HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দু’টি সাক্ষী (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) এর অর্থ ও তাদের প্রত্যেকের জরুরী বিষয়

লেখকঃ মাননীয় শাইখ আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রাহমান ইবন জিবরীন

তৃতীয় অধ্যায় : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালিমার অর্থ প্রসঙ্গে:
কালিমাতুত তাওহীদ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ বর্ণনায় দাওয়াতের ইমামগণ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ একটি প্রশ্নের জবাবে আলাদা একটি সংক্ষিপ্ত কিতাব লিখেছেন। তাঁর রচিত ‘কাশফুশ শুভুহাত’ নামক পুস্তিকা এবং অন্যান্য কিতাবে তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যাকারীগণ ও অন্যান্য আলেম তাঁর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। শাইখ সুলায়মান ইবন আব্দুল্লাহ কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যা তাইসীরুল আযীযুল হামীদের ৫৩ নং পৃষ্ঠায় এ ব্যাপারে যা উল্লেখ করেছেন, তা আপনার সামনে তুলে ধরছি। তিনি বলেন, لا إله إلا الله অর্থ হলো, একমাত্র এক ইলাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। আর তিনি হলেন আল্লাহ, যিনি একক। তাঁর কোনো শরীক নেই। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন। وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ “আর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমার এবাদত করো”।সূরা আম্বীয়া: আয়াত : ২৫সাথে আল্লাহ তাআলার আরো একটি বাণী: وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ “আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত করো এবং পরিহার কর তাগূতকে”।সূরা নাহাল: আয়াত: ৩৬সুতরাং একথা নিশ্চিত হল যে, إله অর্থ মা‘বুদ। এজন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার কুরাইশদেরকে যখন বলেছিলেন,তোমরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলো, তখন তারা বলেছিল, أجعل الآلهة إلها واحدا إن هذا لشيء عجاب “সে কি বহু মাবুদের বদলে এক মাবুদের এবাদত সাব্যস্ত করে দিয়েছে? নিশ্চয়ই এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার”! [সূরা সোয়াদ: ৫]আর হুদ সম্প্রদায়ের বলল, أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ اللَّهَ وَحْدَهُ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُنَا “তুমি কি আমাদের কাছে এ জন্য এসেছো যে, আমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবো এবং আমাদের বাপ-দাদারা যাদের ইবাদত করে এসেছে তাদেরকে পরিহার করবো?”সূরা আরাফ: আয়াত : ৭০

সুতরাং তিনি তাদেরকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর দিকেই আহবান করেছেন। আর এটিই হলো, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ। অর্থাৎ, একমাত্র আল্লাহর এবাদত করা এবং তাঁকে ছাড়া অন্যের এবাদত বর্জন করা। আর তা হলো, তাগুতকে অম্বীকার করা এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা। সুতরাং এ মহান বাক্যটি অর্ন্তভুক্ত করে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নয়। তিনি ছাড়া অন্য কারো ইলাহ হওয়া সম্পূর্ণ বাতিল এবং তা সাব্যস্ত করা সবচেয়ে বড় যুলুম। সুতরাং তিনি ছাড়া অন্য কেউ এবাদতের হকদার নয়। অনুরূপ তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইলাহ হওয়ার যোগ্য নয়। সুতরাং এটি তিনি ছাড়া অন্য কারো ইলাহ হওয়া নাকোচ করাকে এবং একমাত্র তাঁর জন্যই তা সাব্যস্ত করাকে অর্ন্তভুক্ত করে। তিনি একক। তাঁর কোনো শরীক নেই। এটি কেবল তাঁকেই একক ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করাকে এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ না করাকে আবশ্যক করে। একজন সম্বোধিত ব্যক্তি এরূপ নেতিবাচক ও ইতিবাচক বাক্য থেকে এটিই বুঝে থাকে। যেমন, তুমি যখন দেখবে কেউ মুফতী হওয়ার অযোগ্য লোকের কাছে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করছে অথবা সাক্ষ্য দেয়ার যোগ্যতাহীন ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দিতে বলছে এবং যে যোগ্য তাকে বর্জন করছে, তখন তুমি বলবে যে, এই লোক তো মুফতী নয় কিংবা সাক্ষী নয়। মুফতী তো অমুক এবং সাক্ষী অমুক। বক্তার এ কথা এক দিকে আদেশ ও অপর দিকে নিষেধ।

ইবাদাতের সব প্রকার যা ভালোবাসা ও বিনয় দ্বারা অন্তর দিয়ে আল্লাহকে মাবুদ হিসাবে গ্রহণ করা থেকে প্রকাশ পায় এবং তাঁর জন্য নত হওয়া দ্বারা প্রকাশ পায় যিনি একক তার কোন শরীক নেই, তা সবই উলুহিয়াতের মধ্যে শামিল। অতএব এবাদতে আল্লাহকে এক জানা আবশ্যক। যেমন, দু‘আ করা, ভয় করা, ভালোবাসা, ভরসা করা, প্রত্যাবর্তন করা, তাওবা করা, যবেহ করা, মান্নত করা, সিজদাহ করা। আর যাবতীয় সব ধরনের এবাদত তা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে, যিনি একক তার কোন শরীক নেই। অতএব যেসব এবাদত একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য সম্পন্ন করা সঠিক নয়, তা যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করে, সে মুশরিক। যদিও সে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করে। কেননা, কালিমাটি যে তাওহীদ ও ইখলাসের দাবি করে, সে অনুপাতে সে আমল করেনি।

‘ইলাহ’ এর অর্থ সম্পর্কে আলেমগণের বক্তব্য:

ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহই তার সকল সৃষ্টির ওপর উলুহিয়াত ও উবুদিয়াতের অধিকারী। ইমাম ইবনে জারীর এবং ইবনে আবী হাতিম এটি বর্ণনা করেছেন।

উযীর আবুল মুযাফফার রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ইফসাহ গ্রন্থে বলেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য দেয়ার দাবি হলো, সাক্ষ্যদাতা অবগত হবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,জেনে রেখো, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই।সূরা মুহাম্মাদ: আয়াত : ১৯সুতরাং ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠকারী তাতে সাক্ষ্যদানকারী হবে। আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট করেই বলেছেন যে, সত্যের সাক্ষ্যদাতা যদি সাক্ষ্যের বিষয় সম্পর্কে অবগত না হয়, তাহলে সে তা সত্যায়নে ঐ ব্যক্তির পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না, যে তা অবগত হয়ে সাক্ষ্য দেয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,“তবে যে ব্যক্তি অবগত হয়ে ও জেনে-বুঝে সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করে তার কথা ভিন্ন”।সূরা যুখরুফ: আয়াত: ৮৬

إلا এর পরে আল্লাহ তাআলার নাম ( اَللَّهُ ) পেশ বিশিষ্ট হবে। কেননা উলুহিয়াত একমাত্র তাঁর জন্যই হওয়া ওয়াজিব। তিনি ছাড়া অন্য কেউ উলুহিয়াতের হকদার হবে না। (উযীর আবুল মুযাফফার বলেন,) তা স্বীকার করার দাবি হলো, এটি জানা যে, যার মধ্যে পরিবর্তনের লক্ষণ বিদ্যমান, সে অবশ্যই ইলাহ হবে না। সুতরাং আপনি যখন বলবেন, لا إله إلا الله তখন আপনার এই কথার অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া যা কিছু আছে, তা ইলাহ নয়। অতএব তোমার ওপর আবশ্যক হলো তাকে একক জানা। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে উপকারিতার সারমর্ম হলো, তুমি জেনে নিবে যে, এই বাক্যটি তাগুতের প্রতি কুফুরী এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার ওপর সামিল। কারণ, তুমি যখন অন্যের উলুহিয়াত নাকোচ করলে এবং আল্লাহর জন্য উহা সাব্যস্ত করলে, তখন তুমি তার অর্ন্তভুক্ত হলে যে তাগুতকে অস্বীকার করল ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করল।

আবু আব্দুল্লাহ আল-কুরতুবী তাফসীরে বলেছেন, لا إله إلا هو অর্থ হলো তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই।

যামাখশারী বলেন, الرجل (পুরুষ) এবং الفرس (ঘোড়া) ইত্যাদি শব্দের মতই الإله শব্দটি ইসমে জিনিস বা জাতিবাচক বিশেষ্য। হক কিংবা বাতিল সমস্ত মাবুদের ক্ষেত্রেই الإله শব্দটি প্রয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে হক মাবুদের জন্যই শব্দটির ব্যবহার প্রাধান্য পেয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, অনুসৃত মাবুদকেই ইলাহ বলা হয়।

لا إله إلا الله সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, এতে ইলাহ হিসেবে তার একা হওয়াকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। الإلهية শব্দটি তাঁর পরিপূর্ণ জ্ঞান, কুদরাত, রহমত ও হিকমতকে অর্ন্তভুক্ত করে। অতএব এতে বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা যিনি ইলাহ তিনিই মাবুদ। আর মাবুদই এবাদত পাওয়ার হকদার। তিনি এবাদত পাওয়ার হকদার হওয়ার কারণ, তিনি এমন গুণাবলী দ্বারা বিশেষিত, যা তাকে পরম ভালোবাসার পাত্রে পরিণত ও চরম অনুসৃত সত্তার আসনে আসীন করেছে।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সেই সত্তাই ইলাহ অন্তর যাকে ভালোবাসা, সম্মান, শরণাপন্ন হওয়া, সম্মান প্রদর্শন, বড়ত্ব প্রদান, বিনয়-নম্রতা, ভয়ভীতি ও আশা-ভরসায় আঁকড়ে ধরে।

ইবনে রজব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, বড়ত্ব, সম্মান, ভালোবাসা, ভয় ও আশার সাথে যার ওপর ভরসা করে এবং যার নিকট প্রার্থনা ও যাকে আহ্বান করে যার আনুগত্য করা হয় কিন্তু নাফরমানী করা হয় না, তিনিই ইলাহ। এ বিষয়গুলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য খাটে নয়। অতএব যে কেউ উলুহিয়াতের এ বৈশিষ্টগুলোতে কোনো সৃষ্টিকে শরীক করবে, সেটা তার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ইখলাসের ত্রুটি ও তার তাওহীদের ঘাটতি বিবেচিত হবে। আর এ ত্রুটি ও ঘাটতি অনুপাতে তার মধ্যে সৃষ্টির এবাদত বিদ্যমান থাকবে। এগুলো সবই শির্কের শাখা-প্রশাখা।

ইমাম বিকাঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, لا إله إلا الله অর্থাৎ, মহান মালিক ছাড়া অন্য কারো জন্য সত্য মাবুদ হওয়া সম্পূর্ণরূপে নাকোচ হয়ে গেছে। কারণ, এ ইলমই হলো কিয়ামতের ভয়াবহতা হতে রক্ষাকারী মহা উপদেশ। ইলম তখনই প্রকৃত ইলম হয়, যখন তা উপকারী হয়। এটি তখনই উপকারী হয়, যখন বিশ্বাস ও আমল তার দাবি অনুযায়ী হয়। অন্যথায় তা শুধুই অজ্ঞতা।

ইমাম তিবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, فِعَال শব্দটি যেমন مفعول অর্থে এবং الكتاب শব্দটি المكتوب অর্থে ব্যবহৃত হয়, তেমনি الإله শব্দটির অর্থ المألوه হয়। أله إلهة অর্থ হলো عبد عبادة অর্থাৎ সে দাসত্ব করেছে। আলেমদের পরিভাষায় এরূপ ব্যবহার অহরহ। বস্তুত الإله অর্থ মাবুদ এটি আলেমদের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত। কিন্তু কবরপূজারী এবং তাদের অনুরূপ অন্যরা الإله শব্দের অর্থের ব্যাপারে ভিন্ন আকীদাহ পোষণ করে। তারা বলে, الإله অর্থ সৃষ্টিকারী অথবা উদ্ভাবন করতে সক্ষম অথবা অনুরূপ অন্যান্য বাক্য। তারা মনে করে, এ অর্থে যদি তারা কালেমাটি বলে তাতে তারা চুড়ান্ত পর্যায়ের তাওহীদ বাস্তবায়ন করল। যদিও তারা গাইরুল্লাহর সকল প্রকার ইবাদত আঞ্জাম দেয়, যেমন মৃতদের ডাকা, বিপদাপদে তাদের নিকট ফরিয়াদ করা, প্রয়োজন পুরণে তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়ে তাদের জন্য মান্নত করা, আসমানসমূহ ও যমীনের রবের নিকট তাদের শাফাআত কামনা করা ইত্যাদি এবাদত। অথচ তারা জানে না যে, তাদের ভাই আরব কাফেরাও এ স্বীকারোক্তি প্রদানে তাদের বরাবর। তারাও জানতো যে, কেবল আল্লাহই স্রষ্টা, আবিষ্কারের ওপর ক্ষমতাশীল এবং তারা বিভিন্ন ইবাদত দ্বারা তাঁরই ইবাদত করত। অতএব কবরপূজারীদের বিধান মোতাবেক আবু জাহেল, আবু লাহাব এবং তাদের অনুসারীদেরও ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া উচিত, অনুরূপভাবে তাদেরই ভাই (নূহ আলাইহিস সালামের গোত্রের মূর্তি) ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক এবং নাসরের এবাদতকারীদেরও ইসলামের স্বীয় ছায়াতলে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কারণ এরা তাদের দীনকেই গ্রহণযোগ্য ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছে। যদি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ তাই হত এসব মূর্খরা যা ধারণা করেছে, তাহলে তাদের ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে কোনো দ্বন্ধ হতো না। বরং তারা কাল বিলম্ব না করে তাঁর ডাকে সাড়া দিতো এবং তাঁর আহবান কবুল করতো। যখন তিনি তাদেরকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতেন এ অর্থে যে, তার অর্থ আল্লাহ ছাড়া কেউ সৃষ্টিতে সক্ষম নয়, তাহলে তারা বলতো, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আল্লাহ বলেন, ولئن سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ “তুমি যদি তাদেরকে প্রশ্ন করো তোমাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে? তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ্”।সূরা যুখরুফ: আয়াত : ৮৭আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ “তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, আসমান-যমীন কে সৃষ্টি করেছে? এরা বলবে, ঐগুলো মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী সত্তা সৃষ্টি করেছেন”।সূরা যুখরুফ: আয়াত : ৯আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ “তুমি জিজ্ঞেস করো, কে রিযিক দান করে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে? কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক?সূরা ইউনুস: আয়াত : ৩১আয়াতটি, এরকম আরো অনেক আয়াত রয়েছে।কিন্তু লোকেরা ছিল আরবী ভাষার অধিকারী। ফলে তারা বুঝতে পেরেছিল যে, لا إله إلا الله মৃত ও মূর্তিদেরকে আহব্বান করাকে মুল থেকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়, আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে শাফাআত চাওয়া ও তিনি ছাড়া অন্যের জন্য ইলাহ সাব্যস্ত করার প্রাচীর উল্টিয়ে ফেলে। তাই তাঁরা বলেছিল, مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى “এদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দেয়”।সূরা যুমার: আয়াত : ৩(তারা আরো বলেছিল,) هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ “এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী”।সূরা ইউনূস: আয়াত : ১৮(তারা আরো বলেছিল,) أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهاً وَاحِداً إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ “সে কি বহু মাবুদকে এক মাবুদে পরিণত করে দিয়েছে? নিশ্চয়ই এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার!”সূরা সোয়াদ: আয়াত: ৫সুতরাং আফসোস ঐসব লোকের জন্য, যাদের চেয়ে কুরাইশ বংশের কাফের নেতা এবং অন্যান্য কাফের ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী ছিলো। আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوا آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَّجْنُونٍ “তাদের যখন বলা হতো, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই, তখন তারা দাম্ভিকতা প্রদর্শন করতো এবং বলতো, আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব?সূরা সাফ্ফাত: ৩৫-৩৬সুতরাং তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এটির দাবি হলো আল্লাহ ছাড়া অন্যের এবাদত বর্জন করা, ইবাদতে আল্লাহকে একক জানা। আর কবরপূজারীদের অবস্থাও তাদের অনুরূপ যখন তুমি তাদের কাছে আল্লাহকে খালেসভাবে ডাকা এবং এবাদত কেবল এক আল্লাহর জন্য করার আবেদন করবে, তখন তারা বলবে, আমরা কি প্রয়োজন পূরণ করার জন্য আমাদের নেতা ও সুপারিশকারীদের আহবান করা ছেড়ে দিবো? তাদের বলা হবে যে, হ্যাঁ, এদেরকে বর্জন করা এবং ইখলাস অবলম্বন করাই হলো সত্য-সঠিক। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, بَلْ جَاءَ بِالْحَقِّ وَصَدَّقَ الْمُرْسَلِينَ “অথচ তিনি সত্য নিয়ে এসেছেন এবং রাসূলদেরকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন”।সূরা আস্ সাফফাত: আয়াত : ৩৭সুতরাং لا إله إلا الله নাফী ও ইছবাত তথা নাকোচ করা ও সাব্যস্ত করার অর্থকে অন্তর্ভুক্ত করে।আল্লাহ ছাড়া বাকিসবের ইলাহ হওয়া নাকোচ করে। সুতরাং তিনি ছাড়া অন্য সব যেমন ফেরেশতা ও নবীগণ ইলাহ নয়, অন্যরা তো নই। কারো জন্যই এবাদতের কোনো অংশ নেই।

এটি ইলাহ হওয়া একক আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করেছে। অর্থাৎ বান্দা তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বানাবে না। অর্থাৎ কোনো এবাদতে তাঁকে ছাড়া কাউকে উদ্দেশ্যে করবে না। আর তা হলো, অন্তরকে এমন সত্তার সাথে সম্পৃক্ত করা যাকে বিভিন্ন ধরণের ইবাদতের মাধ্যমে ইচ্ছা করা হয়, যেমন, দু‘আ, যবেহ, মান্নত ইত্যাদি।

মোট কথা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বানানো যাবে না। অর্থাৎ তাঁকে ছাড়া কারো এবাদত করা যাবে না। যে ব্যক্তি এই কালেমাটির অর্থ জেনে তার দাবি অনুযায়ী আমলকারী হয়ে বলবে, শির্ক বর্জন করা, একত্ববাদকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা, সেই সঙ্গে তার অর্থের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করবে ও সে অনুযায়ী আমল করবে সেই প্রকৃত মুসলিম। যদি তার দাবি অনুযায়ী বিশ্বাস করা ছাড়া বাহ্যিকভাবে আমল করে, সে মুনাফিক। আর যদি তার বিপরীত আমল শির্ক করে, তাহলে সে কাফের। যদিও সে মুখে তা বলে। আপনি কি জানেন না যে, মুনাফিকরা বাহ্যিকভাবে তার ওপর আমল করে। অথচ তারা জাহান্নামের সর্বনিম্নস্থানে থাকবে? ইহুদীরা শির্ক ও কুফুরীর উপর বিদ্যমান থেকেও এটি বলে। তাই এটি তাদের কোনো উপকার করবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি এর দাবি ও হকসমূহ থেকে কোনো একটি অস্বীকার করার মাধ্যমে ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে যায়, তা তার কোনো উপকার করবে না। যদিও সে একলক্ষবার তা বলে। অনুরূপভাবে যে ইবাদতের কোন প্রকার ইবাদত গাইরুল্লাহর জন্য সমর্পণ করে যেমন কবর ও মূর্তি পুজা করা তা তাদের কোনো উপকার করবে না। তা বলার ফযীলত বিষয়ে যে সব হাদীস এসেছে এবং তার অনুরূপ আরো যত হাদীস রয়েছে, তাতেও তারা অন্তর্ভুক্ত হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম لا إله إلا الله এর সাথে وحده وشريك له বলে এটিই বর্ণনা করেছেন। এতে তিনি সতর্ক করেছেন যে, মানুষ কখনো তা বলে অথচ সে মুশরিক। যেমন ইয়াহুদী, মুনাফিক ও কবরপূজারীরা। কবর পূজারীরা যখন দেখলো যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গোত্রের লোকদেরকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার আহবান জানাচ্ছেন, তখন তারা মনে করলো, তিনি শুধু এটি উচ্চারণ করার জন্যই তাদেরকে ডাকছেন। এটি তাদের বিরাট মূর্খতা। বরং তিনি তাদেরকে তার প্রতি আহ্বান করেছেন, যাতে তারা এটি বলে এবং অর্থ অনুযায়ী আমল করে এবং গাইরুল্লাহর এবাদত বর্জন করে। তাই তারা বলেছিল, أَئِنَّا لَتَارِكُوا آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَّجْنُونٍ “আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব?সূরা আস্ সাফ্ফাত: আয়াত: ৩৬তারা আরো বলেছিল, أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهاً وَاحِداً “সে কি বহু মাবুদকে এক মাবুদ বানিয়ে ফেলেছে?সূরা সোয়াদ: আয়াত: ৫এজন্যই তারা তা মুখে বলতে অস্বীকার করেছিল। অন্যথায় তারা যদি এটি বলতো এবং লাত, মানাত ও উয্যার এবাদতের ওপর বাকী থাকতো, তাহলে তারা মুসলিম হতো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন যতক্ষণ না তারা তাদের শরীকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতো এবং তাদের এবাদত বর্জন করে এক আল্লাহ যার কোন শরীক নেই তার এবাদত করতো। এটি কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা থেকে বাধ্যতামুলক ভাবে জানা বিষয়। কিন্তু কবরপূজারীরা এ কালেমাটির অর্থ জানে না। তারা গাইরুল্লাহ থেকে ইলাহিয়াত নাকোচ করা এবং একমাত্র তাঁর জন্যই সাব্যস্ত ইলিয়াতের মর্মার্থ বুঝতে পারেনি, যিনি একক তার কোনো শরীক নেই। বরং এ থেকে তারা শুধু তাই বুঝেছে, যা মুসলিম ও কাফের সকলেই স্বীকার করে নিয়েছে এবং সমস্ত সৃষ্টি الإله শব্দের এপরিমাণ অর্থের ওপর একমত যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে না অথবা الإله অর্থ হলো যিনি সবকিছু থেকে অমূখাপেক্ষী এবং সবকিছু তাঁর প্রতি মূখাপেক্ষী। এ জাতীয় আরো অর্থ। এই অর্থ সঠিক ও ইলাহ হওয়ার জন্য এই ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। তবে لا إله إلا الله দ্বারা এটিই উদ্দেশ্য নয়। কেননা এ পরিমাণ অর্থ কাফেররাও বুঝতে পেরেছিল এবং তার স্বীকৃতিও দিয়েছিল। তারা এবিশ্বাস করতো না যে, তাদের মাবুদদের মধ্যে উপরোক্ত কোনো বৈশিষ্ট রয়েছে। বরং তারা তাদের মাবুদসমূহের অক্ষমতা, অসহাত্ব এবং মহান আল্লাহর প্রতি তাদের প্রয়োজনের কথা স্বীকার করতো। তারা কেবল এটি মনে করেই তাদের এবাদত করতো যে, এরা হলো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কাম্যবস্তু হাসিল করার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী ও আল্লাহর নিকট সুপারিশকারী মাত্র। অন্যথায় তারা মেনে নিয়েছিল যে, সৃষ্টি করা, কর্তৃত্ব করা, রিযিক দেয়া, জীবন দেয়া, মৃত্যু দান করাসহ সবকিছুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি একক এবং তাঁর কোনো শরীক নেই। তারা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ জানতো, তবে তারা কালিমাটি মুখে উচ্চারণ করতে ও সে অনুযায়ী আমল করে অস্বীকার করেছে। তাই উলুহিয়াতের মধ্যে শির্ক থাকার কারণে তাওহীদুর রুবুবীয়াহ তাদের কোনো উপকার করেনি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلا وَهُمْ مُشْرِكُونَ “অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনয়ন করে, কিন্তু সাথে সাথে শির্কও করে”।সূরা ইউসুফ: আয়াত: ১০৬

কবর পুজারীরা তা মুখে বলে কিন্তু তার অর্থ জানে না এবং তারা এর অর্থ বাস্তবায়ন করতে অস্বীকার করেছে। ফলে তারা ঐসব ইহুদীর মতোই, যারা এটি পাঠ করে; কিন্তু এর অর্থ জানে না এবং সে অনুযায়ী আমলও করে না। ফলে তুমি তাদের কাউকে দেখতে পাবে যে, সে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে অথচ সে গায়রুল্লাহকে মুহাব্বাত, সম্মান, মর্যাদা, ভয়, আশা, ভরসার সাথে ডাকে এবং বিপদাপদে দু‘আ দ্বারা তার শরণাপন্ন হয়। এবং অন্তরের ভালোবাসা থেকে প্রকাশ পাওয়া বিভিন্ন প্রকার এবাদত দ্বারা তাকেই উদ্দেশ্য করে। এটি প্রথম যুগের মুশরিকদের কাজ-কর্মের চেয়েও অধিক ভয়াবহ।

এজন্যই আপনি যখন তাদের কাউকে আল্লাহ তাআলার নামে কসম করতে বলবেন, তখন সে আপনার ইচ্ছামত কসম করবে। সত্য-মিথ্যার কোনো তোয়াক্কা করবে না। আর যদি বলা হয়, অমুক শাইখের জীবনের কসম করো অথবা অমুক শাইখের কবরের কসম করো অথবা এরকম অন্য কিছুর কসম করো তখন এ ক্ষেত্রে সে মিথ্যা কসম করবে না। এর কারণ হলো মাটির নিচে দাফনকৃত ব্যক্তি তার নিকট সব রবের যিনি রব তার চেয়েও অধিক মর্যাদাবান। পূর্বযুগের মুশরিকরা এরূপ ছিল না। বরং তারা যখন সুদৃঢ় কসম করার ইচ্ছা করতো, তখন আল্লাহ তাআলার কসমই করতো। যেমন কাসামার ঘটনা যা জাহেলী যুগে সংঘটিত হয়েছিল। ঘটনাটি সহীহ বুখারীর বর্ণনায় এসেছে।

কবরপূজারীদের অনেকেই অথবা অধিকাংশ লোকই মনে করে, কবরের কাছে বা অন্যান্য স্থানে অলীদের নিকট ফরিয়াদ করা মসজিদে গিয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট ফরিয়াদ করার চেয়ে অধিক উপকারী। তারা প্রকাশ্যেই একথা বলে থাকে। তাদের থেকে এজাতিয় অনেক দীর্ঘ কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এটি এমন শির্ক, যা পূর্ববর্তীদের শির্কের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কেননা এসব কবরপূজারী বিপদাপদে আক্রান্ত হলে মাটির নিচে দাফনকৃত লোকদের নিকট একনিষ্ঠভাবে ফরিয়াদ করে এবং বিপদাপদ দূর করার জন্য তাদেরকে নাম ধরে ডাকাডাকি করে জল ও স্থলে এবং পথে ভ্রমণ করার সময় ও ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার সময়। এটি এমন শির্ক, যা পূর্বকালের মুশরিকরাও করেনি। বরং পূর্বকালের মুশরিকরা এমন অবস্থায় সুমহান ও সর্বোচ্চ আল্লাহর কাছেই ফরিয়াদ করতো। আল্লাহ তাআলা বলেন, فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ “তারা যখন জলযানে আরোহন করে, তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকেই ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে এনে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখনই তারা শির্ক করতে থাকে”।সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৫এবং তার বাণীঅতঃপর দুঃখ-দুর্দশা যখন তোমাদের স্পর্শ করে তখন তোমরা শুধু তার কাছেই ফরিয়াদ কর। তারপর যখন তিনি তোমাদের থেকে দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দেন, তখন তোমাদের মধ্য থেকে একটি দল তাদের রবের সাথে শির্ক করে।সূরা নাহল, আয়াত: ৫৩-৫৪

তাদের অনেকেই মসজিদগুলোকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে কবর ও সমাধিগুলো আবাদ করতে শুরু করেছে। কবরপূজারীদের কেউ কেউ তার সম্মানিত কবরের নিকট গিয়ে কবরবাসীর নিকট এমন ভীত, অনুগত, ও বিনীত হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে, যে অবস্থা জুমআ, জামআত, তাহাজ্জুদের সালাত ও ফরয সালাত শেষেও হাসিল হয় না। তারা কবরবাসীদের নিকট গুনাহ মা’ফের আবেদন করে, বিপদাপদ দূর করার ফরিয়াদ করে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চায় এবং তাদের থেকে পাপের বোঝা সরিয়ে ফেলার জন্য দুআ করে। সুতরাং আলেম তো দূরের কথা, সাধারণ বিবেকবান লোক কিভাবে ধারণা করতে পারে যে, এসব কাজ করার পরও لاإله إلا الله তাদের উপকার করবে? তারা তাদের জবান দিয়ে পবিত্র কালেমাটি উচ্চারণ করেছে মাত্র কিন্তু তারা আকীদা-বিশ্বাস ও আমলের মাধ্যমে তার বিরোধীতা করেছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, কোনো মুশরিক যদি ‘ইলাহ’ এর অর্থ না জেনেই লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, ‘রাসূল’ এর অর্থ না বুঝেই সাক্ষ্য দেয় যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং সালাত আদায় করে, সিয়াম রাখে হজ্জ করে, কিন্তু এগুলোর অর্থ সে জানে না, শুধু মানুষকে এগুলো করতে দেখে তাদের অনুসরণ করে, কোনো প্রকার শির্কেও লিপ্ত হয়না, তাহলে সে মুসলিম না হওয়ার ব্যাপারে কেউ সন্দেহ পোষণ করতে পারে না। হিজরী এগারো শতকের প্রথম দিকে অথবা তারও পূর্বে মুসলিম বিশ্বের পশ্চিমাঞ্চলের সমস্ত আলেম লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠকারী এমন এক ব্যক্তির মুসলিম না হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন, যে উক্ত কাজগুলোতে লিপ্ত ছিল। মালেকী মাযহাবের প্রখ্যাত আলেম الدر الثمين في شرح المرشد المعين (দুররুছ ছামীন ফী শারহিল মুরশিদ আল-মুঈন) গ্রন্থের লেখক ফতোয়াটি এভাবেই উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তার ব্যাখ্যাকার বলেছেন, তাদের এফতোয়াটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এতে দু’জনের দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। দুররুছ ছামীন গ্রন্থকারের উক্তি এখানেই শেষ।

নিঃসন্দেহে কবরপূজা এর চেয়ে ভয়াবহ। কেননা, তারা বিভিন্ন প্রভুর মধ্যে ইলাহ হওয়ার যোগ্যতাকে বিশ্বাস করে।

যদি বলা হয়, ইলাহ এবং উলুহিয়াতের অর্থ স্পষ্ট হয়েছে। সুতরাং, যে বলে, ‘ইলাহ’ হলো যিনি সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন এবং এ ধরনের কথা? তার জবাব কী হবে?বলা হবে,জবাব দুইভাবে:এক:এটি একটি বিদআতী কথা। কোনো আলেম কিংবা আরবী ভাষাবিদ একথা বলেননি। ইলাহ সম্পর্কে আলেম ও ভাষাবিদ ইমামগণ যা বলেছেন তাই এর প্রকৃত অর্থ, যা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। সুতরাং এ কথা স্পষ্ট বাতিল।দ্বিতীয়:তারা ‘ইলাহ’ এর যে ব্যাখ্যা করেছে, তা মেনে নেয়া হলে তাদের কথাকে এঅর্থে সমর্থন করা যেতে পারে যে, সত্য ইলাহ এর জন্য সৃষ্টি করার ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। সত্য মাবুদের জন্য আবশ্যক হলো তিনি সৃষ্টিকারী হবেন এবং উদ্ভাবন করার ক্ষমতা রাখবেন। এরূপ না হলে তিনি সত্য ইলাহ নন। যদিও তাকে ইলাহ বা মাবুদ বলে নামকরণ করা হয়ে থাকে। তাওহীদের বাক্য লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহ এর উদ্দেশ্য এটি নয় যে, কেউ যদি জানতে পারে যে, ইলাহ অর্থ হলো সৃষ্টিকারী তাতেই সে মুসলিম হয়ে যাবে, কালেমার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারী হিসাবে গণ্য হবে এবং জান্নাতের চাবি পেয়ে সফলকাম হয়ে যাবে। কোনো আলেম একথা বলেননি। ইলাহ’ এর উদ্দেশ্য এটি হলে আরবদের কাফেরদেরকেও মুসলিম হিসাবে গণ্য করা আবশ্যক হবে। পরবর্তীদের যারা ইলাহ দ্বারা সৃষ্টিকর্তা উদ্দেশ্য করেছে, তারা ভুলের মধ্যে রয়েছে। কুরআন, সুন্নাহ এবং বুদ্ধিভিত্তিক দলীল দিয়ে তাদের প্রতিবাদ করতে হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন