HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হজ কিভাবে মাবরূর হবে

লেখকঃ নুমান বিন আবুল বাশার

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
হজ কিভাবে মাবরূর হবে?

নুমান বিন আবুল বাশার

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

হজ কিভাবে মাবরূর হবে?
আল্লাহ তাআলা হজে মাবরুরের জন্য মহা পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনছেনঃ হজে মাবরুরের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত। [বুখারী- ১৭৭৩]

হজে মাবরূর : যে হজে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী এবং ভাল কাজ করা হয় তাকে হজে মাবরুর তথা গ্রহণযোগ্য হজ বলে। [লাতায়েফুল মাআরেফ : পৃ-৪১০]

আরবী ‘বির’ থেকে মাবরূর। এই ‘বির’ শব্দটি দুটো অর্থে ব্যবহৃত হয়ঃ

এক. মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার ও সুসম্পর্ক। যার বিরপরীত হল দুর্ব্যবহার। হাদীছে বর্ণীত আছে : (আল-বির হুসনুল খালকি) বির হলো সদ্ব্যবহার [মুসলিম: ২৫৫৩] মুছনাদ গ্রন্থে সাহাবী যাবের (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন: একদা সাহাবায়ে কেরাম রাসূল কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! হজের মধ্যে বির বা সৎকর্ম কি? রাসুল (ﷺ) উত্তরে বললেনঃ ‘‘মানুষকে আহার দান, বেশি বেশি সালামের আদান প্রদান। [ফাতহুল বারী : ৪৪৪৬]

দুই. অধিকহারে ইবাদত বন্দেগী ও তাকওয়ার গুনাবলী অর্জন। যার বিপরীত হল গুনাহ বা নাফরমানী। আল্লাহ তাআলা বলেন :

أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ

তোমরা মানুষকে সৎকর্মের আদেশ কর। অথচ নিজেদের কে ভুলে যাও?। [বাকারা : ৪৪]

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন হজে মাবরুরের ব্যাখ্যায় যত মত আছে সবগুলো কাছাকাছি অর্থ বহন করে। তা হলো হজ সম্পাদনকারী হজের সকল বিধান শরীয়তের চাহিদা অনুযায়ী যথাস্থানে পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে। [ফতহুলবারী : ৪৪৬]

অতএব কেহ বায়তুল্লাহর হজ করলেই তার হজ, হজে মাবরুর হবে না। একদা মুজাহিদ রহ. বলেছিলেন কত বিপুল সংখ্যক হাজীর সমাগম! তখন ইবনে উমার (রাঃ) বলেন ‘বাস্তবে হাজীর সংখ্যা খুবই সীমিত বরং তুমি বলতে পারো কাফেলার সংখ্যা কতইনা বেশি।’’ [মোছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৮৮৩৬]

হজ আদায়কারী লোক বিভিন্ন প্রাকার হওয়ার কারনে এমন কিছু বিশেষ নীতি উল্লেখ করা প্রয়োজন যা হাজীকে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। যেন তার হজ হজে মাবরুর হয় ও শ্রম সার্থক হয়।

এক : ইখলাছ ও সুন্নাহর অনুসরণ।
নিম্নোক্ত বিষয় ব্যতীত আমল শুদ্ধ ও গ্রহীত হয় না।

১। ইখলাছ অবলম্বন। অর্থাৎ সকল নেক আমল একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একনিষ্টভাবে সম্পাদন করা। হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

أنا أغنى الشركاء عن الشرك، من عمل عملا أشرك فيه معي غيري تركته وشركه .

আমি আমার সাথে অংশিদারিত্ব থেকে মুক্ত। যে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে কোন আমল করল সেই অংশীদার সহ তার আমলকে আমি প্রত্যাখ্যান করে থাকি। [মুসলিম : ২৯৮৫]

রাসুলে কারীম (ﷺ) ইখলাসের পরিপন্থি বিষয় সম্পর্কে খুব সতর্ক করতেন। তিনি তার প্রভুর নিকট সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করতেন :

اللهم حجة لا رياء فيها ولا سمعة

হে আল্লাহ! এমন হজ আদায় করার তৌফিক দাও যার মধ্যে লোকদেখানো ভাবনা বা মানুষের প্রশংসার উদ্দেশ্য না থাকে। [ইবনে মাজা : ২৮৯০]

২। ইবাদত-বন্দেগীসহ সকল নেক আমলের ক্ষেত্রে নবী করিম (ﷺ) এর অনুসরণ। তিনি বলেন—

من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد

যে এমন আমল করল যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম : ১৭১৮] এ জন্য তিনি হজ সম্পর্কে বলতেন :

لتأخذوا عني مناسككم فإني لا أدري لعلى لا أحج حجتي هذه

তোমরা আমার থেকে হজের বিধান শিখে নাও কারন এবার হজের পর সামনে আর হজ করতে পারবো কিনা আমার জানা নেই। [মুসলিম:১২৯৭]সাহাবায়ে কেরাম উক্ত আদেশ যথার্থভাবে অনুসরণ করেছেন। এ কারণেই উমর ফারুক (রাঃ) হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের সময় বলেন :

إما والله إني لأعلم أنك حجر لا تضر ولا تنفع، ولو لا أني رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم أستلمك مااستلمتك، فاستلمه .

আল্লাহর কসম! আমি জানি তুমি একটি পাথর মাত্র, কারো উপকার ও ক্ষতি কারার ক্ষমতা তোমার নেই, যদি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম তাহলে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না, অতঃপর তিনি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। [বুখারি : ১৬১০]

দুই : হজের প্রস্ত্ততি গ্রহণ।
মানসিকভাবে তৈরি হওয়াই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্ত্ততি যা হাজীকে শরিয়ত সম্মত পদ্ধতিতে হজ পালনে সহায়তা করে এবং হজকে হজে মাবরুরে পরিণত করে।

* যে বিষয়গুলির প্রস্ত্ততি বিষেশভাবে গ্রহণ করতে হবে তা হলঃ

(ক) সকল শর্ত পূরণ করে আন্তরিক তাওবার মাধ্যমে বান্দা তার ও আল্লাহরর মাঝে সম্পর্ককে ঠিক করে নিবে।

(খ) আল্লাহ কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে, তার কাছে তাওফিক কামনা করবে, তার নিকট নিজের দুর্বলতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করবে, তাকে ভয় করবে, তার রহমতের আশাও রাখবে। হজের জন্য বস্ত্তগত প্রস্ত্ততির সাথে সাথে এগুলোর অতি প্রয়োজন। কারণ একজন মুসলিমের জন্য শুধুমাত্র বস্ত্তগত প্রস্ত্ততির উপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক নয়।

(গ) হুকূকুল ইবাদ বা মানুষের পাওনা ও অধিকার সমূহ পরিশোধ করবে। যথা গচ্ছিত সম্পদ ফেরৎ দিবে, ঋণ পরিশোধ করবে, পরিশোধে অপরাগতায় সময় চেয়ে নিবে।

ঘ) অসীয়ত লিখে যাওয়া। অর্থ্যাত মৃত্যু হলে তার পরিবার পরিজন কি করবে ইত্যাদি লিখে কারো কাছে রেখে যাবে। কারণ সফর হলো জীবন মরণের ঝুকি।

(ঙ) ফিরে আসা পর্যন্ত পারিবারিক যাবতীয় খরচাদির ব্যবস্থা করবে। ভাল উপদেশ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে যাবে, প্রতিনিধি নির্বাচন করে যাবে। তাহলে চিন্তা মুক্ত হয়ে হজ পালন করা সম্ভব হয়।

(চ) উপযুক্ত বাহনের ব্যবস্থা করা, বৈধ উত্তম পাথেয় সংগ্রহ করা, অবৈধ পাথেয় হজ গৃহীত হওয়ার প্রতিবন্ধক। ইমাম তাবারানি (র.) বর্ণনা করেন :

إذا خرج الرجل حاجا بنفقة طيبة ووضع رحله في الغرز فنادي لبيك اللهم لبيك ناداه من السماء لبيك وسعديك، زادك حلال، وراحلتك حلال، وحجك مبرور، وإذا خرج بالنفقة الخبيثة فوضع رجله في الغرز فنادى : لبيك، ناداه مناد من السماء لا لبيك ولا سعديك، زادك حرام، ...

মানুষ যখন বৈধ পন্থায় উপার্জিত পাথেয় নিয়ে হজে বের হয় এবং বাহনে পা রেখে বলে লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক!!হে আল্লাহ! তোমার দরবারে উপস্থিত। তখন আসমান হতে তাকে শুভেচ্ছা ও অভ্যর্থনা জানানো হয়, এই বলে অভিনন্দিত করা হয়, ‘‘তোমার উপস্থিতি কল্যাণকর হোক, হালাল তোমার পাথেয়, বৈধ তোমার বাহন এবং সফল তোমার হজ।’’ আর যে অবৈধ পথে উপার্জিত পাথেয় নিয়ে হজে বের হয়ে বাহনে পা রেখে যখন সে বলে লাববাইক! তখন আসমান হতে জনৈক ঘোষক তাকে তিরস্কার করে বলে দূর হ! হতভাগা দূর হ!! তোর পাথেয় হারাম তোর খরচ খরচাও হারাম এবং তোর হজ ও নিস্বফল।

বর্তমান যুগে আমরা অবৈধ উপার্জনের প্রতি ঝুকে পড়েছি এবং সন্দেহযুক্ত সম্পদের ব্যাপকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে আল্লাহ যার প্রতি রহম করেন সে ব্যতিত। অতএব প্রত্যেক বান্দার উচিত তার প্রভুকে ভয় করে চলা এবং নবী করিম (ﷺ) এর এই বাণী স্বরন রাখা ‘‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি একমাত্র পবিত্র বস্ত্তই গ্রহণ করেন।’’ [ইমাম তাবারানি : মুজামুল আওসাত - ৫২২৪]

হজ সফরে বের হওয়ার পূর্বে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ-খরচার জন্য বেশি পরিমানে বৈধ টাকা পয়সা সাথে নেয়া যাতে অন্যের নিকট হাত পাততে না হয় এবং গরীব বা যাদের পাথেয় নেই, বা বা পাথেয় হারিয়েছে তাদের সহযোগিতা করা যায়।

(ছ) সৎ সফর সঙ্গী নির্বাচন করতে হবে। দূর্বল হয়ে পড়লে সে যেন সহযোগিতা করতে পারে, ভুলে গেলে স্বরণ করিয়ে দিতে পারে, কোন বিষয়ে অজানা থাকলে জানিতে দিতে পারে, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে পারে।

* হজের সময় দু’ধরনের সাথী নির্বাচন থেকে বিরত থাকবে।

১. অসৎ সঙ্গী। যে নাফরমানীতে লিপ্ত করে এবং অন্যায় কাজে সাহায্য করে।

২. বখাটে সঙ্গী। যারা এমন কাজে সময় ব্যয় করে যা পরকালে তাদের কোন উপকারে আসে না।

(জ) হজের মাসায়িল ও আদব সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন ও সফরের বিধিবিধান জানা। যেন কখন কোথায় কছর পড়তে হবে এবং কখন কোথায় দুই নামাজ একত্রে পড়তে হবে, কখন তায়াম্মুম করা যাবে ও মোজার উপর মাসেহ করা যাবে ইত্যাদি মাসায়েল জেনে নেয়া।

এ বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করবে এমন সব উপকরণ ও এ সম্পর্কীয় পুস্তকাদি সঙ্গে নেওয়া এবং হজ ও ভৌগলিক স্থান সম্পর্কে অভিজ্ঞ আলেমের সফর সঙ্গী হওয়া।

তিন : হজের উদ্দেশ্য ও বাস্তবতা উপলব্ধি।
যে কারণে হজের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে, সেই রহস্য নিগুড় তত্ব ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য উপলব্ধি তার হজ মাবরুর বা সফর হওয়ায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। কারণ এই অনুভূতি ও উপলব্ধি নামাজে খুশু (বিনয় ও একাগ্রতা) তুল্য। অতএব যার নামাজে যত বেশি খুশু পাওয়া যাবে তার নামাজ তত বেশি গৃহীত হবে। অনুরূপ হজ। অর্থাৎ বান্দা যখন হজের বাস্তবতা ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যের প্রতি গুরুত্ব রেখে হজের বিধান আদায় করবে এবং এই হজের মাধ্যমে তার আকিদা বিশ্বাস ও জীবন চলার ধারাকে সঠিক করে নিবে তখন তার হজ অধিকতর গৃহীত হবে এবং মহা পুরস্কারে পুরস্কৃত হবে। এবং এই স্তরে সেই পৌছতে পারবে যে নিজের আত্নাকে প্রস্ত্তত করবে ও হজের হাকিকত, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কে পর্যালোচনা ও গবেষণা করবে। আর যে এমন করবে না তার আমল ও শ্রম বৃথা যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।

চার : গুনাহ, নিষিদ্ধ কাজ ও ভুল থেকে বিরত থাকা।
হজের পূণ্য লাভ করা সম্ভব নয় গোনাহ, পাপাচার, অন্যায় হতে বিরত থাকা ও দুরত্ব বজায় রাখা ব্যতীত। তাছাড়া গোনাহ করাতো সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা হাজীকে বিশেষভাবে গোনাহ পরিহারের আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন :

الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ

হজের সুবিদিত কয়েকটি মাস আছে এসব মাসে যে হজের পূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীর সাথে নিরাভরণ হওয়া, অশোভন কোন কাজ করা, ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া হজের সময় জায়েজ নয়। [বাকারা : ১৯৭]

এ নিষেধাজ্ঞা স্থান ও কালের উচু মর্যাদার কারণে। আল্লাহ বলেন

وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ

এবং যে এ ভূমিতে (মসজিদে হারামে) অন্যায় ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজের ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবো। [সূরা হজ- ২৫]

অতএব যে সরাসরি নাফরমানিতে লিপ্ত হবে তার শাস্তি কি হতে পারে? বর্তমানে মানুষের হজ পালনের বাস্তবচিত্র লক্ষ্য করলে অনেক ভূল ও নিষিদ্ধ কর্মকান্ড চোখে পড়বে যার উৎপত্তি আল্লাহর ভয় কম থাকা। অনুরূপ অন্যায় বলে বিবেচিত হবে স্থান ও কালের মর্যাদা প্রতি লক্ষ্য না করা। যা সাধারণত শরিয়ত সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়া ও সামাজিক প্রচলনের অনুসারী হওয়ার কারণে হয়ে থাকে।

হজে উল্লেখযোগ্য ভুল ও নিষিদ্ধ কাজ হলো :

ওজর ব্যতিত ইচ্ছাকৃত ভাবে ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়া, কথা ও কাজে মুসলমানদের কষ্ট দেওয়া, উত্তম ওয়াক্ত হতে বিলম্ব করে নামাজ আদায় করা, পরনিন্দা, চোগলখুরী, অনর্থক কাজ, ঝগড়া-বিবাদ, অনর্থক কথাবার্তা, অপচয়, কৃপনতা, খাদ্য নষ্ট, দূর্ব্যবহার, উলঙ্গপনা, গোনাহকে স্বাভাবিক মনে করা। যেমন: অবৈধ দৃষ্টি, অবৈধ বিষয়াদি শ্রবন, নারী পুরুষের অবাধ চলাফেরা, নারীর আবৃত অঙ্গ অনাবৃত রাখা, নির্দিষ্ট সময়ে পালনীয় বিধান দ্রুত বা বিলম্বে আদায় করা, অনুরূপ নির্দিষ্ট স্থানে পালন করা।

কতই নির্বুদ্ধিতা! সীমাহীন পরিশ্রম করে, প্রচুর সম্পদ ব্যয় করে এবং নিজের অবস্থা ও সৌন্দর্য্যের পরিবর্তন করে, অপরের বোঝা ও আল্লাহর ক্রোধ বহন করে বাড়ি ফেরা।

পাঁচ : সর্বক্ষন ইবাদতে লিপ্ত থাকা।
হজ সম্পর্কিত একাধিক আয়াতে হজ পালনের সময় অধিক হারে ইবাদত বন্দেগিতে লিপ্ত থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে :

وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللَّهُ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى

আর তোমরা তোমরা যা কিছু সৎ কাজ কর আল্লাহ তাআলা তা জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও, নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে খোদাভীতি। [বাকারা: ১৯৭]

* হজ পালন কালে সর্বক্ষন ইবাদতে মগ্ন থাকার মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে :

১. আত্নিক আমল : যথা নিষ্ঠা, মহাববত, তাওয়াক্কুল, ভয়, আশা, সম্মান, বিনয়, অক্ষমতা প্রকাশ, কায়মনোবাক্য, তওবা, আত্মসমর্পন, ধৈর্য্য, সন্তুষ্টি, প্রশান্তি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে হজ আদায়ের সময় সর্বদা মগ্ন থাকা উচিত। কারণ ইসলাম এসবের উপর নির্ভরশীল। ইবনুল কাইয়্যূম (র.) বলেন :

ومن تأمل الشريعة في مصادرها علم إرتباط أعمال الجوارح بأعمال القلوب وإنها لا تنفغ بدونها، وإن أعمال القلوب افرض من أعمال الجوارح وعبودية القلب أعظم من عبودية الجوارح وأكثر وأدوم فهي واجبة في كل وقت .

যে শরীয়তের উৎস ও প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে গবেষনা করবে। সে জানতে পারবে যে দৈহিক আমল আত্নিক আমলের সাথে সম্পৃক্ত। আর আত্নিক ইবাদত দৈহিক ইবাদত অপেক্ষা উত্তম, অধিক ও চিরস্থায়ী যা সর্বক্ষণ ওয়াজিব। [বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ-৩:৩৩০]

২. কুরআন তেলাওয়াত, জিকির ও ইস্তিগফার। আল্লাহ তাআলা হজ সম্পর্কিত একাধিক আয়াতে জিকির ও ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনার প্রতি আদেশ করেছেন। তালবিয়া পাঠ ও জিকিরের প্রতি উৎসাহ দিয়ে রসুল (ﷺ) বলেছেনঃ ‘‘যেই তালবিয়া পাঠ করবে বা তাকবির ধ্বনী উচ্চারন করবে তাকে অবশ্যই সুসংবাদ দেওয়া হবে।’’ এবং নবী করিম (ﷺ) কে সর্বোত্তম হাজী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন : أكثر هم الله ذكرا অধিক পরিমানে আল্লাহর জিকিরকারী।

৩. কল্যাণকর কাজ করা।

ইবনে রজব বলেন : হাজীদের যে সকল উত্তম গুনাবলী অবলম্বন করা প্রয়োজন তা নবী করিম (ﷺ) এর এই ওছিয়্যতে সন্নিবেশিত হয়েছে। যা তিনি আবু জুরাই হুযায়মিকে করেছিলেন। তিনি বলেন :

لا تحقرن من المعروف شيئا ولو أن تفرغ من دلوك في إناء المستسقي ولو أن تعطى صلة الحبل، ولو أن تعطى شسع النمل، ولو أن تمحو الشيء من طريق الناس يؤذيهم، ولو أن تلقى أخاك ووجهك إليه منطلق، ولو أن تلقى أخاك المسلم فتسلم عليه ولو أن تؤنس الوحشان في الأرض .

কল্যাণকর কোন কাজকেই তুমি তুচ্ছজ্ঞান করবে না, চাই সেটা পিপাসার্তের পাত্রে তোমার বালতি খালি করে হোক, বা মিলন রজু প্রদান করে হোক বা সামান্য স্যান্ডেলের ফিতা বা পথ হতে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূর করে হোক, বা কোন ভাইয়ের সহিত হাসি মুখে কথা অথবা কোন মুসলিম ভাইকে সালাম প্রদান করে এমনকি পৃথিবীর দুই বন্য প্রাণীর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে হোক। [লাতায়েফুল মাআরিফ: ৪১১]

ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) কে বলা হল: আল্লাহর নিকট সবচে প্রিয় ব্যক্তি কে? রাসূল উত্তরে বললেন :

أحب الناس إلى أنفعهم للناس

আল্লাহর নিকট সেই সবথেকে প্রিয় যে জনগনের সবচেয়ে বেশি উপাকার করে। [তাবারানি আওসাত : ৬:১৩৯]

৪. আল্লাহর দিকে আহবান

হাজীদের মাঝে অজ্ঞতা, মুর্খতা, বিদআত, ভুল ও নিষিদ্ধ কর্মকান্ডের ব্যাপকতা লাভ করেছে। অতএব উলামায়ে কেরাম ও দায়ী ভাইদের জন্য সুকৌশলে উত্তম পন্থায় উপদেশ ও যুক্তি তর্কের মাধ্যমে তাদেরকে দিক নির্দেশনা, উপদেশ ও ব্যাখ্যা প্রদান করা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা অবধারিত হয়ে পড়েছে। শুজা বিন ওয়ালিদ বলেন : আমি সুফিয়ান রহ. এর সঙ্গে হজ করছিলাম। দেখলাম আসা যাওয়ার সময় সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে করতে তার জবান ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। [সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৭/২৫৯]

৫. দোয়া-মুনাজাত ও প্রার্থনা

হজ চাওয়া পাওয়ার মহৎ মৌসুম। যে সময় আল্লাহর মহান দরবারে কায়মনোবাক্যে ধর্ণা দেওয়া উচিৎ। রাসুর (ﷺ) বলেন সর্বোত্তম দোয়া হল আরাফার দোয়া। [তিরমিযি : ৩৫৮৮] তিনি আরও বলেন : হাজীগণ ও ওমরা আদায়কারীগণ আল্লাহর মেহমান। তিনি তাদেরকে ডেকেছেন তারা তার ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং তারা তার নিকট যা প্রার্থনা করেছে তিনি তাদের সে প্রার্থনা নিশ্চিত কবুল করেছেন। [ছহীহ আল-জামে : ৩১৭৩]

৬. ইস্তিকামাত-দৃঢ়তা বা অবিচলতা।

হজ সম্পাদনের পর মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর অটল থাকা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমের আনুগত্য করা, যাবতীয় নিষেধাবলী পরিহার করে চলা হজ কবুল হওয়ার প্রমাণ। হাসান বসরি রহ. বলেন হজে মাবরুর হচ্ছে হজ করে দুনিয়া বিমুখ ও আখেরাতমুখী হয়ে ফিরে আসা। প্রমাণ হলো আল্লাহ বলেন—

وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآَتَاهُمْ تَقْوَاهُمْ

যারা সৎ পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে মুত্তাকি হওয়ার শক্তি দান করেন। [সূরা : মুহাম্মদ ১৭]

অতএব, হে আমার প্রিয় ভাই! সতর্ক হয়ে চলা উচিত, যেন গড়া জিনিস ভেঙ্গে না যায়, একত্রিত বস্ত্ত বিক্ষিপ্ত না হয়ে যায়, অর্জিত সম্পদ হাতছাড়া হয়ে না যায়, নতুবা সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার পর পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে এবং পরিপাটি হওয়ার পর ত্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে। স্বরণ রাখা উচিত, হজ পূর্বকৃত সমূহ অপরাধ মোচন করে দেয়, হজের বদৌলতে তুমি সদ্যপ্রসুত সন্তানের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এসেছো। অতএব সাবধান! এ মহা নেয়ামত প্রাপ্তির পর নাফরমানি করে আল্লাহর বিরোধিতা করোনা। সুতরাং আল্লাহর সাথে জীবনের নতুন অধ্যায়ের সুচনা কর। যা আনুগত্যে ভরপুর হবে। জীবনের শিরোনাম হবে ইস্তিকামাত তথা অটল ও অবিচলতা। আল্লাহ আমাদের ও তোমার সহায় হন।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন