HADITH.One

Bangla

Support

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদিস সম্ভার

. আন্তরিক কর্মাবলী অধ্যায়

جمع الحديث

/ পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা

মহান আল্লাহ বলেছেন, (আরবী) অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর।(সূরা আলে ইমরান ১০২ আয়াত) উক্ত আয়াতে যথার্থভাবে ভয় করার ব্যাখ্যা রয়েছে এই আয়াতে তিনি বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬ আয়াত) তিনি আরো বলেন (আরবী) অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ। আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। (সূরা আহযাব ৭০ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিষ্কিৃতির পথ করে দিবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুয়ী দান করবেন। (সূরা তালাক্ব ২-৩ আয়াত) তিনি আরো বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল। (সূরা আনফাল ২৯ আয়াত) আল্লাহভীতি, সংযমশীলতা ও তাকওয়া-পরহেযগারীর গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ (আরবী)

১৮৭

সহিহ হাদিস

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হল যে, ‘হে আল্লাহর রসূল! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে?” তিনি বললেন, “তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে আল্লাহ-ভীরু।” অতঃপর তাঁরা (সাহাবীরা) বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি না।’ তিনি বললেন, “তাহলে ইউসুফ (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি), যিনি স্বয়ং আল্লাহর নবী, তাঁর পিতা নবী, পিতামহও নবী এবং প্রপিতামহও নবী ও আল্লাহর বন্ধু।” তাঁরা বললেন, “এটাও আমাদের প্রশ্ন নয়।” তিনি বললেন, “তাহলে তোমরা কি আমাকে আরবের বংশাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? (তবে শোনো!) তাদের মধ্যে যারা জাহেলী যুগে ভাল, তারা ইসলামেও ভাল; যদি দ্বীনী জ্ঞান রাখে।” (বুখারী ৩৩৫৩, মুসলিম ৬৩৩১নং)

১৮৮

সহিহ হাদিস

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নিশ্চয় দুনিয়া মধুর ও সবুজ (সুন্দর আকর্ষণীয়)। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এর প্রতিনিধি নিয়োজিত ক’রে দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করছ? অতএব তোমরা (যদি সফলকাম হতে চাও তাহলে) দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ এবং নারীর (ফিৎনা থেকে) বাঁচ। কারণ, বানী ঈস্‌রাইলের সর্বপ্রথম ফিৎনা নারীকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।” (মুসলিম ৭১২৪নং)

১৮৯

সহিহ হাদিস

ইবনে মাসঊদ থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দুআ করতেন, `আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা অততুক্বা, অলআফা-ফা আলগিনা।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সৎপথ, সংযমশীলতা, চারিত্রিক পবিত্রতা ও অভাবশূন্যতা প্রার্থনা করছি। (মুসলিম ৭০৭৯নং)

১৯০

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ طَرِيفٍ عَدِيِّ بنِ حَاتِمٍ الطَّائيِّ قَالَ : سَمِعْتُ رسولَ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ ثُمَّ رَأَى أتْقَى للهِ مِنْهَا فَليَأتِ التَّقْوَى رواه مسلم

আবূ ত্বারীফ আদী ইবনে হাতেম ত্বাই (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে (এ কথা) বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর কসম খাবে অতঃপর তার চেয়ে বেশী আল্লাহ-ভীতির বিষয় দেখবে, তার উচিত আল্লাহ-ভীতির বিষয় গ্রহণ করা।” (মুসলিম ৪৩৬৪নং)

১৯১

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ أُمَامَةَ صُدَيّ بنِ عَجْلَانَ البَاهِلِيِّ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله ﷺ يَخْطُبُ في حجةِ الودَاعِ فَقَالَ اتَّقُوا الله وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا أُمَرَاءَكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن صحيح

আবূ উমামাহ সুদাই বিন আজলান বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি বিদায় হজ্জের অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভাষণ দিতে শুনেছি, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্তের (ফরয) নামায পড়, তোমাদের রমযান মাসের রোযা রাখ, তোমাদের মালের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের নেতা ও শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য কর (যদি তাদের আদেশ শরীয়ত বিরোধী না হয়), তাহলে তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী ৬১৬নং)

১৯২

সহিহ হাদিস
عَنْ سَعْدٍ بْنِ أَبِيْ وَقَّاص قاَلَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَيْرُ دِينِكُمْ الوَرَعُ

সা’দ বিন আবী অক্কাস থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন হল পরহেযগারী।” (আবুশ শাইখ, সহীহুল জামে’ ৩৩০৮নং)

১৯৩

সহিহ হাদিস
عَن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُونَ مَنْ كَانُوا وَحَيْثُ كَانُواِِِِ

মুআয বিন জাবাল থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয় আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী মুত্তাক্বীনগণ; তারা যেই হোক, যেখানেই থাক।” (আহমদ ২২০৫২, সঃ জামে ২০১২নং)

১৯৫

সহিহ হাদিস
عَنْ جَابِرٍ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَلَا إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ وَلَا لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلَّا بِالتَّقْوَى

জাবের বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায়ী হজ্জের ভাষণে বলেছেন, “হে লোক সকল! শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোনো, আরবীর উপর অনারবীর এবং অনারবীর উপর আরবীর, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল ‘তাক্বওয়ার’ কারণেই।” (আহমাদ ২৩৪৮৯, শুআবুল ঈমান, বাইহাক্বী ৫১৩৭নং)

১৯৪

সহিহ হাদিস
وعَنه قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ إِنَّ أَهْلَ بَيْتِي هَؤُلاءِ يَرَوْنَ أَنَّهُمْ أَوْلَى النَّاسِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِنَّ أَوْلِيَائِيَ مِنْكُمُ الْمُتَّقُونَ

উক্ত সাহাবী থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আমার পরিবারের লোক মনে করে, ওরা আমার বেশি ঘনিষ্ঠতম। অথচ আমার বেশি ঘনিষ্ঠ হল পরহেযগার লোকেরা, তারা যেই হোক, যেখানেই থাক। (ত্বাবারানীর কাবীর ২৪১, ইবনে হিব্বান ৬৪৭, যিলালুল জান্নাহ ২১২নং)
/ পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা

মহান আল্লাহ বলেন, (আরবী) অর্থাৎ বিশ্বাসীরা যখন শক্রবাহিনীকে দেখল তখন ওরা বলে উঠল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তো আমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল সত্যই বলেছিলেন। এতে তো তাদের বিশ্বাস ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেল। (সুর আহযাব ২২ আয়াত) তিনি অন্যত্রে বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, যাদেরকে লোকেরা বলেছিল যে, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় কর। কিন্তু এ (কথা) তাদের বিশ্বাস দৃঢ়তর করেছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক। তারপর তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এসেছিল, কোন অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট হযন তারা তারই অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান ১৭৩- ১৭৪ আয়াত) তিনি আরো বলেন, (আরবী) অর্থাৎ তুমি তাঁর উপর নির্ভর কর যিনি চিরঞ্জীব, যার মৃত্যু নেই। (সূরা ফুরক্বান ৫৮আয়াত) (আরবী) অর্থাৎ, মু’মিনদের উচিত, কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করা। (সূরা ইব্রাহীম ১১ আয়াত) তিনি আরো বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, তুমি কোন সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর (নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর উপর নির্ভরশীলদেরকে ভালবাসেন।) (সূরা আলে ইমরান ১৫৯ আয়াত) আরো আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। (সূরা ত্বালাক ৩ আয়াত) (আরবী) অর্থাৎ, বিশ্বাসী (মুমিন) তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করার সময় ভীত হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের বিশ্বাস (ঈমান) বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে। একীন (দৃঢ়প্রত্যয়) ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা)র গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ (আরবী)

১৯৮

সহিহ হাদিস
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا أيضاً قَالَ : حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ قَالَهَا إِبرَاهيمُ ﷺ حِينَ أُلقِيَ في النَّارِ وَقَالَها مُحَمَّدٌ ﷺ حِينَ قَالُوْا إنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إيْماناً وَقَالُوْا : حَسْبُنَا اللهُ وَنعْمَ الوَكيلُ رواه البخاري وفي رواية لَهُ عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُما قَالَ : كَانَ آخِرَ قَولِ إبْرَاهِيمَ ﷺ حِينَ أُلْقِيَ في النَّارِ : حَسْبِي اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, “হাসবুনাল্লাহু অনি’মাল অকীল” কথাটি ইব্রাহীম (আঃ) তখন বলেছিলেন, যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটি তখন বলেছিলেন যখন লোকেরা বলেছিল যে, ‘(কাফের) লোকেরা তোমাদের মুকবিলার জন্য সমবেত হয়েছে; ফলে তোমরা তাদেরকে ভয় কর।’ কিন্তু এ কথা তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলল, “হাসবুনাল্লাহ অনি’মাল অকীল।” অর্থাৎ, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।
অন্য এক বর্ণনায় ইবনে আব্বাস বলেন, আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় ইব্রাহীম (আঃ) -এর শেষ কথা ছিল, “হাসবিয়াল্লাহ অনি’মাল অকীল।” (বুখারী ৪৫৬৩-৪৫৬৪নং)

১৯৯

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ أَقْوامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثلُ أَفْئِدَةِ الطَّيرِ رواه مسلم

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “জান্নাতে এমন লোক প্রবেশ করবে, যাদের অন্তর হবে পাখীর অন্তরের মত।” (মুসলিম ৭৩৪১নং)
* কারো নিকট এর অর্থ হল এই যে তারা পাখীর মত আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হবে। আর অনেকের নিকট এর অর্থ এই যে, (পাখীর অন্তরের মত) তাদের অন্তর নরম হবে।

২০১

সহিহ হাদিস
عَن عُمَرَ قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُونَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ تَغْدُو خِمَاصاً وَتَرُوحُ بِطَاناً رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن

উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখ, তবে তিনি তোমাদেরকে সেই মত রুযী দান করবেন যেমন পাখীদেরকে দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ ক’রে (বাসায়) ফিরে” (আহমাদ ২০৫, তিরমিযী ২৩৪৪, ইবনে মাজাহ ৪১৬৪, হাকেম ৭৮৯৪, সহীহুল জামে ৫২৫৪নং)

১৯৭

সহিহ হাদিস
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا أيضاً : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ كَانَ يَقُولُ اَللّٰهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ اَللّٰهُمَّ أعُوذُ بعزَّتِكَ لاَ إلهَ إلاَّ أَنْتَ أنْ تُضِلَّنيأَنْتَ الحَيُّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ وَالجِنُّ والإنْسُ يَمُوتُونَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وهذا لفظ مسلم واختصره البخاري

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু অবিকা আ-মানতু অআলাইকা তাওয়াক্কালতু অইলাইকা আনাবতু অবিকা খা-স্বামতু। আল্লাহুম্মা আউযু বিইযযাতিকা লাইলা-হা ইল্লা আন্তা আন তুযিল্লানী, আন্তাল হাইয়ুল্লাযী লা য়্যামূত, অলজিন্নু অলইনসু য়ামূতুন।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি নিজকে তোমার নিকট সমর্পণ করলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম, তোমারই উপর ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম, তোমারই ক্ষমতায় (শত্রুর বিরুদ্ধে) বিবাদ করলাম। হে আল্লাহ! তোমার ইযযতের অসীলায় আমি আশ্রয় চাচ্ছি---তুমি ছাড়া কেউ (সত্য) উপাস্য নেই-- তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করো না। তুমি সেই চিরঞ্জীব, যে কখনো মরবে না এবং দানব ও মানবজাতি মৃত্যুবরণ করবে। (বুখারী ৭৩৮৩, মুসলিম ৭০৭৪নং, এই শব্দগুলো মুসলিমের। ইমাম বুখারী (রহঃ) এটিকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন)

১৯৬

সহিহ হাদিস
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ فَرَأيْتُ النَّبيَّ ومَعَهُ الرُّهَيطُ وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلانِ وَالنبيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ إِذْ رُفِعَ لي سَوَادٌ عَظيمٌ فَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ أُمَّتِي فقيلَ لِي : هَذَا مُوسَى وَقَومُهُ ولكنِ انْظُرْ إِلَى الأُفُقِ فَنَظَرتُ فَإِذا سَوادٌ عَظِيمٌ فقيلَ لي : انْظُرْ إِلَى الأفُقِ الآخَرِ فَإِذَا سَوَادٌ عَظيمٌ فقيلَ لِي : هذِهِ أُمَّتُكَ وَمَعَهُمْ سَبْعُونَ ألفاً يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِغَيرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ ثُمَّ نَهَضَ فَدخَلَ مَنْزِلَهُ فَخَاضَ النَّاسُ في أُولئكَ الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ فَقَالَ بَعْضُهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذينَ صَحِبوا رسولَ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَقالَ بعْضُهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذِينَ وُلِدُوا في الإِسْلامِ فَلَمْ يُشْرِكُوا بِالله شَيئاً - وذَكَرُوا أشيَاءَ - فَخَرجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ مَا الَّذِي تَخُوضُونَ فِيهِ ؟ فَأَخْبَرُوهُ فقالَ هُمُ الَّذِينَ لاَ يَرْقُونَ وَلا يَسْتَرقُونَ وَلا يَتَطَيَّرُونَ وعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوكَّلُون فقامَ عُكَّاشَةُ ابنُ محصنٍ فَقَالَ : ادْعُ الله أنْ يَجْعَلني مِنْهُمْ فَقَالَ أنْتَ مِنْهُمْ ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ : ادْعُ اللهَ أنْ يَجْعَلنِي مِنْهُمْ فَقَالَ سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমার কাছে সকল উম্মত পেশ করা হল। আমি দেখলাম, কোন নবীর সাথে কতিপয় (৩ থেকে ৭ জন অনুসারী) লোক রয়েছে। কোন নবীর সাথে এক অথবা দুইজন লোক রয়েছে। কোন নবীকে দেখলাম তাঁর সাথে কেউ নেই। ইতোমধ্যে বিরাট একটি জামাআত আমার সামনে পেশ করা হল। আমি মনে করলাম, এটিই আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হল যে, ‘এটি হল মূসা ও তাঁর উম্মতের জামাআত কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে তাকান।’ অতঃপর তাকাতেই আরও একটি বিরাট জামাআত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হল যে, ‘এটি হল আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এমন ৭০ হাজার লোক, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেশ্‌ত প্রবেশ করবে।’
এ কথা বলে তিনি উঠে নিজ বাসায় প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা ঐ বেহেশ্‌তী লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু ক’রে দিল, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেশ্‌তে প্রবেশ করবে। কেউ কেউ বলল, ‘সম্ভবতঃ ঐ লোকেরা হল তারা, যারা আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবা।’ কিছু লোক বলল, ‘বরং সম্ভবতঃ ওরা হল তারা, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি।’ আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। কিছু পরে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট বের হয়ে এসে বললেন, “তোমরা কী ব্যাপারে আলোচনা করছ?” তারা ব্যাপার খুলে বললে তিনি বললেন, “ওরা হল তারা, যারা ঝাড়ফুঁক করে না [১], ঝাড়ফুঁক করায় না এবং কোন জিনিসকে অশুভ লক্ষণ মনে করে না, বরং তারা কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।”
এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনে মিহসান উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘(হে আল্লাহর রসূল!) আপনি আমার জন্য দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত ক’রে দেন!’ তিনি বললেন, “তুমি তাদের মধ্যে একজন।” অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি আমার জন্যও দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন।’ তিনি বললেন, “উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগমন করেছে।” (বুখারী ৫২৭০, মুসলিম ২২০নং)
[১] এ কথাটি বুখারীতে নেই। তাছাড়া জিবরীল (আঃ) ঝাড়ফুঁক করেছেন, ঝাড়ফুঁক করেছেন মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। পক্ষান্তরে অন্য বর্ণনায় উক্ত কথার স্থলে ‘দাগায় না’ কথা এসেছে।

২০৬

সহিহ হাদিস
وَعَن أَنَسٍ قَالَ : كَانَ أَخَوانِ عَلَى عَهدِ النَّبيّ ﷺ وَكَانَ أحَدُهُمَا يَأتِي النَّبيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَالآخَرُ يَحْتَرِفُ فَشَكَا المُحْتَرِفُ أخَاهُ لِلنَّبي صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ لَعَلَّكَ تُرْزَقُ بِهِ رواه الترمذي بإسناد صحيحٍ عَلَى شرطِ مسلم

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে দুই ভাই ছিল। তাদের মধ্যে একজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে (দ্বীন শিক্ষার জন্য) আসত এবং আর একজন হাতের কোন কাজ ক’রে উপার্জন করত। অতঃপর উপার্জনশীল (ভাইটি) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তার (শিক্ষার্থী) ভাইয়ের (কাজ না করার) অভিযোগ করল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “সম্ভবতঃ তোমাকে তার কারণেই রুযী দেওয়া হচ্ছে।” (তিরমিযী ২৩৪৫, সিঃ সহীহাহ ২৭৬৯নং)

২০৪

সহিহ হাদিস
عَن أمِّ سَلَمَةَ رَضِي الله عَنها : أَنَّ النَّبيّ ﷺ كَانَ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيتِهِ قَالَ بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلتُ عَلَى اللهِ اَللّٰهُمَّ إِنِّي أعُوذُ بِكَ أنْ أضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ

উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বাড়ি থেকে বের হতেন, তখন (এই দুআ) বলতেন---যার অর্থ, আল্লাহর নাম নিয়ে (বের হলাম), আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি ভ্ৰষ্ট হই বা আমাকে ভ্ৰষ্ট করা হয়, আমার পদস্খলন হয় বা পদস্খলন করানো হয়, আমি অত্যাচারী হই অথবা অত্যাচারিত হই অথবা আমি মূর্খামি করি অথবা আমার প্রতি মূর্খামি করা হয়---এসব থেকে। (আবূ দাঊদ ৫০৯৭নং)

২০৭

সহিহ হাদিস
عَن أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُولُ: قَالَ رَجُلٌ : يَا رَسُولَ اللهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ ؟ قَالَ اعْقِلْهَا وَتَوَكَّلْ

আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি (আল্লাহর উপর নির্ভর করার ধরন প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে) বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি উট বেঁধে আল্লাহর উপর নির্ভর করব, নাকি উট ছেড়ে দিয়ে?’ উত্তরে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “বরং তুমি উট বেঁধে আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (তিরমিযী ২৫১৭নং)

২০২

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ عُمَارَةَ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَا فُلانُ إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَقُل : اَللّٰهُمَّ أسْلَمتُ نَفْسي إلَيْكَ وَوَجَّهتُ وَجْهِي إلَيْكَ وَفَوَّضتُ أَمْري إلَيْكَ وَأَلجأْتُ ظَهري إلَيْكَ رَغبَةً وَرَهبَةً إلَيْكَ لا مَلْجَأ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إلاَّ إلَيْكَ آمنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أنْزَلْتَ وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ فَإِنَّكَ إِنْ مِتَّ مِنْ لَيلَتِكَ مِتَّ عَلَى الفِطْرَةِ وَإِنْ أصْبَحْتَ أَصَبْتَ خَيراً مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية في الصحيحين عَن البراءِ قَالَ : قَالَ لِي رَسُول الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِذَا أَتَيْتَ مَضْجِعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ للصَّلاةِ ثُمَّ اضْطَجعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيمَنِ وَقُلْ وذَكَرَ نَحْوَهُ ثُمَّ قَالَ : وَاجْعَلْهُنَّ آخِرَ مَا تَقُولُ

বারা ইবনে আযেব থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “হে অমুক! তুমি যখন বিছানায় শোবে, তখন (এই দুআ) পড়, যার অর্থ, হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মা তোমাকে সঁপে দিলাম, আমার চেহারা তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আমার ব্যাপার তোমাকে সঁপে দিলাম এবং আমার পিঠ তোমার দিকে লাগিয়ে দিলাম; তোমার (জান্নাতের) আগ্রহে ও (জাহান্নামের) ভয়ে। তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল ও পরিত্রাণস্থল নেই। আমি সেই কিতাবের প্রতি ঈমান আনলাম যেটি তুমি অবতীর্ণ করেছ এবং সেই রসূলের প্রতি যাঁকে তুমি পাঠিয়েছ। (অবশেষে তিনি বলেন,) অতঃপর তুমি যদি সেই রাতে মৃত্যুবরণ কর, তাহলে তুমি ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে। আর যদি তুমি সকালে ওঠ তবে, তুমি (এর) উপকার পাবে।”
বারা ইবনে আযেব থেকেই বুখারী ও মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন যে, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “যখন তুমি (রাতে শোবার জন্য) বিছানায় যাবে, তখন তুমি নামাযের মত ওযূ কর। তারপর ডানপাশে শুয়ে যাও এবং (উপরোক্ত দুআ) পড়।” পুনরায় তিনি বললেন, “তুমি উপরোক্ত দুআটি তোমার শেষ কথা কর।” (অর্থাৎ এই দুআ পড়ার পর অন্য দুআ পড়বে না বা কোন কথা বলবে না)। (বুখারী ২৪৭, মুসলিম ৭০৫৭নং)

২০৫

সহিহ হাদিস
عَن أنس قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ قَالَ يَعَني : إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيتِهِ : بِسمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَلا حَولَ وَلا قُوَّةَ إلاَّ باللهِ يُقالُ لَهُ : هُدِيتَ وَكُفِيتَ وَوُقِيتَ وَتَنَحَّى عَنهُ الشَّيطَانُ رواه أبو داود والترمذي والنسائي وغيرهم وَقالَ الترمذي حديث حسن زاد أبو داود فَيَقُولُ يَعَني : اَلشَّيْطَانُ لِشَيْطَانٍ آخَر : كَيفَ لَكَ بِرجلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ ؟

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহ থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহ তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, অলা হাওলা অলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ (অর্থাৎ, আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ থেকে ফিরা এবং পুণ্য করা সম্ভব নয়।) তাকে বলা হয়, ‘তোমাকে সঠিক পথ দেওয়া হল, তোমাকে যথেষ্টতা দান করা হল এবং তোমাকে বাঁচিয়ে নেওয়া হল।’ আর শয়তান তার নিকট থেকে দূরে সরে যায়।” (আবূ দাঊদ ৫০৯৭, তিরমিযী ৩৪২৬, নাগাঈ কুবরা ৯৯১৭নং প্রমুখ)
তিরমিয়ী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আবূ দাঊদ এই শব্দগুলি বাড়তি বর্ণনা করেছেন, “ফলে শয়তান অন্য শয়তানকে বলে যে, ঐ ব্যক্তির উপর তোমার কিরূপে কর্তৃত্ব চলবে, যাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করা হয়েছে, যাকে যথেষ্টতা দান করা হয়েছে এবং যাকে (সকল অমঙ্গল) থেকে বাঁচানো হয়েছে?”

২০০

সহিহ হাদিস
عَن جَابِرٍ أَنَّهُ غَزَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قِبلَ نَجْدٍ فَلَمَّا قَفَلَ رَسُولُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَفَلَ معَهُمْ فَأَدْرَكَتْهُمُ القَائِلَةُ في وَادٍ كثير العِضَاه فَنَزَلَ رَسُول الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَتَفَرَّقَ النَّاسُ يَسْتَظِلُّونَ بالشَّجَرِ وَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم تَحتَ سَمُرَة فَعَلَّقَ بِهَا سَيفَهُ وَنِمْنَا نَوْمَةً فَإِذَا رسولُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَدْعونَا وَإِذَا عَندَهُ أعْرَابِيٌّ فَقَالَ إنَّ هَذَا اخْتَرَطَ عَلَيَّ سَيفِي وَأنَا نَائمٌ فَاسْتَيقَظْتُ وَهُوَ في يَدِهِ صَلتاً قَالَ : مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قُلْتُ : الله - ثلاثاً وَلَمْ يُعاقِبْهُ وَجَلَسَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية قَالَ جَابِرٍ : كُنَّا مَعَ رَسُولِ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بذَاتِ الرِّقَاعِ فَإِذَا أَتَيْنَا عَلَى شَجَرَةٍ ظَلِيلَةٍ تَرَكْنَاهَا لِرَسُولِ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فجاء رَجُلٌ مِنَ المُشْركينَ وَسَيفُ رَسُول الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم معَلَّقٌ بالشَّجَرَةِ فَاخْتَرطَهُ فَقَالَ: تَخَافُنِي ؟ قَالَ لاَ فَقَالَ : فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قَالَ الله وَفي رِوَايَةِ أبي بَكْرٍ الإسمَاعِيلِي في صَحِيحِه قَالَ : مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قَالَ اللهُ قَالَ : فَسَقَطَ السيفُ مِنْ يَدهِ فَأخَذَ رسولُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم السَّيْفَ فَقَالَ مَنْ يَمْنَعُكَ مني ؟ فَقَالَ : كُنْ خَيرَ آخِذٍ فَقَالَ تَشْهَدُ أنْ لا إلهَ إلاَّ الله وَأَنِّي رَسُول الله ؟ قَالَ : لاَ وَلَكنِّي أُعَاهِدُكَ أنْ لا أُقَاتِلَكَ وَلاَ أَكُونَ مَعَ قَومٍ يُقَاتِلُونَكَ فَخَلَّى سَبيلَهُ فَأَتَى أصْحَابَهُ فَقَالَ : جئتُكُمْ مِنْ عَند خَيْرِ النَّاسِ

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে নাজদের (বর্তমানে রিয়ায অঞ্চল) দিকে জিহাদে রওনা হলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বাড়ী) ফিরতে লাগলেন, তখন তিনিও তাঁর সঙ্গে ফিরলেন (রাস্তায়) প্রচুর কাঁটাগাছ ভরা এক উপত্যকায় তাঁদের দুপুরের বিশ্রাম নেওয়ার সময় হল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বিশ্রামের জন্য) নেমে পড়লেন এবং (সাহাবীগণও) গাছের ছায়ার খোঁজে তাঁরা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বাবলার গাছের নীচে অবতরণ করলেন এবং তাতে স্বীয় তরবারি বুলিয়ে দিলেন, আর আমরা অল্পক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে গেলাম। অতঃপর হঠাৎ (আমরা শুনলাম যে,) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ডাকছেন। সেখানে দেখলাম যে, একজন বেদুঈন তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি বললেন, “আমার ঘুমের অবস্থায় এই ব্যক্তি আমার তরবারি খুলে আমার উপর ধরে আছে। অতঃপর আমি যখন জাগলাম, তখন তরবারিখানি তার হাতে খুলা অবস্থায় দেখলাম। (তারপর) সে আমাকে বলল, ‘আমা হতে তোমাকে (আজ) কে বাঁচাবে? আমি বললাম, ‘আল্লাহ!’ এ কথা আমি তিনবার বললাম।” তিনি তাকে কোন শাস্তি দিলেন না। অতঃপর তিনি বসে গেলেন। (অথবা সে বসে গেল।)
অন্য এক বর্ণনায় আছে জাবের বলেন যে, আমরা ‘যাতুর রিক্বা’তে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। অতঃপর (ফিরার সময়) যখন আমরা ঘন ছায়াবিশিষ্ট একটি গাছের কাছে এলাম, তখন তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য ছেড়ে দিলাম। (তিনি বিশ্রাম করতে লাগলেন।) ইতিমধ্যে একজন মুশরিক এল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরবারি গাছে ঝুলানো ছিল। তারপর সে তা (খাপ থেকে) বের ক’রে বলল, ‘তুমি আমাকে ভয় করছ?’ তিনি বললেন, “না।” সে বলল, ‘তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ।”
আবূ বাকর ইসমাঈলীর ‘সহীহ’ গ্রন্থের বর্ণনায় আছে, সে বলল, ‘আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ।” বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তার হাত থেকে তরবারিটি পড়ে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তরবারিখানি তুলে নিয়ে বললেন, “(এবার) তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?” সে বলল, ‘তুমি উত্তম তরবারিধারক হয়ে যাও।’ অতঃপর তিনি বললেন, “তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল?” সে বলল, ‘না। কিন্তু আমি তোমার কাছে অঙ্গীকার করছি যে, তোমার বিরুদ্ধে কখনো লড়বো না। আর আমি সেই সম্প্রদায়েরও সাথ দেবো না, যারা তোমার বিরুদ্ধে লড়বে।’ সুতরাং তিনি তার পথ ছেড়ে দিলেন। অতঃপর সে তার সঙ্গীদের নিকট এসে বলল, ‘আমি তোমাদের নিকটে সর্বোত্তম মানুষের কাছ থেকে এলাম।’ (বুখারী ২৯১০, মুসলিম ৬০৯০, মিশকাত ৫৩০৪-৫৩০৫নং)

২০৮

সহিহ হাদিস
عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ مَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتَهُ وَمَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالله فَيُوشِكُ الله لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যার অভাব আসে, সে যদি তা মানুষের কাছে (পূরণের কথা) জানায়, তাহলে তার অভাব দূর হয় না। কিন্তু যার অভাব আসে, সে যদি তা আল্লাহর কাছে (পূরণের কথা) জানায়, তাহলে তিনি বিলম্বে অথবা অবিলম্বে তার অভাব দূর করে দেন।” (তিরমিযী ২৩২৬নং)

২০৩

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ بَكْرٍ الصِّدِّيقِ قَالَ : نَظَرتُ إِلَى أَقْدَامِ المُشْرِكينَ وَنَحنُ في الغَارِ وَهُمْ عَلَى رُؤُوسِنا فَقُلتُ : يَا رَسُولَ الله لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ نَظَرَ تَحْتَ قَدَمَيهِ لأَبْصَرَنَا فَقَالَ مَا ظَنُّكَ يَا أَبا بَكرٍ بِاثنَيْنِ اللهُ ثَالِثُهُمَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

আবূ বাক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি মুশরিকদের পায়ের দিকে তাকালাম যখন আমরা (সওর) গুহায় (লুকিয়ে) ছিলাম এবং তারা আমাদের মাথার উপরে ছিল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি তাদের মধ্যে কেউ তার পায়ের নীচে তাকায়, তবে সে আমাদেরকে দেখে ফেলবে।’ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হে আবূ বাক্‌র! সে দু’জন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা, যাদের তৃতীয়জন আল্লাহ।” (বুখারী ৩৬৫৩, মুসলিম ৬৩১৯ নং)

২০৯

সহিহ হাদিস
اَللّٰهُمَّ أَنْجِزْ لِى مَا وَعَدْتَنِى اَللّٰهُمَّ آتِ مَا وَعَدْتَنِى اَللّٰهُمَّ إِنْ تَهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةُ مِنْ أَهْلِ الإِسْلاَمِ لاَ تُعْبَدْ فِى الأَرْضِ

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক দুআ ছিল,
“আল্লাহ! তুমি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে তা পূরণ কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যার অঙ্গীকার দিয়েছিলে তা প্রদান কর। আল্লাহ গো! আহলে ইসলামের এই জামাআতকে যদি তুমি ধ্বংস করে দাও তাহলে পৃথিবীতে আর তোমার ইবাদত হবে না।” (মুসলিম ৪৬৮৭নং)

২১০

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَفِرَّ مِنْ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমরা কুষ্ঠরোগ হতে দূরে থেকো, যেমন বাঘ হতে দূরে পলায়ন কর।” (বুখারী ৫৭০৭নং)

২১১

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا يُورِدَنَّ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন সুস্থ উট দলে তার উট না নিয়ে যায়।” (বুখারী ৫৭৭১, মুসলিম ৫৯২২নং)
* বলা বাহুল্য আল্লাহর উপর ভরসা রেখে উপকরণ প্রয়োগ করতে হবে।
/ পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ ও তাঁর আযাবকে ভয় করার গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর। (সুরা বাক্বারাহ ৪০ আয়াত) তিনি আরো বলেন (আরবী) অর্থাৎ, নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও বড়ই কঠিন। (সূরা বুরুজ ১২ আয়াত) তিনি আরো বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, আর এরূপই তার পাকড়াও, যখন তিনি কোন অত্যাচারী জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন। নিঃসন্দেহে তার পাকড়াও অত্যন্ত যাতনাদায়ক কঠিন। নিশ্চয় এ সব ঘটনায় সে ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে যে ব্যক্তি পরকালের শাস্তিকে ভয় করে। ওটা এমন একটা দিন হবে যেদিন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হবে এবং ওটা হবে সকলের উপস্থিতির দিন। আর আমি ওটা নির্দিষ্ট একটি কালের জন্যই বিলম্বিত করছি। যখন সেদিন আসবে তখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কথাও বলতে পারবে না। সুতরাং তাদের মধ্যে কেউ হবে দুর্ভাগ্যবান এবং কেউ হবে সৌভাগ্যবান। অতএব যারা দুর্ভাগ্যবান তারা তো হবে দোযখে; তাতে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ হতে থাকবে। (সূরাহুদ ১০২-১০৬ আয়াত) আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন। (আলে ইমরান ২৮ আয়াত) আল্লাহ তাআলা বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভ্রাতা হতে এবং তার মাতা ও তার পিতা হতে, তার পত্নী ও তার সন্তান হতে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে। (সূরা আবাসা ৩৪-৩৭ আয়াত) তিনি আরো বলেন (আরবী) অর্থাৎ, হে মানবমন্ডলী! তোমরা ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে (আর জেনে রেখো যে,) নিঃসন্দেহে কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী নিজ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত ক’রে ফেলবে। আর মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি বড় কঠিন৷ (সুরা হজ্জ ১-২ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি (জান্নাতের) বাগান। (সূরারহমান ৪৬ আয়াত) তিনি আরো বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করবে এবং বলবে, নিশ্চয় আমরা পূর্বে পরিবার-পরিজনের মধ্যে শংকিত অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে উত্তপ্ত ঝড়ো হাওয়ার শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় আমরা পূর্বেও আল্লাহকে আহবান করতাম। নিশ্চয় তিনি কৃপাময়, পরম দয়ালু। (সুরা ত্বুর ২৫-২৮ আয়াত) এ বিষয়ে বহু আয়াত রয়েছে। যেমন হাদীসও রয়েছে অনেক নিম্নে কতিপয় হাদীস উল্লিখিত হলঃ

২১৩

সহিহ হাদিস
وَ عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ العَالَمِينَ حَتَّى يَغِيبَ أحَدُهُمْ في رَشْحِهِ إِلَى أنْصَافِ أُذُنَيهِ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন লোকেরা বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হবে (এবং তাদের এত বেশি ঘাম হবে যে,) তাদের মধ্যে কেউ তার ঘামে তার অর্ধেক কান পর্যন্ত ডুবে যাবে।” (বুখারী ৪৯৩৮, মুসলিম ৭৩৮২নং)

২১৬

সহিহ হাদিস
وَعَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يُؤتَى بِجَهَنَّمَ يَومَئذٍ لَهَا سَبْعُونَ ألفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبعُونَ ألْفَ مَلَكٍ يَجُرُّونَهَا رواه مسلم

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এ অবস্থায় নিয়ে আসা হবে যে, তার সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রত্যেক লাগামের সাথে সত্তর হাজার ফিরিশ্‌তা থাকবেন। তারা তা টানতে থাকবেন।” (মুসলিম ৭৩৪৩নং)

২১৭

সহিহ হাদিস
وَعَن النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ إنَّ أهْوَنَ أهْلِ النَّارِ عَذَاباً يَوْمَ القِيَامَةِ لَرَجُلٌ يُوضَعُ في أخْمَصِ قَدَمَيْهِ جَمْرَتَانِ يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ مَا يَرَى أنَّ أَحَداً أشَدُّ مِنْهُ عَذَاباً وَأنَّهُ لأَهْوَنُهُمْ عَذَاباً مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

নু’মান ইবনে বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “কিয়ামতের দিবসে ঐ ব্যক্তির সর্বাপেক্ষা হাল্কা আযাব হবে, যার দু পায়ের তেলোয় জ্বলন্ত দু’টি অঙ্গার রাখা হবে। যার ফলে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে। সে মনে করবে না যে, তার চেয়ে কঠিন আযাব অন্য কেউ ভোগ করছে। অথচ তারই আযাব সবার চেয়ে হাল্কা!” (বুখারী ৬৫৬২, মুসলিম ৫৩৮নং)

২১৫

সহিহ হাদিস
وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ يَعْرَقُ النَّاسُ يَومَ القِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ في الأَرضِ سَبْعِينَ ذِراعاً وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ متفق عليه

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কিয়ামতের দিন মানুষের প্রচন্ড ঘাম হবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত পর্যন্ত নিচে যাবে। আর তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে নিমজ্জিত থাকবে। এমনকি কান পর্যন্তও।” (বুখারী ৬৫৩২, মুসলিম ৭৩৮৪নং)

২১৪

সহিহ হাদিস
وَعَن المِقدَادِ قَالَ : سمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ تُدْنَى الشَّمْسُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنَ الخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ قَالَ سُلَيْم بنُ عَامِرٍ الرَّاوِي عَن المِقدَادِ : فَوَاللهِ مَا أدْرِي مَا يَعَني بِالمِيلِ أَمَسَافَةَ الأرضِ أَمِ المِيلَ الَّذِي تُكْتَحَلُ بِهِ العَيْنُ ؟ قَالَ فَيكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أعْمَالِهِمْ في العَرَقِ فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُوْنُ إِلَى كَعْبَيْهِ وَمِنهُم مَن يَكُوْنُ إِلَى رُكبَتَيهِ وَمِنهُم مَنْ يَكُوْنُ إِلَى حِقْوَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ العَرَقُ إلْجَاماً قَالَ: وَأَشَارَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بيدهِ إِلَى فِيهِ رواه مسلم

মিক্বদাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এত কাছে করে দেওয়া হবে যে, তার মধ্যে এবং সৃষ্টজীবের মধ্যে মাত্র এক মাইলের ব্যবধান থাকবে।” মিক্বদাদ থেকে বর্ণনাকার সুলাইম বিন আমের বলেন, আল্লাহর কসম! আমি জানিনা যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মীল’ শব্দের কী অর্থ নিয়েছেন, যমীনের দূরত্ব (মাইল), নাকি (সুরমাদানীর) শলাকা যার দ্বারা চোখে সুরমা লাগানো হয়? “সুতরাং মানুষ নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবতে থাকবে। তাদের মধ্যে কারো তার পায়ের গাঁট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত (ঘাম হবে) এবং তাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও হবে যাদেরকে ঘাম লাগাম লাগিয়ে দেবে।” (অর্থাৎ, নাক পর্যন্ত ঘামে ডুববে।) এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখের দিকে ইশারা করলেন। (মুসলিম ৭৩৮৫নং)

২১৮

সহিহ হাদিস
وَعَن سَمُرَةَ بنِ جُندُبٍ  أنَّ نَبيَّ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مِنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيهِ وَمنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ إِلَى رُكْبَتَيهِ وَمنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ إِلَى حُجزَتِهِ وَمِنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ إِلَى تَرْقُوَتِهِ رواه مسلم

সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “জাহান্নামীদের মধ্যে কিছু লোকের পায়ের গাঁট পর্যন্ত আগুন হবে, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো কারো কষ্ঠাস্থি (গলার নিচের হাড়) পর্যন্ত হবে।” (মুসলিম ৭৩৪৯নং)

২১২

সহিহ হাদিস
عَن ابنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَهُوَ الصَّادِقُ المَصدُوقُ إنَّ أحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ في بَطْنِ أُمِّهِ أربَعِينَ يَوماً نُطْفَةً ثُمَّ يَكُوْنُ عَلَقَةً مِثْلَ ذلِكَ ثُمَّ يَكُوْنُ مُضْغَةً مِثْلَ ذلِكَ ثُمَّ يُرْسَلُ المَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ وَيُؤْمَرُ بِأرْبَعِ كَلِمَاتٍ : بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ فَوَالَّذِي لاَ إلهَ غَيْرُهُ إنَّ أحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ الجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُوْنُ بَيْنَهُ وبيْنَهَا إلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيهِ الكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ النَّارِ فَيدْخُلُهَا وَإنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُوْنُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيهِ الكِتَابُ فَيعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ الجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যিনি সত্যবাদী ও যার কথা সত্য বলে মানা হয় সেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন, “তোমাদের একজনের সৃষ্টির উপাদান মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন যাবৎ বীর্যের আকারে থাকে। অতঃপর তা অনুরূপভাবে চল্লিশদিনে জমাটবদ্ধ রক্তপিন্ডের রূপ নেয়। পুনরায় তদ্রুপ চল্লিশ দিনে গোশ্‌তের টুকরায় রূপান্তরিত হয়। অতঃপর তার নিকট ফিরিশ্‌তা পাঠানো হয়। সুতরাং তার মাঝে ‘রূহ’ স্থাপন করা হয় এবং চারটি কথা লিখার আদেশ দেওয়া হয়; তার রুযী, মৃত্যু, আমল এবং পাপিষ্ঠ না পুণ্যবান হবে, তা লিখা হয়। সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! (জন্মের পর) তোমাদের এক ব্যক্তি জান্নাতবাসীদের মত কাজ-কর্ম করতে থাকে এবং তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থেকে যায়। এমতাবস্থায় তার (ভাগ্যের) লিখন এগিয়ে আসে এবং সে জাহান্নামীদের মত আমল করতে লাগে; ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের অন্য এক ব্যক্তি প্রথমে জাহান্নামীদের মত আমল করে এবং তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থাকে। এমতাবস্থায় তার (ভাগ্যের) লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নাতীদের মত ক্রিয়াকর্ম আরম্ভ করে পরিণতিতে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।” (বুখারী ৩২০৮, মুসলিম ৬৮৯৩নং)

২২০

সহিহ হাদিস
وَعَنْهُ قَالَ : كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إذْ سَمِعَ وَجْبَةً فَقَالَ هَلْ تَدْرُونَ مَا هَذَا ؟ قُلْنَا : اللهُ وَرَسُولُهُ أعْلَمُ قَالَ هذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ في النَّارِ مُنْذُ سَبْعينَ خَريفاً فَهُوَ يَهْوِي في النَّارِ الآنَ حَتَّى انْتَهَى إِلَى قَعْرِها فَسَمِعْتُمْ وَجْبَتَهَا رواه مسلم

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। অকস্মাৎ তিনি কোন জিনিস পড়ার আওয়াজ শুনলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “তোমরা জান এটা কি?” আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল বেশী জানেন।’ তিনি বললেন, “এটা ঐ পাথর, যেটিকে সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, এখনই তা জাহান্নামের গভীরতায় (তলায়) পৌঁছল। ফলে তারই পড়ার আওয়াজ তোমরা শুনতে পেলে।” (মুসলিম ৭৩৪৬নং)

২২৪

সহিহ হাদিস
وَعَنْ أَبيْ سَعِيدٍ الخُدرِي قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كَيْفَ أنْعَمُ وَصَاحِبُ القَرْنِ قَدِ التَقَمَ القَرْنَ وَاسْتَمَعَ الإذْنَ مَتَى يُؤمَرُ بالنَّفْخِ فَيَنْفُخُ فَكَأنَّ ذلِكَ ثَقُلَ عَلَى أصْحَابِ رسولِ الله ﷺ فَقَالَ لَهُمْ قُولُوا : حَسْبُنَا الله وَنِعْمَ الوَكِيلُ رواه الترمذي وَ قَالَ: حديث حسنٌ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “আমি কেমন ক’রে হাসিখুশি করব, অথচ শিঙ্গা ওয়ালা (ইস্রাফীল তো ফুৎকার দেওয়ার জন্য) শিঙ্গা মুখে ধরে আছেন। আর তিনি কান লাগিয়ে আছেন যে, তাকে কখন ফুৎকার দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে এবং তিনি ফুৎকার দেবেন।” অতঃপর এ কথা যেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের জন্য ভারী বোধ হল। সুতরাং তিনি তাঁদেরকে বললেন, “তোমরা বল, হাসবুনাল্লাহু অনি’মাল অকীল। অর্থাৎ, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম সাহায্যকারী।” (তিরমিযী ২৪৩১, ৩২৪৩নং)

২২১

সহিহ হাদিস
عَن عَدِي بنِ حَاتمٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَينَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إلاَّ مَا قَدَّمَ وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرى إلاَّ مَا قَدَّمَ وَيَنظُرُ بَيْنَ يَدَيهِ فَلاَ يَرَى إلاَّ النَّار تِلقَاءَ وَجْهِهِ فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَو بِشِقِّ تَمْرَةٍ متفق عليه

আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক কথা বলবেন; তার ও তাঁর মাঝে কোন অনুবাদক থাকবে না। (সেখানে) সে তার ডানদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকে তা-ই দেখতে পাবে যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছিল। এবং বামদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকেও নিজের কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর সামনে তাকবে, সুতরাং তার চেহারার সামনে জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো, যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ ক’রে হয়।” (বুখারী ৬৫৩৯, মুসলিম ২৩৯৫নং)

২২২

সহিহ হাদিস
وَعَنْ أَبيْ ذَرٍّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إنِّي أَرَى مَا لاَ تَرَوْنَ أطَّتِ السَّمَاءُ وَحُقَّ لَهَا أنْ تَئِطَّ مَا فِيهَا مَوضِعُ أرْبَعِ أصَابعَ إلاَّ وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِداً للهِ تَعَالَى وَاللهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيراً وَمَا تَلَذَّذْتُمْ بالنِّسَاءِ عَلَى الفُرُشِ وَلَخَرَجْتُمْ إِلَى الصُّعُدَاتِ تَجْأرُونَ إِلَى اللهِ تَعَالَى رواه الترمذي وَ قَالَ حديث حسن

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “অবশ্যই আমি দেখি, যা তোমরা দেখতে পাও না। আকাশ কটকট ক’রে শব্দ করছে। আর এ শব্দ তার করা সাজে। এতে চার আঙ্গুল পরিমাণ এমন জায়গা নেই, যেখানে কোন ফিরিশ্‌তা আল্লাহর জন্য সিজদায় নিজ কপাল অবনত রাখেননি। আল্লাহর কসম! তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে এবং বিছানায় তোমরা স্ত্রীদের সাথে আনন্দ উপভোগ করতে না। (বরং) তোমরা আল্লাহর আশ্রয় নেওয়ার জন্য পথে পথে বের হয়ে যেতে।” (তিরমিী ২৩১২. ইবনে মাজাহ ৪১৯০নং)

২১৯

সহিহ হাদিস
وَعَن أَنَسٍ قَالَ : خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم خُطبَةً مَا سَمِعْتُ مِثلَهَا قَطُّ فَقَالَ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ لَضحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيتُمْ كَثِيراً فَغَطَّى أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَجُوهَهُمْ وَلَهُمْ خَنِينٌ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية : بَلَغَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَن أَصْحَابِهِ شَيْءٌ فَخَطَبَ فَقَالَ عُرِضَتْ عَلَيَّ الجَنَّةُ وَالنَّارُ فَلَمْ أرَ كَاليَومِ في الخَيرِ وَالشَّرِّ وَلَوْ تَعْلَمونَ مَا أعلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيراً فَمَا أتَى عَلَى أصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَوْمٌ أَشَدُّ مِنْهُ غَطَّوْا رُؤُسَهُمْ وَلَهُمْ خَنِينٌ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদেরকে এমন ভাষণ শুনালেন যে, ওর মত (ভাষণ) কখনো শুনিনি। তিনি বললেন, “যা আমি জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে।” (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ তাঁদের চেহারা ঢেকে নিলেন এবং তাদের বিলাপের রোল আসতে লাগল। (বুখারী ৪৬২১, মুসলিম ৬২৬৮নং)
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সাহাবীদের কোন কথা পৌঁছল। অতঃপর তিনি ভাষণ দিয়ে বললেন, “আমার নিকট জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হল। ফলে আমি আজকের মত ভাল ও মন্দ (একত্রে) কোন দিনই দেখিনি। যদি তোমরা তা জানতে, যা আমি জানি, তাহলে কম হাসতে আর বেশি কাঁদতে।” সুতরাং সাহাবীদের জন্য সেদিনকার মত কঠিনতম দিন আর ছিল না। তাঁরা তাঁদের মাথা আবৃত ক’রে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

২২৩

সহিহ হাদিস
وَعَنْ أَبيْ بَرزَةَ نَضْلَةَ بنِ عُبَيدٍ الأسلَمِي قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَومَ القِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَن عُمُرِهِ فِيمَ أفنَاهُ ؟ وَعَن عِلمِهِ فِيمَ فَعَلَ فِيهِ ؟ وَعَن مَالِهِ مِنْ أيْنَ اكْتَسَبَهُ ؟ وَفيمَ أنْفَقَهُ ؟ وَعَن جِسمِهِ فِيمَ أبلاهُ ؟ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن صحيح

আবূ বারযাহ নাযলাহ ইবনে উবাইদ আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার পা দু`খfনি সরবে না। (অর্থাৎ আল্লাহর দরবার থেকে যাওয়ার তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না) যতক্ষণ না তাকে প্রশ্ন করা হবে, তার আয়ু সম্পর্কে, সে তা কিসে ক্ষয় করেছে? তার ইলম (বিদ্যা) সম্পর্কে, সে তাতে কী আমল করেছে? তার মাল সম্পর্কে, কী উপায়ে তা উপার্জন করেছে এবং তা কোন পথে ব্যয় করেছে? আর তার দেহ সম্পর্কে, কোন কাজে সে তা ক্ষয় করেছে?” (তিরমিযী ২৪১৬, সহীহ তারগীব ১২১নং)

২২৫

সহিহ হাদিস
وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ خَافَ أدْلَجَ وَمَنْ أدْلَجَ بَلَغَ المَنْزِلَ أَلاَ إنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ ألاَ إنَّ سِلْعَةَ الله الجَنَّةُ رواه الترمذي

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি গভীর রাত্রিকে ভয় করে সে যেন সন্ধ্যা রাত্রেই সফর শুরু করে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যারাত্রে চলতে লাগে সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। সাবধান! আল্লাহর পণ্য বড় আক্রা। শোনো! আল্লাহর পণ্য হল জান্নাত।” (সহীহ মিরমিযী ১৯৯৩ নং)

২২৬

সহিহ হাদিস
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ القِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلاً قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ جَمِيعاً يَنْظُرُ بَعضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ؟ قَالَ يَا عائِشَةُ الأمرُ أشَدُّ مِنْ أنْ يُهِمَّهُمْ ذلِكَ- وفي رواية الأَمْرُ أهمُّ مِنْ أنْ يَنْظُرَ بَعضُهُمْ إِلَى بَعضٍ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মানুষকে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে খালি পা, উলঙ্গ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়।” আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! পুরুষ ও মহিলারা একে অপরের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে?’ তিনি বললেন, “হে আয়েশা তাদের এরূপ ইচ্ছা করার চাইতেও কঠিন হবে তখনকার অবস্থা।” (বুখারী ৬৫২৭, মুসলিম ৭৩৭৭ নং)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তাদের একে অন্যের দিকে তাকাতাকি করা অপেক্ষা ব্যাপার আরো গুরুতর হবে।”

২২৮

সহিহ হাদিস
عَن عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ فِي هَذِهِ الْآيَةِ الَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ يَا رَسُولَ اللهِ هُوَ الَّذِي يَسْرِقُ وَيَزْنِي وَيَشْرَبُ الْخَمْرَ وَهُوَ يَخَافُ اللهَ قَالَ لَا يَا بِنْتَ أَبِي بَكْرٍ يَا بِنْتَ الصِّدِّيقِ وَلَكِنَّهُ الَّذِي يُصَلِّي وَيَصُومُ وَيَتَصَدَّقُ وَهُوَ يُخَافُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহ বলেন, “যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হদয়ে।” (মু'মিনূনঃ ৬০) আয়েশা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এ (ভীত-কম্পিত) কি সেই ব্যক্তি, যে ব্যভিচার করে, চুরি করে ও মদ পান করে?’ উত্তরে তিনি বললেন, “না, হে সিদ্দীকের বেটি। সে হল সেই ব্যক্তি, যে রোযা রাখে, দান করে ও নামায পড়ে, কিন্তু ভয় করে যে, তা হয়তো কবুল হবে না।” (আহমদ ২৫২৬৩, তিরমিযী ৩১৭৫, ইবনে মাজাহ ৪১৯৮, হাকেম ৩৪৮৬নং)

২২৭

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَن النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ أَسْرَفَ رَجُلٌ عَلَى نَفْسِهِ فَلَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ أَوْصَى بَنِيهِ فَقَالَ إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَحْرِقُونِى ثُمَّ اسْحَقُونِى ثُمَّ اذْرُونِى فِى الرِّيحِ فِى الْبَحْرِ فَوَاللهِ لَئِنْ قَدَرَ عَلَىَّ رَبِّى لَيُعَذِّبُنِى عَذَابًا مَا عَذَّبَهُ بِهِ أَحَدًا قَالَ فَفَعَلُوا ذَلِكَ بِهِ فَقَالَ لِلأَرْضِ أَدِّى مَا أَخَذْتِ فَإِذَا هُوَ قَائِمٌ فَقَالَ لَهُ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ فَقَالَ خَشْيَتُكَ يَا رَبِّ أَوْ قَالَ - مَخَافَتُكَ فَغَفَرَ لَهُ بِذَلِكَ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “এক ব্যক্তি ছিল, যে নিজের প্রতি বড় অন্যায় (পাপ) করত। অতঃপর যখন তার মৃত্যুকাল উপস্থিত হল, তখন সে তার ছেলেদেরকে বলল, ‘আমি মারা গেলে আমাকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলো। তারপর আমার বাকি দেহাংশ পিষে বাতাসে ছড়িয়ে দিও। কেননা, আল্লাহর কসম! যদি তিনি আমাকে উপস্থিত করতে সমর্থ হন, তাহলে আমাকে এমন আযাব দেবেন যেমন আযাব তিনি আর কাউকেই দেবেন না!’ সুতরাং সে মারা গেলে তাই করা হল। আল্লাহ পৃথিবীকে আদেশ করে বললেন, ‘তোমার মাঝে (ওর যে দেহাণু আছে) তা জমা কর।’ পৃথিবী তাই করল। ফলে লোকটি (আল্লাহর সামনে) খাড়া হয়ে গেল। আল্লাহ বললেন, ‘তুমি যা করেছ তা করতে তোমাকে কে উদ্বুদ্ধ করল?’ লোকটি বলল, ‘তোমার ভয়, হে আমার প্রতিপালক!’ ফলে তাকে মাফ করে দেওয়া হল।” (বুখারী ৩৪৮১, মুসলিম ২৫৬৫নং)
/ পরিচ্ছেদঃ মুরাক্বাবাহ (আল্লাহর ধ্যান)

আল্লাহ তাআলা বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দন্ডায়মান হও (নামাযে) এবং তোমাকে দেখেন সিজদাকারীদের সাথে উঠতে-বসতে। (সূরা শুআরা ২১৮-২১৯ আয়াত) তিনি অনত্র বলেন (আরবী) অর্থাৎ, তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন। (সূরা হাদীদ ৪ আয়াত) তিনি আরো বলেন, (আরবী) অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দুলোক-ভূলোকের কোন কিছুই গোপন নেই। (সূরা আলে ইমরান ৫ আয়াত) তিনি আরো বলেন (আরবী) অর্থাৎ, নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সময়ের প্রতীক্ষায় থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। (সূরা ফাজর ১৪ আয়াত) তাঁর অমোঘ বাণী, (আরবী) অর্থাৎ চক্ষুর চোরা চাহনি ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন ১৯ আয়াত) এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। উক্ত মৰ্মবোধক হাদীসসমূহঃ

২৩০

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ ذَرٍّ جُنْدُبِ بنِ جُنادَةَ وأبي عَبدِ الرحمانِ مُعاذِ بنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا عَن رَّسُولِ الله ﷺ قَالَ اتَّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبعِ السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن

আবূ যার জুন্দুব বিন জুনাদাহ (রাঃ) ও মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর।” (তিরমিযী ১৯৮৭নং)

২৩২

সহিহ হাদিস
عَن أَنَسٍ قَالَ : إِنَّكُمْ لَتَعمَلُونَ أَعْمَالًا هِيَ أدَقُّ في أَعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعْرِ كُنَّا نَعُدُّهَا عَلَى عَهْدِ رَسُول الله ﷺ مِنَ المُوْبِقَاتِ رواه البخاري

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আনাস (রাঃ) (তাঁর যুগের লোকদেরকে সম্বোধন ক’রে) বলেছেন যে, ‘তোমরা বহু এমন (পাপ) কাজ করছ, সেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও সূক্ষ্ম (নগণ্য)। কিন্তু আমরা সেগুলোকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে বিনাশকারী মহাপাপ বলে গণ্য করতাম।’ (বুখারী ৬৪৯২নং)

২৩৩

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ إنَّ الله تَعَالَى يَغَارُ وَغَيرَةُ الله تَعَالَى أنْ يَأتِيَ المَرْءُ مَا حَرَّمَ الله عَلَيهِ متفق عَلَيهِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঈর্ষান্বিত হন। আর আল্লাহ ঈর্ষান্বিত হন তখন, যখন কোন মানুষ এমন কাজ ক’রে ফেলে, যা তিনি তার উপর হারাম করেছেন।” (বুখারী ৫২২৩, মুসলিম ৭১৭১নং)

২৩৫

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مِنْ حُسْنِ إسْلامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعَنيهِ حديث حسن

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য (অর্থাৎ তার উত্তম মুসলমান হওয়ার একটি চিহ্ন) হল অনর্থক (কথা ও কাজ) বর্জন করা।” (আহমদ ১৭৩৭, তিরমিযী ২৩১৮, ত্বাবারানী, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৪৯৮৭নং)

২৩১

সহিহ হাদিস
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : كُنتُ خَلفَ النَّبيّ ﷺ يَوماً فَقَالَ يَا غُلامُ إنِّي أعلّمُكَ كَلِمَاتٍ : احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَألْتَ فَاسأَلِ الله وإِذَا اسْتَعَنتَ فَاسْتَعَن باللهِ وَاعْلَمْ : أنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إلاَّ بِشَيءٍ قَدْ كَتَبهُ اللهُ لَكَ وَإِن اجتَمَعُوا عَلَى أنْ يَضُرُّوكَ بِشَيءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إلاَّ بِشَيءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحفُ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن صحيح وفي رواية غيرِ الترمذي احْفَظِ الله تَجِدْهُ أَمَامَكَ تَعرَّفْ إِلَى اللهِ في الرَّخَاءِ يَعْرِفكَ في الشِّدَّةِ وَاعْلَمْ : أنَّ مَا أَخْطَأكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبكَ وَمَا أصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ وَاعْلَمْ : أنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ وَأَنَّ الفَرَجَ مَعَ الكَرْبِ وَأَنَّ مَعَ العُسْرِ يُسْراً

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি একদা (সওয়ারীর উপর) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে (বসে) ছিলাম। তিনি বললেন, “ওহে কিশোর! আমি তোমাকে কয়েকটি (গুরুত্বপূর্ণ কথা শিক্ষা দেব (তুমি সেগুলো স্মরণ রেখে)। তুমি আল্লাহর (বিধানসমূহের) রক্ষণাবেক্ষণ কর (তাহলে) আল্লাহও তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। তুমি আল্লাহর (অধিকারসমূহ) স্মরণ রাখো, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন তুমি সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। আর এ কথা জেনে রাখ যে, যদি সমগ্র উন্মত তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ (ভাগ্যলিপি) শুকিয়ে গেছে।” (তিরমিযী ২৫১৬নং)
তিরমিযী ব্যতীত অন্যদের বর্ণনায় আছে যে, “আল্লাহর (অধিকারসমূহের) খিয়াল রাখ তাহলে তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। সুখের সময় আল্লাহকে চেনো, তবে তিনি দুঃখ ও কষ্টের সময় তোমাকে চিনবেন। আর জেনে রাখ যে, তোমার ব্যাপারে যা ভুলে যাওয়া হয়েছে (অর্থাৎ যে সুখ-দুঃখ তোমার ভাগ্যে নেই), তা তোমার নিকট পৌঁছবে না। আর যা তোমার নিকট পৌঁছবে, তাতে ভুল হবে না। আর জেনে রাখ যে, বিজয় বা সাহায্য আছে ধৈর্যের সাথে, মুক্তির উপায় আছে কষ্টের সাথে এবং কঠিনের সঙ্গে সহজ জড়িত আছে।” (আহমাদ ২৮০৩, ত্বাবারানী ১১২৪৩, হাকেম ৬৩০৪নং)

২২৯

সহিহ হাদিস
عَن عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ قَالَ : بَيْنَما نَحْنُ جُلُوسٌ عَندَ رَسُول الله ﷺ ذَاتَ يَومٍ إذْ طَلَعَ عَلَينا رَجُلٌ شَديدُ بَياضِ الثِّيابِ شَديدُ سَوَادِ الشَّعْرِ لا يُرَى عَلَيهِ أثَرُ السَّفَرِ وَلا يَعْرِفُهُ مِنَّا أحَدٌ حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبيّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيهِ إِلَى رُكْبتَيهِ وَوَضعَ كَفَّيهِ عَلَى فَخِذَيهِ وَقالَ : يَا مُحَمَّدُ أخْبرني عَن الإسلامِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الإسلامُ : أنْ تَشْهدَ أنْ لا إلهَ إلاَّ الله وأنَّ مُحمَّداً رسولُ الله وتُقيمَ الصَّلاةَ وَتُؤتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ البَيتَ إن اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبيلاً قَالَ : صَدَقْتَ فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقهُ قَالَ : فَأَخْبرنِي عَن الإِيمَانِ قَالَ أنْ تُؤمِنَ باللهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبهِ وَرُسُلِهِ وَاليَوْمِ الآخِر وتُؤْمِنَ بالقَدَرِ خَيرِهِ وَشَرِّهِ قَالَ : صَدقت قَالَ : فأَخْبرني عَن الإحْسَانِ قَالَ أنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأنَّكَ تَرَاهُ فإنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فإنَّهُ يَرَاكَ قَالَ : فَأَخْبِرني عَن السَّاعَةِ قَالَ مَا المَسْؤُولُ عَنهَا بأعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ قَالَ : فأخبِرني عَن أمَاراتِهَا قَالَ أنْ تَلِدَ الأَمَةُ رَبَّتَهَا وأنْ تَرَى الحُفَاةَ العُرَاةَ العَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ في البُنْيَانِ ثُمَّ انْطَلقَ فَلَبِثْتُ مَلِيّاً ثُمَّ قَالَ يَا عُمَرُ أَتَدْري مَنِ السَّائِلُ ؟ قُلْتُ : اللهُ ورسُولُهُ أعْلَمُ قَالَ فإنَّهُ جِبْريلُ أَتَاكُمْ يعْلِّمُكُمْ أمْرَ دِينكُمْ رواه مسلم

উমর ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে বসে ছিলাম। হঠাৎ একটি লোক আমাদের কাছে এল। তার পরনে ধবধবে সাদা কাপড় এবং তার চুল কুচকুচে কাল ছিল। (বাহ্যতঃ) সফরের কোন চিহ্ন তার উপর দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনছিল না। শেষ পর্যন্ত সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বসল; তার দুই হাঁটু তাঁর (নবীর) হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে দিল এবং তার হাতের দুই করতলকে নিজ জানুর উপরে রেখে বলল, ‘হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।’ সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ইসলাম হল এই যে, তুমি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই, আর মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের রোযা রাখবে এবং কা'বা ঘরের হজ করবে; যদি সেখানে যাবার সঙ্গতি রাখ৷” সে বলল, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন।’ আমরা তার কথায় আশ্চর্য হলাম যে, সে জিজ্ঞাসাও করছে এবং ঠিক বলে সমর্থনও করছে! সে (আবার) বলল, ‘আপনি আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।’ তিনি বললেন, “তুমি আল্লাহর প্রতি তাঁর ফিরিশ্‌তাগণ, তার কিতাবসমূহ, তাঁর রসূলসমূহ, পরকাল এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখবে।” সে বলল, ‘আপনি যথার্থ বলেছেন।’ সে (তৃতীয়) প্রশ্ন করল যে, ‘আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন!’ তিনি বললেন, “ইহসান হল এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে; যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে তিনি কিন্তু তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।” সে (পুনরায়) বলল, ‘আপনি আমাকে কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলুন (সেদিন কবে সংঘটিত হবে?)’ তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত (ব্যক্তি) জিজ্ঞাসকের চেয়ে বেশী অবহিত নয়। (অর্থাৎ কিয়ামতের নির্দিষ্ট দিন আমাদের দু’জনেরই অজানা)।” সে বলল, ‘(তাহলে) আপনি ওর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে আমাকে বলে দিন।’ তিনি বললেন, “(ওর কিছু নিদর্শন হল এই যে,) কৃতদাসী তার মনিবকে প্রসব করবে (অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী এত বেশী হবে যে, যুদ্ধ বন্দিনী ক্রীতদাসী তার মনিবের কন্যা প্রসব করবে)। আর তুমি নগ্নপদ, বস্ত্রহীন ও দরিদ্র ছাগলের রাখালদেরকে অট্টালিকা নির্মাণের কাজে পরস্পর গর্ব করতে দেখবে।” অতঃপর সে (আগন্তক প্রশ্নকারী) চলে গেল। (উমার (রাঃ) বলেন) ‘আমি অনেকক্ষণ রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে থাকলাম।’ পুনরায় তিনি বললেন “হে উমার! তুমি কি জান যে, প্রশ্নকারী কে ছিল?” আমি বললাম, “আল্লাহ ও তার রসূল বেশী জানেন।” তিনি বললেন, “ইনি জিব্রাঈল ছিলেন, তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিখানোর জন্য এসেছিলেন।” (মুসলিম ১০২, বুখারী ৫০নং)

২৩৪

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ أنَّه سَمِعَ النَّبيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يقُولُ إنَّ ثَلاثَةً مِنْ بَني إِسْرَائِيلَ : أبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى أَرَادَ اللهُ أنْ يَبْتَليَهُمْ فَبَعَثَ إِليْهمْ مَلَكاً فَأَتَى الأَبْرَصَ فَقَالَ : أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إلَيْكَ؟ قَالَ : لَوْنٌ حَسنٌ وَجِلدٌ حَسَنٌ وَيَذْهبُ عَني الَّذِي قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنهُ قَذَرُهُ وَأُعْطِيَ لَوناً حَسنَاً فَقَالَ : فَأيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليكَ؟ قَالَ : الإِبلُ - أَوْ قالَ : البَقَرُ شكَّ الرَّاوي - فَأُعطِيَ نَاقَةً عُشَرَاءَ فَقَالَ : بَاركَ الله لَكَ فِيهَا فَأَتَى الأَقْرَعَ فَقَالَ: أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إلَيْكَ؟ قَالَ: شَعْرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَني هَذَا الَّذِي قَذِرَني النَّاسُ فَمَسَحَهُ فَذَهبَ عَنهُ وأُعْطِيَ شَعراً حَسَناً قالَ : فَأَيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليْكَ ؟ قَالَ : البَقَرُ فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلاً وَقالَ : بَارَكَ الله لَكَ فِيهَا فَأَتَى الأَعْمَى فَقَالَ : أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ : أَنْ يَرُدَّ الله إِلَيَّ بَصَرِي فَأُبْصِرُ النَّاسَ فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللهُ إِلَيْهِ بَصَرهُ قَالَ: فَأَيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليْكَ ؟ قَالَ : الغَنَمُ فَأُعْطِيَ شَاةً وَالداً فَأَنْتَجَ هذَانِ وَوَلَّدَ هَذَا فَكانَ لِهذَا وَادٍ مِنَ الإِبلِ وَلِهذَا وَادٍ مِنَ البَقَرِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الغَنَمِ ثُمَّ إنَّهُ أَتَى الأَبْرَصَ في صُورَتِهِ وَهَيئَتِهِ فَقَالَ : رَجلٌ مِسْكينٌ قَدِ انقَطَعَتْ بِيَ الحِبَالُ في سَفَري فَلا بَلاغَ لِيَ اليَومَ إلاَّ باللهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذي أعْطَاكَ اللَّونَ الحَسَنَ والجِلْدَ الحَسَنَ وَالمَالَ بَعِيراً أَتَبَلَّغُ بِهِ في سَفَري فَقَالَ : الحُقُوقُ كثِيرةٌ فَقَالَ : كأنِّي اعْرِفُكَ أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ فَقِيراً فأعْطَاكَ اللهُ؟ فَقَالَ : إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا المالَ كَابِراً عَن كَابِرٍ فَقَالَ : إنْ كُنْتَ كَاذِباً فَصَيَّرَكَ الله إِلَى مَا كُنْتَ وَأَتَى الأَقْرَعَ في صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذا وَرَدَّ عَلَيهِ مِثْلَ مَا رَدَّ هَذَا فَقَالَ : إنْ كُنْتَ كَاذِباً فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتَ وَأَتَى الأَعْمَى في صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ : رَجُلٌ مِسْكينٌ وابنُ سَبيلٍ انْقَطَعتْ بِيَ الحِبَالُ في سَفَرِي فَلا بَلاَغَ لِيَ اليَومَ إلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ أَسأَلُكَ بالَّذِي رَدَّ عَلَيْكَ بَصَركَ شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا في سَفري؟ فَقَالَ : قَدْ كُنْتُ أعمَى فَرَدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِي فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ فَوَاللهِ مَا أَجْهَدُكَ اليَومَ بِشَيءٍ أخَذْتَهُ للهِ - عَزَّ وَجَلَّ فَقَالَ : أمْسِكْ مالَكَ فِإنَّمَا ابْتُلِيتُمْ فَقَدْ رضي الله عَنك وَسَخِطَ عَلَى صَاحِبَيكَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, “বানী ঈস্‌রাইলের মধ্যে তিন ব্যক্তি ছিল। একজন ধবল-কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত, দ্বিতীয়জন টেকো এবং তৃতীয়জন অন্ধ ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন। ফলে তিনি তাদের কাছে একজন ফিরিশ্‌তা পাঠালেন। ফিরিশ্‌তা (প্রথমে) ধবল-কুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম বস্তু কী?’ সে বলল, ‘সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক। আর আমার নিকট থেকে এই রোগ দূরীভূত হোক---যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার দেহে হাত ফিরালেন, যার ফলে (আল্লাহর আদেশে) তার ঘৃণিত রোগ দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর রং দেওয়া হল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম ধন কী?’ সে বলল, ‘উট অথবা গাভী।’ (এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ।) সুতরাং তাকে দশ মাসের গাভিন একটি উটনী দেওয়া হল। তারপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত (প্রাচুর্য) দান করুন।’
অতঃপর তিনি টেকোর কাছে এসে বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম জিনিস কী?’ সে বলল, ‘সুন্দর কেশ এবং এই রোগ দূরীভূত হওয়া---যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার মাথায় হাত ফিরালেন, যার ফলে তার (সেই রোগ) দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর কেশ দান করা হল (অতঃপর) তিনি বললেন, ‘তোমার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় ধন কোনটা?’ সে বলল, ‘গাভী।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন গাই দেওয়া হল এবং তিনি বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমার জন্য বরকত দান করুন।’
অতঃপর তিনি অন্ধের কাছে এলেন এবং বললেন, ‘তোমার নিকটে প্রিয়তম বস্তু কী?’ সে বলল, ‘এই যে, আল্লাহ তাআলা যেন আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন যার দ্বারা আমি লোকেদেরকে দেখতে পাই।’ সুতরাং তিনি তার চোখে হাত ফিরালেন। ফলে আল্লাহ তাকে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। ফিরিশ্‌তা বললেন, ‘তুমি কোন ধন সবচেয়ে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘ছাগল।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন ছাগল দেওয়া হল।
অতঃপর ঐ দু’জনের (কুষ্ঠরোগী ও টেকোর) পশু (উটনী ও গাভীর) পাল বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং এই অন্ধেরও ছাগলটিও বাচ্চা প্রসব করল। ফলে এর এক উপত্যকা ভর্তি উট, এর এক উপত্যকা ভর্তি গরু এবং এর এক উপত্যকা ভর্তি ছাগল হয়ে গেল।
পুনরায় ফিরিশ্‌তা (পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর পূর্বের চেহারা ও আকৃতিতে) কুষ্ঠরোগীর কাছে এলেন এবং বললেন, ‘আমি মিসকীন মানুষ, সফরে আমার সকল পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে স্বদেশে পৌঁছনোর জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার কোন উপায় নেই। সেজন্য আমি ঐ সত্তার নামে তোমার কাছে একটি উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক দান করেছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’ সে উত্তর দিল যে, ‘(আমার দায়িত্বে আগে থেকেই) বহু অধিকার ও দাবি রয়েছে।’
(এ কথা শুনে) ফিরিশ্‌তা বললেন, ‘তোমাকে আমার চেনা মনে হচ্ছে। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে না, লোকেরা তোমাকে ঘৃণা করত? তুমি কি দরিদ্র ছিলেনা, আল্লাহ তাআলা তোমাকে ধন প্রদান করেছেন?’ সে বলল, ‘এ ধনতো আমি পিতা ও পিতামহ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।’ ফিরিশ্‌তা বললেন, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’
অতঃপর তিনি তার পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে টেকোর কাছে এলেন এবং তাকেও সে কথা বললেন, যে কথা কুষ্ঠরোগীকে বলেছিলেন। আর টেকোও সেই জবাব দিল, যে জবাব কুষ্ঠরোগী দিয়েছিল। সে জন্য ফিরিশ্‌তা তাকেও বললেন যে, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’
পুনরায় তিনি তাঁর পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে অন্ধের নিকট এসে বললেন যে, ‘আমি একজন মিসকীন ও মুসাফির মানুষ, সফরের যাবতীয় পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে স্বদেশে পৌঁছনোর জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার আর কোন উপায় নেই। সুতরাং আমি তোমার নিকট সেই সত্তার নামে একটি ছাগল চাচ্ছি, যিনি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’ সে বলল, ‘নিঃসন্দেহে আমি অন্ধ ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। (আর এই ছাগলও তারই দান) অতএব তুমি ছাগলের পাল থেকে যা ইচ্ছা নাও ও যা ইচ্ছা ছেড়ে দাও। আল্লাহর কসম আজ তুমি আল্লাহ আযযা অজাল্লার জন্য যা নেবে, সে ব্যাপারে আমি তোমাকে কোন কষ্ট বা বাধা দেব না।’ এ কথা শুনে ফিরিশ্‌তা বললেন, ‘তুমি তোমার মাল তোমার কাছে রাখ। নিঃসন্দেহে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হল (যাতে তুমি কৃতকার্য হলে)। ফলে আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তোমার সঙ্গীদ্বয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন।’ (বুখারী ৩৪৬৪, মুসলিম ৭৬২০নং)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন