/২৬৭।]

রুকূ হতে দাঁড়িয়ে
অধিকাংশ নামাযী রুকূ হতে দাঁড়িয়ে কেবল ‘‘রববানা লাকাল হামদ’’ এতটুকুই বলতে পারেন। অথচ নবী ﷺ এ সময়ে আরো অনেক সুন্দর বাক্য দ্বারা হৃদয়ের আবেগ উজাড় করে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করতেন। আর এসব প্রশংসার এত সওয়াব যে, আল্লাহর কাছে তা কে আগে নিয়ে যাবে- এ নিয়ে ফেরেশতারা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যান। সুতরাং আমাদেরও এ দু‘আগুলো জেনে আমল করা কর্তব্য। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো :

রুকূ হতে দাঁড়িয়ে নবী ﷺ আল্লাহর প্রশংসা করতেন :

১. রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার নবী ﷺ এর পেছনে নামায আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকূ থেকে দাঁড়ালেন, তখন পেছন থেকে এক ব্যক্তি নিচের দু‘আটি পাঠ করল। অতঃপর নামায শেষ হলে নবী ﷺ বললেন, একটু আগে এ কথাগুলো কে বলেছে? তখন ঐ লোকটি বলল, আমি বলেছি। এবার নবী ﷺ বললেন, আমি ৩০ জনেরও অধিক ফেরেশতাকে দেখেছি তারা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছেন যে, কে কার আগে এর সওয়াব লিখবেন এবং আল্লাহর কাছে নিয়ে পৌঁছাবেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৩; সহীহ বুখারী, হা/৭৯৯; আবু দাউদ, হা/৭৭০।] দু‘আটি হলো :

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ

উচ্চারণ : রাববানা ওয়ালাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ্।

অর্থ : হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আর তা এত অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতপূর্ণ।

২. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ রুকূ হতে দাঁড়ানোর পর নিচের দু‘আ পড়ে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১০৮৬; আবু দাউদ, হা/৮৪৭; নাসাঈ, হা/১০৬৮।]

اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمٰوَاتِ وَ مِلْءَ الْاَرْضِ وَمِلْءَ مَاشِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ اَهْلَ الثَّنَاءِ وَ الْمَجْدِ اَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ وَ كُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ - اَللّٰهُمَّ لَامَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ وَ لَامُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَالْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়া-তি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা-শি’তা মিন শায়ইন বা‘দু আহলাছ ছানা-ই ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা-ক্বা-লাল ‘আবদু ওয়া কুল্লুনা লাকা ‘আবদুন। আল্লা-হুম্মা লা-মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বাইতা ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রতিপালক, আসমান এবং জমিন সবই তোমার প্রশংসায় পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। তুমিই প্রশংসা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। তোমার প্রশংসায় বান্দা যা বলবে তুমি তার চেয়ে বেশি পাওয়ার হকদার। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি কাউকে যা দান কর তা বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই। আর কাউকে যা দিতে চাও না তা দেয়ার মতো কেউ নেই। আর কোন সম্পদশালীর সম্পদ তোমার আযাব হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না।

সিজদায়
বেশিরভাগ নামাযী সিজদায় গিয়ে শুধুমাত্র ‘‘সুবহা-না রাবিবয়াল আ‘লা’’ এ তাসবীহটি পড়ে থাকেন। কিন্তু নবী ﷺ সিজদায় গিয়ে শুধুমাত্র এ তাসবীহটিই পাঠ করতেন না; বরং আরো অনেক তাসবীহ ও দু‘আ পাঠ করতেন, যা বান্দার দৈনন্দিন জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো :

১. সিজদায় নবী ﷺ ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন :

আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ বেশি করে রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন-

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯।]

২. সিজদায় নবী ﷺ বিনয় প্রকাশ করতেন :

اَللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهٗ وَشَقَّ سَمْعَهٗ وَبَصَرَهٗ تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাত্তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজ্হীয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু, তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লিকীন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার চেহারা সিজদা করছে ঐ সত্তাকে- যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। বরকতময় সেই মহান সত্তা, যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১।]

৩. সিজদায় নবী ﷺ সকল প্রকার পাপ থেকে ক্ষমা চাইতেন :

নবী ﷺ সিজদায় গিয়ে এ দু‘আ পড়তেন-

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذَنْبِىْ كُلَّهٗ دِقَّهٗ وَجِلَّهٗ وَاَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ وَعَلَانِيَّتَهٗ وَسِرَّهٗ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফির্লী যাম্বী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহু ওয়া আলা-নিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার ছোট-বড়, আগের-পরের, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার গোনাহ ক্ষমা করে দিন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১২; আবু দাউদ, হা/৮৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৭২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৩১।]

৪. সিজদায় নবী ﷺ আল্লাহর অসমত্মুষ্টি ও শাস্তি হতে আশ্রয় চাইতেন :

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একরাতে আমি রাসূল ﷺ এর কাছে আসলাম এবং মসজিদ স্পর্শ করলাম। তখন তিনি সিজদারত অবস্থায় ছিলেন এবং তাঁর দু’পা একত্রিত ছিল। আর তখন তিনি এ দু‘আ পাঠ করছিলেন।

اَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَاَعُوْذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ لَا اُحْصِىْ ثَنَاءً عَلَيْكَ اَنْتَ كَمَا اَثْنَيْتَ عَلٰى نَفْسِكَ

উচ্চারণ : আউযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা ওয়া আঊযু বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উকূবাতিকা ওয়া আঊযু বিকা মিনকা লা-উহ্সী ছানা-আন আলাইকা আনতা কামা- আছনাইতা ‘আলা নাফসিকা।

অর্থ : আমি তোমার সমত্মুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসমত্মুষ্টি হতে আশ্রয় চাই। আমি তোমার ক্ষমার মাধ্যমে তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, তোমার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারব না। তুমি যেভাবে তোমার নিজের প্রশংসা করেছ তেমনি আছ। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৮; আবু দাউদ, হা/৮৭৯; তিরমিযী, হা/৩৪৯৩।]

দু’সিজদার মধ্যখানে
দু’সিজদার মধ্যখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ রয়েছে। অনেক মুসল্লী একটি সিজদা দিয়ে বসার সাথে সাথেই দ্বিতীয় সিজদায় চলে যান। অথচ নবী ﷺ যতক্ষণ সিজদায় থাকতেন, ততক্ষণ দু’সিজদার মাঝখানে বসতেন এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ পাঠ করতেন। আমাদেরও এগুলো আমল করা উচিত।

১. দু’সিজদার মধ্যখানে নবী ﷺ অতি জরুরি পাঁচটি জিনিসের দু‘আ করতেন :

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া‘আ-ফিনী ওয়ার যুক্বনী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। [আবু দাউদ, হা/৮৫০; তিরমিযী, হা/২৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮৯৭; বায়হাকী, হা/২৫৮৪; মিশকাত, হা/৯০০।]

২. দু’সিজদার মধ্যখানে কোন কোন সময় নবী ﷺ বার বার ক্ষমা চাইতেন :

رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ : রবিবগ ফিরলী, রবিবগ ফিরলী ।

অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; নাসাঈ, হা/১০৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪২৩; মিশকাত, হা/১২০০।]

এবার দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর- এভাবেই আল্লাহর ধ্যান ও খেয়ালে বাকী রাক‘আতগুলোও পড়তে হবে।

শেষ বৈঠকে
বেশিরভাগ মুসল্লীকেই দেখা যায় যে, শেষ বৈঠকে বসে তারা কেবল ‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরা......’’- এ দু‘আটি পড়ে থাকেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাযের শেষ বৈঠকে যা ইচ্ছা দু‘আ করার জন্য এখতিয়ার দিয়েছেন। বান্দা তার দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য এ সময় যেকোন দু‘আ করতে পারে। স্বয়ং নবী ﷺ এ সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ পাঠ করেছেন। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো :

১. শেষ বৈঠকে নবী ﷺ ৬ টি বিষয় হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতেন :

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (তাশাহ্হুদের পর) এ দু‘আ পাঠ করতেন।

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বব্র, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়ালমামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল মা’ছামি ওয়াল মাগরাম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণ হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাউদ, হা/৮৮০; নাসাঈ, হা/১৩০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬২২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৫২; বায়হাকী, হা/২৭০১; মিশকাত, হা/৯৩৯।]

২. শেষ বৈঠকে ক্ষমা চাওয়ার আরো একটি দু‘আ :

আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাশাহ্হুদ ও সালাম ফিরানোর মাঝখানে এ দু‘আ পাঠ করতেন।

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ وَمَا اَسْرَفْتُ وَمَا اَنْتَ اَعْلَمُ بِهٖ مِنِّىْ اَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা-ক্বাদ্দামতু ওয়ামা-আখ্খারতু ওয়ামা-আস্সরারতু ওয়ামা-আ‘লানতু ওয়ামা- আস্রাফতু ওয়ামা-আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী আন্তাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখ্খিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের, গোপন এবং প্রকাশ্য সব গোনাহ ক্ষমা করে দাও। আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি তাও ক্ষমা করে দাও। আমার কৃত যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে বেশি জান তাও ক্ষমা করে দাও। তুমিই প্রথম এবং তুমিই শেষ, তুমি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/১৫১১; তিরমিযী, হা/৩৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯।]

৩. শেষ বৈঠকে জান্নাত কামনা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার দু‘আ :

اَللّٰهُمَّ اِنِّى اَسْاَلُكَ الْجَنَّةَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আঊযুবিকা মিনান্না-র।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাউদ, হা/৭৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৯৩৯; ইবনে খুযায়মা, হা/৭২৫।]

৪. শেষ বৈঠকে পড়ার ব্যাপক অর্থবোধক দু‘আ :

আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রাঃ) নামাযে এ দু‘আ পাঠ করেন, যা তিনি নবী ﷺ হতে শুনেছেন।

اَللّٰهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ ، وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ ، اَحْيِنِيْ مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِّيْ ، وَتَوَفَّنِيْ اِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِّيْ ، اَللّٰهُمَّ وَاَسْاَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ، وَاَسْاَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ فِي الرِّضَا وَالْغَضَبِ ، وَاَسْاَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنٰى ، وَاَسْاَلُكَ نَعِيْمًا لَّا يَنْفَدُ ، وَاَسْاَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ لَّا تَنْقَطِعُ ، وَاَسْاَلُكَ الرِّضَاءَ بَعْدَ الْقَضَاءِ ، وَاَسْاَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ ، وَاَسْاَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ اِلٰى وَجْهِكَ ، وَالشَّوْقَ اِلٰى لِقَائِكَ فِيْ غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ ، وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ ، اَللّٰهُمَّ زَيِّنَّا بِزِيْنَةِ الْاِيْمَانِ ، وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُّهْتَدِيْنَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বি‘ইলমিকাল গাইব, ওয়া কুদরাতিকা ‘আলাল খাল্ক, আহইনী মা-‘আলিমতাল হায়াতা খাইরাল্লী, ওয়াতাওয়াফফানী ইযা ‘আলিমতাল ওয়াফা-তা খাইরাল্লী। আল্লা-হুম্মা ওয়া আসআলুকা খাশইয়াতাকা ফীল গাইবি ওয়াশ শাহা-দাহ, ওয়া আসআলুকা কালিমাতাল হাক্কি ফীর রিযা ওয়াল গাযাব, ওয়া আসআলুকাল ক্বাসদা ফীল ফাক্বরি ওয়াল গিনা, ওয়া আসআলুকা না‘ইমাল লা-ইয়ানফাদ, ওয়া আসআলুকা কুররাতা ‘আইনিল লা- তানক্বাত্বিউ, ওয়া আসআলুকার রিযা-আ বা‘দাল ক্বাযা-আ, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশী বা‘আদাল মাওত, ওয়া আসআলুকা লাযযাতান নাযারি ইলা-ওয়াজহিকা ওয়াশ শাওক্বা ইলা লিক্বাইকা ফী গাইরি যাররা-আ মুযিররাতিন ওয়ালা- ফিতনাতিন মুযিল্লাহ। আল্লা-হুম্মা যাইয়িন্না- বিযীনাতিল ঈমা-নি ওয়াজ‘আলনা হুদাতাম মুহতাদীন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার অদৃশ্য জ্ঞানের মাধ্যমে এবং সৃষ্টির উপর তোমার ক্ষমতার মাধ্যমে প্রার্থনা করছি যে, তুমি আমাকে ততক্ষণ জীবিত রাখো, যতক্ষণ আমার জীবিত থাকাকে তুমি কল্যাণকর মনে কর। আর আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার মৃত্যুকে তুমি কল্যাণকর মনে কর। হে আল্লাহ! আমি প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তোমাকে ভয় করার প্রার্থনা করছি এবং আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি উভয় অবস্থায় সঠিক কথা বলতে। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে। আর আমি তোমার কাছে এমন নিয়ামত প্রার্থনা করছি, যা কখনো শেষ হবে না। আমি তোমার কাছে চোখের এমন শীতলতা প্রার্থনা করছি, যা কখনো ফুরাবে না। আমি তোমার কাছে তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকার প্রার্থনা করছি। মৃত্যুর পর শান্তিময় জীবন প্রার্থনা করছি। পরকালে তোমার সাক্ষাতের স্বাদ লাভ করার প্রার্থনা করছি এবং তোমার সাক্ষাৎ কামনা করছি। আমি প্রার্থনা করছি, যাতে আমার দ্বারা কারো ক্ষতি না হয় এবং আমি এমন ফিতনায় না পড়ি, যা আমাকে পথভ্রষ্ট করে দেয়। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ঈমান দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত করো এবং হোদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো। [নাসাঈ, হা/১৩০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৫১; মিশকাত, হা/২৪৯৭।]

৫. নামাযে যে দু‘আ পড়লে সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় :

মিহজান (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি নামায শেষ করছিল এবং তাশাহ্হুদ পাঠ করা অবস্থায় সে এ দু‘আ পাঠ করছিল। এটা দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এটা তিনি তিনবার বললেন।

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْاَلُكَ يَا اَللهُ بِاَنَّكَ الْوَاحِدُ الْاَحَدُ الصَّمَدُ ، اَ لَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ، اَنْ تَغْفِرَ لِيْ ذُنُوبِيْ ، اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইয়া আল্লা-হু বিআন্নাকাল ওয়া-হিদুল আহাদুস সামাদু। আল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইঊলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। আন তাগফিরালী যুনূবী, ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি এক ও অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই। তুমি আমার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি অতি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু। [নাসাঈ, হা/১৩০১; আবু দাউদ, হা/৯৮৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭২৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৮৫।]

৬. নামাযে ইসমে আ‘জম পড়ে দু‘আ করলে দু‘আ কবুল হয় :

আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন দেখলেন যে এক লোক নামায পড়ছে এবং এভাবে দু‘আ করছে- এ দু‘আ শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহর কসম! সে ইসমে আ‘জম নিয়ে দু‘আ করছে- যার মাধ্যমে চাইলে দান করা হয় এবং দু‘আ করলে কবুল করা হয়।

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْاَلُكَ بِاَنِّيْ اُشْهِدُكَ اَنَّكَ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ الْاَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্নী উশহিদুকা আন্নাকা লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহূ কুফুওয়ান আহাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্মলাভ করেননি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। [আবু দাঊদ, হা/১৪৯৫; তিরমিযী, হা/৩৪৭৫; মিশকাত, হা/২২৮৩।]

নামাযের মধ্যে মাতৃভাষায় দু‘আ করা যাবে কি না
নামাযের শেষ বৈঠকের মাসনূন দু‘আগুলোর ভাষা হচ্ছে আরবি। তাই এগুলো আররি ভাষায় পড়া উচিত। আর ফরয নামাযে আরবি ভাষায়ই দু‘আ করবে, তবে নফল নামাযের মধ্যে কেউ যদি নিজের ভাষায় দু‘আ করতে চায় তবে তা জায়েয আছে বলে অনেক আলেম অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন