HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হজ্জের মর্মার্থ ও শিক্ষা

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

তৃতীয়তঃ আল্লাহর নিদর্শন ও সীমারেখাসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
মহান আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ ও নির্ধারিত সীমারেখার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যে সব বিষয়কে সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলোকে যথার্থভাবে সম্মান করা আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দা হওয়ার শর্ত ও কল্যাণ অর্জনের পথ হিসাবে বিবেচিত। পবিত্র কুরআনে হজ্জের কিছু আহকাম উল্লেখ করার পর আল্লাহ বলেছেন,

﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ ﴾ [ الحج : ٣٠ ]

‘‘এটাই এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখার সম্মান রক্ষা করে, তার রবের কাছে তা উত্তম।’’ [সূরা আল-হাজ্জ :৩০] নির্ধারিত সীমারেখা বলতে পূর্বের আয়াতে বর্ণিত হজ্জের কাজগুলোকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [ الحج : ٣٢ ]

‘‘ওটাই এবং যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, তা তাদের হৃদয়ের তাহকওয়ার অন্তর্গত।’’ [সূরা আল-হাজ্জ : ৩২]

আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান প্রদর্শনের অর্থ হলো সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, ভালবাসা পোষণ ও সেগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদাত সঠিকভাবে পালন। ইমাম ইবনুল কাইয়েম রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ‘‘ইবাদাতের প্রাণ হলো শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। যখন এর কোন একটি অন্যটি থেকে বিচ্ছিন্ন হবে তখন ইবাদাতটি নষ্ট হবে।’’ [মাদারিজুস সালিকীন ২/৪৯৫]

অন্যদিকে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি তাচ্ছিল্য, অনীহা, অবজ্ঞা, অবহেলা প্রদর্শন ও তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা লংঘন করা থেকে তিনি কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। বায়তুল্লায় পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার ভয়ংকর পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿ وَمَن يُرِدۡ فِيهِ بِإِلۡحَادِۢ بِظُلۡمٖ نُّذِقۡهُ مِنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ٢٥ ﴾ [ الحج : ٢٥ ]

‘‘আর যে ব্যক্তি এতে পাপ কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করবে, আমি তাকে বেদনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবো।’’ [সূরা আল-হাজ্জ : ২৫] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿ تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَعۡتَدُوهَاۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٢٩﴾ [ البقرة : ٢٢٩ ]

‘‘এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা তা লংঘন করো না। আর যারা আল্লাহর সীমারেখাসমূহ লংঘন করে বস্তুত তারাই যালিম।’’ [সূরা আল-বাকারাহ : ২২৯]

পবিত্র হজ্জে রাসূলুল্লাহ সা. কর্তৃক আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বিচিত্রধারায় প্রকাশ পেয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ নিচে সে সবের কিছু দিক তুলে ধরা হলো :

১.ইহরামের জন্য গোসল করা ও গোসলের পর খুশবু ব্যবহার করা :

যায়েদ ইবন সাবিত রা. বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সা. ইহরামের জন্য প্রস্তুত হলেন এবং গোসল করলেন।’’ [সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ৬৬৪] উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, ‘‘আমি রাসূলুল্লাহ সা.এর গায়ে ইহরামের নিয়ত করার পূর্বে উত্তম খশবু লাগাতাম।’’ [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৮৯]

২.শুরুতেই তাওয়াফ করা :

মক্কায় আগমনের পর মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করেই রাসূলুল্লাহ সা. তাওয়াফ আরম্ভ করতেন। এটা আল্লাহর নির্ধারিত হজ্জের পবিত্র অনুষ্ঠানাদি ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধার উদাহরণ। আয়েশা রা.এর বর্ণনা অনুসারে রাসূলুল্লাহ সা. যখন মক্কায় আগমন করলেন, শুরুতেই অযু করলেন ও তাওয়াফ সম্পাদন করলেন।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬১৫]

৩.হাজারে আসওয়াদ চুম্বন :

হাজারে আসওয়াদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সা.এর যত্ন ও সম্মানবোধও আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান দেখানোর একটি অংশ। রাসূলুল্লাহ সা. হাজারে আসওয়াদকে স্পর্শ করেছেন, চুমু খেয়েছেন, এর উপর সিজদা করেছেন ও এর পাশে কেঁদেছেন। সুওয়াইদ ইবন গাফালাহ রা. বলেন, ‘‘আমি উমারকে দেখেছি, তিনি হাজারে আসওয়াদকে চুমু খেয়েছেন, আঁকড়ে থেকেছেন এবং বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে তোমার প্রতি অত্যাধিক শ্রদ্ধাশীলরূপে দেখেছি।’’ [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৭১] ইবন আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘‘আমি উমার ইবনুল খাত্তাব রা.কে দেখেছি তিনি হাজারকে চুমু খেয়েছেন ও এর উপর সিজদা করেছেন। এরপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে এরূপ করতে দেখেছি, তাই তা করেছি।’’ [আস-সুনান আল-কুবরা, বায়হাকী, ৫/৭৪] জাবির রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. হাজারে আসওয়াদ দিয়ে শুরু করে তাতে চুমু খেলেন। কান্নায় তাঁর দু’ চোখ অশ্রুসিক্ত হল।’’[আস-সুনান আল-কুবরা, বায়হাকী, ৫/৭৪]Error! Not a valid link.

৪.কুরবানী করা :

রাসূলুল্লাহ সা. যুলহুলাইফা থেকে হজ্জের কুরবানীর জন্তু হিসাবে সঙ্গে করে উট নিয়ে এসেছেন যা আল্লাহর নিদর্শন বলে পরিগণিত। আল্লাহ বলেন,

﴿ وَٱلۡبُدۡنَ جَعَلۡنَٰهَا لَكُم مِّن شَعَٰٓئِرِ ٱللَّهِ ﴾ [ الحج : ٣٦ ]

‘‘আর উটগুলোকে আমি তোমাদের জন্য করেছি আল্লাহর নিদর্শন।’’ [আল-হাজ্জ :৩৬] রাসূলুল্লাহ সা. কুরবানীর কিছু জন্তুকে চিহ্নিত করলেন এবং এগুলোর গলায় বা কুঁজে মালা ঝুলালেন। রাসূলুল্লাহ সা. এ মর্মে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন যে, যে ব্যক্তি আরোহণের জন্তু পেল সে যেন কুরবানীর পশুতে আরোহণ না করে, যেমনটি জাবির রা. এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩২৪]

৫.জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ :

হজ্জে প্রবেশ থেকে শুরু করে দশ যিলহজ্জ জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সা.এর তালবিয়া পাঠ আল্লাহর নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানাদির প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরই উদাহরণ। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা. বলেন, ‘‘যিনি সত্যসহ মুহাম্মাদকে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আমি মিনা থেকে আরাফায় রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে গিয়েছি, তিনি কখনো তালবিয়া পড়া থেকে বিরত হননি জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত, হাঁ যদি মাঝখানে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ অথবা ‘আল্লাহু আকবার’ মেলাতে চাইতেন তাহলে।’’ [সহীহ ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ২৮০৬]

৬.মুযদালিফায় মাশ‘আরুল হারামে দাঁড়িয়ে থাকা :

আল্লাহর নিদর্শনসমূহ ও হজ্জের পবিত্র অনুষ্ঠানাদির প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানোর আরেকটি উদাহরণ হলো মুযদালিফায় কুযাহ পাহাড়ের সন্নিকটে রাসূলুল্লাহ সা. এর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এ সময় তিনি আল্লাহর স্মরণে নিয়োজিত থেকেছেন, আল্লাহর আশ্রয়ে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন এবং তাঁর সামনে নিজেকে দীন-হীনরূপে পেশ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮]

৭.হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল স্থান ও কালকে সম্মান করা :

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,

«إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِى شَهْرِكُمْ هَذَا فِى بَلَدِكُمْ هَذَا»

‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত ও সম্পদ তোমাদের জন্য হারাম, তোমাদের এ মাস. এ শহর ও এ দিবস হারাম হওয়ার মতই।’’ [সুনান আবি দাউদ, হাদীস নং ১৭৬৫] তিনি আরো বলেছেন,

«إِنَّ أَعْظَمَ الأَيَّامِ عِنْدَ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَوْمُ النَّحْرِ ثُمَّ يَوْمُ الْقَرّ»

‘‘ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত দিন কুরবানীর দিন ও এর পর পরবর্তী দিন।’’ [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭৬৭]

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, হজ্জ পালনকারীদের অনেকে আল্লাহর নির্দেশ ও নিদর্শনসমূহের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের প্রতি আন্তরিক নয়। ফলে অনেকক্ষেত্রেই তাদের দ্বারা প্রকাশ্যে সীমালংঘিত হচ্ছে, যা পবিত্র হজ্জের অমর্যাদারই নামান্তর। এটা সঠিকভাবে আল্লাহর নির্দেশের মূল্যায়ন ও মর্যাদা প্রদর্শনে ব্যর্থতারই আলামত। ইমাম ইবনুল কাইয়েম রাহেমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘‘আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা দেখালো না ঐ ব্যক্তি যার কাছে আল্লাহর নির্দেশ তুচ্ছ বলে মনে হল, ফলে তা অমান্য করলো। তাঁর নিষেধাজ্ঞা হালকা বলে মনে হলো ফলে সে নিষিদ্ধ কাজটি করে ফেলল। তাঁর হক ও অধিকারটি হীন বলে মনে হলো ফলে সে তা নষ্ট করলো। তাঁর যিকর নিরর্থক বলে মনে হলো ফলে সে তা উপেক্ষা করলো ও তার হৃদয় এ থেকে গাফিল রইল। আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে নিজের প্রবৃত্তিই তার কাছে প্রাধান্যপ্রাপ্ত হলো। আল্লাহর আনুগত্যের চেয়ে তার সৃষ্টির আনুগত্য তার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো।’’ [আল-জাওয়াবুল আল-কাফী পৃঃ৯৮]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন