HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সহজ হজ্জ ও ওমরাহ্‌ নির্দেশিকা

লেখকঃ শাইখ আখতারুল আমান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সহজ হজ্জ ও ওমরাহ্‌ নির্দেশিকা

সাথে রয়েছে:

জিল হজ্জের প্রথম দশকের করণীয়

সংকলন: মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী

ঈদুল আযহার বিধি-বিধান

সংকলন: শাইখ আখতারুল আমান

প্রচারেঃ জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব।

পোঃ বক্স নং ১৫৮০। ফোনঃ ৩৬২৫৫০০ এক্সঃ ১০১১, ১০১২, ১০১৪।

www.salafibd.wordpress.com

সহজ হজ্জ ও ওমরাহ্‌ নির্দেশিকা
হজ্জ হলো ইসলামের ৫টি রূকনের সর্বশেষ তথা পঞ্চম রূকন। ইহা একটি ইবাদত যা আত্মিক, মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ত্যাগ সমন্ময়ে গঠিত। প্রতিটি সামর্থবান ব্যক্তির উপর উহা পালন করা ফরয। কুরআনে এরশাদ হচেছঃ ওমানুষের উপর আল্লাহ্‌র অধিকার এই যে, যারা এই ঘর পর্যন্ত আসার সমর্থ রাখে তারা ইহার হজ্জ পালন করবে।হ (সূরা আল্‌ ইমরানঃ ৯৭) রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ওযে ব্যক্তি (হজ্জ ওমরা করার জন্য) এঘরে আসবে, অত:পর স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হবে না এবং পাপাচারে লিপ্ত হবে না, সে এমন (নিষ্পাপ) অবস্থায় ফিরে আসবে যেমন তার মাতা তাকে ভুমিষ্ট করেছিল।হ (মুসলিম)। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন: ওমসজিদে হারামে এক ছলাত অন্য মসজিদে এক লক্ষ ছালাতের চাইতে বেশী উত্তম।হ (আহমাদ ও ইবনু মাজাহ্‌)। এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি বিশুদ্ধভাবে আদায়ের চেষ্টা করা একান্ত ভাবে অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে কুরআন- হাদীছের নির্যাস নিম্ন লিখিত সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলি সকলের জন্য অনুসরণীয়ঃ

একনিষ্ঠতার সাথে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌কে রাজী-খুশী করার জন্য হজ্জ্ব পালন করা।

উহা পালনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের তরীকা ও পদ্ধতি অনুসরণ করা।

হালাল বা বৈধ উপার্জন থেকে হজ্জ্বব্রত পালন করা।

হজ্জ্বের বিধান সমপর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করা।

যাবতীয় শির্‌ক, বিদআত ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা।

হজ্জ ও উমরাহ্‌র কাজগুলি ধারাবাহিকভাবে নিম্নরূপঃ
ইহরামের পূর্বে শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা তথা- নাভীমূল, বগলের লোম পরিস্কার করা, নখ কাটা।

মিক্কাত থেকে ইহ্‌রাম বাঁধা। (ওয়াজিব)

মীকাতে গিয়ে ইহরামের উদ্দেশ্যে প্রথমে গোসল করা।

মাথা, দাড়ি বা শরীরে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।

সেলাই বিহীন দুটি কাপড়ে ইহ্‌রাম বাঁধা। (শুধু পূরুষদের জন্য)

কাপড় দুটি সাদা হওয়া উত্তম।

হজ্জ্ব বা উমরার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট মীকাত অতিক্রমের পূর্বে (অন্তরে) নিয়ত করে ইহ্‌রাম বাঁধা। (রুকন)

তামাত্তু হজ্জ্বের জন্য প্রথমে উমরাহ্‌ আদায় করা।

উমরার ইহ্‌রাম বাঁধার সময় বলাঃ আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান।চ

ক্বিরান হজ্জ্বের ইহ্‌রাম বাঁধার সময় বলাঃ আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান ওয়া উমরাতান।চ

ইফরাদ হজ্জ্বের ইহ্‌রাম বাঁধার সময় বলাঃ আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান।চ

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের এর পঠিত তালবিয়া জোরে জোরে পাঠ করা।

তালবিয়াঃ ( لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ ) ওলাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিহয়মাতা লাকা ওয়াল্‌ মুল্‌ক্‌, লা-শারীকা লাকাহ।

অজু-গোসল করে পবিত্রতার সহিত মসজিদুল হারামে প্রবেশ করা।

মসজিদে হারামে প্রবেশের পূর্বে তালবিয়া বলা বন্ধ করা।

তাওয়াফের জন্য সরাসরি হজরে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

তাওয়াফ শুরুর পূর্বে (পুরুষের জন্য) ইযতিবা করা। (ইহরামের কাপড় ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাধের উপর রাখা) নামাযের সময় উভয় কাঁধ ঢেকে রাখা জরুরী।

بسم الله، الله أكبر ওবিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্‌বারহ বলে হজরে আসওয়াদকে চুমু দিয়ে বা ইশারা করে তওয়াফ শুরু করা।

প্রথম তিন চক্করে রমল করা। (দ্রুত পদে চলা)

তাওয়াফ অবস্থায় কোন দুহআ নির্দিষ্ট না করে যে কোন দুহআ যিকির পাঠ করা।

আল্লাহ্‌র ঘর বাম দিকে রেখে তওয়াফ করা।

হাতিমের বাহির দিয়ে তওয়াফ করা।

রোক্‌নে ইয়ামানী সপর্শ করা। তা না পারলে ইঙ্গিত না করেই চলতে থাকা।

রোকনে ইয়ামানী এবং হজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে এই দোয়া পড়াঃ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া ক্কিনা আযাবান্নার।চ

একাধারে সাত চক্কর পূর্ণ করা। (রুকন)

মাকামে ইবরাহীমের পিছনে ২ রাকাত নামায পড়া। (সেখানে সম্ভব না হলে মসজিদুল হারামের যে কোন স্থানে তা আদায় করা।

সূরা ফাতিহার পর প্রথম রাকাআতে সূরা কাফেরূন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ইখলাছ পড়া।

যম্‌যম্‌ এর পানি পান করা এবং উহা মাথায় ঢালা।

আবার হজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া বা ইঙ্গিত করা।

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ ওইন্নাছ্‌ছাফা ওয়াল মার্‌ওয়াতা মিন শাহআয়িরিল্লাহিহ বলতে বলতে সাফা পাহাড়ে আরোহণ করা।

ক্বিবলামুখি হয়ে দাঁড়িয়ে তাওহীদ, তাক্‌বীর, তাহমীদ ইত্যাদি পাঠ করা। অতঃপর তিনবার বলবে:

( لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ . لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ أنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ

وهَزَمَ الأحْزاَبَ وَحْدَهُ .)

এরপর জানা যে কোন দুহআ পাঠ করবে।

সবুজ বাতিদ্বয়ের মধ্যবর্তী অংশে (পুরুষদের) দৌড়ানো। (মহিলারা দৌড়াবে না।)

ছাফা-মারওয়া সাঈ করার সময় কোন দোয়া নির্দিষ্ট না করে, জানা যে কোন দুআ পড়া।

মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করা।

সেখানেও ছাফা পাহাড়ের ন্যায় দুহআ করা।

সাত বার সাঈ করা। (রুকন)

ছাফা থেকে মারওয়া গমণ ১ম চক্কর, মারওয়া থেকে ছাফা প্রত্যাবর্তন ২য় চক্কর। এভাবে ৭ম চক্কর মারওয়ায় এসে শেষ করা।

তামাত্তুকারী মাথার চুল মুড়িয়ে বা খাটো করে হালাল হয়ে যাওয়া।

ক্কিরাণ ও ইফরাদকারী ইহ্‌রাম অবস্থাতেই থেকে যাওয়া।

৮ই - জিল্‌ হজ্জের কার্যাবলীঃ
এদিন প্রভাতে তামাত্তুকারী পূর্ব নিয়মে আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জ্বান বলে হজ্জ্বের ইহরাম বাঁধা। (রুকন)

মিনায় গমন করে যোহর থেকে ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামায (চার রাকাআত বিশিষ্ট নামায) কছর করে আদায় করা।

সেখানে রাত্রি যাপন করা।

৯ই - জিল্‌ হজ্জের কার্যাবলীঃ
এদিন সূর্যদয়ের পর আরাফাতে গমন করা, এসময় অধিক পরিমাণে তালবিয়া ও তাকবীর পাঠ করা।

দুপুর পর্যন্ত আরাফাত সীমানার বাইরে ওনামেরাহ নামক স্থানে অবস্থান করা।

সেখানে প্রদত্ব খোতবা শোনা।

যোহর আছরের নামায যোহরের সময় এক আজানে দুই ইকামতে ক্বছর করে আদায় করা।

দুই নামাযের মাঝে সুন্নত ইত্যাদি না পড়া।

সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর আরাফাতে অবস্থান নেয়া। (রুকন)

বেশী বেশী তালবিয়া, তাকবীর পাঠ করা এবং ক্বিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দুওআয় মাশগুল থাকা।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা। (ওয়াজিব)

অতঃপর ধীর গতিতে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে গমন করা।

সেখানে সর্বপ্রথম মাগরীব ও এশার নামায এক আজানে ও দুই ইক্বামতে আদায় করা।

মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা । (ওয়াজিব)

রাতে কোন প্রকার ইবাদতে মাশগুল না হয়ে সরাসরি ঘুমিয়ে পড়া।

ফজর নামায আদায় করে মাশআরুল হারামে ক্বিলামুখী হয়ে দুওআ করা।

সূর্যদয়ের পূর্বে মিনার দিকে রাওয়ানা হওয়া।

ওবাত্বনে মুহাস্‌সারহ (মুযদালিফা ও মিনার মধ্যবর্তী অঞ্চল) নামক স্থানে দ্রুত গতিতে চলা।

১০ই - জিল্‌ হজ্জের কার্যাবলীঃ
মুযদালিফা বা মিনার যে কোন স্থান থেকে ৭টি কংকর সংগ্রহ করা।

বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্বে তালবিয়া বন্ধ করা।

সূর্যদয়ের পর উচ্চস্বরে ওআল্লাহু আকবারহ বলে বড় জামরায় একে একে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করা। (ওয়াজিব)

মিনা বা মক্কার হারামের সীমানার মধ্যে যে কোন স্থানে কুরবানী করা। (তামাত্তু এবং ক্কিরাণকারীর জন্য ওয়াজিব)

নিজ হাতে কুরবানী করা। (কুরবানীর টাকা দায়িত্বশীল ব্যাংকে দেয়াও বৈধ)

সম্ভব হলে কুরবানী থেকে কিছু অংশ ভক্ষণ করা।

ঈদের দিন ব্যতিত পরবর্তী তিন দিনও (১১, ১২, ১৩) কুরবানী করা বৈধ।

মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করে হালাল হওয়া। (মহিলাগণ চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের গিরা সমপরিমাণ কাটবে।) (ওয়াজিব)

মক্কা গিয়ে রমল বিহীন তাওয়াফে ইফাযাহ্‌ করা। (রুকন)

তাওয়াফের পর পূর্বের ন্যায় দু রাকাআত নামায পড়া।

তামাত্তু কারীর সাফা-মারওয়া সাঈ করা। (রুকন)

১০ তারিখের কাজগুলি (কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী, মাথা মুন্ডান ও তওয়াফ) ধারাবাহিক ভাবে সমপাদন করার চেষ্টা করা। (আগে পিছে হয়ে গেলে অসুবিধা নেই।)

১১, ১২ ও ১৩ জিল হজ্জের কার্যাবলী ও হজ্জের সমাপ্তি:
মিনায় প্রত্যাবর্তন করে ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১১ ও ১২ তারিখের রাত যাপন করা। (ওয়াজিব)

১১ ও ১২ তারিখ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরার প্রতিটিতে তাকবীরসহ সাতটি করে কংকর নিক্ষেপ করা। (ওয়াজিব)

তিনটি জামরায় পাথর মারার ক্ষেত্রে ছোট ও মধ্যবর্তী জামরার পর সামনে বেড়ে কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দুআ করা।

কিন্তু বড় জামরাতে পাথর মেরে দাঁড়াবে না দুওআও করতে হবে না।

১২ তারিখ মিনা ত্যাগ করার ইচ্ছা করলে সূর্যাস্তের পূর্বেই তা করতে হবে।

সূর্যাস্তের পর মিনায় থেকে গেলে সেই রাত্রি (মিনায়) যাপন করা ওয়াজিব, এবং পরবর্তী ১৩ তারিখ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরায় পাথর মারাও ওয়াজিব।

মক্কায় এসে রমল বিহিন বিদায়ী তওয়াফ করা। (ওয়াজিব)

কতিপয় লক্ষণীয় বিষয়:
অনেকে ইহরাম বাঁধার সময় থেকেই ইযতেবা তথা (ইহরামের কাপড় ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাধের উপর রেখে দেয়, এমনকি ছালাতের সময়ও সেভাবেই থাকে। এরূপ করা সুন্নাতের পরিপন্থী। ইযতেবা শুধু তওয়াফের মূহুর্তে করা সুন্নাত, অন্য সময় নয়।

কাহবা ঘরের তওয়াফ এবং ছাফা-মারওয়া সাঈ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন দুহআ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। এসময় অনির্দিষ্টভাবে যে কোন দুহআ বা প্রার্থনা যে কোন ভাষায় করা যাবে। সুতরাং বিভিন্ন ধরনের কিতাবে যে সকল দুহআ লিখিত আছে- ১ম চক্করের দুআ....... ২য় চক্করের দুহআ .......... তা নি:সন্দেহে ভুল। কেননা এভাবে নির্দিষ্ট চক্করের জন্য নির্দিষ্ট দুহআ না রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পড়েছেন না তিনি পড়তে বলেছেন, না কোন ছাহাবী (রা:) এরূপ করেছেন।

3

3

অনেকে ইহরাম বাঁধার উদ্দেশ্যে দুহরাকাআত ছালাত আদায় করে থাকে। মূলত: ইহরামের জন্য কোন ছালাত নেই। তবে কোন ফরয ছালাতের সময় হয়ে গেলে, উক্ত ছালাত আদায় করার পর ইহরাম বাঁধবে।

১০ তারিখে তাওয়াফে ইফাযাহ্‌ করতে না পারলে পরবর্তীতে যে কোন সময় তা করতে পারবে। তবে ১৩ তারিখের মধ্যে আদায় করা উত্তম।

প্রয়োজনে তাওয়াফে ইফাযাহ্‌র সাথে বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ত করলে উভয়টিই আদায় হয়ে যাবে।

কোন অবস্থাতেই আরাফাতের ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে প্রস্থান বৈধ নয়।

তামুত্তুকারীর কোন অবস্থাতেই এক সাঈ যথেষ্ট নয়।

১০ তারিখের পূর্বে তওয়াফে ইফাযাহ্‌ করলে উহা আদায় হবে না।

তানঈম বা মসজিদে আয়েশা বা ওমরাহ্‌ মসজিদ থেকে ঘন ঘন ইহরাম বেঁধে এসে নিজের জন্য বা আত্মিয় স্বজনের নামে ওমরাহ্‌ পালন করা বিধি সম্মত নয়। কেননা, একই সফরে এরূপ একাধিক ওমরাহ্‌ করা রাসুলুল্লাহ্‌ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ও তাবেঈদের কারো থেকে সাব্যস্ত নেই। (বিস্তারিত দেখুন আল-মুগনী ৫/১৭)

মসজিদে নববীর যিয়ারতঃ উহা মুস্তাহাব। সুন্নাতে মুআক্বাদাহ্‌ নয় বা ওয়াজিব ফরযও নয়। আর উহা যিয়ারত করা হজ্জ্ব উমরাহ্‌র সামান্যতম অংশ বিশেষও নয়। সুতরাং শুধুমাত্র মদীনার মসজিদে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সফর যায়েয (বৈধ)। অন্য কোন উদ্দেশ্যে (যেমন- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের এর মাজার যিয়ারত বা সাহাবার (রাঃ) কবর যিয়ারত ইত্যাদি) সফর করা যায়েয নয়। তবে মদীনায় পৌঁছে যাওয়ার পর এগুলো যিয়ারত করতে কোন বাধা নেই। (বুখারী ও মুসলিম)

হজ্জ্বের রুকন ৪টিঃ
ইহরাম বাঁধা।

আরাফায় অবস্থান করা।

তাওয়াফে ইফাযাহ্‌ করা।

সাঈ করা।

১০
হজ্জ্বের ওয়াজিব বিষয় হল ৮টিঃ
মীকাত হতে ইহরাম বাঁধা।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা।

মুযদালিফায় রাত্রী যাপন করা।

১১, ১২ যিলহজ্জের রাত গুলি মিনায় যাপন করা।

জামরায় পাথর মারা।

কুরবানী করা। (তামাত্তু ও ক্বিরাণকারীদের জন্য)

চুল কামানো বা ছোট করা।

বিদায়ী তাওয়াফ করা। (তবে ঋতু ও নেফাস বিশিষ্ট মহিলাদের জন্য ইহা আবশ্যক নয়।)

১১
ইহরাম অবস্থায় যা করা নিষিদ্ধ (১০টি)
সেলাইকৃত কাপড় পরা।

মুখ ঢাঁকা।

পুরুষদের মাথা ঢাঁকা।

হাতমোজা পরিধান করা।

নোখ, চুল ইত্যাদি কাটা।

স্থলচর প্রাণী শিকার করা বা তা শিকার করার জন্য ইঙ্গিত করা।

স্ত্রী সহবাস করা।

কোন জিনিস কুড়ানো (হারাম এলাকায়)।

বিয়ে করা বা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া।

সুগন্ধি ব্যবহার করা।

১২
হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তাবলীঃ (৬টি)
ইসলাম (সূরা তাওবাহঃ ৫৪)

জ্ঞান সমপন্ন হওয়া (আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী)

স্বাধীন হওয়া। (আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী)

বালেগ হওয়া। (আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী)

অর্থিক ও শারীরিক ক্ষমতা সমপন্ন হওয়া। (আল ইমরানঃ ৯৭)

মহিলার জন্য স্বামী অথবা মাহরাম থাকা। (বুখারী ও মুসলিম)

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে পবিত্র কুরআন এবং সহীহ্‌ হাদীস অনুযায়ী হজ্জ্ব পালন করে সৌভাগ্যশালীদের অন্তর্ভূক্ত করুন। আমীন!!

বিঃ দ্রঃ

হজ্জ বা ওমরার কোন একটি রুকন ছুটে গেলে তা বাতিল হয়ে যাবে।

আর কোন একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে কাফফারা দিতে

১৩
জিল হজ্জের প্রথম দশকের করণীয়
অনুবাদঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্ আল কাফী

১৪
এই দিনগুলির ফযীলতঃ
হযরত আবদুল্লাহ্‌ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন: জ্ঞজিলহজ্জ্বের প্রথম দশকের চাইতে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহ্‌র নিকট অধিক পছন্দনীয়।ঞ্চ সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন: আল্লহ্‌র পথে জিহাদও নয় হে রাসূলুল্লাহ্‌? তিনি বললেন: জ্ঞআল্লাহ্‌র পথে জিহাদও নয়। অবশ্য সেই মুজাহিদ ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে স্বীয় জান-মাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে পড়ে, আর উহার কিছুই নিয়ে প্রত্যাবর্তন করে না।ঞ্চ (বুখারী)

অন্য বর্ণনায় ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে এসেছে- জ্ঞতোমরা এই দিনগুলোতে অধিক হারে তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পাঠ কর।ঞ্চ (আহমদ)

১৫
পছন্দনীয় আমলসমূহঃ
হজ্জ্বব্রত ও উমরাহ্‌ পালন করাঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, বাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন: জ্ঞএক উমরাহ্‌ থেকে অপর উমরাহ্‌র মাঝে সংঘটিত পাপ-সমূহ এমনিই বিমোচিত হয়। আর মাকবুল হজ্জ্বের বিনিময় নিশ্চিতভাবে জান্নাত।ঞ্চ (বুখারী ও মুসলিম)

যাবতীয় সৎকাজ অধিকহারে আদায় করাঃ যেমন- নামাজ, রোজা, সাদকাহ্‌ (দান), কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, নিকটাত্মীয়ের সাথে সদাচার, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ, তওবা, ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) ইত্যাদি। কেননা সৎ আমলের প্রতিদান এইদিন গুলিতে যেমন অধিক হারে বৃদ্ধি পায়, তেমনি সৎ আমলই অল্লাহ্‌র মাগফিরাত ও রহ্‌মতকে নির্দিষ্ট করে।

রোজা রাখাঃ ইমাম নবুবী (রঃ) বলেন: জ্ঞএই দিনগুলিতে রোজা পালন করা মুস্তাহাব। বিশেষ করে যে ব্যক্তি হজ্জ্বে যায়নি তার জন্য আরাফাত দিবস তথা ৯ই জিলহজ্জ্বে রোজা রাখা মুস্তাহাব।ঞ্চ হযরত আবু ক্বাতাদাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন: জ্ঞআরাফাত দিবসের রোজা আগত এবং বিগত এক বছরের পাপ বিমোচন করে।ঞ্চ (সহীহ্‌ মুসলিম)

ক্বুরবানী করাঃ ঈদের দিন বা আইয়ামে তাশরীকে (জিল হজ্জ্বের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ) ক্বুরবানী করা। ক্বুরবানী আমাদের পিতা ইব্রাহিম (আঃ)-এর সুন্নত, যখন আল্লাহ্‌ তাঁকে ঈসমাইল (আঃ) এর বিনিময়ে একটি বিরাট কুরবানী দান করেছিলেন। আল্লাহ্‌ বলেন: فصل لربك وانحر জ্ঞআপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও ক্বুরবানী করুন।ঞ্চ(কাউছার-৩)

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন: জ্ঞতোমাদের কেহ যদি জিলহজ্জ্বের চাঁদ দেখে এবং ক্বুরবানী করার ইচ্ছা করে তাহলে সে যেন ক্বুরবানী পর্যন্ত স্বীয় চুল, নখ ইত্যাদি কর্তন থেকে বিরত থাকে।ঞ্চ (মুসলিম)

তাকবীর বলাঃ নির্দিষ্ট এবং অনির্দিষ্ট তাকবীর উঁচু আওয়াজে বলা। মহিলাগন নীচু আওয়াজে বলবে। তাকবীর এককভাবে বলা সুন্নত, দলবদ্ধ হয়ে সমস্বরে বলা অবৈধ। কেননা এরূপ তাকবীর বলা বাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ), তাঁর সাহাবা এবং পূণ্যাত্মা পূর্বসূরীদের থেকে প্রমানিত নয়।

ক)অনির্দিষ্ট তাকবীরঃ অর্থাৎ সময় বা স্থান নির্দিষ্ট না করা। যেমন- বাড়ী, মসজিদ, বাজার ইত্যাদি স্থানে। জিলহজ্জ্বের প্রথম দিন থেকে নিয়ে ঈদের দিন পর্যন্ত যে কোন সময় এই তাকবীর চলতে থাকবে। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন: হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) এবং হযরত আবুহুরায়রা (রাঃ) এই দিনগুলোতে তাকবীর বলতে বলতে বাজারে যেতেন এবং তাদের দেখে লোকেরাও তাকবীর বলত।

খ)নির্দিষ্ট তাকবীরঃ অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবীর বলা। এরূপ তাকবীর আরাফাত দিবসের ৯ই জিলহজ্জ্ব ফজর নামাজ থেকে শুরু হয়ে চলতে থাকবে জ্ঞআইয়্যামে তাশরিকঞ্চ তথা ১৩ই জিলহজ্জ্ব দিবসের শেষ পর্যন্ত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেন: তাকবীরের ব্যাপারে বিশুদ্ধ মত হলো যাতে পূর্বসূরী অধিকাংশ সাহাবা, ফিকাহ্‌বিদ এবং ইমাম ঐক্যমত তা হলো- জ্ঞতাকবীর আরাফাত দিবসের ফজর থেকে শুরু হয়ে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিবস পর্যন্ত প্রত্যেক নামাযের পর বলতে হবে।ঞ্চ

তাকবীরঃ الله أكبر، الله أكبر، لاإله إلا الله، والله أكبر الله أكبر ولله الحمد

উচ্চারণঃ আল্লাহু আক্‌বার, আল্লাহু আক্‌বার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আক্‌বার ওয়া লিল্লাহিল হাম্‌দ।

ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা। খুতবায় উপস্থিত থেকে তা থেকে উপকৃত হওয়া।

উল্লেখ্য যে, ঈদ হলো কল্যাণময় আমল ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন। সুতরাং উহাকে অন্যায় অশ্লীলতা ও পাপাচার যেমন- গান-বাদ্য, নগ্ন ফিল্ম, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি দ্বারা কুলষিত করবে না, যা পূর্বকৃত সৎ আমলসমূহ বিনষ্টের কারণ হতে পারে।

১৬
ঈদুল আযহার বিধি-বিধান
অনুবাদঃ আখতারুল আমান

হে আমার মুসলিম ভাই! আল্লাহর প্রশংসা করুন এজন্য যে, তিনি আপনাকে এই মহান দিন পাওয়ার তাওফীক দিয়েছেন। আপনার বয়স দীর্ঘায়িত করেছেন যাতে করে দিন ও মাস সমূহের আবর্তণ-প্রবর্তণ প্রত্যক্ষ করতে পারেন এবং আল্লাহর নৈকট্য বিধান কারি আমল ও কথা স্বীয় আত্মার জন্য পেশ করতে পারেন। ঈদ হল এই উম্মতের বৈশিষ্ট এবং দ্বীনের প্রকাশ্য আলামত সমুহের অন্যতম। উহা ইসলামের অন্যতম প্রতীক। সুতরাং আপনার উচিত উহার প্রতি গুরুত্বারোপ ও সম্মান প্রদর্শন করা। আল্লাহ তাঞ্চয়ালা বলেনঃ ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرِ اللهِ فَإنَّهاَ مِنْ تَقْوَي القُلُوْبِ ঞ্ছএটাই আল্লাহর বিধান আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মর্যাদা রক্ষা করলে তাতো তার অন্তরের তাকওয়ারই ফল।ঞ্জ (হজ্জঃ৩২)

নিম্নে আপনার জন্য সংক্ষেপে ঈদের কতিপয় বিধি-বিধান সন্নিবেশিত করা হলঃ

তাকবীর পাঠ করা: আরাফা দিবসের ফজর হতে তাকবীর শুরু করে তাশরীকের শেষ দিন তথা ১৩ যুলহজ্ব পর্যন্ত চলবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَاذْكُرُوا اللهَ فِيْ أياَّمٍ مَّعْدُوْدَاتٍ ঞ্ছতোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর নির্ধারিত কয়েকটি দিনে।ঞ্জ (বাকারাহঃ ২০৩)

তাকবীর পাঠের পদ্ধতি: (তাকবীর হলঃ)

الله اكبر الله اكبر لا إله إلا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد

ঞ্ছআল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার ওয়াল্লিাহিল হামদ।ঞ্জ

আল্লাহর সম্মান ও এবং তার ইবাদত ও শুকরিয়া প্রকাশ স্বরুপ পুরুষদের জন্য মসজিদে, বাজারে, ঘর-বাড়ীতে এবং নামাযের পরে উক্ত তাকবীর উচ্চ স্বরে পড়া বিধি সম্মত।

২) কুরবানীর পশু যবেহ করা:

কুরবানী ঈদের নামাযের আগে নয় পরে করতে হয়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ঞ্ছযে ব্যক্তি ঈদের নামাযের আগে কুরবানীর পশু যবেহ করে ফেলে সে যেন উহার স্থলে আরেকটি পশু যবেহ করে, আর যে ঈদের পূর্বে যবেহ করেনি সে নামাযের পর জ্ঞবিসমিল্লাহঞ্চ বলে যবেহ করবে।ঞ্জ (বুখারী ও মুসলিম)

তাকবীর হলঃ যবেহ করার দিনসমূহঃ

যবেহের সময় হল ঈদের চারদিন। কুরবানীর দিন ও তাশরীকের দিন গুলি। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি বলেন: كل أيام التشريق ذبح ঞ্ছতাশরীকের প্রতিটি দিন যবেহ করার দিন।ঞ্জ (আহমাদ প্রভৃতি, শাইখ আলবানী হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন। (দ্রঃ সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহা, হা/২৪৭৬) উল্লেখ্য, ঈদের পরবর্তী তিন দিনকে (১১,১২ ও ১৩ তারিখকে) তাশরীকের দিন বলে।

৩) গোসল করা, (পুরুষদের) জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা, কোন অপচয় ছাড়াই উত্তম কাপড় পরিধান করা, কাপড় টাখনার নীচে ঝুলিয়ে পরবে না ও দাড়ি কামাবে না কেননা এরূপ সম্পূর্ণ হারাম। মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া বৈধ, তবে বেপর্দা বেহায়া হয়ে নয় এবং পুরুষদের সামনে সুগন্ধি ব্যবহার করে নয়। মুসলিম মহিলার জন্য বড় দোষের কথা যে, সে ছালাতে বা এধরণের কোন ভাল কাজে যাবে অথচ সে আল্লাহর নাফারমানিতে লিপ্ত হবে! বেপর্দা হবে, পুরুষদের সামনে সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি অবৈধ কাজে লিপ্ত হবে?

৪) কুরবানীর মাংস ভক্ষণ করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহ থেকে ফিরে আসার পুর্বে কিছুই খেতেন না। ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে নিজের কুরবানীর মাংস খেতেন।

৫) সম্ভব হলে ঈদগাহে হেঁটে যাওয়াঃ সুন্নত হল ঈদগাহে গিয়ে নামায আদায় করা। তবে যদি কোন ওযর থাকে যেমন বৃষ্টি ইত্যাদি তবে ঈদ মসজিদেই পড়তে পারে।

৬) মুসলমানদের সাথে নামায আদায় করা, এবং খুৎবায় উপস্থিত থাকা মুস্তাহাব। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)প্রমূখদের মতে ঈদের ছালাত আদায় করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন: فصل لربك وانحر অর্থ: ঞ্ছতুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য ছালাত আদায় কর এবং ক্বুরবানী কর।ঞ্জ (আল কাওসারঃ১২)

এ ছালাত শরীয়ত সম্মত ওযর ব্যতিত কারো যিম্মা থেকে রহিত হবে না। মহিলাগণও মুসলমানদের সাথে ঈদের ছালাতে উপস্থিত হবে। এমনকি ঋতুবতী মহিলারাও উপস্থিত হবে, তবে তারা নামাযের স্থান পরিত্যাগ করবে।

৭) রাস্তা পরিবর্তন করা: মুস্তাহাব হল এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অপর রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা। (বুখারী)

ঈদের শুভেচ্ছা প্রদান করা: ঈদের শুভেচ্ছায় এইকথা বলা যায়ঃ

( تَقَبَّلَ اللهُ مِناَّ وَمِنْكَ ) অর্থঃ আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের থেকে নেক আমল গ্রহণ করুন। (দ্রঃ ফাতহুল বারী ও তামামুল মিন্নাহ)

এক্ষেত্রে মানুষ কিছু কিছু ভুলে লিপ্ত হয় তন্মধ্যে কতিপয় নিম্নরূপঃ

ক) এক সাথে সমস্বরে তাকবীর পাঠ করা অথবা কোন তাকবীর পাঠকারীর পিছনে সমস্বরে তাকবীর বলা।

খ) ঈদের দিনে হারাম খেল-তামাশায় লিপ্ত হওয়া: যেমন, গান-বাজনা, বিভিন্ন ফিলম দেখা, মাহরাম নয় এমন মহিলাদের সাথে পুরুষদের মেলামেশা করা... ইত্যাদি গর্হিত কাজ সম্পাদন করা।

গ) কুরবানী করার পুর্বে চুল অথবা নখ কাটা। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা থেকে নিষেধ করেছেন।

১৭
ঈদুল আযহার কতিপয় বিধান ও উহার সংবিধিবদ্ধ কারণঃ
আল্লাহ তাআলা কুরবানীকে সংবিধিবদ্ধ করেছেন তার এই বাণী দিয়েঃ فصل لربك وانحر অর্থ: ঞ্ছতুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য ছালাত আদায় কর এবং ক্বুরবানী কর।ঞ্জ (আল কাওসারঃ২) এবং এ বাণী দিয়ে: والبدن جعلناها لكم من شعائر الله ঞ্ছআর কুরবানীর পশুকে আমি করেছি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতমঞ্জ। (সূরা হজ্জঃ৩৬)

* কুরবানী দেয়া সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। সামর্থ থাকার পরেও উহা পরিত্যাগ করা মাকরূহ। কারণ ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনাস (রাযিয়াআল্লাহ আনহু) হতে বর্ণনা করছেন, ঞ্ছনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি চিত ফুটে ও শিং ওয়ালা ভেড়া কুরবানী দিয়েছেন। জ্ঞবিসমিল্লাহি আল্লাহ আকবারঞ্চ বলে নিজ হাতে সে দুটিকে যবেহ করেছিলেন।ঞ্জ

* কোন ধরণের পশু দিয়ে কুরবানী হবে?

কুরবানী শুধু মাত্র উট, গরু ও ছাগল (ভেড়া-দুম্বা)দিয়েই শুদ্ধ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

ليذكروا اسم الله علي ما رزقهم من بهيمة الأنعام

ঞ্ছযাতে করে আল্লাহ তাদেরকে যে চতুস্পদ জন্তু দিয়েছেন তা যবেহ করার সময় তার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।ঞ্জ (সূরা হজ্জঃ৩৬)

কুরআনীর পশুর শর্ত হল, তা সব ধরণের দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলা্‌ইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ঞ্ছচার ধরণের পশু কুরবানীতে চলবে না, সুস্পষ্ট অন্ধ, সুস্পষ্ট ব্যাধি গ্রস্থ, সুস্পষ্ট খোঁড়া, সুস্পষ্ট স্বাস্থহীন (পাতলা)।ঞ্জ (তিরমিযী

ভাগে কুরবানীঃ

গরুতে সাত জন এবং উটে দশ জন শরীক হওয়া জায়েয আছে। (সুনান গ্রন্থ) (সুনান গ্রন্থ) অবশ্য ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, খাশিতে এভাবে শরীক হওয়া চলেনা। তবে গোটা পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশুই (গরু, ছাগল, দুম্বা ভেড়া যাই হোক না কেন) যথেষ্ট। (মুসলিম, তিরমীযী প্রভৃতি।)

যবহে করার সময়ঃ

ঈদরে নামাযের পর থেকেই যবহে করার সময় শুরু হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেনে: যে ব্যক্তি ঈদের ছালাতরে পূর্বে যবেহ করবে সেটা তার নিজের জন্যই যবহে করবে, আর যে ছালাত ও খুৎবার পর যবহে করবে সে তার কুরবানী ঠিকমত সম্পন্ন করবে এবং সুন্নাতরে পাবন্দ করবে।ঞ্চ (বুখারী ও মুসলমি)

যে ব্যক্তি ভালভাবে যবেহ করতে জানে তার জন্য সুন্নাত হল, কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবহে করা। যবহে কালীন এ দুআ বলবেঃ بسم الله والله أكبر، اللهم هذا عن فلان অর্থঃ আল্লাহর নাম শুরু করছি হে আল্লাহ! ইহা উমুকরে পক্ষ থেকে (এখান সে নিজের নাম অথবা যে তাকে অছীয়ত করছে তার নাম উল্লখে করতে পারে।) কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ভেড়া যবহে করত যেয়ে বলেছেলিনে: জ্ঞবিসমিল্লাহে ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহুম্মা হাযা আন্নী ওয়া মান লাম য়ুযাহহী মিন উম্মাতী।ঞ্চ (আবুদাউদ, তিরমিযী) আর যে ব্যক্তি ভালভাব যবেহ করতে জানেনা সে যবেহ কালিন উপসি'ত থাকবে।

* মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানীঃ

মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ক্বুরবানী তিনভাগে বিভক্ত:

১) পরক্ষ ভাবে মৃত ব্যক্তিদের পক্ষ হতে ক্বুরবানী করাঃ যেমন, কোন ব্যক্তি ক্বুরবানী দিল নিজের পক্ষ থেকে ও তার পরিবার পরিজনের পক্ষ থেকে এবং নিয়াতে পরিবারর জীবিত, মৃত সকলকে শামিল করবে। (ইহা বৈধ)এর মূল হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিজ ও স্বীয় পরিবারের পক্ষ থেকে ক্বুরবানী।

২) মৃতদের পক্ষ থেকে ক্বরবানী করার ওছিয়ত করা হলে তাদের পক্ষ থেকে ক্বুরবানী করা। ইহা জায়েয আছে। (দ্রঃ বাক্বারা: ১৮১)

৩) মৃতদের পক্ষ থেকে সতন্ত্র ভাবে ছাদকা স্বরূপ ক্বুরবানী করা। ইহা বিতর্কিত বিষয়। আল্লামা ইবনু উসাইমীন এধরণের ক্বুরবানী বৈধ বলেছেন। তবে এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, নিকটাত্মীয় কোন মৃত ব্যক্তির নামে তাঁরা কখনো কুরবানী করেছেন। অথচ তাঁদের সবারই সন্তান, স্ত্রীসহ অনেক নিকাটাত্মীয় ছিল এবং তাঁদের অনেকে আগেই মৃত্যু বরণ করেন। কিন' তাদের করো নামে তাঁরা কুরবানী করেন নি।

* কুরবানীর মাংস বন্টনঃ

কুরবানী দাতার জন্য সুন্নাত হল, কুরবানীর মাংস ভক্ষণ করা, পরিবার পরিজন ও প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেয়া, ফকীর-মিসকীনদেরকে ছাদকা করা। মহান আল্লাহ বলেনঃ ( فَكُلوُا منها وأطعموا البائس الفقير ) জ্ঞতোমরা উহার মাংস ভক্ষণ করবে এবং বিপন্ন অভাব গ্রস'দিগকে খেতে দিবে।ঞ্চ (সূরা হজ্জঃ২৮)

মহান আল্লাহ বলেন: ( فَكُلوُا منها وأطعموا القانع والمعتر ) জ্ঞতোমরা নিজে কুরবানীর মাংস ভক্ষণ করবে এবং যে যাচ্ঞা করে তাকে ও যারা যাঞ্চা কারে না তাকেও খাওয়াবে।ঞ্চ (সূরা হজ্জঃ৩৬)

কতিপয় সালাফে ছালেহীন কুরবানীর মাংসকে তিন ভাগে ভাগ করা পছন্দ করতেন, একভাগ নিজের জন্য রাখতেন, আরেক ভাগ ধনীদের জন্য হাদিয়া স্বরূপ দিতেন এবং অপরভাগ ফক্বীরদেরকে ছাদকাহ করতেন। বিনিময় স্বরূপ কসাইকে তারা কিছুই দান করতেন না। তবে কুরবানীর মাংসকে তিন ভাগে ভাগ করাটা আবশ্যক নয়।

অনেকের ধারণা কুরবানীর মাংস তিন দিনের বেশী রাখা ও খাওয়া জায়েয নয়। এটি একটি ভূল ধারণা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে, তিনি বলেনঃ জ্ঞকিছু সংখ্যক অভাবী লোকের আগমনের কারণে ইতি পূর্বে আমি তোমাদেরকে কুরবানীর মাংস তিন দিনের বেশী রাখতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা উহা ইচ্ছামত খাও, জমা রাখ এবং ছাদকা কর।ঞ্চ (মুসলিম প্রভৃতি)

* যে ব্যক্তি কুরবানী দিবে তার জন্য যা থেকে বিরত থাকা উচিতঃ

যে ব্যক্তি কুরবানী দিতে ইচ্ছুক তার জন্য যুলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর কুরবানী করা পর্যন- চুল, নখ, চামড়া ইত্যাদি কাটা হারাম। উম্মু সালামা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: জ্ঞযদি যিলহজ্জের প্রথম দশ তারিখ প্রবেশ করে এবং তোমাদের কেউ ক্বুরবানী দিতে ইচ্ছা করে তবে সে যেন নখ ও চুল কাটা হতে বিরত থাকে।ঞ্চ (আহমাদ, মুসলিম) অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাহলে সে যেন তার চুল ও চামড়ার কোন কিছুই কর্তন না করে। আর যদি যুলহজ্জের প্রথম দশক শুরু হওয়ার পর ক্বুরবানী দেয়ার নিয়ত করে, তবে ঐ সময় থেকেই চুল, নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত হবে। নিয়তের পূর্বে কোন কিছু কাটলে কোন পাপ হবে না।

কুরবানী দাতার পরিবারের জন্য যিলহজ্জের প্রথম দশকে নখ, চুল ইত্যাদি কাটা অবৈধ নয়। কুরবানী দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি এই দশ দিনের মধ্যে চুল, নখ, চামড়া হতে কিছু কর্তন করে ফেললে তাকে তাওবা করতে হবে, এবং এর পুণারাবৃত্তি করবে না। তবে এজন্য তাকে কাফফারা দিতে হবে না এবং ইহা তার কুরবানীতে কোন বাধা সৃষ্টি করবে না। অবশ্য যদি সে উহা ভুল অথবা অজ্ঞতা বশত: করে থাকে কিম্বা অনিচ্ছায় চুল পড়ে যায় তবে তার কোন গুনাহ হবে না। যদি কোন প্রয়োজন দেখা দেয় যেমন: নখ ভেঙ্গে কষ্ট হওয়ার কারণে তা তুলে ফেরতে হয়, কিংবা দু চোখের উপর চুল বড় হয়ে যাওয়ার কারণে তা কাটা আবশ্যক হয়ে যায়, অথবা ক্ষতস্থান প্রভৃতিতে ঔষধ দেয়ার জন্য চুল কাটতে হয় তবে সে এসব কারণে তা করতে পারে, এতে কোন গুনাহ হবে না।

* পরিশেষেঃ

হে মুসলিম ভ্রাতা! আপনি নেকী এবং কল্যাণ মুখী কাজ তথা: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায়, নিকটাত্মীয়দেরকে যিয়ারত করা, পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, তাচ্ছিল্য প্রদর্শন ইত্যাদি পরিত্যাগ করত: উহা থেকে অন-রকে পবিত্র রাখা। ফকীর, মিসকীন, এতীমদের প্রতি দয়া প্রদর্শন। তাদেরকে সহযোগিতা করা, তাদের অন্তরে আনন্দ প্রবেশ করানো -ইত্যাদি কাজ করার প্রতি অনুপ্রাণিত হতে ভুলবেন না।

আল্লাহর কাছে কামনা, তিনি যেন আমাদেরকে তাওফীক দেন এমন কাজ সম্পাদনের যা তিনি ভালবাসেন ও তাতে সন্তোষ থাকেন। আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সমস্থ ছাহাবীদের প্রতি রহমত ও শান্তির ধারা বর্ষণ করুন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন