HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা

লেখকঃ অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা

গ্রন্থনা:

অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ

জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার

অনুবাদঃ

মুহা আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী

লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সৌদী আরব

অনুবাদকের ভূমিকা
আল হামদু লিল্লাহ ওয়াছ্‌ ছালাতু ওয়াস্‌ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ।

ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম, সর্ব সুন্দর এবং সবচাইতে সহজ ধর্ম। এরকম ধর্ম পৃথিবীতে কোন যুগে ছিল না পাওয়া যাবে না এবং ভবিষ্যতে আসবেও না। কেননা ইহা মহান স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগমণ করেছে। সেই সাথে এর অক্ষুন্নতার গ্যারান্টিও সেই আল্লাহ নিজের দায়িত্বে নিয়েছেন। এ জন্য ইহা ক্বিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত সকল জাতি, সকল ভাষা ও সকল যুগের মানুষের জন্য সমভাবে প্রজোয্য। এ ধর্মের ধারক বাহক ও প্রচারক আরবী নবী মহামানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বিশ্ব নবী। নবী-রাসূলদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট। তিনি অনাগত মানব জাতির জন্য এমন কোন কল্যাণ নেই যা তাদেরকে বলেন নি, এমন কোন অকল্যাণ নেই যা থেকে সতর্ক করেন নি।

এজন্যই এ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য। এ সম্পর্কে জ্ঞান হাসিল করা আবশ্যক। এবং এর বিধি-নিষেধ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা জরুরী।

ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা পুস্তিকাটি মূলতঃ জুবাইল দাওয়া সেন্টারে ইসলামে দিক্ষীত নও মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে প্রণয়ন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে প্রথমে ইংরেজী, ফিলিপিনো ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্যই পুস্তকের বিষয়বস্তু অতি সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হয়েছে।

জুবাইল দাওয়া সেন্টারে দাঈ ও শিক্ষক হিসেবে প্রবাসী বাংলাভাষী ভাইদের মাঝে দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে আমাদের এই ভাষার বিশাল একটি জনগোষ্ঠি ইসলাম সম্পর্কে এই নূন্যতম ও সংক্ষিপ্ত জ্ঞান থেকেও বহু দূরে। দেখা যায় একজন নও মুসলিম যেমন ইসলাম সম্পর্কে নতুন তেমনি জম্ম সূত্রে এমন অনেক মুসলমান রয়েছে যারাও তাদের কাতারের লোক।

এ কারণেই বইটিকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশ করার প্রয়োজন অনুভব করি। সাধারণ মুসলিম সমাজ যদি এ দ্বারা উপকৃত হন, ইসলামের নূন্যতম জ্ঞান অর্জন করে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। (ইবনু মাজাহ) এই হাদীছের প্রতি সামান্যতম আমল হয়, তবে আমাদের এই শ্রম সার্থক হবে। বইটি সম্পর্কে যে কোন ধরণের অভিযোগ বা পরামর্শ সাদরে গ্রহণীয় হবে।

আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি মূলক কাজ আঞ্জাম দেয়ার তাওফীক দিন। আমীন॥

মুহাঃ আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী

দাঈ ও গবেষক,

জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব

ফোনঃ ০৩-৩৬২৫৫০০, পোঃ বক্স ১৫৮০

mohdkafi12@yahoo.com

ইসলামের অনুগ্রহ
দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন আপনার চতুর্পার্শের সৃষ্টি জগতের দিকে, দেখুন উপরের শুন্য জগতকে, চিন্তুা করুন আপনার নিজেকে নিয়ে। আপনি দেখবেন আশ্চর্য সৃষ্টি জগত বিশাল পৃথিবী। নিঃসন্দেহে এসব কিছুর স্রষ্টা একজনই, অন্য কেহ নয়। অন্যথা এ বিশাল জগতের শৃংখলা বিনষ্ট হয়ে যেত। সুতরাং এটাই যুক্তি সংগত কথা যে, আমরা তাঁর কাছে আত্মসমর্পন করব। তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করব। তাঁর নির্দেশাবলীর শিক্ষা লাভ করব যা তাঁর সৃষ্টি কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যাতে রয়েছে আমাদের জন্য সার্বিক কল্যাণ।

মানুষ বিবেকবান। নিজেকে নিয়ে এবং পার্শ্ববর্তী পরিবেশ নিয়ে সে চিন্তা করতে পারে। সে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারে: আমি কোথা থেকে এলাম? কেন এলাম? কোথায় চলছি? একজন মুসাফির যেমন জানে তার গন্তব্য কোথায়। বরং জীবনের সফর তো আরো দীর্ঘ, তাই তার গন্তব্য স্থল সম্পর্কে জ্ঞান রাখা অধিক যরুরী।

এ সমস্ত প্রশ্নের সন্তোষ জনক উত্তর আপনি ইসলাম ছাড়া অন্য কোথাও পাবেন না। কেননা ইসলামই মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয় তার স্রষ্টার সাথে। তাঁর নৈকট্য পাওয়ার সঠিক পথের সন্ধান দেয়। বলে দেয় এ জীবনের শেষে ঠিকানা কোথায়। আর এভাবেই মুসলিম ব্যক্তির জীবনে নিশ্চিত হয় সৌভাগ্য ও শান্তি।

ইসলাম এমন ধর্ম যা চিরকালিন সংরক্ষিত ধর্ম। নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ধর্মের শিক্ষা নিয়ে এসেছেন তা এখনও অবিকল রয়েছে তাতে কোন ধরণের পরিবর্তন ঘটেনি। ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে, আল্‌ কুরআন এবং তার চ্যালেঞ্জ। এটা এমন এক সুমহান গ্রন্থ যার সমকক্ষ নির্ভুল কোন গ্রন্থ পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না। ইসলাম মানুষের জীবনের প্রতিটি কল্যাণ ও ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম উপকারী জ্ঞান এবং সম্পদ অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে, কল্যাণ ছাড়া অন্য কিছুর আদেশ করে না, অকল্যাণ ছাড়া অন্য বিষয়ে নিষেধ করে না। ইসলামের বিধি-বিধান সহজ ও অল্প। ইসলাম ন্যায়-নিষ্ঠা এবং মানুষের মাঝে পরস্পর ভালবাসা প্রচার করে।

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মানুষ যত অপরাধই করে থাক, যদি সে তা থেকে প্রত্যাবর্তন করে এবং ইসলাম গ্রহণ করে তবে পূর্বের সকল অপরাধ মার্জনা করে দেয়া হয়। ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথে সে হয়ে যায় একজন নবজতাকের ন্যায় নিষ্পাপ। তবে ইসলাম গ্রহণের আগে মানুষ যদি জনকল্যাণ মুলক কোন কাজ স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকে তবে ইসলাম গ্রহণ করলে তার মূল্যায়ন করা হবে এবং তাতেও প্রতিদান দেয়া হবে। বরং আল্লাহ্‌ এধর্মকে অপরাপর ধর্মের তুলনায় দ্বিগুণ ছওয়াব ও প্রতিদানের মাধ্যমে বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন।

ইসলাম শিক্ষা করার মর্যাদা:
আপনি শুধু মাত্র আল্লাহ্‌রই ইবাদত করবেন, এজন্যই তিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِي، مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِي، إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ

"আমি জ্বিন ও মানুষকে এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা একমাত্র আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে কোন জিবীকা চাইনা। চাইনা তারা আমাকে খাদ্য দান করুক। আল্লাহ্‌ই রিযিকদাতা প্রতাপশালী ক্ষমতাশালী।" (সূরা যারিয়াত- ৫৬-৫৮)

আপনার পালনকর্তা যেভাবে চান সেভাবে তাঁর ইবাদত করতে চাইলে, তিনি যে বিধি-বিধান ইসলামে প্রবর্তন করেছেন তার শিক্ষা অর্জন করা আপনার উপর আবশ্যক।

যদি আপনাকে কেউ প্রশ্ন করে কেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন? তার জবাব দেয়ার জন্য ইসলামের জ্ঞান লাভ করা আবশ্যক।

অন্য ব্যক্তিকে ইসলামের প্রতি আহবান করার জন্যও ইসলাম জানা এবং বুঝা আবশ্যক।

আপনি যদি বেশী বেশী ইসলামের জ্ঞান ও শিক্ষা অর্জন করেন, তবে আল্লাহ্‌র কাছে সবচাইতে সম্মানিত ব্যক্তি আপনিই। আপনার নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ আল্লাহ্‌ যার কল্যাণ চান, তাকে ধর্মের গভীর জ্ঞান দান করেন। (বুখারী ও মুসলিম) তিনি আপনাকে আরো সুসংবাদ দিচ্ছেন: مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করার পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ্‌ বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতের রাস্তাকে সহজ করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)

কালেমায়ে শাহাদাতু
আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ্‌।

আপনি যদি এই কালেমাকে উহার অর্থ জেনে, পরিপূর্ণরূপে সত্য মনে করে পাঠ করেন, তবেই ইসলামে প্রবেশ করবেন- যদিও আপনার এ ব্যাপারটি কোন মানুষ না জানে।

লাইলাহা ইল্লাল্লাহু এর অর্থ:

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। কেননা তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। তিনি একক, তাঁর কোন জম্মদাতা নেই, কোন সঙ্গিনী বা সন্তান-সন্তুতিও নেই। সত্বায় ও গুণাবলীতে, মহত্ম ও পরিপূর্ণতায় কেউ তাঁর সদৃশ্য নেই। তিনি ব্যতীত কেউ কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, কেউ কারো কোন উপকার-অপকার করার অধিকার রাখে না, কেউ অদৃশ্য জগতের জ্ঞান রাখে না। সুতরাং সিজদা, প্রার্থনা প্রভৃতি যাবতীয় ইবাদত-দাসত্ব নিবেদনের একমাত্র যোগ্য হলেন আল্লাহ্‌।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্‌ এর অর্থ:

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ্‌ কুরাইশী আরবী- তিনি জীবন বিধান নিয়ে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সমগ্র মানব জাতির নিকট প্রেরিত। নবী-রাসূলদের মধ্যে তিনি সর্বশেষ। তাঁকে সত্যায়ন করা ও ভালবাসা এবং তাঁর অনুসরণ করা অবশ্যকর্তব্য। এই রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর প্রবর্তিত তরীকা অনুযায়ী ইবাদত করলেই তা ছহীহ-শুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে।

ছালাত
ছালাত হচ্ছে দৈনন্দিন ইবাদত। এর মধ্যে আমরা আমাদের প্রতি অনুগ্রহকারী স্রষ্টার প্রতি বিনয়ী হই, তাঁর প্রশংসা করি। যাতে করে তিনি আমাদেরকে উত্তম প্রতিদান ও ছওয়াব দান করেন এবং আমাদের গুনাহ্‌ সমূহ ক্ষমা করেন। আর ইসলামের উপর আমাদের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে হয়:

ফজর ছালাত: এ ছালাত দুরাকাত। এর সময় হল রাতের শেষে ফজরের আলো উদ্ভাসিত হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।

যোহর ছালাত: এ ছালাত চার রাকাত। এর সময় দুপুরে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় এবং আছরের পূর্ব পর্যন্ত থাকে (অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার বরাবর হওয়া)।

আছর ছালাত: এ ছালাত চার রাকাত। এর সময় হলঃ যোহর ছালাতের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু হয় সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকে।

মাগরিব ছালাত: এছালাত তিন রাকাত। এর সময় হল, সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিমাকাশে লাল আভা শেষ তথা অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত।

এশা ছালাত: এ ছালাত চার রাকাত। এর সময় হল, মাগরিব ছালাতের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত।

জুমআর ছালাত: শুক্রবার দিন সকল মানুষের সাথে মসজিদের এসে যোহর ছালাতের পরিবর্তে জুমআর ছালাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর আবশ্যক। এ ছালাত দুরাকাত। কিন্তু জামাতবদ্ধ হয়ে যদি এ ছালাত আদায় করতে না পারে তবে যোহরের ছালাতই আদায় করতে হবে।

এছাড়া আরো কিছু ছালাত আছে যাতে প্রচুর প্রতিদান দেয়া হয়। এ সমস্ত ছালাত আপনার ইচ্ছাধিন। এ ছালাত আদায় করতেও পারেন ছাড়তেও পারেন। আর তা হচ্ছে: ফজর ছালাতের পূর্বে ২ রাকাত। যোহরের পূর্বে (২+২=৪) চার রাকাত এবং পরে ২ রাকাত। মাগরিবের পর ২ রাকাত। ২ রাকাত এশার পর। জুমআর পর (২+২=৪) চার রাকাত। এশা ছালাতের পর বিতর ছালাত পড়বে (এ ছালাতের সর্বনিম্ন রাকাত সংখ্যা এক)। যে কোন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে বসার আগে ২ রাকাত ছালাত আদায় করতে হয়।

পবিত্রতা
যখন ছালাতের ইচ্ছা করবেন, তখন আপনার উপর আবশ্যক হল- যে প্রভুর জন্য ছালাত আদায় করছেন তাঁর সম্মানার্থে পাক-পবিত্র হবেন।

ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা যায়। এর পদ্ধতি আল্লাহ্‌ তাআলা পবিত্র কুরআনে সূরা মায়েদার ৬নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন ছালাত আদায় করার ইচ্ছা কর....।"

তখন ধৌত কর তোমাদের মুখমন্ডল মুখ ধোয়ার অন্তর্গত হল- কুলি করে মুখের ভিতর অংশ ধৌত করা এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়ে নাকের ভিতরের অংশ ধৌত করা।

এবং হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত কনুইসহ দুটি হাত পূর্ণরূপে ধৌত করতে হবে। আগে ডান হাত তারপর বাম হাত ধৌত করা।

এবং মাথা মাসেহ করবে অর্থাৎ হাত দুটিকে ভিজিয়ে তা সম্পূর্ণ মাথার উপর ফিরাবে। এসময় দুতর্জনী দ্বারা কানের ভিতর অংশ এবং বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা কানের বাহির অংশ মাসেহ করবে।

পা দুটি টাখনুসহ ধৌত করবে উভয় পা টাখনুর শেষ অংশ পর্যন্ত ধৌত করবে। উত্তম হল আগে ডান পা তারপর বাম পা ধৌত করা।

ওযুর ক্ষেত্রে এচারটি অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ধৌত করা আবশ্যক।

নিম্ন লিখিত অবস্থায় সমস্ত শরীর ধৌত করা (গোসল করা) আবশ্যক। ওযু যথেষ্ট নয়:

স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করা।

যে কোন ভাবে বীর্যপাত হওয়া।

নারীর ঋতুর (মাসিকের) নির্ধারিত সময় শেষ হওয়া।

সন্তান প্রসবের পর নারীর নেফাস শেষ হওয়া।

পানি না পেলে, অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে পানি ব্যবহার করতে অপারগ হলে ওযু এবং গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। তায়াম্মুম হল, বিসমিল্লাহ্‌ বলে উভয় হাতের করতল পবিত্র মাটিতে রাখবে। অতঃপর উহাতে ফুঁ দিয়ে মুখমন্ডল এবং বাম করতল দিয়ে ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত ও ডান করতল দিয়ে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে।

যখন পবিত্রতা অর্জন করবে তখন অন্য নামাযের জন্য আবার পবিত্র অর্জন করা আবশ্যক নয়। তবে যদি নিম্ন লিখিত কোন একটি কারণ দেখা যায় তবে পবিত্রতা ভঙ্গ হয়ে যাবে:

পবিত্রতা ভঙ্গকারী বিষয়:

সামনের অথবা পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া। যেমন: প্রস্রাব, পায়খানা, বায়ু, বীর্য, রক্ত প্রভৃতি।

যৌন সঙ্গম করা।

অন্তরায় ছাড়া সামনের অথবা পিছনের রাস্তা স্পর্শ করা।

যে কোন কারণে হুঁশ চলে যাওয়া। যেমন: নিদ্রা, বেহুঁশী, মাদকতা প্রভৃতি।

উটের মাংশ ভক্ষণ করা।

ছালাত আদায়ের পদ্ধতি
প্রথমত: যে ছালাত আপনি আদায় করতে চান তার সময়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হোন।

দ্বিতীয়ত: পবিত্রতা অর্জন করেছেন কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। আরো নিশ্চিত হোন যে, আপনার শরীরে, কাপড়ে, ছালাতের স্থানে কোন অপবিত্রতা (যেমন, মল-মূত্র প্রভৃতি) নেই।

তৃতীয়ত: নিশ্চিত হোন আপনার নাভীমূল থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেঁকে নিয়েছেন কিনা। আপনার শরীরের উক্ত স্থানের কোন অংশ যদি উম্মুক্ত থাকে তবে ছালাত বৈধ হবে না। (অবশ্য সমস্ত শরীর ঢেকে নেয়া ভাল) আর নারী তার মুখমন্ডল ও কব্জি পর্যন্ত উভয় হাত ব্যতীত সমস্ত শরীর ঢেঁকে ছালাত আদায় করবে।

ছালাতের ইচ্ছা করলে মক্কার কাওবা ঘরের দিকে মুখ করুন। কাওবা একটি বরকতময় মসজিদ। আল্লাহ্‌ মুসলামনের জন্য নির্ধারণ করেছেন যে প্রত্যেক ছালাতের প্রক্কালে এই ঘরকে সামনে রাখবে। এঘরটি আল্লাহ্‌র নির্দেশক্রমে ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ:) নির্মাণ করেছেন।

দন্ডায়মান হোন। বলুন (আল্লাহু আকবার)। তাকবীর বলার সময় উত্তম হল হাত দুটিকে সামনের দিকে খোলা রেখে তা উভয় কাঁধ বরাবর উত্তোলন করবেন। অতঃপর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর ধারণ করবেন। দৃষ্টি রাখুন সিজদার স্থানে।

সূরা ফাতিহা পাঠ করুন। তারপর যদি কুরআন থেকে আরো কিছু পাঠ করতে পারেন তো ভাল হয়।

আল্লাহু আকবার বলে রুকু করুন। মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে নীচু করুন। পিঠ ও মাথা বরাবর রাখবেন। দুহাত দ্বারা দুহাঁটু আঁকড়ে ধরুন। আর পাঠ করুন: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ সুবহানা রাব্বীয়্যাল আযীম। রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলার সময় হাত দুটিকে পূর্বের নিয়মে উত্তোলন করা উত্তম।

سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ্‌ বলতে বলতে সোজা হয়ে দাঁড়ান। তারপর বলুন رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ "রাব্বানা লাকাল হামদ।" এসময় পূর্ব নিয়মে হাত দুটিকে উত্তোলন করুন।

আল্লাহু আকবার বলে সিজদা করুন। সিজদার জন্য আগে হাত তারপর হাঁটু রাখুন। নাক, কপাল, দুহাতের করতল এবং দুপায়ের আঙ্গুলগুলো মাটিতে রাখুন। সিজদা অবস্থায় বলুন: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى সুবহানা রাব্বিয়্যাল আলা।

আল্লাহু আকবার বলে সিজদা থেকে মাথা উঠান। বসে বসে পাঠ করুন: রাব্বিগ্‌ ফিরলী। (সর্ব নিম্নে একবার)

দ্বিতীয়বার সিজদা করুন। প্রথম সিজদায় যা করেছেন এবারও তা করুন।

এভাবে পূর্ণ এক রাকাত ছালাত হল। আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দান্ডায়মান হোন। সূরা ফাতিহা পাঠ করে প্রথম রাকাতে যা করেছেন এবারও তাই করুন। এই দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সিজদা শেষ করলে-

আল্লাহু আকবার বলে বসুন। এবার তাশাহুদ পাঠ করুন:

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াছ্‌ ছালাওয়াতু ওয়াত্‌ তাইয়্যেবাতু।

আস্‌ সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,

আস্‌ সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ্‌ ছালিহীন।

أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌।

ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ্‌।

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।

কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাম দিন। বলুন, আস্‌ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্‌ তারপর বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে বলুন আস্‌ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্‌। এভাবে আপনার ছালাত শেষ হয়ে গেল- ছালাত যদি দুরাকাত হয়- যেমন ফজরের ছালাত।

কিন্তু ছালাত যদি দুরাকাতের অধিক হয়, তবে তাশাহুদ পড়ার পর সালাম ফেরানোর আগে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে পাড়ুন। এবার সূরা ফাতিহা পাঠ করুন। তারপর রুকু করুন। প্রথম রাকাতে যা করেছেন এখানেও তা করুন। যদি মাগরিব ছালাত হয় তবে এই তৃতীয় রাকাত শেষ হলেই বসে পড়ুন এবং আগের নিয়মে তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে ছালাত শেষ করুন। আর যদি যোহর বা আছর বা এশা ছালাত হয়, তবে তৃতীয় রাকাত শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে চতুর্থ রাকাতের জন্য দন্ডায়মান হোন এবং তৃতীয় রাকাতের মত করে এরাকাত আদায় করুন। তারপর তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরান।

পুরুষ ব্যক্তি মসজিদে এসে মুছল্লীদের সাথে ছালাত আদায় করতে সচেষ্ট হবে। এতে প্রচুর ছওয়াব পাওয়া যায়। ইমামের অনুসরণ করা আবশ্যক- যদিও আপনার ক্বিারাত পাঠ শেষ না হয়। ইমামের আগে আগে বা সাথে সাথে কোন কিছু করবে না। বরং তার পরে পরে সব কাজ করবেন।

এখন যদি সূরা ফাতিহা আপনার মুখস্ত থাকে, তবে কুরআন থেকে সহজ যে কোন একটি আয়াত পাঠ করুন। কুরআন থেকে কোন কিছুই যদি মুখস্ত না থাকে, অথবা তাশাহুদ বা ছালাতের অন্যান্য যিকির জানা না থাকে, তবে ছালাতে বলুন সুবহানাল্লাহ আলা হামদু লিল্লাহ লাইলাহা ইল্লল্লাহ আল্লাহু আকবার লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। এগুলোর মধ্যে সাধ্যানুযায়ী যা সম্ভব তা পড়বেন। আপনি যদি কিছুই না জানেন তবুও ছালাত ছাড়বেন না।

ছালাত ভঙ্গকারী বিষয়
নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো ছালাত ভঙ্গ করে দেয়:

ইচ্ছাকৃতভাবে পূরা শরীর নিয়ে ক্বিবলা থেকে অন্য দিকে মুখ ফেরানো।

ছালাতের অন্তর্ভূক্ত নয় এমন কথা ইচ্ছাকৃতভাবে বলা। তবে যদি ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ কথা বলে ফেলে তবে ছালাত ভঙ্গ হবে না।

ছালাতরত অবস্থায় হাসাহাসি করা।

ছালাতে অযথা অধিক নড়াচড়া করা।

ছালাত অবস্থায় পানাহার করা।

পবিত্রতা ভঙ্গ হয়ে যাওয়া।

ইচ্ছাকৃত সতর (ছালাতে ঢেকে রাখা আবশ্যক এমন স্থান) উম্মোচন করা।

ওযু পাপ বিমোচন করে: (ছবির সাহায্যে ওযু ও নামায শিক্ষা)

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

নামায ইসলামের মূল স্তম্ভঃ

১০
ইসলামের রুকন সমূহ:
ইসলামের ভিত্তি তথা সর্বাধিক বড় বাহ্যিক কাজগুলো হচ্ছে পাঁচটি:

কালেমায়ে শাহাদাত: আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ্‌ এ কালেমা ইসলামে প্রবেশ করার দরজা।

ছালাত: তা হল দৈনন্দিন পাঁচ বার ছালাত। যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

যাকাত: তা হচ্ছে অর্থ-সম্পদের মধ্যে থেকে নগন্য একটি অংশ যা নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে মুসলিম ব্যক্তি দান করে থাকে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টিকল্পে এবং জনকল্যাণ মূলক কাজে অংশ গ্রহণ করার জন্য। ইসলামে এর বিস্তারিত বর্ণনা আছে, কখন তা আবশ্যক হবে, তার পরিমাণ কি এবং কাকে দিতে হবে।

ছিয়াম: উহা হল আরবী বছরের ৯ম মাস রামাযানে দিনের বেলায় খানা-পিনা এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম। (সময়টি হচ্ছে: ফজরের পূর্বে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।) রামাযান একটি বরকতময় মাস। যে মাসে আমাদের নবী এর উপর কুরআন নাযিল শুরু হয়। ছিয়াম দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি আত্মসমর্পন ও পূর্ণ অনুসরণ প্রকাশ করবে প্রভুর জন্য। মূল্যায়ন করবে আল্লাহ্‌র নেয়ামতের। ফলে তার শুকরিয়া করবে। অনুভব করবে নিঃস্ব ফক্বীর-মিসকীনদের অভাব। ফলে সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করবে তাদের দিকে।

হজ্জ: উহা হচ্ছে কাওবা শরীফে (মক্কার মসজিদে হারামে) যাওয়া। সেখানে আল্লাহ্‌র আনুগত্য, মহত্ম ও নৈকট্য লাভের আশায় নির্দিষ্ট কিছু কার্যাদি পালন করতে হয়। চন্দ্র বছরের শেষ মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখে একাজ করতে হয়। সামর্থবান প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর জীবনে একবার হজ্জ করা আবশ্যক। সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন উপকন্ঠ থেকে আগত মুসলিম ভাইদের সাথে সাক্ষাত ঘটে থাকে, তাতে বৃদ্ধি হয় পরস্পরের ঈমান, দৃঢ়তা এবং শক্তি ও একতা।

১১
ঈমানের রুকন সমূহ:
ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস হচ্ছে ছয়টি। এগুলো সম্পর্কে একজন মুসলিম ব্যক্তির পূর্ণ বিশ্বাস রাখা অতি আবশ্যক।

প্রথমত: আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহ্‌ নভোমন্ডলের উপরে থাকেন। তিনি আমাদের পালনকর্তা। তিনি সমস্ত বস্তুর সৃষ্টিকারী। সব কিছুর তত্বাবধানকারী। সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী। সর্বক্ষমতাবান। তিনি স্বীয় নাম, গুণাবলী ও কর্মে সুমহান ও পরিপূর্ণ। তাঁর কোন সঙ্গীনি ও সন্তান নেই। জম্মদাতা নেই। তাঁর সমকক্ষ কেহ নেই। তিনিই এককভাবে আমাদের মাবূদ (উপাস্য)। পৃথিবীর সবকিছুই তাঁর গোলাম ও আজ্ঞাবহ।

দ্বিতীয়ত: ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাস: এরা আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকুলের অন্তর্গত। তারা আল্লাহ্‌র সৎবান্দা। তাঁর কাছে সম্মানিত। তাঁদের সংখ্যা অগণিত। আল্লাহ্‌র নির্দেশে তাঁরা এ পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের কর্মে নিয়োজিত আছেন। যেমন, মানব জাতির অন্তর্গত নবী-রাসূলদের নিকট ওহী (প্রত্যাদেশ) নিয়ে আগমণ করা। মানুষের কর্ম সমূহ লিপিবদ্ধ করা ইত্যাদি।

তৃতীয়ত: আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহ্‌ তাওআলা কতিপয় নবী (আ:)এর প্রতি কিছু কিছু গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন। তাঁরা এসমস্ত গ্রন্থ মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। এগুলো আল্লাহ্‌র বাণী। যেমন, তাওরাত মূসা (আ:)এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। ইঞ্জিল অবতীর্ণ হয়েছে ঈসা (আ:)এর প্রতি। যাবুর নাযিল হয়েছে দাঊদ (আ:)এর প্রতি। আর শেষ গ্রন্থ হচ্ছে কুরআন। যা জিবরীল এর মাধ্যমে অবতীর্ণ করা হয়েছে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর প্রতি। এ গ্রন্থ পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থের বিধানকে রহিত করে দিয়েছে। আমরা আসমানী সমস্ত গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস রাখব। কিন্তু জীবন পরিচালনা করব শুধু কুরআন ভিত্তিক।

চতুর্থত: নবী-রাসূলদের প্রতি ঈমান: আল্লাহ্‌ তাআলা মানব জাতির মধ্যে থেকে কতিপয় ব্যক্তিকে নির্বাচন করে তাঁদের কাছে ওহী (প্রত্যাদেশ) প্রেরণ করেছেন। তাঁদের প্রেরণ করেছেন এই আদেশ দিয়ে যে তাঁরা মানুষকে শুধুমাত্র এককভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত (দাসত্ব) করার প্রতি আহ্বান জানাবেন। নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা প্রমুখ (আ:) আমরা তাঁদের সবার প্রতি ঈমান রাখব। কিন্তু আমরা কর্ম জীবন পরিচালনা করব শুধুমাত্র শেষ নবী মুহাম্মাদ বিন আদুল্লাহ্‌ আল কুরাইশী আল আরাবী (ছা:) কর্তৃক প্রদত্ব বিধানের ভিত্তিতে। যিনি ঈসা (আ:)এর জম্মের ৫৭০ বছরের চাইতে বেশী সময় পর মক্কায় জম্ম গ্রহণ করেন।

পঞ্চমত: শেষ দিবসের উপর বিশ্বাস: মৃত্যুর পর আল্লাহ্‌ তাওআলা সমস্ত মানুষকে পূণর্জীবিত করবেন। তাদের কর্মের হিসাব নিবেন এবং প্রতিদান দিবেন। আল্লাহ্‌র আনুগত্যকারী মুওমিনদেরকে জান্নাত দান করবেন এবং তাঁর অবাধ্য কাফেরদেরকে প্রবেশ করাবেন জাহান্নামে। এজীবনের কোন শেষ নেই, যার পরে নেই কোন মৃত্যু। رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল্‌ আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা আযাবান্নার। অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব হতে রক্ষা কর। (সূরা বাকারা- ২০১)

ষষ্ঠত: তক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহ্‌ তাআলা প্রতিটি বস্তু সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে তা পরিমাপ করেছেন এবং তা নির্ধারণ করেছেন। প্রত্যেক বস্তু আল্লাহ্‌র নির্দেশে ও তাঁর জ্ঞান অনুযায়ী হয়ে থাকে। এমনকি ঈমান, কুফরী, বিপদাপদ, জীবিকা, জীবন-মৃত্যু। তিনি তা নির্ধারণ করেছেন বিরাট একটি কৌশলের কারণে- যে ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞান রাখেন। আল্লাহ্‌ এসমস্ত বিষয় তাঁর নিকট একটি গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আল্লাহ্‌ যা নির্ধারণ করেছেন এবং লিপিবদ্ধ করেছেন তার বাইরে কোন কিছু ঘটবে না। আর আল্লাহ্‌ তাঁর অসীম ক্ষমতাবলে মানুষের জন্য যা নির্ধারণ করা আছে তা নির্বাচন করার জন্য তাকে তাওফীক (আনুকুল্য) দিয়ে থাকেন।

১২
তাওহীদ
ইসলামে সর্বাধিক বড় বিষয় হল (আল্লাহ্‌র তাওহীদ বা একত্ববাদ) আর সবচাইতে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে (আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক বা অংশী স্থাপন করা)। মুসলিম বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ্‌ই একমাত্র রব পালনকর্তা। তিনিই এককভাবে সৃষ্টিকারী, জীবিকা দানকারী, কর্তৃত্বকারী, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞানী, জীবন-মরণের অধিকারী তথা জগতের সার্বিক তত্বাবধান একমাত্র তাঁর হাতে। তাঁর সাথে কোন অংশীদার নেই। এমনিভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ্‌র শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বে কোন অংশী নেই। তিনি কাউকে জম্ম দেননি, তিনি কারো থেকে জম্ম গ্রহণও করেন নি। তাঁর সত্বা, নাম, গুণাবলী ও কর্মে কোন সদৃশ্য নেই।

মুসলিম বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্‌ই এককভাবে দাসত্ব পাওয়ার অধিকারী। সুতরাং সিজদা, কুরবানী প্রভৃতি দ্বারা আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কারো নৈকট্য কামনা করা যাবে না। আল্লাহ্‌ ছাড়া কারো কাছে দুআ (প্রার্থনা) করবে না- তার মর্যাদা শ্রেষ্ঠত্ব যাই হোক না কেন। আরো বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ কোন ধরণের কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক নয়- হোক তিনি নবী বা কোন যাদুকর বা জ্যোতির্বিদ। বা হোক তা কোন তাবীজ বা নক্ষত্র বা কোন মৃত ব্যক্তি বা কেউ। মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ইবাদত মানুষকে দেখানোর জন্য করে না। আল্লাহ্‌র বিধান দ্বারা শাসন পরিচালনা ছেড়ে দিয়ে অন্যের বিধান গ্রহণ করে না। অথবা এও বিশ্বাস করে না যে, অন্যের বিধান আল্লাহ্‌র বিধানের সমপর্যায়ের। আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করে না। গাইরুল্লাহ্‌র দাসত্ব হয় এমনভাবে নাম রাখে না। যেমন- আবদুন্নবী (নবীর দাস), আবদুল হুসাইন (হুসাইনের দাস) প্রভৃতি নাম অবৈধ।

১৩
আনুগত্য
আপনি আল্লাহ্‌র আনুগত্যকারী হতে চাইলে: কোন ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য কামনা করাই যথেষ্ট নয়; যে পর্যন্ত আপনি না জানবেন যে এ ইবাদতটি করার ব্যাপারে আপনার পালনকর্তা আপনাকে আদেশ করেছেন। আল্লাহ্‌র অনুমতি নাই এমন ইবাদত নিজের পক্ষ থেকে উদ্ভাবন করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। বরং সে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পন্থা-পদ্ধতির শিক্ষা লাভ করবে এবং পূর্ণ সন্তুষ্টি ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তার অনুসরণ করবে। কেননা তাঁর পদ্ধতি সর্বাধিক বিশুদ্ধ। কেউ যদি তাঁর অননুমদিত পন্থায় আল্লাহ্‌র দাসত্ব করতে চায় তবে সে ইসলামকে ত্রুটিযুক্ত সাব্যস্তাকারী এবং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে স্বীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারী সাব্যস্তকারী হবে।

১৪
নিষিদ্ধ বিষয় সমূহ
আল্লাহ্‌ মহাবিজ্ঞ। তিনি মানুষের জন্য সেটাই নিষেধ করেছেন যাতে তাদের ক্ষতি রয়েছে।

নিশ্চয় মানুষের ইসলাম শক্তিশালী হয়, আল্লাহ্‌র প্রতি ভলবাসা প্রকাশিত হয়- আল্লাহ্‌ যা নিষেধ করেছেন তা থেকে নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে- যদিও স্বীয় আত্মা তার আকাংখা রাখে। কেননা সে নিজের প্রবৃত্তির উপর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়।

ইসলামে বড় বড় নিষিদ্ধ বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক। (এবিষয়ে পূর্বে আলোচনা হয়েছে)

ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা বা তা ঘৃণা করা।

আল্লাহ্‌ যা নির্ধারণ করেছেন তাতে অসন্তুষ্টি বা ক্রোধ প্রকাশ করা। যুগকে গালি দেয়া।

কোন হারামকে হালাল মনে করা বা হালালকে হারাম মনে করা। ধর্ম সম্পর্কে মূর্খতা সুলভ কথা বলা।

দ্বীনে বিদআত (নতুন ইবাদত চালু) করা। (যেমন নবী (ছা:)এর জম্ম দিবস পালন করা, ছালাতের শুরুতে মুখে উচ্চারণ করা, শিয়া মতবাদ- যারা নবী (ছা:)এর পিতৃব্য পুত্র আলী (রা:)কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে... প্রভৃতি।)

নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কোন ছাহাবীকে গালিগালাজ করা।

যাদু করা, জ্যোতীর্বিদ্যা শিক্ষা বা গণনা করা।

সময়ের মধ্যে ছালাত আদায় না করা। (পুরুষের মসজিদে এসে জামাতে ছালাত আদায় না করা।)

যাকাত আদায় না করা। অর্থাৎ- সম্পদের আবশ্যক অংশ দান না করা।

শরীয়ত অনুমোদিত ওযর ব্যতীত রামাযানের দিনের বেলায় ছিয়াম পালন না করা।

বিনা কারণে কাউকে হত্যা করা।

ধর্ম যুদ্ধে শত্রুর আক্রমণ থেকে পলায়ন করা।

নারী-পুরুষ ব্যভিচার, পুরুষের গুহ্যদ্বারে ব্যভিচার করা, হস্ত মৈথুন করা।

নিরাপরাধ কোন মানুষকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।

ইয়াতীম-অনাথের সম্পদ আত্মসাত করা ও অত্যাচার করা।

সূদ। (যেমন ১০০ টাকায় ১০৫ বা আরো বেশী টাকা আদায় করা বা দেয়া।)

ঘুষ দেয়া বা নেয়া।

জুয়া খেলা।

চুরি করা। আমানত এবং কর্য নেয়া বস্তু প্রত্যার্পণ না করা, ঋণ পরিশোধ না করা, এছাড়া অন্যান্য অবৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা।

সম্পদের অপচয় করা।

পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।

পরিবার এবং নিকটাত্মীয়দেরকে কষ্ট দেয়া।

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া।

বিভিন্ন স্থান ও মানুষ উপকার গ্রহণ করে এমন জায়গার ক্ষতি সাধন করা।

বিচার-ফায়সালা প্রভৃতিতে মানুষের উপর অবিচার করা। অত্যাচারীকে সাহায্য করা।

অন্যায়ভাবে কোন পশু-পাখিকে শাস্তি দেয়া।

মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, সত্য সাক্ষ্য গোপন করা।

মিথ্যা বলা, অঙ্গিকার ভঙ্গ করা, দলীল-পত্র প্রভৃতি জাল করা।

ধোকা, খেয়ানত, গোপন বিষয় ফাঁস করা।

হিংসা।

অহংকার করা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা।

পরচর্চা করা, চুগোলখোরী করা। (গন্ডোগল বাধানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনকে বলা)

গান-বাদ্য করা।

নেশা ও মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা।

মৃত প্রাণী, প্রবাহিত রক্ত, নিকৃষ্ট-খারাপ বস্তু ভক্ষণ করা।

শুকর, কুকুর, হিংস্র প্রাণী, হিংস্র পাখীর মাংশ ভক্ষণ করা।

আল্লাহ্‌র নাম ছাড়া অন্যের নাম নিয়ে যবেহ্‌ করা প্রাণী ভক্ষণ করা।

শরীয়ত অনুমদিত সঠিক কারণ ছাড়া কুকুর পোষা।

ক্রুশ বা অনুরূপ অনৈসলামিক কোন চিহ্ন বিশেষ গ্রহণ করা।

পুরুষের স্বর্ণ, রেশম বস্ত্র পরিধান করা। পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা। এক্ষত্রে পুরুষ নারীর বিপরীত।

জেনে রাখুন ইসলামের মূলনীতি হল, দুনিয়ার সমস্ত বস্তু এবং সবধরণের লেন-দেন বৈধ। একারণে কোন্‌টি হারাম বা নিষিদ্ধ ইসলাম তা নির্দিষ্টভাবে গণনা করে দিয়েছে। অতএব যে বিষয়ে ইসলাম কোন কথা বলেনি তা বৈধ।

১৫
সচ্চরিত্র
ইসলাম সচ্চরিত্রের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করে। সচ্চরিত্রের প্রতিদান এবং সম্মানকে নফল ছালাত ও ছিয়ামের ইবাদতের বরাবর নির্ধারণ করা হয়েছে।

মুসলিম যে সমস্ত উত্তম চরিত্রে নিজেকে সুসসিজ্জত করবে তম্মধ্যে কতিপয় নিম্নরূপ:

সত্যবাদিতা।

আমানতদারিতা ও অঙ্গীকার পূর্ণ করা।

সম্ভ্রম রক্ষা ও লজ্জাশীলতা।

সহিঞ্চুতা ও নম্রতা।

ক্ষমা ও সংশোধন।

বিনয়, দয়া ও পরোপকারিতা।

দানশীলতা ও সৎব্যবহার।

ন্যায়নিষ্ঠা-সুবিচার।

শক্তি, আত্মসম্মান ও বীরত্ব।

ধৈর্য।

১৬
আদব ও শিষ্টাচার
মুসলিম পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। সুগন্ধি ও সৌন্দর্য পসন্দ করবে। মেসওয়াক প্রভৃতি দ্বারা দাঁতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবে। নখ কাটবে, খাতনা করবে। নিজ স্বাস্থ্য রক্ষায় যত্নবান হবে। নাভিমূল এবং বগলের নীচের পশম পরিস্কার করবে। গোঁফ কেটে ছোট করবে। কোনক্রমেই কাফেরদের সদৃশ্যাবলম্বন করবে না। মাথার চুল কিছু কেটে কিছু ছেড়ে দিবেনা।

ইসলামের মহান শিষ্টাচারের অন্তর্গত হল, চলার পথ (রাস্তা-ঘাট) পরিস্কার করা। নিজের ও পরের নিরাপত্তা এবং সমাজের সর্বস্তরে শান্তি নিশ্চিত করা।

মুসলিম সর্বক্ষেত্রে ডান হাত ব্যবহার করবে। যেমন- খানা-পিনা, লেন-দেন প্রভৃতি। ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়া, গোসল করা, পোষাক পরিধান, এমনকি মাথা আঁচড়ানো ও মাথার চুল মুন্ডন করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করবে। মসজিদে বা নিজ গৃহে প্রবশের সময় আগে ডান পা রাখবে। যেমনটি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করতেন।

নিদ্রা যাওয়ার ইচ্ছা করলে ওযু অবস্থায় ডান কাতে শয়ন করবেন।

নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে বিসমিল্লাহ বলবেনঃ খানা-পিনা, নিদ্রার, পোষাক পরিধান ও খোলা, বাহনে আরোহণ করা, আছাড় খেড়ে পড়ে যাওয়ার সময়, সহবাস করার সময়, যবেহ করা, শৌচাগারে প্রবেশের পূর্বে, ওযুর পূর্বে, নিজগৃহে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময়, মসজিদে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময়।

পানাহার শেষ করলে বলুন: আল্‌ হামদু লিল্লাহ্‌।

হাঁচি এলে বলুনঃ আল্‌ হামদু লিল্লাহ্‌। হাঁচি দিয়ে কেউ আল্‌ হামদু লিল্লাহ্‌ বললে তার জবাবে বলুনঃ ইয়ার হামুকাল্লাহ্‌। আপনাকে কেউ বললে আপনি তার জবাবে বলুনঃ ইয়াহ্‌দিকাল্লাহ্‌।

হাই এলে মুখে হাত দিবেন।

নবী মুহাম্মাদের নাম উল্লেখ করলে বা শুনলে বলুন: ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

কুরআন পাঠ করার পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করুন। সুন্দর করে পাঠ করুন। আপনার সামনে কেউ কুরআন পাঠ করলে নীরবে শুনুন।

আগেভাগে ছালাতের জন্য মসজিদে গমণ করুন। সুন্দর পোষাক পরিধান করুন। মসজিদে আসার আগে সবধরণের দুর্গন্ধ থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। টাকা-পয়সা উপার্জনের কথা মসজিদে আলোচনা করবেন না। জুমআর দিন গোসল করে সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে আসুন। জুমআর খুতবা নীরবে শ্রবণ করুন।

অন্যের বাসস্থানে প্রবেশের সময়, তাদের কোন জিনিস ব্যবহার করার পূর্বে অনুমতি নিন।

মুসলিম ভায়ের সাক্ষাতে তার সাথে মুসাফাহা করুন। মাথা নত না করে হাঁসি মুখে বলুন, আস্‌ সালামু আলাইকুম। সে যদি আপনাকে সালাম দেয় জবাবে বলুন, ওয়া আলাইকুম্‌ আস্‌ সালাম। তার নিকট থেকে চলে যাওয়ার সময় আবার বলুন, আস্‌ সালামু আলাইকুম।

ইসলামের অন্যতম আদব হল, মুসাফিরকে বিদায় জানানো। সুন্দর ও আনন্দের ঘটনায় অভিনন্দন জানানো। যেমন- বিবাহ, সন্তান লাভ।

অসুস্থ ব্যক্তির সুশ্রসা করুন। তাকে দেখতে গিয়ে দুআ বলুন: লা বা'সা ত্বাহুরুন ইনশাআল্লাহ অর্থ- কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করলে অসুস্থতা পাপ থেকে পবিত্র করবেন।

আপনি যদি কোন বিপদে পড়েন বা আপনার কেউ মৃত্যু বরণ করে তবে বলুন: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন অর্থ: "নিশ্চয় আমরা আল্লাহ্‌র জন্য, এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর নিকটেই প্রত্যাবর্তনকারী।

অতিথীর সম্মান করুন। বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ করুন। অভাবীকে সাহায্য করুন। পশু-পাখীর প্রতি দয়া করুন।

যার নিকট ভুল করেছেন তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। আপনাকে কেউ সহযোগিতা বা নছীহত করলে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তাকে বলুন: জাযাকাল্লাহু খাইরান অর্থ: আল্লাহ্‌ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

মুসলিম ব্যক্তির ভদ্রতা হল- মানুষের সাথে সে সুন্দর ভাষায় কথা বলবে। তাদের কথা ভালভাবে শুনবে। প্রয়োজনীয় বিষয়ে মানুষের সাথে পরামর্শ করবে।

ক্রোধ থেকে বাঁচুন। যদি বেশী ক্রোধাম্বিত হয়ে উঠেন তবে পাঠ করুনঃ আঊযুবিল্লাহি মিনাশ্‌ শাইতানির্‌ রাজীম। বিতাড়িত শয়তান থেকে আমি আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় কামনা করছি।

ইসলাম গ্রহণ করলেই নিজের নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই। তবে যদি আগের নামে নিষিদ্ধ কোন শব্দ থাকে তবে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। যেমন: আবদে ঈসা বা ঈসার দাস।

১৭
দুআ ও যিকির
যারা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে এবং যারা তাঁকে ডাকে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি তাদেরকে ভালবাসেন।

অধিক হারে কুরআন তেলাওয়াত করুন। আপনার যা মুখস্ত আছে তা থেকে অল্প হলেও সর্বদা পাঠ করুন। কেননা ইহা আপানার পালনকর্তার বাণী।

নামাযের সালাম ফিরিয়ে পাঠ করুনঃ (আস্তাগ্‌ফিরুল্লাহ্‌, আস্তাগ্‌ফিরুল্লাহ্‌, আস্তাগ্‌ফিরুল্লাহ্‌,) (আল্লাহুম্মা আন্তাস্‌ সালাম ওয়া মিনকাস্‌ সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল্‌ জালালি ওয়াল্‌ ইকরাম) তারপর ছালাত যদি ফরয হয় তাহলে বলুনঃ (সুবহানাল্লাহ্‌ ৩৩বার) (আল্‌ হামদুলিল্লাহ্‌ ৩৩বার) (আল্লাহু আকবার ৩৩বার) এবং একবার (লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশরীকা লাহু, লাহুল্‌ মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর)

সবচেয়ে বেশী ছওয়াবের অধিকারী কালেমা হলঃ (লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশরীকা লাহু, লাহুল্‌ মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর) প্রতিদিন এটা দশবার পাঠ করবেন।

প্রতিদিন একশবার পাঠ করবেনঃ (সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি) আমি আল্লাহ্‌র পবিত্রতা গাইছি তাঁর প্রশংসার সাথে।

সুন্দর সুন্দর দুআগুলোর মধ্যে থেকে কুরআন আমাদের যা শিখিয়েছে তম্মধ্যে কতিপয় দুআ হচ্ছেঃ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ (রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল্‌ আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।) অর্থঃ "হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব হতে রক্ষা কর।" (সূরা বাক্বারা- ২০১) رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ (রাব্বানা লা তুযেগ্‌ কুলূবানা বাওদা ইয হাদায়দতানা, ওয়া হাব লানা মিন্‌ লাদুন্‌কা রাহমাতান্‌, ইন্নাকা আন্তাল ওয়াহ্‌হাব।) অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে হেদায়াত দানের পর আমাদের হৃদয়কে বক্র করে দিও না। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয় তুমিই অধিক দানকারী। (সূলা আল ইমরান- ৮) رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ (রাব্বানা ইন্নানা আমান্না, ফাগ্‌ফির্‌ লানা যুনূবানা, ওয়া ক্বিনা আযাবন্নার) অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আমরা ঈমান এনেছি। সতরাং আমাদের পাপগুলো ক্ষমা কর, এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। (সূলা আল ইমরান- ১৬) রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাধিক যে দুআটি করতেন তা হচ্ছে: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ (ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলূব, ছাব্বিত ক্বালবী আলা দ্বীনেকা) হে অন্তকরণের পরিবর্তণকারী প্রভূ! আমার অন্তকরণ তোমার দ্বীনের উপর অটল-অবিচল রাখ। (তিরমিযী, আহমাদ, মুসতাদরাক হাকেম)

১৮
নারী
ইসলাম নারীকে পুরুষের সাথী হিসেবে নির্ধারণ করেছে। তাদের একজন অপরজন ছাড়া অচল। দুজনই দুজনার মুখাপেক্ষী।

স্ত্রীকে সম্মান করা ইসলাম আবশ্যক করেছে। মোহর এবং নারীর ভরণ-পোষণ পুরুষের উপর অনিবার্য করা হয়েছে। সৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পিতার আগে মাতাকে অগ্রগণ্য করা হয়েছে।

ইসলাম নারীকে অধিকার দিয়েছে- সে শিক্ষা অর্জন করবে, সম্পদ উপার্জন করবে, সম্পদের মালিক হবে, উত্তরাধিকার হবে, বিবাহের প্রস্তাব দানকারী পুরুষকে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।

নারী পুরুষের মতই আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকুলের অন্তর্গত। ইসলামে প্রবেশ করা এবং আল্লাহ্‌র ইবাদত করা তার উপরও আবশ্যক। নারীর উপর আবশ্যক হল সন্তানদেরকে ইসলামের শিক্ষা এবং সচ্চরিত্রের উপর প্রতিপালিত করা। স্বামীর আনুগত্য ও তাকে সম্মান করা, তাকে নেক কাজে ও অন্যায় পরিত্যাগ করতে সহযোগিতা করা। আর তার উপর অপরিহার্য হল অপর নারীকেও ইসলাম ও কল্যাণের পথে আহ্বান জানানো।

ইবাদতের ক্ষেত্রে, নিষিদ্ধ বিষয়ে এবং ইসলামের অন্যান্য বিধি-বিধানে পুরুষ এবং নারীর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। অবশ্য যে সমস্ত বিষয় ইসলাম পুরুষের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছে সেগুলো ব্যতিক্রম।

ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে সৃষ্টিগত পার্থক্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে। বিশেষ দৃষ্টি রাখে নারীর প্রাকৃতিক বিষয়গুলোর প্রতি। যেমন: নারীর ঋতু, গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব ইত্যাদি।

মুসলিম নারী ঋতু এবং নেফাস (সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব) অবস্থায় ছালাত-ছিয়াম কিছুই করবে না। যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হবে না। ঋতু বা নেফাস শেষ হলে পরিপূর্ণরূপে গোসল করে পবিত্র হবে। তারপর ঋতু বা নেফাস অবস্থায় ছুটে যাওয়া ছিয়ামগুলো শুধু ক্বাযা করবে কিন্তু ছালাতের ক্বাযা আদায় করতে হবে না।

ইসলাম নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করে। তাকে অসম্মান এবং ব্যভিচারের অনিষ্ট থেকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই তার উপর আবশ্যক করেছে- সমস্ত শরীর আচ্ছাদিত করে পোষক পরিধান করা- যা তাকে এবং অন্যদেরকে ফিৎনা-ফাসাদ থেকে রক্ষা করবে। তার উপর নিষিদ্ধ করা হয়েছে পরপুরুষের সাথে নির্জনে দেখা-সাক্ষাৎ করা। (এমন ব্যক্তি যে তার স্বামী নয় বা চিরকাল বিবাহ হারাম এমন কোন পুরুষ নয়। যেমন, পিতা, ছেলে, ভাই, চাচা, মামা।)

মুসলিম নারীর জন্য বৈধ নয় কোন অমুসলিম ব্যক্তিকে বিবাহ করা।

১৯
গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ:
সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ বস্তু যা আপনি লাভ করেছেন তা হল ইসলাম। ইসলাম থেকে ফেরানোর জন্য আপনার বিরুদ্ধে যতই চেষ্টা চালানো হোক, আপনি তা পরিত্যাগ করবেন না এবং তাতে কোন ধরণের অবহেলার পরিচয় দিবেন না। ইসলাম দ্বারাই আপনি সম্মানিত হোন।

ইসলামের বিশুদ্ধতা বা সৌন্দর্যকে মুসলমানদের ত্রুটির মাধ্যমে মূল্যায়ন করবেন না। কেননা হতে পারে মুসলিম ব্যক্তি ভুল করছে বা কুরআনের শিক্ষা বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে।

মুসলমানদেরকে ভালবাসা, তাদেরকে সহযোগিতা করা ইসলাম শক্তিশালী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ্‌ বলেন, নিশ্চয় মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। (সূরা হুজুরাত ১০)

ইসলামের উপর দৃঢ়তা লাভ করতে চাইলে এগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করুন:

১) বেশী বেশী ইসলামের জ্ঞান অর্জন করুন। কুরআন বুঝার চেষ্টা করুন। ধর্মের যে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করবেন না।

২) রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ছাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামী নেতৃবৃন্দের জীবনী পাঠ করুন।

৩) সময়মত ছালাত আদায় করুন। (পুরুষ ব্যক্তি প্রতিটি ছালাত মসজিদে আদায় করবে এবং জুমআর খুতবা ও ছালাতে উপস্থিত হবে।)

৪) সৎ মুসলমানকে সঙ্গী নির্বাচন করুন। তার সাথে বন্ধুত্ব করুন।

আরবী ভাষা শিক্ষার চেষ্টা করুন। কেননা আরবী কুরআনের ভাষা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ভাষা। এর মাধ্যমে ভালভাবে ইসলাম বুঝা যায়।

অন্যকে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন:

১) ইসলামের বিধি-বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ইসলামের প্রতি আপনার অকৃত্রিম ভালবাসা ও তার নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের জন্য প্রতিযোগিতা করার মাধ্যমে।

২) অন্যের প্রতি আপনার সৎ আচরণের মাধ্যমে। নিজ কর্মের প্রতি দৃঢ়তার মাধ্যমে। যাতে করে অন্যরা অনুভব করতে পারে ইসলামের প্রভাব আপনার জীবনে কত গভীর।

আপনার মাধ্যমে যারা হেদায়াত লাভ করবে তাদের নেক কর্মের অনুরূপ আপনি প্রতিদান পাবেন। প্রথমে নিজ পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবকে উত্তম পন্থায় ইসলামের পথে আহ্বান করুন। উপযুক্ত কোন বই বা ক্যাসেট তাকে উপহার দিন। আল্লাহ্‌র আনুকুল্য (তাওফীক) পাওয়ার জন্য ও অন্যদের ইসলাম গ্রহণ করার জন্য সর্বদা দুআ করুন।

না জেনে ইসলামের কোন বিষয়ে আপনি কথা বলবেন না। এমনিভাবে জ্ঞান এবং আমানতে বিশ্বস্থ এমন নির্ভরযোগ্য আলেম ছাড়া কারো কাছে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন না।

কাফেরদের ধর্মীয় ঈদ উৎসবে কখনো অংশ গ্রহণ করবেন না। কেননা আপনি মুসলিম। আপনিই শুধু সত্য ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত। বছরে মুসলমানদের খুশির দিন শুধুমাত্র দুটি। ঈদুল ফিতর (চন্দ্র বর্ষের দশম মাসের প্রথম তারিখ) এবং ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ (চন্দ্র বর্ষের দ্বাদশ মাসের দশ তারিখ।)

যে কোন সৎ কাজের সময় আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি এবং প্রতিদান লাভের নিয়ত (উদ্দেশ্য) করুন।

সর্ববিষয়ে আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। স্মরণ করুন আপনি সর্বদা তাঁরই নিকট অভাবী। আল্লাহ্‌র প্রতিটি অনুগ্রহে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

মনে রাখুন আল্লাহ্‌ আপনার প্রত্যেক অবস্থা ও কর্ম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন ও অবলোকন করেন। তিনি আপনার উপর ক্ষমতাবান। কোন কিছুই তাঁকে অপারগ করতে পারে না।

ভুল হয়ে গেলেই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করুন। ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আমার পাপ অনেক তাই তওবা করলে কাজ হবে না- এরূপ কথা বলবেন না। কেননা আল্লাহ্‌র দয়া সুপ্রশস্থ।

সাফল্য চান? ধৈর্য্য অবলম্বন করুন। কেননা পরকালে জাহান্নামের রাস্তা খুবই সহজ। সবাই তাতে যেতে পারে। কিন্তু জান্নাত মুল্যবান বস্তু। জান্নাতে পৌঁছতে চাইলে অবশ্যই ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে এবং নিজ প্রবৃত্তিকে নিবৃত করতে হবে। ধর্মীয় কারণে কেউ আপনাকে কষ্ট দিলে বা আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলে জেনে রাখুন আপনার পূর্বে এধরণের ঘটনার সম্মুখিন হয়েছেন নবীগণ ও সৎ ব্যক্তিগণ। তাঁরা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য্য ধারণ করেছেন। তাঁরা আল্লাহ্‌র শাস্তি ও মানুষের কষ্টকে বরাবর মনে করেননি।

২০
আপনার জ্ঞানের পরীক্ষা নিন:
ইসলাম ধর্মের চারটি বৈশিষ্ট উল্লেখ করুন।

ইসলামের জ্ঞান শিক্ষা করার ব্যাপারে নবী (ছা:)এর একটি বাণী উল্লেখ করুন।

লাইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ব্যাখ্যা করুন।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের মধ্যে যেগুলো চার রাকাত বিশিষ্ট সেগুলো কি কি?

রাতের প্রথম ছালাত এবং দিনের প্রথম ছালাতের নাম কি? এগুলোর রাকাত সংখ্যা কত?

জুমআর ছালাতের রাকাত সংখ্যা কত। এছালাত কোথায় পড়তে হয়? নারীর উপর কি এছালাত আবশ্যক?

ফরয ছালাত সমূহের পূর্বে এবং পরের ছালাতগুলো কি কি? সর্বমোট তা কত রাকাত?

ওযুর অঙ্গ চারটি। প্রতিটিই ধৌত করতে হয়। কিন্তু একটি মাসেহ্‌ করতে হয়, সেটি কি?

গোসল (ফরয) আবশ্যককারী চারটি বিষয় উল্লেখ করুন।

ছালাতের পবিত্রতার জন্য কখন পানির পরিবর্তে মাটি (তায়াম্মুম) ব্যবহার করবেন? তার পদ্ধতি কি?

পবিত্রতা বিনষ্টকারী পাঁচটি কারণ উল্লেখ করুন।

ছালাত শুরু করার পূর্বে তিনটি শর্ত উল্লেখ করুন।

কোন মসজিদকে সম্মুখে রেখে মুসলিম ছালাত আদায় করে? কে তা তৈরী করেছে?

ছালাত শুরু করার সময় কি বলবেন এবং কি বলে ছালাত শেষ করবেন?

ছালাতের প্রতিটি রুকন থেকে অপর রুকনে যাওয়ার জন্য (আল্লাহু আকবার) বলতে হয়। কিন্তু একটি স্থানে নয়। স্থানটি কি এবং কি বলতে হয়?

ছালাতে কোন তিনটি স্থানে হাত দিয়ে ইঙ্গিত (হাত উত্তোলন) করতে হয়?

রুকু এবং সিজদার তাসবীহের মধ্যে পার্থক্য কি?

ছালাতে কোন সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে হয়?

ছালাতে বসার দুটি অবস্থা রয়েছে। তা কি কি?

প্রতিটি ফরয ছালাতে দুবার তাশাহুদ পড়তে হয়। তবে একটি ছালাতে একবারই পড়তে হয়। তা কোন ছালাত?

সূরা ফাতিহা মুখস্ত না জানলে কিভাবে ছালাত আদয় করবেন?

ছালাত ভঙ্গকারী তিনটি বিষয় উল্লেখ করুন।

ইসলামের পাঁচটি রুকন কি কি?

কোন্‌ মাসে দিনের বেলায় নারী-পুরুষ সকলেই খানা-পিনা এবং যৌন সঙ্গম থেকে বিরত থাকবে?

ফেরেশ্‌তা কারা?

তিনটি আসমানী গ্রন্থের নাম লিখুন। এবং সেগুলো কোন কোন নবীর উপর অবর্তীণ হয়েছে?

আল্লাহ্‌র তাওহীদ বিরোধী চারটি বিষয় লিখুন?

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা পাওয়ার জন্য কোন নেক লোকের কবরের কাছে গিয়ে তাকে সুপারিশ করতে অনুরোধ জানায় তার সম্পর্কে আপনার মত কি?

ধর্মে নতুন উদ্ভাবিত বিদআত সমূহ থেকে দুটি বিষয় উল্লেখ করুন?

ইচ্ছাকৃত সময় পার করে ছালাত আদায় করার বিধান কি?

সূদ কি?

সম্পদ উপার্জনের তিনটি অবৈধ পন্থা উল্লেখ করুন।

খাওয়া হারাম এমন পাঁচটি বস্তু উল্লেখ করুন।

পুরুষ এবং নারীর পোষাকের মধ্যে দুটি পার্থক্য উল্লেখ করুন।

কোন ধরনের পশম শরীর থেকে চেঁছে ফেলতে হয় এবং কোনটি কেটে ছোট করতে হয়?

নিদ্রার আগে মুসলিম কি করবে?

ওবিসমিল্লাহ বলার পাঁচটি স্থান উল্লেখ করুন।

হাঁচি দিলে কি বলবেন এবং হাই উঠলে কি করবেন?

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে কি বলবেন?

কেউ আপনাকে সহযোগিতা করলে তাকে কি বলবেন?

ছালাতে সালাম ফিরানোর পর কি বলবেন?

ইসলামের নারীর সম্মান সমপর্কে কিছু বলুন?

নারী যদি রামাযান মাসে ঋতুবতী হয় তবে কি তাকে ছালাত ও ছিয়াম ক্বাযা আদায় করতে হবে?

একজন নতুন মুসলিমকে যে সমস্ত বিষয় ইসলামের উপর সুদৃঢ় রাখতে সহযোগিতা করে তা থেকে চারটি বিষয় উল্লেখ করুন।

আপনার দ্বারা কোন ব্যক্তি হেদায়াত লাভ করলে তার প্রতিদান কি?

প্রতিবছর আমরা কোন দুটি ঈদ পালন করে থাকি? ইসলামের কোন দুটি রুকন এদুটি ঈদের সাথে জড়িত?

২১
ফাতিহা এবং কতিপয় ছোট সূরা
সূরা আল ফাতিহা

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (1

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2) الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7

বিসমিল্লাহির্‌ রাহমানির রাহীম আমি শুরু করছি আল্লাহ্‌র নামে- তাঁর প্রতি সম্মান রেখে, কুরআন পাঠে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে এবং তাঁর নিকট গ্রহণ হওয়ার কামনা করে। তিনি পরম করুনাময় অতিব দয়ালু।

আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। যিনি তার যোগ্য। কেননা তিনি সমস্ত জগতের স্রষ্টা। জগতের সর্ববিষয়ে তত্বাবধানকারী। তিনি স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা সৃষ্টিকুলকে পালন করেন। এবং হেদায়ত ও ঈমান দ্বারা নেক লোকদেরকে প্রতিপালন করেন।

আর্‌ রাহমানির রাহীম যার দয়া সমস্ত সৃষ্টিকে পরিব্যাপ্ত করেছে। এবং তিনি মুমিনদের প্রতি বিশেষ করুণা করেন।

মালিকি ইয়াউমিদ্দীন তিনিই এককভাবে ক্বিয়ামত দিবস, হিসাব এবং কর্মের প্রতিদান দিবসের মালিক।

ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন হে আল্লাহ্‌ বিশেষভাবে আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত-দাসত্ব করি। সকল বিষয়ে শুধুমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।

ইহদিনাছ্‌ ছিরাত্বাল মুস্‌ত্বাক্বীম আমাদেরকে দেখাও সঠিক পথ (ইসলাম)। তার উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং তার আনুকুল্য দান কর।

ছিরাত্বাল্লাযীনা আন্‌ আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায্‌ যোওয়াল্লীন হে আল্লাহ্‌! সেপথ হল আপনার সম্মানিত বান্দা নবী ও সৎলোকদের পথ। আমাদেরকে দূরে রাখ এমন লোকদের পথ থেকে যাদের উপর তুমি রাগম্বিত হয়েছ। যারা সৎপথ পাওয়ার পরও তা পরিত্যাগ করেছে। (যেমন ইহুদী সমপ্রদায়)। এবং যারা সৎপথ থেকে বিভ্রান্ত তাদের নীতি থেকে আমাদেরকে দূরে রাখ। যারা আল্লাহ্‌র রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তায় সত্যপথ খুঁজেছে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে। (যেমন খৃষ্টান সমপ্রদায়।) [. পবিত্র কুরআনের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূরা হল সূরা ফাতিহা। এদ্বারা কুরআন শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে মুসলিমের জন্য কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলী রয়েছে: মুসলিম আল্লাহ্‌র মর্যাদা, সুবিশাল রাজত্ব ও সুন্দর সুন্দর নাম উল্লেখ করে তাঁকে স্মরণ করবে এবং তাঁর প্রশংসা করবে। স্মরণ করবে পরকালের কথা এবং তার জন্য প্রস'তি গ্রহণ করবে সৎআমলের মাধ্যমে। যাবতীয় ইবাদত একনিষ্ঠভাবে শুধু তার জন্যই করবে, কাউকে দেখানোর জন্য করবে না। আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাইবে এবং শুধুমাত্র তাঁর উপরই ভরসা করবে। অন-রকে গাইরুল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্কিত করবে না- সে যে কেউ হোক না কেন। আদবের সাথে আল্লাহ্‌কে ডাকবে। তাঁর কাছে ইসলাম এবং কল্যাণের হেদায়াত চাইবে। ইসলামের কারণে এবং আল্লাহ্‌র আনুগত্য করতে পারার কারণে খুশি হবে। কেননা এটা সবচেয়ে বড় নেয়ামত। অন্যরা ইসলামে প্রবেশ করুক, হেদায়াত লাভ করুক এটা মনে প্রাণে চাইবে এবং আকাংখা রাখবে। তাদেরকে ইসলমের পথে দাওওয়াতর দিবে। মুসলমানদের সাথে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়বে এবং নেক লোকদেরকে ভালবাসবে। বিশ্বাস রাখবে যে,ইহুদী-খৃষ্টানগণ কাফের। ধর্মীয় কোন বিষয়ে তাদের অনুসরণ করবে না। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন এবং তা বাস-বায়ন করতে সচেষ্ট হবে। আল্লাহ্‌র ইবাদত জেনে-বুঝে করার চেষ্টা করবে। জ্ঞানার্জন করার পর মূর্খ ও অজ্ঞানের মত কাজ করবে না। যেমন ইহুদীরা করত। আর আল্লাহ্‌ অনুমোদিত পন্থা ব্যতিরেকে অন্য পন্থা আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে না। যেমন করত খৃষ্টানগণ।]

সূরা আল্‌ আছর

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

وَالْعَصْرِ (১) إِنَّ الإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ (২) إِلا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (৩)

১-২) ওয়াল আছ্‌র্‌। ইন্নাল ইন্‌সানা লাফী খুস্‌র্‌। আল্লাহ্‌ যুগের শপথ করে বলেন, নিঃসন্দেহে আদম সন্তান ক্ষতি ও ধ্বংসের মধ্যে রয়েছে।

৩) ইল্লাল্লাযীনা আমানূ ওয়া আমেলুছ্‌ ছালেহাতি ওয়া তাওয়াছাওবিল হাক্কি ওয়া তাওয়াছাওবিছ্‌ ছব্‌র্‌। তবে তারা নয় যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্‌র প্রতি এবং সৎ আমল করেছে। আর পরস্পর পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে সত্য আঁকড়ে ধরার (অর্থাৎ- ইসলাম, সৎ আমল এবং ন্যায়নিষ্ঠা) এবং একজন অন্যজনকে নছীহত করে ধৈর্যাবলম্বন করার। (অর্থাৎ- ইসলামের উপর এবং আল্লাহ্‌র আনুগত্য করার উপর ধৈর্য ধারণ করবে। আল্লাহ্‌ যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে ছবর করবে। বিপদাপদে পতিত হলে ধৈর্য ধারণ করবে। কেননা যাবতীয় বিপদ-মুছীবত আল্লাহ্‌র নিকট থেকে এবং তার নির্ধারিত তক্বদীর অনুযায়ী হয়ে থাকে।)

সূরা আল্‌ হুমাযাহ্‌ (ঠাট্টা-বিদ্রুপ)

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ (১) الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ (২) يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ (৩) كَلَّا لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ (৪) وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ (৫) نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ (৬) الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ (৭) إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُوصَدَةٌ (৮) فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ (৯)

১) ওয়াইলুল্লি কুল্লি হুমাযাতিল্‌ লুমাযাহ্‌। অকল্যাণ ও ধ্বংস সে সমস্ত লোকের জন্য যারা মানুষের গীবত (পরচর্চা) করে। অর্থাৎ- মানুষের অনুপস্থিতে তাদের অপসন্দনীয় দোষগুলো অপরের সামনে তুলে ধরে। মানুষকে ঠাট্টা করে। বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে তাদেরকে বিদ্রুপ করে।

২) আল্লাযী জামাআ মালাঁও ওয়া আদ্দাদাহ্‌। যে সম্পদ জমা করতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এবং কমে যাওয়ার ভয়ে তা বারবার গণনা করে রাখে। (অর্থাৎ- সে বড়ই কৃপণ)

৩) ইয়াহ্‌সাবু আন্না মালাহু আখলাদাহ্‌। সে ধারণা করে তার এই জমাকৃত সম্পদ যা থেকে সে কিছুই খরচ করে না তাকে দুনিয়ায় চিরস্থায়ী বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিবে। যার ফলে সে হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদান থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।

৪) কাল্লা, লাইয়ুম্বাযান্না ফিল হুত্বমাহ্‌। কখনই নয়; অবশ্যই সে জাহান্নামে নিক্ষপ্ত হবে, যে সে তার ভিতরের সব কিছুকে চুর্ণবিচুর্ণ করে ফেলবে।

৫) ওয়ামা আদরাকা মাল্‌ হুত্বামাহ্‌। আপনি কি জানেন সেই জাহান্নামের প্রকৃত চিত্র কিরূপ?

৬-৭) নারুল্লাহিল্‌ মূক্বাদাহ্‌। আল্লাহ্‌র প্রজ্জলিত অগ্নি যা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দগ্ধ করে নষ্ট হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে তারপর তাকেও দগ্ধ করবে। অথচ তার মৃত্যু হবে না।

৮-৯) ইন্নাহা আলাইহিম্‌ মুওছাদাহ্‌, ফী আমাদিম্‌ মুমাদ্দাদাহ্‌। সেই জাহান্নামের দরজা বন্ধ থাকবে প্রলম্বিত বিশাল বিশাল স্তম্ভ দ্বারা। ফলে সেখান থেকে তাদের পালাবার উপায় থাকবে না। এবং সেখানে তাদের জন্য কোন কল্যাণও প্রবেশ করবে না।

সূরা আল ফীল (হস্তি)

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

أَلَمْ تَرَى كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ (১) أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ (২) وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ (৩) تَرْمِيهِمْ بِحِجَارَةٍ مِنْ سِجِّيلٍ (৪) فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَأْكُولٍ (৫)

১) আলম্‌ তারা কায়ফা ফাওআলা রাব্বুকা বি আসহাবিল ফীল। আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা কিরকম আচরণ করেছেন হস্তি বাহীনির সাথে? (আবরাহা হাবশী হস্তিসহ বিশাল সৈন্য বাহীনি নিয়ে ইয়ামান থেকে এসেছিল মসজিদে হারাম তথা কাওবা ঘর ধ্বংস করার জন্য। ঘটনাটি ছিল নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নবুওত প্রাপ্তির চল্লিশ বছর আগে।)

২) আলাম্‌ ইয়াজআল্‌ কায়দাহুম ফী তাযলীল। তারা যা অন্যায় পরিকল্পনা করেছিল আল্লাহ্‌ কি তা নষ্ট ও বাতিল করে দেননি?

৩-৪) ওয়া আরসালা আলাইহিম ত্বায়রান আবাবীল। তারমীহিম্‌ বিহিজারাতিম্‌ মিন সিজ্জীল। তিনি প্রেরণ করেছিলেন তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল। যারা তাদের উপর কঠিন মাটির পাথর নিক্ষেপ করছিল।

৫) ফাজাআলাহুম কাআছ্‌ফিম্‌ মাকূল। অতঃপর তিনি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেন, যেন তারা পশু দ্বারা ভক্ষিত তৃণের ন্যায় ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে।

সূরা কুরায়শ

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

لإِيلافِ قُرَيْشٍ (১) إِيْلاَفِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ (২) فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ (৩) الَّذِي أَطْعَمَهُمْ مِنْ جُوعٍ وَآمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ (৪)

১-২) লি ইলাফি কুরায়শ্‌। ইলাফিহিম রিহ্‌লাতাশ্‌ শিতায়ী ওয়াছ্‌ ছায়ফ। আশ্চর্য! (নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গোত্র) কুরায়শদের আশক্তি দেখে। তারা শীতকালে (ইয়ামানের দিকে) এবং গ্রীষ্মকালে (শামের দিকে) ব্যবসায়িক সফর করত। নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানী করত নিরাপত্তার সাথে এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে সহজভাবে। আশ্চর্য! তারপরও তারা আল্লাহ্‌র কৃতজ্ঞতা করে না।

৩) ফাল্‌ ইয়াবুদূ রাব্বা হাযাল বাইতি। সুতরাং তারা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ইবাদত করে এককভাবে আল্লাহ্‌র, যিনি এই ঘরের পালনকর্তা। (অর্থৎ- কাওবা ঘর, যার কারণে তারা সমস্ত মানুষের মধ্যে সম্মানিত হয়েছে। আর মানুষ এঘরকে শ্রদ্ধা করার কারণে তারাও নিরাপত্তা লাভ করেছে।)

৪) আল্লাযী আত্বআমাহুম্‌ মিন্‌ জূঈন্‌ ওয়া আমানহুম্‌ মিন খাওফ্‌। যিনি তাদেরকে কঠিন দারিদ্রের সময় খাদ্য দান করেছেন। ভীষন ভয় থেকে দান করেছেন নিরাপত্তা। (কেননা মক্কা অনাবাদী একটি উপত্যকা ছিল। তারপর আল্লাহ্‌ তাদের জন্য নিরাপত্তার সাথে জীবিকা উপার্জন ও ব্যবসা করা সহজ করে দিয়েছেন। ফলে মানুষ তাদের ক্ষতি করে না শত্রুতা করে না। তারা বলে, কুরায়শরা আল্লাহ্‌র ঘরের পরিবার। অথচ অন্যান্য স্থানের মানুষ সন্ত্রাস ও ছিনতাইয়ের শিকার হয়। এমনিভাবে হস্তি বাহীনির ষড়যন্ত্র থেকেও আল্লাহ্‌ তাদেরকে বাঁচিয়েছেন।)

সূরা আল মাঊন

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ (১) فَذَلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ (২) وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ (৩) ف َوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ (৪) الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ (৫) الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ (৬) وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ (৭)

১) আরাআয়তাল্লাযী ইয়ুকায্‌ যিবু বিদ্দীন। আপনি কি এমন লোককে দেখেছেন, যে মৃত্যু পরবর্তী হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদানের জন্য পুনরুত্থানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।

২) ফাযালিকাল্লাযী ইয়াদুঊল ইয়াত্বীম। এলোক তো ইয়াতীমকে কঠিন ও নির্দয়ভাবে তার অধিকার থেকে বঞ্ছিত করে। কারণ তার হৃদয় বড় কঠিন, পরকালের জীবন এবং শস্তি সম্পর্কে সে উদাসীন।

৩) ওয়ালা ইয়াহুয্‌যু আলা ত্বয়ামিল মিসকীন। সে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করে না অভাবীদেরকে খাদ্য প্রদান করার জন্য। তাহলে কিভাবে সে নিজ সম্পদ থেকে অভাবীকে খাদ্য দান করবে? (কারণ সে পরকালের প্রতিদানকে মিথ্যা মনে করে)

৪-৫) ফাওয়াইলুল্‌ লিল্‌ মুছল্লীন। আল্লাযীনাহুম আন ছালাতিহিম সাহূন। কঠিন শাস্তি মুছল্লীদের জন্য। যারা স্বীয় ছালাতের ব্যাপারে উদাসীন। সঠিকভাবে, বিশুদ্ধভাবে ও সময়মত ছালাত আদায় করে না। ছালাতের ব্যাপারে কোন পরওয়া করে না। (তাহলে যারা মোটেই ছালাত আদায় করে না তাদের অবস্থা কেমন হবে?) যদি তারা পুনরুত্থান এবং প্রতিদানের প্রতি বিশ্বাস রাখত তবে সঠিকভাবে ছালাত আদায় করত।

৬) আল্লাযীনা হুম ইয়ুরাউনা। যারা ছালাত ও নেক আমল প্রকাশ করে মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষের প্রশংসা শোনার জন্য।

৭) ওয়া ইয়ামনাঊনাল্‌ মাঊন। তারা কর্য নেয়া বস্তু অত্যাচার বশতঃ ফেরত দিতে অস্বীকার করে যদিও তা অতিসামন্য বস্তু হয়। এবং এমন বস্তুও কৃপণতার কারণে কর্য দিতে অস্বীকৃতি জানায় যা দিলে কোন ক্ষতি নেই যেমন কুড়াল, হাড়ি-পাতিল, বালতি প্রভৃতি।

সূরা কাওছার

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ (১) فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (২) إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الأَبْتَرُ (৩)

১) ইন্না আত্বায়নাকাল্‌ কাওছার। হে মুহাম্মাদ! নিশ্চয় আমি আপনাকে পরকালে মহান হাওযে কাওছার দান করেছি। (রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কাওছার একটি নদী। আল্লাহ্‌ জান্নাতে আমাকে তা দান করেছেন। তাতে রয়েছে অফুরন্ত কল্যাণ। ক্বিয়ামত দিবসে আমার উম্মত সেখানে উপস্থিত হবে। (আমি তাদেরকে সেখান থেকে পানি পান করাবো।) আকাশের নক্ষত্রের সংখ্যা পরিমাণ তার পেয়ালার সংখ্যা হবে।)

২) ফাছাল্লিলি রাব্বিকা ওয়ান্‌হার। একনিষ্ঠতার সাথে আপনার পালনকর্তার জন্য ছালাত আদায় করুন। একমাত্র তাঁরই জন্য প্রাণী যবেহ্‌ করুন। তিনি আপনাকে যা প্রদান করেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য এগুলো করুন।

৩) ইন্না শানিআকা হুওয়াল্‌ আবতার। নিঃসন্দেহে আপনাকে এবং আপনি যে হেদায়াত নিয়ে এসেছেন তাকে ঘৃণাকারীরই প্রভাব ও স্মরণ বিচ্ছিন্ন ও বিলীন। সে সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্ছিত। (কেননা যাবতীয় কল্যাণ তো আপনাকে ভালবাসা ও আপনার অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে।)

সূরা আল কাফেরূন

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

قُلْ يَاأَيُّهَا الْكَافِرُونَ (১) لاَ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ (২) وَلاَ أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ (৩) وَلاَ أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدتُّمْ (৪) وَلاَ أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ (৫) لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ (৬)

১) কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফেরূন। আপনি বলুন, হে আল্লাহ্‌র নেয়ামতকে অস্বীকারকারীগণ! আল্লাহ্‌ এবং তার রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীগণ!

২) লা আবুদু মা তাবুদূন। তোমরা যে সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর, মূর্তির এবং বাতিল মাওবূদদের ইবাদত করে থাক আমি তার ইবাদত করি না। আমি সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ও মুক্ত ঘোষণা করছি।

৩) ওয়া লা আন্‌তুম আবেদূন মা আবুদ। আমি যে একক মাবূদের ইবাদত করছি তোমরাও তার ইবাদত কর না; অথচ তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার অধিকারী। সুতরাং তোমরা হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত নও।

৪) ওয়ালা আনা আবেদুম্মা আবদ্‌তুম। আমি আবরও তাগিদের সাথে বলছি যে, তোমরা যে সমস্ত মূর্তি ও বাতিল মাওবূদের ইবাদত করছো আমি কখনই তার ইবাদত করব না।

৫) ওয়া লা আন্‌তুম আবেদূন মা আবুদ। আরো নিশ্চিত করে বলছি যে, নিঃসন্দেহে তোমরা সঠিক ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত নও। যেমনটি আমি আছি।

৬) লাকুম দ্বীনুকুম ওয়া লিয়া দ্বীন। সুতরাং তোমরা যে ধর্মকে আঁকড়ে ধরে আছো তার উপরই থাক। আমি তার অনুসরন করব না। আর আমি যে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট। এটা ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত নই।

সূরা নছর

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ (১) وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا (২) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا (৩)

১) ইযা জা-আ নাছরুল্লাহি ওয়াল ফাত্‌হু। হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি কুরায়শদের উপর বিজয় লাভ করবেন। (যারা আপনার সাথে শত্রুতা করেছে এবং মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে।) আর এই মক্কা বিজয় আপনার জন্য পূর্ণ হয়ে গেছে।

২) ওয়া রাআইতান্নাসা ইয়াদখুলূনা ফী দ্বীনিল্লাহি আফওয়াজা। আর আপনি দেখবেন যে, লোকেরা দলে দলে ইসলামের সুশিতল ছায়াতলে প্রবেশ করবে।

৩) ফাসাব্বিহ্‌ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াস্তাগ্‌ফিরহু ইন্নাহু কানা তাওয়াবা। যখন এগুলো ঘটবে তখন বেশী বেশী আল্লাহ্‌র তাসবীহ্‌ পাঠ করুন এবং তাঁর প্রশংসা করুন। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য এবং তাঁর সাক্ষাত লাভের সময় নিকটবর্তী হওয়ার জন্য। কেননা যারা তাঁকে স্মরণ করে, তাঁর কৃতজ্ঞতা করে ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি তাদের তওবা কবূল করেন এবং তাদের উপর দয়া করেন।

সূরা লাহাব

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ (১) مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ (২) سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ (৩) وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ (৪) فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ (৫)

১) তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবিঁউ ওয়া তাব্বা। আবু লাহাবের দুহাত ধ্বংস হোক ও দুর্ভোগ হোক। আর তার ক্ষতি ও ধ্বংস নিশ্চিত হয়েছে। (আবু লাহাব নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পিতৃব্য ছিল। সে তাঁকে কষ্ট দিত এবং মানুষকে তাঁর অনুসরণ ও সত্যায়ন করা থেকে বাধা দিত।)

২) মা আগনা আনহু মালুহু ওয়ামা কাসাব। তার উপার্জিত সম্পদ, সন্তান ও দুনিয়াবী প্রাচুর্য্য কোনই কাজে আসেনি। আল্লাহ্‌র শাস্তি যখন তার উপর পতিত হয়েছে তখন এগুলো তার কোনই উপকার করতে পারেনি।

৩-৪) সাইয়াছলা নারান্‌ যাতা লাহাব। ওয়াম্‌রাআতুহু হাম্মালাতাল হাতাব। অচিরেই প্রবেশ করবে প্রজ্জলিত লেলিহান অগ্নিতে সে এবং তার স্ত্রী (উম্মু জামিল) যে কাঠ এবং কাঁটা বহণ করত এবং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে কষ্ট দেয়ার জন্য তাঁর চলার পথে বিছিয়ে রাখত।

৫) ফীজীদেহা হাবলুম্‌ মিম্মাসাদ। আল্লাহ্‌র নির্দেশে, তার স্কন্ধে খেজুর বৃক্ষের ছাল দ্বারা পাকানো রশি বাঁধা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে।

সূরা ইখলাছ

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (১) اللَّهُ الصَّمَدُ (২) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (৩) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (৪)

১) ক্বল হুওয়াল্লাহু আহাদ। আপনি বলুন! তিনি আল্লাহ্‌ একক মাওবূদ। দাসত্বের মধ্যে তাঁর কোন শরীক নেই।

২) আল্লাহুছ্‌ ছমাদ। সবধরণের প্রয়োজনে একমাত্র আল্লাহ্‌র কাছেই বান্দা মুখাপেক্ষী। তিনি তাদের প্রয়োজন পূরণ করে থাকেন। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।

৩) লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং জম্মদাতাও নেই।

৪) ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান্‌ আহাদ। তাঁর তুল্য কোন কিছু নেই। না তাঁর সত্বার তুল্য, না তাঁর গুণাবলীর, না কর্মের, না তাঁর নামের তুল্য কেউ বা কোন কিছু আছে।

সূরা ফালাক্ব

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (১) مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ (২) وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ (৩) وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ (৪) وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ (৫)

১) কুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব। আপনি বলুন! আমি প্রভাতের পালনকর্তার কাছে আশ্রয় কামনা করছি।

২) মিন শার্‌রি মা খালাক্ব। সৃষ্টি জগতের সবকিছুর অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে।

৩) ওয়া মিন শার্‌রি গাসিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। এবং রাতের ভীষণ অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা সমাগত হয়। রাতে যত প্রকারের অনিষ্ট ও বিপদ আছে তার সব কিছু থেকে আশ্রয় কামনা করছি।

৪) ওয়া মিন শার্‌রিন্নাফ্‌ফাছাতি ফিল ঊক্বাদ। যাদুকারীনির অনিষ্ট থেকে যখন সে যাদুর উদ্দেশ্যে গ্রন্থীতে ফুঁৎকার দেয়।

৫) ওয়া মিন শার্‌রি হাসিদিন ইযা হাসাদ। এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে। যে কিনা মানুষের নেয়ামতে হিংসা করে এবং উক্ত নিয়ামত বিদুরিত হওয়ার কামনা করে।

সূরা নাস

بِِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (১) مَلِكِ النَّاسِ (২) إِلَهِ النَّاسِ (৩) مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ (৪) الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ (৫) مِنْ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ (৬)

১) কুল আঊযু বিরাব্বিন্নাস। বলুন! আমি মানুষের পালনকর্তার কাছে আশ্রয় কামনা করছি। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে হেফাযত করেন। তিনি মানুষের মুখাপেক্ষী নন।

২) মালিকিন্নাস। তিনি মানুষের প্রতিটি বিষয়ের মালিক ও কর্তৃত্বকারী।

৩) ইলাহিন্নাস। তিনি মানুষের উপাস্য। এককভাবে তিনিই তাদের যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার হক্বদার।

৪) মিন শার্‌রিল ওয়াস্‌ওয়াসিল খান্নাস। (আশ্রয় কামনা করছি) শয়তানের ক্ষতি থেকে যে গোপনে অকল্যাণের পথে আহবান জানায়। এবং আল্লাহ্‌কে স্মরণ করলে আবার লুকিয়ে যায়।

৫) আল্লাযী ইওয়াস্‌বিসু ফী ছুদূরিন্নাস। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রনা দেয়।

৬) মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস। সে শয়তান মানুষের মধ্যে থেকে এবং জ্বিনের মধ্যে থেকে।

সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্‌র জন্য

যিনি আমাদেরকে ইসলামের হেদায়াত দান করেছেন।

আমরা আল্লাহ্‌ সুবহানাহুর কাছে প্রার্থনা করি

তিনি উপকার দান করুন প্রত্যেক পাঠক ও শ্রবণকারীকে।

উত্তম পারিতোষিক দান করুন

এর অনুবাদক, সম্পাদক ও পরিবেশকসহ

সবাইকে যারা একাজে অংশ নিয়েছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন