hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নবীর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা ও তার প্রভাব

লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ সালিহ আল-‘উসাইমীন রহ.

রজব মাসে করনীয়
১- রজব মাস হারামকৃত চার মাসের একটি। সেগুলো হলো: যুল-কা‘আদা, যুল-হিজ্জ্বা, মুহাররম, লাগাতার এ তিন মাস একসাথে ও জামাদিউস সানী ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজব মাস। এ চার মাসের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন এ চার মাসের মধ্যে কোনটি উত্তম? কতিপয় শাফে‘য়ী বলেছেন, রজব মাস উত্তম। তবে ইমাম নাওয়াবী ও অন্যান্যরা এ মতকে দুর্বল বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মুহাররম মাস। ইমাম হাসান এ মতের কথক, ইমাম নাওয়াবী এটাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, যুল-হাজ্জ্ব মাস। সাঈদ ইবন জুবাইর ও অন্যান্য এটা বলেছেন। এটাই বেশী গ্রহণযোগ্য। “আল-লাতা-য়িফ” গ্রন্থে এগুলো উল্লেখ আছে। আমার মতে, যুল-হাজ্জ্ব মাসই সর্বোত্তম। কেননা এ মাসের দু’টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একটি হলো: এটি হাজ্জ্বে মাস, এতে হাজ্জ্বে আকবরের দিন রয়েছে, আর অন্যটি হলো এটি হারামকৃত চার মাসের অন্তর্ভুক্ত।

২- রজব মাসকে জাহেলী যুগে লোকজন অনেক সম্মান করত। অন্যান্য হারাম মাসের মতো এ মাসে তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম মনে করত।

আলেমগণ এ মাসে যুদ্ধ হারাম হওয়ার ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। অধিকাংশের মতে, যুদ্ধ হারাম হওয়ার বিধান মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে। এ মাসে ও অন্য সব হামারকৃত মাসে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা জায়েয। ‘উমুমে আদিল্লা (সাধারণ দলিল প্রমাণ) এর কারণে তারা এ মত দিয়েছেন।

তবে সহীহ কথা হলো, এ মাসে যুদ্ধ শুরু করা হারাম। আর যদি কাফিররা যুদ্ধ শুরু করে অথবা হারাম মাসে পূর্ব থেকে যুদ্ধ চলছিল তবে যুদ্ধ করতে কোনো অসুবিধে নেই।

৩- রজব মাসে জাহেলী যুগের লোকেরা সাওম পালন করে সম্মান প্রদর্শন করত, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ মাসে বিশেষ কোনো সাওমের বিধান পাওয়া যায় না।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন: “রজব মাসে সাওম পালনের সব হাদীস দুর্বল। বরং মউদু‘ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যাচার)। আহলে ইলমদের কাছে এগুলো নির্ভরযোগ্য নয়। এগুলো এমন দুর্বল হাদীসের অন্তর্ভুক্তও না যেগুলো ফযিলতের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়, বরং সব গুলো মুউদু‘ ও মিথ্যা হাদীস।” [ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়া: ২৫/২৯০।]

এমনকি তিনি আরো বলেছেন, “যারা রজব মাসে খাবার-পানীয় থেকে বিরত থাকতেন তাদেরকে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রহার করতেন। তিনি বলতেন: তোমরা রজব মাসকে রমযান মাসের মত করো না”।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তার পরিবারের লোকজন রজব মাসে সাওম পালনের জন্য পানির পাত্র কিনেছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটি কি? তারা বলল, রজব মাস। তিনি বললেন: তোমরা কি এটাকে রমাদানের সাথে সাদৃশ্য করবে? তিনি সে পাত্রগুলো ভেঙ্গে ফেললেন।

হাফেয ইবন রজব “আল-লাতা-য়িফ” গ্রন্থে (ইবন তাইমিয়্যাহ এর) “আল-ফাতাওয়া” গ্রন্থের মতই উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উক্ত বাণী উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো সংযোগ করেছেন যে, জাহেলী যুগের মানুষ রজব মাসকে সম্মান করত। ইসলামের আগমন হলে এটা বাদ দেওয়া হয়েছে।

৪- আরবরা রজব মাসকে সম্মান করত। এ মাসে তারা উমরা পালন করত। কেননা যিল-হাজ্জ্ব মাসে তারা বাইতুল্লাহর হজ্জ্ব করত। আর মুহাররম থেকে রজব হলো মধ্য বছর। তাই তারা এ মাসে উমরা করত আর বছরের শেষে যুল-হাজ্জ্বে হজ্জ্ব করত।

হাফেয ইবন রজব “আল-লাতা-য়িফ” গ্রন্থে আরো বলেন, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রজব মাসে উমরা পালন করা মুস্তাহাব মনে করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ মাসে উমরা করতেন। ইবন সীরীন সালাফদের থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তারা এ মাসে উমরা পালন করতেন।

৫- রজব মাসে “আর-রাগা-য়েব” নামে নামায আছে (বলে বলা হয়)। প্রথম জুমাবার মাগরিব ও ইশার মাঝামাঝি সময় এ নামায পড়তে হয়। বারো রাকাত নামায। হাফেয ইবন হাজার “তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওরাদা ফি ফদলে রজব” কিতাবে এ কথা উল্লেখ করেছেন।

ইমাম নাওয়াবী “শরহে আল-মুহাযযাব” কিতাবে বলেছেন, “আর-রাগায়ীব” নামের সালাত বারো রাকাত, যা মাগরিব ও ইশার মাঝামাঝি সময় রজব মাসের প্রথম জুমাবারে পড়তে হয়, আর শা‘বানের মধ্যরাতে একশত রাকাত নামায”। [শরহে মুহাযযাব: ৩/৫৪৮]

এ দু’ধরণের নামায পড়া বিদ‘আত, নিষিদ্ধ ও পাপের কাজ। “ক্বুওতুল ক্বুলূব” ও “ইহইয়া ‘উলুমুদ্দিন” কিতাবে এর উল্লেখ থাকায় কেউ যেন ধোঁকায় না পড়ে। কেননা এটা বিদ‘আত। কাউকে এ ধোঁকায়ও যেন না ফেলে যে, কোনো কোনো ইমাম এর হুকুম অন্য নামাযের সাথে কিয়াস করে দিয়ে থাকেন, ফলে তারা একে মুস্তাহাব বলেছেন; কেননা স্পষ্ট ভুল।

ইমাম আবু মুহাম্মদ আব্দুররহমান ইবন ইসমাঈল আল-মাক্বদিসী এ ব্যাপারে একটি মূল্যবান কিতাব লিখেছেন। তিনি এতে চমৎকারভাবে বিষয়টি আলোচনা করেছেন।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ (রহ.) “মাজমু‘উল ফাতাওয়া” (২৩/১২৪) কিতাবে বলেছেন, “উলামা কিরামের ঐকমত্যে “সালাতুর-রাগায়েব” বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর খলিফাগণ এটার প্রচলন করেন নি। দ্বীনের কোনো ইমাম যথা: ইমাম মালিক, শাফেয়ী, আহমদ, আবু হানিফা, ছাওরী, আওঝায়ী, লাইস প্রমুখ কোনো ইমাম একে মুস্তাহাব বলেননি। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সবগুলো হাদীসবিদদের ঐকমত্যে মিথ্যা হাদীস”।

ইবন রজব “আল-লাতা-য়িফ” কিতাবে বলেছনে, “রজব মাসে কোনো নির্দিষ্ট নামায নেই। রজবের প্রথম জুম্মাবারের রাতে “সালাতুর-রাগায়েব” নামে নামায সম্পর্কে বর্ণিত সব হাদীস মিথ্যা, বাতিল ও ভিত্তিহীন”।

তিনি আরো বলেছেন, “পূর্ববর্তী কোনো আলেম থেকে এর বর্ণনা পাওয়া যায়না, এটা তাদের পরে আবিষ্কৃত হয়েছে। হিজরী চতুর্থ শতাব্দির পরে এটা প্রথম প্রকাশ পেয়েছে; এজন্যই মুতাকাদ্দিমীন তথা পূর্ববর্তী মনিষীগণ এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না ও এ ব্যাপারে কিছু বলেন নি”।

শাওকানী “আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমু‘আ” (পৃ:৪৮) কিতাবে বলেছেন, “সব হাফিযগণ (হাদীসবিদ) এ ব্যাপারে ঐকমত্য যে, “সালাতুর-রাগায়েব” মওদু‘ তথা মানুষের বানানো”, এমনকি তিনি আরো বলেছেন, “হাদীস সম্পর্কে যার সামান্যতম জ্ঞান আছে সে জানে যে, এটা মওদু‘ তথা মানুষের বানানো”। তিনি আরো বলেছেন, “ফাইরোযাবাদী” তার “আল-মুখতাসার” কিতাবে বলেছেন: সকলের ঐকমত্যে এ নামায বানোয়াট”, “আল-মাক্বদিসী’ও এ কথা বলেছেন”।

শাওক্বানী উপরোক্ত কিতাবে রজবের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের নামাযের ফযিলত সম্পর্কে একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন, “এটা জুওযাক্বানী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এটা মাউদু‘ তথা বানোয়াট এবং এর সব রাবী অজ্ঞাত”।

৫- রজব মাসে কিছু লোক মদিনায় গিয়ে “আর-রজবীয়া” নামে বিশেষ এক ধরণের যিয়ারত করত। তারা মনে করত, এ ধরণের যিয়ারত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তারা কতিপয় স্থান যিয়ারত করত, তন্মধ্যে কিছু স্থান যিয়ারত করা শরীয়ত সম্মত, যেমন: মসজিদে নববী, মসজিদে ক্বুবা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর, তাঁর দু’সাহাবীর কবর, জান্নাতুল বাকী ও ওহুদ যুদ্ধে নিহত শহীদদের কবর যিয়ারত।

আবার তারা এমন কিছু স্থান যিয়ারত করত যা শরীয়তসম্মত নয়, যেমন: মসজিদে গামামা, মসজিদে যুল-ক্বিব্লাতাইন ও সাত মসজিদ যিয়ারত। “আর-রজবীয়া” নামের এ যিয়ারত আহলে ইলমের কাছে কোনো ভিত্তি নেই। এটা বিদ‘আত। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মসজিদে নববী হলো সে সব মসজিদের অন্তর্ভুক্ত যেসব মসজিদ যিয়ারত শরীয়তসম্মত। সেগুলো হলো: মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আক্বসা। কিন্তু এ সব মসজিদে নির্দিষ্ট কোনো মাসে বা দিনে যিয়ারত করলে দলীলের প্রয়োজন। অথচ রজব মাসে নির্দিষ্ট সময় এ সব স্থানে যিয়ারতের কোনো দলিল নেই।

অতএব, আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রত্যাশায় রজব মাসের নির্দিষ্ট সময় যিয়ারত করা বিদ‘আত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»

“যে আমাদের শরীয়ত বহির্ভূত কোনো কাজ করবে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে”। [মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ»

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেউ আমাদের এ শরীয়তে সংগত নয় এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে”। [বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭।]

৬- মুতাআখখিরীন তথা পরবর্তী কারো কারো মতে, রজব মাসের সাতাশ তারিখে ইসরা ও মি‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল। এ তারিখে তারা অনুষ্ঠান করত। এ দিনটিতে তারা সরকারী ছুটি কাটাতো। কিন্তু এ দিনে ইসরা ও মি‘রাজ সংঘটিত হলে দু’টি জিনিস প্রমাণ করতে হবে:

প্রথমত: ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

দ্বিতীয়ত: ইবাদত ভেবে অনুষ্ঠান করা।

এ মাসে ইসরা ও মি‘রাজ হওয়ার ব্যাপারে ‘উলামা কিরাম মতানৈক্য করেছেন:

ইবন কাসীর “আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া” (৩/১১৯) কিতাবে বলেছেন: যুহরী ও ‘উরওয়াহ বলেন, “ইসরা ও মি‘রাজ হয়েছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনা যাওয়ার এক বছর আগে”। তাই এটা রবিউল আউয়াল মাসে হয়েছিল।

সুদ্দী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হিজরতের ষোল মাস পূর্বে হয়েছিল, ফলে যুল-ক্বাদ মাসে সংঘটিত হয়েছিল।

হাফেয আব্দুল গনী ইবন সুরুর আল-মাক্বদিসী তার সীরাত গ্রন্থে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, যা সহীহ নয়: “ইসরা ও মি‘রাজ রজব মাসের সাতাশ সংঘটিত হয়েছিল। কেউ কেউ মনে করেন, এটা রজবের প্রথম জুম্মা বারের রজনীতে অর্থাৎ ‘আররগায়েব’ এর রাতে সংঘটিত হয়েছিল। এটা মানুষের মাঝে বহুল প্রচলিত বিদ‘আত, এর কোনো ভিত্তি নেই”।

আস-সাফফারিনী তার “শরহে আক্বীদা” (২/২৮০) গ্রন্থে বলেছেন: ওয়াক্বেদী তার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, “ইসরা ও মি‘রাজ নবুয়াতের দ্বাদশ সনে সতেরোই রমযান, শনিবার সংঘটিত হয়েছিল, যা হিজরতের আঠারো মাস পূর্বে ছিল। তিনি তার শাইখদের থেকে আরো বর্ণনা করেন, রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিজরতের এক বছর পূর্বে রবিউল আউয়াল মাসের সতেরো তারিখ রাতে ইসরা ও মি‘রাজে নেওয়া হয়েছিল। আবু মুহাম্মদ ইবন হাযাম এমতের উপর ইজমা দাবী করেছেন। এটা ইবন আব্বাস ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মত।”

অতঃপর তিনি ইবন জাওযী রহ. এর মত উল্লেখ করেছেন: “এটা রবিউল আউয়াল বা রজব বা রমাদান মাসে সংঘটিত হয়েছিল।”

হাফেয ইবন হাজার “ফাতহুল বারী” (৭/২০৩) গ্রন্থে সহীহ বুখারীর মি‘রাজ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন: “ইসরা ও মি‘রাজের ব্যাপারে ‘উলামায়ে কিরাম মতানৈক্য করেছেন, যা দশটিরও অধিক। তন্মধ্য থেকে তিনি উল্লেখ করেছেন, এটা হিজরতের এক বছর পূর্বে হয়েছিল। এ মতটি ইবন সা‘দ ও অন্যান্যরা বলেছেন। ইমাম নাওয়াবী এমতে খুব জোর দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এটা হিজরতের আট মাস পূর্বে, বা এক বছর, বা এগারো মাস, বা এক বছর দু’মাস, বা এক বছর তিন মাস, বা এক বছর পাঁচ মাস, বা আঠারো মাস, বা তিন বছর বা পাঁচ বছর পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেছেন, ইসরা ও মি‘রাজ রজব মাসে সংঘটিত হয়েছিল, এ মতটি ইবন আব্দুল বার বলেছেন, নাওয়াবী “আর-রাওদা” কিতাবে এ মতকে শক্তিশালী বলেছেন।” কিন্তু অনেকেই বলেছেন, “আর-রাওদা” কিতাবে নাওয়াবীর এ কথা পাওয়া যায় না।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. থেকে তার ছাত্র ইবনুল কাইয়ুম “যাদুল মা‘আদ” কিতাবে কতিপয় দিন, মাস ইত্যাদির মর্যাদা অধ্যয়ে যা উল্লেখ করেছেন তার জবাবে শাইখ (ইবন তাইমিয়াহ) বলেছেন: অতঃপর লেখক এখানে যে রাতে ইসরা (ও মি‘রাজ) সংঘটিত হয়েছিল সে রাতের মর্যাদা লাইলাতুল ক্বদরের চেয়ে উত্তম বলেছেন; যদি তিনি রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে রাতে ইসরা করানো হয়েছিল সে রাতকে সাধারণভাবে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য লাইলাতুল ক্বদরের চেয়েও বেশী মর্যাদাবান মনে করেন এবং এ রাতে সালাত আদায় ও দু‘আ করা ক্বদরের চেয়েও উত্তম মনে করেন তাহলে তা বাতিল। মুসলিম কোনো ইমামই এ কথা বলেননি। এটা দ্বীন ইসলামে ফাসাদের ধারাবাহিকতার ফলাফল। তাও যদি ইসরার রাত নির্দিষ্ট ভাবে জানা যেত। অথচ ইসরার মাস, দিন বা দশক নির্দিষ্টভাবে কোনটাই জানা যায় নি; বরং এর রেয়াওয়াত মুনকাতি‘ ও নানারূপ। এ ব্যাপারে কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল নেই। মুসলিমদের জন্য ইসরার রাত্রিতে নির্দিষ্ট কোনো নামায বা ইবাদতের বিধান নেই”।

এমনকি তিনি এটাও বলেছেন: এ কথা পাওয়া যায় না যে, মুসলিমদের কেউ ইসরার রাত্রিকে অন্যান্য রাত্রি অপেক্ষা ফযিলতপূর্ণ বলেছেন। বিশেষ করে লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রির তুলনায়। সাহাবা ও তাবেয়ীরা এ রাতে বিশেষ কোনো আমল করেছেন বলে পাওয়া যায় না। তারা এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি, এজন্যই এটি নির্দিষ্টভাবে কোনো রাতে তাও জানা যায় না”।

এ সব কিছু ইসরা ও মি‘রাজের রাত নির্ধারণে ঐতিহাসিক দিক। আমরা আলোচনা করেছি যে, ইসরা ও মি‘রাজের রাত, মাস বা বছর নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না।

দ্বিতীয়ত: ইসরা ও মি‘রাজের রাতকে ঈদের রাত মনে করা এবং এতে অনুষ্ঠান করা, আলোচনা করা এবং ইসরা ও মি‘রাজ সম্পর্কে মউদু‘ ও দ‘য়ীফ (বানোয়াট ও দুর্বল) হাদীস বর্ণনা ইত্যাদি পালন করা যে দীনে ইসলামে নতুন আবিষ্কার তথা বিদ‘আত এতে কেউ সন্দেহ করতে পারে না, যদি সে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে মুক্ত থাকে এবং এর বাস্তব অবস্থা জানে। কেননা এ রাতে কোনো অনুষ্ঠান সাহাবা বা তাবে‘য়ীদের যুগে প্রচলন ছিল না। ইসলামে তিনটি ঈদ ছাড়া কোনো ঈদ নেই, তা হলো: ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও জুম্মার দিন, এটা সাপ্তাহিক ঈদ। এ তিনটি ঈদ ছাড়া আর কোনো ঈদ ইসলামে নেই।

আরও জেনে রাখা দরকার যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত অনুসরণ হলো কথা ও কাজে তাঁর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা। যা থেকে বারণ করা হয়েছে তা থেকে বিরত থাকা। অতএব যে ব্যক্তি এর চেয়ে বেশী করবে বা কম করবে সে রাসূলের অনুসরণে ত্রুটি করল। কিন্তু বাড়িয়ে কোনো কাজ করা অতি জঘন্য কাজ। কেননা এ কাজের দ্বারা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রগামী হয়ে গেছে বলে বিবেচিত হয়ে যায়। (যা শরীয়তে স্পষ্ট হারাম) তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি যা মুসলিম ছাড়াও সব বিবেকবান লোক বুঝতে পারে। পরিপূর্ণ মু’মিনের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে যেসব বিধান শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত করেছেন সেগুলো আমল করবে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক যা শরীয়তসম্মত তা থেকে বাড়ানোই হলো অপূর্ণতা।

মু’মিনের উচিত আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে প্রবৃত্তির চাহিদা মোতাবেক নতুন কিছু সংযোগ করা থেকে বিরত থাকা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ থেকে কড়াভাবে নিষেধ করেছেন। জুম্মার খুতবায়ে এটি তিনি ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন:

«أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ، وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ، وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»

“অতঃপর উত্তম হাদীস (কথা) হলো আল্লাহর কিতাব, আর উত্তম হিদায়েত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েত, সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত (নতুন আবিষ্কার) করা, আর সব বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা।” সহীহ মুসলিমে এভাবে বর্ণিত হয়েছে [মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।]। আর নাসাঈর বর্ণনায় আছে, “সব ভ্রষ্টতা যাবে জাহান্নামে” [নাসাঈ, কিতাবু সালাতিল ঈদাইন, বাবু কাইফাল খুৎবা, হাদীস নং (১৫৭৮); ইবন মাজাহ, আল-মুকাদ্দামাহ, বাবু ইজতিনাবিল বিদা‘ ওয়াল জাদাল, নং (৪৬)।]।

আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে দৃঢ়পদ রাখেন, প্রকাশ্য ও গোপন সব ফিতনা থেকে তিনি যেন আমাদেরকে মুক্ত রাখেন, অবশ্যই তিনি অতি দানশীন ও দয়াবান।

আমি “সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা” শীর্ষক এ আলোচনা মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রুমে বৃহস্পতিবার রাতে ৯/৭/১৪১৯ হিজরী তারিখে করেছি। আলোচনার সময় হয়ত কিছু বেশী বা কম করেছি।

লেখক:

মুহাম্মদ সালিহ আল-‘উসাইমীন

১৩/৭/১৪১৯ হিজরী।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন