HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দাঈদের প্রতি বার্তা

লেখকঃ শাইখ মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
দাঈদের প্রতি বার্তা

শাইখ মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন

অনুবাদ

শাইখ ড. মোহাম্মাদ ওসমান গনি

আরবি ভাষা কোর্স (ফার্ষ্ট ক্লাস)

বি. এ. অনার্স (তাফসীর, ফার্ষ্ট ক্লাস) উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কা, সৌদী আরব।

ভূমিকা
ألحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونتوب إليه، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادى له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله، صلى الله عليه وعلى أله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين وسلم تسليما

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাঁরই কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি। আমরা আমাদের অন্তরের খারাবী ও অন্যায় আমল থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে হেদায়েত দান করার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাঁর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন, তাঁর সাহাবাগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত সকল সৎ ও ভালো কাজের অনুসারীদের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। নিশ্চয় আল্লাহর পথে আহবান করা একটি মহান ও উঁচু মর্যাদাপূর্ণ কাজ। কেননা তা হচ্ছে আল্লাহর মনোনীত কাজ, নবী-রাসূল ও তাঁদের খোলাফায়ে রাশিদীনগণের কাজ। যাদেরকে তিনি সঠিক ইলম, আমল এবং তার প্রতি আহবানের উত্তরাধিকারী করেছেন। অতএব আমরা যেন একমাত্র আল্লাহর জন্য ইখলাসের সাথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করি, যাতে আমাদের এ প্রচেষ্টা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও মনোনীত হয়। এ সম্পর্কিত বর্ণনায় কয়েকটি অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথম অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে আহবান করা ওয়াজিব হওয়া এবং তার ফযীলত।

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ আল্লাহর দিকে দাওয়াতের মাধ্যম ও তার পদ্ধতি।

তৃতীয় অধ্যায়ঃ আল্লাহর প্রতি আহবানের ক্ষেত্র।

চতুর্থ অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে আহবানকারীর দায়িত্ব, কর্তব্য, গুণাবলি ও কার্যক্রম।

পঞ্চম অধ্যায়ঃ দাওয়াতে সফলতার শর্তাবলি।

প্রথম অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে আহবান করা ওয়াজিব হওয়া এবং তার ফযীলত
আল্লাহর পথে আহবান করা অতি উত্তম আমল। কেননা এ দাওয়াত হচ্ছে সুন্দর ও ইনসাফের প্রতি, সুস্বভাব আকাংখিত জিনিসের প্রতি মস্তিষ্ক যাকে সুন্দর বলে গ্রহণ করে এবং পবিত্র আত্মা যার প্রতি ঝুঁকে থাকে।

এ দাওয়াত আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাওয়াত, এ দাওয়াত ঐ সমস্ত সঠিক বিষয়বস্ত্তকে বিশ্বাসের দাওয়াত যাতে অন্তর হয় শান্ত এবং হৃদয় হয় সম্প্রসারিত। এ দাওয়াত আল্লাহর প্রতিপালন, ইবাদাত এবং তাঁর নাম ও গুণাবলির একত্ববাদের দাওয়াত। এ দাওয়াত হচ্ছে ঐ দৃঢ় বিশ্বাসের দাওয়াত যে, তিনি প্রতিপালনে অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই। আল্লাহ ছাড়া কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, কোনো নিয়ন্ত্রক নেই। তিনি ছাড়া উভয় জগতে নেই কারো কোন অধিকার। এই দৃঢ় বিশ্বাস মনে পোষণ করার মাধ্যমে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যদের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয় এবং আশা, ভরসা ও ভয় একমাত্র আল্লাহর উপর হয়। এটা বান্দাদের প্রতি এমন এক দৃঢ় বিশ্বাসের দাওয়াত যে, তাদের মাঝে আল্লাহই একমাত্র হুকুমদাতা, তিনি ছাড়া নির্ধারিত বস্ত্ততে ফায়সালা করার এবং জীবনবিধানের ব্যবস্থা করার কেউ নেই। যে বিশ্বাসের দ্বারা আল্লাহর মনোনীত শরীয়ত ছাড়া অন্য যে কোন হুকুম থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হবে এবং পরিত্যাগ করবে ঐ সমস্ত বিধিনিষেধ যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর হুকুমের পরিপন্থী। কেননা আল্লাহ, তাঁর রাসূলের হুকুমের বিপরীত প্রতিটি বিধিনিষেধই হচ্ছে যুলুম ও ভ্রান্ত- যার শেষ পরিণাম হচ্ছে দেশ ও জাতির মধ্যে ফাসাদ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ

দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য বিচারব্যবস্থায় আল্লাহর চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে? (সূরা মায়েদা- ৫০)

এই বিশ্বাসের মাধ্যমে বান্দারা আল্লাহর হুকুমের অনুগত হয় এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে ঐ হুকুমগুলো বাস্তবায়ন করে, চাই তা তাদের প্রকৃতির অনুকূলে হোক কিংবা প্রতিকূলে হোক, যেমন করে তারা আল্লাহর নির্ধারিত হুকুম তাক্বদীরকে মনে নিয়ে থাকে যে, তাক্বদীর তাদের মধ্যে বাস্তবায়িত হবেই। তারা তা সর্বান্তকরণে মেনে নেয়- তা তাদের পছন্দ হোক বা না হোক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,

اَفَغَيْرَ دِيْنِ اللهِ يَبْغُوْنَ وَلَهٗۤ اَسْلَمَ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّاِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ

আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে তারা কি অন্য কিছুর সন্ধান করে, অথচ আকাশ এবং পৃথিবীতে যা আছে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সবই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। (অবশেষে) তাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৩)

ইয়াকীনের সাথে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের আহবান জানিয়ে দাওয়াত দিতে হবে যে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদাতের উপযুক্ত নয়; না কোন মালাইকা (ফেরেশতা), না কোন নবী-রাসূল, অলী, আর না অন্য কেউ। কেননা আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। অতএব তাঁরই ইবাদাত করা একান্ত কর্তব্য।

আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার অর্থ হচ্ছে- আল্লাহর সকল নাম ও সিফাতের প্রতি দৃঢ় ঈমানের আহবান জানানো যা কুরআন ও সুন্নাতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। ঐ সমস্ত নাম ও সিফাত তাঁর মর্যাদার উপযোগী করে বর্ণনা করা হয়েছে- যার মধ্যে কোন বিকৃত ব্যাখ্যার অবকাশ নেই, নেই কোন অস্বীকার করার উপায় কিংবা তুলনামূলক উদাহরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌۚ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ

কোনকিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা- ১১)

আল্লাহর প্রতি আহবান হচ্ছে সরল সঠিক পথের আহবান। এটা ঐ পথের অনুসরণের আহবান, যে পথ হচ্ছে নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও নেককারগণের পথ যাদেরকে আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন। এটা সেই পথের আহবান যে পথকে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য তাঁর কাছে পৌঁছার উদ্দেশ্যে তাদের পার্থিব ও ধর্মীয় কাজের উন্নতির জন্য সৃষ্টি করেছেন। এই অনুসরণের মাধ্যমে পথভ্রষ্টকারী বিদ‘আতী পন্থাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বিদআতকারীদের কু-প্রবৃত্তি তাদেরকে আল্লাহর দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তারা আল্লাহর হুকুমকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুর অনুসরণ করে। দ্বীন থেকে তারা বহু দূরে সরে যায়। আল্লাহ তাদেরকে যা হুকুম করেছেন, তারা তা বাদ দিয়ে অন্য গর্হিত বিষয়াদির অনুসরণ করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করেন,

وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ

এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথের অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)

যে সমস্ত কাজ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন তা করা হচ্ছে আল্লাহর প্রদর্শিত পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

شَرَعَ لَكُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا وَصّٰى بِهٖ نُوْحًا وَّالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهٖۤ اِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسٰۤى اَنْ اَقِيْمُوا الدِّيْنَ وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِ

তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন ঐ দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যে ব্যাপারে আমি তোমাকে ওহী করেছিলাম। আর যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা এ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে মতভেদ করো না। (সূরা শূরা- ১৩)

আল্লাহর দিকে আহবান করা হচ্ছে উত্তম চরিত্র, সুন্দর আমল, অধিকার সংরক্ষণ, প্রত্যেকের হক প্রদানকরত মানুষের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং যে ব্যক্তি যেই মর্যাদার অধিকারী তার সেই মর্যাদা রক্ষার আহবান। এর মাধ্যমে মুমিনদের মাঝে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকে এবং আল্লাহর শরীয়তের ভিতরে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুশৃংঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রত্যেক ঘৃণিত চরিত্র, খারাপ কাজ, মানব রচিত বর্বর আইন-কানুন ও ভ্রান্ত আকীদাসমূহ দুর্বল হয়ে যায়। যারা এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং তার দিকে আহবান করে, এসব আল্লাহর বান্দাদেরকে তাঁর নির্দেশিত পথ অনুসরণে যারা বাধা সৃষ্টির ইচ্ছা করে, তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়।

এ সমস্ত কাজের সুবাদে এবং সেগুলো উত্তম পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা ও ফাসাদ নিবারণ করার কারণে আল্লাহর পথে আহবান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কাজ। এ কাজ সমাধাকারীগণ নবী ও রাসূলগণের ওয়ারিছ। কুরআনের বহু আয়াতে ও হাদীসে এ দায়িত্ব পালনের আদেশ ও তার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবীকে বলেন,

لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ فَلَا يُنَازِعُنَّكَ فِي الْأَمْرِ وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য এক একটি নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করেছি, যা তারা পালন করেছে। অতএব তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আপনি তাদেরকে আপনার প্রভূর দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল ও সঠিক পথে আছেন। (সূরা হাজ্জ- ৬৭)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَلَا يَصُدُّنَّكَ عَنْ اٰيَاتِ اللهِ بَعْدَ اِذْ اُنْزِلَتْ اِلَيْكَ وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে কিছুতেই তা হতে বিমুখ না করে দেয়। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করো এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ক্বাসাস- ৮৭)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

شَرَعَ لَكُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا وَصّٰى بِهٖ نُوْحًا وَّالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهٖۤ اِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسٰۤى اَنْ اَقِيْمُوا الدِّيْنَ وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِيْنَ مَا تَدْعُوْهُمْ اِلَيْهِ اَللهُ يَجْتَبِيْۤ اِلَيْهِ مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِيْۤ اِلَيْهِ مَنْ يُّنِيْبُ وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ مِنْ بَعْدِهِمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ

তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন ঐ দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যে ব্যাপারে আমি তোমাকে ওহী করেছিলাম। আর যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা এ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে মতভেদ করো না। তুমি মুশরিকদেরকে যার প্রতি আহবান করছ, তা তাদের নিকট কঠিন মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে নিজের দিকে নিয়ে আসেন এবং যে ব্যক্তি তার অভিমুখী হয় তিনি তাকে পথপ্রদর্শন করেন। তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরই তারা পারস্পরিক অনৈক্যের কারণে মতভেদ করেছে। যদি আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশের পূর্বেই সিদ্ধান্ত না থাকত, তবে তাদের ফায়সালা হয়ে যেত। তাদের পর যারা কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছে, তারা অস্বস্তিকর সন্দেহে পতিত রয়েছে। সুতরাং আপনি এর প্রতিই দাওয়াত দিন এবং হুকুমের উপর অবিচল থাকুন। আপনি তাদের ধ্যান-ধারণার অনুসরণ করবেন না। বলুন আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা শুরা, ১৩-১৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ

তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক থাকা জরুরি, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও মতভেদে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা আলে ইমরান- ১০৪, ১০৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ

ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৩)

আমি একজন মুসলমান, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার হতে পারে?

عَنْ سَهْلِ ابْنِ سَعْدٍ ، - قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ يَوْمَ خَيْبَرَ لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يُفْتَحُ عَلٰى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَه وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُوْلُه فَبَاتَ النَّاسُ لَيْلَتَهُمْ أَيُّهُمْ يُعْطٰى فَغَدَوْا كُلُّهُمْ يَرْجُوْهُ فَقَالَ أَيْنَ عَلِيٌّ فَقِيْلَ يَشْتَكِيْ عَيْنَيْهِ فَبَصَقَ فِيْ عَيْنَيْهِ وَدَعَا لَه فَبَرَأَ كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِه وَجَعٌ فَأَعْطَاهُ فَقَالَ أُقَاتِلُهُمْ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مِثْلَنَا فَقَالَ انْفُذْ عَلٰى رِسْلِكَ حَتّٰى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ فَوَاللهِ لِأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُوْنَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাইবার যুদ্ধের দিন নবী ﷺ বললেন, আগামীকাল এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা দেয়া হবে, যার হাতে খাইবার বিজিত হবে। সে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও তাকে ভালবাসেন। সবাই এ আশায় রাত্রি যাপন করেন, দেখা যাক কার হাতে পতাকা দেয়া হয়। প্রত্যেকেই সকাল বেলা মনে মনে তা প্রত্যাশা করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলে উঠলেন, আলী কোথায়? তাঁকে বলা হল, তিনি চোখের রোগে ভুগছেন। (তাঁকে ডেকে এনে) রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় থুথু তাঁর চোখে দেন এবং দু‘আ করেন। তিনি চক্ষু রোগ থেকে পরিত্রাণ লাভ করেন। মনে হয় যেন তাঁর চোখে কোন রোগই ছিল না। তারপর আলী (রাঃ)-এর হাতে পতাকা উঠিয়ে দিলে তিনি বললেন, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন, তুমি স্বাভাবিকভাবে চলো, এমনকি তুমি যখন তাদের আঙ্গিনায় পৌঁছবে, তখন তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করো এবং তাদের যা করণীয় তা তাদেরকে জানিয়ে দিয়ো। আল্লাহর কসম! হে আলী, তুমি জেনে রেখো! তোমার হাতে কাউকে আল্লাহ যদি হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য রক্তিম বর্ণের উট পাওয়ার চেয়েও উত্তম। [সহীহ বুখারী, হা/৩০০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৯৩২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৮৭২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৮০৯৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৭৫৩৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৮৬৯২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৫৭৪৪; মিশকাত, হা/৬০৮০।]

عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِىِّ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « الدِّينُ النَّصِيحَةُ » قُلْنَا لِمَنْ قَالَ « لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ » .

তামীম দারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, সদুপদেশ দেয়াই দীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য উপদেশ? তিনি বললেন : আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের, তাঁর রসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৫; আবু দাউদ, হা/৪৯৪৬; নাসাঈ, হা/৪১৯৭; মিশকাত, হা/৪৯৬৬।]

বলা বাহুল্য, আল্লাহর দিকে দাওয়াত হচ্ছে আল্লাহর জন্য নসীহত।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন : যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮০; আবু দাউদ, হা/৪৬১১; তিরমিযী, হা/২৬৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/২০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১৪৯; মিশকাত, হা/১৫৮।]

এ সকল আয়াত ও হাদীসমূহ আল্লাহর দিকে দাওয়াত ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ ও ফযীলত বর্ণনা করে। আল্লাহর শরীয়াতের প্রসার ও তার সংরক্ষণ এই দাওয়াতের উপরই নির্ভর করে। এর মাধ্যমেই মানুষ তাদের বিরাট কল্যাণ সাধন, জীবিকা নির্বাহ, ধর্মীয় ও দুনিয়াবী ফেতনা ফাসাদ থেকে বাঁচার সর্বোত্তম পন্থা পেয়ে যাবে- যদি তারা তা গ্রহণ করে এবং তা আমলে পরিণত করে। আল্লাহ তাওফীকদাতা।

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ আল্লাহর দিকে দাওয়াতের মাধ্যম ও তার পদ্ধতি
দাওয়াতের মাধ্যম বলতে ঐ সমস্ত পন্থাকে বুঝানো হয়, যার দ্বারা দাঈ তার দাওয়াত পৌঁছায়। তা তিন প্রকার। প্রত্যেকটি প্রকারের এক একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

প্রথমঃ সরাসরি মৌখিক কথা-বার্তার মাধ্যমে

এ পদ্ধতিতে দাওয়াত দেয়ার নিয়ম হলো, আহবানকারী যাদেরকে দাওয়াত দিবে, তাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তাদের সামনা-সামনি হয়ে বয়ান করবে এবং যে বিষয়ের দিকে সে ডাকছে তার হাকীকত, ফযীলত ও তার বাহ্যিক ও ওয়াদাকৃত প্রতিদানসমূহের বর্ণনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে। এই প্রকারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, দাঈ যাদেরকে ডাকবে, তাদের গ্রহণের মানসিকতা ভালো করে জানবে; তাদের অন্তরের প্রশস্ততা ও প্রফুল্লতা লক্ষ্য করে দাওয়াত দিবে, আমলের জন্য উদ্ধুদ্ধ করবে, স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে তাদের সাথে ব্যবহার করবে। সন্তুষ্ট হওয়া ও গ্রহণ করা পর্যন্ত তাদের মাঝে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে। অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে মৌখিক মাধ্যমটাই সবচেয়ে কার্যকরী।

দ্বিতীয়ঃ মৌখিক কথাবার্তার মাধ্যমে, তবে সরাসরি নয়; যেমন রেডিও এবং টিভির মাধ্যমে

এই প্রকারের দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এ পদ্ধতিতে দাওয়াত এমন ব্যাপকভাবে পৌঁছে থাকে, যা মুখোমুখী কথাবার্তার মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

তৃতীয়ঃ লিখনির মাধ্যমে। যেমন, বই সংকলন, পেপার-পত্রিকা, পোস্টার-ব্যানার প্রকাশ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার।

এ প্রকারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যে বিষয়ের প্রতি তাদেরকে আহবান করা হচ্ছে, তারা প্রয়োজনে তা কয়েক বার পাঠ করে তার ফযীলত ও ফলাফল অনুধাবন করতে পারে।

আল্লাহর দিকে দাওয়াতের পদ্ধতি, বয়ান এবং যাকে ডাকা হবে তার অবস্থা বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। সাধারণত এর তিন অবস্থা :

১. একজন ভালো ও উত্তম বস্ত্ত পেতে আগ্রহী, তবে সে এসবই বিষয়ে অজ্ঞ এবং তা তার কাছে অস্পষ্ট। এমতাবস্থায় তার জন্য সাধারণ দাওয়াতই যথেষ্ট। যেমন তাকে বলা যে, এটি আল্লাহর আদেশ ও রাসূল ﷺ এর নির্দেশ। অতএব এটা পালন করো। অথবা বলা হবে, এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ করেছেন। অতএব এর থেকে বিরত থাকো। এ পদ্ধতি এই জন্য যে, তার ভালো কাজে আগ্রহ রয়েছে এবং তা সে গ্রহণ করতে আগ্রহী। অতএব এতটুকুতেই সে গ্রহণ করবে এবং অনুসরণ করবে।

২. দ্বিতীয় অবস্থা হচ্ছে, যার মধ্যে উত্তম কাজ ও তার গ্রহণে রয়েছে অলসতা ও দুর্বলতা এবং খারাপ কাজে রয়েছে আগ্রহ। এমতাবস্থায় সাধারণ দাওয়াত তার জন্য যথেষ্ট নয়, বরং কর্তব্য হচ্ছে, উত্তম কাজের প্রতি ও তার অনুসরণে উৎসাহিত করা, তার ফযীলত বর্ণনা করা, সুন্দর শেষ পরিণাম ও প্রশংসিত প্রতিদানের ব্যাখ্যা উদাহরণের মাধ্যমে সুন্দরভাবে তুলে ধরা। তেমনিভাবে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা শুনিয়ে ভীতিপ্রদর্শন করা, তার নিকৃষ্টতার বর্ণনা দেয়া, কু-পরিণাম ও ফাসিকদের নিকৃষ্ট শেষ পরিণতি সম্পর্কে উপমা সহকারে বর্ণনা পেশ করা। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ثُمَّ كَانَ عَاقِبَةَ الَّذِينَ أَسَاءُوا السُّوأَى أَنْ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ وَكَانُوا بِهَا يَسْتَهْزِئُونَ

যারা মন্দ কাজ করেছে, তাদের পরিণামও হয়েছে মন্দ। কারণ তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলত এবং সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা করত।

(সূরা রোম- ১০)

৩. তৃতীয় অবস্থা হচ্ছে, যে ভালো কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং খারাপের দিকে ধাবিত হয়, তদুপরি এ ব্যাপারে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এই ব্যক্তির ব্যাপারে শুধুমাত্র দাওয়াত ও উপদেশই যথেষ্ট নয় বরং তার সাথে উত্তম পন্থায় যুক্তিতর্কের মাধ্যমে তার কাছে দাওয়াত তুলে ধরতে হবে। যুক্তিতর্কের উত্তম পন্থা হলো, হক বা সত্য এমনভাবে যুক্তি প্রমাণের সাথে উপস্থাপন করা, যাতে তার যুক্তি খন্ডে যায় এবং তার পথ ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়।

দাওয়াতের উল্লেখিত তিন অবস্থায় দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اُدْعُ اِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ

তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো হেকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল- ১২৫)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত। কেউ হককে স্বীকার করে এবং তার অনুসরণ করে। সে-ই হচ্ছে হেকমতওয়ালা। আর কেউ হককে স্বীকার করে, কিন্তু আমল করে না। এ ক্ষেত্রে তাকে উপদেশ দেয়া প্রয়োজন, যাতে সে আমল করে। আর যে হককে স্বীকার করে না, তার সাথেই উত্তম পন্থায় বিতর্ক করা প্রয়োজন। কেননা উত্তেজনাকর মুহূর্তেই বিতর্ক সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই যদি তা উত্তম পন্থায় হয়, তবেই যথেষ্ট কল্যাণজনক হয়ে থাকে।

যদি আহবানকৃত ব্যক্তি এ সকল পন্থায় দাওয়াত মাধ্যমে ন্যায়ের পথে চলে আসে, হককে স্বীকার করে এবং তার অনুগত হয় তবে তা ভালো। অন্যথায় আমরা বিপথগামী হয়ে যাব।

সেই চতুর্থ অবস্থা হচ্ছে তা-ই, নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী যার দিকে ইঙ্গিত করে,

وَلَا تُجَادِلُوْاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ اِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ

তোমরা উত্তমপন্থা ব্যতীত কিতাবীদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে না; তবে তাদের মধ্যে যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের সাথে করতে পার। (সূরা আনকাবূত- ৪৬)

ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, তাদের (আহলে কিতাবের) মধ্যে যারা যুলুম করেছে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যারা হক থেকে সরে গিয়েছে এবং স্পষ্ট প্রমাণাদি থেকে অন্ধ হয়েছে, বিরুদ্ধাচারণ ও অহংকার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দাওয়াতের কার্যক্রম তর্ক-বির্তকের পর্যায় হতে জিহাদের পর্যায়ের দিকে চলে যেতে পারে। তখন তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে লড়তে হবে, যেন তারা বিরুদ্ধাচরণ ছেড়ে দেয় এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়। এই চতুর্থ অবস্থা সাধারণ ব্যক্তির কাজ নয়, বরং এটি তাদের কাজ, যাদের হাতে ক্ষমতা বা হুকুমত রয়েছে। কেননা সর্ব সাধারণ তো সরকারের অধীন। তাই যদি তা সরকারের মাধ্যমে না হয়, তবে অরাজকতা দেখা দিবে এবং অনেক ক্ষতি ও বিরাট ফাসাদের সৃষ্টি হবে।

এই হচ্ছে আহবানকৃত ব্যক্তির কবুল করা অথবা কবুল না করার পরিপ্রেক্ষিতে দাওয়াতের পদ্ধতি।

আর যে জিনিসের প্রতি আহবান করা হবে, তার ধারাবাহিকতার দিক দিয়ে দাওয়াতের পদ্ধতি হবে এই যে, প্রথমে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে শুরু করবে। অতঃপর একের পর এক আহবানকৃত ব্যক্তিকে ক্রমানুসারে অন্যান্য বিধানের প্রতি নিয়ে যাবে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, আমরা যদি এমন এক ব্যক্তিকে আহবান করি, যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করা, তার ইবাদাত করা ও রাসূলের অনুসরণ করাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে, তাহলে তার কাছে আমরা প্রথমে জ্ঞান ও যুক্তিভিত্তিক দলীল-আদিল্লার বাস্তব উদাহরণ পেশ করব, যাতে করে সে এর বাস্তবতা জানতে পারে এবং স্বীকার করে নেয় যে, আল্লাহ একাই সৃষ্টিকর্তা, তাঁর কোন শরীক নেই।

অতঃপর তাকে নিয়ে যাব আল্লাহর উলুহিয়াতের প্রতি ও তার ওয়াজিব ইবাদাতের প্রতি। কেননা রুবুবিয়াতকে স্বীকার করা বাধ্য করে উলুহিয়াতকে স্বীকার করতে হবে। তা আল্লাহ তা‘আলা ধারাবাহিকভাবে পবিত্র কুরআনে বহু জায়গায় বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেন,

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ

হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঐ ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, যে এমন কাউকে আল্লাহর সাথে শরীক করে, যে কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ

তারা কি এমন কাউকে শরীক সাব্যস্ত করে, যে একটি বস্ত্তও সৃষ্টি করেনি, বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? (সূরা আরাফ- ৯১)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِاَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيَاةً وَّلَا نُشُوْرًا

তারা তাঁর পরিবর্তে এমন কিছুকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছে, যারা কোনকিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিজেদেরই কোন অপকার কিংবা উপকারের ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও উত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ফুরক্বান- ৩)

তারপর আমরা তাকে ইবাদাতের পদ্ধতির দিকে নিয়ে যাব এবং ইবাদাতের ওয়াজিবের বিস্তরিত বিবরণ তুলে ধরব। আর এটাই হচ্ছে রাসূলগণের পদ্ধতি। যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জগতের কাছে প্রেরণ করেছেন এবং তাদেরকে নিদর্শন দিয়ে শক্তিশালী করেছেন, যাতে তারা সৃষ্টি জগতকে শিক্ষা দেন ঐ জিনিস, যা তাদেরকে অদৃশ্য বিষয়ে ফায়দা দিবে এবং তারা কীভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, তা তারা বর্ণনা করেন। কেননা ইবাদাত হচ্ছে আল্লাহর হক, যা তিনি বান্দাদের উপর ওয়াজিব এমনভাবে করে দিয়েছেন, যেভাবে তিনি পছন্দ করেন। তা রাসূলগণের মাধ্যম ছাড়া জানা সম্ভব নয়। তখন সে যদি স্বীকার করে যে, সহজ পন্থায় আল্লাহর ইবাদাত করা একান্ত প্রয়োজন এবং রাসূলগণের মাধ্যম ছাড়া তা জানা অসম্ভব, তাহলে তাকে আমরা আল্লাহর মনোনীত নির্দিষ্ট রাসূলের রাস্তার দিকে নিয়ে যাব, যার অনুসরণ করা ওয়াজিব। তিনি হলেন মুহাম্মাদ ﷺ, যাকে সমস্ত মানুষের কাছে প্রমাণ সহকারে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রমাণাদি তার কাছে তুলে ধরব। তাঁর প্রতি ঈমান আনা অতীতের সমস্ত রাসূলের প্রতি ঈমানকে শামিল করে, কিন্তু তার বিপরীত নয়। অতঃপর সে যদি এটাকে স্বীকার করে, তবে তাকে আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শরীয়ত যা কিছু নিয়ে এসেছে, তার বিস্তারিত বর্ণনার দিকে নিয়ে যাব, যাতে সে তা স্বীকার করে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি যেমন, নামায, রোযা ও যাকাত ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে।

তৃতীয় অধ্যায়ঃ আল্লাহর প্রতি আহবানের ক্ষেত্র
আল্লাহর দিকে দাওয়াতের মাজাল বলতে আমরা বুঝি দাওয়াতের বিভিন্ন ক্ষেত্র। আল্লাহর পথে দাওয়াত কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে :

১. ব্যক্তিগত যোগাযোগ : আহবানকারী কোন ব্যক্তিকে দাওয়াত দানের ইচ্ছা করবে। অতঃপর তার দ্বিতীয় অধ্যায়ে উল্লেখিত ধারাবাহিক পদ্ধতিতে আল্লাহর পথে আহবান করবে।

২. গুরুত্বপূর্ণ স্থান : যেমন মসজিদ, একত্রিত হওয়ার অনুষ্ঠান, যথা- হজ্জ মওসুম, সভা সম্মেলন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য স্থানে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও প্রয়োজনের আলোকে দাওয়াত দেয়া। আর এ জন্য রাসূল ﷺ বিভিন্ন মেলা ও মওসুমে অনেক গোত্রের কাছে নিজেকে পেশ করতেন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। ইমাম আহমদ (রহ.) রাবিয়াহ বিন ইবাদ আদ্দাহলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَصَرَ عَيْنِي بِسُوقِ ذِي الْمَجَازِ ، يَقُولُ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ قُولُوا : لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، تُفْلِحُوا

অর্থাৎ আমি রাসূল ﷺ কে যুলমাজায বাজারে দেখেছি, তিনি বলতেছেন, হে মানুষেরা! তোমরা বলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তবেই মুক্তি পাবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬০৬৬।]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَعْرِضُ نَفْسَهُ عَلَى النَّاسِ فِى الْمَوْقِفِ فَقَالَ : أَلاَ رَجُلٌ يَحْمِلُنِى إِلَى قَوْمِهِ فَإِنَّ قُرَيْشًا قَدْ مَنَعُونِى أَنْ أُبَلِّغَ كَلاَمَ رَبِّى

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বিভিন্ন স্থানে মানুষের কাছে নিজেকে পেশ করতেন। অতঃপর বলতেন, কে আছ যে আমাকে তার গোত্রের কাছে নিয়ে যাবে? কেননা কুরাইশরা আমাকে আমার রবের কথা পৌঁছাতে নিষেধ করেছে। [আবু দাউদ, হা/৪৭৩৬; তিরমিযী, হা/২৯২৫।]

قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقِ بْنِ يَسَارٍ : وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى ذٰلِكَ مِنْ أَمْرِه كُلُّمَا اِجْتِمَعُ النَّاسُ بِالْمُوَسَّمِ أَتَاهُمْ يَدْعُو الْقَبَائِلَ إِلَى اللهِ وَإِلَى الْاِسْلَامِ وَيُعْرِضُ عَلَيْهِمْ نَفْسَه وَمَا جَاءَ بِه مِنَ اللهِ مِنَ الْهُدٰى وَالرَّحْمَةَ وَلَا يَسْمَعُ بِقَادِمٍ يَقْدِمُ مَكَّةَ مِنَ الْعَرَبِ لَه اِسْمٌ وَشَرْفٌ، إِلَّا تُصَدّٰى لَه وَدَعَاهُ إِلَى اللهِ تَعَالٰى، وَعَرَضَ عَلَيْهِ مَا عِنْدَه

ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূল ﷺ এর অবস্থা এমন ছিল যে, কোন মওসুমে মানুষ যখন একত্রিত হতো, তখন তিনি তাদের কাছে আসতেন এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আল্লাহর দিকে ও ইসলামের দিকে ডাকতেন। তাদের সামনে নিজেকে এবং যে হেদায়েত ও রহমত তিনি নিয়ে এসেছেন, তা পেশ করতেন। আর যখনই তনি আরবের কোন সম্ভ্রান্ত নামকরা ব্যক্তির মক্কা আগমনের খবর শুনতেন, তখনই তার কাছে আসতেন এবং তাকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতেন, তার কাছে দ্বীন পেশ করতেন। [বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১৭৯।]

৩. শিক্ষাঙ্গন : যেমন- ইনস্টিটিউট, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি- সেখানে বক্তৃতা ও সাধারণ সভার মাধ্যমে হোক অথবা বিশেষ ক্লাসের মাধ্যমেই হোক দ্বীনের দাওয়াত দেয়া যায়। স্বীয় ধর্মের প্রতি একনিষ্ঠ শিক্ষক পাঠের মধ্য দিয়ে কথার মাধ্যমে আল্লাহর পথে আহবান করতে সক্ষম। অথবা তার ইবাদাতের অবস্থা, উত্তম চরিত্র, ন্যায়-নীতি ইত্যাদির মাধ্যমেও আল্লাহর পথে দাওয়াতের কাজ করতে পারে। কেননা শিক্ষক হচ্ছে ছাত্রদের আদর্শ। তার কাজ-কর্ম ও চরিত্র তাদের মন-মানসে গেঁথে থাকে এবং তাদের আমল ও আখলাকে তা প্রকাশ পায়।

চতুর্থ অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে আহবানকারীর দায়িত্ব, কর্তব্য, গুণাবলি ও কার্যক্রম।
দাঈদের মর্যাদা হচ্ছে নেতৃত্বের মর্যাদার মতো গুরুত্বপূর্ণ। অতএব এ মান-মর্যাদা সংরক্ষণ করা ও তার সাথে মনোনিবেশকে পরিচালনা করা একান্ত প্রয়োজন। যাতে করে তা বাস্তবে পরিণত হয়। অতএব দাঈর নিম্নবর্ণিত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য করা উচিৎ :

১. আল্লাহর জন্য সরল ও বিশুদ্ধ চিত্তে সে কাজ করবে, তার দাওয়াতের দ্বারা সে আল্লাহর নৈকট্যের ইচ্ছা করবে। মানুষদেরকে পাপ ও অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বের করে অনুসরণ ও জ্ঞানের আলোর দিকে নেয়ার মাধ্যমে দ্বীনের সাহায্য ও আল্লাহর বান্দাদের সংশোধন করবে। তার দাওয়াতটি আল্লাহর মুহাববতে তার দ্বীনের জন্য এবং সমস্ত মানব জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে চালাতে থাকবে।

আল্লাহর উপর ভরসা, দৃঢ় ইচ্ছা ও সর্বশক্তির সাথে ইখলাসের মাধ্যমে এই প্রবহমান দাওয়াত অবশ্যই কার্যকর হবে। আপনি কি মুসা (আঃ) এর ঘটনা জানেননি? যখন মানুষ তাঁর উদ্দেশ্যে ফিরাউন স্বীয় ষড়যন্ত্রের কলাকৌশল তাঁর জন্য জমা করল, তারপর সে দাম্ভিকতা, গৌরব ও অহংকারের সাথে আসল। তখন মূসা (আঃ) এর দাওয়াতের রূপরেখা এরূপ ছিল,

قَالَ لَهُمْ مُّوْسٰى وَيْلَكُمْ لَا تَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍۚ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرٰى

মূসা তাদেরকে বলল, দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো না। অন্যথায় তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করে দেবেন। তাছাড়া (ইতোপূর্বে) যে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে সেই ব্যর্থ হয়েছে। (সূরা ত্বা–হা– ৬১)

এ কালিমা কি করেছে? নিশ্চয় তা তাদের কথাগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে দিয়েছে। তাদের চরিত্রগুলোকে সঙ্গে সঙ্গে বিলম্ব ছাড়াই ভিন্ন করে দিয়েছে।

فَتَنَازَعُوْاۤ اَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ

তারা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক করল। (সূরা ত্বা–হা– ৬২)

নিজেদের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে কৃতকার্যের কারণসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ এবং এর দ্বারা প্রভাব চলে যায়। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,

وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ

তোমরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। (সূরা আনফাল- ৪৬)

দাঈর দাওয়াতে একমাত্র আল্লাহর জন্যই সরল ও বিশুদ্ধ চিত্তে কাজ করাটা কামিয়াবি ও সওয়াব পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি তার এ দাওয়াতের দ্বারা মানুষের দৃষ্টি কামনা করে, অথবা দুনিয়াবি কোন জিনিসের ইচ্ছা করে, যেমন ধন-সম্পদ অথবা মান-সম্মান অথবা নেতৃত্ব, তাতে তার আমল নষ্ট হবে এবং তার উপকার হবে স্বল্পই। মহান আল্লাহ বলেন,

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তাঁর চাকচিক্য কামনা করে, আমি তাদেরকে দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল পরিপূর্ণ করে দেই। তাতে তাদের প্রতি কমতি করা হয় না। এদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা যা করেছিল, তা দুনিয়াতে বিনষ্ট হয়েছে এবং যা কিছু আমল করেছিল তা বাতিল হয়েছে। (সূরা হুদ- ১৫, ১৬)

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ قَالَ تَفَرَّقَ النَّاسُعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ فَقَالَ لَهُ نَاتِلُ أَهْلِ الشَّامِ أَيُّهَا الشَّيْخُ حَدِّثْنَا حَدِيثًا سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ - - قَالَ نَعَمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ - - يَقُولُ : إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ . قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِىءٌ . فَقَدْ قِيلَ . ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِىَ فِى النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ . قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ . وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ . فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِىَ فِى النَّارِ . وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ . فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِىَ فِى النَّارِ

সুলাইমান ইবনে ইয়াসার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল (রহ.) বললেন, হে শায়খ! আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একখানা হাদীস আমাদেরকে শুনান। তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ হয়েছিল। তাঁকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামাতরাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এর বিনিময়ে কী আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি তোমারই পথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি বরং এ জন্যেই যুদ্ধ করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে বলে, তুমি বীর। তা বলা হয়েছে, এরপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রদত্ত নি‘আমাতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে) তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এত বড় নি‘আমাত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্যে যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে যাতে লোকে বলে, তুমি একজন কারী। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে, সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে যাকে আল্লাহ তা‘আলা সচ্ছলতা এবং সর্ববিধ বিত্ত-বৈভব দান করেছেন। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নি‘আমাতসমূহের কথা তাঁকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (এবং স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এসব নিয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছো? জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই যাতে সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ কর, আমি সে খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি বরং এ জন্যে তা করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে ‘দানবীর’ বলে অভিহিত করে। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫০৩২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৪৯৫; জামেউস সগীর, হা/৩৭৭৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫১৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২।]

২. আল্লাহর প্রতি দাওয়াতের দ্বারা এ বিশ্বাস রাখবে যে, সুন্নত ও হিদায়েত প্রচারের দিক দিয়ে সে তার নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর ওয়ারিস। যাতে এটি আল্লাহর প্রতি দাওয়াত, ধৈর্যধারণ এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় সহায়ক হয় এবং আল্লাহর এই বাণীতে শরীক হতে পারে,

قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ

বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা দূরদর্শীতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)

৩. আল্লাহর প্রতি দাওয়াতে সে যেন সাবেত ও অটল থাকে। জটিলতা তাকে জোরে নাড়া দিতে এবং নৈরাশ্য তাকে যেন ধাক্কা দিতে না পারে। সে তার সঠিক পদ্ধতিতে অবিচল, দাওয়াতের শেষ ফলে সে আশাবাদী, বিভিন্ন উপকারিতায় সে দৃঢ় থাকবে। সে তা বৃদ্ধিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে। সত্য বর্ণনা, নিয়তের বিশুদ্ধতা, আখিরাতের সওয়াব ও আমলের সঠিকতায় সে নির্ভরশীল হবে। তখন দাওয়াত সৃষ্টির উপযোগী বলে আশাবাদীও হবে, যদিও তার বাস্তব প্রতিফলন কিছু সময় পরে হোক।

৪. সে ধৈর্যধারণ করবে এবং তাতে বিজয়ী হবে। সে সৃষ্টির পক্ষ থেকে পাওয়া ব্যথা-বেদনা ও কষ্টের উপর সবর করবে। কেননা এই দায়িত্ব যে পালন করেছে, তবে অবশ্যই এই দাওয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টির নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের থেকে বিভিন্ন ব্যথা ও কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। রাসূল ﷺ ও তার পূর্ববর্তী রাসূলগণের যা ঘটেছে, তার দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللهِ

এভাবে তোমার আগেও রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও নানা রকম নির্যাতন চালানোর পরও তাঁরা কঠোর ধৈর্যধারণ করেছিল, অবশেষে তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছল। আল্লাহর বাণী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। (সূরা আন‘আম- ৩৪)

সবর বা ধৈর্য হচ্ছে এমন উন্নত স্তর যে, দীর্ঘ দিন বার বার ধৈর্যের মাধ্যমে বান্দা তার ফযীলতসমূহ লাভ করতে থাকে এবং সে জন্য তাকে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতেই হয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :

اِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ

নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সূরা যুমার- ১০)

হক বর্ণনা, তার প্রতি দাওয়াত ও তার ব্যাপারে বিতর্ক করার মাধ্যমে তার উচিৎ, আকাংখিত শেষ পরিণাম বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য ধৈর্যধারণ করা।

৫. আল্লাহর রাস্তার দাওয়াতে হিকমতের পন্থা গ্রহণ করবে এবং স্থান-কাল-পাত্র ভেদে যথাযথ পদ্ধতি ব্যবহার করবে। কেননা বুঝ, জ্ঞান, নম্র ও কঠোরতা, সত্যকে গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে সব মানুষ সমান নয়। অতএব প্রত্যেকের সাথে যা তার জন্য উপযোগী, তা অবলম্বন করা, যাতে সে গ্রহণ করে, এটাই হচ্ছে হিকমতের সাথে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দেয়ার স্বরূপ। আর সে যেন অভ্যস্ত ও সহ্যকারী হয়। তাই কোন ব্যক্তিকে বক্রপথে চলতে দেখলে তাকে সৎ পথে না ডেকে তার থেকে দূরে সরে যাবে না এবং তাকে তার বক্রতার পথে শয়তানের জন্য ছেড়ে দিবে না। বরং তার সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখবে এবং তার কাছে হক বর্ণনা করবে, তাবে নেকের পথে উৎসাহ দিবে। আর এটাও হিকমতের মধ্যে যে, আহবানকৃত ব্যক্তির ভ্রান্ততায় তিরস্কার না করা। তা যদি করা হয়, তবে তার হক থেকে দূরে সরে যাওয়া বৃদ্ধি পাবে এবং ঘৃণিত কাজে সে আরো মত্ত হবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেন,

وَلَا تَسُبُّوا الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَيَسُبُّوا اللهَ عَدْوًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ كَذٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ اُمَّةٍ عَمَلَهُمْ

তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না। কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ-কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ১০৮)

বরং তাকে হক স্মরণ করিয়ে দেবে এবং উৎসাহ দিতে থাকবে। তাতে তার অন্তর পাওয়া যাবে এবং বাতিল যা তার কাছে প্রিয়, তা ছেড়ে দেয়া তার জন্য সহজ হবে। কেননা প্রিয় জিনিস ছেড়ে দেয়া অত্যন্ত কঠিন এবং মানুষের পক্ষে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর তা ছেড়ে দেয়া সম্ভব হয়। শরীয়াতে মদ হারাম করার ব্যাপারে আল্লাহর হিকমতের দিকে লক্ষ্য করো। যখন তা মানুষের কাছে প্রিয় বস্ত্ত ছিল, মুমিনগণের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে মদ ধাপে ধাপে হারাম হয়েছিল।

তন্মধ্যে প্রথম পদক্ষেপঃ তাদের প্রশ্নের জবাবে ইঙ্গিত-

يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِؕ قُلْ فِيْهِمَاۤ اِثْمٌ كَبِيْرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْمُهُمَاۤ اَ كْبَرُ مِنْ نَّفْعِهِمَا

লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলো, এ দু’টির মধ্যে বড় ধরনের গোনাহ রয়েছে। এতে মানুষের জন্য কিছুটা উপকার রয়েছে, তবে এ দু’টির অপরাধ উপকারের চেয়ে অনেক বড়। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)

এখানে একটি উপকারের কথা বলেননি, বরং বলেছেন অনেক উপকারের কথা, যাতে করে তার মধ্যে যা রয়েছে অথবা তাতে যে উপকারের কল্পনা করা হয়, সব কিছুকে শামিল করতে পারে। আর এ সমস্ত উপকার বড় পাপের তুলনায় ছোট বা হীন হবে। এটাই হচ্ছে মদের প্রকৃত রূপ। প্রত্যেক মানুষ মদের হুকুমের ব্যাপারে এ চিন্তা ভাবনা করবে এবং এর থেকে দূরে থাকবে। যদিও তখন এটা হারাম ছিল না, কিন্তু যখন অবগত হবে যে, মদের পাপ ও ক্ষতিটা উপকারের চেয়ে বড়, তখন তা এমনিতেই ছেড়ে দেবে। তদুপরি এ বর্ণনায় মদ হারাম হওয়ার শুধুমাত্র ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা শরীয়তের নিয়ম হচ্ছে, যে জিনিসে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি সে জিনিস হারাম। যার ফলে তখন মানুষের আত্মাসমূহ অনুভব করছিল যে, এ মদ অনতিবিলম্বে হারাম হবে। এরপর মদ যখন চূড়ান্তভাবে হারাম হয়ে স্পষ্ট হুকুম আসবে এবং হঠাৎ আত্মাসমূহের সামনে তা আত্মপ্রকাশ করবে তখন মানুষ এর জন্য প্রস্ত্তত থাকবে। তার জন্য এটা সে সময় গ্রহণ করা সহজ হবে।

দ্বিতীয় পদক্ষেপঃ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হতে নিষেধাজ্ঞা-

يَاا َيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা- ৪৩)

এ আয়াতে দিন-রাতে কমপক্ষে পাঁচ বার মদ থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। অতএব নফস কিছু সময় তা থেকে বিরত থাকার প্রস্ত্ততি নিবে, যাতে করে পরবর্তীতে তা থেকে পুরাপুরি বিরত থাকা সহজ হয়।

তৃতীয় পদক্ষেপ : সব সময় সর্বাবস্থায় মদ থেকে নিষেধের হুকুম-

এ হুকুম এসেছে সূরা মায়েদায়। এ আয়াতটি সর্বশেষ অবতীর্ণ হয়েছে,

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ

হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার দেবী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্যবস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায় করা হতে বাধা প্রদান করতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯০, ৯১)

পর্যায়ক্রমে ইঙ্গিত দিয়ে পরিশেষে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা আসার পর পরই সাহাবাগণ অতি সহজেই মদ পরিহার করতে সক্ষম হয়েছেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রজ্ঞাময়, দয়াবান।

ছাকীফ গোত্র রাসূল ﷺ এর কাছে এ শর্তে বাইয়াত হয়েছিলেন যে, তাদের উপর কোন সাদকা নেই এবং জিহাদ করতে হবে না। অতঃপর রাসূল ﷺ তাদের থেকে তা গ্রহণ করলেন এবং বললেন,

سَيَتَصَدَّقُوْنَ وَيُجَاهِدُوْنَ

অর্থাৎ তারা অবশ্যই অনতিবিলম্বে যাকাত দিবে এবং জিহাদ করবে। [আবু দাউদ, হা/৩০২৭।]

কেননা ঈমান যখন কোন হৃদয়ে প্রবেশ করে, তখন ইসলামের সমস্ত হুকুম-আহকাম পালন করা মুমিনের অবশ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়ে যায়। ঈমান যথা শক্তিশালী হবে, তার ওয়াজিবসমূহের পাবন্দিও তত পূর্ণতা লাভ করবে।

৬. দাঈ শরীয়তের যে হুকুমের প্রতি আহবান করবে, সে সম্পর্কে নিজে পূর্ণরূপে অবগত থাকতে হবে এবং আরো অবগত থাকবে যাকে দাওয়াত দিবে তার মানসিক অবস্থা, ইলম ও আমল সম্পর্কে। শরীয়ত সম্পর্কে তার প্রজ্ঞা থাকতে হবে। এ জন্য যে, সে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিবে বুঝে-শুনে ও দলীলের মাধ্যমে, যাতে নিজে পথভ্রষ্ট না হয় এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট না করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,

قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ

বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা দূরদর্শীতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)

বলা বাহুল্য, দাঈকে শরীয়ত সম্পর্কে জ্ঞানবান হতে হবে। যাতে করে তার দাওয়াতের পথ বিভিন্ন বাধা ও ক্ষতিকে প্রতিহত করতে পারে এবং তার প্রতিপক্ষকে সহীহ বুঝ দ্বারা তুষ্ট করতে পারে। বহু মুর্খ দাঈ রয়েছে, যারা দাওয়াতের ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে খুবই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেয়া হচ্ছে বিরাট দায়িত্ব। দাওয়াতের হক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকার কারণে বাতিলের সামনে পরাজিত হতে হবে। তাই দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ এমন ব্যক্তিদেরকে দাওয়াতের ব্যাপারে ক্ষমতা বা অনুমতি দেয়া জায়েয নয়, যেমন করে ছোট বাচ্চাদেরকে জিহাদের অনুমতি দেয়া বৈধ নয়।

আর যাকে দাওয়াত দিবে তার মানসিক অবস্থা, ইলম ও আমল সম্পর্কে জানতে হবে। তার অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রস্ত্ততি নিতে হবে এবং সে মোতাবেক দাওয়াত দিতে হবে। সে জন্যই রাসূল ﷺ যখন মুয়াজ (রাঃ) কে ইয়ামান দেশে পাঠালেন, তখন তাকে বললেন,

إِنَّكَ سَتَأْتِىْ أَقْوَامًا أَهْلَ كِتَابٍ

অর্থাৎ নিশ্চয় তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ, তারা হলো আহলে কিতাব।

অতঃপর রাসূল ﷺ তাকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে খবর দিলেন, যাদেরকে পূর্বে দুটি উদ্দেশ্যে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

নিশ্চয় দাঈ যখন তাদের অবস্থা না জেনে দাওয়াত দেয়, তখন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বিপরীত ঘটে থাকে। কেননা সে উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে শুরু করে।

৭. দাঈ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও চরিত্রের দিক দিয়ে ইলম ও আমলে উত্তম আদর্শের অধিকারী হবে। অনুসরণ ও ফযীলতের ব্যাপারে যা সে আদেশ কবে, তা নিজে পালন করবে; আর নিকৃষ্ট ও পাপ কাজ যা সে নিষেধ করবে, তা থেকে নিজে বিরত থাকবে। কেননা ধর্মে কোন হুকুম এমন নেই যে, সে আদেশ করবে, অথচ তা পালন করবে না; অথবা নিষেধ করবে, অথচ সে তা করবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা কেন বল? আর যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা সাফ- ২, ৩)

বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস শরীফে উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম ﷺ বলেন,

3267 - حَدَّثَنَا عَلِيٌّ ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنِ الأَعْمَشِ ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ قَالَ قِيلَ لأُسَامَةَ لَوْ أَتَيْتَ فُلاَنًا فَكَلَّمْتَهُ قَالَ إِنَّكُمْ لَتَرَوْنَ أَنِّي لاَ أُكَلِّمُهُ إِلاَّ أُسْمِعُكُمْ إِنِّي أُكُلِّمُهُ فِي السِّرِّ دُونَ أَنْ أَفْتَحَ بَابًا لاَ أَكُونُ أَوَّلَ مَنْ فَتَحَهُ ، وَلاَ أَقُولُ لِرَجُلٍ أَنْ كَانَ عَلَيَّ أَمِيرًا إِنَّهُ خَيْرُ النَّاسِ بَعْدَ شَيْءٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالُوا وَمَا سَمِعْتَهُ يَقُولُ : قَالَ : سَمِعْتُهُ يَقُولُ يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُهُ فِي النَّارِ فَيَدُورُ كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ فَيَجْتَمِعُ أَهْلُ النَّارِ عَلَيْهِ فَيَقُولُونَ أَيْ فُلاَنُ مَا شَأْنُكَ أَلَيْسَ كُنْتَ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَى ، عَنِ الْمُنْكَرِ قَالَ : كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ ، وَلاَ آتِيهِ وَأَنْهَاكُمْ ، عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ .

আবূ ওয়ায়িল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামাকে বলা হল, আপনি যদি ঐ ব্যক্তির [‘উসমান (রাযিঃ)-এর] নিকট যেতেন এবং তাঁর সাথে আলোচনা করতেন, তাহলে কত ভাল হতো! উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা মনে করছো, আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। আসলে আমি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছি গোপনে, যাতে একটি দরজা আমি যেন খুলে না বসি। আমি এ ফিত্নার দ্বার উন্মুক্তকারী প্রথম ব্যক্তি হতে চাই না। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এমন একটি হাদীস শুনেছি, যার পরে কোন লোক সম্পর্কে বলতে পারি না যে, যিনি আমাদের আমীর (প্রশাসক) নিশ্চয়ই তিনি আমাদের সবার মধ্যে উত্তম। লোকেরা প্রশ্ন করলো, তাঁকে কি বলতে শুনেছেন? উসামা উত্তর দিলেন, তাঁকে বলতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, এরপর তাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে তার নাড়ীভুড়িগুলো বেরিয়ে পড়বে। ফলে সে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, গাধা যেমন তার পাথরের চক্কির চারি পাশে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা এ লোকের কাছে এসে একত্রিত হবে এবং তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে সৎকাজের আদেশ করতে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে? সে বলবে, (হ্যাঁ!) আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ করতাম, অথচ আমি তা করতাম না। আর মন্দ কাজ হতে তোমাদের নিষেধ করতাম, অথচ আমি তা করতাম। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৬৭; সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৩২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৯২; মিশকাত, হা/৫১৩৯।]

কেউ অপরকে যা আদেশ করে, তার বিপরীত কাজ করা এবং যা নিষেধ করে, তা করা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন খেলাফ, তেমনি আকলেরও খেলাফ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَتَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ اَنْفُسَكُمْ وَاَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْكِتَابَ ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ

তোমরা কি লোকদেরকে সৎকাজের আদেশ দাও, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও; অথচ তোমরাই গ্রন্থ পাঠ কর। তবে কি তোমরা বুঝ না?

(সূরা বাক্বারা- ৪৪)

কোন কিছুর দিকে দাওয়াত ঐ সময় হয়ে থাকে যখন তার উপকারিতা ও ফায়দায় সন্তুষ্ট হয়। অথচ তার বিপরীত ফল ঐ সময় হয়ে থাকে, যখন যে বস্ত্ত থেকে সে নিষেধ করে, নিজেই সেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়, অথবা যাদেরকে হুকুম করে তাদের সাধারণ উপকারিতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর এ দুটি আকলের বিপরীত। কেননা জ্ঞানী নিজে সাধারণ উপকারিতা বিনষ্ট করে না এবং নিজেকে কোন ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয় না। অথবা দাওয়াতের উপকারিতা না জেনে নিজে এমন জিনিসে কষ্ট পায়, যার ফায়দা সে দেখতে পায় না। এমন পোষাক সে পরিধান করে, যার যোগ্য সে নয়।

আর যদি লোক দেখানোর জন্য দাওয়াত দেয়, তবে সে নিজেকে নিজে ধোকা দিল। কেননা তার হুকুমে কাজ হবে না এবং তার প্রকৃত অবস্থা অচিরেই প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ

ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায়, আর যা মানুষের উপকার আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। (সূরা রাদ- ১৭)

কবি বলেন,

ثَوْبُ الرّيَاءِ يَكْشِفُ عَمَّا تَحْتَهُ-فَاِذَا اكْتَسَيْتُ بِهِ فَاِنَّكَ عَارٍ

অর্থাৎ লোক দেখানো পোশাক তার নিচে যা থাকে তা প্রকাশ করে দেয়। অতএব তুমি যদি তা পরিধান কর তবে নিশ্চয় তুমি উলঙ্গ।

ইসলাম প্রচারকের জানা উচিৎ যে, আল্লাহর বিধান অনুসরণে কোন রকম গাফলতি করবে না। মনে রাখবে, তার অবহেলা অন্যদের অবহেলার মতো নয়। কেননা সে হচ্ছে মানুষের জন্য আদর্শ। যখনই তাকে মানুষ দেখবে যে, সে আল্লাহর অনুসরণের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছে বা কোন কিছুকে হেয় ও তুচ্ছ মনে করছে, তখন তারাও তার মতো হবে অথবা তার চেয়ে অধিক উদাসীন হবে। আর এ জন্য কোন মুস্তাহাব বস্ত্তও কখনো দাঈর জন্য ওয়াজিব হয়ে যেতে পারে, যদি কোন সুন্নাত বা মুস্তাহাবের আমল তার কাজের উপর লক্ষ্য করে বন্ধু হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। তেমনিভাবে দাঈর পাপ কাজ করতে থাকা অন্যের নাফরমানীর মতো হয়। কেননা মানুষ তার অনুসরণ করে। সে অন্যায় করলে, তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার আল্লাহর নাফরমানী সমাজে সংঘটিত হবে। মানুষ তার কাজকে দলীলরূপে বিবেচনা করে তাতে লিপ্ত হবে। এমনকি দাঈ এ কাজ করতে থাকায় অসৎ কাজও মানুষেরা ভালো কাজ মনে করে করতে পারে। আর এ কারণেই মাকরুহ কাজ দাঈর জন্য হারাম বিবেচিত হয়, যদি তার কাজটা মানুষের অন্তরে উক্ত কাজটি মুবাহ হওয়ার বিশ্বাসকে বদ্ধমূল করে। অতএব দাঈর উপর বিরাট আমানত ও বড় দায়িত্ব রয়েছে- এ কথা তার ভাবতে হবে এবং খুব সতর্কতার সাথে চলতে হবে।

আল্লাহ যেভাবে পছন্দ করেন, সেভাবে আমরা সবাই যাতে তার দ্বীনের কাজ পালন করতে পারি, সেজন্য আল্লাহর কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করিছ। নিশ্চয় তিনি দানশীল ও দয়াবান।

৮. দাঈ তার আচরণ, কথা ও কাজে ভদ্র ও সম্মানী হবে। অভদ্র ও কর্কশ হবে না। সমাজে সে যেন সম্মানের পাত্র হয়। তাতে বাতিলপন্থীরা তার সাথে বাতিল আশা করতে পারবে না এবং ইখলাসপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে সে গোপন থাকবে না। প্রচেষ্টার স্থানে সে চেষ্টা করবে এবং রসিকতার স্থানে সে রসিকতা করবে। কথা বলায় যদি মঙ্গল থাকে, তখন কথা বলবে। আর কথা বলায় যদি অমঙ্গল থাকে তবে চুপ থাকবে। ভদ্রতার দিক দিয়ে তার হওয়া উচিৎ প্রশস্ত হৃদয়, হাস্য চেহারা ও নম্রতার অধিকারী। সে মানুষকে ভালোবাসবে এবং তারাও তাকে ভালোবাসবে। যাতে তারা তার থেকৈ দূরে সরে না যায়। দাঈর প্রশস্ত অন্তর, হাস্য চেহারা ও নম্রতার মাধ্যমে বহু লোক আল্লাহর দ্বীনে দলে দলে দাখেল হয়েছে।

পঞ্চম অধ্যায়ঃ দাওয়াতে সফলতার শর্তাবলি
দাওয়াতে কৃতকার্যতা বা সফলতা অর্জন হচ্ছে এমন একটা ফসল, যা দাঈগণ চেষ্টার দ্বারা লাভের আশা করে থাকে। তাদের দাওয়াত ফলপ্রসূ হওয়ার কামনা-বাসনা যদি না থাকত, তবে তাদের আগ্রহ বা শক্তি লোপ পেত এবং তাদের দাওয়ার ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে যেত। তাই প্রত্যেক দাঈর জন্য উত্তম হচ্ছে, তার দাওয়াত ফলপ্রসূ ও সফল হওয়ার কৌশলসমূহ জেনে নিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে করে আকাঙ্খিত রেজাল্টে পৌঁছতে সক্ষম হয়। দাওয়াতে সফলতা অর্জনের কৌশল-কারণ বা শত্যাবলিসমূহ হচ্ছে নিম্নরূপ :

১. দ্বিতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে যা বর্ণিত হয়েছে তা বাস্তবায়িত করা।

২. দেশের ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তির কাছ থেকে দাওয়াতী কাজের জন্য সনদ বা অনুমতিপত্র থাকতে হবে। বলা বাহুল্য, দাওয়াত ও ক্ষমতা এ দুটিই জাতিকে সংশোধনের স্তম্ভ স্বরূপ। যদি এ দুটি বিষয় একত্রিত হয়, তবে তো আল্লাহর ইচ্ছায় লক্ষ্যবস্ত্ত ও মাকছুদ অর্জিত হওয়া নিশ্চিত। আর যদি দাওয়াত ও ক্ষমতা একটি অপরটির বিপরীতপন্থী হয়, তবে পরিশ্রম বিনষ্ট হয় অথবা বড় ধরনের দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। অতএব যে দেশ প্রকৃত স্থায়ী ইজ্জতের ইচ্ছা করে এবং পৃথিবীতে সম্মানের রাজত্ব করতে চায় সেই দেশের দায়িত্ব হবে আল্লাহর দ্বীনকে আঁকড়ে ধরা এবং তাঁর রাসূলের পথকে অনুসরণ করা। আর যে সমস্ত আইন-কানুন ও শিক্ষা আল্লাহর দ্বীন ও রাসূলের হিদায়াতের পরিপন্থী, সে সমস্ত থেকে বিমূখ থাকা। কেননা আল্লাহর বাণী হচ্ছে সুমহান, আর দ্বীন হচ্ছে বিজয়ী, যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণী ও তার দ্বীনকে সঠিকভাবে গ্রহণ করবে, তার বিরোধিতা যে করবে, তার উপর থাকবে তার প্রাধান্যতা এবং সেই হবে বিজয়ী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ يَعْلَمُوْنَ ظَاهِرًا مِّنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَهُمْ عَنِ الْاٰخِرَةِ هُمْ غَافِلُوْنَ

অধিকাংশ মানুষ (প্রকৃত অবস্থা) জানে না। তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক অবস্থাটুকুই জানে, কিন্তু তারা পরকাল সর্ম্পকে সম্পূর্ণ উদাসীন। (সূরা রূম- ৬, ৭)

আর যে দেশ প্রকৃত স্থায়ী সম্মান ও জমিনে খেলাফত চায়, তার উচিৎ হবে, আল্লাহর পথের দাওয়াতকে বিজয়ী করার জন্য কথা ও কাজ, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে সর্বশক্তি দিয়ে সাহায্য করা। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কখনো কখনো শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করেন, হুশিয়ারী বালা-মুসিবত দান করেন। যখন মানুষেল অন্তরে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়, তখন তিনি কঠোর বাধা প্রদানকারী হয়ে গজব নাযিল করে তাদেরকে পাপ ও নাফরমানী থেকে বাধা প্রদান করেন এবং তাদেরকে আল্লাহর বিধান অনুসরণে বাধ্য করেন। এমনকি তখন তারা সংশোধন হয় এবং সঠিক পথে চলে।

এমনভাবে আল্লাহর পথের সচেতন দাঈরা দেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। পাশাপাশি তাদেরকেও হক পথে চলার জন্য উৎসাহিত করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতের তাদের জন্য যে সমস্ত প্রশংসিত প্রতিদান রয়েছে, তা তাদের নিকট বর্ণনা করবেন এবং হকের খেলাফ করায় দুনিয়া ও আখেরাতে সে সমস্ত নিকৃষ্ট পরিণাম ও দুর্ভাগ্য রয়েছে তা তাদের জানাবেন। এমনিভাবে তাদেরকে সর্বশক্তি দিয়ে আল্লাহর দাওয়াতে সাহায্যের জন্য উৎসাহ প্রদান করবেন এবং হাতাশার ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক বুঝ দিবেন।

৩. দাওয়াত গ্রহণযোগ্য ও যথাস্থানে হতে হবে, যাতে করে আহবানকৃত ব্যক্তিরা তা গ্রহণ করতে প্রস্ত্তত থাকে। তাদের কাছে যেন এমন কোন বাধা প্রদানাকারী কিছু না থাকে, যা তাদের দাওয়াত গ্রহণ করার মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। সাধারণত দাওয়াত ঐ সম্প্রদায়ের কাছে হওয়া উচিৎ, যারা তাদের ভ্রান্ততা ও অন্যায়ের শেষ পরিণাম জানতে পেরে তার থেকে নাজাত কামনা করছে। রাসূল ﷺ এর দাওয়াতের প্রতি লক্ষ্য করুন, তাঁর এ দাওয়াত ছিল যথাযথ স্থান, কাল ও পাত্র বিশেষে। এ সময় ছিল রাসূল পাঠাবার উপযুক্ত সময়; পাত্র ছিল নিশ্চিত, মানুষ বিশেষ আগ্রহভরে রিসালাতের নূরে প্রতিক্ষায় ছিল। তার রহমতের পিপাসা ছিল তাদের অন্তরে। তখন আল্লাহ রাববুল ইজ্জত পৃথিবীবাসীর প্রতি দৃষ্টি দিলেন। শুষ্ক জমিতে রহমতের বৃষ্টির ন্যায় মানুষের মাঝে রাসূল ﷺ এর আবির্ভাব হলো।

সেকালে আউস গোত্র ও খাজরাজ গোত্র যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। আর তা স্থায়ী ছিল হিজরী সনের প্রায় পাঁচ বছর পূর্ব পর্যন্ত। এ যুদ্ধে নিহত হয়েছিল আউস ও খাজরাজ এ দুটি গোত্রের অসংখ্য লোক। তারা এমন একটি জিনিসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে, যা তাদেরকে একত্রিত করবে এবং তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের সৃষ্টি করবে। তাদের সেই প্রতিক্ষিত নিয়ামতরূপে তখন নবীজী ﷺ এর আবির্ভাব হলো।

সহীহ বুখারীতে আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, দিনের পর দিন ছিল উত্তপ্ত। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা প্রেরণ করলেন তাঁর রাসূল ﷺ কে। সে সময় রাসূল ﷺ আগমন করলেন এমন গোত্রে, যারা পরস্পর কাটাকাটি মারামারীতে লিপ্ত ছিল। রাসূল ﷺ আগমনের মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করার তৌফিক দিলেন এবং পরস্পরে ভ্রাতৃত্বেবোধ দান করলেন।

ইবনে ইসহাক উল্লেখ করেন যে, নবী করীম ﷺ যখন হজ্জ মৌসুমে খাজরাজ গোত্রের সাথে কথা বললেন, তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিলেন তখন তারা ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং বললেন, আমরা আজ থেকে আমাদের গোত্রের ও অন্য গোত্রের শত্রুতা ও অন্যায় ছেড়ে দিলাম। আল্লাহর কাছে কামনা করছি যে, আপনার দ্বারা তিনি যেন তাদের মাঝে মিল করিয়ে দেন।

আর যদি এমন এক গোত্রের কাছে দাওয়াত দিতে হয়, যারা বাতিল বরণ করেছে, মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হচ্ছে অন্যায়ের চাকচিক্য নিজেকে অধিক মর্যাদাবান মনে করছে এবং পার্থিব অসাড় মরিচিকার ধোকায় পড়েছে, সেখানে সাধারণ দাওয়াতের সফলতার গতি হবে মন্থর। কেননা, বাতিলের প্রবল গতি তাদের মাঝে শক্তিশালী, আর এ প্রবল গতির মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দাওয়াতের বিরাট শক্তি, যাতে করে তার উপর বিজয় লাভ করা সম্ভব হয়। এজন্য দাওয়াতী পর্যায়ের সর্বস্তরে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন। আল্লাহই সকল সাহায্যের জন্য যথেষ্ট।

৪. দাঈ তার দাওয়াতের সফলতার ব্যাপারে নিরাশ না হয়ে প্রবল আশাবাদী থাকবে। নিশ্চয় দৃঢ় আশা দাওয়াত পরিচালনায় ও তার সফলতাদানের প্রচেষ্টায় একটা শক্তিশারী গতি, যেমনিভাবে নিরাশা অকৃতকার্য হওয়া ও দাওয়াতের শ্লথ গতির একটা বিশেষ কারণ। এ জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা স্বীয় নবীর জন্য আশা-আকাংখার বিভিন্ন দরজা খুলে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ

স্মরণ করিয়ে দিন। কেননা স্মরণ করাটা মুমিনদের উপকারে আসবে।

(সূরা যারিয়াত- ৫৫)

তিনি আরো বলেন,

هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه

তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে (রাসূল) ঐ দ্বীনকে অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

تِلْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَاۤ اِلَيْكَۚ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَاۤ اَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هٰذَاؕ فَاصْبِرْ اِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ

এ সমসত্ম অদৃশ্যের সংবাদ আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, যা এর পূর্বে তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়েরও কেউ জানত না। সুতরাং ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা হুদ- ৪৯)

রাসূল ﷺ এর বিরাট আশা ও দূরবর্তী দৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য করুন : তায়েফ থেকে ফিরে আসার কঠিন দিন যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে আল্লাহর পথে ডেকেছিলেন, অতঃপর তারা তার দাওয়াতে সাড়া না দিয়ে তাদের নির্বোধদেরকে তাঁর পিছনে লেলিয়ে দিয়েছিল, তখন তিনি করনাচ্ছাযালির নামক স্থানে পৌঁছলে জিবরীল (আঃ) তাঁকে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে সম্প্রদায়ের কথা শ্রবণ করেছেন এবং দাওয়াতের প্রেক্ষিতে যা জবাব দিয়েছে, তাও তিনি অবলোকন করেছেন, তাই আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেশতা পাঠিয়ে দিয়েছেন এ জন্য যে, আপনি তাদের ব্যাপারে যা ইচ্ছা করবেন, তা তাকে হুকুম করুন। তখন পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাও এগিয়ে এসে রাসূল ﷺ কে সালাম দিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি যা হুকুম করবেন, আমি তা-ই করব। যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তা হলে আমি এ কঠিন দুটি পাহাড় চাপিয়ে তাদেরকে নিষ্পেষিত করে দিব। তখন নবী করীম ﷺ বললেন, বরং আমি কামনা করছি যে, আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন লোক বের করবেন, যারা এককভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।

নিঃসন্দেহে এই সুদূর প্রসারী আশা দাওয়াত পরিচালনা ও তার সফলতার প্রচেষ্টায় এবং তাকে গতিশীল করে তুলতে যথেষ্ট কার্যকর ও শক্তিশালী।

মহান আল্লাহর কাছে আমাদের কামনা যে, তিনি যেন আমাদেরকে ভালো কাজের দাঈ বানিয়ে দেন এবং মন্দ কাজের বাধা প্রদানকারী বানান। তিনি যেন মুসলিম জাতির মধ্যে তৈরি করেন সঠিক পথপ্রাপ্ত, উত্তম, সৎ ও চরিত্রবান নেতা, যারা দেশে ইসলামী নীতির আলোকে ফায়সালা করবেন এবং হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করবেন। আমীন

والحمد لله رب العالمين- وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى اله وصحبه اجمعين

লেখক কর্তৃক রচিত ও অনুবাদিত কিছু বই
১. ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান

২. মহান স্রষ্টার একত্ববাদ ও আধুনিক বিজ্ঞান

৩. আল্লাহর বাণী আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান

৪. আল কুরআনের বৈজ্ঞানিক নির্দেশনাবলি

৫. বিরিশিরি এলাকায় খৃস্টান মিশনারীর তৎপরতা

৬-৭. তালীমুল মুহাদাছাহ লিল আতফাল (১মও ২য় খন্ড)

৮. তালীমুল আরাবিয়া শিশু শ্রেণি

৯-১৪. তালীমুল আরাবিয়া লিল আতফাল (১ম-৬ষ্ঠ খন্ড)

১৫-১৭. তালীমুল কাওয়ায়িদিল আরাবিয়া লিল আতফাল (১ম-৩য় খন্ড)

১৮. কুরআন সুন্নার আলোকে ইয়াতীম প্রতিপালন

১৯. সকাল সন্ধ্যার যিকির

২০. কুরআন পাঠের সহজ পদ্ধতি

২১. মিথ্যার কুফল ও বেঁচে থাকার উপায়

২২.দাঈদের প্রতি বার্তা

২৩. আমি কেন নামায আদায় করব?

২৪. জামা‘আতে সালাত এর ফযীলত, আদব ও হুকুম

২৫. জুমু‘আর সালাত এর ফযীলত, আদব ও হুকুম

২৬. নাজাতের পথ

২৭. হজ্জ ও উমরার বৈশিষ্ট্য

২৮. পর্দা কেন?

২৯. প্রবৃত্তির অনুসরণ

৩০. ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে মুসলিম নারী

৩১. ঘুষের কুফল ও বেঁচে থাকার উপায়

৩২. ইসলামে আলো ও আধুনিক বিজ্ঞান

৩৩. নবী ﷺ এর ভালবাসা কোন পথে?

৩৪. নাসিত্মক অস্বীকার করে কেন?

৩৫. কুরআন ও হাদীসের আলোকে সুদের ভয়াবহতা

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন