মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“কোনো লোক এবং শির্ক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত পরিত্যাগ করা।” ইমাম মুসলিম রহ. হাদীসটি কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে জাবির ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: সালাত পরিত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দের প্রয়োগ ( باب بَيَانِ إِطْلاَقِ اسْمِ الْكُفْرِ عَلَى مَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ ), হাদীস নং ২৫৬।]
২. বুরাইদা ইবন হোসাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر» .
“আমাদের ও তাদের মাঝে অঙ্গীকার বা চুক্তি হলো সালাতের সুতরাং যে ব্যক্তি তা বর্জন করল সে কুফুরী করল।” [আহমদ: ৫/৩৪৬; তিরমিযী, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: সালাত বর্জন প্রসঙ্গে যেসব হাদীস এসেছে ( باب ما جاء في ترك الصلاة ), হাদীস নং ২৬২১ এবং তিনি বলেছেন: হাদীসটি হাসান, সহীহ ও গরীব; নাসাঈ, অধ্যায়: সালাত ( كتاب الصلاة ), পরিচ্ছেদ: সালাত বর্জনকারীর বিধান প্রসঙ্গে ( باب الحكم في تارك الصلاة ), হাদীস নং ৪৬৩; ইবন মাজাহ, অধ্যায়: সালাত কায়েম করা ( كتاب إقامة الصلاة ), পরিচ্ছেদ: সালাত বর্জনকারী ব্যক্তি প্রসঙ্গে যেসব হাদীস এসেছে ( باب ما جاء فيمن ترك الصلاة ), হাদীস নং ১০৭৯।]
আর এখানে কুফর ( الكفر ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন কুফুরী যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত (সম্প্রদায়) থেকে বের করে দেয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন ও কাফিরদের মাঝে সালাতকে পৃথককারী সূচক বানিয়ে দিয়েছেন আর এটা সকলের নিকট সুবিদিত যে কাফির মিল্লাত এবং মুসলিম মিল্লাত একে অপরের বিপরীত। ফলে যে ব্যক্তি এই (সালাতের) অঙ্গীকার পূরণ করবে না সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
৩. আর সহীহ মুসলিমের মধ্যে উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“অচিরেই এমন কতক আমীরের (নেতার) উদ্ভব ঘটবে তোমরা তাদের কিছু কর্মকাণ্ডের ভালো-মন্দ চিনতে পারবে আর কিছু কর্মকাণ্ড অপছন্দ করবে; সুতরাং যে ব্যক্তিস্বরূপ চিনে নিল (কোনোরূপ সন্দেহে পতিত না হয়ে তা থেকে বাঁচার জন্য কোনো উপায় বেছে নিল) সে মুক্তি পেল; আর যে ব্যক্তি তাদেরকে অপছন্দ করল সে (গুনাহ থেকে) নিরাপদ হলো; কিন্তু যে ব্যক্তি তাদের পছন্দ করল এবং অনুসরণ করল (সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো)। সাহাবীগণ জানতে চাইলেন: আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলরেন: না যতক্ষণ তারা সালাত আদায় করবে।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: নেতৃত্ব বা প্রশাসন ( كتاب الإمارة ), পরিচ্ছেদ: শরী‘য়ত গর্হিত কাজে আমীরের আনুগত্য বর্জন করা ওয়াজিব, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সালাত আদায় করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে না ( باب وُجُوبِ الإِنْكَارِ عَلَى الأُمَرَاءِ فِيمَا يُخَالِفُ الشَّرْعَ وَتَرْكِ قِتَالِهِمْ مَا صَلَّوْا وَنَحْوِ ذَلِكَ ), হাদীস নং ৪৯০৬।]
৪. আর সহীহ মুসলিমের মধ্যে ‘আউফ ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“তোমাদের সর্বোত্তম নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে, আর তারা তোমাদের জন্য দো‘আ করে এবং তোমরাও তাদের জন্য দো‘আ কর। পক্ষান্তরে তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ঘৃণা করা এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে, আর তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও আর তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। বলা হলো হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদেরকে তরবারী দ্বারা প্রতিহত করব না? তখন তিনি বললেন: না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: নেতৃত্ব বা প্রশাসন ( كتاب الإمارة ), পরিচ্ছেদ: উত্তম শাসক ও অধম শাসক ( باب خِيَارِ الأَئِمَّةِ وَشِرَارِهِمْ ), হাদীস নং ৪৯১০।]
সুতরাং এই শেষ দু‘টি হাদীসের মধ্যে একথা প্রমাণিত হয় যে নেতাগণ যখন সালাত কায়েম করবে না তখন তাদেরকে তরবারি দ্বারা প্রতিহত করা আবশ্যক হবে, আর ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বা যুদ্ধ করা বৈধ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা প্রকাশ্য কুফুরীতে লিপ্ত হবে। এ ব্যাপারে আমাদের নিকট আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। কেননা ওবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন তারপর আমরা তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করলাম, তিনি তখন আমাদেরকে যে শপথ গ্রহণ করান তার মধ্যে ছিল: আমরা আমাদের সুখে ও দুঃখে বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের ওপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণঙ্গরূপে শোনা ও মানার ওপর বায়‘আত করলাম। আরো (বায়‘আত করলাম) আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হব না। তিনি বলেন: তবে যদি তোমরা এমন সুস্পষ্ট কুফুরী দেখ যে বিষয়ে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান তাহলে ভিন্ন কথা।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ফিতনা ( كتاب الفتن ), পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: আমার পরে তোমার এমন কিছু দেখতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না ( باب قول النبي صلى الله عليه و سلم ( سترون بعدي أمورا تنكرونها ), হাদীস নং ৬৬৪৭; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: নেতৃত্ব বা প্রশাসন ( كتاب الإمارة ), পরিচ্ছেদ: পাপের কাজ ছাড়া অন্য সব ব্যাপারে শাসকের আনুগত্য করা জরুরি, আর পাপ কাজের ব্যাপারে তা করা হারাম ( باب وُجُوبِ طَاعَةِ الأُمَرَاءِ فِى غَيْرِ مَعْصِيَةٍ وَتَحْرِيمِهَا فِى الْمَعْصِيَةِ ), হাদীস নং ৪৮৭৭।]
আর এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায়- তাদের সালাত বর্জন করা সুস্পষ্ট কুফুরী বলে বিবেচিত হবে যার সাথে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে তরবারী নিয়ে লড়াই করার বিষয়টিকে শর্তযুক্ত করে দিয়েছেন যে ব্যাপারে আল্লাহর নিকট থেকে আমাদের জন্য জ্বলন্ত প্রমাণ রয়েছে।
আর কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে কোথাও বর্ণিত হয় নি যে, সালাত বর্জনকারী ব্যক্তি কাফির নয় অথবা সে মুমিন; বড়জোর এই ব্যাপারে (কুরআন ও সুন্নায়) এমন কতগুলো ভাষ্য এসেছে যা তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের ফযীলত এবং এর সাওয়াবের প্রমাণ বহন করে, আর সে তাওহীদ হলো: এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তবে এ ভাষ্যগুলোরও রয়েছে কয়েকটি অবস্থা:
* সে সকল ভাষ্যে রয়েছে এমন কিছু শর্ত যে শর্তের কারণেই সালাত ত্যাগ করা যায় না,
* অথবা তা এমন এক বিশেষ অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে বর্ণিত হয়েছে যাতে সালাত ত্যাগ করার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মা‘যুর বা অপারগ বলা যেতে পারে,
* অথবা ভাষ্যগুলো ব্যাপক ( عام ) যা সালাত বর্জনকারী কাফির হওয়ার দলীলসমূহের ওপর প্রযোজ্য হবে। কারণ, সালাত বর্জনকারী কাফির হওয়ার দলীলসমূহ বিশেষ ( خاص ) দলীল, আর খাস (বিশেষ দলীল) ‘আমের (ব্যাপকতাপূর্ণ দলীলের) ওপর অগ্রাধিকার পাবে।
সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি বলে: এই কথা বলা কি সঠিক হবে না যে যেসব দলীল সালাত বর্জনকারী কাফির হওয়া প্রমাণ করে সেগুলো ঐ ব্যক্তির বেলায় প্রযোজ্য হবে যে ব্যক্তি সালাতের আবশ্যকতাকে অস্বীকারকারী হিসেবে তা বর্জন করে?
জবাবে আমরা বলব: এটা সঠিক নয়। কারণ, তা দু’টি কারণে নিষিদ্ধ:
প্রথম কারণ: সেই গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে উপক্ষো করা যাকে শরী‘আত প্রবর্তক গুরুত্বারোপ করেছেন এবং তার সাথে বিধান সংশ্লিষ্ট করেছেন।
কারণ শরী‘আত প্রবর্তক সালাত ত্যাগ করাকেই কুফুরী বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যা, সালাত অস্বীকার করার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের। তাছাড়া সালাত প্রতিষ্ঠার ওপর দীনী ভ্রাতৃত্ব স্থাপিত হয়, সালাতের আবশ্যকতার স্বীকৃতির প্রদানের ওপর নয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সুতরাং তারা যদি তাওবা করে এবং সালাতের আবশ্যকতাকে স্বীকার করে..., আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও বলেন, নিঃসন্দেহে বান্দা এবং শির্ক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাতের আবশ্যকতাকে অস্বীকার করা অথবা তিনি বলেন নিঃসন্দেহে আমাদের ও তাদের মাঝে অঙ্গীকার বা চুক্তি হলো সালাতের আবশ্যকতার স্বীকৃতি প্রদান করা। সুতরাং যে ব্যক্তি তার আবশ্যকতাকে অস্বীকার করল সে কুফুরী করল [অর্থাৎ এটা বলেন নি, বরং আল্লাহ বলেছেন, মুসলিম ভ্রাতৃত্বের জন্য শর্ত হচ্ছে সালাত প্রতিষ্ঠা করা, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শির্ক ও কুফরির মাঝে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া; সুতরাং উপরোক্ত বিধান সালাতের আবশ্যকতা অস্বীকার করার উপর নয়, বরং সালাত পরিত্যাগ করাই হচ্ছে কাফের হওয়ার কারণ। [সম্পাদক]]।
আর যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্য এটা [‘সালাত কায়েম করা’ উদ্দেশ্য না হয়ে, ‘সালাতের আবশ্যকতাকে স্বীকার করা’ই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে আল্লাহ যে কুরআনুল কারীমকে সবকিছুর স্পষ্ট বর্ণনাকারী হিসেবে নাযিল করেছেন বলে জানিয়েছেন সেটার বিপরীত হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে, যা কখনো হতে পারে না। [সম্পাদক]]ই হতো তাহলে তা থেকে অন্য দিকে প্রত্যাবর্তন করাটা সেই কথার পরিপন্থি হত যে বক্তব্য আল-কুরআনুল কারীম নিয়ে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“আর আমরা তোমার প্রতি যিকির (আল-কুরআন) অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে বুঝিয়ে দিতে পার সেসব বিষয় যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল।” [সূরা আন-নাহল আয়াত: ৪৪]
দ্বিতীয় কারণ: এমন এক গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনায় রাখা যার ওপর শরী‘আত প্রবর্তক কোনো বিধানের ভিত্তি রাখেন নি।
কেননা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অপরিহার্যতাকে অস্বীকার করা কুফুরী, যদি না সে ব্যক্তির পক্ষে এ বিষয়টি না জানার কোনো গ্রহণযোগ্য ওযর না থাকে চাই সে সালাত আদায় করুক অথবা ত্যাগ করুক। অতএব, যদি কোনো ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে এবং তার নির্ধারিত শর্তাবলী আরকান (ফরয) ওয়াজিব ও মুস্তাহাবসমূহসহও যথাযথভাবে আদায় করে কিন্তু সে তার (সালাতের) ফরয হওয়ার বিষয়টিকে বিনা ওজরে অস্বীকার করে তাহলে সে সালাত বর্জন না করা সত্ত্বেও কাফির বলে বিবেচিত হবে।
সুতরাং এর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেল যে উপরে বর্ণিত (সালাত ত্যাগকারী কাফের হওয়া বিষয়ক) শরী‘য়তের ভাষ্যসমূহকে যে ব্যক্তি সালাতের অপরিহার্যতাকে অস্বীকার করে- তার জন্য নির্ধারণ করা সঠিক নয়; বরং সঠিক কথা হলো (এগুলোকে সালাত পরিত্যাগকারীর ওপর প্রয়োগ করা হবে সে হিসেবে) সালাত বর্জনকারী এমন কাফির হিসেবে গণ্য হবে যা তাকে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ করে দেয়, যেমনটি পরিষ্কারভাবে এসেছে ইবন আবি হাতিম কর্তৃক তাঁর সুনান বর্ণিত হাদীসের মধ্যে তিনি ‘উবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন:
«أوصانا رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا تشركوا بالله شيئا ولا تتركوا الصلاة عمدا فمن تركها متعمدا فقد خرج من الملة» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এই বলে উপদেশ দিয়েছেন: তোমরা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত বর্জন করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত বর্জন করবে সে ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।”
আর আমরা যদি উপরোক্ত কুরআন ও হাদীসের ভাষ্যসমূহকে (যাতে সালাত পরিত্যাগকারীকে কাফের বলা হয়েছে) সালাতের আবশ্যকতা অস্বীকারকারীর জন্য নির্ধারণ করি তাহলে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যের মধ্যে বিশেষভাবে সালাতকেই উল্লেখ করার কোন অর্থ হয় না। কারণ, এই বিধান সাধারণভাবে যাকাত সাওম ও হজকেও শামিল করে। কেননা যে ব্যক্তি এগুলোর মধ্যে কোনো একটিরও আবশ্যকতাকে অস্বীকারকারী হয়ে তা বর্জন করবে সে কাফির হয়ে যাবে যদি না সেটা না জানার ব্যাপারে তার কোনো ওযর থাকে [অর্থাৎ, ইসলামের যে কোনো প্রমাণিত বিষয়কে অস্বীকারকারীই কাফির, সেটা সালাতের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের হলেও, যা উম্মতের সর্বসম্মত মত। সুতরাং যদি উপরোক্ত কুরআন ও হাদীসের ভাষ্যসমূহকে সালাত পরিত্যাগকারীর ওপর নির্ধারণ না করে সালাত অস্বীকারকারীর জন্য নির্ধারণ করা হয়, তবে সালাতকে নির্দিষ্ট করে এ সব ভাষ্যের কোনো বিশেষত্ব প্রকাশ পায় না। কারণ, অন্যান্য বিষয় অস্বীকারকারীও যদি কাফের হয়ে যায়, তবে সালাতের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের এসব ভাষ্যের প্রয়োজন পড়ে না। তাই বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, সালাত পরিত্যাগকারীর ব্যাপারেই এসব ভাষ্য প্রযোজ্য হবে। [সম্পাদক]]।
আর যেমনিভাবে সালাত বর্জনকারীর কাফির হওয়ার বিষয়টি কুরআন ও হাদীসের দলীলসম্মত ঠিক তেমনিভাবে তা জ্ঞান ও যুক্তিসম্মতও। কারণ, এমন সালাত ত্যাগ করার পরেও কিভাবে কোনো ব্যক্তির ঈমান থাকতে পারে যে সালাত হচ্ছে দীনের খুঁটি? যার ফযীলত ও মাহাত্মের বর্ণনা এমনভাবে হয়েছে যাতে প্রত্যেক জ্ঞানী মুমিন ব্যক্তি তা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে অগ্রসর হবে, আর সেই সালাত বর্জন করার অপরাধে এমন শাস্তির হুমকি এসেছে যাতে প্রত্যেক জ্ঞানী মুমিন ব্যক্তি তা বর্জন ও বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকবে। অতএব, এই পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সালাত বর্জন করলে বর্জনকারীর ঈমান অবশিষ্ট থাকতে পারে না।
তবে কোনো প্রশ্নকর্তা যদি প্রশ্ন করে বলে: সালাত বর্জনকারীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কুফর ( الكفر ) শব্দটির অর্থ কি কুফরে মিল্লাত (দীন অস্বীকার) না হয়ে কুফরে নিয়ামত (নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা) হওয়ার সম্ভাবনা রাখে না? অথবা তার অর্থ কি বৃহত্তর কুফুরী না হয়ে ক্ষুদ্রতর কুফুরী হতে পারে না? তা কি হতে পারে না নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণীর মত যাতে তিনি বলেছেন:
“দু’টি স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে যে দু’টি কুফর বলে গণ্য: (১) বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং (২) উচ্চস্বরে বিলাপ করা।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: বংশের প্রতি কটাক্ষের এবং উচ্চস্বরে বিলাপের ওপর কুফর শব্দের প্রয়োগ ( باب إِطْلاَقِ اسْمِ الْكُفْرِ عَلَى الطَّعْنِ فِى النَّسَبِ وَالنِّيَاحَةِ عَلَى الْمَيِّتِ ), হাদীস নং ২৩৬।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«سباب المسلم فسوق وقتاله كفر»
“মুসলিমকে গালি দেওয়া পাপ কাজ এবং তার সাথে মারামারি করা কুফুরী।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: অজ্ঞাতসারে মুমিনের আমল নষ্ট হওয়ার আশংকা ( باب خوف المؤمن من أن يحبط عمله وهو لا يشعر ), হাদীস নং ৪৮; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: মুসলিমকে গালি দেওয়া গুনাহর কাজ এবং তার সাথে মারামারি করা কুফুরী ( باب بَيَانِ قَوْلِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم : « سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ » ), হাদীস নং ৬৪।] অনুরূপ আরও অন্যান্য হাদীস।
তার জবাবে আমরা বলব: সালাত ত্যাগকারীর কুফুরীর বিষয়ে এ ধরণের সম্ভাবনা ও উপমা প্রদান কয়েকটি কারণে সঠিক নয়:
প্রথমত: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতকে কুফর ও ঈমানের মাঝে এবং মুমিনগণ ও কাফিরদের মাঝে পৃথককারী সীমানা বানিয়ে দিয়েছেন। আর সীমানা তার অন্তর্ভুক্ত এলাকাকে অন্যান্য ক্ষেত্রে থেকে পৃথক করে এবং এক এলাকাকে অন্য এলাকা থেকে বের করে দেয়। কারণ, নির্ধারিত ক্ষেত্র দু’টির একটি অপরটির বিপরীত যাদের একটি অপরটির মধ্যে অনুপ্রবেশ করবে না।
দ্বিতীয়ত: সালাত হচ্ছে ইসলামের রুকনসমূহের (স্তম্ভসমূহের) একটি অন্যতম রুকন। কাজেই সালাত বর্জনকারীকে যখন কাফির বলা হয়েছে তখন পরিস্থিতির দাবি করে যে সেই কুফুরী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। কারণ, সে ব্যক্তি ইসলামের রুকনসমূহের একটি রুকনকে ধ্বংস করল; কিন্তু যে ব্যক্তি কুফুরী কর্মসমূহের কোন কাজ করে ফেলল তার ওপর কুফর শব্দের প্রয়োগ করার বিষয়টি এর (সালাতের বিধানের) চেয়ে ভিন্ন রকম।
তৃতীয়ত: এই ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে যা থেকে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে সালাত বর্জনকারী এমন কুফুরীতে আক্রান্ত যা তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। তাই কুফুরীর সেই অর্থই নেয়া আবশ্যক যা দীললসমূহ প্রমাণ করে যেন এসব দলীল একে অপরের অনুকুলে এবং সম্মিলিতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
চতুর্থত: কুফর ( الكفر ) শব্দের ব্যাখ্যা বা প্রকাশ-রীতি বিভিন্ন রকম; সুতরাং সালাত বর্জনের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“বান্দা এবং শির্ক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত পরিত্যাগ করা।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: সালাত পরিত্যাগকারীর ওপর কুফর শব্দের প্রয়োগ ( باب بَيَانِ إِطْلاَقِ اسْمِ الْكُفْرِ عَلَى مَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ ), হাদীস নং ২৫৬।] এখানে আল-কুফর ( الكفر ) শব্দটি আলিফ লাম ( ال ) যোগে ব্যবহার করা হয়েছে যা প্রমাণ করে যে কুফরের অর্থ হচ্ছে প্রকৃত কুফুরী। কিন্তু আলিফ লাম ( ال ) ছাড়া কুফর ( كفر ) শব্দটি যখন নাকেরা (অনির্দিষ্ট) হিসেবে ব্যবহৃত হয় অথবা কাফারা ( كَفَرَ ) শব্দটি ফেল (ক্রিয়া) হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন তা প্রমাণ করে যে এটা কূফরীর অন্তর্ভুক্ত অথবা সে এই কাজের ক্ষেত্রে কুফুরী করেছে; আর সেই সাধারণ কুফুরী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে খারিজ (বের) করে দেয় না।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. (আস-সুন্নাতুল মুহাম্মাদীয়া প্রকাশনা কর্তৃক মুদ্রিত) ‘ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকীম’ ( اقتضاء الصراط المستقيم ) নামক গ্রন্থের ৭০ পৃষ্ঠায় এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
«اثْنَتَانِ فِى النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ » .
“দু’টি স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে যে দু’টি তাদের মধ্যে কুফর বলে গণ্য।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: বংশের প্রতি কটাক্ষের এবং উচ্চস্বরে বিলাপের উপর কুফর শব্দের প্রয়োগ ( باب إِطْلاَقِ اسْمِ الْكُفْرِ عَلَى الطَّعْنِ فِى النَّسَبِ وَالنِّيَاحَةِ عَلَى الْمَيِّتِ ), হাদীস নং ২৩৬।]
ইবনু তাইমিয়্যা রহ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: «هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ» “তাদের মধ্যকার স্বভাব দু’টি কুফুরী” এর অর্থ হলো: মানুষের মধ্যে বিদ্যমান এই স্বভাব দু’টি কুফুরী; সুতরাং এখানে প্রকৃতপক্ষে স্বভাব দু’টি কুফুরীর অর্থ হলো কাজ দু’টি কুফুরী যা মানুষের মধ্যে বিদ্যমান; কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে যে কোন ব্যক্তির মধ্যে কুফুরীর কোনো শাখা পাওয়া যাবে সে সম্পূর্ণরূপে কাফির হয়ে যাবে যতক্ষণ না তার মধ্যে প্রকৃত কুফুরী বিদ্যমান থাকবে। যেমনিভাবে যে কোনো ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের কোনো একটি শাখা পাওয়া গেলে তাতেই সেই মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে তার মধ্যে মূল ঈমান না আসবে। আর আলিফ লাম ( ال ) দ্বারা নির্দিষ্টভাবে যে কুফর ( كفر ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্তি:
«ليس بين العبد وبين الشرك أو الكفر إلا ترك الصلاة» .
“বান্দা এবং শির্ক অথবা কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে শুধু সালাত বর্জন করা।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: সালাত পরিত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দের প্রয়োগ ( باب بَيَانِ إِطْلاَقِ اسْمِ الْكُفْرِ عَلَى مَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ ), হাদীস নং ২৫৬।] (এর মধ্যকার ال সম্বলিত ‘আল-কুফর’ শব্দ) এবং যে হাঁ সূচক বাক্যে আলিফ লাম ( ال ) ব্যতীত অনির্দিষ্টভাবে যে কুফর ( كفر ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে- এই দু’টির মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
অতঃপর যখন উপরোক্ত দলীলসমূহের দাবি অনুযায়ী একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে শরী‘আতসম্মত কোনো ওযর ব্যতীত সালাত বর্জনকারী ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ করে দেওয়ার মত কাফির হিসেবে গণ্য হবে তখন সে মতটিই সঠিক যা ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. অবলম্বন করেছেন; আর এটা ইমাম শাফেয়ী রহ. এর দু’টি মতের অন্যতম একটি মত যেমনটি ইবন কাছীর রহ. এই আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছেন যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হলো।” [সূরা মারইয়াম আয়াত: ৫৯] আর ইবনুল কাইয়্যেম রহ. ‘কিতাবুস সালাত’ ( كتاب الصلاة ) এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে এটা হচ্ছে ইমাম শাফেঈ রহ. এর দু’টি মতের অন্যতম, আর ইমাম ত্বাহাভী রহ. তা স্বয়ং ইমাম শাফেঈ থেকেই বর্ণনা করেছেন।
আর এই মতামত বা বক্তব্যের ওপরই অধিকাংশ সাহাবী একমত ছিলেন, এমনকি অনেকে এর ওপর সাহাবীদের ইজমা সংঘটিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
আবদুল্লাহ ইবন শাকীক রাহেমাহুল্লাহ বলেন:
«كان أصحاب محمد صلى الله عليه و سلم لا يرون شيئا من الأعمال تركه كفر غير الصلاة » .
“মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত অন্য কোনো আমল বর্জন করাকে কুফুরী বলে মনে করতেন না।” (ইমাম তিরমিযী ও হাকেম রহ. হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং হাকেম হাদীসটিকে বুখারী ও মুসলিমের শর্তের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন)। [তিরমিযী, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: সালাত পরিত্যাগ করার ব্যাপারে যেসব হাদীস এসেছে ( باب ما جاء في ترك الصلاة ), হাদীস নং ২৬২২; হাকেম: ১/৭।]
প্রখ্যাত ইমাম ইসহাক ইবন রাহওয়িয়াহ রহ. বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হয়েছে যে সালাত বর্জনকারী ব্যক্তি কাফির; আর অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে আমাদের এই যুগ পর্যন্ত আলিমগণের মতে বিনা ওযরে সালাত বর্জনকারী ব্যক্তি সালাতের সময় অতিক্রম করলে কাফির বলে গণ্য হবে।”
ইমাম ইবন হাযম রহ. উল্লেখ করেন যে (সালাত বর্জনকারী কাফির) একথা উমর ফারুক আবদুর রহমান ইবন আউফ মুয়ায ইবন জাবাল আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমূখ সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে; অতঃপর তিনি বলেন: “আমরা এসব সম্মানিত সাহাবীগণের মধ্যে কোন মতবিরোধ পাইনি।” তাঁর থেকে বর্ণনাটি আল্লামা মুনযেরী ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( الترغيب و الترهيب ) এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন। [‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( الترغيب و الترهيب ): ১ / ৪৪৫ - ৪৪৬] তিনি আরও কয়েকজন সাহাবীর নাম উল্লেখ করেন। যেমন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস জাবির ইবন আবদিল্লাহ এবং আবূদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম।
তারপর তিনি বলেন উপরোক্ত সাহাবীগণ ব্যতীত অন্যান্যদের মধ্যে যারা তা বলেছেন তারা হলেন: ইমাম আহম্মদ ইবন হাম্বল ইসহাক ইবন রাহওয়িয়াহ আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক নাখ‘য়ী হাকাম ইবন উতাইবা আইয়ুব সাখতাইয়ানী আবূ দাউদ আত-তায়ালসী আবূ বকর ইবন আবি শাইবা যুহাইর ইবন হারব রহ. প্রমূখ।
অতঃপর কোনো প্রশ্নকর্তা যদি প্রশ্ন করে বসে: সেসব দলীলের কী জবাব হবে যা ঐসব লোকজন পেশ করে থাকে যাদের মতে: সালাত বর্জনকারী কাফির নয়?
তার জবাবে আমরা বলব: (তারা যেসব দলীল পেশ করে থাকে) তাতে একথা নেই যে সালাত বর্জনকারী কাফির হয় না অথবা সে মুমিন থেকে যায় অথবা সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না অথবা সে জান্নাতের মধ্যে থাকবে অথবা অনুরূপ কিছু।
আর যে ব্যক্তি এসব দলীল নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করবে তাহলে সে দেখতে পাবে যে এসব দলীল পাঁচ প্রকারের বাইরে নয় যার মধ্যে একটি প্রকারও সেসব দলীল ও প্রমাণের পরিপন্থী নয় যা প্রমাণ করে যে সালাত বর্জনকারী ব্যক্তি হচ্ছে কাফির।
প্রথম প্রকার: কতিপয় দুর্বল ও অস্পষ্ট হাদীস দ্বারা তারা নিজ মতকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তা কোনো ফলদায়ক নয়।
দ্বিতীয় প্রকার: এমন দলীল যার সঙ্গে প্রকৃত মাসআলার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন, কেউ কেউ আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর মাধ্যমে দলীল পেশ করেছেন:
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এর ছেয়ে নিম্ন পর্যায়ের অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে তিনি ক্ষমা করেন।” [সূরা আন-নিসা আয়াত: ৪৮] কেননা আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীতে উল্লিখিত ﴿مَا دُونَ ذَٰلِكَ﴾ এর অর্থ হলো: শির্ক থেকে ছোট গুনাহ; তার অর্থ এই নয় যে ‘শির্ক ব্যতীত অন্য সকল গুনাহ’। এই অর্থের স্বপক্ষে দলীল হলো: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সংবাদ দিয়েছেন তা মিথ্যা মনে করবে সে ব্যক্তি কাফির এবং সে এমনই কুফুরী করল যে যার কোনো ক্ষমা নেই, অথচ তার এই গুনাহটি শির্কের অন্তর্ভুক্ত নয়।
আর আমরা যদি মেনেও নেই যে ﴿مَا دُونَ ذَٰلِكَ﴾ এর অর্থ হলো: ‘শির্ক ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ’ তাহলে এটা হবে ব্যাপক অর্থপূর্ণ বাণী যাকে সেসব দলীল দ্বারা বিশেষায়িত করা হয়েছে যা প্রমাণ করে যে শির্ক ছাড়াও কুফুরী হতে পারে এবং (সেসব দলীল দ্বারা বিশেষায়িত) যা প্রমাণ করে যে যে কুফর কাউকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয় সেটি এমন গুনাহ যা ক্ষমা করা হবে না, যদিও তা শির্ক না হয়।
তৃতীয় প্রকার: যেসব দলীল সাধারণ অর্থ বহন করে তাকে বিশেষায়িত করা হয়েছে ঐসব হাদীস দ্বারা যা প্রমাণ করে যে সালাত বর্জনকারী ব্যক্তি কাফির। যেমন মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে কোনো বান্দা সাক্ষ্য দিবে যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন”। [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইলম বা জ্ঞান ( كتاب العلم ), পরিচ্ছেদ: বুঝতে না পারার আশংকায় ইলম শিক্ষায় কোন এক গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে অন্য আরেক গোষ্ঠীকে নির্বাচন করা ( باب من خص بالعلم قوما دون قوم كراهية أن لا يفهموا ), হাদীস নং ১২৮; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি নির্ভেজাল ঈমান নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে ( باب مَنْ لَقِىَ اللَّهَ بِالإِيمَانِ وَهُوَ غَيْرُ شَاكٍّ فِيهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَحَرُمَ عَلَى النَّارِ َ ), হাদীস নং ১৫৭।] আর এটি উক্ত হাদীসের এক বর্ণনার শব্দ, অনুরূপ বর্ণনা এসেছে আবূ হুরায়রা [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), হাদীস নং ১৪৭।] ‘উবাদা ইবন সামিত [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), হাদীস নং ১৫১।] এবং ‘ইতবান ইবন মালেক [তার তথ্যসূত্র সামনে আসছে।] রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মধ্যেও।
চতুর্থ প্রকার: যেসব দলীল ‘আম (ব্যাপক অর্থবোধক) যা এমন বিষয়ের সাথে সম্পর্ক বা শর্তযুক্ত যার সাথে [অর্থাৎ সে শর্তগুলোর দিকে তাকালে আর সালাত ত্যাগ করা সম্ভব হয় না। সুতরাং সে সব হাদীস সালাত ত্যাগকারীর কাফের হওয়ার বিপরীতে পেশ করা যায় না; বরং সে সব হাদীসই প্রমাণ করে যে তাকে অবশ্যই সালাত আদায় করতে হবে। [সম্পাদক]] সালাত ত্যাগ করা সম্ভব নয়। যেমন, ‘ইতবান ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা-ইলাহা ইল্লাহ’ ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ) বলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: সালাত ( كتاب الصلاة ), পরিচ্ছেদ: ঘরের মধ্যে সালাত আদায়ের স্থান ( باب المساجد في البيوت ), হাদীস নং ৪১৫; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: মসজিদ এবং সালাত আদায়ের স্থানসমূহ ( كتاب المساجد و مواضع الصلاة ), পরিচ্ছেদ: শরী‘আত সম্মত কারণে সালাতের জামা‘আতে অংশগ্রহণ করা থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে ( باب الرُّخْصَةِ فِى التَّخَلُّفِ عَنِ الْجَمَاعَةِ بِعُذْرٍَ ), হাদীস নং ১৫২৮।] আর মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ما من أحد يشهد أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله صدقا من قلبه إلا حرمه الله على النار» .
“যে কোনো বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইলম বা জ্ঞান ( كتاب العلم ), পরিচ্ছেদ: বুঝতে না পারার আশংকায় ইলম শিক্ষায় কোন এক গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে অন্য আরেক গোষ্ঠীকে নির্বাচন করা ( باب من خص بالعلم قوما دون قوم كراهية أن لا يفهموا ), হাদীস নং ১২৮; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি নির্ভেজাল ঈমান নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে ( باب مَنْ لَقِىَ اللَّهَ بِالإِيمَانِ وَهُوَ غَيْرُ شَاكٍّ فِيهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَحَرُمَ عَلَى النَّارِ َ ), হাদীস নং ১৫৭।] সুতরাং হাদীসে উল্লিখিত এই দু’টি সাক্ষ্যতে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) এবং অন্তরের সততার শর্তারোপ করা হয়েছে যা তাকে সালাত বর্জন করা থেকে বিরত রাখবে; কারণ যে কোনো ব্যক্তি সততা ও একনিষ্ঠতার সাথে এই সাক্ষ্য দেবে তার সততা ও একনিষ্ঠতা অবশ্যই তাকে সালাত আদায় করতে বাধ্য করবে; কেননা সালাত হচ্ছে ইসলামের মূলস্তম্ভ; আর তা হচ্ছে বান্দা এবং তার রবের (প্রভুর) মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম। সুতরাং সে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সৎ হয় তাহলে অবশ্যই সে এমন কাজ করবে যা তার সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছায়, আর এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে যে কাজ তার এবং তার প্রভূর মধ্যকার সম্পর্কের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে। আর অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার এই সততা তাকে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী হয়ে সালাত আদায় করতে বাধ্য করবে। কারণ, এসব হচ্ছে ঐ সত্য সাক্ষ্যের আবশ্যকতার অন্তর্ভুক্ত।
পঞ্চম প্রকার: সেসব দলীল যা এমন অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট যে অবস্থায় সালাত ত্যাগ করার ওযর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ ইমাম ইবন মাজাহ রহ. কর্তৃক হোযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يدرس الإسلام كما يدرس وشي الثوب .... وتبقى طوائف من الناس والشيخ الكبير والعجوز يقولون : أدركنا آباءنا على هذه الكلمة لا إله إلا الله فنحن نقولها » فقال له صلة : ما تغني عنهم لا إله إلا الله وهم لا يدرون ما صلاة ولا صيام ولا نسك ولا صدقة ؟ فأعرض عنه حذيفة ثم ردها عليه ثلاثا كل ذلك يعرض عنه حذيفة ثم أقبل عليه في الثالثة فقال : «ياصلة ! تنجيهم من النار » ثلاثا» .
“ইসলাম মুছে যাবে যেমনিভাবে কাপড়ের নকসা আস্তে আস্তে মুছে যায়,... “মানুষের মাঝে অতি বৃদ্ধ ও অক্ষমদের একটি দল থাকবে যারা বলবে: আমাদের পূর্ব-পূরুষদের এই কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাহ’ ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ) (আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই) বলতে শুনেছি অতঃপর আমরাও তাই বলছি।” তারপর সেলা রা. নামক সাহাবী তাঁকে (হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে) উদ্দেশ্য করে বললেন: শুধু কি ‘লা-ইলাহা ইল্লাহ’ ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ) বলাটাই তাদের মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে, অথচ তারা জানে না যে, সালাত, সাওম, হজ, যাকাত ও সাদকা কী? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি (সেলা রাদিয়াল্লাহু আনহু) তিনবার সেই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন, প্রত্যেক বারই হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু (উত্তর না দিয়ে) মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি (হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর দিকে ফিরে তিনবার বললেন: হে সেলা! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে।” [ইবন মাজাহ, আস-সুনান, অধ্যায়: ফিতনা ( كتاب الفتن ), পরিচ্ছেদ: কুরআন ও ইলম বিলীন হয়ে যাওয়া ( باب ذهاب القرآن والعلم ), হাদীস নং ৪০৪৯; হাকেম: ৪/৪৭৩; বুসাইরী আয-যাওয়ায়েদ ( الزوائد ) এর মধ্যে বলেন: হাদীসটির সনদ সহীহ এবং তার বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য, আর হাকেম রহ. বলেন: হাদীসটি ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তে সহীহ।]
অতএব, ঐসব মানুষ যাদেরকে এই কালেমা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিল তারা ইসলামের বিধানসমূহ ত্যাগের ব্যাপারে নির্দোষ ছিল। কারণ, তারা এই বিষয়ে অজ্ঞাত ছিল, কাজেই তারা যতটা পালন করেছে ততটাই তাদের শেষ সামর্থ ছিল। তাদের অবস্থা ঠিক সেই লোকদের মত যারা ইসলামের বিধি-নিষেধ নির্ধারিত হওয়ার পূর্বেই মারা গিয়েছে অথবা বিধান পালনের শক্তি অর্জনের পূর্বেই মারা গিয়েছে। যেমন, সেই ব্যক্তি যে (একত্ববাদের) সাক্ষ্য দেয়ার পরে শরী‘আতের বিধিবিধান পালন করার সক্ষমতা অর্জনের পূর্বেই মারা গিয়েছে অথবা সে কাফিরের দেশে ইসলাম গ্রহণ করল তারপর শরী‘আতের বিধিবিধানের জ্ঞান লাভের সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই মারা গেল।
ফলকথা এই যে, যারা সালাত ত্যাগকারীকে কাফির মনে করে না তারা যেসব দলীল পেশ করে সেসব দলীল যারা সালাত ত্যাগকারীকে কাফির মনে করে তাদের দেওয়া দলীল-প্রমাণের সমকক্ষ নয়। কারণ, (যারা কাফির মনে করে না) তারা যেসব দলীল পেশ করে থাকে সেগুলো হয়তো দুর্বল ও অস্পষ্ট অথবা তাতে মোটেই তার প্রমাণ নেই; অথবা সেগুলো এমন এমন গুণের সাথে সম্পৃক্ত যার বর্তমানে সালাত ত্যাগ করা সম্ভব নয় অথবা সেগুলো এমন অবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাতে সালাত ত্যাগের ওযর গ্রহণযোগ্য অথবা হতে পারে সেই দলীলগুলো ‘আম (ব্যাপাক অর্থবোধক) যা সালাত বর্জনকারীর কুফুরীর দলীলসমূহ দ্বারা খাস (নির্দিষ্ট) করা হয়েছে।
সুতরাং যখন সালাত বর্জনকারী ব্যক্তির কাফির হওয়ার বিষয়টি এমন বলিষ্ঠ দলীল দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে দলীলের বিরুদ্ধে তার সমতুল্য কোনো দলীল নেই। ফলে তার ওপর কুফুরী ও মুরতাদ হওয়ার বিধান অবশ্যই প্রযোজ্য হবে। আর সঙ্গত কারণেই বিধানটি তার ইল্লতের (কারণ বা হেতুর) সাথে ইতিবাচক ও নেতিবাচকভাবে সংশ্লিষ্ট; অর্থাৎ সেই বিধানের কারণ পাওয়া গেলে তা প্রযোজ্য হবে আর যদি কারণ না পাওয়া যায় তবে তার বিধান প্রযোজ্য হবে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/92/6
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।