HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল-কুরআনুল কারীমের অর্থানুবাদ প্রেক্ষাপট ও আবশ্যকীয় জ্ঞান

লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব

কে প্রথম বাংলায় পবিত্র কুরআন অনুবাদ করেছেন ?
হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ লিখেন, ‘কে প্রথম কুরআনের বাংলা অনুবাদের সৌভাগ্যজনক এ কাজটি শুরু করেন তা নিয়ে আমাদের মাঝে বিভ্রান্তির অন্ত নাই। কে বা কারা আমাদের সমাজে এ কথাটা চালু করে দিয়েছে যে, ব্রাহ্মণ ধর্মের নব বিধান মণ্ডলীর নিষ্ঠাবান ধর্মপ্রচারক গিরিশ চন্দ্র সেন সর্ব প্রথম কুরআনের বাংলা অনুবাদ করেছেন। আসলে আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে যাদের সর্বময় আধিপত্য বিরাজমান তারাই যে কথাটা ছড়িয়ে তাতে সন্দেহ নেই। দুঃখ লাগে যখন দেখি আমাদের এ অঞ্চলের দু’একজন কুরআনের মুদ্রাকর ও প্রকাশকও তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ঐতিহাসিকভাবে অসমর্থিত এমনি একটি কথা অবাধে প্রচার করে চলেছেন। অথচ কুরআন ও কুরআনের শিক্ষার প্রতিটি ছাত্রই জানেন যে তার অনুবাদের পাতায় কুরআনের শিক্ষা সৌন্দর্য বাকধারার সঙ্গে ব্রাহ্মবাদের প্রচারনীতিতে কুরআনের প্রতি ক্ষমাহীন বিদ্বেষ ছড়ানো রয়েছে।

গিরিশচন্দ্র সেনের ৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে আরেকজন অমুসলিম রাজেন্দ্রলাল মিত্র কুরআনের প্রথম পারার অনুবাদ করেন। কলকাতার আয়ুর্বেদ প্রেস নামক একটি ছাপাখানা থেকে এক ফর্মার (১৬ পৃষ্ঠা) এই অনুবাদটি ৫০০ কপি ছাপা হয়েছিলো।

১৮৮৫ সালে গিরিশচন্দ্র সেনের এই অনুবাদের প্রায় ৮০ বছর আগে অর্থাৎ ১৮০৮ সালে পূর্ব বাংলার রংপুর নিবাসী একজন সাধারণ কুরআনপ্রেমী মাওলানা আমিরুদ্দীন বসুনিয়া কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদের কাজে হাত দেন। তিনি সে সময় কুরআনের আমপারার অনুবাদ সম্পন্ন করেন। এই ঐতিহাসিক তথ্যের সমর্থন রয়েছে ঢাকা ও কলকাতার প্রায় সব ক’জন কুরআন গবেষকের লেখায়। উভয় বাংলার প্রায় সব ক’টি কুরআন গবেষণা সংস্থা, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানই এ ব্যাপারে একমত যে, মওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়াই সে সৌভাগ্যবান মানুষ যিনি বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের এই মহান কাজটির শুভ সূচনা করেন।

গত এক দশকে আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের ইতিহাসের ওপর যেসব পিএইচডি থিসিস লেখা হয়েছে তাতেও এ তথ্য সমভাবে সমর্থিত হয়েছে। ১৮১৫ সালে বাংলা মূদ্রণ যন্ত্রের ব্যবহারের পরপর কলকাতার মীর্জাপুরের পাঠোয়ার বাগানের অধিবাসী আকবর আলী এ কাজে এগিয়ে আসেন। তিনিও মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়ার মতো শুধু আমপারা ও সূরা ফাতেহার বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন তার অনূদিত অংশটি ছিলো পুথির মতো। তার এ অনুবাদটি কুরআনের কোনো মৌলিক অনুবাদও ছিলো না। তিনি যেটা করেছেন তা ছিলো ১৭৮০ সালে অনূদিত শাহ আবদুল কাদেরের উর্দূ অনুবাদের বাংলা। সরাসরি কুরআনের অনুবাদ নয় বলে সুধী মহলে এটা তেমন একটা স্বীকৃতি লাভ করে নি। আসলে ব্যক্তি যতো গুরুত্বপূর্ণ হোন না কেন তিনি যদি কুরআনকে কুরআন থেকে অনুবাদ না করেন তাহলে তাকে কখনো কুরআনের অনুবাদ বলে চালিয়ে দেয়া উচিত নয়।’ [. প্রাগুক্ত।]

এ ব্যাপারে মাসিক আল-হুদা নামক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধে এক নিবন্ধকার লিখেন, ‘অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাওলানা আমীর উদ্দীন বসুনিয়া ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ বাংলা ১২১৫ অব্দে তিনি প্রথম আমপারার তরজমা প্রকাশ করেন। যার আকার ছিল ডিমাই ১২ পেইজ ১৬৮ পৃষ্ঠা। অথচ আমাদের দেশে এই তথ্য আবিষ্কারের অভাবে গিরিশচন্দ্র সেনকে (১৮৩৫-১৯১০) কুরআনের প্রথম অনুবাদক বলা হয়। কিন্তু গিরিশচন্দ্র সেনের আগে রাজেন্দ্রনাথ মিত্র কুরআনের অনুবাদ করেন ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ। গিরিশচন্দ্র সেনের অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে এবং সমাপ্ত হয় ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে। রাজেন্দ্রনাথ মিত্রের অনুবাদ পূর্ণাঙ্গ ছিল না। তার অনুবাদ ছিল কয়েক খণ্ড।

১৮৮৩ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়া থেকে মৌলভি নঈমুদ্দিন (১৮৩২-১৯০৮) আকবারে ইসলামিয়া নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, আর এই পত্রিকার মাধ্যমে সমাজের কুসংস্কার দূর ও আল-কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। তার অনূদিত কুরআন শরীফের ১০ পারা পর্যন্ত অনুবাদ সমাপ্ত করে তিনি ইন্তেকাল করেন ১৯০৮ সালের ২৩ নভেম্বর। আকবারে ইসলামিয়া ১৮৮৩ সাল থেকে ১৮৯৩ পর্যন্ত চলছিল। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সম্পাদক শেখ আবদুর রহীম (১৮৫৯-১৮৩১) তৎকালে টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত আকবারে ইসলামিয়া ও মৌলভি নঈমুদ্দিনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

কবি আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) তার সুশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন বাঙালি মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম মৌলভি নঈমুদ্দিন কুরআন মাজীদের বঙ্গানুবাদ করেন। তিনি ১০ পারা পর্যন্ত অনুবাদ করেন এবং মুদ্রণ শেষ হওয়ার আগেই ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর লোকান্তরিত হন। কবি আবদুল কাদির তার গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায়ে লিখেন ‘সমগ্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেন মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম মাওলানা মোহাম্মদ আব্বাস আলী (১৮৫৯-১৯৩২) কলকাতা ৩৩ নম্বর বেনেপুকুর রোড, আলতাফি প্রেসে মুন্সি করিম বকসের দ্বারা মুদ্রিত ১৩১৬ বাংলা সন। আমপারা পর্যন্ত ৩০ পারার অনুবাদ। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৭৬। মূল আরবি পাঠের নিচে উর্দু তরজমা এবং তার নিচে বাংলা অনুবাদ।

বর্ডারের দুই পাশে উর্দু তাফসীর ও বাংলা টীকা দেয়া হয়েছে। অতপর ওই তাফসিরের শেষে অনুবাদক যা বলেছেন তার উদ্ধৃতি, ‘ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ অমৃতময় কুরআন… আলেমরা ফার্সি, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। কিন্তু বাংলার মুসলমানদের বোধগম্য সরল বাংলা ভাষায় কোনো অনুবাদ অদ্যাবধি পরিদৃষ্ট হয় নি। তাদের শ্রুতিমধুর কুরআনের বাক্য সুধাপানে বঞ্চিত ছিল। তাদের সেই অভাব বিমোচনের জন্য এই অনুবাদ প্রকাশিত হলো।’

অতপর পঞ্চম অধ্যায়ে এনেছেন খান বাহাদুর মৌলভি তসলীমউদ্দিন আহমদের (১৮৫২-১৯২৭) অনূদিত তাফসিরের কথা। তার অনূদিত কুরআনের প্রথম খণ্ড (প্রথম ১০ পারা) প্রকাশিত হয় ১৩২৯ বঙ্গাব্দে তথা ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে এবং দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৩৩০ বঙ্গাব্দে বা ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে (দ্বিতীয় ১০ পারা) এবং তৃতীয় খণ্ড বা শেষ খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম খণ্ড ছিল ৪৫৮ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় খণ্ড ৪৫৮ পৃষ্ঠা এবং তৃতীয় খণ্ড ৫২১ পৃষ্ঠা। এই অনুবাদে মূল আরবি দেয়া ছিল না, কিন্তু আয়াত ও রুকু নম্বর দেয়া ছিল। ষষ্ঠ অধ্যায়ে তিনি তাদের সবার নামোল্লেখ করেছেন যারা আল-কুরআনের পরবর্তী অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন। মৌলভি আবদুল হাকিম ও আলী হাছান ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণাঙ্গ কুরআনের অনুবাদ করেন। মৌলভি নকীবুদ্দিন খাঁর (১৮৯০-১৯৭৮) অনুবাদ ৩০ পারা ৩০ খণ্ডে ছিল। মাওলানা মো: রুহুল আমীন, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মৌলভি এয়ার আহমদ, মৌলভি মো: তৈমুর, ফজলুর রহিম চৌধুরী, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ডক্টর কুদরত-এ-খুদা, অধ্যাপক আবুল ফজল প্রমুখ কুরআনের অংশ বিশেষের অনুবাদ করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কবি নজরুল কাব্যে আমপারা প্রণয়ন করেন।

কুরআনের বহুবিধ অনুবাদ ও তাফসির সম্বন্ধে বিশেষ আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণা সাহিত্য যিনি প্রকাশ করেন তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক ডিন ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান। তার অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল ‘বাংলা ভাষায় কুরআন চর্চা’ এই গ্রন্থে তার গবেষণালব্ধ তথ্যে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের পথিকৃৎ বসুনিয়া’ বাক্যটি থেকেই অনুমিত হয় যে তিনিও তার প্রাপ্ত তথ্যে মাওলানা আমীরউদ্দিন বসুনিয়ার প্রথম বঙ্গানুবাদের তথ্য পেয়েছেন।’ [. আল-হুদা, ফেব্রয়ারি ২০১০ সংখ্যা।]

কুরআনের প্রথম অনুবাদক মওলানা আমীরুদ্দিন বসুনিয়া কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করে যেতে পারেন নি। পরবর্তী সময়ে গিরিশচন্ত্র সেনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকর্ম যা তখন বাজারে প্রচারিত ছিলো তাও ছিলো নানা দোষে দুষ্ট, তাই তার অনুবাদের মাত্র ২ বছরের মাথায়ই কুরআনের বিশ্বস্ত ও পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকর্ম নিয়ে হাযির হয়েছেন বিখ্যাত কুরআন গবেষক মাওলানা নায়ীমুদ্দীন। এর আগে কলকাতার একজন ইংরেজ পাদ্রীও কুরআনের অনুবাদ করেছিলেন। শোনা যায় মাওলানা আমিরুদ্দীন বসুনিয়া থেকে গিরিশচন্দ্র সেন পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮০৮ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে আরো ৯ জন ব্যক্তি কুরআন অনুবাদ করেছেন। তা ছাড়া ২০১১ সালকে বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের ২০০ বছর পূর্তি বছর হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এ বিষয়ে আরো অনেক অজানা তথ্য জনসমক্ষে আসতে শুরু করেছে। [. কোরআন শরীফ সহজ সরল বাংলা অনুবাদ, হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ, আল কোরআন একাডেমী লন্ডন, প্রথম প্রকাশ : মার্চ ২০০২, ইউকিপিডিয়া ও বিভিন্ন বাংলা ব্লগে প্রাপ্ত নানা নিবন্ধ।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন