hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষিপ্ত হজ, উমরা ও যিয়ারত

লেখকঃ নু‘মান আবুল বাশার

২১
চতুর্থ. বাইতুল্লাহর তাওয়াফ
তাওয়াফের ফযীলত:

তাওয়াফের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীস এসেছে। যেমন,

আল্লাহ তা‘আলা তাওয়াফকারীর প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে নেকি লিখবেন এবং একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ كَتَبَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ سَيِّئَةٍ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের তওয়াফ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি নেকি লিখবেন এবং একটি গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।” [তিরমিযী, হদীস নং ৯৫৯; আল-হাকিম: ১/৪৮৯।]

তাওয়াফকারী শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَإِذَا طُفْتَ بِالْبَيْتِ خَرَجْتَ مِنْ ذُنُوبِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ

“তুমি যখন বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করলে, তখন পাপ থেকে এমনভাবে বের হয়ে গেলে যেন আজই তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছে।’ [মুসান্নাফ আবদুররায্যাক: ৫/১৬ হাদীস নং ৮৮৩০; মু‘জামুল কাবীর ১২/৪২৫; সহীহুল জামে‘, হদীস নং ১৩৬০।]

তাওয়াফকারী দাসমুক্ত করার ন্যায় সাওয়াব পায়। আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,

«مَنْ طَافَ سَبْعًا فَهُوَ كَعِدْلِ رَقَبَةٍ

“যে ব্যক্তি কাবাঘরের সাত চক্কর তাওয়াফ করবে সে একজন দাসমু্ক্ত করার সাওয়াব পাবে।’ [সুনান আন-নাসাঈ, হাদীস নং ২৯১৯। দাসমুক্ত করার সাওয়াব অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে কেউ কোন মুমিন দাস-দাসীকে মুক্ত করবে, সেটা তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে। [আবূ দাউদ, হদীস নং ৩৪৫৩] অন্য হাদীসে এসেছে, কেউ কোনো দাসমুক্ত করলে আল্লাহ দাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে তার প্রতিটি অঙ্গ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন। [তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৬১]]

ফিরিশতার পক্ষ থেকে তাওয়াফকারী ব্যক্তি নিষ্পাপ হওয়ার ঘোষণা আসে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَأَمَّا طَوَافُكَ بِالْبَيْتِ بَعْدَ ذَلِكَ فَإِنَّكَ تَطُوفُ وَلَا ذَنْبَ لَكَ، يَأْتِي مَلَكٌ حَتّى يَضَعَ يَدَهُ بَيْنَ كَتِفَيْكَ ثُمَّ يَقُولُ اعْمَلْ لِمَا تُسْتَقْبَلُ فَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا مَضى»

“আর যখন তুমি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ (তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে বিদা) করবে, তখন তুমি তো নিষ্পাপ। তোমার কাছে একজন ফিরিশতা এসে তোমার দুই কাঁধের মাঝখানে হাত রেখে বলবেন, তুমি ভবিষ্যতের জন্য (নেক) আমল কর; তোমার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।’ [সহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ১১১২।]

সঠিকভাবে তাওয়াফ করতে নিচের কথাগুলো অনুসরণ করুন

১. সকল প্রকার নাপাকি থেকে পবিত্র হয়ে অযু করুন তারপর মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে কা‘বা শরীফের দিকে এগিয়ে যান।

যদি আপনি তখনই তাওয়াফের ইচ্ছা করেন তাহলে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া ছাড়াই তাওয়াফ শুরু করতে যাবেন। কেননা, বাইতুল্লাহর তাওয়াফই আপনার জন্য তাহিয়্যাতুল মসজিদ হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যিনি সালাত বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে প্রবেশ করছেন, তিনি বসার আগেই দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ে নিবেন। যেমন, অন্য মসজিদে প্রবেশের পর পড়তে হয়। এরপর তাওয়াফের জন্য হাজরে আসওয়াদের দিকে যান। মনে রাখবেন:

উমরাকারী বা তামাত্তু হজকারীর জন্য এ তাওয়াফটি উমরার তাওয়াফ। কিরান ও ইফরাদ হজকারীর জন্য এটি তাওয়াফে কুদূম বা আগমনী তাওয়াফ।

মুহরিম ব্যক্তি অন্তরে তাওয়াফের নিয়ত করে তাওয়াফ শুরু করবে। কেননা, অন্তরই নিয়তের স্থান। উমরাকারী কিংবা তামাত্তুকারী হলে তাওয়াফ শুরু করার পূর্ব মুহূর্ত থেকে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে।

তাওয়াফের জন্য হাজরে আসওয়াদের কাছে পৌঁছার পর সেখানকার আমলগুলো নিম্নরূপে করার চেষ্টা করবেন।

ক. ভিড় না থাকলে হাজরে আসওয়াদের কাছে গিয়ে তা চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করবেন। হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের পদ্ধতি হলো, হাজরে আসওয়াদের উপর দু’হাত রাখবেন। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে আলতোভাবে চুম্বন করবেন। কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস রাখতে হবে, হাজরে আসওয়াদ উপকারও করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না। লাভ ও ক্ষতি করার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হাজরে আসওয়াদের কাছে গিয়ে তা চুমো খেয়ে বলেন,

«وَإِنِّي لأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُقَبِّلُكَ، مَا قَبَّلْتُكَ» .

“আমি নিশ্চিত জানি, তুমি কেবল একটি পাথর। তুমি ক্ষতি করতে পার না এবং উপকারও করতে পার না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যদি তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমায় চুম্বন করতাম না।” [ফাতহুল বারী: ৩/৪৬৩।]

হাজরে আসওয়াদে চুমো দেওয়ার সময় اللَّهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলবেন [সহীহ বুখারী, ৩/৪৭৬।] অথবা بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ (বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার) বলবেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এ রকম বর্ণিত আছে। [আত-তালখিসুল হাবীর: ২/২৪৭।]

খ. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা কষ্টকর হলে ডান হাত দিয়ে তা স্পর্শ করবেন এবং হাতের যে অংশ দিয়ে স্পর্শ করেছেন সে অংশ চুম্বন করবেন। নাফে রহ. বলেন, ‘আমি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কে দেখেছি, তিনি নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেন তারপর তাতে চুমো দিলেন এবং বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এভাবে করতে দেখার পর থেকে আমি কখনো তা পরিত্যাগ করি নি।’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬০৬; সহীহ মুসলিম, হদীস নং ১২৬৮।]

গ. যদি হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, লাঠি দিয়ে তা স্পর্শ করবেন এবং লাঠির যে অংশ দিয়ে স্পর্শ করেছেন সে অংশ চুম্বন করবেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে উটের পিঠে বসে তাওয়াফ করেন, তিনি বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেন।’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬০৮।]

ঘ. হজের সময়ে বর্তমানে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন ও স্পর্শ করা উভয়টাই অত্যন্ত কঠিন এবং অনেকের পক্ষেই দুঃসাধ্য। তাই এমতাবস্থায় হাজরে আসওয়াদের বরাবর এসে দূরে দাঁড়িয়ে তার দিকে মুখ ফিরিয়ে ডান হাত উঁচু করে, الله أكبر (আল্লাহু আকবার) বা بِسْمِ اللَّهِ َاللَّهُ أَكْبَر (বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার) বলে ইশারা করবেন। পূর্বে হাজরে আসওয়াদ বরাবর যমীনে একটি খয়েরি রেখা ছিল বর্তমানে তা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই হাজরে আসওয়াদ বরাবর মসজিদুল হারামের কার্নিশে থাকা সবুজ বাতি দেখে হাজরে আসওয়াদ বরাবর এসেছেন কি-না তা নির্ণয় করবেন। আর যেহেতু হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা সম্ভব হয় নি তাই হাতে চুম্বনও করবেন না। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটের পিঠে বসে তাওয়াফ করলেন। যখন তিনি রুকন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের বরাবর হলেন তখন এর দিকে ইশারা করলেন এবং তাকবীর দিলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৯৩।] অপর বর্ণনায় রয়েছে, ‘যখন তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে আসলেন তখন তাঁর হাতের বস্তুটি দিয়ে এর দিকে ইশারা করে তাকবীর দিলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৩২।] তারপর যখনই এর বরাবর হলেন অনুরূপ করলেন। সুতরাং যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, তাহলে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে তাকবীর দিবেন। হাত চুম্বন করবেন না।

ঙ. প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে যদি পাথরটিকে চুমো দেওয়া বা হাতে স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, তাহলে মানুষকে কষ্ট দিয়ে এ কাজ করতে যাবেন না। এতে খুশূ তথা বিনয়ভাব নষ্ট হয়ে যায় এবং তাওয়াফের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। এটাকে কেন্দ্র করে কখনো কখনো ঝগড়া-বিবাদ এমনকি মারামারি পর্যন্ত শুরু হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সহ বেশ কিছু সাহাবী তাওয়াফের শুরুতে বলতেন, [তাবরানী, হাদীস নং ৫৮৪৩; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ: ৩/২৪০। এ বর্ণনাটির সনদ সম্পর্কে দু’ধরণের মত পাওয়া যায়, তবে শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-উসাইমীন তা তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। দেখুন, শারহু হাদীসে জাবের।]

«اللَّهُمَّ إيمَانًا بِكَ وَتَصْدِيقًا بِكِتَابِكَ وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ»

(আল্লহুম্মা ঈমানাম বিকা ওয়া তাছদীকাম বিকিতাবিকা ওয়া ওয়াফায়াম বি‘আহদিকা ওয়াত- তিবা‘আন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন।)

“আল্লাহ, আপনার ওপর ঈমানের কারণে, আপনার কিতাবে সত্যায়ন, আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং আপনার নবী মুহাম্মদের সুন্নতের অনুসরণ করে তাওয়াফ শুরু করছি।”

সুতরাং কেউ যদি সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হওয়ার কারণে তাওয়াফের সূচনায় এই দো‘আটি পড়েন, তবে তাতে দোষ নেই।

২. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, স্পর্শ অথবা ইশারা করার পর কা‘বা শরীফ হাতের বাঁয়ে রেখে তাওয়াফ শুরু করবেন। তাওয়াফের আসল লক্ষ্য আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা এবং তাঁরই সামনে নিজকে সমর্পন করা। তাওয়াফের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণে বিনয়-নম্রতা ও হীনতা-দীনতা প্রকাশ পেত। চেহারায় ফুটে উঠত আত্মসমর্পনের আবহ। পুরুষদের জন্য এই তাওয়াফের প্রতিটি চক্করে ইযতিবা এবং প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নাত। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«اضْطَبَعَ فَاسْتَلَمَ وَكَبَّرَ ثُمَّ رَمَلَ ثَلاَثَةَ أَطْوَافٍ» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইযতিবা করলেন, হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করলেন এবং তাকবীর প্রদান করলেন। আর প্রথম তিন চক্করে রমল করলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৫১।]

ইযতিবা হলো, গায়ের চাদরের মধ্যভাগ ডান বগলের নিচে রেখে ডান কাঁধ খালি রাখা এবং চাদরের উভয় মাথা বাম কাঁধের উপর রাখা। রমল হলো, ঘনঘন পা ফেলে কাঁধ হেলিয়ে বীর-বিক্রমে দ্রুত চলা। কা‘বার কাছাকাছি স্থানে রমল করা সম্ভব না হলে দূরে থেকেই রমল করা উচিৎ।

৩. রুকনে ইয়ামানী অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের কোণের বরাবর এলে সম্ভব হলে তা ডান হাতে স্পর্শ করবেন। [রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার সময় بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ (বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর) বলা ভালো। কারণ, ইবন উমর রা থেকে এটি সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে। দ্র. বাইহাকী: ৫/৭৯; ইবন হাজর, তালখীসুল হাবীর: ২/২৪৭।] প্রতি চক্করেই এর বরাবর এসে সম্ভব হলে এরকম করবেন।

৪. হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী কেন্দ্রিক আমলসমূহ প্রত্যেক চক্করে করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করেছেন। রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন,

﴿وَمِنۡهُم مَّن يَقُولُ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١﴾ [ البقرة : ٢٠١ ]

(রববানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা ‘আযাবান নার।)

“হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।’ [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৮৯২।] সুতরাং এই দুই রুকনের মধ্যবর্তী স্থানে প্রত্যেক চক্করে উক্ত দো‘আটি পড়া সুন্নাত।

তাওয়াফের অবশিষ্ট সময়ে বেশি বেশি করে দো‘আ করবেন। আল্লাহর প্রশংসা করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত ও সালাম পড়বেন। কুরআন তিলাওয়াতও করতে পারেন। মোটকথা, যে ভাষা আপনি ভাল করে বোঝেন, আপনার মনের আকুতি যে ভাষায় সুন্দরভাবে প্রকাশ পায় সে ভাষাতেই দো‘আ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْىُ الْجِمَارِ لإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّه»

“বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার মধ্যে সা‘ঈ ও জামারায় পাথর নিক্ষেপের বিধান আল্লাহর যিক্‌র কায়েমের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৯০২, জামেউল উমূল, হাদীস নং ১৫০৫।] দো‘আ ও যিকির অনুচ্চ স্বরে হওয়া শরী‘আতসম্মত।

৫. কা‘বা ঘরের নিকট দিয়ে তাওয়াফ করা উত্তম। তা সম্ভব না হলে দূর দিয়ে তাওয়াফ করবে। কেননা, মসজিদে হারাম পুরোটাই তাওয়াফের স্থান। সাত চক্কর শেষ হলে, ডান কাঁধ ঢেকে ফেলুন, যা ইতিপূর্বে খোলা রেখেছিলেন। মনে রাখবেন, শুধু তাওয়াফে কুদূম ও উমরার তাওয়াফেই ইযতিবার বিধান রয়েছে। অন্য কোনো তাওয়াফে ইযতিবা নেই, রমলও নেই।

৬. সাত চক্কর তাওয়াফ শেষ করে মাকামে ইবরাহীমের দিকে অগ্রসর হবেন,

﴿وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ مُصَلّٗى﴾ [ البقرة : ١٢٥ ]

(ওয়াত্তাখিযূ মিম মাকামি ইবরাহীমা মুসাল্লা।)

“মাকামে ইবরাহীমকে তোমরা সালাতের স্থল বানাও।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১২৫] মাকামে ইবরাহীমকে নিজের ও বাইতুল্লাহর মাঝখানে রাখবেন। হোক না তা দূর থেকে। তারপর সালাতের নিষিদ্ধ সময় না হলে দু’ রাকাত সালাত আদায় করবেন। এ সালাতের প্রথম রাকা‘আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ‘কাফিরূন’ قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস قُلْ هُوَ الله أحدٌ পড়া সুন্নাত।

মাকামে ইবরাহীমে জায়গা না পেলে মসজিদুল হারামের যেকোনো স্থানে এমনকি এর বাইরে পড়লেও চলবে। তবুও মানুষকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। পথে-ঘাটে যেখানে- সেখানে সালাত আদায় করা যাবে না। মাকরূহ সময় হলে এ দু’রাকাত সালাত পরে আদায় করে নিন। সালাতের পর হাত উঠিয়ে দো‘আ করার বিধান নেই।

৭. সালাত শেষ করে পুনরায় হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে ডান হাতে তা স্পর্শ করুন। এটা সুন্নাত। স্পর্শ করা সম্ভব না হলে ইশারা করবেন না। হজের সময়ে এরকম করা প্রায় অসম্ভব। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«ثُمَّ رَجَعَ فَاسْتَلَمَ الرُّكْنَ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى الصَّفَا»

“অতঃপর আবার ফিরে এসে রুকন (হাজরে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন। তারপর গেলেন সাফা অভিমুখে।” [মুসনাদে আহমদ: ৩/৩৯৪; সহীহ মুসলিম, হদীস নং ১২১৮ ও ১২৬২।]

৮. এরপর যমযমের কাছে যাওয়া, তার পানি পান করা ও মাথায় ঢালা সুন্নাত। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«ثُمَّ ذَهَبَ إِلَى زَمْزَمَ فَشَرِبَ مِنْهَا، وَصَبَّ عَلَى رَأْسِهِ»

“তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযমের কাছে গেলেন। যমযমের পানি পান করলেন এবং তা মাথায় ঢেলে দিলেন”। [মুসনাদে আহমদ: ৩/৩৯৪; সহীহ মুসলিম, হদীস নং ১২১৮ ও ১২৬২।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন