মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। ড. হাম্মুদাহ আবদালাতি এ প্রসঙ্গে বলেন, জরুরী পরিস্থিতিতে যাকাতের রেটের কোন সীমারেখা নেই। যে যত বেশী দান করবে সবার জন্য ততই মঙ্গলজনক। বিভিন্ন তহবিল গঠনে যে প্রচারণা চালানো হয় যাকাত তাদের সব লক্ষ্যই পুরণ করে। [. D. Hammudul Abdalati, Islam is focus.]
মহান রাববুল আলামীন, মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ (সা.) খুলাফায়ে রাশেদীনসহ সকল ইমাম ও ইসলামী চিন্তাবিদ যাকাতের ব্যাপারে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে বলা যেতে পারে যাকাত আদায় করা আমাদের জন্য অপরিহার্য করণীয় কাজ এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চালিকা শক্তি যাকাত। যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ নেই। যাকাত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চালিকা শক্তি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অর্থ ক্ষুধা-দারিদ্র, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি, হতাশা, শ্রেণী বৈষম্য, অসহনশীলতা, অনৈক্য, দুশ্চিন্তামুক্ত, পারস্পারিক সহযোগিতা সহমর্মিতা এবং কল্যাণ কামনার বুনিয়াদে সকল সামাজিক শ্রেণী বৈষম্য দূর হয়ে সাম্য মৈত্রী ভ্রাতৃত্ব কল্যাণময়তা বিরাজ করে। পরস্পর এগিয়ে আসে একে অপরের দুঃখ দুর্দশা মোচন করতে। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূর করে ভ্রাতৃত্ব ও ভারসাম্যমূলক এই সামাজিক ব্যবস্থার নাম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। যে সমাজ আমাদের কাছে স্বপ্নের সোনার হরিণ, আজকের আধুনিক ধনতান্ত্রিক বিশ্ব যে সমাজের কথা কল্পনাও করতে পারে না, সে সমাজ উপহার দিয়েছে ইসলাম এখন থেকে আরো প্রায় পনের শত বছর আগে। খুন, রাহাজানি, হত্যা-কলহ, সুদ, ক্ষুধা, দারিদ্র, অন্যায়-অবিচার, অনৈতিকতা, শ্রেণী বৈষম্য, যিনা ব্যাভিচার, হত্যা ধর্ষণসহ সব অন্যায় অসামাজিক কাজ ছিল যে সমাজের অলংকার, সে শতধাবিভক্ত সমাজকে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা) স্বপ্নের সোনালী সমাজে পরিণত করেছিলেন ইসলাম নামক শান্তির নির্ঝরণীয় মাধ্যমে। যাকাত ছিল যে সমাজের সকল আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রূপকার। নিম্নে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যাকাতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার বিবরণ বর্ণনা করার প্রচেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ।
১. দুশ্চিন্তামুক্ত সমাজ গঠন: এ কথা আজ অবিসংবাদিত সত্য যে, যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতি সম্পূর্ণরুপে দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারে। একটি সুখী, সুন্দর ও উন্নত সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিত্তশালী মুসলিমদের অবশ্যই তাদের সম্পদের একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থদের দুর্দশা মোচনের জন্য ব্যয় করতে হবে। এর ফলে যে শুধু অসহায় এবং দুস্থ মানবতারই কল্যাণ হবে তা নয়, সমাজে আয় বন্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য অনেকখানি হ্রাস পাবে। [. শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অর্থনীতি পুজিবাদ ও ইসলাম (ঢাকা: গ্রন্থমেলা, ২০০৩), পৃ. ১০৯।] কোন ব্যক্তির কাছে অর্থ-সম্পদ নেই; যাকাত তাকে অর্থের যোগান দেবে, মৃত্যুর পরে তার পরিবার পরিজন ও সন্তানদের লালন-পালন করবে, বেকার, অক্ষম, বিকলাঙ্গ, রুগ্ন ও বিধবাদের সম্মানজনক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দেবে। এর সহজ সরল সমীকরণ এ যে, আজ এক ব্যক্তি বিত্তবান আছে বিধায় সে অন্যদেরকে সাহায্য করবে। কারণ কাল সে যদি অভাবী হড়ে পড়ে, তখন অন্যরা তাকে সহযোগিতা করবে। মারা গেলে স্ত্রী, সন্তান, সন্ততির অবস্থা কি হবে সে চিন্তারও কোন দরকার নেই। কারণ তার দায়িত্বও যাকাত ব্যবস্থার সফরে টাকা শেষ হয়ে গেলে কি হবে? এ চিন্তা থেকেও মুক্তি দেবে যাকাত। এক্ষেত্রে সমাজের একজন সদস্যের দায়িত্ব হলো সে তার সম্পদের অতিরিক্ত অংশ হতে একট নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত ফান্ডে দিয়ে রাখবে যাতে এ অর্থ তার দুঃসময়ে রক্ষা করতে পারে। এভাবে যদি কোন ব্যক্তির জীবনে অর্থ চিন্তা না থাকে, ক্ষুধার চিন্তা না থাকে, তার স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতির দারিদ্রের ভয় না থাকে, তাহলে সম্পূর্ণরূপে হতাশামুক্ত সমাজ গঠিত হবে। আর যে সমাজে অর্থ চিন্তা থাকে না, সে সমাজে চুরি, ডাকাতি, হত্যা, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি, আত্মসাৎ, জবরদখল, সুদ-ঘুষসহ সব অনৈতিক কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
২. যাকাত ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণে আর্থ-সামাজিক সেতুবন্ধন: প্রকৃতপক্ষে যাকাত ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দুর করে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ইসলামী নৈতিকতা ও অর্থনৈতিক বিধান মেনে চললে সমাজে কখনও ধনী দরিদ্রের আকাশ চুম্বি পার্থক্য সৃষ্টি হতে পারে না। বর্তমানে শ্রেণী বিভক্ত, বৈষম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার কারণে এক শ্রেণীর লোক সব সময় অবহেলিত। একমাত্র যাকাত ব্যবস্থাই পারে শ্রেণীহিন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। প্রকৃতপক্ষে যাকাত, সাদকা দান উপঢৌকন, আপ্যায়ন, খাদ্য বিতরন, সালাম বিনিময় এ সকলের মাধ্যমে সম্প্রীতি, ঐক্যবোধ পারস্পারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এবং কল্যাণ কামনার বুনিয়াদের সকল বৈষম্য দুর হয়ে সাম্য মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বভিত্তিক কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই ইসলামে সামাজিক বৈষম্য দুর করে সাম্য মৈত্রীর সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাকাত বিধান এক বিষ্ময়কার ব্যবস্থার নাম। [. মাওলানা আবুল কাসেম মুহাম্মদ ছিফাতুল্লাহ, ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং।]
৩. যাকাত ব্যবস্থায় ধনীদের সম্পদে দরিদ্রের অধিকার: যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনীদের সম্পদে গরীবদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ দারিদ্রমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন। যাকাত দুস্থ দারিদ্রের প্রতি ধনীদের দয়া বা অনুকম্পা নয় বরং অধিকার। [. জয়নুল আবেদীন মজুমদার, হযরত ওমর (রা) শাসনমলে অর্থ ব্যবস্থা।] এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,
এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্থ ও বঞ্চিতদের হক। [. আল কুরআন, সূরা আয -যারিয়াত: ১৯।] অন্যত্র বলা হয়েছে ধনীদের যা প্রদান করতে বলা হয়েছে তা বদান্যতা নয়, বরং গরীবদের অধিকার حق অধিকার হিসেবেই তা গরীবদের নিকট ফেরত আসা উচিত। বস্ত্তত গরীবরাই তাদের শ্রম দ্বারা জাতীয় সম্পদ সৃষ্টি করে। [. জয়নুল আবেদীন মজুমদার, হযরত ওমর (রা) শাসনমলে অর্থ ব্যবস্থা।]
৪. অভাব, দুর্দশা, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ গঠনে যাকাত: যাকাতের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দারিদ্র বিমোচন, যা সামাজিক নিরাপত্তার মূল চালিকা শক্তি। যাকাত বন্টনের ৮টি খাতের মধ্যে ৪টি খাতই (ফকির, মিসকিন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্থ) সর্বহারা, অসহায়, অভাবগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য নিবেদিত। এছাড়া নও মুসলিমের খাতটাও বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে এর মধ্যে আসতে পারে।
ওমর (রা.) মিসকিনের খাতটিকেও সম্প্রসারিত করে বেকার বা কর্ম-সংস্থানহীনদেরকেও এর অন্তর্ভুক্ত করেন। অথচ এর ১২০০ বছর পরে উইলিয়াম বেভারিজ এটাকে কল্যাণ নীতির অন্তর্ভুক্ত করেন। এছাড়া অষ্টম খাতটিও সামাজিক অভাবে পতিতদের জন্য। এর দ্বারা বুঝা যায় দারিদ্র দূর করাই যাকাতের মূল লক্ষ্য। [. আবুল কাশেম ভুঁইয়া, সামাজিক নিরাপত্তায় যাকাত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৬।] শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহ) এর কথায় শুনা যায় তারই প্রতিধ্বনি। তিনি বলেন, Zakat has been ordained to serve two purposes; self discipline and provision against social destitution. [. Mirza Mohammad Hussain, Islam and Socialism.] অর্থাৎ যাকাত দুটি লক্ষ্যে নিবেদিত আত্মশৃঙ্খলা অর্জন ও সামাজিক দারিদ্র নিরসন।
বিংশ শতাব্দির বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী ড. হাম্মুদাহ আব্দালাতি বলেন, Zakat mitigates to a minimum the suffering of the ready and poor members of society. It is a most comforting conslation to the less fortunate people. Yet it is a loud appeal to everybody to rool up his sulves and improve his lot. [. D. Hammudul Abdalati, Islam is focus.]
যাকাত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুঃখ কষ্ট নিবারণ করে। এটি অভাবীদের জন্য স্বস্তি ও ভাগ্যোন্নয়নের শ্রেষ্ঠ উপায়। দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থ, মানুষের সমাধানে যাকাতই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। যাকাত অভাবগ্রস্থকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে যাতে সে আর অবভাগ্রস্থ না থাকে। কোন কোন ফকীহ মত প্রকাশ করেছেন যে, যাকাত গ্রহীতাকে এক বছরের প্রয়োজন পুরণ করে দিতে হবে। কেউ কেউ আবার সারা জীবনের প্রয়োজন পুরণ করে দেওয়ার কথাও বলেছেন। উমার (রা) বলেছেন যখন দিবেই তখন স্বচ্ছল বানিয়ে দাও। [. আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী, ইসলামের যাকাত বিধান, ২য় খন্ড।]
দারিদ্র মানুষের পয়লা নম্বরের দুশমন। যে কোন সমাজ ও দেশের জন্য এটা জটিল ও তীব্র সমস্যা। সমাজের হতাশা ও বঞ্চনার অনুভুতির সৃষ্টি হয় দারিদ্রের মাধ্যমে। পরিণামে দেখা দেয় মারাত্মক সামাজিক সংঘাত। এ সমস্যা সমাধানের জন্য যাকাত ইসলামের অন্যতম মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে ইসলামের সোনালী যুগ থেকে। [. শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইসলামী অর্থনীতি নির্বাচিত প্রবন্ধ।]
মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমরা দরিদ্র লোকের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করো। তাদের প্রতি সাধ্যমত অনুগ্রহ ও উপকার করো। আখিরাতের পথে তারা তোমাদের জন্য সংগৃহীত ধন এবং প্রধান সম্বল। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাববুল আলামিন দরিদ্রের প্রতি আদেশ করবেন যে, পৃথিবীতে যারা তোমাদের এক লোকমা অন্ন এবং এক ঢোক পানি দান করেছে, এক প্রস্থ বস্ত্র দান করেছে আজ তোমরা তাদের হাত ধরে জান্নাতে চলে যাও। [. ইমাম গাজ্জালী(রা). কিমিয়ায়ে সাআদাত।] ওমর (রা) বলেছেন, আমার রাজ্যে ফোরাত নদীর তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায় তাহলে তার জন্য আমি উমরকে আল্লাহর কাছে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িযে জবাবদিহি করতে হবে।
৫. যাকাত সম্পদ পবিত্র করে সামাজিক সম্প্রীতি স্থাপন করে:
মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যে যাকাত দেয় তা তার নিজের জন্য পবিত্রকারী। [. আল্লামা ইউসুফ আলী কারযাভী, ইসলামের যাকাত বিধান, ২য় খন্ড।] এ কাজটিকে যাকাত বলার কারণ হলো এভাবে যাকাতদাতার অর্থসম্পদ এবং তার নিজের আত্মা পবিত্র ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া অর্থ সম্পদ থেকে আল্লাহর বান্দাদের অধিকার বের করে দেয় না, তার অন্তরে বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা নেই। সে সাথে তার আত্মা থেকে যায় অপবিত্র। কেননা আল্লাহ যে তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এ জন্য তার অন্তরে বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা নেই। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের আসছে
‘তাদের সম্পদ হতে যাকাত (সাদাকা) গ্রহণ করবে, যা দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে।’ [. আল কুরআন, সূরা আত তাওবা: ১০৩।]
যাকাত ধনী ব্যক্তিদের সম্পদকে পবিত্র করে। যে পরিমাণ অর্থ সম্পদ যাকাত হিসেবে ধনীদের উপর ফরয হয় তাতে দাতার কোন নৈতিক ও আইনগত অধিকার থাকে না। এ অর্থ সম্পদ গ্রহীতার অধিকার হিসেবেই চি হ্নিত হয়। দাতা যাকাত দিতে ব্যর্থ হলে তার অর্থ এ দাঁড়ায় যে তিনি অন্যের সম্পদ বেআইনী ভোগ দখল করছেন। এ বেআইনী সম্পদকে ভোগ দখল করার কারণে তার সব সম্পদ অপবিত্র হয়ে যায়। যাকাত কেবল দাতার সম্পদকে পবিত্র করে না বরং তার হৃদয়কে সুনির্মল ও প্রসারিত করে। তার মন-মানস আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা চেতনামূলক হয়ে সমাজ কেন্দ্রিক সঞ্জিবিত হয়। সাথে সাথে সম্পদ লিপ্সা ও স্বার্থপরতা ইত্যাদি দূর হয়। যাকাত প্রাপ্তির ফলে গ্রহীতার মন থেকে ধনীদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, শত্রুতা ও ঘৃণার মানসিকতা দূর হয়ে যায়। [. আবুল কাশেম ভুঁইয়া, সামাজিক নিরাপত্তায় যাকাত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৬।] যার কারণে সমাজের সর্বস্তরে সম্প্রীতি বিরাজ করে সহমর্মিতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৬. যাকাত মজুদদারী বন্ধ করে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করে:
যাকাত অর্থ সম্পদ দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে বন্টন করার মাধ্যমে শুধু সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না বরং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে বাজারে কার্যকর চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। [. শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইসলামী অর্থনীতি নির্বাচিত প্রবন্ধ।] গতিশীল হয় অর্থনীতি। আমরা যে সমাজে বসবাস করি তার কল্যাণ ও উন্নতির সাথেই আমাদের কল্যাণ ও উন্নতি জড়িত। এ কথা সত্য যে, আপনি যদি আপনার অর্থ সম্পদ হতে আপনার অপরাপর ভাইদের সাহায্য করেন তবে তা আবর্তিত হয়ে বহু কল্যাণ সাথে নিয়ে আপনার কাছেই ফিরে আসবে। কিন্তু, যদি সংকীর্ন দৃষ্টির বশবর্তী হয়ে তা নিজের কাছেই জমা করে রাখেন কিংবা কেবল নিজের ব্যক্তি স্বার্থে ব্যয় করেন তবে শেষ পর্যন্ত তা ক্ষয়প্রাপ্ত হতে বাধ্য।
আবার মজুদদারিকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার অর্থ সম্পদ চল্লিশ দিনের বেশী জমা রাখবে সে জাহান্নামী। [. সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩০৮, তিরমিযী, ২৩৯২ নং হাদীস।] মজুদদারীর কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয় এবং দ্রব্য মূল্য হুহু করে বেড়ে যায়। ইসলাম মজুদ সম্পদের ওপর যাকাত ধার্য করার কারণে অর্থ সম্পদ মজুদ করাকে নিরুৎসাহিত করেছে।
৭. যাকাত ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়
প্রাকৃতিক দুর্বিপাক, দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে কোন ব্যক্তি যদি তার অর্থ সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়, ঋণগ্রস্থ হয়ে যায় তাহলে যাকাত তার ঋণ পরিশোধ করবে, তার হারানো ব্যবসা বা অর্থ সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ সহযোগিতা করবে। এখানে বলা দরকার যে তারা এমন ঋণগ্রস্থ যে, নিজের অর্থ সম্পদ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে আর নিসাব পরিমাণ অর্থ নিজের কাছে থাকে না। এমন ব্যক্তি উপার্জনশীল হোক, ফকীর বলে পরিচিত হোক কিংবা ধনী হোক সর্বাবস্থায় তাকে যাকাত থেকে সাহায্য করা যেতে পারে। [. প্রাগুক্ত।]
এ ব্যবস্থার কারণ হলো ইসলাম কখনও কোন ব্যক্তির ওপর যুলুম করে না। ব্যক্তি যখন ধনী ছিল তখন তার অর্থ থেকে রাষ্ট্র উপকৃত হয়েছে আর সে যখন দরিদ্র হয়ে গেছে তখন তাকে ইসলাম ফেলে দেবে? কখনো নয় বরং তার হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য যাকাত তার দয়ার ভান্ডারকে উন্মুক্ত করে দেবে।
যাকাত আদায়ের আটটি খাতের মধ্যে ঋণমুক্তি তাইতো একটি অন্যতম খাত। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন:
‘সাদকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণভারাক্রান্তদের আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। [. আল কুরআন, সূরা আত তাওবা: ৬০।]
৮. অমুসলিমদের ব্যাপারে যাকাতের নীতি
অমুসলিমদের যাকাতের অর্থ লাভ করতে পারবে কিনা, এ ব্যাপারে আইম্মায়ে কিরামগণ বলেছেন, তা হলো যাকাতের অর্থ অমুসলিমদের দেওয়া যাবে না। কারণ হাদীসে বলা হয়েছে .... যাকাত তোমাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করা হবে এবং তোমাদের গরীবদের মাঝে বণ্টন করা হবে। [. মুহাম্মদ ইসমাঈল বুখারী, সহীহ বুখারী, যাকাত অধ্যায়(দেওবন্দ: মাকাতাবাহ শিরকায়ে মুখতাব, প্রকাশ ১৯৯৫খ্রী), পৃ. ১৮৭।]
এ ব্যাপারে বক্তব্য হলো যাকাত নয় বরং বাইতুলমাল হতে অমুসলিমদের সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। হযরত ওমর (রা.) এক ইয়াহুদীকে ভিক্ষা করতে দেখে বাইতুলমাল হতে তার ভাতার ব্যবস্থা করে দেন।
ইমাম আবু ইউসুফ (রহ) তার কিতাবুল খারাজ এর মধ্যে লিখেছেন, হযরত ওমর ফারুক (রা.)এর শাসনামলে ইরাকের হিরাবাসী খ্রিষ্টানদের সাথে যে চুক্তি হয় তাতে লিখিত ছিল যে বৃদ্ধ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে কিংবা কোন বিপদে পড়েছে কিংবা পূর্বে ধনী ও স্বচ্ছল ছিল এখন দরিদ্র হয়ে পড়েছে আর সমাজের লোকেরা তাকে ভিক্ষা দিতে শুরু করেছে এরূপ ব্যক্তি যতদিন ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক থাকবে ততদিন তার ধার্য জিযিয়া প্রত্যাহার হবে এবং মুসলিমদের বায়তুলমাল হতে তার ও তার পরিবারের জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে। [. মাওলানা আব্দুর রহীম, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও বীমা। ইমাম আবু ইউসুফ তার কিতাবুল খারাজ গ্রন্থ হতে উদ্ধৃত।] আসলে যাকাত কেবল মুসলিমদের হক, অমুসলিমরা যাকাত পাবে না। তবে অমুসলিমদেরকে সাধারণ দান খয়রাত অবশ্যিই দেয়া যাবে।
৯. শিক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে যাকাতের ভূমিকা
জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক অনেক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যাকাতের অর্থ দিয়ে গরীব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বই পুস্তক, খোরাক, পোশাক, শিক্ষা উপকরণসহ লিল্লাহবোর্ডিং এ উন্নততর ও গুণগত শিক্ষা প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গরীব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া যাবে।
১০. উৎপাদন বৃদ্ধিতে যাকাতের ভূমিকা
আল্লাহ প্রদত্ত ও নির্দেশিত যাকাত ব্যবস্থায় অর্থনীতিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যাকাত নিঃস্ব ব্যক্তিদের ভিক্ষার হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরিত করে। যে কোন উৎপাদন কাজে শ্রমের সাথে পুজির সংযোজন অনস্বীকার্য। মানুষ তার শ্রমের মাধ্যমে বিষ্ময়কর উন্নয়ন ঘটাতে পারে, কাজে লাগাতে পারে অসংখ্য প্রকৃতির সম্পদকে, পারে মরুভূমিকে উর্বর জমিতে পরিণত করতে। তবে এর জন্য প্রয়োজন যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার যা অর্থনীতির ভাষায় পুঁজি দ্রব্য বলা হয়ে থাকে। পুঁজির অভাবে বহু কর্মক্ষম দারিদ্র জনগোষ্ঠী বেকারত্ব জীবন যাপন করছে। যাকাতের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে এই সকল দরিদ্র জনশক্তিকে উৎপাদন কর্মকান্ডে ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। [. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুষম বণ্টনের কৌশল হিসেবে যাকাত: তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, দারিদ্র বিমোচন ইসলাম, নূরুল ইসলাম মানিক সম্পাদিত (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০০৫খ্রী), পৃ. ২২৮।]
১১. আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের আরো কতিপয় পদক্ষেপ
এদেশের তথা সারা পৃথিবীতে অসংখ্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিজ পরিবারের গলগ্রহ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার কারণে পাশ্চাত্য পরিবার প্রথা প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার কারণে বৃদ্ধ বয়সে সেখানকার নারী পুরুষেরা তাদের সন্তান সন্ততি হতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সরকারের করুনায় বেঁচে থাকে। অথচ যাকাত দিতে পারে তাদের সুন্দর স্বপ্নীল জীবনের নিরাপত্তা।
কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা অর্থের অভাবে কন্যা বিবাহ দিতে পারে না। এ সমস্ত অক্ষম পিতার কন্যার বিয়েতে যাকাত তার নিজস্ব ফান্ড থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দিয়ে দিবে।
মুসাফিরদের সাহায্য প্রদান, দরিদ্র শিশুদের পুষ্টি সাহায্য, ইয়াতীম প্রতিপালনে ব্যবস্থা গ্রহণ, শীত বস্ত্ত বিতরণ, স্বাস্থ্য সম্মত শৌচাগার, নও-মুসলিম পুর্ণবাসন, ইউনিয়ন মেডিকেল সেন্টার স্থাপন, অসহায় মায়েদের প্রসবকালীন সাহায্য প্রদান, ঋণগ্রস্থ কৃষকদের ঋণ পরিশোধে সহায়তাসহ নানামুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে যাকাত তার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী শান্তির সমাজ কায়েমে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
এছাড়া দ্বীনী শিক্ষা অর্জনে সহযোগিতা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বৃত্তি, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্হা না করা পর্যন্ত ভাতা প্রদান, দুস্থ পরিবারের জন্য গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু কিনতে সাহায্য দান, গৃহহীনদের গৃহ তৈরী করে দেওয়া, অসহায় গরীব মানুষের গৃহস্থালী আসবাবপত্র ক্রয় করতে সহযোগিতা করাসহ সব প্রকার উন্নয়ন কর্মসূচীতে যাকাতের সরব উপস্থিতিই সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ, জাতি,ডিজিটাল সমাজ গড়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে।
যাকাতের মূল উদ্দেশ্যই তো ক) গরীবের প্রয়োজন পুরণ, খ) ধনীরা তাদের কষ্টোপার্জিত সম্পদকে বিলিয়ে দেয়ার চেতনা ও গ) আল্লাহর নৈকট্য লাভ এ টার্গেট পুরণ করার নিমিত্তেই আর্থ-সামাজিক বহুবিধ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। [. আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ন(ঢাকা: জনতা পাবলিকেশন, ২য় প্রকাশ, ২০০৩ খ্রী), পৃ. ৫১৮।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/101/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।