HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হজ্জের মর্মার্থ ও শিক্ষা

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

চতুর্থতঃ শির্কে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গ থেকে দায়মুক্ত হবার ঘোষণা ও ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বিপরীত কাজ করা :
ইসলাম ও শির্ক বিপরীতধর্মী দু‘টি বিষয় যা কোনদিন একত্রে সহাবস্থান করতে পারে না। এ দুয়ের একটির উপস্থিতির অর্থ অন্যটির প্রস্থান, ঠিক যেমনটি হয়ে থাকে দিবস-রজনীর অনিবার্য বৈপরিত্বের ক্ষেত্রে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হজ্জের সময় অত্যন্ত সচেতনভাবে মুশরিকদের উল্টো কাজ করতে যত্নবান ছিলেন ও হজ্জকর্মে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আদর্শের অনুসরণ করেছেন। যেসব হজ্জকর্মে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইচ্ছাকৃতভাবে মুশরিকদের বিপরীতে কাজ করেছেন তা অনেক, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

তালবিয়া : তালবিয়া পড়তে গিয়ে মুশরিকরা শিরকের ঘোষণা দিত। তারা বলত, إِلَّا شَرِيكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ “তবে তোমার একজন শরীক আছে, যার তুমিই মালিক এবং তার যা কিছু রয়েছে তারও”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস-২০৩২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে তালবিয়ায় নির্ভেজাল তাওহীদের ঘোষণা দিলেন এবং ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করলেন আর প্রবলভাবে শিরক থেকে দায়মুক্তির অমোঘবাণী উচ্চারণ করলেন ‘লা-শারীকা-লাকা’ বলে।

উকুফে আরাফা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থানকে হজ্জের মূল প্রোগ্রামে পরিণত করলেন তার ঐতিহাসিক বাণীর মাধ্যমে যে, الْحَجُّ عَرَفَة “আরাফায় অবস্থানই হলো হজ্জ”। [সুনান আন্-নাসায়ী, হাদীস-৩০১৬] হাজীদেরকে নিয়ে তার এ আরাফার অবস্থান ছিল মুশরিকদের পুরোপুরি বিপরীত; কেননা মুশরিকরা আরাফায় অল্প কিছু সময় থেকে তারপর মুযদালিফায় চলে যেতো এ দাবি সাপেক্ষে যে, আমরা হারামের সীমানার ভেতরে তেকেই প্রস্থান করব, হারামের বাহির থেকে নয়। [সহীহ মুসিলিম, হাদীস-১২১৮]

শুধু তা ই নয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার খুতবায় জাহিলী যুগে মুশরিকদের কৃত যাবতীয় শির্কী ও হারাম কার্যকলাপ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার ও দায়মুক্ত হবার যুগান্তকারী ঘোষণা দিলেন। তিনি বললেন,

«أَلاَ إِنَّ كُلَّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَأَوَّلُ دَمٍ أَضَعُهُ دِمَاؤُنَا دَمُ » . قَالَ عُثْمَانُ « دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ » . وَقَالَ سُلَيْمَانُ « دَمُ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ » . وَقَالَ بَعْضُ هَؤُلاَءِ كَانَ مُسْتَرْضَعًا فِى بَنِى سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ « وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُهُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ»

“জাহিলী যুগের সকল কিছু আমার দু’পায়ের নিচে দলিত হলো, জাহিলী যুগের সকল হত্যা-পণ বাতিল বলে ঘোষিত হলো, আর আমাদের হত্যাসমূহের প্রথম হত্যা – ইবনে রাবিয়া/ রাবিয়া ইবনুল হারিস ইবনু আবদুল মুত্তালিবের হত্যা-পণ বাতিল বলে ঘোষণা করছি। বনী সা’দে দুগ্ধপান অবস্থায় তাকে হুযাইল গোত্র হত্যা করে। আর জাহিলী যুগের সকল সুদ মওকুফ বলে ঘোষিত হলো। আর প্রথম সূদ মওকুফ করছি আমাদের সুদ, আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিবের সুদ। এর পুরোটাই মওকুফ। [সহীহ মুসলিম, হাদীস-১২১৮]

আরাফাহ ও মুযদালিফা থেকে প্রস্থান : আরাফা ও মুযদালিফা থেকে প্রস্থানের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিরাচিরিত মুশরিকী প্রথা রহিত করে দিলেন। মুশরিকদের প্রথা ছিল – সূর্যাস্তের আগেই আরাফা ত্যাগ করা এবং পরদিন সূর্যোদয়ের পর মুযদালিফা ত্যাগ করা। পক্ষান্তরে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফা থেকে সূর্যাস্তের পর এবং মুযদালিফা থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে প্রস্থান করেন। আর মুমিনদেরকেও সে নির্দেশনা প্রদান করেন। সাহাবী মিসওয়ার ইবন মাখরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- بِعَرَفَةَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ : «أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ أَهْلَ الشِّرْكِ وَالأَوْثَانِ كَانُوا يَدْفَعُونَ مِنْ هَا هُنَا عِنْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ حَتَّى تَكُونَ الشَّمْسُ عَلَى رُءُوسِ الْجِبَالِ مِثْلَ عَمَائِمِ الرِّجَالِ عَلَى رُءُوسِهَا هَدْيُنَا مُخَالِفٌ هَدْيَهُمْ » . وَكَانُوا يَدْفَعُونَ مِنَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ عِنْد طُلُوعِ الشَّمْسِ عَلَى رُءُوسِ الْجِبَالِ مِثْلَ عَمَائِمِ الرِّجَالِ عَلَى رُءُوسِهَا هَدْيُنَا مُخَالِفٌ لِهَدْيِهِمْ .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফায় আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলেন এবং বললেন, ‘মুশরিক ও পৌত্তলিকরা এখান থেকে প্রস্থান করত সূর্যাস্তের সময় যখন সূর্য পাহাড়ের উপর পুরুষের পাগড়ীর মত অবস্থান করত। আমাদের আদর্শ তাদের থেকে ভিন্ন। তারা মাশআরুল হারাম থেকে পাহাড়ের চূড়া বরাবর ঠিক পাগড়ীর ন্যায় সূর্য উঠার সময় প্রস্থান করত। [বায়হাকী, আস-সুনান আল-কুবরা, হাদীস-৯৭৯৩]

হজ্জের পর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উমরা : মুশরিকরা বিশ্বাস করতো যে, সফর মাসের আগে উমরা করলে তা শুদ্ধ হয় না। মুশরিকদের থেকে বিশ্বাস ও আমলে মুসলিম ব্যক্তিরা যে ভিন্ন, তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে হজ্জের পর পরই উমরাহ করার অনুমতি প্রদান করেন। ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “আল্লাহর কসম, মুশরিকদের প্রথা বাতিল করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশাকে জিলহজ্জ মাসে উমরাহ করার অনুমতি দিয়েছেন। কুরাইশদের এ গোত্রটি ও তাদের অনুসারীরা বলতো, যখন উটের অনেক লোম গজাবে ও পৃষ্ঠদেশ সুস্থ হবে এবং সফর মাস প্রবেশ করবে তখনই উমরাকারীর উমরাহ শুদ্ধ হবে। তারা জিলহজ্জ ও মুহররম মাস অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে উমরাহ করা হারাম মনে করত”। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস-১৯৮৭]

শির্কী কাজ করা হয়েছে এমন স্থানসমূহে ইসলামের নিদর্শন প্রকাশ : মিনার খায়ফ এলাকার কুরাইশ ও কিনানা গোত্র এ মর্মে বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধে কসম খেয়েছিল যে, তারা যতক্ষণ না মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের কাছে সোপর্দ করবে, ততক্ষণ তাদের সাথে তারা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না ও বেচাকেনা করবে না। [সহীহ বুখারী, হাদীস-১৫৯০] অবশ্য আল্লাহ তাদের কোন কাজই সিদ্ধ হতে দেননি, বরং ব্যর্থ মনোরথ করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মিনার খায়েফের এ স্থানগুলোতে তিনি ইসলামের নিদর্শন উচ্চকিত করেছেন। ইবনুল কাইয়েম রাহেমাহুল্লাহ বলেন, “এটিই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভ্যাস যে, তিনি কুফরের নিদর্শনসমূহের স্থানে তাওহীদের ঝান্ডা উড্ডীন করতেন। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাত ও উযযার জায়গায় তায়েফের মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুশরিকদের বিপরীতে চলার জন্য সাহাবাদেরকেও তিনি নির্দেশ দিতেন। যেমন, কুরাইশদের নিয়ম ছিল – ‘হজ্জ পালন করতে বাহির থেকে আসা কোন ব্যক্তি কুরাইশদের পোষাক ব্যতীত নিজেদের পোষাকে তাওয়াফ করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি এ পোষাক পাবে না সে বিবস্ত্র হয়ে তাওয়াফ করবে’। [ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৩/৫৬৫]

এ মন্দ প্রথা অপনোদন করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবম হিজরীতে হজ্জ বিষয়ে মানুষের মধ্যে এ বলে ঘোষণা দিতে নির্দেশ দিলেন যে, وَلَا يَطُوفُ بِالْبَيْتِ عُرْيَان “বিবস্ত্র হয়ে কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস-১৬২২]

জাহিলী যুগে মুশরিকরা মূর্তির উদ্দেশ্যে হজ্জ পালন করত এবং মনে করত যে, সাফা-মারওয়ার মধ্যে সাঈ করা বৈধ নয়। তাদের এ বিষয়টি যে, ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় সেটি প্রকটিত হয় যখন আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী অবতীর্ণ হলো :

﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ ١٥٨ ﴾ [ البقرة : ١٥٨ ]

“নিশ্চয়ই সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভূক্ত”। [সূরা আল-বাকারাহ : ১৫৮] এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল আনসারদের কিছু লোকের ব্যাপারে যারা জাহিলী যুগে মানতের উদ্দেশ্যে হজ্জের নিয়ত করত। তারপর সাঈ করা - তাদের বিশ্বাস মতে – তাদের জন্য অবৈধ হয়ে যেত। অতঃপর তারা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হজ্জ করতে আসল তখন বিষয়টি তার কাছে উপস্থাপন করলে আল্লাহ এ আয়াতটি নাযিল করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

«مَا أَتَمَّ اللَّهُ حَجَّ امْرِئٍ وَلَا عُمْرَتَهُ لَمْ يَطُفْ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ»

“আল্লাহ কারো হজ্জ বা উমরাহ পরিপূর্ণ করবেন না, যে সাফা-মারওয়ার মধ্যে সাঈ করেনি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস-১৭৯০] এ জন্যই ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেছেন, “মুশরিকদের বিপরীত করার মনোবৃত্তির উপর শরীয়ত স্থির হয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে হজ্জের আচার অনুষ্ঠানে”। [ইবনুল কাইয়েম, হাশিয়া আলা আবি দাঊদ ৫/১৪৬]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন