HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দাঈদের প্রতি বার্তা

লেখকঃ শাইখ মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন

চতুর্থ অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে আহবানকারীর দায়িত্ব, কর্তব্য, গুণাবলি ও কার্যক্রম।
দাঈদের মর্যাদা হচ্ছে নেতৃত্বের মর্যাদার মতো গুরুত্বপূর্ণ। অতএব এ মান-মর্যাদা সংরক্ষণ করা ও তার সাথে মনোনিবেশকে পরিচালনা করা একান্ত প্রয়োজন। যাতে করে তা বাস্তবে পরিণত হয়। অতএব দাঈর নিম্নবর্ণিত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য করা উচিৎ :

১. আল্লাহর জন্য সরল ও বিশুদ্ধ চিত্তে সে কাজ করবে, তার দাওয়াতের দ্বারা সে আল্লাহর নৈকট্যের ইচ্ছা করবে। মানুষদেরকে পাপ ও অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বের করে অনুসরণ ও জ্ঞানের আলোর দিকে নেয়ার মাধ্যমে দ্বীনের সাহায্য ও আল্লাহর বান্দাদের সংশোধন করবে। তার দাওয়াতটি আল্লাহর মুহাববতে তার দ্বীনের জন্য এবং সমস্ত মানব জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে চালাতে থাকবে।

আল্লাহর উপর ভরসা, দৃঢ় ইচ্ছা ও সর্বশক্তির সাথে ইখলাসের মাধ্যমে এই প্রবহমান দাওয়াত অবশ্যই কার্যকর হবে। আপনি কি মুসা (আঃ) এর ঘটনা জানেননি? যখন মানুষ তাঁর উদ্দেশ্যে ফিরাউন স্বীয় ষড়যন্ত্রের কলাকৌশল তাঁর জন্য জমা করল, তারপর সে দাম্ভিকতা, গৌরব ও অহংকারের সাথে আসল। তখন মূসা (আঃ) এর দাওয়াতের রূপরেখা এরূপ ছিল,

قَالَ لَهُمْ مُّوْسٰى وَيْلَكُمْ لَا تَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍۚ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرٰى

মূসা তাদেরকে বলল, দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো না। অন্যথায় তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করে দেবেন। তাছাড়া (ইতোপূর্বে) যে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে সেই ব্যর্থ হয়েছে। (সূরা ত্বা–হা– ৬১)

এ কালিমা কি করেছে? নিশ্চয় তা তাদের কথাগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে দিয়েছে। তাদের চরিত্রগুলোকে সঙ্গে সঙ্গে বিলম্ব ছাড়াই ভিন্ন করে দিয়েছে।

فَتَنَازَعُوْاۤ اَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ

তারা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক করল। (সূরা ত্বা–হা– ৬২)

নিজেদের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে কৃতকার্যের কারণসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ এবং এর দ্বারা প্রভাব চলে যায়। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,

وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ

তোমরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। (সূরা আনফাল- ৪৬)

দাঈর দাওয়াতে একমাত্র আল্লাহর জন্যই সরল ও বিশুদ্ধ চিত্তে কাজ করাটা কামিয়াবি ও সওয়াব পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি তার এ দাওয়াতের দ্বারা মানুষের দৃষ্টি কামনা করে, অথবা দুনিয়াবি কোন জিনিসের ইচ্ছা করে, যেমন ধন-সম্পদ অথবা মান-সম্মান অথবা নেতৃত্ব, তাতে তার আমল নষ্ট হবে এবং তার উপকার হবে স্বল্পই। মহান আল্লাহ বলেন,

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তাঁর চাকচিক্য কামনা করে, আমি তাদেরকে দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল পরিপূর্ণ করে দেই। তাতে তাদের প্রতি কমতি করা হয় না। এদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা যা করেছিল, তা দুনিয়াতে বিনষ্ট হয়েছে এবং যা কিছু আমল করেছিল তা বাতিল হয়েছে। (সূরা হুদ- ১৫, ১৬)

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ قَالَ تَفَرَّقَ النَّاسُعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ فَقَالَ لَهُ نَاتِلُ أَهْلِ الشَّامِ أَيُّهَا الشَّيْخُ حَدِّثْنَا حَدِيثًا سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ - - قَالَ نَعَمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ - - يَقُولُ : إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ . قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِىءٌ . فَقَدْ قِيلَ . ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِىَ فِى النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ . قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ . وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ . فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِىَ فِى النَّارِ . وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ . فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِىَ فِى النَّارِ

সুলাইমান ইবনে ইয়াসার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল (রহ.) বললেন, হে শায়খ! আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একখানা হাদীস আমাদেরকে শুনান। তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ হয়েছিল। তাঁকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামাতরাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এর বিনিময়ে কী আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি তোমারই পথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি বরং এ জন্যেই যুদ্ধ করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে বলে, তুমি বীর। তা বলা হয়েছে, এরপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রদত্ত নি‘আমাতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে) তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এত বড় নি‘আমাত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্যে যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে যাতে লোকে বলে, তুমি একজন কারী। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে, সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে যাকে আল্লাহ তা‘আলা সচ্ছলতা এবং সর্ববিধ বিত্ত-বৈভব দান করেছেন। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নি‘আমাতসমূহের কথা তাঁকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (এবং স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এসব নিয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছো? জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই যাতে সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ কর, আমি সে খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি বরং এ জন্যে তা করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে ‘দানবীর’ বলে অভিহিত করে। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫০৩২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৪৯৫; জামেউস সগীর, হা/৩৭৭৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫১৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২।]

২. আল্লাহর প্রতি দাওয়াতের দ্বারা এ বিশ্বাস রাখবে যে, সুন্নত ও হিদায়েত প্রচারের দিক দিয়ে সে তার নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর ওয়ারিস। যাতে এটি আল্লাহর প্রতি দাওয়াত, ধৈর্যধারণ এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় সহায়ক হয় এবং আল্লাহর এই বাণীতে শরীক হতে পারে,

قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ

বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা দূরদর্শীতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)

৩. আল্লাহর প্রতি দাওয়াতে সে যেন সাবেত ও অটল থাকে। জটিলতা তাকে জোরে নাড়া দিতে এবং নৈরাশ্য তাকে যেন ধাক্কা দিতে না পারে। সে তার সঠিক পদ্ধতিতে অবিচল, দাওয়াতের শেষ ফলে সে আশাবাদী, বিভিন্ন উপকারিতায় সে দৃঢ় থাকবে। সে তা বৃদ্ধিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে। সত্য বর্ণনা, নিয়তের বিশুদ্ধতা, আখিরাতের সওয়াব ও আমলের সঠিকতায় সে নির্ভরশীল হবে। তখন দাওয়াত সৃষ্টির উপযোগী বলে আশাবাদীও হবে, যদিও তার বাস্তব প্রতিফলন কিছু সময় পরে হোক।

৪. সে ধৈর্যধারণ করবে এবং তাতে বিজয়ী হবে। সে সৃষ্টির পক্ষ থেকে পাওয়া ব্যথা-বেদনা ও কষ্টের উপর সবর করবে। কেননা এই দায়িত্ব যে পালন করেছে, তবে অবশ্যই এই দাওয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টির নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের থেকে বিভিন্ন ব্যথা ও কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। রাসূল ﷺ ও তার পূর্ববর্তী রাসূলগণের যা ঘটেছে, তার দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللهِ

এভাবে তোমার আগেও রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও নানা রকম নির্যাতন চালানোর পরও তাঁরা কঠোর ধৈর্যধারণ করেছিল, অবশেষে তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছল। আল্লাহর বাণী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। (সূরা আন‘আম- ৩৪)

সবর বা ধৈর্য হচ্ছে এমন উন্নত স্তর যে, দীর্ঘ দিন বার বার ধৈর্যের মাধ্যমে বান্দা তার ফযীলতসমূহ লাভ করতে থাকে এবং সে জন্য তাকে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতেই হয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :

اِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ

নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সূরা যুমার- ১০)

হক বর্ণনা, তার প্রতি দাওয়াত ও তার ব্যাপারে বিতর্ক করার মাধ্যমে তার উচিৎ, আকাংখিত শেষ পরিণাম বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য ধৈর্যধারণ করা।

৫. আল্লাহর রাস্তার দাওয়াতে হিকমতের পন্থা গ্রহণ করবে এবং স্থান-কাল-পাত্র ভেদে যথাযথ পদ্ধতি ব্যবহার করবে। কেননা বুঝ, জ্ঞান, নম্র ও কঠোরতা, সত্যকে গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে সব মানুষ সমান নয়। অতএব প্রত্যেকের সাথে যা তার জন্য উপযোগী, তা অবলম্বন করা, যাতে সে গ্রহণ করে, এটাই হচ্ছে হিকমতের সাথে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দেয়ার স্বরূপ। আর সে যেন অভ্যস্ত ও সহ্যকারী হয়। তাই কোন ব্যক্তিকে বক্রপথে চলতে দেখলে তাকে সৎ পথে না ডেকে তার থেকে দূরে সরে যাবে না এবং তাকে তার বক্রতার পথে শয়তানের জন্য ছেড়ে দিবে না। বরং তার সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখবে এবং তার কাছে হক বর্ণনা করবে, তাবে নেকের পথে উৎসাহ দিবে। আর এটাও হিকমতের মধ্যে যে, আহবানকৃত ব্যক্তির ভ্রান্ততায় তিরস্কার না করা। তা যদি করা হয়, তবে তার হক থেকে দূরে সরে যাওয়া বৃদ্ধি পাবে এবং ঘৃণিত কাজে সে আরো মত্ত হবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেন,

وَلَا تَسُبُّوا الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَيَسُبُّوا اللهَ عَدْوًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ كَذٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ اُمَّةٍ عَمَلَهُمْ

তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না। কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ-কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ১০৮)

বরং তাকে হক স্মরণ করিয়ে দেবে এবং উৎসাহ দিতে থাকবে। তাতে তার অন্তর পাওয়া যাবে এবং বাতিল যা তার কাছে প্রিয়, তা ছেড়ে দেয়া তার জন্য সহজ হবে। কেননা প্রিয় জিনিস ছেড়ে দেয়া অত্যন্ত কঠিন এবং মানুষের পক্ষে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর তা ছেড়ে দেয়া সম্ভব হয়। শরীয়াতে মদ হারাম করার ব্যাপারে আল্লাহর হিকমতের দিকে লক্ষ্য করো। যখন তা মানুষের কাছে প্রিয় বস্ত্ত ছিল, মুমিনগণের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে মদ ধাপে ধাপে হারাম হয়েছিল।

তন্মধ্যে প্রথম পদক্ষেপঃ তাদের প্রশ্নের জবাবে ইঙ্গিত-

يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِؕ قُلْ فِيْهِمَاۤ اِثْمٌ كَبِيْرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْمُهُمَاۤ اَ كْبَرُ مِنْ نَّفْعِهِمَا

লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলো, এ দু’টির মধ্যে বড় ধরনের গোনাহ রয়েছে। এতে মানুষের জন্য কিছুটা উপকার রয়েছে, তবে এ দু’টির অপরাধ উপকারের চেয়ে অনেক বড়। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)

এখানে একটি উপকারের কথা বলেননি, বরং বলেছেন অনেক উপকারের কথা, যাতে করে তার মধ্যে যা রয়েছে অথবা তাতে যে উপকারের কল্পনা করা হয়, সব কিছুকে শামিল করতে পারে। আর এ সমস্ত উপকার বড় পাপের তুলনায় ছোট বা হীন হবে। এটাই হচ্ছে মদের প্রকৃত রূপ। প্রত্যেক মানুষ মদের হুকুমের ব্যাপারে এ চিন্তা ভাবনা করবে এবং এর থেকে দূরে থাকবে। যদিও তখন এটা হারাম ছিল না, কিন্তু যখন অবগত হবে যে, মদের পাপ ও ক্ষতিটা উপকারের চেয়ে বড়, তখন তা এমনিতেই ছেড়ে দেবে। তদুপরি এ বর্ণনায় মদ হারাম হওয়ার শুধুমাত্র ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা শরীয়তের নিয়ম হচ্ছে, যে জিনিসে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি সে জিনিস হারাম। যার ফলে তখন মানুষের আত্মাসমূহ অনুভব করছিল যে, এ মদ অনতিবিলম্বে হারাম হবে। এরপর মদ যখন চূড়ান্তভাবে হারাম হয়ে স্পষ্ট হুকুম আসবে এবং হঠাৎ আত্মাসমূহের সামনে তা আত্মপ্রকাশ করবে তখন মানুষ এর জন্য প্রস্ত্তত থাকবে। তার জন্য এটা সে সময় গ্রহণ করা সহজ হবে।

দ্বিতীয় পদক্ষেপঃ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হতে নিষেধাজ্ঞা-

يَاا َيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা- ৪৩)

এ আয়াতে দিন-রাতে কমপক্ষে পাঁচ বার মদ থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। অতএব নফস কিছু সময় তা থেকে বিরত থাকার প্রস্ত্ততি নিবে, যাতে করে পরবর্তীতে তা থেকে পুরাপুরি বিরত থাকা সহজ হয়।

তৃতীয় পদক্ষেপ : সব সময় সর্বাবস্থায় মদ থেকে নিষেধের হুকুম-

এ হুকুম এসেছে সূরা মায়েদায়। এ আয়াতটি সর্বশেষ অবতীর্ণ হয়েছে,

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ

হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার দেবী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্যবস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায় করা হতে বাধা প্রদান করতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯০, ৯১)

পর্যায়ক্রমে ইঙ্গিত দিয়ে পরিশেষে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা আসার পর পরই সাহাবাগণ অতি সহজেই মদ পরিহার করতে সক্ষম হয়েছেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রজ্ঞাময়, দয়াবান।

ছাকীফ গোত্র রাসূল ﷺ এর কাছে এ শর্তে বাইয়াত হয়েছিলেন যে, তাদের উপর কোন সাদকা নেই এবং জিহাদ করতে হবে না। অতঃপর রাসূল ﷺ তাদের থেকে তা গ্রহণ করলেন এবং বললেন,

سَيَتَصَدَّقُوْنَ وَيُجَاهِدُوْنَ

অর্থাৎ তারা অবশ্যই অনতিবিলম্বে যাকাত দিবে এবং জিহাদ করবে। [আবু দাউদ, হা/৩০২৭।]

কেননা ঈমান যখন কোন হৃদয়ে প্রবেশ করে, তখন ইসলামের সমস্ত হুকুম-আহকাম পালন করা মুমিনের অবশ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়ে যায়। ঈমান যথা শক্তিশালী হবে, তার ওয়াজিবসমূহের পাবন্দিও তত পূর্ণতা লাভ করবে।

৬. দাঈ শরীয়তের যে হুকুমের প্রতি আহবান করবে, সে সম্পর্কে নিজে পূর্ণরূপে অবগত থাকতে হবে এবং আরো অবগত থাকবে যাকে দাওয়াত দিবে তার মানসিক অবস্থা, ইলম ও আমল সম্পর্কে। শরীয়ত সম্পর্কে তার প্রজ্ঞা থাকতে হবে। এ জন্য যে, সে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিবে বুঝে-শুনে ও দলীলের মাধ্যমে, যাতে নিজে পথভ্রষ্ট না হয় এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট না করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,

قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ

বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা দূরদর্শীতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)

বলা বাহুল্য, দাঈকে শরীয়ত সম্পর্কে জ্ঞানবান হতে হবে। যাতে করে তার দাওয়াতের পথ বিভিন্ন বাধা ও ক্ষতিকে প্রতিহত করতে পারে এবং তার প্রতিপক্ষকে সহীহ বুঝ দ্বারা তুষ্ট করতে পারে। বহু মুর্খ দাঈ রয়েছে, যারা দাওয়াতের ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে খুবই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেয়া হচ্ছে বিরাট দায়িত্ব। দাওয়াতের হক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকার কারণে বাতিলের সামনে পরাজিত হতে হবে। তাই দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ এমন ব্যক্তিদেরকে দাওয়াতের ব্যাপারে ক্ষমতা বা অনুমতি দেয়া জায়েয নয়, যেমন করে ছোট বাচ্চাদেরকে জিহাদের অনুমতি দেয়া বৈধ নয়।

আর যাকে দাওয়াত দিবে তার মানসিক অবস্থা, ইলম ও আমল সম্পর্কে জানতে হবে। তার অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রস্ত্ততি নিতে হবে এবং সে মোতাবেক দাওয়াত দিতে হবে। সে জন্যই রাসূল ﷺ যখন মুয়াজ (রাঃ) কে ইয়ামান দেশে পাঠালেন, তখন তাকে বললেন,

إِنَّكَ سَتَأْتِىْ أَقْوَامًا أَهْلَ كِتَابٍ

অর্থাৎ নিশ্চয় তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ, তারা হলো আহলে কিতাব।

অতঃপর রাসূল ﷺ তাকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে খবর দিলেন, যাদেরকে পূর্বে দুটি উদ্দেশ্যে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

নিশ্চয় দাঈ যখন তাদের অবস্থা না জেনে দাওয়াত দেয়, তখন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বিপরীত ঘটে থাকে। কেননা সে উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে শুরু করে।

৭. দাঈ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও চরিত্রের দিক দিয়ে ইলম ও আমলে উত্তম আদর্শের অধিকারী হবে। অনুসরণ ও ফযীলতের ব্যাপারে যা সে আদেশ কবে, তা নিজে পালন করবে; আর নিকৃষ্ট ও পাপ কাজ যা সে নিষেধ করবে, তা থেকে নিজে বিরত থাকবে। কেননা ধর্মে কোন হুকুম এমন নেই যে, সে আদেশ করবে, অথচ তা পালন করবে না; অথবা নিষেধ করবে, অথচ সে তা করবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা কেন বল? আর যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা সাফ- ২, ৩)

বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস শরীফে উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম ﷺ বলেন,

3267 - حَدَّثَنَا عَلِيٌّ ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنِ الأَعْمَشِ ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ قَالَ قِيلَ لأُسَامَةَ لَوْ أَتَيْتَ فُلاَنًا فَكَلَّمْتَهُ قَالَ إِنَّكُمْ لَتَرَوْنَ أَنِّي لاَ أُكَلِّمُهُ إِلاَّ أُسْمِعُكُمْ إِنِّي أُكُلِّمُهُ فِي السِّرِّ دُونَ أَنْ أَفْتَحَ بَابًا لاَ أَكُونُ أَوَّلَ مَنْ فَتَحَهُ ، وَلاَ أَقُولُ لِرَجُلٍ أَنْ كَانَ عَلَيَّ أَمِيرًا إِنَّهُ خَيْرُ النَّاسِ بَعْدَ شَيْءٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالُوا وَمَا سَمِعْتَهُ يَقُولُ : قَالَ : سَمِعْتُهُ يَقُولُ يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُهُ فِي النَّارِ فَيَدُورُ كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ فَيَجْتَمِعُ أَهْلُ النَّارِ عَلَيْهِ فَيَقُولُونَ أَيْ فُلاَنُ مَا شَأْنُكَ أَلَيْسَ كُنْتَ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَى ، عَنِ الْمُنْكَرِ قَالَ : كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ ، وَلاَ آتِيهِ وَأَنْهَاكُمْ ، عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ .

আবূ ওয়ায়িল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামাকে বলা হল, আপনি যদি ঐ ব্যক্তির [‘উসমান (রাযিঃ)-এর] নিকট যেতেন এবং তাঁর সাথে আলোচনা করতেন, তাহলে কত ভাল হতো! উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা মনে করছো, আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। আসলে আমি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছি গোপনে, যাতে একটি দরজা আমি যেন খুলে না বসি। আমি এ ফিত্নার দ্বার উন্মুক্তকারী প্রথম ব্যক্তি হতে চাই না। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এমন একটি হাদীস শুনেছি, যার পরে কোন লোক সম্পর্কে বলতে পারি না যে, যিনি আমাদের আমীর (প্রশাসক) নিশ্চয়ই তিনি আমাদের সবার মধ্যে উত্তম। লোকেরা প্রশ্ন করলো, তাঁকে কি বলতে শুনেছেন? উসামা উত্তর দিলেন, তাঁকে বলতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, এরপর তাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে তার নাড়ীভুড়িগুলো বেরিয়ে পড়বে। ফলে সে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, গাধা যেমন তার পাথরের চক্কির চারি পাশে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা এ লোকের কাছে এসে একত্রিত হবে এবং তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে সৎকাজের আদেশ করতে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে? সে বলবে, (হ্যাঁ!) আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ করতাম, অথচ আমি তা করতাম না। আর মন্দ কাজ হতে তোমাদের নিষেধ করতাম, অথচ আমি তা করতাম। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৬৭; সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৩২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৯২; মিশকাত, হা/৫১৩৯।]

কেউ অপরকে যা আদেশ করে, তার বিপরীত কাজ করা এবং যা নিষেধ করে, তা করা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন খেলাফ, তেমনি আকলেরও খেলাফ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَتَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ اَنْفُسَكُمْ وَاَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْكِتَابَ ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ

তোমরা কি লোকদেরকে সৎকাজের আদেশ দাও, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও; অথচ তোমরাই গ্রন্থ পাঠ কর। তবে কি তোমরা বুঝ না?

(সূরা বাক্বারা- ৪৪)

কোন কিছুর দিকে দাওয়াত ঐ সময় হয়ে থাকে যখন তার উপকারিতা ও ফায়দায় সন্তুষ্ট হয়। অথচ তার বিপরীত ফল ঐ সময় হয়ে থাকে, যখন যে বস্ত্ত থেকে সে নিষেধ করে, নিজেই সেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়, অথবা যাদেরকে হুকুম করে তাদের সাধারণ উপকারিতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর এ দুটি আকলের বিপরীত। কেননা জ্ঞানী নিজে সাধারণ উপকারিতা বিনষ্ট করে না এবং নিজেকে কোন ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয় না। অথবা দাওয়াতের উপকারিতা না জেনে নিজে এমন জিনিসে কষ্ট পায়, যার ফায়দা সে দেখতে পায় না। এমন পোষাক সে পরিধান করে, যার যোগ্য সে নয়।

আর যদি লোক দেখানোর জন্য দাওয়াত দেয়, তবে সে নিজেকে নিজে ধোকা দিল। কেননা তার হুকুমে কাজ হবে না এবং তার প্রকৃত অবস্থা অচিরেই প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ

ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায়, আর যা মানুষের উপকার আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। (সূরা রাদ- ১৭)

কবি বলেন,

ثَوْبُ الرّيَاءِ يَكْشِفُ عَمَّا تَحْتَهُ-فَاِذَا اكْتَسَيْتُ بِهِ فَاِنَّكَ عَارٍ

অর্থাৎ লোক দেখানো পোশাক তার নিচে যা থাকে তা প্রকাশ করে দেয়। অতএব তুমি যদি তা পরিধান কর তবে নিশ্চয় তুমি উলঙ্গ।

ইসলাম প্রচারকের জানা উচিৎ যে, আল্লাহর বিধান অনুসরণে কোন রকম গাফলতি করবে না। মনে রাখবে, তার অবহেলা অন্যদের অবহেলার মতো নয়। কেননা সে হচ্ছে মানুষের জন্য আদর্শ। যখনই তাকে মানুষ দেখবে যে, সে আল্লাহর অনুসরণের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছে বা কোন কিছুকে হেয় ও তুচ্ছ মনে করছে, তখন তারাও তার মতো হবে অথবা তার চেয়ে অধিক উদাসীন হবে। আর এ জন্য কোন মুস্তাহাব বস্ত্তও কখনো দাঈর জন্য ওয়াজিব হয়ে যেতে পারে, যদি কোন সুন্নাত বা মুস্তাহাবের আমল তার কাজের উপর লক্ষ্য করে বন্ধু হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। তেমনিভাবে দাঈর পাপ কাজ করতে থাকা অন্যের নাফরমানীর মতো হয়। কেননা মানুষ তার অনুসরণ করে। সে অন্যায় করলে, তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার আল্লাহর নাফরমানী সমাজে সংঘটিত হবে। মানুষ তার কাজকে দলীলরূপে বিবেচনা করে তাতে লিপ্ত হবে। এমনকি দাঈ এ কাজ করতে থাকায় অসৎ কাজও মানুষেরা ভালো কাজ মনে করে করতে পারে। আর এ কারণেই মাকরুহ কাজ দাঈর জন্য হারাম বিবেচিত হয়, যদি তার কাজটা মানুষের অন্তরে উক্ত কাজটি মুবাহ হওয়ার বিশ্বাসকে বদ্ধমূল করে। অতএব দাঈর উপর বিরাট আমানত ও বড় দায়িত্ব রয়েছে- এ কথা তার ভাবতে হবে এবং খুব সতর্কতার সাথে চলতে হবে।

আল্লাহ যেভাবে পছন্দ করেন, সেভাবে আমরা সবাই যাতে তার দ্বীনের কাজ পালন করতে পারি, সেজন্য আল্লাহর কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করিছ। নিশ্চয় তিনি দানশীল ও দয়াবান।

৮. দাঈ তার আচরণ, কথা ও কাজে ভদ্র ও সম্মানী হবে। অভদ্র ও কর্কশ হবে না। সমাজে সে যেন সম্মানের পাত্র হয়। তাতে বাতিলপন্থীরা তার সাথে বাতিল আশা করতে পারবে না এবং ইখলাসপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে সে গোপন থাকবে না। প্রচেষ্টার স্থানে সে চেষ্টা করবে এবং রসিকতার স্থানে সে রসিকতা করবে। কথা বলায় যদি মঙ্গল থাকে, তখন কথা বলবে। আর কথা বলায় যদি অমঙ্গল থাকে তবে চুপ থাকবে। ভদ্রতার দিক দিয়ে তার হওয়া উচিৎ প্রশস্ত হৃদয়, হাস্য চেহারা ও নম্রতার অধিকারী। সে মানুষকে ভালোবাসবে এবং তারাও তাকে ভালোবাসবে। যাতে তারা তার থেকৈ দূরে সরে না যায়। দাঈর প্রশস্ত অন্তর, হাস্য চেহারা ও নম্রতার মাধ্যমে বহু লোক আল্লাহর দ্বীনে দলে দলে দাখেল হয়েছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন