hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের ভূমিকা

লেখকঃ মোঃ এনামুল হক

ভূমিকা
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ জীবন ব্যবস্থায় সালাতের গুরুত্ব যেমন অপরিহার্য তেমনি যাকাতের গুরুত্বও অনস্বীকার্য। যাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুখী সমৃদ্ধিশালী প্রগতিশীল কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। আল্লাহর বাণী—

﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰة﴾ [ البقرة :43]

তোমরা সালাত কায়েম কর যাকাত দাও। [. আল-কুরআনুল কারীম, সূরা বাক্বারাহ: আয়াত ৪৩,৮৩,১১০, ২৭৭; সূরা নিসা: ৭৭, ১৬২; সূরা আন নুর: ৫৬; সূরা আহযাব: ৩৩; সূরা মুজ্জামিল:২০।] উনিশ শতকে কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা হলেও মূলত বিশ শতকে পশ্চাত্যে প্রাতিষ্ঠানিক সমাজ কল্যাণ নীতির উদ্ভব ঘটে। [. Mohammad Khalid. Welfare State-A case study of Pakistan. p. 52.53.] একবিংশ শতকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলতে আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা উন্নয়নকেই বুঝায়। অধ্যাপক বেনহাম (Benham) এ কথাই বলেন। তার মতে ‘‘ যে রাষ্ট্র ব্যাপকভাবে জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাই কল্যাণ রাষ্ট্র।’’ [. Benham-Economics. p. 35] আর সামাজিক নিরপত্তা বলতে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের নূন্যতম অর্থনৈতিক প্রয়োজন পুরণের নিশ্চয়তাকেই বুঝায়। জি.ডি. এইস. কোল (G.D.H. Cole) এর মতে, ‘‘কল্যাণ রাষ্ট্র এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা যেখানে নাগরিকের একটি সাধারণ জীবন যাত্রার মানের নিশ্চয়তা থাকে।’’ [. মোঃ আবুল কাশেম ভূঁইয়া, সামাজিক নিরাপত্তায় যাকাত, (প্রবন্ধ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০০৬, পৃ. ১২৩।]

পুঁজিবাদী সমাজে সরকারীভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বিধান নেই বলেই সেখানে জনগণকে মুষ্টিমেয় ধনকুবের বা পুঁজিপতিদের কৃপার দিকে তীর্থের কাকের মত তাকিয়ে থাকতে হয়। এখানে ডলার পুজায় নিবেদিত সাইলক পুঁজিপতিরা লৌকিকতার খাতিরে কিছু দান করেন, মহানুভবতা বা সংবেদনশীলতার জন্য নয়; মেথ্য আরনল্ড শোষণ ও বৈষম্যমূলক পুঁজিবাদি সমাজ চিত্রকে তুলে ধরেন এভাবে ‘‘আমাদের অসাম্য উচ্চশ্রেণীকে বৈষয়িক করে, মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ইতর, আর নিম্ন শ্রেণীকে বর্বর করে তোলে।’’ [. Mirza Mohammad Hussain, Islam and Socialism. p. 122.] পুঁজিবাদী সমাজের শোষণ-নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি পাবার জন্য শ্রমিক, জনতা সমাজতন্ত্রের ছায়ায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু এখানেও অবস্থা তথৈবচ। সমাজতন্ত্রের আমলাতান্ত্রিক একনায়কত্বের যাতাকলে শ্রমিক জনগণ নিপীড়িত। There is a little room for even a genuine philanthropic deed when all human beings are turned into robots employed and paid by the vast sprowling fumbling leviathan of the soviets. [.প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৬২।] ‘‘সেখানে সত্যিকার জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডের সুযোগ নেই বললেই চলে। যেখানে সকল মানুষ রোবট কর্মচারীতে পরিণত হয় এবং শক্তিশালী সোভিয়েত এর এক বিরাট সংখ্যক আনাড়ীদের দ্বারা বেতন প্রদত্ত হয়।’’ সমাজতন্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে এমন- সমাজতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে সামাজিক অন্যায় অবিচারের এক অতি নিকৃষ্ট রূপ। যার দৃষ্টান্ত কোন নমরুদ, ফিরাউন ও চেংগিস খানের শাসনকালে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক বা একাধিক ব্যক্তি বসে একটি সামাজিক দর্শন রচনা করলো। তারপর সরকারের সীমাহীন এখতিয়ারের বদৌলতে এ দর্শনকে অন্যায়ভাবে একটি দেশে বসবাসকারী কোটি কোটি মানুষের ওপর বলপূর্বক চাপিয়ে দিল। মানুষের ধন-সম্পদ কেড়ে নেয়া হলো। জমি-জমা, ক্ষেত-খামার অযাচিতভাবে হস্তগত করা হলো। কল-কারখানা রাষ্ট্রয়াত্ত করা হলো। সমগ্র দেশকে এমন এক জেলখানায় পরিণত করা হলো যে সমালোচনা, বিচার প্রার্থনা, অভিযোগ, মামলা দায়ের ইত্যাদি কাজ করা এবং বিচার বিভাগীয় সুবিচারের সকল পথ বন্ধ হয়ে গেল। দেশে কোন দল থাকবে না, কোন সংগঠন থাকবে না, যেখানে থেকে মানুষ তাদের মুখ খুলতে পারে; কোন প্রেস-মিডিয়া থাকবে না যার সাহায্যে মানুষ তাদের অভিমত প্রকাশ করতে পারে; কোন বিচারালয় থাকবে না, যার দুয়ারে সুবিচারের জন্য মানুষ ধর্ণা দিতে পারে।

এখানে প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ক্রটি এই যে, তা ব্যক্তিকে সীমাতিরিক্ত স্বাধীনতা দিয়ে পরিবার, গোত্র, সমাজ ও জাতির ওপর জুলম নিষ্পেষণ করার পূর্ণ লাইসেন্স দিয়েছিল এবং সামষ্টিক কল্যাণের জন্য সমাজের কাজ করার শক্তি শিথিল করে দিয়েছিল। অপরদিকে দ্বিতীয় ব্যবস্থা তথা সমজতন্ত্রে ত্রুটি এই ছিল যে, রাষ্ট্রকে সীমাহীন ক্ষমতা দান করে ব্যক্তি, পরিবার, গোত্র ও সমাজের স্বাধীনতা প্রায় একেবারেই খতম করে দিয়েছে। তারপর ব্যক্তিবর্গ থেকে সমষ্টির কাজ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রকে এতো বেশি কর্তৃত্ব দান করে যে, ব্যক্তি ব্যক্তিসত্তার পরিবর্তে একটি মেশিনের প্রাণহীন যন্ত্রাংশের রূপ ধারণ করে। [. প্রাগুক্ত।]

পুঁজিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি যখন ব্যর্থ, তখন পুঁজিবাদের সংস্কারিতরূপ ‘‘কল্যাণরাষ্ট্রে’’ সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত আংশিক ছাড়া সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। [. মোঃ আবুল কাশেম ভূঁইয়া, সামাজিক নিরাপত্তায় যাকাত, (প্রবন্ধ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০০৬, পৃ. ১২৪।] কল্যাণ রাষ্ট্রের ইংরেজ প্রবক্তা উইলিয়াম বেভারিজ প্রদত্ত সামাজিক নিরাপত্তা পরিকল্পনার সমালোচনায় তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেন, ‘‘আমি মিথ্যা আশ্বাস এবং অবান্তর কল্পনাশ্রয়ী দর্শনের মাধ্যমে জনগণের সাথে প্রতারণা করতে চাই না।’’ [. Mohammad Khalid. Welfare State-A case study of Pakistan. p. 52.53.]

এ কথা ধ্রূব সত্য যে, পুঁজিবাদ ও কল্যাণ রাষ্ট্র একই আয়নার দুটো পিঠ। ওদিকে পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র এবং কল্যাণ রাষ্ট্র উদ্দেশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে একই বিন্দু থেকে উৎসারিত। এই তিনটি মতবাদ কেবল বৈষয়িক বা বস্তগত তথা প্রযুক্তিনির্ভর উন্নতি সমৃদ্ধি চায়, আত্মিক, নৈতিক ও মানবিক উৎকর্ষ সেখানে উপেক্ষিত। অথচ আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং মানবিক-সামাজিক মূল্যবোধের উপস্থিতি ছাড়া বস্ত্তগত উন্নতি ফলপ্রসু ও কার্যকর হয় না। [. মোঃ আবুল কাশেম ভূঁইয়া, সামাজিক নিরাপত্তায় যাকাত, (প্রবন্ধ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০০৬, পৃ. ১২৪।]

আলড়ুয়াস হ্যক্সলি তাইতো বলেন- ‘এটি এমন এক স্পষ্ট পশ্চাদগামী পৃথিবী যেখানে কেবল প্রযুক্তির সদর্প বিচরণ চলে। প্রযুক্তিগত প্রগতি ধ্রূব, কিন্তু বদান্যতার প্রসারণ ছাড়া প্রযুক্তিগত প্রগতি মূল্যহীন। বরং মূল্যহীনতার চেয়েও ক্ষতিকর।’ [. Mirza Mohammad Hussain, Islam and Socialism. p. 165]

মানুষ একাধারে আত্মিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, নৈতিক, জৈবিক ইত্যাদি উপাদানের সমন্বয়ে সমন্বিত জীব। মানব এককে আত্মা, মন, নৈতিক চেতনা, যৌন তাড়না, বৈষয়িক বা অর্থনৈতিক লোভ-লালসা, স্বার্থপরতা, পরার্থপরতা, পরশ্রীকাতরতা, সংবেদনশীলতা, সহমর্মিতা, দয়া-মায়া, স্নেহ-ভালবাসা, হিংসা-বিদ্বেষ, বিনয়-অহমিকা, আবেগ-উচ্ছাস, ক্রোধ-উত্তেজনা, রাগ-অনুরাগ ইত্যাদি বিদ্যমান। এসব উপাদানের মধ্যে আত্মারই অবস্থান শীর্ষ। আত্মার অনুপস্থিতিতে মানব অবয়ব লাশ বা পদার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়। পরিশোধিত ও উৎকর্ষিত আত্মা যথার্থ মানবিক অভিপ্রায়কে জাগ্রত করে। আর জাগ্রত মানবিক অভিপ্রায় যখন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় পরিব্যাপ্ত হবে তখনই সামাজিক কল্যাণ নিরাপত্তা সম্বলিত সুষম ও ভারসাম্যমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ জীবন দর্শন এবং এর সামাজিক রাষ্ট্রিক বলয়ে আত্মিক দিক নিবাসিত। ধর্মাশ্রয়ী জীবন দর্শনেই আত্মিক উৎকর্ষ মন্ডিত সুষম সমাজ বিন্যাস সম্ভব। [. প্রাগুক্ত, সামাজিক নিরাপত্তায় যাকাত, পৃ. ১২৫।]

আগামী ৫০ বছরের উন্নতি সমৃদ্ধি কোন ধরনের গবেষণার ওপর নির্ভরশীল প্রশ্নের উত্তরে ড. চালর্স ষ্টেইনমেজ ( Dr. Charles Stinmetz) বলেন, I think that the greatest discoveries will be made along spiritual times. Some day People will learn that material things do not bring happiness and are of little use in making men and women creative and powerful. Then the Scientist of the world will turn their laboratories over to the study of god and the spiritual forces which as yet have been hardly scratched. When that they comes, the world will see more advancement in one generation in has the last four. [. M. Raihan Sharif, Islamic Social fram work.] অর্থাৎ ‘‘আমি মনে করি, সর্বশ্রেষ্ঠ আবিস্কার হবে আধ্যাত্মিকতার পথ ধরে। একদিন মানুষ বুঝতে পারবে যে, বস্তগত জিনিস মানুষের সুখ-শান্তি আনে না এবং এগুলো নর-নারীকে সৃজনশীল ও ক্ষমতাশালী করতে খুব কমই কাজে আসে। তখন বিশ্বের বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণাগারগুলোকে আল্লাহ, প্রার্থনা ও আধ্যাত্মিক চেতনার দিকে ঘুরিয়ে নেবে যার সম্পর্কে বর্তমানে খুব কমই আলোচিত হয়। তখন বিশ্ব এক প্রজন্মে অনেক সমৃদ্ধি দেখবে যা বিগত চার প্রজন্ম দেখেনি।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক হলো দারিদ্রতা। ক্রমবর্ধমান দারিদ্রতা বর্তমান বিশ্বের উন্নয়নকারী দেশসমূহের সামনে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় দারিদ্র বিমোচন গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে স্থান পেয়েছে বহু পূর্বেই। বিভিন্ন দেশের সরকারের পরিকল্পিত প্রয়াসের ফলে দারিদ্রের প্রকটতা কিছুটা হ্রাস পেলেও এর ব্যাপকতা ও গভীরতা মারাত্মক উদ্বেগের বিষয়। সর্বোচ্ছ বিশ্ব সংস্থা (জাতিসংঘ) কর্তৃক ঘোষিত ‘Millennium development Goals’ এর অন্যতম প্রধান অঙ্গ দারিদ্র বিমোচন। [. মোঃ জাকির হোসাইন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাত ব্যবস্থা (প্রবন্ধ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, জানুয়ারী-মার্চ, ২০০৬, পৃ. ৯৮।]

এতো কিছুর পরেও দারিদ্র কমে না বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে, মাত্র কয়টা টাকার জন্য নারী তার সতীত্ব পর্যন্ত বিকিয়ে দিচ্ছে। ‘মা’ তার সন্তানকে ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে বিক্রি করে দিচ্ছে। ডাষ্টবিনের ময়লা পচা-বাসি খাবার খাওয়ার জন্য কুকুর মানুষ এক সাথে লড়াই করছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতিদিন দারিদ্রতার কারণে মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। পৃথিবীর লাখ লাখ বনী আদম তপ্ত মরুভূমিতে খাদ্যহীন, আশ্রয়হীনভাবে উদ্ধাস্ত অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, ইরাক, ভারত, সুদান, কঙ্গো তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

এতো গেল এশিয়া আর আফ্রিকার কথা। স্বপ্নের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আয়হীন পরিবার আছে, যাদের বাৎসরিক আয় ৮/১০ হাজার ডলারের বেশি নয়। ১৯৮৭ সনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গরীব লোকের সংখ্য ছিল ৩২.৫ মিলিয়ন যা সেখানকার মোট জনসংখ্যা ১৩.৫% । এর সংখ্যা আরো বেশি হবে কারণ গৃহহীন পরিবার বাদেই উক্ত পরিসংখ্যান। ১৯৯৫ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর BAAS ও USIS -এর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কিবরিয়াউল খালেক তার ‘আমেরিকায় দারিদ্র্য’ নামক প্রবন্ধ উক্ত তথ্য প্রদান করেন।

সম্প্রতি ইউএনডিপি ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট বিশ্বে প্রতিটি ১ ডলারের নীচে আয় এমন দরিদ্র লোকের সংখ্যা বলা হয়েছে ১২৫ কোটি। যার মধ্যে শুধু এশিয়াতেই ৯৫ কোটি এবং বাংলাদেশে এর পরিমাণ ৫ কোটি। [. মোহাম্মাদ মুস্তাফিজুর রহমান, দারিদ্র বিমোচন ও মানব সেবায় বিশ্বনবীর আদর্শ।]

সামাজিক ব্যাধি নামক দারিদ্রের নির্মম নিষ্ঠুর যাতনায় ক্ষুধার্ত মানুষ যে কোন অপরাধ করতে পারে। দারিদ্রপূর্ণ সমাজে মানবতাবোধ লোপ পায়। মানুষ যে কোন নিষ্ঠুর আচরণে জড়িয়ে পড়ে দারিদ্র্যের কারণে মানুষ আক্বিদা-বিশ্বাস মোটকথা ধর্মকেও বিসর্জন দিতে পারে। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বহু দেশের অসংখ্য মানুষ শুধু দারিদ্র্যের কারণে এনজিওদের প্রলোভনে পড়ে ধর্ম ত্যাগ করছে। মহানবী (সা.) এর ব্যাপারে বলেছেন ‘এটি অত্যন্ত সংগত কথা যে দারিদ্র মানুষকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। [. বায়হাকী, তিবরানী।] শুধু এ কারণে মহানবী (স.) দারিদ্রতা ও কুফরী হতে একসাথে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরী ও দারিদ্র্যতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’’ [. আস সুনান লি আবি দাউদ, সুলাইমান ইবন আশআছ।]

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘ইসলাম ধনাঢ্যতাকে আল্লাহর নি’আমাত মনে করে যার শোকর আদায় করা উচিত। আর দারিদ্রকে মনে করে মুছিবাত যা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা আবশ্যক।’’ [. ড. ইউসুফ আল কারযাভী, মুশকিলাতুল ফাকর অ-কাইফা আলাজাহাল ইসলাম।] দারিদ্র্য মানুষের সুষম চিন্তা শক্তিকে বিলুপ্ত করে দেয়। ইমাম আবু হানিফা (রহ) এ প্রসঙ্গে বলেন ‘যার বাড়িতে আটা নেই তার নিকট কোন পরামর্শ নিতে যেয়ো না। কারণ তার চিন্তা বিক্ষুব্ধ হতে বাধ্য। একবার ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর এক শিষ্য মুহাম্মদ ইবন হাসানকে তার পরিচারিকা এসে বললো যে, তার ঘরের আটা শেষ হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন ‘আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন এ খবরে আমার মাথা থেকে ৪০টি ফিকহি মাসআলা উধাও হয়ে গিয়েছে।’

আশ্চর্যের বিষয় হলো দারিদ্রের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও বিশ্বের মোট সম্পদের পরিমাণ মোট জনসংখ্যার প্রয়োজনের তুলনায় কিন্তু কম নয়, বরং অনেক বেশি। আসলে মূল সমস্যা হলো বন্টন ব্যবস্থায়। যে সমস্যার সমাধানে ইসলামের যাকাত ব্যবস্থার কার্যকারিতা ঐতিহাসিক প্রমাণিত। [. মোহাম্মাদ মুস্তাফিজুর রহমান, দারিদ্র বিমোচন ও মানব সেবায় বিশ্বনবীর আদর্শ।]

যাকাতভিত্তিক সমাজে কারো পক্ষে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার কোন সুযোগ নেই। আবার কারো পক্ষে গরীব থাকার সম্ভাবনাও নেই। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বিধান। আর ইসলামের অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অংগ হলো যাকাত। আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআনে বলেছেন

﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ﴾ [ البقرة :43]

তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও।’’ [. আল-কুরআন, সূরা আল বাকারা: ৪৩,৮৩, ১১০, ২৭৭ আয়াত।] আল্লাহ আরো বলেন-

﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم ﴾ [ التوبة :103]

তাদের সম্পদ হতে যাকাত (সাদাকা) গ্রহণ করবে, যা দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে। [. আল-কুরআন, সূরা আত-তাওবা:১০৩।] হযরত আবু বকর (রা) বলেছেন, যে যাকাত প্রদানে ছলচাতুরী করবে, তার কাছ থেকে আমি যাকাত এবং সম্পদের অর্ধেক আদায় করব।’’ [.ড. ইউসুফ আলী কারযাভী, মুশকিলাতুল ফাকর অ-কাইফ আলাজাহাল ইসলাম, আল মাওয়ারিদী: আল আহকামুল সুলতানিয়াহ।]

আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাষায় যাকাতকে আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিধান বলা যায়। বলতে দ্বিধা নেই, যখন পাশ্চাত্যে বিশ্ব শতকের মাঝামাঝি সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, তখন সাত শতকে ইসলাম সামাজিক নিরাপত্তা বিধান তথা সমাজকল্যাণ নীতির ফলপ্রসু প্রয়োগ করে যথার্থ কল্যাণ রাষ্ট্রের মডেল বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে, যখন এ পৃথিবীতে সামাজিক নিরাপত্তা পরিকল্পনার নাম নিশানাও ছিল না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে ইসলাম নির্দেশিত যাকাত ব্যবস্থা অনিবার্য ফলগুধারায় এ বাস্তবতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।

যদি বৃটেনের রাণী এলিজাবেথের আমলের ‘‘ poor law-1601”- কে সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের দৃষ্টান্ত হিসেবেও ধরা হয় তাহলে তারও ১ হাজার বছর পূর্বে আর যদি ১৮৮৩ সালে জামার্নীতে ‘বিসমার্ক’ সম্মেলনে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য গৃহীত ‘‘ Accisdesital Insurance Act” কে দৃষ্টান্ত হিসেবে নেয়া হয় তাহলে তারও ১২৫০ বছর পূর্বে ইসলাম যাকাত নামক সামাজিক নিরাপত্তা স্কীম সফলতার সাথে রাষ্ট্রে প্রবর্তন করেছে।’’ [. মোঃ আবুল কাশেম ভূঁইয়া, সামাজিক নিরাপত্তায় যাকাত, (প্রবন্ধ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০০৬, পৃ. ১২৬।] এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ খালিদ বলেন, যা হোক ৬২২ খিষ্টাব্দে কল্যাণ রাষ্ট্রের ইতিহাসে এক মাইল ফলক। এ বছর মুহাম্মাদ (স.) মদিনায় হিজরত করেন এবং সেখানে সাম্য, স্বাধীনতা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে লিখিত ইতিহাসে বিশ্বের প্রথম কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেটা ছিল এরিজাবেথিয়ান দারিদ্র আইন ১৬০১ এর অনেক আগের। [. Mohammad Khalid, Welfare state- A case study of Pakistan. p.07]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন